৩৪. ভালোবাসার মান উন্নত করুন

৩৪. ভালোবাসার মান উন্নত করুন

নিউইয়র্ক সিটি ইউথ হাউসের সেক্রেটারী মি. ইয়েল এইচ. উইলার্ড ম্যাসাচুসেটস-এ অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন যে, কিশোর অপরাধের অন্যতম প্রধান হচ্ছে শিশুর প্রতি ভালবাসার অভাববোধ। যখনই শিশু চিন্তা করতে শুরু করে যে, সে ভালবাসা থেকে বঞ্চিত কেউ তাকে ভালবাসে না তখনই তার প্রবণতা সঠিক পথ থেকে সরে আসে, সে অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হতে শুরু করে।

যেটা প্রধান সমস্যা বলে মনে হয় তা হল, হতভাগ্য কিশোরদের জন্য গভীর ভালবাসা আর মমত্ববোধের অভাব।

১৯ বছর বয়সী টমী একজন কিশোর অপরাধী, সে জেলখানায় ১০ বছরের ও বেশি কাটিয়েছে। সে বলে, আমার যা প্রয়োজন তা হল আমাকে স্নেহ, মায়া, মমতা ভালবাসা দিবে এমন কেউ।

আশ্চর্য হওয়ার কারণ নেই যে সব ছেলেমেয়েদের স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়, তারা শেষ পর্যন্ত অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হবেই। তারা চায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ে স্নেহ মমতার ঘাটতি পূরণ করতে।

ভালবাসার উপরেই আমাদের সমস্ত উদ্যম, অনুভূতি আর জীবনীশক্তি নিয়ে আমরা টিকে থাকি। ভালবাসার ঘাটতি হলে আমাদের মানসিক সুকুমার কোমল প্রবৃত্তি যেন শুকিয়ে গিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

মানবজীবনে প্রেম হল পরমাণু শক্তির মতো। স্বামীর জীবনে আপনার ভালবাসার গুরুত্ব অত্যন্ত মৌলিক। আপনার ভালবাসা অকৃত্রিম বলে আপনি স্বামীর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধান আর তার কৃতকার্যতার অন্তরায়গুলো দূর করে দেওয়ার জন্য মনেপ্রাণে অনুপ্রাণিত হবেন। স্বামীর প্রতি আপনার ভালবাসা সন্তানদের মঙ্গল বিধানের কাজেও প্রভাব ফেলবে।

এখন আমরা দেখবো, কীভাবে আমরা ভালবাসার মান উন্নত করতে পারি

১। ভালবাসার দৈনন্দিন প্রকাশ : ভালবাসাই দাম্পত্য জীবনের মূলকথা। অনেক মহিলাই সংকটের সময় মহৎ ভূমিকা পালনের যোগ্যতা রাখেন। কিন্তু স্বামীকে প্রাত্যহিক জীবনের মুহূর্তগুলো ভালোবাসায় পূর্ণ করে তুলতে ব্যর্থ হন। পনের শ’র বেশি বিবাহিত ব্যক্তির প্রতি পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ভালবাসা প্রকাশের ব্যর্থতার ক্ষেত্রে পুরুষরা খুঁতখুঁতে স্বাভাবের স্ত্রীদের কাছে দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যর্থ হয়েছেন। ডাঃ লুই এম টারম্যান ও তাঁর সমহকর্মীরা এই সমীক্ষা চালান। জীবন যখন স্বাভাবিক পথ ধরে চলতে থাকে, তখন স্ত্রী এত বেশি উদাসীন বা ব্যস্ত থাকেন যে, স্বামীকে তার জীবনে কতখানি প্রয়োজন, তা জানবার অবকাশ পান না।

আমার অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে, যেসব মহিলা স্বামীকে ভালবাসেন না, স্বামীর অবহেলা অসহ্য, স্বামী তাকে যথাযোগ্য সম্মান দেন না বলে অভিযোগ করেন তারা নিজেরাই ভালবাসা ও প্রশংসার আসল মূল্যটি জানেন না।

ডাঃ উইলিয়াম মিনেজার বলেন যে, ওই ধরনের মানসিকতার মহিলারা নিজেকে এত বেশি ভালবাসেন যে অন্যদিকে তাকানোর বা অন্যকে ভালবাসার অবকাশ থাকে না। অপরদিকে, যেসব মহিলা ভালবাসার ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ ও উদার তারা স্বামীর কাছ থেকে অপরিসীম ভালবাসা লাভ করেন।

২। সুরসিকা হয়ে উঠন : অনেক স্ত্রী আছেন যারা সম্পূর্ণ দক্ষ হওয়ার মানসিকাতর শিকার হয়ে থাকেন। মনে রাখতে হবে যে, সব ব্যাপার সহজভাবে হৃষ্টমনে গ্রহণ করতে পারলে হতাশায় না ভুগে বরং সব সরলভাবে মানিয়ে নিতে পারলে দাম্পত্য জীবনে প্রেমের ভিত্তি সুদৃঢ় হয়ে ওঠে।

৩। উদার হয়ে উঠুন : বিবাহিত জীবনে আধা-আধির কোনো ব্যাপার থাকে না। প্রেমের মূলকথাটি হল নিজেকে স্বামীর কাছে নিঃস্বার্থ ভাবে উজাড় করে দেওয়া। যে সব স্ত্রী একান্ত বিশ্বস্তভাবে স্বামীর প্রতি অনুরক্ত এবং পার্থিব সুখের জন্য সর্বস্ব বিসর্জন দিতে প্রস্তুত, তারাও আবার সামান্য ব্যাপারে বিভ্রাট ঘটিয়ে থাকে, কিন্তু এটা করা কখনোই উচিত নয়। অনেক সময় স্ত্রীরা বিয়ের পর স্বামীর পুরনো বন্ধুদের সহ্য করতে পারেন না, তাদের ঈর্ষা করেন। কিন্তু এই ব্যাপারগুলোকে যদি সহজভাবে মেনে নেওয়া যায়, তবে অশান্তি হওয়ার কোনো ভয় থাকে না।

৪। সামান্য বিষয়েরও প্রশংসা করুন : স্ত্রীকে সুখী করার জন্য স্বামী যা যা করে থাকে তার উল্লেখ আর প্রশংসা করা প্রত্যেক স্ত্রীরই কর্তব্য। এর স্বীকৃতি দেওয়া চাই। –আমাদের অনেকেই স্বীকার করি না যে স্বামী প্রতিদিন আমাদের কত সেবা করেন, কত কাজ করে দেন। এর একমাত্র কারণ হল আমরা কাজগুলো স্বামীদের দিয়েই করিয়ে নিতে অভ্যস্ত। স্বামীর কাজের স্বীকৃতি দেওয়া সব সময় প্রয়োজন।

৫। সুবিবেচক হয়ে উঠুন : স্বামী যখন ঘরে ফিরে একটু পবিশ্রাম নিতে চান, তখন কোনো বিবেচক স্ত্রীর সাজগোজ করে বাইরে যাওয়া উচিত নয়। স্বামীর প্রতি গভীর ভালবাসা থাকলে স্বামী কখন কী চান স্ত্রী স্বাভাবিকভাবেই সেটা উপলব্ধি করতে পারেন। এবং স্বামীর সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের আলোয় নিজেকে উদ্ভাসিত করে তার ভালবাসার ফসল আদায় করতে পারেন।

আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করতে পারি। বিরক্ত হয়ে কখনও তিনি আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন নি। ভালবাসার আলোয় তিনি আমার জীবন ভরিয়ে দিয়েছিলেন।

একজন স্ত্রীর পক্ষে এসব কি বিনা প্রচেষ্টায় সম্ভব বলে ভাবেন আপনারা? এ কথা কি তারা ভাবেন যে স্ত্রী আজীবন স্বামীকে গভীর ভালবাসায় পরিপূর্ণ করে রাখেন?

ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে মি. ওয়ারনেক অ্যাঙ্গাস এক চিঠিতে আমায় লিখেছিলেন-জীবনে আমি যত সাফল্য অর্জন করেছি তার সবেরই মূলে রয়েছে আমার স্ত্রীর প্রেমময় সান্নিধ্য।’

ভালবাসা হল অমূল্য সম্পদ। ভালবাসা ছাড়া সম্মান ও সম্পদের কোনো দাম নেই। যদি আপনার ভালবাসায় আপনার স্বামী প্রকৃত সুখী হন, তাহলে জেনে রাখুন, আপনার জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা আরও অনেক গুণ বেড়ে যাবে।

নিচের কয়েকটি নিয়ম মনে রাখার চেষ্টা করুন : স্বামীকে উন্নত পর্যায়ের ভালবাসায় পূর্ণ করুন এবং সেটা করবেন :

১। আপানার ভালবাসার প্রকাশ ঘটানোর মধ্য দিয়ে।

২। সুরসিকা হয়ে।

৩। নিজের অনুভূতিতে উদারতা সৃষ্টি করে।

৪। স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে আর প্রশংসা করে।

৫। সুবিবেচক হয়ে উঠে।

স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা শুধুমাত্র প্রেমের প্রসন্ন দৃষ্টির মধ্যেই থাকে না আদর্শ দম্পতির সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেম আর ভালোবাসা হল পরস্পরের হৃদয়কে, মনকে জানতে চাওয়া, বুঝতে চাওয়া।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *