থিয়োডর রুজভেল্ট : বুকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেও বক্তৃতা থামান নি

থিয়োডর রুজভেল্ট : বুকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেও বক্তৃতা থামান নি

আমেরিকার সবচেয়ে সুদর্শন এবং বর্ণাঢ্য প্রেসিডেন্ট ছিলেন থিয়োডর রুজভেল্ট। ছোটবেলায় তিনি ছিলেন হাঁপানি রুগী। স্বাস্থ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি পশ্চিমে গেলেন। সেখানে তিনি রাখাল হলেন, খোলা আকাশের নিচে ঘুমোলেন। তারপর তিনি সুস্বাস্থ্য ফিরে গেলেন, পরে দেখা গেল তাকে মাইক ডোনাভনের সাথে বক্সিং লড়ছেন। তিনি দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল আবিষ্কার করেছেন এবং তিনি সর্বকালের সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত বড় জন্তু শিকারী ছিলেন।

রুজভেল্ট তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন যে তিনি শৈশবে দুর্বল স্নায়ুবিশিষ্ট ও ভীরু প্রকৃতির ছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি অত্যন্ত দুরন্ত ছিলেন। তিনি হাত ভেঙেছিলেন, বুকের পাঁজর ভেঙেছিলেন, কাঁধ ভেঙেছিলেন তবু ঝুঁকি নেয়া বন্ধ করেন নি। তিনি বলেছেন, যে সব কাজ করতে তার ভয় হত তা তিনি আরো বেশি করতেন এবং সে সব কাজ করতে গিয়ে খুব সাহস দেখালেও ভেতরে ভেতরে ভীতু ছিলেন শেষপর্যন্ত এত সাহসী হয়ে উঠলেন যে ক্রুদ্ধ সিংহ বা গর্জনশীল কামান কোনো কিছুতেই ভয় পেতেন না। ১৯১২ সালে বুলমোস অভিযানকালে রুজভেল্ট যখন এক জায়গায় বক্তৃতা দিতে যাচ্ছিলেন তখন এক অর্ধপাগল ব্যক্তি তার বুকে গুলি করল। তিনি কাউকে বুঝতে দিলেন না তার বুকে বুলেটটা লেগেছে। তিনি সোজাসুজি আডিটরিয়ামে গিয়ে বক্তৃতা শুরু করে দিলেন এবং যতক্ষণ না সংজ্ঞাহীন হলেন ততক্ষণ বক্তৃতা দিয়ে যেতে থাকলেন।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন একসময় রুজভেল্ট এক আর্মি অফিসারের সাথে বক্সিং লড়েছেন। এতে ঘুষি খেয়ে রুজভেল্ট তার বাম চোখে মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হলেন। বেশ কয়েক বছর পর তিনি চিরদিনের জন্য ঐ চোখের দৃশিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু তিনি ওই গোলন্দাজ অফিসারকে জানতেই দিলেন না তার কী ক্ষতি সে করেছে।

তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী ছিলেন। ওয়েস্টার বে’তে তার জমিদারি এলাকায় রুজভেল্ট একসময় খামারের মজুরদের সাথে কাট চিড়তেন, ফসল তদারক করতেন এবং মজুরদের মতো তাকেও একই পরিমাণ বেতন দেয়ার জন্য তিনি পীড়াপীড়ি করতেন। কখনো ধূমপান করেন নি, মদ্যপান বলতে দুধের সাথে কালেভদ্রে এক চামচ ব্রান্ডি মিশিয়ে খেতেন।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে হোয়াইট হাউসে থাকাকালে তাকে অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটাতে হত অবশ্যই। কিন্তু এর মধ্যেই তিনি শতশত বইয়ের পাতা উল্টিয়েছেন। তার হাতে সব সময়ই একটা বই থাকত। একজন সাক্ষাৎপ্রার্থী যাওয়ার পর অন্যজন আসার ফাঁকে যে-কয়েক সেকেন্ড বা মিনিট সময় পেতেন, বইয়ের পাতা ওল্টাতেন। একদিন তিনি ডাকোটায় পশু চরাচ্ছিলেন, তখন এক রাখালকে সম্পূর্ণ হ্যামলেটটা পড়ে শোনান। তিনি অত্যন্ত সঙ্গীতপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু নিজে সুর মেলাতে পারতেন না। একবার তিনি পশ্চিমের এক শহরের ওপর দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে যাবার সময় টুপি কাত করে ধরেছিলেন এবং উৎফুল্ল জনতার উদ্দেশ্যে প্রভু তোমার আরো কাছে গানটা গেয়েছিলেন।

অনেকরকম সখ ছিল রুজভেল্টের। মজার একটা ঘটনা শুনুন, হোয়াইট হাউসে থাকাকালে হঠাৎ করে একদিন ওয়াশিংটনের নামজাদা সাংবাদিককে তার সাক্ষাৎকারের জন্য আসতেন বললেন। সাংবাদিক উত্তেজনায় অধীর হয়ে উঠল, ভাবল, রুজভেল্ট বুঝি তাকে কোনো রাষ্ট্রীয় সাক্ষাৎকার দান করবেন। সে পত্রিকার খবরটি ছাপার জন্য কলাম খালি রেখে তৈরি থাকতে নির্দেশ দিয়েই রুজভেল্টের কাছে ছুটল। যখন সে হোয়াইট হাউসে পৌঁছল, রুজভেল্ট তাকে একটা রাজনীতির কথাও বললেন না। তিনি ওই সাংবাদিককে হোয়াইট হাউসের বাইরে এক গাছতলায় নিয়ে এলেন এবং তাকে নিজের আবিষ্কৃত কতকগুলো বাচ্চাওয়ালা পেঁচার বাসা দেখিয়ে দিলেন।

আমেরিকার সফল প্রেসিডেন্ট ছিলেন থিয়োডর রুজভেল্ট। তিনি তার জনগণকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। ১৯১৯ সানের ৪ঠা জানুয়ারি ঘুমন্ত অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার শেষ উচ্চারিত কথাগুলো হল অনুগ্রহপূর্বক বাতিগুলো নিভিয়ে দিন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *