জন ডি. রকফেলার : যার ধন সম্পদ এখনো বেড়ে চলেছে

জন ডি. রকফেলার : যার ধন সম্পদ এখনো বেড়ে চলেছে

জন ডি. রকফেলার, যিনি বিশ্বের ইতিহাসে সম্ভবত সর্বাধিক ধনসম্পদের মালিক হয়েছিলেন।

প্রথম জীবনে রকফেলার যখন ঘণ্টায় মাত্র চার সেন্টের বিনিময়ে কাঠফাটা রোদের নিচে আলু ক্ষেতে লোহার কোদাল নিয়ে কাজ করেছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবেরের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা কয়েকজন। জন ডি, রকফেলার তাঁর অপরিসীম অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন।

রকফেলার তাঁর মাকে হাঁস-মুরগি পালনে সাহায্য করে তাঁর জীবনের প্রথম ডলারটি উপার্জন করেছিলেন। তিনি মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তাঁর সুবিশাল আট হাজার একর জমিতে চমৎকার এক পাল মুরগি পুষতেন যেগুলো দেখে তিনি তাঁর শৈশবস্মৃতি মনে করতেন।

রকফেলারকে তার মা মুরগি পোষার জন্য যে অর্থ দিতেন তা তিনি খরচ না করে একটা ফাটা অব্যবহৃত চায়ের পেয়ালায় জমাতেন। এ ছাড়াও দিনে ৩৭ সেন্টের বিনিময়ে এক কৃষিখামারে কাজ করতেন। প্রথম অবস্থায় ৫০ ডলার না হওয়া পর্যন্ত তিনি পুরো পারিশ্রমিকটাকেই জমা করতেন। এরপর ওই ৫০টি ডলার শতকরা ৭ ডলার সুদে তার নিয়োগকর্তাকেই ধার দিলেন। তিনি দেখলেন যে দশ দিন কঠোর শ্রম দিয়ে তিনি যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারেন, ঐ বিনিয়োগকৃত পঞ্চাশ ডলার তার জন্য এক বছরে সমপরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম। তিনি বলেছেন, ‘আমি নিজে টাকার দাস না হয়ে টাকাকেই আমার দাস বানাব।’

প্রথম জীবনে রকফেলার যে মেয়েটির প্রেমে পড়েছিলেন সে মেয়েটি তাঁকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেছিল। মেয়েটির মা বলেছিলেন, ‘রকফেলারের মতো একজন স্বল্প আয়সম্পন্ন মানুষ যার উন্নতির আশা অত্যন্ত ক্ষীণ, তার হাতে সঁপে দিয়ে আমার মেয়েকে জলে ভাসিয়ে দিতে পারি না।‘ অথচ এই লোকটিই পরবর্তীকালে আমেরিকার বিখ্যাত ধনকুবের উলওয়ার্থ, ডিউক ও হ্যারিম্যান একত্রে যত অর্থ সম্পদ উপার্জন করেছিলেন, তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ সম্পদ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

রকফেলার কখনো কলেজে পড়েন নি। স্কুল জীবন শেষ করে কয়েক মাসের জন্য একটি বাণিজ্যিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করেছেন মাত্র। ষোল বছর বয়সেই বিদ্যায়তনে শিক্ষা গ্রহণ শেষ হয়ে যায়।

অথচ তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ কোটি ডলার দান করেছেন।

তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধীরস্থির ও শান্তপ্রকৃতির মানুষ, কখনো উত্তেজিত হতেন না কিংবা তাড়াহুড়ো করতেন না। যখন তিনি স্ট্যান্ডার্ড ওয়েল কোম্পানির প্রধান ছিলেন, তার অফিসে প্রতিদিন দুপুরবেলা একটি নির্ধারিত কাউচে আধঘণ্টা ঘুমাতেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতিদিন এমনি একটু একটু করে পাঁচবার ঘুমানোর অভ্যেস ছিল তাঁর।

রকফেলারের বয়স যখন পঞ্চান্ন তখন তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ক্ষেত্রে একটি অন্যতম কাজ হয়েছিল। কারণ নিজের অসুস্থতাজনিত ব্যাপারে রকফেলার চিকিৎসাবিজ্ঞানে গবেষণার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা দান করে উৎসাহিত করেছিলেন। এর ফলে গঠিত হয়েছে ‘রকফেলার ফাউন্ডেশন’ যা সারা বিশ্বজুড়ে মানবস্বাস্থ্যের উন্নয়ন কল্পে প্রতি মাসে দশ লক্ষ ডলার দান করে থাকে।

রকফেলারের জীবনের অন্য একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, তিনি ৭৫,০০,০০,০০০ ডলার দান করেছিলেন। বিশ্বের ইতিহাসে আর কোনো লোক এত অর্থ দান করেন নি।

তিনি গির্জার ব্যাপারে গভীর উৎসাহী ছিলেন। কখনো নাচতেন না, থিয়েটারে যেতেন না এবং ধূমপান বা মদ্যপান করতেন না। প্রতিবার খাদ্যগ্রহণের আগে তিনি প্রার্থনা করতেন এবং প্রতিদিনই বাইবেল পাঠ শুনতেন। এতদিন তিনি উন্নত জীবনের গান এবং কবিতা পাঠ শুনতেন।

রকফেলারের ধনসম্পদ এখনো গড়ে প্রতি মিনিটে বেড়ে চলেছে প্রায় একশ’ ডলার করে; তবু তাঁর জীবনের একমাত্র উচ্চাভিলাষ ছিল একশত বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার। তিনি বলেছিলেন যে, যদি তিনি ১৯৩৯ সালের ৮ই জুলাই তার শততম জন্ম বার্ষিকী পর্যন্ত জীবিত থাকেন, তাহলে পোকান্টিকো হিলস-এ অনুষ্ঠিতব্য সেই মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানটিতে তিনি ব্যান্ডদল পরিচালনা করবেন। আর যে বাজনাটা বাজাবেন তা হল ম্যাগি, তুমি এবং যখন আমি তরুণ ছিলাম।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *