৩৩. প্রিন্সের কাহিনী

৩৩. প্রিন্সের কাহিনী

হ্যারি হাঁটু গেড়ে স্নেইপের পাশে বসে থেকে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। Vতারপর হঠাৎ উচ্চ, কিন্তু শীতল একটি কণ্ঠস্বর ভেসে এল। মনে হল খুব কাছ থেকে, চমকে উঠে হ্যারি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। হাতের ফ্লাস্কটি শক্ত করে ধরল। হ্যারির প্রথমেই মনে হল ভোল্ডেমর্ট, সে হয়তো আবার রুমটিতে ফিরে এসেছে।

ভোল্ডেমর্টের গলার আওয়াজের প্রতিধ্বনি উঠেছে দেয়ালে-মেঝেতে সর্বত্র। হ্যারি বুঝতে পারল যে ভোল্ডেমর্ট হোগার্টের এবং আশেপাশের সকল এলাকার উদ্দেশে কথা বলছে। যাতে হগসমিডে এবং ক্যাসলে যারা যুদ্ধ করছে তারা সবাই তার কথা এমনভাবে শুনতে পায় যেন সে পাশেই দাঁড়িয়ে আছে, তার নিঃশ্বাস যেন গলার একেবারে কাছে। একবারে বিপদজনকভাবে কাছে।

উঁচু, কিন্তু শান্ত গলায় ভোল্ডেমর্ট বলল, তোমরা যুদ্ধ করছ। করছ সাহসের সঙ্গে। লর্ড ভোল্ডেমর্ট জানে কীভাবে সাহসের মূল্য দিতে হয়।

তারপরও তোমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। যদি তোমরা এখনো আমাকে প্রতিরোধ করতে চাও তাহলে তোমাদের মরতে হবে। একের পর এক। আমি চাই সেটা ঘটুক। ম্যাজিক্যাল ব্লডের রক্তপাতের প্রতিটি ফোঁটাই লোকসান।

লর্ড ভোল্ডেমর্ট ক্ষমা প্রদর্শনকারী। আমি আমার বাহিনীকে আদেশ দিচ্ছি যুদ্ধ বন্ধ করতে।

তোমরা এক ঘন্টা সময় পাবে, যারা আহত হয়েছে তাদের জরুরি চিকিৎসা এবং মৃতদেহ সরানোর জন্য।

আমি এখন হ্যারি পটারের উদ্দেশে সরাসরি বলছি। তুমি নিজে আমার কাছে ধরা না দিয়ে তুমি তোমার বন্ধুদেরকে মরতে পাঠিয়েছ। আমি আগামী এক ঘন্টা নিষিদ্ধ জঙ্গলে অবস্থান করবো। যদি এক ঘন্টা সময় শেষ হওয়ার ভেতরে তুমি আমার কাছে না আসে, নিজে আত্মসমর্পন না করে তাহলে আবার যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। আর এবার আমি নিজে যুদ্ধে যোগদান করবে হ্যারি পটার! আমি তোমাকে খুঁজে বের করব এবং বাকী প্রত্যেক নারী-পুরুষ-শিশুকে ভয়ানক শাস্তি পেতে হবে যারা তোমাকে আমার কাছ থেকে সরিয়ে রাখতে চেষ্টা করছে। এক ঘণ্টা সময়।

রন এবং হারমিয়ন দুজনই ব্ৰিতভাবে মাথা নাড়ল এবং হ্যারির দিকে তাকালো।

ওর কথা শুনো না, রন বলল।

হারমিনে তেজের সঙ্গে বলল, সব দেখা যাবে, চলো আমরা ক্যাসলে ফিরে যাই। যদি এক ঘণ্টা সে ওই জঙ্গলে থাকে তাহলে আমাদের নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে।

হারমিয়ন স্নেইপের দেহটির দিকে তাকালো। তারপর দ্রুত টানেলের প্রবেশ মুখের দিকে ফিরে গেল। রনও তাকে অনুসরণ করল। হ্যারি অদৃশ্য আলখাল্লাটি গুছিয়ে নিয়ে আবার স্নেইপের দিকে তাকালো। সে বুঝতে পারছে না তার কেমন লাগছে। সে ভাবছে শুধুমাত্র–স্নেইপের হত্যার ধরণ এবং যে কারণে তাকে মরতে হয়েছে…

ওরা নিচু হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে টানেলের ভেতর দিয়ে আগালো। কেউ কথা বলছে না। হ্যারি ভাবল রন এবং হারমিয়নেরও কি ডোমেৰ্টের কথা এখনো মাথার ভেতর ঘুরছে কি না

নিজে আমার সামনে না এসে তুমি তোমার বন্ধুদেরকে মরতে দিচ্ছ। আমি তোমার জন্য নিষিদ্ধ জঙ্গলে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করবো… এক ঘন্টা….

ক্যাসলের সামনে ছোট ছোট বান্ডেল বিক্ষিপ্ত ভাবে দেখা গেল। সকাল হতে আর ঘণ্টা খানেক সময় বাকী আছে। কিন্তু তারপরও ঘোর অন্ধকার। ওরা তিনজন দৌড়ে পাথরের সিঁড়ির দিকে গেল। ওদের সামনে নৌকা আকারের একটি ফাঁকা কাঠের গুঁড়ি পড়ে আছে। গ্রোপ বা অন্য আক্রমণকারীর চিহ্ন দেখা গেল না।

ক্যাসলটি অস্বাভাবিক রকমের নিস্তব্ধ হয়ে আছে। কোনো আলোর ঝলকানি, চিৎকার-চেঁচামেচি নেই। ফাঁকা প্রবেশ পথের ফ্রাগস্টোনটি রক্তে ভিজে আছে। কাঁচের ভাঙা টুকরা, পাথরের টুকরার সঙ্গে মুক্তা-পান্না ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সিঁড়ির রেলিং-এর অংশ ভেঙে পড়েছে।

হারমিয়ন ফিসফিস করে বলল, সবাই কোথায় গেল? হ্যারি দরোজার সামনে দাঁড়ালো। রন গ্রেট হলের ভেতরে প্রবেশ করল।

হলের টেবিলগুলো নেই। রুমের ভেতর সবাই ভীড় করে আছে। যারা বেঁচে আছে তারা দলে দলে জড়ো হয়ে একজন আরেকজনকে গলা জড়িয়ে আছে। ম্যাডাম পমফ্রে প-টফর্মের উপর আহতদের সেবা করছেন। তাকে একদল লোক সাহায্য করছে। আহতদের মাঝে ফিরেঞ্জকে দেখা গেল। কিন্তু তার শরীর রক্তে ভেজা। সে জায়গায় ছটফট করছে। দাঁড়াতে পারছে না।

মৃতদেরকে হলের মাঝখানে সারি বেধে রাখা হয়েছে। হ্যারি ফ্রেডের দেহটি দেখতে পারছে না, কারণ তার পরিবার দেহটিকে ঘিরে রেখেছে। জর্জ মাথাটা নিচে দিয়ে আছে, মিসেস উইসলি ফ্রেডের বুকের উপর মাথা দিয়ে রেখেছেন। মি. উইসলি তার চুলের ভেতর হাত দিয়ে নেড়ে শান্ত্বনা দিচ্ছেন, কিন্তু নিজের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে গাল বেয়ে পড়ছে।

হ্যারিকে কিছু না বলেই রন এবং হারমিয়ন সামনে এগিয়ে গেল। হ্যারি দেখল হারমিয়ন জিনির দিকে এগিয়ে গেল। জিনির মুখটা ভেজা এবং দাগ হয়ে আছে। হারমিয়ন তাকে জড়িয়ে ধরল। রন বিল, ফ্লয়ার এবং পার্সির কাছে এগিয়ে গেল রন। পার্সি হাত তুলে রনের কাঁধে রাখল। হারমিয়ন এবং জিনি পরিবারের অন্যদের কাছে যেতেই হ্যারি দেখল ফ্রেডের পাশে রেমুস এবং টঙ্কসের শরীর। বিষণ্ণ ও স্থির। দেখে মনে হল শান্ত, যেন অন্ধকারে যাদুকরা সিলিং-এর উপর ঘুমিয়ে আছে।

দরোজা থেকেই হ্যারি দৌড়ে সরে যেতে থাকল। গ্রেট হলটি তার কছে ছোট হয়ে আসছে, যেন উড়ে ওর কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। সে দম নিতে পারছে না। সে অন্য শরীরগুলো দেখতে পারবে না। উইসলি পরিবারের সামনে যাওয়া এখন সম্ভব নয়, তাদের চোখে চোখ রাখতে পারবে না। সে যদি আগে থাকতো, তাহলে ফ্রেডকে এভাবে মরতে হতো না….

সে বাক নিল এবং মার্বেলের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠল। লুপিন, টঙ্কস…সে ভাবতে পারছে না…..মনে হচ্ছে নিজের কলজেটা ছিঁড়ে ফেলতে। তার ভেতরটা প্রচণ্ডভাবে চিৎকার করছে….

ক্যাসলটি পুরোপুরি ফাঁকা। এমনকি ভূতগুলোও মনে হচ্ছে শোক জানাতে গ্রেট হলে চলে গেছে। হ্যারি না থেমেই দৌড়াতে থাকল। হাতের মধ্যে স্নেইপের শেষ চিন্তার ক্রিস্টালের ফ্লাস্কটি ধরে রেখেছে। সে একই গতিতে দৌড়ে হেডমাস্টারের অফিসের সামনে পাহারায় থাকা মূর্তি পর্যন্ত চলে এল।

পাসওয়ার্ড?

 ডাম্বলডোর! কোনো চিন্তা না করেই হ্যারি বলল। কারণ তাকেই এখানে প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। হ্যারি অবাক হয়ে দেখল মূর্তিটা পথের থেকে সরে গেল এবং পেছনের সিঁড়ির দরোজাটি খুলে গেল।

কিন্তু হ্যারি অফিসে ঢুকে দেখল সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। দেয়ালে যে ছবিগুলো ঝুলানো ছিল তার সবগুলো ফাঁকা। তাকে দেখার জন্য একটি ছবিতেও কোনো প্রাক্তন হেডমাস্টার বা হেডমিসট্রেস নেই। হ্যারির মনে হল ক্যাসলের লাইন ধরা ছবিতে চার্জ করে চলে গেছে, তারমানে কি হচ্ছে তা সম্পর্কে তাদের পরিস্কার ধারণা আছে।

হ্যারি হতাশ হয়ে ডাম্বলডোরের ফাঁকা ছবির ফ্রেমটির দিকে তাকালো। সেটি সরাসরি হেডমাস্টারের চেয়ারের পেছনে ঝুলে আছে। তারপর সে ঘুরে দাঁড়ালো। সব সময়ের মত পাথরের পেনসিভটি কেবিনেটের উপর রাখা আছে। হ্যারি সেটিকে টেনে ডেস্কের উপর নিয়ে গেল এবং এর বড় বেসিনে স্নেইপের স্মৃতিগুলোকে ঠেলে দিল। অন্যের চিন্তার ভেতরে ঢুকে গেলে একটি স্বস্তি আসতে পারে…তবে স্নেইপ যা রেখে গেছে তা নিজের চিন্তার চেয়েও ভয়ানক হতে পারে। স্মৃতিগুলো ঘুরতে শুরু করল, কোনো ভাবনা চিন্তা ছাড়াই, নিজের কষ্ট-দুঃখ থেকে সরে থাকার জন্য হ্যারি সে চিন্তার ভেতর ঢুকে পড়ল।

বিদ্যুতের গতিতে সুর্যের আলো ভেতর দিয়ে হ্যারির পা উষ্ণ ঘাস পায়ে অনুভব করল। সে উঠে দাঁড়ালো। দূরের আকাশে একটি মাত্র চিমনির ধোয়া দেখা যাচ্ছে। দাঁড়িয়ে দেখল একটি নির্জন খেলার ছোট মাঠে দাঁড়িয়ে আছে। দুটি মেয়ে সামনে আর পেছনে দোল খাচ্ছে এবং একটি হালকা পাতলা ছেলে ঝোঁপের আড়াল থেকে ওদের লুকিয়ে দেখছে। তার চুলগুলো অস্বাভাবিক রকমের লম্বা এবং গায়ের পোষাক এমন বেমানান যে মনে হচ্ছে ছেলেটি উদ্দেশ্যমূলক ভাবেই এই পোষাক পরে আছে। পরণে শর্ট জিনস, গায়ে একটি লম্বা কোট, দেখলে মনে হয় কোটটি কোনো বড় মানুষের। গায়ে একটি বেমানান গেঞ্জি টাইপের শার্ট।

হ্যারি দৌড়ে ছেলেটির কাছে গেল। স্নেইপ দেখতে তখন নয় কি দশ বছরের বেশি না। বিমর্ষ, ছোটখাটো ধরণের। সে মেয়ে দুটোর মধ্যে ছোটটার দিকে তাকিয়ে আছে। ছোট মেয়েটি তার বোনের চেয়ে দুলতে দুলতে অনেক উপরে উঠে যাচ্ছে। লুকিয়ে দেখা ছেলেটির চোখে-মুখে পরিস্কার একটি লোভ ফুটে উঠেছে।

লিলি, এমন কোরো না! তীব্রকণ্ঠে বড় মেয়েটি বলল।

কিন্তু মেয়েটি আবারো দোল খেয়ে বাকা হয়ে শূন্যে উঠে গেল। আক্ষরিক অর্থেই সে উড়তে থাকল। উচ্চকণ্ঠে হাসতে হাসতে নিজেকে মুক্ত করে আকাশের দিকে উঠতে থাকল। বেশ খানিক সময় আকাশে থেকে সে দূরে আলতো করে নেমে পড়ল।

মা তোমাকে নিষেধ করেছে!

লিলি হাসতে হাসতে বলল, কিন্তু আমার ভাল লাগছে! টানি, দেখ আমি কী করতে পারি!

পেটুনিয়া চারদিকে তাকালো। খেলার মাঠটির আশেপাশে কেউ নেই। যদিও মেয়েটি স্নেইপের কথা জানে না। যেখানে স্নেইপ লুকিয়ে আছে তার সামনে ঝোঁপের থেকে লিলি একটি ফুল তুলে নিল। পেটুনিয়া বাধা দিতে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে থাকল। বোঝা যাচ্ছে সে মেয়েটির এ কাজ পছন্দ করছে না। পেটুনিয়া কাছে আসা পর্যন্ত লিলি অপেক্ষা করল। পেটুনিয়া কাছে আসতেই সে হাতের তালু মেলে ধরল। ফুলটি তার হাতে। পাতাগুলো একা একাই মেলে যাচ্ছে আবার বন্ধ হচ্ছে। অদ্ভুত সেলমাছের মত।

এসব থামাও! তীক্ষ্ণ কণ্ঠে পেটুনিয়া বলল।

এটা তো তোমাকে কোনো ক্ষতি করছে না। লিলি বলল। সে ফুটন্ত ফুলটাকে হাতের ভেতর মুষ্ঠি করল এবং কাছেই মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিল।

এটা ঠিক না, পেটুনিয়া বলল। তার চোখ ওই ফেলে দেয়া ফুলটির দিকে। এটা তুমি করো কীভাবে?

এটাই স্বাভাবিক, তাই না? স্নেইপ আর বেশিক্ষণ লুকিয়ে থাকতে পারল না। সে ঝোড়ের পেছন থেকে ঝাঁপ দিয়ে বের হয়ে এল। পেটুনিয়া চিৎকার করে দৌড়ে পেছনের দোলনাটার দিকে চলে গেল। কিন্তু লিলি বিস্মিত হলেও যেখানে ছিল সেখানই দাঁড়িয়ে থাকল। স্নেইপকে মনে হল এভাবে চলে আসার জন্য সে দুঃখিত। হয়েছে। একটি বোকা ভাব তার মুখে ফুঠে উঠল। সে লিলির দিকে তাকিয়ে আছে।

কি স্পষ্ট? লিলি জিজ্ঞেস করল।

স্নেইপ ব্ৰিতভাবে উত্তেজনা বোধ করছে। একবার দূরে, দোল খেতে থাকা পেটুনিয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে নিচু কণ্ঠে বলল, আমি জানি তুমি কি!

তুমি কি বলছ? লিলি বলল।

তুমি…তুমি হলে একটি মেয়ে যাদুকর!ফিসফিস করে স্নেইপ বলল।

তাকে মনে হল সে অপমান বোধ করেছে।

কাউকে এটা বলা খুব একটা ভাল কথা না!

সে ঘুরে দাঁড়ালো এবং নাক উঁচু রেখে তার বোনের দিকে হেঁটে চলে গেল।

না! স্নেইপ বলল। তার রঙ এখন আরো বদলে গেছে। হ্যারি ভাবল কেন স্নেইপ তার ওই হাস্যকর কোটটি গায়ের থেকে খুলে গেল না। সে মেয়েদুটোর পেছনে পেছনে গেল। তাকে হাস্যকরভাবে বাদুরের মত দেখাচ্ছে।

দুই বোন অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার কথা শুনল। দুবোন দোলনার দুপাশের খুটি ধরে দাঁড়ালো। যদিও এটি একটি নিরাপদ জায়গা।

স্নেইপ লিলিকে বলল, তুমি, তুমি হলে একজন মেয়ে যাদুকর। আমি বেশ কিছুক্ষণ ধরে তোমাকে দেখছিলাম। কিন্তু তাতে কিছু সমস্যা নেই। আমার মা-ও তাই। আমি নিজে একজন যাদুকর।

পেটুনিয়া ঠাণ্ডা জলের মত হাসল।

যাদুকর! সে উচ্চস্বরে বলল। অপ্রত্যাশিতভাবে হঠাৎ করে স্নেইপ চলে আসায় সে ধাক্কা খেয়েছিল। সে ভয় তার কেটে গেল। আমি জানি তুমি কে! তুমি সেই স্নেইপ পরিবারের ছেলে। তারা ওই নদীর কাছে স্পিনার এন্ড এ বাস করে। পেটুনিয়া লিলির উদ্দেশে বলল। তার কণ্ঠ শুনে পরিস্কার বোঝা গেল যে সে তার পরিচয়টি খুব একটা ভাল হিসাবে দিল না। তুমি আমাদের পিছু নেও কেন?

আমি তোমাদের পিছু নেই না, স্নেইপ বলল। সে অবজ্ঞার সঙ্গে বলল, আমি তোমার পেছনে নজর রাখার কোনো কারণ নেই। তুমি হলে একজন মাগল।

যদিও পেটুনিয়া শব্দটির অর্থ বুঝল না, কিন্তু সে তার সুরটি বুঝতে ভুল করল।

লিলি, চলে আসো, আমরা চলে যাই! সে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল। খেলার মাঠ থেকে তারা গেটের দিকে চলে যেতে থাকলে স্নেইপ পেছন থেকে তাকিয়ে রইল। এবং স্নেইপ, শুধু সেই স্নেইপকে দেখছে। সে স্নেইপ এর হতাশাটা বুঝতে পারল। সে বুঝল ওই মুহূর্তে স্নেইপ কিছু একটা পরিকল্পনা করল। তারপর সবকিছু ওলোটপালট হয়ে গেল…

দৃশ্যটি হ্যারির সামনে থেকে সরে গেল এবং সে বোঝার আগেই আরো একবার তাকে ঘিরে দৃশ্য তৈরি হল। সে এখন দাঁড়িয়ে আছে ছোট মোটা একটি গাছের কাছে। সে দেখল নদীর পানিতে আলো পড়ে চিকচিক করছে। গাছের ছায়ায় বেশ একটি ঠাণ্ডা পরিবেশ তৈরি হয়েছে গাছটির নিচে। দুটি শিমু বসে আছে মুখোমুখি আড়াআড়ি হাঁটু রেখে বসেছে। স্নেইপ তার কোটটি এবার খুলে ফেলেছে। ছায়ার ভেতর তার গেঞ্জিটা অতটা অদ্ভুত লাগছে না।

….এবং মিনিস্ট্রি তোমাকে শাস্তি দিতে পারে। যদি তুমি স্কুলের বাইরে যাদু কর, মিনিস্ট্রি তোমাকে তাড়িয়ে দেবে।

কিন্তু আমি বাইরে ম্যাজিক করেছি!

তোমার বেলায় ঠিক আছে। তুমি এখনো যাদুদণ্ড পাওনি। এ নিয়ে তোমাকে এখন ওরা কিছু বলবে না। কিন্তু যখন তোমার বয়স এগারো বছর হবে এবং ট্রেইনিং শুরু হবে তখন তোমাকে খুবই সতর্ক হতে হবে।

সবাই একটু চুপ করল। লিলি একটি গাছের ছোট মরা ডাল তুলল এবং সেটিকে বাতাসে দ্রুতু ঘোরালো। হ্যারি বুঝতে পারল যে সে কল্পনায় ওই কাঠি থেকে ঝলক বেরিয়ে যেতে দেখল। তারপর লিলি গাছের ডালটি ফেলে দিল। সেটি গিয়ে ওই ছেলেটির কাছে পড়ল। লিলি বলল, এটা কি সত্যি কথা, এটা কোনো রসিকতা নয়? পেটুনিয়া বলে যে তুমি আমার কাছে মিথ্যা বলেছে। সে বলে, কোনো হোগার্ট নেই। সত্যি নাকি?

এ সত্যি আমাদের জন্য, স্নেইপ বলল। তার জন্য নয়। কিন্তু তুমি এবং আমি কাগজ পেয়ে যাবো।

সত্যিই? ফিসফিস করে লিলি বলল।

অবশ্যই, স্নেইপ বলল। যদিও তার চুলের স্টাইল সুন্দর না, কাপড়-জামা বিশেষ সুবিধার না, তারপরও সে অস্বাভাবিক আবেদন সৃষ্টি করল মেয়েটির সামনে, সামনের নিয়তির ব্যাপারে আস্থা প্রদর্শন করল।

এবং সত্যিই কি সে চিঠি একটি পেঁচা বয়ে নিয়ে আসবে? লিলি জানতে চাইল।

সাধারণত, স্নেইপ বলল। কিন্তু তুমি হলে মাগলদের সন্তান। তাই স্কুল থেকে হয়তো কেউ একজন আসবেন তোমার বাবা-মাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে।

মাগলদের সন্তান হলে কি কোনো পার্থক্য আছে?

স্নেইপর একটু দ্বিধা করল। তারপর বলল, না, এতে কোনো পার্থক্য নেই।

গুড, লিলি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল। পরিস্কার দেখা গেল যে সে ভয় পেয়েছিল।

স্নেইপ বলল, তুমি বেশ কিছু যাদু পেয়েছ। আমি সেটা দেখেছি। আমি তোমাকে সারাক্ষণ খেয়াল রাখছিলাম…

তার গলার স্বর যেন উধাও হয়ে গেল। লিলি তার গলার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না। সে চারদিকে গাছের পাতার মাঠের দিকে দু হাত প্রসারিত করল। মাথার উপরের গাছের পাতার আচ্ছাদনের দিকে তাকালো। স্নেইপ তারদিকে একটি লোভের দৃষ্টি নিয়ে তাকালো, ঠিক যেমন খেলার মাঠে তাকিয়েছিল।

তোমার বাসার পরিস্থিতি কী? লিলি বলল।

স্নেইপের দু চোখের মাঝখানে একটি ভাঁজ পড়ল।

ভালো, স্নেইপ বলল।

 ওরা কোনো ঝামেলা করছে না?

ওহ হ্যাঁ, ওরা ঝামেলা করছে, স্নেইপ বলল। সে হাতে কতগুলো পাতা তুলে নিল এবং সেগুলো টুকরো টুকরো করে ছিঁড়তে থাকল। সে কি করছে সে সম্পর্কে তার কোনো খেয়াল নেই। কিন্তু এটা বেশিদিন থাকবে না এবং আমি চলে যাবো।

তোমার বাবা ম্যাজিক পছন্দ করেন না?

কোনো কিছুই তিনি অতিরিক্ত পছন্দ করেন না, স্নেইপ বলল।

 সেভেরাস?

স্নেইপের মুখে ছোট একটি বাকা হাসি ফুটে উঠল মেয়েটির মুখে নামটি শুনে।

 ইয়ে?

ডেমেনটরদের সম্পর্কে আমাকে আবার বলো।

তাদের সম্পর্কে তুমি কী জানতে চাও?

যদি আমি স্কুলের বাইরে ম্যাজিক করি

সে কারণে ওরা তোমাকে ডেমেনটরদের হাতে তুলে দেবে না। ডেমেনটরদের কাছে দেয়া হয় যারা আরো অনেক বেশি খারাপ কাজ করে তাদের। ওরা আজকাবানে উইজার্ডদের কারাগার পাহারা দেয়। তোমাকে তাই বলে আজকাবানে পাঠানো হবে না, তুমি তো-

স্নেইপ আরো লাল হয়ে গেল এবং আরো বেশি পাতা ছিঁড়তে থাকল। তারপর ছোট করে একটি খুট শব্দ হতে হ্যারি সেদিকে ফিরে তাকালো। পেটুনিয়া একটি গাছের পেছনে লুকিয়ে ছিল। সে পা পিছলে গেছে।

টানি!

সে বিস্মিত হয়েছে এবং তাকে দেখে আনন্দ পেয়েছে। কিন্তু স্নেইপ লাফিয়ে উঠল।

দেখ কে চুপি চুপি নজরদারি করছে? স্নেইপ বলল। তুমি কী চাও?

পেটুনিয়া স্থির হয়ে গেছে। সে ধরা পড়ে গেছে। হ্যারি দেখল সে কিছু একটা বলার জন্য নিজের সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করছে।

কিন্তু তুমি ওটা কি পরেছ? পেটুনিয়া বলল। সে আঙুল দিয়ে তার বুকের দিকে দেখালো। তোমার মায়ের ব্লাউজ?

ক্র্যাক করে একটি শব্দ হল। একটি গাছের ডাল সরাসরি পেটুনিয়ার উপর এসে পড়ল। লিলি চিৎকার করে উঠল। পেটুনিয়া একটু পেছনের দিকে সরে যেতেই ডালটি তার কাঁধের উপর পড়ল। সে কাঁদতে শুরু করল।

টানি!

 কিন্তু পেটুনিয়া দৌড়ে চলে গেল। লিলি স্নেইপের দিকে ফিরল।

এ কাজটি তুমি করলে?

না! স্নেইপ বলল। তাকে ভীত এবং নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রচেষ্টা দেখা গেল।

তুমি কাজটি করেছ! সে তার কাছ থেকে পিছনে সরে এল। তুমি করেছ, তুমি তাকে আঘাত করেছ!

না–না আমি করিনি!

কিন্তু এ মিথ্যা লিলিকে ভুলাতে পারল না। শেষবারের মতো তীব্র চোখে তাকিয়ে সে তার বোনের পেছনে দৌড়ে চলে গেল। স্নেইপকে দুঃখিত এবং ব্ৰিত দেখা গেল…

হ্যারির সামনের দৃশ্য পাল্টে গেল। হ্যারি তার চারপাশে দেখল: নাই এণ্ড ত্রি কোয়ার্টার স্টেশনের প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। স্নেইপ তার পাশে দাঁড়ানো। তার পরেই দাঁড়ানো সামান্য সামনের দিকে ঝুঁকে থাকা একজন মহিলা, বিষণ্ণ এবং হালকা পাতলা চেহারা, দেখতে অনেকটা স্নেইপের মতই। স্নেইপ একটু দূরেই দাঁড়ানো চারজনের একটি পরিবারের দিকে তাকিয়ে আছে। বাবা-মায়ের কাছ থেকে মেয়ে দুটি একটু সরে দাঁড়িয়েছে। লিলি তার বোনের কাছে কিছু একটা দাবী করছে। হ্যারি শোনার জন্য একটু সামনে এগিয়ে গেল।

….আমি খুবই দুঃখিত! শোনো- সে তার বোনের হাতটা শক্ত করে ধরল। পেটুনিয়া সে হাতটি টেনে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করল। আমি যদি সেখানে যাই না, শোনো টানি! আমি, যদি সেখানে যাই তাহলে আমি প্রফেসর ডাম্বলডোরের কাছে যেতে পারব এবং তার মত পাল্টে ফেলব।

আমি যেতে চাই না! পেটুনিয়া বলল। সে তার হাতটা বোনের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিল। তুমি মনে করছ আমি একটি স্টুপিড ক্যাসলে যাবো এবং শিক্ষা নেব একটি…একটি।

সে নির্লিপ্তভাবে প্লাটফর্মের চারদিকে তাকালো। কারো কোলে বিড়াল মিউ মিউ করছে, কোনো কোনো খাঁচায় পেঁচাগুলো পাখা ঝাপটা দিচ্ছে, ডাকছে। ছাত্ররা তাদের লম্বা গাউন পরে ট্রাঙ্ক নিয়ে একজন আরেকজনের সঙ্গে গ্রীষ্মের ছুটির পর দেখা হওয়ায় উল্লাস প্রকাশ করছে।

-তুমি কি মনে করো আমি একটি হাস্যকর কিছু হতে চাই?

পেটুনিয়া হাত ছাড়িয়ে নেয়ায় লিলির চোখে জল চলে এসছে।

লিলি বলল, আমি কোনো হাস্যকর কিছু নই। এটি একটি ভয়ানক কথা।

পেটুনিয়া বেশ মজার সঙ্গে বলল, তুমি যেখানে যাচ্ছে সেটা তাই। উপহাস করার আদর্শ স্কুল। তুমি এবং সেই স্নেইপ ছেলেটি….একই রকম বেতাল ধরণের। এটা খুবই ভালো যে তোমরা সাধারণ আচরণের মানুষের কাছ থেকে পৃথক হয়ে যাচ্ছ। এটা আমাদের জন্য নিরাপদ।

 লিলি তার বাবা-মায়ের দিকে আড়চোখে তাকালো। তারা মন দিয়ে প্লাটফর্মটির চারদিক দেখছেন এবং উপভোগ করছেন। এরপর লিলি তার বোনের দিকে ফিরে তাকালো এবং নিচু কিন্তু তীক্ষ্ণ স্বরে কথা বলল।

তুমি এ স্কুলটিকে হাস্যকর মনে করোনি যখন তুমি নিজে তোমাকে নেয়ার জন্য আবেদন করেছিলে।

পেটুনিয়া লাল হয়ে গেল।

আবেদন করেছি! আমি কখনো আবেদন করিনি!

আমি তার উত্তরটি দেখেছিলাম। সেটি ছিল খুবই সদয় উত্তর। পেটুনিয়া ফিসফিস করে বলল, তোমার সেটা পড়া উচিত হয়নি। সেটা ছিল আমার ব্যক্তিগত–কি করে তুমি সেটা?

লিলি, স্নেইপ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে সামান্য একটু আড়চোখে তাকালো তারপর চুপ হয়ে গেল। পেটুনিয়া নিঃশ্বাস ছাড়ল।

ওই ছেলেটি সেটা পেয়েছিল! তুমি আর ওই ছেলেটি আমার ঘরে লুকোচুরি করছিলে!

না–লুকোচুরি করিনি- এবার লিলি নিজেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করল। সেভেরাস এনভেলপটি দেখেছিল। এবং সে বিশ্বাস করতে পারেনি যে একজন মাগল হোপার্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। এই হল ঘটনা! সে বলে যে পোস্টাল সার্ভিসে লুকিয়ে নিশ্চয়ই কোনো উইজার্ড কাজ করে নজর রাখার জন্য।

উইজার্ডরা সর্বত্রই নাক গলায় পেটুনিয়া বলল। সে যেমন লাল হয়ে উঠেছিল তেমনি এখন বিষণ্ণ হয়ে উঠল। হাস্যকর! সে তার বোনের মুখের উপর ঝাঁকি দিয়ে দ্রুত বাবা-মা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে চলে গেল…

আবার দৃশ্য পাল্টে গেল। স্নেইপ দ্রুত হোগার্টের এক্সপ্রেসের করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ট্রেনটি গ্রামের ভেতর দিয়ে ছুটে যাচ্ছে। সে ইতিমধ্যেই স্কুলের পোষাক পাল্টে ফেলেছে। প্রথম সুযোগেই সে তার মাগল পোশাক পাল্টে ফেলল। শেষে সে একটি কম্পার্টমেন্টের সামনে এসে দাঁড়াল। রুমটির ভেতরে ছেলে পেলেরা হৈ-হুঁল্লো করে কথা বলছে। লিলি জানালার পাশে একটু সামনের দিকে ঝুঁকে বসে আছে। সে জানালার কাঁচের দিকে তাকিয়ে আছে।

স্নেইপ দরোজাটি খুলল এবং লিলির বিপরীত দিকের সিটটাতে বসল। সে একবার আড়চোখে স্নেইপের দিকে তাকালো এবং তারপর সে আবার জানালা দিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি দিল। সে কাঁদছে।

লিলি চাপা গলায় বলল, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই না।

কেন চাও না?

টানি আমাকে ঘৃণা করে। কারণ আমরা ডাম্বলডোরের ওই চিঠিটা দেখে ফেলেছি।

তাতে কী হয়েছে?

লিলি তার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকালো।

সে আমার বোন!

সে হল একটা- সে তাড়াতাড়ি নিজেকে সংবরণ করলো। লিলিও দ্রুত তার চোখ মুছতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিল, তাই তার কথাটি শুনতে পেল না।

কিন্তু আমরা যাচ্ছি! স্নেইপের গলায় পরিস্কার উচ্ছাস ফুটে উঠল। এটাই বড় কথা! আমরা হোপার্টের উদ্দেশে যাত্রা করেছি!

লিলি চোখ মুছতে মুছতে মাথা নাড়ল। একটুখানি হাসল

তুমি স্নিথারিনে যোগ দিলে ভাল হবে, স্নেইপ তাকে একটু হালকা হয়েছে। দেখে উৎসাহ দিয়ে বলল।

স্লিথারিন?

কম্পার্টমেন্টের ভেতরে বসা একটি ছেলে এতক্ষণ লিলি বা ইেপের ব্যাপারে বিশেষ লক্ষ করেনি। কিন্তু এই শব্দটি শুনে সে ঘুরে তাকালো। হ্যারি এতক্ষণ জানালার দুপাশে বসা দুজনকে আগ্রহ নিয়ে দেখছিল। তার বাবাকে দেখছিল। স্নেইপের মতই তার কালো চুল।

সিথারিনে কে থাকতে চায়? আমার মনে হয় তুমিও ছেড়ে দেবে, তাই না? জেমস বিপরীত দিকের সিটে অলসভঙ্গীতে বসা ছেলেটির কাছে জানতে চাইলেন। এবং মুহূর্তের ভেতর হ্যারি বুঝতে পারল যে ওই বসা ছেলেটি সিরিয়স। সিরিয়স হাসল না। সে বলল, আমার পুরো পরিবার স্লিথারিনে আছে।

জেমস বললেন, আহা, আমি ভেবেছিলাম তোমরা সবাই ভালো আছো।

সিরিয়স হাসল।

আমি হয়তো এ ধারাটি ভাঙবো। আপনি হলে কোথায় যেতেন?

জেমস হাত দিয়ে একটি অদৃশ্য তলোয়ার দেখালেন।

গ্রিফিনডোর যেখানে থাকলে বুকে সাহস থাকে! আমার বাবার মতো।

স্নেইপ একটি অবজ্ঞার সুরে শব্দ করল। জেমস তার দিকে ঘুরে তাকালেন।

তোমার কি তাতে সমস্যা আছে?

না, স্নেইপ বলল। যদিও তার চেহারা বলছে অন্য কথা। যদি আপনি বুদ্ধির চেয়ে পেশিকেই বেশি মূল্য দেন

সিরিয়স বলল, এছাড়া অন্য কোন জায়গা তুমি পছন্দ করো? সিরিয়স বলল।

জেমস অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। লিলি সোজা হয়ে বসল। জেমস এবং সিরিয়ুসের দিকে বিরক্ত হয়ে তাকালো।

সেভেরাস চলে এস, আমরা অন্য কম্পার্টমেন্টে গিয়ে বসি।

 ওউউউউউউ……

জেমস এবং সিরিয়স লিলির উচ্চস্বর নকল করল। স্নেইপ হেঁটে যাবার সময় জেমস পা বাধিয়ে দিতে চেষ্টা করল।

দেখ, ইয়া, সেভেরাস! কম্পার্টমেন্টের দরোজা বন্ধ হওয়ার সময় একটি কণ্ঠ বলে উঠল।

দৃশ্যটি আরো একবার বদলে গেল।

একটি মোমবাতি জ্বালানো হাউস টেবিলের দিতে মুখ করে স্নেইপের ঠিক পেছনে হ্যারি দাঁড়িয়ে আছে। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন, ইভ্যান্স, লিলি!

হ্যারি দেখল তার মা কাঁপা পায়ে সামনে এগিয়ে গেল এবং নড়বড়ে একটি চেয়ারে বসল। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল তার মাথার উপরে সর্টিং করার হ্যাটটি রাখলেন। গাড় লাল রঙ্গের চুলের উপর বসতে না বসতেই হ্যাটটি বলে উঠল, গ্রিফিনডোর!

হ্যারি শুনতে পেল স্নেইপ রাগে গুনগুন করে উঠল। লিলি মাথা থেকে হ্যাটটি খুলল এবং প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের হাতে দিল। এবং সে উল্লসিত গ্রিফিনডোরদের ভেতরে গিয়ে দাঁড়ালো। সেখানে যাবার সময় সে আড়চোখে স্নেইপের দিকে একবার তাকালো। তার মুখে একটি দুঃখের হাসি দেখা গেল। হ্যারি দেখল সিরিয়স সরে গিয়ে বেঞ্চে তাকে জায়গা করে দিল। লিলি একবার তারদিকে ঘুরে তাকালো। মনে হল সে তাকে চিনতে পেরেছে যে ট্রেনের কম্পার্টমেন্টের মানুষটিকে। সে দুহাত ভার্জ করে সিরিয়ুসের থেকে অন্যদিকে মুখ করে থাকল।

নাম ডাকা চলতে থাকল। হ্যারি দেখল লুপিন, পেটিগ্রিউ এবং ওর বাবা গ্রিফিনডোর টেবিলে লিলি এবং সিরিয়ুসের সঙ্গে যোগ দিল। শেষে যখন আর প্রায় দশ বারোজন ছাত্র বাকী আছে তখন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল স্নেইপকে ডাকলেন।

হ্যারিও তার সঙ্গে সঙ্গে হেঁটে চেয়ারটির কাছে গেল। এবং দেখল তার মাথায় হ্যাটটি রাখা হয়েছে। সর্টিং করে হ্যাটটি বলল, স্লিথারিন!

সেভেরাস স্নেইপ হলের অন্যদিকে গেল। লিলির কাছ থেকে দূরে, সেখানে তাকে উল্লাস করে স্নিথারিনের ছাত্ররা স্বাগত জানালো। পাশে বসইে লুসিয়াস ম্যালফয় তাকে পিঠ চাপড়ে দিয়ে স্বাগত জানালো…

আবার দৃশ্য বদলে গেল।

লিলি এবং স্নেইপ ক্যাসলের উঠোনে পাশাপাশি হাঁটছে। বোঝা যাচ্ছে যে তারা তর্ক করছে। হ্যারি দ্রুত ওদের কাছে গেল ওরা কী বলছে শোনার জন্য। ও কাছে যেতেই বুঝল যে তারা দুজনই কত লম্বা। তাদের বাছাই হওয়ার বেশ কয়েক বছর পরের ঘটনা।

.. আমাদের দুজনের বন্ধু হওয়ার কথা ছিল না? স্নেইপ বলল। বেস্ট ফ্রেইন্ড?

হ্যাঁ ঠিক,সেভ, কিন্তু তুমি কিছু মানুষের সঙ্গে সর্বক্ষণ চলাফেরা করো যা আমার পছন্দ না! আমি দুঃখিত, আমি ওই অ্যাভেরি এবং মালসিভেসকে দেখতে পারি না। মালসিভেস! তুমি ওর মধ্যে কী দেখেছ সেভ? সে একটা বিরক্তিকর! তুমি জানো একদিন ম্যারি ম্যাকডোনাল্ডকে সে কি করতে চেয়েছিল?

লিলি একটি পিলারের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো এবং সেটার সঙ্গে হেলান দিল। স্নেইপের পাতলা বিষণ্ণ মুখের দিকে তাকালো।

এটা কোনো ব্যাপার ছিল না, স্নেইপ বলল। এটা একটা হাসির ব্যাপার ছিল

সেটা ছিল ডার্ক ম্যাজিক, আর তুমি যদি ভাবো সেটা ছেলেখেলা-

পটার এবং তার বন্ধুরা এত ভালো কীসের জন্য, স্নেইপ বলল। তার চেহারাটায় রাগের ছাপ পরিলক্ষিত হল।

পাটাররা কী করছে? লিলি বলল।

ওরা রাতের বেলা চুপে চুপে বের হয়। লুপিনের কোনো একটি অদ্ভুত ব্যাপার আছে। সে কোথায় যায় প্রতিদিন?

লিলি বলল, সে অসুস্থ। ওরা বলে, তার অসুস্থতাটা

 প্রত্যেক মাসের পূর্ণিমার চাঁদ রাতে? স্নেইপ বলল।

আমি তোমার থিওরিটা জানি, লিলি বলল। তার গলার স্বর শীতল। তাদের ব্যাপার নিয়ে তুমি এতটা চিন্তিত কেন? তারা রাতে কি করছে তা নিয়ে তোমার মাথাব্যাথা কেন?

আমি শুধু তোমাকে দেখাতে চাই যে লোকে তাদের যেমন চমৎকার বলে ভাবছে আসলে তারা সেটা নয়।

স্নেইপের উত্তেজনা লিলিকে বিব্রত করল।

আর যাই হোক, ওরা ডার্ক ম্যাজিক ব্যবহার করে না, সে নিচুস্বরে বলল। আর তুমি সত্যিই অকৃতজ্ঞ। আমি শুনেছি সেদিন রাতে কি হয়েছিল। তুমি সেদিন হোমপিঙ উইলোর মাধ্যমে রাতে চুপে চুপে টানেলে নেমে গিয়েছিলে, এবং পটার তোমাকে সেখানে যাই থেকে থাকুক তার থেকে বাঁচিয়েছিল-

তার মুখটা শুকিয়ে গেল এবং কর্কশ গলায় বলল, বাচিয়েছে? বাঁচিয়েছে? তুমি ভাবছ সে নায়কের ভূমিকা পালন করেছে? সে তার নিজের গলা বাঁচিয়েছ এবং তার বন্ধুদেরও তাই। তুমি পারবে না-আমি তোমাকে করতে।

করতে?

লিলি উজ্জ্বল চোখে তীব্রভাবে তাকালো। স্নেইপ সঙ্গে সঙ্গে চোখ ঘুরিয়ে নিল।

আমি সে কথা বলতে চাইনি। আমি দেখতে চাইনা যে ওরা তোমাকে বোকা বানাচ্ছে, সে তোমাকে বোকা বানাচ্ছে, জেমস পটার তোমাকে ধোকা দিচ্ছে! মনে হল শব্দগুলো তার ভেতর থেকে বেরিয়ে এল তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে।….এবং সবাই বলে …সে কোনো বড় কিডিচ হিরো না- স্নেইপের ক্রোধ তাকে ভারসাম্যহীন করে ফেলেছে। আর লিলির ভ্র কপালের আরো উপরে উঠতে থাকল।

আমি জানি যে জেমস পটারের আচরণ অসৎ, লিলি স্নেইপকে বাধা দিয়ে বলল। সে কথা তোমার আমাকে বলতে হবে না। কিন্তু মালসিবার এবং অ্যাভেরির রসবোধগুলো অশুভ। অশুভ, সেভেরাস, আমি বুঝতে পারি না যে তুমি কি করে ওদের বন্ধু হবে? মালসিভার এবং অ্যাভেরির সমালোচনা স্নেইপের কানে পৌঁছেছে কি না তা নিয়ে হ্যারির ভেতরে সন্দেহ হল। সে জেমস পটারের সমালোচনা করায় স্নেইপের ভেতরে একটা স্বস্তি ফুটে উঠেছে। তারা যখন আবার ফিরে যেতে থাকল তখন স্নেইপের পা দুটো নতুন উন্মাদনায় লাফাচ্ছে…

দৃশ্যটি আবার পাল্টে গেল।

হ্যারি আবারো দেখতে থাকল। স্নেইপ ডার্ক আর্টের ও.ডবি-উ.এল.ডিফেন্সের ক্লাস সেরে গ্রেট হল থেকে বের হয়ে গেল। দেখল সে হাঁটতে হাঁটতে ক্যাসল থেকে একটু দূরে যেখানে লুপিন, জেমস, সিরিয়স এবং পেটিগ্রিউ পাতা ঝরা গাছের নিচে বসে আছে, তার কাছাকাছি গেল। কিন্তু হ্যারি এবার একটু দূরে সরে রইল। কারণ সে জানে জেমস সেভেরাসকে উপরে উঠিয়ে ফেলার পর কি ঘটেছিল। সে জানে কি করা হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল। এবং সেটা আরো একবার শোনাটা তার কাছে সুখকর মনে হল না। সে দূর থেকে দেখল লিলি ওই দলের মধ্যে যোগ দিল এবং স্নেইপকে রক্ষা করতে চেষ্টা করল। দূর থেকে সে শুনল অপমানিত হওয়ার কারণে ক্রুদ্ধ হয়ে স্নেইপ লিলিকে উচ্চস্বরে বলল, মাডব্লাড!

দৃশ্য আবার বদলে গেল।

আমি দুঃখিত!

তাতে আমার কোনো আগ্রহ নেই।

আমি দুঃখিত!

তুমি নিজের নিঃশ্বাসগুলোকে রক্ষা করো।

সময়টা রাত। লিলির পরনে ড্রেসিং গাউন। গ্রিফিনডোর টাওয়ারের প্রবেশ পথে সে দু হাত ভাঁজ করে একটি মোটা মহিলা পোট্রেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি শুধুমাত্র এলাম এ কারণে যে ম্যারি বলল তুমি নাকি এখানে ঘুমানোর হুমকী দিয়েছ।

হ্যাঁ সত্যি, আমি তাই করতাম। আমি কখনোই তোমাকে মাডব্লাড বলতে চাইনি। এটা শুধু-

মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে? লিলির কণ্ঠেণ্ঠ কোনো রকম করুণার আভাস নেই। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি তোমার জন্য অনেক ঝামেলা ভোগ করেছি। আমার বন্ধুরা কেউ এমনকি বুঝতে পারে না যে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলি কেন। তুমি এবং তোমার সেই মুল্যবান ছোট্ট ডেথ-ইটার বন্ধু–তোমরা কেউ সেটা অস্বীকার করতে পারবে না। এমনকি তোমরা অস্বীকার করতে পারবে না কী হওয়ার জন্য লক্ষ নিয়েছ! তোমরা ইউ-নো-হুর সঙ্গে যোগদান করার ব্যাপারে অপেক্ষা করতে পারবে না, পারবে সেটা?

স্নেইপ মুখ হা করে কিছু একটা বলতে চেষ্টা করল, কিন্তু বলতে পারল না।

আমি আর অভিনয় করতে পারব না। তুমি তোমার পথ বেছে নিয়েছ, আমি আমার পথ বেছে নিয়েছি।

না–শোনো-,আমি-

-মাডব্লাড ডাক শুনতে? কিন্তু তুমি আমার জন্মের এই মাডব্লাড কথাটি সবাইকে বল। আমি তার থেকে আলাদা কী ভাবে?

স্নেইপ কথা বলতে চেষ্টা করল। কিন্তু সে ঘৃণার একটি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে পোট্রেইটের ফাঁক দিয়ে ঢুকে চলে গেল…

করিডোরটি চোখের সামনে থেকে সরে গেল। এবং দৃশ্যটি সময় নিয়ে পরিবর্তন হল। হ্যারির মনে হল সে অনেক রং-এর ভেতর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। তারপর আবার সবকিছু পরিস্কার হল। সে একটি নির্জন পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকার এবং শীতল চারদিকে। পাতাহীন গাছের ডালে বাতাস শো শো শব্দ করছে। পূর্ণ বয়স্ক স্নেইপ হাপাচ্ছে, জায়গার উপর সে ঘুড়ছে। তার হাতে শক্ত করে যাদুদণ্ড ধরে আছে। সে কিছুর জন্য বা কারো জন্য অপেক্ষা করছে…তার ভয় হ্যারির ভেতরও প্রবেশ করল। যদিও সে জানে যে তার কিছুই হবে না। সে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। কীসের জন্য স্নেইপ অপেক্ষা করছে তা নিয়ে ভাবতে থাকল….

ঠিক তখনই একুট সাদা আলো বাতাসে ঝলকে উঠল। হ্যারি আলোটির কথা চিন্তা করল, কিন্তু স্নেইপ হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। তার হাতের যাদুদণ্ডটি ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ল।

আমাকে মেরে ফেলো না!

সেটা আমার উদ্দেশ্য নয়।

ডাম্বলডোরের অ্যাপারেট করার শব্দটি গাছের শাখায় বাতাসের শো শো শব্দের নিচে চাপা পড়েছে। তিনি স্নেইপের সামনে দাঁড়িয়েছেন। তার পরনের গাউনটি পতপত করে উড়ছে। হাতের যাদুদণ্ডের আলো তার মুখের উপর পড়েছে।

ওয়েল সেভেরাস, লর্ড ভোল্টেমর্টের কাছ থেকে কী বার্তা আছে আমার জন্য?

না–কোনো ম্যাসেজ নেই–আমি আমার নিজের প্রয়োজনে এখানে এসেছি!

স্নেইপ তার হাত কচলাচ্ছে। তার কালো চুলগুলো মুখের চারদিকে এলোমেলো হয়ে আছে, দেখতে কিছুটা পাগলের মত মনে হচ্ছে।

আমি–আমি এসেছি একটি সতর্কবাণী, না অনুরোধ নিয়ে

ডাম্বলডোর তার যাদুদণ্ডটিতে একটি ক্লিক করলেন। গাছের শো শো আওয়াজটি তাদের দুজনের চারপাশ থেকে বন্ধ হয়ে নিস্তব্ধতা নেমে এল।

একজন ডেথ-ইটার আমাকে কি অনুরোধ করতে পারে?

একটি…একটি দৈব বার্তা…ভবিষ্যতবাণী…ট্রেলোনি…

আহ্, হ্যাঁ, ডাম্বলডোর বললেন। কতটা তুমি ভোল্টেমর্টের কাছে বলেছ?

সবকিছু…সবটুকু যা আমি শুনেছি! স্নেইপ বলল। সে কারণেই…ওই হিসাবেই …সে চিন্তা করছে লিলি ইভান্সের কথা!

দৈববাণী মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, ডাম্বলডোর বললেন। এটা বলা হয়েছে একটি ছেলের ব্যাপারে যে গত জুলাই মাসের শেষের দিকে জনুগ্রহণ করেছে-

তুমি বুঝতে পেরেছ আমি কি বলেছি! সে লিলির ছেলেটির কথা উল্লেখ করেছে। সে লিলিকে ধরতে যাবে, তাদের সবাইকে মেরে ফেলবে-

ডাম্বলডোর বললেন, তার ব্যাপারে তোমার যদি কোনো দরদ থাকে, তাহলে অবশ্যই ভোল্ডেমর্ট মহিলাকে ছেড়ে দেবে। তুমি তাকে বলোনি যে ছেলেটিকে নিয়ে মাকে ক্ষমা করে দিন?

আমি বলেছি–আমি তাকে বলেছি-

তুমি আমাকে বিরক্ত করছ! ডাম্বলডোর বললেন। হ্যারি কখনোই তার কণ্ঠে এমন ঘৃণার সুর শোনেনি। স্নেইপ একটু একটু কাঁপছে। তার স্বামী এবং সন্ত নিটির মৃত্যুতে তোমার কিছু আসে যায় না! তুমি যা চাও সে অনুসারে তারা দুজন মরতে পারে?

স্নেইপ কিছুই বলল না। শুধু ডাম্বলডোরের দিকে মুখ তুলে চেয়ে থাকল।

তাদেরকে লুকিয়ে ফেলুন, সে বলল। তাকে এবং সবাইকে রক্ষা করুন, প্লিজ।

এবং বিনীময়ে তুমি আমাকে কী দেবে?

বিনীময়ে? স্নেইপ অবাক হয়ে ডাম্বলডোরের দিকে তাকিয়ে থাকল। হ্যারি আশা করল যে সে প্রতিবাদ করবে। কিন্তু বেশ কিছুক্ষন নিরব থেকে সে বলল, যে কোনো কিছু।

পাহাড়ের উপরের দৃশ্যটি মুছে গেল। হ্যারি দাঁড়িয়ে আছে ডাম্বলডোরের অফিসকক্ষে। কোনো একটা কিছু আহত পশুর মত শব্দ করছে। স্নেইপ একটি চেয়ারে বসে আছে আর ডাম্বলডোর তার উপড়ে দাঁড়িয়ে। তাকে ভয়ানক ক্রুদ্ধ মনে হচ্ছে। এক মুহূর্ত পর স্নেইপ তার মুখটা তুলল। তাকে দেখলে মনে হচ্ছে শতশত বছর ধরে চরম কষ্টে আছে।

আমি ভেবেছিলাম…আপনি গিয়ে তাকে রক্ষা করবেন..

ডাম্বলডোর বললেন, সে এবং জেমস ভুল লোককে বিশ্বাস করেছিল। তোমার মত সেভেরাস। তুমি আশা করেছিলে না যে লর্ড ভোল্ডেমর্ট তাকে ছেড়ে দিতে পারে।

স্নেইপ কোনোক্রমে দম ছাড়ল।

ডাম্বলডোর বললেন, তার ছেলেটি বেঁচে গেছে।

স্নেইপ মাথাটা একটু ঝাঁকি দিয়ে উঠল।

তার ছেলেটি বেঁচে গেছে। তার চোখ দুটো মায়ের মত। তোমার মনে আছে লিলি ইভান্সের চোখের রঙ এবং গঠন, তাই না?

স্নেইপ চিৎকার করে বলল, মরে গেছে….মৃত..

এটাই অনুশোচনা, সেভেরাস?

আমার মনে হয়…আমি নিজে মরে যেতে চাই..

তাতে কার কী হবে সেভেরাস? ডাম্বলডোর ঠাণ্ডা গলায় বললেন। যদি তুমি লিলি ইভান্সকে ভালবেসে থাকো, সত্যিকারের ভালবাসা, তাহলে সামনে তোমার করণীয় কাজটি পরিস্কার।

স্নেইপ বেদনার সঙ্গে তাকালো। এবং মনে হল ডাম্বলডোরের কথাগুলো তার কানে সময় নিয়ে ঢুকেছে।

কী–আপনি কী বলতে চাচ্ছেন?

তুমি জানো কেন সে মারা গিয়েছে। এটা নিশ্চিত করো যে বৃথা জীবন দেয়নি। লিলির ছেলেটিকে বাঁচাতে আমাকে সাহায্য কর।

তার কোনো প্রটেকশন দরকার নেই। ডার্ক লর্ড চলে গেছেন-

ডার্ক লর্ড আবার ফিরে আসবে। এবং সে ফিরে এলে হ্যারি পটার ভয়ানক বিপদে পড়ে যাবে।

বেশ খানিকক্ষণ কারো কোনো কথা নেই। ধীরে ধীরে স্নেইপ তার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এল। তারপর সে বলল, খুবই ভালো কথা! খুবই ভালো কথা! কিন্তু কখনো বলতে পারে না ডাম্বলডোর! এটি শুধু আমাদের ভেতরই থাকবে। প্রতিজ্ঞা করো। আমি তোমার কথা চাই!

আমি কথা দিলাম, সেভেরাস। আমি কখনোই তোমার কাজটির কথা কারো কাছে প্রকাশ করবো না। ডাম্বলডোর নিঃশ্বাস ছাড়লেন। তিনি নিচের দিকে স্নেইপের ভয়ানক ক্ষুব্ধ মুখটির দিকে তাকালেন। যদি তুমি বলো….

অফিস কক্ষটি সামনে থেকে মুছে গেল এবং তখনই আরেকটি দৃশ্য সামনে দেখা গেল। স্নেইপ ডাম্বলডোরের সামনে পায়চারি করছে।

-মেডিওকার, তার পিতার মতই উদ্ধত, আইন অমান্যকারী এবং নিজে সবসময় বিখ্যাত হওয়ার জন্য ব্যস্ত-

তুমি তাই দেখ সেভেরাস, যা তুমি দেখতে চাও, ডাম্বলডোর বললেন। তিনি একটি ট্রান্সফিগারেশন টুডে পত্রিকার দিকে তাকিয়ে আছেন। অন্য টিচাররা রিপোর্ট করেছেন যে ছেলেটি নম্র চরিত্রের, পছন্দকরার মতো এবং যথেষ্ট মেধাবী। ব্যাক্তিগতভাবে আমি দেখেছি ছেলেটি বেশ আকর্ষণীয়।

ডাম্বলডোর একটি পৃষ্ঠা উল্টালেন এবং চোখ না তুলেই বললেন, কুইরেলের উপর একটি চোখ রাখো, পারবে না?

চোখের সামনে থেকে রঙ বদলে গেল। এখন সবকিছু অন্ধকার। এন্ট্রান্স হলের ভেতর স্নেইপ এবং ডাম্বলডোর দুজন দুজনের কাছ থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। ইউল বল নাচ থেকে শেষ ছেলেগুলো তাদেরকে পার হয়ে নিজেদের বিছানার দিকে চলে যাচ্ছে।

ঠিকাছে? ডাম্বলডোর বললেন।

কারকারফের মার্কিংটা আরো গাঢ় হয়ে গেছে। সে অস্থির হয়ে পড়েছে, শাস্তি র ভয় পাচ্ছে। আপনি জানেন ডার্ক লর্ডের পতনের পর সে মিনিস্ট্রিকে কতটা সাহায্য করেছিল। স্নেইপ পাশ থেকে ডাম্বলডোরের মুখটার দিকে তাকালো। তার ওই মার্কটা যদি বেশি জ্বালাপোড়া করে তাহলে সে পালিয়ে যাবে বলে মনস্থ করেছে।

তাই কি? ডাম্বলডোর বললেন। তিনি দেখলেন ফ্লয়ার ডেলাকুর এবং রজার ডেভিস হাসতে হাসতে আসছে। তুমিও কি তার সঙ্গে যোগ দিতে চাও?

না, স্নেইপ বলল। সে কারো চোখদুটো দিয়ে ফ্লয়ার এবং ডেভিসের আবার ফিরে যাওয়াটা দেখল। বলল, আমি অতটা ভীতু নই।

ডাম্বলডোর তার কথায় সায় দিলেন। না, তুমি কারকারফের চেয়ে অনেক বেশি সাহসী লোক। তুমি জানো, আমরা কখনো কখনো অতি দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাই,

তিনি স্নেইপকে ফেলে রেখে হেঁটে চলে যেতে শুরু করলেন। স্নেইপ আহত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকল…

এবার হ্যারি আবারো হেডমাস্টারের অফিসে দাঁড়িয়ে আছে। সময়টা তখন রাত। ডাম্বলডোর ডেস্কের পেছনে সিংহাসনের মত একটি চেয়ারের উপর গা ছেড়ে দিয়েছেন। মনে হচ্ছে অর্ধচেতন অবস্থায় আছেন। তিনি ডান হাতটা চেয়ারের হাতলের উপর দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। হাতটি পুড়ে কালো হয়ে আছে। স্নেইপ বিড়বিড় করে যাদুমন্ত্র উচ্চারণ করছে। হাতের যাদুদণ্ডটি কব্জির দিকে ধরে আছে। বাঁ হাত দিয়ে সে টিপ করে এক মগ সোনালী পোশন নিয়ে ডাম্বলডোরের গলায় ঢেলে দিল। একটু পরেই ডাম্বলডোর চোখের পাতা পিটপিট করলেন তারপর চোখ খুললেন।

কেন, স্নেইপ কোনো ভূমিকা না রেখেই বলল। কেন আপনি রিংটা খুলতে গেলেন। এটির ভেতর একটি কার্স আছে সেটা তো জানতেন। এটা ধরতে গেলেন কেন?

মারভোলো গাউন্ট রিং ডাম্বলডোরের সামনে টেবিলের উপর পড়ে আছে। সেটি ফেটে গেছে। গ্রিফিনডোরের তলোয়ারটিও টেবিলের উপর রাখা।

ডাম্বলডোর ব্যাথায় মুখ বিকৃত করলেন।

আমি…বোকামি হয়ে গেছে। আমি নিশ্চিত ছিলাম…

আপনি নিশ্চিত ছিলেন কিসে?

ডাম্বলডোর কোনো উত্তর দিলেন না।

এটা একটা বিস্ময়ের ব্যাপার যে আপনি এখনো জীবিত আছেন, স্লেইপের কণ্ঠে পরিস্কার ক্ষোভ। এই রিংটি যে কার্স বহন করে তা অসাধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন। আমি আপাতত কার্সটিকে ট্র্যাপ করে রেখেছি।

ডাম্বলডোর তার কালো, অকেজো হাতটি তুললেন। হাতটিকে চোখের সামনে তুলে এমনভাবে দেখলেন যেন একটি প্রত্নতাত্মিক জিনিস পরীক্ষা করছেন।

তুমি খুবই চমৎকার কাজ করেছ, সেভেরাস। আমার হাতে কতক্ষণ সময় আছে বলে তোমার মনে হয়?

ডাম্বলডোরের কণ্ঠে আলাপচারিতার সুর : মনে হল যেন তিনি আবহাওয়ার খবর জানতে চাচ্ছেন। স্নেইপ দ্বিধা করল। তারপর বলল, আমি ঠিক বলতে পারবো না। হতে পারে এক বছর। এ ধরণের স্পেলকে সারাজীবনের জন্য রোধ করা যায় না। এটা ছড়াতে থাকবে। এটি এমনই একটি কার্স যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরো শক্তিশালী হতে থাকে।

ডাম্বলডোর হাসলেন। এমন একটা ভাব যে এক বছরের কম সময় বেঁচে থাকার খবরটি ছোট খবর এবং তার জন্য কোনো উদ্বেগের বিষয় নয়।

আমি ভাগ্যবান, খুবই ভাগ্যবান যে তুমি আমার সঙ্গে আছ, সেভেরাস।

আপনি যদি আরেকটু আগে আমাকে ডাকতেন, তাহলে হয়তো আরো ভাল কিছু করতে পারতাম। আপনার সময় বাড়াতে পারতাম! স্নেইপ ক্রুদ্ধ হয়ে বলল। সে ভাংগা রিং এবং তলোয়ারটির দিকে তাকালো। আপনি কী ভেবেছিলেন যে রিংটি ভেঙে ফেললে কার্সটিও ভেঙে যাবে?

তেমনি একটা কিছু…আমি খুবই উত্তেজিত ছিলাম, অযৌক্তিক কাজ করেছি… কোনো সন্দেহ নেই…, ডাম্বলডোর বললেন। তিনি কষ্ট করে চেয়ারে সোজা হয়ে বসলেন। ওয়েল এটা সত্যিই অনেক কিছু পরিস্কার করে দিয়েছে।

স্নেইপ বিস্মিত হয়ে গেল। ডাম্বলডোর হাসলেন।

আমি ভোল্ডেমর্ট আমাকে ঘিড়ে যে পরিকল্পনা করছে তার কথা বলছি। সে প্ল্যান করছে বেচারা ম্যালফয় ছেলেটাকে দিয়ে আমাকে হত্যা করানোর।

স্নেইপ একটি চেয়ারে বসে পড়ল। হ্যারি প্রায়শই ডাম্বলডোরের ডেস্কে মনোনিবেশ করতো। হ্যারি বলতে পারে সে মাঝেমাঝেই ডাম্বলডোরের কার্স লাগা হাতের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাইত, কিন্তু অন্য হাত দিয়ে নম্রভাবে আলাপ না করতে থামিয়ে দিতেন। ক্ষুব্ধ স্নেইপ বলল, ডার্ক লর্ড বিশ্বাস করে না যে ড্র্যাকো সফল হবে। এটা হল শুধু লুসিয়াসের ব্যর্থতার শাস্তি। ড্র্যাকোর বাবা মা যখন দেখবে যে সে পারেনি এবং সে জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে–সেটা হবে তাদের জন্য প্রলম্বিত নির্যাতন।

ডাম্বলডোর বললেন, তার মানে ছেলেটির উপরও আমার মত মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়ে গেছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আমাকে পরবর্তীতে কাজটি কার সেটা হিসাব করতে হয়, সেটা কি তুমি?

দুজনই একটু নিরব রইল।

আমার ধারণা সেটাই ডার্ক লর্ডের পরিকল্পনা।

লর্ড ভোল্ডেমর্ট নিকট ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছে এবং তখন তার আর হোগার্টে কোনো স্পাই রাখার দরকার হবে না?

সে বিশ্বাস করে যে স্কুলটি শীঘ্রই তার কজায় চলে আসবে, হ্যাঁ।

এবং যদি স্কুলটি তার হাতে চলে যায়, ডাম্বলডোর বললেন। আমি তোমার কাছ থেকে কথা চাই যে তুমি তোমার সব শক্তি দিয়ে হোগার্টের ছাত্রদেরকে রক্ষা করবে?

স্নেইপ শক্তভাবে মাথা দোলালো।

গুড। তাহলে এখন তোমার প্রথম কাজ হল ড্র্যাকো কি করছে সেটা জানা। একটা আতঙ্কিত ছেলে অন্য সবার জন্য এবং এমনকি নিজের জন্যও বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাকে সহায়তা এবং গাইডেন্স দাও। সে সেটা গ্রহণ করবে। সে তোমাকে পছন্দ করে।

–এখন আর করে না, তার বাবার সমর্থন হারানোর পর। সে আমাকে দোষি ভাবে, মনে করে আমি লুসিয়াসের জায়গা দখল করে নিয়েছি।

চেষ্টা করো। আমি আমার নিজেকে নিয়ে অতটা চিন্তিত নই, যদটা চিন্তা। করছি ছেলেটিকে নিয়ে। সে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। ভোল্ডেমর্টের ক্রোধ থেকে তাকে রক্ষা করার একটি পথই থাকবে।

স্নেইপ ভুরু তুলে ব্যঙ্গপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো, আপনি কি চান যে সে আপনাকে হত্যা করুক?

অবশ্যই না, তুমি আমাকে হত্যা করবে।

 বেশ খানিক সময় সবকিছু নিরব রইল। তারপর একটি ক্লিক শব্দের মধ্য দিয়ে নিরবতা ভাঙল। ফিনিক্স ফক্স যেন মাছের হাড় চিবাচ্ছে।

আপনি কী চান যে কাজটি আমি এখনই করি। স্নেইপের গলার স্বর শক্ত। নাকি সমাধির এপিটাফের উপরের লেখাটি তৈরি করার জন্য আরো কিছু সময় চান?

ডাম্বলডোর হাসতে হাসতে বললেন, ওহ, এখনই না। আমি মনে করি সময় আপনি থেকে চলে আসবে। তিনি তার পোড়া হাতটি দেখিয়ে বললেন, আজ রাতে যা পেলাম তাতে আমরা নিশ্চিত যে এক বছরের ভেতরই ঘটনাটা ঘটবে।

আপনার যদি মরতে কোনো আপত্তি না থাকে, তাহলে ড্র্যাকোকে কাজটি করতে দিচ্ছেন না কেন?

ডাম্বলডোর বললেন, তার ভেতরটা এখনো অতটা নষ্ট হয়ে যায়নি। আমাকে দিয়ে আমি তা পরিপূর্ণ করতে পারি না।

আর আমার ভেতরটা? ডাম্বলডোর? আমার?

তুমিই একমাত্র জানো একজন বৃদ্ধ লোকের যন্ত্রণা এবং অপমানকে লাঘব করতে তোমার ভেতরটা ক্ষতিগ্রস্থ হবে কিনা, ডাম্বলডোর বললেন। আমি এটা তোমার ভালোর জন্যই বলছি, সেভেরাস, কারণ মৃত্যু আমার জন্য আসবে চাডলি কাননের লীগ শেষ হওয়ার পর। আমি স্বীকার করছি, আমি একটি দ্রুত এবং বেদনাহীন বিদায় গ্রহণই চাই, কিন্তু বিষয়টি ঝামেলাপূর্ণ হয়ে যাবে যদি ধরো যদি এর ভেতর গ্রেব্যাককে নিয়োজিত করা হয়–আমি শুনেছি তাকে ভোল্ডেমর্ট নাকি রিকুট করেছে? অথবা ধরো বেলাট্রিক্স, সে তো খাবারের আগে খাবার নিয়ে খেতে পছন্দ করে।

তার গলার স্বরটি হালকা, কিন্তু তার চোখ দুটো স্নেইপকে তীব্রভাবে বিদ্ধ করছে। কিন্তু তাদের দুজনই হ্যারিকে বিদ্ধ করছে, কারণ যে সত্ত্বা নিয়ে তারা আলাপ করছেন তা হ্যারির কাছে জানা। শেষে স্নেইপ আবার মাথা দোলালো।

ডাম্বলডোরকে মনে হলো সন্তুষ্ট।

ধন্যবাদ, সেভেরাস…

অফিসের দৃশ্যটি অদৃশ্য হয়ে গেল। এবার দেখা গেল ডাম্বলডোর এবং স্নেইপ একসঙ্গে সন্ধ্যাবেলা ক্যাসলের মাঠে হাঁটছেন।

হঠাৎ স্নেইপ জানতে চাইল, পটারের ব্যাপারে আপনি কী চিন্তা করেছেন, সারা বিকাল আপনারা একসঙ্গে ঘরে ছিলেন।

ডাম্বলডোরকে বিমর্ষ দেখা গেল।

কেন? তোমরা কি তাকে আরো শাস্তি দিতে চাও না, সেভেরাস? ছেলেটি আবারো অল্প সময়ের ভেতর শাস্তির মুখোমুখি হবে।

সে আবারো তার বাবার মতো

হয়তো দেখতে বাবার মতো, কিন্তু তার ভেতরের প্রকৃতিটা অনেক বেশি তার মায়ের মতো। আমি তার সঙ্গে সময় কাটিয়েছি, কারণ তার সঙ্গে আমার অনেক কিছু আলাপ করার ছিল। দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই তাকে আমার অনেক তথ্য জানানো দরকার।

তথ্য, স্নেইপ রিপিট করলো। আপনি তাকে বিশ্বাস করেন…আমাকে বিশ্বাস করেন না।

এটা বিশ্বাসের কোনো প্রশ্ন নয়। তুমি আমি দুজনই জানি, আমার সময় খুব কম। ছেলেটিকে আমার জানানো দরকার আছে তার কি করা উচিত।

আর আমি কেন একই কথা জানতে পারি না?

আমি চাই না যে আমার সব গোপণ কথা একটি ঝুড়িতে জমা পড়ক, বিশেষ করে আবার যে ঝুড়িটি লর্ড ডাম্বলডোরের হাতে ঝুলছে।

আপনার আদেশ কোনটা আমি ভালভাবে পালন করিনি!

না, তুমি যথাযথই করেছ। তুমি এটা ভেবো না নিজেকে যে বিপদের ভেতর তুমি জড়িয়ে ফেলেছ সেটা আমি ছোট করে দেখছি, সেভেরাস। ভোল্ডেমর্টকে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে যে প্রয়োজনীয় অংশটি বাদ দেয়ার দরকার সে কাজটি আমি আর কাউকে দেইনি একমাত্র তুমি ছাড়া।

তারপরও আপনি ওই ছেলেটির উপর আস্থা রাখছেন যে কিনা অকুমেন্সিতে অক্ষম, যার ম্যাজিক হল মেডিওকার এবং যে কিনা সরাসরি লর্ড ভোল্টেমর্টের চিন্ত র সঙ্গে যুক্ত–ভোল্টেমর্টের মনের ভেতর দেখতে পায়!

 এই সংযোগকে ভোল্ডেমর্ট ভয় পায়, ডাম্বলডোর বললেন। বেশিদিন আগের কথা নয়, হ্যারি মনের সঙ্গে তার সংযোগটা কি সেটা সে বুঝতে পেরেছিল। এমন যন্ত্রণা সে সারা জীবনে কখনো পায়নি। সে হ্যারির ভেতরে আর ঘটতে যাবে না, আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত।

আমি বুঝতে পারলাম না।

লর্ড ভোল্ডেমর্ট এমন দুর্বল হয়ে আছে, সেটি হ্যারির আত্মার সঙ্গে সংযোগ করতে পারে না।

আত্মা? আমরা তো মন নিয়ে কথা বলছি!

লর্ড ভোল্ডেমর্ট এবং হ্যারির বেলায় দুটোই সমান।

ডাম্বলডোর চারদিকে তাকালেন নিশ্চিত হতে যে তারা দুজন ছাড়া আশেপাশে আর কেউ আছে কিনা। তারা নিষিদ্ধ জঙ্গলের কাছাকাছি চলে এসেছেন। কিন্তু আশেপাশে কেউ আছে বলে মনে হল না। তুমি আমাকে হত্যা করার পর, সেভেরাস-

আপনি আমাকে সবকিছু বলতে অস্বীকার করেছেন, তারপরও আপনি আমার কাছ থেকে কিছু আনুকূল্য আশা করছেন! অবজ্ঞার সঙ্গে স্নেইপ বলল। তার চোখে মুখে এখন প্রকৃত ক্রোধ ফুটে উঠেছে। আপনি ইতিমধ্যেই আমার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিচ্ছেন, ডাম্বলডোর! হয়তো আমি আমার মত বদলে ফেলেছি!

তুমি আমাকে কথা দিয়েছ সেভেরাস। যে কাজ তুমি করে আমাকে বাধিত করবে সেটা হল আমি ভেবেছিলাম তুমি স্লিথারিনের অল্পবয়সী ছেলেপেলের দিকে কড়া দৃষ্টি রাখবে।

স্নেইপকে ক্ষুব্ধ দেখা গেল। সে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। ডাম্বলডোর একটি নিঃশ্বাস ছাড়লেন।

আজ রাতে আমার অফিসে এসো, সেভেরাস। সেখানে এলে তুমি আর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে না যে তোমার প্রতি আমার কোনো আস্থা নেই…

তারা ডাম্বলডোরের অফিসে ফিরে এলেন। ফক্সটি চুপচাপ হয়ে বসে আছে। স্নেইপও চুপচাপ বসে আছে। ডাম্বলডোর তার চারপাশে পায়চারি করছেন। কথা বলছেন।

শেষ মুহূর্তের আগে, অথবা প্রয়োজন না হলে হ্যারিকে অবশ্যই কিছু জানানো যাবে না। তা না হলে সে তার করণীয় কাজটিতে শক্তি পাবে কি করে?

কিন্তু তার করণীয় কাজটি কি?

সেটা হ্যারি এবং আমার একান্ত কাজ। এখন মন দিয়ে শোনো, সেভেরাস। আমার মৃত্যুর পর একটা সময় আসবে–তর্ক করো না, বাধা দিও না! মন দিয়ে শোন, একটা সময় আসবে যখন লর্ড ভোল্ডেমর্ট তার সাপটির জীবন নিয়ে ভয় পেতে থাকবে।

নাগিনীকে নিয়ে? স্নেইপ অবাক হয়ে বলল।

হ্যাঁ, সে সময়টি যদি আসে, যখন ভোল্ডেমর্ট সাপটিকে কোথায়ও ব্যবহার করতে পাঠাবে না, শুধু তারপাশে নিরাপদ করে আটকে রাখবে ম্যাক্যাল প্রোটেকশন দিয়ে–তখন হ্যারিকে কথাটা বলা নিরাপদ হবে বলে আমি মনে করি।

কি কথা?

ডাম্বলডোর একটি গভীর নিঃশ্বাস নিলেন এবং চোখ বন্ধ করলেন।

তাকে বলতে হবে, যে রাতে তাকে ভোল্ডেমর্ট হত্যা করতে চেষ্টা করেছিল সে রাতে নিজের জীবন দিয়ে লিলি দুজনের মাঝখানে চলে এসেছিল। এবং ভোল্ডেমর্টের কিলিং কার্সটি ছিটকে নিজের দিকে ফিরে গিয়েছিল। এবং ভোর্স্টেমর্টের আত্মার কতকটা ছিঁড়ে ভেঙে পড়া বাড়িটির একমাত্র জীবিত আত্মার সঙ্গে লেগে গিয়েছিল। ভোল্টেমর্টের একটি অংশ এখন হ্যারির ভেতর বাস করে। এবং সেটাই হ্যারিকে ক্ষমতা দিয়েছে সাপটির সঙ্গে কথা বলার এবং ভোল্টেমর্টের মনের ভেতর প্রবেশ করার। এটা সে কখনো বুঝতে পারেনি। যতক্ষণ পর্যন্ত ভোল্টেমর্টের সে ছিটকে পড়া টুকরো আত্মা হ্যারির দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে ততক্ষণ লর্ড ভোল্ডেমর্ট মরতে পারে না।

হ্যারির মনে হল মানুষ দুজনকে সে একটি লম্বা টানেলের ভেতর দেখল। তারা ওর কাছ থেকে অনেক দূরে। তাদের কথা ওর কানে প্রতিধ্বনি হয়ে প্রবেশ করছে।

তার মানে ছেলেটিকে…ছেলেটিকে মরতেই হবে? শান্তকণ্ঠে স্নেইপ জানতে চাইল।

এবং ভোল্টেমর্টের নিজের হাতে কাজটি করতে হবে, সেভেরাস। এটাই অনিবার্য।

আবার বেশ খানিক সময় নিরবতা নেমে এল। তারপর স্নেইপ বলল, এতকাল ধরে আমি ভেবেছিলাম…আমরা তাকে রক্ষা করছি লিলির কারণে।

আমরা তাকে প্রোটেকশন দিয়েছি তাকে শিক্ষা দিতে, তাকে বড় করে তুলতে, তাকে শক্তি সঞ্চার করতে, ডাম্বলডোর বললেন। তিনি তার চোখদুটো তখনো বন্ধ করে রেখেছেন। অন্যদিকে তাদের সংযোগ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মাঝেমাঝে আমার মনে হয়েছে সে বিষয়টি ধরতে পেরেছে। আমি তাকে যতটা জানি, সে সবকিছু আয়োজন করবে যখন সে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হবে তখন সে নিশ্চিত হবে যে ভোল্ডেমর্টও শেষ হয়ে গেছে।

ডাম্বলডোর তার চোখ দুটো খুললেন। স্নেইপকে আতঙ্কিত দেখা গেল।

আপনি তাকে প্রাণে রক্ষা করে যাচ্ছেন যাতে সে সঠিক সময় মরতে পারে? হতাশ হয়ো না, সেভেরাস। তুমি কতজনকে তোমার সামনে মরতে দেখেছ?

শুধুমাত্র তাদের, যাদেরকে আমি রক্ষা করতে পারিনি, স্নেইপ বলল। সে দাঁড়িয়ে গেছে। আপনি আমাকে ব্যবহার করছেন।

তার মানে?

আমি আপনার পক্ষে স্পাইয়ের কাজ করেছি, আপনার জন্য মিথ্যা বলেছি, আপনার কারণে আমি জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করেছি। এর সব কিছুই হওয়ার কথা ছিল লিলির ছেলেকে বাঁচাবার জন্য। এখন আপনি বলছেন তাকে বড় করে তুলেছেন শুধু একটি শুকরের মত জবাই করবার জন্য।

খুবই স্পর্শকাতর বিষয় এটি, সেভেরাস, ডাম্বলডোর বললেন। তোমর ছেলেটির জন্য মমত্ব আছে,

হতেই পারে?

তার জন্য? চিৎকার করে উঠল স্নেইপ। এক্সপেক্টো প্যাট্রোনাম!

তার যাদুদণ্ডের আগা থেকে একটি রুপালী রঙের মাদী হরিণ বের হয়ে এল। সেটি মেঝের উপর দাঁড়ালো। অফিসের এপাশ থেকে ওপাশে হেঁটে গেল এবং জানালা দিয়ে বের হয়ে উড়াল দিল। তার গায়ের থেকে রুপালী আভা নিঃশেষ হয়ে যেতেই সে আবার স্নেইপের কাছে ফিরে এল। স্নেইপের চোখ পানিতে ভরে গেছে।

এতকাল পর?

সবসময়, স্নেইপ বলল।

দৃশ্যটি পাল্টে গেল। এবার হ্যারি দেখল স্নেইপ ডাম্বলডোরের পোট্রেইটের সঙ্গে কথা বলছে, যে পোট্রেইটটি রয়েছে অফিসের বসার ডেস্কের পেছনে।

হ্যারি যখন তার আন্ট এবং আন্টির কাছ থেকে বিদায় নেবে তখন তুমি সেই সঠিক খবরটি ভোল্ডেমর্টকে দেবে। ডাম্বলডোর বললেন। সেটা করলে ভোল্ডেমর্ট তোমাকে কোনো সন্দেহ করবে না। সে বিশ্বাস করে যে তুমি অনেক তথ্য জানো। কিন্তু অবশ্যই তুমি তাকে ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করবে–তাহলেই আমি মনে করি ছেলেটি রক্ষা পেতে পারে। মুন্ডুস ফ্লেচারকে ম্যানেজ করতে চেষ্টা করো। এবং সেভেরাস, তোমাকে যদি হ্যারিকে ধরার অভিযানে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়, তাহলে তোমার কাজে আস্থার ব্যাপারে নিশ্চিত করবে…আমি চাচ্ছি তুমি যতটা সম্ভব ভোল্ডেমর্টের কাছে বিশ্বস্ত থাকবে, নতুবা হোগার্ট ক্যারোসের দয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে…।

এবার দেখা গেল স্নেইপ একটি কফি হাউসে মুভূতুসের মুখোমুখি। মুহুসের মুখটি রহস্যজনকভাবে স্থির। স্নেইপ চুপ করে কোনো একটা কিছু ভাবছে।

তুমি অর্ডার অব দ্য ফিনিক্সকে পরামর্শ দেবে, স্নেইপ বিড়বিড় করে বলল। যাতে ওরা প্রলুব্ধ করে। পোলিজিউস পোশন ব্যবহার করে। একেবারে পটার! একমাত্র এটাই কাজে আসতে পারে। তুমি ভুলে যাবে যে এ কথা আমি বলেছি। এটা তোমার নিজের চিন্তা বলে উপস্থাপন করবে। আমার কথা বুঝতে পেরেছ?

আমি বুঝতে পেরেছি, মুন্ডুঙ্গুস বলল। সে পলকহীন তাকিয়ে আছে।

এবার হ্যারি স্নেইপের পাশাপাশি অন্ধকার পরিস্কার রাতে একটি মস্টিকে উড়ে যাচ্ছে। তার পাশাপাশি আরো একটি মাথা ঢাকা ডেথ-ইটার যাচ্ছে। তাদের সামনে লুপিন এবং আরো একটি হ্যারি –যে প্রকৃতপক্ষে জর্জ। একটি ডেথ-ইটার স্নেইপের সামনে চলে গেল এবং তার যাদুদণ্ডটি তুলে ধরল। সরাসরি লুপিনের পিঠের দিকে ধরল

সেকটুমসেম্প্রা! স্নেইপ চিৎকার করে বলল।

কিন্তু ডেথ-ইটারকে লক্ষ করে ছুঁড়ে দেয়া স্পেলর মিস হল এবং জর্জের গায়ে গিয়ে লাগল

এবং তারপর, স্নেইপকে দেখা গেল সিরিয়ুসের বেডরুমে নিচু হয়ে বসে আছে। তার নাক-চোখ বেয়ে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে। সে লিলির একটি পুরাতন চিঠি পড়ছে। চিঠির দ্বিতীয় পাতাটিতে মাত্র কয়েকটি শব্দ রয়েছে :

গেলার্ট গ্রিনডেলভান্ডের সঙ্গে বন্ধুত্ব হতে পারে। আমার মনে হয় তার সে ইচ্ছা আছে, ব্যক্তিগতভাবে।
অনেক ভালবাসা
লিলি

স্নেইপ লিলির স্বাক্ষর করা কাগজটি নিল এবং পকেটে পুড়ে রাখল। এবং সে তার হাতে ধরা ফটোগ্রাফটি ছিঁড়ে দুটুকরো করল এবং যে অংশে লিলি হাসছে সে অংশটি রেখে বাকী যে অংশে জেমস এবং হ্যারি রয়েছে সেটা ড্রয়ারের মেঝের উপর ফেলে দিল…

এবার আবার স্নেইপ দাঁড়িয়ে আছে হেডমাস্টারের স্টাডি রুমে। পাইনাস নাইজেলাস দ্রুত তার পোট্রেইটে দেখা দিল।

হেডমাস্টার! ওরা ডিনের জঙ্গলে ক্যাম্প করেছে! ওই মাডব্লাড

এ শব্দটি ব্যবহার করো না!

ওই গ্র্যানজার মেয়েটি তার ব্যাগ খোলার সময় জায়গাটির নাম বলেছে, সেটা আমি শুনেছি!

 গুড, ভেরি গুড! হেডমাস্টারের ডেস্কের পেছনের পোট্রেইট থেকে ডাম্বলডোর উচ্চস্বরে বলে উঠলেন। এখন, সেভেরাস, ওই তলোয়ারটি! ভুলে যেও না যে তলোয়ারটি নিতে হবে শর্ত মেনে এবং সাহস দেখিয়ে এবং সে যাতে কোনোক্রমে বুঝতে না পারে যে তুমি এটি দিয়েছ! যদি ভোল্ডেমর্ট হ্যারির মনের ভেতর প্রবেশ করে এবং দেখতে পায় যে তুমি তার পক্ষে কাজ করছ-

আমি জানি, স্নেইপ বাধা দিয়ে বলল। সে ডাম্বলডোরের পেট্রেইটের কাছে গেল এবং টান দিয়ে এর পাশের অংশ খুলে ফেলল। সেটা সামনের দিকে ঘুরল এবং তার পেছন থেকে একটি গোপন গর্ত দেখা গেল। সেখান থেকে স্নেইপ তলোয়ারটি টেনে বের করে নিল।

এবং এখনো আপনি আমার কাছে বলবেন না যে কেন এই তলোয়ারটি পটারকে দেয়া প্রয়োজন? স্নেইপ বলল। সে তার গাউনের উপর দিয়ে একটি ভ্রমন করার আলখাল্লা চড়িয়ে দিল।

না, আমার তা মনে হয় না, ডাম্বলডোর বলল। সে জানে এটা দিয়ে কী করতে হবে। এবং সেভেরাস অত্যন্ত সাবধান থেকো। জর্জ উইসলির দুর্ঘটনার পর ওরা কিন্তু তোমার উপস্থিতি সহজভাবে নেবে না

স্নেইপ দরোজার দিকে ঘুরল।

ভয়ের কিছু নেই ডাম্বলডোর, স্নেইপ ঠাণ্ডা গলায় বলল। আমার একটি প্ল্যান আছে….

স্নেইপ রুম ছেড়ে বের হয়ে গেল। হ্যারি পেনসিভের ভেতর থেকে উঠে এল। এবং এক মুহূর্ত পর সে কার্পেট বিছানো একই রকম একটি রুমে শুয়ে পরল : স্নেইপ হয়তো এখানেই তার দরোজাটি বন্ধ করে দিয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *