২১. তিন ভাইয়ের কাহিনী

২১. তিন ভাইয়ের কাহিনী

হ্যারি ঘুরে রন এবং হারমিয়নের দিকে তাকালো। ওদের দুজনের কেউই বুঝতে পারেনি জেনোফিলিয়াস লাভগুড কথাটা কী বললেন।

 দ্য ডেথলি হ্যালোস?

ঠিক, জেনোফিলিয়াস বললেন। তোমরা এ সম্পর্কে কিছু জানো না, বিশ্বাস করো না? অবশ্য আমি এ নিয়ে বিস্মিত নই। খুব কম উইজার্ডই এটা বিশ্বাস করে। তিনি রনের দিকে তাকালেন, তোমার ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে চোখা নাকের একজন অল্প বয়সের লোক দেখেছিলে যে আমাকে এই চিহ্নটির জন্য আক্রমণ করেছিল। কারণ সিম্বলটি ডার্ক উইজার্ডের, কত বোকা! হ্যালোর সঙ্গে ডার্কের কোনো সম্পর্কই নেই–অন্তত ওরা যেমন করে ভেবেছে তেমন তো নয়ই। এই সিম্বল একজন ব্যবহার করে থাকে অন্য একই মতে বিশ্বাসীর কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে। তারা আশা করে যে অন্য একই ধারণার লোকের কাছ থেকে উদ্দেশ্য হাসিলে সহায়তা পাবে।

তিনি কয়েক দলা চিনি নিলেন তার গুরডিরুটে এবং চুমুক দিলেন।

হ্যারি বলল, আমি দুঃখিত, এখনো কিছুই বুঝতে পারিনি।

সে ভদ্রতা করে কাপে একটি চুমুক দিল এবং মুখ ভরে গেল। জিনিসটি খুবই বাজে যেন কেউ এভরি ফ্লেবার বিনস তরল করে খেতে দিয়েছে।

ওয়েল, দেখ যারা বিশ্বাস করে তারা ডেথলি হ্যালো চায়, বললেন জেনোফি লিয়াস। তিনি গুরডিরুট পুরোটা মুখে দিয়ে টেস্ট গ্রহণ করতে দুঠোঁট একত্র করলেন।

হারমিয়ন জানতে চাইল, কিন্তু ডেথলি হ্যালোটা কি?

জেনোফিলিয়াস খালি কাপটা পাশে ঠেলে রাখলেন।

আমি ধারণা করছি তোমরা সবাই দ্য টেইল অব দি থ্রি ব্রাদার্স এর সঙ্গে পরিচিত।

হ্যারি বলল না। কিন্তু রন এবং হারমিয়ন বলল, হ্যাঁ।

 জেনোফিলিয়াস প্রচণ্ড জোরে মাথা ঝাঁকালেন।

ওয়েল, ওয়েল, এর সব বিষয়গুলো আছে দ্য টেল অব থ্রি বাদার্সে…. আমার একটি কপি আছে কোথাও রেখেছি….

তিনি অস্পষ্ট মনে করতে চেষ্টা করে চারদিকে তাকালেন। কিন্তু হারমিয়ন বলল, আমার কাছে একটি কপি আছে মি, লাভগুড, এখানেই আমার সঙ্গে আছে।

এবং হারমিয়ন তার ব্যাগ থেকে দ্য টেলস অব ব্রিডল দ্য বার্ড বইটি টেনে বেল করল।

এটি কি অরিজিনাল? জেনোফিলিয়াস তীব্র কণ্ঠে জানতে চাইলেন। এবং হারমিয়ন মাথা নেড়ে জানালো তখন তিনি বললেন, তাহলে তুমি জোরে জোরে পড়ছ না কেন? তুমি জোরে পড়লে আমরা নিশ্চিতভাবে সব বুঝতে পারব।

এ..ঠিকাছে, হারমিয়ন নার্ভাস হয়ে বলল। সে বইটি খুলল এবং হ্যারি দেখল ওরা যে চিহ্নটি খুঁজে বেড়াচ্ছে সেটা পাতার উপরে আঁকা রয়েছে। হারমিয়ন খুক করে গলা পরিস্কার করে পড়তে শুরু করল।

একদা তিন ভাই ছিল, যারা তিনজন একটি নির্জন বাঁকা পথে সন্ধ্যাবেলা বের হল…

মধ্যরাতে, আমাদের মা সবসময় বলতেন, রন বলল। সে তার হাতদুটো মাথার পেছনে নিয়ে হেলান দিয়ে শুনতে প্রস্তুত হল। হারমিয়ন তার দিকে বিরক্ত চোখে তাকালো।

সরি, আমি ভেবেছিলাম মধ্যরাত হলে একটু ভৌতিক ব্যাপার হতো! রন বলল।

হ্যাঁ, কারণ আমাদের জীবনে আরো বেশি ভয়ের প্রয়োজন হয়, হ্যারি নিজেকে কথা বলা থেকে থামানোর আগে বলল। জেনোফিলিয়াস এসব কথায় মন দিয়েছেন বলে মনে হল না। তিনি জানালা দিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। বললেন, পড়তে থাকো হারমিয়ন।

সময় মতো তিন ভাই হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেল একটি গভীর নদীতে এবং যে নদীতে সাঁতরানো খুবই বিপদজনক। কিন্তু এই তিন ভাইয়ের ম্যাজিক আর্ট জানা ছিল। তারা তাদের যাদুদণ্ড দিয়ে একটি ব্রিজ তৈরি করল সেই ভয়ানক পানির উপর। তারা অর্ধেক পথ পার হয়ে দেখতে পেল তাদের পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে আছে একটি মুখটাকা শরীর।
এবং ডেথ তাদের সঙ্গে কথা বলল।

সরি, হ্যারি বাধা দিয়ে বলল। ডেথ তাদের সঙ্গে কথা বলল?

এটি একটি রুপকথা হ্যারি!

 ঠিক আছে, সরি, পড়তে থাকো।

এবং ডেথ তাদের সঙ্গে কথা বলল। সে খুবই রেগে গিয়েছিল যে তিন আগন্তুক শিকার নদীতে না নেমে তাকে প্রতারণা করেছে। কিন্তু ডেথটি ছিল চালাক। সে ওদেরকে তিনজনের যাদু ব্যবহার করার জন্য স্বাগত জানানোর ভান করল। এবং বলল যে তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চালাকির জন্য ওদের তিনজনকে সে তিনটি পুরস্কার দেবে।
সুতরাং সবচেয়ে বড় ভাই একজন সাহসী লোক ছিল। ভাল যোদ্ধা। সে দাবী করল এমন একটি ক্ষমতাসম্পন্ন যাদুদন্ডের যা কারো কাছে নেই। যে যাদুদণ্ডটি সবসময় তার মালিককে জয় এনে দেবে। এমন একটি যাদুদণ্ড যা একজন ডেথের সঙ্গে লড়াইতে জয়ী হতে পারে। অতএব ডেথটি নদীর ধারের একটি পুরোনো গাছের কাছে গেল। সেখান থেকে যাদুদণ্ডের মত ঝোলানো একটি কাঠি এনে বড় ভাইকে দিল।
এরপর মেজো ভাই লোকটি ছিল একটু উদ্ধত ধরনের। সে ডেথকে আরো একটু নাস্তানাবুদ করতে চাইল। সে এমন ক্ষমতা চাইল যাতে ডেথদেরকে ডেকে আনতে পারে। এবার ডেথটি নদীর পার থেকে একটি পাথর তুলে দ্বিতীয় ভাইকে দিল। এবং বলল যে এই পাথরটির মৃতদেরকে ডেকে আনার ক্ষমতা আছে।
এবার সবচেয়ে ছোট ভাইকে জিজ্ঞেস করল সে কি চায়। সবচেয়ে ছোট ভাইটি ছিল বিনয়ী এবং তিন ভাইয়ের মধ্যে বুদ্ধিমান। সে ডেথটিকে মোটেই বিশ্বাস করল না। তাই সে চাইল যাতে সে ওখান থেকে সামনে আগানোরডেথ তাকে না দেখে। এবং ডেথটি ওকে অনিচ্ছা সত্বেও নিজের অদৃশ্য হওয়ার আলখাল্লাটি দিয়ে দিল।

ডেথদের কাছে অদৃশ্য আলখাল্লা থাকে? হ্যারি বাধা দিয়ে বলল।

সে যাতে মানুষের ভেতর দিয়ে চুপিসারে চলাচল করকে পারে, রন বলল। কখনো কখনো মানুষের ভেতর দিয়ে দৌড়ে চলাচল করাটা ওদের কাছে একঘেয়ে মনে হয়। সরি হারমিয়ন।

এবার ডেথ পাশে গিয়ে দাঁড়ালো এবং তাদের যার যার পথ ছেড়ে দিল। ওরা পথ দিয়ে আগালো। ওরা ওদের অভিযানের আলাপ করল এবং ডেথের পুরস্কারের প্রশংসা করল।
একটি সময় ওরা তিন ভাই পৃথক হয়ে গেল যারযার পথে।
প্ৰথম ভাইটি সপ্তাহখানেকের জন্য ঘোরাফেরা করে দূরের একটি গ্রামে গিয়ে পৌঁছল। একজন উইজার্ডকে খুজে বের করল যার সঙ্গে তার বহুদিনের বিরোধ ছিল। স্বভাবতই বড় ভাইটি তার তার শত্রুর সঙ্গে জয়ী হল। তার শত্রুর মৃতদেহটি ফ্লোরের উপর রেখে সে একটি বারে গিয়ে ঢুকল। সেখানে গিয়ে সে ডেথ এর কাছ থেকে নিয়ে আসা যাদুদণ্ডের ক্ষমতার কথা গর্বভরে বলল। এবং জানালো যে তার যাদুদণ্ডটি অপরাজেয়।
ওই রাতেই সে মদ্যপ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে পড়লে একজন উইজার্ড হামাগুড়ি দিয়ে তার কাছে আসে। চোরটি যাদুদণ্ডটি তুলে নেয় এবং স্বাভাবিকভাবেই সেই বড় ভাইয়ের গলাটা দুভাগ করে রেখে যায়।
এবং এভাবেই বড় ভাইকে কাছে নিয়ে নেয় ডেথটি।
এদিকে মেজো ভাই চলে যায় তার নিজের শহরে। সেখানে সে একা বাস করতো। এখানে এসে সে পাথরাটি বের করে তিনবার হাতে ওলোটপালট করে ক্ষমতা বলে একজন ডেথকে ডেকে আনে। প্রচণ্ড আগ্রহ এবং উদ্দীপনা নিয়ে সে সেই মেয়েটিকে ডেকে আনে যে মেয়েটিকে সে ভালবাসতো। তাকে সে বিয়ে করতে চেয়েছিল, কিন্তু অসময়ে মেয়েটি মারা যায়। সে মেয়েটিকে তার সামনে নিয়ে আসে।
তারপরও মেয়েটি ছিল দুঃখিত এবং শীতল। তার কাছ থেকে ঘোমটা নেটে আলাদা হয়ে রইল। যদিও মেয়েটি জীবন জগতে ফিরে এসেছিল, কিন্তু এখানে সে সত্যিকারে অবস্থান করতে পারছিল না। সে প্রচুর কষ্ট করেছে। অবশেষে দ্বিতীয় ভাইটি প্রায় উন্মাদ হয়ে যায় মেয়েটিকে পাওয়ার জন্য। এবং মেয়েটির কাছে। যাওয়ার জন্য আত্মহত্যা করে।
সুতরাং ডেথ তাকে নিজের করে নেয়।
 যদিও তৃতীয় এবং ছোট ভাইকে ডেথ অনেককাল ধরে খুঁজতে থাকে কিন্তু তার কোনো সন্ধান করতে পারে না। অবশেষে যখন অনেক বছর পর ছোট ভাইটি বৃদ্ধ হয়ে যায় তখন সে অদৃশ্য আলখাল্লাটি খুলে নিজের
সন্তানকে দিয়ে দেয়। এবং সে ডেথকে স্বাগত জানায় পুরোনো বন্ধু হিসাবে। খুশির মনে তার সঙ্গে চলে যায়। এবং একসাথে জীবন যাপন করতে থাকে।

হারমিয়ন বইটি বন্ধ করল। জেনোফিলিয়াসের বুঝতে সময় লাগল যে হারমিয়ন পড়া বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি বাইরে আকাশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলেন এবং বললেন, ওয়েল এই হল তোমাদের ঘটনা।

সরি? হারমিয়ন বলল। তাকে বিব্ৰত দেখা গেল।

জেনোফিলিয়াস বললেন, ওরাই হল ডেথলি হ্যালোস।

তার কনুইয়ের কাছে জিনিসপত্রে ভরা একটি টেবিল থেকে তিনি পালকের কলম তুলে নিলেন। এবং অন্য কিছু বইয়ের ভেতর থেকে একটি লেখার খাতা তুলে নিলেন।

বড় ভাইয়ের যাদুদণ্ডটি, তিনি বললেন। এবং খাতার উপর একটি আড়াআড়ি রেখা টানলেন। পুনর্জন্মের পাথরটি, এবার তিনি লাইনের উপর একটি গোলাকার বৃত্ত আঁকলেন। অদৃশ্য আলখাল্লা, তিনি সরল রেখা, গোলাকার রেখার উপর দিয়ে একটি ত্রিভুজ আঁকলেন। হারমিয়ন আগ্রহ নিয়ে তাকালো। একসঙ্গে, তিনি বললেন। সব মিলে হল ডেথলি হ্যালোস।

হারমিয়ন বলল, কিন্তু পুরো কাহিনীতে তো ডেথলি হ্যালোস বলতে কোনো বাক্য লেখা নেই।

হ্যাঁ অবশ্যই নেই, জেনোফিলিয়াস বললেন। তাকে আত্মতৃপ্ত মনে হল। এটি একটি শিশুদের কাহিনী। কোনো কিছু ইঙ্গিতের বদলে বিনোদনের দিকটিই দেখা হয়েছে। আমাদের মধ্যে যারা বুঝতে পারে তারা জানে এই তিনটি চিহ্ন দ্বারা ডেথলি হ্যালোস বোঝানো হয়ে থাকে। এই তিনটিকে একসঙ্গে করলে মাস্টার অব ডেথ বোঝানো হয়।

অল্প সময়ের জন্য নিরবতা নেমে এল। জেনোফিলিয়াস জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন। আকাশে সূর্য অনেকটা নিচে নেমে গেছে।

লুনা অতি শীঘ্রই প্লিমপাই নিয়ে চলে আসবে। তিনি বললেন।

রন বলল, আপনি বলছিলেন মাস্টার অব ডেথ

জেনোফিলিয়াস শূন্যে হাত তুলে বললেন, মাস্টার হল বিজয়ী, পরাস্তকারী। তোমরা যাই বল না কেন।

তাহলে…আপনি বলতে চাচ্ছেন… হারমিয়ন ধীরে ধীরে বলল। তার কণ্ঠ শুনে হ্যারি বুঝতে পারল সে কিছু একটা সন্দেহ করতে চাচ্ছে। তাহলে বলতে চাচ্ছেন আপনি এই হ্যালোর অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন?

জেনোফিলিয়াস ভুরু তুলে তাকালেন।

হ্যাঁ, অবশ্যই।

 কিন্তু, হারমিয়ন বলল। হ্যারি বুঝতে পারল হারমিয়নের ধৈর্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে। মি. লাভগুড, আপনি কী করে এই বিষয়টিতে বিশ্বাস করতে পারেন-

লুনা আমাকে তোমাদের সম্পর্কে সব কথাই বলেছে বালিকা, জেনোফি লিয়াস বললেন। আমি মনে করি তোমরা কেউ নির্বোধ নও। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সীমাবদ্ধ। অনেকটা নেতিবাচক ধরনের।

হয়তো তুমি একবার হ্যাটটি পরে দেখলে পারতে হারমিয়ন,রন বলল। সে অদ্ভুত দেখতে হেডড্রেসটির দিকে ইঙ্গিত করল। সে হাসি চলে না আসার জন্য জোর করে চেপে রাখল।

মি. লাভগুড, আবার বলতে শুরু করল। আমরা সবাই জানি যে অদৃশ্য হওয়ার আলখাল্লা পৃথিবীতে আছে। সংখ্যায় খুব কম, কিন্তু এ জিনিসের অস্তিত্ব আছে। কিন্তু,

আহ্ কিন্তু তৃতীয় হ্যালোস হচ্ছে সত্যিকারের অদৃশ্য হওয়ার আলখাল্লা। মিস গ্র্যানজার! আমি বলতে চাচ্ছি এটি কোনো ভ্রমণ করার আলখাল্লা নয়, এটি সিইলসন চার্মের সঙ্গে মানানসই এবং, এবং বেডাজিলিং হেক্স বহন করতে পারে। এটি ডেমিগাইস চুল দিয়ে সেলাই করা। যার ফলে এটি একজন মানুষকে পুরোপুরি লুকিয়ে ফেলতে পারে এবং বছরের পর বছর ধরে অদৃশ্য থাকতে পারে অন্ধকার না আসা পর্যন্ত। আমরা এমন একটি আলখাল্লার কথা বলছি যেটি প্রকৃতপক্ষে এবং সত্যিকার অর্থে গায়ে জড়ানো লোকটিকে পুরোপুরি অদৃশ্য করে রাখতে পারে। এবং যে কোনো ধরণের চার্মই ব্যবহার করা হোক না কেন এই আলখাল্লা চিরকাল সব সময়ের জন্য অভেদ্য হয়ে থাকতে পারে। এমন কয়টি আলখাল্লা তুমি জীবনে দেখেছ মিস গ্রেনজার?

হারমিয়ন উত্তর দেয়ার জন্য মুখ হা করে আবার বন্ধ করল। ওকে চরমভাবে কনফিউজ মনে হল। হারমিয়ন, রন এবং হ্যারি একে অন্যের দিকে তাকালো। হ্যারি জানে যে ওরা তিনজনই একই কথা চিন্তা করছে। এমনও কি হতে পারে যে জেনোফিলিয়াস যে আলখাল্লার কথা বলছেন এই মুহূর্তে তাদের সঙ্গে, এই রুমের ভেতরই তেমন একটি আলখাল্লা রয়েছে।

ঠিক, জেনোফিলিয়াস বললেন। যেন ওদের কথাকে অস্বীকার করলেন। তোমাদের কেউ কখনো সে জিনিস দেখোনি। জিনিসটি ব্যবহারকারী অসম্ভব দামী জিনিস পেয়েছিল, তাই না?

তিনি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন। আকাশ এখন গোলাপী হয়ে এসেছে।

ঠিকাছে, হারমিয়ন অস্বস্তি নিয়ে বলল। ধরে নিলাম আলখাল্লাটি আছে…এবার বলেন পাথরের বিষয়টি কি মি. লাভগুড? যে জিনিসটিকে আপনি পুনরাবির্ভাব করাতে পারেন বলছেন।

সেটা সম্পর্কে কি জানতে চাও?

 সেটা কীভাবে সত্যি হতে পারে?

তা যে নয় সেটা কী করে প্রমাণ করবে? জেনোফিলিয়াস বললেন।

 হারমিয়নকে ভীষণ ক্ষুব্ধ দেখা গেল।

কিন্তু সেটা…আমি দুঃখিত সেটা পুরোপুরি একটি হাস্যকর বিষয়। আমি কী করে প্রমাণ করব যে সেটি নেই? আপনি কী আশা করেন যে আমরা দুনিয়ার সব পাথর খুটে খুটে পরিক্ষা করব? আমি বলতে চাচ্ছি কোনো কিছু কেউ প্রমাণ করতে না পারলে কী আপনি বলবেন যে সেটির অস্তিত্ব আছে?

হ্যাঁ, তোমরা পারো, জেনোফিলিয়াস বললেন। দেখে ভাল লাগছে যে তোমরা এখন একটু একটু খোলাসা হতে শুরু করেছ এবং বুঝতে পারছো।

তাহলে সবচেয়ে বড় ভাইয়ের যাদুদণ্ড, হ্যারি বলল হারমিয়ন কিছু বলার আগেই। আপনি মনে করেন যে সেটির অস্তিত্ব আছে?

ওয়েল এ ব্যাপারে অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে, জেনোফিলিয়াস বললেন। বড় ভাইয়ের যাদুদণ্ডটি একটি হ্যালোস তার সন্ধান পাওয়া গেছে। কারণ সেই যাদুদণ্ডটি এজনের হাত থেকে অন্য জনের হাতে গিয়েছে।

সেটি কী হয়েছে? হ্যারি জানতে চাইল। সেই যাদুদণ্ডটির বেলায় একজন মালিকের কাছ থেকে অন্য মালিক ক্যাপচার করেছে। জেনোফিলিয়াস বললেন। তোমরা নিশ্চয়ই শুনেছ যে কীভাবে যাদুদণ্ডটি এমেরিক দ্য এভিলের হত্যার পর এজবার্ট দ্য এগ্রেজিয়াসের হাতে এসেছে? কীভাবে গোডেলট তার নিজের স্টোররুমে মরে পড়েছিলেন তার ছেলে হেয়ারওয়ার্ড তার কাছ থেকে যাদুদণ্ডটি নেয়ার পর? তারপর ভয়ানক লোক্সিয়াস যাদুদণ্ডটি আয়ত্ত করে বারনাভাস ডেভেরিলের কাছ থেকে। তাকে সে হত্যা করে? এই যাদুদণ্ড ঘিরে রক্তপাতের ধারাবাহিকতা ইতিহাসের পাতা জুড়ে রয়েছে।

হ্যারি হারমিয়নের দিকে তাকালো। সে জেনোফিলিয়াস এর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সে তার সঙ্গে তর্কে যাচ্ছে না।

রন বলল, তাহলে যাদুদণ্ডটি এখন কোথায় আছে বলে আপনি মনে করেন?

হায় হায়! তা কে জানে! জেনোফিলিয়াস বললেন। তিনি আবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন। কে জানে এখন যাদুদণ্ডটি কোথায় লুকানো আছে?

আরকুস এবং লিভিয়াসের পর ধারাটি ফিকে হয়ে এসেছে। কে জানে তাদের মধ্যে কে লোক্সিয়াসকে পরাস্থ করেছিল, এবং যাদুদণ্ডটি নিয়ে নিয়েছে? কে বলতে পারে যে তাদেরকে আবার কে হারিয়ে সেটি নিয়ে গেছে? হায় হায়! ইতিহাস আমাদের তা বলেনি।

সবাই কিছুক্ষণ নিরব রইল। তারপর হারমিয়ন জিজ্ঞেস করল, মি, লাভগুড, পেভেরেল পরিবার কি এই ডেথলি হ্যালোসের ব্যাপারে কোনো সাহায্য করতে পারবে?

জেনোফিলিয়াস মনে হল অতীতে চলে গেলেন। হ্যারির মনে কিছু একটা স্মৃতি জেগে উঠছে। কিন্তু সেটা কি তা ধরতে পারছে না। পেভেরেল….নামটি সে আগে কোথাও শুনেছে বলে মনে হচ্ছে…

কিন্তু তুমি তো আমাকে ভুল বোঝাচ্ছ ইয়ং লেডি! জেনোফিলিয়াস বললেন। এবার তিনি চেয়ারে সোজা হয়ে বসলেন এবং বড়বড় চোখ করে হারমিয়নের দিকে তাকালেন, আমি ভেবেছিলাম তুমি হ্যালোস সম্পর্কে নতুন অনুসন্ধান করছ। আমাদের মধ্যে যারা হ্যালোস সম্পর্কে অনুসন্ধান করে করে তারা বিশ্বাস করে যে পেতেরেলরা সব কিছু জানে–হ্যালোস দিয়ে কী করতে হয়?

এই পেভরেলরা কারা? রন জানতে চাইল।

এই নামটি গোড্রিচ হলোতে কবরের উপর খোদাই করে লেখা, হারমিয়ন বলল। সে জেনোফিলিয়াসকে লক্ষ করছে। ইগনোটাস পেভেরেল।

ঠিক!, জেনোফিলিয়াস বললেন। তিনি উদ্বেগের সঙ্গে আঙুল উঁচু করলেন, ইগনোটাস পেভেরেলের কবরের উপর চিহ্নটি হচ্ছে খাটি প্রমাণ।

কিসের প্রমাণ? রন জানতে চাইল।

কেন, ওই গল্পের তিন ভাইয়ের কাহিনী হল পেভেরাসদের তিন ভাইয়ের কাহিনী। অ্যানটিওস, ক্যাডেমুস এবং ইগনোটাস! ওরাই ছিল হ্যালোসের আসল মালিক!

তিনি জানালার দিকে আরো একবার তাকিয়ে তারপর উঠে দাঁড়ালেন। ট্রে টা হাতে তুলে নিয়ে পেচানো সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলেন।

নিচের তলায় যেতে যেতে তিনি বললেন, তোমরা কি ডিনার পর্যন্ত থাকবে? এখানে এলে সবাই আমাদের ফেসওয়াটার প্লিমফাই স্যুপের রেসিপির জন্য অনুরোধ করে।

রন নিচু স্বরে বলল, সম্ভবত সেন্ট মুঙ্গসের পয়জন ডিপার্টমেন্টকে দেখানোর জন্য।

জেনোফিলিয়াস লাভগুডের কিচেন পর্যন্ত যাওয়ার শব্দ না পাওয়া পর্যন্ত হ্যারি অপেক্ষা করলো।

তারপর হারমিয়নকে বলল, কী মনে হচ্ছে?

ওহ হ্যারি, হারমিয়ন ক্লান্তির সঙ্গে বলল। রাবিশ ছাড়া আর কিছুই না! এটা চিহ্নটির প্রকৃত অর্থ হতে পারে না। এটা অবশ্যই তার অদ্ভুত খেয়াল। একেবারে সময় নষ্ট হল। রন বলল, আমি মনে করি এই লোকটি আমাদের ক্রাম্পল শিং স্নোরক্র্যাক এনে দিয়েছেন।

হ্যারি তাকে জিজ্ঞেস করল, তুমিও তাহলে বিশ্বাস করো না?

নাহ্, এই কাহিনী হল ছোট বাচ্চাদের আদর্শ শিক্ষা দেয়ার গল্পের জন্য প্রযোজ্য, তাই না? সমস্যা দেখলে সেদিকে যেওনা, ঝামেলায় জড়িও না। কোনো জিনিস অস্বাভাবিক দেখলে এড়িয়ে চলো! শুধু তোমার মাথাটি নত করে রাখে এবং নিজের কাজে মন দাও! তাতেই সব ঠিক হবে।  বিষয়টি চিন্তা করে দেখ। রন বলল। হয়তো বা এই কাহিনী কেন বেশি পুরানো যাদুদণ্ড দুর্ভাগ্যবান সে কারণে।

তুমি এসব কী বলছ?

এটি তো সেইসব কল্পকাহিনীর একটা, তাই না? মে বর্ন উইচেস উইল ম্যারি মাগল-বর্ন, জিঙ্কস বাই টুইলাইট আন্ডার বাই মিডনাইট,, ওল্ড অব এল্ডার নেভার প্রোসপার।এসব তো নিশ্চয়ই শুনেছ। আমার মা এগুলো খুব জানেন।

হারমিয়ন অন্য দুজনের উদ্দেশে বলল, হ্যারি এবং আমি দুজনই মাগল পরিবারে বড় হয়েছি। আমরা অন্য ধরণের কল্পকাহিনী শুনেছি এবং পড়েছি। রান্না ঘরের থেকে সুস্বাদু ঘ্রাণ আসায় হারমিয়ন লম্বা করে দম নিল। জেনোফিলিয়াসের সঙ্গে বিতণ্ডা হওয়ার একটি ভাল দিকে হল, হারমিয়ন ভুলে গেছে যে সে রনের উপর ক্রুদ্ধ। আমি মনে করি তোমার ধারণা ঠিক।সে রনকে বলল। এগুলো হল শুধু আদর্শ শিক্ষা। এতে শিক্ষা দেয়া হয় কোনটা ভাল, কোনটা তোমার করা উচিত।

এরপর তিনজনই একসঙ্গে কথা বলে উঠল। রন বলল, যাদুদণ্ডটি, হারমিয়ন বলল, আলখাল্লাটি আর হ্যারি বলল, পাথরটি।

ওরা একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকালো। কিছুটা বিস্মিত হল, কিছুটা উপভোগ করল।

রন হারমিয়নকে বলল, তুমি আলখাল্লাটির কথা বলতে চাচ্ছিলে। কিন্তু তোমার যদি যাদুদণ্ডটি থাকে তাহলে তো আলখাল্লার দরকার নেই। একটি অপরাজেয় যাদুদণ্ড। বুঝেছ হারমিয়ন!

হ্যারি বলল, আমাদের কাছে ইতিমধ্যেই একটি অদৃশ্য আলখাল্লা আছে।

হারমিয়ন বলল, তুমি লক্ষ করেছ কি না জানি না, এটি ইতিমধ্যেই আমাদেরকে অনেক সাহায্য করেছে। আর যাদুদণ্ডটির প্রয়োজন হবে কাউকে আক্রমণ করার।

রন বাধা দিয়ে বলল, যদি তুমি চিৎকার করে বলো। যদি নির্বোধের মত নাচতে নাচতে যাদুদণ্ডটি তুলে গান করতে থাকো আমার যাদুদণ্ডটি অপরাজেয়, শক্তি পরিক্ষা করতে হলে চলে আসো যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমার মুখ বন্ধ রাখবে-

হা, কিন্তু দয়া করে তুমি তোমার মুখটি বন্ধ করবে? হারমিয়ন বলল। তাকে সন্দিহান দেখা গেল। জানো, একমাত্র সত্যি কথা তিনি আমাদের বলেছেন তা হল, ওই যাদুদণ্ডটির শতশত বছর ধরে অসাধারণ ক্ষমতার কাহিনী।

সত্যিই আছে? হ্যারি জিজ্ঞেস করল।

হারমিয়নকে রাগান্বিত মনে হল: তার এই ভাবটি ওরা এত পছন্দ করে যে হ্যারি এবং রন দুজন দুজনের দিকে চেয়ে হাসল।

যেসব ডার্ক উইজার্ডরা যাদুদণ্ড শতশত বছর ধরে দখল করেছে তারা দম্ভের সঙ্গে এটিকে ডেথস্টিক, ভাগ্যের যাদুদণ্ড এসব নাম দিয়েছে। প্রফেসর বিন এসব কিছু নামের কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু এ সবই অর্থহীন। যাদুদণ্ডের ক্ষমতা নির্ভর করে যাদুদণ্ড ব্যবহারকারী উইজার্ডের ক্ষমতার ওপর। অনেক উইজার্ড আছে যারা মিছেমিছি নিজেদের যাদুদণ্ড নিয়ে গর্ব করে বলে তারটা বড় এবং অন্যেরটার চেয়ে ভালো।

হ্যারি বলল, কিন্তু সেটা তুমি জানো কী করে যে ওই যাদুদণ্ডগুলো ডেথস্টিক এবং ভাগ্যের যাদুদণ্ড একই যাদুদণ্ড নয়? শতশত বছর ধরে হয়তো উপরে উপরে নাম ভিন্ন হয়েছে?

রন বলল, এবং ওই এলকার যাদুদণ্ড কি ডেথের বানানো?

হ্যারি হাসল। এই অদ্ভুত ধারণা তার কাছে হাস্যকর বলে মনে হল। সে নিজে নিজে ভাবল, তার যাদুদণ্ডটি ছিল হলি, এলডার নয়। অলিভ্যান্ডার এটি বানিয়েছিলেন। ভোল্ডেমর্ট আকাশে তার পিছু নিলে এই যাদুদণ্ডটি ভীষণ কাজে দিয়েছিল। এবং যদি এটি অপরাজেয় হতো তাহলে তা ভেঙে যেতো না।

রন বলল, তুমি পাথরটির কথা বলছিলে কেন?

ওয়েল, যদি এটি সত্যিই মানুষকে ফিরিয়ে আনতে পারতো তাহলে আমরা অনেককেই কাছে পেতাম, সিরিয়স, ম্যাডআই,..ডাম্বলডোর..আমার বাবা-মা…

রন এবং হারমিয়নের কেউ তার কথায় হাসল না

কিন্তু বিডল অব দ্য বার্ডের মতে তারা ফিরে আসতে চায় না, তাই না? হ্যারি বলল। সে এই কিছুক্ষণ আগে শোনা কাহিনীর কথা চিন্তা করল। আমি মনে করি না যে ওই কাহিনীর মত পাথর মৃতদেরকে ফিরিয়ে আনতে পারে। পারে কি? সে হারমিয়নের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল।

না, হারমিয়ন দুঃখের সঙ্গে উত্তর দিল। আমার মনে হয় না মি. লাভগুড ছাড়া অন্য কেউ বাচ্চাদের মত এ সম্ভাবনার কথা চিন্তা করবে। বিডল সম্ভবত এই ধারণাটি নিয়েছে দার্শনিকদের পাথরের থেকে; অমর করার পাথরের বদলে জীবন। ফিরিয়ে আনার পাথর।

কিচেনের থেকে আসা গন্ধ আরো তীব্র হয়ে উঠছে। মনে হল যেন আন্ডারপ্যান্ট পোড়ার গন্ধ। হ্যারি ভাবল জেনোফিলিয়াস যা রান্না করছে তা কি খাওয়া যাবে?

রন ধীরে ধীরে বলল, তাহলে আলখাল্লার বিষয়টি কি, তুমি কি বুঝতে পারছ না যে তার কথাটি ঠিক? আমি হ্যারির অদৃশ্য আলখাল্লাটি ব্যবহার করেছি। সেটি যে কত ভাল তা এক মুহূর্তের জন্যও খোলার নয়। হ্যারিরটার মত আর কারোটার কথা কখনো শুনিনাই। একেবারে নির্ভুল। আমরা কখনো এটার ভেতর থেকে ধরা পড়িনি

অবশ্যই না-এটির ভেতরে থাকলে আমরা সব সময় অদৃশ্য ছিলাম রন!

হ্যাঁ, ঠিক আছে, কিন্তু রন, পাথরটি….।

ওরা দুজন যখন কথা বলছে তখন হ্যারি রুমটির চারদিকে ঘুরছে। রন এবং হারমিয়নের কথা আধাআধি শুনতে পাচ্ছে। সে পেঁচানো সিঁড়িটির কাছে গেল এবং মনের অজান্তেই উপরের তলার দিকে তাকালো এবং সঙ্গে সঙ্গে সচেতন হয়ে উঠল। তার নিজেরই একটি মুখ উপরের তলার সিলিং থেকে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

বিস্ময়ের ঘোর কেটে গেলেই সে বুঝতে পারল যে এটি কোনো আয়না নয়, একটি পেইন্টিং। উৎসুক হয়ে হ্যারি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকল। হ্যারি! তুমি কী করছ, তার অবর্তমানে কিছু দেখা উচিত না!

কিন্তু হ্যারি ততক্ষণে উপরের তলায় উঠে গেছে।

লুনা ওর বেডরুমটি সুন্দর সুন্দর মুখচ্ছবি দিয়ে সাজিয়েছে। মুখগুলো হল হ্যারি, রন, হারমিয়ন, জিনি এবং নেভিলের। হোগার্টসের ছবির মত তারা সচল নয়। কিন্তু একটি চমৎকার ম্যাজিক আছে : হ্যারি চিন্তা করল ওরা শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে। ছবির ভেতরে সুন্দর সোনালী চেইন দিয়ে বুনানো। সবগুলো ছবিকে একটির সঙ্গে আরেকটির সংযোগ করা। কিন্তু মিনিটখানেক গভীরভাবে পরখ করে সে বুঝল চেইনটি আসলে একটি শব্দ সোনালী কালি দিয়ে অসংখ্যবার লেখা…. ফ্রেন্ডস…ফ্রেন্ডস….. ফ্রেন্ডস….ফ্রেন্ডস…

হ্যারি লুনার জন্য বিশেষ টান অনুভব হল। সে রুমটির চারদিকে তাকিয়ে দেখল। বিছানার কাছে একটি বড় ফটোগ্রাফ। অল্প বয়সের লুনা এবং তার মত চেহারার একজন মহিলার ছবি। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। হ্যারি দেখল লুনাকে ছবিতে আরো অধিক প্রাণবন্ত দেখা যাচ্ছে। এত বেশি প্রাণবন্ত তাকে সে কখনোই দেখেনি। ছবিটির উপর ধুলা জমে আছে। বিষয়টি হ্যারির কাছে অস্বাভাবিক বলে মনে হল। সে আবারো চারদিকে ঘুরে দেখল।

কিছু একটা গোলমাল আছে। হালকা নিল রঙের কার্পেটটির উপর পুরু ধুলার আস্তর পড়েছে। ওয়্যারড্রোবে কোনো জামাকাপড় নেই। ওয়্যারড্রোবের কপাট খোলা। বিছানাটি যেন শীতল কেমন অব্যবহৃত দেখা যাচ্ছে। মনে হয় যেন বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে বেডটি কেউ ব্যবহার করেনি। কাছের জানালায় একটি মাকড়শার জাল দেখা যাচ্ছে।

কী সমস্যা? হ্যারি নিচে নেমে আসতেই হারমিয়ন জানতে চাইল। কিন্তু সে উত্তর দেয়ার আগেই কিচেন থেকে জেনোফিলিয়াস উপরে উঠে এল। হাতে একটি ট্রে ধরে আছেন, ট্রেতে অনেকগুলো বাটি।

হ্যারি বলল, মি. লাভগুড, লুনা কোথায়?

কি বললে?

 লুনা কোথায়?

জেনোফিলিয়াস সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এসেই দাঁড়িয়ে গেলেন, আমি…আমি তোমাকে আগেই বলেছি, সে বটম ব্রিজের কাছে আছে। প্লিমপাইসের জন্য মাছ ধরছে।

তাহলে কেন আপনি যে ট্রেতে চারজনের জন্য খাবার এনেছেন?

জেনোফিলিয়াস কথা বলতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু তার মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হল না। শুধুমাত্র প্রেসের একঘেয়ে ঘরঘর শব্দ শোনা যাচ্ছে। এবং জোনোফি লিয়াসের হাত কাঁপার কারণে ট্রে থেকে টুনটুন শব্দ হচ্ছে।

হ্যারি বলল, আমার ধারণা লুনা বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে এখানে নেই। তার কাপড়গুলো উধাও, তার বিছানায় কেউ ঘুমায়নি। সে কোথায়? এবং আপনি কেন বারবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকাচ্ছেন?

জেনোফিলিয়াস হাত থেকে ট্রেটি ফেলে দিলেন। বাটিগুলো নিচে পড়ে সব ভেঙে টুকরোটুকরো হয়ে গেল। হ্যারি, রন এবং হারমিয়ন মুহূর্তের ভেতর ওদের যাদুদণ্ড বের করে তাক করল। জেনোফিলিয়াস পাথরের মত স্থির হয়ে গেলেন। তার হাতটি তিনি শুধু পকেটের কাছ পর্যন্ত নিতে পেরেছেন। ঠিক তখনই প্রেসে প্রচণ্ড শব্দ করে ময়লা চাদরটির নিচ থেকে অসংখ্য কুইবলার স্রোতের মত বের হতে থাকল। মেঝে ভরে উঠল। কিছুক্ষণের ভেতর প্রেস থেমে গেল।

হারমিয়ন নিচু হয়ে এক কপি কুইবলার হাতে তুলে নিল। কিন্তু তার যাদুদণ্ড মি. লাভগুডের দিকে তাক করা রইল।

হ্যারি, এটি দেখ।

কুইবলারের প্রথম পাতায় হ্যারির ছবি, তার সঙ্গে লেখা, অনাকাঙ্খিত নাম্বার ওয়ান। এবং পুরুস্কারের টাকা।

হ্যারি জানতে চাইল, কুইবলার তাহলে নতুন চেহারা নিয়ে বের হচ্ছে? হ্যারির ভেতর দ্রুত চিন্তা চলছে। এই কাজটিই তাহলে আপনি করলেন গার্ডেনে গিয়ে মি. লাভগুড? একটি পেঁচাকে পাঠিয়ে দিলেন মিনিস্ট্রিতে খবর দিয়ে?

জেনোফিলিয়াস জিহ্বা বের করে ঠোঁট চাটলেন।

ওরা আমার লুনাকে নিয়ে গেছে। তিনি ফিসফিস করে বললেন। সে কারণেই আমি এমনটি করছি। ওরা লুনাকে নিয়ে গেছে এবং আমি জানি না সে এখন কোথায়। ওরা তাকে কি করেছে। কিন্তু ওরা হয়তো তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেবে….যদি আমি…আমি..

হ্যারিকে ধরিয়ে দিতে পারি, হারমিয়ন তার বাক্যের শেষ অংশটি পুরণ করে দিল।

আর কোনো কথা নয়, রন বলল। পথ ছেড়ে সরে যান, আমরা এখন চলে যাচ্ছি।

জেনোফিলিয়াস ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকালেন। তার মুখটা আবার যেন লালায়িত হয়ে উঠেছে।

যে কোনো সময় ওরা চলে আসবে। আমার লুনাকে রক্ষা করতে হবে। আমি লুনাকে হারাতে পারি না। অবশ্যই তোমরা এখান থেকে যাচ্ছ না।

তিনি হাত প্রসারিত করে সিঁড়ি আগলে দাঁড়ালেন। হ্যারির মনে পড়ল তার মাও এরকম করে দাঁড়িয়েছিলেন তাকে রক্ষা করতে।

আপনাকে আঘাত করতে আমাদের বাধ্য করবেন না, হ্যারি বলল। পথ থেকে সরে যান!

হ্যারি! হারমিয়ন চিৎকার করে উঠল।

জানালার পাশ দিয়ে ব্রুমস্টিকে একটি শরীর চলে গেল। ওরা যখন তার দিক থেকে সেদিকে তাকালো তখনই বুঝতে পারল যে ওরা ভুলটা করে বসেছে। হ্যারি লাফ দিয়ে রন এবং হারমিয়নকে সরিয়ে দিল। মুহূর্তের ভেতর জেনোফিলিয়াসের ছুঁড়ে দেয়া কার্স গিয়ে দেয়ালে এরুমপেন্ট হর্ন এর উপর পড়ল।

ব্যস! একটি বিস্ফোরণের আওয়াজ উঠল। এর শব্দ থেকে বোঝা গেল যে রুমটিকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলা হয়েছে। ঘরের ভেতর ভাঙা কাঠ, কাগজ উড়তে থাকল। ঘরের ভেতর অভেদ্য মেঘের মত হয়ে গেল। হ্যারি শুন্যে উঠে গেল এবং ফ্লোরের উপর আছড়ে পড়ল। ওর গায়ের উপর ভাঙা জিনিসপত্রের স্তূপ পড়ায় কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। সে হারমিয়নের চিৎকার শুনতে পেল, রনের উচ্চস্বরে আওয়াজ শুনতে পেল। সঙ্গে কিছু ধাপধুপ শব্দ হল যা থেকে হ্যারি অনুমান করল যে সিঁড়ি থেকে জেনোফিলিয়াস উড়ে গিয়ে নিচে পড়েছেন।

হ্যারি রাবিশের নিচে পড়েছে। নিজেকে তুলতে চেষ্টা করল। সে ধুলোর কারণে দম নিতে বা চেয়ে দেখতে পারছে না। অর্ধেক সিলিং ভেঙে পড়েছে, লুনার বেডটি কোনো রকমে ঝুলছে। হ্যারি দেখল রেওয়ানা র‍্যাভেনক্লোর সেই মাথাটি তার পাশে পড়ে আছে। তার অর্ধেক উড়ে গেছে। ছেঁড়া খাতার টুকরোটুকরো কাগজগুলো উড়ছে। প্রিন্টিং প্রেসের অধিক অংশই হ্যারির পাশে সিঁড়িতে পড়ে আছে। এরপর হ্যারির কাছেই একটি শরীর নড়ে উঠল। হারমিয়ন, সারা শরীরে ধুলোয় যেন দ্বিতীয় একটি মুর্তি দেখা যাচ্ছে। সে নিরবে আঙুল তুলে নিজের ঠোঁটের কাছে ধরল।

নিচে দরাম করে দরোজা খুলে যাওয়ার শব্দ হল।

আমি তোমাকে বলেছি না ট্রাভার্স, যে তাড়াহুড়া করার কোনো দরকার নেই! একটি কর্কশ গলা বলল। আমি তোমাকে বলেছিলাম না এই পাগল বরাবরের মত আমাদের খামোখা খাটাচ্ছে।

একটি শব্দ হল এবং সঙ্গে সঙ্গে জেনোফিলিয়াসের গলা থেকে যন্ত্রণার চিৎকারের আওয়াজ আসল।

….না…উপরেরর তলায়…. হ্যারি পটার!

আমি তোমাকে বলেছি না লাভগুড যে আমরা সঠিক ইনফরমেশন না পেলে আর আসব না! গত সপ্তাহের কথা মনে করে দেখ যখন তুমি তোমার মেয়েকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে ওই স্টুপিড হেড ড্রেসটির পরিবর্তে, তখন তোমাকে বলেছিলাম না? এবং এক সপ্তাহ আগে- আবার শব্দ হল তুমি যখন ভেবেছিলে, আবার শব্দ স্নোরক্যাক? আবার শব্দ

না!…না!….আমাকে ক্ষমা করো! কাঁদতে কাঁদতে জেনোফিলিয়াস বললেন। সত্যিই এখানে পটার আছে, সত্যি!

এখন প্রমাণ হয়েছে যে তুমি আমাদেরকে ডেকে এনে থোকা দেয়ার চেষ্টা করছ! গর্জন করে উঠল ডেথ-ইটার। আবার শব্দ হল এবং কিছু ভেঙে যাওয়ার মত শব্দ হল। জেনোফিলিয়াস যন্ত্রণায় ডুকরে কাঁদলেন।

জায়গাটি দেখে মনে হচ্ছে ভেতরে ভেঙে-চূড়ে গেছে সেলুইন, অন্য একটি গলা বলল। তার কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয়ে উপরে এল।

সিঁড়ির পথ তো পুরোপুরি বন্ধ। এটি পরিস্কারের চেষ্টা করা যেতে পারে?

তুমি মিথ্যা কথা বলছ শয়তান! চিৎকার করে সেলুইন নামের উইজার্ডটি বলল। তুমি জীবনে কখনো পটারকে চোখে দেখনি! দেখেছ? চিন্তা করেছ আমাদেরকে এখানে এনে হত্যা করবে, তাই না? চিন্তা করেছ যে এভাবেই নিজের মেয়েকে ফিরে পাবে!

আমি কসম খেয়ে বলছি…কসম খেয়ে বলছি.:. হ্যারিপটার উপরে!

হেমেল্যুম রিভেলিও! নিচ থেকে একটি কণ্ঠ বলল।

হ্যারি শুনতে পেল হারমিয়ন জোরে জোরে দম নিচ্ছে। এবং নিজের ভেতরও এমন একটি অনুভব হল যেন ভেতর থেকে কিছু একটা টেনে বের হচ্ছে। হ্যারির শরীরটাও উঠতে থাকল সেই ছায়ার ভেতরে।

কেউ উপরে আছে সেলুইন! দ্বিতীয় কণ্ঠ তীব্র কণ্ঠে বলল।

ওটাই পটার!, আমি তোমাদের বলছি পটার! জেনোফিলিয়াস কাঁদতে কাঁদতে বলল। প্লিজ… প্লিজ… লুনাকে ফিরিয়ে দাও! আমার লুনাকে ফিরিয়ে দাও…

তুমি তোমার ছোট মেয়েটিকে ফিরে পেতে পারো লাভগুড সেলুইন বলল। যদি তুমি উপরে উঠে যেতে পারো এবং হ্যারি পটারকে নিচে নামিয়ে আনতে পারো!। কিন্তু যদি কোনো কৌশল কর, যদি ষড়যন্ত্র হয়, যদি আমাদের বিরুদ্ধে উপরে কোনো ওৎ পেতে রাখার ব্যবস্থা করে রেখে থাকো তাহলে তোমাকে কবর দেয়ার জন্য মেয়েটি থাকবে কিনা আমরা দেখব।

জেনোফিলিয়াস ভয়ে এবং হতাশ হয়ে আর্তনাদ করে উঠলেন। জেনোফি লিয়াস মচমচ শব্দ করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে চেষ্টা করলেন রাবিশের উপর দিয়ে।

 দ্রুত দ্রুত! হ্যারি ফিসফিস করে বলল। আমাদের এখান থেকে পালাতে হবে।

সে অন্যসব শব্দ ও হৈ চৈ-এর মধ্যে নিজেকে রাবিশ থেকে মুক্ত করতে চেষ্টা করল। জেনোফিলিয়াস উপরে উঠে আসছেন। রন আরো নিচে পড়ে গেছে। হার মিয়ন এবং হ্যারি যতটা সম্ভব শব্দ না করে ওদের উপরে থাকা স্তূপের উপরে উঠল। রনের পায়ের উপরে একটি ভারী ড্রয়ার পড়েছে। জেনোফিলিয়াস মচমচ শব্দ করে আরো কাছে চলে আসছেন। হারমিয়ন কোনোক্ৰমে একটি হোবার চার্ম ব্যবহার করে রনকে ছাড়িয়ে ফেলল।

ঠিক আছে, হারমিয়ন হাপাতে হাপাতে বলল। ভাঙা প্রিন্টিং প্রেসটি এবার নড়ছে। জেনোফিলিয়াস মাত্র ফুট খানেক দূরে আছে। হারমিয়ন এখনো ধুলায় সাদা হয়ে আছে। বলল, আমার উপর ভরসা আছে হ্যারি?

হ্যারি মাথা নাড়ল।

তাহলে ওকে, হারমিয়ন ফিসফিস করে বলল। অদৃশ্য আলখাল্লাটি দাও। রন, তুমি এর ভেতরে প্রবেশ কর।

আমি? কিন্তু হ্যারি-।

প্লিজ রন! হ্যারি আমার হাতটি শক্ত করে ধর, রন, আমার কাঁধ ধরে গায়ের জোরে টান দাও!

হ্যারি বাঁ হাত বের করল। রন আলখাল্লার নিচে অদৃশ্য হয়ে গেল। প্রিন্টিং প্রেসটি যে ওদের এবং সিঁড়ির মাঝখানে আছে সেটি কাঁপতে শুরু করেছে। জেনোফিলিয়াস একটি হোবার চার্ম ব্যবহার করে সেটিকে সরানোর চেষ্টা করছে। হ্যারি বুঝতে পারল না হারমিয়ন কেন অপেক্ষা করছে।

শক্ত করে ধর…শক্ত করে ধর..এক দুই সেকেন্ড…

সাইডবার্ডের উপর দিয়ে জেনোফিলিয়াসের সাদা মুখটি দেখা গেল।

অবলিভিয়েট! হারমিয়ন চিৎকার করে উঠল। প্রথমে ওর যাদুদণ্ডটি তার মুখের দিকে ধরে। এরপরই নিচের দিকে তাক করে বলল, ডেপ্রিমো!

সে সিটিং রুমের ফ্লোরের ভেতর দিয়ে একটি ছিদ্র করে ফেলেছে। ওরা বোল্ডারের মত সেখান দিয়ে পড়ল। হ্যারি প্রিয় জীবনের জন্য হারমিয়নের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। চিৎকারের শব্দ পাওয়া গেল। হ্যারি চোখের কোন দিয়ে দেখল দুজন অনেক পরিমান ফার্নিচার, রাবিশের ভেতর থেকে বের হতে চেষ্টা করছে। হারমিয়ন শুন্যে লাফিয়ে পড়ল। ধ্বংস হতে থাকা বাড়িটার থেকে হ্যারি কানে শব্দ এসে বাড়ি খেল। হারমিয়ন তাকে টেনে অন্ধকারের ভেতর নিয়ে গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *