১৭. বাথিলডার গোপনীয়তা

১৭. বাথিলডার গোপনীয়তা

 হ্যারি দাঁড়াও!

কী সমস্যা?

ওরা কেবল একটি অজানা কবরের ঠিক ফলক পর্যন্ত পৌঁছেছে। মনে হয়, কেউ একজন এখানে আছেআমাদের অনুসরণ করছে। আমি তোমাকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি। ওই যে ওই ঝোঁপের ভেতর!

ওরা একজন আরেকজনকে ধরে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তাকিয়ে আছে কবরস্থানের কালো দেয়ালের দিকে। হ্যারি কিছুই দেখতে পেল না।

তুমি কী নিশ্চিত?

 আমি কিছু একটা নড়তে দেখেছি। কসম খেয়ে বলতে পারি আমি দেখেছি..

হারমিয়ন হ্যারিকে ছেড়ে দিল নিজের যাদুদণ্ড টি বের করার জন্য।

আমরা তো দেখতে মাগলদের মত, হ্যারি যুক্তি দিল।

হ্যাঁ, মাগল অবশ্যই, তবে যারা এইমাত্র তোমার বাবা মায়ের কবরের উপর ফুল দিয়ে এল। হ্যারি, আমি নিশ্চিত সেখানে কেউ একজন ছিল এবং এখনও সেখানে আছে!

হ্যারির হিস্ট্রি অব ম্যাজিকের কথা মনে হল; কবরস্থানে ভূত থাকতে পারে। কিন্তু তাই যদি-? ঠিক তখনই ঝোঁপের ভেতর যে জায়গাটি হারমিয়ন দেখিয়েছে সেখানে আলগা বরফ ছলকে উঠল। ভূতরা তো বরফের ভেতর চলতে পারে না।

এটি একটি বিড়াল হবে, এক বা দুসেকেন্ড পর হ্যারি বলল। অথবা একটি পাখি। যদি ওটা কোনো ডেথ-ইটার হতো তাহলে এতক্ষণে আমাদের নিশ্চিত মৃত্যু হতো। কিন্তু যাই হোক, চলো আমরা এখান থেকে যাই। অদৃশ্য আলখাল্লাটাও পরে ফেলি।

কবরস্থান থেকে বের হওয়ার সময় ওরা বারবার পেছন ফিরে তাকালো। হ্যারি নিজে হারমিয়নকে বাধা দেয়ার ভান করেছে, কিন্তু নিজেই বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি। তাই কবরস্থানের গেট পর্যন্ত পৌঁছানোর পরে খুশি হল। ওরা পিচ্ছিল ফুটপাথে উঠে এল। ওরা অদৃশ্য হওয়ার আলখাল্লাটি আবার নিজেদের গায়ে চড়িয়ে নিল। বার-এ লোকের সংখ্যা আরো বেড়েছে, কথাবার্তার গুনজন শোনা যাচ্ছে। অনেক মানুষ একত্রে চার্চের সঙ্গীত গাইতে শুরু করেছে। তারা চার্চের পাশ দিয়ে যাবার সময় এই সঙ্গীতই শুনেছিল। হ্যারি একবার ভাবল ওরা বার-এর ভেতর গিয়ে আশ্রয় নিতে পারে কিনা। কিন্তু সে কিছু বলার আগেই হার মিয়ন বিড়বিড় করে বলল, চলো এই দিক দিয়ে যাই। সে হ্যারিকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যেদিক দিয়ে গ্রামে ঢুকেছিল তার উল্টো দিক দিয়ে গ্রাম থেকে বের হওয়ার পথ ধরল। হ্যারি বুঝতে পারল কটেজগুলো শেষ হয়ে যাবার পর বিস্তর ফাঁকা এলাকা রয়েছে। ওরা যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি হাঁটতে থাকল। নানা রঙের আলোতে ভরা জানালাগুলো পার হতে থাকল। ক্রিসমাস-ট্রির বাতিগুলো পাতলা পর্দার ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে।

আমরা বাথিলডার বাড়ি খুঁজে বের করব কীভাবে? হারমিয়ন জানতে চাইল। সে এখনো একটু একটু কাঁপছে এবং বারবার ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকাচ্ছে। হ্যারি? তুমি কী ভাবছ, হ্যারি?

সে হ্যারিকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু হ্যারি ওর কথায় মনোযোগ না দিয়ে স্থির হয়ে আছে। সে কটেজগুলোর পরেই একটি জায়গার গভীর অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকলো। পরের মুহূর্তেই সে হারমিয়নকে টেনে সেদিকে নিতে থাকল। বরফের উপর হারমিয়নের পা পিছলে গেল।

হ্যারি

দেখ… হারমিয়ন দেখ…

আমি দেখতে…ওহ!

হ্যারি পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে : ফিডেলিয়াস চার্ম জেমস এবং লিলির সঙ্গেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ১৬ বছর আগে হ্যাগ্রিড যে ধ্বংসস্তূপ থেকে হ্যারিকে তুলে নিয়েছিল সেখানে এখন আগাছা ঝোপঝাড়ু বড় হয়ে উঠেছে। সেগুলো অন্ধকার এবং বরফে ডুবে আছে। হ্যারি নিশ্চিত, এখানেই কার্সটি বিস্ফোরিত হয়েছিল। সে এবং হারমিয়ন গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বাড়িগুলোর সারি বরাবর ধ্বংসস্তূপের দিকে তাকালো।

হারমিয়ন ফিসফিস করে বলল, আমি ভাবছি এখানে বাড়িটি আবার কেন নির্মাণ করা হয়নি?

হ্যারি উত্তরে বলল, হয়তো পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব নয়। হয়তোবা এটি ডার্ক ম্যাজিকের আঘাত এবং সে কারণে তুমি ইচ্ছা করলেই এটিকে মেরামত বা পুনর্নির্মাণ করতে পারো না?

হ্যারি আলখাল্লার নিচ থেকে একটি হাত বের করলো এবং বরফে ঢেকে থাকা মোটা রডের রঙ করা গেটটি ধরল। খোলার জন্য নয়, শুধু বাড়িটির একটি অংশ ছুঁয়ে দেখজন্য।

আমরা তো বাড়িটির ভেতরে যাচ্ছি না? সেটা নিরাপদ নয়। হয়তো–ওহ হ্যারি, দেখ!

হ্যারির গেটটি ছোঁয়ার কারণেই ঘটনাটা ঘটল। ওদের সামনের জায়গাটিতে একটি চিহ্ন ভেসে উঠল। লতাপাতা, ঝোপঝাড়ের ভেতর দিয়ে একটি দ্রুত ফুটে ওঠা ফুলের মত পাশের গাছের উপর সোনালী অক্ষর ভেসে উঠল। তাতে লেখা :

এই স্থানে ১৯৮১ সালের ৩১ অক্টোবর
লিলি এবং জেমস পটার প্রাণ দিয়েছেন।
তাদের একমাত্র সন্তান হ্যারি
কিলিং কার্স থেকে রক্ষা পেয়ে বেঁচে আছে।
এই স্থানটি মাগলদের জন্য অদৃশ্য।
এটির ধ্বংসাবশেষকে পটারদের স্মৃতি হিসেবে রাখা হয়েছে।
আর সেই সহিংসতার কথা বিবেচনা করে রাখা হয়েছে,
যা পরিবারটিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।

এই লেখাটির চারপাশে হিজিবিজি করে অন্য লেখা রয়েছে। যেসব যাদুকর এবং মহিলা যাদুকর এখানে ভিজিট করতে এসেছে তারা জীবিত ছেলেটির ব্যাপারে লিখেছে। কেউ কেউ শুধুমাত্র নাম স্বাক্ষর করেছে অনপনেয় কালি দিয়ে। কেউ কেউ কাঠের উপর শুধু ইনিসিয়াল দিয়েছে। এবং অন্য অনেকে তাদের বার্তা লিখে রেখেছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিকটি ম্যাজিক্যাল গ্রাফিটি করা। প্রায় সবাই একই রকম লিখেছেন।

গুডলাক হ্যারি, তুমি যেখানেই থাকো না কেন,
যদি তুমি এই লেখা পড় হ্যারি,
জানবে আমরা তোমার সঙ্গে আছি,
লং লিভ হ্যারি পটার।

হারমিয়ন বিরক্তির সঙ্গে বলল, তাদের এই স্মৃতিফলকের উপর লেখা উচিত হয়নি।

কিন্তু হ্যারি তার দিকে তাকিয়ে হাসল।

এটা ব্রিলিয়ান্ট! আমি খুবই খুশি যে তারা লিখেছে। আমি….

হ্যারি কথার মাঝখানে থেমে গেল। একটি নিঃশব্দ ভারী শরীর তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। দূরের চত্বরটির উজ্জ্বল আলোয় শরীরটিকে ছায়ার মত লাগছে। যদিও বিচার করা কঠিন, কিন্তু তারপরও হ্যারি ভাবল শরীরটি একজন মহিলার। সে ধীরে ধীরে আগাচ্ছে। সম্ভবত বরফের উপর পিছলে না যায় সে জন্য সতর্ক হয়ে হাঁটছে। তার ঝুঁকে পড়ে হাঁটার ধরণ দেখে বোঝা যায় অনেক বয়স হয়েছে। ওরা দুজন নিরবে দাঁড়িয়ে তার কাছে আসাটা দেখতে থাকল। হ্যারি অপেক্ষা করতে থাকল মহিলাটি পাশের কোনো একটি কটেজে যাবে। কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারল যে সে কোনো কটেজে ঢুকবে না। অবশেষে সে ওদের কাছ থেকে কয়েক গজ দূরে এসে দাঁড়াল। বরফ ঢাকা রাস্তার ঠিক মাঝখানটায় এসে ওদের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকল।

হারমিয়ন হ্যারির হাতে একটি খোঁচা দিল। কিন্তু তার কোনো প্রয়োজন ছিল। হ্যারির বুঝতে কোনো বাকি থাকল না যে এই মহিলা কোনো মাগল নয়। সে দাঁড়িয়ে এমন একটি বাড়ি দেখছে যে বাড়িটি তার কাছে পুরোপুরি অদৃশ্য থাকার কথা, যদি সে একজন মহিলা যাদুকর না হয়ে থাকে। তাকে যাদুকর ভাবার আরো একটি কারণ হল এত রাতে, আবার এত ঠাণ্ডার ভেতর কোনো মহিলার বের হয়ে এসব পুরাতন ধ্বংসাবশেষ দেখাটা স্বাভাবিক নয়। অন্যদিকে সাধারণ ম্যাজিকের নিয়মানুসারে হারমিয়ন এবং হ্যারিকেও তার দেখার কথা নয়। কিন্তু তারপরও হ্যারির খুব গভীরভাবে মনে হলো যে, মহিলা হ্যারি এবং হারমিয়নের উপস্থিতির কথা জানে। এবং ওদের পরিচয়ও জানে। হ্যারি যখন মনে মনে এসব হিসাব নিকাশ করছে ঠিক তখনই মহিলা গ্লাভস পরা একটি হাত তুলে ইশারায় ওদের কাছে ডাকল।

হারমিয়ন ভয়ে অদৃশ্য আলখাল্লার নিচে হ্যারির আরো কাছে চলে এল। সে শক্ত করে হ্যারির হাত ধরে রেখেছে।

সে জানল কী করে?

হ্যারি মাথা দোলালো। মহিলা আবার আরো দৃঢ়ভাবে হাত তুলে ডাকল। হ্যারি অনেক কারণে তার ডাকে সাড়া না দেয়ার কথা ভাবল। কিন্তু মুখোমুখি ফাঁকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিটি মুহূর্তে তার পরিচয় সম্পর্কে হ্যারির সন্দেহ বাড়তে থাকল।

এমন কি হতে পারে যে এই মহিলা মাসের পর মাস এখানে ওদের জন্যই অপেক্ষা করছে? হতে পারে ডাম্বলডোর তাকে ওদের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। বলেছিলেন যে এক সময় হ্যারি এখানে আসবেই। এমন হতে পারে

যে এই মহিলাই ছিলেন কবরস্থানের পাশের সেই ঝোপটিতে এবং ওদেরকে অনুসরণ করে এখানে এসেছে? এমনকি মহিলা যে ওদের দেখতে পাচ্ছে এটি ডাম্বলডোরের একটি নিজস্ব ধরণের ক্ষমতা। এমন ক্ষমতার মুখোমুখি হ্যারি কখনো হয়নি।

অবশেষে হ্যারি কথা বলে উঠল। হারমিয়ন ওর কথা বলার কারণে আঁৎকে লাফিয়ে উঠল।

আপনি কী বাথিলডা?

চাদরে জড়ানো শরীরটি মাথা দোলালো এবং আবার কাছে ডাকল।

অদৃশ্য আলখাল্লার নিচে হ্যারি এবং হারমিয়ন দুজন দুজনের দিকে তাকালো। হ্যারি ভূরু উপরে তুলে জানতে চাইল, হারমিয়ন মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিল।

ওরা মহিলার দিকে পা বাড়াল। ঠিক তখনই মহিলা খুড়িয়ে খুড়িয়ে যে পথ দিয়ে এসেছিল সেদিকে ফিরে হাঁটতে থাকলেন। কয়েকটি বাড়ি পার হয়ে একটি গেটের দিকে ওদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল। ওরা তাকে অনুসরণ করে একটি বাগানের ভেতর দিয়ে এগিয়ে গেল। বাথিলডার হাতে দরোজার চাবি। তিনি এক মুহূর্ত দ্বিধা করলেন, তারপর দরোজা খুললেন। নিজে সরে দাঁড়িয়ে ওদেরকে ভেতরে ঢুকতে দিলেন।

তার গা দিয়ে একটা বোটকা গন্ধ, অথবা তার ঘরের থেকে গন্ধটা আসছে। হ্যারি পাশ দিয়ে ঘরে ঢোকার সময় নাক আটকে ধরল। ভেতরে ঢুকে আলখাল্লা টেনে খুলে ফেলল। এবার হ্যারি তার পাশে দাঁড়াল। দেখতে পেল তিনি কতটা আকারে খাটো। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন। তিনি হ্যারির বুকের সমান। তিনি ওদের পেছনে দরোজাটা বন্ধ করে দিলেন। এরপর তিনি হ্যারির মুখোমুখি হলেন। তার চোখ দুঠোতে নানা রকমের দাগ পড়েছে। চোখের পাশ দিয়ে মোটা চামড়ার ভাঁজ পড়েছে। তার সারা মুখে শিরাগুলো জেগে উঠেছে। হ্যারি ভাবল মহিলা ওর সব কথা বুঝতে পারবে কি না। যদি সে পারে তাহলে সে যে টাক মাথার মাগলের চেহারা চুরি করেছে সেটাও বুঝতে পারবে।

বহু পুরোনো ধুলা, অনেক দিনের না ধোয়া কাপড়ের এবং বাসী খাবারের গন্ধ তীব্র হয়ে উঠেছে। ছেঁড়া, কালো শালের ভেতর দিয়ে সাদা চুলের মাথাটির চামড়া দেখা যাচ্ছে।

বাথিলডা? হ্যারি আবার বলল।

তিনি আবার মাথা নাড়লেন। হ্যারি নিজের গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা লকেটটির ব্যাপারে সজাগ হয়ে উঠল। হরক্রুক্সটির ভেতরে টিকটিক করে উঠছে মাঝে মাঝেই। এটা কি বুঝতে পেরেছে যে এটির ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা কাছেই রয়েছে?

বাথিলডা হরমিয়নকে ঠেলে দিয়ে পাশের একটি কক্ষের দিকে চলে গেলেন। মনে হল যেন হারমিয়নকে দেখতেই পাননি। যে রুমটিতে গেলেন সেটি সম্ভবত বসার রুম।

হারমিয়ন নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, হ্যারি, আমার কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে।

তার সাইজটার দিকে লক্ষ কর। আমাদের প্রয়োজন হলে তাকে কাবু করতে পারব, হ্যারি বলল। শোনো, তোমাকে বলে রাখি, আমি আগেই জানি সে একবারে সহজ নয়। মুরিয়েল তাকে খেপাটে বলে ডাকেন।

আসো! রুমটি থেকে বাথিলডা ওদের ডাক দিলেন।

হারমিয়ন লাফ দিয়ে হ্যারিকে এসে শক্ত করে ধরল।

কোনো সমস্যা নেই, হ্যারি আবার ওকে আস্বস্ত করল। হারমিয়নকে সঙ্গে করে ভেতরের রুমটিতে গেল।

বাথিলডা দুর্বল পায়ে রুমটি দিয়ে ঘুরছেন। তিনি ভেতরে মোমের আলো জ্বালিয়েছেন। কিন্তু রুমের ভেতর এখনো অন্ধকার ভাব রয়ে গেছে। অল্প আলোর ব্যবস্থা এখানে, যাতে প্রচণ্ড ধুলো বালি বোঝা না যায়। ওদের পায়ের নিচে অনেক ধুলো অনুভব করলো। হ্যারি নাকেও ধুলার গন্ধ পেল। স্যাঁতসেতে এবং ফাঙ্গাসের গন্ধ, কিছু একটা মন্দভাব অনুভূত হচ্ছে। হ্যারি ভাবল সর্বশেষ কবে কে দেখেছে বাথিলডা এ ঘরটিকে পরিস্কার এবং রঙ করেছে। তাকে দেখে মনে হয় তিনি যে যাদু জানে সেটা ভুলে গেছেন। তিনি হাতে মোমবাতি জ্বালাতে চেষ্টা করছেন। অথচ তার গায়ের কাপড়ে আগুন ধরে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে আলো জ্বালাতে গিয়ে।

আমাকে করতে দিন, হ্যারি প্রস্তাব করল। সে বাথিলডার হাত থেকে ম্যাচটি নিল। মোমবাতিতে আগুন দেয়ার সময় বাথিলডা হ্যারিকে দেখতে থাকলেন। হ্যারি একে একে মোমের চাকতিগুলো জ্বালিয়ে দিল। পাশের টেবিলে ভাঙা কাপ এবং আগোছালো ভাবে বই রেখে দেয়া আছে।

শেষ যে জায়গাটিতে হ্যারি মোমবাতি জ্বালালো সেখানে চেস্ট ড্রয়ারে বেশ কিছু ছবি দেখতে পেল। আলো জ্বলে উঠতেই ধুলো মাখা ছবির উপর একটি প্রতিচ্ছায়া দেখা গেল। হ্যারি দেখল ছোট ছবিগুলোর ভেতর একটু নড়াচড়া হচ্ছে। বাথিলডা মোমবাতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। হ্যারি এই ফাঁকে বিড়বিড় করে বলল, টেরো। সঙ্গে সঙ্গে ছবিগুলোর উপর থেকে ধুলাবালি পরিস্কার হয়ে গেল। এবং হ্যারি লক্ষ করল যে প্রায় অর্ধেক ডজন ছবি সবচেয়ে বড় এবং সাজানো ফ্রেম থেকে মুছে গেল। সে ভাবল বাথিলডা বা অন্য কেউ কি ছবিগুলো সরিয়ে ফেলল? ঠিক তখনই অনেকগুলো ছবির পাশে একটি ছবির দিকে হ্যারির দৃষ্টি পড়ল। এবং হ্যারি ছো মেরে ছবিটি হাতে তুলে নিল।

এই ছবিটি সেই সোনালী চুলের মায়াবি চেহারার চোর ছেলেটির, যাকে গ্রেগোরোভিচের জানালায় দেখা গিয়েছিল। ফ্রেমের ভেতর থেকে হ্যারির দিকে তাকিয়ে অলসভঙ্গীতে হাসছে। এবং সঙ্গে সঙ্গে হ্যারি ধরে ফেলল যে এর আগে ছেলেটিকে কোথায় দেখেছে : ইন দ্য লাইন এন্ড লাইফ অফ ডাম্বলডোর বইটিতে রিতা স্কিটার হারিয়ে যাওয়া যে ছবিগুলো ব্যবহার করেছেন তারই একটিতে কিশোর ডাম্বলডোরের হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

মিস-মিসেস-ব্যাগশট? হ্যারি বলল। তার গলা একটু কেঁপে উঠল। এই ছেলেটি কে?

বাথিলডা ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে হারমিয়নের মোমে আগুন জ্বালতে থাকা দেখছিলেন।

মিস ব্যাগশট? হ্যারি আবার বলল। সে সামনে এগিয়ে গেল। তার হাতে ছবিটি। ফায়ার প্লেসে তখন আগুন জ্বলে উঠল। বাথিলডা তার গলা শুনে চোখ তুলে তাকালেন। অন্যদিকে হ্যারির বুকের উপর হরক্রুক্সটি আরো দ্রুত ধুকধুক করতে থাকল।

এই লোকটি কে? হ্যারি ছবিটি সামনের দিকে বাড়িয়ে ধরে আবার বলল।

তিনি মন দিয়ে ছবিটি দেখে হ্যারির দিকে মুখ তুলে তাকালেন।

আপনি কী জানেন এই ছবিটি কার? হ্যারি আবার ধীরে ধীরে কিন্তু উচ্চস্বরে। বলল। এই লোকটি, আপনি একে চেনেন? এর নাম কি?

বাথিলডার তাকানো দেখে মনে হল সে ছবিটি সম্পর্কে নিশ্চিত না। হ্যারি ভীষণভাবে হতাশা বোধ করল, ভাবল, রিতা স্কিটার বাথিলডার স্মরণ শক্তির উপর এতটা ভরসা রাখলেন কীভাবে?

এই লোকটি কে? হ্যারি উচ্চস্বরে এবার জানতে চাইল।

হারমিয়ন বলল, হ্যারি, তুমি কী করছ?

হারমিয়ন, এই ছবিটি, এটি সেই চোরের যে গ্রেগোরোভিচের ওখান থেকে চুরি করেছিল! এবার বাথিলডার দিকে তাকিয়ে হ্যারি বলল, প্লিজ! এটি কে?

কিন্তু বাথিলডা শুধু মুখ তুলে হ্যারির দিকে তাকালেন।

হারমিয়ন এবার গলার স্বর একটু শক্ত করে বলল, আপনি কেন আমাদেরকে আপনার সঙ্গে আসতে বললেন মিসেস-মিস বাথিলডা? আপনি কী আমাদেরকে কিছু বলতে চেয়েছিলেন?

হারমিয়নের কথা তিনি শুনতে পেয়েছেন বলে মনে হল না। বাথিলডা কয়েক পা এগিয়ে হ্যারির কাছে গেলেন। তিনি ছোট করে মাথা ঝাঁকিয়ে তারপর হলরুমের দিকে তাকালেন।

হ্যারি জানতে চাইল, আপনি কি আমাদেরকে চলে যেতে বলছেন?

তিনি আবার সেই একই রকম ইঙ্গিত করলেন। এবার তিনি আঙুল তুলে প্রথমে হ্যারিকে তারপর নিজের দিকে ইঙ্গিত করলেন।

ও আচ্ছা…. হারমিয়ন, আমার মনে হয় তিনি চাচ্ছেন আমি তার সঙ্গে উপরের তলায় যাই।

হারমিয়ন বলল, ঠিকাছে, চলো যাই।

কিন্তু যখনই হারমিয়ন যেতে উদ্যোত হল তখন বাথিলডা অতি শক্ত করে মাথা নাড়লেন। তিনি আবার প্রথমে হ্যারি তারপর নিজের দিকে ইঙ্গিত করলেন।

তিনি চাচ্ছেন শুধু তিনি আর আমি যাবো।

কেন? হারমিয়ন জানতে চাইল। মোমবাতি জ্বলা রুমটাতে তার কণ্ঠস্বর পরিস্কার শোনা গেল। বৃদ্ধ মহিলা উচ্চশব্দ করে মাথা নাড়লেন।

হয়তো ডাম্বলডোর তলোয়ারটি আমার কাছে দিতে বলেছেন। এবং শুধু আমার কাছেই।

তুমি কী নিশ্চিত যে তিনি জানেন তুমি কে?

হ্যাঁ, হ্যারি বলল। সে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল। আমার ধারণা তিনি জানেন।

আচ্ছা ঠিকাছে। কিন্তু হ্যারি খুব তাড়াতাড়ি করবে। হ্যা

রি বাথিলডার দিকে তাকিয়ে বলল, তাহলে চলুন।

মনে হল তিনি বুঝতে পেরেছেন। তিনি ঘুরে দরোজার দিকে রওয়ানা দিলেন। হ্যারি পেছন থেকে হারমিয়নের দিকে ঘুরে তাকালো। ওকে আশ্বস্ত করে হাসল। কিন্ত হারমিয়ন দেখেছে কিনা সে ব্যাপারে হ্যারি নিশ্চিত না। চারপাশে মোমবাতির মাঝে হারমিয়ন হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে তাকিয়ে আছে বইয়ের তাকের দিকে। হ্যারি রুম থেকে বের হওয়ার সময় টুক করে সেই চোরের ছবিটি জ্যাকেটের পকেটে পুরে ফেলল। হারমিয়ন বা বাথিলডা কেউ বিষয়টি দেখতে পেল না।

উপরে ওঠার সিঁড়িটা বাকা এবং সংকীর্ণ। হ্যারি একবার মনে করল উপরে ওঠার সময় পেছন থেকে বাথিলডা যাতে তার উপর পড়ে না যায় সে জন্য তার পিঠের উপর হাতটা রাখবে। দেখে মনে হচ্ছে পড়ে যেতে পারেন। ধীরে ধীরে একটু ঘুরে ঘুরে তিনি উপরের তলায় উঠে গেলেন। এবং সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই ডানপাশের প্রথম দরোজার দিকে ঘুরলেন। হ্যারিকে পথ দেখিয়ে একটি নিচু ছাদের বেডরুমের ভেতর নিয়ে গেলেন।

একটি নিকষ কালো ঘর, ভয়ানক দুর্গন্ধ। বাথিলডা রুমটি আটকে দেয়ার আগেই হ্যারি বেডের নিচ থেকে বেরিয়ে থাকা চেম্বার পট দেখতে পেল। ঘরটির দরোজা বন্ধ করে দিতেই অন্ধকার গিলে ফেলল।

লিউমস! হ্যারি বলল। এবং তার যাদুদণ্ড থেকে আলো ছড়িয়ে পড়ল। হ্যারি আবার শুরু করতে গেল। এই সময়ের মধ্যে বাথিলডা নিরবে হ্যারির একেবারে কাছে চলে এসেছে। বাথিলডা ফিসফিস করে বললেন, তুমি হ্যারি পটার?

হ্যাঁ, আমি হ্যারি পটার।

তিনি বিনয়ের সঙ্গে মাথা নাড়লেন। হ্যারি অনুভব করল হরক্রুক্সটি ওর নিগের হৃদপিণ্ডের চেয়ে অধিক দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়ে ধুকধুক করছে। হ্যারির কাছে ভয়ানক অস্বস্তিকর মনে হতে থাকল।

আপনার কাছে কি আমার জন্য কোনো সংবাদ আছে? হ্যারি বলল। মনে হল হ্যারির যাদুদণ্ডের আলোর কারণে বাথিলডা অস্বস্তি বোধ করছেন।

হ্যারি আবার প্রশ্ন করল, আপনার কাছে কি আমার জন্য কোনো সংবাদ আছে?

ঠিক তখন বাথিলডা চোখ বুজলেন। এবং একই সঙ্গে কয়েকটি ঘটনা ঘটল। হ্যারি স্কারটিতে জ্বালাপোড়া করতে শুরু করল; হরক্রুক্সটি এমনভাবে লাফাতে শুরু করল যে হ্যারির সোয়েটারের উপর দিয়ে সেটির লাফালাফি দেখা যেতে থাকল। অন্ধকার গন্ধময় রুমটি মুহূর্তের জন্য যেন ঠিক হয়ে গেল। সে আনন্দে ভরে উঠল এবং ঠাণ্ডা একটি কণ্ঠ উচ্চস্বরে তার ভেতর থেকে বলে উঠল, ওকে ধর!  

হ্যারি যেখানে দাঁড়িয়েছিল সেখানেই দুলে উঠল। মনে হল যেন অন্ধকার দুর্গন্ধময় রুমটি আবার ওকে ঘিরে ধরেছে। হ্যারি ঠিক বুঝতে পারছে না ঘটনাটি কী ঘটছে।

আপনার কাছে কি আমার জন্য কোনো সংবাদ আছে? হ্যারি তৃতীয়বারের মত বলল আরো অনেক উচ্চকণ্ঠে।

ওইদিকে দেখ, বাথিলডা ফিসফিস করে বললেন। হাত তুলে এক কোণের দিকে দেখালেন। হ্যারি যাদুদণ্ডটি সেদিকে তুলে ধরল। দেখল পর্দা দেয়া জানালার ঠিক নিচেই একটি বিশৃংখল ড্রেসিং টেবিলের ছায়ার মত।

এবার আর বাথিলডা হ্যারিকে পথ দেখালেন না। হ্যারি বাথিলডা এবং অগোছানো একটি বেডের মাঝখানে চলে এল। সে বাথিলডা থেকে অন্যদিকে চোখ সরাতে চায় না।

এটা কি? সে ড্রেসিং টেবিলের কাছে পৌঁছে বলল। টেবিলটি কোমর সমান উঁচু। দেখে এবং গন্ধ শুকে মনে হচ্ছে নোংরা জামাকাপড়ের স্তূপ।

ওখানে, বাথিলডা আবার বললেন। হাত দিয়ে আকারবিহীন বিশাল জায়গার দিকে দেখালেন।

হ্যারি সেদিকে তাকাতেই সে জবুথবু করা জায়গা থেকে তলোয়ারের মুক্তা খচিত বাট দেখতে পেল। বাথিলডা অস্বাভাবিক গতিতে নড়ে উঠলেন। হ্যারি চোখের কোণ দিয়ে তা দেখতে পেল। হ্যারি সেদিকে ফিরে তাকাতেই এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে তার হাত পা অবশ হয়ে এল। বাথিলডার শরীর নিচে পড়ে যাচ্ছে। আর সেই বিখ্যাত সাপটি বাথিলডার গলা যেখানে পড়ে আছে সেখান থেকে ধেয়ে আসছে।

হ্যারি তার যাদুদণ্ডটি তুলতে তুলতেই সাপটি আঘাত করল। হ্যারির হাতের উপর সাপের ছোবল এত দ্রুতগতিতে লাগল যে তার হাত থেকে যাদুদণ্ডটি সিটকে পাক খেতে-খেতে উপরের ছাদের সঙ্গে গিয়ে বাড়ি খেল। যাদুদণ্ডটির আলো ঘরের ভেতর ঘুরপাক খেল তারপর নিভে যেতে থাকল। হ্যারি শরীরের সাথে মেঝের মাঝামাঝি জায়গায় এমন একটি প্রচণ্ড বাড়ি খেল যে ভেতরের সব বায়ু বের হয়ে আসল। হ্যারি পেছনের দিকে ড্রেসিং টেবিলের উপর পড়ল এক বোঝা নোংরা কাপড়ের ভেতরে

হ্যারি সঙ্গে সঙ্গে গড়িয়ে এক পাশে চলে গেল। সামান্য এক ইঞ্চির জন্য সাপের বিশাল লেজটি থেকে রক্ষা পেল। লেজটি ধরাম করে টেবিলের উপর পড়ল। মাত্র এক সেকেন্ড আগেই হ্যারি সেখানে ছিল। টেবিলের কাঁচের ভাঙা টুকরোগুলো হ্যারির উপর এসে পড়ল। হ্যারি মেঝের উপর বাড়ি খেল। মেঝেতে পড়া অবস্থায় সে হারমিয়নের ডাক শুনতে পেল, হ্যারি?

হ্যারি উত্তর দেয়ার মত দম বুকে নিতে পারছে না। এরপর প্রচণ্ড কিছু একটা হ্যারিকে মেঝের সঙ্গে চেপে ধরল। ও উপরে একটি শক্তিশালী পেশিবহুল কিছু অনুভব করল

না!, হ্যারি দম নিতে চেষ্টা করে বলল। সে মেঝের সাঙ্গে লেপ্টে আছে।

হ্যা! ফিস ফিস করে একটি কণ্ডস্বর বলল। ইয়েস! ধরেছি….তোকে ধরেছি….ধরেছি..

অ্যাকসিও….অ্যাকসিও ওয়্যাভ….।

 এতে কিছুই কাজ হল না। অতি দ্রুত হ্যারির যাদুদণ্ডটি দরকার। সাপটি হ্যারির শরীর কুণ্ডলি পাকিয়ে চেপে ধরছে। তার ভেতর থেকে চেপে সব বায়ু বের করে দিচ্ছে। হরক্রুক্সটি যেন বুকের ভেতরে ঢুকে যেতে চাচ্ছে চাপ পড়ার কারণে। একটি বরফের চাকা যেন জীবন্ত হয়ে উঠে থরথর করে কাপছে তার নিজের ধুকধূক করা হৃদপিণ্ডের কাছেই। হ্যারির মাথার ভেতরে শীতল আলোর প্রবাহ বয়ে যেতে থাকল। সমস্ত চিন্তা মাথার ভেতর থেকে ঝড়ের গতিতে ওলোটপালট হতে থাকল। নিজের দম আটকে আসতে থাকল দূরে সে পায়ের শব্দ শুনতে পেল। সবকিছু কেমন যেন….

একটি ধাতব হৃদপিণ্ড তার বুকের উপর বাড়ি দিচ্ছে, হ্যারির মনে হল এখন সে উড়ছে, হৃদপিণ্ডের উপর ভর করে উড়ছে। তার এখন কোনো ব্রুমস্টিক বা থ্রেস্টাল দরকার নেই….

হঠাৎ করে হ্যারি অন্ধকার দুর্গন্ধের মধ্যে যেন জেগে উঠল। নাগিনী ওকে ছেড়ে দিয়েছে। হ্যারি তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো এবং দেখল সাপটি সোজা আকার ধারণ করেছে একটি আলোর সামনে। সাপটি আঘাত করল। এবং হারমিয়ন চিৎকার করে একদিকে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল। তার হাতের যাদুদণ্ড থেকে ছুঁড়ে দেয়া কার্সটি গিয়ে জানালার উপর লাগল। জানালার কাঁচ টুকরোটুকরো হয়ে ভেঙে পড়ল। ঠাণ্ডা হাওয়ায় ঘর ভরে উঠল। হ্যারি আরো একবার বৃষ্টির মত ভাঙা কাঁচ ছুটে আসায় লাফ দিল। তার পা পেন্সিল জাতীয় কোনো একটা কিছুর উপর পড়ল, সেটি হ্যারির যাদুদণ্ড

সে ঝুঁকে পড়ে সেটি তুলে নিল। কিন্তু রুমটি সাপে ভরে গেছে। সাপটির লেজ ঝটপট বাড়ি দিচ্ছে। হারমিয়নকে দেখা গেল না। মুহূর্তের ভেতর হ্যারির মধ্যে একটি অজানা আশঙ্কা কাজ করল। কিন্তু তখনই বিকট জোরে একটি শব্দ হল এবং লাল আলো ঝলকে উঠল। সাপটি শুন্যে উঠে গেল। এটি উঠে যাবার সময় হ্যারিকে প্রচণ্ড আঘাত করল। ভারী এবং বিশাল শরীরের কুণ্ডলির পর কুন্ডলি সিলিঙের দিকে উঠল। হ্যারি তার যাদুদণ্ডটি তুলল। কিন্তু দণ্ডটি তোলামাত্র তার স্কারে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে থাকল। কয়েক বছরের ভেতরে এটিই বোধহয় সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছে এই মুহূর্তে।

সে আসছে! হারমিয়ন সে আসছে!

হ্যারি চিৎকার করার সময় সাপটি নিচে পড়ল। ভয়ানকভাবে হুসহুস করছে। সবকিছু একটা হট্টগোলের ভেতর পড়ল। আবার উঠে হ্যারিকে আঘাত করার চেষ্টা করলে সে দ্রুত সরে গেলে এবার সাপটি দেয়ালের তাকের সঙ্গে বাড়ি থেলো। তাকের জিনিসপত্র সব টুকরোটুকরো হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। হ্যারি বিছানার উপর দিয়ে লাফ দিল এবং কালো ছায়াটাকে গিয়ে ধরল। সে জানে ওই ছায়াটি হারমিয়ন

তাকে বেডের উপর দিয়ে টেনে নেয়ার সময় হারমিয়ন ব্যাথায় ককিয়ে উঠল। সাপটি আবার জেগে উঠছে। কিন্তু হ্যারি জানে এর চেয়ে বড় বিপদ এগিয়ে। আসছে। হয়তো এতক্ষণে গেটের কাছে চলে এসেছে। স্কারের কারণে হ্যারির মাথার ব্যাথায় ছিঁড়ে পড়ার যোগাড় হয়েছে

হ্যারি হারমিয়নকে টেনে নিয়ে দৌড়াতে থাকলে সাপটি আবার আঘাত করল। হারমিয়ন চিৎকার করে বলল, কনফ্রিংগো!। তার ছুঁড়ে দেয়া স্পেলটি ঘর ভরে ঘুরল। ওয়্যারড্রোবের কাঁচটি বিস্ফোরিত হল। স্পেলটি ওদের দিকে বাউন্স করে ফিরে এল। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত বাউন্স করতে থাকল। এর আঘাতে হ্যারির হাতের উল্টো পিঠে তাপ অনুভব করল এবং জ্বালাপোড়া করতে থাকল। ওর গাল কাঁচের আঘাত লেগে বেশ খানিকটা কেটে গেছে। ওই অবস্থাতেই হ্যারি হার মিয়নকে সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে বেডের থেকে ভাঙা ড্রেসিং টেবিলের উপর লাফ দিল এবং সেখান থেকে ভেঙে পড়া জানালা দিয়ে বাইরের দিকে শুন্যের ভেতর ঝাঁপ দিল। হারমিয়ন চিৎকার করে উঠল। তার চিৎকারে বাইরে রাতের অন্ধকারে প্রতিধ্বনি উঠল। তখনো ওরা শুন্যে

ঠিক তখনই যেন হ্যারির স্কারটি ফেটে পড়ল। সে যেন ভন্ডেমর্টে পরিণত হল। সে দুর্গন্ধময় বেডরুমের ভেতর দিয়ে দৌড়াচ্ছে। সে তার লম্বা সাদা হাত দিয়ে জানালার কার্নিশ ধরল। এবং টেকো মাথার লোকটি এবং ছোটখাটো মহিলাটিকে সুড়ুৎ করে সরে যেতে দেখল। সে প্রচণ্ড ক্রোধে চিৎকার করে উঠল। সে চিৎকার চারদিকে অন্ধকারের ভেতর চার্চের ক্রিসমাস ডের ঘণ্টার শব্দ ছাপিয়ে ধ্বনি তুলল…

তার চিৎকার একই সঙ্গে হ্যারির চিৎকার, তার ব্যাথা একই সঙ্গে হ্যারির ব্যাথা….. আগের মত ঘটনা এখানেও ঘটতে পারে…ওই ঘরের ভেতর সে মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিল…মৃত্যু…প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভব করেছে….শরীরের ভেতর থেকে কিছু একটা বের হয়ে আসছে। কিন্তু যদি সে কোনো কেউ না হয় তাহলে কেন নিজের মাথাটি এমন বিশ্রীভাবে আঘাত পেল….সে যদি মরে গিয়ে থাকে তাহলে এমন অসহনীয় ব্যাথা বোধ করবে কেন, মৃতের তো ব্যাথা অনুভব হয় না, এটা কি…।

ভেজা রাত, বাতাস বইছে। দুটি ছোট ছেলে পামকিন ড্রেস পড়ে পাশাপাশি সামনের দিকে ঝুঁকে চত্বরের ভেতর হাঁটছে। দোকানের জানালাগুলো কাগজের তৈরি মাকড়শা দিয়ে সাজানো, মাগলদের জাঁকালো করে সাজানো বহিরাবরণের বিশ্ব, ওরা বিশ্বাস করে না …

চমৎকার পোশাক, মিস্টার!

সে দেখল ছেলে দুটো তাকে ইতস্ততভাবে দৌড়াতে দেখে হাসছে। তার আলখাল্লার ভেতর দিয়ে নিচের পা বের হয়ে আছে। ওরা দেখেছে ওর হাপিয়ে ওঠা মুখটি। এরপর বাচ্চা দুটো ঘুরে দৌড়াতে শুরু করল….আলখাল্লার নিচে হাত দিয়ে সে যাদুদণ্ডটি ধরল….মুহূর্তের একটা ছোট ঘটনা ঘটে গেলে শিশু দুটো আর কখনো মায়ের কাছে পৌঁছতে পারবে না…কিন্তু একেবারেই তা অপ্রয়োজনীয়…

সে আর একটি অন্ধকার রাস্তায় চলতে শুরু করল অবশেষে তার গন্তব্যটি সে দেখতে পেল। ফিডেলিউস চার্ম ভেঙে গেছে। কিন্তু ওরা এখনো তা জানে না। সে প্রায় নিঃশব্দ পায়ে ঝরা পাতার উপর দিয়ে হেঁটে ফুটপাতে উঠল। সে ঝোপঝাড়ের সমান উঁচু পর্যন্ত থেকে তার উপর দিয়ে তাকালো…।

জানালায় ওরা পর্দা টানায়নি। সে ওদেরকে পরিস্কার দেখতে পেল। লম্বা কালো চুলের একজন লোকের চোখে গ্লাস। সে তার যাদুদণ্ড থেকে রঙীন ধোয়ার কুণ্ডলী তৈরি করছে এবং নীল পাজামা পরা ছোট্ট একটি কালো চুলের বাচ্চা তা দেখে মজা পাচ্ছে। শিশুটি হাসছে এবং সেই ধোয়া তার ছোট হাতের মুষ্টিতে ধরতে চেষ্টা করছে…. ভেতরে একটি দরোজা খুলে গেল এবং বাচ্চাটির মা প্রবেশ করলেন। কিছু একটা বললেন, কিন্তু বাইরে থেকে সে শুনতে পেল না। মহিলার লম্বা কালো চুল মুখের উপর এসে পড়েছে। লোকটি ছেলেটিকে একটানে তুলে নিল এবং মায়ের কাছে দিল। সে তার যাদুদণ্ডটি সোফার এক পাশে ছুঁড়ে রাখল এবং টানটান হয়ে আলস্য ভাঙল…

সে বাইরের গেটটি ধাক্কা দিতেই ক্যাচ করে খুলে গেল। কিন্তু জেমস পটার ভেতর থেকে তা শুনতে পেলেন না। সে দরোজার সামনে দাঁড়িয়ে সাদা হাত দিয়ে আলখাল্লার নিচ থেকে যাদুদণ্ডটি বের করুল এবং ঘরের দরোজার দিকে তাক করল। দরোজাটি দরাম করে খুলে গেল।

সে দরোজার আড়কাঠের উপর দাঁড়ালো। জেমস দেখে হলের ভেতর দৌড় দিল। কিন্তু কাজটি ছিল খুবই সহজ,..এত সহজ যে তাকে যাদুদণ্ডটি তুলতে পর্যন্ত হল না….লিলি, হ্যারি কে নিয়ে পালাও! সে চলে এসেছে! দৌড়াও! আমি ওকে ঠেকিয়ে রাখছি

যাদুদণ্ড ছাড়াই তাকে ঠেকিয়ে রাখবে!…সে কার্সটি ছোঁড়ার আগে অট্টহাসি দিল…

অ্যাভাডা কেদাভ্রা!

ঘরে সবুজ আলো ছড়িয়ে পড়ল। বাচ্চার ঠেলাগাড়িটি গিয়ে দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেল, এর ঝলকানিতে ব্যানিস্টারগুলো জ্বলন্ত লোহার মত আলোকিত হল। এবং জেমস পটার পড়ে গেলেন একটি পুতুলনাচের পুতুলের তার ছিঁড়ে পড়ে যাওয়ার মত করে…।

সে উপরের তলা থেকে মহিলার চিৎকার শুনতে পাচ্ছে। আটকে পড়েছেন। কিন্তু সে সতর্ক হলে তার ভয়ের কিছু ছিল না। সে উপরে উঠে এল। শব্দ শুনতে পেল যে মহিলা চারদিকে জিনিসপত্র দিয়ে নিজেকে লুকোবার চেষ্টা করছে,….তার উপর এমনকি একটি যাদুদণ্ড ধরা নেই… ওরা কতটাই না বোকামি করেছে কতটা বিশ্বাস করেছে। মনে করেছে বন্ধুদের মাঝে ওরা নিরাপদ। যাদুদণ্ড সামান্য সময়ের জন্য কাছে না থাকলে ক্ষতি নেই…

সে ধাক্কা দিয়ে দরোজা খুলল। চেয়ার এবং বাক্স দিয়ে যে বাধা তৈরি করতে চেষ্টা করেছিলেন মহিলা সেগুলো যাদুদণ্ড দিয়ে ছিটকে সরিয়ে দিল। মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন, তার কোলে ছোট শিশুটি। তাকে দেখেই মহিলা বাচ্চাটিকে পেছনের বিছানায় ফেলে দিয়ে দুহাত সামনে বাড়িয়ে প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করলেন। মনে করলেন যেন এতে কাজ হবে। যেন বাচ্চাটিকে আড়াল করতে পারবেন। সর্বশেষ আশা হিসাবে তিনি এই পথ বেছে নিলেন…

হ্যারিকে না, হ্যারিকে না, প্লিজ হ্যারিকে না!

সরে যাও মেয়ে! এক্ষণি সরে যাও…

হ্যারিকে না! প্লিজ,তার চেয়ে বরং আমাকে হত্যা করো…

এই আমার শেষ ওয়ার্নিং-

হ্যারিকে না! প্লিজ…ক্ষমা চাই….দয়া করো…্হ্যারিকে না! আমি সব কিছু করতে রাজি আছি..

সরে যাও বলছি! সরে যাও!

সে তাকে সরিয়ে দিতে পারতো, কিন্তু দুটোকে একসঙ্গে খতম করাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হল…

ঘরের ভেতর সবুজ আলো ছড়িয়ে পড়ল। এবং মহিলাও তার স্বামীর মত হেলে পড়ে গেলেন। এতক্ষণ শিশুটি কাঁদেনিঃ সে দাঁড়াতে পারে, সে তার ছোট বিছানাটির পাশের রড ধরে দাঁড়ালো এবং অতি আগ্রহ নিয়ে ঘরে প্রবেশকারীর দিকে তাকালো। হয়তো চিন্তা করেছে তার বাবা আলখাল্লার নিচে লুকিয়েছেন। তিনি যাদুদণ্ড থেকে আলো জ্বালাচ্ছেন। হয়তো ভাবছে মা এখনি হাসতে হাসতে উঠে আসবেন

সে বাচ্চাটির মুখের উপর সতর্কতার সঙ্গে যাদুদণ্ডটি তাক করলো। সে ঘটনাটি দেখতে চায়। নিজের ব্যাখ্যাতীত ধ্বংসটি দেখতে চায়। শিশুটি কাঁদতে শুরু করল। বাচ্চাটি দেখতে পেয়েছে যে লোকটা জেমস না। আর সে এই কান্নার বিষয়টি পছন্দ করল না। সে এতিমখানায় থাকতে এতিম ছোট শিশুর এই কান্না সহ্য করতে পারতো না

অ্যাভাডা কেদাভ্রা!

ঠিক তখনই সে ভেঙে পড়ল। সে এখন শুধু যন্ত্রণা আর ত্রাস ছাড়া কিছুই না, তাকে এখন লুকিয়ে পড়তে হবে। এই ভাঙাচোরা আর ধ্বংসস্তূপের ভেতরে না, যেখানে শিশুটি চিৎকার করছে…বরং অনেক দূরে….অনেক দূরে …

না, সে গুমগুম করে বলল। সাপটি হিসহিস করে শব্দ করছে এলোমেলো মেঝের উপর। আর সে নিজে শিশুটিকে একদিকে যেমন হত্যা করেছে, আবার অন্যদিকে সে নিজেই শিশুটি..

না….

এখন সে বাথিলডার ভাঙা জানালায় দাঁড়িয়ে। তার সে স্মরণীয় পরাজয়ের স্মৃতি উঠে এসেছে। তার পায়ের কাছে সাপটি ভাঙা জিনিসপত্রের উপর নড়াচড়া করছে। সে নিচের দিকে তাকালো…এবং কিছু একটা দেখল… ভয়ানক কিছু একটা..

না…

হ্যারি, সবকিছু ঠিক আছে, সব ঠিক?

সে নিচু হল এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া ছবিটি নিচ থেকে তুলল। এই হল সেই অজানা চোরটি, যে চোরকে সে খুঁজছে..

না..আমি সেটি হাত থেকে ফেলে দিয়েছি.. ফেলে দিয়েছি…

হ্যারি, সবকিছু ঠিক আছে, হ্যারি ওঠ! জেগে ওঠ!

এবার সে হ্যারিতে পরিণত হল। ভোল্ডেমর্ট নয়, হ্যারি…এবার যে জিনিসটি হিসহিস করছে সেটি ওই সাপটি না…

হ্যারি চোখ মেলে তাকালো। হারমিয়ন ফিসফিস করে বলল, হ্যারি, তুমি কী সুস্থ বোধ করছ?

হ্যাঁ, সে মিথ্যা করে বলল।

সে একটি তাবুর ভেতরে। তার একটি বেডে কম্বলের উপর শুয়ে আছে। শীতের ধরণ দেখে সে বলতে পারে এখন প্রায় ভোর, তাবুর ক্যানভাসের ছাদের বাইরে আলো। সে ঘেমে নেয়ে উঠেছে। চাদর এবং কম্বলের থেকে তা বুঝতে পারছে।

আমরা অনেক দূরে চলে এসেছি।

হ্যাঁ, হারমিয়ন বলল। তোমাকে তোমার বিছানায় উঠাতে আমাকে একটি হোবার চার্ম ব্যবহার করতে হয়েছে। আমি তোমাকে তুলতে পারছিলাম

…..মানে, তুমি ঠিক শান্ত ছিলে না…।

হারমিয়নের বাদামী চোখের নিচে রক্তিম ছায়া পড়েছে। হ্যারি লক্ষ করল তার হাতে একটি ছোট স্পঞ্জ। সে হ্যারির মুখ মুছে দিচ্ছিল।

হারমিয়ন বলল, তুমি অসুস্থ হ্যারি, পুরোপুরি অসুস্থ।

কতক্ষণ আগে আমরা সরে এসেছি?

 কয়েক ঘণ্টা আগে। এখন প্রায় ভোর হয়ে এসেছে।

আমি কী…মানে, অচেতন ছিলাম?

হারমিয়ন অস্বস্তির সঙ্গে বলল, ঠিক তা বলা যায় না। তুমি চিৎকার করছিলে এবং গোঙাচ্ছিলে….বিষয়টি এমনই ছিল।

ওর কণ্ঠে এমন কিছু ছিল যে কারণে হ্যারি অস্বস্তি বোধ করল। সে এমন কি করেছে? ভন্ডেমর্টের মত কার্সের কারণে চিৎকার করেছে? ছোট বিছানার সে ছেলেটির মত কেঁদে উঠেছে?

আমি তোমার কাছ থেকে হরক্রুক্সটি খসাতে পারিনি, হারমিয়ন বলল। এবং হ্যারি বুঝতে পারল যে হারমিয়ন প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাচ্ছে। সেটি তোমার সঙ্গে গেথে ছিল। তোমার বুকের সঙ্গে লেগে ছিল। তোমার বুকে একটি দাগ বসে গেছে। আমি দুঃখিত, আমাকে এটা খসাতে একটি সেভারিং চার্ম ব্যবহার করতে হয়েছে। সাপটিও তোমাকে ছোবল দিয়েছিল। কিন্তু সে ক্ষত আমি বেশ কিছুটা পরিস্কার করেছি, সেখানে গাছের রস লাগিয়ে দিয়েছি…

সে টেনে তার পরণের ভেজা টি-শার্টটি খুলে ফেলে দিল এবং মাথা নিচু করে বুকের দিকে তাকালো। বুকের উপর ডিম্বাকৃতির একটি রক্তিম দাগ হয়ে আছে ঠিক যেখানটায় হরক্রুক্স লেগেছিল সেখানে। সে হাতের উপরও একটি গভীর ক্ষত দেখতে পেল।

হরক্রুক্সটি কোথায় রেখেছ?

আমার ব্যাগের ভেতর। আমার মনে হয় আপাতত কাছে রাখতে পারি।

হ্যারি পেছন দিকে বালিশে হেলান দিল। হারমিয়নের হাতের দিকে, বিষণ্ণ। মুখের দিকে তাকাল।

আমাদের গোড্রিচ হলোতে যাওয়া উচিত হয়নি। এটা পুরোপুরি আমার দোষ। এর জন্য সম্পূর্ণ আমি দায়ি হারমিয়ন, আমি দুঃখিত।

তোমার কোনো দোষ নেই, আমি নিজেও তো যেতে চেয়েছিলাম। আমি সত্যিই ভেবেছিলাম ডাম্বলডোর তোমার জন্য সেখানে তলোয়ারটি রেখে গেছেন।

হ্যাঁ, আমরা একটি ভুল ধারণা করেছিলাম, তাই না?

কি ঘটেছিল হ্যারি? তোমাকে বাথিলডা উপরে নিয়ে যাওয়ার পর কি ঘটেছিল? সাপটি কোথাও লুকিয়েছিল? সরাসরি বেরিয়ে এসে বাথিলডাকে হত্যা করল এবং তোমাকে আক্রমণ করল?

না, হ্যারি বলল। সে হল সাপটি, অথবা সাপটি তার আকার ধারণ করেছিল–যাই বলো।

কি!

হ্যারি চোখ বন্ধ করল। সে এখনো বাথিলডার ঘরের গন্ধ নাকে পাচ্ছে। সেটাই ভয়ানক সব কিছু খোলাসা করে দিচ্ছে।

বাথিলডা কোনো একটি সময় মরে গিয়েছিলেন। সাপটি…সাপটি ছিল তার ভেতরে। ইউ-নো-হু সেটা গোড্রিচ হলোতে রেখে দিয়েছিল অপেক্ষা করতে। তোমার কথাই ঠিক। সে জানতো যে আমি ফিরে যাবো।

সাপটি বাথিলডার ভেতরে ছিল?হ্যারি আবার চোখ খুলল। হারমিয়নকে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে দেখা গেল।

লুপিন বলেছিল যে সেখানে এমন ম্যাজিক থাকতে পারে যা আমরা কল্পনাও করতে পারব না। সেখানে সবকিছুই পারসেলটঙ। আমি সেটা বুঝতে পারিনি। কিন্তু অবশ্যই আমি তাকে ধরতে পেরেছি। আমরা যখন উপরের তলায় গেলাম তখন সাপটি ইউ-নো-হুকে একটি বার্তা পাঠিয়েছে। আমি আমার নিজের ভেতরে সেটা শুনতে পেয়েছি। আমার মস্তিষ্কের ভেতর। আমি তার উত্তেজিত হয়ে ওঠা অনুভব করেছি। সে বলছিল আমাকে সেখানে আটকে রাখতে…এবং তারপর….

সে স্মরণ করল বাথিলডার গলা দিয়ে সাপ বেরিয়ে আসার কথা। হারমিয়নের সব বিস্তারিত জানার প্রয়োজন নেই।

সে পাল্টে গেল, পাল্টে একটি সাপে পরিণত হল এবং আমাকে আক্রমণ করল।

সে আবার মাথা নিচু করে ক্ষতটা দেখল।

মনে হল সে আমাকে হত্যা করতে চায়নি, সে শুধু ইউ-নো-হু আসা পর্যন্ত আমাকে আটকে রাখতে চেয়েছিল।

সে যদি সাপটিকে কোনোক্রমে মেরে ফেলতে পারতো তাহলে একটা কাজের কাজ হতো। সে উঠে বসল এবং গায়ের থেকে চাদরটি ফেলে দিল।

হ্যারি না। আমি নিশ্চিত তোমার এখন বিশ্রাম দরকার।

এখন তোমার বিশ্রাম দরকার। কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই, কিন্তু তোমাকে ভয়ানক দেখাচ্ছে। আমি এখন ঠিক আছি। আমি কিছুক্ষণ চারদিকে নজর রাখি। আমার দণ্ডটি কোথায়?

হারমিয়ন নিজের ঠোঁট কামড়াচ্ছে। তার চোখে পানি টলমল করছে।

হ্যারি…

 আমার যাদুদণ্ডটি কোথায়?

হারমিয়ন বিছানার পাশে নিচু হল এবং যাদুদণ্ডটি বের করে আনল। হ্যারির হাতে দিল।

কারুকাজ করা ফিনিক্স দণ্ডটি দু ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। ফিনিক্সের একটি দুর্বল পালক দিয়ে কোনোক্রমে দুটো অংশের মধ্যে তারের মত সংযোগ লেগে আছে। হ্যারি দণ্ডটি হাতে তুলে নিয়ে এমনভাবে ধরল যেন জীবিত কোনো কিছু আহত হয়ে ভুগছে। সে ঠিক মত চিন্তা করতে পারছে নাঃ সবকিছু কেমন ওলোটপালট লাগছে। আতঙ্কিত মনে হচ্ছে, সন্ত্রস্ত মনে হচ্ছে। সে যাদুদণ্ডটি হারমিয়নের হাতে তুলে দিল।

এটা ঠিক করো প্লিজ!

হ্যারি, এটা এমনভাবে ভেঙেছে যে আমার মনে হয় না

প্লিজ হারমিয়ন, চেষ্টা করো!

 রে–রেপারো!

ঝুলে থাকা অংশটি পড়ে যেতে থাকল। হ্যারি সেটিকে ধরে ফেলল।

লিউমস!

যাদুদণ্ডটি নিস্তেজভাবে জ্বলে উঠল, তারপর নিভে গেল। হ্যারি সেটিকে হার মিয়নের দিক তাক করল।

এক্সপেলিয়ারমাস!

হারমিয়নের যাদুদণ্ডটি সামান্য কেঁপে উঠল। কিন্তু তার হাত থেকে খসে গেল। যাদুর একটি দুর্বল স্পেল হ্যারির দণ্ডটির জন্য বেশি হয়ে গেল। সেটি দুভাগে ভাগ হয়ে গেল। হ্যারি যাদুদণ্ডটির দিকে তাকালো। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো। সে কী দেখছে সেটা ভাবতেই পারল না…এই যাদুদণ্ডটি অনেক ঝক্কি ঝামেলা পার করেছে…

হ্যারি, হারমিয়ন ফিসফিস করে বলল। এত আস্তে আস্তে বলল যে হ্যারির জন্য শোনা কঠিন। আমি খুবই দুঃখিত। কাজটি সম্ভবত আমারই। আমরা যখন বের হয়ে আসতে চাচ্ছিলাম তখন সাপটি আমাদের দিকে এগিয়ে আসে। তাই তখন আমি একটি ব্লাস্টিং কার্স ছুঁড়েছি। এবং সেটি চারদিকে লাফিয়ে ফিরছিল। সেটা অবশ্যই…অবশ্যই তোমার দণ্ডটিকে আঘাত করেছে।

এটা একটি দুর্ঘটনা, হ্যারি বলল যন্ত্রের মত। সে শুন্যতা বোধ করছে, হতভম্ব হয়ে গেছে। আমরা…আমরা এটি সারাবার একটি পথ বের করব।

হ্যারি আমার মনে হয় না আমরা তা করতে পারব, হারমিয়ন বলল। তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। মনে আছে রনেরটার কথা? সে যখন একটি গাড়ির নিচে ফেলে তার যাদুদণ্ডটি ভেঙে ফেলেছিল? সেটি আর ঠিক হয়নি, তাকে আরেকটি নতুন যাদুদণ্ড নিতে হয়েছিল।

হ্যারি ওলিভ্যান্ডারের কথা স্মরণ করল; তাকে ভোল্ডেমর্ট অপহরণ করে আটকে রেখেছে। গ্রেগোরোভিচতে মারাই গেছে। আরেকটি নতুন যাদুদণ্ড হ্যারি পাবে কীভাবে?

ঠিক আছে, হ্যারি নিজেরটা রেখে বলল, ঠিক আছে, আমি এখনকার মত তোমার দণ্ডটি ধার নিচ্ছি। শুধু নজরদারি করার সময়টুকুর জন্য।

চোখের পানিতে হারমিয়নের মুখটা চিকচিক করছে। সে তার যাদুদণ্ডটি হ্যারির হাতে দিল। এবং হ্যারি তাকে বিছানায় বসা অবস্থায় রেখে তার কাছ থেকে। সরে যাওয়া ছাড়া হ্যারি আর কিছু চাইল না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *