৩৩. স্বামীর জীবন আপনারই হাতে

৩৩. স্বামীর জীবন আপনারই হাতে

পুরুষদের অকাল মৃত্যুর জন্য অতিরিক্ত খাওয়ার ব্যাপটারটা অনেকটাই দায়ী। আর সেই কারণে স্ত্রীদের দোষী করা যায় অনেক ক্ষেত্রেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক পুরুষই পঞ্চাশ বছরের ওদিকে মারা যান। এই অকাল মৃত্যুর হার স্ত্রীদের তুলনায় শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বেশি।

দুঃখের বিষয় হল বেশির ভাগ পুরুষই এজন্য মহিলাদের দায়ী করতে চান।

ডাঃ হার্বার্ট পোলক ‘টু ডেজ উইম্যানে’ প্রকাশিত ‘হোয়াই হাজব্যান্ডস উই টু ইয়ং’ নামক প্রবন্ধে বলেন, স্বামীকে সুস্থ রাখার জন্য অপনার প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে তার পরমায়ু বৃদ্ধি করতে পারে। এই মুহূর্তে আপনার স্বামীর পরমায়ু বৃদ্ধি ক্ষমতা আপনারই হাতে রয়েছে।

স্বামীর ওজন যদি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তাহলে সে সম্ভাবনা কিন্তু অনেকটাই কমে যায়। আমেরিকার ওহিও রাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এক চিকিৎসা বিষয়ক সম্মেলনে এই মন্তব্য করা হয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সমস্যাই সবচেয়ে বড় সমস্যা।

স্বামীর স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আমরা আমাদের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারি না। স্বামীকে দীর্ঘজীবী করতে হলে আমাদের উচিত খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে কড়া নিয়ম-কানুন মেনে চলা। অল্প ক্যালোরি যুক্ত অথচ কর্মশক্তি বাড়াতে পারে এমন খাদ্যই নির্বাচন করা উচিত। এছাড়াও প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডাঃ ইউজিন হোয়াইটহেডের মতে, প্রথমত চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে। তার মতে, দৈনিক তিনবার যে খাদ্য গ্রহণ করা হয় তার পরিমাণ সমান হওয়ার দরকার। তিনি আরও মনে করেন যে,

প্রতিবারের খাদ্যে সমপরিমাণ সব রকম প্রেটিন চাই-ই। উত্তেজক খাদ্য বর্জন করাই ভালো।

ডাঃ রবার্ট ভি. সেনিগার একজন খ্যাতনামা মনস্তাত্ত্বিক। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে। এই সময় স্বাস্থ্যকর প্রাতঃরাশই চাই আপনার স্বামীর জন্য।

আমার একজন বান্ধবী এই রকম সকালে শয্যা ত্যাগ করার ফলে চমৎকার ফল পেয়েছেন। মহিলার নাম মিসেস ক্লার্ক ব্রাইনস। আপনি যদি ব্যস্ত মানুষ হয়ে থাকেন, তবে খুব সকালে শয্যা ত্যাগ করার অভ্যাস করুন, তাতে নিঃসন্দেহে উপকৃত হবেন।

আপনার স্বামীকে যদি আপনি দীর্ঘজীবী ও কর্মক্ষম স্বাস্থ্যে ভরপুর রাখতে চান তবে কিছু নিয়ম পালন করা উচিত :

১। স্বামীর শরীরের দিকে নজর রাখুন, তার দেহের ওজনের হেরফের লক্ষ্য রাখাই চাই :

দেখবেন তার ওজন ১০ ভাগের মতো মাত্রাতিরিক্ত হয়ে পড়েছে কিনা। এ রকম দেখলেই চিকিৎসকের সাহায্য ও পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না। তার মত অনুযায়ী স্বামীর খাদ্য তালিক বানিয়ে নেবেন। লক্ষ্য রাখবেন, যে খাদ্য স্বামীকে দিচ্ছেন তা যেন সুস্বাদু ও দেখতে লোভনীয় হয়।

২। বাৎসরিক ডাক্তারি পরীক্ষা : স্বাস্থ্যবান থাকার শ্রেষ্ঠ পথ হল রোগ প্রতিরোধ করা। প্রাথমিক পর্যায়ে যদি রোগ ধরা পড়ে তাহলে মৃত্যুর হার অবশ্যই কমে যাবে। লক্ষ্য রাখা দরকার যে, আপনার স্বামী যথারীতি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন কিনা।

৩। স্বামীকে বেশি কাজ করতে দেবেন না : প্রায় প্রত্যেকেই চায় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে আর কৃতকার্য হতে। সে ক্ষেত্রে অনেক দিন বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই। তখন চাকরিতে উন্নতির অর্থ হবে দেহমনের উপর মাত্রারিক্ত চাপ। এই কারণেই আপনার স্বামী অতি উচ্চাভিলাষী হয়ে থাকলে তাকে বেশি পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান করার মতো সাহসী করে তুলুন।

বেশী আয় করার অর্থ যদি স্নায়ুর উত্তেজনা, অশান্তি আর অকাল মৃত্যুর কারণ হয় তবে সব থেকে গ্রহণযোগ্য পথটি হবে অল্প আয়েই সন্তুষ্ট থাকা। তাই স্বামী যদি বেশি পরিশ্রম শুরু করেন তা থেকে তাকে নিবৃত্ত করুন আর অল্পে সন্তুষ্ট থাকার জন্য অনুপ্রেরণা দিন। তাকে উত্তেজনা মুক্ত রাখুন। অনেক ক্ষেত্রেই স্ত্রীর মনোভাবের উপরেই স্বামীর সাংসারিক প্রচেষ্টার গতিধারা অনেকাংশে নির্ভর করে।

৪। পরিমিত বিশ্রাম : লক্ষ্য রাখতে হবে যে, স্বামী যেন প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্রামের সুযোগ পান। অবসাদ আর ক্লান্তি দূর করার সবচেয়ে সেরা উপায় হল ক্লান্ত হওয়ার আগেই বিশ্রাম নেওয়া। বিশ্রাম খুব ভালো ফল দিয়ে থাকে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে সেনাবাহিনীতে মার্চ করার পর সৈন্যদের ১০ মিনিট বিশ্রাম নিতে দেওয়া হয়।

৭০ বছর পরেও বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক সমারসেট সমকর্মক্ষম ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রত্যেকদিন আহারের পর ১৫ মিনিট ঘুমিয়ে নেওয়াই তার জীবনীশক্তির গোপন রহস্য। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার উইনস্টন চার্চিল দুপুরে খাওয়ার পর আধ ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিতেন। এই ধরনের বহু দৃষ্টান্ত আছে।

৫। পারিবারিক জীবন সুখী রাখুন : সর্বদাই কোনো-না-কোনো বিষয় নিয়ে অভিযোগ করা স্ত্রী-স্বামীর অগ্রগতির প্রতিবন্ধক–কথাটা মনে রাখা ভালো। এই ধরনের স্ত্রীরা স্বামীর স্বাস্থ্যহানিরও কারণ হয়ে ওঠেন।

দুঃখ-ভারাক্রান্ত কিংবা ক্রোধের বশবর্তী মানুষ সাধারণত মনের দিক থেকে অবরুদ্ধ হয়ে থাকায় তাদের স্নায়ু তেমন জোরালোভাবে কাজ করতে পারে না। এই ধরনের মানুষের জীবন বেশ ঝুঁকির আর দুঃখেরও হতে পারে।

প্রত্যেক মানুষের জীবনে সফলতার বৃহত্তম দিক হল, জীবনকে উপভোগ করার ক্ষমতা। আমাদের স্ত্রীদের উচিত, স্বামীর দৈহিক ও মানসিক মঙ্গল বিধান করার দায়িত্ব নেওয়া।

বত্রিশ, তেত্রিশ পাঠের সূত্র : কীভাবে স্বামীর স্বাস্থ্য ও সম্পদ রক্ষা করবেন সে বিষয়ে কতকগুলি কথা মনে রাখা প্রয়োজন।

১। আয় অনুযায়ী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হোন।

২। স্বামীর স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখুন, যত্ন নিন।

লক্ষ্য রাখুন –

(ক) তাঁর ওজনের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটছে কিনা।

(খ) স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে কিনা।

(গ) তাঁকে কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে কিনা।

(ঘ) তিনি যথেষ্ট বিশ্রাম পাচ্ছেন কিনা।

(ঙ) তার পারিবারিক জীবনে শান্তি আছে কিনা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *