শিক সেল : একটি বইয়ের জনপ্রিয় লেখক

শিক সেল : একটি বইয়ের জনপ্রিয় লেখক

পৃথিবীর ইতিহাসে এরূপ একজন মাত্র লেখকই আছেন যিনি একটা বই লিখে তার প্রতিটি শব্দের জন্য সাড়ে উনপঞ্চাশ ডলার করে পেয়েছেন। বইটা হল, ‘দ্য স্পেশালিস্ট’ তার লেখকের নাম হল শিক সেল। তার লেখা বইগুলোর মধ্যে দ্য স্পেশালিস্টই প্রথম আর এই বইটার ওপর তার আস্থা এত কম ছিল যে বিকাশ তিনি এটা মাত্র দু’হাজার কপি ছাপান। কিন্তু এই কপিগুলো বিক্রি হতে মাত্র দু’সপ্তাহ লেগেছিল। বইটা সৌভাগ্যবশত হঠাৎ করে সবার মন কেড়ে নিয়েছিল। পাইন বনের মধ্যে আগুন লাগলে যেমন লাফাতে লাফাতে ছড়িয়ে পড়ে তেমনি করে এর প্রচার ও লেখকের সুখ্যাতি সারা দেশেময় ছড়িয়ে পড়ল। দ্যা গুড আর্থের চেয়েও এটার বেশি কপি বিক্রি হল। কিন্তু এটা লেখার জন্য শিক সেল গর্ববোধ তো করেনই নি বরং দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন, এই জন্য যে অনেক পাঠক এর কৌতুক ও পরিহাসটা ভুল বুঝেছিলেন। তার উপস্থিতিতে কেউ বইটা নিয়ে আলোচনা করলে তিনি অত্যন্ত ব্ৰিত বোধ করেন। একবার তার মেয়ে তো কেঁদেই ফেলেছিল, কারণ সে মনে করেছিল যে বইটা পরিবারের সম্মানের হানি করেছিল।

তার লেখক হওয়ার বিষয়টি ছিল আকস্মিক। আসলে তিনি ছিলেন একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা। তার অভিনেতা হওয়াটাও ছিল আকস্মিক ব্যাপার। তারো আগে তিনি ছিলেন করিগর, ইলিনয়ের আৰ্বোনতে রেলরাস্তার পাশের দোকানে তিনি কাজ করতেন। পরিবারের বড় বোনটির ছিল অভিনয় করার সখ, সে অভিনয় শেখার স্কুলে পড়াশোনা করত। সে বড়দিনের ছুটিতে বাড়ি এল এবং এক গির্জায় অনুষ্ঠান প্রদর্শন করল। অনুষ্ঠান শেষ হলে শিক সেল বললেন, আরে, এটা তো আমি স্কুলে না গিয়েই শিখতে পারি। তার বোন তাকে বলল যে, যদি সে তা পারে তবে দেখাক না কেন। ব্যস, তিনি মঞ্চের মাঝখানে গিয়ে স্থানীয় টেলিগ্রাফ অপারেটরের অনুকরণ করে অভিনয় শুরু করে দিলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই গ্রাম্য লোকগুলি তার অভিনয় দেখে হেসে গড়িয়ে পড়ল আসন থেকে। রঙ্গমঞ্চের ম্যানেজার তাকে নিয়োগ করে নিলেন, সাপ্তাহিক দশ ডলার হিসেবে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করলেন। এতে শিকের সমস্ত জীবনটাই পালটে গেল। তারপর তিনি শিকাগোর দিকে ছুটলেন, মঞ্চে একটা চাকরি নিলেন এবং কীভাবে লোককে চমক লাগানো যায় তার মহড়া দিতে থাকলে তার বেতন ছিল অত্যন্ত কম, তাই তার কাছে প্রতিটি পেনিও ছিল মূল্যবান। অবশ্য তারপর নিজের অধ্যবসায় ও ঐক্যান্তিক আগ্রহ তাকে একজন শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান এনে দিয়েছিল। তিনি হোটেলের জিনিস খেতেন না, তাই যেখানেই যেতেন সাথে করে একজন বাবুর্চি নিয়ে যেতেন। তার সাথে একট স্টিলের ট্রাঙ্কও থাকত, ট্রাঙ্কটাকে তিনি হাজার হাজার কৌতুকের পুস্তিকা রাখার আলমারিতে পরিণত করেছিলেন। তিনি ব্রডওয়ের ছয়টি সঙ্গীত নাটকে অভিনয় করেন। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত হর্নপ্লেয়ার। কিন্তু নিজে হর্ন বাজাতে পারতেন না। তিনি প্যারিস সম্পর্কে লেখা নাট্য প্রদর্শনীতে অভিনয় করে পঞ্চাশ হাজার ডলার উপার্জন করেছিলেন; কিন্তু জীবনে কখনো প্যারিস দেখেন নি। ‘দ্য স্পেশালিস্ট’ বইটি রচনা করে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থোপার্জন করলেন আর তা দিয়ে আরেকটা বই লিখলেন, তার নাম ‘দ্য কর্ন হাস্কার ক্রেশিজ দ্য মোভিয়া’। নাট্যমঞ্চে হাজার দর্শকের সামনে দাঁড়াতে তিনি ভয় লজ্জাবোধ করতেন না; কিন্তু প্রেমিকার কাছে প্রথম বিয়ের প্রস্তাব করার সময় তিনি তোতলাতে শুরু করে দিলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *