আর জোলসন : দারিদ্র্যকে যিনি জয় করেছিলেন

আল জোলসন : দারিদ্র্যকে যিনি জয় করেছিলেন

আমেরিকায় মাত্র একজন অভিনেতাই আছেন যিনি এক মিলিয়ন ডলার মূল্যের চুক্তিপত্র ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক চিত্র তৈরি করেন এবং হলিউডের সবচেয়ে বেশি বক্স অফিস হিট করা চিত্রটি নির্মাণ করেছেন, যে ছবি এক কোটি কুড়ি লক্ষ ডলার আয় করতে সক্ষম হয়েছে। এই বিখ্যাত ব্যক্তিটির নাম আল জোলসন। আপনারা তাকে ছবিতে দেখেছেন, তার গাওয়া গান মুখে মুখে আবৃত্তি করেছেন এবং কৌতুক শুনে হেসেছেন। তার আসল নাম আশা ইউয়েন্সন-কিন্তু তিনি সবার কাছে আল জোলসন নামেস পরিচিত।

জোলসন কিছুমাত্র কাজ না করেই প্রায় এক মিলিয়ন ডলার বেতন পান। তার নিয়োগকারী ইউনাইটেড আর্টিস্টস-এর হাতে কোনো ছবি বানাবার স্ক্রিপ্ট ছিল না বলে তাকে বিনা কাজে এই বেতন দিতে বাধ্য হয়েছিল।

একসময় তিনি এমন এক অপ্রত্যাশিত কাণ্ড ঘটালেন যা হলিউডের চিত্রশিল্পকে এক সম্ভাবনাময় ও উজ্জ্বলতার শিখরে পৌঁছে দিল। তখন চলচ্চিত্র ব্যবসায়ে একটা মন্দাভাব বিরাজিত ছিল। তার আজীবনের বন্ধু ইউনাইটেড আর্টিস্টের প্রধান জোসেফ সেকংক তখন ব্যবসায়ে প্রচুর লোকসান দিচ্ছিলেন। তার সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিপত্র অনুসারে জোলসন তখনো এক মিলিয়ন ডলার পাওনা আছেন; কিন্তু জোলসন সেই চুক্তিপত্রটা ছিঁড়ে ফেললেন এবং জোসেফকে ফেরত দিয়ে বললেন, আমি যখন কোনো কাজ করারই সুযোগ পাচ্ছি না, আমাকে কোনো পয়সাকড়ি দেবার প্রয়োজন নেই।

বাল্যকালে জোলসনের যক্ষ্মা হয়েছিল একবার। তিনি হাসপাতলের এক দাঁতব্যচিকিৎসালয়ে গেলেন। ডাক্তার তাকে বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র দিলেন। কিন্তু ওষুধ আনতে গেলে যখন জানতে পেলেন এক বোতল ওষুধের জন্য তাকে দশ সেন্ট মূল্য দিতে হবে তখন দশ সেন্ট তার কাছে ছিল না–ওই ওষুধটা আজ পর্যন্ত তিনি পান নি। বলা বাহুল্য ওই ওষুধ ছাড়াই তিনি আরোগ্য লাভ করেছেন। কিন্তু দশ সেন্টের অভাবে ওষুধটা কিনতে না পারাতে তার মনের অনুভূতি কী হয়েছিল তা কোনো দিনও ভোলেন নি। এই অনুভূতির ফলশ্রুতিতে তিনি লেক সেরানেকের যক্ষ্মা হাসপাতালে গরিবদের বিনা পয়সায় চিকিৎসার্থে বছরে বিশ হাজার ডলার দান করেন।

আমি একসময় জোসনকে তার জন্ম তারিখের কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে বললেন যে, তিনি জানেন না। দরিদ্র পিতামাতার খড়ের চাল আর পাথরের মেঝে-অলা এক ছোট্ট ঘরে তার জন্ম হয়। সেখানকার প্রতিটি বছর ছিল একই রকমের বৈচিত্র্যহীন। বাবা-মা তার মতো একটা ছেলের জন্মতারিখ মনে রাখার মতো একটা নগণ্য ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামালেন না। তিনি বিখ্যাত হবার পর বন্ধুরা জন্মদিনের উপহার দিতে চাইলে তাকেই একটা পছন্দসই জন্মতারিখ বের করতে হল। তিনি জানতেন বসন্তকালে অভিনেতাদের আর্থিক অবস্থা ভালো থাকে! তাই সে মাসটাকে জন্মগ্রহণের মাস বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। ঠিক করলেন জন্মতারিখ হবে–১৯৮৮ সালের ২৬ মে।

একদা জোলসনকে ওয়াশিংটন থেকে নিউইয়র্ক আসার জন্য কপর্দকহীন অবস্থায় চুরি করে গাড়ি চড়ে আসতে হল। তিনি তখন এতই আনাড়ী ছিলেন যে নিউ জার্সির নিউইয়র্কে গাড়ি পৌঁছলে তিনি তা নিউইয়র্ক মনে করে নেমে পড়লেন! যখন ভুল বুঝতে পারলেন তখন তাকে মশার কামড় খেয়ে ঘাসের ঝোপে ঘুমোতে হল। পরে যখন নিউইয়র্ক পৌঁছলেন তখন তিনি পার্কের বেঞ্চ কিংবা ট্রাকের উপর অনাহারে ও অনাদরে।

লি সুবার্ট নামে এক ভদ্রলোক মন্তব্য করেছিলেন যে, আমেরিকায় মাত্র দু-জন অভিনেতাই আছেন যারা যে কোনো বড় শহরে গিয়ে কেবলমাত্র জনপ্রিয়তার জোরে যে কোনো রঙ্গমঞ্চ দর্শকে ভরিয়ে দিতে পারেন-তাদের একজন হলেন ফ্রেড স্টোন, অপরজন এই আল্ জোলসন। প্রথম অবস্থায় অভিনয় ক্ষমতা, দক্ষতা ও দারিদ্র্যের জন্য হতাশ ছিলেন কিন্তু পরে নিজের অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের ফলেই হতে পেরেছিলেন বিশাল অর্থশালী ও বিখ্যাত অভিনেতা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *