১১. বন্ধুত্ব লাভের সহজ পথ

১১. বন্ধুত্ব লাভের সহজ পথ

কি করে বন্ধু পেতে হয় জানার জন্য এ বই পড়ার দরকার কি? পৃথিবীর সব সেরা বন্ধুত্ব অর্জন করা মানুষটির কৌশলটাই একবার পড়ে ফেলুন না কেন? সে কে জানেন না? হয়তো আগামীকালই তাকে দেখবেন রাস্তা দিয়ে আসছেন আর তার সঙ্গে আপনার দেখা হয়ে যাবে। আপনি তার দশফিটের মধ্যে আসতেই সে তার ল্যাজ নাড়তে চাইবে। আপনি তাকে থামিয়ে তার পিঠ চাপড়ে আদর করলেই সে প্রায় লাফিয়ে উঠে জানিয়ে দেবে আপনাকে সে কতখানি পছন্দ করে। আপনিও বুঝতে পারবেন তার এই আনন্দ প্রকাশের মধ্যে কোনোরকম উদ্দেশ্য একেবারেই নেই। সে আপনাকে কোনো কিছু বিক্রি করতে চায় না বা আপনাকে বিয়ে করতেও চায় না।

কোনোদিন কী একবার ভাবতে চেয়েছেন একমাত্র কুকুরকেই জীবন ধারণের জন্য কোনোরকম কাজ করতে হয় না? মুরগিকে ডিম পাড়তে হয়, গরুকে দুধ দিতে হয়, কানারি পাখিকে গান গাইতে হয়। কিন্তু কুকুর বেঁচে থাকার জন্যে আপনাকে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই দেয় না।

আমার যখন পাঁচ বছর বয়স আমার বাবা পনের সেন্ট দিয়ে হলদে লোমওয়ালা একটা কুকুর ছানা এনে দিয়েছিলেন। এই কুকুর ছানাটা আমার ছোটবেলার সারাক্ষণে আনন্দ সঙ্গী ছিল। প্রত্যেক দিন বিকালে প্রায় সাড়ে চারটের সময় সে বাগানের সামনে তার সুন্দর চোখ মেলে আমার অপেক্ষা পথ চেয়ে বসে থাকত। আর আমার গল্প শুনতে পেলেই প্রায় বন্দুকের গুলির মতো ছিটকে বেরিয়ে এসে দারুণ আনন্দে আমাকে তার খুশির ভাব জানিয়ে চিৎকার করে চলত।

টিপি প্রায় পাঁচ বছর ধরে আমার সারাক্ষণের সঙ্গী ছিল। তারপর এক দুঃখময় রাত্তিরে কোনোদিন সে রাতের কথা ভুলব না-সে আমার মাত্র দশ ফিটের মধ্যে বাজ পড়ে মারা যায়। টিপির মৃত্যু আমার ছোটবেলার জীবনের একটা চরম শোকাবহ ঘটনা।

মনস্তত্ত্ব সম্বন্ধে তুমি কোনো বই পাঠ করোনি টিপি। এর দরকারও ছিল না। কোনো ঐশ্বরীক ক্ষমতার মধ্য দিয়েই তুমি জানতে অন্য মানুষদের সম্পর্কে আগ্রহ জাগাতে চেষ্টা করে লাভ হবে না।

এ সত্ত্বেও কিন্তু আমি জানি কত লোকেই না অন্য সকলকে তাদের প্রতি আগ্রহান্বিত করার চেষ্টায় প্রাণপাত করে চলে।

এটা অবশ্যই জানা কথা এতে কোনো কাজ হয় না। মানুষ আপনার সম্বন্ধে মোটেই আগ্রহান্বিত নয়। তারা আমার প্রতিও না। তারা কেবল নিজেদের সম্পর্কেই শুধু আগ্রহান্বিত-সকাল, দুপুর, সন্ধ্যে সবসময়েই।

নিউইয়র্ক টেলিফোন কোম্পানি একবার বেশ ধারাবাহিক টেলিফোন কথাবার্তা শুনে হিসেব করার চেষ্টা চালায় সবচেয়ে কোনো কথাটা বেশি ব্যবহার হয় জানার জন্য। ঠিকই আন্দাজ করেছেন আপনারা-কথাটা হল ‘আমি’ ‘আমি’…হ্যাঁ, ‘আমি’ এই সর্বনামটাই ৫০০ টেলিফোনের কথাবার্তায় প্রায় ৩৯৯০ বার ব্যবহার হয়। ভাবুন শুধু ‘আমি’, ‘আমি’, ‘আমি’…

যে গ্রুপ ছবিতে আপনিও আছেন সেটা হাতে নিয়ে সবার আগে কাকে দেখার চেষ্টা করেন বলুন তো?

আপনি যদি ভেবে থাকেন লোকে আনার প্রতি আগ্রহান্বিত তাহলে এই প্রশ্নটার জবাব দিন : আপনার আজ রাতে যদি মৃত্যু হয় তাহলে কতজন লোক আপনার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আসবে।

লোকে কেন আপনার সম্পর্কে আগ্রহী হবে, প্রথমে তার সম্পর্কে আপনি যদি আগ্রহী না হন? এবার একটা পেন্সিল হাতে নিয়ে আপনার উত্তরটা চটপট লিখে ফেলুন :

আমরা যদি কেবল লোককে আগ্রহী করার চেষ্টা করি আর আমাদের প্রতিও আগ্রহ জাগাতে চাই, তাহলে কখনই সত্যিকার কোনো বন্ধু পাব না। বন্ধু, সত্যিকার বন্ধু এভাবে পাওয়া যায় না।

নেপোলিয়ান এইভাবে চেষ্টা চালিয়েছিলেন। জোসেফাইনের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন : ‘জোসেফাইন, মানুষ ভাগ্যবান হতে পারে আমি তাই হয়েছি, তবুও ঠিক এই মুহূর্তে, সারা পৃথিবীতে একমাত্র তুমিই একজন যার উপর নির্ভর করতে পারি’। ঐতিহাসিকদের সন্দেহ আছে নেপোলিয়ান জোসেফাইনের উপরেও আস্থা রাখতে পেরেছিলেন কি না।

ভিয়েনার বিখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদ অ্যালফ্রেড অ্যাডলার ‘হোয়াট লাইপ সুড মিন টু ইউ’ নামে একটা বই লিখেছিলেন। বইটাতে তিনি লিখেছেন : যে বিশেষ লোক অন্যদের সম্পর্কে আগ্রহী হতে চায় না সে পৃথিবীতে জীবন কাটাতে সবচেয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হয় আর অন্যকেও আঘাত দেয়। এই ধরনের মানুষ থেকেই সবরকম মানবিক ব্যর্থতা জন্ম দেয়।’

মনস্তত্বের উপর আপনারা প্রচুর ভালো ভালো বক্তব্য পাঠ করতে পারেন কিন্তু এরচেয়ে চমৎকার কোনো বক্তব্য খুঁজে পাবেন না। এক কথা বারবার বলতে চাই না তাহলেও অ্যাডলারের বক্তব্য এতই চমৎকার সারগর্ভ যে আবার বলার লোভ সামলাতে পারছি না।

‘যে বিশেষ লোক অন্যদের সম্পর্কে আগ্রহী হতে চায় না সে পৃথিবীতে জীবন কাটাতে সবচেয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হয় আর অন্যকেও আঘাত দেয়।‘

আমি একবার নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটগল্প লেখার ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলাম আর এই ক্লাস চলার সময় ‘কোলিয়ার্স পত্রিকার সম্পাদক আমাদের কিছু বলেছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর টেবিলে রোজ জমা পড়া ডজন ডজন ছোটগল্পের মধ্যে থেকে একটা মাত্র তুলে নিয়ে কিছু অংশ পড়লেই তিনি বুঝতে পারেন লেখক মানুষকে ভালোবাসেন কিনা। তিনি বলেন : লেখক যদি মানুষকে ভালো না বাসেন তাহলেও মানুষও তাঁর গল্প ভালোবাসবে না।’ ওই অভিজ্ঞ সম্পাদক ছোটগল্প নিয়ে কথা বলার সঙ্গে দুইবার থেকে মার্জনা চেয়ে বলেন তিনি একটা উপদেশ দিতে চান। তাঁর কথায় সেটা হল এই রকম : আমি আপনাদের যা বলছি আপনাদের কেউ কেউ হয়তো তাই বলবেন। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনারা যদি সফল গল্প লেখক হতে চান তাহলে মানুষ সম্পর্কে আপনাদের আগ্রহ থাকতেই হবে।

কল্পিত কাহিনী লেখার ক্ষেত্রে এটা যদি সত্য হয় তাহলে মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে এটা তিনগুণ বেশি সত্যি।

আমি একবার হাওয়ার্ড থানের সঙ্গে তাঁর সাজঘরে একটা সন্ধ্যা কাটিয়েছিলাম। ব্রডওয়েতে তিনি সে বার শেষবারের মতো প্রদর্শনীতে অংশ নেন। থান ছিলেন সেকালের বিখ্যাত একজন জাদুকর। তিনি একেবারে জাদুর কিংবদন্তী ছিলেন। চল্লিশ বছর ধরে বারবার তিনি সারা পৃথিবী ঘুরে মানুষকে তাঁর অলৌকিক জাদুর খেলা দেখিয়ে মুগ্ধ বিস্মিত করে তোলেন–মানুষ প্রায় বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে থাকত। ষাট লক্ষেরও বেশি মানুষ তার জাদু প্রদর্শন দেখার জন্য টিকিট কেটে প্রেক্ষাগৃহে ঢোকে আর তিনি প্রায় বিশ লক্ষ ডলার লাভ করেন।

আমি থানের কাছে তাঁর সাফল্যের গোপন রহস্য কি জানতে চেয়েছিলাম। অবশ্য স্কুলে তাঁর লেখাপড়ার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই–যেহেতু ছোট বেলায় তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে ছিলেন। নানা জীবিকাই তিনি তারপর নেন–প্রথমে হন মজুর। গাড়ির মধ্যে খড়ের গাদায় ঘুমিয়েও ছিলেন। দরজায় দরজায় ভিক্ষেও করেছিলেন বেঁচে থাকার জন্য। তাছাড়া রাস্তার সাইনবোর্ড আর বিজ্ঞাপন পড়েই তার পড়াশোনায় হাতে খড়ি।

জাদুবিদ্যা সম্পর্কে কি তার দারুণ কোনো জ্ঞান ছিল? না। তিনি নিজেই আমাকে বলেছিলেন, জাদুর খেলা বা ভোজবাজী সম্বন্ধে ঢের ঢের বই আছে আর তিনি যা জানেন বহু লোকও তাই জানে। কিন্তু তাঁর এমন দুটো জিনিস ছিল যা অন্য কারো ছিল না। প্রথমতঃ পাদপ্রদীপের সামনে তাঁর ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করার ক্ষমতা ছিল। তিনি ছিলেন এক দক্ষ প্রদর্শক। মনুষ্যচরিত্র তার ভালোই জানা ছিল। তিনি যাই করতেন, প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি, কণ্ঠস্বরের বিবৃতি, সামান্য ভু তোলা–সবকিছুই খুব সতর্কতার সঙ্গে তিনি আগে থেকে অভ্যাস করে রাখতেন। আর তাঁর সমস্ত কায়দায় প্রায় সেকেন্ডের মধ্যে করতেন তিনি, একেবারে চোখের পলকে। কিন্তু এটাই তার সাফল্যের মূল আদৌ ছিল না। থার্স্টন মানুষ সম্পর্কে প্রকৃতই আগ্রহী ছিলেন। তিনি আমাকে বলেন যে, বহু জাদুরকই দর্শকদের লক্ষ্য করে নিজেদের বলতে চায় : হুম, আমার সামনে একদল গবেট বসে রয়েছে ওদের ঠিক বোকা বানাব। কিন্তু থার্স্টনের কৌশল ছিল একেবারে আলাদা। তিনি আমাকে বলেন-মঞ্চে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি নিজেকে বলতেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ যে এতসব মানুষ আমার খেলা দেখতে এসেছেন। এঁরাই আমার জীবনটা ভালোভাবে কাটাতে সম্ভব করে তুলেছেন। আর সেই কারণেই আমি ওঁদের আমার সব সেরা জাদুবিদ্যাই যথা সম্ভব দেখাতে চেষ্টা করব।

তিনি এটাও বলেছিলেন, পাদপ্রদীপের তলায় তিনি কখনই নিজেকে একথা না বলে দাঁড়াতেন না : ‘আমি আমার দর্শকদের ভালোবাসি, আমি আমার দর্শকদের ভালোবাসি। হাস্যকর বলে ভাবছেন? আপনার যেমন ইচ্ছে অবশ্য ভাবতে পারেন। আমি শুধু কথাগুলো আপনাদের কোনো মন্তব্য ছাড়াই শোনাচ্ছি যে কথাগুলো আমি শুনেছি বিশ্বের একজন সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ জাদুকরের কাছ থেকে।

মাদাম শূয়্যান-হিঙ্কও ঠিক এই কথাই আমাকে বলেন। খিদে আর ভগ্ন হৃদয়ে জ্বালা আর শোকাবহ জীবন কাটানোর ব্যর্থতায় সন্তানসহ একবার আত্মঘাতী হতে গিয়েছিলেন একেবারে তার চূড়ায়। আর শেষপর্যন্ত হয়ে উঠেছিলেন লক্ষ লক্ষ শ্রোতার সবার প্রিয় একজন গায়িকা। আর তিনিও স্বীকার করেছিলেন যে, তাঁরও সাফল্যের চাবিকাঠি হল এই যে তিনি মানুষ সম্পর্কে দারুণ আগ্রহী ছিলেন।

ঠিক এই রকমই ছিল থিয়োডোর রুজভেল্টের আশ্চর্যজনক জনপ্রিয়তার রহস্যের গোড়ার কথা। এমন কি তাঁর পরিচালকরাও তাকে ভালোবাসতো। তাঁর নিগ্রো পরিচালক জেমস্ ই, অ্যামোর্স তাঁর সম্পর্কে থিয়োডোর রুজভেল্ট হিরো টু হিজ ভ্যালে’ নামে একখানা বই লিখেছিল। ওই বইটায় অ্যামোস একটা ঘটনার সুন্দর বিবরণ দিয়েছে :

‘একবার আমার স্ত্রী প্রেসিডেন্টকে পাখি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিল। সে কোনোদিন কোয়েল পাখি দেখে নি, তাই প্রেসিডেন্ট তাকে ভালো করে বুঝিয়ে দেন। বেশ কিছুদিন পরে আমাদের কটেজের টেলিফোন বেজে উঠল [অ্যামোস আর তার স্ত্রী অয়েস্টার বের রুজভেল্ট এস্টেটে বাস করত]। আমার স্ত্রী টেলিফোনে সাড়া দিতেই স্বয়ং মি. রুজভেল্টের গলা শুনতে পেল। প্রেসিডেন্ট জানালেন তিনি ফোন করেছেন এটাই জানাবার জন্য যে তার জানালার সামনে একটা কোয়েল পাখি বসে আছে তিনি ইচ্ছে করলেই দেখতে পাবেন। এই রকম ছোটোখাটো ব্যাপার তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল। যখনই তিনি আমাদের কটেজের পাশ দিয়ে যেতেন, আমরা তখন কাছাকাছি না থাকলেও তিনি ডাক ছাড়তেন, ‘অ্যানি…জেমস্! যাওয়ার মুখে এটা ছিল তাঁর বন্ধুত্বের ডাক।

এমন একজন মানুষকে কর্মচারীরা না ভালোবেসে থাকে কেমন করে? তাছাড়া তাকে ভালো না বাসার কারণও ছিল না। রুজভেল্ট একবার হোয়াইট হাউসে আসেন। সে সময় প্রেসিডেন্ট ট্যাফট আর মিসেস ট্যাফট বাইরে ছিলেন। সাধারণ নিচের তলার মানুষদেরও যে তিনি কতটা ভালোবাসতেন সেটা বোঝা যায় এটা থেকেই যে তিনি হোয়াইট হাউসের সমস্ত পরিচারকদেরই নাম ধরে ডাকতেন, এমন কি রান্নাঘরের পরিচারিকাকেও। এ বিষয়ে আর্টিবাট লিখেছেন : ‘তিনি রান্নাঘরের পরিচারিকা অ্যালিসকে দেখতে পেয়ে বললেন যে তখনো ভুট্টার রুট বানায় কি না। অ্যালিস জানাল সে মাঝে মাঝে বানায় বটে চাকর-বাকরদের জন্য, তবে উপরতলার কেউ তা খায় না।

রুজভেল্ট উজ্জ্বল হয়ে বললেন : তাদের রুচিটাই বাজে। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা হলে বলব।’

‘অ্যালিস প্লেটে করে তার জন্যে একটা রুটি নিয়ে এলে সেটা চিবোতে চিবোতে তিনি ফিসের দিকে চললেন। যাওয়ার সময় সমস্ত মালী আর মজুরদের শুভেচ্ছাও জানাতে চাইলেন…।

‘তিনি অতীতে যে ভাবে সবাইকে ডাকতেন সেই ভাবেই তাদের ডাকলেন। তারা নিজেরা এখনো তাঁর কথা ফিসফিস করে আলোচনা করে। আইক হুভার সজল চোখে একবার বলেছিল : দু বছরের এটাই ছিল আমাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় দিন, আমাদের কেউই একশ ডলারের বদলেও এটা হাতছাড়া করতে চাইতাম না।’

অন্যান্য মানুষের সমস্যা সম্পর্কে এত গভীর ভাবনাই ড. চার্লস এলিয়টকে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে সফল প্রেসিডেন্ট হবার মর্যাদা দিতে পেরেছে–আপনাদের হয়তো মনে আছে তিনিই গৃহযুদ্ধের শেষ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গোড়া অবধি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে চলেছিলেন।

তার কাজের ধারার একটা উদাহরণ দেয়া যাক। একদিন কলেজে প্রথম ভর্তি হওয়া নতুন ছাত্র এল. আর. জি. ক্র্যান্ডন প্রেসিডেন্টের অফিসে গিয়ে ছাত্রদের ঋণ ভাণ্ডার থেকে পঞ্চাশ ডলার ধার নিতে যায়। ঋণ মঞ্জুর হল। তার নিজের ভাষাতেই এবার সব শুনুন। এরপর আমি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চলে আসতে চাইছিলাম–তখন প্রেসিডেন্ট এলিয়ট বললেন, ‘দয়া করে একটু বসো। তারপর দারুণ অবাক হলাম তিনি যেই বললেন : আমি শুনলাম, তুমি নিজের ঘরে তোমার রান্না করে খাও। আমার মনে হয় কাজটা খুবই ভালো তোমার পক্ষে, বিশেষ করে ভালো আর যথেষ্ট খাবার যদি পাও। আমি যখন কলেজে পড়তাম তাই করতাম। তুমি কখনো মাংসের রুটি বানিয়েছ? জিনিসটা বানাতে পারলে খুবই ভালো, একটুও নষ্ট হয় না। আমি কীভাবে বানাতাম এবার শোন। তিনি এরপর আমাকে বুঝিয়ে দিলেন কি করে মাংস কেটে ধীরে ধীরে রান্না করতে হয় যাতে সবটা শুকিয়ে না গিয়ে বেশ শুকনো হয়, তারপর রুটির মধ্যে নিয়ে ঠাণ্ডা করে খেতে হয়।’

আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি তাদের প্রতি আগ্রহী হলে আমেরিকার সবচেয়ে নামী লোকদের নজর, সময় আর সহযোগিতা লাভ করা সম্ভব হয়। একটা উদাহরণ দিচ্ছি।

বেশ কয় বছর আগে আমি ব্রুকলীন ইনস্টিটিউট অব পার্টস্ অ্যান্ড সায়েন্সে গল্প লেখার পাঠক্রম পরিচালনা করেছিলাম। সেখানে আমরা ক্যাথলিন নরিন, ক্যালি হার্স, রিউপার্ট হিউনেন ইত্যাদি নামী আর ব্যস্ত লেখকদের ব্রুকলিনে এনে তাঁদের অভিজ্ঞতার বিষয় জানাতে অনুরোধ করি। অতএব আমরা তাঁদের চিঠি লিখে বললাম আমরা লেখার প্রশংসা করি আর তাদের পরামর্শ পেতে আমরা খুবই আগ্রহী, আমরা আরো জানাতে চাই তাদের সাফল্যের রহস্যই বা কি?

প্রতিটা চিঠিতে সই করেছিল, অন্তত : দেড়শ জন ছাত্র-ছাত্রী। আমরা লিখেছিলাম যে আমরা জানি তারা অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ-কোনো বক্তৃতা তৈরি করা তাদের পক্ষে বেশ কঠিন। আর তাই আমরা সঙ্গে পাঠালাম কিছু প্রশ্ন। যেগুলোর উত্তর পেলে আমরা তাদের কাজের ধারা বুঝতে পারব। তাদের এটা পছন্দ হল। কারো বা পছন্দ হয় না? অতএব তাঁরা তাঁদের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে ব্রুকলিনে এসে আমাদের সাহায্য করতে চাইলেন।

ঠিক একই রকম পদ্ধতিতে আমি জেসলি এম শ. থিয়োডোর রুজভেল্টের অর্থ সেক্রেটারিকে, স্ট্যাফেটের কেবিনেটের অ্যাটর্নি জেনারেল জর্জ ডব্লিউ উইকার্সহ্যামকে, ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টকে, আর আরো বহু বিখ্যাত মানুষকেই আমন্ত্রণ জানিয়ে ছাত্রদের জনতার কাছে বক্তৃতার বিষয়ে বলাতে সক্ষম হই।

আমাদের সকলেই, কসাই, রুটিওয়ালা বা সিংহাসনে বসা রাজা নাই হই, আমাদের যারা প্রশংসা করেন তাদের পছন্দ করি। জার্মানির কাইজারের কথাটাই উদাহরণ হিসেবে ধরুন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে তিনিই বোধহয় হয়ে পড়েন পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত আর বিতর্কিত একজন ব্যক্তি। এমন কি তাঁর নিজের দেশবাসীও তার বিরুদ্ধে চলে যায় আর তিনিও নিজের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে হল্যান্ডে পালিয়ে যান। তার বিরুদ্ধে মানুষের ঘৃণা এমন জায়গায় পৌঁছায় যে তাঁকে হাতে পেলে লোকে বোধ হয় টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলত বা আগুনে গলিয়ে ফেলত। এই রকম ক্রোধের আর ঘৃণার মধ্যে একটা ছোট্ট ছেলে কাইজারকে একখানা চিঠি লিখে তাতে তার আন্তরিকতা আর প্রশংসা জানিয়েছিল। ছোট ছেলেটি লিখেছিল অন্যরা যা বলে বলুক সে সব সময়েই উইলহেলমকে তাঁর সম্রাট হিসেবে ভালোবেসে যাবে। কাইজার চিঠিটা পেয়ে একেবারে আন্তরিকভাবে গলে যান আর ছেলেটিকে নিমন্ত্রণ করে পাঠান, সে যেন এসে তার সঙ্গে দেখা করে। ছেলেটি এসেছিল আর সঙ্গে তার মাও এসেছিল–আর কাইজার পরে তাকে বিয়ে করেন। ছোট ছেলেটিকে বন্ধুলাভ ও প্রভাব বিস্তার’ গোছের কোনো বই পড়তে হয় নি। ব্যাপারটা সে অন্তর থেকেই উপলব্ধি করেছিল।

আমরা যদি বন্ধুত্ব করতে চাই, তাহলে অন্যদের অন্য কাজ করতে প্রস্তুত থাকতে হবে–যে কাজ করতে চাই সময়, মানসিকতা, নিঃস্বার্থতা আর চিন্তাধারা। ডিউক অব উইন্ডসর যখন প্রিন্স অব ওয়েলস ছিলেন তখন দক্ষিণ আমেরিকা সফরে যাওয়ার আগে তিনি স্পানীশ ভাষা শিখতে শুরু করেন যাতে সে দেশে গিয়ে তাদের ভাষাতেই কথা বলতে পারেন। দক্ষিণ আমেরিকার মানুষ এজন্য তাঁকে খুবই ভালোবাসতো।

বহু বছর যাবৎ আমি এটা ঠিক করেছি আমার বন্ধু-বান্ধবদের জন্মদিনের তারিখটা মনে রাখতে হবে। কীভাবে? যদিও জ্যোতিষশাস্ত্র সম্বন্ধে আমার কণামাত্রও বিশ্বাস নেই তাহলেও আমি তাঁদের জিজ্ঞাসা করি কারো জন্মদিনের তারিখের সঙ্গে সেই মানুষের চরিত্র আর ভাবভঙ্গির কোনো সম্পর্ক আছে কি না? তারপর আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, তাঁর জন্ম মাস আর তারিখ কি? সে যদি বলে ২৪শে নভেম্বর, তাহলে আমি বারবার আউড়ে চলি–২৪শে নভেম্বর! ২৪ শে নভেম্বর! তারপর সে পিছনে ফিরলেই একটা কাগজে তার নাম আর জন্ম তারিখটা লিখে ফেলি। পরে সেটা জন্মদিনের একটা ডায়েরিতে লিখে রাখি। প্রত্যেক বছরের গোড়ায় ওইসব জন্ম তারিখ আমার ক্যালন্ডারে পর পর লিখে রাখি; ফলে সবই আমার সহজেই মনে থাকে। ঠিক তারিখটা হলেই তার কাছে আমার চিঠি বা টেলিগ্রাম পৌঁছে যায়। এর প্রতিক্রিয়া দারুণ হয়! কারণ পৃথিবীতে আমিই একমাত্র মানুষ হয়ে উঠি যার ব্যাপারটা মনে আছে।

আমরা যদি বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে চাই তাহলে মানুষকে অত্যন্ত সজীব ভঙ্গিতে আর উৎসাহ দিয়ে অভ্যর্থনা করা শুরু করি আসুন। কেউ টেলিফোন করলেই এমনভাবে হ্যালো’ বলুন যেন মনে হয় তার গলা পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন আপনি। দি নিউইয়র্ক টেলিফোন কোম্পানি তাদের অপারেটরদের শেখানোর জন্য নানা ব্যবস্থা করে তাকে যাতে তারা কেউ ফোন করলেই এমনভাবে আপনার নম্বরটা বলুন’ বলে যে মনে হয় সে সুপ্রভাত, আপনার সেবা করতে পেরে আনন্দিত’ এটাই বোঝায়। কাল টেলিফোন করার সময় কথাটা মনে রাখবেন।

কাজেকর্মে এই দার্শনিক তত্ত্বটাইক কাজ দেবে? এর বেশ কিছু উদাহরণ আমি দিতে পারি তবে সময়ের অভাব মাত্র দুটো দিচ্ছি।

নিউইয়র্ক শহরের একটা বড় ব্যাংকের চার্লস আর ওয়াল্টার্সের উপর দায়িত্ব পড়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য একটা গোপন রিপোর্ট তৈরি করার। তিনি জানতেন মাত্র একজন লোকেই তাঁর যেসব বিষয় জরুরি দরকার তা জানে। মি. ওয়াল্টার্স তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন–ভদ্রলোক বিরাট এক প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট। মি. ওয়াল্টার্সকে তার ঘরে নিয়ে যাওয়া হলে এক তরুণী দরকার মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে প্রেসিডেন্টকে জানাল তার জন্য ওই দিন কোনো ডাকটিকিট নেই।

‘আমার বাবা বছরের ছেলের জন্য ডাকটিকিট জোগাড় করছি’, প্রেসিডেন্ট ওয়াল্টার্সকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলেন।

মি. ওয়াল্টার্স এবার তাঁর কাজের কথায় এলে প্রশ্ন করা শুরু করলেন। প্রেসিডেন্ট কিন্তু বেশ ছাড়াছাড়া ভাব দেখাতে চাইছিলেন, তিনি দু’চারটে কথাই শুধু বললেন। কথা বলার উৎসাহই তার ছিল না, কোনোভাবেই তাকে দিয়ে বলানোও গেল না। সাক্ষাৎকার পর্ব ওখানেই শেষ হল।

‘খোলাখুলি বলছি, মি. ওয়াল্টার্স ক্লাসে তার কাহিনী বলতে গিয়ে জানালেন, ‘কি করা দরকার বুঝতে পারি নি। তারপরেই আমার মনে পড়ে গেল তার সেক্রেটারি কি বলেছিল–ডাকটিকিট, বার বছরের ছেলে… তখনই আমার মনে পড়ে গেল আমাদের বিদেশ দপ্তর ডাকটিকিট জমায়–সাত সমুদ্র পার হয়ে আসা বিভিন্ন মহাদেশের যত ডাকটিকিট।

‘পরদিন বিকেলে আমি আবার ভদ্রলোকর কাছে হাজির হলাম আর খবর পাঠালাম যে, তার ছেলের জন্য কিছু ডাকটিকিট এনেছি। আমাকে খাতির করে ভিতরে ডাকা হয়েছিল কি? হ্যাঁ, স্যার তাই হয়েছিল। তিনি আমার সঙ্গে এত জোরে করমর্দন করেন যেন কংগ্রেসের জন্য নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন। আনন্দে উচ্ছল হয়ে ফেটে পড়লেন ভদ্রলোক। আমার জর্জের এগুলো খুবই পছন্দ হবে’, ডাকটিকিটগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে তিনি বললেন এটা একবার দেখুন। সত্যিই দারুণ?

‘এরপর আমরা প্রায় আধ ঘণ্টা ডাকটিকিট নিয়ে আলোচনা করে আর তার ছেলে ছবি দেখে কাটালাম। তারপর তিনি একঘণ্টা ধরে আমি যে খবর চাইছিলাম তাই দিতে লাগলেন। সব খবরই তাঁর কাছ থেকে এসে গেল। আমাকে কোনোরকম চেষ্টাই করতে হল না। তার যা যা জানা ছিল সবই তিনি জানালেন আমায়। আর তারপর তার অধীনস্থ কর্মচারীদের ডেকে পাঠিয়ে তাদের জানা প্রশ্ন করে খবর দিলেন। নিজের সহকর্মীদের টেলিফোনও করলেন। বলতে গেলে খবরের আর রিপোর্টের একটা বোঝা আমার উপর চাপিয়ে দিলেন। খবরের কাগজের লোকদের হিসেবে আমি একেবারে বাজিমাত করেছিলাম বলা যায়।

আর একটা উদাহরণ দিচ্ছি :

ফিলাডেলফিয়ার সি. এম. ন্যাফলে জুনিয়ার প্রায় তিন বছর ধরে একটা মস্ত চেইনস্টোরকে কয়লা বিক্রি করার চেষ্টা চালান। কিন্তু ওই চেইন-স্টোর কোম্পানি শহরের বাইরের এক সরবরাহকারীর কাছ থেকেই কয়লা কিনে তা আবার মি. ন্যাফলের অফিসের দরজার সামনে দিয়েই নিয়ে আসত। এরপর একদিন মি. ন্যাফলে আমার ক্লাসে এসে ওই চেইন-স্টোরের বিরুদ্ধে তার গায়ের জ্বালা মিটিয়ে গাল দিলেন আর বললেন এরা হচ্ছে দেশের শত্রু ছাড়া কিছু না।

তিনি শুধু অবাক হয়ে ভাবতে চাইতেন তিনি ওদের কেন কয়লা বিক্রি করতে পারেন না।

আমি তাকে পরামর্শ দিলাম অন্য কৌশল কাজে লাগাতে। ছোট্ট করে বলল, যা ঘটেছিল সেটা এই রকম। আমরা এই বিতর্কসভায় আয়োজন করলাম-বিতর্কের বিষয় ঠিক হল : ‘চেইনস্টোর দেশের ভালো করার বদলে ক্ষতিই করে চলেছে।

ন্যাফেলে আমার পরামর্শে অন্য দিকেই নিলেন, তিনি চেইন স্টোরের হয়েই বক্তব্য রাখতে রাজি হলেন। তারপর সোজা হাজর হলেন যাদের মনে প্রাণে ঘৃণা করেন সেই চেইনস্টোরের একজন কর্মকর্তার আছে। তাকে তিনি বললেন : আমি এখানে কয়লা বিক্রি করতে আসি নি আমি শুধু আপনার কাছে একটা সাহায্যের জন্য এসেছি। তিনি এরপর ওই বিতর্ক প্রতিযোগিতার কথাটা জানিয়ে বললেন : আমি আপনার কাছে সাহায্য চাএত এসেছি এই কারণেই যে আমি জানি যে খবর চাই সেটা আপনারা ছাড়া কেউই দিতে পারবে না। প্রতিযোগিতাটা আমি যেমন ভাবেই হোক জিততে চাই, তাই যে সাহায্য দেবেন আপনি, তাতে কৃতজ্ঞ থাকব।’

এর পরের ঘটনা মি. ন্যাফেলের নিজের কথাতেই শুনুন :

‘আমি ভদ্রলোকের কাছে ঠিক এক মিনিট সময় দিতে অনুরোধ জানাই। এই শর্তেই তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাতে রাজি হন। আমার প্রয়োজনের ব্যাপারটা তাঁকে জানানোর পর আমাকে একটা চেয়ারে বসতে বলে তিনি আমার জন্য খরচ করেছিলেন ঠিক একঘণ্টা সাতচল্লিশ মিনিট। এরপর তিনি আর একজন কর্মকর্তাকে ডাকলেন, তিনি চেইনস্টোর নিয়ে একখানা বই লিখেছিলেন। তিনি যাবতীয় চেইনস্টোর সংস্থার কাছে চিঠি লিখে ওই বিষয়ে বিতর্ক সম্পর্কে একখানা বই আমাকে আনিয়ে দেন। তাঁর মতো হল এই চেইনস্টোর মানব সমাজের সেবা করে চছে। তিনি খুবই গর্বিত, সমাজের নানা স্তরের জন্য যা করে চলেছেন। কথা বলার ফাঁকে তাঁর মুখচোখ উজ্বল হয়ে উঠছিল। আর আমি স্বীকার করছি তিনি নানা অজানা বিষয়ে আমার দৃষ্টি উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন–এসব আমি স্বপ্নেও ভাবি নি। তিনি আমার মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ পাল্টে দেন।

আমি যখন চলে আসছিলাম, তিনি আমার সঙ্গে দরজা পর্যন্ত এলেন, তারপর আমার কাঁধে হাত রেখে বিতর্কে আমার সৌভাগ্য কামনা করলেন। পরে একসময় আবার দেখা করে আমায় বিতর্কে কি রকম হল জানাতেও অনুরোধ জানালেন। শেষ যে কথা তিনি আমায় বললেন তা হল : বসন্ত কালের শেষে আর একবার আমার সঙ্গে দেখা করবেন। আপনার কাছ থেকে কিছু কয়লা কিনব।’

আমার কাছে ব্যাপারটা একেবারে অলৌকিক। তিনি আমার কাছ থেকে কোনো রকম প্রস্তাব ছাড়াই কয়লা কিনতে চাইছেন। আর তাঁর সমস্যা সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে মাত্র দু ঘণ্টার মধ্যেই আমি অনেকটা অগ্রসর হয়েছি যা আমি আমার কয়লার প্রতি আগ্রহী করতে দশ বছর চেষ্টা করেও করতে পারতাম কিনা সন্দেহ।

আপনি নতুন কিছু আবিষ্কার করেন নি, মি. ন্যাফলে, কারণ বহু বছর আগে যীশুর জন্মেরও একশ বছর আগে বিখ্যাত এক রোমান কবি পাবলিয়ান সাইরাস মন্তব্য করেছিলেন : ‘আমরা অন্যের প্রতি তখনই আগ্রহী হই, অন্যেরা যখন আমাদের প্রতি আগ্রহী হয়।’

অতএব আপনি যদি চান লোকে আপনাকে পছন্দ করুক, তাহলে তার সবার সেরা নীতি হল এই রকম”

‘অন্যের প্রতি সত্যিকারভাবে আগ্রহী হয়ে উঠুন।‘

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *