২৫. দ্য সিয়ার ওভারহার্ড

২৫. দ্য সিয়ার ওভারহার্ড

হ্যারি পটার জিনি উইসলির সঙ্গে ইদানিং ঘনিষ্টভাবে মেলামেশা করছে, এই বিষয়ে সকলের দারুণ আগ্রহ ও কৌতূহল। ছেলেদের চাইতে মেয়েদের কৌতূহলটা বেশি। ওকে নিয়ে নানা কথা আলোচনা ও গল্প হ্যারির কানে আসতে লাগলো। হ্যারির শুনতে খারাপ লাগে না। ডার্ক ম্যাজিকের ভয়ার্ত সব দৃশ্য দেখার পর কিছুটা পরিবর্তন তো বটেই।

জিনি আমাদের নিয়ে কথাবার্তা-আলোচনা ছাড়া ওদের কি আর কিছু নেই। কমনরুমে বসে হ্যারির পায়ে পিঠ ঠেকিয়ে ডেইলি প্রফেট পড়তে পড়তে বললো। এক সপ্তাহে তিনটে ডিমেন্টরের আক্রমণ, রমিলদাভান আমাকে জিজ্ঞেস করে একদিন, তুমি কী হিপপোগ্রাফের উল্কি তোমার বুকে আঁকিয়েছে।

কথাটা শুনে রন আর হারমিওন হো হো করে হেসে উঠলো। হ্যারি ওদের দিকে তাকালো না।

তুমি ওকে কি বলছো?

ওকে বলছি না, একটা হাঙ্গেরিয়ন হর্নটেলের উল্কি, খবরের কাগজের পাতা উল্টে বললো জিনি। তাইতো আরো অনেক বেশি পৌরুষ প্রদর্শন হয়।

ধন্যবাদ, হ্যারি হাসতে হাসতে বললো। তাহলে ওকে রনের উক্তি সম্বন্ধে কি বললে?

কি আবার পিগমীপাফ, কিন্তু সেটা শরীরের কোথায় তা আমি বলিনি।

হারমিওন হাসিতে ফেটে পড়লে রন কুটি করলো।

হ্যারি আর জিনির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে রন বললো, আমি অনুমতি দিয়েছি বলে তার মানে এই নয় যে আমি অনুমতি প্রত্যাহার করতে পারবো না।

তোমার অনুমতি? জিনি উপহাসের সুরে বললো। কবে থেকে তুমি আমায় অনুমতি দেবার অধিকারী হলে? যাকগে, তুমি বলেছিলে মাইকেল অথবা ডিনের চেয়ে হ্যারি অনেক ভাল।

হ্যাঁ, বলেছিলাম, রন ঘোৎ ঘোঁৎ করে বললো। মানে যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা দুজন সকলের সামনে জড়াজড়ি করবে না।

হিপোক্র্যাট! তুমি আর ল্যাভেন্ডার কি করেছিলে? এক জোড়া পাকাল মাছের মতো সব জায়গা ঘুরে বেড়াওনি? জিনি সদর্পে বললো।

জিনি ও হ্যারিকে নিয়ে রনের আর বেশি মাথা ঘামাবার সুযোগ হয়নি কারণ জুন মাস থেকেই ওরা সকলেই সামনের পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। জিনির OWL পরীক্ষা, তার মাথায় দিনরাত শুধু পড়া ও রিভাইসিং। তাও হ্যারি ও জিনি সময় পেলে লাইব্রেরিতে বসে গল্প গুজব করে।

হ্যারি একদিন হারবোলজির হোমওয়ার্ক শেষ করে কমনরুমের খোলা জানালার ধারে বসেছিল, জিনির সঙ্গে লাঞ্চের পরে লেকের ধারে বসে গল্প করার কথা ভাবছে ঠিক সেই সময় হারমিওন রন আর হ্যারির মাঝে এসে বসলো। ওর মুখে অসন্তোষের ছাপ।

তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে হ্যারি।

কী কথা? হ্যারি ভুরু কুঁচকে তাকালো। এই গত রাতেই হারমিওন ওকে জিনির সঙ্গে আড্ডা দিয়ে পরীক্ষার পড়ায় ক্ষতি না করতে পরামর্শ দিয়েছে।

বলছিলাম তথাকথিত হাফ-ব্লাড-প্রিন্স সম্বন্ধে। আর না, আর না। ও প্রসঙ্গ বাদ দাও প্লিজ।

হ্যারি তখনো পর্যন্ত রিকোয়ারমেন্ট রুমে গিয়ে ওর সেই রেখে আসা বইটা আনতে সাহস করেনি। সেই কারণে ওর পোশান সম্বন্ধে পারফরমেন্স ঠিক মতো হচ্ছে না (স্লাগহর্ন কিন্তু জিনি আর হ্যারির ভালবাসার সম্পর্ক হয়েছে শুনে বেশ মজা পান)।

হ্যারি জানে স্নেইপ প্রিন্সের সেই বইটা হাতাবার চেষ্টায় আছেন। তাই বইটা ও যেখানে লুকিয়ে রেখেছে সেখান থেকে আনতে চায় না অন্তত স্নেইপ যতোদিন হাতাবার আশা না ছাড়ছে।

না, তোমাকে বইটা না আনার কথা বলছি না হ্যারি, আমার কথাটা আগে ভালো করে শোনো। আমি জানতে চেষ্টা করছি কে ওই ডার্ক স্পেল আবিষ্কার অভ্যাসে পরিণত করেছিলো।

ছেলেটি সেটা তার অভ্যাসে পরিণত করেনি। মজার বিষয় হলো, সে কিন্তু ছেলে নয় একটি মেয়ে। নাঃ তা নয় হারমিওন। প্রিন্স, হারমিওন তার নাম প্রিন্স।

আমি যা বলছি সেটাই ঠিক! কথাটা বলার পর ওর মুখের লাল দাগটা আরো জ্বল জ্বল করে উঠলো। ও পকেট থেকে একটা দোমড়ানো মোচড়ানো খবরের কাগজ বার করে হ্যারি আর রনের সামনে রাখলো। এই হচ্ছে আসল প্রিন্স।

হ্যারি কাগজটা তুলে নিলো। দেখলো একটা মেয়ের ফটো, বহু পুরনো প্রায় হলুদবর্ণের হয়ে গেছে। ফটোটাতে একটা ক্যাপশন, এলিন প্রিন্স, ক্যাপ্টেন, হোগার্টস গবস্টোন টিম। মেয়েটির বয়স খুব বেশি হবে তত পনের-যোল। শীর্ণ দেহ, মোটা মোটা ভুরু, লম্বা ফ্যাকাশে মুখ।

তো, যার বই আমি লুকিয়ে রেখেছি তার সঙ্গে এলিনের কি সম্পর্ক? এটা তো ইন্টারস্কুল প্রতিযোগিতা সম্পর্কিত একটি খবর।

হ্যারি, কেন তুমি দেখছে না, ওর নাম এলিন প্রিন্স।

হ্যারি, হারমিওনের মুখের দিকে তাকালো। বুঝতে বাকি রইলো না ও কি বলতে চাইছে। ও হো হো করে হেসে ফেটে পড়লো।

তা হতেই পারে না।

মানে?

তুমি বলতে চাও এই মেয়েটি হচ্ছে হাফ-ব্লাড? কোনো মতেই না।

কেন নয় হ্যারি? জাদুকর জগতে আসলে প্রিন্স বলে কেউ নেই। ডাকনাম, অথবা স্কুলে ভর্তি করার সময় ওর বাবা-মায়ের পদবী লেখা। অথবা আসল নাম, হতে পারে না। ভাল করে আমার কথা শোনো। ওর বাবা একজন জাদুকর, যার পদবী হচ্ছে প্রিন্স। মা একজন মাগল, তাই ও হাফ-ব্লাড প্রিন্স।

সত্যি দারুণ তোমার উদ্ভাবনী শক্তি হারমিওন। এমনও হতে পারে ও নিজেকে হাফ-ব্লাড প্রিন্স জাহির করে খুব গর্বিত হতো!

হারমিওন শোনো, আমি যে হাফ-ব্লাড প্রিন্সের কথা বলছি সে আদপেই মেয়ে নয়।

তুমি ভাবো মেয়েরা কিছু করতে পারে না, হারমিওন রেগে গিয়ে বললো।

আমি যদি মনে করি মেয়েরা বুদ্ধিমান হয় না তাহলে কি করে পাঁচটা বছর তোমার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব? আমি তা কখনো বলতে পারি না, আর কখনই মেয়েদের বোকাসোকা মনে করি না, হ্যারি বললো। বইটিতে যে হাতের লেখা আছে তা দেখে মনে হয় না কোনো মেয়ের হাতে লেখা। ওটা একেবারেই ছেলেদের মতো হাতের লেখা। আমি বাজি ধরে বলতে তুমি কাগজে যে মেয়েটির ফটো দেখাচ্ছে, তার সঙ্গে বইয়ের হাফ-ব্লাড প্রিন্সের কোনো সম্পর্ক নেই। তুমি কোথা থেকে কাগজটা পেলে বলতো?

কোথায় আবার লাইব্রেরি থেকে; হারমিওন ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো করে বললো। ঠিক আছে, তোমার বিশ্বাসের জন্য আমি এলিন প্রিন্স সম্বন্ধে আরো অনেক খবর নিচ্ছি। ওখানে অনেক পুরনো প্রফেটস-এর কপি আছে। হ্যারি বিরক্তিমাখা মুখে বললো, কষ্ট করে ওসব খবর সংগ্রহ না করে ওই সময়টা আনন্দ করে কাটাও না কেন।

সে তোমাকে বলতে হবে না, হারমিওন বললো। আমি যা করার তা করবো, কথাটা বলতে বলতে ও পোর্ট্রেট হোলের কাছে চলে যেতে যেতে বললো, পোশান পুরস্কারের পুরনো অনেক তথ্যও পাওয়া যাবে!

হ্যারি ওর দিকে হতাশ হয়ে তাকিয়ে রইলো, তারপর ও চলে গেলে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।

তুমি যে পোশান-এ ভাল করছে, মনে হয় ও তা সহ্য করতে পারছে না, ওয়ান থাউজেন্ড ম্যাজিক্যাল হার্বস অ্যান্ড ফাংগসের বইটায় আবার মনোযোগ দিয়ে রন বললো।

তোমার কি মনে হয়, আমি ওই বইটার জন্য পাগল হয়ে গেছি?

অবশ্যই না, রন বুক ফুলিয়ে বললো। প্রিন্স সত্যি সত্যি জিনিয়াস আর যাই হোক, ও ওইরকম টিপস ছাড়ে, ও ঠোঁটে দুটো আঙ্গুল রাখলো। আমি তো তোমার। কাছে এলেবেলে, তবে যে মারাত্মক স্পেলটা, যেটা তুমি ম্যালফয়কে প্রয়োগ করেছিলে সেটা না করলেই পারতে, খুবই মারাত্মক।

আমিও তাই মনে করি, হ্যারি সঙ্গে সঙ্গে বললো।

যাকগে, মনে হয় ও সেরে উঠেছে। শিগগিরি চলাফেরা করতে পারবে, তাই না?

হ্যাঁ, হ্যারি বললো। সত্যি সেরে গেছে, যদিও অন্তরে অন্তরে ম্যালফয়কে ঘেন্না করে ওর ভালোমন্দতে একটুও কিছু যায় আসে না। স্নেইপকে ধন্যবাদ।

এই শনিবারও কি তোমাকে স্নেইপের ঘরে ডিটেড থাকতে হবে? রন প্রতি সপ্তাহের মত এবারও বললো।

তাই, এই শনিবার, তার পরের শনিবার, তার পরের শনিবার শেষ হবে না চলতেই থাকবে, হ্যারি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। একটা যেন আভাস দিয়েছেন টার্ম শেষ হবার আগ পর্যন্ত মনে হয়, আমাকে ডিটেন্ড থাকতে হতে পারে। যদি আমি টার্ম শেষ হবার আগে বাক্সে থাকা পুরো কাজ শেষ না করতে পারি, তাহলে পরের টার্মেও কাজটি করতে হবে।

হ্যারির কাছে ডিটেনসন বড়ই বিরক্তিকর মনে হয়। এখন একটু বেশি বিরক্তিকর ডিটেনশনে থাকার ফলে। জিনির সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করার খুব কম সময় পায়।

হ্যারি অনেক কথা ভাবছিলো। হঠাৎ পেছনে কেউ একজন দাঁড়াতে ওর ভাবনা সূত্র ছিঁড়ে গেলো, পেছন ফিরে দেখলো জিম্মি পিকস। ওর হাতে একটা পাকানো পার্চমেন্ট।

ধন্যবাদ জিম্মি, এটা কি ডাম্বলডোর পাঠিয়েছেন, হ্যারি আনন্দ আর উত্তেজনার সঙ্গে পার্চমেন্টে কি লেখা আছে পড়ার জন্য খুললো। লিখেছেন, এখনই যেন ওর অফিসে গিয়ে দেখা করি।

ওরা পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।

ঈশ্বর, রন ফিস ফিস করে বললো, কিসের জন্য ডেকেছেন বলতো? সেখানে কি বাকিটা ছিলো না?

গেলেই জানতে পারবো, চলি, হ্যারি লাফিয়ে উঠে বললো।

হ্যারি কমনরুম থেকে বলতে গেলে এক রকম দৌড়তে দৌড়তে সেভেন্থ ফ্লোরে পৌঁছলো। পথে পিভসের সঙ্গে দেখা। হ্যারিকে দেখে ও চক ছুঁড়তে লাগলো। বেশি সময় নষ্ট করা চলবে না। আর পনের মিনিট পরে কারফিউ শুরু হয়ে যাবে। অনেকেই চলেও গেছে তাদের কমন রুমে। করিডরটা প্রায় ফাঁকা।

ঠিক সেই সময়ে হ্যারির কানে এলো একটা চিৎকার আর কিছু একটা ভাঙ্গার শব্দ। ও ডাম্বলডোরের ঘরের দিকে না গিয়ে চেঁচামেচি, চিৎকারের শব্দ কোথা থেকে আসছে জানার জন্য থমকে দাঁড়ালো।

হ্যারি একটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেল করিডরে প্রফেসর ট্রিলনি চিৎপাত হয়ে পড়ে রয়েছেন। তার হাতে একটা শেরীর বোতল। পাশেই একটা বোতল ভেঙ্গে পড়ে রয়েছে। ট্রিলনি তার গায়ের শালটা দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করে চলেছেন। চিৎকারটা ট্রিলনি করেছেন সন্দেহ নেই। ভাঙ্গার শব্দ বোতলের।

হ্যারি প্রফেসর ট্রিলনিকে ফ্লোর থেকে ওঠার জন্য একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, কি হয়েছে প্রফেসর?

হা হা ভয় পাবার একটা কারণ হয়েছে। করিডর ধরে হাঁটছি এমন সময় দেখলাম দুএকটা কালো ছায়া, অমঙ্গলের পূর্ব লক্ষণ!

ট্রিলনির অমঙ্গলের বার্তা শোনার সময় নেই এখন হ্যারির করিডরের যেখানে দাঁড়িয়েছিলো সেখানে দেয়ালে ঝোলানো পর্দাগুলো কাপছে মনে হলো হ্যারি অনেকটা যেন নাচছে। পর্দার পেছনে শক্ত কালো পাথরের দেয়াল।

প্রফেসর, আপনি কি রিকোয়ারমেন্ট রুমে ঢোকার জন্য দরজা খুঁজছিলেন? হ্যারি জিজ্ঞেস করলো ট্রিলনিকে।

আমি তো দরজা কোথায় জানি না, ছাত্রছাত্রীরা জানে। সবাই জানে না, দুএকজন জানে, হ্যারি বললো। কিন্তু কি হয়েছে? এতো জোরে চেঁচালেন কেন? মনে হলো আপনার খুব লেগেছে।

আমি, ও হ্যাঁ, প্রফেসর ট্রিলনি তখনো মৃদু মৃদু কাঁপছেন। গায়ের শালটা ভাল করে গায়ে জড়ালেন। তার বড় বড় চোখে হ্যারির মুখের দিকে তাকালেন। হ্যাঁ এখন ভালই আছি। ওই ঘরে আমি কিছু ব্যক্তিগত জিনিস রাখতে গিয়েছিলাম।

ঠিক আছে, ট্রিলনির হাতের শেরীর বোতল দেখে হ্যারি বললো। কিন্তু তাতে জানি; কিন্তু ঘরের ভেতর যাবেন কেমন করে? ভেতরে ঢুকতে পারলে তো ব্যক্তিগত জিনিস গোপন করে রাখবেন। নিজের কথাটা হ্যারির খুব বেখাপ্পা মনে হলো। হাফ-ব্লাড-প্রিন্সের বইটা লুকিয়ে রাখার সময়তো ঘরের দরজা দেখতে পেয়েছিলো সে।

ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমি এখন যেতে পারবো, কথাটা বলে ট্রিলনি কালো সলিড পাথরের দেয়ালের দিকে তাকালেন। কিন্তু হ্যারি আমি যখন ভেতরে গিয়েছিলাম তখন কেউ ভেতরে ছিলো, কেউ ছিলো?

কে? হ্যারি প্রশ্ন করলো। কে আবার ওখানে থাকতে যাবে?

আমার কোনো ধারণা নেই, ট্রিলনি হ্যারির মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন। হ্যারির কেউ রয়েছে কথার মধ্যে হয়তো সত্য খুঁজে বের করতে চাইছেন ট্রিলনি। আমি একবার নয়, অনেকবার ঘরের মধ্যে জিনিস রাখতে গিয়েছিলাম

এমন ওই রকম… মানে… মানে… একটা অদ্ভুত গলার আওয়াজ শুনেছি।

গলার আওয়াজ? কি বলছিলো? কিছু একটা বলতে শুনেছি, বুঝতে পারিনি কি বলছে, ট্রিলনি বললেন। বিজয় উল্লাস চিৎকারের মতো। বিজয় উল্লাস? হ্যারি বললো। কেমন যেন উলু-সিতভাবে, মাদাম ট্রিলনি মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন। ছেলে না মেয়ের গলা? মনে হয় ছেলে, ট্রিলনি বললেন। উল্লসিত হয়ে বলছিলো? হা হা দারুণ উল্লসিত, প্রফেসর ট্রিলনি কোঁকাতে কোঁকাতে বললেন। কোনো কিছু সেলিব্রেট করার মতো? তাই তো মনে হলো। তারপর? তখন আমি বললাম, কে কে কে তুমি? কে কথা বলছিলো দেখতে পেলেন না? হ্যারি নিরাশ হয়ে বললো।

আমার অন্তর্দৃষ্টি বলছে, প্রফেসর ট্রিলনি তার ঝকমকে শালটা গায়ে ভালো করে জড়তে জড়াতে জপের মালা ঠিক করতে করতে বললেন। উল্লসিত কণ্ঠস্বরগুলো।

কোনো জাগতিক অধিকৃত অঞ্চলের বাইরে কোনো কাজে নিয়োজিত ছিলো।

ঠিক আছে, হ্যারি প্রফেসর ট্রিলনির অন্তদৃষ্টি প্রসঙ্গ অনেক শুনেছে। সেই গলার আওয়াজ আপনাকে হয়তো কিছু বলতে চেয়েছিলো। ভেবে দেখুন তো ও হয়তো জানতে চাইছিলো আপনি কে।

না, সে রকম কিছু নয় তো, ট্রিলনি বললেন। হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে সব ডুবে গেলো, তারপরই বাইরে নিক্ষিপ্ত হলাম।

আপনার সাথে সাথে কাউকে বেরিয়ে আসতে দেখেননি? হ্যারি প্রশ্নটা না করে থাকতে পারলো না।

বললাম তো গলার আওয়াজ শুনেছি, অন্ধকারের মধ্যে কিছু দেখা যায়? এক ভীষণ ঘন কালো অন্ধকার, তোমাকে ঠিক বোঝাতে পারবো না হ্যারি, কথাটা বলেই ট্রিলনি হ্যারির দিকে সন্দিগ্ধভাবে তাকালেন।

আমার মনে হয় প্রফেসর ট্রিলনি ঘটনাটা আপনার ডাম্বলডোরকে জানানো দরকার, হ্যারি বললো। ম্যালফয় ঘরের মধ্যে আনন্দ উৎসব করছে, তার দৃষ্টিতে আনা উচিত মনে হয়, ওদেরই মধ্যে কেউ ঘরের বাতি নিভিয়ে ঘরের ভেতর থেকে করিডরে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে আপনাকে।

হ্যারি দেখলো ওর কথা শুনে ট্রিলনি রেগে গেলেন। রাগতচোখে হ্যারির দিকে তাকালেন।

প্রফেসর ডাম্বলডোরের প্রয়োজন না হলে আমাকে তার ঘরে যেতে মানা করেছেন, ট্রিলনি অসম্ভষ্ট স্বরে বললেন। যারা আমাকে পছন্দ করে না তাদের সঙ্গে মিশতে বা কথা বলতে আমার পছন্দ হয় না হ্যারি। ডাম্বলডোর যদি আমার ভবিষ্যদ্বাণী বিশ্বাস না করেন তো আমার কিছু বলার নেই।

সাবধান কার্ড তাচ্ছিল্য করা উচিত হয়নি তার, ট্রিলনি ল্যাকপ্যাকে প্রায় মাংসবিহীন একটা হাত দিয়ে হ্যারির কব্জিটা চেপে ধরলেন। তাকে আমার এই কার্ড দেখিয়ে সাবধান করে দিয়েছি, ট্রিলনি নাটকীয়ভাবে তার শালের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে একটা কার্ড বার করলেন। টাওয়ারে বজ্রপাত, দুর্যোগ, দুর্ঘটনা ধেয়ে আসছে।

হতে পারে, হ্যারি বললো, আমার মনে হয় ব্যাপারটা আপনার প্রফেসর ডাম্বলডোরকে জানানো খুবই দরকার। গলার স্বর, হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যাওয়া, ঘর থেকে ঠেলে বার করে দেয়া।

হু, তোমার তাই মনে হয়? ট্রিলনি খুব সম্ভব হ্যারির কথা ক্ষণিক চিন্তা করলেন, কিন্তু হ্যারি বুঝতে পারলো ট্রিলনি, ডাম্বলডোরকে কি বলবেন সে সম্বন্ধে গল্প ফাঁদছেন।

আমার এখন হেডমাস্টারের সঙ্গে দেখা করতে হবে, খুব জরুরি একটা কাজে ডেকে পাঠিয়েছেন, হ্যারি বললো। আপনি চাইলে আমার সঙ্গেও যেতে পারেন।

ও তাহলে তো খুব ভালো, প্রফেসর ট্রিলনি বললেন।

তারপর ট্রিলনি হেঁট হয়ে শেরীর বোতলের ভাঙ্গা কাঁচগুলো একত্র করে কাছে পিঠের একটা সাদা ফুলদানে রাখলেন।

আমি তোমাকে আজকাল আমার ক্লাশে দেখতে পাই না হ্যারি, কি ব্যাপার বলতো, ট্রিলনি যেতে যেতে দুঃখ ভরা কণ্ঠে বললেন। আমি জানি তুমি ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা নও, বিশ্বাস-টিশ্বাসও করো না, তাহলেও ছাত্র হিসেবে তুমি একটি রত্ন।

 হ্যারি ট্রিলনির কথা শুনে চুপ করে রইলো। সে প্রফেসর ট্রিলনি যেসব কথা টথা বলেন, তা মোটেই বিশ্বাস করে না। সব সময় তার মুখে সর্বনাশ হবার ভবিষ্যদ্বাণী!

ওই যে ঘোড়াটা, দুঃখিত সেনট্যার, কিছু জানে না কাটোমেনসি (তাস দিয়ে ভবিষ্যৎ দর্শন) বিষয়ে একেবারে ফোক্কা। দুর্যোগ হবে কি হবে না বলতে পারে।

 আমাকে শুনেছি ভঁড় বলে, হা …হ্যাঁ আড়ালে আবডালে আমাকে বলে ভাড়। শোনো কথা।

হ্যারি ফেলে আসা আধা বোতল শেরী থেকে তখনো ভোতকা গন্ধ পেলো।

ওই ঘোড়াটা লোকের কাছে বলে বেড়ায়, আমি নাকি আমার গ্রেট গ্রেট গ্র্যান্ড মাদারের কাছ থেকে কিছুই পাইনি। যারা আমাকে ঈর্ষা করে তারা ওইসব আজেবাজে কথা রটিয়ে বেড়ায়। হ্যারি, ওদের আমার কি বলতে ইচ্ছে করে জানো? থাকগে তাই যদি হবে, তাহলে ডাম্বলডোর আমাকে দীর্ঘকাল হোগার্টসে শিক্ষকতা করতে দিতেন? ট্রিলনি আর্দ্র গলায় ক্ষোভ জানালেন। আমার ওপর কি আস্থা রাখতেন যদি না আমি আমার যোগ্যতা না দেখাতে পারতাম?

হ্যারি বিড় বিড় করে কিছু বললো, ট্রিলনির কানে একটি শব্দও প্রবেশ করলো।

ট্রিলনি ঘড়ঘড়ে গলায় তার জীবনের নানা কথা বলতে শুরু করলেন। আমার আজও ডাম্বলডোরের অফিসে সেদিনের ইন্টারভিউয়ের কথা মনে আছে। আমি তখন হগসহেডে থাকতাম। বিশ্রী নোংরা ঘর, ছেঁড়া তোষক ও বালিশ। খাটে তোষকে অগণিত ছারপোকা। কামড়ে কামড়ে শেষ করে দেয়, কাউকে সেখানে থাকতে আমি পরামর্শ দিই না। কি করি বলো, হাতে তেমন অর্থ ছিলো না। আমি সেখানে খুবই কষ্টে রয়েছি জেনে ডাম্বলডোর দেখা করতে এসেছিলেন। আমাকে চাকুরি দেওয়ার ইন্টারভিউতে অনেক প্রশ্ন করেছিলেন। ওর কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছিলো ডিভিনেশন সম্বন্ধে তার জ্ঞান সীমাবদ্ধ। আমার কাছে ভালো লাগেনি বিষয়টি। আমি সেদিন না খেয়ে ছিলাম। আমি তখন খুবই অর্থকষ্টে ভুগতাম, উপযুক্ত কিছু খেতে পেতাম না। রক্তের অভাবে সর্বদাই শীত শীত করতো।

তারপর…।

হ্যারি তারপরের কথা জানে। ট্রিলনি এমন এক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যাতে তার জীবনের অনেক কিছু বদলে গিয়েছিলো। তার প্রফেসি ছিলো ভোমের্টের সম্বন্ধে। হ্যারি তার কথায় মনোযোগ দেয়।

….অযাচিতভাবে আমার কথা থামাতে হলো।

কী বললেন?

হ্যাঁ, দরজার বাইরে কিছু একটা শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি দরজা খোলা, দরজায় প্রহরী স্নেইপকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে–তখন সে বলছিলো ভুল করে এই সিঁড়িতে উঠে এসেছে। আমার সন্দেহ হয়েছিলো, সে আমার ইন্টারভিউ শুনছিলো দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আসলে সেও চাকরির প্রার্থী ছিলো এবং নিশ্চয়ই ইন্টারভিউয়ের বিষয় সম্পর্কে ধারণা নিতে এসেছিলো। ঘটনাটির পর, ডাম্বলডোর নিজেই চাকরিটা আমাকে দিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। এই কথাটা না ভেবে পারি না, হ্যারি। আমার অপ্রগলভ আচরণ এবং না জাহির করা মেধা আর অন্যদিকে নিজের জন্য ধাবমান তরুণ এবং নিজ প্রয়োজনে দরজায় কান পেতে অন্যের ইন্টারভিউ শোনে–এই দুজনের মধ্যে আমাকেই ডাম্বলডোর বেছে নিয়েছিলেন।

স্নেইপ। ও চায়নি আমি হোগার্টসে শিক্ষকতা করি। ডাম্বলডোরকে অযাচিত পরামর্শ দিয়েছিল আমাকে তার স্কুলে শিক্ষকের কাজ না দেয়ার জন্য। কারণ ও তখন বেকার, স্কুলে একটা কাজ চাইছিলো। কিন্তু ও চাইলে কি হবে? ডাম্বলডোর আমাকে এপয়েন্টমেন্ট দিতে চান তো ও কি করবে। হ্যারি ডিয়ার, ওই লোকটা আমার মর্ম কি বুঝবে!

কথাটা বলে ট্রিলনি পাশে তাকালেন। দেখলেন হ্যারি পাশে নেই। হ্যারি তখন ওকে ছেড়ে আরো দশ ফিট এগিয়ে।

হ্যারি শোনো, ট্রিলনি হ্যারিকে ডাকলেন।

হ্যারির মুখের বর্ণ সাদা, ওর মুখে চিন্তা ও উদ্বেগের ছাপ। হ্যারি স্থানুর মত দাঁড়িয়ে, প্রচণ্ড আঘাতের ঢেউ ওর ওপর একের পর এক আছড়ে পড়ছে, সকল কিছু ধুয়ে-মুছে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ওর মনে যে তথ্যটুকু গেথে আছে যা তাকে এতদিন জানানো হয়নি। ট্রিলনির প্রফিসি স্নেইপ শুনেছিলেন। স্নেইপ সেই প্রফিসির কথা ভোল্ডেমর্টকে জানিয়েছিলেন। স্নেইপ আর পিটার পেটি দুজনে মিলে ভোল্ডেমর্টকে পাঠিয়েছিলেন লিলি আর জেমসকে হত্যা করার জন্য, সঙ্গে তাদের একমাত্র পুত্রকেও। হ্যারি তুমি হয়তো জানো না ওই স্নেইপ ডাম্বলডোরের কাছে চাকরি চাইতে এসে দরজার বাইরে থেকে চাবির গর্তে কান চেপে আমাদের সব কথা শুনেছিল, আমার প্রফিসিও শুনেছিলো।

হ্যারির এখন এর চেয়ে বেশি কিছু শোনার নেই।

হ্যারি? প্রফেসর ট্রিলনি আবার বললেন। হ্যারি, তুমি বলছিলে না আমরা ডাম্বলডোরের কাছে যাবো?

হ্যারি খুব নিচু গলায় বললো, আপনার যাবার দরকার নেই, এখানে দাঁড়িয়ে থাকুন।

কিন্তু তুমি যে বললে ওই ঘরে যা শুনেছি, তা ডাম্বলডোরকে বলতে। হ্যারি আবার বললো, আপনার যাবার দরকার নেই, এখানে দাঁড়িয়ে থাকুন।

হ্যারি, ট্রিলনিকে ছেড়ে তৃতীয় গারগয়েলের সামনে দাঁড়ালো। হ্যারি পাসওয়ার্ড বলেই চলন্ত সিঁড়িতে পা দিয়ে এক সঙ্গে তিনটে স্টেপ লাফিয়ে লাফিয়ে ওপরে উঠলো। ডাম্বলডোরের বন্ধ দরজায় নক করার বদলে দুম দুম করে করাঘাত করতে লাগলো। ভেতর থেকে ডাম্বলডোরের গলা শুনতে পেলো, এসো। হ্যারি এক মুহূর্ত দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে না থেকে সটান ঘরের মধ্যে ঢুকে গেলো।

ফকেস দাড়ে বসে হ্যারিকে বড় বড় উজ্জ্বল চোখে দেখতে লাগলো। জানালা দিয়ে সূর্যের কিরণ ওর দুচোখে পড়াতে উজ্জ্বল চোখ দুটিতে মনে হলো যেনো সোনার রশ্মি ঠিকরে পড়ছে। ডাম্বলডোর খোলা জানালার ধারে দাঁড়িয়ে মাঠের দিকে প্রশান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন। তার হাতে রয়েছে বিরাট কালো রং এর ট্রাভেলিং ক্লোক।

এসো এদিকে এসো হ্যারি, তুমি নিশ্চয়ই আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানে আমার সঙ্গে যাবে।

মাত্র কয়েক মুহূর্ত হ্যারি নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, এমনভাবে যেন ডাম্বলডোরের কথা ওর কানে যায়নি। ট্রিলনির সঙ্গে ওর কথাবার্তা সম্পূর্ণভাবে ও মাথার ভেতর থেকে বার করে দিলো। একটু একটু করে মস্তিষ্ক কাজ করতে লাগলো।

আপনার সঙ্গে আমায় যেতে হবে স্যার?

হ্যাঁ, অবশ্য তুমি যদি চাও।

যদি আপনি বলেন।

কথাটা বলার পর হ্যারির মনে পড়ে গেল কেন সে ডাম্বলডোরের অফিসে আসতে উদগ্রীব হয়েছিলো।

আপনি একটা পেয়েছেন? আপনি একটা হরক্রাকস পেয়েছেন?

আমার তাই মনে হয়।

দারুণ ক্রোধ ও অভিমান হরক্রাকস পাওয়ার উত্তেজনাকে ছাপিয়ে গেলো, হ্যারি আর কিছু বলতে পারলো না।

ভয় পাওয়া খুবই স্বাভাবিক, ডাম্বলডোর বললেন।

আমি বিন্দুমাত্র ভীত নই! এক সেকেন্ড দেরি না করে হ্যারি বললো। ভয় একটা ভাবাবেগ, ওর কাছে এটা এখন কিছুই না। কত নম্বরের হরক্রাকস?

আমি ঠিক বলতে পারছি না কোনটি এটি, তবে সাপটাকে আমি বাদ দিয়েছি, আমার মনে হয় সেটা বহু দূরে, এখান থেকে বহুদূরে একটা সমুদ্রতটের গুহায় লুকিয়ে আছে। অনেকদিন ধরে আমি সেই গুহাটা খুঁজে বার করার চেষ্টা করে চলেছি, যে গুহাটার মধ্যে টম রিডিল অনাথ আশ্রমের দুটি শিশুকে ভয় দেখিয়েছিলো, মনে আছে তোমার সেই কথা। ওদের অনাথ আশ্রমের ছেলেমেয়েরা প্রতিবছর সেই গুহাতে বেড়াতে যেতো।

মনে আছে, হ্যারি বললো। সেই গুহাটা এখনো আছে?

আমি ঠিক বলতে পারছি না, আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুলও হতে পারে। ডাম্বলডোর ইতস্তত করে বললেন। তারপর বললেন, হ্যারি তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই সেই অভিযানে তোমাকে আমার সঙ্গে নিয়ে যাবো কথা দিয়েছিলাম? আমি এখনো সেই সিদ্ধান্তে আছি। তবে, যাবার আগে আমি যদি তোমাকে সেই অভিযানে যাওয়া খুবই বিপদসঙ্কুল ও মারাত্মক তা আগেভাগে সাবধান না করে দিই তাহলে ঠিক হবে না।

ডাম্বলডোর তার কথা শেষ করার আগেই হ্যারি বললো, আমি প্রস্তুত। স্নেইপের কথা মনে হতেই ওর প্রচণ্ড ক্রোধে চোখ মুখ আবার লাল হয়ে গেল, কয়েক মিনিটের মধ্যে ওর রাগ দশগুণ হলো–ও এখন যে কোন কাজ, যে কোন বিপজ্জনক কিছু করতে পারে। ডাম্বলডোর জানালার ধার থেকে সরে এসে হ্যারির মুখোমুখি দাঁড়ালেন। ডাম্বলডোরের রূপালী ভুরু যুগল সামান্য কুঞ্চিত হলো।

তোমাকে খুব উত্তেজিত আর ক্ষুব্ধ মনে হচ্ছে? কি হয়েছে? হ্যারি মিথ্যে কথা বললো, কই না তো, কিছুই হয়নি।

বললে চলবে না, কোনো একটা ব্যাপারে তুমি বিচলিত তাই না? একটুও বিচলিত নই। হ্যারি, তুমি কখনই ভালো অকলামেন্স হতে পারবে না। ডাম্বলডোরের ওই কথা শুনে হ্যারির ঘৃতাহুতি হলো। জ্বলে উঠলো দ্বিগুণ।

হ্যারি দাঁত কিড়মিড় করে খুব জোরে বললো, স্নেইপ! ওর কথা শুনে ফকেস খুব আস্তে মধুর স্বরে গান গেয়ে উঠলো। স্নেইপ… স্নেইপ কি করেছে!

ট্রিলনি স্নেইপের অফিসি সম্বন্ধে ডাম্বলডোরের অফিসে আড়িপাতার কথা যা যা বলেছিলো সব বললো।

ও আড়ি পেতে ট্রিলনীর প্রফিসির কথা শুনেছিলো।

হ্যারির কথা শুনে ডাম্বলডোরের মুখোভাব একটুও বদলালো না। ডাম্বলডোরের শুভ্ৰমুখ, সূর্যাস্তের লাল আভা পড়েও তেমনই শুভ্র দেখালো, স্থির।

অচঞ্চল ডাম্বলডোর। হয়তো, তার মন পড়ে রয়েছে বহুদূরে বিরাট এক লেকের সংলগ্ন বা সমুদ্রের তীরে একটি পাহাড়ের অন্ধকার গুহাতে।

হ্যারির অস্বস্তি লাগে ডাম্বলডোরের নীরবতায়। নীরবতা সহসা ভঙ্গ করলেন ডাম্বলডোর। এসব কথা তোমায় কে বলেছে? কবে বলেছে?

আপনার ঘরে আসার সময়, হ্যারির কথা আটকে যাচ্ছে, এরপর বাঁধ ভাঙ্গা জলস্রোতের মতো কথা।

আপনি ওকে এখানে শিক্ষকতা করতে দিয়েছেন, যে ভোল্ডেমর্টকে আমার বাবা-মাকে হত্যা করতে প্ররোচিত করেছিলো।

কথাগুলো বলে হ্যারি অসম্ভব জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো। মুখ সরিয়ে নিলো ডাম্বলডোরের সামনে থেকে। ডাম্বলডোর আবার নীরব। হাঁটতে লাগলেন তার ঘরে। হাঁটার সময় মাঝে মাঝে দু হাঁটুতে চাপ দিতে লাগলেন। মুখ দেখে বোঝা যায় না তার মনের অবস্থা। অসহ্য রাগে, অভিমানে হ্যারি ডাম্বলডোরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইলো, আবার একই সঙ্গে হরক্রাকসের খোঁজ জলতটে পাহাড়ের গুহায় যাবার জন্য ছটফট করতে লাগলো। ও ডাম্বলডোরকে ধরে বলতে চাইলো, আপনি মূর্খ। এতে মূর্খ যে স্নেইপের মতো একজন শয়তানকে বিশ্বাস করে চলেছেন। কিন্তু বললো না, যদি, এরপর ডাম্বলডোর ওকে সঙ্গে মানিয়ে যান।

হ্যারি, ডাম্বলডোর বললেন। আমি যা বলি তুমি কি তা শুনবে শান্ত হয়ে? প্রফেসর স্নেইপ, অসম্ভব…। আমি ওকে স্কুলে রেখে ভুল করেছি এমন কথা আমাকে বলো না।

ভুল করেছেন, হ্যাঁ তাই করেছেন। স্যার, আড়ি পেতে আপনাদের সব কথা শুনেছিলেন।

হ্যারি, আমাকে সব কথা বলতে দাও। হ্যারি চুপ করে রইলো।

প্রফেসর স্নেইপ অসম্ভব এক ভুল করেছিলেন। সেই রাতে যখন প্রফেসর ট্রিলনির প্রফিসি শুনেছিলেন তখন তিনি ভোল্টেমর্টের পক্ষে কাজ করতেন। অতএব যা শুনেছিলেন তা তার প্রভুকে জানিয়েছিলেন, কারণ সেই ব্যাপারে তার প্রভু প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। কিম্ভ তিনি জানতেন না, জানার কোনো সুযোগ ছিল না, কেন ছেলেটিকে ভোল্ডেমর্ট হত্যা করার জন্য খুঁজে বেড়াবে, অথবা তার বাবা-মাকে হত্যা করবে বা প্রফেসর স্নেইপ জানতেন না তারা তোমার বাবা-মা।

এসবের কোনো ধারণা তার ছিলো না। হ্যারি বেদনাসিক্ত উচ্চহাস্য করলো।

স্নেইপ আমার বাবা ও সিরিয়স দুজনকেই ঘৃণা করতো। আপনি তো জানেন প্রফেসর যাদের ওপর স্নেইপের ঘৃণা-আক্রোশ ছিলো তারা সকলেই অকালে প্রাণ হারিয়েছেন।

হ্যারি তোমার কোনো ধারণা নেই লর্ড ভোল্টেমর্টের প্রফিসি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা স্নেইপের মনে কতোটা তীব্র ব্যথা দিয়েছিলো, অনুতাপের কারণ হয়েছিলো। ওর জীবনে বলতে পারো সবচেয়ে বড় অনুতাপ, আর ভোর্স্টেমর্টের ফিরে আসাটা।

কিন্তু আপনি তো বলেছেন স্নেইপ একজন প্রতিভাশালী অকলামেন্স তাই না স্যার? হ্যারি বললো, ওর গলার স্বর স্থির নয় কাঁপা কাঁপা। অনেক চেষ্টা করে হ্যারি সংযত কণ্ঠে বললো, ভোল্ডেমর্ট কী এখনো মনে করেন না যে স্নেইপ তার দলে রয়েছেন। প্রফেসর আপনি কিভাবে ভাবছেন, স্নেইপ আপনার সাথে রয়েছেন?

ডাম্বলডোর চুপ করে রইলেন। মুখ দেখে মনে হয়, চেষ্টা করে চলেছেন কোনো একটা বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্ত নিতে।

বললেন, স্নেইপকে বিশ্বাস করে আমার মনে হয় কোনো ভুল করিনি হ্যারি।

কথাটা বলতে হ্যারি এক মুহূর্তের জন্য গভীরভাবে শ্বাস ফেললো, কিন্তু ডাম্বলডোরের স্নেইপের প্রতি আস্থার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল, নিজেকে সামলে রাখা কঠিন হয়ে পড়লো।

ও আগের মতোই উচ্চস্বরে বললো, না, আমি বিশ্বাস করি না। এই একটু আগে ও আপনার নাকের ডগায় ড্র্যাকো ম্যালফয়ের সঙ্গে কিছু একটা মতলব আঁটছিলো, তারপরেও আপনি…

আমরা এ বিষয়ে ইতোমধ্যে অনেক কথাবার্তা বলেছি হ্যারি, ডাম্বলডোর বললেন। তার গলার স্বর বেশ কঠিন। আমি তো তোমাকে আমার মতামত জানিয়েছি।

আপনি তো এখন স্কুলের বাইরে যাচ্ছেন, আমি বাজি ফেলে বলতে পারি, আপনি জানেন না আপনি না থাকলে স্নেইপ আর ম্যালফয় কি করতে পারে।

কি করতে পারে? ডাম্বলডোর জিজ্ঞেস করলেন। ভুরু যুগল ওপরে তুললেন। বলো কি কারণে, ভেবেচিন্তে বলল, কেন তাকে সন্দেহ করছো?

হ্যারি হাতের মুঠো শক্ত করে বললো, আমি জানি, ওদের মতলব খারাপ, কিছু একটা করার তালে আছে। প্রফেসর ট্রিলনি কিছুক্ষণ আগে রিকোয়ারমেন্ট রুমে গিয়েছিলেন, সেখানে তার শেরীর বোতল লুকিয়ে রাখতে, উনি ম্যালয়ের অদ্ভুত উল্লসিত কণ্ঠ শুনেছেন, কিছু একটা নিয়ে উল্লাস আনন্দ করছিলো। এই অবস্থায় এখন আপনি স্কুল ছেড়ে বাইরে যেতে চাইছেন?

অনেক বলেছো, ডাম্বলডোর খুব ধীর স্থির শান্তভাবে বললেন। হ্যারির মনে হলো ও সীমা লংঘন করে গেছে। তাই মুখ নিচু করে রইলো।

তুমি কী মনে করো আমি স্কুলকে কোনো রকম প্রোটেকশন না দিয়ে বাইরে যাচ্ছি, না কখনো গেছি! আজ রাতে আমি যখন স্কুলের গণ্ডির বাইরে যাবো, অতিরিক্ত প্রোটেকশন থাকবে। হ্যারি ভবিষ্যতে এমন উদ্ভট চিন্তা মাথায় আনবে না। কখনই আমি ছেলেমেয়েদের অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রেখে যাবো না।

হ্যারি লজ্জিত স্বরে বললো, এমন কিছু ভাবিনি।

ডাম্বলডোর বললেন, এই ব্যাপারে আর তুমি কোনো কথা বলবে না, আমিও আলোচনা করতে চাই না।

হ্যারি বেশ বুঝতে পারলো সীমা লংঘন করে কথা বলার জন্য ডাম্বলডোর খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন। হয়তো এখন আর ডাম্বলডোর পর্বতের গুহায় হরক্রাকস খুঁজতে তাকে সঙ্গে নেবেন না।

কিন্তু ডাম্বলডোর ওইখানেই তার কথার সমাপ্তি করলেন না। বললেন, তাহলে আজ রাতে তুমি আমার সঙ্গে যাচ্ছো?

হুঁ স্যার, হ্যারি এক সেকেন্ড দেরি না করে বললো।

চমৎকার, তাহলে শোনো। ডাম্বলডোর ঋজু হয়ে দাঁড়ালেন। আমি তোমাকে একটি শর্তে নিয়ে যাবো, আমি তোমাকে যখনই যা আদেশ করবো, বিনা বাক্য ব্যয়ে তুমি তা পালন করবে, কোনো প্রশ্ন না করে!

হ্যাঁ স্যার।

সত্যি করে আমাকে বোঝার চেষ্টা করবে, হ্যারি। তুমি আমার তিনটে নির্দেশ, বাক্য ব্যয় না করে পালন করবে, যেমন দৌড়াও, লুকিয়ে পড়ো, আর চলে যাও।

এই ব্যাপারে তুমি প্রতিজ্ঞা করছে আমাকে।

আমি? ও হ্যাঁ নিশ্চয়ই। আমি যদি তোমাকে লুকিয়ে যেতে বলি, তুমি তাই করবে? হ্যাঁ। যদি বলি পালিয়ে যাও, তাহলে আমার আদেশ পালন করবে? হ্যাঁ। যদি বলি আমার জন্য ভেবো না, নিজেকে বাঁচাও, তুমি তাহলে তাই করবে? আমি…। হ্যারি? ডাম্বলডোর আর হ্যারি পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। হ্যাঁ, স্যার।

খুব ভালো। তাহলে তুমি এখন এখান থেকে গিয়ে তোমার ক্লোক নিয়ে এসে এনট্রেন্স হলের সামনে পাঁচ মিনিটের মধ্যে দাঁড়াবে।

কথাটা বলে ডাম্বলডোর খোলা জানালা দিয়ে মুক্ত আকাশের দিকে তাকালেন।

সূর্য তখন প্রায় অস্তমিত। ফিকে লাল রঙে আকাশ ছেয়ে গেছে।

হ্যারি এক সেকেন্ড দেরি না করে ডাম্বলডোরের ঘর ছেড়ে স্পাইরাল সিঁড়ির ধাপে পা দিলো। ওর মন থেকে দ্বিধা অন্তর্হিত হয়ে গেলো সহসা। ওকে কি করতে হবে, ও জানে।

রন-হারমিওন কমনরুমে বসেছিলো। ওরা দুজনেই ডাম্বলডোর হঠাৎ কেন ডেকে পাঠিয়েছিলেন জানতে খুবই উৎসুক। হ্যারিকে ঘরে আসতে দেখে হারমিওন বললো, ডাম্বলডোর কি বললেন? হ্যারি উনি ভালো আছেন তো?

খুব ভালো আছে।

ওদের সঙ্গে আর একটিও কথা না বলে হ্যারি ডরমেটরিতে গিয়ে ওর ট্রাঙ্কটা খুলে প্রথমেই মারডাউরস মানচিত্রটা আর গোলা পাকানো এক জোড়া মোজা নিলো, তারপর আবার কমনরুমে ঢুকলো। রন ও হারমিওন ওর দিকে তাকালো।

দুজনেই আশ্চর্য হয়ে গেছে হ্যারির আকস্মিক তাড়াহুড়ো দেখে।

আমার হাতে কিন্তু আর সময় নেই বন্ধু, হ্যারি হাঁফাতে হাঁফাতে বললো। ডাম্বলডোর আমাকে অদৃশ্য হবার ক্লোকটা সঙ্গে নিতে বলেছেন।

হ্যারি এক নিঃশ্বাসে ডাম্বলডোরের সাথে তার কথাবার্তা সংক্ষেপে বললো ওদের কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, সময় একেবারেই নেই। ডাম্বলডোর হয়তো এনট্রেন্স হলের মুখে ওর জন্য অপেক্ষা করছেন।

তো তোমরা বুঝেছো আমি কোথায় যাচ্ছি। হ্যারি হাঁফাতে হাফাতে বললো। ডাম্বলডোর আজ রাতে এখানে থাকবেন না, ম্যালফয় এর সুযোগ নিতে পারে। শোনো আমার কথা, ভালো করে শোনো, হ্যারি একটু রাগতস্বরে বললো। হ্যারির কথা বলার সময় রন ও হারমিওন ওকে বাধা দিয়ে কিছু বলতে চেয়েছিলো, আমি খুব ভালো করেই জানি ডাম্বলডোর থাকছেন না জেনে ওই ঘরে উৎসব করছে ম্যালফয়। হ্যারি, হারমিওনের হাতে মানচিত্রটা গুঁজে দিলো। তোমরা কিন্তু সজাগ থাকবে, ওকে নজরে রাখবে, স্নেইপকেও বাদ দেবে না। ডাম্বলডোর বলেছেন, বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে স্কুলের বাইরে যাচ্ছেন, তবে স্নেইপ যদি ওই নিরাপত্তার সাথে যুক্ত হন, তাহলে তিনি সেটা বানচাল করতে পারেন।

তবে তিনি নিশ্চয়ই ধারণা করবেন না যে তোমরা তার প্রতি নজর রাখছে। রন ও হারমিওনের ভয়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।

আমার কিন্তু তোমাদের সঙ্গে তর্ক করার সময় নেই, হ্যারি কাটাকাটাভাবে বললো। এইটে নাও রন, হ্যারি রনের দিকে মোজার মধ্যে রাখা ফেলিক্স ফেলিসিস ছুঁড়ে দিলো।

ধন্যবাদ, রন বললো। আরে আমি মোজা নিয়ে কি করবো? ওর মধ্যে যেটা আছে সেটা তোমাদের দরকার হতে পারে, হ্যারি বললো।

তোমার, হারমিওন আর জিনির। জিনিকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিও। চলি, ডাম্বলডোর আমার জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছেন। না, হারমিওন বললো–রন যখন পোশানটা ভাজ খুলে বের করলো

আরে ওটা আমাদের দরকার নেই, তুমি কাছে রেখে দাও, তোমার হয়তো দরকার হবে। নানা রকম বিপদ-আপদ হতে পারে।

ডাম্বলডোর সঙ্গে আছেন আমার ভয় কিসের। হারমিওন ভয় পেয়ো না। সশরীরে তোমাদের মাঝে ফিরে আসবো।

হ্যারি আর সময় নষ্ট না করে এনট্রেন্স হলের দিকে গেল।

ডাম্বলডোর হ্যারির জন্য গেটের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। হ্যারিকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলেন। তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নামার জন্য এখনো হাঁফাচ্ছেন।

তুমি ক্লোকটা পরে নাও হ্যারি, ডাম্বলডোর বললেন। হ্যারি ঝটপট ক্লোকটা গায়ে চাপালে ডাম্বলডোর বললেন, বাঃ চমৎকার। তাহলে এবার আমরা যাবো?

ডাম্বলডোর অদৃশ্য হ্যারির পাশে দাঁড়ালেন। তারও গায়ে ট্রাভেলিং ক্লোক দূরন্ত হাওয়াতে লৎপং করছে। হ্যারি অদৃশ্য হয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে পরবর্তী আদেশের প্রতীক্ষায়।

আপনি বেরুচ্ছেন দেখে অন্যরা কি ভাবতে পারে যে কোথায় যাচ্ছেন প্রফেসর? হ্যারি প্রশ্নটা করলেও মাথার মধ্যে কিলবিল করছে ম্যালফয় আর স্নেইপ।

ভাববে? ভাববে আমি হাসমিডে পান-টান করতে চলেছি, ডাম্বলডোর হালকাভাবে বললেন। কখনো যাই রোজমেট্রার অথবা হগসহেড অথবা যেখানে মন চায়। তোমাকে তো কেউ দেখতে পাচ্ছে না, তোমার চিন্তা কিসের।

ডাম্বলডোরের সঙ্গে হ্যারি লোজনের জটলা পার হলো। নাকে আসছে কচি কচি ভেজা ঘাসের গন্ধ। হ্যাগ্রিডের লেকের ধারে কেবিন থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে, লেকের জলের গন্ধও মাঝে মাঝে নাকে ভেসে আসছে ঘাসের গন্ধের সঙ্গে। ওদের দেখলে কেউ বলবে না ওরা এক দুর্গম অভিযানে যাচ্ছে। মৃত্যু ভয় ওদের বিচলিত করছে না।

গেটের কাছে এসে হ্যারি বললো মৃদু স্বরে, প্রফেসর আমরা কি অ্যাপারেটিং করবো?

হ্যাঁ, ডাম্বলডোর বললেন। তুমি তো এখন অ্যাপারেট করতে পারো। তাই না? পারি, কিন্তু আমার তো লাইসেন্স নেই, হ্যারি বললো। যাত্রার আগে প্রফেসর ডাম্বলডোরকে হ্যারি মিথ্যে কথা বলতে চায় না। ঠিক আছে, ডাম্বলডোর বললেন। আমি তো তোমার পাশে থাকবো। গেট ছেড়ে ওরা হগসমিডের জনশূন্য রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। হাই স্ট্রিটে যখন পৌঁছলো তখন চারদিকে আঁধার নেমে এসেছে। থ্রি ব্রুমস্টিকের কাছে দেখলো আশপাশের দোকানে আলো জ্বলছে, দোকানের ভেতর থেকে মানুষজনের কোলাহল ভেসে আসছে।

বেরিয়ে যাও! উচ্চকণ্ঠে রোজট্রো বললো।

হ্যারি দেখলো রোজমেট্রা তার দোকান থেকে এক বৃদ্ধা জাদুকরকে টেনেহিঁচড়ে বার করে দিচ্ছেন। ডাম্বলডোরকে দেখতে পেয়ে বললেন, হ্যালো আলবাস–খুব দেরি করে বেরিয়েছেন।

শুভ সন্ধ্যা রোজমেট্রা, শুভ সন্ধ্যা, আমি হগসহেডে যাবো ভাবছি, কিছু মনে করবে না, আজ আমি পছন্দ করছি এক শান্ত পরিবেশ।

হাঁটতে হাঁটতে এক মিনিটের মধ্যে ওরা হগসহেডের সামনে দাঁড়ালো। হ্যারি দেখলো হগসহেডের দোকানের বোর্ডটা ঝুলে রয়েছে, বাতাস না বইলেও দোকানের বোর্ডটা দুলছে নিত্যকার মতো। হগসহেড পাবে ব্রুমস্টিকের মতো তেমন খদ্দের টদ্দের নেই, মনে হলো মোটামুটি ফাঁকা।

ভেতরে যাবার আমাদের দরকার নেই, ডাম্বলডোর চাপা গলায় বললেন চারদিকে তাকিয়ে। লোকেরা আমাদের দেখতে পাবার আগেই, হ্যাঁ এবার তুমি আমার হাতে তোমার হাত রাখো, হ্যারি। এক-দুই-তিন গুণবো।

হ্যারি, ডাম্বলডোরের দিকে তাকিয়ে হাতটা চেপে ধরলো। পরমুহূর্তেই দারুণ এক অনুভূতি, ও যেন একটা মোটা রবারের টিউবের মধ্যে বন্দি, ও নিঃশ্বাস নিতে পারছে না, দেহের প্রতিটি অঙ্গ কে যেন প্রবল শক্তিতে চেপে ধরছে, ওর কি চিরকালের মতো দম বন্ধ হয়ে যাবে, তারপর যে অদৃশ্য হাত ওকে চেপে ধরেছিলো সহসা ওকে মুক্ত করলো, ও দেখলো এক ঠান্ডা অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে, প্রাণভরে তাজা, নোনা বাতাস নিঃশ্বাস নিতে পারছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *