উড্রো উইলসন : বিশ্বশান্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন

উড্রো উইলসন : বিশ্বশান্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন

উড্রো উইলসন সম্পর্কে বলা হয়–তিনি ছিলেন একটি বিশাল প্রতিভা, আবার বলা হয়–তিনি ছিলেন একটি বিরাট ব্যর্থতা। তিনি বিশ্ব শান্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেই স্বপ্নের বেদীমূলে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

১৯১৯ সালে উড্রো উইলসন যখন ইউরোপে যাত্রা করেন তখন তাকে যুগশ্রেষ্ঠ ত্রাণকর্তা অভিহিত করে রক্তাক্ত ইউরোপে দেবতাজ্ঞানে স্বাগত জানানো হয়। তাকে ত্রাণকর্তা হিসেবে সম্মান দিয়ে অনশনকারী কৃষকগণ তার ছবির সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা জানাল। সমগ্র বিশ্ব তার পদতলে লুটিয়ে পড়েছিল। অথচ এর তিন মাস পর তিনি যখন অসুস্থাবস্থায় দেশে ফিরলেন কোটি কোটি লোক এমনকি বন্ধুরাও তার শত্রু হয়ে দাঁড়াল। ইতিহাস তাকে আখ্যা দিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে উইলসন ছিলেন অত্যন্ত বেশি মানবিকতাবোধসম্পন্ন। তিনি মানুষের সাথে একান্ত নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিলেন।

হোয়াইট হাউসে যারা বাস করেছেন তাদের মধ্যে উইলসনই ছিলেন সম্ভবত শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতব্যক্তি যদিও এগারো বছর বয়স পর্যন্ত লেখাপড়া শেখেন নি। জীবনের অধিকাংশ সময় অধ্যাপনা এবং শিক্ষাঙ্গনের ছায়াময় পরিবেশে কাটিয়েছেন। তিনি ছিলেন গরিব। অধ্যাপক হিসেবে তার আয় এত কম ছিল যে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য উপরি আয়ের পন্থা হিসেবে তার স্ত্রী ছবি আঁকতেন। তিনি খাওয়াদাওয়া ও বেশভুষার ব্যাপারে অত্যন্ত উদাসীন ছিলেন। তার সামনে যা এনে দেওয়া হত তিনি তাই খেতেন। তার একমাত্র বিলাস ছিল বই কেনা। তিনি জীবনে মাত্র একটি চুরুট টেনেছিলেন এবং তা শেষ করার আগেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

উইলসন ছিলেন যথেষ্ট আবেগপ্রবণ অথচ লোকে তাকে রুজভেল্টের চেয়েও উগ্রস্বভাবের লোক বলে ধারণা করত। তার প্রথমা স্ত্রীর প্রতি অনুরাগ ছিল অত্যন্ত গভীর। তাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার অন্যতম প্রধান কাজ ছিল স্ত্রীর জন্য পশমের পোশাক কিনে দেয়া। তিনি আইনবিদ হওয়ার লক্ষে জীবনযাত্রা শুরু করেন কিন্তু আইনে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। সারা জীবনেও নিজে কোনো মামলা পরিচালনা করেন নি। শুধু এক মক্কেলের সম্পত্তি তদারক করেছিলেন, মক্কেলটি হল তার মা।

উইলসনের চরিত্রের প্রধান ত্রুটি ছিল তার কলাকৌশলের অভাব। ছোটবেলা থেকেই তিনি উচ্চাকাঙ ক্ষা পোষণ করতেন যে, একজন কূটনীতিক হবেন। এভাবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বক্তৃতা অভ্যেস করতেন। কিন্তু তিনি জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি আয়ত্ত করতে শেখেন নি, সেটা হল-লোকজন পরিচালনা। সেজন্য তার জীবনটা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ বছরটিতে উইলসন স্বাস্থ্যগতভাবে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তার অবসর গ্রহণের পর পৃথিবীর সব জায়গা থেকে লোকজন এস. স্ট্রিটে তার বাড়িতে তীর্থভ্রমণে এসেছিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *