১৯. এলফ টেইলস

১৯. এলফ টেইলস

তাহলে আগের মত ভাল হয়নি এবার রনের জন্মদিন? ফ্রেড বললো।

সন্ধে হয়ে গেছে, হাসপাতালের বেডে রন শুধু একা। হ্যারি, হারমিওন আর জিনি ওর বেডের চারপাশে বসে আছে। সারাদিন ওরা বাইরে অপেক্ষা করেছে রনের অবস্থা জানার জন্য। ঘরে ডবলডোর লাগানো, ভেতরে কেউ গেলে বা ফিরে আসলে দরজার ফাঁক দিয়ে রনকে দেখা গেছে। আটটার আগে ভেতরে ঢোকার নিয়ম নেই। মাদাম পমফ্রের কড়া নির্দেশ। ফ্রেড আর জর্জ দশটার পর এসেছে।

জর্জ রনের জন্মদিনের উপহারটা ওর বেডের পাশে ছোট্ট টেবিলে রাখতে রাখতে বললো, উপহারটা এমন অবস্থায় দিতে হবে কল্পনাও করিনি। ওর পাশে জিনি বসে দাদার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তখনো রনের জ্ঞান ফেরেনি।

জর্জ বললো, আমরা তো হগসমিডে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ দেবো।

তোমরা হাসমিডে ছিলে? জিনি আশ্চর্য হয়ে বললো।

সেখানকার গাছ-গাছড়া জোঙ্কা কিনতে গিয়েছিলাম, বিষাদ কণ্ঠে কথাটা বলে ও রনের বেডের পাশে একটা চেয়ার টেনে এনে হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললো, কেমন করে ওর এই অবস্থা হলো বলতো, হ্যারি?

হ্যারি যা যা ঘটেছিলো তা অন্তত একবার বলেছে–ডাম্বলডোর, ম্যাকগোনাগল, মাদাম পমফ্রে তো আছেনই, তারপর হারমিওন, জিনিকেও।

…তারপর আমি বেজোয়ারটা খুঁজে পেয়ে জোর করে ওর মুখে ঢুকিয়ে দেবার পর ওর অবস্থা একটু ভালো হলো, স্লাগহর্ন ছুটে আসলেন সাহায্য করতে। ম্যাকগোনাগল, পমফ্রে এসে গেলেন। রনকে হসপিটাল উইং-এ নিয়ে এলেন, পরীক্ষা করে বললেন, ঠিক হতে সপ্তাহখানেক লাগবে। এসেন্স অফ রুয়ে,.. খেতে হবে।

ঈশ্বর বাঁচিয়েছেন, ভাগ্যিস তোমার বেজোয়ারের কথাটা মাথায় এসেছিলো, জর্জ খুব চাপা গলায় হ্যারিকে বললো।

হ্যারি বললো, ভাগ্য ভালো, ওখানে ওটা ছিল। হ্যারি হীম হয়ে গেল যদি সেটা থাকতো তা ভেবে। হারমিওন দীর্ঘশ্বাস নিল সব শুনে, কিন্তু কোন কথা বললো না। সে প্রথম থেকেই নিরব। খবরটা শুনে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে শুধুমাত্র ঘটনা সম্পর্কে হ্যারিকে জিজ্ঞেস করেছিলো। রনকে পয়জন দেওয়ার বিষয়ে হ্যারি ও জিনির আলোচনায় হারমিওন অংশগ্রহণ করেনি। দাঁত চেপে, ভয়ার্ত মুখে নিরবে দাঁড়িয়ে আলোচনা শুনছিলো।

মা-বাবা খবর পেয়েছেন? ফ্রেড জিনিকে জিজ্ঞেস করলো।

খবর পেয়েই ছুটে এসে রনকে দেখে গেছেন, ঘন্টাখানেক আগে। এখন ডাম্বলডোরের অফিসে গেছেন, মনে হয় একটু পরেই ফিরবেন।

ওরা রনের দিকে তাকালো। রন ঘুমের ঘোরে অস্পষ্ট স্বরে যেনো কিছু বলতে চাইছে।

তো বিষটা ড্রিঙ্কের সঙ্গে মেশানো ছিলো? ফ্রেড শান্ত কণ্ঠে বললো।

হ্যাঁ, কথাটা শুনে হ্যারি তৎক্ষণাৎ বললো, এছাড়া অন্য কি ভাবে হতে পারে। ব্যাপারটা আলোচনার সুযোগ পেয়ে স্বস্তি পেলো।

স্লাগহর্ন ড্রিঙ্ক ঢেলেছিলেন? তোমার দৃষ্টির আড়ালে গ্লাসে তিনি কি ধরনের পয়জন দিয়ে থাকতে পারেন? হতে পারে, হ্যারি বললো। কিন্তু উনি রনের ড্রিঙ্কে বিষ মেশাবেন কেন?

বুঝতে পারছি না, ফ্রেড বললো। এমনওতো হতে পারে, তোমার গ্লাসে না দিয়ে ভুল করে রনের গ্লাসে দিয়েছিলেন? তার লক্ষ্য ছিলো তুমি।

কেন স্লাগহর্ন হ্যারির গ্লাসে বিষ মেশাতে যাবেন? জিনি প্রশ্ন করলো।

বলতে পারছি না। তবে অনেকেই থাকতে পারে, যারা হ্যারিকে বিষ খাইয়ে মারতে চাবে, ফ্রেড বললো। দ্যা চুজেন ওয়ান… হ্যারি।

তাহলে তুমি বলতে চাইছো স্লাগহর্ন একজন ডেথ ইটার? জিনি বললো। সবকিছুই সম্ভব, ফ্রেড বললো। এমনও তো হতে পারে ওকে ইমপেরিয়াস কার্স করা হয়েছে! জর্জ বললো।

এমনও তো হতে পারে, উনি কিছুই জানেন না। ওটা তার জন্যই কেউ রেখেছিলো?

স্লাগহর্নকে কে মারতে চাইবে?

ডাম্বলডোর একবার বলেছিলেন স্লাগহর্নকে ভোল্ডেমর্ট তার দলে চেয়েছিলেন, হ্যারি বললো। হোগার্টসে জয়েন করার আগে স্লাগহর্ন প্রায় বছর খানেক আত্মগোপন করেছিলেন। ডাম্বলডোর স্লাগহর্নের সম্পূর্ণ মেমরি বের করে আনতে পারেননি, হ্যারির সে কথা মনে পড়ায় বললো, হতে পারে স্লাগহর্ন ডাম্বলডোরের দলে যোগ দিক এটাই ভোল্ডেমর্ট চেয়েছিল। ভেবেছিলেন, ডাম্বলডোর তাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবেন।

কিন্তু তুমিতো বলেছে, মীডের বোতলটা স্লাগহর্ন ডাম্বলডোরকে ক্রিসমাসের উপহার দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন। জিনি হ্যারিকে কথাটা মনে করিয়ে দিলো।

আমার মনে হয় বোতলে পয়জনটা যে রেখেছিলো সে স্লাগহর্নকে ভালো করে চেনে না, হারমিওন বললো। এই প্রথম ও মুখ খুললো, এমন এক সুরে কথাটা বললো যেন ঠাণ্ডা লেগে ওর মাথায় অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে। যারা স্লাগহর্নকে ভালো করে চেনে, তারা জানে ভালো জিনিসটা তিনি নিজে ব্যবহারের জন্য রাখেন।

সেই সময় রন অস্পষ্ট স্বরে আবার কিছু বলে উঠলো।

ঘরের সকলেই রনের দিকে তাকালো। কি বলতে চায় শুনতে চাইলো। কিন্তু পরক্ষণেই রন নাক ডেকে ঘুমোতে লাগলো।

হাসপাতালের ডরমেটরির দরজা হঠাৎ খুলে গেলো, হ্যাগ্রিডকে দেখে ঘরের সকলে একরকম লাফিয়ে উঠলো। হ্যাগ্রিডের উসখো খুসকো চুল, জামা-কাপড়ও ঠিকমতো নয়, কোট জলে ভেজা, হাতে আড় ধনুক, কর্দমাক্ত বিরাট জুতো পায়ে। তার হাঁটার পথে ডলফিন সাইজের পায়ের দাগ রেখে গেলেন।

হ্যাগ্রিড তার নিজস্ব ইংরেজিতে বললেন, সারাদিন জঙ্গলে ছিলাম। অ্যারাগগ ভালো নেই… খুবই খারাপ অবস্থা। আমি ওকে কিছু পড়ে শোনাচ্ছিলাম… তা এখন রন কেমন আছে?

হ্যারি বললো, মোটামুটি একরকম। তারা বলছে, ঠিক হয়ে যাবে।

পমফ্রে তার অফিস থেকে ব্যস্ত হয়ে বেরিয়ে এসে বললেন, ছ জনের বেশি একসঙ্গে ভিজিটর থাকা যাবে না।

হ্যাগ্রিডকে নিয়ে ছজন, জর্জ পমফ্রেকে বললো।

মাদাম পমফ্রে হ্যাগ্রিডের বিরাট দেহ দেখে সম্ভবত ভেবেছিলেন–একজন নয় দুজন। নিজের ভুল আড়াল করার জন্য তাড়াতাড়ি তার ওয়ান্ড দিয়ে হ্যাগ্রিডের পায়ের কাদার ছাপ মুছতে লাগলেন।

আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, হ্যাগ্রিড বিরাট ঝাকড়া চুলওয়ালা মাথাটা দুলিয়ে বললেন। রনের তো কোনো শত্রু নেই কে ওকে বিষ দেবে!

এটাই তো আমরা আলোচনা করছি, হ্যারি বললো। এর বেশি তো আমরা জানি না।

কারো হয়তো তোমাদের কিডিচ টিমের ওপর আক্রোশ আছে। তাদের কাজও তো হতে পারে! হ্যাগ্রিড বললেন। গ্রিফিন্ডরের ওপর রাগ। প্রথমে কেটি তারপর রন!

আমার তো মনে হয় না ব্যাপারটা কিডিচ টিমের ওপর, জর্জ বললো।

ফ্রেড মোটামুটি হ্যাগ্রিডকে সমর্থন করে বললো, হতে পারে স্লিদারিনের কাজ। ওরা একটা প্লেয়ারকে আউট করতে চেয়েছে হয়তো?

আমারও কিডিচের ব্যাপার বলে মনে হয় না। তবে আমার মনে হয় এসব আক্রমণের পেছনে কোন একটা সংযোগ আছে, হারমিওন খুব ধীরে ধীরে বললো।

তুমি কেন এটা মনে করছো ফ্রেড ওর দিকে তাকিয়ে বললো।

ওয়েল, এটা একটা ভাবার বিষয়, দুজনেই মারা যেতে পারতো, তাই না? তা হয়নি,.. বলতে পারো সেটা ভাগ্যের ব্যাপার। চিন্তার বিষয় হবে, নেকলেস বা বিষ–যে দুজনকে হত্যা করার কথা, তাদের কাছে যে করেই হোক পৌঁছতে পারেনি। আরেকটা বিষয় যারা এই কাজ করছে সে বা তারা নিশ্চয়ই সাংঘাতিক ধরনের, তাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে অন্য লোকও যে মারা যেতে পারে সে বিষয়ে তারা মোটেই উদ্বিগ্ন নন।

হারমিওনের বক্তব্য আলোচিত হবার আগেই মি. এবং মিসেস উইসলি ওয়ার্ডে ঢুকলেন। তারা চান যতো শিগগির রন সেরে উঠুক। অন্তত বাড়ি ফেরার আগে সেটা দেখে যেতে চান।

মিসেস উইসলি হ্যারিকে দেখে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন।

ডাম্বলডোর আমাদের বলেছেন, কেমন করে তুমি রনকে বেজোয়ারের সাহায্যে বাঁচিয়েছো, মিসেস উইসলি ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললেন। ও হ্যারি তুমি জিনিকে বাঁচিয়েছিলে, আর্থারকেও, এখন তুমি রনকে বাঁচালে!

না, না আমি তেমন কিছু করিনি, হ্যারি বিনয় করে বললো।

আমাদের পরিবারের অর্ধেক লোক তোমার কারণে জীবন ফিরে পেয়েছে, মি. উইসলি সংযত গলায় বললেন। এখন, এখন আমি ভাবছি ও বলছি যে আমাদের পরিবারের জন্যে সেই দিনটি শুভ দিন ছিলো যেদিন রন হোগার্টস এক্সপ্রেসে তোমার পাশে বসেছিলো।

হ্যারি মি. উইসলির কথার কি জবাব দেবে জানে না, তবে মাদাম পমফ্রে যখন পুনরায় জানিয়ে দিলেন ছজনের বেশি কেউ এক সঙ্গে রনের কাছে কাছে থাকতে পারবে না, তখন সে আর হারমিওন ঘর ছেড়ে যাবার জন্য উঠে দাঁড়ালো আর ওদের সঙ্গে হ্যাগ্রিডও যাবার জন্য মনস্থির করলেন।

হারমিওন, হ্যারি ও হ্যাগ্রিড ডরমেটরি ছেড়ে চলে গেলে রয়ে গেলে উইসলির পরিবারের লোকেরা।

হসপিটালের পাথরের সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে হ্যাগ্রিড দাড়িতে হাত বুলোতে বুলোতে বললেন, সাংঘাতিক ব্যাপার। কতো রকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা, তবু বাচ্চারা রেহাই পাচ্ছে না। ডাম্বলডোর ভাবতে ভাবতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বেশি কথা বলতে চাইছেন না, কিন্তু আমি বলতে পারি…।

হারমিওন বললো, এ প্রসঙ্গে কোনো বক্তব্য নেই তার? কে করছে বলে তার ধারণা?

তার মতো বুদ্ধিমান মানুষের একটা নয় অনেক ধারণা থাকতে পারে, হ্যাগ্রিড অবিচলিত স্বরে বললেন। কিন্তু আমার মনে হয়, কে নেকলেসটা পাঠিয়েছিলো, ওয়াইনে কে বিষ মিশিয়েছিল তিনি তা জানেন না। জানতে পারলে নিশ্চয়ই ধরা পড়ে যেতো, তাই না? আমাকে এখন সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন করছে, হ্যাগ্রিড বললেন খুব আস্তে, হ্যারি কথা শোনার দূরত্বে আছে কিনা দেখে নিলেন, আর পিভস লুকিয়ে ওপরে বসে আড়িপেতে কথা শুনছে কিনা দেখে নিয়ে আবার বললেন, বাচ্চাদের এরকমভাবে ক্ষতি হতে থাকলে তাদের অভিভাবকরা চিন্তিত হয়ে তাদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবেন আর ছাত্র শূন্য হোগার্টকে কতদিন চালু রাখা যাবে। তাছাড়া এখানে রয়েছে চেম্বার অফ সিক্রেটস।

কথা বলতে বলতে হ্যাগ্রিড থেমে গেলেন। সেখান দিয়ে লম্বা চুলওয়ালা মেয়ে ভূত ভাসতে ভাসতে চলে গেলো। তারপর হ্যাগ্রিড বললেন, বোর্ড অফ গভর্নরস হয়তো স্কুলটা চিরতরে বন্ধ করে দিতে পারে।

হতেই পারে না, হারমিওন উদ্বিগ্ন হয়ে বললো।

তারা তাদের ভাবনা-চিন্তার ওপর সিদ্ধান্ত নেবে, হ্যাগ্রিড গম্ভীর স্বরে বললেন। তোমরা বলো কোন বাবা-মা তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে। চাইবে? একদল ছোট ছোট জাদুকর ছেলেমেয়েদের এক স্থানে রাখা আর খুন করতে চাওয়া, এক কথা নয়। আমার তো মনে হয় ডাম্বলডোর ও স্নেইপের ওপর ক্রুদ্ধ হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

হ্যাগ্রিড স্নেইপের নামটা সম্পূর্ণ বললেন না। থেমে গেলেন–মুখে তার অপরাধী ভাব ফুটে উঠলো। কালো দাড়িতে হাত বুলোতে লাগলেন।

কী বললেন? হ্যারি সঙ্গে সঙ্গে বললো। ডাম্বলডোর স্নেইপের ওপর ক্রুদ্ধ? তাতে আমি বলিনি, হ্যাগ্রিড বললেন। যদিও তার মুখ থেকে ভীত ভাব গেলো। ঘড়িতে দেখো কটা বেজেছে, মধ্যরাত্রি হয়ে গেছে আমাকে এখন যেতে হবে। হ্যাগ্রিড, ডাম্বলডোর কেন স্নেইপের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে আছেন? হ্যারি খুব উচ্চকণ্ঠে জানতে চাইলো।

চু… চু… চুপ! হ্যাগ্রিড খুব উত্তেজিত স্বরে বললেন। শোনো জোরে জোরে এমন কথা বলবে না হ্যারি, তুমি কি চাও আমার চাকরিটা যাক? তুমি কি তোমার ম্যাজিকের কাজকর্ম বাদ দিতে চাও?

আমাকে অপরাধি করার চেষ্টা করবেন না, করলেও কিছু লাভ হবে না, হ্যারি জোর গলায় বললো। জানেন স্নেইপ কি করেছেন?

আমি জানি না হ্যারি, আমি কিছু শুনিনি, আমি সেদিন সন্ধেবেলা জঙ্গল থেকে আসবার সময় কিছু লোক বলাবলি করছিলো শুনেছি, তারা তর্ক করছিলো। আমি ওদের কথার মধ্যে নিজেকে জড়াতে চাইনি, তাই কান বন্ধ করে চলে এসেছিলাম। তা হলেও উত্তপ্ত কিছু কথা কানে এসেছিল।

যা শুনেছেন তাই বলুন, হ্যারি হ্যাগ্রিডকে চাপ দিলো। হ্যারি দেখলো হ্যাগ্রিডের বিরাট পা দুটো কাঁপছে। ঠিক মতো হাঁটতে পারছে না।

শুনছিলাম স্নেইপ নাকি বলেছেন ডাম্বলডোর খুব বাড়াবাড়ি করছেন, তাই এখানে ও আর কাজ করবেন না।

কি বাড়াবাড়ি করছেন?

আমি ঠিক বলতে পারবো না হ্যারি। স্নেইপ মনে করছেন তার ওপর অনেক বেশি কাজ চাপিয়েছেন, তাছাড়া স্নিদারিনদের ঘর সার্চ করিয়েছেন। অবশ্য সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। শুধু সেই হাউজে নয় সকল হেড অফ হাউজদের বলেছেন, নেকলেসটা খোজ করার জন্য।

হারমিওন আর হ্যারি দৃষ্টি বিনিময় করলো।

তাইতো কিন্তু তা নিয়ে তো কারো সঙ্গে ডাম্বলডোরের গোলমাল হয়নি। হ্যারি বললো।

হ্যাগ্রিড নার্ভাস হয়ে তার হাতের আড় ধনুক পাকাতে পাকাতে বললেন, একটা কথা শোনো, তখনই ওরা শুনতে পেলো ঝন ঝন্ শব্দ, খুব বেশি করে পাকানোর ফলে হাতের ধনুকটা দুটুকরো হয়ে গেলো। আমি জানি স্নেইপ সম্পর্কে তোমার মনোভাব, হ্যারি। আমি চাই না তুমি ওই ব্যাপারে নিজেকে জড়াও।

এই যে দেখ, হারমিওন খুব জোরে বললো।

ঠিক সেই সময় ওরা আরগাস ফিলচকে দেওয়ালে দেওয়ালে ঘুরে বেড়াতে দেখলো। ফিলচ বললো, এতো রাতে তোমরা ঘুরে বেড়াচেছা? তোমাদের ডিটেনসন হবে।

তা হবে না ফিলচ, হ্যাগ্রিড সংক্ষেপে বললেন। ওরা আমার সঙ্গে আছে। তাতে হয়েছেটা কি? ফিলচ বাজে ভাবে বললো।

আমি ওদের টিচার, তাই না? ধানি পটকা, ত্যাগ্রিড ওর দিকে চোখ লাল করে বললেন।

হ্যাগ্রিড বললেন, এবার তোমরা যাও। বলার সঙ্গে সঙ্গে হ্যারি ও হারমিওন সেখান থেকে বিদায় নিলো।

ওরা গ্রিফিন্ডর টাওয়ারের কাছে গিয়ে দেখলো পিভস বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে… আনন্দে আটখানা হয়ে দুলে দুলে গান গাইছে

যখন হবে ঝগড়া বিবাদ যখন হবে গণ্ডগোল
পিভসকে যদি ডাকো তখন
বানাবে তা ডবল!

ফ্যাট লেডি নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন, জাগিয়ে দেওয়াতে মোটেই খুশি হলেন না। গজগজ করতে করতে ওদের ফাঁকা কমনরুমে ঢুকতে দিলেন। রনের ব্যাপারটা খুব চাউর হয়নি বলে ওরা বুঝতে পারলো। অনেক রাত হয়ে গেছে, হারমিওন ওর শোবার ঘরে চলে গেলো।

হ্যারি ওর ঘরে না গিয়ে ফায়ার প্লেসের কাছে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে এসে জ্বলন্ত কাঠগুলো দেখতে লাগলো।

বেশ বুঝতে পারা গেলো, ডাম্বলডোর স্নেইপের সঙ্গে বচসা করেছেন। যতোই উনি হ্যারির কাছে তার সাফাই গান, স্নেইপের ওপর যথেষ্ট আস্থা রাখেন বলেন, তা হলেও স্নেইপের সঙ্গে তার মেজাজ ঠিক রাখেননি। স্নেইপ যে স্নিদারিনদের তদন্ত করেননি, এমন কি একজন স্লিদারিনকে বা ম্যালফয় কারো সম্পর্কে কোনো তদন্ত করেনি সেটা হ্যারি সুনিশ্চিত।

এমনও কি হতে পারে ডাম্বলডোর চাননি হ্যারি নিজের বুদ্ধি বিবেচনায় মূখের মতো কাজ করুক, তাই হ্যারি স্নেইপের ওপর সন্দেহের ব্যাপারে কোনো সায় দিতে চাননি, ভান করে স্নেইপ আড়াল করেছিলেন। আবার এমনও তো হতে পারে ডাম্বলডোর চাননি এইসব ঝামেলাতে জড়িয়ে পড়ে হ্যারি ওর পড়াশুনার ক্ষতি করুক। অথবা চেয়েছেন স্লাগহর্নের কাছ থেকে সঠিক মেমরি সংগ্রহ করতে বেশি মনোযোগ দিক, বা ষোল বছরের একটি ছাত্র শিক্ষকদের সঙ্গে অবিশ্বাসের আবহাওয়া সৃষ্টি করুক এটা চাননি।

ও হো পটার, তুমি এখানে? আচমকা ওর নাম শুনে হ্যারি হাতে জাদুদণ্ড নিয়ে চমকে লাফিয়ে উঠলো।

কমনরুমে ঢোকার সময় ওর মনে হয়েছিলো কেউ নেই। তাই চমকে ওঠা অস্বাভাবিক নয়। অদূরে একটা চেয়ারে যে করম্যাক ম্যাকলেগেন বসে রয়েছে তা হ্যারির চোখে পড়েনি।

হ্যারি যে হাতে জাদুদণ্ড নিয়েছে ও সেদিকে তাকালেই না। বললো, আমি তোমার অপেক্ষায় বসেছিলাম, তুমি কি ঘুমুচ্ছিলে? উইসলিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখলাম, মনে হচ্ছে এর পরের ম্যাচে ও খেলতে পারবে না। সারতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে… তাই না।

ম্যাকলেগেনের কথাটা হ্যারির কানে ঢুকেও ঢুকলো না, তবে একটু পরে বুঝতে পারলো। ও তুমি কিডিচ খেলার কথা বলছো? হ্যারি কথাটা বলে হাত থেকে দণ্ডটা জিনসের বেল্টে গুঁজে রাখলো। তারপর উসখো খুসকো চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে নিলো। ও হ্যাঁ তাই মনে হয়।

তাহলে তো তুমি ওর জায়গায় আমাকে কীপার হিসেবে নিতে পারো। ম্যাকলেগেন বললো।

হ্যাঁ তাই মনে হয়।

হ্যারির বেশি কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো না। তবে ভেবে দেখলো রনের পরেই ওর স্থান।

দারুণ! ম্যাকলেগেন লাফিয়ে উঠে বললো। তাহলে কবে আমাদের প্র্যাকটিস ম্যাচ হবে?

কি বললে? প্র্যাকটিস ম্যাচ? আগামীকালইতো হবার কথা।

তোমার কথা শুনে খুব খুশি হলাম পটার। খেলার আগে আমি তোমার সঙ্গে দুএকটা কথা বলতে চাই। এই স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কে শুনলে তোমার উপকার হবে।

আজ আমার শরীরটা ভালো নেই, কাল শুনবো… গুডনাইট।

রনের খবরটা পরেরদিন হোগার্টসে সকলে জেনে গেলো, তবে কেটির মতো হৈ চৈ পড়ে গেলো না। সকলেই ধরে নিলো বিষক্রিয়া হয়েছে, হাসপাতালে আছে, অ্যান্টিডট খেয়েছে, নিছক একটা দুর্ঘটনা, দুচারদিনের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে যাবে। পরের খেলা হাফপাফের সঙ্গে। গ্রিফিন্ডররা খুবই ব্যাগ্র জেতার জন্য। জ্যাকেরিয়া হাফপাফের চেজার। আগের খেলায় ও ধারাভাষ্য করেছিলো ধারাভাষ্যে খুবই নাজেহাল করে ছেড়েছিলো গ্রিফিন্ডারকে।

হ্যারির কিডিচ খেলা প্রাণ। কিন্তু ইদানিং খেলাতে আগ্রহ কমে গিয়ে সেটা পড়েছে ড্রেকো ম্যালফয়ের ওপর। যখনই সময় পায় ম্যাপ খুলে ওকে ধরবার চেষ্টা করে। সোজা পথে না গিয়ে ঘুর পথে ও দৃষ্টিবদ্ধ করার চেষ্টা করে, কিন্তু তাও পায় না। অনেক কষ্টে নজরবন্দি করে কিন্তু তারপরই অদৃশ্য হয়ে যায় ম্যাপ থেকে।

হ্যারি ম্যালফয়ের ব্যাপারে মন দিয়ে কিছু করার বা সমস্যা সমাধানের একদম সময় পাচ্ছে না। কিডিচ খেলা, রেগুলার ক্লাস, হোমওয়ার্ক তো আছেই, তার ওপর ম্যাকলেগেন আর ল্যাভেন্ডার ব্রাউন ওর পেছনে ফেউ-এর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে।

ওই সবের মধ্যে কোনটা যে বিরক্তিকর তাও ঠিক করতে পারছে না। ম্যাকলেগেন প্রায় ওর মাথা খারাপ করে দিয়েছে টিমে পার্মানেন্ট খেলার জন্য বলছে, তেমন সুযোগ দিলে ও যে রনের চাইতে অনেক ভালো কিপার সেটা হাতে কলমে দেখিয়ে দেবে। তাছাড়া টিমের বিভিন্ন খেলেয়োড়দের বিরুদ্ধে সুযোগ পেলেই কথা বলে। টিমের প্লেয়ারদের সমালোচনা ছাড়া বক বক করে ওর নানা ট্রেনিং স্কিম-এর পরিকল্পনা নিয়ে। বিরক্ত হয়ে হ্যারি ওকে বলতে বাধ্য হয়, আমি টিমের ক্যাপ্টেন, যা করার আমি করবো, তুমি মাথা ঘামাবে না।

ওদিকে ল্যাভেন্ডারের রনকে নিয়ে ঘ্যানঘ্যানানি ম্যাকলেগেনের কিডিচ লেকচারের চাইতেও বিরক্তিকর মনে হয়। ল্যাভেন্ডার রেগে আছে, রনের অসুস্থতা ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বিষয়ে আগে ওকে কেউ জানায়নি বলে। প্রথমে রেগে গিয়ে বলেছিলো আমি ওর বান্ধবী… তারপর সুবিধে হলো না দেখে খবর জানার জন্য হ্যারির পিছু পিছু ঘুরতে লাগলো। রন ওর বিষয়ে কি ভাবছে না ভাবছে তা জানারও তীব্র আগ্রহ। হ্যারি হয়তো ওর মনের দুঃখ, মনের কথা বুঝতে পারবে।

হ্যারি ওর হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবার জন্য বললো, এসব কথা আমাকে বলে লাভ কি। তুমি সরাসরি রনকে বলো।

ল্যাভেন্ডার বললো, আমি তাকেই বলবো, কিন্তু যখনই আমি হাসপাতালে যাই দেখি ও ঘুমে অচেতন।

তাই নাকি? হ্যারি আশ্চর্য হয়ে বললো। হ্যারি কিন্তু যখনই রনের সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে যায় ওকে ঘুমোতে দেখে না। দিব্যি ওর সঙ্গে কথা বলে, খবরা খবর নেয়। ডাম্বলডোর ও স্নেইপের বিষয়ে জানতে চায় রন। রন ম্যাকলেগেনকে যতোটা পারে গালাগাল দেয়।

ল্যাভেন্ডার হঠাৎ একদিন জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা হারমিওন কি রনের কাছে নিয়মিত যায়?

হ্যারির কথাটা শুনে অস্বস্তি হলো, বললো, তা যাবে না কেন? আমরা তো পরস্পরের ছেলেবেলাকার বন্ধু।

ল্যাভেন্ডার বিরক্তিমাখা মুখে বললো, বন্ধু? তোমার কথা শুনে আমার হাসি পাচ্ছে। যখন থেকে রনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব তখন থেকে হারমিওন তো ওর সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করেছে। মনে হয় এখন আবার সে নতুন করে সম্পর্ক করার চেষ্টা করছে, এখন তো রন খুবই আকর্ষণীয়।

ল্যাভেন্ডার তোমার কি মনে হয় রনকে বিষ খাইয়ে দেওয়াটা খুব আকর্ষণীয় ব্যাপার? হ্যারি ওকে বললো, যাকগে চলি, ওদিকে ম্যাকলেগেন দেখছি কিডিচ প্রসঙ্গে আমার সঙ্গে কথা বলতে আসছে। কথাটা বলে হ্যারি সংক্ষিপ্ত পথ ধরে পোশানের ঘরের দিকে চললো… সেখানে ল্যাভেন্ডার বা ম্যাকলেগেন তো থাকবে না।

হাফপাফের সঙ্গে যেদিন খেলা সেদিন সকালে হ্যারি হাসপাতালে রনের সঙ্গে দেখা করতে গেলো, সেখান থেকে ও সরাসরি পিচে চলে যাবে। ম্যাডাম পমফ্রে ওকে মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে অনুমতি দিচ্ছেন না, তাই ও অসম্ভব রেগে আছে। পমফ্রে বলেছেন, ওর এখন উত্তেজিত হওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। খেলা দেখলেই উত্তেজনা বাড়বে।

রনের জায়গায় ম্যাকলেগেন খেলছে ভেবে রনের মন ভালো নেই। একই প্রশ্ন হ্যারিকে দুদুবার করলো ম্যাকলেগেন কেমন খেলবে? পারবে তো?

হ্যারি বললো, আমি তোমায় আগেই বলেছি মন দিয়ে খেললে, মাথা থেকে অন্যসব চিন্তা, অন্যের সমালোচনা বন্ধ করলে ও একজন ওয়ার্ল্ডক্লাস প্লেয়ার হতে পারবে। ওর ধারণা ও যেকোনো পজিশনে খেললে সকলের চেয়ে ভাল খেলবে। এইটাই ওর সবচাইতে বড় দোষ। তুমি নেই তাই বাধ্য হয়ে ওকে রাখতে হচ্ছে।

কথাটা বলে হ্যারি ওর ফায়ারবোল্ট তুলে নিলো। তারপর বললো, একটা কথা শোনো, ল্যাভেন্ডার যখন তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে তুমি কিন্তু ঘুমিয়ে থাকার ভান করবে না। ও কিন্তু আমাকে প্রায় পাগল করে দিয়েছে।

তাই? রন ঘুমিয়ে পড়বে এমন ভাব করে বললো। আচ্ছা তাই হবে।

শোনো, তুমি যদি ওর সঙ্গে আর বন্ধুত্ব রাখতে না চাও তাহলে বলে দেবে, অযথা ঝুলিয়ে রাখবে না। হ্যারি বললো।

বুঝেছি, তবে বলাটা খুবই সহজ নয়, কথাটা বলে ও হাসলো। হারমিওন নিশ্চয়ই খেলা দেখতে যাচ্ছে? রন সাধারণভাবে বললো।

ও জিনির সঙ্গে অনেক আগেই মাঠে চলে গেছে।

তাই, রন গম্ভীর হয়ে বললো। ঠিক আছে, ম্যাচ জিতে ফিরে এসো। ম্যাকলেগেন স্মিথ, ওকে একটু চাপের মধ্যে রাখবে।

চেষ্টা করবো, হ্যারি ঝাড়ুটা হাতে নিলো। খেলার পর দেখা হবে।

হ্যারি জনশূন্য করিডর দিয়ে দ্রুত খেলার মাঠের দিকে চললো। স্কুলের সব ছেলে-মেয়েরা খেলা দেখতে গেছে মাঠে। স্টেডিয়ামে বসার স্থান দখল করে বসে আছে ইতোমধ্যে, নয়তো মাঠের দিকে চলেছে। হ্যারি যাবার সময় খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে খেলার কথা আর হু হু করে বয়ে যাওয়া হাওয়ার কথাও ভাবছিলো। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনে চকিতে সামনে তাকালো। দেখলো ম্যালফয় ওর দিকে এগিয়ে আসছে। ওর পাশে দুটি মেয়ে, ওদের দুজনকেই গোমড়া আর অপ্রসন্ন দেখাচ্ছে।

ম্যালফয় হ্যারিকে দেখে থামলো। তারপর তীর্যকভাবে হ্যারির দিকে তাকিয়ে হেসে মেয়ে দুটিকে নিয়ে চলে গেলো।

হ্যারি ওর কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলো, কোথায় চললে? ও হ্যাঁ হ্যাঁ তোমার সঙ্গেই তো কথা বলতে দাঁড়ালাম, কারণটা সম্পূর্ণ তোমার ম্যালফয় কাটাকাটাভাবে, বললো। ও দাঁড়িয়ে থেকো না, যাও যাও সকলে চুজেন ক্যাপ্টেনের জন্য অপেক্ষা করছে। চুজেন ক্যাপ্টেন–দ্যা বয় হু স্কোরড–যে নামেই তোমাকে ওরা ডাকুক আজকাল।

দুটি মেয়ের মধ্যে একজন যেনো অনিচ্ছাকৃতভাবে হাসলো। হ্যারি ওর দিকে তাকাতেই ওর মুখটা লাল হয়ে গেলো। ম্যালফয় মেয়েটিকে সামনের দিকে ঠেলে দিয়ে করিডরে বাঁকের দিকে গেলো তারপর হ্যারির দৃষ্টির বাইরে চলে গেলো।

হ্যারি যেখানে ছিলো সেখানেই খানিকটা সময় দাঁড়িয়ে রইলো। সুযোগ হারাবার জন্য মন ভারাক্রান্ত। দাঁড়াবার সময় নেই, খেলা শিগগির আরম্ভ হবে। আশ্চর্য! সমস্ত স্কুলের ছেলেমেয়েরা যখন মাঠে গিয়ে ম্যাচ দেখার জন্য পাগল তখন ম্যালফয় মেয়ে দুটিকে সঙ্গে নিয়ে কোথায় চললো? হ্যারি ম্যালফয়ের মুখোমুখি দাঁড়ানোর সর্বোচ্চ সুযোগ হারালো। পাথরের মতো যেখানে দাঁড়িয়েছিলো সেখানেই খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো হ্যারি।

হ্যারি হন্তদন্ত হয়ে ড্রেসিং রুমে ঢুকলে জিনি চোখ বড় বড় করে বললো, কোথায় ছিলে, এতো দেরি?

হ্যারি দেখলো ও ছাড়া টিমের সকলেই খেলার জন্য পিচে যাবার জন্য প্রস্তুত। কুটি আর পিকস, দুজনেই বিটারস, দুজনেই নার্ভাস, বল মারার ব্যট দিয়ে পাএ ঠুকছে।

হ্যারি ওর সবুজ রঙের রোবসটা হাত উঁচু করে খুলতে খুলতে বললো, আসার সময়ে আমার ম্যালয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিলো।

তার জন্য দেরি হয়েছে? তোমার আজকের খেলার চেয়েও…।

আমি ওর কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলাম, স্কুলের সমস্ত ছেলেমেয়েরা মাঠে ভিড় করেছে তখন তুমি দুটি মেয়েকে নিয়ে করিডরে ঘুরে বেড়াচ্ছো কেন?

এখন ওসব প্রশ্নের কোনো মানে আছে?

হ্যাঁ, তুমি তো জানো ওকে অনেক চেষ্টা করেও খুঁজে পাচ্ছি না, ফায়ারবোল্ট আর চশমা ঠিক করে চোখে লাগাতে লাগাতে বললো হ্যারি। চলো এবার যাওয়া যাক।

তারপর কোনো কথা না বলে পিচের দিকে চললো। ওকে দেখে দর্শকরা চিয়ার্স করলো আবার বিরোধীপক্ষরা টিটকারি দিতে লাগলো, বিশ্রিভাবে গলার আওয়াজ করতে লাগলো। হাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে, আকাশে খণ্ড খণ্ড কালো মেঘ উড়ে চলেছে। মেঘের ফাঁকে ফাঁকে সূর্য উঁকি মারছে, তখন মাঠ উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে সূর্যের প্রখর কিরণে।

আবহাওয়া খুবই ঘোলাটে। ম্যাকলেগেন হ্যারিকে উপেক্ষা করে কুট আর পিকসকে বললো, তোমরা কিন্তু সূর্যকে আড়াল না করে উড়বে তাহলে ওরা তোমাদের দেখতে পাবে না।

ম্যাকলেগেন আমি টিমের ক্যাপ্টেন, প্রয়োজন মতো আমি প্লেয়ারদের নির্দেশ দেবো, তুমি চুপ থাকবে। হ্যারি নির্দেশের স্বরে ম্যাকলেগেনকে বললো। যাও গোলপোস্টের কাছে যেয়ে দাঁড়াও।

ম্যাকলেগেন চলে গেলে হ্যারি কুট আর পিকসের দিকে তাকালো।

মনে থাকে যেন তোমরা কিন্তু সূর্যের আলোতে উড়বে না, হ্যারি গজগজ করতে করতে ওদের বললো।

ও হাফপাফের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে করমর্দন করে ম্যাডাম হুচের হুইসেলের অপেক্ষা করতে লাগলো। হুইসেল শোনার সাথে সাথে মাটিতে কিক করে আকাশে উড়ে গেলো। ওর টিমের প্লেয়ারদের অনেক ওপরে ভাসতে লাগলো। ও ক্যাসেলের ওপর দিকে উড়ে গিয়ে মারাওডার্স ম্যাপটা নিয়ে এসে ম্যালফয় কোথায় আছে দেখবে। সমস্যাটা হচ্ছে স্নিচটা ধরার।

শুনতে পেলো ধারাভাষ্য চলছে, হাফপাফের স্মিথ কোয়াফিল ধরেছে। জিনি উইসলি ওর কাছে উড়ে এসেছে, স্মিথের হাত থেকে কোয়াফিল চলে গেছে, জিনি ধরে ফেলেছে, জিনি অসাধারণ খেলছে, আমি ওর খেলা খুবই পছন্দ করি।

হ্যারি ওপর থেকে ধারা ভাষ্যের মঞ্চ দেখলো, দেখতে পেলো লুনা লাভগড় আর প্রফেসর ম্যাকগোনগালকে।

ওহো এখন হাফপাফের লম্বা প্লেয়ারটি মেয়েটির কাছ থেকে কোয়াফিল ছিনিয়ে নিয়েছে, মেয়েটির নাম আমার মনে নেই বিবিল না, বাগিনস।

লুনার পাশ থেকে খুব জোরে জোরে বললেন, ক্যাডওয়ালডার। দর্শকরা হেসে উঠলো।

হ্যারি নিচে তাকিয়ে স্নিচের খোঁজ করলো স্নিচের কোনো পাত্তা নেই। পরমুহূর্তে ক্যাডওয়ালডার গোল করে দিলো। গোল খেয়ে ম্যাকলেগেন চিৎকার করে গোলের জন্য জিনিকে দায়ি করলো।

হ্যারি পটার ওপর থেকে নিচে নেমে এসে ম্যাকলেগেনকে ধমকে বললো, তুমি অপরকে দোষ দিচ্ছো কেন? লাল বলটা তোমার পাশ দিয়ে গোলে ঢুকে গেলো তুমি ধরতে পারলে না? অন্যের দিকে না তাকিয়ে তুমি গোল আটকাও। আবার পটার ওপরের দিকে উড়ে গিয়ে ছোট ডানাওয়ালা সোনার বলটা খোঁজ করতে লাগলো।

লুনা হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলো, দেখুন দেখুন গ্রিফিন্ডরের কীপার একজন বিটারের ব্যাট কেড়ে নিয়েছে।

হ্যারি ওপর থেকে দেখলে ম্যাকলেগেন পিকসের ব্যাটটা কেড়ে নিয়েছে। দেখাচ্ছে কেমন করে ব্লাজার মারতে হয়।

হ্যারি ওপর থেকে ম্যাকলেগেনকে বললো, ওর ব্যাট ওকে দিয়ে তুমি গোলপোস্টে যাও। ততক্ষণে ম্যাকলেগেন ব্যাটটা ব্লাজারে অসম্ভব জোরে মারলো। সেটা ব্লাজারে না লেগে হ্যারির মাথায় লাগলো। তারপর দৃষ্টি আচ্ছন্নকারী যন্ত্রনাদায়ক তীব্র একটা আলোর রশ্মি, কারো বহুদূর থেকে আর্তনাদ, বিরাট এক অন্ধকার সুড়ঙ্গ দিয়ে নেমে আসছে।

জ্ঞান ফিরলে দেখলো এক আরামদায়ক শয্যায় শুয়ে আছে। উপরে তাকালো, দেখলো সিলিং-এ সোনালি রঙ-এর আলো জ্বলছে। আলোকে ঘিরে রয়েছে একটা

সই বৃত্ত থেকেও সোনালী আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। ওর পাশের বিছানায় অতি পরিচিত এক মানুষ তামাটে তার গায়ের রঙ, মাথার চুল লাল।

খুব ভালো হয়েছে তুমি এখানে এসেছে, রন পাশ ফিরে হ্যারির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো।

হ্যারি চোখ পিটপিট করে এধার ওধার তাকালো। বুঝতে পারলো হাসপাতালে শুয়ে রয়েছে। জানালা দিয়ে দেখলো নীল আকাশ, মাঝে মাঝে গোলাপি দাগ। তাহলে তো ওদের খেলা ঘণ্টাখানেক আগে শেষ হয়ে গেছে। তাহলে ম্যালফয়কে ধরার কোনো আশা নেই। ওর মাথাটা মনে হলো অদ্ভুত রকমের ভার। হাত দিয়ে অনুভব করলো ব্যান্ডেজ বাঁধা।

কি হয়েছে আমার মাথার খুলি কী ফেটে গেছে, হ্যারি জিজ্ঞেস করে। ওকে ধরে বালিশে মাথাটা রাখতে রাখতে, মাদাম পমফ্রে বললেন, চিন্তা করার কিছু নেই। দ্রুত ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছি, কিন্তু আজ রাতটা তোমাকে এখানে থাকতে হবে। কয়েক ঘণ্টা চুপটি করে শুয়ে থাকতে হবে বেশি নড়াচড়া করা চলবে না।

আমি সারারাত এমনিভাবে এখানে শুয়ে থাকতে পারবো না, হ্যারি রেগে বললো। বিছানা ছেড়ে উঠে গায়ে জড়ানো চাঁদরটা টান মেরে সরিয়ে দিলো, ম্যাকলেগেন কোথায়? আমি ওকে খুন করবো।

তাই যদি করো তাহলে বেশি নড়াচড়া হবে, মাদাম পমফ্রে ওকে জোর করে শুইয়ে দিলেন। তারপর জাদুদণ্ড তুলে ভয় দেখানোর ছলে বললেন, আমি যতোক্ষণ

তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি এখানে তোমাকে শুয়ে থাকতে হবে পটার, কথা যদি না শোনো তাহলে হেডমাস্টারকে খবর দিতে হবে।

পমফ্রে হ্যারিকে মৃদু বকেঝকে অফিসে চলে গেলেন। হ্যারি বালিশে মুখ গুঁজে রাগে ফুসতে লাগলো।

খেলার খবর জানার জন্য হ্যারি রনকে জিজ্ঞেস করলো, আমরা কতো গোলে হারলাম তুমি জানো?

জানি, রন মুখ কাঁচুমাচু করে বললো, ফাইনাল স্কোর তিনশো কুড়ি আর ষাট।

হ্যারি দারুণ রেগে গিয়ে বললো, ব্রিলিয়েন্ট, সত্যি ব্রিলিয়েন্ট! যখন আমি ম্যাকলেগেনকে ধরবো

ওকে তুমি ধরতে যেও না, ওর দেহের মাপ তো জানো, রন বললো।

থাকগে তুমি কিছু ভেবো না। তুমি এখানে চালান হবার পর আমাদের টিমের সবাই ওকে উচিৎ শিক্ষা দিয়েছে। ওরা ম্যাকলেগেনের ওপর অসম্ভব রেগে আছে।

রনের মুখে চাপা হাসি দেখে হ্যারির মনে হলো, ম্যাকলেগেন খেলাটা বরবাদ করার জন্য ও খুব খুশি। হ্যারি ঘরের সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে রইলো। ওর মাথার খুলি ভাঙার জন্য খুব একটা ব্যথা পাচ্ছিলো না, কিন্তু ব্যান্ডেজ বাঁধার জন্য একটু অস্বস্তি লাগছিলো।

রন বললো, এখানে বসে বসে আমি খেলার ধারাবিবরণী শুনেছি। ওর গলার সুর হাসিতে কাপছে। শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে লুনার গলার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম।

হ্যারি এতোটা ক্রুদ্ধ যে রনের তামাশা একটুও ভাল লাগলো না।

তুমি যখন অজ্ঞান ছিলে জিনি এসেছিলো, রন অনেকটা সময় চুপ করে বসে থাকার পর বললো। হ্যারি কথাটা শুনে হঠাৎ ভাব জগতে চলে গেলো। ভাবতে লাগলো ও মৃত আর জিনি ওর মৃতদেহ দেখে কাঁদছে।

হ্যারির প্রতি গভীর আকর্ষণের স্বীকারোক্তি! রন কাছে দাঁড়িয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে, ওর কথায় সম্বিত ফিরে পেল হ্যারি। তুমি ঠিক খেলা শুরুর আগে মাত্র পৌঁছেছিলে, এতোক্ষণ কোথায় ছিলে? তুমি তো অনেক আগেই এখান থেকে খেলার জন্য বেরিয়ে গিয়েছিলে।

কি বললে? ওর চোখ থেকে সেই কম্পিত দৃশ্য তখনো উধাও হয়নি, ভাসছে। ও হ্যাঁ, মাঠে যাওয়ার আগে দেখলাম ম্যালফয় দুটি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। মেয়ে দুটির মুখ দেখে মনে হলো না ওরা ম্যালয়ের সঙ্গে যেতে চায়। এবার নিয়ে দ্বিতীয়বার দেখলাম স্কুলের সবাই যখন কিডিচ খেলা দেখতে গেছে তখন ও মাঠে যায়নি। গতবারের খেলাতেও ছিলো না, তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে? কথাটা বলে হ্যারি দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ম্যাচটা ওই রকম হবে জানলে আমি খেলা ছেড়ে ওকে ফলো করতাম।

ধ্যাৎ, বোকার মতো কথা বলবে না। টিমের ক্যাপ্টেন হয়ে তুমি খেলা ফেলে ম্যালয়ের পেছন পেছন ছুটতে? রন রেগে গিয়ে বললো।

আমি জানতে চাই ওর মতলবটা কি! হ্যারি বললো। ওর সঙ্গে স্নেইপের যেসব কথা শুনেছি, তাতে চুপ করে থাকতে পারি না, তুমি ভাববে না যে আমি অযথা ওকে নিয়ে ভাবছি।

 রন ভুরু কুঁচকে কনুইয়ে ভর দিয়ে বসে বললো, আমি তা মোটেই বলছি না, তবে সে যে একাই সকল ষড়যন্ত্র করছে তা কি করে ভাবো, অন্যরাও করতে পারে। তুমি ম্যালয়ের ব্যাপারে বাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, হ্যারি। ও একটা ম্যাচ মিস করেছে বলে ওর পিছু নিতে হবে?

তুমি যাই বলল রন, আমি ওকে হাতেনাতে ধরতে চাই। হ্যারি হতাশার সুরে বললো। আমি জানতে চাই ম্যাপ থেকে উধাও হবার পর ও কোথায় যায়?

আমি কেমন করে জানবো, হগসমিডেও যেতে পারে। রন হাই তুলতে তুলতে বললো।

আমি কখনো ম্যাপে দেখিনি হয়তো ও কোনো গোপন পথ দিয়ে যাচ্ছে। আমি জানি সেই পথগুলো ওয়াচ করা হচ্ছে এখন দেখা যাক কি হয়।

একই উত্তর দিচ্ছি, আমার জানা নেই, রন বললো। দুজনেই চুপ করে গেলো। হ্যারি চিন্তিত মুখে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে রইলো।

ও যদি স্ক্রিমগৌর হতো তাহলে তো কোনো কথাই ছিলো না। ম্যালফয় কি করে, কোথায় যায় সবই জানতে পারতো, আর হ্যারির তো অফিস নেই এবং ওর কাজ করার জন্য অফিস ভর্তি অরর নেই। ওর কোনো ক্ষমতা নেই, ওর কথা কে শুনবে? ও অবশ্য ওর ডিএর (ডিফেন্স এগেন্ট ডার্ক আর্টস) বন্ধুদের নিয়ে খোঁজ খবর করতে পারে, তারা ওর কথা শুনবে। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়–ওদের পড়াশুনা আছে প্রতিদিনের ক্লাশ আছে। ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে তো সম্ভব নয়।

হ্যারি রনের মৃদু নাকডাকার শব্দ শুনতে পেলো। একটু পরে মাদাম পমফ্রে মোটা একটা ড্রেসিং গাউন পরে ঘরে এসে চারদিকে তাকিয়ে জাদুদণ্ড দিয়ে জানালার সব পর্দা ফেলে দিলেন। হ্যারি ঘুমোবার ভান করে পাশ ফিরে শুয়ে থাকলো। পর্দা ফেলে দেবার পর ঘরের দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে চলে গেলেন। ওর ঘরের দরজা বন্ধের ক্লিক শব্দ শুনে হ্যারি বুঝতে পারলো এবার দ্রিা যাবেন।

হ্যারি এবার নিয়ে তিনবার কিডিচ খেলায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালে এসেছে। গতবারে পিচের চারধারে ডিমেন্টররা থাকার জন্য হাত থেকে ঝাড়ু পড়ে গেলে মাটিতে পড়ে গিয়েছিলো। তার আগেরবার প্রফেসর লকহার্টের অকর্মন্যতার জন্য হাতের সব হাড় বদলাতে হয়েছিলো। সেই সময় তার আঘাতটা মারাত্মক হয়েছিলো। অসম্ভব যন্ত্রণাদায়ক আঘাত, ওর মনে আছে এক রাতের মধ্যে হাতে নতুন হাড় গজানোর দুঃসহ যন্ত্রণা। তাছাড়া চেনা-অচেনা একগাদা ভিজিটর সেই যন্ত্রণার মধ্যে এসে…।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হ্যারি বিছানার ওপর সোজা হয়ে বসলো। বুকের ভেতরটা থর থর করতে লাগলো। মাথার ব্যান্ডেজটা কিছুটা স্থানচ্যুত হয়ে গেলো। হ্যাঁ সমস্যার সমাধান শেষ পর্যন্ত হয়ে গেলো। ম্যালফয়ের পিছু নেবার একটা পথ আছে। সেই সহজ সরল কথাটা আগে ওর মনে পড়েনি কেন?

কিন্তু প্রশ্ন, ওকে কেমন করে বলবে?

খুব শান্ত নিঃস্তব্ধভাবে হ্যারি অন্ধকারে বললো–ক্রেচার?

বলার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের শান্ত আবহাওয়া উবে গেলো। মারাত্মক সব দুমদুম ফটফট শব্দে তীব্র চিৎকার, ধস্তাধস্তির শব্দ শুনে রন চিৎকার করে বিছানায় উঠে বসলো।

কী হয়েছে এতো গোলমাল কিসের?

হ্যারি এক মুহূর্ত দেরি না করে ওর ম্যাজিক দণ্ডটা মাদাম পমফ্রের অফিসের দিকে প্রসারিত করে বললো, মাফলিয়াটো যাতে পমফ্রে দৌড়ে আসতে না পারেন। তারপর ও হামাগুড়ি দিয়ে বিছানার একপ্রান্তে এসে দেখলো কি ঘটল।

দুজন হাউজ এলফস ডরমেটরির ফ্লোরের মাঝখানে গড়াগড়ি দিচ্ছে, একজনের পরনে কুঁচকানো মেরুণ রঙের জাম্পার আর একগাছা উলের টুপি, অন্য একজন নোংরা পুরনো কম্বল কোমরে জড়ানো। তারপরই আবার শব্দ, পিভস কোথা থেকে এসে ওই দুই এলফের উপর পড়লো।

আমি ওদের কাণ্ড দেখছিলাম, পন্টি পিভস বললো।

ক্রেচার কখনোই ডব্বির সামনে হ্যারি পটারকে অপমান করবে না, ঝগড়া থামিয়ে ডব্বি খুব জোরে জোরে বললো।

হ্যারি আর রন অনেক কষ্টে ডব্বি আর ক্রেচারের ঝগড়া থামালো।

ক্রেচার বললো, মাস্টার যা চাইবেন ক্রেচার তাই করবে–ক্রেচারের তো ইচ্ছে–অনিচ্ছে নেই, তাহলেও ক্রেচারের এমন মাস্টার পছন্দ নয়।

ডব্বি তাহলে কাজ করবে হ্যারিপটারের! ডব্বি বললো, ওর বড় বড় টেনিস বলের মতো চোখ জলে ভর্তি। হ্যারি পটারের কাজ করতে পারলে ডব্বি নিজেকে সম্মানিত মনে করবে।

তোমরা দুজনে আমার কাজ করলে আমি খুশি হবো, হ্যারি বললো। ঠিক আছে, তোমরা দুজনেই যখন আমার কাজ করছে তখন আমি চাই তোমরা ড্রেকো ম্যালফয় কোথায় আছে খুঁজে বের করো। ওর পিছু নাও। হ্যারি বলে চললো, আমি জানতে চাই ও কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেলামেশা করছে, কি করছে। আমি চাই সারাদিন রাত ওকে ধাওয়া করো।

হা হ্যারি পটার ডব্বি তাই করবে, ডব্বির বড়ো বড়ো চোখ দুটো জ্বল জ্বল করে উঠলো। ডব্বি যদি ভুল করে তাহলে ডব্বি টাওয়ারের উঁচু তলা থেকে নিচে পড়বে, হ্যারি পটার।

হ্যারি তখনই বললো, না না তার দরকার হবে না?

মাস্টার তাহলে আমাকে সবচেয়ে ছোট ম্যালফয়ের ওপর গোয়েন্দাগিরির আদেশ দিচ্ছেন, আমার পুরনো পিওর ব্লাডের মালকিনের ভাইপো।

কথাটা কিন্তু গোপন রাখবে তোমরা।

ক্রেচার মাথা নত করে বললো, মাস্টার যা আদেশ করবেন, যদিও ওই ম্যালফয় ছেলেটার কাজ করতেই আমার ইচ্ছা…।

তাহলে তোমাদের সাথে এই কথা রইলো, হ্যারি বললো। আমি কিন্তু তোমাদের কাছে প্রতিদিন কাজের রিপোর্ট চাই। তবে রিপোর্ট করার সময় লক্ষ্য রাখবে অন্য লোকজনের সামনে কিন্তু করবে না, শুধু রন আর হারমিওন ছাড়া। ম্যালয়ের পেছনে শরীরে আচিলের মতো আটকে থাকবে মনে থাকবে তো?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *