২৩. হরক্রাক্সেস

২৩. হরক্রাক্সেস

ক্যাসেলে ফেরার সময়ে হ্যারি বুঝতে পারলো ফেলিক্স ফেলিসিসের প্রভাব তার ওপর তখনো আছে। ক্যাসেলের সদর দরজাটা ওর জন্য বন্ধ হয়নি, কিন্তু থার্ড ফ্লোরে গিয়ে চোখে পড়লো পীভসকে, পীভস প্রায় ওকে দেখেই ফেলেছিলো, কোনো রকমে পাশ কাটিয়ে ফ্যাট লেডির পোট্রট হোলের সামনে দাঁড়িয়ে অদৃশ্য হয়ে থাকার ক্লোকটা খুললো। ওকে দেখে ফ্যাট লেডি ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, এতো রাতে তোমার ফেরার সময় হলো?

অন্যায় হয়ে গেছে–খুব একটা জরুরি কাজে যেতে হয়েছিলো।

তুমি ভাল করেই জানো পাসওয়ার্ড রাতের বেলায় চেঞ্জ হয়ে যায়, এখন তো… তোমাকে বাকি রাতটুকু করিডরে শুতে হবে, কি?

ঠাট্টা করছেন! হ্যারি বললো। বারে রাত্রি বেলায় পরিবর্তন হবে কেন?

এটাই তো নিয়ম, ফ্যাট লেডি বললেন। তোমার যদি এ বিষয়ে ক্ষোভ থাকে হেডমাস্টারকে যেয়ে অভিযোগ করো, তিনিই নিরাপত্তার জন্য এই নতুন নিয়ম চালু করেছেন।

আশ্চর্য ঘটনা তো, হ্যারি তিক্ত স্বরে বললো। কেমন করে ভেতরে ঢুকবে ভাবতে লাগলো। সত্যি বিপদ দেখছি, যাকগে যাই হেডমাস্টারের সঙ্গে কথা বলে দেখি, মনে হয় এখনও তিনি তার ঘরে আছেন। আমি তো নিজের কাজে দেরি করে ফিরছি না, উনিই তো আমাকে একটা কাজে পাঠিয়েছিলেন। কাজ শেষ হবে তবে তো ফিরবো।

হেড মাস্টার এখানেই আছেন, কে যেন হ্যারির পেছন থেকে বললো। প্রফেসর ডাম্বলডোর ঘণ্টাখানেক আগে স্কুলে ফিরেছেন।

হ্যারি পেছন ফিরে দেখলো হেডলেস নিক হ্যারির দিকে ভেসে ভেসে আসছেন। গলা থেকে ঝুলে পড়া মুণ্ডুটা কাঁধের ওপর লৎপৎ করছে।

হেঃ হেঃ, ব্লাডি ব্যারন আমাকে সংবাদটা দিয়েছে। ব্যারন বললো, দারুণ ভাল মেজাজে আছেন, তবে চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ…।

তিনি এখন কোথায় রয়েছেন? দুরু দুরু বুকে হ্যারি জিজ্ঞেস করলো।

কোথায় আবার, তার অতি প্রিয় অ্যাস্ট্রোনমি টাওয়ারে তারা-টারা দেখছেন… সময় পেলে তাই দেখেন, তুমি জানো না?

ব্লাডি ব্যারন আপনাকে ভুল খবর দিয়েছে!

তাহলে তিনি অফিস ঘরে আছেন, নিক বললো। ব্যারন আমাকে যা বলেছে তাই তোমাকে বললাম। কোনো একটা বিশেষ কাজে হয়তো বাইরে গিয়েছিলেন।

হ্যাঁ তাই। মেমরি সংগ্রহ করতে পেরেছে খবরটা ডাম্বলডোরকে দেবার জন্য ও ছটফট করছে তা ওরা বুঝবে কেমন করে? হ্যারি ফ্যাট লেডিকে তোয়াক্কা না করে ঘুরে দাঁড়ালো। তর তর করে ওপরে উঠতে লাগলো।

আরে আরে রাগ করো না হ্যারি, আমি তোমায় গুল মারছিলাম। তুমি আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়েছো তাই রেগে গিয়েছি! যাও, ভেতরে যাও, পাসওয়ার্ড একই আছে টেপ ওয়ার্ম!

হ্যারি এতক্ষণে ডাম্বলডোরের অফিস ঘরে ঢোকার মুখে গারগয়েলে পৌঁছে গেছে। মাত্র এক মিনিট সময় লেগেছে। ও বললো, টফি এক ক্লেয়ার। ও তৎক্ষণাৎ ডাম্বলডোরের ঘরে যাবার জন্য ঘোরানো সিঁড়িতে পা দিলো।

ভেতরে এসো, হ্যারি বন্ধ দরজায় টোকা মারতেই ভেতর থেকে ডাম্বলডোর বললেন। হ্যারির ডাম্বলডোরের গলা শুনে মনে হলো খুবই ক্লান্ত স্বর।

হ্যারি দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। ডাম্বলডোরের অফিস ঘর আগে যেমন দেখেছিলো ঠিক তেমনই রয়েছে। ঘরের জানালা খোলা। হ্যারি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো, ঘন কালো আকাশে অজস্র তারা ঝিকমিক করছে।

ঈশ্বর সত্যই বড় দয়ালু, এসো হ্যারি, ডাম্বলডোরের গলায় একটু আশ্চর্য হওয়ার আভাস। তা এতো রাতে কি মনে করে…?

স্যর, আমি স্লাগহর্নের কাছ থেকে মেমরি পেয়েছি।

কথাটা বলে হ্যারি ওর পকেট থেকে ছোট কাঁচের বোতলটা বের করে ডাম্বলডোরকে দেখালো। কয়েক মুহূর্ত মাত্র, হেড মাস্টার হতভম্ব হয়ে হ্যারির দিকে তাকালেন। তারপর ডাম্বলডোরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

হ্যারি, সত্যি তুমি অভাবনীয় একটা খবর নিয়ে এসেছো, দারুণ, দারুণ কাজ করেছে, তোমাকে কারও সঙ্গে তুলনা করা যায় না… আমি জানতাম, জানতাম তুমি ছাড়া কাজটা আর কারও পক্ষে সম্ভব হতো না।

ডাম্বলডোর যেনো ভুলেই গেছেন রাত গভীর হয়েছে, ক্যাসেলে এত রাতে কেউ জেগে নেই। এত রাত হয়েছে সে কথা একদম ভুলে গিয়ে চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে, আঘাত প্রাপ্ত হাতটা বাড়িয়ে হ্যারির হাত থেকে স্লাগহর্নের মেমরির বোতলটা নিয়ে পেনসিভ রাখার ক্যাবিনেটের দিকে ছুটে গেলেন।

তাহলে এখন, পাথরের বেসিনটা ডেস্কের ওপর রেখে বোতলের মধ্যে যা ছিলো তাতে ঢেলে ফেললেন। শেষ পর্যন্ত… আমি যা দেখতে চেয়েছিলাম হ্যারি তুমিও তা দেখতে পাবে। তাড়াতাড়ি… তাড়াতাড়ি এখানে এসো হ্যারি।

হ্যারি, ডাম্বলডোরের নির্দেশ মতো পেনসিভের মুখে ওর মাথাটা নোয়াতেই পায়ের তলার মেঝে নেই মনে হলো… আবার গভীর এক অন্ধকারের মধ্য দিয়ে ভেসে যেতে যেতে সাস্লাগহর্নের অতীত দিনের অফিস ঘরে পা রাখলো।

দেখতে পেলো যুবক স্লাগহর্নকে, তিনি তার অফিস ঘরে হাতাওয়ালা আরাম কেদারায় বসে রয়েছেন। মাথায় তার চকচকে খড়ের রং-এর চুল, পাকানো গোফ। পা দুটো ভেলভেটের পাদানে ছড়ানো। এক হাতে গ্লাসভর্তি ওয়াইন, অন্য হাত ক্রিস্টাল আনারসের বাক্সে। ওর সামনে বসে ছসাতজন অল্পবয়সী ছেলে মেয়ে, তাদের মধ্যে টম রিডিলও রয়েছে। ওর আঙ্গুলে মারভোলোর কালো পাথর বসানো সোনার আংটিতে আলো পড়ে ঝিকমিক করছে।

রিডিল যখন প্রশ্ন করছে–স্যার প্রফেসর মেরিথই কি অবসর নিচ্ছেন? ঠিক সেই সময়ে ডাম্বলডোর হ্যারির পাশে দাঁড়ালেন।

টম, আমি জানলেও কিন্তু তোমায় বলতে পারবো না, স্লাগহর্ন বললেন, বলার সময় রিডিলের দিকে তিরস্কারের ভঙ্গিতে একটা আঙ্গুল তুললেন। তাহলেও চোখ দুটো আধো বুজে বললেন, বেশ, শুনি কোথা থেকে সংবাদটি পেলে, তুমি মনে হয় তোমার বন্ধুদের চাইতেও বেশি খবর রাখো।

রিডিল কথাটা শুনে মৃদু হাসলো। বাকি সব ছেলেরা হো : হো : হো : করে হেসে উঠলো।

খবর সংগ্রহের শক্তি তোমার আছে, প্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের কীভাবে খোশামদ করতে হয় তুমি তা জানো–আনারস আমার অতিপ্রিয়… আনারসের জন্য ধন্যবাদ।

স্লাগহর্নকে ঘিরে বসে থাকা দুচারজন ছেলে আবার হেসে উঠলো।

আমি কিন্তু দৃঢ়ভাবে আশা করছি আগামী কুড়ি বছর পর তুমি মিনিস্ট্রিতে ম্যাজিক মন্ত্রী হবেই হবে। অবশ্য তুমি যদি আমাকে আনারস দিতে থাকো।

আমার কিন্তু মিনিস্ট্রিতে ভাল যোগাযোগ আছে।

কথাটা শুনে টম রিডিল মুচকি হাসলো, অন্যান্য ছেলেরা আবার আগের মতো হাসলো। হ্যারি দেখলো ছেলেগুলোর মধ্যে টম বয়সে বড়ই হবে; ওদের মুখ দেখে

মনে হলো টম রিডিল যেনো ওদের লিডার।

স্যার আমার মনে হয় রাজনীতি আমার জন্যে নয়, যথাযোগ্য বা মানানসই হবে না, ছেলেরা হাসি থামালে টম গম্ভীর মুখে বললো। রাজনৈতিক নেতা হবার মতো আমার ব্যাকগ্রাউন্ড নেই।

ওর পাশে যে দুএকটা ছেলে বসেছিলো তারা বোকার মতো হাসলো। হ্যারি কিন্তু ওদের মুখ দেখে বুঝতে পারলো, ছেলেগুলো ওদের নেতার মুখের দিকে তাকিয়ে বেশ মজা উপভোগ করছে। ওরা খুব ভাল করেই জানে তাদের দলনেতা টম রিডিলের বংশ পরিচয়।

বোকার মতো কথা বলবে না, স্লাগহর্ন উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন। মনে রাখবে তুমি এলেবেলে পরিবারের নয়। তুমি নাম করা এক জাদুকর পরিবারের। তোমার যথেষ্ট বুদ্ধি আছে, দক্ষতা আছে যা অনেকেরই নেই। না না আমি বলছি তুমি অনেক ওপরে উঠবে টম। আমি আজ পর্যন্ত কোনো ছাত্র সম্পর্কে ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করিনি।

স্লাগহর্নের পেছনে টেবিলে রাখা ছোট সোনার ঘড়িটায় এগারটা বাজার টিং টিং সুরেলা শব্দ হলো, শব্দটা শুনে স্লাগহর্ন পেছনে ঘুরলেন।

গুড গ্রেসাস (বিস্ময়ের সঙ্গে), এগারটা বেজে গেছে? তাহলে তোমরা এখন যেতে পারো, তা না হলে আমাদের বিপদে পড়তে হতে পারে, লেস্টরেঞ্জ–তোমার লেখা প্রবন্ধ কাল কিন্তু আমার চাই, তা না হলে আটক থাকতে হবে। এভেরি কথাটা কিন্তু তুমিও মনে রেখো।

এক এক করে ছেলেরা ঘর থেকে চলে গেলো। স্লাগহর্ন বেশ হাত-পা ছড়িয়ে আরাম কেদারায় বসে গ্লাসের বাকি মদটা গলায় ঢাললেন, শূন্য গ্লাসটা পাশের ডেস্কে রাখলেন। রিডিল কিন্তু তখনো ঘর ছেড়ে যায়নি। ওর নড়াচড়ার শব্দে স্লাগহর্ন মুখ-তুলে তাকালেন।

টম, মনে রেখো, তুমি কিন্তু একজন প্রিফেক্ট। তাই রাতের বেলায় তোমাকে যদি বিছানায় পাওয়া না যায় তাহলে…।

স্যার, আমার আপনার কাছে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার আছে। তাহলে বলে ফেলো, দেরি করো না। স্যার আপনি কি, হরক্ৰাকস বিষয়ে কিছু জানেন…?

কথাটা শুনে স্লাগহর্ন ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে–প্রায় অন্যমনস্ক হয়ে মদের গ্লাসের কানায় মোটা মোটা আঙ্গুলগুলো বোলাতে লাগলেন।

ডার্ক আর্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার কিছু একটা?

হ্যারি জানে, স্লাগহর্ন খুব ভালো করেই জানেন যে ওটা ওদের স্কুলের পড়া নয়।

স্যার, ওই শব্দটা আমি একটা বইতে পেয়েছি। শব্দটার সঠিক মানে বুঝতে পারিনি…

না, মানে… হোগার্টসের লাইব্রেরিতে শব্দটার মানে বা তার বিস্তারিত বিবরণ নাও পেতে পারো। খুবই কালো বিষয়, সত্যই খুব কালো বিষয়, স্লাগহর্ন বললেন।

কিন্তু স্যার, আমার মন বলছে, বিষয়টি আপনিই জানেন। মানে আপনার মতো একজন খ্যাতনামা জাদুকরের না জানার তো কথা নয়। আপনি জানেন, আর আপনার না জানা থাকলে অন্য কারো জানার কথা নয়, তাই ভাবলাম আপনাকে জিজ্ঞেস করি।

হ্যারি বুঝতে পারলো টম রিডিল খুবই চতুর ও চাটুকার। কেমন করে কাজ আদায় করতে হয় সে বিষয়ে তার জ্ঞান টনটনে। টম রিডিল হরক্ৰাকস নিয়ে কাজকর্ম করছে, গবেষণা করছে, সে বিষয়ে ও নিঃসন্দেহ হলো।

হ্যাঁ কি বলছিলে, স্লাগহর্ন রিডিলের দিকে না তাকিয়ে বললেন। ক্রিস্টালের মত স্বচ্ছ আনারসের বাক্সের ফিতায় হাত বুলাতে লাগলেন। তবে তুমি যখন জানতে চেয়েছো তখন তোমাকে দুঃখ না দিয়ে, তোমার বোঝার মতো বলতে পারি। হরক্রাকস শব্দটির অর্থ–যা একজন মানুষের লুকিয়ে রাখা আত্মার একটি অংশ মাত্র।

আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কেমন করে সেটা কাজ করে, যদিও স্যার… রিডিল বললো।

টম কথাগুলো খুবই সংযতভাবে বললেও, টমের মনের মধ্যে যে দারুণ এক উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছে হ্যারি তা বুঝতে পারলো।

হ্যাঁ সেক্ষেত্রে, তোমার আত্মাকে টুকরো করো, স্লাগহর্ন বললেন। তারপর একটা অংশকে নিজ শরীরের বাইরে কোনো বস্তুতে লুকিয়ে রাখো। তারপর সেই মানুষটির দেহ আক্রান্ত বা ধ্বংস হলে তার কিন্তু মৃত্যু হবে না, তার সেই বিভক্ত করা আত্মার অংশ পৃথিবীতে কোনো রকম ক্ষতি ছাড়া থেকে যাবে। কিন্তু অবশ্যই ভিন্ন অস্তিত্বে থাকবে…

কথাগুলো বলার পর স্লাগহর্নের মুখটা কুঁচকে গেলো। হ্যারির মনে পড়ে গেলো কথাগুলো নতুন নয়, প্রায় দুবছর আগে হরক্রাকস সম্বন্ধে ও শুনেছে।

আমার দেহ থেকে আমি ছিটকে বেরিয়ে এসেছি, আমি আমার আত্মার চেয়েও ক্ষুদ্র, একটি হীনজাত ঘোস্টের চেয়েও হীন… কিন্তু তাহলেও এখনও আমি জীবিত।

কিন্তু টম খুব কম লোক এই রকম বাঁচতে চায়, মৃত্যু তার চাইতে অনেক

হ্যারি রিডিলের মুখের দিকে তাকলো। ও যেনো আরো বেশি কিছু জানতে চায়, জানার লালসা চেপে রাখতে পারছে না।

আপনি কেমন করে আপনার আত্মাকে টুকরো টুকরো করবেন?

হ্যাঁ, স্লাগহর্ন অস্বস্তিতে বললেন। তুমি অবশ্যই জানবে মানুষের আত্মা এমন একটি বস্তু যাকে বিভক্ত করা ঠিক নয়। সেই অবিভক্ত আত্মাকে বিভক্ত করলে প্রকৃতির নিয়ম অমান্য করা হবে।

তা হয়তো হবে, কিন্তু কেমন করে টুকরো টুকরো করা যায়?

অশুভ কাজ দ্বারা চরম অশুভভাবে। হত্যা করে, হত্যা করার পর তার দেহ থেকে আত্মাকে টেনে এনে বিভক্ত করে…। জাদুকর হরক্ৰাকস করে তার নিজের ক্ষতি পূরণ করে। তিনি আত্মার বিচ্ছিন্ন অংশ খাচায় আবদ্ধ করে রাখেন।

খাচায় আবদ্ধ…? কিন্তু কেমন করে…?

জাদুমন্ত্রের বলে, সেটা আমার কাছে জানতে চেও না, আমি সেই স্পেল জানি, বৃদ্ধ হাতিকে মশারা যেমন কামড়ে কামড়ে বিরক্ত করে, হাতি মশা তাড়াবার জন্য যেমন মাথা নাড়ায়, স্লাগহর্ন বৃদ্ধ হাতির মতো মাথা দোলাতে দোলাতে কথাটা বললেন। আমাকে কি তোমার খুনি বলে মনে হয়, সেই রকম কিছু করেছি মনে হয়?

না স্যার, অবশ্যই না স্যার, রিডিল এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে বললো। আমি অত্যন্ত দুঃখিত… আপনাকে আমি মর্মাহত করতে চাইনি।

জানি, জানি তুমি আদপেই করতে চাওনি, স্লাগহর্ন বললেন। হা হা কৌতুহলী হওয়া স্বাভাবিক। এক শ্রেণীর নির্দিষ্ট মেধার জাদুকররা এসব করে থাকে…

হ্যাঁ স্যার, হ্যাঁ স্যার ঠিক বলেছেন, রিডিল বললো। আসলে আপনার কি মনে হয়–হরক্রাকস সত্যই কাজে লাগে, সেটা জানার জন্যই জিজ্ঞেস করছি। আত্মাকে কি শুধু একবারই বিভক্ত করা যায়? নিজেকে শক্তিশালী করে, আত্মাকে বেশি খণ্ডে বিভক্ত করা কি যায় না? যেমন সাত ভাগে… ধরুন জাদুকরদের বিবেচনায় সাত নম্বর সবচেয়ে শক্তিশালী ম্যাজিক্যাল নাম্বার। তো সেটাকে সাত ভাগে টুকরো করা যাবে…?

বাজপাখির দাড়ি, টম স্লাগহর্ন গর্জন করে উঠলেন। যা বলেছে সাত! একটা মানুষকে হত্যা করবো ভাবাটাই অন্যায়! আত্মাকে টুকরো করাই অশুভ কাজ, তা

আবার সেটাকে সাতটা টুকরো করা…।

স্লাগহর্নের মুখ দেখে হ্যারির মনে হলো টমের কথা শুনে খুবই উদ্বিগ্ন হয়েছেন। মনে করছেন, টমের সঙ্গে যেনো হরক্ৰাকস নিয়ে আলোচনা না করা ভালো ছিল।

বিষয়টা বলতে পারো একটা কাল্পনিক আলোচনা। বলতে পারো একাডেমিক আলোচনা।

রিডিল কথাটা শোনা মাত্রই বললো–ঠিক বলেছেন স্যার।

যাহোক টম কারও সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করবে না; না করাই ভালো। আমরা হরক্রাকস নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি জানতে পারলে লোকেরা পছন্দ করবে না। তুমি জেনে রেখো হোগার্টসে হরক্রাকস নিয়ে কথাবার্তা বলা নিষিদ্ধ। বিশেষ করে ডাম্বলডোর হরক্ৰাকস নিয়ে কথাবার্তা বলা মোটেই পছন্দ করেন না।

কাউকে বিন্দু বিসর্গ বলবো না। কথাটা বলে টম চলে গেলো। হ্যারি লক্ষ্য করলো টমের চোখে মুখে আনন্দের উল্লাস যাদুকর হওয়ার এক নবউপলব্ধির আনন্দ–যে আনন্দ তার সুন্দর মুখশ্রীকে আরো লাবণ্যময় করেনি বরং কম মানবিক ও মলিন করেছে।

ধন্যবাদ হ্যারি, ডাম্বলডোর বললেন। চলো, এবার আমরা যাই।

হ্যারি ডাম্বলডোরের অফিসে ফিরে দেখলো ডাম্বলডোর ওর আগেই এসে ডেস্কের সামনে বসে রয়েছেন। ডাম্বলডোর কিছু বলবেন সেই প্রতীক্ষায় হ্যারি তার সামনে চুপ করে বসে রইলো।

বেশ কিছুটা সময় চুপ করে থাকার পর ডাম্বলডোর বললেন–অনেকদিন থেকে এই ঘটনাগুলো জানার অপেক্ষায় ছিলাম। আমি যা ধারণা করেছিলাম, তার সাথে অবিকল মিল এই ঘটনাগুলোর এবং ভবিষ্যতে কতদূর যেতে হবে…।

হ্যারি দেখলো, অতীতের প্রতিটি হেডমাস্টার ও হেডমিস্ট্রেস তাদের পোর্ট্রেটের ভেতর চঞ্চল হয়ে উঠেছেন, ওদের কথাবার্তা কান খাড়া করে শুনছেন। একজন লাল নাকওয়ালা জাদুকর বোধকরি কানে কম শোনেন তাই কানে ইয়ারট্রামপেট লাগিয়েছেন কথা শোনার জন্য।

হ্যারি, তাহলে তুমি যা দেখলে ও শুনলে তার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছো, ডাম্বলডোর বললেন। এখন তোমার যা বয়স, সেই সময় টম রিডিলের একই বয়স ছিলো। তখন থেকেই ও নিজেকে অমর করে রাখতে চাইছিলো।

আপনি কি মনে করেন ও কৃতকার্য হতে পেরেছে? হ্যারি বললো। ও বুঝেছি সেই জন্যই আমাকে যখন আক্রমণ করেছিলো তখন ও মরে যাবার পরও বেঁচেছিলো। নিশ্চয়ই কোথাও তার হরক্ৰাকস গোপন করে রেখেছিলো? ওর আত্মার একাংশ বেঁচেছিলো?

সামান্য… অথবা বেশি, ডাম্বলডোর বললেন। তুমি শুনেছো ভোল্ডেমর্ট হোরেসের কাছ থেকে বিশেষ করে সেটা জানতে চেয়েছিলো–একজন জাদুকর যদি একটার বেশি হরক্রাকস বানায়, তাহলে সেই জাদুকরের কি হবে। সে নিজের মৃত্যুকে পরোয়া না করে আরো অনেককে হত্যা করতে সাহসী হবে এবং নিজের আত্মা থেকে অনেক অনেক হরক্রাকস বানাবে। নিজের আত্মাকে টুকরো টুকরো করে অনেক হরক্রাকস বানিয়ে গোপন করে রেখে দেবে। অবশ্য কোনোও বইতে সেইরকম কোনো তথ্য দেয়া নেই। আমি যতদূর জানি… বলতে পারো আমি এক রকম নিশ্চিত, ভোল্ডেমর্টও জানতো হরক্ৰাকস বানাতে সক্ষম কোনো জাদুকর তার আত্মাকে দুটুকরোর বেশি করতে পারেনি।

ডাম্বলডোর কয়েক সেকেন্ড নীরব রইলেন, তার চিন্তাগুলো শৃঙ্খলাবদ্ধ করার পর বললেন–চার বছর আগে, আমি এমন একটা কিছু পেয়েছিলাম, যা থেকে প্রমাণিত হয় ভোল্ডেমর্ট তার আত্মাকে খণ্ডিত করেছে।

কোথায়, হ্যারি জিজ্ঞেস করলো। কেমন করে?

তুমিই তো সেটা আমার হাতে দিয়েছিলে হ্যারি, ডাম্বলডোর বললেন। ডায়রি, রিডিলের ডায়রি, তাতে নির্দেশিত ছিলো কেমন করে চেম্বার অফ সিক্রেটস খোলা যায়।

আমি বিষয়টি ঠিক বুঝতে পারছি না স্যার, হ্যারি বললো।

ওয়েল, যদিও আমি রিডিলের ডায়রি দেখিনি, তুমি যা বর্ণনা দিয়েছিলে তা ছিলো একটা প্রপঞ্চ। আমি এর আগে কখনো দেখিনি যে, মেমরি নিজ থেকেই কাজ শুরু করে, নিজেই চিন্তা করে। যে মেয়েটির হাতে মেমরিটি পড়েছিলো সেই মেয়েটির সকল কিছু বদলে গিয়ে মেমরির মত হয়ে গেল, সে তো স্বাভাবিক বিষয় নয়। না, সেই বই এর ভেতরে অন্য কিছু–কোন ক্ষতিকর উপাদান ছিল… খণ্ডিত আত্মা, আমি সে সম্বন্ধে সন্দেহাতীতভাবে নিশ্চিত। ডায়রিটা ছিল একটি হরক্রাকস। কিন্তু বিষয়টি অনেক প্রশ্নের অবতারণা করেছিল এবং তার জবাবও ছিলো। কি ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও বিপদ সঙ্কেত দিয়েছিলো আমাকে… সেই ডায়রিতে যেমন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিসম্পাত ছিলো তেমনি নিরাপদে রক্ষার কৌশলও ছিলো।

আমি এখনও পর্যন্ত কিছুই বুঝতে পারিনি, হ্যারি বললো।

সেটা হরক্রাকস হিসেবে কাজ করেছিল। অন্যভাবে বলা যায়, তার মধ্যে যে খণ্ডিত আত্মা লুকিয়ে রাখা ছিলো, তা ছিলো সুরক্ষিত… এবং এভাবেই সেই খণ্ডিত আত্মার মালিক মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। তবে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে রিডিল চেয়েছিলো তাঁর সেই ডায়রি পড়া হোক, তার আত্মার খণ্ডিত অংশ তাতে বাসা বেধে থাকুক অথবা সেটা অন্য কেউ গ্রহণ করুক, যাতে সিন্দারিন দানবটি পু য়ি জীবিত হয়ে বেপরোয়া হোক।

কিন্তু রিডিল তার কঠোর পরিশ্রম পণ্ড হোক, নিশ্চয়ই তা চাননি, হ্যারি বললো। ও চেয়েছিলো সকলে জানুক ও শ্রিদারিনের একমাত্র উত্তরাধিকারি। কিন্তু তাকে যথোপযুক্ত মর্যাদা দেয়া হয়নি।

ঠিক বলছো, ডাম্বলডোর মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন। তুমি তো বুঝতে পারছো হ্যারি, যদি ও চাইতো ওই ডায়রিটা অন্যদেরও দিতে পারতো, হোগার্টসের ছেলে মেয়েদেরও দিতে পারতো; কিন্তু ও তার খণ্ডিত আত্মা কাউকে দিতে চায়নি, ডায়রিতে নিজের জন্য লুকিয়ে রেখেছিলো। ওর কাছে সেই খণ্ডিত আত্মা খুবই মূল্যবান ছিলো। একটু আগে দেখা স্লাগহর্নের ব্যাপারটা অবশ্যই তোমার মনে আছে। স্লাগহর্ন বলেছিলেন, কেউ তার খণ্ডিত আত্মা ধ্বংস হবার ভয়ে কাউকে দিতে চায় না, তাই লোক চক্ষুর অন্তরালে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু এখন সেই আত্মার টুকরোর আর অস্তিত্ব নেই তা তুমি দেখেছো। ধ্বংস হয়ে যাওয়াটা খুবই অশুভ, অন্তত আমার কাছে। মনে হয়, ভোল্ডেমর্ট আরো অনেক হরক্ৰাকস বানিয়েছে বা বানাবার পরিকল্পনা করছে–যাতে তার প্রথমটির বিনাশ তার ক্ষতির কারণ না হয়। আমি চাই না, ওইসব অশুভ জিনিস তৈরি হোক তবে সব কিছু তো আমার চাওয়ার ওপর নির্ভর করে না।

তারপর, দুবছর পরে তুমি আমাকে বলেছিলে… একদিন রাতে ভোল্ডেমর্ট তার মৃতদেহে ফিরে এসেছে, ও ডেথইটারদের কাছে অতি উদ্দীপ্ত ও ভয় উদ্রেককারী বক্তব্য দিয়েছিলো অন্যের চাইতে আমি অনেক বেশি অগ্রসর হতে পেরেছি… এমন একটি পথে যাতে আমি অবিনশ্বর হবো। তুমি বলেছিলে ও বলেছে অন্যদের চাইতে বেশি অগ্রসর।

আমি জানি ও কি বলতে চেয়েছিলো, কিন্তু ডেথইটাররা সেই কথার মানে বুঝতে পারেনি। ও নিজের হরক্রাকসের বিষয়ে ইঙ্গিত করেছিলো, একের বেশি হরক্রাকস-এর। হ্যারি, আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি অন্য কোনো জাদুকর আজ পর্যন্ত তা বানাতে সক্ষম হয়নি। যত দিন যাচ্ছে লর্ড ভোল্ডেমর্ট ততই অমানুষ হয়ে উঠছে…।

নিজেকে হত্যার ঊর্ধ্বে রেখে মৃত্যুঞ্জয় হয়ে অবাধে অন্যদের হত্যা করে চলেছে? হ্যারি বললো। তাহলে ও কেন ফিলোসফার স্টোন বানাতে পারলো না, অথবা একটা চুরি করতে… যদি ও অমর, অবিনশ্বর হতে আগ্রহী?

হ্যাঁ আমরা জানি, পাঁচ বছর আগে সে তার চেষ্টা করেছিলো, ডাম্বলডোর বললেন। কিন্তু কেন পারেনি তার কিছু কারণ ছিলো। আমি মনে করি ভোল্টেমর্টের কাছে হরক্রাকসের প্রয়োজন ফিলোসফার স্টোনের চেয়ে বেশি। তাই এখন লর্ড ভোল্ডেমর্ট হরক্রাকস বানাতে বেশি আগ্রহী।

এটা সত্যি যে এলিজার অফ লাইফ জীবন বাড়িয়ে দেয়, তবে নিয়মিত সেবন করতে হয়, অবিনশ্বরতার জন্য। সুতরাং ভোল্ডেমর্ট জানে এটার ওপর তাকে সব সময়ই নির্ভর করেই থাকতে হবে। কিন্তু ভোল্ডেমর্ট জানে সেটা একদিন ফুরিয়ে যেতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে, স্টোন চুরি যেতে পারে… ফলে অন্যদের মতোই স্বাভাবিকভাবে একদিন ওর মৃত্যু হবে। ভোল্ডেমর্ট অন্যের ওপর আস্থা রাখতে চায়

না, যা কিছু করার তা ও নিজেই করতে চায়। এমনকি সে এলিজারের ওপর নির্ভর করতে চায়নি। অবশ্য তোমাকে হত্যা করার চেষ্টার সময় সে যখন ধ্বংস হয়েছিলো, সে সময় তার শরীর ফিরে পেতে তাকে এটা সেবন করতে হয়েছিলো। তারপর, আমি নিশ্চিত ও একমাত্র ভরসা রাখে হরক্রাকসের ওপর, দেহ ফিরে পেতে ও অন্য কিছুর ওপর নির্ভর করতে চায় না। এখন ও প্রায় সিদ্ধিলাভ করে ফেলেছে।

কিন্তু এখন, হ্যারি তুমি যে অমূল্য মেমরি আমাকে দিতে সমর্থ হয়েছে, আমরা এমন অস্ত্র পেয়েছি যাতে ভোল্ডেমর্টকে নিধন করা সম্ভব। আগে কারো পক্ষে যা সম্ভব ছিলো না। হ্যারি, তুমি কি ওকে বলতে শোননি, তুমি যদি তোমার আত্মাকে অনেক টুকরো করতে পারো… অন্তত পক্ষে ম্যাজিক্যাল নম্বরে তাহলে তুমি অনেক শক্তিশালী হবে, তুমি তো জানো, ম্যাজিক্যাল নম্বর সাত সবচেয়ে শক্তিশালী। তাই নিজ আত্মা সাত-সাতটা খণ্ডে ভোল্ডেমর্ট করতে চেয়েছে।

ও তাহলে সাতটা হরক্রাকস করতে পেরেছে? হ্যারি ভয়ার্ত কণ্ঠে বললো। ঘরে যেসব পোর্ট্রেট ছিলো তারাও একইভাবে আঁতকে উঠলো। তাহলে বলুন হরক্রাকসগুলো এখন কি অবস্থায় আছে পৃথিবীতে, লুকোনো, মাটিতে পোঁতা অথবা অদৃশ্য।

আমি অত্যন্ত খুশি, সত্যি খুশি, তুমি এই সমস্যার বিরাট এক পর্যায় বুঝতে পেরেছো, ডাম্বলডোর শান্তভাবে বললেন। কিন্তু প্রথমত না, হ্যারি, সাতটা হরক্ৰাকস নয়, ছটা। সাত নম্বর অংশটা (ওর আত্মার খণ্ডিত অংশ) ঠিকই সংরক্ষিত আছে, ভোল্টেমর্টের পুনঃসৃষ্ট দেহের মধ্যে। ওটাই ছিলো ওর একটি অংশ, বহুবছর ধরে তার নির্বাসনের সময় বিশেষভাবে বেঁচে ছিলো। সেটা ছাড়া, তার নিজস্বতা কিছু ছিলো না। সাত নম্বর আত্মার টুকরোটিকে খতম করতে হবে যদি কেউ ভোল্ডেমর্টকে হত্যা করতে চায়–যেই আত্মার টুকরোটি এখন তার পুনরায় সৃষ্ট দেহের মধ্যে অবস্থান করছে।

 কিন্তু বাকি ছটি হরক্রাকস; তাহলে, হ্যারি একটু মরিয়া হয়ে বললো–তাহলে ওই ছটা হরক্ৰাকস আমরা কোথায় পাবো?

ভুলে যাচ্ছে তার মধ্যে তুমি একটি আর আমি একটি বিনাশ করেছি। আপনি করেছেন? হ্যারি ব্যার্থ হয়ে বললো।

অবশ্যই হ্যাঁ, ডাম্বলডোর বললেন। তারপর পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া হাতটা তুলে দেখালেন। আংটি, হ্যারি, মারভেলোর আংটি। তার ওপর প্রচণ্ড কার্স করা হয়েছে। সেই আংটি হরক্রাকস… আমি সেটা ধ্বংস করেছি। তখন আমার হাত জখম হয়েছিলো। স্নেইপ না থাকলে কি হতো জানি না। ওর সাহায্যে আমি হোগার্টসে ফিরতে পেরেছি। তা না হলে আমি এ সকল কথা আর বলতে পারতাম না। আমার এই দগ্ধ হাত আর ভোল্ডেমর্টের সাত নম্বর আত্মার বিনিময় হতে পারে … যাহোক সেই আংটি এখন আর হরক্রাকস নয়।

কিন্তু সেটা কেমন করে পেলেন?

হ্যাঁ, এখন তো তুমি জেনেছো, বহু বছর ধরে ভোল্টেমর্টের অতীত জীবন জানার চেষ্টা করেছি, ও যেসব জায়গায় থাকতো সেইসব জায়গায় আমি গিয়েছি। আংটিটা গন্টসের জন্য বাড়িতে লুকোনো ছিলো। ভোন্ডের্ট মনে হয় নানা কৌশলে তার আত্মার এক অংশ সেই আংটিতে রেখেছিলো, তারপর সেই আংটি ও আর তার আঙ্গুলে রাখেনি। আগেই বলেছি, আমি সেই জীর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ি থেকে লুকিয়ে রাখা সেই আংটি খুঁজে বার করেছিলাম। ভোল্ডেমর্ট ঘুণাক্ষরেই ভাবতেই পারেনি আমি সেখানে যাবো। সে অনেক শক্তিশালী যাদুমন্ত্র দ্বারা স্থানটি সুরক্ষিত করেছিলো।

সে কথা থাক… তুমি ডায়রিতে লুকিয়ে রাখা হরক্ৰাকস ধ্বংস করেছে আর আমি ওর পূর্বপুরুষের আংটি থেকে। তাহলে এখনও চারটে হরক্রাকস রয়েছে।

ওই চারটে হরক্রাকস তাহলে যেকোনও জিনিস হতে পারে? হ্যারি বললো। পুরনো টিনের কৌটো অথবা শূন্য পোশানের বোতল?

তুমি পোর্টকীর কথা ভাবছো হ্যারি, যা হয়, খুবই সাধারণ সব বস্তু, আমাদের নজরে পড়ার মতো নয়। কিন্তু লর্ড ভোল্ডেমর্ট তার মূল্যবান আত্মার একটি অংশ রাখার জন্য পুরনো টিনের কৌটো, শূন্য পোশানের বোতল ইত্যাদি ব্যবহার করবে? কখনোই না, তুমি বোধহয় ভুলে গেছো, আমি তোমাকে দেখিয়েছিলাম, ভোল্ডেমর্ট ট্রফি জমাতে পছন্দ করে, আর শক্তিশালী ম্যাজিক্যাল হিস্ট্রির জিনিসপত্র। ওই সব দেখে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভোল্ডেমর্ট আজেবাজে কিছুতে তার নিজস্ব হরক্রাকস লুকিয়ে রাখতে পারে না। তার মত উন্নাসিক লোক কোনো মূল্যবান কিছু ছাড়া হরক্ৰাকস রাখতে পারে না। সে রাখবে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ স্থানে।

ডায়রিটা তো তেমন কিছু মূল্যবান ছিলো না।

অবশ্যই, অবশ্যই ডায়রিটা তার কাছে খুবই মূল্যবান ছিল। ডায়রিতে লেখা ছিলো ও সিদারিনের বংশধর।

তাহলে অন্যান্য হরক্রাকসগুলো? হ্যারি বললো। আপনি কিছু আন্দাজ করতে পারেন স্যার?

আমি মোটামুটি একটা অনুমান করতে পারি, ডাম্বলডোর বললেন। তার কারণগুলো তোমাকে আগেই বলেছি, আমার স্থির বিশ্বাস লর্ড ভোল্ডেমর্ট সাধারণ কোনো জিনিস পছন্দ করে না, ওর পছন্দ একটি ভিন্ন রকমের… যার একটা বিশেষত্ব আছে। তাই আমি বারে বারে ওর অতীত নানাভাবে খোঁজ করেছি, খোঁজ করে চলেছি। যদি আমি কোনো শিল্পকর্মের সন্ধান পাই, মানে সেই সমস্ত জিনিস যা ওর কাছে এখন আর নেই, হারিয়ে ফেলেছে।

লকেটটা! হ্যারি বেশ জোরে জোরে বললো–হাফপাফের কাপ!

ঠিক বলেছো, ডাম্বলডোর সহাস্যে বললেন। আমি প্রস্তুত, যে হাতটা আমার দুর্বল তা দিয়ে নয়, শক্ত হাতের যে কটা আঙ্গুল আছে তার সাহায্যে, আরো দুটো তিন ও চার নম্বরটি ধ্বংস করতে পারবো। তিন হচ্ছে লকেট, আর চার হাফপাফের কাপে রাখা হরক্রাকস। বাকি রইলো পাঁচ ও ছয়… ও তো সর্বমোট ছটা হরক্রাকস বানিয়েছে। ও দুটো ধ্বংস করা কঠিন হবে। আবার অনুমান করছি… চারজন ফাউন্ডার যেমন হাফলপাফ, স্নিদারিন, রেভেন ও গ্রিফিরে কোনো জিনিসে রেখেছে। সে হাফলপাফ ও স্নিদারিন থেকে দুটো জিনিস পাওয়ার পর চেষ্টা করতে থাকে গ্রিফির ও র‍্যাভেন থেকে কিছু পাওয়ার। আমি জানি না র‍্যাভেনকু থেকে সে কিছু পেয়েছে কি না, তবে আমি নিশ্চিত গ্রিফিন্ডর থেকে নয়। কথাগুলো বলে ডাম্বলডোর তার পেছনের দেয়ালে ঝোলানো রুবি পাথর খচিত তলোয়ারটা দেখিয়ে বললেন, নিরাপদ স্থান।

আপনার কি মনে হয় স্যার এই কারণে হোগার্টসে কাজের জন্য আপনার কাছে এসেছিলেন? হ্যারি বললো। প্রতিষ্ঠাতার স্মারক সংগ্রহ করার জন্য।

আমার তো তাই স্থির বিশ্বাস, ডাম্বলডোর বললেন। দুঃখের বিষয় ওই ধারণা বা বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে আমরা এগোতে পারি না। কাজ না দেয়ার ফলে সে স্কুলে কিছু খোঁজ করা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাকে স্কুলে চাকরি না দিয়ে সেই অবাধ সুযোগ থেকে তাকে বঞ্চিত করেছিলাম। আমার স্থির সিদ্ধান্ত ভোল্ডেমর্ট… চার ফাউন্ডারসে সকলের জিনিস সংগ্রহ করতে এখনও সক্ষম হয়নি। দুটো আগে হয়েছিল অথবা এখন তিনটে হয়ে থাকতে পারে, এখন পর্যন্ত এটাই আমরা ভাবতে পারি।

তা হলেও, র‍্যাভেল ক্ল অথবা গ্রিফিগুরের কিছু যদি পেয়েও থাকে তা হলেও ছ বাকি থাকে, হ্যারি বললো আঙ্গুল গুনতে গুনতে।

ডাম্বলডোর বললেন–আমার তো তা মনে হয় না। আমার মন বলছে ছনম্বরটা কি? আমি যদি নাগিন সাপের কথা বলি তো তুমি কি বলবে জানি না।

সেই সাপটা, হ্যারি চমকে উঠে বললো। তিনি কি জম্ভকে হরক্ৰাকস হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন?

না, সে রকম না করাই ঠিক, ডাম্বলডোর বললেন। ওরা তো নিজের মতো চিন্তা করতে পারে, চলতে পারে। ওদের মধ্যে আত্মার টুকরো রাখা বুদ্ধিমানের মতো কাজ নয়, রিস্কি ব্যাপার। যাকগে আমার গণনা যদি নির্ভুল হয় তাহলে ভোল্টেমর্টের ছয়টি হতে যখন একটা বাকি রয়েছে, সেই জন্যই তোমার বাবা-মার বাড়িতে গিয়ে তোমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলো।

মনে হয় কোনো এক বিশেষকে হত্যা করে ওর শেষ হরক্রাকস পূর্ণ রিজার্ভ করে রাখতে চেয়েছিলো। সেটা ছিলো তোমার মৃত্যু।

আমরা জানি, ও সফল হয়নি। বেশ কিছুকাল চুপচাপ বসে থাকার পর ও তার নাগিনিকে দিয়ে একজন মাগলকে হত্যা করেছিলো। সেই হত্যার পর ওর মনে হয়েছিলো ও ষষ্ঠটি পেয়েছে যার মধ্যে ওর আত্মার টুকরো গোপন করে রাখতে পারে। তার মধ্যে ছিলো স্লিদারিনের রক্ত, সে ওর খুব প্রিয়জন ছিলো। তার ওপর ওর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ ছিলো মনে হয়। তাকে সে খুবই পছন্দ করতো এবং সাপ হলেও তাকে তার কাছাকাছি রাখতে চেয়েছিলো।

হ্যারি বললো–তাহলে ডায়রি ধ্বংস হয়েছে, আংটিও। কাপ, লকেট আর সাপ এখনও অটুট আছে… এরপর আপনি মনে করছেন র‍্যাভেন অথবা গ্রিফিন্ডরের বিশেষ কোনো জিনিসে তিনি হরক্ৰাকস লুকিয়ে রেখেছেন?

ডাম্বলডোর মাথা নত করে বললেন–তাইতো মনে করছি, সুন্দর সার সংক্ষেপ করেছে।

তাহলে স্যার আপনি সেগুলো খুঁজে বার করার চেষ্টা চালাচ্ছেন? এই যে স্কুল ছেড়ে যান মাঝে-মধ্যেই তখন কি তার খোঁজে…?

ঠিক বলেছো, ডাম্বলডোর বললেন। বহুদিন ধরে আমি খুঁজে চলেছি। আমার মনে হয়… হয়তো… আমি আরো একটি পেয়ে যাওয়ার খুব কাছাকাছি এসেছি। আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।

স্যার, এবার কিন্তু আমি আপনার অভিযানের সঙ্গী হতে চাই। আমি আপনার সঙ্গে সেটা ধ্বংস করতে চাই।

ডাম্বলডোর ক্ষণিক সময় হ্যারির তেজদীপ্ত মুখের দিকে, গভীর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন। বললেন–আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি আমাকে সাহায্য করতে পারবে মনে হয়।

আমি পারবো স্যার? হ্যারি অভিভূত হয়ে ডাম্বলডোরের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো।

অবশ্যই, ডাম্বলডোর বললেন। তুমি আমাকে সাহায্য করার যোগ্যতা অর্জন করেছো হ্যারি।

হ্যারির বুকের ভেতরটা হাপরের মতো ধড়াস ধড়াস করতে লাগলো। সংযত হয়ে বললো–স্যার ভোল্ডেমর্ট কি জানেন যে তার লুকিয়ে রাখা হরক্রাকসের আমরা এক একটা করে বিনাশ করছি? হ্যারির চোখ তখন পোর্ট্রেটের দিকে ছিলো না। ও এখন কাউকে পরোয়া করে না।

হ্যারি তুমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছে। আসলে ও নানা রকম অশুভ কাজকর্ম করে চলেছে এখন ওর ধ্যানজ্ঞান হরক্রাকসের ওপর নেই। মনে হয় ছটি বিনাশ করার পর সাত নম্বর… যা ওর জীর্ণ শরীরের মধ্যে রয়েছে সেটা যখন আমরা বিনাশ করতে যাবো তখন ওর হুশ হবে। যেমন ধরো ডায়রি ধ্বংস… লুসিয়াস ম্যালফয় না বললে ও জানতেই পারতো না। ভোল্ডেমর্ট ডায়রি ধ্বংস ও তার একটি আত্মার টুকরো বিনাশের খবর শুনে অসম্ভব ক্রুদ্ধ হয়েছিলো…।

কিন্তু স্যার ভোল্ডেমর্ট নিজেই তো ম্যালফয়কে সেটা হোগার্টসে গোপনে নিয়ে আসতে বলেছিলেন অবশ্যই। তবে ভোর্টে তখন নিশ্চিত ছিলো যে সে আরো অনেক হরক্রাকস তৈরি করতে সমর্থ হবে। তাছাড়া লুসিয়াসকে নিয়ে আসা ছাড়া ডায়রিটা কি করবে কিছুই বলেনি। শুধু ডায়রিটা ওর কাছে সযত্নে রাখার আদেশ দিয়ে ভোল্ডেমর্ট উধাও হয়ে গিয়েছিলো। ভেবেছিলো লুসিয়াস ডায়রিটা তার প্রহরায় রাখবে কারণ সে তাকে ভীষণভাবে ভয় করে। ওদিকে লুসিয়াস মনে করেছিলো ভোল্ডেমর্ট বেঁচে নেই। অবশ্যই লুসিয়াস জানতো না ডায়রির মধ্যে কি গোপন করা আছে। আমার ধারণা ভোল্ডেমর্ট, লুসিয়াসকে বলেছিলো, ডায়রিটাতে চেম্বার অফ সিক্রেটসের দরজা খোলার যাদু আছে। লুসিয়াস যদি জানতে ওটার মধ্যে তার প্রভুর আত্মার একটি টুকরো রাখা আছে, তাহলে অবশ্যই সেটাকে খুবই ভালোভাবে রাখতো। দুঃখের বিষয় ও আর্থার উইসলির মেয়ের ওপর ডায়রির দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে নিজের পরিকল্পনা সফল করতে চেয়েছিলে–ও আশা করেছিলো আর্থারকে লাঞ্ছিত করতে সফল হবে এবং আমাকেও হোগার্টস থেকে তাড়াতে পারবে। হায়রে, লুসিয়াস তুমি তোমার স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ডায়রিটার কোনো গুরুত্ব দাওনি? ঘটনাটি ভোল্ডেমর্ট জানার পর, তুমি অবশ্যই জানো গত বছর মিনিস্ট্রিতে কলঙ্কময় ঘটনার বিষয়ে। বেচারা হয়তো এখন আজকাবানে থাকতেই নিজেকে নিরাপদ মনে করবে।

হ্যারি তন্ময় হয়ে কিছু চিন্তা করে বললো, তাহলে সমস্ত হরক্রাকসের বিনাশের পর ভোল্ডেমর্টকে হত্যা করা যাবে?

হ্যাঁ, তবে ওর দেহের মধ্যে যেটা রয়েছে সেটাও বিনাশ করতে হবে। ওটা না করলে ভোল্ডেমর্ট বেঁচে থাকবে, তবে মাত্র একটি আত্মার টুকরো নিয়ে। যদিও সে অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত আত্মার টুকরো নিয়ে বেঁচে আছে, তারপরও তার মগজ এবং যাদুশক্তি অটুট রয়েছে। ভোল্টমর্টের মত যাদুকরকে ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজন, অসাধারণ দক্ষতার, এমনকি তার হরক্রাকসের কথা বাদ দিলেও।

হ্যারি বললো–আমার মধ্যে তো সার অসাধারণ নেই।

কে বলে নেই, তোমার আছে। তোমার মধ্যে যে প্রবল শক্তি অন্তর্নিহিত আছে তা ভোমের্টের নেই। একমাত্র তুমি ওর বিনাশ করতে সক্ষম।

আমি জানি সেই ক্ষমতা মানুষকে ঘৃণা করা নয়…।

ভালোবাসা। আমি সকলের শুভ কামনা করি, সকলকে ভালোবাসতে পারি…।

 জানি হ্যারি, তুমি ভালোবাসতে পারো। ডাম্বলডোর আরো বললেন, হ্যারি তোমায় ঈশ্বর সর্বশক্তি দিয়ে অশুভকে বিনাশ করতে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তুমি এখন অনেক ছোটো তাই হয়তো বুঝবে না যে তুমি কত অসাধারণ।

তাহলে প্রফিসি যখন বলে, আমার ভেতর যে শক্তি আছে তা ডার্কলর্ডের ধারণার বাইরে, তার মানে ভালোবাসা? হ্যারি অস্ফুট স্বরে জানতে চাইলো।

হা প্রকৃত ভালোবাসা, ডাম্বলডোর বললেন। কিন্তু হ্যারি, প্রফিসি যা বলেছে। তা ভোল্টেমর্টের কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে তোমাকে বলেছিলাম, ভোল্ডেমর্ট তোমাকে একজন ভয়ঙ্কর মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এটা করে, সে তোমাকে সেই ব্যক্তিতে পরিণত করে, একমাত্র যে তার বিপদ ডেকে আনতে পারে।

একই কথা দাঁড়ায়।

তা নয়, ডাম্বলডোর অস্থিরভাবে বললেন। হ্যারির দিকে তার পোড়া কালো হাতটা প্রসারিত করে বললেন, প্রফিসিকে তুমি খুব বেশি মূল্যবান করে তুলছে।

কিন্তু, হ্যারি তোতলাতে তোতলাতে বললো। কিন্তু আপনিই তো প্রফিসি বিষয়ে বলেছিলেন…।

যদি ভোল্ডেমর্ট কখনো প্রফিসি সম্বন্ধে কিছু জানতে না পারতো… তাহলে কি এটার কোন উদ্দেশ্য সাধিত হতো? বা এটার কোনো অর্থ দাঁড়াতো? নিশ্চয়ই নয়। তুমি কি মনে করো হল অফ প্রফিসিতে প্রতিটি প্রফিসির ভবিষ্যদ্বাণীই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। নিশ্চয়ই নয়!

কিন্তু! হ্যারি ভ্যাবাচাকা হয়ে বললো। কিন্তু গত বছরেই তো আপনি বলেছিলেন, আমরা যে কেউ একজন আরেকজনকে হত্যা করবো।

হ্যারি, হ্যারি, কারণ প্রফেসর ট্রিলনীর কথা শুনে ভোল্ডেমর্ট দারুণ একটা ভুল করেছিলো… যদি তোমার বাবাকে হত্যা না করতো তাহলে তোমার মধ্যে প্রতিশোধ নেবার তীব্র ইচ্ছা ও সঞ্চারিত করতে পারতো? অবশ্যই না! সে যদি তোমার জন্য তোমার মাকে নিহত হতে বাধ্য না করতো, তাহলে তোমার মাকি তোমাকে এমন যাদু নিরাপত্তা দিতেন যা ভোল্ডেমর্ট ভাঙ্গতে পারেননা। নিশ্চয়ই নয়, হ্যারি। দেখ কিভাবে সকল অত্যাচারী শাসকদের মতো নিজেই শত্রু তৈরি করেছে ভোল্ডেমর্ট। তুমি তো জানো প্রতিটি অত্যাচারী শাসক যাদের তারা অত্যাচার করে তাদের কতোটা ভয় পায়? তারা জানে এমন একদিন আসবে যখন তাদের মধ্যে এমন কেউ মাথা তুলে দাঁড়াবে, যে অত্যাচারীকে পাল্টা আঘাত হানবে। ভোল্ডেমর্টও তার বাইরে নয়। তাই সব সময় খুঁজে বেড়াচ্ছে তার দ্বারা নির্যাতিতদের মধ্যে কে তাকে প্রতিরোধ করার শক্তি রাখে। সে প্রফিসির ভবিষ্যদ্বাণী শুনেছিলো, এবং সাথে সাথেই কাজে নেমে পড়েছে। ফলে, কে তাকে খতম করতে পারে সে শুধু চিহ্নিতই করেনি, বরং একটি মারাত্মক অস্ত্র সেই লোকটির হাতে তুলে দিয়েছে।

কিন্তু!

তোমাকে যা বলছি তা বোঝার বিশেষ প্রয়োজন আছে। ডাম্বলডোর বললেন। কথাটা বলে ঘরময় পায়চারী করতে লাগলেন, তার লম্বা আলখেল্লাটা হাঁটার সময় মাটিতে লুটোতে লাগলো ঝাড়ু দেবার মতো। হ্যারি এর আগে তার প্রিয় হেডমাস্টারকে এতোটা উত্তেজিত হতে দেখেনি। তোমাকে হত্যা করার চেষ্টা করে, ভোল্ডেমর্ট নিজেই সেই অসাধারণ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মানুষটিকে চিহ্নিত করেছিলো এখন সে মানুষটি আমার সামনে বসে রয়েছে এবং কর্তব্য সাধনের জন্য তার হাতে মারাত্মক অস্ত্রটি দিয়েছে। ভোল্ডেমর্ট নিজেই এ বিষয়ে দায়ী যে তারই কারণে তুমি তার চিন্তা বুঝতে পারো–তার লক্ষ্য এমন কি তার সাপের ভাষা। তুমি ভোল্টেমর্টের অন্তর্জগত জানার সুযোগের কারণে ডার্ক আর্টস তোমাকে কোনো আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারেনি। কখনো না, ভোমের্টের দলে যোগ দেওয়ার আগ্রহও তোমার কখনো হয়নি।

 নিশ্চয়ই নয়, হ্যারি বললো। ও আমার শত্রু, ও আমার বাবা-মাকে হত্যা করেছে।

ভালবাসার শক্তি ও ক্ষমতার প্রভাবে তুমি সুরক্ষিত। ভোল্টেমর্টের মতো ক্ষমতালোভী মানুষের বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করার রক্ষা কবচ হচ্ছে ভালোবাসা। শত প্রলোভনেও তুমি বিচ্যুত হওনি এবং তা জয় করেছে, শত দুঃখ, মর্মবেদনার মধ্যেও–তুমি শিশু অবস্থায় যেমন নির্মল হৃদয়ের ছিলে আজও তেমনটি রয়েছে। তুমি আয়নার সামনে দাঁড়ালে তোমার অন্তরের ইচ্ছা প্রতিবিম্বিত হবে এবং সেটাই ভোল্ডেমর্টকে ব্যর্থ করবে, এবং সে পথ ধনীদের অমরত্বের নয়। হ্যারি, তুমি কি বলতে পারো কজন জাদুকর আয়নার দিকে তাকিয়ে যা তুমি অবলোকন করছে তা পায়? মূর্খ ভোল্ডেমর্ট জানে না কার সঙ্গে ও মোকাবিলা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইছে।

ভোল্ডেমর্ট খুব ভালো করেই উপলব্ধি করতে পেরেছে, তুমি ভোল্টেমর্টের মনের মধ্যে গেঁথে আছো নিজের কোনো ক্ষতি না করে, ও তোমাকে প্রাণঘাতী নিদারুণ যন্ত্রণা দেয়া ছাড়া জয় করতে পারবে না। মিনিস্ট্রি থেকে সেটা ভালোভাবেই সে জেনেছে। হ্যারি একটা কথা আমি বুঝতে পারি না তার নিজ আত্মাকে খণ্ডিত করতে কেন এতো অস্থির হয়েছিলো সে। কেন সে বোঝার চেষ্টা করেনি কলুষিত নয় এবং সম্পূর্ণ আত্মারই আছে অতুলনীয় শক্তি।

কিন্তু স্যার, হ্যারি বললো। তাহলে বিষয়টি একই দাঁড়ালো। ওকে হত্যা করতে হবে আমাকে, বা হত্যা করতে হবে। ডাম্বলডোর বললেন, অবশ্যই ওকে তোমার বিনাশ করতে হবে, কিন্তু প্রফিসির ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপ্রেক্ষিতে নয়। কারণ একটাই, তাকে বিনাশ করতে পারলে তুমি কখনই কোনো দিনও শান্ত থাকতে পারবে না। ধরে নাও, তুমি প্রফিসির বাণী শোননি, তাহলে এখন তোমার ভোল্ডেমর্ট সম্পর্কে কি রকম অনুভূতি হবে? হ্যারি মাথা থেকে প্রফিসি নির্বাসিত করে ভেবে দেখ।

হ্যারি দেখলো ডাম্বলডোর উত্তেজিত হয়ে সারাঘরে পায়চারি করছেন, চিন্তা করতে লাগলো ওর মা-বাবা সিরিয়াস আর ডিগরির কথা। ভোল্ডেমর্ট আজ পর্যন্ত যে সমস্ত ঘৃণ্য অপরাধ করেছে তারই কথা। দারুণ এক অগ্নিশিখা ওর বুকের মধ্য থেকে বেরিয়ে এসে গলা উত্তপ্ত করতে লাগলো।

আমি ওর বিনাশ চাই। হ্যারি ধীর স্থির শান্তভাবে বললো। আমি ওকে বিনাশ করা পর্যন্ত বসে থাকবো না, করবই করবো।

অবশ্যই, অবশ্যই তুমি পারবে, ডাম্বলডোর উচ্চকণ্ঠে বললেন। তুমি মনে রাখবে প্রফিসি তোমাকে কি করতে হবে বলে দেয়নি। কিন্তু অপরদিকে প্রফিসি ভোল্ডেমর্টকে তোমার বিরুদ্ধে যাওয়ার চিন্তা করার কারণ ঘটিয়েছে। তুমি তোমার পথ স্বাধীনভাবে বেছে নিতে পারো, প্রফিসির কথা নাও মানতে পারো। কিন্তু তোমাকে ভোল্ডেমর্ট সর্বদা তাড়া করে বেড়াবে এবং সেটাই হবে স্বাভাবিক ও সত্য, যা…।

হ্যাঁ… আমাদের দুজনেরই লক্ষ্য একে অপরের বিনাশ করা, হ্যারি বললো।

এতোদিনে ডাম্বলডোর সত্যি কি চান হ্যারি পরিষ্কার বুঝতে পারলো। এটা হলো, মৃত্যু থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য লড়াইয়ের মাঠে নামতে বাধ্য হওয়া

মাথা উঁচু করে লড়াইয়ের মাঠে শত্রুকে ঘায়েল করার জন্য যাওয়ার পার্থক্য। কেউ কেউ বলবে হয়তো, এই দুটোর মধ্যে কোনটাই গ্রহণীয় নয়, কিন্তু ডাম্বলডোর জানে, আমিও জানি প্রচণ্ড গর্বে ভাবলো হ্যারি, আমার মা-বাবাও জানতেন এরকম নানা মতকে নিয়েই পৃথিবী।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *