এ আমার কী হয়েছে

এ আমার কী হয়েছে আজকাল? সব সময়
এক ধন্দ আমাকে নিয়ে
বেশ রগড় করছে; হিমশিম খাচ্ছি হরহামেশা,
অথচ আমার কিছুই করার নেই।

এই যে চোখের সামনে সারি সারি বই,
আমি ওদের শনাক্ত করতে ব্যর্থ, কার কী-যে নাম
বলতে অপারগ। আর ঐ যে রেলিঙ ঘেঁষে পেয়ারা গাছটা
দাঁড়িয়ে আছে ক’বছর ধ’রে,
তার পাতাগুলো নড়ছে কি নড়ছে না
বোঝার উপায় নেই আমার। ঘরের ভেতর
দিনের বেলা আলো জ্বালিয়ে রাখলেও কেমন এক
ছায়ার সবতি গড়ে ওঠে।

আমার নিত্যদিনের চেনা বস্তুসমুদয় আমাকে
মজা দেখাবার খায়েশে
অচেনা ভঙ্গিতে হাজির হয়। হকচকিয়ে আমি
পা হড়কে প’ড়ে যাবার আশঙ্কায়
তড়িঘড়ি ধ’রে ফেলি চেয়ারের হাতল। হঠাৎ হাত
সরিয়েও নিই, কী জানি কোনো অজানা
হিংস্র জন্তুর পিঠ স্পর্শ করিনিতো। টেলিফোন
ধ’রে ভাবি, কার ঠিকানায় বাজাবো আমার অব্যক্ত ধ্বনিমালা?

এই যে রাস্তাটা এখন কোনো সরীসৃপের মতো
ঘুমিয়ে রয়েছে, তা আমার চোখে
স্পষ্ট নয়। এখন আমার হৃদয়ে এক দীর্ঘ পথ
চলে গ্যাছে বহু দূর, যার দু’ধারে
সারি সারি গাছ আমি দেখতে পাচ্ছি হাওয়ায়
ঝরা পাতাদের ঘূর্ণি নাচ। কে যেন হেঁটে যাচ্ছে
আঁচল উড়িয়ে, পাথরে ঠেস দিয়ে বসে একজন বাজাচ্ছে বাঁশি।
এই দু’জনের মধ্যে কোনো সংযোগ নেই, অথচ
পরস্পরের মধ্যে ওদের অজান্তেই পদ্মের মতো ফুটে উঠেছে
মমত্ব বোধ। এর পথ চলা, ওর বংশীধ্বনি কোনো দিনই থামবে
আমি বুঝতেই পারি নি, কখন থেকে আমার মধ্যে
এক পরিবর্তনের ঢেউ জেগেছে। এখন আমি
বাইরের সামগ্রী ইত্যাদি চেয়ে আমার ভেতরকার অনেক কিছুই,
অধিকতর স্পষ্ট দেখতে পাই। তাকে আমি
অনেক দিন দেখি না। এই মুহূর্তে যখন আমি একরাশ
ধূসরতার মধ্যেও একটি ধ্রুপদী রাগ সৃষ্টিতে চেষ্টাশীল,
সে এখন কোথায়, কী করছে, জানি না। কিন্তু আমার দৃষ্টির
অস্পষ্টতা সত্ত্বেও তাকে অন্তরে দেখতে পাচ্ছি জ্যোতির্ময় স্পষ্টতায়
১৯/২/৯৫