০৭. মঞ্চারোহণ ও ব্যক্তিত্ব

০৭. মঞ্চারোহণ ও ব্যক্তিত্ব

কার্নেগী কারিগরী ইনস্টিটিউট একবার একশতজন খ্যাতনামা ব্যবসায়ীর মেধা সম্পর্কে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। যুদ্ধকালে সৈনিকদের যেভাবে পরীক্ষা নেয়া হয় ঠিক সেভাবেই এই পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। এই পরীক্ষার ভিত্তিতে ইনস্টিটিউট ঘোঘণা করে যে, ব্যবসায়ে মেধার চাইতে ব্যক্তিত্বের সাফল্য লাভ ঘটে অনেক বেশি। ..

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা, ব্যবসায়ীদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান, শিক্ষাবিদের জন্য মূল্যবান, মূল্যবান পেশাদার লেখকদের জন্য, বক্তাদের জন্য।

ব্যাক্তিত্ব–প্রস্তুতির কথা বাদ দিলে জনসভার বক্তৃতায় সাফল্যের সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ”অলঙ্কার পূর্ণ বক্তৃতায়,“ বলেছেন এলবার্ট হুবার্ট, “শব্দ নয়, বক্তৃতাদান পদ্ধতিরই জয় হয়। অর্থাৎ ধারণার চাইতে, চিন্তার চাইতে প্রকাশভঙ্গিরই গুরুত্ব বেশি। কিন্তু ব্যক্তিত্ব হচ্ছে অস্পষ্ট ও ছলনাময় ব্যাপার, সেগুলি সৌরভের যেমন কোনো বিশ্লেষণ করা যায় না, ব্যক্তিত্বও ঠিক তেমনি অস্পষ্ট। এটা হচ্ছে একজন মানুষের শারীরিক, মানসিক, মনমেজাজ, ধ্যান-ধারণা, সাহস, অভিজ্ঞতা, অভিরুচি, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, উদ্যোগ-উদ্দীপনা প্রভৃতির মিলিত নামের আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের মতো এটিও একটি জটিল বিষয়, যার সামান্যই বোঝা যায়।

উত্তরাধিকার ও পরিবেশের ভিত্তিতেই ব্যক্তিত্ব যাচাই করা হয় এবং এটা পরিবর্তন বা উন্নয়ন অসম্ভব। তবে এটাকে চেষ্টার মাধ্যমে সামান্য উন্নত করা যায়, গতিশীল ও আকর্ষণীয় করা যায়। সর্বতোভাবে চেষ্টা করলে অবশ্যই প্রকৃতি দত্ত এই শক্তির বিকাশ সম্ভব। বিষয়টি আমাদের সকলের কাছেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তবে উন্নয়নের সম্ভাবনা সীমিত হলেও এ ব্যাপারে চেষ্টা চালানো অবশ্যই প্রয়োজন।

আপনি যদি আপনার ব্যক্তিত্বের সুস্পষ্ট প্রকাশ ঘটাতে চান শ্রোতাদের সামনে ক্লান্ত দেহে যাবেন না। ক্লান্ত বক্তা কখনো দর্শকশ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয় না। সর্বশেষ মূহূর্ত পর্যন্তই আপনার প্রস্তুতিও পরিকল্পনা সম্পর্কে চিন্তা করবেন, যাতে কোনো ভুলত্রুটি হতে না পারে। এভাবে প্রস্তুতি নিলে সঠিকভাবেই বক্তব্য পেশ করা সহজতর হবে। তবে যে-সময় চলে গেছে; সে-সময়ের জন্য মনে চিন্তা রেখে প্রস্তুতি নিলে আপনি শারীরিক ও মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়বেন। যে সময় গেছে তা নয়, যে সময় হাতে আছে তাকে কাজে লাগাবার চিন্তা করুন, সেভাবে প্রস্তুতি গ্রহণই উত্তম পন্থা।

বিকেল ৪টায় যদি কোনো কমিটি বৈঠকে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেয়ার কথা থাকে তাহলে হাল্কা মধ্যাহ্নভোজ গ্রহণ করুন। অতঃপর বিশ্রাম নিন, শারীরিক ও মানসিক বিশ্রামের ফাঁকে বিষয়টি ভেবে নিন। সুভাষণের জন্যে, এই বিশ্রাম বিশেষ প্রয়োজন।

গেরান্ডিন ফার সাধারণত রাতে বন্ধুদের সামান্য কথোপকথনের পরই বিদায় সম্ভাষণ জানাতেন। তিনি তার বক্তব্য সম্পর্কে চিন্তা করার সময় এবং বিশ্রাম নেয়ার জন্য বন্ধুদের তার স্বামীর কাছে বসিয়ে নিজের কাজে চলে যেতেন। মাদাম নর্ডিকা বলেছেন যে, সুবক্তা হতে হলে অথবা সুভাষণ প্রস্তুত করতে হলে সামাজিক ক্রিয়াকর্ম, বন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎকার, খাদ্য গ্রহণ প্রভৃতি সকল বিষয়েই সংযম পালন করা প্রয়োজন।

আপনি যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভাষণের কথা চিন্তা করবেন তখন আপনাকে ক্ষুধা সম্পর্কে অবশ্যই সাবধান হতে হবে। প্রয়োজন আছে, তাই সামান্য খাদ্য গ্রহণ করুন। হেনরী ওয়ার্ড বেচার রাতে বক্তৃতার প্রস্তুতি হিসাবে রোববার বিকেল পাঁচটায় হাল্কা খাবার গ্রহণ করতেন, এই খাবারে থাকতো সামান্য নাস্তা ও সামান্য দুধ। এর বেশি তিনি আর কোনো খাবার খেতেন না। মাদার মেলবা বলেছেন, যে রাতে আমি গান গাই সে রাতের আগে বিকেল পাঁচটায় আমি নৈশভোজ গ্রহণ করি। সে খাদ্যে থাকে সামান্য মাছ মুরগির মাংস, সামান্য রুটি এবং পানি অথবা মিষ্টি রুটিও আপেল। ফলে গান গাওয়ার সময় আমি নিজেকে অত্যন্ত হাল্কা অনুভব করি। রাতে অনুষ্ঠান শেষে অবশ্য আমি ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ি।”

একজন পেশাদার বক্তা হয়েও দৈনিক দুঘন্টা বক্তৃতাদানের অভ্যাস করার আগে পর্যন্ত আমি বুঝতে পারতাম না কেন মেলবা বেকার উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা লাভ করে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, যেদিন আমি গুরুভোজন করে, কোনোরূপ বিশ্রাম না নিয়ে মঞ্চে দাঁড়াতাম সেদিন হয় শারীরিক বা মানসিক বা বক্তৃতার দিক দিয়ে আমি অসুবিধায় পড়তাম। মনে হত, আমার পেটের খাবার আমাকে বক্তৃতা করতে বাধা দিচ্ছে। আমার শরীর ভারী হয়ে আছে। পেডারেভস্কি, বলেছেন, কোনো কনসার্ট পার্টিতে অংশ গ্রহণের আগে তিনি যেদিন গুরুভোজন অর্থাৎ নিজের ইচ্ছানুযায়ী খাবার খেতেন সেদিন তাঁর শরীর ভারী হয়ে যেতো এবং মঞ্চে হাতের আঙুল চলত না ঠিক ভাবে মনে হত আঙুলগুলো ভারী হয়ে গেছে ভীষণভাবে। ফলে সেদিন তাঁর অনুষ্ঠান জমত না।

শ্রোতার আকর্ষণ বক্তা হতে বক্তায় ভিন্নতর হয় কেন?

আপনার স্মরণ শক্তি যেন ভোতা হয়ে না পড়ে। কারণ এটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। একজন বক্তা এবং বক্তৃতা শিক্ষকের যে সব প্রাথমিক গুণাবলি প্রয়োজন তা হচ্ছে চেতনা, সজীবতা ও উদ্যম। বন্য হাঁস যেভাবে বসন্তের শস্যক্ষেত্রে জমায়েত হয়, ঠিক সেভাবে প্রাণবন্ত বক্তার চতুর্দিকেও হয় শ্রোতার সমাবেশ।

লন্ডনের হাইড পার্কে আমি ঠিক এরূপ অবস্থা অবলোকন করেছি। মার্বেল তোরণের পাশে দাঁড়িয়ে যে কোনো জাতের ধর্মের, বর্ণের বা দেশের মানুষই বক্তৃতা করতে পারেন। রোবরাবের বিকেল যে কোনো একটা ক্যাথলিক ধর্মের বৈশিষ্ট্য, কার্ল মার্কসের অর্থনৈতিক দর্শন অথবা ভারতের মুসলমানদের দু’জন স্ত্রী রাখার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে বক্তৃতা করতে পারেন। বক্তৃতা করতে পারেন যে কোনো বিষয়ে। আমি দেখেছি একজন বক্তাকে ঘিরে ধরেছেন শত-শত শ্রোতা, অপর বক্তা বক্তৃতা করছেন প্রায় শূন্য মাঠে। কেন? বক্তৃতায় বিষয় বস্তুর জন্যই কি এরূপ হয়? না। এর কারণ হচ্ছে বক্তা এবং বক্তৃতা। যে বক্তা বক্তব্য বিষয় যাই হোক না কেন, তা পেশ করতে পারেন আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে, সুললিত ও প্রাঞ্জল ভাষায়, সেই বক্তার প্রতি শ্রোতা আকর্ষিত হন বেশি। তাঁর চেতনা সজীবতা বক্তৃতাকে করে তোলে জীবন্ত, ফলে তা সকল শ্রোতাকে এত কাছে টেনে আনে। এক্ষেত্রে বিষয়ের গুরুত্ব এবং বৈশিষ্ট্য নয়, প্রকাশ ভঙ্গিরই প্রাধান্য।

জেনারেল লী-যখন তাঁর বাহিনীসহ আত্মসমর্পণ করতে আসেন তখন তার পরনে ছিল ধোপদুরস্থ নতুন, পোশাক এবং কোমরে ঝুলান ছিল মূল্যবান তরবারি। এ্যান্টের পরনে ছিল তখন শুধুমাত্র সাধারণ শার্ট ও পায়জামা, গায়ে ছিল না কোনো কোট। ”আমার পোশাক ছিল না অনুষ্ঠানের উপযোগী। তিনি লিখেছেন তাঁর জীবন স্মৃতিতে,“ অনুষ্ঠান উপযোগী পোশাক পরিহিত মানুষটির সামনে আমি মনে-মনে হয়ে পড়েছিলাম অপ্রস্তুত। এই ধরনের ঐতিহাসিক ঘটনার জন্যে যে পোশাক দরকার সেদিন গ্রান্টের পোশাক সে ধরনের ছিল না, এটাই গ্রান্টের জীবনের একটি দুঃখজনক মুহূর্ত।

ওয়াশিংটনের কৃষি বিভাগ তার পরীক্ষামূলক খামারে হাজার-হাজার মৌমাছি পালন করে। প্রতিটি মৌচাক বিরাট আয়না দিয়ে ঢাকা। যে কোনো সময় বোতাম-টিপে আলো জ্বালিয়ে মৌচাকের মৌমাছি দেখা চলে। লক্ষ্য করা চলে ওদের গতিবিধি।-একজন বক্তাও ঠিক মৌচাকের মতো। সকল শ্রোতার দৃষ্টি তার ওপর পতিত। সকল শ্রোতাই তাকে দেখছে। বক্তার চেহারায় সামান্য অসন্তোষ বা দুঃখের চিহ্ন দেখা গেলে তা শ্রোতারা অতি সহজেই দেখতে পান, বুঝতে পারেন! বক্তৃতা করার আগেই আমরা অভিনন্দিত বা নিন্দিত হই : বেশ কয়েক বছর আগে আমি আমেরিকার একটি ম্যাগাজিনের জন্যে নিউইয়র্কের জনৈক ব্যাংকারের জীবনী সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। এই নিবন্ধের মাল-মশলা সংগ্রহ কালে আমি তাঁর জনৈক বন্ধুর কাছ থেকে তার সাফল্যের কারণ জানতে চেয়েছিলাম। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, হাসি। তার হাসি মানুষের হৃদয় জয় করে নিত বলে তিনি সফল হয়েছিলেন। প্রথমে আমি এটি বিশ্বাস করতে পারি নি। কিন্তু পর্যালোচনা করে দেখলাম অভিজ্ঞতার সাথে এই গুণটি যোগ হওয়ায় তিনি সফল হয়েছিলেন। অন্যান্য অভিজ্ঞ ব্যক্তির এই গুণটি না থাকায় তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন নি। হাসি দিয়ে অভ্যর্থনা জানালে যে কোনো লোক খুশি হয়। যে ব্যক্তি হেসে অভ্যর্থনা জানাতে পারে সে অন্যদের সমর্থন পায়। এই সমর্থনই সাফল্যের চাবি কাঠি!

”যে ব্যক্তি হাসতে পারে না”, একটা চীনা প্রবাদ আছে, “তার ব্যবসা করা সাজে না।“ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তার পক্ষে হাসি মুখ করা কি শ্রোতাদের স্বাগত জানানো নয়? আমি এক্ষেত্রে ব্রকলিন বাণিজ্য সংস্থার পরিচালিত একটি কোর্সে অংশ গ্রহণকারী জনৈক ছাত্রের কথা উল্লেখ করব। সে ছাত্রটি সব সময় শ্রোতাদের সামনে হাসি মুখে দাঁড়াত। সে যে কাজ করত তা হাসি মুখেই করত। হাসি সব সময় তার ঠোঁটে লেগেই থাকত। ফলে সহসাই এই সদা হাস্য মুখ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বক্তা হিসাবে যে সফল বা সুবক্তা না হলেও সে যা বলত হাসি মুখে বলত বলে সবাই তার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করত। অর্থাৎ বক্তৃতা করার আগেই সে শ্রোতাদের জয় করে নিত।

কিন্তু আমি এমনও দেখেছি, যে বক্তা অত্যন্ত গম্ভীর মনোভাব নিয়ে মঞ্চে দাঁড়ান, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রকাশ করে অত্যন্ত গম্ভীর ভাবে, তিনি শ্রোতাদের মন জয় করতে ব্যর্থ হন। অর্থাৎ মঞ্চে তাকে দেখেই শ্রোতাদের মনে সৃষ্টি হয় বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এই ধরনের মুখ কালো করা বক্তা বক্তৃতা শেষ করে ফেলুক এটাই শ্রোতারা কামনা করেন। ফলে তাদের বক্তৃতা গুরুত্বপূর্ণ হলেও শ্রোতাদের মনে দাগ কাটে না।

আমরা যদি আমাদের শ্রোতাদের প্রতি আগ্রহী হই, বলেছেন অধ্যাপক ওভারস্ট্রীট, মানবচরিত্র, বিশ্লেষণ করতে গিয়ে শ্রোতারাও আমাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। আমরা যদি শ্রোতাদের প্রতি কুটি করি, শ্রোতারাও প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে আমাদের প্রতি ভ্রুকুটি করব। আমরা তাদের যদি অবজ্ঞা করি, তারাও আমাদের প্রতি অবজ্ঞা করবে। আমরা যদি ধৃষ্টতা পূর্ণ ও দাম্ভিব হই শ্রোতাদের কাছ থেকে পাবো আমরা অনুরূপ ব্যবহার। সুতরাং বক্তৃতা করার আগেই আমরা অভিনন্দিত বা ধিকৃত হব। আমরা যেরূপ আচরণ করব জবাবও পাবো ঠিক অনুরূপ সুতরাং সদ্ব্যবহার পেতে হলে আমাদের ব্যবহারও হতে হবে সৎ।”

শ্রোতাদের একত্রিত করুন :

একজন সাধারণ বক্তা হিসাবে আমি বহু বিকেলে একটি হলে আগত বিক্ষিপ্ত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করেছি এবং রাতে একই হলে একত্রিত বা দলবদ্ধ শ্রোতাদের উদ্দেশ্যেও বক্তৃতা করেছি। বিকেলের শ্রোতারা কোনো একটি কথা শুনে উচ্চস্বরে হেসেছে, রাতের শ্রোতারা কিন্তু হাসে নি তবে মুচকি হাসির চিহ্ন তাদের চোখে মুখে ফুটেছে, বিকেলের শ্রোতারা সে ক্ষেত্রে মনোযোগী ছিল না, রাতের শ্রোতাদের ক্ষেত্রে গভীর মনোযোগী দেখেছি, কেন এমন হয়?

এর একটা কারণ এই যে, বিকেলে বয়স্ক মহিলা এবং শিশুরা আসে। এরা তেমন মনোযোগী হতে পারে না। রাতের শ্রোতাদের মধ্যে এদের সংখ্যা তেমন থাকে না, সুতরাং তারা হয় মনোযোগী, তবে এটা একটি আংশিক ব্যাখ্যা মাত্র।

তবে আসল তথ্য হচ্ছে এই যে শ্রোতারা বিচ্ছিন্নভাবে বসলে তাদের মনকে সহজে আকর্ষণ করা যায় না। তাদের মধ্যেকার শূন্যস্থান বা খালি চেয়ারগুলো যেন তাদের মনকেও শূন্য করে, খালি করে রাখে।

হেনরী ওয়ার্ড বেচার তার ইয়েল বক্তৃতায় বলেছেন, মানুষ প্রায়ই জিজ্ঞেস করেন, “ক্ষুদ্র জনতা হতে বহুতর সমাবেশে বক্তৃতা করা কি আপনার জন্যে অধিকতর প্রেরণাদায়ক হয় না? না। আমি উত্তর দেই। হাজার লোকের সামনে দাঁড়ালে আমার বক্তৃতা যেরূপ হয় মাত্র বারো জন লোকের সামনেও হয় ঠিক অনুরূপ। তবে এই বারো জনকে বসতে হবে ঘন হয়ে কাছাকাছি, কিন্তু হাজার জনও যদি বিস্তৃত খোলা মাঠে বিক্ষিপ্ত হয়ে দূরে-দূরে বসে তাহলে আমার বক্তব্য জমে না? জনতাকে একত্রিত করুন, নিকটতর করুন, তাহলেই বক্তব্য সুস্পষ্ট হবে।

যে কোনো বড় সমাবেশে উপস্থিত সকল ব্যক্তি নিজস্ব সত্ত্বা হারায়। বক্তৃতা শোনার সময় সে হয়ে পড়ে শ্রোতাদের একজন মাত্র। শ্রোতাদের হাসিতে সে যোগ দেয়, কিন্তু নিজে কোনো বিষয়ে হাসে না!

এই ধরনের সমাবেশে সকলকে এক সাথে উদ্বুদ্ধ করা সহজ, ব্যক্তি বিশেষকে নয়। যুদ্ধযাত্রীরা যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে, যে কোনোরূপ সংকটজনক ঘটনা ঘটাতে প্রস্তুত থাকে। কেননা, তারা যাত্রা করে একজন হয়ে। বিগত যুদ্ধকালে জার্মান সৈনিকেরা যুদ্ধ করেছিল বাহুতে বাহু মিলিয়ে এবং এটাই তাদের অগ্রগতির কারণ।

জনতা! জনতা! জনতা! এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যত আন্দোলনের জয় হয়েছে, হয়েছে সংস্কার, তা হয়েছে জনতার অংশ গ্রহণে। এ সম্পর্কে ডীন মার্টিনের লেখা জনতার আচরণ বইটি খুবই সুখপাঠ্য।

আমরা যদি ক্ষুদ্র সংখ্যক জনতার উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করতে চাই তাহলে আমাদের সমবেত হওয়া। উচিৎ একটি অতিক্ষুদ্র স্থানে। বিরাট হলে বিচ্ছিন্ন ভাবে বসার চাইতে ছোট জায়গায় দলবদ্ধ ভাবে বসা অনেক ভালো।

আপনার শ্রোতারা যদি বিচ্ছিন্ন ভাবে বসেন, তা হলে তাদের আপনার সামনে এসে বসতে অনুরোধ করুন। বক্তৃতা শুরু করার আগে এটার উপর জোর দিন।

শ্রোতার সংখ্যা যথেষ্ট না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কম সংখ্যক শ্রোতা নিয়ে বক্তৃতা মঞ্চে দাঁড়াবেন না। স্বল্প শ্রোতার বিক্ষিপ্ত উপস্থিতিতে ভালো বক্তাও সুভাষণ প্রকাশ করতে পারেন না। তবে শ্রোতার সংখ্যা স্বল্প হলে তাদের কাছে এসে, পাশাপাশি বসতে বলুন। শ্রোতাদের সাথে মিশে তাদেরকে পরস্পরের কাছে এনে বসাবার ব্যবস্থা করুন। অতঃপর মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করুন। বক্তৃতা স্বচ্ছন্দ হবে।

মেজর পশু জানালা ভাঙতেন :

মুক্ত বায়ু প্রয়োজন। বক্তৃতা স্থানে অর্থাৎ জনসমাবেশে অম্লজান অত্যন্ত প্রয়োজন। এটা প্রয়োজন মানুসের অবাধ স্বাস-নিশ্বাসের জন্যে। জীবনের স্পন্দন অব্যাহত রাখার জন্যে। বায়ু দূষিত হলে একটি হলে দর্শক বেশিক্ষণ থাকে না, থাকতে পারে না। আলোচনা বা সঙ্গীতানুষ্ঠান যত আকর্ষণীয় হোক না কেন, শ্রোতারা চলে যান। সুতরাং যে কোনো সভার একাধিক সংখ্যক বক্তৃতার সাথে আমি উপস্থিত থাকলে বক্তৃতা শুরু করার আগে আমি জানালা খুলে ফেলার ব্যবস্থা করি এবং এই জানালা খোলা কালে আমি শ্রোতাদের প্রতি নির্মল বায়ু সেবন করে মুহূর্তকাল বিশ্রাম নেয়ার আবেদন জানিয়ে থাকি। মেজর জেমস বি. পশু প্রায় চৌদ্দ বছর ধরে হেনরী ওয়ার্ড বেচারের ম্যানেজার হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রও কানাডায় ঘুরেছেন। বেচারা তখন এসব স্থানে বক্তৃতা করে বেড়াচ্ছিলেন। শ্রোতাদের উপস্থিতির আগেই মেজর পশু বক্তৃতার জন্যে নির্দিষ্ট হলে বা গির্জা অথবা থিয়েটার পরিদর্শন করে আসতেন। তিনি পরীক্ষা করতেন সেখানকার বসার ব্যবস্থা, আলোর ব্যবস্থা। পরীক্ষা করতেন তাপ ও আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা। একজন পুরাতন সামরিক

অফিসার হিসাবে তিনি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে ভালবাসতেন। কোনো স্থানের তাপ তার পছন্দ না হলে, বায়ু। চলাচলের সুব্যবস্থা না দেখলে, জানালা খুলে দেয়ার চেষ্টা করতেন, জানালা খুলতে না পারলে তা ভেঙে দিতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, “অম্লজান (অক্সিজেন) হচ্ছে স্রষ্টার দান।” সুতরাং এটাকে নাগালের বাইরে রাখা অন্যায়।

আপনার চেহারা আলোকিত হোক :

আপনি যদি কোনো ভৌতিক কাণ্ড দেখাতে বা সৃষ্টি করতে চান তাহলে সমস্ত কক্ষটিকে আলোকে উদ্ভাসিত করে ফেলুন। যথাসম্ভব সকল বাতি জ্বালিয়ে দিয়ে আলোর বন্যা বইয়ে দিন। অর্ধালোকিত কক্ষে শ্রোতারা বক্তার প্রতি তেমন আকর্ষণ অনুভব করে না। কিন্তু আলোকোজ্জ্বল কক্ষে বক্তাদের মন এগিয়ে যায় বক্তার প্রতি। সুতরাং কক্ষটিকে থার্মোফ্লাক্সের ভিতরের অর্ধ অন্ধকারের মতো না রেখে আলোকিত করুন।

মঞ্চ সম্পর্কে ডেভিড বেলাশে লিখিত নিবন্ধ পড়ুন, আপনি বুঝতে পারবেন যে, সাধারণ বক্তারা এই আলোক মালার প্রভাব সম্পর্কে বা কক্ষ আলোকে উদ্ভাসিত করণের গুরুত্ব সম্পর্কে ওয়াকেবহাল নন।

আপনার মুখে আলো পড়তে দিন, কেননা, শ্রোতারা আপনাকে দেখতে চায়। এই আলো পতনে আপনার চেহারায় পরিবর্তন আসবে, সাথে-সাথে শ্রোতাদের দৃষ্টি নিবন্ধ হবে আপনার মুখে, ফলে আপনি প্রস্তুত হতে পারবেন বক্তব্য পেশে। সময়-সময় এই আলো আপনার বক্তব্যকে আরো পরিষ্কার ভাবে পেশ করতে সাহায্য করবে। আপনি যদি সরাসরি বাতির নিচে দাঁড়ান, আপনার মুখে ছায়া পড়তে পারে, কিন্তু কোনো বাতিকে সামনে করে দাঁড়ালে এই ছায়া পড়বে না। সুতরাং বক্তৃতা শুরু করার আগেই স্থান ঠিক করে দাঁড়ান, আলো-আঁধারি পরিবেশ অবশ্য আপনার বক্তব্য প্রকাশের সহায়ক হবে।

মঞ্চে কোনো অতিথি নয় :

একদা লন্ডনে আয়োজিত কানাডার প্রধানমন্ত্রীর এক বক্তৃতা সভায় আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। সভায় দারোয়ান বা দৌবারিককে একটি বৃহৎ দণ্ড হাতে এ জানালা হতে সে জানালায় দৌড়াদৌড়ি করতে দেখলাম। দেখলাম তাকে কক্ষটিতে বায়ু সঞ্চালনের চেষ্টায় ব্যতিব্যস্ত। অতঃপর কী হল? দেখলাম, শ্রোতাদের দৃষ্টি বক্তার প্রতি নয় দৌবারিকের প্রতি নিবন্ধ। তারা যেন মনে করেছেন, বক্তা নয়, দৌবারিকই একটা আশ্চর্য কিছু করেছে।

বক্তৃতা সভায় যখন শ্রোতারা মনোনিবেশ সহকারে কিছু শুনতে থাকে তখন সেখানে হঠাৎ ঘূর্ণীয়মান কিছু হলে তারই প্রতি শ্রোতা ও দর্শকদের দৃষ্টি ফিরে যায়। কোনো দর্শক বা শ্রোতাই আর তার দৃষ্টিকে মঞ্চের দিকে নিবন্ধ রাখতে পারে না। বক্তা যদি এই সত্যটা স্মরণ রাখেন তাহলে তার পক্ষে এই ধরনের পরিস্থিতি পরিহার করে চলা সম্ভব হয়। তা হলে বক্তাকে কী করতে হবে?

প্রথমত পরিহিত বস্ত্র, অঙ্গভঙ্গি, হস্তপদাদি সঞ্চালনে প্রতি যেন দর্শক শ্রোতাদের লক্ষ থাকে তার দিকে নজর দিতে হবে। নিউইয়র্কের এক বক্তৃতা সভায় আমি একা দেখেছি, একজন খ্যাতনামা বক্তা তার একখানা হাত বেঁধে এসেছিলেন। বক্তৃতা কালে আমি লক্ষ করেছি, সকল শ্রোতার দৃষ্টি ঐ হাতের প্রতি স্থির নিবন্ধ।

দ্বিতীয়ত বক্তা শ্রোতাদের বসার আসনের প্রতি লক্ষ রাখবেন। শ্রোতাদের এমনভাবে বসার ব্যবস্থা করবেন যাতে দেরিতে যারা আসে তাদের প্রবেশের কারণে শ্রোতাদের দৃষ্টি সেদিকে বিক্ষিপ্ত না হয়।

তৃতীয়ত মঞ্চে অতিথি রাখবেন না। কয়েক বছর আগে রেমন্ড রবিন ব্রুকলীনে বক্তৃতা মালায় অংশ নেন। একদিন অন্যান্য কয়েকজন সহ আমাকে মঞ্চে বসতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমি তখন মঞ্চে বসতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলি যে, এটা বক্তার প্রতি সুবিচার হবে না। প্রথমত রাতে আমি লক্ষ করি তালিকাভুক্ত, অতিথিরা একবার মঞ্চে যান, একবার বের হয়ে আসেন। তাদের এই উঠানামার ফলে শ্রোতাদের দৃষ্টি গিয়ে পড়ে বক্তা নয়, অতিথিদের গতিবিধির প্রতি। পরদিন আমি এর প্রতি মি. রবিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। সে রাতে তিনি একাই মঞ্চে বসেন এবং তাঁর বক্তৃতা হয় স্বচ্ছ ও অবাধ।

ডেভিড বেলাস্কো মঞ্চে কোনোরূপ লালফুল রাখতে দিতেন না। কেননা, লাল জিনিস সহজে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। একজন চঞ্চল মানুষকে শ্রোতাদের মুখোমুখি হয়ে মঞ্চে বসতে দিলে কী হয়? শ্রোতাদের দৃষ্টি বক্তা হতে সরে গিয়ে তার উপর পড়ে। সুতরাং মঞ্চে বক্তা ছাড়া অন্যকোনো অতিথিকে বসতে দেওয়া উচিত নয়।

ভারসাম্য :

বক্তৃতা শুরু করার আগে শ্রোতাদের মুখোমুখি হয়ে বসা কি বক্তার জন্যে ভালো নয়? আগে মঞ্চে না গিয়ে বক্তৃতা শুরু করার মুহূর্তেই মঞ্চে যাওয়া কি বক্তার জন্যে ভালো নয়?

কিন্তু যদি আগে গিয়ে মঞ্চে বসতে হয় তাহলে বসা সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে। ওখান হতে দেখা যাবে শ্রোতারা হলে আসছেন, চেয়ার খুঁজছেন। চেয়ার বহু খালি থাকলেও একটা ভালো জায়গা খুঁজছেন, বসছেন, কেহ বা উঠে যাচ্ছেন।

এক জায়গায় বসে মনে হল আরাম পাচ্ছেন না তাই অন্যত্র সরে যাচ্ছেন। গিয়ে বসেছেন আর একটা চেয়ারে আরাম করে। আরামের জায়গা ছেড়ে যাচ্ছেন আরো আরামের সন্ধানে। এসব লক্ষ করলে বক্তার মন বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে, সুতরাং বসতে হলে এমন ভাবে বসবেন,যাতে শ্রোতাদের এসব কাণ্ড লক্ষ করতে না হয় সরাসরি।

আগে আমরা বলেছি, আকর্ষণীয় পোশাক অথবা অলংকার পরে মঞ্চে যাবেন না। কেননা, এই পোশাক অথবা অংলকার শ্রোতার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। আরো একটি কারণ আছে। এই পোশাক বা অলংকার আপনার দুর্বলতা বলে মনে হবে। শ্রোতাদের মনে জাগবে আপনার দুর্বলতার কথা। তারা মনে করবে দুর্বলতা ঢাকার জন্যেই আকর্ষণীয় পোশাক বা অলংকারের এই বহর। সুতরাং স্বাভাবিক পোশাকে মঞ্চে যান, ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করুন। ফলে আপনার দৃঢ় মনোভাব ব্যক্ত হবে। বক্তব্য পেশকালে ভারসাম্য রক্ষিত হবে।

বক্তৃতা করতে দাঁড়িয়ে তড়িঘড়ি করে বক্তৃতা শুরু করবেন না। দীর্ঘশ্বাস নিন এবং শ্রোতাদের প্রতি। দৃষ্টি বুলিয়ে নিন। হলে কোথাও কোনো গণ্ডগোল বা শব্দ হচ্ছে মনে হলে তা থেমে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা। করুন।

বুক উঁচু করে দাঁড়ান। শুধুমাত্র বক্তৃতা করতে দাঁড়িয়ে নয়, বাড়িতেও এরূপভাবে দাঁড়াতে অভ্যাস করুন। নিয়মিত এরূপ অভ্যাস করলে শ্রোতাদের সামনে বক্তৃতা মঞ্চে দাঁড়াতে গেলে স্বাভাবিক নিয়মেই আপনার দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে দৃঢ় মনোভাব ফুটে উঠবে।

লুথার এইচ, গুলিক তাঁর কর্মক্ষম জীবন” বইতে লিখেছেন, দশ জনের মধ্যে একজন লোক নিজের জীবনকে দৃঢ়ভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে না। ঘাড়কে দৃঢ় রাখলে তা কলারের সাথে ঝুলে পড়ে না তিনি দৈনিক অভ্যাসের জন্যে যে সুপারিশ করছেন তা হচ্ছে, আস্তে-আস্তে শ্বাস নিন। অতঃপর ঘাড়কে এমন দৃঢ় করুন যাতে এটা কলার হতে আগা থাকে। ঘাড় শক্ত করুন, এরূপ করলে কোনোভাবে কোনো ক্ষতি হয় না। ঘাড়কে এভাবে শক্ত করলে বুকও শক্ত হয়, দৃঢ় হয়।

এবং আপনার হাত দিয়ে কী করবেন? এগুলোর কথা ভুলে থাকুন। এগুলো যদি আপনার পাশে ঝুলে পড়ে, পড়তে দিন। ওগুলোকে কলার কাঁদির মতো ঝুলে থাকতে দিন। কেহ হাতের প্রতি লক্ষ করছে। একথা কল্পনাও করবেন না।

পাশে ঝুলে থাকলেই আরাম পাবেন। ঝুলে থাকলে তার প্রতি কারো তেমন দৃষ্টিও আকর্ষিত হবে। অতি সমালোচকও এই অবস্থার সমালোচনা করতে পারবেন না। কোনো বক্তৃতার সময় হাত গুলো নীরব থাকছে এবং প্রয়োজন ছাড়া ওঠনামা হচ্ছে না।

কিন্তু যদি ঘাবড়িয়ে যান তা হলে আপনি কী করবেন। আপনার হাত দুটিকে পেছনে নিয়ে যান, একটিতে অপরটি নিয়ে মুষ্টিবদ্ধ করুন অথবা পকেটে রাখুন, অথবা বক্তৃতার টেবিলে রাখুন। এরূপ করে, একটু চিন্তা করলে আপনার স্নায়বিক দুর্বলতা হ্রাস পাবে, মনে স্বস্তির, নতুন উদ্যমের সঞ্চার হবে। আমি এযুগের বহু সংখ্যক খ্যাতনামা বক্তার বক্তৃতা শুনেছি। সকলকে না হলে তাদের অনেককে আমি বক্তৃতা কালে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়াতে দেখেছি। বাইরন এরূপ করতেন। চাউন্সে. এম. ডেপ এরূপ করতেন। টেডী রুজভেল্টও এরূপ করতেন। তবে কথা হচ্ছে আকাশ কখনো ভেঙে পড়ে না। এবং ঝড় বৃষ্টি বাদল হলেও আবার আকাশে সূর্যোদয় হয়। কোনো ব্যক্তি বক্তৃতা করতে গেলে বক্তৃতার বিষয়টিই হয় মুখ্য, তার হাত পা কি অবস্থায় আছে তা কোনো আলোচ্য বিষয়ই নয়। তাঁর মন মস্তিষ্ক ঠিক থাকলে হাত পা আপনা আপনিই ঠিক থাকতে বাধ্য। মূল কথা হচ্ছে বক্তৃতা, বক্তব্য বিষয়, বক্তার অঙ্গভঙ্গি বা হাত পা নয়।

অঙ্গভঙ্গি সম্পর্কে এই বইতে যা লেখা হয়েছে তার দশ ভাগের নয় ভাগই ব্যর্থ হয়েছে, ব্যর্থ হয়েছে এর কাজ ও কালি খরচও। অঙ্গভঙ্গি মন হতেই উৎসারিত হওয়া উচিত। আপনার হৃদয়, মন, ইচ্ছা ও আকাক্ষা অনুযায়ীই অঙ্গভঙ্গি হয়। তাই সাধারণ ও স্বাভাবিকতার ক্ষুদ্রতম একবিন্দু বিশাল বা টনের চাইতেও মূল্যবান।

অঙ্গভঙ্গি নৈশভোজের পোশাকের মতো কোনো কিছু নয়। এটা মনের অভিব্যক্তিরই বহিঃপ্রকাশ। মন খুশি ও হাস্যোজ্জ্বল অথবা যন্ত্রণা বা দুঃখপূর্ণ থাকলে অঙ্গভঙ্গিতেও তার প্রকাশ ঘটে।

এবং কোনো ব্যক্তির অঙ্গভঙ্গি তার ব্যবহৃত দাঁতের ব্রাসের মতো সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত ব্যাপার। এবং ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে পার্থক্য বিরাজমান বিধায় তাদের অঙ্গভঙ্গিতে পার্থক্য হবে, এটা স্বাভাবিক।

যে কোনো দু’ব্যক্তির অঙ্গভঙ্গি একরূপ হয় না, হতে পারে না। লিংকন কথা বলতেন অত্যন্ত দ্রুত গতিতে, সুতরাং তাঁর অঙ্গভঙ্গিও হত দ্রুততর। কিন্তু ডগলাসের বেলায় সেরূপ হত না। এরূপ হলে বরং তা হত হাস্যকর।

“লিংকন,“ বলেছেন তাঁর জীবনী রচয়িতা ও আইন অংশীদার হারেনভন, “মস্তিষ্ক, যেভাবে নাড়তেন হাত সেভাবে নাড়তেন না। তিনি তাঁর বিবৃতিতে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতেন তখন তিনি মস্তিষ্ক সঞ্চালন করতেন। কোনো-কোনো সময় তিনি মস্তিষ্কে এরূপ ঝকানি দিতেন যেন বিদ্যুৎখণ্ড বিচ্ছুরিত হচ্ছে। বক্তৃতাকালে তিনি কখনো মঞ্চের দিকে তাকাতেন না, অন্যান্য সাধারণ বক্তার মতো বক্তৃতাকালে এদিক-ওদিক তাকাতেন না। বক্তৃতাকালে মঞ্চে কী অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে তা তিনি চিন্তা করতেন না। বক্তৃতাকালে তিনি আস্তে-আস্তে অত্যন্ত স্বাভাবিক হয়ে পড়তেন, স্বাভাবিক সাধারণ মানুষের মতোই তিনি কথা বলতেন। তাঁর বক্তব্যে প্রকাশিত হয়ে পড়তো তার দৃঢ় ব্যক্তিত্ব, শ্রোতারা বুঝতে পারতেন তার স্বাতন্ত্র্য। সময়-সময় তিনি ডান হাত তুলে শ্রোতাদের প্রতি এমন ভাবে নির্দেশ করতেন যে, শ্রোতাদের সামনে তখন তার বক্তব্যের অর্থ সুস্পষ্ট হয়ে পড়ত। সময়-সময় আনন্দ বা সন্তোষ প্রকাশের জন্যে তিনি একসাথে দু’হাত উপরে তুলতেন। ফলে তার বক্তব্য স্পষ্ট হত। তার এই অঙ্গভঙ্গি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হত। অর্থাৎ এভাবে বক্তৃতার সাথে অঙ্গভঙ্গি যোগ হত বিধায় বক্তব্য হয়ে পড়ত পরিষ্কার। তিনি সব সময় আড়াআড়ি ভাবে পায়ের পাতার ওপর দাঁড়াতেন, তার পায়ের বুড়া আঙুল থাকত পাশাপাশি অর্থাৎ তার একপা অন্য পায়ের পিছনে থাকত না। তবে শক্ত হবার জন্যে, দৃঢ় হবার জন্যে তিনি কখনো মঞ্চে কিছু করতেন না। সময়-সময় অবশ্য তিনি তার পজিশন পরিবর্তন করতেন। এই পরিবর্তনের জন্যে কিন্তু তিনি সামনে বা পেছনে সরে দাঁড়াতেন না। মনকে দৃঢ় করার জন্যে তিনি সময়-সময় বাম হাত দিয়ে কোটের বুতাম ধরতেন না পকেটে হাত দিতেন, ডান হাতে নাড়াচাড়া করতেন। এতে তার বক্তব্য পেশের গতি হত সাবলীল।” শিকাগোর লিংকন পার্কে সেন্ট গউডেনের তৈরি তার যে মূর্তি রয়েছে তাতে এই অঙ্গভঙ্গিই রয়েছে।

এটাই ছিল লিংকনের পদ্ধতি। বক্তৃতকালে থিওডোর রুজভেল্ট-হয়ে পড়তেন অধিকতর, সজাগ, সচেতন, আবেগপূর্ণ, উত্তেজিত ও তেজোদীপ্ত। তাঁর চোখে মুখে ছড়িয়ে পড়ত একটা অদ্ভুত অনুভূতির ঔজ্জ্বল্য, মনে হত যেন তাঁর দেহটি একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র এবং এই যন্ত্র হতে বেরুচ্ছে বক্তৃতার ধ্বনি। বাইরন সময়-সময় হস্ত প্রসারিত করতেন বক্তৃতা করার সময়। গ্লাডস্টোন বক্তৃতা করার সময় কখনো কখনো টেবিলে হাত রাখতেন টেবিল আঁকড়ে ধরতেন। কখনো বা মঞ্চে পা’দিয়ে আঘাত করতেন। লর্ড রোজবেরী বক্তৃতা করার সময় তাঁর ডান বাহু নাড়া-চাড়া করতেন ফলে তিনি যেন অধিকতর শক্তি পেতেন। বক্তার বক্তৃতায় গতি থাকলে, শক্তি থাকলে, চিন্তায় থাকলে স্বচ্ছতা, অঙ্গভঙ্গিতে আসে স্বাভাবিকতা, সাবলীলতা।

স্বাভাবিকতা-জীবন স্পন্দন-যে কোনো কর্মেরই প্রতিফলন। বার্ক অঙ্গভঙ্গি করণে ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যর্থকাম। পীটের অঙ্গভঙ্গি হয়ে পড়ত সম্পূর্ণ অর্থহীন, যেন তিনি বাতাসে সঙ এর মতো হাত পা নাড়ছেন। স্যার হেনরী ইরভিং এর একটি পা ছিল খোঁড়া, তাই তার গতিবিধিও হত খোঁড়া। মঞ্চে লর্ড মেকলের অঙ্গভঙ্গি হত অর্থহীন। গ্লেটিনেরও হত তাই। পার্নেলের হত অনুরূপ। এর উত্তর হচ্ছে’ পার্লামেন্টারি বাকপটুতা সম্পর্কে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে লর্ড কার্জন বলেন, “সকল সুবক্তাই বক্তৃতাকালে নিজস্ব কায়দায় অঙ্গভঙ্গি বা অঙ্গ সঞ্চালন করেন। এবং এই অঙ্গভঙ্গি বক্তার বক্তব্যকে অর্থবহ করে তোলার সহায়ক হয়। তাঁর চেহারা যাই হোক না কেন, অঙ্গভঙ্গি তাঁর বক্তব্যকে আকর্ষণীয় করে তোলে।“

বহু বছর আগে আমি ভবঘুরে স্মিথের বক্তৃতা শুনেছিলাম। আমি তাঁর বাকপটুতায় মুগ্ধ হয়েছিলাম। বক্তৃতার সময় তিনি নানারূপ অঙ্গভঙ্গি করে ছিলেন। মনে হচ্ছিল তিনি যতবার শ্বাস নিচ্ছেন ততবারই যেন অঙ্গ সঞ্চালন করছেন। এটা একটা আদর্শ পদ্ধতি।

আপনি যদি এই নীতির অর্থাৎ অঙ্গ সঞ্চালনের নীতি অনুসরণ করতে চান তা হলে এই নীতির কথা চিন্তা করে দেখতে পারেন। এ সম্পর্কে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই, এটা নির্ভর করে বক্তার মন-মেজাজ ও মর্জির উপর। নির্ভর করে বক্তার প্রস্তুতি, আগ্রহ, ব্যক্তিত্ব, বক্তব্য বিষয়, শ্রোতা এবং কী উপলক্ষে বক্তৃতা করা হচ্ছে তার উপর।

এখানে সীমিত কিছু সুপারিশ করা হচ্ছে যা সহায়ক হতে পারে, ফলপ্রসূ হতে পারে। একটা অঙ্গভঙ্গির বার-বার পুনরাবৃত্তি করবেন না। করলে তা একঘেয়ে হয়ে পড়বে। মঞ্চে পায়চারি করবেন না। অর্থাৎ বক্তৃতাকালে মঞ্চে হেঁটে বেড়াবেন না। দ্রুততালে অঙ্গ সঞ্চালন করবেন না, কোনো কিছু বোঝাবার জন্য যদি আপনি অঙ্গুলি দিয়ে নির্দেশ করেন, বাক্য সমাপ্ত করা পর্যন্ত সেই অঙ্গুলি নির্দেশ স্থির রাখুন। এতে অন্যথা হলে আপনার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে এবং বক্তারা সাধারণত এই ভুলটা করে থাকে। এটা অত্যান্ত মারাত্মক ভুল। এটা যার উপর আপনি জোর দিতে চান তার উপর হতে অন্যত্র জোরটা সরিয়ে নেয়, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে হাল্কা এবং হাল্কা বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।

আপনি দর্শকদের সামনে সত্যি-সত্যিই যখন বক্তৃতা করতে দাঁড়াবেন, তখন ইচ্ছা করে কোনো অঙ্গভঙ্গি করবেন না, স্বাভাবিকভাবে যে অঙ্গভঙ্গি হয় তা হতে দিন। কিন্তু আপনি যখন বক্তৃতা অভ্যাস করবেন, শিখবেন, তখন আপনার বক্তব্যকে জোরদার করার জন্য অঙ্গভঙ্গি বা অঙ্গ সঞ্চালন করুন। এভাবে অভ্যাস করলে সহজে আপনি বক্তৃতা শিখতে পারবেন এবং দর্শক সম্মুখে বক্তৃতা কালে আপনার অঙ্গ সঞ্চালন হবে অজ্ঞাতসারে, স্বাভাবিক নিয়মে।

বই বন্ধ করুন। বই এর ছাপান পৃষ্ঠা দেখে অঙ্গ সঞ্চালন শেখা যায় না। বক্তৃতাকালে আপনার ধারণা আপনার চিন্তা, আপনার প্রকাশ ভঙ্গি যে কোনো শিক্ষকের শিক্ষা পদ্ধতি বা শিখানো নীতি হতে অনেক বেশি মূল্যবান ও ফলপ্রসূ হবে।

অঙ্গভঙ্গি এবং বক্তৃতা সম্পর্কে আমরা যা কিছু বলেছি তা যদি আপনি ভুলে যান তা হলে আপনি শুধু স্মরণ রাখুন, যদি কোনো লোক শ্রোতাকে অভিভূত করার জন্য মনে প্রাণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়, শ্রোতাদের স্বমতে আনতে পারবে বলে দৃঢ়বিশ্বাসী হয়, তা হলে যে কোনো বিষয় নিয়ে শুরু করে সে সফল হতে পারবে এবং বক্তৃতার সাথে সাথে তার স্বভাবিক অঙ্গভঙ্গি হবে। তার বক্তৃতার বিষয় জানা না থাকলে এমন হবে যে তার সমালোচনা করা যাবে না, খুঁত ধরা যাবে না। অর্থাৎ ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাস তাকে জয়ী করবে। আপনি যদি এটা বিশ্বাস না করবেন তবে যে কোনো লোককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিন। আপনি লক্ষ করবেন যে, লোকটি মঞ্চে উঠে যে কথা বলছেন তা অত্যান্ত তীব্র গতিতে বলছেন এবং তার ভাষা হচ্ছে অত্যন্ত দৃঢ় ও গতিশীল।

নিম্নে বক্তৃতা সম্পর্কে আমার গড়া এগারোটি শব্দ উল্লেখ করছি। এর মতো শক্তি আমি আর কোথাও পাই নি।

এক ধাক্কায় ছিপি খুলে
ব্যারেল পূর্ণ করে নিন,
অতঃপর তিড়িংবিড়িং নাচুন।

১। কার্নেগী কারিগরি ইনস্টিটিউট পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে যে, ব্যবসায়ে সাফল্যের ক্ষেত্রে জ্ঞানের চাইতে ব্যক্তিত্ব অনেক বড়। বক্তৃতার বেলায় এটি অনুরূপ ভাবে সত্য। ব্যক্তিত্ব এমন একটি জিনিস যার উৎকর্ষ সাধনের জন্যে কোনোরূপ সুপারিশ করা বা উপদেশ দেয়া সম্ভব নয়। এই পরিচ্ছেদে প্রদত্ত কিছু সুপারিশ বক্তার বক্তৃতা শেখায় সহায়ক হবে।

২। আপনি যখন ক্লান্ত তখন বক্তৃতা শুরু করবেন না। বিশ্রাম নিন, শক্তি সঞ্চয় করুন, অতঃপর বক্তৃতা করুন।

৩। বক্তৃতা করার আগে হাল্কা খাবার গ্রহণ করুন।

৪। জীবনী শক্তি ভোঁতা করে দেয় এমন কিছু করবেন না। শরতের শস্য ক্ষেত্রে বন্যহস যেভাবে নেমে আসে জীবনীশক্তি সম্পন্ন বক্তার পাশেও ঠিক সেভাবে শ্রোতার ভিড় জমে।

৫। পরিচ্ছন্ন আকর্ষণীয় পোশাক পরুন। পোশাক আপনার আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। অপরিচ্ছন্ন পাজামা, ছেঁড়া জুতো, অবিন্যস্ত চুল, কোটের পকেটে কলমের দৃষ্টিকটু অবস্থান অথবা অদ্ভুত ধরনের হাতব্যাগ নিয়ে বক্তা হিসাবে বক্তৃতা মঞ্চে দাঁড়ালে সেই বক্তার প্রতি শ্রোতাদের শ্রদ্ধা জাগে না।

৬। হাসিমুখে মঞ্চে যান। শ্রোতারা যেন আপনার দিকে তাকিয়ে এটা উপলব্ধি করে যে, আপনি মঞ্চে গিয়ে অত্যন্ত উফুল্ল হয়েছেন। ”পছন্দ পছন্দ আনে”, বলেছেন অধ্যাপক ওভার স্টিট। ”আমরা যদি আমাদের শ্রোতাদের প্রতি আগ্রহী হই, শ্রোতারাও আমাদের প্রতি আগ্রহী হবেন। বক্তৃতা করার আগেই অনেক সময় আমরা অভিনন্দিত বা নিন্দিত হই। সুতরাং আমরা বক্তৃতা করে শ্রোতাদের সন্তুষ্ট করতে চাই এরূপ মনোভাবই প্রকাশ করতে হবে।”

৭। শ্রোতাদের একত্রিত করুন। বিচ্ছিন্ন ভাবে বসা শ্রোতাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করা সহজতর নয়। বিচ্ছিন্নভাবে বসা যে কোনো শ্রোতা আপনার বক্তৃতা শুনে হাসতে পারে, বা নিন্দা করতে পারে বা অন্যমনস্ক হতে পারে, কিন্তু সকলে একত্রিত হয়ে বসলে বক্তৃতা না শুনে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা জুড়ে দিয়ে অন্যদের অসুবিধা করার অবকাশ থাকে না।

 ৮। যদি শ্রোতার সংখ্যা কম হয় তা হলে তাদের নিয়ে এক ক্ষুদ্র কক্ষে বসুন। মঞ্চে উঠবেন না, শ্রোতাদের সাথে নিয়ে বসুন। আপনার বক্তৃতা শুরু করুন সাধারণ কথোপকথনের নিয়মে, সাধারণ আলোচনার মতো করে।

৯। মুক্ত বায়ু চলাচল করতে দিন।

১০। হলকে আলোকিত করুন। আলোর বন্যা বইয়ে দিন। এমনভাবে দাঁড়ান যাতে আপনার মুখে আলো পড়ে এবং আপনাকে ভালোভাবে শ্রোতারা দেখতে পায়।

১১। আসবাবপত্রের পেছনে দাঁড়াবেন না। চেয়ার টেবিলকে মঞ্চের দিকে পাশে রাখুন। এমন ভাবে দাঁড়ান শ্রোতারা আপনাকে সম্পূর্ণরূপে দেখতে পায়।

১২। মঞ্চে কোনো অতিথি রাখবেন না, রাখলে নড়াচড়া করবে এবং নড়াচড়া করলে তাদের প্রতিই শ্রোতাদের দৃষ্টি পতিত হবে। কোনো শ্রোতাই কোনো ব্যক্তি বা বস্তু বা পা, নড়তে দেখলে তার প্রতি তাকিয়ে পারবেন না। ফলে আপনার বক্তৃতার প্রতি শ্রোতাদের মনোযোগ থাকবে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *