০৭. অ্যালবাস ডাম্বলডোরের দলিল

০৭. অ্যালবাস ডাম্বলডোরের দলিল

হ্যারি পাহাড়ি পথ দিয়ে হাঁটছে। নিচে ঠাণ্ডা নীল আলোর আভা। তারও অনেক নিচ দিয়ে কুয়াশা ভেদ করে ছোট শহরের অস্পষ্ট ছায়া দেখা যাচ্ছে। সে যাকে খুঁজছে সেই মানুষটি কী ওই শহরে আছে? লোকটিকে যে তার ভীষণভাবে প্রয়োজন! এত প্রয়োজন যে তাকে ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। ওই লোকটির কাছেই আছে তার উত্তর, তার সমস্যাবলির উত্তর….

এই, ওঠো!

হ্যারি চোখ খুলে তাকাল। দেখল সে রনের ছোট্ট রুমের একটা ক্যাম্প খাটের ওপর শুয়ে আছে। তখনো সুর্য ভালো করে ওঠেনি। রুমের ভেতরে তখনো অন্ধকার। পিগভিটজিওন তখনো ঘুমিয়ে আছে তার ছোট পাখার নিচে মাথা দিয়ে। হ্যারির কপালের উপরের স্কারটিকে চুলকাচ্ছে।

ঘুমের ঘোরে বকবক করছিলে।

তাই নাকি?

হ্যাঁ, গ্রেগোরোভিচ, তুমি বারবার বলছিলে, গ্রেগোরোভিচ।

হ্যারির চোখে চশমা নেই, সে কারণেই রনের মুখটা একটু আবছা দেখাচ্ছে। বলল, গ্রেগোরোভিচ কে?

আমি তো জানি না, আমি কি করে জানব? তুমিই তো বলছিলে নামটা বারবার।

হ্যারি চিন্তা করতে করতে নিজের কপালে ঘষা দিল। তার একটু একটু মনে পড়ছে যে এই নামটা সে শুনেছে, কিন্তু কোথায় তা মনে পড়ছে না।

আমার মনে হয় ভোল্ডেমর্ট তাকে খুঁজছে।

বেচারা, রন বলল আগ্রহের সঙ্গে।

হ্যারি উঠে বসল। তখনো সে কপাল ঘষছে। এক সময় হ্যারি পুরোপুরি জেগে উঠল। সে মনে করার চেষ্টা করল স্বপ্নে ঠিক কী দেখেছে। কিন্তু শুধু মনে পড়ল পাহাড়ি এলাকা, তার নিচে গভীর উপত্যকায় একটি গ্রাম বিছিয়ে আছে।

আমার মনে হয় সে এখন বিদেশে অবস্থান করছে।

কে, গ্রেগোরোভিচ?

না,ভোল্ডেমর্ট। মনে হয় সে কোনো এক স্থানে গ্রেগোরোভিচকে খুঁজছে। তবে, জায়গাটি ব্রিটেনের বলে আমার মনে হয় না।

তুমি ধারণা করছ যে আবারও তুমি তার মনের ভেতরটা দেখতে পাচ্ছ? রনের গলায় উৎকণ্ঠা ফুটে উঠল।

তুমি আমার একটু উপকার কর, হারমিয়নকে এ কথাটা আর দয়া করে বলবে না, হ্যারি বলল। সে কীভাবে মনে করে যে আমি এসব স্বপ্ন দেখা বন্ধ করি… সব কিছু কি আমার ওপর নির্ভর করে?

সে পিগভিজিওনের ছোট্ট খাঁচাটির দিকে তাকাল। চিন্তা করল….গ্রেগোরোভিচ নামটি কেন পরিচিত বলে মনে হচ্ছে?

আমার মনে হয়, সে ধীরে শান্তভাবে বলল। তার সঙ্গে কিডিচের একটা সম্পর্ক আছে। একটা যোগাযোগ আছে। কিন্তু সেটা যে কী আমি…আমি ঠিক বলতে পারছি না।

কিডিচ? রন বলল। তুমি নিশ্চিত যে এটা গোরগোভিচ নয়?

কে সে?

দ্রাগোমির গোরগোভিচ, সে.. ওই যে কিডিচ খেলার চেজার। দু বছর আগে যাকে রেকর্ড পরিমাণ ফি দিয়ে কাডলি ক্যাননে নিয়ে গেল। এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি কোয়াফল ফেলার রেকর্ডধারী।

না, হ্যারি বলল। আমি নিশ্চিত গোরগোভিচ নয়।

অবশ্য আমি নিজেও তা মনে করছি না, রন বলল। যা হোক, শুভ জন্মদিন।

ওহ, ঠিক, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। আজকে আমার বয়স সতেরো হলো। হ্যারি ক্যাম্প খাটের ওপর থেকে ওর যাদুদণ্ডটি তুলে নিল। এলোমেলো হয়ে থাকা ডেস্কের দিকে তাক করল। বলল, এসিও গ্লাসেস! যদিও মাত্র ফুট খানেক দূরে, কিন্তু কোনো কিছু ওর নিজের দিকে আসছে দেখাটা ওর কাছে খুবই আনন্দের, অন্তত ওর চোখে এসে খোচা না দেয়া পর্যন্ত।

স্নিক, রন নাক টেনে বলল।

হ্যারি ট্রেসের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হওয়ার আনন্দ উপভোগ করার জন্য রনের জিনিসপত্রগুলো যাদু করে রুমের ভেতর উড়িয়ে দিল। যার ফলে পিগভিজিওনের ঘুম ভেঙে গেল এবং খাঁচার ভেতর রেগে গিয়ে ঘুরপাক করতে থাকল। হ্যারি যাদুর মাধ্যমে জুতার ফিতা বাধল। (ফলে গিটগুলো হাত দিয়ে খুলতে কয়েক মিনিট সময় লাগল।) এবং শুধু এই আনন্দের জন্য কিডিচ খেলার বিখ্যাত টীম চাডলি ক্যাননের পোস্টারের ওপর ঝোলানো রনের কমলা রঙের হাউজ কোট উজ্জল নীল দেখা গেল। হ্যারি যখন তার যাদুর আনন্দ শেষ করে এনেছে রন অবজ্ঞার সঙ্গে হেসে বলল, তুমি যে জিনিসগুলো যাদু করে উড়িয়েছ তা আমি হাত দিয়েই করতে পারতাম। এই যে তোমার উপহার। মোড়কটা খোল, এটা আবার আমার মায়ের চোখের সামনে নেওয়া যাবে না।

বই, তাই না? হ্যারি বলল। সে চৌকো প্যাকেটটি হাতে তুলে নিল। তবে একটু অন্যরকম কিছু মনে হয়?

এটা কোনো সাধারণ বই না। রন বলল। এটা খাটি সোনা : টুয়েলভ ফেইল-সেফ ওয়েস টু চার্ম উইচেস। মেয়েদের সম্পর্কে জানার সব বিষয় এখানে দেওয়া আছে। গত বছর যদি এটি আমার কাছে থাকত তাহলে জানতে পারতাম কী করে ল্যাভেন্ডারের কাছ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। এবং জানতাম কী করে পারা যায় মেয়েদের সাথে…ওয়েল, ফ্রেড এবং জর্জ আমাকে একটি কপি দিয়েছিল। এবং আমি ওটা থেকে প্রচুর জেনেছি। তুমি শুনলে অবাক হবে, এবিষয় গুলো শুধু যাদুদণ্ডের সাথে সম্পর্কিত না।

ওরা কিচেনে এসে দেখল টেবিলের ওপর উপহার স্থূপ। বিল এবং সিয়ো ডেলাকুর সবে নাস্তা সেরে উঠছেন। আর মিসেস উইসলি তাদের সঙ্গে ফ্রাইং প্যান নিয়ে কথা বলছেন।

আর্থার আমাকে বলেছে তোমাকে সতেরো বছরের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে, হ্যারি, মিসেস উইসলি হ্যারিকে দেখে বললেন। আর্থারকে সকাল সকাল কাজে চলে যেতে হয়েছে। তবে ও রাতের খাবার খেতে আসবে। ওই ওপরেরটা আমাদের উপহার।

হ্যারি বসল। মিসেস উইসলির দেখানো চারকোণা প্যাকেটটার মোড়ক খুলল। ভেতরে একটি ঘড়ি, মি. এবং মিসেস উইসলি রনের বয়স সতেরো হওয়ায় যে রকম ঘড়ি দিয়েছিলেন, ঠিক তেমন। ঘড়িটি সোনার, হাতের বদলে ঘড়িটায় বৃত্ত করে তারকাখচিত নকশা।

উইজার্ডের বয়স সতেরো হলে তাকে একটি ঘড়ি উপহার দেওয়াটা একটি প্রথা, মিসেস উইসলি বললেন। কুকারের পাশে দাঁড়িয়ে উদ্বেগের সঙ্গে হ্যারির দিকে তাকালেন। কিন্তু আমি লজ্জিত যে এটা নতুন নয়, তোমাকে দেওয়া ঘড়িটা প্রকৃতপক্ষে আমার ভাই ফ্যাবিয়ানের। সে তার জিনিসপত্রের একেবারেই যত্ন নিত না। পেছনে একটু রঙ নষ্ট হয়ে গেছে, কিন্তু-

তিনি আর কথা বলতে পারলেন না। হ্যারি উঠে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। এই জড়িয়ে ধরার মধ্য দিয়ে হ্যারি অনেক কথা বোঝাতে চাইল। হয়তো তার কথাগুলো মিসেস উইসলি বুঝতে পারলেন। কারণ হ্যারি তাকে ছেড়ে দিতেই তিনি হ্যারির গালে ছোট্ট করে আদর করে চাপড় দিলেন। তারপর তিনি তার যাদুদণ্ডটি দিয়ে তুলে ধরলেন, চুলোর ওপর ফ্রাইং প্যান থেকে মাংস নিচে মেঝেতে পড়ে যাচ্ছিল।

হ্যাপি বার্থ ডে, হ্যারি! হারমিয়ন বলল। সে দ্রুত গতিতে কিচেনে ঢুকল এবং উপহারের স্থূপের ওপর ওর আনা উপহারটা রাখল। এটা তেমন কিছু না, কিন্তু আমার বিশ্বাস তোমার পছন্দ হবে। ওর কাছ থেকে কী পেলে? হারমিয়ন রনের ব্যাপারে বলল। রনকে মনে হলো সে কিছু শোনেনি।

কাম অন, হারমিয়নেরটা খোলো! রন বলল।

সে হ্যারির জন্য একটা নতুন সিকোস্কাপ কিনেছে। অন্য প্যাকেটগুলোর মধ্যে রয়েছে বিল ও ফ্লয়ারের জন্য আনা আকর্ষণীয় রেজর (ওহ হ্যাঁ, এই রেজরে একেবারে মসৃণ সেভ করতে পারবে, ডেলাকুর ওকে নিশ্চিত করলেন। কিন্তু এটিকে তোমার অবশ্যই পরিষ্কার করে বলতে হবে তুমি কী চাও। তা না হলে হয়তো দেখবে তুমি যা চাও তারচেয়ে বেশি চুল কাটা হয়ে গেছে…), ডেলাকুর চকলেট এনেছেন এবং ফ্রেড ও জর্জ কিনে এনেছে উইসলিস উইজার্ড হুইজস।

হ্যারি, রন এবং হারমিয়ন সেখানে আর দেরি করতে চাইল না। কারণ মাদাম ডেলাকুর, ফ্লয়ার এবং গ্যাব্রিয়েলে প্রবেশ করায় ছোট রুমটিতে অস্বস্তিদায়ক ভীড় হয়ে গেছে।

আমি তোমার জিনিসগুলো গুছিয়ে দিচ্ছি, হারমিয়ন উৎসাহের সাথে বলল। ওরা তিনজন ওপরে ফিরে যাওয়ার সময় সে তার হাতে উপহারগুলো তুলে নিল। প্রায় শেষ, শুধু অপেক্ষা করছি তোমার প্যান্টগুলো ওয়াশিং মেশিন থেকে ধোয়া হয়ে বের হওয়ার, রন- ওপরে ওঠার সময় হারমিয়ন বলল।

রন কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু নিচের তলায় দরোজা খোলার শব্দে বাধাগস্ত হল।

হ্যারি, তুমি একটু এদিকে আসবে?

জিনি এসেছে। রন হঠাৎ থমকে দাঁড়াল। কিন্তু হারমিয়ন তাকে কনুই দিয়ে ছোট করে গুঁতো দিয়ে উপরে উঠে যেতে বলল। কিছুটা বিব্রত হয়ে হ্যারি জিনির পেছনে পেছনে তার রুমে ঢুকল।

এই রুমটির ভেতরে সে আগে কখনো আসেনি। রুমটি ছোট, কিন্তু বেশ ঝকঝকে। রুমের দেয়ালের একপাশে উইজার্ড ব্যান্ড দল ওয়্যার্ড সিস্টার্স-এর একটি বিশাল ছবি। আর অন্য দেয়ালটিতে কিডিচ টিম হলিহেড হারপিসের অধিনায়ক জিওনগ জোনসের একটি ছবি। ঠিক জানালা বরাবর একটি ডেস্ক রয়েছে। জানালার বাইরে খোলা বাগান দেখা যাচ্ছে। ওখানে এক সময় জিনি এবং সে আর রন এবং হারমিয়ন দুজন করে দলে হয়ে কিডিচ খেলত। ওখানে এখন একটি গুম্বুজ আকারের সাদা মিনার। গুম্বজের ওপর সোনালি পতাকা জিনির জানালার সোজাসুজি।

জিনি মুখ তুলে হ্যারির মুখের দিকে তাকাল। দীর্ঘ একটি নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, হ্যাপি সেভেনটিনথ।

হ্যাঁ, ধন্যবাদ।

 জিনি হ্যারির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। কিন্তু হ্যারির ওর দিকে তাকিয়ে থাকা কঠিন। অনেকটা তীব্র আলোর দিকে তাকিয়ে থাকার চোখ ধাঁধানোর মতো মনে হলো হ্যারির।

জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে হ্যারি বলল, অপূর্ব দৃশ্য।

জিনি বিষয়টি গায়ে মাখল না। এ জন্য হ্যারি অবশ্য তাকে দায়ী করতে পারে।

আমি ভাবতে পারছিলাম না যে তোমাকে কী উপহার দেব।

 আমাকে কিছু দেওয়ার প্রয়োজন নেই তোমার।

এ কথাও জিনি কানে তুলল না।

আমি জানি না যে কোন জিনিসটা তোমার কাজে লাগতে পারে। বড় আকারের কিছু হলে সেটা আবার তুমি সঙ্গে নিতে পারবে না।

হ্যারি ওর দিকে এক পলকের জন্য তাকাল। জিনির ভেতর কান্নার কোনো আভাস নেই। ওর অনেক আকর্ষণীয় বিষয়ের এটি একটি। সে সহসা কাঁদে না। মাঝে মাঝেই হ্যারির মনে হয়েছে ছয়টি ভাই থাকার কারণে তার মধ্যে এই দৃঢ়তা এসেছে।

জিনি এক পা হ্যারির দিকে এগিয়ে এলো।

তাই আমার মনে হলো, আমি এমন কিছু দেব যেন তুমি যে কাজেই থাক, সেখানে যদি কোনো ভিলার সঙ্গেও দেখা হয়, তখন যেন আমাকে না ভুলে যাও।

সত্যি বলতে কী আমার মনে হয় সে কাজের সময় ডেটিং-এর সুযোগ কমই পাওয়া যাবে।

আমি একটি রুপালি রেখার জন্য অপেক্ষা করছি, জিনি ফিস ফিস করে বলল। তারপর হ্যারিকে সে চুমু খেতে শুরু করল যা সে জীবনে কখনো করেনি। হ্যারিও তাকে চুমু খেতে থাকল। ওরা সুখের রাজ্যে হারিয়ে গেল। ফায়ার হুইস্কির চেয়েও মুধুর এ অনুভূতি। সে হলো এ দুনিয়ার একমাত্র বাস্তবতা জিনি ও হ্যারি পরস্পরকে অনুভব করছে। এক হাত জিনির পিঠে, অন্যহাত তার লম্বা মিষ্টি ঘ্রাণের চুলের ভেতর

দরাম করে দরোজা খুলে গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে ওরা লাফ দিয়ে পৃথক হয়ে গেল।

ওহ, রন আর কোনো কথা না বাড়িয়ে বলল। সরি।

রন! হারমিয়ন ঠিক তার পেছনে। সে একটু হাপাচ্ছিল। একটি অস্বাভাবিক নীরবতা নেমে এলো। জিনি শান্ত সরল কণ্ঠে বলল, ওয়েল, হ্যাপি বার্থ ডে হ্যারি।

রনের কান লাল হয়ে গেছে। হারমিয়নকে রীতিমতো নার্ভাস দেখা গেল। হ্যারির মনে হয়েছিল ওদের মুখের ওপর ঠাস করে দরোজাটা বন্ধ করে দিতে। কিন্তু দরোজাটা খুলে যেতেই মনে হলো ঘরে একটি শুষ্কতা প্রবেশ করেছে এবং ওর উষ্ণ মুহূর্তগুলো সাবানের বুদ্বুদের মতো উবে গেছে। রন ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে যেন নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করল জিনির সঙ্গে বিচ্ছেদ, পরম বিভোর হয়ে থাকা মুহূর্তগুলো যেন শেষ হয়ে গেল।

সে কিছু বলতে চেয়ে জিনির দিকে তাকিয়ে থাকল; যদিও সে জানে না জিনিকে কী বলতে চায়। কিন্তু জিনি পিছন ফিরল। হ্যারি ভাবল, জিনি হয়তো নিজেকে সংবরণ করতে পারছে না, তার চোখ হয়তো জলে ভরে উঠেছে। কিন্তু রনের সামনে হ্যারি তাকে সান্ত্বনা দিতে পারছে না।

তোমার সঙ্গে পরে কথা হবে, হ্যারি বলল। তারপর ওদের দুজনের পেছনে পেছন জিনির বেডরুম থেকে বের হয়ে গেল।

রন হনহন করে নিচের তলায় নেমে এলো। তারপর ভীড় হয়ে থাকা কিচেনের ভেতর দিয়ে উঠোনে নেমে এলো। হ্যারিও তার পেছন পেছন অনুসরণ করে এলো। হারমিয়নও ওদের তালে তালে হাঁটল। তাকে বেশ ভীত দেখা গেল।

এক সময় নিরিবিলি সুন্দর করে ছাঁটা ঘাসের লনে এসে পৌঁছে রন হ্যারির দিকে ফিরল।

যখন তার সাথে সম্পর্ক ছেদ করেছ তখন তুমি তার সাথে আবার ঘনিষ্ঠতা করছ কেন।

আমি নিজ থেকে ঘনিষ্ঠতা তো করিনি। হ্যারি বলল। হারমিয়ন তাদের কথার ভেতর যোগ দিয়ে রনকে থামাতে চেষ্টা করল।

রন

কিন্তু রন এক হাত তুলে তাকে বরং থামতে ইঙ্গিত দিল।

সে খুবই বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিল তুমি যখন সম্পর্কটা শেষ-

আমিও তাই। তুমি জানো কেন আমি তা করেছি। আমি যে ইচ্ছা করে করেছি তা নয়।

হ্যাঁ বুঝলাম, কিন্তু তুমি তাকে চুমু খেয়ে তার মধ্যে আবার আশা জাগিয়ে তুলছ-

সে অতটা বোকা নয়। সে ভালো করেই জানে যে সেটা হতে পারে না। সে মোটেই আশা করেনি যে আমরা বিয়ের মতো.. কিছু ঘটবে, অথবা-।

কথাগুলো বলার সময় তার চোখের সামনে একটি ছবি পরিষ্কার ভেসে উঠল; সাদা পোশাকে জিনি, তার বিয়ে হচ্ছে একজন লম্বা মতো মুখহীন এবং কিম্ভুতকিমাকার লোকের সঙ্গে।

মুহূর্তের মধ্যে সে তাকে আবিষ্কার করল সে মুক্ত ও নিঃঝাট, আর … সে শুধু তার সামনে ভোল্ডেমর্টকেই দেখতে পাচ্ছে।

সুযোগ পেলেই তুমি যদি তাকে সঙ্গ দিতে থাক….

এটা আর ঘটবে না, হ্যারি কঠিনভাবে বলল। দিনটি বেশ উজ্জ্বল, মেঘমুক্ত। কিন্তু হ্যারির মনে হলো সুর্য ডুবে গেছে। ঠিক আছে?

রনকে খানিকটা বিরক্ত, খানিকটা ব্ৰিত মনে হলো। সে আগে পিছে কয়েক পা হাঁটতে থাকল। তারপর বলল, ঠিক আছে, ওকে… আচ্ছা।

বাকি দিনগুলোতে জিনি আর হ্যারির একান্তে সাক্ষাৎ হলো না, তাকে তার রুমে একা ডাকল না। না সে কোনো বিশেষ চাহনি দিল, না সে কোনো ইঙ্গিত করল। যেন সেদিন তার রুমে সাধারণ আলোচনার বাইরে তাদের মধ্যে কিছু হয়নি। তা সত্ত্বেও চার্লি আসার পর হ্যারি কিছুটা স্বস্তি বোধ করল। চার্লি আসার পর একটি আশ্চর্য কাণ্ড হলো। মিসেস উইসলি জোর করে চার্লিকে একটি চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। ধমকে দিয়ে তার যাদুদণ্ডটি তুলে ধরলেন। চার্লির চুলে একেবারে সঠিক ছাঁট দেয়ার ঘোষণা দিলেন।

হ্যারির বার্থডে ডিনারের সময় বারোর কিচেনটি পূর্ণ হয়ে গেল লুপিন, টঙ্কস, হ্যাগ্রিড এবং চার্লি আসার আগেই। বাগানে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত টেবিল পাতা হলো। ফেড এবং জর্জ যাদুর মাধ্যমে বেশ কিছু রঙিন লণ্ঠন নিয়ে এল। ১৭ অঙ্কিত রঙিন লণ্ঠনগুলো অতিথীদের মাথার ওপর শূন্যে ঝুলিয়ে দেয়া হলো। ধন্যবাদ মিসেস.উইসলিকে, তার চিকিৎসা ও সেবা-যত্নের কারণে জর্জের ক্ষত এখন অনেকটা শুকিয়ে এসেছে। জর্জকে নিয়ে হাসি-তামাশা হওয়ার কারণে তো বটেই, হ্যারির এখনো তার কানের পাশের কালো দাগটির জন্য অস্বস্তি লাগে। হারমিয়ন ওর যাদুদণ্ডটি দিয়ে রঙিন এবং সোনালি ফিতা তৈরি করে চারপাশের গাছ-গাছালি এবং ঝোঁপের ওপর দিয়ে বেশ কারুকাজ করে সাজিয়ে দিল।

চমৎকার, রন বলল। যাদুদণ্ড দিয়ে শেষবারের মতো ক্র্যাব আপেল গাছের ওপর দিয়ে হারমিয়ন সোনালি রঙ বিছিয়ে দিল। এ কাজের বিষয়ে তোমার চোখ দারুণ।

থ্যাঙ্ক ইউ রন, হারমিয়ন বলল। দুজনকেই একই সঙ্গে কিছুটা আনন্দিত আবার ব্ৰিত মনে হলো। হ্যারি অন্যদিক ফিরে নিজে নিজেই একটু মুচকি হাসল। সে যখন টুয়েলভ ফেইল–সেইফ ওয়েজ টু চার্ম উইচেস গ্রন্থটি পায় সেখানে বেশ একটি মজাদার কথা পেয়েছিল; হঠাৎ জিনির চোখে চোখ পড়তে হ্যারি তার দিকে তাকিয়ে হাসল। পরক্ষণেই মনে পড়ল রনকে দেয়া প্রতিশ্রুতির কথা। সঙ্গে সঙ্গে সে মসিও ডেলাকুরের সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু করল।

সামনে থেকে একটু সরে যাও, সামনে থেকে সর, সুর করে বলতে বলতে মিসেস উইসলি একটা গেট দিয়ে প্রবেশ করলেন। তার সামনে বড় আকারের, বিচল সাইজের একটি সিনিচ ভাসছে। এক মুহূর্ত পরই হ্যারি বুঝতে পারল এটি তার জন্মদিনের কেক। এবং মিসেস উইসলি ওটাকে যাদুদণ্ড দিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি হাতে করে আনার ঝুঁকি নেননি। কারণ জায়গাটা অতটা মসৃণ নয়, উঁচু-নিচু। কেকটি যখন টেবিলের মাঝখানে এসে নামল তখন হ্যারি বলল, এটা দেখতে অসাধারণ মিসেস উইসলি।

ওহ, এটা কিছু না প্রিয়, তিনি বিমুগ্ধ কণ্ঠে বললেন। তার কাঁধের ওপর দিয়ে পেছন থেকে রন আঙুল তুলে দেখিয়ে মুখে বলল, ভালো জিনিস।

সন্ধ্যা সাতটার ভেতর সকল অতিথী চলে আসলেন। ফ্রেড এবং জর্জ তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাল। ওরা বাড়ির রাস্তার মাথায় তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। হ্যাগ্রিড এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে তার সবচেয়ে ভালো পোশাক পড়েছে। সেটা ভয়ানক দেখতে এক বাদামি রঙের পশমি স্যুট।

যদিও লুপিন হ্যারির সঙ্গে হাত মিলিয়ে হাসলেন, কিন্তু হ্যারির মনে হলো কোনো একটা কারণে তিনি চিন্তিত। তিনিই একমাত্র আনমনা। তিনি ছাড়া তার পাশে টঙ্কসকে এবং অন্য সকলকে দেখা গেল বেশ হাসিখুশি।

হ্যাপি বার্থ ডে হ্যারি! টঙ্কস বলে হাত বাড়িয়ে হ্যারিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।

সতেরো বছর,অ্যাাঁ, হ্যাগ্রিড বলল। সে বালতি সাইজের একগ্লাস ওয়াইন ফ্রেডের হাত থেকে নিল। ছয় বছর আগে আমাদের দেখা হয়েছিল। তোমার কি মনে আছে হ্যারি?

একটু একটু, হ্যাগ্রিডের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে হ্যারি বলল। তুমি সামনের দরোজা ভেঙে ফেলেছিলে না? ডাডলিকে শুকরের লেজ লাগিয়ে দিয়েছিলে, আর বলেছিলে আমি একজন যাদুকর।

আমার সব ঘটনা মনে নেই, হ্যাগ্রিড উৎসাহের সঙ্গে হাসল। তারপর রন এবং হারমিয়নের দিকে তাকিয়ে বলল, কী খবর তোমাদের?

আমরা বেশ আছি, হারমিয়ন বলল। তুমি কেমন আছ?

খারাপ না, একটু ব্যস্ততা গেছে। আমাদের কিছু নতুন ইউনিকর্ন জন্ম নিয়েছে। তোমরা যখন আমার ওখানে যাবে তখন সেগুলো তোমাদের দেখাব। হ্যাগ্রিড ওর পকেটে দ্রুত হাত ঢুকালো। রন এবং হারমিয়ন তাকিয়ে রইল। হ্যারি তা গায়ে মাখল না। এটা হ্যারি, ভাবতে পারছিলাম না তোমার জন্য কী আনব, তারপর এটার কথা মনে হলো। সে পকেট থেকে একটি পশমি তারের নরম ব্যাগ বের করল। ব্যাগের সঙ্গে লম্বা ফিতা, সাধারণত গলায় ঝুলিয়ে রাখার জন্য। এটি মোকস্কিনের তৈরী। এর ভেতর যে কোনো কিছু লুকিয়ে রাখা যায়। কেউ বের করতে পারবে না শুধু এর মালিক ছাড়া। এটা খুবই বিরল জিনিস।

ধন্যবাদ হ্যাগ্রিড।

এটা এমন কিছু না, হ্যাগ্রিড তার ডাস্টবিনের ঢাকনার আকারের মতো বড় হাতের তালু উপরে তুলে বলল। ওই যে আরেকজন, চার্লি। খুবই ভালো ছেলে,

হেই চার্লি!

চার্লি এগিয়ে এলো। সদ্য নিষ্ঠুরভাবে ছোট করে দেওয়া চুলের ওপর অসন্তুষ্টির সঙ্গে হাত বুলাচ্ছে। সে রনের চেয়ে একটু খাটো, চওড়া শরীর। পেশিবহুল হাতে বেশ কয়েকটি পোড়া এবং কাটা দাগ।

হাই, হ্যাগ্রিড, কেমন যাচ্ছে?…….। নরবার্ট কেমন আছে?

নরবার্ট, চার্লি হাসল। নরওয়েজিয়ান কুকুরটি? আমরা ওকে এখন নোবাটা বলে ডাকি।

ওয়াহ, নোবার্ট এখন মেয়ে?

হ্যাঁ, চার্লি বলল।

 তুমি কী করে তা বলছ? হারমিয়ন জানতে চাইল।

আরো অনেক পরিবর্তন আছে, চার্লি বলল। সে নিজের কাঁধ ঘুরিয়ে গলার স্বর নামিয়ে বলল। ড্যাড দ্রুত এখানে এলে ভালো হয়। মা বিরক্ত হয়ে পড়ছেন।

ওরা সবাই মিসেস উইসলির দিকে তাকিয়ে দেখল। তিনি ম্যাডাম ডেলাকুরের। সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করছেন আর বার বার গেটের দিকে তাকাচ্ছেন।

আমার মনে হয় আর্থারকে ছাড়াই আমাদের শুরু করা উচিত, খানিক বাদে তিনি খোলামেলা ভাবে বললেন। সে অবশ্যই কোথাও আটকা পড়েছে, ওহ।

ওরা সবাই একসঙ্গে দৃশ্যটি দেখল: একটি নানা রঙের আলোর রেখা উড়ে আসল সোজা উঠানের টেবিলের দিকে। টেবিলের ওপর এসে একটি উজ্জ্বল রুপালি রঙের বেজির আদল পেতে থাকল। পেছনের পা দুটোর ওপর ভর করে দাঁড়াল এবং মি. উইসলির কণ্ঠে কথা বলতে থাকল।

ম্যাজিকের মিনিস্টার আমার সঙ্গে আসছেন।

ঘোষণা দিয়েই আবার উজ্জ্বল রুপালি রঙ ধারণ করে হালকা বাতাসের মধ্যে মিশে গেল। যে দিকটায় উবে গেল সেদিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ফ্লয়ার পরিবার।

আমাদের এখানে থাকা ঠিক না, লুপিন সঙ্গে সঙ্গে বললেন। হ্যারি..আমি দুঃখিত…আমি এ ব্যাপারে পরে ব্যাখ্যা করব…

তিনি টঙ্কসের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন। তারা পাচিল বেয়ে উঠে চোখের আড়াল হয়ে গেলেন। মিসেস উইসলিকে পুরোপুরি হতভম্ব দেখা গেল।

মিনিস্টার….কিন্তু কেন? আমি বুঝতে পারছি না…

 কিন্তু এ নিয়ে আলোচনার কোনো সময় পাওয়া গেল না। এক সেকেন্ড পরই মি. উইসলিকে বাতাসের ভেতর থেকে আবির্ভূত হতে দেখা গেল গেটের কাছে। তার সঙ্গে রুফুস ক্রিমগিয়র। সেটা বোঝা গেল তার গলার কাছে ধুসর পশম দেখে। সদ্য আসা দুজন হেঁটে সোজা লণ্ঠনের আলোয় আলোকিত টেবিলের দিকে এলেন। সেখানে সবাই চুপচাপ বসে আছে। ওদের এগিয়ে আসা দেখছে। ক্রিমগিয়র লণ্ঠনের আলোর কাছে চলে আসতেই হ্যারি লক্ষ্য করল তাকে শেষবার সাক্ষাতে যেমন দেখেছে তারচেয়ে অনেক বেশি বয়স্ক দেখা যাচ্ছে। অনেক শুকনো এবং বিমর্ষ দেখা যাচ্ছে।

এখানে অনুপ্রবেশ করার জন্য আমরা দুঃখিত, ক্রিমগিয়র বললেন। এলামেলো পা ফেলে তিনি টেবিলের কাছে এসে দাঁড়ালেন। বিশেষ করে দেখতে পাচ্ছি আমি একটি পার্টিতে দাওয়াত ছাড়াই ঢুকে পড়েছি।

তিনি এক মুহূর্ত মস্তবড় স্নিচ কেকটার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

মেনি হ্যাপি রিটার্নস,

 থ্যাঙ্কস, হ্যারি বলল।

তোমার সঙ্গে আমার কিছু একান্ত কথা আছে। ক্রিমগিয়র বললেন। তুমি ছাড়াও মি.রোনাল্ড উইসলি এবং হারমিয়ন গ্যাঞ্জারকেও প্রয়োজন।

আমাদের? রন বলল। তাকে কিছুটা অবাক মনে হলো। আমরা কেন?

আরো একটু একান্ত জায়গায় গিয়ে আমি তোমাদের বলব। ক্রিমগিয়র বললেন। এখানে এমন কোনো জায়গা আছে? সে মি. উইসলির কাছে জানতে চাইল।

হ্যাঁ, অবশ্যই, মি. উইসলি বললেন। তাকে কিছুটা নার্ভাস দেখাচ্ছে। ওখানে বসার রুম আছে,তোমরা ওখানটায় বসো না?

তুমি আমাদের ওখানে নিয়ে যাও, রনের দিকে চেয়ে ক্রিমগিয়র বললেন। আর্থার, তোমাকে আমাদের সঙ্গে আসার কোনো দরকার নেই।

হ্যারি, রন এবং হারমিয়ন উঠে দাঁড়াল। হ্যারি লক্ষ্য করল মি.উইসলি মিসেস উইসলির দিকে উদ্বিগ্ন চোখে তাকালেন। ওরা নীরবে ঘরের দিকে যাওয়ার সময় হ্যারি চিন্তা করল যে অন্য দুজনও তার মতো করেই চিন্তা করছে। ক্রিমগিয়র যে করেই হোক কোথাও থেকে শুনেছেন যে ওরা হগোয়ার্ট ত্যাগ করার পরিকল্পনা করেছে।

ক্রিমগিয়র বিশৃঙ্খল কিচেনের ভেতর দিয়ে বারোর সিটিং রুমে না যাওয়া পর্যন্ত কোনো কথা বললেন না। বাগানে পর্যন্ত বেলা শেষের কোমল সোনালি আলো থাকলেও ঘরের ভেতরের এই জায়গাটি ইতিমধ্যেই অন্ধকারে ঢেকে গেছে। হ্যারি রুমে প্রবেশ করেই ওর যাদুদণ্ডটি তেলের ল্যাম্পের ওপর ধরল। ফলে এলামেলো কিন্তু উষ্ণ রুমটি আলোকিত হয়ে উঠল। ক্রিমগিয়র নিজে হাতলওয়ালা ঝুলন্ত চেয়ারে বসলেন যেটায় সাধারণত মি. উইসলি বসে থাকেন। হ্যারি, রন এবং হারমিয়ন পাশাপাশি সোফায় গাদাগাদি করে বসল। ওরা বসার পর ক্রিমগিয়র কথা বলতে শুরু করলেন।

তোমাদের তিনজনের কাছে আমার কিছু প্রশ্ন আছে। আমার মনে হয় সে প্রশ্নগুলো তোমাদেরকে আলাদা আলাদাভাবে প্রশ্ন করাই শ্রেয়। যদি তোমরা দুজন, তিনি হ্যারি এবং হারমিয়নের দিকে দেখিয়ে বললেন, তোমরা দুজন। উপরের রুমে অপেক্ষা করতে পার। আমি রোনাল্ডকে দিয়ে শুরু করব।

আমরা কোথাও যাব না, হ্যারি বলল। হারমিয়ন দৃঢ়তার সঙ্গে মাথা দোলালো। আপনি আমাদের এক সঙ্গে কথা বলতে পারেন। অথবা কোনো দরকার নেই।

ক্রিমগিয়র হ্যারির দিকে ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে অনুমান করতে চেষ্টা করলেন। হ্যারির মনে হলো যে মিনিস্টার ভাবছেন কথার শুরুতেই তর্ক করা ঠিক হবে কি না।

খুব ভালো কথা, তাহলে একত্রেই প্রশ্ন করছি। তিনি কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন। তিনি খুক করে কেশে গলা পরিষ্কার করলেন। আমি নিশ্চিত যে আমি এখানে কেন সেটা তোমরা জানো। আমি এখানে, তার কারণ অ্যালবাস ডাম্বলডোরের রেখে যাওয়া দলিল।

হ্যারি, রন এবং হারমিয়ন ওরা সবাই সবার দিকে তাকাল।

আপাতদৃষ্টিতে একটি অবাক করা ব্যাপার বটে! তাহলে তোমরা জানতে না যে ডাম্বলডোর তোমাদের জন্য কিছু রেখে গেছে?

আ–আমাদের সবার জন্য? রন বলল। আমার এবং হারমিয়নের জন্যও?

হ্যাঁ, তোমাদের সবার।

 কিন্তু হ্যারি বাধা দিল।

এক মাসেরও আগে ডাম্বলডোর মারা গেছেন। তিনি আমাদের জন্য কী রেখে গেছেন সেটা জানাতে এত সময় লাগল কেন?

ক্রিমগিয়র উত্তর দেয়ার আগেই হারমিয়ন বলল, এতে কী পরিষ্কার বোঝা যায় না যে তিনি যাই রেখে গিয়ে থাকুন সেটা তারা পরীক্ষা করতে চেয়েছেন? অথচ আপনাদের তা করার কোনো অধিকার নেই! হারমিয়নের কথাগুলো বলার সময় গলা একটু একটু কাঁপল।

আমাদের সম্পূর্ণ অধিকার আছে, ক্রিমগিয়র ওর কথা বাতিল করে দিয়ে বললেন। যৌক্তিকভাবে জব্দ করার আইনে কোনো দলিলের জিনিসপত্র জব্দ করার ক্ষমতা মন্ত্রণালয়কে দেওয়া আছে

ওই আইনটি তৈরি করা হয়েছিল যাদুকরদের ডার্ক প্রত্নসম্পদ সরিয়ে ফেলা ঠেকানোর জন্য, হারমিয়ন বলল। এবং মন্ত্রণালয়কে ওসব জব্দ করার ক্ষেত্রে শক্তিশালী প্রমাণ রাখতে হবে যে মৃতের জিনিসগুলো অবৈধ! আপনি কী সে কথাই বলছেন যে ডাম্বলডোর আমাদেরকে অবৈধ জিনিস দেবে সেটাই আপনি চিন্তা করেছেন?

তুমি কী যাদু আইনে তোমার ক্যারিয়ার গঠন করবে বলে পরিকল্পনা করেছ, মিস গ্র্যাঞ্জার? ক্রিমগিয়র জানতে চাইলেন।

না, আমি তা করছি না, হারমিয়ন জোরালোভাবে বলল। আমি আশা করছি পৃথিবীতে ভালো কিছু করার।

রন হাসল। ক্রিমগিওরের চোখ তার দিকে জ্বলে উঠল। এবং হ্যারি কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সে সে তার দিকে তাকাল।

তাহলে কেন এখন আপনি আমাদের জিনিসগুলো দিতে চাচ্ছেন? সেগুলো রেখে দেয়ার আর কোনো যুক্তি খুঁজে বের করতে পারলেন না?

না, এর কারণ হলো ৩১ দিন চলে এসেছে। হারমিয়ন সঙ্গে সঙ্গে বলল। যদি তারা প্রমাণ করতে না পারেন যে জিনিসগুলো বিপদজনক, তাহলে এই সময়ের বেশি রাখতে পারেন না, তাই না?

তুমি কী মনে কর যে তুমি ডাম্বলডোরের খুব নিকটজন ছিলে, রোনাল্ড? হার মিয়নের কথায় কান না দিয়ে ক্রিমগিয়র জানতে চাইলেন। রনকে শঙ্কিত দেখা গেল।

আমি?.. আমি ঠিক না…. হ্যারিই সব সময়..

রন ঘুরে হ্যারি এবং হারমিয়নের দিকে তাকাল। দেখল হারমিয়ন তার দিকে এখন কথা বন্ধ কর ধরনের চাহনি দিল। কিন্তু যা ঘটার তা ঘটে গেছে। ক্রিমগিয়রকে মনে হলো তিনি যা শুনতে আশা করেছিলেন এবং চেয়েছিলেন ঠিক তাই শুনে ফেলেছেন। তিনি শিকারি পাখির মতো রনের উত্তরটিকে ধরে বসলেন।

তুমি যদি ডাম্বলডোরের খুব নিকটজন না হবে তাহলে ডাম্বলডোর কীভাবে দলিলে তোমার নাম দিলেন? তিনি দলিলে খুব অল্প কিছু মানুষের নাম উল্লেখ করে গেছেন। তার জিনিসপত্রগুলোর অধিকাংশ, যেমন তার প্রাইভেট লাইব্রেরি, যাদুর যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত সরঞ্জাম তিনি রেখে গেছেন হগোয়ার্টে। তাহলে কেন তিনি অনেকের ভেতর থেকে তোমার নাম বেছে নিয়েছেন বলে মনে কর?

 আমি…বলতে পারব না। রন বলল। যা সত্যি… আমরা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম না….আমার মনে হয় তিনি আমাকে হয়তো ভালো জানতেন…

এটা তোমার বিনয় রন, হারমিয়ন বলল। ডাম্বলডোর তোমাকে খুবই পছন্দ করতেন।

এই সন্ধিক্ষণ সত্যটাই আরো তুলে ধরল : হ্যারি এখন পর্যন্ত জানত যে রন এবং ডাম্বলডোর কখনোই পৃথকভাবে মিলিত হতো না। এবং তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগটা ছিল অতি বিরল ঘটনা। কিন্তু ক্রিমগিয়র কিছু শুনতে পাচ্ছে বলে মনে হলো না। তিনি তার আলখাল্লার ভেতরে হাত ঢুকালেন এবং ফিতা বের হয়ে থাকা একটি ব্যাগ বের করে আনলেন। এটা হ্যাগ্রিডের হ্যারিকে দেয়া ব্যাগটির চেয়ে আকারে বড়। এর ভেতর থেকে তিনি টেনে একটি দলিল বের করে ভাজ খুলে উঁচু গলায় পড়তে শুরু করলেন।

দি লাস্ট উইল এন্ড টেস্টামেন্ট অব অ্যালবাস পারসিভাল উলফ্রিক ব্রায়ান ডাম্বলডোর… হ্যাঁ, আমরা এখানে…. রোনাল্ড বিলিয়ুস উইসলিকে, আমি আমার ডেলুমিনেটর প্রদান করছি এই আশায় যে, যখনই সে এটা ব্যবহার করবে সে আমাকে স্মরণ করবে।

ক্রিমগিয়র ব্যাগ থেকে একটি জিনিস বের করলেন যা হ্যারি আগে দেখেছে: এটা দেখতে অনেকটা রুপালি রঙের একটি সিগারেট লাইটারের মতো। কিন্তু হ্যারি জানে এটার ক্ষমতা হলো ওই জায়গার সব আলো শুষে নিতে পারে,আবার একটি ছোট ক্লিক করার মাধ্যমে আলো জ্বালাতে পারে। ক্রিমগিয়র সামনের দিকে ঝুঁকে ডেলুমিনেটরটি রনের দিকে বাড়িয়ে ধরল। রন সেটি হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে অবাক হলো।

এটি একটি মূল্যবান জিনিস, ক্রিমগিয়র রনের দিকে তাকিয়ে বললেন। এমনকি হয়তোবা এটাই একমাত্র পিস। অবশ্যই এটি ডাম্বলডোরের নিজের ডিজাইন করা। এমন বিরল একটি জিনিস তিনি তোমার জন্য রেখে গেলেন কেন?

রন মাথা দোলালো। সে জানে না। তাকে বিস্মিত দেখালো।

ডাম্বলডোর হাজার হাজার ছাত্রকে শিক্ষা দিয়েছেন, ক্রিমগিয়র দৃঢ়ভাবে বললেন। তারপরও তিনি মাত্র তোমাদের তিনজনের নাম স্মরণ রেখে দলিলে উল্লেখ করেছেন। তা কেন? তোমাদের এই ডেলুমিনেটর কী কাজে লাগবে বলে তিনি মনে করেছেন মি.উইসলি?

আমার মনে হয় বাতি নেভাতে, রন বিড়বিড় করে বলল। এ ছাড়া এটা দিয়ে আর কী করব?

ক্রিমগিয়র এ কথার কোনো জবাব দিতে পারল না। রনের দিকে এক বা দুই মুহূর্ত তীব্র চোখে চেয়ে থেকে তারপর আবার ডাম্বলডোরের দলিলের দিকে নজর দিলেন।

মিস হারমিয়ন জিন গ্র্যাঞ্জারের জন্য আমি আমার দি টেলস অব বিডল দ্য বার্ড-এর কপিটি রেখে যাচ্ছি। আমি আশা করি সে এটা উপভোগ করবে এবং এর থেকে নির্দেশনা পাবে।

ক্রিমগিয়র তার ব্যাগ থেকে এবার একটি ছোট বই টেনে বের করলেন। বইটি দেখতে উপরের তলায় থাকা সিক্রেট আর্টস অব দ্য ডার্ক-এর কপির মতো পুরনো বইয়ের বাধাইয়ের রঙ মলিন হয়ে গেছে এবং উপরের আস্তর খসে গেছে। হারমিয়ন নিঃশব্দে বইটি ক্রিমগিওরের হাত থেকে নিল। সে বইটি নিয়ে তার কোলের ওপর রেখে সেদিকে তাকিয়ে থাকল। হ্যারি দেখল এর শিরোনাম যাদুর সংকেতে। হ্যারি তা পাঠ করতে শেখেনি। সে বইটির দিকে তাকিয়ে থাকার সময় দেখল এক ফোঁটা চোখের জল টপ করে এমবোস করা বইয়ের নামের ওপর পড়ল।

ডাম্বলডোর এই বই তোমার জন্য কেন রেখে গেছেন বলে মনে কর মিস গ্র্যাঞ্জার? ক্রিমগিয়র জানতে চাইলেন।

তিনি….তিনি জানতেন আমি বই ভালোবাসি, হারমিয়ন ভারি গলায় বলল। সে জামার হাতা দিয়ে তার চোখ মুছল।

কিন্তু এই বিশেষ বইটি কেন?

আমি ঠিক জানি না। তিনি হয়তো মনে করেছেন এই বইটি আমি উপভোগ করব।

তুমি কি কখনো কোড নিয়ে অথবা সিক্রেট মেসেজ নিয়ে ডাম্বলডোরের সঙ্গে আলোচনা করেছ?

না, আমি তা করিনি,হারমিয়ন বলল। তখনো সে জামার হাতায় চোখ মুছছে। এবং মিনিস্ট্রি যদি এই ৩১ দিনে এর ভেতর থেকে গোপন কোড খুঁজে

পেয়ে থাকে, তাহলে আমার সন্দেহ হয় আমি পারব কিনা।

হারমিয়ন ডুকরে কেঁদে ওঠাটা অনেক কষ্টে ঠেকাল। ওরা এমন গাদাগাদি করে তিনজন বসে আছে যে কষ্ট করে রন হাতটা উঠিয়ে হারমিয়নের কাঁধে রাখল তাকে শান্ত করতে। ক্রিমগিয়র আবার দলিল পড়তে শুরু করলেন।

হ্যারি জেমস পটারের প্রতি, তিনি পড়তে থাকলেন। হ্যারির ভেতরে একটা উত্তেজনা কাজ করতে থাকল। সে হগগায়ার্টে প্রথম কিডিচ ম্যাচে যে স্নিচটি ধরেছিল সেটি আমি তাকে দিয়ে যাচ্ছি দৃঢ়তা এবং দক্ষতার ব্যাপারে স্মরণ করিয়ে দিতে।

ক্রিমগিয়র টেনে বের করলেন একটি ছোট, আখরোট ফল আকারের সোনালী বল। এর রুপালি পাখা নিস্তেজভাবে কাঁপতে থাকল। হ্যারি ভেতরের আবেগকে সংবরণ করতে পারল না।

ডাম্বলডোর কেন এই স্নিচ তোমার জন্য রেখে গেলেন? ক্রিমগিয়র জানতে চাইলেন।

কোনো ধারণা নেই, হ্যারি বলল। হয়তো আপনি যা পড়ে শোনালেন সে জন্যই, আমি তাই মনে করি….আমাকে স্মরণ করিয়ে দিতে যে তুমি পারো.. দৃঢ়তা বা যেটাই হোক।

তাহলে তুমি কী মনে কর যে এটা শুধুমাত্র একটা প্রতিকী উপহার?

আমার তাই মনে হয়, হ্যারি বলল। এছাড়া আর কি হতে পারে?

আমি তোমার কাছে প্রশ্নের উত্তর জানতে চাচ্ছি, ক্রিমগিয়র তার চেয়ারটা সোফার আরো কাছে সরিয়ে এনে বললেন। বাইরে পুরোপুরি অন্ধকার নেমে এসেছে। এখন জানালার বাইরে ঝোপগুলোর ওপর ভৌতিক একটা সাদা আবরণ পড়ে আছে।

আমি লক্ষ্য করেছি তোমারি বার্থ-ডে কেকের চেহারাটা একটি স্নিচের মতো, ক্রিমগিয়র হ্যারির উদ্দেশ্যে বললেন। সেটা কেন?

হারমিয়ন উপহাস করে হাসল।

হাহ্, হ্যারির ব্যাপারে অনুসন্ধানে এটা কোনো রেফারেন্স হতে পারে না, এই পস্থা খুবই সাদামাটা। সে বলল তাহলে নিশ্চয়ই কেকের ভেতরে ডাম্বলডোরের গোপন মেসেজ আছে!

আমি মনে করি না যে কেকের ভেতরে কোনো কিছু লুকোনো আছে, ক্রিমগিয়র বললেন। কিন্তু স্নিচ-এর ভেতর ছোট কোনো জিনিস লুকিয়ে রাখার জন্য খুবই ভালো জায়গা। আমি নিশ্চিত, তুমি সেটা জানো।

হ্যারি কাঁধ ঝাঁকি দিল। তার কোনো ধারণা নেই। কিন্তু হারমিয়ন ক্রিমগিওরের কথার উত্তর দিল। হ্যারির মনে হলো, সঠিক উত্তর দেওয়াটা হারমিয়নের ভেতরে এমন গভীরভাবে প্রোথিত অভ্যাস যে নিজেকে দমন করতে পারে না।

কারণ মিচের আছে শরীরের গন্ধ চেনার ক্ষমতা, হারমিয়ন বলল।

কি? হ্যারি এবং রন একসঙ্গে বলে উঠল। দুজনেরই ধারণা ছিল যে হারমিয়নের কিডিচ বিষয়ক জ্ঞান খুবই কম।

ঠিক, ক্রিমগিয়র বললেন। স্নিচ হস্তান্তরের আগে এটাকে খালি হাতে ছোঁয়া যায় না। এমনকি যিনি বানাবেন তিনিও পারবেন না। বানাবার সময় তিনি গ-ভস পড়ে নেন। এর ভেতর এমন একটা যাদু আছে যেটা প্রথম যে মানুষটি হাত দিয়ে ছোঁবে তাকে চিনে রাখে। কারণ এটা যদি বেহাত হয়ে যায়। এই স্নিচ, তিনি ছোট সোনালি বলটি হাতে ধরে আছেন, তোমার ছোঁয়াকে মনে রাখবে পটার। আমার ধারণা যে ডাম্বলডোর, আর যে সমস্যাই তার থাকুক যাদুতে যার ছিল অসাধারণ দক্ষতা, তিনি এই স্নিচে এমন কিছু করেছেন যে তুমিই একমাত্র এটি খুলতে পারবে।

হ্যারির বুক আরো ধুকধুক করতে থাকল। সে নিশ্চিত যে ক্রিমগিয়র ঠিক কথা বলছেন। এখন মন্ত্রীর সামনে ও খালি হাতে স্নিচ নেয়াকে পাশ কাটাবে কী করে?

তুমি কিছু বলছ না যে, ক্রিমগিয়র বললেন। হয়তো তুমি ইতিমধ্যেই জানো এর ভিতরে কী আছে।

না, হ্যারি বলল। তখনো সে ভাবছে চিটি কী করে সে ছোঁবে। সে যদি লেজিলিমেন্সি জানত, সত্যিকারে জানত, তাহলে সে হারমিয়নের মনের কথা বুঝতে পারত। সে বুঝতে পারত হামিয়নের মস্তিস্ক তার সঙ্গে অনুরণন ঘটাচ্ছে।

এটা নাও, ক্রিমগিয়র শান্ত কণ্ঠে বললেন।

হ্যারির মিনিস্টারের হলুদ চোখে চোখ পড়ল। সে বুঝতে পারল তার কথা মান্য করা ছাড়া আর কোনো গতি নেই। সে হাত বের করে সামনে ধরল এবং ক্রিমগিয়র আবার সামনে ঝুঁকে স্নিচটি ধীরে স্থিরভাবে হ্যারির হাতের তালুতে রাখল। কিছুই ঘটল না। হ্যারি আঙুলগুলো দিয়ে চারপাশ আটকে ধরতে চিটির ছোট পাখা দ্রুত কাঁপল এবং স্থির হলো।

ক্রিমগিয়র, রন এবং হারমিয়ন আগ্রহ নিয়ে ধরে রাখা বলটির দিকে তাকিয়ে থাকল। যেন তারা আশা করছে এখনই সেটি অন্য রকম রূপ নেবে।

নাটকীয় ব্যাপার, হ্যারি ঠাণ্ডা মাথায় বলল। রন এবং হারমিয়ন দুজনই হাসল।

তাহলে এই সব, তাই না? হারমিয়ন বলল। সে সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল।

পুরোপুরি না, ক্রিমগিয়র বললেন। তাকে কিছুটা রাগান্বিত মনে হলো। ডাম্বলডোর আরো একটি জিনিস তোমার জন্য রেখে গেছেন পটার।

সেটা কি? হ্যারি জানতে চাইল। ভেতরে আবার উত্তেজনা বৃদ্ধি পেল।

এবার আর ক্রিমগিয়র দলিল থেকে পড়লেন না।

গোদ্রিক গ্রিফিনডোরের তলোয়ার। তিনি বললেন।

রন এবং হারমিয়ন দুজনই শক্ত হয়ে গেল। হ্যারি চারদিকে তাকাল। রুবি পাথর খোঁচিত তলোয়ারটি। কিন্তু ক্রিমগিয়র ব্যাগটির থেকে আর তলোয়ার বের করলেন না। কারণ, দৃশ্যত ওটা তলোয়ার রাখার জন্য খুবই ছোট।

সেটা কোথায়? উৎসুক দৃষ্টিতে হ্যারি বলল।

দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপর, ক্রিমগিয়র বললেন। এটা ইচ্ছা করলেই ডাম্বলডোর কাউকে দিয়ে দিতে পারেন না। গোদ্রিক গ্রিফিনডোরের তলোয়ারটি একটি ঐতিহাসিক প্রত্নসম্পদ। এবং এটির মালিক

এটার মালিক হ্যারি! হারমিয়ন থামিয়ে দিয়ে বলল। তাকেই এটা বাছাই করেছে, এবং এটা তার কাছে এসেছে তাকে বাছাই করার পর

বিশ্বস্ত ঐতিহাসিক সূত্র মতে, তলোয়ারটি দেয়া যেতে পারে যে কোনো যোগ্য গ্রিফিনডোরকে, ক্রিমগিয়র বললেন। সে হিসাবে ডাম্বলডোর যে সিদ্ধান্তই নিয়ে থাকুন না কেন এটা হ্যারির একার সম্পদ হতে পারে না। স্ক্রিমগিয়র তার এলামেলোভাবে সেইভ করা থুতনি চুলকিয়ে হ্যারিকে পর্যবেক্ষণ করলেন। তুমি কীভাবে চিন্তা করছ?

ডাম্বলডোর তলোয়াড়টি আমাকে দিতে চেয়েছিলেন? হ্যারি বলল। বহু কষ্ট নিজেকে শান্ত রাখল। তিনি হয়তো ভেবেছেন আমার দেয়ালে এটাকে ভালো দেখাবে।

এটা কোনো তামাশার ব্যাপার নয় হ্যারি! গভীর গলায় স্ক্রিমগিয়র বললেন। এটা কি এই কারণে যে ডাম্বলডোর বিশ্বাস করতেন, একমাত্র গোদ্রিচ গ্রিফিনডোরের তলোয়ার পারে সিথারিনের পরম্পরা ধ্বংস করতে? তিনি তোমাকে এই তলোয়ারটি দিতে চেয়েছেন, কারণ তিনি অনেকের মতই বিশ্বাস করতেন যে তুমিই কেবল ওই ব্যাক্তিকে ধ্বংস করতে যার নাম নেয়া যায় না?

মজার থিওরি, হ্যারি বলল। কেউ কি কখনো ভোল্ডেমর্টকে তলোয়ার দিয়ে। আঘাত করার চেষ্টা করেছে? ডেলুমিনেটর নিয়ে সময় নষ্ট না করে, অথবা আজকাবান থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা গোপন রাখতে ব্যস্ত না রেখে মিনিস্ট্রি বরং কিছু লোককে এই কাজে লাগিয়ে দিলেই ভালো করত। আপনি এই সব। কাজই করে চলেছেন মিনিস্টার, অফিসে চুপ করে বসে থেকে স্নিচ খোলার চেষ্টা করছেন। এদিকে মানুষ মরছে। আমিও প্রায় তাদের মতো মরতে বসেছিলাম। ভোল্ডেমর্ট আমাকে তিনটি রাজ্যের উপর দিয়ে ধাওয়া করেছে। সে ম্যাড-আই মুডিকে হত্যা করেছে। কিন্তু এসব নিয়ে মন্ত্রণালয় টু-শব্দ করেনি। করেছে? আর এখন আপনি আশা করছেন আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব।

তুমি অনেক দূর চলে গেছ! উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করলেন ক্রিমগিয়র। হ্যারিও লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। ক্রিমগিয়র হ্যারির দিকে লাফ দিল এবং জোরে যাদুদণ্ডটির মাথা দিয়ে হ্যারির বুকে আঘাত করল। হ্যারির টি-শার্টের ওপর সিগারেটের আগুন দিয়ে পোড়ার মতো একটি ছিদ্র গয়ে গেল।

এই! রন বলল। সে লাফ দিয়ে নিজের যাদুদণ্ডটি তুলে নিল। কিন্তু হ্যারি বলল, না! তুমি কী আমাদের গ্রেফতার করার সুযোগ করে দিতে চাও?

মনে রাখবে তুমি আর এখন স্কুলের ছাত্র নও! হ্যারির মুখের ওপর নিঃশ্বাস ছেড়ে স্ক্রিমগিয়র বললেন। মনে রাখবে আমি ডাম্বলডোর না! তিনি তোমার উদ্ধত আচরণ এবং বাড়বাড়ি ক্ষমা করে দিয়েছেন। তুমি হয়তো মুকুটের মতো স্কার পড়ে আছ, কিন্তু সতেরো বছর বয়সের ছেলের কাছে আমার কর্তব্য শিখতে হবে না! এবার তোমাকে রেসপেক্ট করা শিখতে হবে!

সময় এসেছে আপনাকেও সেটা অর্জন করতে হবে! হ্যারি বলল।

পায়ের নিচে মেঝে কেঁপে উঠল। দৌড়ানোর শব্দ পাওয়া গেল! ধপাস করে দরোজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন মি. এবং মিসেস উইসলি।

আমরা..আমরা ভেবেছিলাম … মি.উইসলি শুরু করলেন। মিনিস্টার এবং হ্যারিকে নাকের সঙ্গে নাক লাগানো দূরত্বে দেখে সতর্ক হয়ে উঠলেন।

–এত উচ্চস্বর কেন, মিসেস উইসলি ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছেন। ক্রিমগিয়র হ্যারির কাছ থেকে কয়েক পা সরে গেলেন। হ্যারির জামার ছেঁড়া জায়গাটার দিকে তাকালেন। তাকে মনে হলো রেগে যাওয়ার কারণে এখন অনুতপ্ত হয়েছেন।

এটা..এটা কিছু না, তিনি ঘরঘর করে বললেন। আমি… তোমার আচরণে দুঃখিত হয়েছি। আরো একবার সরাসরি হ্যারির দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন। তুমি মনে হয় চিন্তা করছ যে তুমি যা চাও, ডাম্বলডোর যা চাইতেন তা বোধ হয় মিনিস্ট্রি চায় না। আমাদের এক সঙ্গে কাজ করা উচিত ছিল।

স্পষ্ট বলি, আমি আপনার কাজকর্ম পছন্দ করি না মিনিস্টার, হ্যারি বলল।

সে দ্বিতীয়বারের মতো ক্রিমগিয়রকে মুষ্টিবদ্ধ করে তার ডান হাতের স্কারটি তুলে দেখালো। এখনো সেখানে সাদা লেখা আছে আমি মিথ্যা কথা বলব না। ক্রিমগিওরের মুখ কঠিন হয়ে গেল। তিনি কোনো কথা না বলে পেছন ফিরে লাফিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। মিসেস উইসলি তার পেছন পেছন ছুটে গেলেন। হ্যারি শব্দ শুনতে পেল তিনি পেছন দরোজার কাছে গিয়ে থেমে গেছেন। খানিক বাদে তিনি বললেন, সে চলে গেল!

সে কি চায়, মি.উইসলি ঘুরে ফিরে হ্যারি রন এবং হারমিয়নের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন। মিসেস উইসলিও পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।

তিন আমাদের জন্য ডাম্বলডোর যা রেখে গেছেন সেটা দিতে এসেছিলেন, হ্যারি বলল, তারা এখন দলিলে উল্লেখিত জিনিসগুলো রিলিজ করেছে।

বাইরে বাগানে ডিনার টেবিলে ক্রিমগিওরের দিয়ে যাওয়া জিনিসগুলো সবাই হাতে হাতে নিয়ে দেখতে থাকল। সবাই ডেলুমিনেটর এবং দ্য টেলস অব বিডল দ্য বার্ড নিয়ে শোরগোল করতে থাকল। এবং ক্রিমগিয়র যে তলোয়ার দিতে অস্বীকার কয়েছে তা নিয়ে প্রতিবাদ জানাল। কিন্তু কেউ কোনো মন্তব্য করতে পারল না যে কেন, কি কারণে ডাম্বলডোর হ্যারিকে স্নিচ দিয়ে গেছেন। মি. উইসলি তৃতীয় বা চতুর্থবারের মতো ডেমিনেটর নিয়ে পরীক্ষা করে দেখলেন। মিসেস উইসলি দ্বিধা নিয়ে বললেন, হ্যারি, প্রিয়, সবাই খুবই ক্ষুধার্ত। আমরা তোমাকে ছাড়া শুরু করতে পারছি না। এখন কি ডিনার পরিবেশন করতে পারি?

সবাই তাড়াহুড়া করে ডিনার শেষ করল। তারপর সবাই মিলে সুর করে হ্যাপি বার্থ-ডে গাইল, গাল ভরে কেক খেল। এরপর জন্মদিনের পার্টি শেষ হলো।

হ্যাগ্রিড পরের দিনের বিয়ের অনুষ্ঠানেরও অতিথি। কিন্তু তার এই বিরাট শরীর নিয়ে বারোর কোনো ঘরে থাকাটা মুশকিল হয়ে গেল। সে পাশের মাঠে নিজের জন্য একটি তাঁবু খাটিয়ে নিল।

উপরে চলে এসো, বাগানের স্বাভাবিক চেহারা ফিরিয়ে আনতে গোছগাছ করতে মিসেস উইসলিকে সাহায্য করার সময় হ্যারি ফিসফিস করে হারমিয়নকে বলল, সবাই বিছানায় শুয়ে পড়লে চলে এসো।

উপরের ছাদের সঙ্গে ছোট রুমটিতে রন তার তার ডেলুমিনেটর পরীক্ষা করল। হ্যারি হ্যাগ্রিডের মোসেসকিনে জিনিস ভরতে থাকল। সোনার দামী জিনিস, কিন্তু, যে জিনিসগুলো তার কাছে মুল্যবান। যদিও এর কিছু দেখে আপাতদৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় মনে হয় না; মারাউডারের ম্যাপ, সিরিয়ুসের যাদুর আয়নার ভাঙা টুকরো এবং আর এ বির লকেট। সে টেনে ব্যাগের ফিতা লাগালো এবং গলার ওপর দিয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে নিল। তারপর পুরনো স্নিচটি হাতে নিয়ে বসল। এবং সেটির পাখা নড়া দেখতে থাকল। অবশেষে হারমিয়ন দরোজায় টোকা দিল এবং পা টিপে টিপে ভেতরে ঢুকল।

মুফলিয়েটো! হারমিয়ন ফিসফিস করে বলল। সে উপরের দিকে তার যাদুদণ্ডটি ধরল।

আমি ভেবেছিলাম তুমি এই স্পেল করা অনুমোদন কর না?

সময় বদলেছে, হারমিয়ন বলল। এখন আমাদেরকে তোমার ডেলুমিনেটরটা দেখাও।

রন সঙ্গে সঙ্গে তার কথা অনুসরণ করল। সে নিজের সামনে ডেমিনেটরটি ধরল। একটি চাপ দিল। যে একটি লাইট ঘরে জ্বালানো ছিল সেটি সঙ্গে সঙ্গে নিভে গেল।

এই জিনিসটি, হারমিয়ন অন্ধকারের ভেতর ফিসফিস করে বলল। আমরা পেরুভিয়ান ডার্কনেস পাওডার দিয়ে এটি অর্জন করতে পারতাম।

ছোট একটি ক্লিক করার পর আলোর বলটি ল্যাম্প থেকে উড়ে সিলিং এ ফিরল। সেখানে আলো ছড়িয়ে দিল।

বেশ স্থির, স্নিগ্ধ, রন বলল। এবং ওদের মতে, ডাম্বলডোর এটি নিজে তৈরি করেছে!

আমি জানি, কিন্তু তিনি অবশ্যই তার দলিলে তোমাকে বিশেষভাবে আমাদের জন্য লাইট জ্বালানো এবং নেভানোর কাজ করতে বলে যাননি।

তুমি কী মনে করো যে তিনি জানতেন যে তার দলিলটি মিনিস্ট্রি জব্দ করতে পারে এবং তিনি যা রেখে গেছেন তার সব কিছু পরীক্ষা করতে পারে? হ্যারি জানতে চাইল।

অবশ্যই জানতেন, হারমিয়ন বলল। তাই তিনি দলিলে বলে যেতে পারেননি যে কি কারণে তিনি আমাদের জন্য এই জিনিসগুলো রেখে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনো তার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি….।

..তিনি বেঁচে থাকতে কেন আমাদের ইঙ্গিত দেন নাই? রন বলল।

ঠিক আছে, তোমার কথা ঠিক, হারমিয়ন বলল। তখন সে দ্য টেলস অব বিডল দ্য বার্ড বইটির পাতা উল্টে যাচ্ছে। যখন এই জিনিসগুলো মিনিস্ট্রির মাধ্যমেই হস্তান্তর হবে, সে ক্ষেত্রে তুমি ধরে নিতে পার জিনিসগুলো তেমন তাৎপর্যপূর্ণ নয়, আর তা না হলে তিনি আমাদেরকে জানাতেন, আর তা না হলে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না যে মিনিস্ট্রির মাধ্যমেই হস্তান্তর হবে?

তাহলে এটা তার ভুল, তাই না? রন বলল। আমি সব সময় বলেছি তিনি পাগলা ধরনের। তিনি মেধাবী এবং তার অন্য সব কিছু ঠিক, কিন্তু তিনি উদ্ভট কাজও করেছেন। হ্যারির জন্য একটি পুরোনো ব্লিচ রেখে গেছেন–কি হবে এই স্নিচ দিয়ে?

আমার কোনো ধারণা নেই, হারমিয়ন বলল। ক্রিমগিয়র যখন ওটা তোমাকে নিতে বলল হ্যারি, আমি একেবারে নিশ্চিত ছিলাম যে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।

আচ্ছা, বুঝলাম, সে হাতে স্নিচ আঙুল দিয়ে তুলে নিতেই তার রক্ত চলাচল বেড়ে গেল। আমি ক্রিমগিওরের সামনে খুব কঠিন হতে চাইনি, চেয়েছি?

তুমি কী বোঝাতে চাচ্ছ? হারমিয়ন বলল।

জীবনে প্রথম কিডিচ ম্যাচে আমি স্নিচ ধরেছিলাম, হ্যারি বলল। তোমাদের কি সে কথা মনে আছে?

হারমিয়নকে পরিষ্কার হতবাক মনে হলো। রন একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। আবেগাপ্লুত হয়ে হ্যারির দিক থেকে স্নিচের দিকে তাকাল। এবং সে কথা বলতে শুরু করলে আবার চোখ ফেরাল।

এটি তুমি প্রায় গিলে ফেলেছিলে!

 ঠিক, হ্যারি বলল। তার বুক আরো জোরে ওঠানামা করতে থাকল। সে স্নিচটি তার মুখের ওপর চেপে ধরল।

এটা খোলেনি। হতাশা এবং তীক্ত বেদনা বোধ তার ভেতরে বসে গেল। সে সোনালি দিকটা নিচু করল। ঠিক তখনই হারমিয়ন চিৎকার করে উঠল।

লেখা..! ওটার উপরে কিছু লেখা আছে! তাড়াতাড়ি দেখ!

 উত্তেজনা এবং বিস্ময়ে হ্যারি প্রায় হাত থেকে ফেলেই দিয়েছিল। হারমিয়ন ঠিক কথা বলেছে। এর উপরিভাগে কিছু ছাপ দেয়া লেখা রয়েছে। ঠিক এক মুহূর্ত আগেও এর উপর কিছুই ছিল না। সরু হাতের লেখায় পাঁচটি শব্দ রয়েছে সেখানে। হ্যারি চিনতে পারল এটা ডাম্বলডোরের হাতের লেখা :

আই ওপেন অ্যাট দ্য ক্লোজ।

সে কোনোক্রমে পড়তে পারল শব্দগুলো আবার মিলিয়ে যাওয়ার আগে।

আই ওপেন অ্যাট দ্য ক্লোজ… এর মানে কী হতে পারে?

হারমিয়ন এবং রন দুজনই মাথা নাড়ল। অর্থহীন চোখে তাকিয়ে থাকল।

আই ওপেন অ্যাট দি ক্লোজ…. অ্যাট দ্য ক্লোজ… আই ওপেন অ্যাট দ্য ক্লোজ….

কিন্তু যতবারই ওরা বাক্যটি উচ্চারণ করুক না কেন, উল্টেপাল্টে চিন্তা করুক কেন–এর কোনো অর্থ উদ্ধার করতে পারল না।

আর ওই তলোয়ার, স্নিচের দৈবিক লেখার অর্থ বের করতে না পেরে শেষে রন বলল। তলোয়ারটি হ্যারির প্রয়োজন হবে এটা তিনি ভাবলেন কেন?

 এবং তিনি কেন আমাকে কথাটা বলতে পারেননি, শান্তকণ্ঠে হ্যারি বলল। এই তলোয়ারটি সেখানে ছিল। গত বছর আমরা তার সঙ্গে যতবার কথা বলেছি। এই তলোয়ারটি তার দেয়ালে ঝুলানো ছিল! তিনি যদি এটা আমাকে দিতে চাইতেন, তাহলে তখন কেন আমাকে সরাসরি দিয়ে দিলেন না?

হ্যারির মনে হলো সে এক গাদা প্রশ্ন সামনে নিয়ে বসে আছে যার উত্তর তার জানা উচিত। কিন্তু প্রশ্নোত্তর পেতে যেন তার মাথা মন্থর হয়ে গেছে এবং কোনো কাজ করছে না। গত বছর ডাম্বলডোরের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার সময় সে কি কিছু মিস করেছে? তার কি সব কথার মানে জানা উচিত ছিল? ডাম্বলডোর কি আশা করেছিলেন যে সে সব বুঝবে?।

আর এই বইটির ব্যাপারে, হারমিয়ন বলর। দ্য টেলস অব বিডল দ্য বার্ড..এর সম্পর্কে আমি কখনো কিছু শুনিনি পর্যন্ত!

তুমি কখনো দ্য টেলস অব বিডল দ্য বার্ড সম্পর্কে শোনোনি? রন অবিশ্বাসের সুরে বলল। তুমি নিশ্চই ফাজলামো করছ তাই না?

না, আমি মোটেই ফাজলামো করছি না! হারমিয়ন অবাক হয়ে বলল। তাহলে তুমি কী এসব বই পড়েছ?

হ্যাঁ, অবশ্যই আমি পড়েছি!

হ্যারি মাথা ঘুরিয়ে তাকাল। কোনো বই হারমিয়ন পড়েনি কিন্তু রন পড়েছে, এমন ঘটনা অভুতপুর্বই বটে। কিন্তু রন তাদের বিস্মিত হওয়া দেখে হতবাক হলো।

আহ্, সব পুরনো শিশুকাহিনী বলা যায় বিডলকে, তাই না? দ্য ফাউন্টেন অব ফেয়ার ফরচুন…. দ্য উইজার্ড এন্ড দ্য হোপিং পট…. ব্যাবিটি র‍্যাবিটি এন্ড হার ক্যাকলিং স্ট্যাম্প….

এক্সকিউজ মি, হারমিয়ন বলল। শেষেরটা কী বললে?

ওটা বাদ দাও! হ্যারি এবং হারমিয়নের দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রন বলল। তোমরা অবশ্যই ব্যাবিটি রাবিটি …?

রন, তুমি ভাল করেই জানো হ্যারি এবং আমি বড় হয়ে উঠেছি মাগলদের কাছে, হারমিয়ন বলল, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন এ ধরনের কোনো কাহিনী শুনিনি। আমরা পড়েছি স্নো হোয়াইট এন্ড দ্য সেভেন ডোয়ার্ভস এবং সিনডারেলা…

ওগুলো কি পড়ার মতো? রন জানতে চাইল।

এগুলো শিশুদের গল্প? হারমিয়ন আবার নিচু হয়ে বইয়ের উপরের শিরোনামটি দেখল।

হ্যাঁ, রন অনিশ্চয়তার সঙ্গে বলল। অর্থাৎ ঠিক তোমরা যেমনটি শুনেছ। ইউ নো, এই সব পুরনো গল্প এসেছে বিডল থেকে। আমি বলতে পারব না আসল সংস্করণে গল্পগুলো ঠিক কেমন।

কিন্তু আমি ভাবছি ডাম্বলডোর কেন চিন্তা করলেন যে ওগুলো আমার পড়া উচিত?

নিচে ক্যাচ করে কিছু একটা শব্দ হলো।

সম্ভবত চার্লি, মা এখন ঘুমিয়ে পড়েছেন। সে হয়তো গোপনে তার চুল গজিয়ে ওঠা পরীক্ষা করছে। রন নার্ভাসভাবে বলল।

একই কথা, আমাদেরও এখন ঘুমাতে যাওয়া উচিত, হারমিয়ন ফিসফিস করে বলল। কাল অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমানো যাবে না।

না, রন একমত হলো। বরের মা যদি আমাদের তিনজনকে মেরে ফেলে তা হলে বিয়ের অনুষ্ঠানটা ভেস্তে যাবে। আমি লাইট জ্বালাচ্ছি।

হারমিয়ন ঘর থেকে বের হওয়ার সময় রন আরেকবার ক্লিক করে ডেলুমিনেটরে চাপ দিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *