২১. দ্য আনোয়েবল রুম

২১. দ্য আনোয়েবল রুম

তারি পরের সপ্তাহে স্লাগহর্নের কাছ থেকে মেমরিটা সংগ্রহ করতে নানা চিন্তা

ভাবনা করেও কোনো পথ পেল না। ব্যর্থ হয়ে ও প্রিন্সের পোশান বুকের মার্জিনে লেখা থেকে যদি কিছু উপায় পায়, সে চেষ্টা করতে লাগলো। এর আগেও যে অনেকবার চেষ্টা করেনি তা নয়। এখন কি করা যায়, অনেক ভেবেও কোন সুরাহা করতে পারলো না।

রোববার সন্ধ্যার পর হারমিওন হ্যারিকে বললো, বৃথা চেষ্টা করছে… আসলে তুমি ওই বইতে এ বিষয়ে কিছুই পাবে না।

হ্যারি হারমিওনের কথায় কান না দিয়ে বইটার মার্জিনের লেখাগুলো বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়তে লাগলো। একটু আগে বইটাতে কৌতূহল জাগানো শব্দ শত্রুদের জন্য লেখার পাশে খুবই হিজিবিজি করে লেখা একটি জাদুমন্ত্র সেকটাম সেমল পেয়েছে। হারমিওনকে কিছু না বলে সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্য সেই পাতাটার একটা কোণা মুড়ে রাখলো।

ওরা কমনরুমের আগুনের ধারে বসেছিলো, ওদের কাছাকাছি ওদের ক্লাসের ছেলেমেয়েরাও ছিলো। একটু আগে ডিনার শেষ করে নোটিশ বোর্ডে অ্যাপারেসন টেস্টের দিনক্ষণ দেখে ওরা বেশ উত্তেজিত। নোটিশে যাদের বয়স প্রথম টেস্টের দিন ২১ এপ্রিল অথবা তারপরে সতের বছর হবে, তাদের অতিরিক্ত প্র্যাকটিস সেশনের জন্য দরখাস্ত করার অপসন দেওয়া হয়েছে। তার মানে, অতিরিক্ত অ্যাপারেসন টেস্টে তারা ইচ্ছে করলে অংশ নিতে পারে। সেই টেস্ট হবে। (অতিমাত্রায় সুপারভাইজে) হগসমিডে।

রন নোটিশটা পড়ার পর খুবই আতঙ্কিত। কারণ এখনো পর্যন্ত ও অ্যাপারেট করা আয়ত্বে আনতে পারেনি। ওদিকে হারমিওন দুবার অ্যাপারেসন করে মোটামুটি সফল হয়েছে, তাই আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। হ্যারির তখনো সতের বছর বয়স হতে চারমাস বাকি, তাই টেস্ট দিতে চাইলেও দিতে পারবে না।

রনের মনে চাপা উত্তেজনা। ও হ্যারিকে বললো, তোমার ইতোমধ্যে অ্যাপারেট করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। আগামী জুলাই মাসে যখন তোমার অ্যাপারেট করার বয়স হবে তখন আবার তুমি করতে পারবে।

আমিতো একবার মাত্র করেছি, হ্যারি ওকে মনে করিয়ে দিলো গত লেসনে ও অদৃশ্য হতে আর হুপের ভেতর ঠিক মতো যেতে সক্ষম হয়েছিলো।

অ্যাপারেশন নিয়ে অনেক দুর্ভাবনা করে সময় নষ্ট করার পর স্নেইপের দেওয়া কঠিন হোমওয়ার্ক শেষ করতে উঠে-পড়ে লেগে গেলো হ্যারি। হারমিওনের সেই কাজ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। হ্যারি জানে স্নেইপ ওকে কম মার্ক দেবেন কারণ ডিমেন্টরদের কেমনভাবে সামলাবে সেই ব্যাপারে ও স্নেইপের সঙ্গে একমত নয়। তার জন্য হ্যারি মোটেই চিন্তিত নয়। ওর কাছে এখন স্লাগহর্নের মেমরি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডাম্বলডোরের প্রদত্ত কাজ ও ফেলে রাখতে পারছে না, যেমন করেই হোক স্লাগহর্নের কাছ থেকে পেতে হবেই হবে।

আমি বলছি শোনো, তোমার ওই স্টুপিড প্রিন্সের বইতে তুমি কিছুই পাবে না হ্যারি, অরণ্যে রোদন করছো, হারমিওন বললো। তুমি কাউকে যদি কিছু জানাতে, বলাতে বাধ্য করো, সেটা সম্পূর্ণ বেআইনী ইমপেরিয়স কার্সের সমতুল্য হবে বুঝলে? হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি খুব ভালো করেই সেটা জানি, ধন্যবাদ, হ্যারি বই থেকে মুখ না তুলে হারমিওনকে বললো। সেই জন্যই তো আমি অন্য কিছু খোজ করছি। ভেরিটাসেরাস কাজ করবে না, ডাম্বলডোর খুব স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন। তার বদলে অন্য কিছু, পোশান অথবা স্পেল!

তুমি কিন্তু ভুলপথে চলছে হ্যারি, হারমিওন বললো। মনে রেখো ডাম্বলডোর বলেছেন, মেমরিটা পেতে পারো একমাত্র স্লাগহর্নের কাছ থেকে, অন্য কারো কাছ থেকে পাওয়া অসম্ভব। একটা পোশান প্রয়োগ করে তাকে ঘুম পাড়িয়ে যদি পাওয়া সম্ভব হতো, তাহলে যে কেউ সেটা করতে পারে।

আচ্ছা তুমি কেমন করে বেলি-জারেন্ট বানান লেখো? রন ওর পার্চমেন্টের ওপর লেখার কুইলটা চেপে ধরে বললো। কিছুতেই BU-M হতে পারে না।

হারমিওন রনের খাতাটা টেনে নিয়ে বললো, না নয়। এবং অগুরি কখনো 0-R-G হতে পারে না। তুমি কি ধরনের কুইল ব্যবহার করছো বলতো?

কুইল? ফ্রেড আর জর্জের স্পেল চেকিংর কুইলের জাদু শক্তি নিশ্চয়ই একটু একটু করে কমে আসছে।

অবশ্যই কমে আসবে, হারমিওন ওর প্রবন্ধের শিরোনামে হাত দেখিয়ে বললো। কারণ আমাদের লিখতে বলা হয়েছে ডিমেন্টরদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবো। ডাগবমস নয়। আমার জানা ছিল না তুমি তোমার নাম বদলে রুনীল ওয়াজলিব বা ওইরকম কিছু একটা লিখেছো।

আরে না না! রন বললো, পার্চমেন্টের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে।

বলো না, আমাকে তাহলে পুরো জিনিসটা আগাগোড়া নতুন করে লিখতে হবে।

ঠিক আছে, আমরা এখনি ঠিক করতে পারি, হারমিওন বললো প্রবন্ধটা ওর দিকে টেনে নিয়ে, তারপর জাদুদণ্ড বার করলো।

আমি তোমাকে ভালোবাসি হারমিওন, রন বললো ওর চেয়ারে ক্লান্তভাবে বসে চোখ রগড়াতে রগড়াতে।

হারমিওনের রনের কথাটা শুনে গালটা সামান্য গোলাপি হয়ে গেলো, শুধু বললো, বলো না, ল্যাভেন্ডার শুনতে পেলে…!

বলবো না, রন চোখ রগড়াতে রগড়াতে দুই হাতের মধ্যখান থেকে কথাটা বললো। বা আমি বলবো শুনতে পেলে আমাকে ছেড়ে যাবে।

তুমি যদি সত্যি সত্যিই সম্পর্ক শেষ করতে চাও, তো ওকে ছাড়ো না কেন? হ্যারি রনকে বললো।

তুমি কি কখনো কাউকে ধোঁকা দিয়েছো? রন বললো। যেমন ধরো চো আর তুমি?

