১০. স্বামীকে জ্ঞানার্জনে উৎসাহ দিন

১০. স্বামীকে জ্ঞানার্জনে উৎসাহ দিন

মানুষ যখন তার কর্মজীবন শুরু করে তখন সে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে না। মানুষ অনবরত জ্ঞান অর্জন করেই কর্মপথে এগিয়ে চলে। জীবনের পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলতে চলতেই সে জ্ঞানের অধিকারী হয়।

আমেরিকার বিশিষ্ট সমাজবাদী ডব্লিউ, লয়েড ওয়ার্নার বলেন, “আমেরিকার স্বপ্ন এই বিশ্বাসের উপরেই স্থাপিত যে, মানুষ অগ্রগামী হতে সক্ষম’ আর অগ্রগামী হওয়ার প্রধানতম পথ হল ‘বিদ্যাশিক্ষা’।” মি. ওয়ার্নার আরও বলেছিলেন যে, যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা-বাণিজ্য পদোন্নতির তালিকা লক্ষ্য করেই কর্ম প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া। বর্তমানে বহু প্রতিষ্ঠানই নিজেদের খরচে কর্মচারীদের বিশেষ ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছেন।

এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়, যেখানে অনেক মহান চরিত্র অবসর সময়ে লেখাপড়া আর বিদ্যার্জনের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠেছে। এই ধরনের এক উদারহরণ হল চার্লস জি. ফ্রন্ট। তিনি ছিলেন একজন ভারমন্ট এলাকার চর্মকার বা চলতি কথায় মুচি। অথচ এমনই একজন মানুষ তাঁর অবসর সময়ে মাত্র এক ঘন্টা পড়াশোনায় ব্যস্ত থেকে বিখ্যাত একজন অন্ধবিশারদ হয়ে ওঠেন। এই ধরনের আর একজন মানুষ হলেন শ্রমিক জন হান্টার। তিনি তার অবসরের সময়ে তুলনামূলক শারীরবিদ্যা পাঠ করে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। তিনি প্রতি রাতে মাত্র চার ঘন্টা ঘুমোতেন। ব্যাঙ্ক কর্মচারী লুবেক তার অবসর মুহূর্তে পড়াশোনা করে হয়ে ওঠেন প্রাগৈতিহাসিক বিজ্ঞানী। বিখ্যাত জর্জ স্টিফেনসন যখন রাতের বেলায় ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজে ব্যস্ত থাকেন তখন অবসর পেলেই পাটীগণিত শিখতেন। এভাবেই তিনি পরে আবার রেলের ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন। বিখ্যাত বিজানী জেমস ওয়াট যে সময় নানা ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরি করতেন তখনই আবার অবসর সময়ে রসায়ন শাস্ত্র আর গণিত শিক্ষা করতেন। পরে আবার তিনি বাষ্পীয় শকট আবিষ্কার করেছিলেন। এই সব জ্ঞানী মানুষ যদি শুধুমাত্র নিজেদের কাজে ব্যস্ত থাকতেন তাহলে জগতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতো।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, একজন পুরুষ বা স্বামীর এই বাড়তি শিক্ষা বা জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে একজন স্ত্রী কতখানি সাহায্য করতে পারে? এটা একমাত্র সম্ভব হয় স্ত্রী যদি স্বামীর মনোভাব বুঝে নিয়ে তাকে উন্নত করার জন্য মন-প্রাণ ঢেলে দিতে পারে। স্বামীর অমনোযোগিতা কৃতকার্যের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। স্ত্রীদের মনে রাখতে হবে যে, স্বামীর অকৃতকার্যতার জন্য তারাও অনেকটাই দায়ী। স্বামীদের পক্ষে গতির সঙ্গে সঙ্গতি রাখার জন্য বাইরের নানা বিষয় সম্পন্ধে জানার চেষ্টা করা ভালো। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে এর উপযোগিতা অসীম।

কেউই চায় না নিচে পড়ে থাকতে, এর জন্য চাই বড় হয়ে উঠার বাসনা। তাকে নিজেকে শিক্ষিত করে ভোলা চাই।

অবশ্য সারাদিন কাজ করার পর প্রতিটি রাতে বিদ্যা শিক্ষা করে যাওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়। এ কাজে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ চায় স্ত্রীর কাছ থেকে। দেখতে হবে যেন চলার পথে স্বামীর পদস্খলন না হয়। স্বামী কখনও নিরুৎসাহ হয়ে না পড়েন। ক্লান্ত না হন বা সাফল্য সম্বন্ধে হতাশা না আসে। স্ত্রীর কাজ অনবরত স্বামীকে উৎসাহ দেওয়া। ঐ সময় স্ত্রীও নিজেকে শিক্ষার কাজে নিযুক্ত রাখতে পারেন। অমূল্য সময় কখনোই হাতছাড়া করা উচিত নয়। জ্ঞানের স্পৃহাই মানুষকে তৎপর করে তুলতে সাহায্য করে। স্বামীর কাজে সহায়তা করে স্ত্রীরা প্রচুর আনন্দ আর প্রফুল্লতা লাভ করতে পারেন। মানব জগতের জ্ঞানভাণ্ডারকে বাড়িয়ে তোলার জন্য পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা অসীম। কলেজ শিক্ষাই সব নয়। স্ত্রী হিসাবে স্বামীর নতুন কোনো শিক্ষার আকাঙ্ক্ষা পূরণে উৎসাহ দিতে থাকুন আর তারই সঙ্গে নিজেও শিক্ষিত হয়ে উঠুন। স্ত্রীর কর্তব্য হল, যে স্থায়ী জীবনে নিজের উন্নতির জন্য উৎসুক সেই স্বামীর কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা আর সেই ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা। স্বামীর সব সাফল্যই ভবিষ্যৎ জীবনে এক অপরিসীম সুখ আর আনন্দ বয়ে আনতে পারে।

আমরা যদি আমেরিকান স্কুল ও কলেজের অ্যাসোসিয়েশন দেওয়া হোরেশি ও এলজার এডওয়াড পুরস্কারে ভূষিত মানুষদের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো যে, এইসব পুরস্কার প্রাপক হলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট লুভার। লুভার ছিলেন আইওয়ার একজন কর্মকারের অনাথ সন্তান। এছাড়া হেনরি ক্রোস্টন-যিনি এক সময়ে একজন সুইচবোর্ডে অপারেটর ছিলেন আর বর্তমানে তিনি বিরাট এক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। টমাস জে. ওয়াটসন নামে আর একজন সপ্তাহে মাত্র দু’ডলার পারিশ্রমিকে জীবন শুরু করে বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনের প্রেসিডেন্ট। পল ইবম্যান প্রথম জীবনে শ্রমিক হিসেবে জীবন শুরু করেন। বর্তমানে হয়েছেন বোর্ড অফ স্টুডিবেকার কর্পোরেশনের প্রধান। তাই স্ত্রীদের মনে রাখা উচিত, আপনার স্বামীর শিক্ষার সুযোগ নিয়ে আপনারই উৎসাহ কাজে লাগিয়ে জীবনে চমৎকার প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেন।

পৃথিবীতে এই রকম অনেক উদাহরণ আছে, যেখানে একজন সত্যিকারের কর্মতৎপর মানুষ তার জ্ঞান ও কর্মকুশলতা বৃদ্ধি করার কাজে অনেক বেশি আগ্রহশীল হয়।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড. লরেন্স বলেন : ‘একটি মাত্র জিনিসই মানুষের মনকে শিক্ষাদান করতে পারে-আর তা হল নিজের মনকে ইচ্ছা করে কাজে লাগানো। আপনি মনকে চালনা করে তাকে সহায়তা দিতে পারেন, পথ দেখাতে পারেন, প্রস্তাব দিতে পারেন। যা প্রতিদিনের চেষ্টায় পাওয়া যায় তাই প্রকৃত লাভ। মনের ইচ্ছাই তাই উন্নতির প্রকৃত সহায়ক।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *