সন্ধ্যারাত যখন দাতা

দীর্ঘ দীর্ঘকাল পর এমন একটি সন্ধ্যারাত কী নরম
পা রাখে আমার ঘরে। আয়োজন ছিল না কিছুই,
তবু জন্ম হলো অগোচরে
নামহীন এক উৎসবের। আলগোছে তুমি এলে,
নতুন কবিতা যেন সৃজনের খরাশেষে। এই সন্ধ্যারাত
বস্তুত তোমারই সৃষ্টি সহজ সৌন্দর্যে অনাবিল, সুগভীর।

তোমার স্পর্শের প্রজ্বলনে, প্রদীপের শিখা হওয়া
সে মুহূর্তে ছিল না সম্ভব,
যদিও হৃদয়ে ছিল অপরূপ নিভৃত দেয়ালি। দু’টি চোখ
কুড়িয়ে নিচ্ছিল খুব সঙ্গোপনে ঘরে
ঘনিষ্ঠ ছড়িয়ে থাকা তোমার মুহূর্তগুলি তুমি
আমার দৃষ্টিতে করছিলে পাঠ চূর্ণ ইতিহাস
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আর অন্তরালে চেতনাপ্রবাহে
ছিল ডুবসাঁতার তোমার।

তোমার কিসের তাড়া ছিল? সন্ধ্যারাত
সন্ধ্যার সতেজ ঘ্রাণ সম্পূর্ণ মুছে না ফেলতেই চলে গেলে,
বর্তমান হলো স্মৃতি। ঘরে একা বসে থাকি এবং তোমার
ফেলে-যাওয়া শূন্যতাকে ব্যাকুল চুম্বন করি বারবার, দেখি
হাহাকার সহস্র বুদ্বুদ হয়ে আঁধারে মিলায়
ক্ষণে ক্ষণে, নিজেকে বিবিক্ত উদ্বাস্তুর ছায়া বলে মনে হয়।

এই সন্ধ্যারাত দীর্ঘকাল পর তার রূপে ফের
আমাকে করেছে দগ্ধ; কিছুতে নয়, শুধু
করেছে কোমল শুদ্ধ, হৃদয় নিয়েছে জন্ম চন্দ্রিল সঙ্গীত
পুনরায়, বন্ধ্যা সময়ের হলো অবসান। এই
তোমার বিদ্যুৎ-তুল্য আসা-যাওয়া তোমাকে আমার
আরও বেশি কাছে এনে দিয়েছে, শুনছি
কান পেতে-বলে সন্ধ্যারাতে হাওয়া আর
ঘাসের সবুজ ঢেউ, জোনাকির কাছে।