মানে, ছেড়ে দেওয়া, ওই রকম কিছু, হ্যারি বললো।

কামনা করি এই রকম যেনো আমার আর ল্যাভেন্ডারের মধ্যে হয়। রন বললো, হারমিওনকে লক্ষ্য করে। হারমিওন কোনো কথা না বলে তার দণ্ডের গোড়া দিয়ে রনের লেখায় বানান সংশোধন করছিলো। যতোই আমি যতই ওকে ছাড়তে চাই, ততোই ও আমাকে জোরে চেপে ধরে, অনেক প্রকাণ্ড সমুদ্রের মাছের মতো।

রনের প্রবন্ধটা আগাগোড়া দেখে যা কিছু শুদ্ধ করার করে ওর হাতে ফেরত দিয়ে বললো, এই নাও তোমার লেখা।

অসংখ্য ধন্যবাদ, রন বললো। উপসংহারটা লেখার জন্য তোমার কুইলটা দেবে?

রন আর হারমিওনের কথাবার্তা কিছুই এখন হ্যারির কানে ঢুকছে না। ওর মাথায় শুধু স্লাগহর্নের মেমরি আর হাফরাড প্রিন্সের বইয়ের মার্জিনে হিজিবিজি নোটের মর্ম উদ্ধারের চেষ্টা। হঠাৎ কমনরুমে কারো কোনোও কথা কানে না আসাতে তাকিয়ে দেখলো কমনরুমে ওরা তিনজন বসে রয়েছে। সিমাস কখন যে ঘর ছেড়ে চলে গেছে জানে না। নিস্তব্ধ ঘর… শব্দ শুধু ফায়ার প্রেসের কাঠ পোড়ার সময়, ফট ফট শব্দ! রন হারমিওনের কুইল দিয়ে ডিমেন্টরদের বিষয়ে ওর উপসংহারের শেষ প্যারাগ্রাফ নিবিষ্ট মনে লিখে চলেছে। হ্যারি চারদিকে তাকিয়ে হাফ ব্লাড প্রিন্সের বইটা বন্ধ করে বড় করে একটা হাই তুললো তখন শব্দটা শুনতে পেলো

ক্রাক!

হারমিওন হঠাৎ সেই শব্দটা শুনে সামান্য আঁতকে উঠলো, রনের হাত লেগে কালির দোয়াত উল্টে প্রবন্ধের ওপর পড়লো। হ্যারি মুখ তুলে বললো, ক্রেচার।

হাউজ এলফ ক্রেচার নত হয়ে ওর মালিক হ্যারিকে বিনয়ের সঙ্গে জানালো, মাস্টার আপনি বলেছিলেন ম্যালফয় প্রতিদিন কোথায় যায় না যায় জানাতে, ক্রেচার সে খবর দিতে এসেছে।

ক্রাক।

ডব্বি ক্রেচারের পাশে এসে দাঁড়ালো। ওর টিকেজির মতো মাথার টুপি তেরছাভাবে ঢলে পড়েছে।

ডব্বিও ওকে সব-সময় সাহায্য করেছে, হ্যারি পটার! কথাটা বলে রাগতঃ দৃষ্টিতে ক্রেচারের দিকে তাকালো। ক্রেচারের কিন্তু ডব্বিকে বলা উচিত ছিলো কখন সে হ্যারিপটারের সঙ্গে দেখা করতে আসছে। তাহলে দুজনে মিলে রিপোর্টটা দেওয়া যেতো!

ব্যাপারটা কি বলতো? হারমিওন বললো। ওর মুখে আচমকা ক্রাক শব্দ শুনে আর ওই দুই গৃহ ডাইনির আগমন মুখে আতঙ্কের ছাপ। কিসব কাণ্ড কারখানা চলছে হ্যারি?

হ্যারি জবাব দেবার আগে একটু থামলো। ও আগে হারমিওনকে ডব্বি আর ক্রেচারের ম্যালফয়ের পিছু নেবার বিষয়টি বলেনি। হারমিওনের কাছে ব্যাপারটা খুবই অপছন্দের গোড়া থেকেই।

এমন কিছু নয়, ওদের ম্যালফয় সম্পর্কে খবরাখবর নিতে বলেছিলাম, হ্যারি বললো।

ক্রেচার কাঁক কাঁক করে বললো, সারা দিন রাত।

ডব্বি সাতদিন ঘুমোয়নি হ্যারি পটার! ডব্বি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানে দুলতে দুলতে গর্বের সঙ্গে জানালো।

হারমিওন বিরক্তিভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ডব্বি তুমি সাতদিন সাতরাত ঘুমোওনি? হ্যারি তুমি ওদের এইরকম বলেছিলে?

না না তাই বলতে যাবো কেন, হ্যারি লজ্জা পেলো। ডব্বি তুমি ঘুমোতে যাও, আমি তো তোমায় না ঘুমিয়ে কাজ করতে বলিনি। যাকগে তোমরা কি কিছু খবর সংগ্রহ করতে পেরেছো? হারমিওন কিছু জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলো, তার আগেই হ্যারি ওদের জিজ্ঞেস করলো।

মাস্টার ম্যালফয় এমনভাবে তাকায়, এমনভাবে কথা বলে যেনো তিনি ছাড়া সকলেই হেয়, তার চেয়ে বড় আর কেউ নেই, ক্রেচার দুঃখ ভরা গলায় বললো। দেখতে ওর মায়ের মতো হলেও চালচলন কথাবার্তা…।

ড্র্যাকো ম্যালফয় খুব খারাপ ছেলে! ডব্বি রেগে মেগে বললো। ভীষণ, ভীষণ দুষ্ট… ও… ও…।

ডব্বি কাঁপতে কাঁপতে কথাগুলো বলতে বলতে থেমে গেলো। রাগে ওর মাথার টুপি থেকে পায়ের মোজা পর্যন্ত কাঁপতে লাগলো। এমন সময় দৌড়াতে দৌড়াতে ফায়ার প্লেসের কাছে দাঁড়ালো, যেনো আগুনে ঝাঁপ দেবে।

হ্যারি ওকে আগে থেকেই জানে, দারুণ অভিমান ওর, তাই ওকে শক্ত করে ধরে ফেললো। ডব্বি হাত-পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে শান্ত হয়ে গেলো।

ধন্যবাদ, হ্যারিপটার, ডব্বি ও ঝুলে পড়া টিকুজির মতো টুপি ঠিক করতে করতে উত্তেজিত হয়ে ক্রেচারকে বললো ক্রেচার কেনো জানে না যে ড্রেকো ম্যালফয় ভালো মাস্টার নয়, সে আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করে।

হ্যারি ক্রেচারকে বললো, শোনো ক্রেচার, তুমি ম্যালফয়কে কতখানি ভালবাসো এসব তো জানতে চাইনি আমি। আমি যে কাজ তোমাকে করতে বলেছি সেটা করেছে কি না?

ক্রেচার হ্যারির কথা শুনে মাথাটা নিচু করে থাকলেও খুব রেগে গেলো। বললো, মাস্টার ম্যালফয় গ্রেট হলে খাওয়া দাওয়া করে, ডরমেটরির অন্ধকার ঘরে ঘুমোয়, মাঝে মাঝে স্কুলের ক্লাসে যায়।

ডব্বি এবারে তুমি বলো, ক্রেচারকে থামিয়ে দিয়ে ডব্বিকে বললো হ্যারি। ও কি যেখানে যাওয়া উচিত নয় সেখানে যায়?

হ্যারি পটার স্যার, ডব্বি বলতে বলতে ওর বড় বড় গোলাকার চোখ দুটো আগুনের গোলার মতো জ্বলতে লাগলো। ওই ম্যালফয় ছেলেটি কোনো অন্যায় বেআইনী কাজ করছে বলে ডব্বি দেখেনি, তবে লক্ষ্য করেছে যে সে সব সময় যাতে ধরা না পড়ে সেইভাবে চলাফেরা করছে। রোজ একদল নানা রকমের ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে আটতলায় যায়, ও যখন ঘরে ঢোকে তখন ওরা পাহারা দেয়।

হ্যারি অ্যাডভান্সড পোশান মেকিং বইটা কপালে সজোরে ঠুকে বললো, দ্য রুম অব রিকোয়ারমেন্ট। হারমিওন আর রন হতভম্ব হয়ে হ্যারির দিকে তাকালো। ওই ঘরেই গিয়ে কাজকর্ম করে। ও সেখানে কি কাজ করে। তাই তো আমি ওকে দেখতে পাই না। রুম অফ রিকোয়ারমেন্ট আমি আজ পর্যন্ত ম্যাপে দেখিনি।

রন বললো, তুমি ঠিকই বলেছো ম্যাপ জানে না। আমার মনে হয় এটা ম্যাজিক রুমের একটা অংশ, হারমিওন বললো।

ডব্বি, তুমি ওই ঘরটার মধ্যে ঢুকে দেখেছো ম্যালফয় ওখানে কি করে? হ্যারি ব্যাগ্র হয়ে ডব্বিকে জিজ্ঞেস করলো।

না, হ্যারি পটার। ওখানে ঢোকা একেবারেই সম্ভব নয়, ডব্বি বললো।

আমি জানি সম্ভব নয়, হ্যারি তৎক্ষণাৎ বললো। গত বছর কিন্তু ম্যালফয় আমাদের হেড কোয়ার্টারে ঢুকেছিলো ঠিক আছে? আমিও ম্যাজিক রুমের সেই ঘরটায় যাবোই যাবো… জানতে হবে ওখানে ও কি করে। কোনো অসুবিধে নেই।

আমার মনে হয় তুমি পারবে না হ্যারি, হারমিওন চাপা গলায় বললো। ম্যালফয় কিন্তু জানতে পেরেছিলো ওই ঘরে আমরা কি করি–তাই না?

গদর্ভ মেরিয়েটা আমাদের সব গোপন ব্যাপার ফাস করে দিয়েছিলো। ডিএর হেডকোয়ার্টার করার জন্য ঘরটার তার দরকার পড়েছিলো–ও তাই করেছিলো। কিন্তু তুমি তো জানো না ম্যালফয় সেই ঘরে গিয়ে কি করে, তাহলে সেই ঘরটা নিয়ে তুমি কি হিসেবে ব্যবহার করবে তাতো তুমি জানো না।

ঠিক আছে একটা পথ বের করতে হবে, হ্যারি আর বেশি কিছু বলতে চাইলো। যাকগে, ডব্বি তুমি কিন্তু আমার অনেক কাজ করেছে।

বাহ বেশ বলেছে, ক্রেচারও তো তোমার অনেক কাজ করেছে, হারমিওন দরদভরা কণ্ঠে বললো। কিন্তু ক্রেচার হারমিওনের দিকে একবারও তাকালো না। জ্বলন্ত দৃষ্টিতে গলায় অদ্ভুত এক শব্দ করে ঘরের কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে রইলো। বললো, মাড-ব্লাড ক্রেচারের সঙ্গে কথা বলছে, ক্রেচার ভাব দেখাবে ওর কথা না শোনার…,

বেরিয়ে যাও, বেরিয়ে যাও এখান থেকে, হ্যারি ক্রেচারকে ধমকে বললো। ক্রেচার ওর মাথাটা সামান্য নামিয়ে উধাও হয়ে গেলো। ডব্বি সাতদিন তুমি ঘুমোওনি, এবারে তুমি যাও, ঘরে গিয়ে ঘুমোও কেমন।

ধন্যবাদ আপনাকে হ্যারি পটার, স্যার। ডব্বি চি চি করে কথাটা বলে মনের আনন্দে চলে গেলো ক্রেচারের মতো।

ক্রেচার আর ডব্বি চলে গেলে হ্যারি খুশিতে ডগমগ হয়ে বললো, যাকগে অনেক কিছু জানা গেলো। তারপর রন আর হারমিওনের দিকে ফিরে বললো, ম্যালফয় কোথায় যায় জানতে পারলাম, এখন ওকে আমাদের পাকড়াও করতে হবে!

রন তখন খুব ব্যস্ত। ওর লেখা প্রবন্ধের ওপর কালি পড়ে গিয়ে প্রায় সবটাই নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো কেমন করে ঠিক করা যায় ভাবছে। হারমিওন ওর কাছে গিয়ে ম্যাজিক ওয়ান্ড দিয়ে কালি শুষে নিলো। হ্যারির কথা শুনে রন বললো, হু সত্যি ওরা দারুণ কাজ করেছে।

হারমিওন বললো, নানা রকম ছাত্ররা ওর ওখানে যাচ্ছে, তাদের নিয়ে সে কি গোপনীয় কিছু করতে পারে? গোপনীয় কাজ করতে গেলে এত লোক নিয়ে নিশ্চয়ই করা যায় না, সকলে তার বিশ্বাসের পাত্র হতে পারে না।

হ্যাঁ তাই হবে, হ্যারি বললো ভুরু কুঁচকে। ক্রাবেকে সেদিন ম্যালফয় বলেছিলো ও কি করছে, কি না করছে ক্রাবের জানার প্রয়োজন নেই… এসব অনেক কথা।

হ্যারি কথা বলতে বলতে আগুনের দিকে তাকিয়ে রইলো। ঈশ্বর, আমাকে মুখ করে পাঠিয়েছেন, হ্যারি শান্ত স্বরে বললো। সত্যি না মিথ্যে বলছি? অন্ধকার পাতাল ঘরের পাশে বিরাট একটা রাসায়নিক দ্রব্যের আধার রাখার ঘর আছে, সেখানে ও ক্লাস লেসনের ফাঁকে ফাঁকে যেতে পারে, সেখানে গিয়ে কিছু করতে পারে।

কি করতে পারে? রন বললো।

কি আবার পলিজুস পোশান। স্লাগহর্ন প্রথমদিন আমাদের ক্লাসে এসে যে পলিজুস পোশান দেখিয়েছিলেন, তখন ও চুরি করেছিলো। অন্যান্যরা তো ম্যালফয়কে সে কাজে সাহায্য করেনি, সকল সময়ের মত সে সময়েও ক্রাবে আর গোয়েল ওকে সাহায্য করে, হ্যারি বললো। বলেই লাফিয়ে উঠে আস্তে আস্তে হেঁটে আগুনের সামনে দাঁড়ালো। এ সকল বোকারা ম্যালফয় যা বলে তা-ই করে, যদিও তারা জানে না, তারা কেন করছে… আর ও চায়না তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা রুম অব রিকোয়ারমেন্টের আশে-পাশে আছে এটা অন্যরা দেখুক, তাই পলিজুস খাইয়ে ওদের অন্যের চেহারায় রূপান্তর করা হয়। ওই সেদিন যে দুই মেয়ে ওর সাথে ঘুর ঘুর করছিলো… ক্রাবে আর গোয়েল। হা… হা হা।

তাহলে তুমি বলতে চাও, হারমিওন চাপা গলায় বললো, যে মেয়েটির… যার স্কেল আমি সারিয়ে দিয়েছিলাম?

অবশ্যই! হ্যারি জোরে জোরে বললো, কোনো সন্দেহ নেই যে সে সময় ম্যালফয় ঘরের মধ্যেই ছিলো, তো সেই মেয়েটি ওর হাতের স্কেল ফেলে দিয়ে ম্যালফয়কে সতর্ক করে দিয়েছিলো, ওকে তখন ঘর থেকে বাইরে না আসতে এবং বাইরে কেউ রয়েছে সেই সংকেত দিয়েছিলো। আর সেই মেয়েটি হাত থেকে ব্যাঙ-এর ছাতা ফেলে দিয়েছিলো, সেটাও ছিলো ম্যালফয়কে ঘরের বাইরে না আসার সংকেত। আমরা সব সময় ওর কাছাকাছি ঘুরছি, অথচ ও যে এত কাজ করে যাচ্ছে, এর কিছুই জানতে পারিনি।

দারুণ মজাতো ও ক্রাবে আর গোয়েলকে মেয়েতে রূপান্তরিত করেছিলো, রন অট্টহাস্য করে বললো। ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করুন… তাই ওদের আজকাল খুব বিমর্ষ দেখায়। প্রতিবাদও তো করে না।

না, তা করবে না… করলে, যদি ওর হাতের ডার্কমার্ক দেখায় ওদের, হ্যারি বললো।

হুম… কিন্তু আমরা জানি না ডাকমার্ক এখন আছে কি নেই, হারমিওন সন্দেহযুক্ত গলায় বললো, রনের কালি পড়ে শুকিয়ে যাওয়া প্রবন্ধের কাগজগুলো গোটাতে গোটাতে।

জানতে পারবো, হ্যারি নিশ্চিতভাবে বললো।

হ্যাঁ, আমাদের খবর তো নিতে হবেই, ও আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বললো। কিন্তু হ্যারি, আমার মনে হয় তুমি যত উপায়েই চেষ্টা করো না কেন, আমি এখনো কিন্তু মনে করি না ওখানে কি হচ্ছে না হচ্ছে ভালভাবে না জেনে রুম অফ রিকোয়ারমেন্টে তুমি ঢুকতে পারবে। তাছাড়া তুমি কিন্তু এখন স্লাগহর্নের মেমরি জোগাড়ে ব্যস্ত থাকবে। শুভরাত্রি।

হ্যারি হারমিওনের দিকে তাকিয়ে দেখল ও ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সামান্য অসন্তোষ মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলো। মেয়েদের ডরমেটরি বন্ধ হওয়ার শব্দ শুনে হ্যারি রনকে নিয়ে পড়লো।

হ্যাঁ, তোমার কি মনে হচ্ছে রন?

মনে হচ্ছে? মনে হচ্ছে তোমার ওই দুই গৃহ-ডাইনীর মতো আমি যদি উধাও হতে পারতাম। রন যেখান থেকে ডব্বি আর ক্রেচার ডিসঅ্যাপারেট করেছে সেদিক তাকিয়ে বললো।

হ্যারির সে রাতে ভালো করে ঘুম হলো না। মনের মধ্যে একই চিন্তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওকে জাগিয়ে রাখলো, ম্যালফয় রুম অফ রিকোয়ারমেন্ট কি কারণে ব্যবহার করছে, আর হ্যারি যদি কোনো উপায়ে সকালের দিকে সেই ঘরে ঢোকে সেখানে কি দেখতে পারে! হারমিওন যাই বলুক না কেন, ম্যালফয় যদি ডিএর হেডকোয়ার্টার্সে হ্যারি কী করছে দেখতে পাবে, তাহলে ওখানে ম্যালফয় কি করে তা হ্যারি কেনো দেখতে পাবে না…! সেখানে কি আছে, কি হয়? মিটিং-এর  জায়গা? লুকিয়ে থাকার জায়গা? একটা গুদামঘর, একটা ওয়ার্কশপ? হ্যারি সে সফল সম্ভাবনার কথা চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নেও সেসব দেখতে লাগলো, স্বপ্ন দেখতে দেখতে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যায়… ম্যালয়ের মুখটা মাঝে মাঝে স্লাগহর্ন নয়তো স্নেইপ হয়ে যায়।

পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে ভাবলো–ডিফেন্স এগেন্সট ডার্ক আর্টসের ক্লাসের আগে একঘণ্টা ফ্রি পিরিয়ড আছে, তখন রুম অফ রিকোয়ারমেন্টে ঢোকার চেষ্টা করলে কেমন হয়! হারমিওন অবশ্য সে বিষয়ে তেমন উৎসাহ দেখালো না। স্বভাবতই হ্যারি হারমিওনের আগ্রহ না দেখে ক্ষুব্ধ হলো। ওর ধারণা ছিলো আর কেউ না হোক, হারমিওন ওকে সাহায্য করবেই করবে।

হারমিওন সবেমাত্র পেঁচার নিয়ে আসা ডেইলি প্রফেট পড়ার জন্য পাতাটা চোখের সামনে ধরেছে তখন পেছনে দাঁড়ালো হ্যারি। ওকে কাগজ পড়তে বাধা দিয়ে বললো, শোনো, আমি স্লাগহর্নের মেমরির বিষয়টি ভুলে গেছি তা নয়, যতক্ষণ না ওনার মেমরিটা পাচ্ছি, যতক্ষণ না আমি ব্রেন ওয়েভে সেটা পাচ্ছি। ততক্ষণ সেই সময়টা কেন আমি ম্যালয়ের ব্যাপারে খোঁজখবর করবো না?

হারমিওন বললো, এক কথা তুমি আগেও বলছো হ্যারি। তোমাকে বলেছি, ওসব ছেড়ে সুস্লাগহর্নের পেছনে লেগে থাকো। তাকে বিশেষ নৈপুণ্য দেখানো (ট্রিকিং) অথবা মন্ত্রমুগ্ধ (বিউইচিং) করার ব্যাপার নয়। ওটা ডাম্বলডোর এক সেকেন্ডের মধ্যে করতে পারবেন। হারমিওন হ্যারির হাত থেকে কাগজটা এক ঝটকায় কেড়ে নিয়ে, পত্রিকা খুলে প্রথম পাতায় চোখ বুলোতে বুলোতে বললো, ওই রুম অফ রেকোয়ারমেন্টের আশেপাশে ঘুরে সময় নষ্ট না করে স্লাগহর্নের কাছে গিয়ে কাজ উদ্ধার করোগে।

যা কিছু করবে সাবধানে করবে। জানো তো মাভানগাস চুরির অপরাধে আজকাবান জেলে রয়েছে, হারমিওন কাগজ দেখতে দেখতে বললো। অকটাভিয়সকে পাওয়া যাচ্ছে না, ও হো হো কি সাংঘাতিক ব্যাপার! একটা নবছরের ছেলে তার পিতামহ-পিতামহিকে হত্যা চেষ্টার অপরাধে গ্রেফতার হয়েছে, সকলে মনে করে ওকে ইমপেরিয়াস কার্স করা হয়েছে।

ওরা নিঃশব্দে ওদের ব্রেকফাস্ট খাওয়া শেষ করলো। হারমিওন চলে গেল অ্যানসিয়েন্ট রুইনসে, রন কমনরুমে, হ্যারির তখনো বাকি আছে স্নেইপের ডিমেন্টরস বিষয়ে প্রবন্ধ লেখার। হ্যারি সোজা চলে গেলো একটা শূন্য প্যাসেজে ও চটপট অদৃশ্য হবার ক্লোকটা গায়ে চড়িয়ে নিলো। যখন ও ওর গন্তব্যে পৌঁছলো সেখানে কোনো জনপ্রাণী দেখতে পেলো না। হ্যারি ঠিক বুঝতে পারলো না ম্যালফয় সেই ঘরের মধ্যে থাকলে যাবে, নাকি না থাকলে যাবে। কিন্তু ক্রাবে আর গোয়েল যদি সেখানে ছোটো মেয়ের রূপ ধারণ করে থাকে তাহলে না যাওয়াই ভালো।

ও চোখ বন্ধ করলো যেখানে রুম অফ রিকোয়ারমেন্টস-এর দরজা লুকোনো আছে। ও জানে ওকে কি করতে হবে। গত বছর থেকেই এই ব্যাপারে খুবই অভিজ্ঞ। মনের সব শক্তি সঞ্চয় করে ও চিন্তা করলো আমি জানতে চাই, দেখতে চাই ম্যালফয় বন্ধ ঘরের মধ্যে কি করছে, আমি জানতে চাই, দেখতে চাই ম্যালফয় কি করছে… আমার প্রয়োজন আছে জানার ম্যালফয় এখানে কি করছে!

তিনবার ও সেই ঘরের সামনে হাঁটলো তারপর ওর বুকটা উত্তেজনায় ধড়ফড় করতে লাগলো, ও চোখ খুললো, সামনে তাকালো, কিন্তু দেখলো দরজাবিহীন লম্বা দেওয়াল। ও দেওয়ালের সামনে গিয়ে নড়ে কিনা দেখার জন্য মদু ধাক্কা দিলো। কিন্তু শক্ত পাথরের দেওয়াল যেমন ছিলো তেমনই রইলো, বিন্দুমাত্র সরলো না।

ঠিক আছে, হ্যারি জোরে জোরে বললো। ঠিক আছে… আমি বোধহয় ভুল করছি।

তারপর ও সামান্য সময় চিন্তা করে আবার চোখ বন্ধ করে মনে একাগ্রতা আনার চেষ্টা করলো, যতোটা সম্ভব। আকুল হৃদয়ে মনে মনে বললো, আমার প্রয়োজন আছে সেই জায়গাটা দেখার যেখানে ম্যালফয় গোপনে আসা-যাওয়া করে…।

তিনবার দেওয়ালের সামনে ও ঘোরাফেরা করলো, তারপর মনে আশা নিয়ে চোখ খুললো।

না, কোনো দরজা দেখতে পেলো না।

ওহ, দরজা খুলে যাও, হ্যারি একটু বিরক্ত হয়ে বললো। এমনই তো পরিষ্কার নির্দেশ ছিলো সুন্দর…! সেখান থেকে ফিরে আসার আগে আবারও গভীরভাবে কয়েক মিনিট মনঃসংযোগ করলো।

আমি চাই তুমি ড্রেকো ম্যালফয়কে যেমন জায়গা দিয়েছো তেমন আমার জন্য দাও।

কথাটা বলার পর ও সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুললো না, যেমন হাঁটছিলো তেমনইভাবে হাঁটতে লাগলো। তারপর ও যেন শুনতে পেলো ও খুব জোরে শুনতে পেলো দরজা খোলার ঘড় ঘড় শব্দ। কিন্তু একটু পরে আর কিছুই শুনতে পেলো না, শুনতে পেলো বাইরে পাখিদের কুঞ্জন। ও ধীরে ধীরে চোখ খুললো।

তখনো কোনো দরজা চোখে পড়লো না।

হ্যারি ঈশ্বরকে স্মরণ করলো। কখনো চেঁচালো। তারপর দেখতে পেলো হাঁসের মতো প্যাক প্যাক করতে করতে প্রথম বর্ষের কিছু ছেলে এককোণ থেকে ছুটে আসছে, ওদের মুখ দেখে মনে হয় একটা বীভৎস মুখের ভূত দেখেছে।

হ্যারি নানা সুরে নানা ভঙ্গিতে বলতে চেষ্টা করলো, আমি দেখতে চাই তোমার ঘরের ভেতরে ড্র্যাকো ম্যালফয় কি করছে… পুরো একটি ঘণ্টা ও কথাগুলো চিন্তা করলো। সবশেষে ও এই কথাটা মেনে নিলো যে ঘরটা সে চাইলেই খুলবে না। হতাশ ও বিরক্ত হয়ে ও ডিএ ক্লাসের দিকে চললো, অদৃশ্য হবার ক্লোকটা খুলে নিয়ে ব্যাগে ভরে নিলো।

আবার তুমি ক্লাসে দেরি করে এসেছে, স্নেইপ বললেন, বিরক্ত মেশানো কণ্ঠে। হ্যারি মোমবাতি জ্বালানো ক্লাসরুমে ঢুকলো। দশ পয়েন্ট কাটা গেলো গ্রিফিরদের।

হ্যারি রনের পাশে বসে স্নেইপের দিকে বিষাদপূর্ণ মুখভঙ্গি করে তাকালো। তখন ক্লাসের প্রায় অর্ধেক ছাত্ররা তাদের ব্যাগ থেকে খাতাপত্র বের করছে ও ক্লাসে ছাত্র ঠিকঠাক হয়ে বসছে। ক্লাসে সে যে খুব বেশি দেরিতে ঢুকেছে তা মনে হলো না।

ক্লাশ শুরু হবার আগে তোমাদের যে ডিমেন্টরদের বিষয়ে প্রবন্ধ লিখতে দিয়েছিলাম সেগুলো আমাকে দাও! স্নেইপ বললেন। স্নেইপ তারপর হাতের দণ্ডটা দোলাতেই প্রায় পঁচিশটা পাকানো পার্চমেন্ট হাওয়াতে ভাসতে ভাসতে ওর টেবিলের উপর জমা হলো। আমি আশা করছি লেখাগুলো অবশ্যই আজেবাজে হবে না। এখন তোমাদের সাথে যেনো ইমপেরিয়স কার্স প্রতিরোধ বিষয়ে আলোচনা করি। এখন তোমরা তোমাদের বইয়ের পাতা–কী ব্যাপার মি. ফিনিগেন?

স্যার, সিমাস বললো, আমার মাথায় ঠিক ঢুকছে না ইনফেরিয়স আর ঘোস্টের তফাৎ, কারণ প্রফেটে ইনফেরিয়স নিয়ে কিছু লিখেছে।

না, সেরকম কিছু নয়। স্নেইপ গম্ভীর গলায় বললেন। কিন্তু স্যার সকলেই বলাবলি করছে

তুমি যদি সত্যই সেই প্রবন্ধ ভালো করে পড়ে থাকো যার কথা তুমি বলছো মি. ফিনিগেন তাহলে তুমি জানবে তথাকথিত ইনফেরিয়স একটি ছিচকে চোর… তার নাম মাভানগাস ফ্লেচার।

আমি ভাবছি তাহলে যে স্নেইপ আর মাভানগাস একই পথের পথিক। তাই? চাপা গলায় হ্যারি, হারমিওন আর রনকে কথাটা বললো। মান্ডানগাস ধরা পড়েছে বলে সত্যি কি তিনি দুঃখিত?

আমার মনে হয় পটার এই ব্যাপারে আমাদের কিছু বলতে পারবে, স্নেইপ ক্লাসরুমের পেছনের সারিতে তাকালেন। তার কালো চোখ হ্যারির ওপর পড়লো। আমরা তাহলে পটারের কাছে জানি ইনফেরিয়স আর ঘোস্টের মধ্যে তফাৎ কি?

স্নেইপের কথা শুনে ক্লাসের সবাই পিছন ফিরে হ্যারির দিকে তাকালো। হ্যারির মনে পড়ে গেলো ডাম্বলডোরের সেদিন স্লাগহর্নের বাড়ি যাওয়ার কথা।

ঘোস্টেরা ট্রান্সপারেন্ট, স্বচ্ছ, স্যার।

চমৎকার, চমৎকার, স্নেইপ বললেন, ওর ঠোঁটের একটা ধার বেঁকে গেলো। তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে ছছটা বছর তোমার ম্যাজিক শিক্ষা একেবারে বৃথা যায়নি পটার। ঘোস্টরা সত্যিই ট্রান্সপারেন্ট!

প্যানসি পার্কিনসন জোরে হেসে উঠলো, কেউ কেউ মুচকি হাসলো। হ্যারি লম্বা শ্বাস নিয়ে বললো, ঘোস্টরা ট্রান্সপারেন্ট, কিন্তু ইনফেরিরা মৃত, তাই তারা শক্ত। স্নেইপ বললেন, এটা পাঁচ বছরের শিশুও বলতে পারবে। ইনফেরিয়স হলো শবদেহ যা এক কালো যাদুকর যাদুর দ্বারা পুনরুদ্দীপ্ত করা হয়েছে, কিন্তু জীবিত নয়। আর ঘোস্ট তোমরা জানো, মৃত আত্মার পৃথিবীতে ফেলে যাওয়া প্রতিবিম্ব।

হ্যারি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছে… যদি আমরা ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করি। রন বললো। যখন কোনো এক অন্ধকার গলিতে আমাদের চকিত দৃষ্টি পড়ে কোনো শক্ত জিনিসে তাহলে কি তাদের বলবো, এক্সকিউজ মি, তুমি কি কোনো মৃত ব্যক্তির আত্মা?

রনের কথা শুনে সমস্ত ক্লাসরুম কল-কাকলিতে ভরে উঠলো। মুহূর্তের মধ্যে স্নেইপ তাদের দিকে তাকাতেই সকলেই চুপ হয়ে গেলো।

গ্রিফিরদের আরো দশ পয়েন্ট, স্নেইপ বললেন। রোনাল্ড উইসলি এর চেয়ে বেশি মার্জিত কিছু তোমার কাছে আশা করি না…, ও এতোই সলিড যে অ্যাপারেট করার সময় আধইঞ্চিও নড়তে পারে না।

না, হারমিওন ফিস ফিস করে বললো, হ্যারি তখন জোর দিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলো–বলো না, বললেই অযথা ডিটেনসন হবে, ছাড়ো।

আচ্ছা, এবারে তোমরা বইয়ের দুশ তেরো পাতা খোলো, স্নেইপ বললেন, সামান্য কপট হাসিতে। ক্রসিয়েটাস কার্সের প্রথম দুই পরিচ্ছেদ পড়ো।

স্নেইপের ব্যঙ্গ শোনার পর থেকেই পুরো ক্লাসটায় রন খুবই মর্মাহত ছিলো।

ক্লাস শেষ হওয়ার ঘণ্টা বাজার পর ল্যাভেন্ডার এসে হ্যারি আর রনের সামনে দাঁড়ালো (হারমিওন ল্যাভেন্ডারকে আসতে দেখে কোন ফাঁকে চলে গেছে)। স্নেইপের, রনকে অ্যাপারেসন নিয়ে ব্যঙ্গ করার জন্য যা মুখে আসলো তাই বললেও রনের খুব বিরক্তি লাগলো, একটুও ভালো লাগলো না। ওকে দুহাতে সরিয়ে দিয়ে হ্যারিকে টেনে নিয়ে ছেলেদের বাথরুমে ঢুকে গেলো।

স্নেইপ সত্যি কথা বলেছেন, তাই না? বাথরুমের চিড় খাওয়া আয়নার দিকে প্রায় মিনিট খানেক নিজের প্রতিবিম্ব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে রন বললো। আমার তো মনে হয় না আমি টেস্ট দেওয়ার উপযুক্ত। আমি অ্যাপারেশনের ব্যাপারটা ঠিক ধরতে পারছি না।

তুমি হগসমিডে যে বিশেষ অনুশীলন সেশন হবে সেটা করবে, তখন ঠিক বুঝবে, পারবে কি পারবে না, হ্যারি ওকে বুঝিয়ে বললো। হুপের মধ্যে দাঁড়ানোর চাইতে আরো ভাল হবে, যদি দেখো পারছে না তাহলে তুমি টেস্ট পিছিয়ে দিতে পারো। আমার সঙ্গে গরমের ছুটিতে… মার্টিল এটা ছেলেদের বাথরুম।

একটি মেয়ে ঘোস্ট ওদের পেছনের ছোট ঘুমোবার ঘর থেকে এসে ভাসতে লাগলো, ওদের দিকে গোলাকার সাদা পুরু কাঁচ দিয়ে তাকিয়ে রইলো।

ওহো বিষণ্ণ দৃষ্টিতে বললো। তোমরা দুজনে।

তুমি কার জন্য অপেক্ষা করছো? রন বললো, আয়নার দিকে তাকিয়ে।

কাউকে না তো, মার্টিল ওর গালের একটা দাগ খোচাতে খোচাতে আনমনে বললো। ও বলেছিলো। ফিরে এসে আমার সঙ্গে দেখা করবে; কিন্তু তুমি বলেছিলে দুম করে এসে আমার সঙ্গে দেখা করবে, মেয়েটি রাগতঃ দৃষ্টিতে হ্যারির দিকে তাকালো। কতো মাস যে পার হয়ে গেলো তোমাকে দেখতে পাইনি, যাকগে আমি বুঝেছি ছেলেদের কাছ থেকে কিছু বেশি আশা করা ঠিক নয়।

আমার মনে হয় তুমি মেয়েদের বড় বাথরুমে থাকো। হ্যারি বললো। কয়েকবছর থেকে ওই বড় বাথরুমটা বেছে নিয়েছ। হ্যাঁ থাকি, মার্টিল বললো ছোট করে কাঁধ নাচিয়ে। তাহলে কি আমার অন্য জায়গায় যেতে মানা আছে। মনে আছে, আমি তোমায় বাথে দেখেছিলাম?

খুব মনে আছে, হ্যারি বললো।

আমি ভেবেছিলাম ও আমাকে আজও ভালোবাসে, খুবই সহজভাবে বললো সে। ভাবছি, তোমরা দুজনে এখান থেকে চলে গেলে ও আবার আসতে পারে, আমাদের মধ্যে খুব মিল আছে, আমি জানি ও আমার মনের কথা জানে বললো মাটিল।

কথাটা বলে মার্টিল দুচোখে আশা নিয়ে দরজার দিকে তাকালো।

এই তো তুমি বললে, তোমাদের মধ্যে খুব মনের মিল আছে, রন মজা করে বললো, তাহলে কি ও রাসায়নিক পদার্থের গামলা গড়ে থাকে।

না, মার্টিল দৃঢ়স্বরে প্রতিবাদ করলো। ওর গলার স্বর ভাঙা টাইলের বাথরুমে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো। ও খুব ভাবপ্রবণ, লোকে ওকে ব্যঙ্গ করে, দেখলে ঠাট্টা করে, ও বড় একা, কেউ ওর সঙ্গে কথা বলেনা, ও তাই মাঝে মাঝে রেগে যায়, কাঁদে।

এখানে একটা ছেলে ছিলো সে কাঁদতো? হ্যারি জিজ্ঞাসু নেত্রে বললো। এক তরুন ছেলে?

ও নিয়ে তুমি ভেবো না! মার্টিল বললো, ওর জলে ভরা দুচোখ রনের দিকে স্থির হয়ে রইলো। মার্টিলের কথায় রনের মুখে হাসি। ভেবো না, গোপন কথা আমি কাউকে বলবো না, ওর গোপন কথাও না।

আমৃত্যু নিশ্চয়ই না? রন ঠাট্টা করে বললো। অনেক সময় যারা প্রতিজ্ঞা করে।

কথাটা শুনে মার্টিল রাগের মাথায় চিৎকার করে উঠে বাথটাবে লাফিয়ে পড়লো, বাথটাবের চারধার থেকে জল বাথরুমের মেঝেতে পড়ে থৈ থৈ করতে লাগলো। মনে হলো ঘ্যানঘ্যানে মার্টিল রনের কথায় খুশি হয়েছে।

তুমি ঠিক বলেছো, রন ওর স্কুল ব্যাগটা পিঠে বাঁধলো। ঠিক আছে আমি হগসমিডে প্র্যাকটিস করার পর টেস্টে অংশ নেবো।

পরের সপ্তাহ শেষে রন, হারমিওন ও ষষ্ঠ বর্ষের অন্য ছাত্ররা যাদের বয়স সতেরো হবে, তারা পনের দিন পরের টেস্টের জন্য তৈরি হতে লাগলো। ওদের গ্রামে যেতে দেখে হ্যারির ভেতরে ভেতরে একটু হিংসে হলো বৈকি। বহুদিন বাদে বসন্তকালের নির্মল আকাশের তলায় সুন্দর একটি টিপ থেকে বঞ্চিত হলো। দেখলো ওরা সবাই দল বেঁধে হগসমিডে যাচ্ছে। দুঃখ হলেও সেই ফাঁকে রুম অফ রিকোয়ারমেন্টে আরো একবার হানা দেবার পরিকল্পনা করতে লাগলো।

হ্যারি, রন আর হারমিওনকে ওর পরিকল্পনার কথা এনট্রেন্স হলে বসেই বললো, হারমিওন বললো যে হানাটা তোমার আগে করার দরকার সেটাই এখন কর। এখন বরং তুমি স্লাগহর্নের কাছে যাও, ওর কাছ থেকে মেমরি আদায় করে নাও। কিন্তু স্লাগহর্নকে হ্যারি ধরবে কি করে? এতো জোরে হেঁটে ডানজিওন ছেড়ে নিজের অফিস ঘরে চলে যান হ্যারি পথের মধ্যে তাকে ধরতে পারে না। দুদুবার হ্যারি স্লাগহর্নের অফিস ঘরে গেছে, দরজায় নক করেছে, ঘরের ভেতর থেকে কোনো জবাব পায়নি। প্রথম দিন না পেলেও দ্বিতীয় দিন হ্যারি তার ঘর থেকে পুরনো দিনের গান গ্রামোফোন থেকে গান শুনেছে।

মনে হয় আমার সঙ্গে কথা বলতে চায় না হারমিওন! ভাবছেন আমি মেমরি পাওয়ার জন্য ওকে ধাওয়া করছি… তাই…!

কিন্তু হাল ছেড়ে দিলে তো চলবে না, লেগে থাকতে হবে। তাই না?

কেয়ারটেকার ফিলচ সিক্রেসী সেনসর করছে, ছেলে-মেয়েরা লাইন দিয়ে রয়েছে, পাছে কেয়ারটেকার ওর কথা শুনতে পায় সেই ভয়ে ও হারমিওনের কথার কোনো জবাব দিলো না। হারমিওন ও রনকে গুড লাক জানিয়ে হ্যারি আবার পাথরের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে রুম অফ রিকোয়ারমেন্টের ঘরের সামনে দাঁড়ালো। অন্তত কম করে হলেও দুঘণ্টা ওখানে দাঁড়াতে হবে হারমিওন বলেছে।

এনট্রেন্স হলের দৃষ্টির সীমানার বাইরে এসে হ্যারি অদৃশ্য হবার ক্লোক আর ম্যাপটা ওর ব্যাগ থেকে বের করলো। তারপর অদৃশ্য হয়ে ও ম্যাপে আঙ্গুল লাগিয়ে বললো, আমি স্বীকার করছি আমি এখনো পর্যন্ত কিছুই পাইনি, কথাটা ও খুব সাবধানতার সঙ্গে বলে তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলো।

রোববার স্কুল ছুটি, অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী তাদের কমনরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। যে যার নিজের টাওয়ারে। হাফলপাফরা বেসমেন্টে, কিচেনের কাছে। মাঝে মাঝে দুএকজন লাইব্রেরি অথবা করিডরে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘোরাফেরা করছে। কিছু ছেলে মেয়ে বাইরের মাঠে। আটতলার করিডরে দেখা গেলো গ্রেগরি গোয়েলকে। সেই রুম অফ রিকোয়ারমেন্টের কোনো চিহ্ন পাওয়া গেলো না, কিন্তু হ্যারি তার জন্য একটুও চিন্তিত নয়; ম্যাপে কোনো নির্দেশ পাওয়া যাক আর না পাওয়া যাক, গোয়েল যখন বাইরে পাহারা দিচ্ছে, তাহলে অবশ্যই ঘরটা খোলা আছে। ও একটুও সময় ব্যয় না করে পা টিপে টিপে করিডরের এক কোণে দাঁড়ালো। এধার ওধার তাকাতে সেই ছোটো মেয়েটাকে আবার দেখতে পেলো। হাতে তার বড়ো একটা পিতলের স্কেল, সেটা হারমিওন পনের দিন আগে মেরামত করে দিয়েছিলো। হ্যারি মেয়েটিকে ওর দিকে আসার অপেক্ষায় এক কোণে দাঁড়িয়ে রইলো। কাছে আসতেই ফিসফিস করে বললো, হ্যালো… তুমি খুব সুন্দর দেখতে… তাই না?

গোয়েল ভয় পেয়ে ভীষণ জোরে চিৎকার করে উঠলো, হাত থেকে সেই ভারি পিতলের স্কেলটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েই ওর দৃষ্টির বাইরে পালিয়ে গেলো। স্কেলটা মেঝেতে আছড়ে পড়ার শব্দটায় নির্জন করিডরটা ঝন ঝন করে উঠলো, প্রতিধ্বনি হতে লাগলো। তারপর প্রতিধ্বনি থেমে গেলে হ্যারি হেসে উঠলো! হ্যারি শূন্য দেওয়ালের দিকে তাকালো… হ্যারি জানে দেয়ালের আড়ালে ড্রেকো ম্যালফয় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে… আর সে জানে একজন অনাহূত এখানে এসেছে, কিন্তু সাহস করে… সামনে আসছে না। হ্যারির ভেতরে অসামান্য শক্তির সঞ্চার হলো… ও মনে করতে চেষ্টা করলো কি শব্দ ব্যবহার করবে… যা এখনো পর্যন্ত করেনি।

কিন্তু ওর মনে আশার আনন্দ বেশিক্ষণ রইলো না। আধঘণ্টা ধরে ম্যালফয় কি করতে চায় জানার জন্য যেখানে লুকিয়েছিলো সেখানেই লুকিয়ে রইলো। অনেকভাবে মনে মনে অনেক অনুরোধ করেও ম্যালফয় কি করতে চায় জানতে পারলো না… দেওয়ালটা দরজাশূন্য অবস্থায় বিরাজ করতে লাগলো। হ্যারি অবিশ্বাস্যভাবে হতাশ হলো, ম্যালফয় মাত্র কয়েক ফিট দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে… কিন্তু ও কি কি করছে বিন্দু মাত্র জানতে পারলো না। ধৈৰ্য্য হারিয়ে… হ্যারি দেওয়ালের দিকে এগিয়ে দেওয়ালে সজোরে লাথি মারলো।

আউচ!

হ্যারির মনে হলো প্রচণ্ডভাবে সামনের দেওয়ালে লাথি মারার জন্য ওর হয়তো পায়ের পাতা ভেঙে গেছে। ও ব্যথা পাওয়া পাটা এক হাতে ধরে একপায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে গিয়ে গা থেকে অদৃশ্য হবার ক্লোকটা খুলে পড়ে গেলো।

হ্যারি? হ্যারি এক পায়ে ভর দিয়ে কে ডাকলো শোনার জন্য পিছন ফিরলো। হ্যারি তাকিয়ে দেখলো টোংকস! এমনভাবে ওর দিকে এগিয়ে এলো যেন করিডরটা দিয়ে নিত্য ওর যাতায়াত।

এখানে তুমি কি করছো? হ্যারি পায়ের পাতাটা মেঝেয় চেপে ধরে বললো। কেন ও এই নির্জন করিডরে ঘুরে বেড়াচ্ছে? কাকে খুঁজছে টোংকস?

আমি ডাম্বলডোরের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। টোংকস বললো। হ্যারির টোংকসের দিকে তাকিয়ে মনে হলো ও যেনো খুব বেশি রোগা হয়ে গেছে, ওর ধূসর বর্ণের মাথার চুলগুলো সোজা হয়ে ঝুলে পড়েছে।

ডাম্বলডোরের অফিস তো এখানে নয়, হ্যারি বললো। ওর অফিস ক্যাসেলের পেছন দিকে, গারগয়েলের ঠিক পেছনে।

আমি জানি, টোংকস বললো। ওখানে তাকে পেলাম না। খুব সম্ভব আবার কোনো কাজে বাইরে বেরিয়েছেন।

বের হয়েছেন নাকি! হ্যারি বললো, ব্যথা পাওয়া পাটা ফ্লোরে ধীরে ধীরে রাখলো। আশ্চর্য! তুমি জানো না উনি কোথায় যান?

না, টোংকস বললো। ওনার সঙ্গে তুমি কেন দেখা করতে এসেছিলে?

তেমন কোনো ব্যাপার নয়, অজান্তে গায়ের রোবসটা টানতে টানতে বললো টোংকস। আমি ভাবলাম যা সব কাণ্ডকারখানা নিত্য হচ্ছে উনি হয়তো জানেন, চারদিকের খবর, লোকজনদের মারধোর করা হচ্ছে।

সবই জানি, রোজইতো কাগজে বেরোচ্ছে, হ্যারি বললো। একটা ছোট বাচ্চা হত্যা করতে চেষ্টা করেছে…।

প্রফেট অবশ্য এসব খবর টবর ছাপছে। টোংকস বললো। হ্যারির মনে হলো, টোংকস খুবই অন্যমনস্ক, ওর কথা কানে যাচ্ছে না। আচ্ছা তুমি কি অর্ডারের কারো কাছ থেকে ইদানীং কোনো চিঠি পেয়েছো?

অর্ডার থেকে আজকাল আমাকে কেউ চিঠি লেখে না, হ্যারি বললো, সিরিয়স মারা যাবার পর…। হ্যারি দেখলো ওর চোখে জল। আমি দুঃখিত, হ্যারি খুব আস্তে আস্তে বললো। আমিও সিরিয়সকে খুব মিস করছি…।

কি বললে? টোংকস এমনভাবে বললো যেনো হ্যারির কথা ওর কানে যায়নি। আচ্ছা চলি, পরে তোমার সঙ্গে কথা হবে হ্যারি, টোংকস হন হন করে করিডর ছেড়ে চলে গেলে হ্যারি তাকিয়ে রইলো টোংকসের যাওয়ার পথে।

দুএক মিনিট পরে হ্যারি আবার অদৃশ্য হবার ক্লোকটা জড়িয়ে আবার সেই ঘরটা খোজার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু খোঁজার দিকে তেমন মনযোগ ছিল না। তারপর হঠাৎ মনে পড়ে গেলো রন আর হারমিওনের ফেরার তো সময় হয়ে গেছে! একটু পরই লাঞ্চ শুরু হবে। তখন ও আর ম্যালফয়ের সন্ধান না করে করিডর ছেড়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিল। ওদিকে ম্যালফয়ও হয়তো লুকিয়ে বসে রইলো হ্যারির চলে যাবার অপেক্ষায়।

হ্যারি দেখলো রন আর হারমিওন গ্রেট হলের দিকে লাঞ্চ সারবার জন্য তাড়াতাড়ি আসছে।

রনকে দেখে মনে হলো ও খুব উচ্ছ্বসিত। হ্যারিকে দেখে রন একগাল হেসে বললো, পেরেছি, এবার খুব ভালোভাবেই পেরেছি। আমাকে ম্যাডাম পুড্ডিফুটের চায়ের দোকানের কাছে অ্যাপারেট করতে বলা হয়েছিলো, আমি অবশ্য তার দোকান ছাড়িয়ে ক্রিভেনশ্যাফটের কাছে শেষ করেছি… যাই হোক আমি তো মুভ করতে পেরেছি।

খুব ভালো, হ্যারি বললো। তোমার কেমন হলো হারমিওন?

ওর তো ভাল হবেই, হারমিওন জবাব দেবার আগেই রন বললো। যাকে বলে নিখুঁত তিনটে ডি যাই বলো না কেন। তারপর আমরা গেলাম থ্রি মস্টিকে কুইক ড্রিঙ্ক করতে। তারপর… তারপর তুমিতো টুইক্ৰশের নাম শুনেছো, আমার ধারণা

ও ঠিক ধরতে পারছে না।

রনের কথায় পাত্তা না দিয়ে হারমিওন হ্যারিকে বললো, তারপর তোমার খবর, কতদূর এগুলো? সেই ঘরটা খুঁজে পেয়েছো?

ঠিক না, হ্যারি বললো। বলতে পারো সেখানে কার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল? টোংকস!

টোংকস? রন হারমিওন একই সঙ্গে নামটা আশ্চর্য হয়ে উচ্চারণ করলো। হ্যাঁ-অ্যা, ও বললো ডাম্বলডোরের সাথে দেখা করতে এসেছে।

তুমি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করো, টোংকস বিষয়ে হ্যারির কথা শেষ হবার সাথে সাথে রন বললো, ওর মাথায় গোলমাল আছে। মিনিস্ট্রির সেই ঘটনার পর ও খুব নার্ভাস হয়ে রয়েছে।

ব্যাপারটা আমার কাছেও কেমন কেমন লাগছে। ওর তো স্কুলে পাহারা দেবার কথা, ডাম্বলডোরের সঙ্গে দেখা করার কথা তো নয়। হঠাৎ নিজের কাজ ছেড়ে…, হারমিওন বললো।

আমার কি মনে হয় জানো… হ্যারি বললো। তোমাদের কি মনে হয় যে ও সিরিয়সকে ভালবাসতো?

কথাটা শুনে হারমিওন হ্যারির দিকে সোজা তাকালো। তোমার আবার হঠাৎ করে এ ভাবনাটা কোথা থেকে এলো।

বলতে পারি না, হ্যারি স্রাগ করলো। সত্যি বলছি, আমি সিরিয়সের নাম করতেই ও কেঁদে ফেললো।

ভাববার কথা, হারমিওন খুব আস্তে আস্তে বললো। ও কথা থাক। আমার কিন্তু কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না ও কেন ডাম্বলডোরের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলো।

আরে আমি তো তোমাকে বললাম, ভালো করে শোননি? রন বললো মুখে একগাদা চটকানো আলু সেদ্ধ পুরে। এখন ওর মাথায় ছিট, মনে হয় ভারসাম্যও হারিয়েছে। জ্ঞানির মতো হ্যারিকে বললো। মেয়েরা সহজেই বুদ্ধিসুদ্ধি হারিয়ে ফেলে।

তাহলেও জেনো, হারমিওন বললো। আমি আশাকরি এমন একটি মেয়ে তুমি পাবে না, যে আধঘণ্টা ধরে হাসি চেপে রেখেছিলো। কারণ মাদাম রসমার্তা তাদের কৌতুক কুরুপা ডাইনি দ্যা হিলার অ্যান্ড দ্যা মিমবুলাস মিমরেটোনিয়া শুনে হাসেননি।

রন মুখভঙ্গি করলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *