২৮. ফ্লাইট অব দ্য প্রিন্স

২৮. ফ্লাইট অব দ্য প্রিন্স

হ্যারির মনে হলো ও যেন শূন্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, কেউ ওকে ছুঁড়ে ফেলেছে। চলো, চলো, তাড়াতাড়ি, স্নেইপ ম্যালফয়কে দুর্গ থেকে পালিয়ে যেতে তাড়া দিলেন।

তারপর ম্যালফয়ের ঘাড়ে হাত দিয়ে বাকি লোকদের সামনে দিয়ে দ্রুত চলে গেলেন। গ্রেব্যাক, আর উবু হয়ে বসে থাকা ভাই-বোন স্নেইপের পিছু পিছু পালিয়ে গেলো। ওরা খোলা দরজা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলে হ্যারির মনে হলো ও যেন সামান্য নড়তে চড়তে পারছে। স্থির স্তব্ধ হ্যারি দেয়ালের দিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে যাদুর ফলে নয়, যে ঘটনাগুলো ওর সামনে হলো তারই বিভীষিকা ও মানসিক আঘাতে। ও একটানে অদৃশ্য হবার ক্লোকটা খুলে ফেললো যখন দেখলো হিংস্রমুখী ডেথ-ইটার টাওয়ারের ওপরের দরজা দিয়ে পালাচ্ছে।

পেট্ৰিফিকাস টোটালাস!

ডেথইটারটা থমকে দাঁড়ালো, যেন ওর পিঠে একটা শক্ত কিছু আঘাত করেছে এবং ও মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, তারপর লাফিয়ে উঠে অন্ধকার সিঁড়িতে উঠে পালিয়ে গেলো। হ্যারি ওকে ধরার জন্য লাফিয়ে লাফিয়ে পিছু নিলো।

এই নির্মম সন্ত্রাস হ্যারির হৃদয় বিদীর্ণ… ওকে এখন ডাম্বলডোরের কাছে যেতে হবে, স্নেইপকে ধরতে হবে… যে করেই হোক এই দুটো জিনিস যুক্ত…। ও যদি স্থানুবৎ না হয়ে থাকতো তাহলে সে ঘটনা বিপরীত করতে পারতো, ডাম্বলডোরের মৃত্যু হতো না।

ও সিঁড়ির দশ ধাপ উঠে থেমে গেলো। ও দণ্ডটা তুললো, স্বল্প আলোতে দেখলো করিডরটা ধুলি ধূসর। অর্ধেকটা ছাদ ভেঙ্গে পড়েছে। তখনো দুদলের লড়াই চলেছে, চিনতে পারলো না পক্ষ ও বিপক্ষের যোদ্ধাদের। হ্যারি যখন চেনার চেষ্টা করছে ঠিক সেই সময় ওর কানে ভেসে এলো এক তীব্র বেদনার শব্দ সব শেষ এবার তুমি চলে যাও! হ্যারি স্তম্ভিত হয়ে দেখলো স্নেইপ ম্যালয়ের হাত ধরে দুদলের মধ্য দিয়ে চলে যাচ্ছেন। হ্যারি দৌড়তে দৌড়তে দুজনকে ধরতে গেলো। সংঘর্ষরত শত্রুপক্ষের একজন দল ছেড়ে ওর দিকে ছুটে এলো–দেখলো ওয়েরউলফ গ্রেব্যাক। হ্যারি তার দণ্ডটি তোলার আগেই সে তার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়লো। নাকে এলো গ্রেব্যাকের গায়ের আর রক্তমাখা দাঁতের নাক মুখের দুর্গন্ধ, মুখ থেকে অনবরত বেরিয়ে আসছে লালসাপূর্ণ নিঃশ্বাস…।

প্যাট্রিফিকাস টোটালাস!

হ্যারির সামনে গ্রেব্যাক উল্টে পড়লেন। তখনো তিনি আঁকড়ে রয়েছেন হ্যারিকে। গ্রেব্যাকের মুখে সবুজ আলো পড়তেই গ্রেব্যাক ডিগবাজি খেয়ে প্রবলবেগে দৌড়লেন, হ্যারি পিচ্ছিল ও দলিত কিছু পায়ে লেগে হোঁচট খেলো। দুটো মৃতদেহ পড়ে আছে আর অনেক রক্ত সেখানে। কিন্তু কাদের মৃতদেহ দেখার সময় নেই। হ্যারি সামনে তাকালো, দেখলো জিনি ওর দিকে দৌড়ে আসছে। ওর মাথার লাল চুলগুলো উড়ছে। কিন্তু জিনির আসা বন্ধ হয়ে গেলো। মাথা মোটা ডেথইটার এমিকাস ওকে একটার পর একটা সমোহিত জাদুমন্ত্র ছুঁড়ে চলেছে আর সে গোত্তা মেরে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। বললো, ক্রসিও ক্রসিও… পুঁচকে মেয়ে আর কতো নাচবে? এইবার তোমার নাচ শেষ হবে। জিনি এখনো জাদুমন্ত্রে গোঁত্তা খেয়ে চলেছে।

হ্যারি অসম্ভব জোরে বললো, ইমপেডিমেন্ট!

হ্যারির জিনস সজোরে এমিকাসের বুকে লাগলো। ও শুয়োরের মতো ডেকে উঠলো, ব্যথা জর্জরিত দেহটা দেওয়ালে ধাক্কা খেলো। তারপরই রনের পেছনে চিৎপটাং হয়ে পড়ে গেলো। সেখানেও ম্যাকগোনাগল আর লুপিন প্রবল বিক্রমে একজন ডেথইটারের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন। টোংকস লড়াই করে চলেছে একজন লম্বা চওড়া সোনালী চুলের এক জাদুকরের সঙ্গে। জাদুকর টোংকসকে কাবু করার জন্য একটার পর একটা কার্স ছুঁড়ছে। ওর কার্স পাগলের মতো ঘুরতে ঘুরতে কখনো দেওয়ালে, কখনো ছাদের সিলিং-এ ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসছে। চতুর্দিকে আর্তনাদ, ফটফট শব্দ, জানালার কাঁচের শার্সি ভাঙ্গার ঝনঝন শব্দ, পাথর ভাঙ্গার শব্দে সমস্ত করিডর পূর্ণ হয়ে গেছে।

হ্যারি তুমি কোথায় ছিলে? জিনি চিৎকার করে বললো, কিন্তু হ্যারির জিনির প্রশ্নের জবাব দেবার সময় নেই। ওর মাথার কাছে একটা ছোট আগুনের গোলা এগিয়ে আসছিলো তীর বেগে। ও মাথাটা না নোয়ালে মাথাটা চূর্ণ হয়ে যেতো। ও বেঁচে যায় এক চুলের জন্যে। এবার আরো আগুনের গোলা ওর দিকে চারদিক থেকে আসতে লাগলো, ও নিজেকে ক্ষীপ্রতার সঙ্গে বাচিয়ে চললল। হঠাৎ ওর মনে হলো স্নেইপ পালাতে পারেননি কাছে-পিঠে কোথায় আত্মগোপন করে রয়েছেন।

ধরো ধরো, হ্যারি ওদের ধরো, ম্যাকগোনাগলের কথা শুনে সামনে তাকালো, দেখলো এক মহিলা ডেথইটার, এলেকটো দুহাত উঁচু করে অস্ত্র হাতে করিডর ধরে দুরন্ত বেগে ছুটে চলেছে, ওর ডান দিকে ওর ভাই। হ্যারি দৌড়ে দুই ভাই বোনকে ধরতে গিয়ে ধপাস করে পা-পিছলে পড়ে গেলো একজনের গায়ে ধাক্কা লেগে। পায়ের কাছে দেখলো নেভিল পড়ে রয়েছে–ওর মুখটা বিবর্ণ, মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে।

নেভিল তুমি…?

আ… আমি… ভালো আছি, নেভিল বিড়বিড় করে হ্যারির মুখের দিকে তাকিয়ে পেটে হাত চেপে বললো। ওই যে স্নেইপ আর ম্যালফয়, দাঁড়িয়ে থেকো না ওদের ধরো, জোরে দৌড়ও।

 হ্যাঁ, আমি ওদের ধরছি, হ্যারি বললো। ওর সামনেই একটা বিরাটকায়া সোনালী চুলের ডেথইটার দাঁড়িয়েছিলো। হ্যারি ওকে দেখে স্পেল ছুড়লো, ডেথইটারটা বিকট আর্তনাদ করে মেঝেতে পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলো। স্পেলটা সরাসরি ওর মুখে লেগেছে। তারপর হ্যারি ভাই-বোনকে ধরতে ছুটলো।

হ্যারির পা পিছলে গেলো, তার জুতো রক্ত লেগে পিচ্ছিল হয়ে গেছে। স্নেইপ তখন জোরে পালাচ্ছে। হ্যারি ইতোমধ্যে ক্যবিনেটে ঢুকেছে, ওখান দিয়ে ডেথ ইটাররা যেন পালিয়ে না যায় সেটা রোধ করার জন্য। হ্যারি এধার ওধার তাকালো, তারপর সোজা ছুটলো। ও কোনো কিছুতেই কান দিলো না… ওকে ধরতেই হবে, স্নেইপকে। হ্যারি দেখলো কিছু ডেথইটার সামনের দরজার দিকে এগোচ্ছে তাহলে বোধহয় রুম অফ রিকোয়ারমেন্টের দরজা।

ডেথইটার ভাই-বোন তখন প্রাণ বাঁচানোর জন্য পাথরের সিঁড়িতে উঠেছে। হ্যারি ওদের দিকে জিনস ছুঁড়লো। কিন্তু ওদের গায়ে না লেগে একটা পোর্ট্রেটে লাগলো। তারপরই কোলাহলের শব্দ চতুগুণ হয়ে গেলো। খুব সম্ভব সবার ঘুম ভেঙ্গে গেছে।

হ্যারিকে দেখে এরনি ম্যাকমিলান ভয়ভয়ে বললো, ব্যাপার কি, কে যেন বললো ডার্কমার্ক ওপরে এবং ডেথইটার পাঠিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে?

হ্যারি দেখলো এন্ট্রেল হলের দরজার কাছে তিনজন দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওরা খুব সম্ভব লনে পালাবার চেষ্টা করছে। ও দেখলো একজন বিরাটকায় ডেথইটারের আড়ালে দাঁড়িয়ে রয়েছে ম্যালফয় আর স্নেইপ।

তারপরই করিডরটা আলোতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। দেখলো সেখানে হ্যাগ্রিডকে। হ্যাগ্রিড সোনালী চুলের ডেথ ইটারের কার্স অগ্রাহ্য করে স্নেইপ আর ম্যালফয়কে পাকড়াও করতে ছুটছেন। একটার পর একটা স্পেল ওর গায়ে লাগছে। সেইসব স্পেল হ্যাগ্রিডকে স্পর্শ করছে মাত্র। ম্যালফয় আর স্নেইপকে প্রাণপাত চেষ্টা করেও ধরতে পারছেন না হ্যাগ্রিড। হ্যারির মনে হলো এইবার ওরা দুজনে ডিসঅ্যাপারেট করবে।

তার আগেই হ্যারি স্নেইপকে পেছন থেকে ভীষণ জোরে বললো, স্টুপিফাই!

লাল রশ্মি স্নেইপের পাশ দিয়ে চলে গেলো। চিৎকার করে বললেন দৌড়াও ড্র্যাকো। বিশ গজ দুরতে যেয়ে হ্যারি ও সে দুজনই দণ্ড তুলে বললো ক্রাস। কিন্তু হ্যারি কার্স শেষ করার আগেই স্নেইপেরটা এসে ওর মাথায় লাগলো।

হ্যারি দুলে উঠে আবার কার্স ছুড়লো। স্নেইপ পালাতে পালাতে কার্স পাশ কাটিয়ে গেল। হ্যারি চিৎকার কর বললো, পালাচ্ছেন কেন লড়াই করুন ভীতু কোথাকার।

আমাকে তুমি ভীতু বলছো পটার? স্নেইপ গাড়ম্বরে বললেন–বুঝলে তোমার বাবা অন্তত চারজন সঙ্গে করে না আনলে আমাকে হারাতে পারতো না। তাহলে

ওকে তুমি কি বলবে, সাহসী না ভীতু?

স্টুপিফাই

আবারো আটকে দিলো। কিছুই করতে পারবে না পটার। মুখ বন্ধ করো এবং মাথা ঠান্ডা রাখো, হ্যারির ছোঁড়া প্রতিটি কার্স রুখতে রুখতে স্নেইপ বললেন।

চলে আসো! হ্যারির পেছনে থাকা বিরাটাকার ডেথ ইটারকে বললেন, মিনিস্ট্রির লোকেরা আসার আগেই আমাদের যেতে হবে

ইমপেডি

জিনকস শেষ করার আগেই হ্যারি তীব্র ব্যথায় হাঁটু গেড়ে ঘাসের ওপর বসে পড়লো। একজন চিৎকার করে বলছে, স্নেইপ ওকে নির্যাতন করে মেরে ফেলুন বা পাগলের মত…

না! স্নেইপের কণ্ঠস্বর গর্জে ওঠার সাথে সাথে হ্যারির ব্যথা থেমে গেলো। দণ্ডটি আকড়ে ধরে ঘাসের ওপর একে বেকে পড়ে থেকে ঘন ঘন শ্বাস নিতে নিতে শুনলো। আমাদের ওপর অর্পিত নির্দেশ কি ভুলে গেছো? পটার হলো ডার্কলর্ডের আমাদের ওকে বাদ দিতে হবে! যাও! যাও!

হ্যারি অনুভব করলো তার মুখের তলায় মাটি থরথর করে কেঁপে উঠলো, যখন বোন ও ভাই এবং বিরাটাকায় ডেথ ইটার নির্দেশ মেনে ফটকের দিকে দৌড়াচ্ছে। হ্যারির যা মনে এলো, তা-ই উচ্চারণ করলো, ওর কিছু যায় আসে না।

মরবে কি বাঁচবে, আবার পার ওপর দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করে স্নেইপের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে–এই লোকটিকে এখন সে ভোন্টেমর্টের মতোই ঘৃণা করে।

সেকটাম-

স্নেইপ তার দণ্ডটি দিয়ে কার্লকে ফিরিয়ে দিলো আবার।

হ্যারি তখন মরিয়া হয়ে উঠলো ডেথ ইটারস ভাই বোন আর স্নেইপ-ড্র্যাকোকে ধরার জন্য। ওদিকে হ্যাগ্রিডের কটেজ দাউদাউ করে পুড়ছে।

হ্যারি দেখলো স্নেইপ আর ম্যালফয় তখনো পালাবার জন্য দৌড় পরই তারা গেটের বাইরে চলে যাবে, তারপর সেখান থেকে ডিসঅ্যাপারেট করতে পারবে। হ্যারির হাত থেকে দণ্ডটা পড়ে গিয়েছিলো। ঘাসের মধ্যে সেটা খুঁজে পেয়ে গেটের দিকে তাকালো। হিপপোগ্রাফ গেটটা ঘিরে দাঁড়াবার আগেই স্নেইপ স্কুল বাউন্ডারির বাইরে গিয়ে ডিসঅ্যাপারেট করে পালিয়ে গেলেন।

হ্যাগ্রিড, হ্যাগ্রিড আপনি কোথায়? হ্যাগ্রিড! হ্যারি, চারদিকে তাকিয়ে হ্যাগ্রিডকে ডাকলো।

হ্যারি দেখলো হ্যাগ্রিড ফ্যাংগকে কাঁধে নিয়ে ওর দাউ দাউ করে জ্বলন্ত কুটিরের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

হ্যারি বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বললো। আপনার কথাই ভাবছি হ্যাগ্রিড।

হ্যাগ্রিড হ্যারিকে দুহাতে ওপরে তুলে ধরলেন। হ্যারি খুব কাছ থেকে দেখলো হ্যাগ্রিডের বিরাট মুখ নানা জায়গায় কেটে গিয়ে রক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে বেরোচ্ছে।

হ্যাগ্রিড আপনার কটেজের আগুন আগে নেভানোর দরকার, হ্যারি বললো। দ্য চার্মস এগুয়ামেন্টি…।

চারদিক থেকে জল পড়ে হ্যাগ্রিডের কটেজের আগুন নিভে গেলো।

হ্যাগ্রিড বললেন, হঠাৎ এসব কাণ্ডকারখানা? কি ব্যাপার হ্যারি? আমি দেখলাম স্নেইপ ডেথইটারদের নিয়ে দৌড়চ্ছেন, কোথায় গেলো? ডাম্বলডোর, ডাম্বলডোর কোথায়? ওদের ধরার জন্য…?

ডাম্বলডোর, কথা বলতে পারছে না হ্যারি। গলার স্বর স্তব্ধ হয়ে গেছে। চতুর্দিকে ধোঁয়া আর আর্তনাদ, প্রাণ ভয়ে ছোটাছুটি। হ্যাগ্রিড ডাম্বলডোর নেই, তাকে হত্যা করেছে স্নেইপ।

কথাটা হ্যাগ্রিড বিশ্বাস করতে পারলো না। এসব কি বলছে হ্যারি? স্নেইপ ডাম্বলডোরকে হত্যা করেছে!

কি বললে, ডাম্বলডোর…? তিনি মৃত, স্নেইপ তাকে হত্যা করেছেন।

না, তা হতে পারে না হ্যাগ্রিড বিরক্তির সাথে বললেন। স্নেইপ ডাম্বলডোরকে হত্যা করেছে, বোকার মতো কথা বলবে না। তা কি করে হয়?

আমি তাকে হত্যা করতে দেখেছি।

না, না তুমি হয়তো ভুল দেখেছো…!, হ্যাগ্রিড… আমি স্বচোখে দেখেছি। হ্যাগ্রিড ফ্যালফ্যাল করে হ্যারির ছলছলে মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। ডাম্বলডোর নিশ্চয় স্নেইপকে বলেছিলেন ডেথইটারসদের সাথে থাকতে। তার পরিচয় আড়ালে রাখতে। ডাম্বলডোর নিশ্চয়ই স্কুলের ভেতর চলে গেছেন। চলো হ্যারি…।

হ্যারি চুপ করে রইলো। হ্যাগ্রিডকে কেমন করে বলবে সব কথা। ও তখনো থরথর করে কাঁপছে। যা জানার তা একটু পরই হ্যাগ্রিড জানতে পারবেন।

হ্যারি হ্যাগ্রিডের সঙ্গে ক্যাসেলের ভেতরে চললো। দেখলো অনেক ঘরে আলো জ্বলছে। হ্যারি ভেতরের অবস্থা কল্পনা করলেন, ক্যাসেলের সবাই ডেথইটার বিষয়ে কথা বলছে, ডার্ক মার্ককে হোগার্টসের ওপরে আকাশে দেখছে…। ডার্ক মার্ক যখন আকাশে তাহলে নিশ্চয়ই কেউ মারা গেছে।

ওক কাঠের দরজাটা খোলা ছিলো। ভেতরের আলো পথে আর মাঠে ঠিকরে পড়েছে। ড্রেসিং গাউন পরে অনেকেই আতঙ্কিত মুখে বেরিয়ে আসছে। চারদিকে তাকিয়ে দেখছে ডেথইটাররা গত রাতে পালিয়ে যাওয়ার আগে কি করেছে তা দেখা যায় কি-না! হ্যারির দৃষ্টি সবচেয়ে লম্বা টাওয়ারের তলায়, যদিও অনেক দূরে, এখান থেকে দেখা যায় না, তার কল্পনা সেখানে একটা কালো করা স্তূপ। যদিও সে কোনো কথা না বলে সেই স্থানটির দিকে অগ্রসর হলো, ওর ধারণা সেখানেই ডাম্বলডোরের মরদেহ পড়ে রয়েছে।

তারপর দেখলো দলে দলে সকলে সেদিকে চলেছে।

হ্যাগ্রিড বললেন, ওরা সবাই কি দেখতে চলেছে হ্যারি? ওরা ক্যাসেলের মুখে চলে এসেছে। ওদের সঙ্গে আহত ফ্যাংগও চলেছে।

ঘাসের ওপর কি পড়ে রয়েছে হ্যারি, হ্যাগ্রিড কৌতুহলী হয়ে বললেন।

ওরা তখন অ্যাস্ট্রোনমি টাওয়ারের পাদদেশে পৌঁছে গেছে। ওখানেও দেখলো কিছু লোকের জটলা। হ্যারি দেখতে পাচ্ছো? টাওয়ারের পাদদেশের ডানদিকে? যেখানে মার্ক… ঈশ্বর আমাকে অন্ধ করে দাও… তোমার কি মনে হয় ওখানে কাউকে নিক্ষেপ করা হয়েছে?

হ্যারি আর হ্যাগ্রিড, সেইসব লোকদের ভিড় ঠেলে হাঁটতে লাগলো। হ্যারি যেনো স্বপ্নে হাঁটছে, বাস্তব জগতে নেই, হ্যাগ্রিড হাঁটতে পারছেন না। সর্বাঙ্গে ব্যথা…। মাঝে মাঝে ব্যথার জন্য চাপা গলায় গোঙাচ্ছেন… তবু হাঁটছেন, হাঁটতে হাঁটতে যেখানে ডাম্বলডোর চিরনিদ্রায় শুয়েছিলেন তার পাশে হাঁটু গেড়ে বসলেন।

হ্যারি জানে ডাম্বলডোরকে বডি-হাউন্ড কার্স করেছে সেই, যেখানে শুয়ে আছেন সেখানেই এখন শুয়ে থাকবেন, তাকে একটুও নড়াবার সম্ভাবনা নেই। একমাত্র সম্ভব যদি কার্স নিক্ষেপকারীর মৃত্যু হয়।

হ্যারি চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো, এখনো স্কুলের অনেকেই তার মৃতদেহের কাছে সমবেত হয়নি, হয়তো তারা জানে না আজ পৃথিবী থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ জাদুকর চলে গেছেন, আর তাকে কেউ দেখতে পাবে না। হাত-পা ছড়িয়ে দুচোখ বন্ধ করে সবুজ ঘাসের ওপর শুয়ে রয়েছেন। ভোরের ঠান্ডা হাওয়াতে তার শুভ্র আলখেল্লা, বিস্তৃত দাড়ি পৎপৎ করছে।

মনে হয় তিনি ঘুমচ্ছেন। হ্যারি তার অর্ধচন্দ্রের মতো লম্বা নাকে ঝুলে পড়া চশমটা ঠিক করে পরিয়ে দিলো। মুখ থেকে সামান্য রক্ত বেরিয়ে থুতনিতে পড়েছিলো সেগুলো নিজে আলখেল্লার হাতা দিয়ে মুছে দিলো। জ্ঞান-তাপস এই বৃদ্ধের মুখের দিকে হ্যারি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে বোধাতীত সত্যটা উপলব্ধি করলো আর কখনো ডাম্বলডোর তার সঙ্গে কথা বলবেন না, কখনো কোনো বিপদে তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন না।

হ্যারির পেছনে জনতা কোলাহল করছিলো। হ্যারি অনেকটা সময় হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে থাকতে অনুভব করলো একটা শক্ত কিছু ওর হাঁটুর নিচে। ও সেটা কি দেখার জন্য মুখ নামালো।

হ্যারি দেখলো একটা লকেট। হ্যাঁ ওই লকেটটাই তো ও আর ডাম্বলডোর হ্রদের দ্বীপ থেকে চুরি করে এনেছিলো। লকেটটা ডাম্বলডোরের পকেট থেকে ঘাসের ওপর পড়ে গেছে। হ্যারি ধীরে ধীরে লকেটটা ঘাসের ওপর থেকে তুলে দেখতে দেখতে বুঝতে পারলো; কিছু একটা ভুল হয়ে গেছে।

লকেটটা হ্যারি উল্টে পাল্টে অনেকটা সময় যাচাই করলো। বুঝতে পারলো পেনসিভে যে লকেটটা ও দেখেছিলো এটা সেটার মত বড় নয়। লকেটে কোনো মার্কিং নেই, অলংকৃত এসটাও নেই… এস স্নিদারিনদের চিহ্ন। তাছাড়া ভেতরে কিছু নেই; ছবির বদলে, সেই স্থানে দোমড়ানো মোচড়ানো একটা পার্চমেন্ট।

হ্যারি কোনো ভাবনা চিন্তা না করে সেই পার্চমেন্টটা টেনে বের করে খুলে পড়লো। জায়গটা তখন অন্ধকার নয়, অনেকেই সেখানে এসেছে হাতে তাদের টর্চের মতো দণ্ড, হ্যারির পড়তে অসুবিধে হলো না।

ডার্ক লর্ডকে
আমি জানি তুমি লেখাটা পড়ার অনেক আগেই আমি মারা যাবো
তবে এইটুকু জেনে রাখবে আমি তোমার গোপন জিনিস আবিষ্কার করেছি।
আমি আসল হরক্রাকস চুরি করেছি এবং যত শিঘ্র পারি ধ্বংস করবো,
আমি মৃত্যুবরণ করলাম এই ইচ্ছায় যে,
যখন তুমি তোমার সদৃশ মানুষটির সামনে দাঁড়াবে,
তুমি আবার মরণশীল হবে।
আর, এ, বি

হ্যারি জানে না, জানতেও চায় না ওই লেখার প্রকৃত অর্থ কি। শুধু একটি মাত্র জিনিস ও এখন জানে ওটা হরক্রাকস নয়। ডাম্বলডোর অযথা ভয়ংকর পোশান পান করেছিলেন। হ্যারি পার্চমেন্টটা হাতের মুঠোতে কচলাতে কচলাতে প্রায় ছিঁড়ে ফেলে দিলো। চোখ থেকে অশ্রুধারা বইছে, অসম্ভব জ্বালা করছে। পেছন ফিরে দেখলো ফ্যাংগ। ফ্যাংগ ওকে দেখে গর্জন করতে লাগলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *