ইভানজিলিন বুদ : একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুখী মহিলা

ইভানজিলিন বুদ : একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুখী মহিলা

ইভানজিলিন বুদ ছিলেন শুক্র আক্রমণের জন্য ঘটিত সালভেসন আর্মির প্রধান সেনা নায়িকা। তার বাহিনীতে তিরিশ হাজার অফিসার পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছত্রিশটি দেশের ক্ষুধার্তদের ক্ষুধা দূর করার এবং আশিটি বিভিন্ন ভাষায় প্রেম বিতরণে রত ছিল।

তিনি ছিলেন একজন সবচাইতে মনোমুগ্ধকর এবং আকর্ষণীয় মহিলা, তাঁর কাছে কম করে হলেও একহাজার বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল। কোটিপতি থেকে শুরু করে জেলে কৃষক শ্রেণীর লোকেরা তাঁর পাণি প্রার্থনা করেছে কিন্তু তিনি সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করে চিরকুমারী থেকে গেলেন। তাঁর বয়স সত্তর বছর হয়ে যাবার পরেও তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল।

ইভানজিলিন ছিলেন সত্যিই একজন চমৎকার মহিলা। আমি শুনেছি যখন তাঁর দাদি নানি হওয়ার বয়স হয়ে গিয়েছিল তখন তার লালচে কালো চুলগুলোতে সবে দু-এক গাছি পাক ধরতে শুরু করেছিল। তখনো তারুণ্যের উচ্ছলতায় ঝলমল করছেন। তিনি একটি দুর্দান্ত লক্ষনরত ঘোড়ায় চড়তেন এবং অনায়াসে তাকে বাগে আনতে পারতেন। ঘোড়া মালিকেরও ঐ ঘোড়ার পিঠে চড়তে সাহস হল না বল ইভানজিলিন খুব সস্তায় ঘোড়াটি কিনে নিয়েছিলেন, তার নাম ছিল ‘গোল্ডেন হার্ট’। যখন তিনি এর পিঠে সওয়ার হয়ে চিৎকার করে বলতেন, ‘ওকে যেতে দাও।‘

গোল্ডেন হার্ট তখন একবার লাফিয়ে একবার বসে এবং সামনে-পিছনে পাশে দোলাদোলি শুরু করে দিত। তারপর ছুটে চলত। তিনি ঘোড়াটিকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। প্রতিদিন সকালে তিনি একঘণ্টা ঘোড়া চালাতেন। একহাতে লাগাম ধরে আর অন্য হাতে কাগজে লেখা বক্তৃতা দিয়ে জঙ্গলের মধ্যদিয়ে দ্রুতবেগে ঘোড়া ছুটিয়ে নিয়ে যেতেন আর বক্তৃতা আবৃত্তি করেতেন।

ইভানজিলিন বুদ একবার তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ লোমহর্ষক অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। ঘটনা ঘটেছিল তখন যখন ইউক্রেনের নব-আবিষ্কৃত স্বর্ণখনির দিকে সবাই ছুটে চলছে। অজস্রলোক দ্রুতবেগে স্বর্ণখনির দিকে ছুটে চলছে। ইভানজিলিন বুঝতে পারলেন যে সেখানে সালভেসন আর্মির প্রয়োজন হবে। দুইজন নার্স ও তিন-চারজন সহকারী নিয়ে ইউক্রেনে যাত্রা করলেন। যখন স্ক্যাগওয়েতে পৌঁছলেন তখন সেখানে ভীষণ অভাবে অনেকেরই খাবার জুটছিল না, তারা সবাই বন্দুক নিয়ে ঘুরছিল। তিনি শুনতে পেলেন লোকেরা ইউক্রেনের ডিলিঞ্জার ক্লনডাইকের হত্যাকারী সোপি স্মিথ সম্বন্ধে বলাবলি করছিল। সোপি স্মিথ দল বল নিয়ে ওত পেতে থাকত এবং খনিজীবীরা খনি থেকে ফেরার পথে তাদের কাছে থেকে স্বর্গরেণু কেড়ে নিতে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদেরকে শায়েস্তা করার জন্য এক সশস্ত্র পুলিশ দল প্রেরণ করে কিন্তু স্মিথ তাদের সবাইকে গুলি করে হত্যা করে। ইভানজিলিন যেদিন সেখানে পৌঁছেন সেদিনও পাঁচজন হতভাগ্যকে জীবন দিতে হয়েছিল। ইভানজিলিন সে রাতে ইউক্রেন নদীর তীরে একটা ধর্মসভা করেন।

পঁচিশ হাজার নিঃসঙ্গ লোকের কাছে তিনি ধর্ম প্রচার করেন এবং অনেক বছর আগে তারা তাদের মায়ের মুখে যে গান শুনেছিল তাদেরকে দিয়ে সেই গান গাওয়ালেন যিশু, আমার আত্মার প্রেমিক, আমার ঈশ্বরের নিকটবর্তী তোমাকে এবং বাড়ি, মায়াভরা বাড়ি। ওই রাত্রিটি ছিল অসম্ভব শীতের, তিনি যখন গান গাচ্ছিলেন, একব্যক্তি একটা কম্বল এনে তার গায়ে জড়িয়ে দিল। রাত ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলার পর লোকজনকে ধন্যবাদ দিয়ে বুদ ও তার সঙ্গীরা পাইনগাছের নিচে মাটিতে ঘুমুতে গেলেন। তারা অস্ত্রহাতে একদল লোককে এগোতে দেখলেন। লোকগুলি তাদের কাছে এসে থামল এবং দলপতি টুপি খুলে বলল, আমি সোপি স্মিথ, আর আমি জানাতে এসেছি যে আপনার গান আমার খুবই ভালো লেগেছে। আপনি গান গাচ্ছিলেন তখন কম্বলটা আমিই আপনার জন্য পাঠিয়েছিলাম। ইচ্ছে করলে আপনি ওটা রেখে দিতে পারেন। একটা কম্বলকে হয়তো একটা উপহারসামগ্রী বলে মনে হবে না কিন্তু যেখানে শীতে ও আর্দ্রতায় লোক মারা যাচ্ছিল সেখানে এটা ছিল একটা রাজকীয় উপহার। বুদ তাকে জিজ্ঞেস করলেন স্ক্যাগওয়েতে তিনি কোনো বিপদে পড়বেন কি না। সে উত্তর দিল, ‘না, আমি যতক্ষণ আছি, ততক্ষণ অন্তত নয়। আমি আপনাকে রক্ষা করবো।’ ইভানজিলিন অত্যন্ত আশ্বস্ত হলেন। তারার নিশীথসূর্যের আলোকিত রাতে তিনি তার সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে কথা বললেন। তিনি বললেন, আমি জীবন দিচ্ছি আর তুমি তা নিচ্ছ, এটা ঠিক নয়। তুমি জয়লাভ করতে পার না, তারা দু’দিন আগে বা পরে তোমায় হত্যা করবে। তার সঙ্গে শৈশব এবং মা সম্বন্ধে কথা বললেন। স্মিথ আবেগে বিগলিত হয়ে বলল, সে তার দাদির সাথে মুক্তিবাহিনীর সভায় যেত, গান গাইত এবং হাততালি দিত। সে স্বীকার করল যে, মৃত্যুশয্যায় তার দাদি তাকে, তারা মুক্তিবাহিনীর সভায় যে গানটা একত্রে শিখেছিলেন, সে গানটা গাইতে বললেন। সে গেয়েছিল,

“আমার অন্তর এখন তুষারের চেয়ে শুভ্র
কারণ এখানে যিশু বাস করছেন!
আমার পাপ অসংখ্য কিন্তু আমি জানি
তা ক্ষমা পেয়েছে।
তাই আমার সত্তায় আর কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।”

মিস বুদ তাকে তার সাথে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নতজানু হতে বললেন। তারপর মুক্তিবাহিনীর একজন মেয়ে আর উত্তরাঞ্চলের সর্বাপেক্ষা কুখ্যাত ডাকাত সোপি স্মিথ একসাথে নতজানু হয়ে বসে প্রার্থনা করলেন এবং কাদলেন। সোপির চোখে তখন অশ্রু ঝরছিল। সে বুদের হাত ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করল যে সে আর মানুষ খুন করবে না এবং সে আত্মসমর্পণ করবে। বুদও তার কাছে প্রতিজ্ঞা করলেন যে তার শাস্তি লঘু করার জন্য সরকারের ওপর তার সমস্ত প্রভাব খাটাবেন। ভোর চারটায় স্মিথ চলে গেল। সকাল নয়টায় সে তার কাছে টাটকা রুটি, পিঠা, আর এক পাউন্ড মাখন পাঠিয়ে দিল। এসব খাদ্য ছিল সেখানে খুবই মূল্যবান। এর দুদিন পর সোপি স্মিথ খুন হল আর তার হত্যাকারীর সম্মানার্থে স্ক্যাগওয়েবাসী একটা স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করল।

ইভানজিলিন ছিলেন একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুখী ব্যক্তি। এইজন্য সুখী যে তিনি অন্যের জন্য জীবন যাপন করতেন। তার জীবনের নিগূঢ় বাসনা হল কুলি মজুর থেকে শুরু করে যত লোকের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হবে তাদের প্রত্যেককে আর একটু ভালো করা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *