১৯. দ্য সিলভার ডো

১৯. দ্য সিলভার ডো

মধ্যরাতে হারমিয়ন যখন পাহারায় গেল তখন চারদিকে তুষার পড়ছে। হ্যারির স্বপ্নগুলো সব যেন কেমন এলোমেলা এবং বিরক্তিকরও : নাগিনী ওদেরকে প্রথমে একটি খোলা বিশাল রিঙের ভেতর এবং পরে একটি গোলাপ ফুলের মালার ভেতর দিয়ে দিচ্ছে আবার বের করছে। হ্যারি কয়েকবার ধড়ফড় করে উঠে বসেছে। মনে হয়েছে কে যেন দূর থেকে ওকে শাসাচ্ছে। কল্পনা করেছে যে তাবুর চারপাশে বাতাসের শব্দের ভেতর কারো পায়ের আওয়াজ এবং কথা বলার শব্দ শোনা যাচ্ছে।

অবশেষে অন্ধকার থাকতেই সে জেগে উঠে হারমিনের সঙ্গে যোগ দিল। হারমিয়ন জড়োসড়ো হয়ে বসে যাদুদণ্ডের আলোর সাহায্যে এ হিস্ট্রি অব মাগল বইটি পড়ছে। তখনো ঘন তুষারপাত হচ্ছে। সে হ্যারির প্রস্তাবে সম্মত হল এবং স্বস্তি বোধ করল যে ওখান থেকে ওরা সবকিছু গুটিয়ে অন্যত্র চলে যাবে।

আমরা আরো বেশি নিরাপদ কোনো জায়গায় যাবো, হারমিয়ন সম্মতি দিয়ে বলল। সে শীতে কাঁপছে। তার পায়জামার উপর সে শুধু একটি সোয়েটার পরে আছে। আমি সারাক্ষণ চিন্তা করছিলাম যে কারো চলাফেরার শব্দ পাচ্ছি। এমনকি মনে হল আমি কাউকে একবার বা দুবার দেখলামও।

হ্যারি চুপ করে রইল। সে একটি জাম্পার টেনে নিল। এবং টেবিলের উপর নিরব, স্থির হয়ে থাকা ক্লিকোস্কোপের দিকে তাকালো।

আমি নিশ্চিত যে আমি এটি কল্পনা করেছি, হারমিয়ন বলল। তাকে অনেকটা নার্ভাস দেখাচ্ছে। অন্ধকারের ভেতর বরফ তোমার চোখের সঙ্গে নানা ধরণের খেলা করে থাকে…কি যাই হোক আমাদের উচিত হবে অদৃশ্য হওয়ার আলখাল্লার নিচে ডিসপারেট করা, যে কোনো ঝুঁকি এড়াতে।

আধা ঘণ্টার মধ্যেই ওরা তার পুরোপুরি গুটিয়ে ফেলল। হ্যারি হরক্রুক্সটি গলায় পরে আছে। আর হারমিয়ন তার ব্যাগটি শক্ত করে ধরে রেখেছে। ওরা ডিসপারেট করল। স্বাভাবিকভাবেই ওরা দুজন শক্ত করে পরস্পরকে ধরল এবং ডিসপারেট ওদেরকে গিলে ফেলল। এরপর, হ্যারির পা বরফের মাটির ছোঁয়া পেল এবং শক্তভাবে একটি বাড়ি খেল। মনে হল বরফাচ্ছন্ন মাটি গাছের পাতা দিয়ে ঢেকে আছে।

আমরা কোথায়? হ্যারি জানতে চাইল। সে চারদিকে তাকিয়ে শুধুই গাছপালা দেখতে পেল। হারমিয়ন ব্যাগটি খুলে তার ভেতর থেকে টেনে তাবুর খুটিগুলো বের করল।

সে বলল, ডিনের জঙ্গল, মা আর ড্যাডের সঙ্গে আমি এখানে একবার ক্যাম্পিং করেছিলাম।

এখানেও সবগাছ বরফে ঢেকে আছে। এখানে আরো তীব্র শীত। তবে তারা এখানে ঠাণ্ডা বাতাসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। ওরা দিনের অধিকাংশ সময়ে তাবুর ভেতরে কাটালো। হারমিয়ন জড়োসড়ো হয়ে বসে উজ্জ্বল নীল রঙ্গের ধোয়া তৈরি করল গ্যাস দিয়ে। হারমিয়ন এটা বানাতে খুবই পারদর্শী। সে হাতল দিয়ে একটি গ্যাস জার তুলে নিয়েছে। হ্যারির মনে হল যেন সে তার গুরুতর আঘাত থেকে সেরে উঠছে। বুঝতে বাকি রইল না যে হারমিয়নের যত্নের কারণেই সে তাড়াতাড়ি সেরে উঠছে। ওই দুপুরে ঝরঝর করে তুষার পড়তে থাকল। এমনকি ওদের আচ্ছাদনটিও ধুলোর মত তুষার দিয়ে আচ্ছাদিত হয়ে গেল।

দুরাত অল্প ঘুমিয়ে হ্যারি যেন আরো সতর্ক হয়ে উঠল। গোড্রিচ হলো থেকে পালিয়ে আসাটা এত বাজে ধরণের ছিল যে, মনে হয়েছে ভোল্ডেমর্ট যেন আরো কাছে চলে এসেছে। আরো বড়ো হুমকী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবারো যখন অন্ধকার নেমে এল তখন হারমিয়ন পাহারায় থাকতে চাইল। কিন্তু হ্যারি তাকে নিষেধ করে বিছানায় গিয়ে ঘুমাতে বলল।

হ্যারি একটি গদিতে তাবুর মুখে বসল। হ্যারির যে কটি সোয়টার ছিল সে সবগুলো পরে নিয়েছে। কিন্তু তারপরও শীত কাঁপিয়ে দিচ্ছে। যতই সময় যাচ্ছে। ততই অন্ধকার ঘন হয়ে আসছে। শেষ পর্যন্ত এত গাঢ় হয়ে গেল যে কিছুই দেখা যায় না। হ্যারি একবার জিনির অবস্থান দেখে নেয়ার জন্য মারাউডারস ম্যাপ বের করল। তখনই তার মনে পড়ল এটা ক্রিসমাসের সময় এবং জিনি সম্ভবত বারোতে চলে গিয়েছে।

বিস্তৃত বনের সব ছোট ছোট নড়াচড়া বড় আকার হয়ে হ্যারির চোখে ধরা দিচ্ছে। হ্যারি ভালো করেই জানে যে এই বনে প্রচুর জীবন্ত প্রাণী রয়েছে। মনে মনে কামনা করল ওগুলো যেন চলাচল না করে এবং যাতে সে অন্য কোনো বিপদজনক চলাচলটাকে আলাদা করে দেখতে পারে। অনেক বছর আগে সে মরা পাতার উপর পিছলে যাওয়ার শব্দ পেয়েছিল। তার মনে হল সে সেই শব্দ আবারও পাচ্ছে। সে মাথা ঝাঁকি দিল। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের নিরাপত্তা স্পেল কাজ করছে। সেই নিরাপত্তা স্পেল এখন ভেঙে যাবে কেন? তারপরও সে একথা মাথা থেকে সরাতে পারল না যে, আজকের রাতটা হয়তো অন্যরকম।

ঘুমে তার মাথা বারবার নুইয়ে পড়ছে। সে কয়েকবার মাথা ঝাঁকি দিল। কয়েকবার তাবুর পাশে ঝুঁকে পড়ল। অন্ধকার এমন নিকষ কালো হয়ে আছে যেন হ্যারি অ্যাপারিশন এবং ডিসপারিশনের মাঝখানে দুলছে। সে তার একটি হাত উঁচু করে চোখের সামনে ধরল যে তার অঙুলগুলো দেখা যায় কিনা। ঠিক তখনই ঘটনাটা ঘটল :

একটি উজ্জ্বল রুপালি আলো গাছগাছালির ভেতর থেকে সোজা তার দিকে আসতে শুরু করেছে। এটির উৎস যেখানেই হোক না কেন আসছে একেবারে নিঃশব্দে। আলোটি একভাবে শুধু হ্যারির দিকে এগিয়ে আসছে।

হ্যারি পায়ের উপর ভর করে লাফ দিল। ওর গলার স্বর আটকে গেছে। সে হারমিয়নের যাদুদণ্ডটি তুলে ধরল। সে তার চোখ দুটো জোর করে লাইটের দিকে স্থির রাখল। চোখে যেন ঝাপসা দেখতে থাকল। এর সামনে যে গাছগুলো পড়েছে সেগুলো কালো ছায়ার মত দেখাচ্ছে। কিন্তু সেগুলো ভেদ করে আলোটা আরো কাছে চলে আসছে….

এরপর আলোর উৎসটি বের হয়ে এল একটি ওক গাছের পেছন থেকে। সেটি একটি রুপালী সাদা মাদী হরিণ। একেবারে চকচক করছে। মাটির উপর দিয়ে হাঁটছে কিন্তু কোনো শব্দ নেই। নরম ধুলার মত বরফের উপর পায়ের কোনো ছাপ পড়ছে না। হরিণটি ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। চমৎকার মাথা এবং টানা চোখ উপরের দিকে তুলে আছে।

হ্যারি বিস্ময়ের সঙ্গে তাকিয়ে আছে প্রাণীটির দিকে। বিস্মিত হরিণটির ধরণ দেখে নয় বরং অবর্ণনীয়ভাবে পরিচিত বলে মনে হচ্ছে! হ্যারির মনে হল যেন সে।

এর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যই অপেক্ষা করছিল। কিন্তু ওকে দেখার আগ পর্যন্ত তা ভুলে গিয়েছিল। এখন তাদের মধ্যে সাক্ষাত হল। এক মুহূর্ত আগেও মনে হয়েছে চিৎকার করে হারমিয়নকে ডাক দেয়ার কথা। কিন্তু এখন তাও ভুলে গেল। হ্যারি ভাল করেই জানে এই যে হরিণটি এগিয়ে আসছে এর ফলে তার মৃত্যুও হতে পারে।

ওরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর হরিণটি ফিরে চলে যেতে শুরু করল।

না, হ্যারি বলল। তার গলার স্বর যেন বের হতে চায় না। ফিরে এস!

হরিণটি থামল না, চলে যেতে থাকল। সেটির উজ্জ্বলতা গাছের ডাল-পালায় বাধা পেতে থাকল। মাত্র এক মুহূর্তের জন্য হ্যারি দ্বিধা করল। সতর্কতার সঙ্গে বিড়বিড় করল : এটা একটা কৌশল হতে পারে, ফাঁদ হতে পারে, তাকে লোভ দেখিয়ে নেয়ার কৌশল হতে পারে। কিন্তু তার ভেতর থেকে বলছে এটি কোনো ডার্ক ম্যাজিক নয়। সে পিছনে পিছনে রওয়ানা দিল।

তার পায়ের নিচে বরফ মচমচ করতে থাকল। কিন্তু হরিণটি কোনো শব্দ করছে না। আসলে সে একটি আলো ছাড়া যেন আর কিছু না। হরিণটি বনের গভীর থেকে গভীরে পথ দেখিয়ে ওকে নিয়ে গেল। হ্যারি দ্রুত হাঁটতে থাকল। হ্যারি জানে ও ঠিক জায়গা মত ধরা দেবে। এরপর হয়তো হরিণটি কথাও বলবে। এবং হ্যারি ভাবল তার কী করা উচিত।

অবশেষে হরিণটি থামল। সে তার সুন্দর মাথাটি হ্যারির দিকে ঘোরালো। হ্যারি দৌড় দিয়ে কাছে যেতে চাইল। তার ভেতরে একটি প্রশ্ন ঘুরছে। সে যেই না মুখ খুলেছে অমনি হরিণটি অদৃশ্য হয়ে গেল।

যদিও অন্ধকারের মধ্যে হরিণটি অদৃশ্য হয়ে গেল, কিন্তু তারপরও হ্যারির চোখের মনিতে ওর অবয়বটা লেগে থাকল। হ্যারি চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছে না। চোখের পর্দা নামাতেই উজ্জ্বল কিছু দেখতে পেল। এবার সে একটু ভয় পেল। হরিণটি উপস্থিত থাকায় এতক্ষণ একটু নিরাপদ বোধ করছিল।

লুমাস! সে বিড়বিড় করে বলল। এবং যাদুদণ্ডের আগা একটু জ্বলে উঠল।

চোখ পিটপিট করায় তার চোখের সামনে থেকে হরিণটির ছবি মুছে যেতে থাকল। হ্যারি দাঁড়িয়ে বনের নানা ধরণের শব্দ শুনতে থাকল। গাছের ছোট ছোট ডালপালার শব্দ, তুষারের শশ শব্দ। সে কি আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে? একটি অ্যামবুশে ফেলার জন্য হরিণটি তাকে আকর্ষণ করেছে? তার কি মনে হয়েছে যে কেউ একজন যাদুদণ্ডের আলোর বাইরে দাঁড়িয়ে ওকে অনুসরণ করছে?

সে যাদুদণ্ডটি উঁচু করে ধরল। কেউ তারদিকে দৌড়ে আসলো না, গাছের আড়াল থেকে কোনো সবুজ আলো ঝলকে উঠল না। তাহলে কেন হরিণটি তাকে এখানে নিয়ে এল?

যাদুদণ্ডের আলোতে কিছু একটা মুহূর্তের জন্য ঝলকে উঠল। হ্যারি. ঘুরে সেদিকে তাকালো। কিন্তু দেখল কিছুই না, শুধু একটি জায়গায় জমে থাকা পানি। যাদুদণ্ড তুলে ভাল করে পরিক্ষা করে দেখল কালো উপরিভাগ চিকচিক করছে।

সে সাবধানে এগিয়ে গেল এবং নিচু হয়ে ভালো করে লক্ষ করল। দেখল তার প্রতিচ্ছায়া পড়েছে এবং যাদুদণ্ডের আলো পড়েছে। কিন্তু লক্ষ করল মোটা আবরনের নিচে কিছু একটা ঝিকমিক করছে। একটি রুপালি রঙ্গের ক্রস…

ওর বুকটা লাফিয়ে উঠল। হ্যারি মুখ হা করে ফেলল। জমে থাকা পানির পাশে সে হাটু গেড়ে বসে পড়ল। যাদুদণ্ডটি বাকা করে সে জমে থাকা পানির নিচে দেখতে চেষ্টা করল যতটা সম্ভব আলো ফেলে। গাঢ় লাল রঙের… এটি একটি তলোয়ার! বাটটি রুবি দিয়ে তৈরি। বনের ভেতরের গর্তের পানিতে গ্রিফিনডোরের তলোয়ার!

কোনো রকমে নিঃশ্বাস নিয়ে সে তলোয়ারটি দেখল। কী করে এটা সম্ভব? এটা বনের ভেতর গর্তের পানিতে আসবে কী করে? তাও আবার তারা যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাবু পেতেছে সে স্থানটিতে? কোনো অজানা যাদু কি হারমিয়নকে এখানে টেনে এনেছে? অথবা যে হরিণটিকে এখন প্যাট্রোনাস হিসেবে ব্যবহার করেছে। সে-ই কি এই ছোট গর্তের পানির মালিক? নাকি তারা এখানে নেমে আসার পর এই গর্তের পানিতে তলোয়ারটি রাখা হয়েছে, কারণ হ্যারিরা এখানে? এর যে কোনো ঘটনাই ঘটে থাকুক না কেন, যে তলোয়ারটি হ্যারির কাছে পৌঁছে দিতে চাচ্ছে, সে কোথায়? সে আবার চারদিকে যাদুদণ্ডটি ঘুরিয়ে পরিক্ষা করল কোনো মানুষ আছে কি না দেখতে। কিন্তু সে কাউকে দেখতে পেল না। পানির নিচে থাকা তলোয়ারটির দিকে নজর দেয়ায় তার ভয় আরো বেড়ে গেল।

সে যাদুদণ্ডটি তলোয়ারের দিকে তাক করে বিড়বিড় করে বলল, অ্যাকসিও সোর্ড!

তলোয়ারটি উঠল না। সে নিজেও আশা করেনি যে এটি উঠে আসবে। বিষয়টি যদি এতই সোজা হতো তাহলে এটি খোলা মাটির উপরই থাকতো, যাতে সে তুলে নিতে পারে। এমন গভীরে সেধিয়ে থাকতো না। সে তুষারে ঢাকা গোলাকার জায়গাটির পাশে বসল। তলোয়ারটি যে শেষবার তার হাতে এসেছিল সেকথা গভীরভাবে ভাবতে থাকলো। ভয়ানক বিপদজনক অবস্থা হয়েছিল। সে সাহায্যের জন্য ডাকাডাকি করেছিল।

হেল্প, হ্যারি বিড়বিড় করে বলল। কিন্তু তলোয়ারটি একটুও নড়ল না। স্থির রইল।

হ্যারি আবার হাঁটতে শুরু করল। কথাটির মানে কি? হ্যারি নিজেকেই নিজে জিজ্ঞেস করল। তলোয়ারটি তার হাত থেকে ফিরিয়ে নেয়ার সময় কথাটি ডাম্বলডোর ওকে বলেছিলেন। একমাত্র সত্যিকারের একজন গ্রিফিনডোর এটি টেনে বের করতে পারে।

গ্রিফিনডোর হতে হলে কি কোয়ালিটি থাকতে হয়? একটি ক্ষীণ কণ্ঠ যেন হ্যারির ভেতর থেকেই উত্তর দিল : সাহস, স্নায়ু শক্তি এবং বীরত্ব একজন মানুষকে গ্রিফিনডোর করে তোলে।

হ্যারি হাঁটা থামালো এবং দীর্ঘ একটি নিঃশ্বাস ছাড়ল। ওর উষ্ণ ধোয়ার মত নিঃশ্বাস অচিরেই শীতল বাতাসে জমে গেল। সে জানতো তার কি করা উচিত। সে যদি নিজের কাছে নিজে সৎ হতো তাহলে সে ভাবতে পারতো যে তলোয়ারটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমেই উঠে আসতো। বিলম্ব হওয়ার একমাত্র কারণ হল তার। প্রথম উদ্যোগটিই গ্রহণযোগ্য হয়নি।

এলোমেলো আঙুলে হ্যারি একের পর এক গায়ের কাপড় খুলতে শুরু করল। দুঃখের সঙ্গে ভাবল, সাহসিকতা কী? সে ব্যাপারে সে নিশ্চিত নয়। অন্তত এটুকু বুঝল যে সে এ কাজ করতে হারমিয়নকে ডাকেনি।

সে কাপড়গুলো খোলার সময় কোথাও একটি পেঁচা ডেকে উঠল। হেজভিগের জন্য ব্যাথায় মনটা ভরে উঠল। হ্যারি থরথর করে কাঁপছে। তার দাঁতগুলো ঠকঠক করে বাড়ি খাচ্ছে। কিন্তু তারপরও সে গায়ের কাপড় খুলতে থাকল। শেষ পর্যন্ত গায়ে রইল শুধু আন্ডারওয়্যার। সে খালি পায়ে বরফের উপর দাঁড়িয়ে আছে। সে কাপড়গুলোর উপর তার ছোট ব্যাগটিকে রাখল। ব্যাগের ভেতরে আছে তার ভাঙা যাদুদণ্ডটি, মায়ের চিঠি, সিরিয়ুসের দেয়া আয়নার ভাঙা টুকরা এবং পুরাতন একটি। স্নিচ। তারপর সে হারমিয়নের যাদুদণ্ডটি তাক করল।

ডিফিনডো!

পানির উপরের বরফের আস্তরটি ক্রাক করে ভেঙে গেল। যেন একটি বুলেট প্রবেশ করেছে। বরফের খণ্ড ছলকে ওঠা পানির ভেতর পড়ল। হ্যারি বিবেচনা করে বুঝল এটি খুব একটি গভীর নয়। কিন্তু তলোয়ারটি তুলে আনতে পুরো শরীর ডোবাতে হবে।

কাজটির কথা চিন্তা করে দেখল এটা সহজ কাজ নয়। পানি গরম করাও যাবে। সে পানির ধারে চলে এল। হারমিয়নের যাদুদণ্ডটি মাটিতে নামিয়ে রাখল। পানি কতটা ঠাণ্ডা সে চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে রাখল। কী রকম ভয়ানক কম্পন শুরু হবে সে কথাও মাথায় আসতে দিল না। তারপর পানিতে ঝাঁপ দিল।

শরীরের প্রতিটি কোষ যেন প্রতিবাদে চিৎকার করে উঠল। বুকের ভেতরের বাতাস বন্ধ হয়ে গেছে। সে কাঁধ পর্যন্ত বরফের মত ঠাণ্ডা পানিতে ডুবে গেল। দম নিতে হ্যারির প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। শরীর এমনভাবে কাঁপছে যে ডোবার পানি ছলকে পাড়ে উঠে আসছে। সে অসাড় হয়ে আসা পায়ের আগায় তলোয়ারটি অনুভব করল। এখন একটি ডুব দিতে হবে শুধু।

তীব্র যন্ত্রণাদায়ক ঠাণ্ডা। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা তাকে আগুনের মত পোড়াচ্ছে। পানির ভেতর ডুব দিতেই তার মাথা যেন বরফ হয়ে গেল। সে তলায় পৌঁছে তলোয়ারটির জন্য হাতড়াতে লাগল। কেবল আঙ্গুল দিয়ে তলোয়ারের বাট ধরে উপরের দিকে টান দিল।

ঠিক তখনই তার গলায় কিছু একটা টাইট হয়ে আটকে ধরল। প্রথমে হ্যারি মনে করল পানির ভেতরের আগাছা। যদিও পানিতে নামার সময় কিছু অনুভব করেনি। সে তার খালি হাতটি দিয়ে নিজের গলাটি মুক্ত করতে চেষ্টা করল। কিন্তু এটি আগাছা নয়। গলার হরক্রুক্সটির চেইন শক্ত হয়ে বসে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে দম আটকে দিচ্ছে।

হ্যারি ভয়ানকভাবে নিচে লাথি দিয়ে উপরে উঠতে চেষ্টা করল। কিন্তু সে ঘুরে ডোবার যে অংশে বরফ শক্ত হয়ে আছে মাথাটা সেখানে গিয়ে ঠেকল। বিপর্যস্ত, দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে হাতড়িয়ে গলা থেকে হরক্রুক্সের চেন ঠিক করতে চেষ্টা করল। কিন্তু বরফ হয়ে আসা আঙ্গুলগুলো দিয়ে সে ঢিল করতে পারল না। এবার মাথার ভেতর যেন একটি ছোট আলো জ্বলে উঠল। সে ডুবে যেতে থাকল। সে পুরোপুরি অসহায়। তার কিছুই করার নেই। সে মৃত্যুর মুখে হাত দুটি গলার কাছে নিয়ে এল…।

দম বন্ধ হওয়া, মুখ দিয়ে লালা পড়া এবং এমন ঠাণ্ডা সে জীবনে কখনো অনুভব করেনি। মুখটি বরফের উপর পড়ে আছে। আশেপাশেই কোথাও কেউ একজন হাপাচ্ছে, কাশি দিচ্ছে এবং দাঁড়িয়ে থাকতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে। হারমিয়ন আবারো তাকে বাঁচাতে এসেছে। ঠিক সাপের হাত থেকে যেভাবে বাঁচিয়েছিল….কিন্তু আওয়াজটি হারমিয়নের মত না। এর কাশি এবং পায়ের শব্দও হারমিয়নের মত মনে হচ্ছে না…।

হ্যারির মাথা তুলে দেখার মত শক্তি নেই। সে তার সাহায্যকারীকে দেখতে পাচ্ছে না। সে যা পারছে তা হল তার একটি কম্পিত হাত কোনোক্রমে গলার কাছে নিতে। গলার জায়গাটিকে অনুভব করতে পারছে যেখানে হরক্রুক্স এর চেইনটি কেটে মাংসের ভেতর বসে গিয়েছিল। সেটি এখন নেই, কেউ একজন কেটে নিয়ে তাকে মুক্ত করেছে। ঠিক তখনই একটি হাপাতে থাকা কণ্ঠস্বর তার মাথার উপরের দিক থেকে বলে উঠল :

তুমি কী পাগল নাকি?

কিছুই না, গলার আওয়াজটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে হ্যারির ভেতর শক্তি সঞ্চয় হতে শুরু করল। সে উঠে দাঁড়াতে পারল। পায়ের উপর দাঁড়িয়ে সে ভয়ানকভাবে কাপতে থাকল। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রন। পুরোপুরি জামা কাপড় গায়ে। কিন্তু সে কাপড় ভিজে গায়ের সঙ্গে লেগে আছে। চুলের উপর দিয়ে বরফের পাস্টার পড়ে গেছে। সে একহাতে ধরে আছে গ্রিফিনডোরের তলোয়ারটি এবং অন্য হাতে চেন ছেঁড়া হরক্রুক্সটি ঝুলছে।

এই বাজে কাজ করলে কেন, হাপাতে হাপাতে রন বলল। হরক্রুক্সটি তার হাতে সামনে পেছনে ঝুলছে। ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে চেন ছোট হয়ে গেছে। ঝাঁপ দেয়ার আগে এটি গলা থেকে খুলে নিতে পারলে না?

হ্যারি উত্তর দিতে পারল না। রুপালি মাদী হরিণটি কি কিছুই না, রনের পুনরাবির্ভাবের সঙ্গে সেটির কোনো সম্পর্কই নেই। হ্যারি বিশ্বাস করতে পারছে না। ঠাণ্ডায় কাঁপছে। সে ডোবার পাশে স্থূপ করে রাখা জামা কাপড় তুলে নিয়ে পরতে শুরু করল। সোয়েটারের পর সোয়েটার পরতে পরতে হ্যারি রনের দিকে তাকালো। রন চোখের কোণ থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে আর হ্যারি মনে করছে এই বুঝি অদৃশ্য হয়ে গেল। তারপরও রন বাস্তবে আছে। সে এইমাত্র ডোবায় ঝাঁপ দিয়ে হ্যারিকে উদ্ধার করেছে।

তাহলে তুমি? শেষ পর্যন্ত.., হ্যারি রনকে বলল। তার দাঁত ঠকঠক করে কাঁপছে। গলা প্রায় ফাঁস লাগার মত অবস্থা হওয়ায় তার মুখ দিয়ে এখন আওয়াজ বের হতে চাচ্ছে না।

হ্যাঁ, রন বলল। সে একটু দ্বিধাগ্রস্থ।

তুমি ওই মাদি হরিণের রূপ নিয়েছিলে?

 কি?, নাতো, কখনোই না! আমি তো মনে করেছিলাম তুমি এ কাজ করেছ?

আমার প্যাট্রোনাসটি একটি পুরুষ হরিণ।

ওহ হ্যাঁ, আমি ভেবেছিলাম ওটি দেখতে অন্যরকম হয়েছে। কোনো শিং নেই।

হ্যারি হ্যাগ্রিডের দেয়া ব্যাগটি গলায় ঝুলালো। শেষ সোয়েটারটি গায়ে চড়ালো। নিচু হয়ে হারমিয়নের যাদুদণ্ডটি তুলে নিল এবং রনের দিকে তাকালো।

তুমি এখানে এলে কী করে?

দৃশ্যত রনের মনে হল এই প্রশ্নটি আরো পরে আসলে আসতে পারে।

এই ধরো…আমি..মানে আমি ফিরে এসেছি। সে গলা পরিস্কার করে বলল, অবশ্য যদি তোমরা চাও।

দুজনই কিছুক্ষণ নিরব রইল। এ সময় রনের চলে যাওয়ার বিষয়টি দুজনের মধ্যে একটি দেয়ালের মত আবহ তৈরি করল। তারপরও শেষ কথা হল রন এখন এখানে। সে ফিরে এসেছে। সে ফিরে এসে হ্যারির জীবন রক্ষা করেছে।

রন মাথা নিচু করে নিজের হাতের দিকে তাকালো। যেন হাতের ধরে থাকা জিনিসগুলো দেখে অবাক হল।

ও হ্যাঁ, এগুলো আমি পেয়েছি, সে বলল। অনেকটা অপ্রয়োজনেই বলল। তলোয়ারটি উঁচু করে ধরে রাখল হ্যারির নিরিক্ষা করার জন্য। এটির জন্যই তুমি ঝাঁপ দিয়েছিলে, তাই না?

হ্যাঁ, হ্যারি বলল। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, তুমি এখানে এলে কি করে? আমাদেরকে খুঁজে পেলে কি করে?

অনেক বড় কাহিনী, রন বলল। আমি কয়েক ঘণ্টা ধরে তোমাদের খুঁজছিলাম। এটি একটি বিশাল বন তাই না? আমি মাত্র চিন্তা করছিলাম যে গাছের নিচে ঘুমিয়ে পড়ব। এবং সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করব। ঠিক তখনই দেখলাম হরিণটি আসছে এবং তুমি সেটিকে অনুসরণ করছ।

তুমি অন্য কাউকে দেখনি?

নাহ, রন বলল। আমি ..

সে একটু দ্বিধা করল। একটু দূরে দুটি পাশাপাশি গাছের দিকে তাকালো।

আমি ভেবেছিলাম আমি ওখানে কিছু একটা চলাফেরা করতে দেখেছি। কিন্তু ঠিক সে সময়টাতে আমি ডোবার দিকে দৌড়াচ্ছি। কারণ তুমি ডুব দিয়েছ কিন্তু আর উঠে আসছ না। ফলে আমি একটু ঘুরে–হেই হ্যারি, ওখানে কিছু একটা..?

সে কথা বলার সময় হ্যারি দ্রুত রনের দেখানো জায়গাটির দিকে গেল। দুটি ওক গাছ পাশাপাশি বেড়ে উঠেছে। দুটির মাঝখানে মাত্র কয়েক ইঞ্চি ফাঁক রয়েছে। চোখ বরাবর জায়গাটিতে কিছু দেখা যাচ্ছে না। গাছটির নিচে শেকড়ের চারপাশে বরফ নেই। হ্যারি কোনো পায়ের চিহ্নও দেখতে পেল না। সে আবার রন যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে ফিরে এল। রন এখনো হাতে তলোয়ার এবং হরক্রুক্স ধরে আছে।

কিছু দেখতে পেলে? রন জানতে চাইল।

 হ্যারি বলল, না।

এ তলোয়ারটি পানির ভেতর আসলো কোথা থেকে?

প্যাট্রোনাসটি যে ব্যবহার করেছে, অবশ্যই সে ওটিকে ডোবার ভেতরে রেখে দিয়েছিল।

ওরা দুজনই কারুকাজ করা তলোয়ারটির দিকে তাকালো। তলোয়ারটি হারমিয়নের যাদুদণ্ডের আলোতে চকচক করছে।

রন বলল, তোমার কি মনে হয় এটি আসল তলোয়ার?

হ্যারি বলল, একটি উপায় আছে পরিক্ষা করার।

হরক্রুক্সটি হ্যারির হাতে দুলছে। লকেটটি একটু একটু লাফাচ্ছে। হ্যারি জানে এর ভেতরে যেটি আছে সেটি আবার উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। এটি তলোয়ারের উপস্থিতির কথা বুঝতে পেরেছে এবং হ্যারির হাতে পড়ার চেয়ে তাকে মেরে ফেলতে চেষ্টা করছে। এখন এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার সময় নয়। এখন সময় হল লকেটটি একবারে চিরকালের জন্য ভেঙে ফেলা। হ্যারি চারদিকে তাকালো। হার মিয়নের যাদুদণ্ডটি উঁচু করে ধরল। এবং একটি জায়গার দিকে চোখ পড়ল। একটি সিকামোর গাছের ছায়ায় তুষারে আংশিক ঢাকা একটি মসৃণ পাথর দেখতে পেল।

এদিকে আসো, হ্যারি বলল। সে সেদিকে হাঁটতে থাকল। পাথরের উপর থেকে তুষার ঝেড়ে ফেলল। এবং হরক্রুক্সটির জন্য রনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। রন তলোয়ারটি বাড়িয়ে দিলে হ্যারি মাথা নেড়ে নিষেধ করল।

না, কাজটি তোমার করা উচিত।

 আমি? রন অবাক হয়ে বলল। কেন?

কারণ তুমি তলোয়ারটি ডোবা থেকে তুলে এনেছ। আমি মনে করি এটা তোমার করা উচিত।

সে দয়া বা দ্রতার কথা চিন্তা করেনি। সে জানে যে হরিণটি ছিল অতি বি। রনেরই তলোয়ারটি ধরা উচিত। ডাম্বলডোর হ্যারিকে অন্তত কয়েকটি বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি বিশেষ ধরনের ম্যাজিক শিখিয়েছেন। বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা শিখিয়েছেন।

আমি এটি খুলছি, তুমি শুধু তলোয়ার দিয়ে কোপটি দেবে। একেবারে সোজাসুজি, ঠিকাছে? হ্যারি বলল। কারণ ভেতরে যাই থাকুক সেটি প্রতিরোধ করতে চাইবে। ডায়েরিতে ইঙ্গিত ছিল যে এটি আমাকে হত্যা করতে চায়।

আমরা এটিকে কীভাবে ওপেন করবো? রন জানতে চাইল। সে ভয় পেয়েছে বলে মনে হল।

পার্সেলটং ব্যবহার করে আমি এটিকে খোলার আদেশ দিচ্ছি, হ্যারি বলল। উত্তরটি এতটা চট জলদি তার ঠোঁটে এল যে নিজের কাছেই মনে হল যে সে গভীরভাবে এটা জানতো। হয়তো নাগিনীকে প্রতিহত করা থেকে সে বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। হ্যারি সাপের মত আকাবাকা ইংরেজি এস শব্দটি দেখতে পেল খোদাই করা সবুজ রঙের পাথরের উপর। এটা খুবই সহজভাবে মনে হয় একটি ছোট সাপ পাথরের উপর দৃশ্যমান।

না!, রন বলল। না, এটা খুলতে চেষ্টা করো না! আমি নিশ্চিতভাবে বলছি!

হ্যারি জানতে চাইল, কেন নয়? এই অশুভ জিনিসটাকে খুলে দেখা যাক, কয়েক মাস তো হয়ে গেল-

আমি পারব না হ্যারি, তুমি কাজটি করো!

কিন্তু কেন?

কারণ, এই বিষয়টি আমার জন্য খুবই খারাপ, রন বলল। পাথরের উপরে রাখা লকেটটা থেকে সে পিছিয়ে গেল। আমি বিষয়টি হ্যান্ডেল করতে পারবো না। আমি কোনো অজুহাত দিচ্ছি না, হ্যারি, আমি যেমন ধরণের, এই জিনিসটি তোমার বা হারমিয়নের চেয়ে আমার উপর বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে। একে নিয়ে আমি চিন্তা করেছি। কিন্তু আমার কাছে খুবই খারাপ বলে মনে হয়েছে। আমি ব্যাখ্যা করতে পারব না কেন। সেকারণেই আমি এটিকে ত্যাগ করেছিলাম। আমি পারব না!

সে দূরে গিয়ে দাঁড়াল। তলোয়ারটি সঙ্গে টেনে নিল। সে মাথা নাড়ছে।

হ্যারি বলল, তুমি পারবে রন, তুমি পারো। তোমার হাতে তলোয়ারটি আছে। আমি ধারণা করি তুমি এটা চালাতে পারো। প্লিজ, শুধু এটাকে ভেঙে ফেল, রন।

তার নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে সে যেন শক্তি ফিরে পেল। রন ঢোক গিলল। তখনো সে নাক ফুলিয়ে ফুলিয়ে দম নিচ্ছে। আবার সে পাথরের কাছে ফিরে এল।

সে বলল, ঠিক কখন আমাকে বলো।

তিন বলার সঙ্গে সঙ্গে, হ্যারি বলল। সে ঘুরে ঘুরে লকেট থেকে চোখ বাকিয়ে এস চিহ্নটির দিকে দেখছে। লকেটের ভেতর যখন আটকে পড়া পোকার মত নড়ছে তখন ওটাকে সরিসৃপের মত দেখাচ্ছে। হরক্রুক্সটির উপর দয়া দেখানো যেতে পারতো, কিন্তু এখনো হ্যারির গলার জায়গাটিতে পুড়ছে

এক…দুই…তিন…খোলো!

শেষ শব্দটি তার কণ্ঠ থেকে হিসহিস করে বের হল। সেই সঙ্গে হরক্রুক্স থেকে ঘরঘর করে শব্দ হল। ক্লিক শব্দ করে দুপাশে দুটি ছোট দরোজার মত খুলে গেল। দুপাশের দুদরোজার কাঁচের ভেতর থেকে জীবন্ত চোখের মত দেখা গেল। মনে হল টম রিডলের মত বড় এবং কালো চোখ।

কোপ দাও, হ্যারি বলল। সে শক্ত করে পাথরের উপর হরক্রুক্সটি ধরে রেখেছে।

রন কাঁপাহাতে তলোয়ারটি উঁচু করল। রনের হাত কাঁপছে। হরক্রুক্সের চোখ দুটো উত্তেজনায় ঘুরছে। হ্যারি শক্ত করে লকেটটি ধরে আছে। নিজেকে শক্ত করে রেখেছে। ইতিমধ্যেই কল্পনা করতে শুরু করেছে যে খোলা স্থান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।

ঠিক তখনই হরক্রুক্সের ভেতর থেকে হিসহিস কণ্ঠে আওয়াজ বেরিয়ে এল।
 আমি তোমার হৃদয়টা দেখেছি, ওটাও আমার হদয়।

হ্যারি কর্কশভাবে বলল, এসব কথা শুনো না রন, কোপ দাও!

 আমি তোমার স্বপ্নটা দেখেছি রোনাল্ড উইসলি, এবং আমি তোমার ভয়টার কথাও জানি। তুমি যা ইচ্ছা কর সেটা হওয়া সম্ভব, আবার তোমার জন্য যা আতঙ্কজনক সেটাও হওয়া সম্ভব।

কোপ দাও! হ্যারি চিৎকার করে উঠল। তার গলার আওয়াজে চারদিকের গাছে প্রতিধ্বনি উঠল। তলোয়ার ধরে রাখা হাত কাঁপছে। রন নিচের দিকে রিডলের চোখের দিকে তাকালো।

ন্যনতম ভালোবাসা, যেমন মা তার মেয়ের কাছ থেকে পায়, ন্যূনতম ভালবাসা মেয়েটি এখন তোমার বন্ধুকেই পছন্দ করে…দ্বিতীয় ভালো সব সময়ই অবজ্ঞার পাত্র..

রন, এখনই কোপ দাও! হ্যারি চিৎকার করে বলল। হ্যারি অনুভব করতে পারল যে লকেটটি তার হাতের মধ্যে ঝাঁকি দিচ্ছে। সে পরবর্তীতে কী হবে সেটা নিয়ে ভয় পেল। রন তখনো তলোয়ারটি উপরের দিকে ধরে আছে। তার এই ভাব দেখে রিডলের চোখ দুটো রক্তিম হয়ে উঠল।

দুপাশের দরোজা দিয়ে, দুপাশের দুচোখের থেকে বুদ্বুদের মত ফসকে বের হল শরীরের আকার। অস্বাভাবিক রকমের মোচড়ানো শরীর দুটোর মাথা দুটো হ্যারি এবং হারমিয়নের।

রন হতবাক হয়ে চিৎকার করে উঠল। শরীর দুটো বড় হতে থাকলে সে আরো পেছনের দিকে সরে গেল। লকেটের ভেতর থেকে প্রথমে বুকের অংশ তারপর একে একে কোমর, পা বের হয়ে আসল। একই শেকড় থেকে বের হওয়া দুটো গাছের মত পাশাপাশি দাঁড়ালো। রন এবং আসল হ্যারির উপর দুলতে থাকল। হ্যারি লকেটটি পুড়তে শুরু করলে ফেলে দিয়ে সরে গেল।

রন!, হ্যারি চিৎকার করে বলল। কিন্তু হ্যারি রূপি রিডেল এবার ভন্ডেমর্টের গলায় কথা বলতে শুরু করল। রন তাকিয়ে আছে, তার চোখে মুখে বিস্ময়।

কেন ফিরে এলে? তোমাকে ছাড়া তো আমরা ভাল ছিলাম। তোমাকে ছাড়া বেশ সুখেই কাটছিল। তুমি অনুপস্থিত থাকায় আমরা খুশিই হয়েছিলাম…আমরা তোমার বোকামি দেখে, তোমার কাপুরুষতা দেখে হেসেছি, এবং তোমার বিনা বাক্যে মেনে নেয়া…

মেনে নেয়া? পুনরাবৃত্তি করল রিডল হারমিয়ন। সে আসল হারমিয়নের চেয়ে দেখতে আরো সুন্দর এবং ভয়ঙ্কর। সে অট্টহাসি দিয়ে দুলে দুলে রনের সামনে আসতে থাকল। একই জায়গায় অবস্থান করা হলেও রনকে আতঙ্কিত মনে হল। তলোয়ারটি তার পাশে এমনিতেই ধরে রেখেছে। হ্যারির পাশে তোমার দিকে কে তাকাবে, কে তাকাতে পারে? পছন্দের ক্ষেত্রে তুমি কী করেছ? প্রাণবন্ত ছেলেটির তুলনায় তুমি কী?

রন! কোপ দাও! কো-প দাও!, হ্যারি চিৎকার করে বলল। কিন্তু রন নড়ল না। তার চোখ দুটো বিস্ফারিত, রিডেল হ্যারি এবং রিডেল হারমিয়নের প্রতিচ্ছবি সেই চোখে। তাদের চুলগুলো ধোয়ার মত উড়ছে, চোখগুলো লাল টকটকে, তাদের গলার আওয়াজ শয়তানের দ্বৈত কণ্ঠের মত।

তোমার মা স্বীকার করেছেন, রিডল হ্যারি বলল। আর রিডল হারমিয়ন হিহি করে হাসতে থাকল। স্বীকার করেছেন যে তিনি আমাকে সন্তান হিসেবে পেতে বেশি পছন্দ করতেন। আমাকে পাল্টে দিতে পারলে খুশি হতেন…।

তোমাকে কে পছন্দ করবে, তাকে রেখে তোমাকে কোন মহিলা নেবে? তুমি তার কাছে কিছুই না… কিছুই না….. কিছুই না। গুনগুন করে গানের মত বাজতে থাকল রিডল হারমিয়ন। সাপের মত করে নিজেকে প্রসারিত করতে থাকল। রিডল হ্যারিকে জড়িয়ে ধরল। তাদের দুটি রিডলের ঠোঁট মিলিত হল।

ওদের সামনে মাটিতে রনের মুখটা উত্তেজনায় ভরে উঠেছে। সে তার হাতের তলোয়ারটি আবার উঁচু করল কিন্তু হাত কাঁপছে।

এখনই করো রন! হ্যারি চিৎকার করে বলল। রন তারদিকে ফিরে তাকালো। হ্যারির মনে হল সে তার চোখে রক্তিম আভা দেখতে পেল।

রন-?

তলোয়ারটি ঝলকে উঠল। নিচের দিকে নেমে এল। হ্যারি পথের থেকে নিজেকে লাফিয়ে সরিয়ে নিল। চিৎকারের সঙ্গে একটা লম্বা ধাতব শব্দ হল। হ্যারি ঘুরে দাঁড়ালো। বরফে তার পা পিছলে গেল। যাদুদণ্ডটি নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু মোকাবেলা করার জন্য সামনে কিছুই নেই।

হারমিয়ন এবং তার আকারের মনস্টার উধাও হয়ে গেছে। শুধু রন দাঁড়িয়ে আছে। তলোয়ারটি তার হাতে দুলছে। সে সমান্তরাল পাথরের উপর অবশিষ্ট লকেটের খোসার দিকে তাকিয়ে আছে।

হ্যারি ধীরে ধীরে হেঁটে তার কাছে গেল। সে বুঝতে পারছে না রনকে কি বলা উচিত বা এখন কি করা উচিত। রন হাপাচ্ছে। তার চোখদুটো এখন আর লাল হয়ে নেই। সাধারণ নীল চোখ। কিন্তু চোখ দুটো ভেজা।

হ্যারি নিচু হল। যেন সে রনের চোখ দেখতে পায়নি এমন ভাব করল। সে ভাঙা হরক্রুক্সটি তুলে হাতে নিল। রন সেটির দুটো জানালাই ভেঙে ফেলেছে। এখন আর হরক্রুক্সের ভেতর রিডল চোখ দুটো নেই। লকেটের ভেতর থেকে এখনো একটু ধোয়া বের হচ্ছে। হরক্রুক্সের ভেতরে জীবন্ত যা ছিল তা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সন্ত্রস্ত রন কাজটি শেষ পর্যন্ত করেছে।

রন হাত থেকে ফেলে দিতেই তলোয়ারটি ঢং করে শব্দ হল। রন হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। তার মাথাটি হাতের উপর। সে কাঁপছে। হ্যারি জানে এই কম্পন শীতের কারণে নয়। হ্যারি ভেঙে যাওয়া লকেটটি তুলে পকেটে রাখল। নিচু হয়ে রনের পাশে বসল। তার কাঁধে সতর্কতার সঙ্গে একটি হাত রাখল। রন হাতটি সরিয়ে দিল না। বিষয়টিকে একটি ভাল লক্ষণ বলে হ্যারি ধরে নিল।

তুমি চলে যাওয়ার পর, হ্যারি শান্তকণ্ঠে বলল। সে খুশি হলো যে রনের মুখটি অন্যদিকে ফেরানো আছে। সে সপ্তাহ ধরে শুধু কেঁদে কাটিয়েছে। সম্ভবত তারচেয়েও বেশি সময় ধরে সে আমার মুখটি পর্যন্ত দেখতে চায়নি। অনেক রাত আমরা এমনকি একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা না বলেও কাটিয়েছি। তুমি চলে যাবার পর….

হ্যারি কথা শেষ করতে পারল না। এই এখন মাত্র রন তার কথায় জানতে পারছে তার অনুপস্থিতি ওদের জন্য কত কষ্টদায়ক হয়ে উঠেছিল।

সে আমার বোনের মত, হ্যারি আবার বলতে থাকল। আমি তাকে আমার বোনের মত ভালবাসি এবং আমার ধারণা সে নিজেও আমাকে ভাইয়ের মতই জানে। আমাদের এমন সম্পর্ক সব সময়ের। আমি মনে করেছিলাম তুমি সেটা জানো।

রন কোনো উত্তর দিল না। কিন্তু মুখটা হ্যারির দিক থেকে অন্য দিকে রেখে শব্দ করে নাক ঝাড়ুল এবং জামার হাতায় মুছল। হ্যারি উঠে রনের বড় রুকস্যাকটি যেখানে রাখা আছে সেখানে গেল। কয়েক গজ দূরে সেটিকে ফেলে রেখে হ্যারিকে উদ্ধার করতে সে ডোবায় ঝাঁপ দিয়েছিল। সে রনের ব্যাগটিকে তুলে নিজের ব্যাগটিতে রাখল এবং রনের কাছে ফিরে এল। হ্যারিকে আসতে দেখে রনও উঠে দাঁড়ালো। তার চোখদুটো সাধারণ লাল হয়ে আছে, কিন্তু অন্য কোনো সমস্যা নেই।

রন গম্ভীর গলায় বলল, আমি দুঃখিত। আমি দুঃখিত যে তোমাদেরকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। আমি জানি, আমি একটু….

সে অন্ধকারের ভেতর চারদিকে তাকালো। এমন একটা ভাব যে অন্ধকারের ভেতর থেকে তার উপর আরো কটু কথা আসবে এবং তাকে দোষারোপ করা হবে।

আজ রাতের সব কাজ তুমিই করেছ, হ্যারি বলল। তলোয়ারটি উদ্ধার করেছ, হরক্রুক্সটি ধ্বংস করেছ, এবং আমার জীবন রক্ষা করেছ।

একসঙ্গে দুজন হেঁটে সামনে আগাতে থাকল এবং দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরল। হ্যারি রনের জ্যাকেটের পেছনের ভেজা অংশ ধরে আছে।

হ্যারি বলল, এখন আমাদের একমাত্র কাজ তাবুটা খুঁজে বের করা।

কিন্তু কাজটা মোটেই কঠিন হল না। যদিও হরিণটিকে অনুসরণ করে যাওয়ার সময় মনে হয়েছিল জায়গাটি অনেক দূর, কিন্তু এখন রনের সঙ্গে হাঁটতে গিয়ে মনে হল ফিরে আসার পথটুকু আশ্চর্যজনকভাবে কম। হ্যারি হারমিয়নকে জাগাতে কোনো দেরি করতে পারে না। উত্তেজিত হয়ে হ্যারি তাবুর ভেতরে ঢোকার সময় রন একটু পিছিয়ে পড়ল। ডোবায় এবং বনের কনকনে ঠাণ্ডার পর তাবুতে প্রবেশ করে মনে হল চমৎকার উষ্ণ। এখনো তাবুতে নীল ধোয়া উঠে একটি মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। হারমিয়ন দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েছিল। কম্বলের নিচে এখন গুটিসুটি হয়ে আছে। হ্যারি কয়েকবার তার নামোচ্চারণ করার পর সে নড়েচড়ে উঠল।

হারমিয়ন!

সে অবাক হলো এবং তাড়াতাড়ি উঠে বসল। মুখের উপর চলে আসা চুলগুলো সরালো।

কি হয়েছে হ্যারি, তুমি ঠিক আছে তো?

সবকিছু ঠিক আছে, ঠিক থাকার চেয়েও বেশি আছে। আমি খুবই ভালো আছি। এখানে আমার সঙ্গে আরো একজন এসেছে।

তুমি কী বলছ, কে? হারমিয়ন রনকে দেখল। সে হাতে তলোয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কার্পেটের উপর তলোয়ার থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ছে। হ্যারি এক কোণার দিকে চলে গেল। রনের রুকস্যাকটি বের করল এবং ক্যানভাসের সঙ্গে লাগিয়ে রাখতে নিচু হল। হারমিয়ন সুরুৎ করে দ্রুত তার বিছানা থেকে নামল। তারপর ঘুমিয়ে হাটার মত রনের দিকে ছুটতে থাকল। সে চেয়ে আছে রনের বিবর্ণ মুখটির দিকে। সে রনের সামনে গিয়েই থেমে গেল। তার ঠোঁট দুটো সামান্য ফাঁক হল। চোখ বিস্ফারিত হলো। রন দুর্বলভাবে একটুখানি হাসল। হাত সামান্য উঁচু করল।

হারমিয়ন সামনের দিকে ঝাঁপ দিল। এবং ঘুষি ছুঁড়তে শুরু করল তার দিকে যেতে যেতে।

অওক…উহ. জিরফ,….কি..কি?…হারমিয়ন…ওহ!

তুমি …ঠিক…রোনাল্ড……উইসলি!

প্রতিটি শব্দের সঙ্গে সঙ্গে সে হাত ছুঁড়তে থাকল। রন পেছনের দিকে সরে গেল। হারমিয়ন সামনে আসতে থাকলে সে হাত তুলে মাথা ঢাকল।

তুমি…এখানে….কয়েক…সপ্তাহ…পার….করে…ওহ, আমার যাদুদণ্ডটি কই!

সে হ্যারির হাত থেকে যাদুদণ্ডটি কেড়ে নিতে প্রস্তুত হল। সে তাড়াতারিড় ব্যবস্থা নিল

প্রোটেগো!

সঙ্গে সঙ্গে হারমিয়ন এবং রনের মাঝখানে একটি অদৃশ্য বাধা দাঁড়িয়ে গেল। সেই বাধাটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে হারমিয়ন পেছনের দিকে মেঝেতে পড়ে গেল। তার মুখের ভেতর ঢুকে যাওয়া চুল সরিয়ে সে আবার লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

হ্যারি বলল, হারমিয়ন! শান্ত হও!

 আমি শান্ত হবো না! সে চিৎকার করে বলল। হ্যারি তাকে এমন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যেতে দেখেনি। সে হুশ হারিয়ে ফেলেছে।

আমার যাদুদণ্ড ফিরিয়ে দাও! আমার কাছে দাও!

হারমিয়ন, তুমি দয়া করে থামবে-

আমি কী করব সে ব্যাপারে আমাকে তোমার বলতে হবে না হ্যারি পটার! হারমিয়ন চিৎকার করে বলল। এতটা বেশি বুঝতে চেও না! আমার দণ্ডটি দাও! আর তুমি!

সে চরম অভিযোগের শেষ বাক্যটি রনের উদ্দেশে বলল। মনে হল যেন অনেকটা কার্স ছুঁড়ে দেয়ার মত ক্ষেপে গেছে। রন কয়েক পা পিছিয়ে গেছে। সে জন্য হ্যারি রনকে দোষারোপ করতে পারে না। তার পিছনে যাওয়াটা যৌক্তিকতা।

আমি তোমার পিছনে পিছনে দৌড়েছি! চিৎকার করে ডেকেছি! ফিরে আসার জন্য আকুতি মিনতি করেছি!

রন বলল, আমি জানি হারমিয়ন, আমি দুঃখিত, আমি খুবই দুঃখিত-

ওহ, তুমি খুবই দুঃখিত!

হারমিয়ন হাসল। যেন তার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই। রন হ্যারির দিকে অসহায়ভাবে তাকালো। কিন্তু হ্যারির মুখে অসহায়ের মত ভাব দেখা গেল। তুমি ফিরে এলে সপ্তাহের পর সপ্তাহ পরে–আর তুমি মনে করো যে সরি বললে আর সব ঠিক হয়ে গেল?

কিন্তু এ ছাড়া আমি আর কি করতে পারি? রন চিৎকার করে বলল। হ্যারি খুশি হল যে সেও এখন প্রতিবাদ করছে।

ওহ, আমি জানি না! হারমিয়ন উচ্চস্বরে বলল।

তোমার মাথা ঠিক কর রন! ঠিক করতে শুধু কয়েক সেকেন্ড সময় লাগবে।

হারমিয়ন, হ্যারি বাধা দিয়ে বলতে থাকল। তার কাছে মনে হল এটা রনের জন্য চরম আঘাত। সে এইমাত্র আমার জীবন বাঁচিয়েছে

তাতে আমার কিছু আসে যায় না! হারমিয়ন আবারো চিৎকার করে বলল। সে কি করেছে সে ব্যাপারে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই! সপ্তাহের পর সপ্তাহ কেটে গেছে, এমনকি এরমধ্যে আমরা মরেও যেতে পারতাম, সে জানে

আমি জানতাম তোমরা মরে যাওনি! রন চিৎকার করে বলল। হারমিয়ন এবার প্রথম বারের মত গলার স্বর নিচু করল। মাঝখানে অদৃশ্য দেয়ালের দিকে সে এগিয়ে এল, রনের যত কাছাকাছি সে আসতে পারে।

হ্যারির ছবি প্রফেট পত্রিকায় সব সময় প্রতিদিন ছাপা হয়, রেডিওতে ঘোষণা করা হয়–সবাই তোমাকে সর্বত্র খুঁজতে চেষ্টা করেছে। এসব কাহিনী পাগলের মত শোনাবে। তুমি মরে গেলে আমি জানতে পারতাম না, তা কি করে হয়। তুমি জানো না বিষয়টি কেমন ছিল

কেমন ছিল তোমার জন্য?

তার কণ্ঠ থেকে এখন এতটাই হিসহিস করে আওয়াজ বের হচ্ছে যে একমাত্র বাদুরই হয়তো ভাল করে শুনতে পাবে। ক্ষণিকের জন্য তার মনে হল সে খামোখাই এতটা রেগে গেছে। সে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। রন সে সুযোগটা গ্রহণ করল।

আমি ডিসাপ্যারেট করার এক মিনিটের ভেতরই ফিরে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি সোজা গিয়ে একদল গুণ্ডা ছিনতাইকারীর মধ্যে পড়েছিলাম হারমিয়ন, যেখান থেকে আমি আর সরে যেতে পারছিলাম না।

কাদের হাতে পড়েছিলে? হ্যারি জানতে চাইল। হারমিয়ন তখন একটি চেয়ারে বসে পড়েছে। সে এমন করে হাত পা ক্রস করে চেয়ারে বসল যেন কয়েক বছরের ভেতর আর সেখান থেকে উঠবে না।

ছিনতাইকারী, রন বলল। ওরা সর্বত্রই আছে। ওরা ব্লাড ট্রেইটর এবং মাগলবর্নদের ভেতর ঘোরাফেরা করছে তাদের ধরিয়ে দিয়ে সোনা আয় করার জন্য। মিনিস্ট্রি থেকে বলা হয়েছে ওদের ধরিয়ে দিতে পারলে প্রত্যেকের জন্য পুরস্কার আছে। আমি ছিলাম একা এবং আমাকে দেখে মনে হচ্ছিল যে স্কুলের কোনো ছেলে। ওরা আমাকে দেখে সত্যিই ভারি উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল। মনে করেছে আমি কোনো স্কুল থেকে লুকিয়ে পড়া মাগলবর্ন। আমাকে মিনিস্ট্রিতে নিয়ে যাবার আগে খুব কৌশলে আমার কথা বলতে হয়েছে।

তুমি তাদেরকে কী বলেছিলে?

আমি তাদেরকে বলেছি যে আমার নাম স্ট্যান সানপাইক। প্রথম যার কথা মনে পড়েছে তার নাম বলে দিয়েছি।

তোমার কথায় ওরা বিশ্বাস করলো?

ওরা অতটা বুদ্ধিমান ছিল না। ওদের একজন তো ছিল ট্রোল, তার গায়ের গন্ধ….

রন ফিরে হারমিয়নের দিকে তাকালো। ধারণা করল যে এই রসের কথা শুনে হারমিয়ন হয়তো আরো একটু নরম হয়ে উঠছে। কিন্তু সে পা শক্ত করে একখানা পাথরের মত স্থির হয়ে বসে আছে।

যাহোক, ওদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়ে গেল আমি স্ট্যান কিনা তা নিয়ে। তখন আর চুপ করে থাকার উপায় রইল না। কিন্তু তখনো ওরা পাঁচজন। এবং আমি একা। ওরা আমার যাদুদণ্ডটিও নিয়ে নিয়েছে। ওদের ভেতরে দুজন মারামারি বাধিয়ে দিল। আর বাকীরা সেদিকে মনোযোগ দিল। আমাকে যে ধরে রেখেছিল তার পেটে প্রচণ্ড আঘাত করলাম। টান দিয়ে তার যাদুদণ্ডটি নিয়ে নিলাম। তাকে নিরস্ত্র করে তার হাত থেকে মুক্ত হয়ে ডিসাপ্যারেট করলাম। আমি ঠিকভাবে কাজটি করতে পারিনি। আবার আমি নিজে স্পিন্ট করেছি- রন তার ডান হাত উঁচু করে দেখালো দুটি আঙুলের নখ উধাও হয়ে গিয়েছে। হারমিয়ন শীতল চোখে সেদিকে তাকিয়ে দেখল। -এবং আমি তখন তোমরা যেখানে ছিলে সেখান থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছি। কিন্তু তারপর আমি সেই জায়গাটায় গেলাম যেখানে আমরা ছিলাম…কিন্তু তোমরা সেখান থেকে চলে গিয়েছ।

অবাক কথা! কি একটা মজার কাহিনী, হারমিয়ন বলল। তুমি অবশ্যই ভয় পেয়েছিলে। আর অন্যদিকে আমরা গোড্রিচ হলোতে চলে গিয়েছিলাম। দাঁড়াও ভাবতে দাও, তারপর যেন কি হল হ্যারি? ও মনে পড়েছে, ইউ-নো-হুর সাপটি দেখা দিল। সেটি আমাদের দুজনকে প্রায় মেরেই ফেলেছিল। তারপর স্বয়ং ইউ নো-হু-আসল। মাত্র এক সেকেন্ডের জন্য সে আমাদের ধরতে পারেনি।

কি? রন বলল, সে হারমিয়ন এবং হ্যারির মুখের দিকে তাকাতে থাকল। কিন্তু হারমিয়ন বিষয়টি গায়ে মাখল না।

চিন্তা করো যে সে নখ হারিয়েছে, হ্যারি। এতে আমাদের সমস্যার মধ্যে আরেকটি ঝামেলা তৈরি হয়েছে, তাই না?

হ্যারি শান্ত কণ্ঠে বলল, হারমিয়ন, রন এইমাত্র আমার জীবন বাঁচিয়েছে। হারমিয়নের ভাব দেখে মনে হল সে তার কথা শুনতে পায়নি।

একটা বিষয় আমি জানতে চাই, সে বলল, ফুটখানেক উঁচুতে রনের মাথার দিকে চোখ তুলে তাকাল। তুমি ঠিক কী ভাবে আজ রাতে আমাদের খুঁজে পেলে? এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা এতদিন জানতাম আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত কেউ আসতে পারবে না।

রন হারমিয়নের দিতে তাকাল। তারপর জিন্সের পকেট থেকে ছোট একটি জিনিস টেনে বের করল। এটি।

সে রনের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করল জিনিসটি কি হতে পারে।

সেই ডেলুমিনেটরটি? হারমিয়ন জানতে চাইল। সে এতটা বিস্মিত হয়েছে যে ঠাণ্ডাভাবে তাকাতে বা ক্ষেপে উঠতে ভুলে গেল।

রন বলল, এটির কাজ শুধু লাইট অফ করা আর অন করা না। আমি জানি কিভাবে এটা কাজ করে এবং কেন ঘটে। এবং কেন অন্য ভালো সময় ঘটল। কারণ আমি তোমাদের ছেড়ে যাবার পর থেকেই আবার ফিরে আসতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু আমি রেডিও শুনছিলাম ক্রিসমাসের দিন সকাল বেলা। আমি তখন তোমার কণ্ঠ শুনতে পেলাম।

রন তাকিয়ে আছে হারমিয়নের দিকে। তুমি রেডিওতে আমার গলা শুনতে পেলে? হারমিয়ন অবাক বিস্ময়ের সঙ্গে জানতে চাইল।

না, আমি লক্ষ্য করলাম তোমার গলার আওয়াজ আসছে আমার পকেটের ভেতর থেকে, সে ডেলুমিনেটরটি আবার তুলে ধরল। এই, এটার ভেতর থেকে।

এবং আমি ঠিক কি বলছিলাম? হারমিয়ন জানতে চাইল। তার গলার স্বর কিছুটা সন্দেহ এবং কিছুটা কৌতূহলি শোনা গেল।

তুমি আমার নাম বললে, রন এবং একটি, একটি যাদুদণ্ড নিয়ে কিছু একটা…।

হারমিয়নের মুখটি রঙিন হয়ে উঠল। হ্যারির মনে পড়ল; সেই প্রথমবার ও চলে যাবার পর রনের নাম ওরা উচ্চারণ করেছিল, যখন হ্যারির যাদুদণ্ডটি ভেঙ্গে গিয়েছিল। হারমিয়ন হ্যারির যাদুদণ্ড মেরামত করার বিষয়ে কথা বলার সময় রনের নাম নিয়েছিল।

তারপর আমি পকেট থেকে এটা বের করলাম, রন বলতে থাকল। সে ডেলুমিনেটরের দিকে তাকালো। আমি কোনো পার্থক্য দেখতে পেলাম না বা অন্যকিছু দেখতে পেলাম না। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম যে আমি তোমার নাম শুনেছি। তখন আমি এটিকে চাপ দিলাম। তখনই আমার রুম থেকে বাতি নিভে গেল, এবং অন্য একটি আলো আমার জানালা দিয়ে ঢুকল।

রন তার খালি হাতটি উপরে তুলল এবং তার সামনে তাক করল। তার চোখের সামনে কিছু একটা ভেসে উঠেছে। কিন্তু হ্যারি বা হারমিয়ন তা দেখতে পাচ্ছে না।

এটি একটি আলোর বল, নীলাভ রঙের। এমন আলো পোর্টকিতে দেখতে পেয়েছ, বুঝলে?

হ্যাঁ, হারমিয়ন এবং হ্যারি একই সঙ্গে বলে উঠল।

আমি বুঝতে পারলাম এসব এটারই কাজ, রন বলল। আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার জিনিসপত্রের সাথে এটিকে নিয়ে নিলাম। তারপর আমার রুকস্যাকে ভরে বাগানের উদ্দেশ্যে বের হয়ে এলাম।

ছোট বলের আলো সেখানে ভাসতে থাকল। এবং আমার জন্য অপেক্ষা করতে থাকল। আমি কাছে আসতেই এটি দুলতে থাকল। আমি এর পেছনের ছায়াটির ভেতর ঢুকলাম …..তখন…..আসলে এটি আমাকে ভেতরে প্রবেশ করিয়ে নিয়েছে।

সরি? হ্যারি বলল। সে কথাটি নিশ্চিত করে শুনতে পায়নি।

এটি আসলে আমার দিকে ভাসতে ভাসতে এসেছে, রন বলল। সে তার খালি হাতটি দিয়ে ইঙ্গিত করে বোঝালো। ঠিক আমার বুকের উপর, এবং সে দেখালো বুকের দিকে, ঠিক আমার বুকের উপর, এবং এটি ঠিক এখানে লাগল। এরপর সে বুকের একটি জায়গা দেখালো। আমি অনুভব করতে পারলাম এটি বেশ গরম। এবং যখন বুঝলাম এটি আমার ভেতরে ঢুকে গেছে তখন বুঝলাম আমাকে কি করতে হবে। আমি তখন জানতাম এটি আমাকে সেখানে নিয়ে যাবে যেখানে আমার যাওয়া প্রয়োজন। সুতরাং আমি ডিস্যাপারেট করলাম এবং পাহাড়ের এক পাশে এসে নামলাম। দেখি চারদিকে শুধু বরফ….

আমরা সেখানেই ছিলাম, হ্যারি বলল। আমরা দুরাত কাটিয়েছি। দ্বিতীয় রাতে আমার মনে হল, আমি অন্ধকারে কারো চলাফেরার শব্দ পাচ্ছি। তখন আমি উচ্চস্বরে ডাক দিয়েছি।

হ্যাঁ, ঠিকই আছে, সেটা হয়তো আমিই ছিলাম, রন বলল। তোমার প্রোটেকটিভ স্মেল বোধহয় কাজ করছিল। কারণ আমি তোমাকে দেখতে পাইনি বা তোমার কথা শুনতে পাইনি। যদিও আমি নিশ্চিত ছিলাম যে তোমরা আশেপাশেই আছো। ফলে আমি আমার স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে তোমাদের কারো দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। আমি চিন্তা করেছিলাম তাবু গুটিয়ে ফেলার সময় তোমাদেরকে দেখা যাবে।

হারমিয়ন বলল, না, আসলে আমরা অদৃশ্য হওয়ার আলখাল্লার নিচে থেকে ডিস্যাপারেট করেছিলাম। বিশেষ সতর্কতা হিসেবে আমরা এ ব্যবস্থা নিয়েছি। এবং আমরা খুব সকালে স্থান ত্যাগ করেছিলাম, কারণ হ্যারি বলেছিল, কেউ একজন চারদিকে ঘোরাফেরা করছে।

রন বলল, আমি সারাদিন ওই পাহাড়ের উপর অপেক্ষা করলাম। আশা করতে থাকলাম তোমাদের দেখা যাবে। কিন্তু যখন অন্ধকার হয়ে আসতে থাকল তখন বুঝলাম, আমি তোমাদেরকে হারিয়ে ফেলেছি। তখন আমি আবার ডেলুমিনেটরে চাপ দিলাম। নীল আলোটি বের হয়ে আবার আমার ভেতর প্রবেশ করল। এবং আমি ডিস্যাপারেট করে এখানে চলে এলাম। এই বনের ভেতর। তখনো আমি তোমাদের দেখতে পেলাম না। কিন্তু আমি আশা করলাম যে তোমাদের দুজনের একজনকে হয়তো দেখতে পাবো শেষ পর্যন্ত এবং হ্যারিকে দেখলাম। তবে হ্যাঁ, আমি প্রথমে ওই মাদী হরিনটিকে দেখেছি।

তুমি প্রথমে কী দেখেছ? হারমিয়ন তীব্র কণ্ঠে বলল। রন এবং হ্যারি তার কাছে পরের ঘটনাগুলো বর্ণনা করল। রূপালী মাদী হরিণ, তলোয়ারের ঘটনা শুনে থ হয়ে গেল। দুজনের দিকে তাকিয়ে ও ঝুঁকে পা বাড়িয়ে এমন আগ্রহ নিয়ে সে সব কাহিনী শুনতে থাকল। যে পা দুটো জোড়া করে রাখার কথা সেটা ভুলে গেল।

হারমিয়ন বলল, কিন্তু এটা অবশ্যই একটি প্যাট্রেনাস হবে। তুমি দেখতে পাওনি যে কে কাস্ট করেছে? তুমি কাউকে দেখতে পাওনি? এবং এই প্যাট্রোনাস তোমাকে তলোয়ারের কাছে নিয়ে গেছে। তারপর কি ঘটল?

রন ব্যাখ্যা করে বিস্তারিত বলল সে কীভাবে হ্যারিকে ডোবায় ঝাঁপ দিতে দেখেছে এবং অপেক্ষা করেছে তার উঠে আসার; কিভাবে সে বুঝতে পারল যে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। এবং ব্যাখ্যা করল কিভাবে সে ঝাঁপ দিয়ে হ্যারিকে উদ্ধার করল এবং তলোয়ারটি তুলে আনল। সে লকেটটি ভেঙে ফেলা পর্যন্ত বর্ণনা  দিয়ে থামল এবং ইতস্তত করতে থাকল। এবং হ্যারি তখন বলতে শুরু করল।

রন তলোয়ার দিয়ে কোপ দিল।

এবং তখন এটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, এরকম সহজ ব্যাপারটি? হারমিয়ন ফিসফিস করে বলল।

ওয়েল, সেটা….সেটা চিৎকার করে উঠল, হ্যারি আড়চোখে রনের দিকে তাকালো। এই যে সেটা। সে লকেটটা হারনিয়নের কোলের উপর ছুঁড়ে দিল। অতি আগ্রহ নিয়ে সে ওটা হাতে তুলে নিল এবং লকেটের ভাঙা ও খোলা পাটি দুটো দেখতে থাকল।

হ্যারি এখন মনে করল যে আর কোনো সমস্যা নেই। সে দুজনের মাঝখানের অদৃশ্য বাধাটি হারমিয়নের যাদুদণ্ড দিয়ে তুলে ফেলল। তারপর রনের দিকে ফিরল।

তুমি বলছিলে না যে ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে একটি বাড়তি যাদুদণ্ড পেয়েছ?

কি? রন বলল। সে তখন প্রফুল্ল চিত্তে হারমিয়নের লকেটটি পরিক্ষা করা দেখছিল। ও হ্যাঁ।

সে তার রুকস্যাকের একটি পকেট খুলল এবং ছোট কালো একটি যাদুদণ্ড টেনে বের করল। এই যে, আমি সব সময় এটিকে ব্যাক আপ হিসাবে রেখেছি যদি কখনো কাজে লাগে।

তুমি ঠিকই করেছ। হ্যারি বলল। সে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমারটা ভেঙে গেছে।

তুমি নিশ্চই দুষ্টুমি করছ? রন বলল। কিন্তু ঠিক তখনই হারমিয়ন পায়ের উপর ভর করে উঠে দাঁড়ালো। তাকে আবারো রাগত মনে হল।

হারমিয়ন ধ্বংস হয়ে যাওয়া হরক্রুক্সটি তার ব্যাগের ভেতর রাখল। তারপর কোনো কথা না বলে নিজের বিছানায় উঠে গেল।

রন নতুন যাদুদণ্ডটি হ্যারির হাতে দিল।

এখন অবস্থা ভাল হতে পারে বলে তুমি আশা করতে পারো। বিড়বিড় করে হ্যারি বলল।

হয়তো, রন বলল। আবার খারাপও হতে পারে। মনে করে দেখ সে আমার উপর কী আচরণটাই না করেছে? আমি এখনো ওগুলো বাতিল করিনি। হারমিয়ন কম্বলের নিচ থেকে কৃত্রিম রাগত স্বরে বলে উঠল। কিন্তু হ্যারি দেখল রন তার মেরুন রঙের পায়জামা বের করতে করতে মুচকি হাসছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *