১৭. এ স্লাগিশ মেমোরি

১৭. এ স্লাগিশ মেমোরি

নববর্ষ শেষ হয়েছে। এবার হোগার্টসে ফেরার পালা। সন্ধের দিকে রন, জিনি কিচেনের আগুনের ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্টেশনে যাবার প্রতীক্ষায়। ওদের জিনিসপত্র সব ট্রাঙ্কে ভরা হয়ে গেছে। ফুঁ নেটওয়ার্কের সাহায্যে মিনিস্ট্রি সব ছাত্রছাত্রীদের হোগার্টসে ফেরার ব্যবস্থা করেছে, যাতে তারা দ্রুত আর নিরাপদে স্কুলে পৌঁছতে পারে। একমাত্র মিসেস উইসলি ওদের বিদায় জানাবার জন্য উপস্থিত রয়েছেন। মি. উইসলি, বিল, ফ্রেড-জর্জ, ফ্লেউর যে যার কাজে ব্যস্ত। মিসেস উইসলি সেই যে পার্সি আসার পর কাঁদতে শুরু করেছেন তা আর কিছুতেই থামছে না। ক্রিসমাস ডে-তে ওর হঠাৎ চলে আসা আর গাজর সেদ্ধ খাওয়া কাঁচের বাসন ভাঙ্গার কথা বার বার বড় বেশি মনে পড়ছে। (ভাঙ্গার পেছনে ফ্রেড, জর্জ, আর জিনির হাত ছিলো)।

জিনি মিসেস উইসলির পিঠে হাত বুলিয়ে বললো, কেঁদো না মা, সবকিছু তো ঠিক আছে।

ওহ্ মা! কেন আমাদের জন্য অযথা ভাবছো, রন মায়ের গালে বড় দেখে একটা চুম্বন করে বললো। পার্সি তো ভালই আছে, ওর জন্য দুঃখ করছো কেন।

হ্যারিকে জড়িয়ে ধরে মিসেস উইসলি আরো ফোপাতে লাগলেন। মিসেস উইসলি বললেন, আমাকে স্পর্শ করে বলো–তোমরা সবাই ভালো ছেলেমেয়ে হয়ে পড়াশোনা করবে, বাজে কাজে মন দেবে না, নিজেদের প্রতি যত্ন নেবে।

তাই আমি করি মিসেস উইসলি, হ্যারি বললো। আপনি তো জানেন আমি শান্ত জীবন চাই।

মিসেস উইসলি আবার সকলকে আদর করে বললেন, কথা দিচ্ছো, আমি যেভাবে তোমাদের বলেছি তোমরা সেভাবে চলবে।

হ্যারি পান্না রঙের আগুনে প্রবেশ করে খুব জোরে বললো, হোগার্টস! ও শেষবারের মতো উইসলিদের কিচেনের কিছু অংশ দেখতে পেল আর, মিসেস উইসলির ক্রন্দনরত মুখ, আগুন ওকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে নেবার আগে, প্রবলভাবে লাটুর মতো বনবন কর ঘুরতে ঘুরতে ও অন্যান্য উইজার্ডিং রুম ঝাপসা দেখতে পেলো, ঘরগুলো ওর দৃষ্টির বাইরে চলে গেল। তারপর ও সবকিছু স্বচ্ছভাবে দেখতে পেল, তারপর নিচে নামতে লাগলো। শেষে ম্যাকগোনাগলের অফিসের ফায়ারপ্লেসে পৌঁছলো। হ্যারি গ্রেট ফায়ার প্লেসের থেকে বাইরে আসার আগে দেখলো মিসেস ম্যাকগোনাগল কাজ করতে করতে ফায়ার প্লেসের দিকে অল্প-একটু তাকালেন।

শুভ সন্ধ্যা পটার, ঘরের মধ্যে কার্পেটে যেন ছাই না পড়ে।

অবশ্যই না প্রফেসর। হ্যারি চশমাটা ঠিক করে বললো মাথার চুলগুলো আঙ্গুল দিয়ে আঁচড়াতে আঁচড়াতে দেখলো রন লাটুর মতো ঘুরতে ঘুরতে আসছে। জিনিও তেমনিভাবে ম্যাকগোনাগলের অফিস ঘরে পৌঁছলো। তারপর ওরা অফিস ঘর থেকে এক সঙ্গে গ্রিফিন্ডর টাওয়ারের দিকে চললো। করিডর দিয়ে যেতে যেতে হ্যারি জানালার দিকে তাকালো। অস্তমিত সূর্যের লাল আভা বাইরের মাঠের ওপর পড়েছে। মাঠ, কার্পেটের মতো জমাট বরফে ঢাকা রয়েছে। ওর উইসলিদের বাগানের দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। অদূরে দেখতে পেল হ্যাগ্রিড ওর কেবিনের সামনে বাকবিককে খাওয়াচ্ছেন।

ফ্যাট লেডির সামনে গিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে রন বললো, বউব্লেস। ফ্যাট লেডি সামান্য রোগা হয়েছেন, একটু যেন ফ্যাকাশে। ছুটিতে যাবার আগে যেমনটি দেখেছিলো তেমন আর নেই।

না, ফ্যাট লেডি বললেন।

না! তার মানে?

এখন নতুন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে, ফ্যাটলেডি একটু উচ্চস্বরে বললেন।

অনুগ্রহ করে উচ্চস্বরে কথা বলবে না।

আমরা তো হোগার্টসে ছিলাম না, ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলাম। নতুন পাসওয়ার্ড জানবো কেমন করে?

হ্যারি-জিনি!

ওরা পেছন ফিরে দেখলে হারমিওন ওদের দেখতে পেয়ে, ওদের দিকে আসছে।

ওর পরনে হালকা লাল রঙের ক্লোক, মাথায় হ্যাট আর হাতে দস্তানা।

আমি মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে এসেছি, এসেই হ্যাগ্রিড আর বাক, মানে উইদার উইংগসের সঙ্গে দেখা করে এলাম, হারমিওন হাঁফাতে হাঁফাতে বললো। তা তোমাদের ক্রিসমাস ভালোই কেটেছে, তাই না?

খু-উ-ব ভালো, রন তৎক্ষণাৎ বললো। অনেক সুন্দর সুন্দর বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যাপার, রুফাস ক্রিম।

হারমিওন রনের কথার উত্তর বা ওর দিকে একবারও তাকালো না, ওর কথায় কান না দিয়ে হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললো, তোমার সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে। নতুন পাসওয়ার্ড হচ্ছে অ্যাবস্টিনেন্স।

ফ্যাট লেডি দুর্বল কণ্ঠে বললো, ঠিক বলেছো, কথাটা বলে পোর্ট্রেটের দিকে এগিয়ে গেল।

হ্যারি হারমিওনকে বললো, কি হয়েছে ওনার?

মনে হয় ক্রিসমাসে খুব খাওয়া-দাওয়া-মদ্যপান করেছেন। লাকভর্তি কমনরুমে যেতে যেতে বললো। বন্ধু ভায়োলেটের সঙ্গে চার্মর্স করিডরের ড্রাংক মংকসের ছবির কাছে প্রচুর ওয়াইন খেয়েছেন, যাকগে।

কথাটা বলে হারমিওন ওর পকেটে হাত পুরে ডাম্বলডোরের লেখা পাকানো একটা পার্চমেন্ট বার করলো। তোমার।

হ্যারি বললো, চমৎকার, দেখি কি লিখেছেন। ডাম্বলডোর লিখেছেন, পরবর্তী লেসন পরের দিন রাতে হবে।

হ্যারি বললো, ওনাকে অনেক অনেক খবর দেবার আছে, তোমাকেও। চলো কোথাও নিরিবিলিতে বসি।

ঠিক সেই সময় ওদের কানে এলো ওন…ওন। ওরা দেখলো ল্যাভেন্ডার ব্রাউন দৌড়াতে দৌড়াতে এসে রনকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো। ল্যাভেণ্ডার রনকে আদর করে ওন বলেই ডাকে।

অনেকেই ওই দৃশ্য দেখে নাক সিঁটকোলো। হারমিওন মুখ বেঁকিয়ে হাসলো। অদূরে একটি খালি টেবিল দেখিয়ে বললো, চলো ওইখানে বসা যাক। জিনিকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো, জিনি জিনি।

ধন্যবাদ, তোমরা বসো, আমি ডিনের জন্য অপেক্ষা করছি, জিনি বললো।

হ্যারি লক্ষ্য করলো, হারমিওনের গলার স্বর ঠিক স্বাভাবিক নয়। রন আর ল্যাভেন্ডার এখন বেপরোয়া হয়ে জড়াজড়ি করছে। হ্যারি সেদিকে আর না তাকিয়ে হারমিওনকে বললো, হ্যাঁ চলো ওইখানে বসি।

নাও এবার তোমার ক্রিসমাসের গল্প বলো।

না, আমার কিছু বলতে ভালো লাগছে না, হারমিওন খুবই সহজভাবে বললো। আমায় কিছু জিজ্ঞেস করো না হ্যারি।

আমি ভাবছিলাম যদি তোমার কাছে কিছু খবর-টবর পাওয়া যায়।

খবর? ফ্যাট লেডি, পাঁচশ বছরের পুরনো ভ্যাট পান করেছেন। হ্যারি, এই খবরটা তুমি আবার শুনতে চাও?

হারমিওন কথাটা বলে এমনভাবে হ্যারির দিকে তাকালো যে হ্যারির আর কোনো প্রশ্ন করতে মন চাইলো না। রনের প্রসঙ্গও না। তখন ম্যালফয় আর স্নেইপের যেসব কথাবার্তা শুনেছিলো, হারমিওনকে সবিস্তারে বললো।

ওর কথা শেষ হলে দুএক সেকেন্ড কিছু ভাবলো, তারপরে বললো, তোমার কি মনে হয় না?

স্নেইপের সাহায্য করার প্রস্তাব ভান ছাড়া কিছু নয়, আসলে জানতে চান ম্যালফয় কি করতে চাইছে? হ্যারি হারমিওনের কথার বাকি অংশ নিজেই বললো।

ও হ্যাঁ সেটাই বলতে যাচ্ছিলাম। হারমিওন বললো।

রনের বাবা ও লুপিন তো ওই রকমই ভাবছেন, হ্যারি গজগজ করতে করতে বললো। যে যাই বলুক ম্যালফয় যে সাংঘাতিক কিছু একটা মতলব আটছে। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।

আমি তোমার কথা মানতে পারছি না, হরমিওন খুব ধীরে ধীরে বললো। যা কিছু করছে সবই ভোল্টেমর্টের কথাতে, এই সহজ সরল কথাটা আমি তোমাকে বোঝাতে চাইছি।

কিন্তু ওদের দুজনের মধ্যে সত্যি কেউ কি ভোল্টেমর্টের নাম উচ্চারণ করেছে?

হ্যারি কথাটা শুনে মনে করার চেষ্টা করলো।

আমি এখন ঠিক মনে করতে পারছি না। তবে স্নেইপ বলেছিলো, তোমার প্রভু, এই কথাটা আমার স্পষ্ট মনে আছে। তাহলে ওর প্রভু, কে হবে?

আমি বলতে পারছিনে, হারমিওন ঠোঁট কামড়ে বললো। ওর বাবাও হতে পারে। কথাটা বলে হারমিওন ঘরের চারদিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তারপর রন আর ল্যাভেন্ডারের দিকে তাকিয়ে বললো, ও হ্যাঁ, লুপিন কেমন আছেন?

হ্যারি বললো, দেখে খুব একটা ভালো আছেন বলে মনে হলো না। ওয়েরউলফদের সাথে আছেন তবে তেমন সুবিধা করতে পারছেন না। তারপরে বললো, আচ্ছা তুমি ফেনীর গ্রেব্যাকের নাম শুনেছো?

হ্যাঁ শুনেছি, হারমিওন সামান্য হকচকিয়ে বললো। তা তুমি শুনলে কোথা থেকে?

কবে, হিস্ট্রি অফ ম্যাজিক থেকে? তুমি তো ভালো করেই জানো, আমি কখনো ভালো করে শুনিনি।

আরে না না হিস্ট্রি অফ ম্যাজিক নয়, ম্যালয়ের বোয়জিনকে ধমক কথা মনে আছে, হারমিওন বললো, নকটার্ন এ্যালির কথা মনে নেই? ও বলেছিলে গ্রেব্যাক ওদের পারিবারিক বন্ধু। ও বোয়জিনের কাজের অগ্রগতি মাঝেমধ্যে এসে দেখে যাবে।

হ্যারির দিকে হা করে তাকালো, মনে করার চেষ্টা করলো, ওই একদম ভুলে গেছি! তাহলে তো ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে ম্যালফয় একজন ডেথ ইটার, তা না হলে গ্রেব্যাককে কি করতে হবে, না করতে হবে বলতে পারবে কেন?

হারমিওন বড় দেখে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো, খুবই সন্দেহজনক, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, অবশ্য যদি না…।

আরে আমার কথা শোনো, হ্যারি একটু রেগে বললো। ব্যাপারটায় তুমি আর যদি খুঁজতে যেওনা।

কোথাও ভুল হয়ে থাকতে পারে।

ঠিক আছে, তোমার তাহলে বিশ্বাস হচ্ছে না, হ্যারি মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে বললো। দেখা যাক কার কথাটা সত্যি, শেষ পর্যন্ত কিন্তু তোমায় স্বীকার করতেই হবে, নিজের উক্তি প্রত্যাহার করতে হবে, মিনিস্ট্রির মতোই জেনে রেখো হারমিওন। ও হ্যাঁ তোমায় বলা হয়নি, আমার সঙ্গে কিন্তু মিনিস্টার অফ ম্যাজিক রুফাস স্ক্রিমগৌরের বেশ কথা কাটাকাটি হয়েছে।

বাকি সন্ধেটা দুজনে মিনিস্টার অফ ম্যাজিককে গালমন্দ করে কাটলো। রনের মতো হারমিওন বুঝতে পারলো গত বছর মিনিস্ট্রি অফ ম্যাজিক ওকে একটুও স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি। এখন কোন মুখে ওকে সাহায্য করতে বলছে।

ষষ্ঠ বছরের ছেলেমেয়েদের নতুন টার্ম দারুণ এক শুভ সূচনায় শুরু হলো। সকাল বেলা কমন রুমের সাইন বোর্ডে বিরাট একটা নোটিশ দেখতে পেলো।

অ্যাপারিসন লেনসন
তোমার বয়স যদি সতের বছর বা ৩১ অগাস্টের মধ্যে সতের হয় তাহলে
মিনিস্ট্রি অফ ম্যাজিকের বার সপ্তাহের অ্যাপারিসন লেসন কোর্সের জন্য তুমি নির্বাচিত হবার উপযুক্ত।
নিম্নে দস্তখত করো যদি তুমি যোগদান করতে ইচ্ছুক হও।
ফিস, মাত্র ১২ গেলিয়ন।

হ্যারি আর রন কমনরুমের নোটিশবোর্ডের কাছে এসে দাঁড়ালো। ছেলেমেয়েরা ভিড় করে রয়েছে, নোটিশের তলায় নাম দস্তখত করার জন্য ব্যস্ত। হারমিওন দস্তখত করার পর তার তলায় রন দস্তখত বা নাম দেবার জন্য কুইল (পালকের কলম) বার করতে যাবে ঠিক সেই সময় ওর পেছনে ল্যাভেন্ডার এসে দাঁড়ালো। হাত দুটো বাড়িয়ে রনের দুচোখ চেপে খিল খিলিয়ে হেসে বললো, বলতো আমি কে উন উন? হ্যারি পেছন ফিরে হারমিওনকে দেখলো। ওর মোটেই ইচ্ছে নেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ল্যাভেন্ডারের ন্যাকামি দেখা। ও সঙ্গে সঙ্গে হারমিওনকে ধরার জন্য পেছন ফিরলো। কিন্তু আশ্চর্য হয়ে গেল রনকে ওদের কাছে আসতে দেখে। ওরা তখন পোর্ট্রেট হোলের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে। ওর কানদুটো অসম্ভব লাল আর হাবভাব বিরক্তি মাখা। হরমিওন ওকে দেখেই নেভিলের দিকে এগিয়ে গেল।

তাহলে অ্যাপারেসন, রন খুব স্বাভাবিকভাবে কথাটা বললো। একটুও বুঝতে দিলো না কিছুক্ষণ আগের দৃশ্যটা, হ্যারির একটুও ভালো লাগেনি। অ্যাপারেসন, হাসির ব্যাপার হবে না তো?

আমি তোমার ব্যাপার বলতে পারবো না। ভালো হবে, তুমি যখন হাতে কলমে ওটা করবে। ডাম্বলডোর অ্যাপারেট করার সময় একবার আমাকে সঙ্গে নিয়েছিলেন, সত্যি কথা বলতে কি আমার কিন্তু তেমন সুখকর মনে হয়নি।

ভুলেই গিয়েছিলাম তুমি আগেই ওটা করেছো, আমার তো প্রথমবার, রন সামান্য উদ্বেগচিত্তে বললো। ফ্রেড আর জর্জও তো করেছে।

চার্লিতো পাস করতে পারেনি, তাই না।

রন ওর একটা হাত উঁচু করে বললো, হ্যাঁ, কিন্তু চার্লি তো আমার চেয়েও লম্বা চওড়া। তো ফ্রেড আর জর্জ পারেনি, তাই ভাবছি।

নাম তো দিলাম, আমাদের পরীক্ষা করে নেবে জানো? সতের বছর হলেই শুধু হবে না। আমার তো মার্চ মাসে সতের হবে।

হা, কিন্তু মনে রেখো ক্যাসেল থেকে বা এখান থেকে অ্যাপারেট করতে পারবে না।

আসল ব্যাপারটা তা নয়, তাই না? শিখলে সকলে বিষয়টি জানতে পারবে, আমার যখন ইচ্ছে হবে তখন অ্যাপারেট করতে পারবো।

রন একমাত্র নয় যে অ্যাপারেট করার শিক্ষা পেতে উত্তেজনায় উদ্বেলিত। সব ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দারুণ উৎসাহ ও উত্তেজনা, নানা আলোচনা, সামনের লেসন নিয়েও, নিজের ইচ্ছেয় অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, আর ফিরে আসা।

বলো, সত্যি যখন আমরা করতে পারবো তখন দারুণ হবে, সিমাস কথাটা বলে অদৃশ্য হওয়ার আনন্দ প্রকাশের জন্য ক্লিক শব্দ মুখ দিয়ে বার করলো। আমার চাচাতো ভাই ফেরগাস মাঝে মাঝে আমাকে ভয় পাওয়ানোর জন্য অ্যাপারেট করতো। দাঁড়াও না আমি ওটা শিখে নিয়ে ওর মজা দেখাচ্ছি। একটুও ওকে শান্তিতে থাকতে দেব না দেখে নিও।

আনন্দের জন্য সিমাস ওর হাতের জাদুদণ্ডটা নিয়ে খুব শব্দ করে ক্লিক করলো। দণ্ডের মুখ থেকে ঝলকে ঝলকে মিঠে জল বেরোনোর পরিবর্তে প্রবল বেগে জল বেরিয়ে ঘর, শুধু ঘর নয় ঘরের সিলিং পর্যন্ত ভিজিয়ে দিল। প্রবল স্রোতের মতো জল সহসা প্রফেসর ফ্লিটউইকের মুখে সজোরে ধাক্কা দিতেই ঘরের মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলেন।

প্রফেসর হ্যারিকে আগেই অ্যাপারেশন করেছে, রন সামান্য অপ্রতিভ সিমাসকে বললো। ভেজা মুখটা হাত দিয়ে মুছে ফ্লিটউইক হাত দিয়ে মুছে সিমাসের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে জাদুদণ্ড ঘুরিয়ে ওকে লাইনে দাঁড় করিয়ে বললেন, আমি একজন জাদুকর, তোমার মতো বেবুন নই বুঝেছো? এই তোমরা, ওকে, সাইড লং অ্যাপারেশনের জন্য দাঁড় করাও তো। এইবার বুঝতে পারবে মজাটা।

ওয়াও! সিমাস ফিস ফিস করে কথাটা বলে ডিন আর নেভিলের সঙ্গে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়ালো। ওদিকে ওদের ক্লাসের সবাই জেনে গেছে হ্যারি, ডাম্বলডোরের সঙ্গে অ্যাপারেশন করেছে। ওরা সকলে মিলে হ্যারির কাছে ওর অভিজ্ঞতা জানার জন্য নানা প্রশ্ন করে দিনটা কাটিয়ে দিল। হ্যারি কিন্তু ওদের একটুও ভয় পাইয়ে দেয়নি। বললো, একটু অস্বস্তিকর তো মনে হবেই। রাতেও ছেলেমেয়েরা ওকে ছাড়ল না। রাত্রি নটা পর্যন্ত ওকে ক্লাসের বন্ধুদের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হলো। ওদিকে ডাম্বলডোরের কাছে যেতে হবে, তাই ওদের বললো, ওকে লাইব্রেরিতে একটা বই ফেরত দিতে হবে। ওদের হাত থেকে বাঁচার ওই একটা পথ। ওরা সবাই চলে গেল।

হ্যারি ডাম্বলডোরের অফিস ঘরে গিয়ে দেখলো সেখানে ঢিমে আলো জ্বলছে আগের সব হেডমাস্টারেরা পোর্ট্রেটের ফ্রেমের ভেতরে বসে বসে নাক ডাকছেন। ডাম্বলডোর তার ডেস্কে আগের মতোই পেনসিভ সাজিয়ে রেখেছেন। ডাম্বলডোর তার দুটো হাত পেনসিভের দুপাশে প্রসারিত করে পেনসিভের দিকে মুখ নামিয়ে বসে রয়েছেন। ডান হাতের ক্ষতটা তখনো শুকোয়নি, দগদগ করছে। শুকোতে এতো সময় নিচ্ছে কেন হ্যারি বুঝতে পারলো না। কম করে একই প্রশ্ন ওর মন থেকে কিছুতেই সরছে না। কেন এমন হলো? কে আঘাত দিলো? ও এই প্রশ্ন ডাম্বলডোরকে কখনো করেনি। সাধারণভাবে ও দুএকবার প্রশ্ন করাতে ডাম্বলডোর ওকে বলেছিলেন, সময়ের ব্যাপার, একটু একটু করে সবই জানতে পারবে। সে যাক, আর একটি ব্যাপার ও ডাম্বলডোরের সঙ্গে আলোচনা করতে চায়। আলোচনাটা ম্যালফয় আর স্নেইপকে ও কিছু বলতে যাবে সেই সময়ে ডাম্বলডোর বললেন, শুনলাম ক্রিসমাসে তোমার সঙ্গে মিনিস্টার অফ ম্যাজিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিলো।

হ্যাঁ স্যার, হ্যারি বললো। মনে হলো আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলে একটুও খুশি হননি।

জানি, ডাম্বলডোর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন। উনি আমার ওপর একটুও খুশি নন। আমরা ওইসব কথা ভেবে দুঃখের সাগরে ডুবতে চাই না, চেষ্টা চালাতে হবে। হ্যারি মনে রেখো ওইসব তুচ্ছ কথা ভেবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। লড়াই চলছে, ও চালিয়ে যেতে হবে।

কথাটা শুনে হ্যারি দাঁত বের করে হাসলো।

উনি আমাকে দিয়ে জাদুকর সম্প্রদায়কে বোঝাতে চেয়েছিলেন, উনি মিনিস্টার অফ ম্যাজিক হবার পর তাদের জন্য দারুণ সব কাজকর্ম করছেন।

হ্যারির কথা শুনে ডাম্বলডোর হাসলেন।

বললেন, আসলে আইডিয়াটা ছিলো ফাজের। যখন ফাজ মিনিস্টার অফ ম্যাজিক ছিলো তখন আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলো যাতে ওকে ওই পদ থেকে সরানো না হয়। তোমার সঙ্গে একটা বৈঠক করতে চেয়েছিলেন, ভেবেছিলেন তুমি ওকে সাহায্য করবে।

কী বলছেন স্যার, ফাজ গত বছরে যেসব কাণ্ডকারখানা করেছিলেন তারপরেও? হ্যারি উত্তেজিত হয়ে বললো। আমব্রিজের কাণ্ডকারখানাও আমার মনে আছে।

আমি কর্নেলিয়সকে যা বোঝানোর প্রয়োজন তা সবই তাকে বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার সহযোগিতার বিষয়টি ফাজ মিনিস্ট্রি ছেড়ে চলে যাবার পরও রয়ে গেল। স্ক্রিমগৌর চার্জ নেবার পরই আমার সঙ্গে দেখা করে তোমার সঙ্গে কথাবার্তা বলার প্রসঙ্গটা তোলেন, বলেছিলেন আমি যেন একটা ব্যবস্থা করে দিই।

সেই ব্যাপারে আপনার মন্ত্রীর সঙ্গে বাদানুবাদ হয়েছিলো। খবরটা ডেইলি প্রফেটে বেরিয়েছিলো।

ডেইলি প্রফেট মাঝে মধ্যে সত্যি খবর প্রকাশ করে। ডাম্বলডোর বললেন। অবশ্য সেটা বলতে পারো একটা দুর্ঘটনা। হ্যাঁ আমরা বাদানুবাদ বা তর্কাতর্কি করেছিলাম। তবে পাত্তা না পেয়ে রুফাস মনে হয় শেষ পর্যন্ত তোমাকে ধাওয়া করে নিজের ইচ্ছেটা সফল করতে চেয়েছিলো।

কথাবার্তা বলার সময় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাকে বলেন, তুমি ডাম্বলডোরের অনুগামী।

খুবই অমার্জিত কথা বলেছেন। আমি কিন্তু বলেছিলাম, হ্যাঁ আমি ডাম্বলডোরের অনুগামী ও কাছের মানুষ।

ডাম্বলডোর কিছু বলতে চাইলেন, কিন্তু বললেন না। হ্যারির পেছনে দাঁড়ের। ওপর বসেছিলো ফকস ফিনিক্স পাখি, সে সুন্দর মিষ্টি সুরে ডাক দিলো। হ্যারি ডাম্বলডোরের দিকে তাকিয়ে দারুণ লজ্জা বোধ করতে লাগলো। দেখলো ডাম্বলডোরের উজ্জ্বল দুটি নীল চোখ জলে ভরে গেছে। ও তখনই মুখ নিচু করে নিজের হাঁটুর দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর ডাম্বলডোর যখন কথা বললেন, তখন তার কথা খুবই শান্ত স্বাভাবিক। অকস্মাৎ ভাবাবেগ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।

হ্যারি, হঠাৎ আমি স্পর্শকাতর হয়ে পড়েছিলাম।

স্ক্রিমগৌর জানতে চেয়েছিলেন মাঝেমধ্যে যখন আপনি হোগার্টসে থাকেন না তখন কোথায় যান, হ্যারি মুখ না তুলে হাঁটুর দিকে তাকিয়ে থেকে কথাটা বললো।

আমি জানি, ওই নিয়ে ও খুবই হৈচৈ করে বেড়াচ্ছে, ডাম্বলডোর বললেন। এমন কথার মধ্যে কোনো দুঃখের ভাব নেই। হ্যারি ভাবলো আর মাথা নিচু করে বসে থাকার প্রয়োজন নেই। আমি জানি, এমনকি রুফাস কোথায় যাই জানতে আমার পেছনে ধাওয়া করেছিলো। সত্যি খুব হাসির ব্যাপার। আমি কোথায় যাচ্ছি জানতে ডালিশকে নিযুক্ত করেছিলো। খুবই দুঃখজনক ব্যাপার সন্দেহ নেই; কিন্তু আমি ডালিশকে জিক্স করতে বাধ্য হয়েছিলাম, একবার নয়, কয়েকবার। আমার সেটা করতে খুবই, খুবই দুঃখ হয়েছিলো।

তাহলে ওরা জানে না আপনি কোথায় যান? হ্যারি আশা করেছিলো ওই কৌতুহল জাগানো প্রশ্নের হয়তো একটা জবাব পাবে। কিন্তু হ্যারি দেখলো ডাম্বলডোরের অর্ধচন্দ্রের মতো চশমার কাঁচের আড়ালে চোখ দুটো হেসে উঠলো।

তারা জানে না, তাছাড়া তোমারও জানার সময় আসেনি। বেশ এখন বলো তুমি কি বলতে চাইছিলে, বিশেষ কিছু বলার থাকলে।

আসলে স্যার আমি ম্যালফয় আর স্নেইপ সম্বন্ধে কিছু বলতে চেয়েছিলাম। প্রফেসর স্নেইপ, হ্যারি।

হা স্যার, আমি স্লাগহর্নের পার্টি চলাকালীন ওদের কিছু কথাবার্তা শুনেছিলাম। আমি গোপনে ওদের পিছু নিয়ে কথাবার্তা শুনেছিলাম।

ডাম্বলডোর শুনলেন হ্যারির মুখে সেই কথাবার্তা; কিন্তু মুখে তার কোন তাপ উত্তাপ নেই শোনার সময়ে। হ্যারির কথা শেষ হবার পর ডাম্বলডোর কয়েক সেকেন্ড নীরব থেকে বললেন, কথাগুলো আমাকে জানানোর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ হ্যারি। তবে আমি বলছি তুমি মন থেকে ওই ব্যাপারটা মুছে ফেললো। আমার তো মনে হয় না ওদের কথাবার্তার মধ্যে কোনো গুরুত্ব দেয়া যেতে পারে।

কি বলছেন স্যার কোনো গুরুত্ব নেই? হ্যারি বললো। প্রফেসর আপনি বোধহয় ঠিক বুঝতে পারছেন না?

হ্যারি, ঈশ্বর আমাকে খুব বেশি বোঝার ক্ষমতা দিয়েছেন। তুমি যা যা বললে তার প্রতিটি শব্দ আমি বুঝতে পেরেছি। ডাম্বলডোর একটু তীক্ষ্ণভাবে বললেন। আমার মনে হয়, তুমি এই কথাটা ভাবতে পারো, তোমার চেয়ে আমার বোঝার ক্ষমতা বেশি। তাহলেও আমি অত্যন্ত খুশি যে আমার ওপর তোমার বিশ্বাস আছে, নির্ভরতা আছে। তাহলেও আমি তোমাকে বলছি, তুমি এমন কোনো কথা আমাকে বলোনি যাতে আমার চিন্তা বাড়ে।

হ্যারি ডাম্বলডোরের মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে চুপ করে রইলো। ও কোন কিছুই একগ্রন্থিতে বাঁধতে পারছে না। তবে কী তিনি নিজেই স্নেইপকে বলেছেন ম্যালফয় কি করছে না করছে তা জানাতে? তাহলে তো ডাম্বলডোরের সবকিছুই ইতোমধ্যে জেনেছেন? অথবা ওর মুখ থেকে সব শোনার পর চিন্তিত হয়েও ভান করছেন যা শুনলেন তার কোনো গুরুত্ব নেই? সবকিছু যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।

হ্যারি কিছু সময় নীরব থাকার পর শান্ত স্বরে বললো, তাহলে স্যার এখনো স্নেইপের ওপর আপনার আস্থা আছে।

আমি এতোক্ষণ তোমার প্রশ্নের জবাব অনেক ধৈর্যের সঙ্গে দিয়েছি হ্যারি, ডাম্বলডোর বললেন। কিন্তু খুব বেশি ধৈর্য যে নেই সেটা বেশ বোঝা গেল। আমার জবাবের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

আমি কিন্তু মোটেই তা মনে করি না, অবজ্ঞার এক কণ্ঠস্বর হ্যারি শুনতে পেলো। পোর্ট্রেটের দিকে তাকিয়ে দেখলো নিগেলাস মোটেই ঘুমিয়ে নেই, ঘুমুচ্ছেন এমন এক ভাব করেছিলেন। খুব ভালো করেই হ্যারি আর ডাম্বলডোরের কথা বার্তা শুনেছেন।

ডাম্বলডোর নিগেলাসের কথায় কোনো কান দিলেন না। বললেন, হ্যারি অন্য কথা বলে সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না। তোমার সঙ্গে আমার কতগুলো জরুরি আলোচনা আছে।

হ্যারি বিদ্রোহীর মতো মনোভাব নিয়ে বসে রইলো। ও যদি স্নেইপ প্রসঙ্গ থেকে সরে না আসে তাহলে কেমন হবে, ও যদি ম্যালয়ের বিষয়টা নিয়ে প্রশ্ন করতে চায় তাহলে কেমন হবে? ডাম্বলডোর যেন হ্যারির মনের আক্ষেপ ধরতে পেরেছেন, তাই সেই রকম মনে করে মাথা নাড়লেন। বললেন, হ্যারি এটা নতুন কিছু নয়, এমনকি বন্ধুদের মধ্যেও হয়। সকলেই ভাবে, আমি যা বলছি তা ঠিক, অন্যেরা ভুল বলছে। সকলেই নিজের চিন্তা-ভাবনার ওপর গুরুত্ব দিতে চায়। অন্যের চিন্তাটা ভাবে না!

হ্যারি বললো, স্যার আমি সেই রকম ভাবি না, আমি মনে করি না আপনি যা বলবেন তা জরুরি নয়।

হা তুমি ঠিক বলেছো ডাম্বলডোর বললেন। আজ আমি তোমাকে দুটো স্মৃতির দৃশ্য দেখাতে চাই। দুটোই আমাকে খুবই পরিশ্রম ও কষ্টে পেতে হয়েছে। আমার মনে হয় দ্বিতীয়টি সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

হ্যারির মনের অবস্থা তখনো শান্ত হয়নি। ভীষণ রেগে আছে ডাম্বলডোর হ্যারির আশঙ্কার কোনো গুরুত্ব না দেয়াতে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো তর্ক করে কোনো লাভ হবে না।

তাহলে হ্যারি আমরা আজ টম রিডিলের কাহিনী শেষ করি, কি বলো? ডাম্বলডোর মধুর স্বরে বললেন। আমরা ওর হোগার্টসে প্রবেশের মুখে এসে থেমে গিয়েছিলাম। আশা করি তোমার মনে আছে আমি যে একজন জাদুকর কথাটা শোনার পর ও কতোটা উত্তেজিত হয়েছিলো? আমার সঙ্গে ডায়াগন এ্যালিতে যেতে চায়নি তাও বোধহয় ভুলোনি? তখন আমি ওকে স্কুলে আসার পর চৌর্যবৃত্তি থেকে নিরত থাকার জন্য সাবধান করে দিয়েছিলাম তাও বোধহয় মনে আছে?

যাহোক স্কুলের প্রথম টার্ম শুরু হলো। টম রিডিল সেকেন্ড হ্যান্ড রোবস পরে অন্যান্য ছেলেদের মতো শান্তশিষ্ট হয়ে লাইন লাগিয়ে দাঁড়ালো। শর্টিং শুরু হলো, টম রিডিল স্লিদারিন হাউজে গেল। হ্যাট ওর মাথা স্পর্শ করলো। ও খুব শিঘ্র জানতে পারলো ওর হাউজের প্রতিষ্ঠাতা স্নিদারিন সাপের ভাষা জানতেন, তাদের সঙ্গে কথাও বলতে পারতেন। টম রিডিলও সাপের সঙ্গে কথা বলতে জানতো। তাই ওর আত্মগরিমা আরো বেড়ে গেল।

যাহোক, ও যদি কমনরুমে ওর দিারিন হাউজের বন্ধুদের সাপের সঙ্গে কথা বলা (পার্সেল টাং) নিয়ে ভয় দেখাতো বা শোনাতো তাহলে তার কোনো খবরা খবর স্কুল স্টাফের কানে আসতো। ও কিন্তু একগুঁয়েমি বা ঔদ্ধত্য মোটেই জাহির করতো না। একজন অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন সুশ্রী অনাথ হিসেবে অতি স্বাভাবিকভাবে স্কুল স্টাফের কাছ থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ ও সহানুভূতি, স্কুলে আসার সঙ্গে সঙ্গে আদায় করতে পেরেছিলো। তাই সকলের কাছে খুবই প্রিয় হয়ে উঠেছিলো।

আপনি কি স্যার তাদের অনাথ আশ্রমে থাকাকালীন ও যেসব কাণ্ডকারখানা করতো সেসব স্কুলে বলেননি?

না, আমি তেমন কিছু বলিনি। স্কুলে এসে কোনোকম কিছু করার আভাসও দেয়নি কারণ এওতো হতে পারতো সে তার অতীতের কার্যকলাপ সম্পর্কে অনুতপ্ত ও নতুনভাবে জীবনযাত্রা করতে চায়। আমিও ওকে ভালোভাবে থাকার সব রকমের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলাম।

হ্যারি কিছু বলতে চায় বুঝতে পেরে ডাম্বলডোর ওর দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলেন। এখানে আবার ডাম্বলডোর কাউকে কিছু না বলে মানুষের প্রতি তার বিশ্বাস, ভালোবাসা, আস্থার প্রমাণ দিলেন, যদিও তারা ডাম্বলডোরের কাছ থেকে তেমন ভালোবাসা, ব্যবহার আশা করতে পারে না। তখন হ্যারির কিছু কথা মনে পড়ে গেল…।

একটা কথা স্যার, মনেপ্রাণে কিন্তু আপনি টম রিডিলের ওপর কোনো রকম আস্থা রাখেননি। আপনি বলেছিলেন টম রিডিল ওর ডায়রিতে লিখেছিলো, অন্যান্য শিক্ষকরা আমাকে পছন্দ করলেও ডাম্বলডোর মনে হয় আমাকে মোটেই পছন্দ করতেন না।

বলা যেতে পারে টম রিডিল যে বিশ্বাসযোগ্য এমনভাব আমি কোনো দিন প্রকাশ করিনি, ডাম্বলডোর বললেন। তোমাকে আগেই বলেছি আমি ঠিক করেছিলাম সবসময়ে ওকে চোখে চোখে রাখবো। সেইরকম করেও ছিলাম। আমি কোনো কথা গোপন করতে চাই না বা ভান করতে চাই না যে আমার প্রথম প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ থেকে ওর সম্পর্কে অনেক খুঁটিনাটি জানতে পেরেছিলাম। আমি অনুভব করেছিলাম আমার সামনে ও খুব সংযত হয়ে চলতো, ওর আসল পরিচয় জানার জন্য প্রথম প্রথম ও আমার সাথে একটু যেন বেশি কথাবার্তা বলেছিলো। পরে অবশ্য বেশি কিছু না বলার ব্যাপারে সাবধান হয়ে গিয়েছিলো। তাহলেও উত্তেজনার বশে প্রথম প্রথম যা যা বলেছিলো সেগুলোতে আর ফিরিয়ে নিতে পারে না! বা মিসেস কোল অনাথ আশ্রমে ওর সম্পর্কে আমাকে যা বলেছিলেন। বন্ধু বান্ধব, সতীর্থদের নিজেকে জাহির করার জন্য যা যা করতো সেগুলো আমার কাছে করতো না।

স্কুলে থাকাকালীন ওর অনেক বন্ধু-বান্ধব হয়ে গেল, বলতে পারো একনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব। কিন্তু তারা একনিষ্ঠ হলেও তাদের ওপর নিডিলের তেমন কোনো ভালোবাসা ছিলো না। ওর সেইসব বন্ধু-বান্ধবের দল ক্যাসেলের মধ্যে বলতে পারো এক ধরনের কালো জাদুর বাতাবরণ সৃষ্টি করেছিলো। তারা প্রতিদিন সকলের সঙ্গে খুবই অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করতো, তা থেকে বলতে পারো স্কুলের শিক্ষকরাও বাদ যেতেন না। সেই দলের নেতা হয়ে গেল টম রিডিল। অবশ্য ওর ব্যবহার ওর দলের ছেলেদের মতো ততোটা অসৌজন্যমূলক ছিলো না। বলতে পারো রিফাইন্ড ফর্ম অফ ক্রুয়েলটি। তারাই ছিলো ডেথ ইটারদের অগ্রগামী দল। প্রকৃতপক্ষে ওদের মধ্যে বেশ কয়েকজন যোগার্টস ছাড়ার পর প্রথম ডেথ ইটার হয়েছিলো।

টম রিডিল কিন্তু ওর দলকে প্রকাশ্যে কোনো রকম দুষ্কর্ম করার সুযোগ দেয়নি যাতে ওরা ধরা পড়ে যায়। বলতে পারো ওরা দশটা বছর হোগার্টসে থাকাকালীন অনেক বিশ্রি কাজ-কর্ম করেছিলো; কিন্তু সে ওসব দুষ্কর্মে সরাসরিভাবে যুক্ত ছিলো এমন কোনো প্রমাণ রাখেনি। সব চাইতে গুরুতর ছিলো চেম্বার অফ সিক্রেটস খোলা, যার ফলে একটি মেয়ের মৃত্যু হয়েছিলো। তুমি হয়তো জানো সেই অপরাধের জন্য হ্যাগ্রিডকে ভুলবশত দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিলো।

আমি রিডিলের হোগার্টসে থাকাকালীন অনেক খবর জানতে পারিনি, ডাম্বলডোর বললেন পেনসিভের ওপর একটা হাত ঠেকিয়ে। অনেকেই যারা ওকে জানতে বা পরিচিত ছিলো তারা নিশ্চয়ই ওর অপকর্ম জানতো; কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রকাশ করতে পারেনি ভীত হওয়ার জন্য। ও হোগার্টস থেকে চলে যাবার পর অনেকের সঙ্গে কথা বলে, অনেক তথ্য সংগ্রহ করে, অনেক পরিশ্রম করে, অনেক পুরনো রেকর্ডের পাতা উল্টে-পাল্টে, মাগলদের প্রশ্ন করে আমি ওর সম্পর্কে কিছুটা জানতে পেরেছিলাম। তার মধ্যে অনেক জাদুকরদের সাক্ষ্যও নিয়েছিলাম।

যাদের সঙ্গে কথা বলে, অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে জানতে পেরেছিলাম ওর ওইসব বিকৃত কার্যকলাপের জন্য দায়ী ওর জন্ম, ওর বাবার ওর মায়ের প্রতি অবিচার। অবশ্য সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এতে সন্দেহ নেই। তারপর ও অনাথ আশ্রমে আসে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওর কে বাবা, কে মা সেই প্রশ্নটা সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলো অথবা কেনই বা অনাথ আশ্রমে আসতে হয়েছিলো। শিশু মনের নানা জটিল প্রশ্ন। ও হোগার্টসে থাকার সময় ওর বাবা সিনিয়র টম রিডিল সম্পর্কে ট্রফিরুমের অনেক কিছু ঘেঁটে জানার চেষ্টা করেছিলো; কিন্তু ওর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিলো। তাছাড়া অনেক প্রিফেক্টদের লিস্ট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছিলো, স্কুল রেকর্ড সার্চ করেছিলো, উইজার্ডিং হিস্ট্রির বইপত্রও বাদ দেয়নি… তাও ওর বাবা সম্পর্কে কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ও জানতে। পেরেছিলো ওর বাবা কোনো দিনই হোগার্টসে পা রাখেনি। আমার মনে হয় সেই কারণে ও হোগার্টস থেকে চিরকালের জন্য বিদায় নেয়। মনে হয় তারপর ওর নাম টম রিডিল বদলে লর্ড ভোল্ডেমর্ট নেয়… ওর মায়ের খবরাখবর সংগ্রহ করে ওর মামার বাড়িতে ঢু মারে। সেই মহিলা যার সম্পর্কে তুমি অবশ্যই জানো যাকে ভোল্ডেমর্ট একজন ডাইনি ভাবেনি, অন্তত তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে যেটুকু খবর সংগ্রহ করতে পেরেছিলো।

অনাথ আশ্রম থেকে এটা জানতে পেরেছিলো ওর মায়ের বাবার নাম ছিলো মারভোলো। তারপর ও কঠোর পরিশ্রম করে জাদুকর পরিবারদের পুরনো নথিপত্র ঘেঁটে জানতে পেরেছিলো স্নিদারিনদের অস্তিত্ব। তারপর অনাথ আশ্রম থেকে চলে আসার পর প্রতি বছর ওখানে নিয়ম করে গিয়ে ওর মামার বাড়ি ও বাবার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছিলো, এখন তুমি পরবর্তী ঘটনা মন দিয়ে খেয়াল রেখো।

ডাম্বলডোর কথাগুলো শেষ করে দাঁড়ালেন। হাতে একটা কাঁচের বোতল নিলেন তার মধ্যে রয়েছে রূপোর মত উজ্জ্বল তরল পদার্থ, যেগুলো স্থির নেই।

যাকে ডাম্বলডোর বলেন, পালি মেমরি।

পেনসিভে সেই চকমকে তরল পদার্থ ঢালতে ঢালতে ডাম্বলডোর বললেন, আমি যা দেখতে পাবো সেগুলো সংগ্রহ করতে পেরে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি। একটু পরই আমার কথার যথার্থতা ধরতে পারবে আমার অভিজ্ঞতার দৃষ্টিকোণ থেকে। কি বলল, তাহলে আমরা শুরু করি?

হ্যারি পেনসিভের কাছে গিয়ে তরল পদার্থপূর্ণ পেনসিভের উপর ভাগে সারফেস অফ মেমরিতে মুখটা ডোবালো। তারপর ও আগের মতো একই শূন্যতা, গভীর অন্ধকার অনুভব করার পর একটা নোংরা পাথরের মেঝেতে পা রাখলো। সেখানেও প্রায় গভীর অন্ধকার।

জায়গাটার সঙ্গে পরিচিত হতে ওর কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো। তারপরই দেখলো ডাম্বলডোর ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।

দ্যা গনট পরিবারের বাড়ি আগে যা দেখেছিলো তার চাইতে আরো অনেক বেশি নোংরা-অপরিচ্ছন্ন। জীবনে ওইরকম কদর্য নোংরা বাড়ি দেখেনি। সমস্ত ঘরগুলো শুধু নয় সিলিং পর্যন্ত ঘন মাকড়সার জাল। টেবিলে পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত খাবার দাবার, যা থেকে পঁচা গন্ধ বেরোচ্ছে। চারদিকে ভাঙাচোরা জিনিসপত্র, সব মিলিয়ে দারুণ এক দুর্গন্ধময় পরিবেশ।

হ্যারি দেখলো সেই ঘরে সামনে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে একজন বসে রয়েছে। সারা মুখে গোঁফ দাড়ি, মাথায় বড় বড় চুল। অন্ধকারে ওইটুকু হ্যারি দেখতে পেলো, লোকটার চোখ-মুখ দেখতে পেলো না। লোকটি যে আর্ম চেয়ারে বসে রয়েছে তার পাশে একটা ফায়ার প্লেস, সেখানে মৃদুমন্দ কাঠের আগুন জ্বলছে। অনেকটা সময় ওকে দেখে হ্যারি আন্দাজ করতে পারলো না পায়ের কাছে ছোট মোমবাতি জ্বেলে আর্ম চেয়ারে বসে থাকা লোকটি মৃত না জীবিত। তারপরই কেউ দরজাটাতে দমাদম ধাক্কা দিতেই চেয়ারে বসে থাকা লোকটি নড়েচড়ে বসলো। ডান হাতে ধরে থাকা জাদুদণ্ডটা তুলে ধরলো। বাঁ হাতে দেখলো একটা চাকু রয়েছে।

দরজাটা শব্দ করে খুলে গেলো। দেখলো দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি অল্প বয়সের ছেলে, হাতে একটা পুরনো দিনের বাতি। হ্যারির সেই লম্বা, মলিন চেহারা মাথাভর্তি কালো চুলের সুশ্রী ছেলেটিকে চিনতে একটুও অসুবিধে হলো না, ছেলেটি আর কেউ নয় ভোল্ডেমর্ট, কিশোর ভোল্ডেমর্ট! ছেলেটি সেই প্রায় অন্ধকার জীর্ণ ঘরটার চারদিকে ধীরে ধীরে তাকালো, তারপর ওর দৃষ্টি থেমে গেলো চেয়ারে বসে থাকা লোকটির ওপর। কয়েক মুহূর্ত দুজনে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর চেয়ারে বসে থাকা লোকটি টলতে টলতে সোজা হয়ে দাঁড়ালো, পায়ের কাছে পড়ে থাকা অনেকগুলো শূন্য বোতল ওর পায়ের ধাক্কায় শব্দ করতে করতে ঘরের একধারে গড়িয়ে পড়লো।

তুমি! তুমি এখানে? লোকটি উচ্চকণ্ঠে বললো। তারপর মত্ত অবস্থায় হাতের জাদুদণ্ডটা রিডিলের দিকে প্রসারিত করলো।

থামো

কথাটা রিডিল বিশেষ এক ভাষায় বললো (পার্সেল টাং-এ)। কথাটা শুনে মত্ত লোকটি টেবিলের দিকে চলে গেলো। পায়ের কাছে পড়ে থাকা ভাঙা বাসন-পত্র পায়ের চাপে আরো ভেঙে গেলো। ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রিডিলের দিকে তাকিয়ে রইলো। অনেকটা সময় কেউ কোনো কথা বললো না। মত্ত লোকটি নীরবতা প্রথমে ভঙ্গ করলো।

তুমিই পার্সেলটাং-এ কথা বললে?

হ্যাঁ ঠিকই ধরেছো আমিই বললাম। কথাটা বলে রিডিল দরজা বন্ধ করে ভেতর ঢুকলো। দরজার কপাট বন্ধ না হয়ে হাওয়াতে নড়তে লাগলো। আর কিছু

হোক ভোল্ডেমর্টের কোনরকম ভয় না দেখে হ্যারি মনে মনে তারিফ না করে থাকতে পারলো না। ভোল্টেমর্টের মুখে হতাশা আর অত্যাধিক ঘেন্নার ছাপ।

মারভোলো কোথায়? ও প্রশ্ন করলো।

ও বেঁচে নেই, লোকটি জবাব দিলো। অনেকদিন আগে মারা গেছে… তাই না?

কথাটা শুনে রিডিল ভুরু কুঁচকালো।

তাহলে তুমি কে?

আমাকে চেনো না? আমি মরফিন।

তুমি মারভোলোর ছেলে? ঠিকই ধরেছো, আমি তারই ছেলে। কি দরকার জানতে পারি?

মরফিন ওর মুখের ওপর থেকে নোংরা চুলগুলো সরিয়ে দিলো ভালো করে রিডিলকে দেখার জন্য। হ্যারি দেখলো মরফিনের ডানহাতের আঙ্গুলে রয়েছে মারভোলোর কালো পাথরের আংটি।

আমি ভেবেছিলাম তুমি সেই মাগল, মরফিন জড়িয়ে জড়িয়ে কথাটা বললো। তোমাকে ঐ মাগলটার মতো শক্তিশালী মনে হয়।

কী বললেন মাগল? রিডিল তীক্ষ্ণ স্বরে বললো।

আরে মাগল… যার জন্য আমার বোন পাগল হয়ে গিয়েছিলো… যে লোকটা রাস্তার ওধারে বড় বাড়িটায় থাকতো, মরফিন বললো। কথাটা বলে ও ঘরের মধ্যে একগাদা থুতু ফেললো। হ্যারির ওর ঘরের মধ্যে থুতু ফেলা দেখে গা ঘিন ঘিন করে উঠলো।

তুমি দেখি ওই মাগলটার মতো দেখতে। রিডিলের এখন তো অনেক বয়স হয়ে গেছে তাই না? তোমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়?

মরফিন টলতে টলতে কথাগুলো বললো। পাশের চেয়ারটার হাতলটা না ধরলে হয়তো পড়েই যেতো।

ও আবার ফিরে এসেছে, আমায় দেখে বুঝতে পারছো না? রিডিল বোকার মতো বললো।

ভোল্ডেমর্ট (রিডিল) মরফিনের দিকে তাকালো। মনে হয় ও আক্রমণ করার সুযোগ খুঁজছে। কথাটা বলে মরফিনের আরো একটু কাছে এসে আবার বললো, রিডিল ফিরে এসেছে দেখতে পাচ্ছে না?

এ্যা! ওই লোকটা আমার বোনকে ধোঁকা দিয়ে পালিয়ে গিয়ে অন্য একটি নোংরা মেয়েকে বিয়ে করেছিলো। মরফিন আবার মেঝেতে একগাদা থুতু ফেলে বললো। আমাদের ছেড়ে যাবার আগে আমার বোন আমাদের সব জিনিস নিয়ে পালিয়েছিলো। সেই লকেটটা কোথায়? বলি, স্নিদারিনের লকেটটা কোথায়?

ভোল্ডেমর্ট সে কথার কোনো জবাব দিলো না। মরফিন আবার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। হাতের চাকুটা ঘোরাতে ঘোরাতে চিৎকার করে বললো, আমাদেরও অসম্মান করেছে সেই মেয়েটা! তুমি কে এখানে এসে আবোল তাবোল প্রশ্ন করছো? যাও যাও কেটে পড়ো, এখন সব শেষ হয়ে গেছে।

মরফিন কথাটা বলে আগের মতোই টলতে টলতে চারদিকে তাকালো। সামান্য এগিয়ে এলো। তারপরই ঘরটা অস্বাভাবিকভাবে অন্ধকার হয়ে গেলো। ভোল্ডেমর্টের হাতের বাতি আর মরফিনের মোমবাতি সবকিছুই নিভে গেলো।

ডাম্বলডোর হ্যারির হাতটা আঙ্গুল দিয়ে সজোরে চেপে ধরলেন। তারপরই হ্যারি দেখলো ও ডাম্বলডোরের অফিস ঘরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

হ্যারি বললো, তাহলে আর কিছু জানার নেই। সব অন্ধকার হয়ে গিয়েছিলো কেন?

মরফিন তারপর আর কিছু মনে করতে পারেনি, ডাম্বলডোর বললেন। তারপর ইশারা করে হ্যারিকে বসতে নির্দেশ দিলেন। পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙার পর দেখলেন সেই নির্জন বাড়িতে একাই আগের মতো বসে রয়েছেন, হাতের আংটিটা নেই।

সেই ঘটনার কয়েকদিন পর এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো লিটিল হ্যাংগেলটন গ্রামে। একটি কাজের মেয়ে হাইস্ট্রিটে ছুটতে ছুটতে ভয়ার্ত স্বরে বলতে লাগলো, বড় বাড়ির ড্রইংরুমে তিনজন খুন হয়েছে, টম রিডিল (বড়), ওর মা আর বাবা।

গ্রামের মাগল কর্তৃপক্ষ হতভম্ব হয়ে গেলো সেই তিন খুনের খবর পেয়ে। যতোদূর আমি জানি, আজ পর্যন্ত সেই গ্রামের মানুষেরা জানে না কেমন করে রিডিলরা খুন হলো। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার ওদের দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিলো না। ওদের আভাদা কেভাদা কার্স করে হত্যা করার ফলে ওদের দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন সাধারণত থাকে না। একমাত্র ব্যতিক্রম যে আমার সামনে বসে রয়েছে, ডাম্বলডোর বললেন। হ্যারির কপালে কাটা দাগের দিকে তাকালেন। অন্যদিকে মিনিস্ট্রি তৎক্ষণাৎ জানতে পারলো কোনো জাদুকর এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ওরা আরো জানতে পারলো একজন দাগী মাগল হেটার রিডিল হাউজের অদূরে বসবাস করছে। সেই মাগল হেটার বহু মানুষকে হত্যা ও আক্রমণের জন্য ধরা পড়ার পর জেলেও গেছে।

তাই মিনিস্ট্রি স্বাভাবিক কারণে মরফিনের ভাঙা বাড়িতে গেলো। ভেরিটাসিরাস অথবা লেগিলিসেনসি প্রয়োগ করে ওকে জেরা করবার প্রয়োজন হলো না, কারণ মরফিন স্বীকার করলো সেই হত্যা করেছে। এমনভাবে হত্যার বর্ণনা দিলো যা একমাত্র আসল খুনির দেওয়া সম্ভব। ও বললো, মাগলদের খুন করে ও কোনো রকম দুঃখিত নয় বরং গর্বিত। ওদের খুন করার জন্য অনেক বছর অপেক্ষা করেছিলো। ও কর্তৃপক্ষের হাতে ওর জাদুদণ্ড দিলো। জাদুদণ্ডেই প্রমাণিত হলো মরফিন হচ্ছে আসল খুনি। ওই রিডিল পরিবারের তিনজনকে একই সঙ্গে খুন করেছে। কোনোরকম ঝুট-ঝামেলা করলো না আজকাবানে পাঠানোর সময়ে। তবে একটা ব্যাপারে ও খুব রেগেছিলো, ওর বাবার দেওয়া কালোপাথর বসানো আংটিটা চুরি হয়ে যাওয়ার জন্য। বললো, আংটি চুরি হওয়ার জন্য বাবা আমাকে খুন করবেন, এই একই কথা ও বার বার বলতে লাগলো আজকাবানে পাঠানোর আগে। বাকি জীবনটা ওর আজকাবানে কেটেছিলো। সেখানে যতোদিন বেঁচেছিলো আংটি চুরি হওয়ার জন্য আক্ষেপ করতো, আংটিটা ছিলো মারভোলো পরিবারের চিহ্ন। ওর মৃত্যুর পর আজকাবানে অন্যান্য দুর্ভাগাদের কবরের পাশে ওকে কবর দেওয়া হয়েছিলো।

 হ্যারি কাহিনী শোনার পর চেয়ারে সোজা হয়ে বসে বললো, তাহলে ভান্ডেমর্ট মরফিনের জাদুদণ্ড চুরি করে সেটা ব্যবহার করেছিলেন।

হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছো, ডাম্বলডোর বললেন। এখন যা বললাম তার মেমরি আমার কাছে নেই। তাহলেও আমি নিশ্চিত যে এভাবেই ঘটেছে। ভোল্ডেমর্ট ওর মামা মরফিনকে স্টুপিফাইড করে ওর হাত থেকে জাদুদণ্ডটা চুরি করেছিলো। তারপর সে রিডিলের বাড়িতে যায় বাবা-মা ছেলেকে হত্যা করতে। যে ওর মাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করেছিলো। বাবার প্রতি ওর কোনো মায়া দয়া ছিলো না, কারণ ওর বাবা ও জন্মাবার আগেই ওর মাকে পরিত্যাগ করে এক মাগল কন্যাকে বিয়ে করেছিলো। তারপর তিনজনকে খুন করে মামার কাছে ফিরে এসে তার মনে ফলস মেমোরি প্রয়োগ করে আংটিটা হাতিয়ে মামার জাদুদণ্ড মামার পাশে রেখে পালিয়ে গিয়েছিলো।

তাই মরফিন ভেবেছিলো খুন সেই করেছিলো।

হ্যাঁ, ঠিক ধরেছো। সেই জন্য কার্সের প্রভাবে গর্ব করে বলেছিলো, আমিই খুনি।

আসলে মরফিনতো খুন করেনি; কিন্তু বার বার আমিই খুনি বলার জন্য। মিনিস্ট্রি আর এগোয়নি সত্যি ঘটনা জানার জন্য। আমি মরফিনের মৃত্যুর কিছুদিন আগে ওর সঙ্গে দেখা করেছিলাম, ভোল্টেমর্টের অতীত সম্পর্কে তার কাছ থেকে কিছু জানার চেষ্টা করেছিলাম। অনেক চেষ্টা করে ঘটনাটি জানতে পারি, এর পর মরফিনের মুক্তির জন্য চেষ্টা করেছিলাম। দুঃখের ব্যাপার মিনিস্ট্রি তাদের সিদ্ধান্ত দেবার আগেই মরফিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।

হ্যারি বললো, মিনিস্ট্রি কেন আগে ধরতে পারেনি যে ভোল্ডেমর্টই হচ্ছে আসল খুনি? সেই সময় ভোল্ডেমর্ট আন্ডার এজ ছিলো। আন্ডারএজরা ম্যাজিক প্রয়োগ করলে ধরতে পারা খুব অসম্ভব ছিলো না।

ঠিকই বলেছো, অবশ্যই মিনিস্ট্রি পারতো; কিন্তু আসল অপরাধীকে ধরা সম্ভব ছিলো না। তোমার হুভার চার্ম ব্যবহার করার বিষয়টি নিশ্চয়ই মনে আছে? আসলে সেটা প্রয়োগ করেছিলো।

দুর্ভাগ্য! এখনো সেই অন্যায়টা রয়ে গেছে হ্যারি বিড়বিড় করে বললো। তাহলে বয়স কম হলে সে যদি কোনো বড় বয়সের জাদুকরের বাড়ি থেকে সেটা প্রয়োগ করে তাহলে মিনিস্ট্রি জানতে পারবে না আসল দোষী কে! ডাম্বলডোর বললেন, অবশ্যই তাই এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তারপর হ্যারির মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, মিনিস্ট্রি জাদুকর এবং ডাইনী বাবা-মায়ের ওপর এ বিষয়ে নির্ভর করে যে তাদের ছেলে-মেয়েরা যাতে তাদের বাড়ি থেকে জাদু প্রয়োগ না করে।

সম্পূর্ণ বাজে বিষয়, হ্যারি বললো। দেখুন তাহলে এখানে কি হয়েছে, মরফিনের ব্যাপারটা!

আমি তোমার সঙ্গে একমত, ডাম্বলডোর বললেন। বেচারীকে অন্যায় না করেও শাস্তি পেতে হয়েছে, তার মৃত্যুটা অতি দুঃখের ব্যাপার। খুন না করেও খুনি হতে হয়েছে। যাকগে অনেক রাত হয়েছে, এখন আমি চাই তুমি বাকি মেমরিটা দেখো।

ডাম্বলডোর পকেট থেকে আরো একটা কাঁচের শিশি বের করলেন। হ্যারি চুপ করে বসে রইলো। ডাম্বলডোর ওকে আগেই বলেছেন, এটাই হচ্ছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ… তিনি সংগ্রহ করেছেন।

হ্যারি লক্ষ্য করলো তরল পদার্থটা পেনসিভে ঢালা খুব কঠিন হয়ে গেছে। তাহলে কি মেমরিটা উবে গেছে? নষ্ট হয়ে গেছে?

অনেক সাধ্য সাধনা করে পেনসিভে সেই তরল পদার্থটা ঢেলে ডাম্বলডোর বললেন, তুমি জানবার আগেই আমরা ফিরে আসবো, তাহলে আরো একবার পেনসিভের ভেতরে যাই।

পেনসিভে মুখ ঢোকানোর পর হ্যারি যেখানে পৌঁছালো সেটা তার খুবই পরিচিত জায়গা। চিনতে বিন্দু মাত্র অসুবিধে হলো না। যে লোকটি ওর সামনে দাঁড়িয়ে তাকেও চিনতে পারলো।

তিনি আর কেউ নন, হোরেস স্লাগহর্ন! হ্যারি স্লাগহর্নের চকচকে টাক দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু দেখলো তার মাথার চাঁদিতে সামান্য চুল উঠে গেলেও মাথায় বেশ ঘন চুল। মাথায় খড় রঙের হ্যাট। গোঁফ জোড়াও এখনকার মতো বড় নয়। স্লাগহর্ন একটা আরাম কেদারায় হাত ছড়িয়ে বসে রয়েছেন। একহাতে ওয়াইন ভর্তি কাঁচের গ্লাস অন্যহাতে এক বাক্স ভর্তি আনারসের টুকরো।

হ্যারি এধার ওধার তাকাতেই দেখলো ডাম্বলডোর ওর পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। জায়গাটা স্লাগহর্নের অফিস ঘর। প্রায় আধডজন ছেলে ওকে ঘিরে বসে রয়েছে। তারা যেসব চেয়ারে বসে রয়েছে সেগুলোর আকার এক নয়, কোনোটা ছোট, কোনটা বড়। তাদের মধ্যে রিডিল বসে রয়েছে। ছেলেদের মধ্যে ওকেই প্রথমে চোখে পড়ে ওর সুন্দর চেহারার জন্য। অন্যান্য ছেলেদের মতো ওর মুখোভাব নয়… সম্পূর্ণ ভাবনা-চিন্তাহীন। ও একটা হাত চেয়ারের হাতলে রেখেছে। সেই হাতের আঙ্গুলের দিকে চোখ পড়তেই হ্যারি চমকে উঠলো! ওর আঙ্গুলে রয়েছে মারভোলোর কালোপাথর বসানো আংটি! ওতো অনেক আগেই মারভোলোর ছেলেকে খুন করে ওই আংটিটা নিয়ে নিয়েছে।

স্যার, প্রফেসর মেরিট কি অবসর নিচ্ছেন? রিডিল প্রশ্ন করলো।

টম, তা জানলেও কিন্তু তোমাকে আমি বলতে পারছিনে, স্লাগহর্ন একটা আঙ্গুল তুলে রিডিলের দিকে তাকিয়ে বললেন। বলতো ছেলে, তুমি কোথায় বা কোথা থেকে এই সংবাদটি সংগ্রহ করেছো? তুমি তো দেখছি আমাদের স্টাফদের চাইতে বেশি খবর রাখো।

কথাটা শুনে রিডিল হাসলো, বাকি ছেলেরাও হেসে উঠলো, রিডিলের দিকে প্রশংসার দৃষ্টিতে তাকালো!

তোমার সংবাদ জানার অস্বাভাবিক ক্ষমতা থাকলেও তুমি ওইরকম প্রশ্ন করবে না, তোষামোদ থেকে সতর্ক থাকবে…। আনারস দেবার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ দিলাম। আনারস আমার প্রিয় ফল, স্লাগহর্ন বললেন।

স্লাগহর্নের কথা শুনে কিছু ছেলে মুখটিপে হেসে উঠতেই হঠাৎ ঘরের মধ্যে অদ্ভুত এক বাতাবরণ সৃষ্টি হলো। সমস্ত ঘরটা সাদা ঘন কুয়াশায় ভরে গেলো, হ্যারি ডাম্বলডোরের মুখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলো না। ডাম্বলডোর ওর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তারপর কুয়াশার ভেতর থেকে স্লাগহর্নের গলা শোনা গেলো, ছেলেরা তোমরা সবাই ভুল করছো, আমার এই কথাটা মনে রাখবে।

কুয়াশা যেমন সহসা ছেয়ে গিয়েছিলো তেমনই সহসা অন্তর্হিত হয়ে গেলো, ঘরটা জ্বল জ্বল করে উঠলো। হতবাক হ্যারি স্লাগহর্নের ডেস্কের উপর সাজিয়ে রাখা সুন্দর ছোট সোনার ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলো। দেখলো এগারটা বেজেছে।

স্লাগহর্ন বললেন, ও ঈশ্বর সময় তাহলে অনেক হয়ে গেছে? তোমরা এখন সবাই যাও আমার প্রিয় ছেলেরা, তা না হলে আমরা সবাই বিপদে পড়বো। লেস্ট্রেঞ্জ আমি তোমার লেখা কাল অবশ্যই চাই, না হলে ডিটেনসন। আভেরি একই কথা তোমাকেও বললাম।

ছেলেরা ঘর থেকে এক এক করে বেরিয়ে যাবার সময় স্লাগহর্ন চেয়ার থেকে উঠে শূন্য গ্লাসটা টেবিলে রাখলেন। রিডিল কিন্তু তখনো ঘরের মধ্যে রইলো। হ্যারি বুঝতে পারলো রিডিল ইচ্ছে করেই ঘর থেকে বাইরে গেলো না, সবার শেষে স্লাগহর্নের ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে চায়…।

টম দেরি করো না তাড়াতাড়ি যাও, স্লাগহর্ন পিছন ফিরে টম রিডিলকে বসে থাকতে দেখে বললেন। ঠিক সময়ে ঘরে না গেলে তোমার অসুবিধে হবে, তাছাড়া তুমি প্রিফেক্ট হয়ে নিয়ম ভঙ্গ করতে পারো না।

স্যার আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই। বেশ তাড়াতাড়ি করো… মাই বয়। স্যার, আপনি কি জানেন, হরক্রাকসেস সম্পর্কে?

আবার ঘরটা কুয়াশায় ভরে গেলো। হ্যারি স্লাগহর্ন বা রিডিলকে দেখতে পেলো না। পাশে দেখলো ডাম্বলডোর দাঁড়িয়ে রয়েছেন স্মিত মুখে। তারপর শুনতে পেলো স্লাগহর্নের কণ্ঠস্বর… ঠিক আগের মতো।

আমি হরক্রাকসেস সম্পর্কে কিছুই জানি না, জানলেও আমি তোমাকে বলবো। তুমি একটুও দেরি না করে আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যাও… ভবিষ্যতে তুমি আমাকে ওইরকম প্রশ্ন করে বিব্রত করবে না!

বেশ, সব শুনলে তো? ডাম্বলডোর বললেন, ধীর শান্তভাবে। চলো তোমার ফেরার সময় হয়ে গেছে।

হ্যারি একটু পরে দেখলো ও ডাম্বলডোরের ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হ্যারি আনমনাভাবে বললো, স্যার অনেক কিছু জানতে পারলাম।

ডাম্বলডোর হ্যারিকে বলেছিলেন, আজকের মেমরিটা সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু হ্যারি বুঝতে পারলো না অন্যান্য মেমরি যা ও দেখেছে তার সঙ্গে তফাৎ কোথায়। হঠাৎ ঘন কুয়াশায় ঘর ভরে যাওয়া, তারপর আবার সেই কুয়াশা হঠাৎ অন্তর্হিত হওয়া রোমাঞ্চকর, অস্বাভাবিক তাতে কোনো সন্দেহ নেই, তাছাড়া অন্য কিছুতে নেই বা ঘটেনি। একমাত্র প্রভেদ রিডিল একটি প্রশ্ন করেছিলো এবং তার জবাব ও পায়নি।

তুমি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো যে, মেমরিতে বিঘ্ন ঘটানো হয়েছে তার ডেস্কের পেছনে রাখা চেয়ারে বসতে বসতে, ডাম্বলডোর বললেন,।

কেউ হস্তক্ষেপ করেছে? হ্যারি বসতে বসতে বললো।

অবশ্যই কোনো সন্দেহ নেই, ডাম্বলডোর বললেন। প্রফেসর স্লাগহর্ন নিজের স্মরণশক্তির ওপর নিজেই হস্তক্ষেপ করেছেন।

কিন্তু কেন করলেন?

কারণ আমার ধারণা উনি যা মনে রেখেছেন তা ওনার কাছে লজ্জাজনক, ডাম্বলডোর বললেন। উনি নিজের মেমরি নতুনভাবে করতে চেয়েছেন যাতে তাকে একটু ভালোভাবে দেখা যায়, যেসব বিষয় তিনি চান না যে মেমরিতে থাকুক সেগুলো বাদ দিতে চেয়েছেন। তুমি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো শেষের অংশটুকু খাপ ছাড়া হয়েছে।

আজ আমি তোমাকে এই প্রথম একটা হোমওয়ার্ক দিচ্ছি, হ্যারি। তোমার কাজ হবে প্রফেসর স্লাগহর্নকে আসল মেমরিটা প্রকাশ করতে রাজি করানো, সেটাই হবে আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকারি তথ্য।

অবশ্যই করবো স্যার, গলার স্বর যতোটা সম্ভব নামিয়ে ও শ্রদ্ধার সঙ্গে হ্যারি বললো। তবে আপনি লেজিলিমেনসি অথবা ভেরিটামেরাম ব্যবহার করতে পারেন।

সবই পারি, আবার সবই উনি বাধা দিতে পারেন, কোনো কিছুই তার কাছ থেকে জোর করে আদায় করা সম্ভব নয়, তাতে ভালো না হয়ে খারাপ হবার সম্ভাবনা বেশি। আমি চাই না আমাদের এই কাজের জন্য উনি হোগার্টস ছেড়ে চলে যান।

যাকগে, তিনি তোমার আমার মতোই মানুষ, তারও দুর্বলতা থাকবেই। আমার মনে হয় তুমি তার প্রতিরোধের পথে প্রবেশ করতে পারবে। আমাদের সবচেয়ে এখন প্রয়োজন আসল মেমরি পাওয়া, হ্যারি আমরা যখন আসলটা দেখতে পাবো তখন বুঝতে পারবে সেটা কতো গুরুত্বপূর্ণ। অতএব গুডলাক এবং শুভ রাত্রি।

হঠাৎ আলোচনা বন্ধ করে ডাম্বলডোর শুভরাত্রি বলার জন্য হ্যারি একটু অবাক হয়ে গেলো। ও তাই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।

শুভরাত্রি, স্যার।

 ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার আগে ও নিগেলাসের কথা শুনতে পেলো। ডাম্বলডোর আমি ভাবছি ছেলেটি তোমার চেয়ে বেশি করতে পারবে কেমন করে।

ডাম্বলডোর বললেন, মনে হয় আপনিও পারবেন না। ফকেস মিষ্টি সুরে ডাক দিয়ে উঠলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *