তোমাকে যেতেই হলো

শেষ অব্দি তোমাকে যেতেই হলো সেখানে
হৈ হৈ ভিড়ে, ধূলায়, আলো-আঁধারিতে আমাকে ছাড়াই?
ভেবেছিলাম, তুমি যাবে না ঐ হট্ররোলে,
কতিপয় খ্যাতিশিকারীর আশেপাশে
দাঁড়াবে না, নিজের শরীরকে চাটতে দেবে না
লালসা-লোলুপ কোনো কোনো দৃষ্টিকে। ভেবেছিলাম,
কী নির্বোধ আমি, ঘর থেকে পা বাড়াবার আগে
তোমার চোখে ভেসে উঠবে একটি কাতর, বিড়ম্বিত মুখ।

রোগা, ক্ষীণদৃষ্টি ঈগলের মতো একা
প’ড়ে থাকি এক কোণে। কুঁদুলে
গৌণ কিছু পাখি আমাকে উত্যক্ত করে, একটি কি দুটি
নেংটি ইঁদুর ভেংচি কেটে দূরে সরে যায়। এই আমাকে তুমি
নিয়ে যেতে চাইলে শত শত মানুষের
দঙ্গলে, এক ধরনের আদিখ্যেতার প্রদর্শনীতে।

আমাকে আঁকড়ে-ধরা বিষাদকে অগ্রাহ্য ক’রে, না বুঝে
তুমি দিব্যি চলে গেলে, আমি
অসহায়, আর্ত, নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম শূন্য পথের দিকে;
ভাবলাম, কেউ করো জন্যেই
অপেক্ষা করতে চায় না, নিজের ইচ্ছার মুকুল সমুদয়
ফোটানোর জন্যে ব্যগ্র হ’য়ে পড়ে।

বেশ রাত ক’রে ফিরে এলে আমার নিরানন্দ ঘরে
আনন্দে উদ্ভাসিত; তোমার ভেতর থেকে
বেরিয়ে-আসা বীণার ঝংকার স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম।
তোমার চোখে মুখে এক ধরনের জয়োল্লাস। আমি নিস্তব্ধ
মমির মতো শয্যাগত। অস্ফুট কোনো শব্দও
উচ্চারণ করতে ব্যর্থ আমি শুধু দেখলাম উৎফুল্ল তোমাকে।

আমার অন্তর্জ্বালা বিষয়ে অসচেতন, উদাসীন তুমি
শোনালে কিছু টুকরো গল্প, কিছু অন্যের, কিছু
তোমার শিল্পিত কার্যবিবরণী। সেই মুহূর্তে আমার
অন্তর্গত রোগা, প্রায়ান্ধ ঈগল আর্তনাদ
করতে করতে আকাশে উড়তে চেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল পাথরে এবং তুমি
তার শুশ্রূষায় আগ্রহী হয়েও নিষ্ক্রিয়তায় ডুবে রইলে।
২৪/২/৯৫