২০. লর্ড ভোল্ডেমর্টস রিকোয়েস্ট

২০. লর্ড ভোল্ডেমর্টস রিকোয়েস্ট

হ্যারি আর রন মাদাম পমফ্রের সুচিকিৎসায় সোমবার সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলো। এখন ওরা পুরোপুরি সুস্থ। সেটাতো একটা সুখবর, সন্দেহ নেই। তার চেয়ে বড় সুখবর হারমিওনের রনের সঙ্গে পুনরায় বন্ধুত্ব। হারমিওন ওদের সঙ্গে ব্রেকফাস্ট খেতে শুরু করলো। জিনির সঙ্গে ডিনের বচসার। খবরও দিলো। হ্যারি তার নিরানন্দ ও ম্রিয়মান মনের অবস্থা কাটিয়ে বুকের মধ্যে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে সুখি বোধ করলো।

ওরা কি বিষয়ে কথা কাটাকাটি করেছে? আটতলার প্রায় শূন্য করিডরের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গুরুত্ব না দিয়ে বললো। সেখানে ছোট একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে দানবদের পর্দা দেখছিলো। ষষ্ঠ বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের আসতে দেখে ও ভয় পেয়ে গেলো। ওর হাত থেকে পিতলের ভারি স্কেলটা পড়ে গেলো।

হারমিওন ছোট মেয়েটাকে আদর করে বললো, ভয় নেই, ভয় নেই আমি ওটা জুড়ে দিচ্ছি। দেখো ঠিক হয়ে গেলো, হারমিওন ভাঙা স্কেলটায় জাদুদণ্ড ছুঁইয়ে বললো, রিপ্যারো।

মেয়েটি কিন্তু একবারও ওদের ধন্যবাদও জানালো না, যেখানে দাঁড়িয়েছিলো সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকে ওদের দেখতে লাগলো। যখন মেয়েটির দৃষ্টি প্রায় বাইরে চলে গেছে তখন রন পেছন ফিরে তাকালো মেয়েটির দিকে।  

দেখো ওকে আরো কতো ছোটো দেখাচ্ছে, রন বললো।

ও নিয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না, হ্যারি বললো। জিনি আর ডিনের ঝগড়ার কারণ জানো হারমিওন?

তোমার মাথায় ম্যাকলেগেন ব্লাজারটা মারার পর ডিন হেসেছিলো, হারমিওন বললো।

খুব হাসির ব্যাপার হয়েছিলো তাই না? রন দৃশ্যটা ভেবে বললো।

মোটেই না, হারমিওন রেগে গিয়ে বললো। খুবই বাজে দৃশ্য ছিল সেটা, কুট আর পিকেস হ্যারিকে সেই সময়ে ধরে না ফেললে ও আরো আঘাত পেতো!

ঠিক আছে, তার সঙ্গে জিনি আর ডিনের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কি আছে? হ্যারি ব্যাপারটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় এমনভাবে বললো। এখনো ওরা একসঙ্গে ঘোরাফেরা করে?

হ্যাঁ, করে–কিন্তু তোমার মাথা ব্যথা কেন? হ্যারির দিকে তীক্ষ্ণভাবে তাকিয়ে হারমিওন বললো।

আমি আবার আমার কিডিচ টিম জগাখিচুড়ি বানাতে চাই না, হ্যারি বললো, কিন্তু হারমিওন হ্যারির দিকে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। ওইরকমভাবে তাকিয়ে থাকা হ্যারির খুব অস্বস্তি লাগছিলো। বাঁচিয়ে দিলো লুনা।

হ্যারি!

লুনা? হ্যারি বললো।

লুনা ওর ব্যাগটা ঘাটতে ঘাটতে সবুজ পেঁয়াজের মতো একটা জিনিস, বড় দেখে একটা ব্যাঙের ছাতা আর বেড়ালের ময়লার মতো একগুচ্ছ জঞ্জাল বের করে রনের হাতে রেখে, শেষে একটা ছোট পাকানো পার্চমেন্ট হ্যারির হাতে দিয়ে বললো, এটা তোমার।

সেটা দেখেই হ্যারি বুঝতে পারলো ডাম্বলডোরের লেসনে যাবার চিঠি! পার্চমেন্টটা খুলে চোখ বুলিয়ে বললো, আজ রাতে ডাম্বলডোর আমাকে লেসনে যেতে লিখেছেন।

রন লুনাকে বললো, তোমার কিডিচ কমেন্ট্রি দারুণ হয়েছিলো! লুনা রনের হাত থেকে সবুজ পেঁয়াজ, ব্যাঙের ছাতা আর বেড়ালের ময়লাগুলো ফেরত নেবার সময় ভাসা ভাসা ভাবে হাসলো।

তুমি আমাকে নিয়ে মজা করছো তাই না? লুনা বললো, সকলেই বলে আমি নাকি সাংঘাতিক মেয়ে!

মোটেই আমি তোমাকে নিয়ে মজা করছি না, রন বললো। আমার স্মরণকালে তোমার চেয়ে ভাল কমেন্ট্রি শুনিনি। কথাটা বলে ওর হাত থেকে সবুজ ব্যাঙের ছাতাগুলো তুলে দিয়ে বললো, এগুলো কী?

এগুলো হচ্ছে গার্ডি রুট, লুনা বললো জিনিসগুলো ওর হ্যান্ড ব্যাগে ভরতে ভরতে। তোমার ইচ্ছে হলে এগুলো তোমার কাছে রাখতে পারো, আমার কাছে আরো কিছু আছে। এগুলো গাল্পিং ব্রণের জন্য খুব কাজ দেয়।

লুনা গার্ডি রুট চটকাতে চটকাতে চলে গেলো।

ওরা গ্রেট হলের দিকে চললো। আমি জানি ওর মাথায় সমস্যা আছে, কিন্তু মেয়েটা ভালো।

কথাটা বলতে বলতে হ্যারি মাঝপথে থেমে গেলো। দেখলো ল্যাভেন্ডার ব্রাউন পাথরের সিঁড়ির মুখে বজ্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

হাই রন, ওকে দেখে আমতা আমতা করে বললো।

হ্যারি হারমিওনের হাতে মৃদু টান দিয়ে বললো, চলো, ওরা দ্রুত হাঁটলো। কানে এলো ল্যাভেন্ডারের ঝাঁঝালো গলা, তুমি আজ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবে আমাকে বলোনি কেন? আর হারমিওন তোমার সঙ্গে কেন?

আধঘণ্টা পরে রন ব্রেকফাস্ট টেবিলে এলে, হ্যারি রনকে দেখলো ও খুবই মুখভার, বিরক্তভাব যদিও ওর সঙ্গে রয়েছে ল্যাভেন্ডার। ওরা দুজনে এক সঙ্গে বসে থাকলেও হ্যারি লক্ষ্য করলো ওরা কেউ কারো সঙ্গে কথা বলছে না। হারমিওন এমন এক ভাব করে বসে আছে যেনো ওর কিছুই অজানা নেই। কিন্তু মাঝে মাঝে লক্ষ্য করলো ওর মুখে কপট হাসি। সারাদিন ও খুব ভালো মুডেই রয়েছে, সন্ধে বেলা কমনরুমে ও হ্যারির হারবোলজির প্রবন্ধ দেখে দিতে রাজি হলো। আগে ও দেখতে চাইতো না, কারণ ও জানে রনকে হ্যারি ওর লেখা দেখাবে আর রন কপি করে নেবে হারমিওনের শুদ্ধ করা হ্যারির প্রবন্ধ।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, হ্যারি বললো, তারপর ওর পিঠে একটা চাপড় মেরে ঘড়িতে প্রায় আটটা বাজে দেখে বললো, ডাম্বলডোরের কাছে আমাকে এখন যেতে হবে।

হারমিওন কথার জবাব না দিয়ে দ্রুত কিছু শব্দ ঠিক করে দিল। হ্যারি পোর্ট্রেটের গর্ত দিয়ে ডাম্বলডোরের অফিসের দিকে চললো। গারগোয়েল পার্সওয়ার্ড টফি একলির্স বলাতে পাশে সরে গেলে হ্যারি ঘোরানোনা সিঁড়ির দিকে লাফাতে লাফাতে ঠিক আটটার সময় ডাম্বলডোরের ঘরের দরজা নক করলো।

এসো, ভেতরে এসো, ডাম্বলডোর বললেন, কিন্তু দরজার নবৃটা ঘুরিয়ে বন্ধ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখলো প্রফেসর ট্রিলনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মিস ট্রিলনি তার চশমার মোটা কাঁচের ভেতর দিয়ে হ্যারিকে দেখে পিট পিট করে বললেন, ও এর জন্যই আমাকে আপনার ঘর থেকে তাড়াচ্ছেন ডাম্বলডোর।

ডাম্বলডোর সামান্য উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন, মাইডিয়ার সিবিল, তোমাকে কেন তাড়িয়ে দিতে যাবো, কিন্তু হ্যারির সঙ্গে আগেই একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে রেখেছি, আর তাছাড়া তোমার সাথে কথা তত শেষ হয়েছে।

খুব ভালো, প্রফেসর ট্রিলনি আহত স্বরে বললেন। আপনি যদি খুতখুতে জবরদখল করা মহিলাকে বাদ না দিতে পারেন, তাহলেও আমি অন্য কোথাও চলে যাবো। যেখানে আমি উপযুক্ত সম্মান পাবো। যারা আমার কাজের দাম দেবে।

একরকম হ্যারিকে ধাক্কা দিয়ে ট্রিলনি ঘর ছেড়ে প্যাচানো সিঁড়ি দিয়ে নিচে চলে গেলেন। হ্যারি লক্ষ্য করলো ট্রিলনি যেনো ইচ্ছে করেই তার গায়ের শালটা তাল গোল পাকিয়ে রেখে গেলেন।

ডাম্বলডোর খুব ক্লান্ত স্বরে বললেন, দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এখানে এসে বসো।

হ্যারি সাধারণত যে জায়গায় বসে সেখানে বসে লক্ষ্য করলো ডাম্বলডোর আগেই ওখানে পেনসিভটা রেখেছেন। পাশে রয়েছে আরো দুটি ক্রিস্টাল বোতল, তার মধ্যে মেমরি ঘুরপাক খাচ্ছে।

ফিরেঞ্জে এখনো শিক্ষকতা করছেন বলে কি ট্রিলনি অসুখী? হ্যারি জিজ্ঞেস করলো।

না তা নয়, ডাম্বলডোর বললেন। আমি যেরকম মনে করেছিলাম ডিভিনেসন তার চেয়ে বেশি জটিল মনে হচ্ছে। আমি তো আগে এ সাবজেক্ট পড়াশোনা করিনি। তাই ফিরেঞ্জকে জঙ্গলে চলে যেতে বলতে পারছি না। সেখানে তো ওকে একঘরে করেছে, আবার এদিকে ট্রিলনিকেও চলে যেতে বলতে পারছি না। কথাটা তোমার আমার মধ্যেই বলছি ক্যাসেলের বাইরে গেলে যে বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে সে বিষয়ে ওর কোনো ধারণাই নেই। ও কিছুই জানে না। আমার মনে হয় এখন আর তাকে নতুন করে কিছু জ্ঞান দেওয়া ঠিক হবে না–তোমার আর ভোল্ডেমর্ট সম্পর্কে প্রফেসি সে করেছিলো।

কথাটা বলে ডাম্বলডোর গভীর নিঃশ্বাস নিলেন। তারপর বললেন, যাকগে তোমার আমার স্টাফ বিষয়ক সমস্যার কথা চিন্তা করতে হবে না। আমাদের তার চেয়ে অনেক বেশি গভীর সমস্যার ব্যাপার আলোচনা করার আছে। তোমাকে যে কাজটা করতে বলেছিলাম তুমি কি সেটা কিছু করতে পেরেছো?

ডাম্বলডোর ওকে প্রফেসর স্লাগহর্নের কাছ থেকে মেমরি বের করার যে কাজ দিয়েছিলেন, তার কিছুই করাতে পারেনি একের পর এক দুর্ঘটনার জন্য। রনের বিষক্রিয়া, কিডিচ খেলার সময় ওর মাথায় আঘাত ও খুলি ভাঙ্গা, ড্রেকো ম্যালফয়ের পিছু নেয়া ইত্যাদি ব্যস্ততায় স্লাগহর্নের বিষয়ে কাজটি আর হয়নি।

আমি প্রফেসর স্লাগহর্নকে ওই বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু স্যার উনি কিছুই জবাব দেননি।

দুজনেই চুপচাপ।

ডাম্বলডোর অর্ধচন্দ্র চশমার কাঁচের ওপর দিয়ে খানিকক্ষণ হ্যারির দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললেন, ও তাই! হ্যারির মনে হলো ডাম্বলডোর ওকে এক্সরে করছেন। তা তুমি কি নিশ্চিত যে, ওই বিষয়ে তুমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছে? তোমার যতো কৌশল জানা আছে তা প্রয়োগ করেছে?

হ্যারি কি জবাব দেবে ভেবে না পেয়ে বললো, স্যার রন যেদিন ভুল করে লাভ পোশান খেলো, সেদিন আমি তাকে প্রফেসর স্লাগহর্নের কাছে নিয়ে গেছিলাম।

ভেবেছিলাম, স্লাগহর্নকে ভাল মুডে পাবো

তো কিছু করতে পেরেছিলে, ডাম্বলডোর বললেন। …না স্যার… রনের বিষক্রিয়া হওয়ায়, আর সম্ভব হয়নি।

সঙ্গত কারণেই তুমি মেমরি রিট্রাইভ করার ব্যাপারটা বাদ দিয়েছিলে। তা তোমার প্রিয় বন্ধুর যখন ওই অবস্থা হয়েছিলো সেক্ষেত্রে আমি তোমার কাছ থেকে সে কাজটি আশা করতে পারি না। কিন্তু তোমার বন্ধুর যখন বিপদ কেটে গেলো তারপর কি করলে? আমি ভেবেছিলাম মেমরিটা যে কতো গুরুত্বপূর্ণ তা তোমাকে আমি বোঝাতে পেরেছি। সেটা না সংগ্রহ করলে সবই আমাদের বৃথা পরিশ্রম। হ্যারি।

কথাটা শুনে হ্যারির মাথা থেকে পা পর্যন্ত লজ্জায় শিরশির করে উঠল। ডাম্বলডোর কথাগুলো বলার সময় স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন, একটুও রাগ দেখালেন না। কিন্তু হ্যারি চাইছিলো ডাম্বলডোর রাগ করুন, চিৎকার করে ওকে তিরস্কার করুন, তাহলে ওর যথোচিত নিরাশ মনে আশার সঞ্চার হতো। শান্ত মনে থাকাটাই বড় বেশি আঘাত যেনো।

স্যার ওটাই একমাত্র কারণ নয়, আরো কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়াতে আমি… এমন নয় যে আমি আপনার দেওয়া কাজ করতে চাইনি!

অন্যান্য কিছু তোমাকে আমার কাজ করতে বাধা দিয়েছিলো? ও তাই দেখছি। আবার দুজনেই নীরব।

ডাম্বলডোরের সামনে নীরবে বসে থাকার যন্ত্রণা অস্বস্তিকর, জীবনে ও এই প্রথম নীরবতা অনুভব করলো। সেই নীরবতা যেনো শেষ হতে চায় না। মাঝে মাঝে কানে আসতে লাগলো প্রোট্রেট থেকে আরমান্ডো ডীপারের নাক ডাকা। হ্যারির মনে হলো ও অতল তলে তলিয়ে চলেছে তো চলেছেই।

কতক্ষণ আর ও ওই নীরবতার যন্ত্রণা ভোগ করবে? আর থাকতে না পেরে বললো, প্রফেসর ডাম্বলডোর সত্যই আমি দুঃখিত। কাজটা করা উচিত ছিলো। আমি ঠিক বুঝতে পারিনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব আমাকে দিয়েছিলেন।

কথাটা বলার জন্য তোমায় অশেষ ধন্যবাদ হ্যারি। ডাম্বলডোর বললেন। তাহলে তুমি এই কাজটার ওপর আজ থেকে বেশি গুরুত্ব দেবে আশা করতে পারি?

ওই মেমরিটা না পাওয়ার জন্য আমাদের আজকের মিটিং-এর মনে হয় কিছু কাজ এগোবে না। ডাম্বলডোর সস্নেহে বললেন, তাহলে গতবার যেখানে আমাদের গল্প শেষ হয়েছিলো সেখান থেকে শুরু করি কী বলো? কোথায় শেষ করেছিলাম তোমার মনে আছে তো?

মনে আছে। ভোল্ডেমর্ট ওর বাবা আর তার বাবা-মাকে হত্যা করে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলো, সকলে যেনো বোঝে ওর মামা মরফিনই ওদের হত্যা করেছে। তারপর ও হোগার্টসে ফিরে গিয়ে প্রফেসর সুস্লাগহর্ন-এর কাছে হরক্রাকসের সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। হ্যারি লজ্জা অবনত হয়ে বললো।

খুব ভালো, ডাম্বলডোর বললেন। তুমি কিন্তু এখন মনে রাখবে। আমি আশাকরি, গল্পের শুরুতেই আমি তোমাকে বলেছিলাম যে আমরা এরপর ধারণা ও অনুমানের মধ্য দিয়ে যাবো।

তাহলে আশা করছি তুমি একমত হবে আমি তোমাকে মোটামুটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে দেখিয়েছি যে ভোল্ডেমর্ট ওর সতের বছর বয়স পর্যন্ত কি সব করেছিলো।

হ্যারি মাথা নাড়লো।

কিন্তু হ্যারি, ডাম্বলডোর বললেন এখন যা ঘটবে সবই হবে অস্পষ্ট ও অদ্ভুত ঘটনা। যেখানে আমরা সেই রিডিল নামের ছেলেটার তথ্য সংগ্রহ করতে অসুবিধায় পড়ি সেখানে ভোল্টেমর্টের অতীত ঘটনা বলার মতো কাউকে পাওয়া সম্ভব নয়। আমার সন্দেহ এমন একজন কেউ বেঁচে নেই ও ছাড়া, যে তার অতীত জীবন, হোগার্টস ছেড়ে যাবার পরের বিষয়ে আমাদের সম্পূর্ণভাবে জানাতে পারবে। যাই হোক, আমার কাছে দুটি মেমোরি আছে যা আমি তোমার সঙ্গে আলোচনা করতে পারি। কথাটা বলে ডাম্বলডোর পেনসিভের পাশে রাখা দুটি ক্রিস্টাল বোতল দেখালেন। তাহলে সম্ভাব্য যে সিদ্ধান্তে আমি পৌঁছবো সে ক্ষেত্রে তোমার মতামত পেলে খুশি হবো।

হ্যারি ডাম্বলডোরের সুচিন্তিত মূল্যবান কথা শুনে আরো বেশি লজ্জিত হয়ে গেলো ইরাকস মেমরি সম্পর্কে যে কাজটা দিয়েছিলেন তা না করতে পারার জন্য। তারপর ডাম্বলডোর যখন ক্রিস্টাল বোতল দুটো পরীক্ষা করার জন্য আলোর কাছে তুললেন তখন ও ধীরে ধীরে যেয়ে পেনসিভের পাশে দাঁড়ালো। এই যে দুটো বোতল দেখছো, এতে আমরা অনেকের মেমরি জানতে পারবো, যেগুলো অত্যন্ত কৌতূহলপূর্ণ স্মৃতিচারণ। প্রথমটি পেয়েছি অতি পুরনো গৃহ ডাইনীর কাছ থেকে তার নাম হোকে। হোকে কী দেখেছিলো আমরা তা দেখবার আগে জেনে নেবো কেন ভোল্ডেমর্ট হোগার্টস ছেড়ে ছিলো।

ভোল্ডেমর্ট ওর স্কুল জীবনের সপ্তম বর্ষে পৌঁছবার আগে প্রতিটি পরীক্ষায় সেরা গ্রেড পেয়েছিলো, সে বিষয়ে আশাকরি তুমি জানো! ওর সতীর্থরা তখন ভাবতে বসেছে স্কুল ছাড়ার পর কি কাজ করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সকলেই টম রিডিলের কাছ থেকে অভূতপূর্ব কিছু করার আশা করেছিলো, প্রিফেক্ট হেডবয়, স্পেশাল স্কুল এওয়ার্ড, স্কুলের নানাবিধ কাজের জন্য। আমি জানি কিছু শিক্ষক, তার মধ্যে একজন প্রফেসর স্লাগহর্ন চেয়েছিলেন সে মিনিস্ট্রি অফ ম্যাজিকে যোগ দিক। সে কারণে প্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের সাথে তার যোগাযোগও করিয়ে দিয়েছিলেন। ও সেসব প্রত্যাখ্যান করেছিলো। তারপর স্কুলের স্টাফেরা জানতে পারলো ও বোরজিন অ্যান্ড বার্কসে কাজ নিয়েছে।

আশ্চর্য হয়ে হ্যারি বললো বোরজিন বার্কস!

আমরা যখন হোকের মেমরিতে যাবো তখন দেখবে সেই দোকানটায় ওর কি আকর্ষণ ছিলো। কিন্তু ভোল্ডেমর্টের ওটা প্রথম পছন্দ ছিলো না। তার প্রথম পছন্দ ছিলো হোগার্টসে শিক্ষক হিসেবে থেকে যাওয়া… আমি সেই সময় কয়েকজনের মধ্যে একজন, যারা হেডমাস্টারের ঘনিষ্ঠভাজন ছিলাম। ও তখন প্রফেসর ডিপেটের কাছে আর্জি করে, ও হোগার্টসে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবে কি না। তিনি হোগার্টসে শিক্ষকতা করতে চেয়েছিলেন কেন? হ্যারি প্রশ্ন করে। প্রথমতঃ সে হোগার্টসকে নিজের বাড়ির মতো মনে করতো।

হ্যারি কথাটা শুনে একটু অস্বস্তি বোধ করলো কারণ সেও তো হোগার্টসকে নিজের বাড়ির মতো মনে করে।

দ্বিতীয়ত ও ক্যাসেল হচ্ছে পুরনো দিনের ম্যাজিকের একটি শক্তিস্থল।

একটা কথা মানতেই হবে ভোল্ডেমর্ট স্কুলের অনেক ছাত্রের চেয়ে স্কুলের গোপন বিষয় বেশি জানতো। ওর মনে এটা বেশ ভালোভাবেই গেঁথেছিলো যে অনেক ম্যাজিক আছে যা অনেকেরই অজানা। সেগুলো সে উদঘাটন ও জানতে চেয়েছিলো।

য়ত যদি শিক্ষক হতে পারে তাহলে সে সমস্ত তরুণ জাদুকর ও ডাইনিদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। খুব সম্ভব এই ধারণাটা ও স্লাগহর্নের কাছ থেকে পেয়েছিলো। ওর সঙ্গে ভোল্টেমর্টের বেশ ভালো সম্পর্কই ছিলো। কিন্তু ভোল্টেমর্টের আকাঙ্ক্ষা ছিলো আরো বেশি, সে তার ভবিষ্যৎ সংগঠনের জনবল সংগ্রহের একটা ক্ষেত্র বানাতে চেয়েছিলো হোগার্টসকে।

কিন্তু ওতো তখনো চাকরি পায়নি স্যার।

না, প্রফেসর ডিপেট ওকে বলেছিলেন, তার বয়স খুব কম মাত্র আঠারো বছর। কিন্তু কয়েক বছর পর নতুন করে দরখাস্ত করতে পারবে যদি সে তখন টিচার হতে চায়।

আপনি সে বিষয়ে কি অভিমত দিয়েছিলেন স্যার, সময় ব্যায় না করে জিজ্ঞেস করলো হ্যারি।

ডাম্বলডোর বললেন, আমি আরমান্ডোকে পরামর্শ দিয়েছিলাম ওকে শিক্ষক হিসেবে যেন নিযুক্ত করা না হয়। তার কারণ আমি তাকে ব্যাখ্যা করিনি যা তোমাকে বলেছি, ভোল্ডেমর্ট প্রফেসর ডিপেটের খুব প্রিয় ছিলেন। তার সততা প্রশ্নে তার কোনো সন্দেহ ছিলো না। কিন্তু লর্ড ভোল্ডেমর্ট স্কুলে ফিরে আসুক এবং বিশেষ করে কোনো ক্ষমতায় তা আমি চাইনি।

উনি কোন চাকরি বা কোন সাবজেক্ট পড়াতে চেয়েছিলেন স্যার। ডাম্বলডোর কি জবাব দেবেন হ্যারি আগেই জানতো।

ডিফেন্স এগেন্সট ডার্ক আর্টস। সেই সময় প্রবীন প্রফেসর গ্যালেটি মেরিথট সেই সাবজেক্টটা পড়াতেন। হোগার্টসে তিনি প্রায় পঞ্চাশ বছর অধ্যাপনা করেছিলেন।

ভোল্ডেমর্ট শেষ পর্যন্ত কলেজে পড়ানোর সুযোগ না পেয়ে বোরজিন অ্যান্ড বার্কসে চলে গেলো। স্কুলের যেসব স্টাফেরা ওকে পছন্দ করতো, তারা বললেন, ওর মতো একজন ব্রিলিয়েন্ট যুবক জাদুকরের শিক্ষকতার সুযোগ না পেয়ে একটা দোকানে কাজ করা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার! বোরজিন বার্কসে ভোল্ডেমর্ট কেরানীর কাজে বহাল হলো। ওর মতো সুশ্রী দ্র চালাক ছেলে পেয়ে ওরা খুবই খুশি হয়ে দায়িত্বপূর্ণ কাজ দিলো। তোমার তো অজানা নেই হ্যারি, ওরা অস্বাভাবিক এবং শক্তিশালী জিনিসের বিশেষজ্ঞ। ভোল্ডেমর্টকে ওরা বললো, যারা সব পুরনো নানা রকমের ট্রেজারস বিক্রি করতে চায় তুমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিনে আনার ব্যবস্থা করো। ভোল্ডেমর্ট খুবই যোগ্যতার সঙ্গে সেইসব কাজকর্ম করতে লাগলো।

আমি নিশ্চিত যে ভোল্ডেমর্ট সেই কাজে তার দক্ষতা প্রমাণ করতে পেরেছিলেন, হ্যারি নিজেকে সংবরণ না করতে পেরে বললো।

ঠিক ধরেছো, ডাম্বলডোর মৃদু হেসে বললেন। এখন শোনা যাক গৃহ ডাইনি। হোকের কথা। হেপজিবা স্মিথ নামে একজন বৃদ্ধা ধনী ডাইনির কাছে হেকে কাজ করতো।

ডাম্বলডোর তার জাদুদণ্ড একটা বোতলের ছিপির ওপর রাখতেই বোতলের মুখ থেকে ছিপিটা উড়ে গেলো। তারপর বোতলের তরল পদার্থটা ডাম্বলডোর পেনসিভে ঢেলে দিয়ে বললেন, এবার তুমি যাও, আমিও তোমার পিছু পিছু আসছি।

হ্যারি পেনসিভে শূন্যতার মধ্য দিয়ে অসম্ভব মোটা এক বৃদ্ধার বসার ঘরে এসে নামলো। মহিলার মাথায় দেখলো জমকালো জিঞ্জার পরচুলা, পরনে গোলাপি রঙের ঝাড়ু দেওয়া রোবস। মহিলাকে দেখে হ্যারির মনে হলো একটা প্রকাণ্ড আইসড কেক। মহিলার হাতে একটা ছোট জুয়েলের আয়না। তিনি আয়নাতে বার বার নিজের মুখটা দেখছেন আর তার লাল আভা যুক্ত পাউডারের পাফ দিয়ে গালে রুজ মেখে চলেছেন। একজন বেঁটে ছোটখাটো গৃহ ডাইনি ওর পায়ের কাছে বসে তার সাটিনের স্লিপারের ফিতে বাধছে। ওইরকম চেহারার গৃহ ডাইনী জীবনে খুবই কম দেখেছে হ্যারি!

হোকে তাড়াতাড়ি করো, হেপজিভা অধৈর্য হয়ে বললেন। ও বলেছে চারটের সময় আসবে, চারটে বাজতে দুএক মিনিট বাকি। তুমি তো জানো ও যে সময়ে আসবো বলে ঠিক সেই সময়ে আসে, এক সেকেন্ডও দেরি করে না।

হাউজ এলফ দাঁড়াবার সঙ্গে সঙ্গে হেপজিভা হাতের পাউডার পাফটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো। এলফ এতো বেঁটে যে ওর মাথাটা হেপজিভার চেয়ারের মাথা পর্যন্ত পৌঁছলো না। হেপজিভার ঝুলঝুলে গায়ের চামড়া প্রাচীন রোমানদের ঢিলে পোশাকের মতো ছড়িয়ে পড়লো।

বলতো আমায় কেমন দেখাচ্ছে? হেপজিভা হাতের আয়নায় ঘুরে ঘুরে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে দেখতে বললেন। হেপজিভার ধারণা বৃদ্ধা হলেও এখনো তিনি খুবই সুন্দরী!

দরজার ঘন্টিতে টিং টিং শব্দ হতেই মালকিন ও তার এলফ বলতে গেলে একরকম লাফিয়ে উঠলেন।

হোকে দাঁড়িয়ে থেকো না, তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দাও, ব্যস্ত হয়ে হেপজিভা। কথাটা বলতেই হোকে দরজা খোলার জন্য দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। হেপজিভার ঘরে রাশিরাশি জিনিসপত্র ছড়ানো, কি আছে আর কি নেই… টেবিল, চেয়ার, সোফা, লেকারে পালিশ করা অনেক তাকওয়ালা আলমারি, বাক্স, সিলেস্টিয়ল গ্লোবস, পিতলের হরেক রকমের ফুলের টব, বইয়ের তাকে থরে থরে সাজানো সোনার জলে বাঁধানো নতুন পুরনো বই। ঘরের ভেতরে হাঁটা দুঃসাধ্য। বলতে গেলে তার ঘরটা প্রাচীনকালের দুপ্রাপ্য ম্যাজিক সামগ্রির দোকান সংরক্ষণ করার ঘরের মতো।

মিনিট খানেকের মধ্যে এলফ ঘরে ঢুকলো, সঙ্গে এক লম্বা ছিপ ছিপে যুবক, খুবই সুশ্রী। হ্যারির লোকটিকে দেখে চিনতে একটুও অসুবিধে হলো না, ভোল্ডেমর্ট। ভোল্টেমর্টের পরনে সাধারণ কালো রঙের স্যুট, স্কুলের ছেলেদের চাইতেও লম্বা চুল, গাল দুটো সামান্য বসা। তাহলেও ওকে বেমানান দেখাচ্ছে না, দেখতে খুবই সুন্দর। ঘরের জিনিসপত্রের পাশ কাটিয়ে সাবলীল ভঙ্গিতে হেপজিভার একটা মোটা হাত ধরে চুম্বন করে মাথা নোয়ালো। দেখে মনে হয় আগেও ও অনেকবার ঘরটিতে এসেছে, হেপজিভার খুবই পরিচিত।

আপনার জন্য ফুল এনেছি, ও খুব ধীরে ধীরে কথাটা বলে হেপজিভার হাতে গোলাপ ফুলের একটা তোড়া দিলো।

বৃদ্ধা হেপজিভা বললেন, দুষ্টু ছেলে আমার জন্য কে তোমাকে ফুল আনতে বলেছে শুনি! হ্যারি দেখলো ভোল্টেমর্টের চোখ কিন্তু একটা খালি ফুলদানির ওপর। ফুলদানিটা হেপজিভা ওনার সামনেই রেখেছেন। টম ফুল এনে এই বুড়িটাকে গোল-য় দিচ্ছো। যাকগে বসো দেখি। হোকে, এই হোকে, তুমি কোন চুলোয় গেলে?

হোকে ঘরে ঢুকলো, হাতে একটা ট্রে তাতে কেক রাখা। ট্রে-টা হেপজিভার সামনে রেখে দিয়ে মালকিনের কনুইয়ের পাশে বসলো।

নাও, কেকটা খাও দেখি টম, হেপজিভা বললেন। আমি খুব ভালো করেই জানি আমার তৈরি কেক তুমি খেতে খুব ভালোবাসো। এখন বলো তুমি আছো কেমন? তোমাকে এতো রোগা দেখাচ্ছে কেন হে? মনে হয় দোকানের মালিক তোমাকে খুব খাটাচ্ছে? আমি কথাটা ওদের একশোবার বলেছি।

ভোল্ডেমর্ট হাসতে হবে বলেই হাসলো, আর ওর সামনে বসে থাকা বুড়ি হেপজিভা বোকার মতো ফিক ফিক করে হাসলেন।

এবার তুমি কি মনে করে এসেছো বলতো? হেপজিভা চোখ রগড়াতে রগড়াতে বললেন।

মি. বার্ক আপনার সেই গবলিনের বানানো বর্মের নতুন দর বাড়িয়েছেন…! ভোল্ডেমর্ট বললো। পাঁচশো গেলিয়ন, বার্ক মনে করেন দামটা ঠিকই বলেছেন।

শোনো, হড়হড় করে কোনো কথা নয়। তাহলে আমি তো ভাবতে পারি তুমি আমার কাছে খুব সাধারণ ছোট কিছু একটা কিনতে এসেছো। হেপজিভা গুরুগম্ভীরভাবে বললেন।

আমাকে আসতে বলেছেন বলেই এসেছি, ভোল্ডেমর্ট শান্তভাবে বললো। আমি একজন দোকানের অতি সাধারণ কর্মচারী, ম্যাডাম, আমাকে মালিক যা আদেশ করবেন আমাকে তা করতে হয়। মি. বার্ক আমাকে খোজ নিতে বললেন।

ওহো বার্কের কথা ছাড়াতো! হেপজিভা হাত নেড়ে কথাটা উড়িয়ে দিয়ে বললেন, আজকে আমি তোমাকে এমন একটা জিনিস দেখাবো যা তুমি বাপের জনমেও দেখোনি! কথাটা কিন্তু তোমাকে গোপন রাখতে হবে টম! প্রতিজ্ঞা করো তুমি মি. বার্ককে বলবে না জিনিসটা আমার কাছে আছে? যদি উনি জানতে পারেন ওটা আমার কাছে, আর তোমাকে দেখিয়েছি, তাহলে তিনি আমাকে পাগল করে দেবেন, বুঝলে টম এটা আমি বেঁচবো না, কাউকেও দেবো না। কিন্তু টম তোমাকে যদি জিনিসটার ইতিহাস বলি তাহলে তুমি সেটার মূল্য বুঝবে। সেটা দেখার পর আমাকে বলবে কতো গেলিয়ন আমাকে দিতে পারবে।

মিস হেপজিভা আমাকে বিনা দ্বিধায় সেটা দেখাতে পারেন, ভোল্ডেমর্ট বললো। কথাটা শুনে হেপজিভা বাচ্চা মেয়ের মতো হাসলেন। হোকে নিয়ে আসবে। হোকে তুমি কোথায় গেলে? আমাদের সেই অমূল্য সম্পদটা মি. রিডিলকে একবার দেখাতে চাই। হা আনছো যখন, তখন দুটোই নিয়ে এসো কেমন।

এনেছি ম্যাডাম হোকে খসখসে গলায় বললো। হ্যারি দেখলো দুটো চামড়ার বাক্স হাওয়াতে ভেসে গিয়ে মিস হেপজিভার কাছে এলো। ভালো করে দেখলো

ওগুলো হাওয়াতে ভেসে আসেনি। আসলে বেটে হোকে ওর মাথায় চাপিয়ে এনেছে। ঘরের টেবিল চেয়ার ও অন্যান্য আসবাবপত্রের জন্য ওকে চোখে পড়েনি।

হ্যাঁ হেপজিভা দুটো বাক্স কোলের ওপর রেখে প্রথম বাক্সের ঢাকনা খুলতে খুলতে বললেন, আমার মনে হয় এটা তোমার খুবই পছন্দসই হবে। আমার পরিবারের লোকেরা যদি জানে আমি তোমাকে এটা দেখিয়েছি তাহলে হৈ চৈ করে উঠবে… বুঝলে টম।

মিস হেপজিভা পুরো ঢাকনাটা খুললেন, হ্যারি বাক্সের ভেতরে কি রয়েছে। দেখার জন্য চেয়ারটা সামনে টেনে আনলো। ছোট একটা সোনার কাপ, তার দুপাশে দুটো হাতল।

আমার মনে হয় এটা তুমি জানো না টম। এটা তুলে নিয়ে ভালো করে দেখো। হেপজিভা খুব আস্তে বললেন। ভোল্ডেমর্ট ওর সরু হাতের আঙ্গুল দিয়ে তুলে নিলো। হ্যারি লক্ষ্য করলো ভোল্টেমর্টের লোভাতুর দৃষ্টি হেপজিভার চেহারায় প্রতিবিম্বিত হলো। শুধু তার কুতকুতে চোখে ভোল্ডেমর্টের সুন্দর মুখের দিকে তাকালেন।

কাপের বাইরের কারুকার্য পরীক্ষা করতে করতে ভোল্ডেমর্ট বললো, বেজির মতো দেখতে। তাহলে এটা ছিলো…?

দুষ্টু ছেলে, চালাক ছেলে, তুমি ভালো করেই জানো, এটা হলো হাপলপাফের। কথাটা বলে তার খোবড়ানো গালের গর্তে জিব লাগিয়ে একটা শব্দ করে বললেন, তোমাকে কি বলিনি আমি ওর দূর সম্পর্কের একজন বংশধর? বছরের পর বছর এটা আমাদের পরিবারে রয়েছে। বলল হে খুব সুন্দর নয় দেখতে? বুঝলে এর অসীম ক্ষমতা লুকিয়ে আছে। তবে সত্যি কথা বলতে কি আজ পর্যন্ত আমি এগুলো খুব ভালো করে কখনোই পরীক্ষা করিনি। আমি খুব যত্ন করে আমার কাছে। রেখেছি।

হেপজিভা খপ করে ভোল্টেমর্টের হাত থেকে কাপটা নিয়ে সযত্নে বাক্সের মধ্যে রেখে দিলেন! কাপটা রাখার সময়ে ভোল্ডেমর্টের লোলুপ মুখ চোখের চেহারার ছায়া কাপের ওপর এসে পড়েছে দেখলেন হেপজিভা।

দেখলে তো, হেপজিভা খুশি হয়ে বললেন। হোকে এই সময়ে তুমি আবার কোথায় গেলে বলতো? ও হ্যাঁ ওইতো তুমি–এখন তুমি এটা নিয়ে যেখানে ছিলো ঠিক সেখানে রেখে দাও।

হেপজিভার কথা শুনে হোকে তার কোলের ওপর থেকে ছোট বাক্সটা নিয়ে চলে গেলো। ও ছোট বাক্সটা নিয়ে গেলে কোলের ওপর রাখা বড়ো বাক্সটার দিকে তাকালেন।

এটা দেখলে তুমি চমকে উঠবে, টম, খুব ফিসফিস করে বললেন। মাথাটা ঝুঁকিয়ে এটা ভালো করে দেখো। বার্ক জানে এটা আমার কাছে আছে। ওর কাছ থেকেই তো আমি কিনেছি। আমি চলে গেলে এটা আবার ফেরত পেয়ে ও খুব খুশি হবে।

হেপজিভা রূপোর তার দিয়ে কারুকার্য করা বাক্সটার আংটাটা তুলে ঢাকনা খুললেন। হ্যারি দেখলো গোলাপি ভেলভেটের ওপর সাজানো রয়েছে একটা বেশ বড়ো সোনার লকেট।

মিস হেপজিভা ভোল্টেমর্টকে কিছু বলার আগেই ভোল্ডেমর্ট লকেটটা তুলে নিয়ে আলোর সামনে রেখে নিবিষ্ট মনে দেখতে লাগলো।

স্লিদারিনের ছাপ রয়েছে দেখছি, ভোল্ডেমর্ট বললো। আলো পড়ে লকেটের ওপর সর্পিল অলংকৃত এস অক্ষরটা ঝকমক করে উঠলো।

ভোল্ডেমর্ট মনোযোগ দিয়ে লকেটটা দেখছে দেখে হেপজিভা খুব খুশি হয়েছেন তার মুখ দেখে হ্যারির মনে হলো। আমি এটাকে একটা গলার চেন বানিয়ে সাজিয়ে রেখে দেবো ভেবেছিলাম, তা আর হয়ে ওঠেনি। এটা আমার অতি প্রিয় সংগ্রহ, কাউকে দিতে চাই না। বার্ক এই লকেটটা এক দরিদ্র মহিলার কাছ থেকে খুবই সামান্য গেলিয়নে কিনেছিলো, মনে হয় ও এটা চুরি টুরি করেছিলো তাই এটার মূল্য বুঝতে পারেনি।

হ্যারি দেখলো লকেটটা কেমন করে পেয়েছেন বলার পর ভোল্ডেমর্টের চোখ ভীষণভাবে ঝলসে উঠলো, আঙ্গুলগুলো লকেটের স্পর্শে সাদা হয়ে গেলো।

আমি হলফ করে বলতে পারি বার্ক সেই মেয়েটিকে ঠকিয়েছিলো, কিন্তু আপনি কম দামে বেঁচবেন কেন? তাছাড়া এই লকেটের মধ্যে রয়েছে অসীম শক্তি, আমাকে যদি এটা দেন তাহলে খুব সযত্নে রেখে দেবো।

হেপজিভা ভোল্টেমর্টের হাত থেকে ওটা নিয়ে নেবার জন্য হাত বাড়ালেন। হ্যারির মনে হলো যেনো ভোল্ডেমর্ট লকেটটা ফেরত দেবে না, কিন্তু লকেটটা ওর আঙ্গুল থেকে পিছলে বাক্সের লাল ভেলভেটের ওপর আগে যেমন ছিলো তেমনই ঝলমলাতে লাগলো।

না, টম এটা বেচার কোনো প্রশ্ন আসে না। হেপজিভা, ভোল্ডেমর্টের মুখের দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। হ্যারি দেখলো তার মুখে আর সেই বোকাবোকা হাসি নেই।

তোমার মুখ দেখে মনে হয়, তোমার শরীর ঠিক নেই।

না না, বেশ ভালো আছি, ভোল্ডেমর্ট শান্তভাবে বললো।

হ্যারির মিস হেপজিভার মুখ দেখে মনে হলো তিনিও হয়তো ভোল্টেমর্টের চোখে লাল আলো ঝলসাতে দেখেছেন। হোকে তুমি এদিকে এসো, এটা যেখানে ছিলো সেখানে মন্ত্র পড়ে তালা দিয়ে রেখে দাও।

ডাম্বলডোর বললো, এবারে তাহলে যেতে হবে হ্যারি। হোকে নিঃশব্দে বাক্সটা নিয়ে চলে গেলো।

তারপর আবার দেখলো ডাম্বলডোর অফিসে ফিরে এসেছে।

হ্যারি চেয়ারে বসার পর ডাম্বলডোর বললেন, যা দেখলে তার দুদিন পরে হেপজিভা মারা গেলেন, মিনিস্ট্রি হোকেকে ম্যাডাম হেপজিভাকে বিষ খাইয়ে হত্যার জন্য গ্রেফতার করলো। ও হেপাজিভার সন্ধ্যাকালীন কোকোর কাপে বিষ মিশিয়ে ছিল, অবশ্য ইচ্ছে করে নয়, ভুল করে। দুর্ঘটনা বলতে পারো।

হ্যারি বললো, আমার স্থির বিশ্বাস ভোল্ডেমর্ট…!

আমিও তোমার সঙ্গে একমত। ডাম্বলডোর বললেন। হেপজিভার হত্যার সঙ্গে অবশ্যই রিডিলদের হত্যার সাদৃশ্য আছে। দুটো হত্যাকাণ্ডেই আসল হত্যাকারীর পরিবর্তে অন্য কেউ নিজেকে হত্যাকারী বলে স্বীকার করে নিয়েছিলো।

হোকেও স্বীকার করেছিলো?

হ্যাঁ হোকে বলেছিলো, মালকিনের কোকোতে চিনির বদলে বিষ মিশিয়ে ছিলো, ইচ্ছে করে নয় ভুল করে। বয়স হয়েছে তাই ঠিক বুঝতে পারেনি।

ভোল্ডেমর্ট মরফিনের ব্যাপারে যা করেছিলো হোকের ব্যাপারেও স্মৃতির পরিবর্তন করেছিলো।

ঠিক তাই, ডাম্বলডোর বললেন। মরফিনের মত হোকেকেও মিনিস্ট্রি গ্রেফতার করে।

হোকে দোষী সাব্যস্ত হবার পর হেপজিভার আত্মীয়রা জানতে পারলো সেই অমূল্য দুটি সম্পদ, সেই কাপটি আর লকেট চুরি হয়ে গেছে। তবে জেনেছে হেপজিভার মৃত্যুর অনেক পরে। হেপজিভার স্বভাব ছিলো জিনিসপত্র সুরক্ষিত রাখার নানা স্থানে লুকিয়ে রাখতেন। তিনি কোথায় কি রেখেছেন ওর বাড়ির লোকেরা অনেক তল্লাশির পর জানতে পেরেছিলো। তাহলেও ওই দুটি জিনিস চুরি যাওয়াতে ওরা খুবই আশ্চর্য হয়েছিলো। তারপর আত্মীয়রা জানতে পারে বোর্গিন এন্ড বার্কসের যে তরুণ ছেলেটি হেপজিভার কাছে প্রায়ই আসতো, সে নিখোজ। টম রিডিল নামে এরপরে আর কাউকে পাওয়া যায়নি। তার মালিকরাও কোন খোঁজ পায়নি।

তারপর ডাম্বলডোর বললেন, তুমি যদি কিছু মনে না করো হ্যারি, তাহলে আমাদের গল্পের ব্যাপারে তোমাকে আরো কিছু বলতে চাই। ভোল্ডেমর্ট আরো একটা হত্যা করলো, সেই হত্যা রিডিলদের হত্যার পর প্রথম কিনা আমি সঠিক বলতে পারবো না। তবে আমার মনে হয় তাই। দুটো হত্যার মধ্যে একটা ছিলো প্রতিশোধের, অন্যটা ছিলো লাভের জন্য। ও সেই হতবুদ্ধি বৃদ্ধাকে খুন করেছিলো ওই দুটো ট্রফি দেখার পর চুরির জন্য, যেমন ও অনাথ আশ্রমে বাচ্চাদের ভালো জিনিস দেখলে চুরি করতো, যেমন ও ওর মামা মরফিনের হাতের কালো পাথর সেট করা আংটি চুরি করেছিলো… তো হেপজিভার সোনার কাপ আর লকেট চুরি করে পালিয়ে গেলো।

কিন্তু হ্যারি ভুরু কুঁচকে বললো, মনে হয় পাগল, এমন করে চাকরি বাকরি ছেড়ে চুরি করে কয়েকটা জিনিসের জন্য।

তোমার কাছে পাগলের কাজ মনে হতে পারে, কিন্তু ভোল্টেমর্টের কাছে নয়, ডাম্বলডোর বললেন। আশাকরি তুমি একটু একটু করে জানতে পারবে ওর কাছে ওই জিনিসগুলোর কি মূল্য, তবে তুমি আমার কথা অবশ্যই মানবে ও নিজেকে ওই লকেটের আসল মালিক মনে করেছিলো। লকেটটা না হয় সে কারণে নিলো, কিন্তু কাপটা নিয়ে গেলো কেন, হ্যারি বললো?

কারণ কাপটা একজন হোগার্টস স্কুলের ফাউন্ডারের ছিলো, ডাম্বলডোর বললেন। আমার মনে হয় আজও হোগার্টস স্কুলের প্রতি আকর্ষণ মনের মধ্যে গেঁথে রয়েছে। ও চায়নি হোগার্টস স্কুলের সম্পত্তি অন্য কারো কাছে থাকুক। ওটা তো হোগার্টসের ইতিহাসের স্মৃতি চিহ্ন। তাছাড়া আরো অনেক কারণ আছে বলে আমার মনে হয়। আশা করছি কারণগুলো তোমাকে একটু একটু করে দেখাতে পারবো।

তবে, এখন তোমাকে শেষ বিকালেকশন দেখাতে পারবো যদি তুমি কোনো উপায় অবলম্বন করে প্রফেসর স্লাগহর্নের স্মৃতি সংগ্রহ করে আমাকে এনে দিতে পারো। হোকের মেমরি, এবং এই মেমোরির পার্থক্য দশ বছরের ওই দশটা বছর লর্ড ভোল্ডেমর্ট কি করছে তা শুধু মাত্র আমরা অনুমান করতে পারি।

হ্যারিকে পেনসিভে শেষ মেমরি দেখবার জন্য ডাকলেন। এটা কার মেমরি… হ্যারি জিজ্ঞেস করলো।

আমার, ডাম্বলডোর বললেন।

ডাম্বলডোরের মুখ দেখে হ্যারির মনে হলো তিনি কারো আসার অপেক্ষা করছেন। ডাম্বলডোর ও হ্যারি সামান্য সময় সেই ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকার পর অফিস ঘরের দরজায় বাইরে থেকে নক করলো। ডাম্বলডোর দরজার দিকে তাকিয়ে বললেন, আসতে পারো।

হ্যারি রুদ্ধশ্বাস ফেলে দেখলো ভোল্ডেমর্ট ধীরে ধীরে দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলো। বছর দুই আগে পাথরের কলড্রন থেকে যে ভোল্ডেমর্ট বেরিয়ে এসে ওর। প্রিয় বন্ধু সেড্রিককে নির্মমভাবে হত্যা করে ছিলো সেই চেহারার সঙ্গে আজকের চেহারা অনেক তফাৎ। এখন তার চেহারাটা সাপের মতো নয়, অস্বাভাবিক লাল নয় তার দুটি চোখ, মুখটা মুখোশধারীর মতো নয়। আবার টম রিডিলের মতো সুশ্রী নয়। চোখের সাদা অংশে লালচে আভা, চোখের মণি দুটোতে নৃশংসতার ছাপ নেই। সুশ্রী চেহারাটার রঙ কালো, ঝাপসা ঝাপসা, মনে হয় রোদে পুড়ে ঝামা হয়ে গেছে। এখনো অনেকটা স্বাভাবিক। পরনে ওর কালো আলখেল্লা, বাইরে প্রচণ্ড তুষারপাত হচ্ছে তাই বাইরে থেকে আসার জন্য কাঁধে অনেক তুষার জমে রয়েছে। ওর মুখটা মলিন।

ডাম্বলডোর ওকে দেখে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন, শুভসন্ধ্যা টম। ওই চেয়ারটায় বসো।

ধন্যবাদ জানিয়ে ভোল্ডেমর্ট যে চেয়ারটায় বসলো সেই চেয়ারটায় পেনসিভে মুখ রাখার আগে হ্যারি বসেছিলো।

শুনলাম আপনি এখন হোগার্টস স্কুলের হেডমাস্টার হয়েছেন? ওর কণ্ঠস্বর চড়া চিরচিরে। যথাযোগ্য নির্বাচন।

তোমার সমর্থন পেয়ে খুশি হলাম, টম। কথাটা বলে ডাম্বলডোর হাসলেন। ড্রিঙ্ক চলবে?

খুবই সুখপ্রদ নিমন্ত্রণ। ঠাণ্ডায় অনেকটা পথ হেঁটে এসেছি মন্দ হবে না।

বর্তমানে যেখানে ডাম্বলডোর পেনসিভ রাখেন হ্যারি দেখলো সেখানে আলমারি রয়েছে। সেই আলমারির তাকে সাজানো রয়েছে ছোটো বড়ো নানা রকমের বোতল ভর্তি ওয়াইন। ডাম্বলডোর চেয়ার ছেড়ে উঠে দুটো পানপাত্রে ওয়াইন ঢাললেন। একটা ওয়াইন ভর্তি পানপাত্র ভোল্ডেমর্টকে দিয়ে বললেন, বলো, আমি তোমার জন্য কি করতে পারি? তুমি যে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে তার জন্য খুব খুশি হয়েছি, টম। ভোল্ডেমর্ট অস্থির দৃষ্টিতে হাস্যমুখী ডাম্বলডোরের দিকে তাকিয়ে কোনো জবাব না দিয়ে পানপাত্র ঠোঁটে ঠেকিয়ে একটা চুমুক দিলো।

আমাকে আজকাল কেউ টম বলে না। আমি এখন ভোল্ডেমর্ট নামে পরিচিত। ভোল্ডেমর্ট বলবেন।

ডাম্বলডোর খুব সুন্দরভাবে হেসে বললেন, কিন্তু তুমি তো আমার কাছে টম রিডিল, ওই নামেই পরিচিত থাকবে। আমাদের শিক্ষকদের জীবনে এই এক বড় সমস্যা! ছাত্ররা যতোই বড় হোক, আমরা শিক্ষকরা তাদের শিক্ষা জীবনের নামটা মনে রাখি, সেই নামে ডাকতে পারলে ভালোই লাগে। কথাটা বলে ডাম্বলডোর নিজের হাতে ধরা পান পাত্রটা সামান্য তুলে বললেন, চিয়ার্স টম।

হ্যারি লক্ষ্য করলো কথাটা শুনে ডাম্বলডোর গম্ভীর হয়ে গেলো। ঘরের আবহাওয়া হঠাৎ যেনো বদলাতে শুরু করলো। হ্যারির ভাল লাগলো যে ডাম্বলডোর-ভোল্ডেমর্ট বলতে রাজি হলেন না, তার মানে দাঁড়ায় যে তিনি ভোল্টেমর্টের কথামত কথাবার্তা বলতে রাজি নন, হ্যারি নিশ্চিত যে ডাম্বলডোর সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন।

ধন্যবাদ, আজও আপনি আমাকে মনে রেখেছেন। আপনার মতো এক প্রখ্যাত জাদুকর এখনো এই স্কুলের সঙ্গে জড়িত থাকাতে খুবই আশ্চর্য হচ্ছি। এই স্কুল ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে আপনার মন চায়নি?

তোমার কথা শুনে সুখী হলাম টম। মুখে তখনো লেগে রয়েছে মৃদুমন্দ মিষ্টি হাসি। আমার মতো জাদুকরদের, বিশেষ করে আমার প্রধান উদ্দেশ্য হলো, ছাত্রদের পুরাতন জাদুবিদ্যা শেখানো নতুন জ্ঞান অন্যদেরকে দেওয়া। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর হতে পারে না।

ডাম্বলডোর ভোল্ডেমর্টকে টম বলে সম্বোধন করে যাওয়ায় হ্যারির মনে হলো, ডাম্বলডোর এই সাক্ষাৎ সেভাবেই দেখতে চান। ভোল্টেমর্টের মত করে নয়।

একটা জিনিস বোধগম্য হয় না, কেন সময়ে অসময়ে মিনিস্ট্রি আপনার উপদেশ চেয়ে পাঠান। শুধু তাই নয় মিনিস্ট্রিতে আপনাকে মন্ত্রী হবার জন্য দুবার আমন্ত্রণ করা হয়েছিল।

দুবার নয়, সর্বশেষটা নিয়ে তিনবার। ক্যারিয়ার হিসেবে মিনিস্টিতে যোগ দেওয়ার আমার আগ্রহ নাই। এখানে আমাদের দুজনের মধ্যে মিল আছে।

ভোল্ডেমর্ট মাথা নেড়ে কথাটার সম্মতি জানালো। কিন্তু ওর মুখে হাসি নেই। কথার মোড় অন্যদিকে ঘুরছে।

ভোল্ডেমর্ট, ডাম্বলডোরের আরো কিছু কথা যেনো শোনার জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছেন।

যতদূর আমার মনে আছে তুমি বোধহয় হোগার্টস থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করে স্কুলেই শিক্ষকতা করতে চেয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলে তুমি, তাই না?

সেই ইচ্ছে আজও আমার আছে।

 আপনি নিশ্চই জানেন, সেই সুযোগ আমাকে দেওয়া হয়নি। শুনেছি প্রফেসর ডিপেট আমাকে শিক্ষকতার সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন। বয়স কম ছিলো তাই হয়নি। আপনার এখানে আসার আমার প্রধান উদ্দেশ্য আপনি আমাকে ক্যাসেলে আসতে দিন ও শিক্ষকতা করার সুযোগ দিন। আপনি বোধকরি জানেন এই স্কুল থেকে যাবার পর আমি অনেক কিছু দেখেছি, অনেক শিখেছিও। আমার অভিজ্ঞতা আপনার স্কুলের ছাত্রদের প্রচুর জ্ঞান দিতে পারবে, ওরা লাভবান হবে। এই সুযোগ আপনার স্কুলের ছাত্ররা অন্য কোনো জাদুকর শিক্ষকের কাছ থেকে পাবে না।

টম, সেকথা আমি শুনেছি। আমি জানি স্কুল ছেড়ে যাবার পর তুমি অনেক কিছু দেখেছো ও শিখেছো, ডাম্বলডোর শান্তভাবে বললেন। তোমার কাজ নিয়ে অনেক গুজবও এই স্কুলে পৌঁছেছে টম, আমি তার অর্ধেক বিশ্বাস করি বলে খুবই। দুঃখিত।

ভোল্ডেমর্টের মুখোভাবের কোনো পরিবর্তন হলো না, আগের মতোই উদাসীন। মানুষের মহান হওয়া ঈর্ষাকে জন্ম দেয়, আর ঈর্ষা জন্ম দেয় আক্রোশের, আক্রোশ রাশি রাশি মিথ্যার সৃষ্টি করে। এই প্রবাদ বাক্য আশাকরি আপনি জানেন ডাম্বলডোর।

তুমি বলতে চাইছে, মহান কাজকর্ম করছে, সেই মহান কাজটা কি আমাকে জানাবে? ডাম্বলডোর সরলভাবে বললেন।

অবশ্যই, ভোল্ডেমর্ট বললো। ওর চোখ দুটো লাল হয়ে গেলো, আমি প্রচুর। গবেষণা ও এক্সপেরিমেন্ট করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি, আমি ম্যাজিকের গণ্ডি বাড়িয়ে দিয়েছি, একটু বেশি মনে হতে পারে, তবে এটা সত্যি আমার মতো আগে কেউ এমন করেনি।

কিছু ম্যাজিক, ডাম্বলডোর ওকে শুধরে দিলেন। কিছু লোকের জন্য, সকলের জন্য নয়, আমার মনে হয় ম্যাজিক বিষয়ে তোমার… ক্ষমা করবে… বলতে বাধ্য হচ্ছি, তুমি অনভিজ্ঞ!

এই প্রথম ভোল্ডেমর্ট হাসলো। হাসিটা জোর করে বাঁকা হাসি, শয়তানিতে ভরা, উম্মার চাইতে অনেক বেশি ভয় প্রদর্শনের।

সেই পুরানো যুক্তি, ও নরমভাবেই বললো। কিন্তু আমি পৃথিবীর কোথাও দেখিনি আপনার বিখ্যাত উক্তিকে ভালোবাসা, আমার ম্যাজিকের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।

মনে হয়, তুমি ভুল পথে তার সন্ধান করেছো, ডাম্বলডোর বললেন।

আমার রিসার্চ হোগার্টস থেকে অন্য কোন স্থান ভাল হতে পারে না? ভোল্ডেমর্ট বললো। আপনি কি আমাকে কাজ করতে দেবেন এখানে? আপনি কি আপনার ছাত্রদের আমার জ্ঞানের অংশীদার হতে সাহায্য করবেন? আমি আমাকে ও আমার বিশেষ প্রতিভাকে আপনার সম্পূর্ণ অধিকারে সমর্পিত করছি, আপনার আজ্ঞার অধীনে আমি থাকতে চাই।

ডাম্বলডোর তার দুই ভুরু কুচকালেন।

যারা তোমার কথা মতো চলে, তোমার অনুগামী তাদের কি হবে তাহলে? যারা তাদের বলে, গুজব যা বলে, মানে সেই ডেথ ইটারদের?

হ্যারি ভোল্টেমর্টের মুখ দেখে বুঝতে পারলো ডাম্বলডোর ওই নামের সঙ্গে পরিচিত সে এটা আশা করেনি, দেখলো ভোল্ডেমর্টের চোখ দুটো আবার জ্বলে উঠলো আবার ওর ছোট ছোট গর্তওয়ালা নাকটা ফুলে উঠলো।

মনে হয় তখন আমার বন্ধুরা… আমাকে ছাড়াই তাদের কাজ কর্ম করে যাবে, এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

তুমি ওদের বন্ধু বলে মনে করছে বলে সুখী হলাম, ডাম্বলডোর বললেন। আমারতো এই ধারণা ছিলো তারা তোমার আজ্ঞা ভৃত্যের মতো বহন করে।

আপনি ভুল করছেন, ভোল্ডেমর্ট বললো।

সেই কথা যদি বলল, আমি যদি আজ রাতে হগসহেডে যাই তাহলে দেখতে পাবো না যে নট, রোজিয়র, মালকিবার, ডলোহড তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। সত্যই পরম বন্ধু তারা। এই শীতল বরফ পড়া রাতে বহুদূর থেকে তোমার সঙ্গে এসেছে, শুধুমাত্র তোমার শিক্ষকতার চাকরি যেন হয়, তার শুভ কামনা করতে।

ভোল্ডেমর্ট চকিতে বুঝতে পারলো ডাম্বলডোর জানেন কাদের সঙ্গে ও এখানে এসেছে। তাদের বিস্তারিত খবর তিনি রাখেন।

আপনি আগের মতোই সব খবর রাখেন দেখছি ডাম্বলডোর।

না তা ঠিক নয়। তোমার বন্ধুরা সেখানে জটলা করছে। ডাম্বলডোর হালকাভাবে বললেন।

এখন বলো আর কি বলবে টম? কথাটা বলে ডাম্বলডোর চেয়ারে বসে শূন্য গ্লাসটা টেবিল থেকে কাছে টানলেন। গ্লাসে আঙ্গুল রাখা তার একটা বৈশিষ্ট। শোনো টম, আমাদের খোলাখুলিভাবেই কথা বলা ভালো, আমিও জানি তুমিও জানো, আজ রাতে তুমি তোমার অনুচরদের কেন নিয়ে এসেছে। তুমি যে শিক্ষকতার জন্য আসোনি তা আমি জানি।

ভোল্ডেমর্ট আশ্চর্য হওয়ার দৃষ্টিতে তাকালো। আমি স্কুলের চাকরি চাই না? আপনি ভুল বুঝছেন ডাম্বলডোর, চাকরি আমার খুব দরকার।

হ্যাঁ, আমি জানি তুমি হোগার্টসে আসতে চাও, কিন্তু তোমার আঠারো বছর বয়সে তুমি শিক্ষকতা করতে এখানে আসতে চেয়েছিলে, এখন সে কারণে নয়। তারপর তুমি কি করেছে। এরপর আর চেষ্টা কেন করনি টম!

ভোল্ডেমর্ট নাক টানলো। তাহলে আপনি আমাকে চাকরি দেবেন না?

অবশ্যই, আমি চাই না, ডাম্বলডোর বললেন। তাছাড়া তুমি যে আসলে চাকরি চাও এটা সত্যি নয়। কি চাও তুমি খুলে বললো।

ভোল্ডেমর্ট চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। চেহারা মুখের ভাব অন্যরূপ নিলো। টম রিডল ও আর নয়। রাগে ওর দেহ আরো যেনো কঠিন হয়ে গেলো।

এটাই তাহলে আপনার শেষ কথা? তাই, ডাম্বলডোরও উঠে দাঁড়ালেন। তাহলে তো আর আমাদের কোনো কথা থাকতে পারে না।

না, আমার তো মনে হয় না, ডাম্বলডোর বললেন। বলার পর তার মনটা দুঃখ ভরাক্রান্ত হয়ে গেলো। সেই দিন আর নেই টম, যেদিন তোমাকে ভয় দেখাতে পারতাম, আলমারিতে আগুন জ্বালিয়ে তোমার অপরাধের শাস্তি দিতে পারতাম; কিন্তু এখনো মনের মধ্যে সেই ভাব জাগ্রত রয়েছে টম, আমি যদি পারতাম।

তখনই হ্যারি চাইলো ডাম্বলডোরকে সাবধান করে দিতে। ও দেখলো ভোল্ডেমর্ট পকেটে হাত দিয়েছে ম্যাজিক ওয়ান্ড বার করার জন্য। কিন্তু পর মুহূর্তে মেমরিতে দেখলো ভোল্ডেমর্ট নেই, দরজাটা বন্ধ।

তারপরই ও দেখলো ডাম্বলডোর ওর হাতটা চেপে ধরে রয়েছেন, আগে যেখানে দাঁড়িয়েছিলো সেই একই জায়গায়; কিন্তু জানালার কাঁচে তুষারের করাঘাত নেই, ডাম্বলডোরের হাতে কালো হয়ে যাওয়া ক্ষতটা দগদগ করছে।

কেন? ডাম্বলডোরের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো। কেন এসেছিলো, কি উদ্দেশ্যে এসেছিলো, আপনি কী কখনন, কোনো দিন তা জানতে চেষ্টা করেননি?

আমার কিছু ধারণা আছে, ডাম্বলডোর বললেন, তার বেশি কিছু নয়। কী ধারণা স্যার?

পরে তোমাকে বলবো হ্যারি, বলবো যখন তুমি প্রফেসর স্লাগহর্নের মেমরি এনে দিতে পারবে, ডাম্বলডোর বললেন। যখন তুমি প্রথম দশ ও শেষের দশের মাঝে দশ বছরের মেমোরিটা আনতে পারবে। তখন সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।

হ্যারি তখনো কৌতূহলের জ্বালায় ছটফট করছে। ডাম্বলডোর উঠে গিয়ে দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকলেও এগিয়ে গেলো না নিজের ঘরে ফিরে যেতে।

তিনি কি ডিফেন্স এগেন্সট ডার্ক আর্টস শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন, স্যার! তাই কী ও বলেনি…।

অবশ্যই, অবশ্যই। ডাম্বলডোর বললেন। আমাদের ছোট সাক্ষাৎকারে সেটাই তো প্রমাণিত হয়। তুমি তো দেখেছো আমরা আজ পর্যন্ত ডিফেন্স এগেন্সট ডার্ক আর্টসের কোনো শিক্ষককে এক বছরের বেশি রাখতে পারিনি, ভোল্টেমর্টকে সেই চাকরিটার জন্য প্রত্যাখ্যান করার পর।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *