২৯. যা বলার সংক্ষেপে বলুন

২৯. যা বলার সংক্ষেপে বলুন

১৯৪৮ সালে আমরা যখন ইউরোপে ভ্রমণ করতে গিয়েছিলাম, সেখানে একজন অধ্যাপক আমাদের স্বামী-স্ত্রীকে তার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। ভদ্রলোকের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে দেখলাম সেখানে তার স্ত্রী ছিলেন না। তিনি রান্নাঘরে চাকর-বাকরদের কাজের তদারকি করছিলেন। ইতোমধ্যে ভদ্রমহিলা এসে পড়লেন। আমাদের সঙ্গে তাঁর অল্পই কথাবার্তা হল, এরপর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হল, ভদ্রমহিলা তার রান্নার মেনু আর তদারকিতে এমনই বিব্রত হয়েছিলেন যে কারও দিকে আর নজর দিতে পারলেন না। এর চেয়ে কোনো রেস্তোরাঁয় গেলে ভদ্রমহিলার সঙ্গে ভালোভাবে আলাপ করা যেত, তার সঙ্গও পেতে পারতাম। ভদ্রমহিলা নিশ্চয়ই ‘শর্টকাট পদ্ধতির কথা জানতেন না। আজকালকার ব্যস্ততার দিনে এই শটকার্ট পদ্ধতিটি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহিণীদের এই শর্টকাট বা স্বল্প পরিশ্রমে কাজকর্ম সমাধা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রচুর মেধা আর উদ্ভাবনীশক্তি ব্যয় করা শুরু হয়েছে। ‘ আমরাই বা এই ধরনের সুযোগ গ্রহণ করবো না কেন? যদি জীবনের কোনো ক্ষেত্রে কর্মশক্তি ও সময়ের ব্যবহার বেশিরকম গুরুত্ব আর তাৎপর্যপূর্ণ হয়, আর তারই সঙ্গে জানা দরকার এই কর্মশক্তি ব্যয় করার মধ্যে দিয়ে আদর্শ স্ত্রী ও মা হাওয়া সম্ভব। বিভিন্ন রকম ফলশ্রুতিতে জানা গেছে দক্ষতা অর্জন আর কাজের মান বাড়িয়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়াই হচ্ছে গৃহিণীদের প্রধান অন্তরায়।

আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের গৃহাঙ্গন রক্ষণাবেক্ষণের কাজে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন করে তুলেছে। তাই আপনার কাজকর্ম পরীক্ষা করে নিন আর দেখুন আপনি আপনার দক্ষতা বাড়াতে পারেন কিনা। মনে রাখা দরকার যে, ক্ষেত্রবিশেষে দ্রুততম ব্যবস্থাই সর্বোত্তম ব্যবস্থা।

মূলকথা হল, গৃহস্থালির কাজের জন্য যেখানে যেটা দরকার আগে থেকেই সেখানে সেটা যেন সাজিয়ে রাখা থাকে। এই প্রসঙ্গে কিছু পরামর্শের উল্লেখ করছিঃ

১। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র : যেমন-টুথপেস্ট, সাবান, তেল একসঙ্গে কিনে রাখলে টাকা পয়সার দিক থেকেও সাশ্রয় হয় আর সময়ও বাঁচে।

২। পরিকল্পনা : কোনো জিনিস কেনাকাটার আগে কতটা দরকার কত দামের মধ্যে আগে থেকে ঠিক করে তবে দোকানের উপস্থিত হওয়া প্রয়োজন।

৩। ক্রেতা রিচার্স সার্ভিস : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বহু উন্নত দেশে ক্রেতা রিচার্স সার্ভিসের সহায়তা গ্রহণ করা হয়। এই সার্ভিস কর্তৃপক্ষ মালিক বুলেটিনের আকারে আর বার্ষিক তালিকা বা ক্যাটালগ আকারে ক্রেতাদের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর দর-দাম ওঠানামা, গুণ, গুণগত পরিবর্তন আর নতুন আবিষ্কার সংযোজন করে ক্রেতাদের সব সময় অবহিত রাখেন। অনুন্নতদেশগুলোতে এই সুবিধার প্রচলন না থাকলেও নিজের পরিবারের চাহিদার জিনিসপত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা যায়। আর একটি বিষয় মনে রাখা দরকার যে, দাম বেশি হলেই জিনিসের গুণগত মান কখনোই বেশি হয় না।

৪। তালিকা রাখুন : যদি স্মৃতিশক্তি খুব প্রখর না হয় তাহলে যে কেউ প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিসপত্রের তালিকা রাখলে সুন্দর সময় সাশ্রয় করা যায়। আসল কথা হল, পদ্ধতিগত বিন্যাসের মধ্যে দিয়ে কাজ যেমন সহজসাধ্য হয়ে ওঠে, তেমনই আবার সময় ও অর্থের অপচয় বন্ধ হয়ে যায়।

এবারে যে সব কাজ আপনি করতে পছন্দ করেন না অথচ করতে বাধ্য হন সেগুলি সংক্ষিপ্ত এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার তিনটি পদ্ধতি উল্লেখ করবো। এগুলি হল :

১। কাজের পদ্ধতি বিশ্লেষণ : নিজেকে কখন কোন কাজে লাগাবেন তা আগে থেকেই ঠিক করে ফেলুন। কীভাবে অযথা শ্রম ব্যয় করছেন তার একটা হিসাব রাখুন।

২। পরামর্শ : আপনার বান্ধবীদের কাছ থেকে যেমন পরামর্শ নেবেন, তেমন আপনার স্বামীর কাছ থেকেও পরামর্শ নেবেন। এ কথা ভাববেন না যে পুরুষ মানুষ হিসাবে সাংসারিক বিষয়ে তাঁর জ্ঞান নেই। শর্টকাটের ক্ষেত্রে পুরুষদের অবদান প্রচুর।

৩। দক্ষতা অর্জন : যে সব কাজে আপনি অদক্ষ সেগুলো বেশ সতর্কতার সঙ্গেই করতে হবে। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে যে সব কাজ করণীয় সেগুলো সুষ্ঠুভাবে করতে হবে। সদ্‌ইচ্ছা থাকলে দক্ষতা আসবেই।

৪। একটি সতর্কবাণী : যে সমস্ত কাজে আপনি আনন্দ পান আপনার পরিবারের সকলে সুখী হন, সেগুলো শর্টকাট করার দরকার নেই। কোনো কোনো মহিলা সেলাই করা, নানা স্বাদের রান্না করা ইত্যাদি পছন্দ করেন। আপনার ক্ষেত্রে যে রকম ইচ্ছাই হোক সেটা ভালোভাবেই সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন। দেখবেন, তাতে অনেক বেশি তৃপ্তি লাভ করবেন।

আধুনিক যুগে বৈজ্ঞানিক বা অবৈজ্ঞানিক যে পদ্ধতিই কাজে লাগানো হোক না কেন, তার প্রধান উদ্দেশ্যই হল অনেকটা কম সময়ে অন্যান্য কাজ শেষ করে সৃজনশীল কাজে বেশি সময় দেওয়া।

সংক্ষেপে ছাব্বিশ, সাতাশ, আটাশ, ঊনত্রিশ পাঠের নিয়মগুলি আমরা লক্ষ্য রাখার চেষ্টা করব :

১। আপনি গৃহিণী হওয়ার জন্য গৌরব বোধ করুন।

২। আপনার সংসার সকলের জন্য গড়ে তুলুন। স্বামীর সংসারকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আনন্দ ও বিনোদনের ক্ষেত্রে পরিণত করুন।

৩। সময়ের সুবিধা কাজে লাগান।

৪। শর্টকাট পদ্ধতি বা সংক্ষিপ্ত পথে কাজকর্ম সহজতর আর স্বচ্ছন্দ গতির করে তুলুন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *