১৫. দ্য আনব্রেকেবল ভাউ

১৫. দ্য আনব্রেকেবল ভাউ

ক্রিসমাসের সময়টা যতই এগিয়ে আসছে ঘরের সব জানালায় তুষার গড়িয়ে ন গড়িয়ে পড়ছে। হ্যাগ্রিড প্রতিবারের মতো একাই গ্রেট হলে বারোটা। ক্রিসমাস ট্রি রেখে গেছে। সিঁড়ির রেলিংয়ে ঘাস আর জাম রঙের ফুলের পেচানো মালা দিয়ে সাজানো হয়েছে… করিডর বড় বড় মোমবাতিতে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছোট ছোট মেয়েরা তাদের হাতে মিসলটো ফুলের (চিরহরিত এক রকম গুল্ম) তোড়া নিয়ে ঘুরছে-ফিরছে। করিডর দিয়ে বিনা বাধায় হাঁটা দায়। হ্যারিকেও করিডরে হাঁটার সময় অসুবিধের সম্মুখীন হতে হলেও তার রাতের গোপনে যাতায়াতের অভ্যাসের কারণে গোপনীয় রাস্তাগুলি কোথায় হ্যারি তা জানে। সে কারণে তার যাতায়াতের অসুবিধা কম, প্রয়োজনে গোপন রাস্তা সে ব্যবহার করে। আসন্ন ক্রিসমাসের সাজ সাজ রব, সুসজ্জিত ঘর, হলঘর সকলের মনে চাঞ্চল্য এনে দিয়েছে।

আগে রন ছিলো অন্যরকম। ক্রিসমাসের সাজানো গোছানো কাজ কর্ম দেখে মুখ বাঁকাতো, আর যারা ওই গোছগাছ করে করে হন্যে হয়ে যেতো তাদের খালি টিটকারি দিয়ে যেতো। এইসব কিছু পছন্দ করা তো দুরের কথা খালি তুচ্ছতাচ্ছিল্য উপহাস করেই চলতো রন। এখন খুব বদলে গেছে ও। এখন ওর ভালো লাগে ক্রিসমাসের এই দৌড় ব্যস্ততা ছুট। রন এখন এইসব ভালোবাসে, এইসবে অংশ নেয়, আর মন ভরে হুল্লোড় করে। সকলের সঙ্গে মিলে হাসি আনন্দে কাটায় ক্রিসমাস। রনের এই রকম পরিবর্তন দেখতে পেয়ে হ্যারির খুবই ভালো লাগে। লেভেন্ডার ব্রাউনকেও খুব একটা দেখা যায় না। রনকে চুম্বন করে সময় অপচয় করতে চায় না। হ্যারি ভাবতেই পারেনি যে আবার ওর দুই বন্ধুর মনোমালিন্য মিটে যাবে, কথাবার্তা হবে।

তখনো রনের মুখে হারমিওনের ছোট ছোট পাখির আক্রমণে আঁচড়ের দাগ মুছে যায়নি। ওর কথাবার্তায় সব সময় নিজেকে রক্ষার চেষ্টা ও উম্মা।

ওর কোনো বলার মুখ নেই, রন হ্যারিকে বলে। ও ক্রামের সঙ্গে প্রেম করেনি, তো কেউ যদি আমার সঙ্গে প্রেম করে, আমাকে চুম্বন করে তাতে ওর রাগ করার কোনো কারণ নেই। আমাদের দেশটাতো স্বাধীন দেশ, কোনো খারাপ কাজ করছি বলে মনে হয় না।

হ্যারি রনের কথায় কান দেয় না। পরের দিন সকালে কুইন্টসেন্স অ্যা কোয়েস্ট চার্মসের পড়াশুনায় ব্যস্ততার ভান দেখায়। রন ও হারমিওন দুজনেই তার বন্ধু। তাই সে কারও পক্ষ নিতে চায় না। ওদের কথার মধ্যে না থেকে চুপ করে থাকে।

হ্যারি কুইন্টসেন্সের একটা পাতা ওল্টালো, ও জানে রন ওকে লক্ষ্য করে চলেছে। রন বিড়বিড় করে কিছু বলে চলেছে, হ্যারি তা শুনতে পাচ্ছে না, কাঠের আগুন জ্বলার জন্য কট কট শব্দ হচ্ছে। তবে মাঝে মাঝে ক্রাম শব্দটা কানে আসছে।

হারমিওনের পড়াশুনোর চাপ এতো বেশি যে হ্যারি সম্বন্ধে রনও ওর সঙ্গে কথা বলতে পারে না। রন যদি কমনরুমে বসে থাকে তো সেখানে হারমিওন থাকে না। তো হারমিওনের সঙ্গে দেখা করার একটি মাত্র জায়গা লাইব্রেরি। সেখানেও কথাবার্তা বলতে হয় ফিস ফিস করে।

আমার ওর ব্যাপারে নাক গলাবার কোনো কারণ দেখি না, ও যাকে ইচ্ছে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করতে পারে, হারমিওন বললো। সেই সময় মাদাম পিনসে পেছনে দাঁড়াতে ও বললো, আমি অবশ্য কিছু না মনে করে পারি না।

ও কুইলটা হাতে নিয়ে পার্চমেন্টে আমি শব্দটা এতো জোরে চেপে লিখলো যে পার্চমেন্টটা ফুটো হয়ে গেলো। হ্যারি চুপ করে রইলো। চুপ করে থাকতে থাকতে হ্যারির মনে হলো, ভবিষ্যতে ও বোধহয় আর কথা বলার ক্ষমতা পাবে না। হ্যারি মুখ নিচু করে অ্যাডভান্সড পোশান মেকিং থেকে এভারলাস্টিং এলিজার সম্পর্কে নোট লিখতে শুরু করলো। মাঝে মাঝে প্রিন্সের কোড ওয়ার্ড উদ্ধারে ডি সাইফার করার জন্য মন দিয়ে পড়তে লাগলো–প্রিন্স লিবাটিয়স বোরেজেস লেখার কিছু নতুন সংযোজনা করেছে।

ও, একটা কথা বলার আছে। একটু পর হারমিওন বললো। তুমি কিন্তু সাবধানে থাকবে।

প্রায় পৌনে এক ঘন্টা মোটামুটি নীরব থাকার পর হ্যারি একটু জোরে বললো, শেষবারের মতো বলেছিলাম, আমি কিন্তু বইটা না পড়ে ছাড়বো না। আমি স্নেইপ, অথবা স্লাগহর্নের কাছ থেকে যা যা শিখেছি তার চেয়ে হাফ-ব্লাড়-প্রিন্সের এই বইটা পড়ে অনেক কিছু বেশি শিখতে পেরেছি।

আমি তোমার ওই মূর্খ তথাকথিত প্রিন্স সম্পর্কে কিছু বলছি না, হারমিওন হ্যারির হাতে ধরা বইটার দিকে বিরক্তিতে তাকিয়ে বললো। শোনো, কান দিয়ে শোনো, আমি একটু আগে মেয়েদের বাথরুমে গিয়েছিলাম, সেখানে রোমিলা আর কয়েকটা মেয়ে জটলা করছিলো। ওরা প্ল্যান করেছে তোমাকে কেমন করে লাভ পোশান খাওয়াবে। ওরা তোমার সঙ্গে স্লাগহর্নের পার্টিতে যাবে তারপর সুযোগ বুঝে ফ্রেড-জর্জের পোশান খাইয়ে দেবে, তুমি যদি সাবধান না থাকো তাহলে ওরা তোমাকে যেমন করেই হোক খাইয়ে দেবে কিন্তু।

তুমি ওদের ধরে ওগুলো বাজেয়াপ্ত করলে না কেন? হ্যারি জানতে চাইলো। হ্যারির মনে হলো হারমিওন শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত হয়ে গেছে। এমন একটা অবস্থায় দাঁড়িয়েছে সেখানে সব কিছু ওর কাছে তালগোল পাকিয়ে গেছে।

বাথরুমে ওদের কাছে কি পোশান ছিলো যে বাজেয়াপ্ত করবো? হারমিওন অবজ্ঞার কণ্ঠে বললো। ওরা কেমন করে করবে সেই আলোচনা করছিলো। হারমিওন বইটার দিকে তাকিয়ে বললো, আমার মনে হয় তোমার হাফ-ব্লাড়-প্রিন্স নানা রকমের ডজনখানেক লাভ পোশানের কোনো প্রতিষেধক দিতে পারবে কি না। আমি ভাবছি তোমার সঙ্গে পার্টিতে কাউকে যেতে বলবো, তাহলে ওরা ভাববে তোমাকে লাভ পোশান খাইয়ে লাভ নেই। মনে থাকে যেন আগামীকাল রাত্রে, ওরা কিন্তু তোমাকে নাকাল করতে মরিয়া হয়ে আছে। যাকগে তুমি কিছু ড্রিঙ্ক করার সময় সজাগ থাকবে, কারণ রোমিলদা অত্যন্ত চালাক মেয়ে। হারমিওন আবার সাবধান করে দিল হ্যারিকে।

একটু চুপ থাকো তো, হ্যারি খুব আস্তে আস্তে বললো। বাইরে থেকে উইসলিদের উইজার্ড হুইজিস এখানে যাতে আসতে না পারে ফিলচ তার সব কড়া ব্যবস্থা করেছেন।

তোমার ফিলচের নিষেধের কথা বন্ধ করতো, কে ওর কথায় কান দিয়েছে বলতে পারো? কথাটা বলে হারমিওন নিজের কাটা দাগ দেওয়া লম্বা পার্চমেন্টটা দেখতে লাগলো।

আমি তো জানি প্রতিটি পেঁচা পর্যন্ত সার্চ করা হচ্ছে। তাহলে মেয়েগুলো লাভ পোশান স্কুলে আনবে কেমন করে?

ফ্রেড আর জর্জ খুব চালাক। পারফিউম আর কাসির ওষুধের বোতলে ভরে লাভ পোশান পাঠিয়েছে। এগুলো ওদের আউল অর্ডার সার্ভিসের একটি অংশ।

তুমি দেখছি অনেক খবর রাখো।

হারমিওন আবার অ্যাডভান্সড পোশান-মেকিংএর কপির দিকে অবজ্ঞাভরে তাকিয়ে বললো, ওরা জিনি আর আমাকে বোতলগুলো দেখিয়েছে তাই। আমি কিন্তু কারো ড্রিংকসে কখনো পোশান মিশিয়ে দিই না। অথবা দেওয়ার ভানও কখনো করিনি। দুটোই অন্যায়।

তাহলে তুমি বলছো ফিলচকে সকলেই বোকা বানাচ্ছে! তাহলে মেয়েরা অন্য বোতলে বেআইনি জিনিসপত্র আনছে, ফিলচ ধরতে পারছে না। তাহলে ম্যালফয় স্কুলের ভেতর নেকলেসটা কেন আনতে পারবে না।

প্লিজ হ্যারি, ওই কথা আর মনে করিয়ে দিও না। তাহলে পথে এসো, কেন নয়! হ্যারি বললো।

বিষয়টা হলো, হারমিওন নিঃশ্বাস ফেলে বললো। জিনস, কার্স এবং লুকিয়ে রাখা চার্মস গোপন সেন্সর ধরতে পারে, পারে না? ডার্ক ম্যাজিক (কালো জাদ) এবং ডার্ক অবজেক্টসও। ধরতে বেশি সময় নেয় না। নেকলেসটার মত শক্তিশালী কার্স ধরতে খুব বেশি হলে তো এক সেকেন্ড সময় লাগবে। কিন্তু কিছু জিনিস যদি অন্য বোতলে পাঠায় তাহলে ধরা শক্ত, লাভ পোশানও হয়তো সেই রকম ভাবে পাঠিয়েছে। লাভ পোশান সে রকম কালো বা বিপজ্জনক নয় যে ধরা পড়বে।

তোমার পক্ষে বলা খুবই সহজ, রোমিলদার কথা ভাবতে ভাবতে হ্যারি বললো।

আমার মতে ফিলচ তো খুব ভালো জাদুকর নয়, অন্য বোতলে বা কাফ সিরাফের বোতলে ভরে পাঠালে ধরতে নাও পারে।

হারমিওন হঠাৎ চুপ করে গেলো, হ্যারিও হারমিওনের মতো শব্দটি শুনতে পেয়েছে। অন্ধকার বই এর তাক থেকে কেউ একজন ওদের পেছনে দাঁড়িয়েছে, তারই পেছনে। অযথা ভয় পেলো ওরা। অন্ধকারে মাদাম পিনসে এসে দাঁড়িয়েছেন। মাদাম পিনসের ভোবড়া গাল, পার্চমেন্টের মতো শুকনো গায়ের চামড়া আর লম্বা বাঁকা নাক হাতে ল্যাম্পের আবছা আলো পড়ে ভূতুড়ে ভূতুড়ে দেখাচ্ছে।

তোমরা এখনো এখানে কেন? লাইব্রেরি তো বন্ধ হয়ে গেছে। মাদাম পিনসে বললেন। তোমরা যে সমস্ত বই নিয়েছে ঠিক মতো ফেরত দেবে। আরে দুষ্টু ছেলে ওই বইটা নিয়ে তুমি কি করছো?

মাদাম পিনসে টেবিলে ঝুঁকে থাবা মেরে অ্যাডভান্সড পোশান মেকিংর কপিটা নিয়ে নিলে হ্যারি বললো এটা আমার বই, লাইব্রেরির নয়।

হাতিয়েছো! পিনসে ফাঁচ ফাঁচ করে বললেন। অপবিত্র! কলুষিত!

হ্যাঁ বইটাতে তাই লেখা আছে, হ্যারি বইটা মাদাম পিনসের হাত থেকে কেড়ে নিলো।

মাদাম পিনসের মুখ দেখে মনে হলো যেন একটা বই চোরকে ধরেছেন। হারমিওন যতো তাড়াতাড়ি পারে ওর জিনিসপত্র ব্যাগে ভরে নিয়ে হ্যারিকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে গেল।

তোমাকে উনি লাইব্রেরিতে আসা বন্ধ করে দিতে পারেন যদি তুমি সাবধান না হও। শুনি কে তোমাকে ওই স্টুপিড বইটা লাইব্রেরিতে আনতে বলেছে?

মোটেই আমার কোনো দোষ নেই। উনিই তো পাগলের মতো চেঁচামেচি করছিলেন। তোমার কি মনে হয় মাদাম আমাদের ফিলচ সম্পর্কে আলোচনা শুনেছেন? আমি ভাল করেই জানি দুজনের মধ্যে কিছু চলছে।

ওহো… হাঃ হাঃ…। হারমিওন হেসে উঠলো।

ওরা করিডরে এসে দাঁড়ালো। করিডর ফাঁকা। ল্যাম্প জ্বালানো করিডর থেকে ওরা কমনরুমের দিকে গেল। ফিলচ আর পিনসের গোপন ভালোবাসা নিয়ে ওরা হাসাহাসি করতে লাগলো।

হ্যারি ফ্যাটলেডিকে বললো, বউব্রেস। ওটা ফেস্টিভ্যালের জন্য নতুন পাসওয়ার্ড।

তোমাকেও, ফ্যাট লেডি বললেন, ওদের ঘরে ঢোকার জন্য সরে গেলেন। পোট্রট হোল দিয়ে ভেতরে ঢুকতে যাবে তখন ওদের রোমিলদার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।

হায় হ্যারি! রোমিলদা বললো। জিল্লি ওয়াটার খাবে?

হারমিওন হ্যারির দিকে তাকালো। তাকানোটা আগেই সাবধান করে দিয়েছির মতো। কি বলেছি মনে নেই?

হ্যারি হেসে সঙ্গে সঙ্গে বললো, ধন্যবাদ! আমি ওই ড্রিঙ্কসটা তেমন পছন্দ করি না।

তাহলে, এইগুলো খাও আমার গ্রান্ডমা পাঠিয়েছে, রোমিলা গদগদ হয়ে এক বাক্স চকলেট কলড্রন হ্যারির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো।

অনেক ধন্যবাদ, হ্যারি বললো। ধন্যবাদ দেয়া ছাড়া হ্যারি আর কি বলবে। আমি এখন হারমিওনের সঙ্গে ভেতরে যাচ্ছি।

হ্যারি কথাটা শেষ করেই হারমিওনের সঙ্গে ভেতরে গেল।

কি তোমায় আগেই বলেছিলাম না? মেয়েদের মধ্যে কাউকে তুমি ডাকো, যাকেই ডাকবে তাকে তোমার কাছে রেখে চলে যাবে।

কথাটা শেষ হতেই হারমিওনের মুখটা অন্ধকারে ছেয়ে গেল। তখনই চোখে পড়েছে রন আর লেভেন্ডরকে। ওরা দুজনে একই চেয়ারে গাদাগাদি করে বসে রয়েছে।

আচ্ছা চলি হ্যারি–গুডনাইট। তখন সবে মাত্র সন্ধে সাড়ে সাতটা। হারমিওন আর একটি কথা না বলে মেয়েদের ডরমেটরির দিকে চলে গেল।

হ্যারি আর সময় নষ্ট না করে নিজের ঘরে শুতে চলে গেল। রন ও হারমিওনের ব্যাপারটা ওর ভালো লাগছে না। যাকগে আর মাত্র দুটো দিন আছে, তারপরই দ্য ব্যারোতে চলে যাবো। আগামীকাল একটা ক্লাস তারপর স্লাগহর্নের পার্টি! ছুটি শুরু হবার আগে রন আর হারমিওনের মিটমাট সম্ভব বলে মনে হলো না। কিন্তু ওর মনে হলো ছুটি হয়ে এক রকম ভালই হচ্ছে। কিছুদিন দেখা সাক্ষাৎ না হলে আবার সখ্যতা গড়ে উঠবে। এখন চুপচাপ থাকলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

কিন্তু হ্যারির সবই ভুল ধারণা। পরের দিন ট্রান্সফিগারেশন লেসনে ওদের ভুরুর রং বদলানোর ব্যাপারে তর্কাতর্কি শুরু হয়ে গেল। রন প্রথম প্রয়াসে ব্যর্থ হতেই হারমিওন হাসতে শুরু করলো। হাসিটা অনেকটা হেয় করার মতো। হ্যারি ভুরুর রঙের বদলে বিরাট একটা পাকানো গোঁফ করতে পারলো। হারমিওন পারলো না। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল অসম্ভষ্ট হলেন। হারমিওনের দুচোখ জলে ভরে গেল। তার ওপর লেভেন্ডার আর পার্বতীর টিটকিরি! ও একরকম কাঁদতে কাঁদতে ক্লাশরুম ছেড়ে চলে গেল, এমনকি জিনিসপত্রও নিলো না। হ্যারির মনে হলো হারমিওনের সবচেয়ে প্রয়োজন ওকে, তাই হারমিওনের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে ওর পেছনে পেছনে চললো।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর হ্যারি ওকে মেয়েদের বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখলো। ওর সঙ্গে ছিলো লুনা লাভগুড। মনে হলো লাভগুড ওর পিঠে হাত দিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে।

হ্যারিকে দেখে লুনা বললো, হ্যালো হ্যারি, তুমি কি জানো তোমার এক চোখের ভুরু উজ্জ্বল হলুদ?

হ্যারি বললো, হাই লুনা, হারমিওন তুমি তোমার বই খাতা সব ক্লাসরুমে ফেলে এসেছে। হ্যারি ওর বইগুলো এগিয়ে দিলো।

ও হা হা, ভুলে গিয়েছিলাম, হারমিওন বাস্প রুদ্ধ কণ্ঠে বললো। ওর চোখের জল হ্যারি যাতে দেখতে না পায়, তাই মুখটা ঘুরিয়ে নিলো। পেনসিলের বাক্স দিয়ে চোখ দুটো ও মুছলো। ধন্যবাদ হ্যারি, যাই, আমার একটু কাজ আছে।

হারমিওন হন্তদন্ত হয়ে চলে গেল। ওকে যে সান্ত্বনা দেবে তারও সুযোগ পেল না হ্যারি। কিন্তু কি করে সান্ত্বনা দেবে ও জানে না।

মনে হয় ও খুব আপসেট, লুনা বললো। বাথরুমে ঢুকে কান্না শুনে ভেবে ছিলাম মোনিং মার্টল; পড়ে দেখলাম মোনিং মার্টল নয় হারমিওন। ও রন উইসলি সম্পর্কে কিছু বললো।

হ্যাঁ, ওদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছে।

রন মাঝে মাঝে হাস্যকর কথা বলে, তাই না? লুনা বললো। ওরা আবার করিডরের দিকে চললো। রন মায়ামমতাহীন, এর আগেও আমি লক্ষ্য করেছি।

আমারও তাই মনে হয়, হ্যারি বললো। লুনা মাঝে মাঝে অপ্রিয় সত্য বলে ফেলে। ওর মতো অদ্ভুত চরিত্রের মেয়ে হ্যারি খুবই কম দেখেছে। প্রসঙ্গ পাল্টে হ্যারি বললো, তো তোমার এই টার্মটা ভালই হয়েছে কি বলো?

হ্যাঁ মোটামুটি ভালই হয়েছে, লুনা বললো। ডিএ নেই, তাই একটু একা একা লাগছে। জিনি খুব ভালো মেয়ে সেদিন ট্রান্সফিগারেশন লেসনে দুটো ছেলে লুনী লুনী বলে আমার পেছনে লেগেছিলো, ও ওদের ধমকে ঠান্ডা করে দিয়েছে।

তুমি আমার সঙ্গে আজ রাতে স্লাগহর্নের পার্টিতে যাবে?

হ্যারি প্রস্তাবটা অজান্তে করে ফেললো। নিজের গলার স্বর নিজেই চিনতে পারলো না মনে হলো। লুনা ওর স্ফীত চোখ দুটি দিয়ে হ্যারির দিকে আশ্চর্য হয়ে তাকালো।

স্লাগহর্নের পার্টি? তোমার সঙ্গে?

হ্যাঁ তাইতো বললাম। আমরা আমাদের গেস্ট সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারি, তাই আমি ভাবলাম তুমি যদি যাও। হ্যারি ওর বক্তব্য পরিষ্কারভাবেই বললো। আমি বলছি বন্ধুর মতো, তবে তুমি যদি না যেতে চাও…।

না না, আমি তোমার সঙ্গে তোমার বন্ধু হিসেবেই পার্টিতে যাবোয় লুনা বললো। হ্যারি এর আগে লুনাকে এতো উচ্ছ্বসিত দেখেনি। বিশ্বাস করো আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে বন্ধু হিসেবে কোনো পার্টিতে যেতে বলেনি! এই জন্যই কি তুমি তোমার ভুরু ডাই করেছো? আমি কি তোমার মতো করবো?

মোটেই না, হ্যারি দৃঢ় স্বরে বললো। ভুলবশত হয়ে গেছে। আমি হারমিওনকে আমার ভুরু ঠিক করে দিতে বলব। তাহলে কথা রইলো তোমার সঙ্গে আটটার সময় এনট্রেন্স হলে দেখা হবে।

আহা-হা! কে যেন ওদের মাথার ওপর থেকে বললো। জনেই লাফিয়ে উঠলো। ওরা পিভসের তল দিয়ে চলেছে খেয়াল করেনি। পিভস একটা ঝাড়ু লণ্ঠন এক হাতে ধরে মাথা নিচু করে দুলছিল। মুখের হাসিটাও অশুভ বিদ্বেষপরায়ণ!

পট্টি বলে লুনি তুমি যাবে পার্টিতে?
পট্টি লুনিকে ভালোবেসে ফেলেছে।
পট্টি ভা… লো… বে… সে… ফে… লে… ছে
লু… উ… উ… উ.. নি কে!

তারপর ও বোঁ বোঁ শব্দ করে উড়ে গেলো, পট্টি লুনিকে ভালোবাসে।

ব্যাপারটা গোপন রাখাই ভালো, হ্যারি বললো। তাহলেও যতোই গোপন রাখার চেষ্টা করুক না কেন, স্লাগহর্নের পার্টিতে স্কুলের সকলেই জেনে যাবে হ্যারি লুনার সঙ্গে কথা বলছে।

তুমি তো অন্য কাউকে সঙ্গে নিতে পারতে! রনের ভাল লাগেনি তাই হ্যারিকে বললো, তুমি লুনা লাভগুডকে নেবে কেন ডিনার পার্টিতে?

জিনি সেখান দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে যাচ্ছিল। কথাটা কানে যেতেই থমকে দাঁড়িয়ে রনকে বললো, শোনো ওকে হেয় করবে না। সত্যি বলছি তুমি ওকে নিয়ে যাচ্ছো শুনে আমার খুব ভাল লাগছে, হ্যারি, ও খুব আনন্দে উত্তেজিত হয়ে আছে।

তারপর, কথাটা বলে ডিনের টেবিলের সামনে চলে গেল ওর সঙ্গে বসার জন্য। লুনার সঙ্গে পার্টিতে হ্যারি কথা বলছে দেখে জিনির খুব ভালো লাগলো। একটা লম্বা টেবিলের শেষ প্রান্তে হারমিওন একা বসে রয়েছে। ওর সামনে রয়েছে একটা স্টু-এর বাটি, একটা স্টিক দিয়ে স্টুটা ঘোলাচ্ছে। হ্যারি দেখলো রন হারমিওনের দিকে আড়ে আড়ে তাকাচ্ছে।

এতো রাগ কিসের তোমার? একবার আমি দুঃখিত বললেই তো সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে যায়। হ্যারি রনকে বললো।

আবার ক্যানারি পাখির আঁচড়-কামড় খেতে হবে? রন বললো। ও তোমায় ব্যঙ্গ করেছে? হ্যাঁ ও আমার গোঁফ দেখে হেসেছে! আমিও তো হেসেছি।

রন হ্যারির কথাটা শুনেছে বলে মনে হলো না; ল্যাভেন্ডার পার্বতাঁকে সঙ্গে নিয়ে এসে দাঁড়ালো। হ্যারি আর রনের মধ্যে সামান্য ফাঁকা জায়গা, ল্যাভেন্ডর সেখানে চাপাচাপি করে বসে রনের গলা জড়িয়ে ধরলো।

হায় হ্যারি, পার্বতী বললো, ওর দুই বন্ধু ল্যাভেন্ডার ও রনের আচরণে অস্বস্তী ও বিরক্তিবোধ করছে বলে মনে হলো।

হায়, হ্যারি বললো। কেমন আছো? তুমি এখনো হোগার্টসে আছো? শুনেছিলাম তোমার বাবা-মা তোমায় স্কুল ছাড়িয়ে নিয়ে যাবেন।

পার্বতী বললো, অনেক বলে-কয়ে আপাতত বন্ধ রেখেছি। কেটির ঘটনার পর ওরা খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলেন, তবে এরপর আর কিছু ঘটেনি দেখে আপাতত চুপ আছেন। আরে হারমিওন তুমি? ওখানে একা একা বসে আছো কেন?

পার্বতীর মুখ দেখে হ্যারি, বুঝতে পারলো ট্রান্সফিগারেশনে হারমিওনকে দেখে ও নিজেকে অপরাধী মনে করছে। পার্বতীর মুখে হাসি দেখে হারমিওনও হাসলো। পার্বতীর চেয়েও বেশি। মেয়েরা মাঝে মাঝে খুবই অদ্ভুত হয়ে যায়।

হায় পার্বতী, রন আর ল্যাভেন্ডারকে ধর্তব্যের মধ্যে না এনে হারমিওন বললো। তুমি আজ স্লাগহর্নের পার্টিতে আসছো তো?

নিমন্ত্রণ পাইনি, পার্বতী, হতাশ কণ্ঠে বললো। অনেকে যাচ্ছে শুনে আমার যেতে খুব ইচ্ছে ছিলো; কিন্তু ডাকেনি, কেমন করে যাই। তুমি নিশ্চয়ই যাবে?

হ্যাঁ যাবো। করম্যাক আটটার সময় আসবে বলেছে, ওর সঙ্গে যাবো।

করম্যাক? পাবতী বললো। করম্যাক মানে তুমি করম্যাক ম্যাকলেগেনের কথা বলছো?

ঠিক ধরেছো, হারমিওন অতি মিষ্টি স্বরে বললো। সেই ছেলেটা যে একবার গ্রিফিন্ডরের কীপার হয়েছিলো।

তুমি ওর সঙ্গে যাচ্ছো তাহলে? পার্বতী বড়ো বড়ো চোখ করে একটু যেন অবাক হয়ে বললো।

হা তুমি, ও তুমি জানতে না? হারমিওন অদ্ভুতভাবে হেসে হেসে বললো। ওর সেই হাসি খুবই অপরিচিত।

না! পার্বতী বললো। তুমি দেখছি কিডি প্লেয়ারদের খুব পছন্দ করো। আগে ছিলো ক্রাম, আর এখন ম্যাকলেগেন।

সেইরকম ভাবেই হাসতে হাসতে হারমিওন বললো, ও তুমি জানো না আমি সত্যি সত্যি ভাল কিডিচ প্লেয়ারদের পছন্দ করি। এবার আমাকে উঠতে হয়, পার্টির জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

ও চলে গেল। তারপরই পার্বতী আর ল্যাভেন্ডার নতুন এক খবরে চঞ্চল হয়ে উঠলো। ম্যাকলেগেন সম্পর্কে ওরা কিছুই শোনেনি, হারমিওনের এই বিষয়টি তারা আন্দাজও করতে পারেনি। রন ভাসা ভাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, মুখ থেকে একটি শব্দও বের হলো না। হ্যারি চুপচাপ ভাবতে লাগলো মেয়েরা প্রতিশোধ নিতে জলের কতোটা গভীরে নামতে পারে।

ঠিক রাত আটটার সময় হ্যারি এনট্রেন্স হলে গিয়ে দেখলো হলে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। সকলেই কারণে অকারণে হাসছে হৈচৈ করছে। লুনার দিকে এগিয়ে যেতে শুরু হয়ে গেল গা টেপাটিপি, হাসাহাসি। লুনা পরেছে রূপালি চুমকি লাগানো রোবস। রোবসের চাকচিক্য সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। ওকে বেশ ভালোও দেখাচ্ছে। হ্যারিও খুশি হলো ওর পোশাক দেখে। শেষ পর্যন্ত ও লালচে রঙ-এর ইয়ররিংস পরেনি, বাটারবিয়র কর্কের (ছিপি) নেকলেস আর ওর স্পেকট্রেসপেকস।

হ্যারি লুনাকে বললো, তাহলে চলা যাক কি বলে?

লুনা আনন্দে লাফিয়ে উঠে বললো, পার্টি কোথায় হচ্ছে?

 স্লাগহর্নের অফিসে, হ্যারি বললো। তারপর সকলের চোরা চাহনি আর হৈ চৈ উপেক্ষা করে। ওর হাত ধরে মাৰ্বল পাথরের সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল, তুমি কি শুনেছো একজন রক্তচোষা আসছে? রুফাস স্ক্রিমগৌর? লুনা প্রশ্ন করলো। মানে, মানে তুমি বলছো ম্যাজিক মন্ত্রী?

হ্যাঁ, উনি একজন রক্তচোষা, লুনা সাদাসিধেভাবে বললো। কর্নেলিয়স ফাজের বদলে স্ক্রিমগৌর ম্যাজিক মন্ত্রী হলে আমার বাবা ওই সম্পর্কে তার পত্রিকায় বড় একটা প্রবন্ধ লিখেছিলেন। কিন্তু উনি সেই প্রবন্ধটা যাতে ছাপা না হয় তার জন্য একজনকে পাঠিয়ে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন, মিনিস্ট্রি সত্য কথাটা প্রকাশ করতে চায়নি।

হ্যারি অবশ্য লুনার মন্তব্য ফ্রিমগৌর একজন রক্তচোষা বিশ্বাস করতে চাইলো না। কিন্তু লুনা এমনভাবে ওর বাবার লেখা প্রবন্ধের ব্যাপারটা বারবার বলতে লাগলো, যেন যা বলছে তা কোনো ভাবেই মিথ্যে নয়। কথা বলতে বলতে ওরা স্লাগহর্নের অফিসে পৌঁছে গেছে। বাইরে থেকে ওরা পার্টির হাসি-গান যন্ত্রসঙ্গীত উচ্চস্বরে আলোচনা শুনতে পেল। তাই ওদের আলোচনা আর এগোয়নি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে ওরা স্লাগহর্নের অফিসে ঢুকলো।

ঐন্দ্রজালিক শক্তিতে না সত্যসত্যই স্লাগহর্নের অফিস ঘরটা অন্যান্য টিচারদের অফিস ঘরের চেয়ে অনেক বড় সেটা হ্যারি দেখে বুঝতে পারলো না। সবুজ, লাল আর সোনালী বাতি দিয়ে ঘরের সিলিং আর দেওয়াল অপূর্ব করে সাজানো হয়েছে। দেখে মনে হয় একটা বিরাট টেন্টের তলায় তারা জমায়েত হয়েছে। ঘরে প্রচুর লোক তিল ধারণের স্থান নেই। চতুর্দিক লাল আলোতে উদ্ভাসিত। লাল আলোটা আসছে ঘরের মাঝখানে সিলিং থেকে। ঘরের এক কোণে একজন দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে গান গাইছে। গানের সুরের সঙ্গে বেজে চলেছে মেন্ডোলিন। বয়স্ক লোকেরা পাইপ খাচ্ছেন তারই ধোয়াতে বেশ খানিকটা জায়গা ধুমায়িত। সেখানে কিছু বৃদ্ধ জাদুকর নিজেদের মধ্যে গভীর আলোচনায় মগ্ন। তাছাড়া অনেক গৃহ ডাইনি নিঃশব্দে তাদের কাজ করে চলেছে। ওদের হাতে রূপোর ট্রে। ট্রেতে নানা রকমের খাবার। দূর থেকে মনে হয় কিছু চলমান ছোটো ছোটো টেবিল।

লুনা আর হ্যারি দরজা খুলে দাঁড়াতেই স্লাগহর্ন ওদের দেখে দ্রুত ছুটে এসে বললেন, হ্যারি, আমার দুষ্টু ছেলে, এসো এসো ভেতরে এসো, অনেক লোকজনেরা এসেছেন তাদের সঙ্গে তোমার পরিচয় করিয়ে দেই।

স্লাগহর্নের মাথায় ভেলভেটের ফিতে দিয়ে বাধা হ্যাট, তার সঙ্গে মিলিয়ে স্মোকিং জ্যাকেট পরেছেন। হ্যারির হাতটা স্লাগহর্ন এতো শক্ত করে ধরে থাকলেন যেন ওকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যাবেন। স্লাগহর্ন ওর হাত চেপে ধরে পার্টির মধ্যে নিয়ে গেলেন। হ্যারি লুনার হাত ধরেই পার্টির ভেতরে ঢুকলো।

হ্যারি তোমার সঙ্গে এলড্রেড ওরপলের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। আমার এক ছাত্র ব্লাড বাদার্স মাই লাইফ এমংস্ট দ্যা ভ্যাম্পায়ার্সএর লেখক, এবং সঙ্গে রয়েছেন ওর বন্ধু স্যাংগুইনি।

ওরপল ছোটো খাটো চশমাবিহীন মানুষ। হ্যারির হাতটা চেপে ধরে প্রবলভাবে নাড়া দিলেন। পাশেই ভ্যাম্পায়ার (রক্তচোষা) স্যাংগুইনি। লম্বা চোখের নিচে কালো ছায়া বা দাগ, খুবই খুশির সঙ্গে মাথা ঝাঁকালেন। মনে হয় পার্টি ওর তেমন ভাল লাগছে না। এক ঝাঁক মেয়ে ওর খুব কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে, ওদের চোখে কৌতূহল এবং সবাই উত্তেজিত।

হ্যারি পটার তোমায় দেখে আমার খুব ভাল লাগল, ওরপল বললেন। চোখ কুঁচকে হ্যারির দিকে তাকালেন। এই সেদিন প্রফেসর স্লাগহর্নকে বলছিলাম, হ্যারি পটারের আত্মজীবনী লেখা দরকার। যে বইটির জন্য আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

হ্যারি পটার উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো, সত্যি?

হোরেস যেমনটি বলেছিলেন তুমি সেরকমই! ওরপল বললেন। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, ওর কথার ঢং বদলে গেল। সহসা পেশাদার সুলভ ভঙ্গিতে বললেন, আমি তোমার আত্মজীবনী লিখতে পারলে সত্যই আনন্দিত হবো, লোকেরা তোমার অতীত, বর্তমান জানার জন্য ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। তুমি যদি আমাকে কয়েকটি সাক্ষাৎকার দাও, ধরো সব মিলিয়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা তাহলে মনে হয় এক মাসের মধ্যে বইটা শেষ করতে পারবো। মনে হয় তার জন্য তোমার কোনো অসুবিধা হবে না। স্যাংগুইনিকে তুমি জিজ্ঞেস করো, যা বললাম সম্ভব কি না, এই স্যাংগুইনি কোথায় চললে, এখানে দাঁড়াও। হঠাৎ ওরপল কঠিন হয়ে গেলেন। ভ্যাম্পায়ার মেয়েদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, চোখে ক্ষুধার্তের ছাপ।

এই নাও একটা পেস্ট্রি খাও, ওরপল গৃহডাইনির হাত ধরা প্লেট থেকে একটা পেস্ট্রি নিয়ে বললেন। পেস্ট্রিটা স্যাংগুইনির হাতে দিয়ে হ্যারির দিকে তাকালেন।

প্রিয় হ্যারি তুমি যে সোনা ফলাতে পারো সে সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণাও। নেই।

হ্যারি সংযত হয়ে দৃঢ়স্বরে বললো, আমার কোনো ইচ্ছে নেই। আমার এক বন্ধুর সঙ্গে সঙ্গ দিতে হবে, দুঃখিত। বলেই হ্যারি হাঁটতে শুরু করলো।

হ্যারি লুনার হাত ধরে ভিড়ের ভেতরে চললো। ও এইমাত্র একজনকে দেখেছে যার আছে বাদামী চুল, দেখতে অনেকটা ওইর্ডের দুই বোনের মতো।

হারমিওন। হারমিওন! হ্যারি, হ্যারি তুমি কোথায়? এই তো আমি এখানে, কি হয়েছে তোমার?

ঈশ্বরকে ধন্যবাদ! হায় লুনা!

কি হয়েছে তোমার হারমিওন? হ্যারি হারমিওনের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো। হারমিওনের বিপর্যস্ত চেহারা, যেন ও এই মাত্র কোনো শয়তানের ঘন কোঠর থেকে প্রবল লড়াই করে এসে দাঁড়িয়েছে।

ওহো, আমি কোনো রকমে পালিয়ে এসেছি, আমি মানে করম্যাককে এই মাত্র ছেড়ে এসেছি, ও বললো। মিসলটোর (চির হরিৎ পরাশ্রয়ী গুল্ম) ভেতরে। হারমিওন যেন হ্যারিকে কৈফিয়ৎ দিতে চায়, হ্যারি ওর দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে থাকে।

হয়েছে তো আমার সঙ্গে না আসার ফল, হ্যারি ওকে কঠিন স্বরে বললো। আমি ভেবেছিলাম ওর সঙ্গে গেলে রন হিংসে করবে, হারমিওন কোনো চিন্তা করে বললো। আমি জ্যাকেরিয়া স্মিথ সম্পর্কে তর্ক করছিলাম, আমি কিন্তু অন্যরকম ভেবেছিলাম ওকে।

ওরা তিনজনে ঘরের অন্য এক পাশে চলে গেল। গ্রপের সঙ্গে দেখা করতে যেতে যেতে মাঠের গর্ত, গুলের ঝাড়ু ইত্যাদি লাফিয়ে লাফিয়ে চলল। হারমিওন বললো, করম্যাক ম্যাকলেগেন গ্রুপকে অনেকটা সভ্যভব্য করেছে। সেই কারণেই পার্টিতে আমি করম্যাকের সঙ্গে আসতে চেয়েছিলাম। ওদের যেতে যেতে একটুও খেয়াল ছিলো না যে প্রফেসর ট্রিলনি নিঃসঙ্গভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

হ্যালো, লুনা খুবই ভদ্র ও নরম সুরে বললো।

ট্রিলনি লুনাকে স্পষ্টভাবে দেখতে পেলেন না, আন্দাজ করে বললেন, শুভ সন্ধ্যা। তারপর বললেন, আমি তোমাকে অনেকদিন হয়ে গেল আমার ক্লাসে দেখতে পাই না।

ফিরেঞ্জের সঙ্গে আমার কাজ চলছে এই বছর, তাই। লুনা বললো।

ও হা হা, তাইতো বটে, ট্রিলনি একটু রাগত স্বরে চাপা হাসিতে বললেন।

লুনা চুপ করে রইলো। ট্রিলনি মদ্যপান করে বেসামাল। অনেক আজেবাজে কথা বলতে শুরু করলেন, এমন কি হ্যারিকেও চিনতে পারলেন না। হ্যারি হারমিওনের কাছে এসে বললো, যাক একটা সোজা প্রশ্ন করি, তুমি কি রনকে বলতে পারবে কীপার নির্বাচনের সময় তুমি বাধা সৃষ্টি করেছিলে?

কথাটা শুনে হারমিওন ভুরু কুঁচকালো।

তুমিও কি মনে করো ওই রকমভাবে আমি নিজেকে ছোটো করবো? হ্যারি হারমিওনের মুখের দিকে তাকালো।

হারমিওন তুমি ম্যাকলেগেনকে জিজ্ঞেস করতে পারো।

শোনো হ্যারি তোমার টিমে কে কীপার হবে বা না হবে তা নিয়ে রনকে কিছু বলার আমার কোনো ইচ্ছে কখনো ছিলো না।

খুব ভালো, হ্যারি জোর দিয়ে বললো। তাহলে আবার ওর মাথা বিগড়ে যাবে, পরের ম্যাচে আমরা হেরে যাবো। ওদের কথা বেশি এগোলো না। হ্যারির দিকে ট্রিলনির চোখ পড়ে গেল।

হ্যারি পটার! ট্রিলনি কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন। যেন প্রথম বারের মতো সতর্ক করে দেয়া।

ওহ হ্যালো; হ্যারি দায়সারা গোছে বললো।

শোনো, আমার প্রিয় ছেলে। খুবই চাপা গলায় বললেন। গুজব!… নানা গল্প!… দ্যা চুজেন ওয়ান! আমি তোমাকে অনেকদিন থেকে দেখে আসছি। হ্যারি, অশুভের পূর্বাভাস…, কিন্তু তুমি কেন ডিভিনেসনে আসো না? অন্যদের কথা বাদ দাও, তোমার জন্য সাবজেক্টটা খুবই জরুরি।

আহ্ সিবিল, আমরা প্রত্যেকেই নিজের ব্যাপারটা সব সময় বেশি জরুরি মনে করি, ওদের কানে কথাটা গুরুগম্ভীরভাবে ভেসে এলো। পর মুহূর্তে ওরা দেখলো স্লাগহর্ন, ট্রিলনির পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। স্লাগহর্নের মুখটা লাল, মাথার ভেলভেট হ্যাটটা স্থানচ্যুত। ওর এক হাতে এক গ্লাস ড্রিংকস, অন্য হাতে গাদাগুচ্ছের পাই। কিন্তু আমি ওকে পোশান ক্লাসে কখনো এতো বেশি স্বাভাবিক দেখিনি। স্লাগহর্ন বললেন।

আমি ওর মাকে পড়িয়েছি, মায়ের মতোই ও সহজ প্রবৃত্তিজাত! ওই রকম শক্তিসম্পন্ন ছাত্রছাত্রী আমি আমার শিক্ষক জীবনে খুবই কম দেখেছি। আমি তোমাকে বলতে পারি সিবিল, এমনকি সেভেরাস পর্যন্ত।

হ্যারি আঁতকে উঠলো যখন স্লাগহর্ন একটা হাত শূন্যে প্রসারিত করে খুব সম্ভব শূন্য থেকে ওদের মাঝে ধরে আনতে উদ্যত হলেন।

বিপদের সময় এড়িয়ে যাওয়া বন্ধ করো, সেভেরাস এখনি এসে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দাও, স্লাগহর্ন হেঁচকি তুলতে তুলতে যেন মজা করে বললেন। আমি এইমাত্র হ্যারির পোশান বানানোর অসামান্য ক্ষমতা সম্পর্কে কথা বলছিলাম। অবশ্য তাতে তোমার কিছুটা অবদান আছে, তুমি তো ওকে পাঁচটা বছর পড়িয়েছে!

স্নেইপকে স্লাগহর্ন ওর কাঁধে হাত দিয়ে জড়িয়ে রয়েছেন। স্নেইপ এক রকম যতা কলের মধ্যে পড়েছেন। উপায় নেই, হাত ছাড়িয়ে যেতে পারছেন না। স্নেইপের বাঁকা নাক আরো বেঁকে গেলো, কালো দুই চোখ ছোটো ছোটো করে হ্যারিকে দেখতে লাগলেন। দেখলেই বোঝা যায় হ্যারি তার খুবই অপছন্দের কিন্তু স্লাগহর্নের সামনে প্রকাশ করতে পারছেন না।

আশ্চর্য! আমার তো মনে হয় পটারকে আমি কোনো কিছু শেখাইনি। তাই? তাহলে তো বলতে হবে, সব কিছুই ওর জন্মগত যোগ্যতা। স্লাগহর্ন উচ্চস্বরে বললেন।

তুমি জানো ও প্রথম লেসনে কি বানিয়েছিল, ড্রাক্ট অফ লিভিং ডেথ বুঝলে। আজ পর্যন্ত আমার কোনো ছাত্র প্রথম চেষ্টায় এতো সূক্ষ্মভাবে বানাতে পারেনি। আমার তো মনে হয় তুমিও পারোনি সেভেরাস।

তাই? কোনো তাপ উত্তাপ না দেখিয়ে স্নেইপ বললেন। ওর চোখ তখনো কিন্তু হ্যারির ওপর। হ্যারির খুবই অশান্তি লাগে। স্লাগহর্ন যেন আশা করছেন স্নেইপ এই নতুন ছেলেটির পোশান তৈরির দক্ষতার ব্যাপারে কিছু অনুসন্ধান করেন।

হ্যারি, আমাকে একবার তুমি বলেছিলে; কিন্তু আমার মনে আসছে না, আর কি কি সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করছো বলতো?

ডিফেন্স এগেন্সট ডার্ক আর্ট (কালো জাদুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ), চার্মস (জাদুমন্ত্র), ট্রান্সফিগারেসন (চেহারার পরিবর্তন), হারাবোলজি।

ওই সব তো সংক্ষেপে বলা যায় অররদের যা প্রয়োজন হয়, স্নেইপ ঘোৎ ঘোৎ করে বললেন।

হ্যারি একগুয়ের মতো বললো, তাইতো হতে চাই আমি। তুমি একদিন খুব নামী দামী লোক হবে, স্লাগহর্ন ঝড়ের বেগে বললেন।

আমি কিন্তু মোটেই চাই না তুমি অরর হও, হ্যারি। লুনা হঠাৎ ওদের কথার মধ্যে বলে ফেললো। সকলেই ওর দিকে তাকালো। ওদের কাজই চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্র করা, আমার মনে হয় আপনারা সবাই জানেন। ওরা মিনিস্ট্রি অফ ম্যাজিকের ভেতরে আছে আবার বাইরেও আছে। মিনিস্ট্রি অফ ম্যাজিককে ফেলে দিতে ওরা ডার্ক ম্যাজিক আর গাম ডিজিজ মিশিয়ে কাজ করে।

হ্যারি ওর খাবার প্লেট হাতে নিয়ে হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে ওর চোখে পড়লো আরগাস ফিলচ, ম্যালয়ের কান ধরে নিয়ে আসছে।

প্রফেসর স্লাগহর্ন, ফিলচ উত্তেজিত হয়ে বললো। একজনকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছে সেই আনন্দে ওর সারা শরীর উত্তেজনায় কাঁপছে। আমি এই ছেলেটাকে ওপরের সিঁড়ির করিডরে দেখলাম উঁকিঝুঁকি মারছে। জিজ্ঞেস করতে এই ছেলেটা বললো, ও নাকি আপনার পার্টিতে আসার নেমন্তন্ন পেয়েছিল, আসতে একটু দেরি হওয়াতে ঘরে ঢুকবে কি না ভাবছিল। আপনি কি নেমন্তন্ন করেছিলেন প্রফেসর?

ম্যালফয় সজোরে ফিলচের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। মুখ দেখে মনে হয় অসম্ভব রেগে গেছে।

ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমাকে ডাকা হয়নি, আমি ফটক ডিঙ্গিয়ে প্রবেশ করেছিলাম, খুশি তো?

না, আমি একটুও খুশি নই, ফিলচ বললো, চোখে মুখে বিরক্তি মেশান হাসি। ধরা পড়েছে, ধরা পড়েছে, তোমায় কি হেডমাস্টার বলেননি, রাত্রে ঘুরেফিরে।

বেড়ানো নিষিদ্ধ? তোমার কি অনুমতি আছে?

যাকগে, সব ঠিক আছে আরগাস, ঠিক আছে, স্লাগহর্ন হাত দোলাতে দোলাতে বললেন। এখন ক্রিসমাস পার্টিতে আসা অপরাধ নয়। তোমার শাস্তির কথা ভুলে যাও, তুমি আমাদের সঙ্গে থাকতে পারো ড্রেকো।

ফিলচের চোখে মুখে হতাশা ও দারুণ রাগের অভিব্যক্তি প্রকাশ যার সহজেই বোধগম্য। কিন্তু কেন, হ্যারির ওর দিকে তাকিয়ে মনে হলো, তাহলে কী ম্যালফয়ের ওপর ওর মতো ফিলচও অখুশি? স্নেইপ ও ম্যালফয় দুজনে দুজনকার মুখের দিকে রাগত দৃষ্টিতে তাকিয়ে কেন, এ তো স্বাভাবিক নয়? তাহলে কি ভীত?

হ্যারি চোখের সামনে যা দেখছে সেটা মনে গাঁথবার আগেই ফিলচ আপন মনে বিড় বিড় করতে করতে চলে গেল। ম্যালয়ের মুখে হাসি, অবশ্যই স্লাগহর্নকে তার ঔদার্যের জন্য হাসিটা, স্নেইপের চোখ মুখের ভাব আবার অবর্ণনীয় হয়ে গেল।

ম্যালফয়ের ধন্যবাদ জানানোর প্রত্যুত্তরে স্লাগহর্ন হাত দোলাতে দোলাতে বললেন, আরে এটা কোনো ব্যাপারই নয়, আমি তোমার গ্র্যান্ডফাদারকে যথেষ্ট জানি, কারণ…।

ম্যালফয়, স্লাগহর্নের কথা শেষ হবার আগেই বললো, উনি সব সময় আপনার কথা বলতেন স্যার, তিনি বলছেন আপনার মতো এতো ভালো পোশান বানাতে আর কাউকে দেখেননি।

হ্যারি ম্যালফয়ের দিকে তাকালো। কোনো ঔৎসুক বা কৌতূহল টেনে বার করার জন্য নয়। আসলে স্নেইপের দৃষ্টি ম্যালয়ের দিকে সামান্য সময় নয় অনেকটা সময় ধরে। হ্যারি অনেক দিন ম্যালফয়কে সামনে থেকে খুঁটিয়ে দেখেনি। এখন দেখলো ম্যালফয়ের দুচোখের তলায় গভীর কালো ছায়া, গায়ের চামড়া ঈষৎ ধূসর বর্ণ হয়ে গেছে।

হঠাৎ স্নেইপ মৌনতা ভঙ্গ করে বললেন, ড্রেকো তোমার সঙ্গে দুএকটি কথা বলা প্রয়োজন আমার।

ওহো, না না সেভেরাস ওসব কথা এখানে নয়, স্লাগহর্ন আবার হেঁচকি তুলতে তুলতে বললেন। এখন ক্রিসমাস, কঠোরতা বিসর্জন দাও।

আমি ওর হেড অফ হাউজ, তাই আমিই ঠিক করবো কতোটা কঠোর হবো অথবা অন্যকিছু, স্নেইপ চাঁচাছোলা কণ্ঠে বললেন। এসো আমার সঙ্গে ড্রেকো।

স্নেইপের সঙ্গে ম্যালফয় চলে গেল। ম্যালয়কে খুবই ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছে। হ্যারি সেখানে অস্থির মনে দাঁড়িয়ে রইলো, তারপর বললো, লুনা, আমি বাথরুম থেকে এখনি আসছি।

লুনা বললো, ঠিক আছে, তুমি যাও আমি এখানে থাকছি। হ্যারি হন্তদন্ত হয়ে ভিড়ের মধ্যে চলে গেল। লুনা জানেও না হ্যারি ওর কথা শুনতে পেল কি পেল না। লুনা আবার অররের প্রসঙ্গে ফিরে এলো। প্রফেসর ট্রিলনির সঙ্গে রটফ্যাংগ ষড়যন্ত্র সম্বন্ধে আলোচনা শুরু করলো। ট্রিলনি মনে হয় শোনার জন্য খুবই উৎসুক।

ভিড়ভাট্টা থেকে বেরিয়ে এসে নিরিবিল দাঁড়িয়ে অদৃশ্য হবার ক্লোকটা পরা খুবই সহজ। হ্যারি পকেট থেকে ক্লোকটা বের করে চটপট পরে নিলো। অদৃশ্য হবার ক্লোক তো পরে নিলো ও কিন্তু ম্যালফয় আর স্নেইপকে খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। তবুও হ্যারি করিডরে ধরে ছুটলো। ওর পদশব্দ স্লাগহর্নের পার্টির গান বাজনার সঙ্গে মিলেমিশে গেল। খুব সম্ভব স্নেইপ, ম্যালফয়কে নিয়ে ওর ভূগর্ভস্থ অন্ধকার অফিস ঘরে গেছেন, অথবা স্নিদারিনদের কমনরুমে গেছেন। জানার জন্য হ্যারি করিডরের লাগোয়া সব ঘরের দরজায় কান পাতলো, শেষ ঘরটার ভেতর থেকে কিছু শব্দ কানে এলো। দারুণ এক উত্তেজনায় ও দরজার চাবির গর্তে হাঁটু গেঁড়ে বসে দেখতে চেষ্টা করলো।

এমন মারাত্মক ভুল তোমার করা ঠিক হয়নি ড্রেকো। যদি তোমাকে স্কুল থেকে এক্সপেল করা হয়।

এমন কিছু আমি করিনি যার জন্যে… ঠিক আছে?

আশা করি তুমি সত্যি কথা বলছে, কারণ, ব্যাপারটা বিশৃংখল আর বিচারবুদ্ধিহীন। ভুলে যেও না, এখানকার বিভিন্ন দুর্ঘটনার বিষয়ে তোমার হাত থাকতে পারে বলে তোমাকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

কে আমাকে সন্দেহ করছে বলবেন স্যার? ম্যালফয় খুব রেগে গিয়ে বললো। গতবার আমি কিছু করিনি ঠিক আছে? সেই হোটেলের মেয়েটির একটি শত্রু আছে, সে সম্পর্কে কেউ জানে না, অনুগ্রহ করে আমার দিকে ওই রকমভাবে তাকাবেন না। আমি খুব ভালো করেই জানি আপনি কি করছেন, না করছেন। আমাকে যতোটা গাধা মনে করেছেন তা আমি নই, কিন্তু আপনি যা করতে চাইছেন তা ফলপ্রসূ হবে না, আমি আপনার কাজ বন্ধ করাতে পারি।

আবার নীরবতা! স্নেইপ শান্ত কণ্ঠে বললেন, তাহলে আল্ট বেল্লাট্রিকস তোমাকে অকলামেন্সি শেখাচ্ছেন? বাঃ বাঃ, কিন্তু কিসের অজুহাতে সেটা তুমি তোমার মাস্টারকে লুকাচ্ছো ড্রেকো।

আমি আপনার কাছে অবশ্যই কোন কিছুই লুকাচ্ছি না, আসলে আমি চাই না মাঝখানে এসে আপনি দাঁড়ান।

হ্যারি আরো ভাল করে শুনতে চায় তাই ওর কানটা চাবির গর্তের কাছে চেপে রাখলো, ম্যালফয় কি এমন ঘটনা ঘটিয়েছে যার জন্য স্নেইপের সঙ্গে বলতে গেলে কুব্ধ স্বরে কথা বলছে। ম্যালয়কে সকল-সময়েই স্নেইপকে শ্রদ্ধা করতে দেখেছে হ্যারি, স্নেইপকে ও পছন্দও করে।  

ও তাই তুমি এই টার্মে আমাকে অবজ্ঞা করে চলেছো? তুমি আমার ইন্টারফিয়ারেন্স ভয় পেয়েছো? তুমি বুঝতে পারো কেউ কখনো কি আমার অফিসে আমার ডাকা সত্ত্বেও আসেনি, একবার নয় বার বার, ড্রেকো।

তাহলে আমাকে ডিটেনসনে রাখুন! ডাম্বলডোরের কাছে রিপোর্ট করুন। ম্যালফয় ব্যঙ্গ করে বললো।

আবার দুজনেই চুপচাপ। তারপর স্নেইপের কণ্ঠস্বর, তুমি কিন্তু ভালো করেই জানো, আমি ওই রকমের কোনো কাজ করতে চাই না।

তাহলে আপনি আমাকে আপনার অফিসে ডেকে পাঠাবেন না!

আমার কথা শোনো, স্নেইপ বললেন। এতো আস্তে কথাটা বললেন যে হ্যারির শোনার জন্য গর্তের মুখে কানটা আরো চেপে ধরতে হলো। আমি তোমাকে যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করে চলেছি। আমি তোমার মায়ের কাছে তোমাকে রক্ষা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, অভঙ্গনীয় প্রতিজ্ঞা, ড্রেকো।

সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, আপনাকে প্রতিজ্ঞাভঙ্গ করতেই হবে, কারণ আমি আপনার কাছ থেকে কোনো নিরাপত্তার দরকার মনে করছি না। ওই কাজটা আমার, তিনি আমাকে দিয়েছেন, আর সেটা আমি করছি। অবশ্য, আমি যে সময়ের মধ্যে শেষ করবো ভেবেছিলাম তার চেয়ে বেশি সময় নিচ্ছে।

তা তোমার কি পরিকল্পনা, জানতে পারি? এই বিষয়ে আপনার নাক গলাবার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।

কি করতে চাও, তুমি যদি আমাকে জানাও, তাহলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি।

ধন্যবাদ, আমি সব রকমের সহযোগিতা পাচ্ছি, যা আমার দরকার, আমি একা সেই কাজ করছি না।

মনে রাখবে আজকে কিন্তু তুমি একাই ছিলে, মূর্খের মতো এই কাজ কে করবে। করিডরে কারো সাহায্য ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছো, সামনে পেছনে কি রয়েছে খেয়াল কর না। এগুলো হলো ছেলেমানুষী ভুল।

আপনি যদি জেব আর গোয়েলকে ডিটেনসনে না রাখতেন তাহলে ওরা আমার সঙ্গে থাকতো।

আঃ আস্তে আস্তে কথা বলো ম্যালফয়, স্নেইপ থুতু ফেললেন। যদি তোমার বন্ধু ক্রেব আর গোয়েল ডিফেন্স অ্যাগেন্সট ডার্ক আর্টসে 0.WL এ পাস করতো, বা এবার পাস করতে চায় তাহলে ওদের আরো একটু বেশি পরিশ্রম করতে হবে।

তাতে কি আসে যায়। ডার্ক আর্টসের বিরুদ্ধে লড়াই করা তামাসা ছাড়া কিছু নয়। আমাদের মতো লোকদের ডার্কআর্টের বিরুদ্ধে লড়াই শেখার প্রয়োজন আছে ড্রেকো এটা এমন একটা কাজ, তা যেমন বিপজ্জনক, তেমনি কৃতকার্য হওয়া খুবই কঠিন, স্নেইপ বললেন। যদি আমি করতে না জানি তাহলে এই দীর্ঘ বছর এখানে আছি কেন? নাও, এখন আমার কথা শোনো। তুমি খুবই অসাবধানি, রাত্রে একা একা এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াও, তোমাকে ধরার পর তুমি এখন ক্রেব আর গোয়েলের মতো বন্ধুদের সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে চাও।

ওরা ছাড়াও আরো অনেকেই আমার পাশে আছে, ওরা অনেক ভালো লোক। তাহলে আমার ওপর আস্থা নেই কেন, এবং আমি পারি…।

আমি জানি আপনি কতদূর কি করতে পারেন! আপনি আমার গৌরব চুরি করতে চান!

আবার নিস্তব্ধতা। তারপর স্নেইপ তীক্ষ্ণস্বরে বললেন, তুমি একটি বাচ্চা ছেলের মতো কথা বলছো। আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি তোমার বাবাকে ধরে জেলে পাঠানোর জন্য তুমি বিভ্রান্ত, কিন্তু…। |

হ্যারিও এক সেকেন্ডের কম সময় পেল দরজার কাছ থেকে সরে যেতে। শুনতে পেল ম্যালয়ের পদধ্বনি এবং দরজার ওপাশ থেকে ম্যালফয়কে আসতে দেখলো। তারপর ম্যালফয় দরোজাটা সজোরে খুলে বাইরে এসে দাঁড়ালো এবং করিডর ধরে চলতে লাগলো, স্লাগহর্নের অফিস ঘরের খোলা দরজা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে লাগলো। এক সময় হ্যারির দৃষ্টি অতিক্রম করে আড়ালে চলে গেল ম্যালফয়। হ্যারি তখনো মেঝেতে বসে, মন জুড়ে ভাবনার ঝড়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *