১৪. ফিলিক্স ফিলিসিস

১৪. ফিলিক্স ফিলিসিস

আগামীকাল সকালে প্রথম পিরিয়ড হার্বোলজি। হ্যারি ডরমেটরিতে গিয়ে শুয়ে পড়লো। সকালে নাস্তা করার সময় ভেবেছিলো রন আর হারমিওনকে ডাম্বলডোরের লেসন সম্পর্কে বলবে; কিন্তু আশপাশের ছেলেমেয়েরা শুনতে পাবে ভেবে বললো না। তবে শাক-সবজি-ওষুধি গাছের পাশ দিয়ে গ্রীনহাউজে যেতে যেতে পেনসিভে যা দেখেছিলো সব ওদের বললো। সপ্তাহ শেষের মারাত্মক ঠান্ডা হাওয়া বন্ধ হলেও, ঘন কালো কুয়াশার কারণে গ্রীন হাউজে পৌঁছতে দেরি হলো।

ওহ, তাহলে সেই ভয় দেখানো ছেলেটাই ইউ-নো-হু, রন মৃদু স্বরে বললো। তারপর হাতে দস্তানা পরে, গাছের তলায় বসে প্রোজেক্টের কাজ শুরু করলো, তুমি যা বললে খুব ইন্টারেস্টিং হলেও বুঝতে পারছি না কি কারণে ডাম্বলডোর তোমাকে ওইসব দেখাতে গেলেন, বলতে পারো?

বলতে পারছি না, উনি বলেছেন এসব জানা আমার খুবই প্রয়োজন এবং আমার বেঁচে থাকার জন্য সাহায্য করবে, হ্যারি বললো।

আমার মনে হয় ব্যাপারটা খুবই প্রয়োজনীয় হারমিওন আন্তরিকভাবে বললো। ভোল্ডেমর্ট সম্পর্কে যতদূর সম্ভব জানা দরকার। এছাড়া ওর দুর্বলতা সম্পর্কে তুমি জানবেই বা কেমন করে?

তো কেমন হলো স্লাগহর্নের সর্বশেষ পার্টি? হ্যারি জানতে চাইলো। দারুণ মজার, সত্যি বলছি, হারমিওন প্রোটেকটিভ চশমা পরতে পরতে বললো। শুধু তার পুরনো স্টুডেন্টদের গল্প। ম্যাকলেগেনের সঙ্গে অনেকের জানাশোনা, তাই ওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কিন্তু বেশ কিছু ভালো ভালো জিনিস খাওয়ালেন, তারপর আমাদের নিয়ে গোয়েনগ জোনসের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন।

তিনি কে? রন চোখ বড় বড় করে বললো। হোলিহেড হার্পসের ক্যাপ্টেন?

ঠিক বলেছো, হারমিওন বললো। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় ও নিজেকে ছাড়া আর কিছুই জানে না, কিন্তু…।

হঠাৎ ওদের কথার মাঝখানে প্রফেসর স্প্রাউট হাজির হয়ে ধমক দিয়ে বললেন। এতো কথাবার্তা কিসের? তোমরা দেখছি সকলের চেয়ে পিছিয়ে আছে, আর ওদিকে নেভিল ওর প্রথম কাজটা শেষ করে ফেলেছে।

ওরা নেভিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো ক্ষত বিক্ষত মুখে একটা সবুজ লেবুর মতো বিশ্রি একটা জিনিস ধরে বসে রয়েছে।

ওকে প্রফেসর, এইবার আমরা কাজ শুরু করছি, রন বললো। যখন স্প্রাউট অন্যদিকে পা-বাড়ালেন রন হাসতে হাসতে বললো, আমাদের মাফিলিয়াটো প্রয়োগ করা উচিত ছিলো, হ্যারি।

হারমিওন তখন উদাস হয়ে হাফ-ব্লাড প্রিন্স আর তার স্পেল নিয়ে চিন্তায় মগ্ন। ও বললো, আর না, আমাদের এখন উচিত কাজ শুরু করা।

কেটি বেল হাসপাতালে শুয়ে, কবে যে ছাড়া পাবে তা সে জানে না। ওর বিছানায় পড়ে থাকা মানে হ্যারির কিডিচ দলের একজন চেজার কমে যাওয়া। হ্যারি আশায় রয়েছে কেটি শিগগিরি ছাড়া পাবে তাই ওর বদলে কাউকে সে নেয়নি। কিন্তু স্নিদারিনদের বিরুদ্ধে ওদের খেলার দিন এগিয়ে আসছে। শেষ পর্যন্ত কেটিকে বাদ দিয়ে টিম তৈরির কথা ভাবতে লাগলো হ্যারির।

হ্যারির মনে হলো আরো একটা ফুল হাউজ ট্রাই আউট করা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। ট্রান্সফিগারেশন ক্লাস শেষ হবার পর ওর ডিন থমাসের সঙ্গে কথাবার্তা হলো। ক্লাসের সব ছাত্ররা তখন চলে গেছে, কয়েকটি হলুদ পাখি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এগুলো হারমিওনের তৈরি। ওর মত এত পাখির পালক এ পর্যন্ত কেউ সংগ্রহ করতে পারেনি।

হ্যারি সরাসরি প্রশ্ন করলো, তুমি কী আমাদের দলে চেজার হয়ে খেলতে রাজি আছো?

তাই; হা হা নিশ্চয়ই খেলবো, কেন খেলবো না? ডিন আনন্দে লাফিয়ে উঠে বললো। হ্যারি দেখলো ডিনের পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে সিমাস ফিনিগ্যান। হাতের বইগুলো ব্যাগে পুরছে, ওর মুখ কালো হয়ে গেছে হ্যারির কথা শুনে। সিমাস অপছন্দ করবে ভেবেই এতোদিন হ্যারি ডিনকে খেলার কথা বলেনি।

তাহলেও রাগ করুক আর যাই করুক টিম ক্যাপ্টেন হিসেবে ওর ভাল খেলোয়াড় দলে আনতেই হবে। ট্রাই আউটে ডিনের ধারে কাছে দাঁড়াতে পারেনি সিমাস।

বেশ তাহলে তাই কথা রইলো, আজ সন্ধ্যা সাতটার সময় কিন্তু প্র্যাকটিসে আসতে হ।

ঠিক আছে, ডিন বললো। চিয়ার্স হ্যারি! ঈশ্বর আমাকে অন্ধ করে দাও, কথাটা আমাকে এক্ষুণি জিনিকে জানাতে হবে।

ডিন চলে গেলে ঘরে রইলো শুধু সিমাস আর হ্যারি। দারুণ অস্বস্তিকর অবস্থা। ঠিক সেই সময়ে হারমিওনের একটা ছোট হলুদ রঙের ক্যানারি পাখি সিমাসের মাথার ওপর বসলো।

সিমাস কিন্তু একমাত্র প্লেয়ার নয় যে কেটির বদলে ডিনকে টিমে অন্তর্ভুক্ত করায় ক্ষুব্ধ। কমনরুমে অনেকেই বলাবলি করতে লাগলো হ্যারি ওর ক্লাসের দুই বন্ধুকে টিমে নিয়েছে। হ্যারি ওর খেলার জীবনে এইরকম বিরূপ সমালোচনা শুনে শুনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, ওর আসল মাথা ব্যথা টিম জেতা নিয়ে। স্নিদারিনদের বিরুদ্ধে ওকে জিততেই হবে, এছাড়া অন্য কোনো চিন্তা ওর মাথায় নেই। গ্রিফিন্ডর জিততে পারলে যে সমস্ত বিরূপ সমালোচনা কানে আসছে সব বন্ধ হয়ে যাবে। গ্রিফিররা ওকে নিয়ে জয়ধ্বনি করবে। ওদের টিম স্কুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এটাই প্রমাণিত হবে। হেরে গেলে? কথাটা ভাবতেই হ্যারি দমে গেল।

হ্যারি সন্ধ্যা বেলা ডিনের খেলা দেখে দারুণ মুগ্ধ। ও জিনি আর ডেমিলজার সঙ্গে খুবই তৎপরতার সঙ্গে খেলেছে। বিটারস, পিকস, কুটেকে নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। আসল সমস্যা রন।

হ্যারি জানে রনের খেলা ধারাবাহিকতাহীন! কখনো দারুণ ভালো, কখনো একেবারে গর্তে পড়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার। আস্থা রাখা যায় না। তাই ওকে নিয়ে খুবই চিন্তা। জিনি ছয়-ছয়টা গোল দিল, রন একটাও আটকাতে পারল না। ও যত গোল খায়, তত ওর খেলার ধারা বদলে যায়। শেষে ও ডেমিলজাকে বল ধরার সময় মুখে একটা ঘুষি মারলো।

ওটা দুর্ঘটনা ডেমিলজা, রন কাচুমাচু হয়ে বললো। সত্যি, আমি খুবই দুঃখিত। ডেমিলজার তখন নাক দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে, মাটিতে শুয়ে পড়েছে।

জিনি ডেমিলজার কেটে যাওয়া ঠোঁট দেখতে দেখতে রনের ওপর দারুণ রেগে গিয়ে বললো, তুমি আস্ত পাগল! দেখো তো কি কাণ্ড করেছো?

হ্যারি বললো, দাঁড়াও আমি সারিয়ে দিচ্ছি, এপিসকে।

তারপর জিনিকে বললো, যা বলবার আমি রনকে বলবো, আমি টিমের ক্যাপ্টেন!

নাও সকলে ফ্লাই করো, হ্যারি আবার প্র্যাকটিস শুরু করার নির্দেশ দিলো।

যাহোক প্র্যাকটিস গেম একরকম ভালই হলো, খেলার শেষে একটা কথা মনে হলো–সব সময় সততা রক্ষা করে চললে লাভবান হওয়া যায় না।

হ্যারি দলের প্লেয়ারদের মনোবল বাড়াতে বললো, বাহ! সবাই সুন্দর খেলেছে। এ রকম খেলতে পারলে আমরা স্নিদারিনকে শুইয়ে দিতে পারবো।

চেজারস, বিটাররা সকলেই নিজেদের পারফরমেন্সে দারুণ খুশি। জিনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে রন বললো, ধ্যাৎ আমি একটা ড্রাগনের বিশাল বস্তা।

মোটেই না, তুমি খুব ভালো খেলেছো, হ্যারি রনের পিঠ চাপড়ে বললো। যারা ট্রায়াল দিয়েছে তাদের মধ্যে তুমি শ্রেষ্ঠ! তোমার একমাত্র দোষ নার্ভাস হয়ে যাও।

ক্যাসেলে ফিরে আসতে আসতে হ্যারি সকলকেই আবার নতুন করে উৎসাহ দিতে লাগলো।

সেকেন্ড ফ্লোরে পৌঁছলে রন অনেকটা শান্ত হলো। শর্টকাট করে ওরা দুজনে গ্রিফিন্ডর টাওয়ারে পৌঁছে দরজা খুলে হতবাক! দেখলো জিনি আর ডিন দুজন দুজনকে প্রবলভাবে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করে চলেছে। দুটি দেহ যেন আঠা দিয়ে জোড়া লেগে গেছে।

সেই দৃশ্য দেখে হ্যারির সমস্ত শরীরটা কেঁপে উঠলো। ওর জীবনে হঠাৎ নতুন এক অনুভূতি সামনে এসে দাঁড়ালো, কিছুই বুঝতে পারে না ও। মস্তিষ্কের মধ্যে গরম রক্ত বন্যার মতো ভরে গেল, সব চিন্তা-ভাবনা উবে গিয়ে জিনিকে একটা জেলীর মতো পদার্থে পরিণত করার আকাঙ্ক্ষায় হ্যারি জিকস করার জন্য জাদুদণ্ডে হাত দিলো। মনের মধ্যে দারুণ এক ঝড় বইছে, ঠিক সেই সময় শুনতে পেলো রনের কণ্ঠস্বর, রন যেন অনেক অনেক দূর থেকে বলছে।

ওই। ডিন আর জিনি সরে দাঁড়ালো, এধার ওধার তাকাতে লাগলো। কি হলো? জিনি বললো। আমার বোন সকলের চোখের সামনে যা করছে আমি দেখতে চাই না! তুমি এখানে উঁকি দেবার আগে করিডরে কেউ ছিলো না! জিনি বললো।

ডিন এখন লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। ও হ্যারির দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে হাসলো। হ্যারির মুখ গম্ভীর, মনের মধ্যে এক দানব জেগে উঠে গর্জন করছে, সেই গর্জন চাইছে ডিনকে কিডিচ টিম থেকে সত্বর বহিষ্কার করা।

আরে ভয় কিসের জিনি, ডিন বললো। চলো আমরা কমন রুমে যাই।

তুমি যাও! জিনি বললো। আমি আমার দাদার সঙ্গে কথা বলতে চাই। যেন কিছুই হয়নি এমনি এক মুখোভাব করে ডিন চলে গেল। সাময়িক যে লজ্জার সৃষ্টি হয়েছিল ওর মুখে তা আর লক্ষ্য করা গেল না।

ঠিক আছে, জিনি ওর মুখের ওপর পড়া লাল চুলের রাশি ঝটকা দিয়ে সরিয়ে রনের দিকে তাকালো। বললো আমি কোথায় যাচ্ছি, কি করছি তা দেখার বা জানার তোমার কোনো কারণ নেই, বুঝলে রন।

হ্যাঁ বুঝলাম! রাগত স্বরে রন বললো। তুমি কি চাও লোকেরা আমাকে আমার বোন সম্পর্কে অপ্রিয় কথা বলুক, বলুক যে…।

হা, কি বলবে? জিনি ওর ম্যাজিক দণ্ড ঝটিতে টেনে নিয়ে বললো। কি বলবে পরিষ্কার করে বলো।

ও তোমাকে ছোটো করতে চায়নি জিনি, হ্যারির মুখ থেকে কথাটা বেরিয়ে এলো। যদিও ওর ভেতরের জাগ্রত দানব রনের প্রতিটি কথা সমর্থন করলো।

আমি জানি ও কি বলতে চেয়েছে, হ্যারির দিকে ক্ষিপ্তভাবে তাকিয়ে জিনি বললো। কারণ সে জীবনে অনেক মেয়েকে চেয়েও পায়নি। ও আমাদের আন্টি মুরিয়েল ছাড়া অন্য কোনো নারীর চুম্বনও পায়নি।

চুপ করো জিনি, আর একটি কথাও বলবে না। অসম্ভব রেগে গিয়ে রন গর্জন করে উঠলো।

না আমি চুপ করবো না, জিনি আরো জোরে বললো। আমি তোমাকে ফেমের সঙ্গে দেখেছি। তুমি ভেবেছো যখনই ও তোমাকে দেখবে, জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে, সত্যি বড়ই দুঃখের ব্যাপার! একটু বাইরে গিয়ে আরো পাঁচটা ছেলে-মেয়েকে দেখো, তারা সকলেই সুযোগ পেলে…।

রন জাদুদণ্ড বের করেছে। হ্যারি দ্রুত পায়ে হেঁটে ওদের মাঝখানে দাঁড়ালো।

তুমি জানো না কি বলছো তুমি! রন আবার গর্জন করে উঠলো। সে হ্যারিকে এড়িয়ে জিনিকে জিনস প্রয়োগ করতে এগিয়ে এলো। হ্যারি তখনো দুজনের মাঝে দাঁড়িয়ে। কারণ আমি মানুষের সামনে প্রকাশ্যে এমনটি করি না, রন বললো।

তুমি পিগউইজিয়নকে চুমু খাওনি? তোমার বালিশের তলায় আন্টি মুরিয়েলের ফটো রাখো না?

থামো, আজেবাজে কথা বলবে না।

হ্যারির বাম হাতের তলা দিয়ে কমলা রঙের স্ফুলিঙ্গ চলে এসে জিনির শরীরের বাইরে চলে গেল। জিনি এক ইঞ্চির জন্য বেঁচে গেল। হ্যারি রনকে ধরে ধাক্কাতে ধাক্কাতে দেয়ালের ধারে নিয়ে গেল।

বোকার মতো কাজ করবে না।

হ্যারি চো চ্যাং-এর পেছনে ঘুরে বেড়ায় না! জিনি চিৎকার করে উঠল, ওর দুচোখে জল। হারমিওন ভিক্টর ক্রামের পেছনে ছোটে, তুমি… একমাত্র তুমি… বিশ্রি কাণ্ড করে বেড়াও… যত্তোসব। বুদ্ধি তো তোমার একটা বারো বছরের ছেলের মতো!

কথাটা বলে জিনি ঝড়ের বেগে করিডর থেকে বেরিয়ে গেলো। হ্যারি রনকে ছেড়ে দিলো। রনের চোখ-মুখ যেন খুনির মতো। ওরা দুজনেই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রইলো। মিসেস নরিস বেড়াল নিয়ে করিডরে এসে ওদের দিকে তাকাতেই ওদের উত্তেজনা কমে গেলো।

চলো এখান থেকে, হ্যারি মিসেস নরিসকে দেখে বললো।

ওরা হাঁফাতে হাঁফাতে এসে সাততলার করিডরে দাঁড়ালো।

ওই, তুমি আমার সামনে থেকে চলে যাও, রন হ্যারির দিকে তাকিয়ে গর্জন করে উঠলো। একটা ছোট মেয়ে কাঁচের বোতলে করে ব্যাঙের খাবার নিয়ে যাচ্ছিলো, রনের গর্জন শুনে ভয়ে মেয়েটির হাত থেকে বোতলটা পড়ে ভেঙ্গে গেলো।

হ্যারির কানে বোতল ভাঙার শব্দ কিছুই এলো না, ও তখন কাউকে চিনতে পারছে না, মাথা ঝিমঝিম করছে… অন্তরীক্ষ থেকে ওর ওপর কেউ বিদ্যুৎ হেনেছে… তাহলে কি ও রনের বোন, ও নিজেকে প্রশ্ন করলো।

ডিন ওকে চুম্বন করছে বলে কি তোমার ভালো লাগেনি! রনের বোন তাই ভালো লাগেনি…।

ভাবতে ভাবতে হ্যারির মন পৌঁছে গেছে জিনির কাছে, মনের সঙ্গে ওর দেহও। দেখলো ডিনের জায়গায় ও দাঁড়িয়েছে… ডিনের মতোই জিনিকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করছে… ওর ভেতরের আশ্রিত দানবটা ছটফট করছে। তারপরই দেখলো কারুকার্য করা পর্দাটা দুভাগ করে সরিয়ে রন ম্যাজিক ওয়ান্ড দিয়ে হ্যারিকে তাগ করছে, চিৎকার করে বলছে, বিশ্বাসঘাতক… তুমি আমার বন্ধু না।

তুমি কি মনে করো হারমিওন, ক্রামের সঙ্গে প্রেম করেনি, চুম্বন করেনি? রন ওর সঙ্গে ফ্যাট লেডির কাছে যেতে যেতে সহসা বললো। হ্যারি ওর ঘোর থেকে ফিরে এলো।

কি বললে? ও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো। ও… মানে।

সেই প্রশ্নের উত্তর ছিলো, অবশ্যই! কিন্তু ও সেই প্রশ্নের জবাব দিলো না। রন হ্যারির মুখের ভাব থেকে আরো কিছু জানতে চায় বলে মনে হলো।

দিল্লিগ্রাউট ও অস্পষ্টভাবে ফ্যাটলেডিকে বললো। তারপর ওরা দুজনে পোট্রটের গর্ত দিয়ে কমনরুমে ঢুকলো।

দুজনেই জিনি অথবা হারমিওনের প্রসঙ্গ টেনে আনলো না। যে যার কাজকর্ম সেরে সন্ধ্যাবেলা ঘরে এসে শুয়ে পড়ে নিজ নিজ চিন্তায় মগ্ন রইলো।

হ্যারি ওর বিছানায় শুয়ে কড়িকাঠ ও চারটে পোস্টারের দিকে তাকিয়ে জিনিকে নিয়ে অনেক কথাই ভাবতে লাগলো। ভাবতে ভাবতে ওর মনে হলো জিনিকে নিয়ে একটু বেশি দাদাগিরি দেখিয়েছ। আবার ভাবলো, দেখাবই না কেন? ছোটবেলা থেকে গরমকালের ছুটিতে উইসলি পরিবারে আসি, জিনি ওর বোনের মতো… সেই জন্য ওর যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেটা ওর দেখা কর্তব্য। কতো হাসি ঠাট্টা, কিডিচ খেলা আর ডিনকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা মজা করা! ডিন খুবই অন্যায় করেছে, জিনিও সেই অন্যায়ে সায় দিয়েছে। না ওকে এখন বিরত থাকতে হবে ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলানো ঠিক হবে না। আর সেটা দাদার মতো কাজ হোক বা না হোক।

রন তখন ওধারের বেডে শুয়ে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। কিন্তু জিনি তো রনের আপন বোন। জিনি সম্পর্কে মাথা ব্যথা তো রনের? রনের সঙ্গে বন্ধুত্ব নষ্ট করা উচিত হবে না। কোন রকমেই না।

হ্যারি ওর মাথার বালিশটা পিটিয়ে পিটিয়ে ঠিক করে নিলো যাতে ঠিক মতো মাথা রেখে ঘুমোতে পারে। না কিছুতেই জিনির কথা ভেবে মনের শান্তি নষ্ট করবে না। যা হবার তা হবেই। ও বাধা দেবার কে? এতোসব ভাবতে ভাবতে হ্যারি ঘুমিয়ে পড়লো।

পরদিন হ্যারি যথারীতি সকালে ঘুম থেকে উঠলো। গতরাতে ও রনকে নিয়ে। অনেক আজেবাজে স্বপ্ন দেখেছে, রন ওকে কিডিচ খেলার সময় বিটার ব্যাট নিয়ে তাড়া করে মারতে আসছে, তাই মাথাটা সামান্য ভার ভার। ঠিক করলো দুপুরে রনের কাছে স্বপ্নের কথাগুলো বললেই মন অনেক হালকা হয়ে যাবে। ঠিক করলো, জিনি আর ডিনের সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথাবার্তা বলবে না, শুধু তাই নয়, হারমিওনের সঙ্গেও একটু তফাতেই থাকবে।

হ্যারি যে গতরাতে দেখা স্বপ্নের কথা রনকে বলতে চেয়েছিলো, তা বলার আগেই দেখলো–স্বপ্ন রূঢ় বাস্তবে পরিণত হয়েছে। রন, জিনি ও ডিনের প্রতি উদাসীন ও নির্লিপ্ত এবং হারমিওনের প্রতি শীতল ও নিস্পৃহ। যে কোনো সময় বিস্ফারিত হতে পারে সে। অযথা প্রথমবর্ষের ছেলে-মেয়েদের বকাঝকা করলো সে। অপরাধ? ওরা নাকি ওর দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়েছিলো। রন নিজেই খুবই অদ্ভুত অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা করতে লাগলো চার পাঁচদিন ধরে। শনিবার ম্যাচের আগে কিডিচ প্র্যাকটিস ম্যাচে চেজারদের মারা একটিও গোল বাঁচাতে পারলো না। প্রত্যেকের সঙ্গে অযথা বাকবিতণ্ডা করলো। ডেমিলজা রবিন্সকে কাঁদিয়ে ছাড়লো।

রনের ব্যবহার দেখে পিকেস খুব রেগে গিয়ে ধমক দিয়ে বললো, ডেমিলজার সঙ্গে তুমি আর একটা কথাও বলবে না। ওকে ওর মতো থাকতে দাও। রনের চেয়ে ও অনেক খাটো, দুই-তৃতীয়াংশ–কিন্তু ওর হাতে একটা ব্যাট ছিল।

জিনি যেমন খেলে তেমনি খেললো। ব্যাট হাতে ও ছুটলে ওকে থামানো প্রতিপক্ষদের জন্য খুবই কঠিন কাজ।

পিকেসের সঙ্গে বচসা শুরু হতে দেখে বোগি হেবস এগিয়ে এলো মিটমাট করার জন্য। হ্যারি, পিকেস আর ডেমিলজাকে সরে যেতে বললো, সকলেই মাথা ঠাণ্ডা রাখবে… শনিবার খেলা! ওদিকে রন ফুঁসছে। রনকে বললো, শোনো তুমি আমার বিশেষ বন্ধু, তুমি আজ সত্যি খুব ভালো খেলেছো, কিন্তু টিমের সকলের সঙ্গে যদি অযথা কথা কাটাকাটি করো, ঝগড়া করো, তাহলে টিম থেকে তোমাকে তাড়িয়ে দেবো, কথাটা মনে রাখবে।

হ্যারি ভেবেছিলো রন ওর কথাটা শুনে মারতে আসবে। কিন্তু রন সেরকম কিছুই করলো না। হ্যারি যা ভাবতে পারেনি তাই হলো। ওর চোখে মুখে কোনো ঝগড়া করার ছাপ নেই। হাতে ঝাড়ুটা নিয়ে গম্ভীর গলায় বললো, আমি খুবই দুঃখিত, আমি তোমার টিমে আর খেলবো না।

না তুমি তা করতে পার না, তুমি টিম ছেড়ে যেতে পারবে না। হ্যারি রনের রোবসের একটা হাত চেপে ধরে বললো। তুমি শান্ত মনে ফর্মে থাকলে কেউ তোমাকে একটা গোলও দিতে পারবে না। তোমার প্রবলেমটা মানসিক ছাড়া আর কিছুই নয়!

তুমি আমাকে মানসিক রোগী বলছো? হয়তো বলেছি আমি!

ওরা পরস্পরের দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্য। তারপর রন ক্লান্তিতে ওর মাথা নাড়লো।

আমি জানি এখন তোমার নতুন গোলকীপার খোঁজার কোনো সময় নেই। বেশ, কাল আমি তোমার দলের হয়ে খেলবো। তবে আমরা যদি হেরে যাই, হারবো তো নিশ্চয়ই! তারপর আমি দলে আর থাকবো না।

কথাটা শুনে হ্যারি কোনো মন্তব্য করলো না। রনকে ক্রমাগত নিজের প্রতি আস্থা রাখার উৎসাহ দিতে লাগলো, কিন্তু ডিনার খেতে বসেও ও হারমিওনকে মেজাজ দেখাতে লাগলো, কর্কশভাবে কথা বলতে লাগলো। হ্যারির সেটা নজরে যে পড়লো না এমন নয়। হ্যারি জানে রন এখন বড় সমস্যা। শেষ মুহূর্তে ওর জায়গায় কাউকে আনা যায় না। সারাদিন কমনরুমে বসে ও রনকে উৎসাহ দিতে লাগলো, জেতাটা যে কতো প্রয়োজনীয় সেটা বোঝাতে লাগলো। রন একগুয়ের মতো বসে রইলো। কারো সঙ্গে কোনো কথা বলার প্রয়োজন মনে করলো না। ওদিকে টিমের অন্যসব ছেলে-মেয়েরাও রনের ব্যবহারে খুব আহত হয়েছে, ওরা কমনরুমের এক কোণে বসে ওর বিরুদ্ধে কথা বলছে। শেষে ধৈৰ্য্য হারিয়ে হ্যারিও রনের প্রতি অসম্ভব বিরক্ত হয়ে ওকে উৎসাহ দেওয়া বন্ধ করে দিলো। রনের এতেওকোনো প্রতিক্রিয়া হলো না। খাওয়া-দাওয়া সেরে নিজের ঘরে ঘুমোতে চলে গেলো।

হ্যারি ঘরে ফিরে ঘর অন্ধকার করে শুয়ে রইলো। ও আগামী ম্যাচে হারতে চায় না, ক্যাপ্টেন হয়েছে বলে নয়, ওর কাছে হারা মানে ড্রেকো ম্যালফয়ের কাছে হারা। ওর সন্দেহজনক গতিবিধি হাতে-নাতে ধরতে বা প্রমাণ না করতে পারলেও যে প্রকারেই হোক ওদের টিমকে কিডিচ খেলাতে হারাতে হবে এটাই এখন ওর প্রধান চিন্তা। কিন্তু এক্ষেত্রে রন বড়ো সমস্যা। গত কয়েকটা প্র্যাকটিস ম্যাচে ও যে রকম খেলেছে তাতে জেতার আশা খুবই কম।

কিন্তু রনকে উদ্দীপিত করার কোনো পথ খুঁজে পেলো না হ্যারি।

পরদিন সকালে নাস্তা করার সময় গ্রিফিন্ডর আর স্নিদারিনদের খেলা নিয়ে দুপক্ষ থেকে টিটকিরি, ঠাট্টা ইত্যাদি চরমে উঠলো। গ্রিফিন্ডর টিম গ্রেট হলে না আসা পর্যন্ত হল মোটামুটি শান্ত ছিলো, চরমে উঠলো ওরা হলে ঢুকলে। বরাবরই এমন হয়। হ্যারির মনে হলো এবার যেনো একটু বেশি। ও আকাশের দিকে তাকালো, আকাশ পরিষ্কার, হালকা নীল। খুবই শুভ লক্ষণ! হ্যারি আর রনকে হলে আসতে দেখে গ্রিফিররা আনন্দে ফেটে পড়লো।

লাভেন্ডার বললো, চিয়ারআপ রন, আমি জানি আজ তুমি দারুণ খেলবে। রন লাভেন্ডারের দিকে তাকালো না। হ্যারি বললো, কি খাবে বলো, চা? কফি? পামকিন জুস?

রন মেজাজ দেখিয়ে বললো, যা ইচ্ছে তোমার। তাচ্ছিল্যের সঙ্গে একটা টোস্টে কামড় দিলো।

একটু পরে হলে ঢুকলো হারমিওন। রনের ক্রমাগত মেজাজ দেখানোর জন্য ও দারুণ ক্ষুব্ধ। তাই ও ওদের সঙ্গে ব্রেকফাস্ট খেতে আসেনি। তবু টেবিলের পাশ দিয়ে যেতে যেতে রনের দিকে তীর্যকভাবে একটু তাকিয়ে দুজনকেই বললো, তোমরা কেমন আছো? মনে থাকে যেনো জেতা চাই।

হ্যারি তখন রনকে শান্ত করার জন্য ওকে এক গ্লাস জুস দিচ্ছিলো। হারমিওনের কথা শুনে বললো, খুব ভালো আছি। তুমি ওদিকে যাও, রন জুসটা খেয়ে নাও।

রন সবেমাত্র গ্লাসটা ঠোঁটে ঠেকিয়েছে তখন হারমিওন বলে উঠলো,

না ওটা খাবে না রন! রন ও হ্যারি দুজনেই চমকে উঠে হারমিওনের দিকে তাকালো। খাবে না, কেন? হ্যারি বললো।

হারমিওন হ্যারির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ও যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

তুমি এই মাত্র ওর গ্লাসে কিছু একটা দিয়েছো। মানে, কি বলতে চাও ঠিক বুঝলাম না? হ্যারি বললো। কি বললাম তুমি শুনলে না? আমি স্বচক্ষে দেখলাম তুমি ওর ড্রিঙ্কসে কিছু মিশিয়েছে। এখনোও শিশিটা তোমার হাতেই আছে।

কি সব যা-তা বকছো, আমি বুঝতে পারছি না, হ্যারি বললো। চট করে ছোট শিশিটা ও নিজের পকেটে রেখে দিল।

রন তুমি ওই ড্রিঙ্কস খাবে না বলছি, হারমিওন আবার বললো। কিন্তু রন নিজের গ্লাসটা তুলে এক চুমুকে পামকিনের জুসটা শেষ করে দিয়ে বললো, থামো, তোমায় আর মাতব্বরী করতে হবে না হারমিওন।

হারমিওনের বিষাদময় এক অনুভূতিতে দেহমন ছেয়ে গেল। ও মাথাটা নামিয়ে জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেললো। সেই নিঃশ্বাস হ্যারি ছাড়া আর কেউ শুনতে পেল না। তোমাকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেয়া উচিত। তুমি এমন জঘন্য কাজ করতে পারো ভাবতে পারছি না।

কে এসব বলছে, হ্যারি ফিস ফিস করে বললো। আগের সব কথা কি সে ভুলে গেছে?

হারমিওন রাগের চোটে টেবিলটি উল্টে দিয়ে ওদের কাছ থেকে সরে গেল। হারমিওন কখনোই কিডিচ খেলার গুরুত্ব বোঝে না। হ্যারি রনের দিকে তাকালো, দেখলো রন পরমানন্দে ওর ঠোঁট জিব দিয়ে চাটছে।

হ্যারি বললো, আর সময় নেই, সবাই মাঠে চলো। ওরা সকলে শিশিরভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে খেলার মাঠের দিকে চললো।

আবহাওয়া বেশ সুন্দর, তাই না রন? হ্যারি রনের কানের কাছে মুখ এনে বললো। রনকে ফ্যাকাশে আর দুর্বল দেখাচ্ছে।

জিনি আর ডেমিলজা ওদের কিডিচ জার্সি (রোবস) পরে নিয়েছে। ড্রেসিং রুমে অন্যদের জন্য প্রতীক্ষা করছে খেলার মাঠে যাবার জন্য।

খেলার উপযুক্ত আবহাওয়া, জিনি রনের উপস্থিতি অবজ্ঞা করে বললো। আর একটা জিনিস সত্যিই কি বলতো? ওই যে ভেইস, স্নিদারিনের চেজার, মাথায় ঘা খেয়েছে, আর ম্যালফয় শুনলাম খেলবে না, অসুস্থ।

কি বললে? হ্যারি যেতে যেতে থেমে গিয়ে জিনির দিকে মাথা ঘুরিয়ে বললো। ম্যালফয় অসুস্থ? ওর কি হয়েছে, কি অসুখ?

কে জানে আমাদের কোন ধারণা নেই, জিনি হাসতে হাসতে বললো। তবে আমাদের জন্য সুখবর। ওর জায়গায় শুনছি হাপার খেলছে। ছেলেটা আমাদের ক্লাশে পড়ে। আস্ত একটা গাধা।

হ্যারি অস্পষ্টভাবে হাসলো। কিন্তু লাল রঙের রোবসটা খোলার সময় ওর মন কিডিচ খেলা থেকে বহুদূরে। ম্যালফয় আগেরবার খেলাতেও আঘাত পাওয়ার অজুহাতে খেলেনি, তবে খেলার দিন বদলাবার অনুরোধ করেছে এবং সেই অনুরোধ রাখাও হয়েছিল। এবার কিন্তু কোনো দিন পরিবর্তনের দাবি বা অনুরোধ না করে বদলি খেলোয়াড়ের ব্যবস্থা করছে। সত্যি কি ও অসুস্থ, অথবা ওটা একটা বাহানা মাত্র?

হ্যারি রনকে চাপা গলায় বললো, ব্যাপারটা মনে হয় সন্দেহজনক। সত্যি ম্যালফয় খেলছে না।

আমার তো মনে হয়, আমাদের ভাগ্য ভালো, রন বললো। ওকে দেখে মনে হয় মাত্রাধিক্য উদ্দীপিত। আর ভেইসের ফর্মও খুব ভালো নয়, আর ও হলো ওদের সবচেয়ে ভালো স্কোরার। তারপর গোলকীপারের গ্লাভস পরতে পরতে হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললো, তোমার কি মনে হয়, একটা কথা বলবো?

কী?

আমি… তুমি, রন গলার স্বর নামিয়ে বললো। মনে হয় খুব ভয় পেয়েছে, শুধু তাই নয়, খুবই উত্তেজিত। আমার পামকিন জুসে, তুমি কি কিছু মিশিয়েছিলে,..?

হ্যারি ওর কথায় কান না দিয়ে বললো, পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমাদের খেলা। শুরু হবে। আজেবাজে চিন্তা না করে বুট পরে নাও।

ওরা স্টেডিয়ামের দর্শকদের নানা বুইং, হাততালি, প্রবল শোরগোলের মাঝে পিচে পৌঁছে গেল। স্টেডিয়ামের এক ধারে টকটকে লাল আর সোনালি রোবস পরা ছেলেমেয়ে, অন্যদিকে সবুজ আর রূপালি রঙের ঢেউ। তাছাড়া রয়েছে হাফলোফ আর র‍্যাভেন ক্লর ছেলেমেয়েরা। তাদের মধ্যেও দারুণ উত্তেজনা। তারাও হাততালি দিচ্ছে, চেঁচাচ্ছে। পিচ থেকে হ্যারির চোখ গেল লুনা লাভগুডের ওপর। ওর মাথায় তার অতি প্রিয় লায়নটপড টুপি।

হ্যারি খেলার রেফারি মাদাম হুচের সামনে দাঁড়ালো। মাদাম হুচ ঝুড়ির মধ্যে রাখা বল ছাড়বার জন্য প্রস্তুত।

অধিনায়করা (ক্যাপ্টেন) তোমরা করমর্দন করো, উনি বললেন। শ্রিদারিনের ক্যাপ্টেন উরকুহার্ট এগিয়ে এসে প্রবল শক্তিতে হ্যারির সঙ্গে করমর্দন করলো। তোমরা এবার যে যার ঝাড়ুর ওপর বসো, আমি তিনটে হুইসেল দেবো, শেষ হলেই শুরু করবে, তিন… দুই… এক…। হুইসেল দেয়ার সাথে সাথেই হ্যারি আর দলের প্লেয়াররা বরফ জমা মাঠ থেকে প্রচণ্ড শক্তিতে কিক মেরে ঝড়তে চেপে ওপরে উঠে গেল।

হ্যারি মাঠের চারধারে উড়তে লাগলো, চোখ পড়লো হার্পারের ওপর। হার্পার ওর নিচে এধার ওধারে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। যে সাধারণত খেলাতে কমেন্ট্রি করে, তার বদলে অন্য একজনের গলা শোনা গেল।

ও হো হো খেলা শুরু হয়ে গেছে, পটার এবারে তার টিম খুব শক্তিশালী করেছে। পটার এবারে গ্রিফিরের নতুন অধিনায়ক, কিন্তু আমরা অনেকেই ভেবেছিলাম রোনাল্ড উইসলি খারাপ ফর্মে থাকার জন্য হ্যারির টিম থেকে এবারে নির্ঘাত বাদ পড়বে, কিন্তু একি? টিমে সে খেলছে, আশ্চর্য। সকলের মনে সন্দেহ জাগছে তাহলে কি খেলার চাইতে ক্যাপ্টেনের সঙ্গে বন্ধুত্বের দাম অনেক বেশি? বিষয়টি আমাদের বিস্মিত করেছে।

ভাষ্যকারের ওই কমেন্ট স্টেডিয়ামের সকলেই শুনলো। স্লিদারিনদের সাপোর্টাররা আনন্দে ফেটে পড়লো। হ্যারিও ঝাড়ুটা ঘুরিয়ে ভাষ্যকারের মঞ্চের দিকে ফেরালো। দেখলো নতুন একজন ভাষ্যকার। লম্বা রোগা পটকা একটি ছেলে। ওপর দিকে ওঠা বাকা নাক। মঞ্চের এক পাশে দাঁড়িয়ে ম্যাজিকেল মেগাফোনে অনর্গল কথা বলে চলেছে। আগে ভাষ্যকার ছিলো লী জোড়ান। ছেলেটাকে হ্যারি চিনতে পারলো, হাফপাফের এককালীন প্রেসার জ্যাকেরিয়া স্মিথ, হাফপাফের ছেলে। ওকে দুচোখে দেখতে পারে না। আহাহা, দারুণ দারুণ স্রিদারিন এই প্রথম গোলের জন্য আক্রমণ করলো। দারুণ দারুণ এমন শট সাধারণত দেখা যায় না, ও হো হো গো…ও… গো…ও…ল। না না না গোল নয়, উইসলি বাঁচিয়ে দিয়েছে গোল। ভাগ্য ছাড়া কিছুই নয়। এক রকম ভাগ্যের জোরে গোল বাঁচালো।

বাঃ বাঃ সুন্দর, সুন্দর, ও যেন হ্যারিকে কিছু বললো। দারুণ দারুণ ডাইভ দিয়েছে, হ্যারি হাসছে।

খেলার আধঘণ্টা হয়ে গেছে, এখনও পর্যন্ত গ্রিফির ষাট পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছে, সিকসটি পয়েন্ট টু জিরো। সত্যি কীপার রনকে প্রশংসা না করে থাকা যায় না, কয়েকটা অবধারিত গোল ও বাচিয়ে দিয়েছে, গোল হয়ে যেত, গোল হলো না, ওর আঙ্গুলের ডগায় লেগে বল অন্যদিকে ঘুরে গেল, ওহো হো, মার্ভেলাস জিনি, ছটা গোলের ও একাই চারটে করেছে। জ্যাকেরিয়া এখন পিকেস আর কুটেকে নিয়ে পড়ল।

স্নিদারিনদের বেশ ভালো ভাবেই হারিয়ে দিলো গ্রিফিন্ডর।

খেলার পোশাক পরিবর্তন করে প্লেয়াররা সব চলে যেতে লাগলো। রয়ে গেল শুধু রন আর হ্যারি। ওর ড্রেসিং রুম ছেড়ে চলে যাবে ঠিক সে সময় ঢুকলো হারমিওন। ও গ্রিফিন্ডরের স্কার্ফ হাতে পাকাচ্ছিল। ওকে দেখে মনে হলো মানসিক অশান্তিতে থাকলেও খুব দৃঢ় রয়েছে।

হারমিওন হ্যারির মুখোমুখি হয়ে বললো, তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে হ্যারি, কথাটা বলে হারমিওন গভীর নিঃশ্বাস ফেললো। তুমি যা করেছে সেটা কিন্তু ঠিক হয়নি। প্রফেসর স্লাগহর্নের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে, উনি বলেছিলেন, ওটা ব্যবহার করা বেআইনী।

তুমি আমাদের কি সন্দেহ করছো? রন বললো। হ্যারি তখন পিছন ফিরে ওর রোবসটা টাঙিয়ে রাখছিলো। তাই সে রন ও হারমিওনকে দেখতে পেলো না। হ্যারি তখন মৃদু মৃদু হাসছিলো। হ্যারি ওদের দিকে ফিরে বললো, তোমরা দুজনে ফিস ফিস করে কি বলছো, আমি কি জানতে পারি?

তুমি কিন্তু ভালো করেই জানো আমরা কি বলছি! হারমিওন দাঁতে দাঁত চেপে বললো। তুমি রনের জুসে লাকি পোশান মিশিয়ে দিয়েছিলে। ফিলিক্স ফিলিসিস!

না, আমি ওটা মেশাইনি। হ্যারি ওদের দিকে সোজা তাকিয়ে বললো।

তুমি মিশিয়েছিলে হ্যারি, তুমি মিশিয়েছিলে বলেই গ্রিফিল্ডরের ম্যাচ জিততে একটুও অসুবিধে হয়নি। রনের পক্ষে নিশ্চিত গোল রক্ষা সম্ভব হয়েছিলো, প্রত্যেকটা গোল।

না আমি মেশাইনি, হ্যারি বললো; কথাটা বলে ও আরো জোরে জোরে হাসলো। তারপর পকেট থেকে ছোট একটা শিশি বার করে হারমিওনের সামনে ধরলো। হারমিওন দেখলো হ্যারির হাতে সেদিনের সকালের দেখা শিশি… তার মধ্যে ভর্তি রয়েছে সোনালী রঙের পোশান। শিশির ছিপিটা খুব শক্ত করে সিল করা ও মোম লাগানো–একেবারেই খোলা হয়নি। আমি রনকে ভাবতে দিয়েছিলাম যেনো ও মনে করে পোশানটা খেয়েছে। তুমি শিশিটা দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমি এটা পকেটে রেখে দিয়েছিলাম। কথাটা বলে রনের দিকে তাকালো, তুমি গোল বাঁচিয়েছিলে, ভালো খেলেছো, তার একমাত্র কারণ, তুমি ভেবেছিলে পোশান খেয়ে তুমি লাকি হয়ে গেছে। সবই তুমি করেছো নিজের শক্তিতে।

হ্যারি শিশিটা পকেটে রেখে দিলো।

তাহলে তুমি পামকিন জুসে কিছু মেশাওনি? রন অবাক হয়ে হ্যারির মুখের দিকে তাকিয়ে বললো। যদিও আবহাওয়া ভালো ছিলো, তবু ভেইস খেলতে পারেনি, তারপরও হ্যারি তোমার কথা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। সত্যি তুমি লাকি পোশন মেশাওনি?

হ্যারি ওর মাথা নাড়ালো, রন ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে হারমিওনের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে ওর কথা পুনরাবৃত্তি করলো, তুমি সকালে ব্রেকফাস্টের সময় রনের জুসে ফিলিক্স ফিলিসিস মিশিয়েছিলে বলেই ও ভালো খেলেছে, সব গোল বাঁচিয়েছে! শোনো হারমিওন, কারো সাহায্য ছাড়া আমি গোল বাঁচাতে পারি বুঝেছো?

আমি কখনো একথা বলিনি যে, তুমি খেলতে পারো না রন, তুমিও ভেবেছিলে তোমার জুসে হ্যারি পোশান মিশিয়েছে।

কথাটা বলে রন ওর ঝাড়ুর লাঠিটা কাঁধে চাপিয়ে ঘর ছেড়ে চলে গেলো। হ্যারি হারমিওনকে বললো, তাহলে চলো আমরা পার্টিতে যাই। হারমিওন বললো, তোমার ইচ্ছে হলে যাও, আমার যেতে ইচ্ছে করছে না।

রনের ব্যবহার আমার খুব খারাপ লাগছে…।

হারমিওনও ড্রেসিংরুম থেকে চলে গেলো।

হ্যারি ধীরে ধীরে খেলার মাঠের ভেতর দিয়ে ক্যাসেলে চললো। খেলা শেষ হলেও অনেকে তখন স্টেডিয়ামে বসে গুলতানি করছে। ওদের বেশিরভাগই গ্রিফিন্ডরের সাপোর্টার। হ্যারিকে দেখে ওরা হৈ হৈ করে উঠলো। রন আর হারমিওনের ঝগড়া, মনোমালিন্য ওকে খুবই ব্যথিত করে তুলেছে। ওর মনের মধ্যে আশা জমেছিলো গ্রিফিন্ডর জিততে পারলে, রনের খেলা ভালো হলে… হয়তো ওদের মধ্যে অতীতের বন্ধুত্ব ফিরে আসবে। ও কেমন করে হারমিওনকে বলবে, রনের বিরাগ হওয়ার আসল কারণ তোমার ভিক্টর ক্রামকে চুম্বন করা। রন কিছুতেই ওই দৃশ্য বরদাস্ত করতে পারছে না। কিন্তু সেটাতো অনেক পুরনো দিনের ঘটনা। এখনো সেটা মনে করে বসে থাকার কোনো কারণ নেই।

তবু হ্যারির মনে ক্ষিণ আশা ছিলো গ্রিফিন্ডরের কিডিচ খেলা জয়ের পার্টিতে হারমিওনকে দেখতে পাবে। কিন্তু এধার ওধার তাকিয়ে দুজনকেই দেখতে পেল না, না হারমিওন না রন।

ঘুরতে ঘুরতে ওর জিনির সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো। ওর কাঁধে পিগমি পাফ আর কোলে ক্রুকশ্যাংকস!

কাকে খুঁজছো, রনকে… ওই হিপোক্র্যাটকে? জিনি বললো। ওইতো ওধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে, যাও, যাও না ওর কাছে।

তখনো হলে হর্ষধ্বনি চলছে। জিনির কথামতো একটু এগুতেই হ্যারি দেখলো রন ল্যাভেন্ডার ব্রাউনকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে এমনভাবে যে কার কোনটা হাত বোঝা যায় না।

জিনি ওদের দিকে তাকিয়ে বললো, দেখো, দেখো… মনে হচ্ছে রন ল্যাভেন্ডরের মুখটাই খেয়ে ফেলবে। জিনি ভাবলেশহীন। যাই করুক আমার যায় আসে না কিছু, কিন্তু আমার মনে হয় ওর কিডিচ খেলার কৌশল ঠিক হচ্ছে না। আরো রিফাইন করা দরকার।

জিনি একটুখানি ছুঁলো হ্যারির হাত। ওহ! পুরো শরীর বেজে উঠছে যে হ্যারির! ঝন ঝন ঝনা! অদ্ভুত অন্যরকম লাগা–ভালো লাগছে ভীষণ অচেনারকম ভালো। ওর হাতের স্পর্শের সঙ্গে সঙ্গে হ্যারির শরীরটা চচন্ করে উঠলো। অদ্ভুত এক অনুভূতি। তারপর জিনি বাটারবিয়র খাবার জন্য চলে গেলো।

ঠিক সেই সময় পোট্রট হলটা বন্ধ হয়ে গেলো। হ্যারি দ্রুত পায়ে হলের দিকে এগিয়ে রোমিলদা ভানেকে সরিয়ে ফ্যাটলেডির পোট্রট সরিয়ে হলের বাইরে দাঁড়ালো। করিডরে কেউ নেই, একজনকেও হ্যারির চোখে পড়লো না।

হ্যারি ওকে ক্লাশরুমের মধ্যে প্রথম দেখতে পেলো। দরজায় কোনো তালা দেয়া ছিলো না। হারমিওন ক্লাশরুমে একাই টিচার ডেস্কে বসেছিলো। ওর মাথার ওপর একটা ছোট হলুদ রঙের পাখি চক্রাকারে উড়ছে। খুব সম্ভব পাখিটাকে মন্ত্রবলে ডেকে এনেছে। হ্যারি ওর স্পেলওয়ার্ক দেখে প্রশংসা না করে থাকতে পারলো না।

হ্যারিকে চোখে পড়তেই হারমিওন ভাঙা ভাঙা গলায় বললো, হ্যালো হ্যারি… আমি একটু একা একা স্পেল প্র্যাকটিস করছিলাম।

সত্যি দারুণ করলে তো, এতো ভালো যে বলার ভাষা নেই, হ্যারি বললো।

হ্যারি জানে না অন্য কি কথা সে সময়ে বলবে। ওর মনে তখনো রনের সঙ্গে ওর মনোমালিন্য মিটিয়ে দেবার ভাবনা ভরে আছে। পার্টিতে বেশি রকম হৈ-চৈ দেখে হারমিওন হয়তো চলে এসেছে, থাকলে রনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেতে হ্যারি। ঠিক সেই সময় হারমিওন উচ্চকণ্ঠে বলে উঠলো, রনকে দেখলাম পার্টিতে বেশ সক্রিয়, দারুণ এনজয় করছে।

এনজয় করছে দেখলে? হ্যারি বললো।

ভান করবে না হ্যারি, এমনভাবে বললে যেনো তুমি কিছু দেখোনি, হারমিওন বললো। কোনো রকম রাখঢাক না করেই তো ও করছে।

ঠিক সেই সময় দরজাটা খুলে গেলো। রন লেভেন্ডরের হাত ধরে টানতে টানতে ঘরে ঢুকলো। দুজনেই হাসিতে উপচে পড়ছে।

ওহো তোমরা দুজনে এখানে? হ্যারি আর হারমিওনকে দেখে রন বললো। উফ! বলেই লেভেন্ডর খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

ঘরের ভেতরটা তখন হঠাৎ নিস্তব্ধতায় পূর্ণ হয়ে গেলো। হারমিওন রনের দিকে তাকিয়ে রইলো। রন কিন্তু ওর মুখের দিকে তাকালো না, অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রইলো। বাহাদুরি মিশ্রিত কণ্ঠে বললো, হায় হ্যারি… হলে তোমায় দেখতে পেয়ে ভাবছিলাম কোথায় লুকিয়ে আছে।

হারমিওন ডেস্ক থেকে সরে গেলো। ছোট ছোট পাখিগুলো তখনো ওর মাথার ওপর গোলাকার বৃত্ত করে উড়ছে, ওকে দেখে মনে হয় সৌরজগতের অদ্ভুত এক পালকের তৈরি মডেল।

রন, লেভেন্ডর বাইরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তোমার উচিত ওর কাছে যাওয়া, হারমিওন শান্ত কণ্ঠে বললো। ও হয়তো ভাবছে কোথায় লুকিয়ে আছো তুমি।

কথাটা বলে হারমিওন সতেজ ভঙ্গিতে ঘরের দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। হ্যারি রনের মুখের দিকে তাকালো। আসন্ন বিপর্যয় থেকে মুক্তি পাবার স্বস্তির ছাপ ওর মুখে।

ঘরের দরোজার গোড়া থেকে এক তীক্ষ্ণস্বর ভেসে এলো ও পুগনো! হ্যারি ঘুরে দেখলে হারমিওন ওর লাঠি রনের দিকে প্রসারিত করেছে। ওর মুখের ভাব উন্মত্ত, ছোটো ছোটো পাখির দলগুলো সোনালী বুলেটের মতো ওর মাথার ওপর চক্রাকারে পৎ পৎ করে উড়ে চলেছে। সেই বুলেটগুলো রনকে আক্রমণ করছে। রন ভয়ে দুহাতে মুখ ঢেকে রেখেছে। সেই পাখিগুলো এতে নিবৃত না হয়ে পায়ের নখ দিয়ে ওকে পলে পলে ঠকরে চলেছে।

গেরেমোফমে। হারমিওন তীক্ষ্ম স্বরে চিৎকার করে একটি শেষ প্রতিহিংসার দৃষ্টি দিয়ে দরোজাটা সশব্দে খুলে বেরিয়ে গেলো। হ্যারি যেনো শুনতে পেলো ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *