০৪. স্মরণশক্তির উৎকর্ষ সাধন

০৪. স্মরণশক্তির উৎকর্ষ সাধন

“প্রায় লোক,“ বলেছেন খ্যাতনামা মনস্তত্ত্ববিদ অধ্যাপক কার্ল সিসোর তার স্মরণ শক্তি সম্পর্কে, “উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত গুণের দশ ভাগও কাজে লাগান না। স্মরণ রাখার স্বাভাবিক নিয়ম লংঘন করে তারা শতকরা ১০ ভাগ ক্ষমতা অপব্যবহার করেন।”

আপনিই কি এই গড় মানুষের একজন? যদি তাই হয়, তাহলে আপনাকে এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্যে সগ্রাম করতে হবে, আপনি এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন, পুনঃপুনঃ পড়ুন, উপকৃত হবেন সামাজিকভাবে, বাণিজ্যিকভাবে। এতে স্মরণ রাখার স্বাভাবিক নিয়ম কানুন সমূহ বর্ণনা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে ব্যবসা, সামাজিক কথোপকথন এবং বক্তৃতায় কীভাবে এই নিয়ম পালন করা যায়।

এই সব”স্মরণ রাখার নিয়ম” অত্যন্ত সহজ নিয়ম হচ্ছে মাত্র তিনটি। এই তিনটি নিয়ম বা শব্দ হচ্ছে প্রভাবিত করা, পুনরাবৃত্তি ও সহযোগিতা।

প্রথম বিষয়টি হচ্ছে-আপনি যে বিষয়টি জানতে চান, বুঝতে চান, শিখতে চান তার গভীরে প্রবেশ করুন। এটা করতে হলে আপনার মনোসংযোগ করতে হবে। থিওডর রুজভেল্টের স্মরণ শক্তি সকলকেই অভিভূত করতো। তিনি অভ্যাসের দ্বারাই যে কোনো বিষয়ে গভীরভাবে মনোনিবেশ করার অধিকার অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন? ১৯১২ সালের শিকাগোর বুলমুস কনভেনশনের সময় তার সদর দপ্তর ছিল কংগ্রেস হোটেলে। হোটেলের পাদদেশে, সমগ্র জনপদে তখন নেমেছিল মানুষের ঢল। তাদের হাতে ছিল ব্যানার, কণ্ঠে ছিল চিৎকার আর শ্লোগান, “আমরা টেডি চাই। আমরা টেডি চাই। জনতার চিৎকার, বাজনার শব্দ, রাজনীতিকদের আনাগোনা, অব্যাহত সম্মেলন, আলোচনা, সাধারণ মানুষকে করে তুলেছিল পরিশ্রান্ত। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও রুজভেল্ট তার কক্ষে একটি ঘূর্ণায়মান চেয়ারে বসে নিশ্চিন্ত মনে গ্রিক বীর হিরোডোটাসের কাহিনী পাঠ করেন, গভীর অভিনিবেশ সহকারে ব্রাজিলের বন্যপথে চলার সময় একদিন বিকেলে তিনি এক নির্জন স্থানে শিবির সন্নিবেশ করেন। তথায় বৃহৎ বৃক্ষাদির নিচে ছায়াতলে একটা শুষ্কস্থান দেখে তিনি তথায় একটি টুলে বসে গীবনের লেখা ”রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান পতন” পড়তে শুরু করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে এমনভাবে ডুবে যান যে শিবিরের শব্দ জনগণের হই চই, কোনো কিছুই তার ধ্যান ভাঙতে পারে না। নিরবচ্ছিন্ন মনে তিনি বইটি পাঠ করতে থাকেন। আরো আশ্চর্যের বিষয় যে, তিনি যা তখন পাঠ করেন তা হুবহু তার মনে থাকে, যেন তিনি তা মুখস্থ করে নিয়েছেন।

মানসিক অশান্তি ও অস্থিরতা নিয়ে সারাদিনের পাঠের চাইতে গভীর মনোনিবেশ সহকারে পাঁচ মিনিটের পাঠের ফল অনেক বেশি ফলপ্রসু, কল্যাণকর”গভীর আবেগপূর্ণ একটি ঘণ্টা, লিখেছেন হেনরী ওয়ার্ড বিসার, “স্বপ্নময় বছরের চেয়ে মূল্যবান।”“যে বিষয়টি আমি শিখেছি তা অন্য যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে মূল্যবান”, বলেছেন ইউজিন গ্রেস, যিনি বেথেলহেম ষ্টিল কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে দশ লক্ষাধিক ডলার হতে বেশি উপার্জন করতেন, এবং যে কোনো পরিস্থিতি ও অবস্থায় আমি প্রতিদিন নিয়মিতভাবে যে কাজ করি তা হচ্ছে আমার হাতের কাজের প্রতি গভীর মনোযোগ দান।

এটাই হচ্ছে শক্তি, বিশেষ করে স্মরণ শক্তির গোপন উৎস।

তারা একটি চেরি গাছ দেখে নি :

টমাস ইডিসন দেখতে পান যে তাঁর নিউ জার্সির ম্যানলো পার্কের ন্যামন ফ্যাক্টরিতে কর্মরত ২৭ জন শ্রমিক প্রতিদিন ফ্যাক্টরি থেকে আসা যাওয়ার একটি পথ ব্যবহার করে। তারপর ছয়মাস ধরে এই পথ দিয়ে প্রতিদিন আসা যাওয়া করছিল। এই পথের ধারে একটি চেরি গাছ। নিয়মিত ব্যবহারে পথের চেরি গাছ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ২৭ জনের মধ্যে একজন শ্রমিকও এই গাছের অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনো উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়।

‘গড়পড়তা মানুষের মস্তিষ্ক’ এডিসন দৃঢ়তার সাথে বলছেন, চোখে যা দেখে তার হাজার ভাগের একভাগও উপলব্ধি করে না। আমাদের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, প্রকৃত পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা কত কম এটাই তার প্রমাণ।

একজন সাধারণ মানুষের সাথে আপনার দুই বা তিনজন বন্ধুকে একসাথে পরিচয় করিয়ে দিন, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় যে মাত্র দুমিনিট পর জিজ্ঞেস করুন, তিনি কারো নাম বলতে পারবেন না। কেন? কারণ প্রথমে তিনি তাদের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেন নি, তিনি সঠিকভাবে তাদের পর্যবেক্ষণ করেন নি, দেখেন নি, তিনি হয়তো আপনাকে বলবেন তাঁর স্মরণ শক্তি অত্যন্ত দুর্বল। তাঁর পর্যবেক্ষণ শক্তি দুর্বল একথা ঠিক নয়। কুয়াশায় ছবি নিতে ব্যর্থ হলে তিনি একটি ক্যামেরাকে গালাগাল দেবেন না, তবে এধরণের অবস্থায় কোনো কিছু করা হতে তিনি তার মনকে বিরত রাখতেন। এটা করা উচিত নয়।

জোসেফ পুলিসটজার তাঁর সম্পাদকীয় দপ্তরের প্রতিটি কর্মকর্তার সামনে মাত্র তিনটি শব্দ রাখতেন :

সঠিক

সঠিক

সঠিক

আমার যা চাই তা হচ্ছে এই। এতে মানুষের সুনাম হয়। এর উপর জোর দিন। এটা পুনরাবৃত্তি করতে বলুন। এটা কীভাবে উচ্চারিত হয় তা অনুসন্ধান করুন। যার কাছে অনুসন্ধান করছেন তাঁকে তোষামোদ করা হচ্ছে বলে মনে করা হলেও আপনার গভীর মনোনিবেশের জন্য তার নাম আপনার স্মরণ থাকবে। ব্যক্তি বা বিষয় সম্পর্কে আপনি সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করবেন।

লিংকন শব্দ করে পড়তেন কেন?

অল্প বয়সে লিংকন এমন একটি স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন যে স্কুলের মেঝে কাগজ আঁটা। স্কুলে ছিল পাঠ্য বই এর মাত্র একটি কপি। শিক্ষকরা উচ্চস্বরে এটি পাঠ করতেন, ছাত্ররা চিৎকার করে তার পুনরাবৃত্তি করত। সকলে একসাথে কথা বলত! এর ফলে স্কুলে সবময় হই চই লেগে থাকত। প্রতিবেশীরা এটিকে বলত ”বক্ বক্‌ স্কুল।”

এই ”বক্‌ বক্ স্কুল।” লিংকনের এমন একটি অভ্যাস গড়ে ওঠে যা তিনি জীবনে ছাড়তে পারেন নি। যা কিছু তিনি স্মরণ করতে চাইতেন তিনি সব সময় তা শব্দ করে পড়তেন। প্রতিদিন সকালে তিনি স্পিং ফল্ডস্থ তার আইন অফিসে পৌঁছে একটি কৌচে ছড়িয়ে বসতেন, পাশের একটি চেয়ারে একটি পা তুলে দিতেন এবং শব্দ করে সংবাদপত্র পাঠ করতেন। তিনি আমার বিরক্তি উৎপাদন করতেন, “বলেছেন তার আইন অংশীদার,“ তাঁর ব্যবহার ছিল সহ্য-শক্তির বাইরে। ”একদিন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কেন শব্দ করে পড়েন? তিনি বলেন, দুটি কারণে আমি শব্দ করে পড়ি। প্রথমত : আমি যা পড়ি তা দেখি, আমি তা শুনি, ফলে তা আমি সহজে স্মরণ রাখতে পারি।”

তার স্মরণ শক্তি ছিল বিস্ময়কর। ”আমার মন” তিনি বলেছেন, “ইস্পাত খণ্ডের মতো যাতে কিছু প্রবেশ করানো কঠিন, এমন কী অসম্ভব, কিন্তু একবার কিছু প্রবেশ করানো গেলে তা বের করাও অসম্ভব।”

মনে প্রবেশ করানোর জন্য যে সব পদ্ধতি তিনি অনুসরণ করতেন সে পদ্ধতিগুলি হচ্ছে নিম্নরূপ :

যে বিষয়টি স্মরণ রাখতে চান তা দেখা ও শোনা, স্পর্শকরা, ঘ্রাণ নেয়া এবং স্বাদ গ্রহণ করা।

সর্বোপরি বিষয়টি পরিষ্কারভাবে দেখা। আমরা কল্পনাপ্রবণ। সবকিছু আমার চোখে পড়ে, ফলে আমরা অনেকের নাম মনে রাখতে না পারলে তাদের চেহারা স্মরণ রাখতে পারি। আমাদের চোখ হতে মস্তিষ্কে যে সব শিরা-উপশিরা গিয়েছে তা কান হতে মস্তিষ্কে প্রবিষ্ট শিরা-উপশিরার চাইতে পঁচিশগুণ বেশি শক্তিশালী। চীনে একটি প্রবাদ আছে, তা হচ্ছে”একবার দেখা হাজার বার শোনার চাইতে উত্তম।”

যা আপনি স্মরণ রাখতে চান তার নাম টেলিফোন নম্বর এর বক্তব্যের রূপরেখা লিখে রাখুন, তা পাঠ করুন তার উপর দৃষ্টি রাখুন, তা দৃষ্টিলব্দ রাখার চেষ্টা করুন।

মার্ক টোয়েন নোট ছাড়া কীভাবে বক্তৃতা প্রস্তুত করতেন :

কোনোরূপ নোটের সাহায্য ছাড়া মার্ক টোয়েন যে বক্তৃতা করতেন তা ছিল অত্যন্ত মূল্যবান। এসম্পর্কে হারপার ম্যাগাজিনের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি যে বিবৃতি দিয়েছেন তা নিম্নরূপ :

তারিখগুলো স্মরণ রাখা সম্ভব না কারণ ওগুলো অংক বিশিষ্ট, অংক শুষ্ক এবং স্মরণ রাখা সহজ সাধ্য নয়। এতে কোনো ছবি নেই, ফলে এর প্রতি কারো দৃষ্টিও আকৃষ্ট হয় না। ছবি থাকলে তা স্মরণ থাকে। এটা আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হতে জানি। ত্রিশ বছর আগের ঘটনা, আমি প্রতি রাতে একটি বক্তৃতা মুখস্থ করতাম এবং প্রতি রাতেই আমাকে নোট হতে সাহায্য নিতে হত, নোটে ছিল প্রথম বাক্যসহ এগারোটি বাক্য এবং তা ছিল নিম্নরূপ :

ঐ অসডলের আবহাওয়া ছিল—

এ সময় নিয়ম ছিল—

কিন্তু কালিফোর্নিয়ায় কখনো কেহ শোনে নি যে–

এরূপ এগারোটি। এই বাক্যগুলো আমাকে বক্তৃতা শুরু করার অনুপ্রেরণা যোগাতো এবং পথিমধ্যে অসাড় হয়ে পড়ে থাকা থেকে রক্ষা করত। কিন্তু সবগুলো বাক্য ছিল একাকার, এটা হতে কোনো ছবি ভেসে উঠতো না মনের পর্দায়, আমি শুধু স্মরণ রাখতাম, কিন্তু আমি কখনো এগুলো কোন্টার পর কী আছে তা নিশ্চিতভাবে মনে রাখতে পারতাম না, তাই আমাকে সবসময় চিট সাথে রাখতে হত এবং সুযোগ মতো সেগুলো দেখে নিতাম। একবার আমি এই চিট হারিয়ে ফেলেছিলাম, ফলে সেদিন আমি কীরূপ বিপদে পড়েছিলাম তা কেহ কল্পনা করতে পারবেন না। এর ফলে আমি বুঝতে পারি, আমাকে অন্য পথ অনুসরণ করতে হবে। সুতরাং আমি এসব বাক্যাংশের প্রাথমিক শব্দ এ. বি. হিসাবে আমি মুখস্থ করি। পরদিন আমি আমার হাতের আঙুলের দশটি নখে দশটি চিহ্ন দিয়ে বক্তৃতা মঞ্চে গমন করি। কিন্তু এদিনও আমার বক্তব্য পেশকালে আমি বিমূঢ় হয়ে পড়ি। আমি কিছুক্ষণ আঙুলের দিকে তাকাই। কিন্তু কোনো আঙুলের চিহ্ন আগে এবং কোনোটি পরে ব্যবহার করতে হবে তা নির্ধরণ করতে আমি ব্যর্থ হই। আমি বার-বার আঙুলের দিকে তাকাই, তবু আমি আমার বক্তব্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ব্যর্থ হই। আঙুলের প্রতি আমাকে বার-বার দৃষ্টি দিতে দেখে শ্রোতাদের দৃষ্টি আমার প্রতি আবদ্ধ হয়। তারা আমার বিষয় বস্তু হতে আমার আঙুলে কী আছে তা জানতে অধিকতর আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরে দুএকজন আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমার হাতে কী আছে।

অতঃপর আমার মনে এ ধারণা জন্মে যে, ছবি বাক্যের চেয়ে উপকারী হবে। আমি এই এগারোটি বাক্যকে ছয়টি ছবিতে গ্রথিত করি। এর ভিত্তিতে বক্তৃতা করা আমার পক্ষে অত্যন্ত সহজ হয়ে পড়ে। বক্তৃতা শেষে আমি ছবিগুলি দুরে সরিয়ে রাখি। যে কোনো সময় চোখ বন্ধ করে চিন্তা করলে আমি ছবিগুলি দেখতে পাই এবং তার ভিত্তিতে আমরা আরাধ্য বাক্য তৈরি করে নিতে পারি। প্রায় ২৫ বছর আগে ঘটেছিল এই ঘটনা, বক্তৃতাটি আমি ভুলে গিয়েছি, কিন্তু যখন চোখ বন্ধ করে চিন্তা করি তখন বাক্যগুলি আমার মনে উদয় হয় সুস্পষ্টভাবে।

একবার আমি স্মরণ শক্তি সম্পর্কে একটি বক্তৃতা করেছিলাম। এই অনুচ্ছেদে আমি বহু বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছি। উল্লেখ করেছি ছবির সাহায্যে পয়েন্ট মনে রাখার কথা, উল্লেখ করেছি জনতার চিৎকার গণ্ডগোলের মধ্যে রুজভেল্টের মনোযোগ দিয়ে ইতিহাস অধ্যয়নের কথা। টসাস এডিসনের চেরি গাছ দেখার কথা। লিংকনের শব্দ করে খবরের কাগজ পড়ার কথা। মার্কটোয়েনের আঙুলের নখে দাগ দিয়ে রাখার কথা।

আমি ছবিতে কীভাবে নম্বর সংযোজন করতাম। এক, দুই, তিন, চার হিসাবে? না, এটা করা হলে। পাঠোদ্ধার কষ্টকর হত। আমি সংখ্যাগুলোকেই ছবিতে রূপান্তরিত করি। অর্থাৎ আমি পয়েন্ট ভিত্তি করেই ছবি আঁকি। উদাহরণ স্বরূপ–এক নম্বরে আমি আঁকি দেড়ের ছবি। সুতরাং এতে আমি দেই একটি রেসের ঘোড়া। এই ছবিতে রুজভেল্টকে তার রুমে পড়ায় নিবিষ্ট দেখাই। দুল এই জন্য দুই উচ্চারণ হয় এ মতো একটি শব্দ বের করি, শব্দটি হচ্ছে ‘জু’। এই জুতে চেরি গাছ এবং তার দিকে এডিসন তাকিয়ে আছেন মর্মে ছবি আঁকি। তিনের জন্যে থ্রি এর মতো উচ্চারিত একটি শব্দটি গ্রহণ করি। গাছের মাথায় আমি লিংকনকে পত্রিকা পাঠরত দেখেছি। ফোর এর জন্যে আমি গ্রহণ করি ডোর শব্দ। খোলা দরজার পাশে মার্কে টোয়েনকে তার হাতের আঙুলের নখে কালি লাগাতে দেখাই।

আমি এটা সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি করি যে অনেক পাঠক এটাকে অসম্ভব এবং হাস্যকর পদ্ধতি বলে মনে করবেন। এর পেছনেও কারণ আছে। এতৎসত্ত্বে এটা নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি যে, এই পদ্ধতি অনুসরণে স্মরণ রাখা অসম্ভব সহজ। নম্বর ধরে পয়েন্ট মনে রাখার চেষ্টা করা হলে তাতে ভুল হয়, হতে পারে। তবে আমি যে পদ্ধতির কথা বলছি সে পদ্ধতিতে ভুল হতে পারে না। উদাহরণ স্বরূপ যখন আমি থার্ড পয়েন্টের কথা মনে করি, তখন আমাকে স্মরণ করতে হয় থ্রি শব্দের পরিবর্তে ব্যবহৃত ট্রি এবং শীর্ষে কী আছে, সুতরাং আমি তথায় দেখি লিংকনকে। আমার বক্তব্য সহজে স্মরণ হয়।

এভাবে আমি আমার নিজের সুবিধার জন্যে আমার বক্তব্যকে বিশটি ছবিতে গ্রথিত করে নিই। শব্দগুলো গ্রহণ করি নম্বরের ধ্বনির সাথে সামঞ্জস্য রেখে। এ সম্পর্কে আমি এখানে আলোচনা করছি। আপনি যদি এই নম্বর ও ছবিগুলো নিয়ে আধঘণ্টা পর্যালোচনা করেন, আমার মনে হয় আপনিও সহজে তা বুঝতে পারবেন। অতঃপর আপনি এগুলোর ভিত্তিতে, এইট, ফোরটিন, থ্রি এবং এভাবে সব নম্বর চিন্তা করুন, চিন্তা করুন ছবির কথা, তাহলে আপনার পক্ষে কোনো বিষয় ও বক্তব্য স্মরণ রাখা সহজতর হবে।

নিচে ছবির নম্বর উল্লেখ করছি। এগুলো পরীক্ষা করুন। আপনি আনন্দ পাবেন।

১। ওয়ান-রান। একটি রেস হর্স।

২। টু-জু। চিড়িয়াখানার ছবি দেখেন।

৩। থ্রি-ট্রি। ট্রির শীর্ষে কিছু আছে মর্মে ছবি আঁকুন।

৪। ফোর-ডোর। ফোর এর মতো উচ্চারিত হয় অনুরূপ কোনো প্রাণী বা বস্তুর ছবি নিন।

৫। ফাইভ-মৌচাকের ছবি নিন।

৬। সিক্স–সিক। রুগ ব্যক্তি বা রোগীর ছবি বা ডাক্তার নার্সের ছবি নিন।

৭। সেভেন-হেভেন। স্বর্গ পথে দেব-দৈত্যদের খেলা করার ছবি নিন।

৮। এইট-ভেইট। কটকের ছবি।

৯। নাইট-ওয়াইন। মদের বোতলের ছবি নিন।

১০। টেনডেন। গভীর বনে বন্য প্রাণীর আস্তানা।

১১। ইলেভেন। মাঠে ফুটবল দল বল নিয়ে খেলছে।

১২। টুয়েলভ-শেলফে কিছু রাখা হচ্ছে বা নেয়া হচ্ছে।

১৩। থার্টিন-হার্টিং। ক্ষত হতে রক্ত ঝরার ছবি।

১৪। ফোর্টিন-কোটিং। তরুণ তরুণীদের প্রেমালাপের দৃশ্য।

১৫। ফিফটিন–লিপটিং। শক্তিশালী লোক কোনো কিছু উত্তোলন করছেন।

১৬। সিক্সটিন-বিটিং। প্রহারের দৃশ্য।

১৭। সেভেনটিন–লিভেনিং। কারো গৃহত্যাগ করা।

১৮। এইটিন-ওয়েটিং। গৃহবধু দরজায় বসে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছেন।

১৯। নাইনটিন-পাইনিং। মহিলা রোদন করছেন বেদনায়।

২০। টুয়েনটি–প্লেনটি। ফলমুল কোনো কিছু প্রচুর।

এসব ছবির সাথে আপনার বক্তব্যের পয়েন্ট মিশিয়ে ছবি করে নিন বক্তব্য স্মরণ রাখা হবে নিতান্ত সহজতর।

আপনি যদি পরীক্ষা করতে চান, কয়েক মিনিট খরচ করে ছবির নম্বরগুলো মুখস্থ করে নিন। আপনি ইচ্ছা করলে নিজের ইচ্ছানুয়ায়ী ও ছবি এঁকে নিতে পারেন। যেমন টেন এর জন্যে হেন বা পেন এর ছবিও নিতে পারেন। তবে তা মূল পয়েন্ট এর উচ্চারণে সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হলে স্মরণ রাখা হবে সহজতর। মনে করুন, আপনার দশম পয়েন্টটি হচ্ছে একটি মিল। কাজেই হেন এর পাশে বা পেনের পাশে কারখানা মিল দেখান। অতঃপর আপনি স্মরণ করতে চাইবেন আপনার পয়েন্ট কী, আপনি দেখেন পেন ও পাশে মিল। স্মরণ রাখবেন, অন্য লোকের স্মরণ শক্তি আপনার চেয়ে বেশি নয়। এভাবে চেষ্টা করলে, আপনি শুধু আপনার বক্তব্য বিষয় স্মরণ রাখতে পারবেন না, আপনি আনন্দ পাবেন।

একটি বই দীর্ঘকাল স্মরণ রাখা :

কায়রোর আল-আজহার হচ্ছে বিশ্বের একটি বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। এটি একটি মুসলিম প্রতিষ্ঠান যার ছাত্র সংখ্যা একুশ হাজার। ভর্তি পরীক্ষার প্রতিটি ছাত্রকে কোরান হতে মুখস্থ পাঠ করতে হয়। তিন দিন ধরে এই পরীক্ষা চলে।

চীনা ছাত্রগণকে কতিপয় ধর্মীয় পুস্তক এবং পুরাতন পুঁথি মুখস্থ করতে হয়।

আরব ও চীনা ছাত্ররা কীভাবে মুখস্থ করার মতো এই নিরস কাজটি সম্পন্ন করেন?

পুনঃপুনঃ পাঠ এবং দ্বিতীয়ত স্মরণ রাখার প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসরণ করে তারা মুখস্থ করেন, স্মরণ রাখেন।

আপনি বার-বার পাঠ করে যে কোনো পরিমাণ পাঠ মুখস্থ করতে পারবেন। যা আপনি মুখস্থ করতে চান তা পাঠ করুন। তা কাজে লাগান, ব্যবহার করুন। বিষয় সম্পর্কে আলোচনাকালে আপনি আপনার ইচ্ছানুযায়ী নতুন শব্দ ব্যবহার করুন। স্মরণ রাখতে চাইলে কঠিন অংশটি বার-বার চিন্তা করুন, বক্তৃতায় আপনি যে পয়েন্টগুলি বলতে চান সেগুলোর ভিত্তিতে আলোচনা করুন। এভাবে সংগৃহীত জ্ঞান বিস্মৃত হবার নয়।

পুনরাবৃত্তিতে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রযোজন :

কিন্তু কোনো একটি বিষয় অন্ধভাবে, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পুনরাবৃত্তি করা সঠিক পথ নয়। কতিপয় নিয়ম অনুসরণে, বুদ্ধিমত্তার সাথে পাঠে পুনরাবৃত্তি প্রয়োজন। তাহলে মুখস্থ করা ও স্মরণ রাখা সহজতর হয়। উদাহরণ স্বরূপ, অধ্যাপক গোবিং হাউস তার ছাত্রদের কতিপয় অদ্ভুত বিষয় মুখস্থ করতে দেন। বিষয়গুলি ছাত্রদের মনঃপুত ছিল না। তিনি দেখতে পান যে ছাত্ররা তিন দিনে ৩৮ বার পুনরাবৃত্তি করে ঐগুলি মুখস্থ করছেন, কিন্তু এই সব ছাত্র ইতঃপূর্বে একই সমান বিষয় একদিনেই ৬৮ বার পুনরাবৃত্তি করতে সক্ষম ছিলেন। অন্যান্য মনস্তাত্বিক পরীক্ষার ফলাফল একইরূপ!

এটা আমাদের স্মরণ সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। এই অর্থ হচ্ছে এই যে, আমরা যে বিষয়টি বুঝে পড়ি তা মুখস্থ করতে যত সময় লাগে না বুঝে পড়লে লাগে তার দ্বিগুণ। বুঝে পড়লে তা মনে গেঁথে যায় বিধায় স্মরণও থাকে।

মনের এই অদ্ভুত গতির দুটি কারণ রয়েছে। তা হচ্ছে :

প্রথমত পুনরাবৃত্তির মাঝে-মাঝে আমারে অবচেতন মন বিষয়টি ভেবে নেয়। অধ্যাপক জেমস এই বিষয়টি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, এর অর্থ হচ্ছে, শীতকালে সাঁতার আর গরম কালে স্কি খেলার মতো।

দ্বিতীয়ত যে বিষয়টি বুঝি না, যে বিষয়টির প্রতি মন আকর্ষিত হয় না। ”আরব্য উপন্যাসের অনুবাদক স্যার রিচার্ড বার্টন ২৭ ভাষায় নিজের মাতৃভাষার মতো কথা বলতে পারতেন। তবু তিনি বলেছেন যে, একসময়ে তিনি কোনো একটি ভাষা পনের মিনিটের বেশি অধ্যয়ন করতেন না। কেননা, পনের মিনিট পরেই মস্তিস্ক তার সজীবতা হারিয়ে ফেলে।”

এসব তথ্য ভিত্তিতে এখানে এটা নিশ্চিত করে বলা চলে যে, সাধারণ জ্ঞান বা বুদ্ধি সম্পর্কে গর্ব করেন অনুরূপ ব্যক্তিকেও বক্তৃতা করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত প্রস্তুতি নিতে হয়। যদি না নেন তাহলে এটা নিশ্চিত যে, তিনি তাঁর স্বাভাবিক বুদ্ধির, দক্ষতার অর্ধেকই কাজে লাগান।

বিস্মৃত হওয়া বা ভুলে যাওয়া সম্পর্কে একটি মূল্যবান তথ্য আবিস্কৃত হয়েছে। মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা বার-বার এটা প্রমাণ করেছে সে, আমরা নতুন যা কিছু শিখি তার যতটুকু প্রথম আট ঘন্টায়। আমরা ভুলি, পরবর্তী ত্রিশ দিনেও সমপরিমাণ ভুলি না। এই হিসেবটা বড় অদ্ভুত। সুতরাং আপনি কোনো সম্মেলন, সভা সেমিনার বৈঠকে বক্তৃতা করতে যাবার পুর্বমুহূর্তে আপনার তথ্য দেখে নিন, এবং আবার তা স্মরণ করার চেষ্টা করুন।

লিংকন এই ধরনের অভ্যাসের মূল্য বুঝতেন এবং তা কাজে লাগাতেন। গেটিসবার্গে খ্যাতনামা এডওয়ার্ড এভারেট প্রথম বক্তৃতা করলেন, লিংকন করলেন তার পর বক্তৃতা। লিংকনের পদমর্যাদা অনেক উর্ধ্বে। সুতরাং তিনি এভারেটের পর যে বক্তৃতা দেবেন তা মূল্যবান ও আকর্ষণীয় না হলে তার মর্যাদা রক্ষা হয় না। কিন্তু বক্তৃতাকালে বিমূঢ় হয়ে পড়া লিংকনের বৈশিষ্ট্য। সুতরাং এভারেটের দীর্ঘ বক্তৃতা যখন শেষ হয়ে আসে তখন লিংকন পকেট হতে তার খসড়া বের করে তা নীরবে পাঠ করেন এবং মনেমনে বক্তব্য বিষয় স্মরণ করে নেন।

স্মরণ শক্তির উৎস সম্পর্কে অধ্যাপক জেমসের ব্যাখ্যা :

স্মরণ রাখার প্রথম দুটি নিয়মই যথেষ্ট। তবে তৃতীয়টি অনুসঙ্গ, এটি পুনঃ স্মরণের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। বস্তুতপক্ষে এটি হচ্ছে স্মরণ শক্তির ব্যাখ্যা। আমাদের মন হচ্ছে, “অধ্যাপক উইলিয়াম জেমস বিজ্ঞতার সাথে বলেছেন” “একটি প্রয়োজনীয় অনুসন্ধী মাত্র…..মনে করুন আমি এক মুহূর্ত নীরব রইলাম, অতঃপর হুকুম দেয়ার মতো কণ্ঠস্বরে বললাম, পুনঃস্মরণ কর! পুনঃস্মরণ কর। আপনার মন কী এই আদেশ পালন করবে? আপনার অতীত সম্পর্কে কী আপনি কিছু প্রকাশ করবেন? নিশ্চয়ই না। আমার আদেশ ব্যর্থ হবে। বরঞ্চ আপনি মনে-মনে চিন্তা করবেন, আমার কী স্মরণ করা উচিত বলে আপনি মনে করেন? সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, এর একটি সূত্র প্রয়োজন। কিন্তু যদি আমি বলি, আপনার জন্ম তারিখ স্মরণ করুন, অথবা প্রাতভোজে কী গ্রহণ করেছেন তা স্মরণ করুন, বা সঙ্গীতের কথা ও ছন্দ স্মরণ করুন, ফলে আপনার স্মরণ শক্তি জাগরিত হবে, আপনি উত্তর দিতে সক্ষম হবেন। সূত্র পেলে আপনার পক্ষে সঠিক উত্তর দেয়া সম্ভব হবে। এখন যদি আপনি চিন্তা করেন, এটা কীভাবে ঘটে, তাহলে আপনি দেখবেন যে, সূত্র জানা থাকায় আপনার পক্ষে এটা স্মরণ করা সহজ হচ্ছে। আমার জন্মদিন” এই অনুষ্ঠানের সাথে বিশেষ তারিখ মাস বছরের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। আজ সকালের প্রাতভোজ বললে কফি, ডিম প্রভৃতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর গানের কথা বললে স্মরণে আসবে সা-রে-গা-মা। তবে অনুসঙ্গের সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, চিন্তাশক্তির উপর প্রভাব বিস্তার। মনে যা কিছু জাগবে, তা জাগবে অনুষঙ্গ ভিত্তিতে। আপনি যা কিছু স্মরণ করবেন তার ভিত্তিতে কিছু প্রকাশে সক্ষম হবেন।–স্মরণ শক্তিকে জাগরিত রাখার জন্য দুটি নিয়ম পালন করা দরকার। প্রথমত অধ্যবসায়, দ্বিতীয়ত সংখ্যা। স্মরণ শক্তির উৎস হচ্ছে ভিন্নমুখী অনুষঙ্গের একত্র সন্নিবেশ। কিন্তু এই অনুষঙ্গ ভিত্তি করে কোনো কিছু স্মরণ করতে হলে সমগ্র তথ্যটিই স্মরণ করতে হবে। একই অভিজ্ঞতার অধিকারী দুব্যক্তির কথা, যে ব্যক্তি নিজের অভিজ্ঞতার উপর বেশিভাবে নির্ভরশীল তিনি নিজের অভিজ্ঞতাকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের চেষ্টা করেন এবং অপর জনও স্মরণ শক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগান, ধারাবাহিকভাবে না হলেও, অভিজ্ঞতা এক হলেও চিন্তাধারা এক নয় বলে এরূপ বৈষম্য হয়।

আপনার চিন্তাকে কীভাবে একত্র সন্নিবেশ করবেন।

যা হোক, কীভাবে আমরা আমাদের চিন্তাধারাকে ধারাবহিকভাবে সন্নিবেশিত করব? এর উত্তর হচ্ছে, অর্থের ভিত্তিতে, অর্থগতভাবে একটির পর একটি সন্নিবেশিত করব। উদাহরণ স্বরূপ, নিম্নলিখিতভাবে চিন্তা করলে আমাদের তথ্য ধারাবাহিক ভাবে সাজানো সহজতর হবে :

(ক) কেন এটা এরূপ হয়?

(খ) কীভাবে এটা এরূপ হয়?

(গ) কখন এরূপ হয়?

(ঘ) কোথায় এরূপ হয়?

(ঙ) কে বলে এটা এরূপ হয়?

আমরা যদি কখনো কোনো অপরিচিত ব্যক্তির নাম উচ্চারণ করি তখন তার নামকে আমাদের কোনো পরিচিত ব্যক্তির সাথে মিলাতে চাই। অপর দিকে আমরা যদি দেখি নামটি অস্বাভাবিক, তাহলে আমরা ওটা পরিচিত কারো সাথে মিলাতে পারি না। ফলে অপরিচিত ব্যক্তির নামটি পরিচিত হয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এই অধ্যায় লেখা কালে আমাকে মিস নোটার-এর সাথে পরিচিত করে দেওয়া হয়। আমি তাঁকে নামটি উচ্চারণ করতে এবং অস্বাভাবিকতা সম্পর্কে বলতে বলি। ”হ্যাঁ” সে বলে, “এটা সাধারণ নহে। এটা গ্রিক শব্দ এবং এর অর্থ রক্ষাকারী।” অতঃপর সে আমাকে তাঁর স্বামীর কথা বলে। তার স্বামী এথেন্সের লোক এবং সরকারের সে উচ্চ পদের অধিকারী। আমি কতিপয় লোকের সাথে আলাপ করে দেখেছি, তারা অপরিচিত এবং তাদের নাম অদ্ভুত হলেও আলাপের ফলে তাদের চালচলন বোঝা এবং নাম উচ্চারণ করা আমার জন্যে সহজ হয়ে পড়েছে?।

অপরিচিত ব্যক্তি দেখলে তার প্রতি তীক্ষ্ণ নজর দেবেন। তাঁর চোখ ও চুলের রং স্মরণ রাখুন, দেখুন তার গতিবিধি। তার পোশাক দেখুন। সে কীভাবে কথা বলে তা দেখুন। তার চলাফেরা ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানুন। সুস্পষ্ট ধারণা নিন। দ্বিতীয় বার যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের দেখলে আপনি চিনতে পারবেন।

আপনার কী ধরনের অভিজ্ঞতা আছে যে কোনো ব্যক্তিকে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার দেখলে আপনি তার পেশার কথা স্মরণ করতে পারেন কিন্তু তার নাম স্মরণ করতে পারেন না? এই স্মরণ হচ্ছে এই যে, কোনো ব্যক্তির নাম অদৃশ্য কিন্তু পেশা দৃশ্য। এটার একটা অর্থ আছে। নামটা বিস্মৃত হয়ে গেলেও তার পেশা তাই স্মরণ থাকে। সুতরাং কোনো ব্যক্তির নাম নিশ্চিত ভাবে স্মরণ রাখার প্রকৃত পন্থা হচ্ছে তার পেশা স্মরণ রাখা। এই পদ্ধতি যে সঠিক সে সম্পর্কে কোনোই সন্দেহ নেই। উদাহরণ স্বরূপ, ২০ জন পরস্পর অপরিচিত বক্তির মেধা ফিলাডেলফিয়ার প্যান এথেলেটিক ক্লাবে দেখা হয়। তখন প্রতিটি ব্যক্তি নিজের নাম ও পেশা সম্পর্কে আত্মপরিচয় দান করে। ফলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই একে অপরের নাম স্মরণ করতে এবং এক অপরকে নাম ধরে ডকতে সক্ষম হয়, তারা এরপর বহুদিন পরস্পরকে স্মরণ রাখতে সক্ষম হয়।

এখানে বর্ণমালা ভিত্তিতে তাদের কয়েক জনের নামোল্লেখ করছি। তাদের স্মরণ রাখার জন্যে প্রত্যেকের নামের সাথে তার ব্যবসা সম্পর্কে একটি করে প্রবাদ ব্যবহার করা হয়। প্রবাদ স্মরণ রাখার নাম স্মরণ থাকে সহজ ভাবে।

মি. জি. পি. অলব্রেখট (বালির ব্যবসা) বালি সব সময় উজ্জ্বল করে।

মি. জি. ডাব্লিউ. বেসেল (এ্যাসফল্ট এর ব্যবসা) –এ্যাসফল্ট ব্যবহার করে খরচ কমান।

মি. এইচ. এ. বিডল (উলের বস্ত্রের ব্যবসা) বিডল উলের ব্যবসাকে পিডল (তুচ্ছ) মনে করেন।

মি. গিডন বোরিক (খনি ব্যবসা) বোরিক সব সময় খনির কথা ভাবেন।

মি. টমাস ডেভারী (ছাপার কাজ) সকলের জন্যে ডেডারী প্রিন্টিং প্রয়োজন।

মি. ও. ডব্লিউ ডুলিটল (কার) –কার বিক্রিতে তেমন অসবিধা নেই।

মি. টমাস ভিশার (কয়লা) কয়লা ব্যবসা তাকে বাঁচিয়েছে।

মি. ফ্রাঙ্গ এইচ, গোল্ডে (কাট চেরাই) কাঠ চেরাই ব্যবসা বড় অর্থপূর্ণ।

মি. জে. এইচ, জানকক (সানডে ইভনিং পোস্ট) –জনহানকক সাটারডে পোস্টের কলামিস্ট।

কীভাবে তারিখ স্মরণ রাখা যায় :

যে সব ঐতিহাসিক বা স্মরণীয় ঘটনার দিন আপনার স্মরণ আছে তার কথা আপনার তারিখের সাথে মিলিয়ে নিন। এটা তেমন কঠিন কাজ নয়, উদাহরণ স্বরূপ, আমেরিকানদের পক্ষে ১৮৬৯ সালে সুয়েজ খাল হয় একথা স্মরণ রাখার চাইতে গৃহযুদ্ধ বন্ধ হবার চার বছর পর এ খাল দিয়ে জাহাজ চালু হয় একথা স্মরণ রাখা সহজতর। যদি একজন আমেরকিান স্মরণ রাখতে চান যে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম বসতি স্থাপিত হয় ১৭৮৮ সালে। কিন্তু গাড়ির নাট বল্ট পড়ে যাবার মতো এই তারিখ ও বিস্মৃত হয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। তবে ১৭৬৬ সালের ৪ঠা জুলাই এর কথা স্মরণ রাখা সহজতর। সুতরাং আমেরিকান স্বাধীনতা ঘোষণার ১২ বছর পর অষ্ট্রেলিয়ায় প্রথম বসতি স্থাপিত হয়, একথা মনে রাখলে বছর স্মরণ রাখা সহজতর হয়।

একটি টেলিফোন নম্বর স্মরণ রাখার জন্যেও আপনি অনুরূপ একটি পদ্ধতি অনুসরণ করুন। উদাহরণ স্বরূপ, মনে করুন, লেখকের ফোন নং ১৭৭৬ এটা স্মরণ রাখা কারো পক্ষে কষ্টকর নয়। সুতরাং এই ধরনের স্মরণীয় ঘটনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নম্বর হলে সেটা সহজে স্মরণ রাখা যায়। এসব নম্বরের জন্যে কোনো ডাইরেক্টরি দেখার প্রয়োজন হয় না। আপনার ফোন নম্বর ২৪১২, একথা আপনা বন্ধু ভুলে গেলেও কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের কথা সে ভুলে না, সুতরাং সে সহজেই আপনার নম্বর স্মরণ করতে পারেন, ভুলে গেলেও খুঁজে পাবে।

অনুরূপভাবে অস্ট্রেলিয়ান, নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী, কানাডীয়দের জন্যে ১৭৭৬, ১৮৬১, ১৮৬৫ বিশেষ অর্থপূর্ণ। এগুলো তারা কখনো বিস্মৃত হবে না।

এসব তারিখ স্মরণ রাখার সর্বোত্তম পন্থা কী?

(ক) ১৫৬৪–শেক্সপিয়ারের জন্ম।

(খ) ১৬০৬ –ইংরেজরা প্রথম আমেরিকায় বসতি স্থাপন করে।

(গ) ১৮১১ –রানী ভিক্টোরিয়ার জন্ম।

(ঘ) ১৮০৭ –রাবার্ট ইলীর জন্ম।

(ঙ) ১৭৮১ –বাস্তিল দুর্গের পতন।

যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পুনরাবৃত্তি করে ইউনিয়নে যোগদানকারী মূল তেরটি রাজ্যের নাম মুখস্থ করা এবং ধারাবাহিকভাবে এগুলোর নাম বলা আপনার জন্যে খুবই কষ্টকর। বার বার চেষ্টা করলেও এগুলো সহজে মুখস্থ হবে না; এবং মুখস্থ হলেও বলার সময় কোনটা আগে, কোনটা পরে চলে যাবে। কিন্তু নিম্নবর্ণিত ব্যাপারটি আপনি কয়েক বার পড়লে ১৩টি নাম স্মরণ রাখা এবং ধারাবাহিক ভাবে স্মরণ রাখা আপনার জন্যে সহজ হয়ে পড়বে।

প্যারটি হচ্ছে :

এক শনিবার বিকেলে জনৈকা তরুণী ডেলাওয়ার হতে রেলযোগে প্যানসিলভিনিয়া গমনের জন্যে একটি টিকিট কেনেন। তিনি তাঁর সুটকেসে নিউজার্সির একটি সুয়েটার নেন এবং তার বন্ধু জর্জিয়ার সাথে কনেকটিকাটে দেখা করেন, পর দিন সকালে বন্ধুসহ তিনি মেরিল্যান্ডের মাস চার্চে উপস্থিত হন। অতঃপর তারা সাউথ কার যোগে বাড়ি গিয়ে একটি সদ্য ভাজা মুরগিসহ ভোজ গ্রহণ করেন। মুরগিটি ভার্জিনিয়ায় রোস্ট করা। এতে মশল্লা দেয়া হয়েছে নিউইয়র্কের। ভোজের পর তারা নর্থ কার যোগে দ্বীপে গমন করেন।

এটি পড়ে মুখস্থ করা সহজ এবং নামগুলো স্মরণ রাখাও সহজ।

আপনার বক্তৃতার পয়েন্টগুলো কীভাবে স্মরণ রাখবেন :

একটি বিষয়ের উপর আমরা দু’ভাবে চিন্তা করতে পারি। প্রথম-বাহিরের দিক স্মরণ করে, দ্বিতীয়, মনে যা আছে তা স্মরণ করা। নোট প্রভৃতির সাহায্যে আপনি আপনার বক্তৃতা বিষয় স্মরণ রাখতে পারেন। কিন্তু কোনো বক্তা নোটের সাহায্য নিয়েছেন এটা কী শ্রোতারা পছন্দ করেন? অন্য কিছুর সাথে মিলিয়ে আপনি আপনার বক্তব্য স্মরণ করতে পারেন। তবে সেগুলো এমন ভাবে সাজাতে হবে যে প্রথম পয়েন্ট এর পর দ্বিতীয় পয়েন্ট, অতঃপর তৃতীয় পয়েন্ট অর্থাৎ আপনি যেন এক ঘরে থেকে অন্য ঘরে যাচ্ছেন। এভাবে যেন আপনার বক্তব্য প্রকাশ পায়।

কিন্তু নতুন বক্তা, যিনি সঠিক ভাবে কিছু চিন্তা করতে পারেন না তার জন্যে এই পদ্ধতি সহজ নয়। কেননা নতুন বলে তার মনে ভয়ও আছে। তার জন্যে পয়েন্ট মনে রাখার সহজ পদ্ধতি কী?

তার জন্যে সহজতর পদ্ধতি হচ্ছে কতিপয় প্রাণী, দ্রব্য, মানুষ প্রভৃতির নাম স্মরণ রাখা এবং এসব প্রাণী দ্রব্য প্রভৃতিকে তার পয়েন্ট বলে মনে রাখা। যেমন একটি বাক্য ‘গরু একটি সিগার পান করে, নেপোলিয়ানকে ধাক্কা দেয়ায় ঘরে আগুন লেগে সব কিছু ভস্ম হয়ে গেল।” এখন সে তার পয়েন্টগুলো গরু, সিগার, নেপোলিয়ন প্রভৃতির সাথে মিশিয়ে নিলে তার পক্ষে বক্তব্য মনে রাখা সহজতর হবে। অথচ বাক্যটি অর্থহীন।

এভাবে মিশিয়ে নিন। অতঃপর ভাবুন আপনার প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম পয়েন্ট কী।

হ্যাঁ, এভাবে বক্তব্য স্মরণ রাখা সহজ হবে। এভাবে-বক্তব্যকে আস্তে-আস্তে আরো দীর্ঘায়িত করতে পারবেন।

এভাবে একবার অনুসরণ করার চেষ্টা করলে আপনার মনে নতুন-নতুন ভাব আসবে, আপনি সহজে বক্তৃতা শিখতে পারবেন।

সকল বিষয়ে আমরা আমাদের স্মরণ শক্তি সমান ভাবতে পারি না :

এই পরিচ্ছেদে আমি আমাদের ধারণা সৃষ্টি এবং আমাদের ধারণাকে ধারাবাহিকভাবে সাজানো সম্পর্কে বলেছি। আমাদের স্মরণশক্তি বাড়ানো প্রয়োজন একথা বলেছি, কিন্তু আমাদের স্মরণ শক্তি সম্পর্কে অধ্যাপক জেমস বলেছেন, “কতিপয় বিশেষ ব্যাপার আমরা স্মরণ রাখতে পারলেও সব বিষয় স্মরণ রাখার জন্যে আমাদের স্মরণ শক্তি সমান নয়।”

উদাহরণ স্বরূপ, যে ব্যক্তি শেক্সপিয়রের লেখা ভালবাসেন, পাঠ করেন, সাহিত্যসম্পর্কিত কোনো বিষয় আলোচনার উদ্ধৃতি দিয়ে তার পক্ষে বক্তৃতা করা সহজতর কিন্তু তিনি কাপড়ের ব্যবসা সম্পর্কে বক্তৃতা করলে হ্যাঁমলেট বা রোমিও জুলিয়েট থেকে তিনি কী উদ্ধৃতি দেবেন?

আমি আবারো বলছি এই পারিচ্ছেদে আলোচিত নীতি অনুরসণ করা হলে যে কোনো বিষয় মুখস্থ করা সহজতর হবে, আমাদের স্মরণ শক্তি বাড়বে। আমাদের মন হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ের অনুসঙ্গ। একটি পয়েন্ট আর একটি পয়েন্টের সাথে সম্পর্কিত। সুতরাং সেভাবে চিন্তা করলে কোনো কিছু মুখস্থ করা স্মরণ করা সহজতর হবে।

সারাংশ :

১। ”গড় মানুষ”, বলেছেন খ্যাতনামা মনস্তত্ত্ববিদ অধ্যাপক কার্ল সিসোর ”স্মরণ শক্তি সম্পর্কিত শক্তির শতকরা দশ ভাগও কাজে লাগান না। স্মরণ রাখার প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসরণ না করে শতকরা ৯০ ভাগ শক্তি নষ্ট করেন।”

২। স্মরণ রাখার প্রাকৃতিক নিয়ম তিনটি –ধারণা সৃষ্টি, পুনরাবৃত্তি ও সহযোগিতা।

৩। যে বিষয়টি আপনি মুখস্থ করতে বা স্মরণ রাখতে চান সেটি ভালোভাবে জেনে নিন, বুঝে নিন। এবং তা করতে হলে :

(ক) মনোযোগ দিতে হবে। এটাই থিওডর রুজভেল্টের স্মরণ শক্তির উৎস।

(খ) নিকট থেকে পর্যবেক্ষণ করুন। সঠিক ধারণা নিন, ক্যামেরা কুয়াশার ছবি নেয় না। সুতরাং মনের ধারণা কুয়াশাচ্ছন্ন থাকা সঠিক নয়?

(গ) ধারণাকে বহুমুখী করুন। কানে শুনে এবং চোখে দেখে সহজে মুখস্থ করা এবং স্মরণ রাখার জন্যে লিংকন আওয়াজ করে পড়তেন।

(ঘ) সর্বোপরি চোখের ধারণা স্বচ্ছ করুন। কারণ কান থেকে মস্তিষ্কে যে সব শিরা উপশিরায় শক্তি অন্তত ২৫গুণ বেশি শক্তিশালী। নোট ব্যবহার কালে মার্কটোয়েন তাঁর বক্তব্যের রূপরেখা বলতে পারতেন না। কিন্তু তিনি নোট বাদ দিয়ে যখন ছবি ব্যবহার শুরু করেন তখন তিনি রূপরেখা বলতে সক্ষম হন। স্মরণ রাখা তাঁর পক্ষে সহজতর হয়ে পড়ে।

৪। স্মরণ রাখার দ্বিতীয় আইন হচ্ছে পুনরাবৃত্তি। হাজার-হাজার মুসলমান ছাত্র মুখস্থ করে বারবার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে। বার-বার পড়লে, পুনরাবৃত্তি করলে যে কোনো বিষয় মুখস্থ করা যায়। পুনরাবৃত্তি করার সময়ও স্মরণ রাখতে হবে :

(ক) কোনো বিষয় না বুঝে, অর্থ হৃদয়ঙ্গম না করে বারবার পাঠ করা, পুনরাবৃত্তি করা সঠিক পদ্ধতি নয়। এক সাথে বার-বার পড়বেন না। দুতিন বার পড় ন। তারপর বন্ধ করে দিন। সময় করে আবার পড় ন। তা হলে সহজে মুখস্থ করতে পারবেন স্বল্প সময়ে।

(খ) একটা বিষয় মুখস্থ করার আধঘণ্টার মধ্যে আমরা যতটুকু ভুলি, পরবর্তী ত্রিশ দিনেও সমপরিমাণ ভুলি না। সুতরাং বক্তৃতা শুরু করার আগে আপনার মুখস্থ বিষয়টির নোটটির নোট আবার দেখে নিন।

৫। স্মরণ শক্তির তৃতীয় আইন হচ্ছে সহযোগিতা। অন্য তথ্যের সাথে মিলানোই হচ্ছে মুখস্থ করার সহজতর পদ্ধতি। ”মনে যাই আসুক না কেন” বলেছেন, অধ্যাপক জেমস, তার প্রকাশ করা প্রয়োজন –যার স্মরণ শক্তি প্রখর তাঁর পক্ষে মিলিয়ে এটা প্রকাশ করা সহজতর।

৬। আপনি যখন আপনার মনের একটি চিন্তাকে অন্যটির সাথে মিলাতে চান, তখন সকল দৃষ্টি কোণ হতে তা বিচার করার চেষ্টা করুন। বিষয়টি সম্পর্কে এভাবে প্রশ্ন রাখুন কেন এরূপ হয়? কীভাবে এরূপ হয়? কখন এরূপ হয়? কোথায় এরূপ হয়? কে বলেছে এটার এরূপ?

৭। একজন অপরিচিতের নাম মনে রাখতে হলে নামের উচ্চারণ জিজ্ঞেস করুন এবং এ সম্পর্কে অন্যান্য প্রশ্ন করুন। তার নামকে চেহারার সাথে মিলাবার চেষ্টা করুন। তার পেশা জেনে নিয়ে কোনো প্রবাদ মিলাবার চেষ্টা করুন। এটা করা হয়েছিল প্যান এ্যাথলেটিক ক্লাবে, এরূপ করলে নাম স্মরণ রাখা সহজ হবে।

৮। কোনো তারিখ মনে রাখতে হলে কোনো স্মরণীয় তারিখের সাথে তা মিলান, উদাহরণ স্বরূপ, শেক্সপিয়রের জন্ম ত্রিশত বার্ষিকীতে গৃহযুদ্ধ হয়।

৯। আপনার বক্তব্যের পয়েন্ট স্মরণ রাখতে হলে সেগুলো এমনভাবে সাজান যেন প্রথমটার পর দ্বিতীয়টা আসে। এটার জন্যে অদ্ভুত বাক্য ও ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ —

‘গরু ধূমপান করে, নেপোলিয়নকে ধাক্কা দেয়ায় ঘরে আগুন লেগে সবকিছু ভষ্মে পরিণত হয়।” এক্ষেত্রে গরু সিগার, নেপোলিয়ন প্রভৃতি কোনটার জন্যে কী পয়েন্ট ধরেছেন তা স্মরণ করুন। তা হলে। পয়েন্টগুলো একটির পর একটি আসবে।

১০। পদ্ধতি ও সর্বপ্রকার সতর্কতা সত্ত্বেও আপনি যদি বক্তৃতা কালে বক্তৃতা ভুলে যান তা হলে আপনি কী করবেন? আপনার শেষ বাক্যের শেষ শব্দটির পুনরাবৃত্তি করে, তা ব্যাখ্যা করে, অবস্থা আপনার আয়ত্বে রাখতে পারেন। আপনার পরবর্তী পয়েন্ট মনে না আসা পর্যন্ত সেভাবে ব্যাখ্যা কাজ চালিয়ে যাবেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *