১৪. সাধারণ কাজে সমন্বয় কীভাবে করবেন

১৪. সাধারণ কাজে সমন্বয় কীভাবে করবেন

কোনো মানুষেরই একভাবে মানুষের জীবন কাটে না। আমি এমন এক মহিলার কথা জানি, যিনি তার স্বামীকে তার নিজের পেশা ত্যাগ করতে একরকম বাধ্যই করেছিলেন। অসুবিধা যেটি সৃষ্টি হয়েছিল সেটি হল, ভদ্রলোককে প্রায়ই নিজের কাজে বাইরে রাত কাটাতে হতো। এ ব্যাপারটা তার স্ত্রী একেবারেই সহ্য করতে পারতেন না। ভদ্রলোক থিয়েটারে একজন বাদ্যযন্ত্রীর কাজ করতেন। অনুষ্ঠান চলতো রাতের বেলায়। ভদ্রলোক নিজের কাজে বেশ আনন্দ পেতেন, মাইনেও ছিল ভালো।

কিন্তু ভদ্রলোকের স্ত্রী রাত্রিবেলা একে থাকা সহ্য করতে না পেরে স্বামীকে ওই বাদ্যযন্ত্রীর কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য করলেন এবং পরিবারগত যন্ত্রপাতি বিক্রির কাজ নিতে বললেন। কিন্তু ভদ্রলোকের নতুন কাজে অভিজ্ঞতা না থাকায় উপার্জন অনেক কমে গেল এবং জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠল।

এ ব্যাপারে তাই একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, যেসব মানুষকে প্রচলিত সময়ে কাজ না করে অন্য কোনো সময়ে তাদের জীবিকায় কাজটি করতে হয় তাদের আসলে এমন স্ত্রী প্রয়োজন যিনি স্বামীর কাজের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে চলতে পারেন। বিশেষ করে যেসব জীবিকার এই অসুবিধা দেখা দেয় সেগুলি হল জাহাজের কাজ, রেলপথের কাজ, উড়োজাহাজের কর্মচারীর কাজ, সাংবাদিকতার কাজ। এইসব কাজে নিযুক্ত মানুষদের স্ত্রীকে স্বামীর কাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতেই হবে। তাদের স্বামীর কাজে সন্তুষ্ট থাকা উচিত।

এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের কর্ম পদ্ধতিতে সময়ের কোনো ঠিক থাকে না। এদের কাজে প্রচলিত নিয়ম খুব একটা থাকে না বা থাকা সম্ভবও নয়। এই ধরণের মানুষের স্ত্রীদের জেনে রাখা দরকার যে তাদের সব দিক সামলেই চলতে হবে আর স্বামীর আয় অনুসারে সংসার চালাতে হবে।

বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত মানুষের মধ্যে এক বিশিষ্ট শ্রেণীর মানুষ হলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা, গায়ক, লেখক বা বাদ্যযন্ত্রী, খেলোয়াড় ইত্যাদি মানুষের। এসব আশ্চর্য বা অভিনব পেশায় নিযুক্ত মানুষের স্ত্রীদের ভাগ্য সাধারণ মানুষের স্ত্রীদের চেয়ে স্বভাবতই আলাদা। আর এই কারণে এই সমস্ত পেশার মানুষের স্ত্রীদের অনেকে আবার হিংসাও করে থাকেন। অবশ্য বিখ্যাত মানুষের স্ত্রী হওয়ার জন্য নিজের ও কিছু বিশেষ যোগ্যতা থাকা চাই। মিসেস লাওয়েল টমাসের মত হল এরকম হওয়া কখনোই সহজ কাজ নয়। এইরকম মহিলার সংখ্যা সত্যই বড় কম যিনি বিখ্যাত স্বামীর মতোই খ্যাতি অর্জন করেছেন। অথচ মিসেস টমাস নিজে কিন্তু তাই-ই হন। তাঁর স্বামী লাওয়েল টমাস একজন বিখ্যাত মানুষ। তিনি নিপুণ একজন সংবাদ প্রেরক, আবিষ্কারক, দুঃসাহসী রহস্য কাহিনীর রচয়িতা, বক্তা আর একজন খেলোয়াড়। তাদের জীবনটাই আরব্য উপন্যাসের মতো চিত্তাকর্ষক ও উত্তেজনা ভরা।

তাঁর স্ত্রী ফ্রান্সিস টমাসও একজন প্রতিভাময়ী ও নানা গুণের অধিকারিণী মহিলা। তিনি তাঁর বহুগুণে অধিকারী স্বামীর সঙ্গে প্রায় সারা পৃথিবী পর্যটন করেছেন।

সারা পৃথিবী এভাবে পরিক্রমার শেষে তারা আমেরিকায় স্থায়িভাবে বসবাস করার জন্য বাড়ি কেনেন। মিসেস লাওয়েল তার সারাজীবনের অভিজ্ঞতার কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে বিশিষ্ট সব কাহিনী বর্ণনা করেছেন। তাদের মধ্যে আছেন বৈমানিক, ভাগ্যান্বেষী সৈনিক ইতাদি বহু মানুষ। তারা কৃতজ্ঞতা জানাতে স্রোতের মতোই তাঁর বাড়িতে আসতেন। এই সময় মিসেস লাওয়েল টমাস চমৎকার এক অতিথিপরায়ণা রমণীর ভূমিকাই নিয়েছিলেন। তাঁদের বাড়িতে গড়পড়তা প্রায় প্রতি সপ্তাহে পঞ্চাশ থেকে প্রায় দুশ’জন পর্যন্তও অতিথি আসতেন।

মিসেস ফ্রান্সিস টমাসের স্বামী লাওয়েল টমাস যখন বিদেশ যাত্রা করতেন, তখন তাঁকে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন জীবন কাটাতে হত। এমনই একদিন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি খবর পান যে, তার স্বামী জার্মান আক্রমণের মুহূর্তে রাস্তায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন।

এই ধরনের বহ ঘটনাই মিসেস টমাসকে বিচলিত করেছে। যেমন-১৯২৬ সালে মি. লাওয়েল টমাস একদিন আন্দালুনিয়া মরু প্রান্তরে উড়োজাহাজ থেকে নামার সময় দুর্ঘটনায় পড়েন। মিসেস টমাসকে তখন প্যারিসে থেকে অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে খবরের জন্য সময় কাটাতে হয়।

আশ্চর্য ব্যাপার ইদানীংকালে আবার লাওয়েল টমাসের একমাত্র সন্তান লাওয়েল টমাস জুনিয়র বাবার পথই অনুসরণ করে বিপদসংকুল পথে পাড়ি দিতে শুরু করেছেন। মিসেস টমাসকে স্বামীর সঙ্গে সঙ্গে সন্তানের জন্যও উদ্বিগ্ন থাকতে হচ্ছে।

মিসেস ফ্রান্সিস টমাসের জীবনের সামান্য এই দু’চারটি উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, বিশিষ্ট কোনো মানুষের স্ত্রী হওয়ার জন্য প্রয়োজন কোনো বিশিষ্ট স্ত্রীলোকের। সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা কখনোই সম্ভব হবে না।

বিখ্যাত মানুষের স্ত্রীদের অনেকেই ঈর্ষা করে থাকেন, সম্মান পাওয়ার জন্য অনেকেই লালায়িত হয়ে থাকেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না বা অনুভব করেন না এর মধ্যেও নানারকম যন্ত্রণাবোধ লুকিয়ে থাকে।

মেরীল্যান্ডের গভর্নরের স্ত্রী মিসেস থিওডর ম্যাক কেলডিনের মত হল, এই অবস্থাতেও নানা ধরনের সমস্যা আর অসুবিধার ব্যাপার থাকে। মিসেস কেলডিন তার তড়িৎ গতিসম্পন্ন ও উচ্ছ্বসিত মেজাজ আর ভাবাবেগ সম্পন্ন স্বামীর যোগ্য স্ত্রী। তিনি অত্যন্ত শান্ত, নম্রভাষী, শিষ্টাচারিণী, আর নরম স্বভাবের মহিলা।

মিসেস কেলডিন বলেন, তাঁর স্বামী সারাদিন অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজে এতই ব্যস্ত থাকতেন যে সারাদিন তাঁদের দেখাই হতো না। কিন্ত তা নিয়ে কোনো অভিযোগ তার মনে নেই। তিনি সব সময় স্বামীর কোনো সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হন ও স্বামীর সঙ্গেই থাকেন।

তিনি বলেন, আমার জীবনযাত্রায় আমি একটুও দুঃখ অনুভব করি না। আমাদের মিলিত ভ্রমণ আর সাহচর্য থেকে আমরা যে আনন্দ পাই তা আমাদের দুজনের কাছেই মূল্যবান আর স্মরণীয়।

লাওয়েল টমাস এবং ম্যাক কেলডিন এই দুজন মানুষের স্ত্রী যে তাদের স্বামীদের কেবল শ্ৰদ্ধার চোখে দেখতেন তা নয় বরং স্বামীদের কাজের অসুবিধা ও খ্যাতির উচ্চ মর্যাদার অসুবিধাটুকুও সমানভাবে গ্রহণ করেন। এরাই সত্যিকার আদর্শ স্ত্রী।

.

সুতরাং বলা যায়, আপনাদের স্বামীদের কাজের ধারা যদি এমন হয় যে সাধারণ সচরাচর দেখা যায় তা নয়, তাহলে নিচের নিয়মগুলো মেনে চললে সুবিধা হবে:

১। আপনাদের জীবনে বর্তমান কোনো অসুবিধা যদি অস্থায়ী হয় তাহলে ধৈর্য ধরে অপেক্ষায় থেকে সহ্য করতে হবে।

২। এই অবস্থায় কোনো কারণে যদি দীর্ঘস্থায়ি বলেই মনে হয়, তাহলে তার প্রতিকার করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন-মিসেস ম্যাক কেলডিন করেছিলেন।

৩। মনে রাখতে হবে, স্বামীর সাফল্যেই আপনার সাফল্য। তাই তাঁর উন্নতির জন্য যে কাজ করা উচিত তা করুন এবং সমস্ত কাজের ফল হাসি মুখে গ্রহণ করতে শিখুন।

৪। মনে রাখতে হবে, এই পৃথিবীর সমস্ত কিছু বিনা বাধায় বা অসুবিধার মধ্যে দিয়ে কখনোই পাওয়া যায় না।

৫। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই অসুবিধা রয়েছে। যে সমস্ত মানুষ শুধুমাত্র অসুবিধার কথা ভাবতে থাকে, তারা কখনোই সন্তুষ্ট হতে পারে না। বিনা কারণে কাতর হয় বলে তাদের খুশি থাকা কঠিন কাজ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *