২১. পরিবর্তনে ভয় পাবেন না

২১. পরিবর্তনে ভয় পাবেন না

আমেরিকার কানসাস প্রদেশের এক খামারের মালিক চার্লস রবার্টসন আশি বছর আগে একবার পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলেন ইন্ডিয়ান সীমান্তে গিয়ে কিছু করতে পারেন কি না। এরকম কিছু মনস্থ করেই তিনি তার স্ত্রী হ্যারিয়েট সমস্ত মালপত্র আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটা ওয়াগনে চেপে অজানার দিকে যাত্রা শুরু করনে। শেষ পর্যন্ত তারা আমেরিকার ওকলাহোমার উত্তর-পূর্ব দিকে সিমারুন নদীর তীরে থাকার ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। সেখানে রবার্টসন একটা কাঠের বাড়ি বানিয়ে ফেলেন। এরপর কিছুদিন কাটলে তিনি সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে ওই ছোট্ট গ্রামীণ এলাকায় একটা দোকান করেন। ওই গ্রামটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে টালমা’ নামে পরিচিত।

হ্যাররিয়েটের সময় তেমন ভালো যাচ্ছিল না। অর্থাভাবে নটি সন্তান নিয়ে কোনো রকমে দিন কাটছিল, তাদের তৈরি ঘর ছিল সম্পূর্ণ খবরের কাগজের। গ্রামে ডাক্তার বলেও কেউ ছিল না। ছেলেমেয়েদের স্কুল বলতে ছিল একখানা কামরার এক মিশনারি বিদ্যালয়। আবহাওয়া ছিল যেমন গরম তেমনই শীত। তা সহ্য করা খুবই কঠিন। রবার্টসন দম্পতি কিন্তু সব কিছুই সহ্য করতে শিখলেন, প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিলেন, আর ধীরে ধীরে সফলতার দিকে এগিয়ে চলতে থাকেন। হ্যারিয়েট স্বামীর জন্য সবই হাসিমুখে সহ্য করতে থাকেন। তিনি স্বামী ও ছেলেমেয়েদের দেখতে চাইতেন উন্নতিশীল নাগরিক আর শিক্ষিত। একে একে তারা সত্যিকার সুখী দম্পতি হয়ে ওঠেন।

রবার্টসন পরিবার ওই এলাকায় পরিচিত হয়ে ওঠেন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ওই সুদূর সীমান্ত এলাকা যে উন্নত হয়ে ওঠে তার জন্য এই পরিবারটির দান অসামান্য। তাদের চেষ্টায় এক নতুন অঞ্চল সেখানে গড়ে ওঠে। সবচেয়ে প্রশংসিত হল মিসেস রবার্টসন। তাঁর স্বামীর প্রতি অবিচল আস্থা, ভালবাসা আর কঠিন পরিশ্রমই এই সুন্দর পরিবেশের জন্ম দেয়।

হ্যারিয়েট রবার্টসনের জীবনে থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, যারা কষ্ট আর সহিষ্ণুতার মধে দিয়ে স্বামীকে উৎসাহ যোগাতে পারে তারা রোগ, বিপদ আপদ সবকিছুই অনায়াসে দমন করতে সক্ষম। ভয় তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। কোনো বাধা-বিপত্তি এই ধরনের মানুষের অগ্রগতিকে স্তব্ধ করতে পারে না। তারা কখনও অতীতে সুখ ঐশ্বর্য বা ধনসম্পদের জন্য ভাবেন না। সমস্ত দেশেই এমন মানুষ ধন্যবাদের যোগ্য।

এ কথা মনে রাখা চাই যে স্বামী-স্ত্রীর সাফল্য প্রয়াসী তাকে অগ্রগামী মহিলাদের মতোই উৎসাহী আর সংগ্রামী মনোভাব সম্পন্ন হতে হয় স্বামী যে কাজ পছন্দ করেন সেই কাজে উৎসাহ দিতে হয়। অর্জন করতে হয় দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা।

এমন এক মানুষের কথা জানা ছিল যিনি তার নির্দিষ্ট চাকরিটি করতেন একান্ত অনিচ্ছায়-তার কাছে ওই কাজ যেন মৃত্যুর আদেশের মতো মনে হত। এর কারণ তার স্ত্রী চাইতেন আরও নিরাপত্তা আর উন্নতি।

ভদ্রলোক বুককিপার হিসাবে চাকরি শুরু করেন। আয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ভদ্রলোক একটা মোটর গাড়ি মেরামত করার কারখানা স্থাপন করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি বিয়ে করেন। তার স্ত্রী চাইলেন, যা করছেন নিজেদের একটা বাড়ি না হওয়া পর্যন্ত সেটাই করে যান। শেষ পর্যন্ত তাদের একটা বাড়িও হল, তাদের সন্তানও হল। কিন্তু স্ত্রী সেখানেই থেমে থাকলেন না, তার চাপে পড়ে ভদ্রলোক পরিশ্রম করেই চললেন। বেশ কয়েক বছর ওই ভাবেই কেটে চললো। ভদ্রলোক যা কিছু করলেন সবই শুধু মাত্র স্ত্রীর চাপে পড়ে করেন। ওই কাজে তার ইচ্ছা কিছুমাত্র ছিল না। কোনো পরিবর্তন তার স্ত্রীর মোটেই কাম্য। ছিল না।

জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে ভদ্রলোক আজ বড়ই ক্লান্ত। তিনি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন, স্মরণশক্তি একেবারেই নেই। কোনো রকমে তিনি জীবনের বোঝা বহন করে চলেছেন। জীবনের বেশির ভাগ সময়টাই তাঁর কেটেছিল অতৃপ্তির মধ্য দিয়ে। স্ত্রীর চাপে পড়ে তাকে এমন কাজ করে যেতে হয় যাতে মানসিক আনন্দ এক কণাও ছিল না।

অথচ লোকটি যদি নিজের ইচ্ছামতো কাজ করতে পারতো তাহলে কিছুটা মানসিক আনন্দ লাভ করতে পেতো ও অনাবিল তৃপ্তি। হয়তো একদিন সাফল্যও আসতো। আমেরিকার শিক্ষার ব্রিউয়িং প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি প্রায় ছ’হাজার গৃহিণীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এক সমীক্ষা তৈরি করেছেন। এই সমীক্ষাতে দেখা যায়, শতকরা পঁচিশ ভাগ গৃহিণী তাদের স্বামীদের জীবনে কোনো পরিবর্তন চান না। বাকি শতকরা পঁচাত্তর ভাগ পরিবর্তন চান।

একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, যে ধরনের কাজ মানুষকে সুখী করে তোলে সেই রকম কাজই তার উপযুক্ত। যে কাজ তাকে শুধু ধনী বা সম্পদ শালী করে সে ধরনের কাজ নয়। যে কাজে মানুষ তৃপ্তি পায় সে কাজে তার সাফল্যও আসে না। এই কারণেই স্ত্রীদের কর্তব্য সচেতন হওয়া উচিত-তাদের স্বামীদের প্রতি গভীর অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে তাদের কাজের স্বাধীনতা দিতে হবে। সামাজিক প্রতিপত্তির আকাক্ষা অতিরিক্ত অর্থলোভ তাই ত্যাগ করা দরকার। যে স্ত্রীরা স্বার্থপরতা শূন্য হয়ে স্বামীর কাজে সময়মতো প্রেরণা যোগাতে তৈরি থাকে তাদের জীবনেই সাফল্য আসে।

মনে রাখা দরকার যে, সাফল্য বলতে সেই কাজকেই বোঝায় যে কাজ আপনার পছন্দ। তাই অপছন্দের কাজ সম্পূর্ণ দূর করে দিতে হবে। আমরা কারও পরিপূর্ণ সাফল্য চাইলে তাকে পরিপূর্ণতা অর্জন করতেই হবে, তাদের পরিবর্তনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে আর তারই সঙ্গে নানা বাধা-বিপত্তির জন্য তৈরি থাকতে হবে।

আঠার, উনিশ, কুড়ি, একুশ পাঠের সূত্র : স্ত্রী হিসেবে আপনার স্বামীকে সুখী ও সমর্থ দেখতে চাইলে নিচের এই ত্রুটিগুলো ত্যাগ করুন:

১। অযথা স্বামীকে বিরক্ত করবেন না।

২। স্বামীর অফিসের কাজে নাক গলাতে চাইবেন না, যাতে তার কাজের জায়গায় অসন্তোষের সৃষ্টি হয়।

৩। স্বামীর ক্ষমতার বাইরে এমন কিছু বলবেন না বা তাকে দিয়ে করানোর চেষ্টা করবে না।

৪। সুযোগ গ্রহণ করার সময় কোনো কাজে ভীত হবেন না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *