১৩. দ্য সিক্রেট রিডল

১৩. দ্য সিক্রেট রিডল

সেন্ট মাংগোস হসপিট্যাল ফর ম্যাজিক্যাল ম্যালাডিস অ্যান্ড ইনজুরিস-এ কেটিকে পাঠানোর পরদিন সারা স্কুলে দাবানলের মতো ছড়িয়ে গেল ওকে কার্স করা হয়েছে, যদিও পুরো খবরটা হ্যারি, রন, হারমিওন ও লিনে ছাড়া কেউ জানে না। ওরা জানে না যে, কেটি সেই টার্গেটে ছিলো না।

আরে বাহ! ম্যালফয় জানবে না তা কেমন করে হয়, হ্যারি বললো রন আর হারমিওনকে। হারমিওন ও রনের মনে এই বিষয়ে সন্দেহ আছে, তাই ম্যালয়কে ডেথ-ইটার বললে ওরা ভালো করে তা শোনে না।

হ্যারি ভাবে কবে ডাম্বলডোর ফিরবেন। আগামী সোমবার তো ডাম্বলডোরের লেসন দেবার দিন। ডাম্বলডোর ফিরেছেন কিনা না জেনেও হ্যারি ঠিক সাড়ে আটটার সময় ডাম্বলডোরের ঘরের ভেতরে যাওয়ার জন্য অনুমতি পেতে দরজায় টোকা দিলো। ঘরে ঢুকে দেখলো ডাম্বলডোর ডেস্কের সামনে বসে রয়েছেন, তাকে খুবই ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। আগের মতোই হাতে ক্ষত, পোড়া কালো দাগ। হ্যারিকে দেখে স্মিত মুখে বসতে বললেন। টেবিলে পেনসিভ বসানো, তার থেকে রূপালী আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। আলোটা ঠিকরে সিলিং পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে।

আমি যখন হোগার্টসের বাইরে ছিলাম তখন তো তুমি ব্যস্ততার মধ্যে ছিলে, ডাম্বলডোর বললেন। আমি শুনলাম কেটির দুর্ঘটনার সময় তুমি ওখানে ছিলে।

হ্যাঁ স্যার, ও এখন কেমন আছে?

এখনো খুবই অসুস্থ, তবুও ওর ভাগ্য ভালো একথা বলতেই হবে। মনে হয় নেকলেসটা ওর দেহে সামান্যই স্পর্শ করেছিলো। ওর দস্তানায় ছোট একটা ফুটো ছিলো, সেখান থেকে সামান্য স্পর্শ লেগেছিল, সে যদি দস্তানা ছাড়া নেকলেসটা ছুঁতো তাহলে স্পর্শ মাত্রই মরে যেতো। সৌভাগ্যক্রমে প্রফেসর স্নেইপ কার্সটা ছড়াবার আগেই তার ব্যবস্থা নিতে পেরেছিলেন।

প্রফেসর স্নেইপ কেন, মাদাম পমফ্রেওতো সেটা করতে পারতেন, তাই নয় কি? হ্যারি বললো।

অবাধ্য ছেলে, পোট্রট থেকে একজন খুব মৃদু স্বরে বললো। ফিনেস নিগেলাস ব্ল্যাক, সিরিয়াসের গ্রেট গ্রেট গ্র্যান্ড ফাদার, দুহাতে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছিলেন, মাথা তুললেন, আমার সময়ে কখনোই হোগার্টসের কোনো ছাত্রের তার শিক্ষকদের সম্পর্কে এইরকম মন্তব্য বরদাস্ত করতাম না।

ধন্যবাদ ফিনেস, ডাম্বলডোর বললেন। প্রফেসর স্নেইপ কালো জাদু সম্পর্কে মাদাম পমফ্রের চাইতে বেশি জ্ঞান রাখেন, আমরা জানি হ্যারি। যাহোক হাসপাতালের কর্মীরা প্রতিঘণ্টায় আমাকে কেটি সম্পর্কে রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন। আমি আশা করছি কেটি খুব তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে।

হ্যারি বললো, স্যার এই সপ্তাহে আপনি কোথায় ছিলেন? ও জানে প্রফেসর ডাম্বলডোর হয়তো ওকে সে খবর দেবেন না, তিনি ফিনেস নিগেলাসের সঙ্গে একমত হলেন। নিগেলাস মুখ দিয়ে হিস শব্দ করলেন।

আমি তোমাকে এখনি বলতে চাই না, ডাম্বলডোর বললেন। তিনি পরে বলার আশ্বাস দিলেন। সত্যিই বলবেন? হ্যারি খুশিতে উপচে উঠলো।

হ্যাঁ, তেমনটিই মনে করছি, বললেন ডাম্বলডোর। রোবসের পকেট থেকে এক বোতল সিলভার মেমোরিস বের করে জাদুদণ্ড দিয়ে বোতলের ছিপিটা খুলে নিলেন।

স্যার, হগসমিডে মান্ডানগাসের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছিল, বললো হ্যারি।

হা হা, আমি জানি, সব কথা শুনেছি, মান্ডানগাস তোমার সম্পত্তি চুরি করে বিক্রি করেছে, ডাম্বলডোর মুচকি হাসলেন। উনি থ্রি ব্রুমস্ট্রিকের বাইরের মাঠে ঘোরাফেরা করছিলেন, আমার সঙ্গে দেখা করতে চান না খুব সম্ভব ভয় পান। আর তিনি সিরিয়াসের পুরনো সব মালপত্র ছিচকে চোরের মতো চুরি করতে পারবেন না, সব ব্যবস্থা আমি করেছি।

ওই ম্যাঙ্গি হাফরাড, ব্লকদের সব জিনিসপত্র মেরে দিচ্ছে, নিগেলাস বললেন। কথাটা বলে ফ্রেম থেকে বেরিয়ে এসে ১২নং গ্রিনল্ড প্লেসে চললেন।

সামান্য নীরব থাকার পর হ্যারি বললো, প্রফেসর, কেটি আঘাত পাবার পর আমি প্রফেসর ম্যাকগোনাগলকে কিছু তথ্য দিয়েছিলাম, সে সম্পর্কে কি তিনি আপনাকে কিছু বলেছেন? সে প্রসঙ্গে আমি ড্রেকো ম্যালয়ের বিষয়ে কিছু বলেছিলাম।

ও হ্যাঁ মিস ম্যাকগোনাগল বলছিলেন বটে, মানে তোমার সন্দেহের ব্যাপারে, ডাম্বলডোর বললেন।

আপনি কি মনে করেন?

শোনো কেটির ওই দুর্ঘটনার ব্যাপারে আমি তদন্ত করবো, যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব। যাকগে ওসব কথা, এখন আমি তোমার লেসনের ব্যাপারে ভাবছি, ডাম্বলডোর বললেন।

ডাম্বলডোরের কথা শুনে হ্যারি ক্ষুব্ধ হলো। কেটির মারাত্মক দুর্ঘটনার চাইতে লেসন দেয়া যদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে প্রথম লেসনের পর দুসপ্তাহ কোথায় ছিলেন? যাহোক ও ড্রেকো ম্যালয়ের প্রসঙ্গ আর আনলো না।

দেখলো প্রফেসর ডাম্বলডোর পেনসিভের মধ্যে তাজা মেমরিজ ঢেলে আগের মতো সেটা বড় বড় হাতের আঙ্গুল দিয়ে ঘোলাতে লাগলেন।

তোমার বোধ হয় মনে আছে ভোল্টেমর্টের প্রথম জীবনের কাহিনী শেষ করতে পারিনি, বলেছিলাম সেই সুপুরুষ মাগল জমিদার নন্দন টম রিডিল একদিন তার সুশ্রী স্ত্রী মেরোপকে পরিত্যাগ করে লিটিল হ্যাঙ্গলটনে পালিয়ে গিয়ে আরো একটা বিয়ে করে। মেরোপ তখন সন্তান সম্ভবা। তার সন্তানও হলো, একটি পুত্র সন্তান, পরে সে লর্ড ভোল্ডেমর্ট নামে বিখ্যাত হলো।

ডাম্বলডোর পেনসিভের দিকে মুখ নামিয়ে তরল পদার্থটা ঘোলাতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর রূপালী পদার্থটা সলিড হয়ে গেল। ওপরের অংশটায় বড় বড় চুলের মতো, ডাম্বলডোরের দুচোখ ঢেকে দিলো।

হ্যাঁ, আমরা ওই লকেট দেয়া নেকলেসটা অদ্ভুত এক পরিস্থিতিতে পেয়েছিলাম। ক্রিসমাসের কিছু আগে, তা অনেক বছর আগে। একটি সুশ্রী চেহারার জাদুকরী ওটা বিক্রি করতে এনেছিলো। ও বলেছিলো, তার হাতে অর্থ নেই, সোনার খুব প্রয়োজন। ময়লা জীর্ণ পোশাক পরা সন্তান-সম্ভবা মেয়েটিকে দেখে আমার তাই মনে হয়েছিলো। ও বললো, লকেটটা শ্রিদারিনের, যারা বিক্রি করতে আসে তারা ওইরকম কথাতো বলেই থাকে। আহারে! এটা আমার মারলিনের খুবই প্রিয় ছিলো, এই যে এটা দেখছেন, ওর ফেভারিট টি পট। কিন্তু যখন আমি ওটার দিকে নজর দিলাম, দেখলাম ওর নাম খোদাই করা আছে, কয়েকটা সাধারণ জাদুমন্ত্রেই সত্য কথা বলবে। দেখলাম লকেটটা অমূল্য। সেটার আসল দাম সম্পর্কে মেয়েটার কোনো ধারণাই ছিলো না। যাকগে মাত্র দশ গেলিয়ন দাম পেয়ে ও খুশি মনে চলে গেল, বলতে পারো আমরা কখনো এই কম দামে এরকম জিনিস পাইনি।

মাত্র দশ গেলিয়ন ওকে দিয়েছিলো? হ্যারি রেগেমেগে বললো।

ডাম্বলডোর বললেন, ক্যারাকটাকাস অর্ধের ব্যাপারে মোটেই উদার ছিলো না, পেনসিভে ও যখন উদয় হয়েছিলো তখন চোখ মুখ দেখে আর ওর কথা শুনে অবশ্যই আন্দাজ করতে পেরেছো। তো আমরা জানলাম শিশুটি জন্মাবার সময় মেরোপ লন্ডনে ছিলো, আর অর্থের অভাবের জন্য ও পাগলের মতো ওর একমাত্র মূল্যবান সম্পদ, ওই লকেটটা বিক্রি করছিল। সেটা মারভেলোর পরিবারের সম্পত্তি ছিলো এবং বিয়ের সময় মেরোপকে উপহার দিয়েছিলো।

কিন্তু মেরোপ তো জাদু জানতেন! হ্যারি অধৈর্য হয়ে বললো। জাদুর শক্তিতে খাবার-দাবার অনেক কিছুই তো নিজের জন্য সংগ্রহ করতে পারতেন, পারতেন না?

ডাম্বলডোর বললেন, হয়তো পারতো। তবে আমার বিশ্বাস–আবার আমি ধারণা করছি, হয়তো আমার ধারণা ঠিক, যখন ওর স্বামী ওকে ত্যাগ করে অন্য মেয়ের সঙ্গে চলে গেল তখন ও ম্যাজিক ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছিলো। আমার মনে হয় মেরোপো জীবনে আর জাদুকরী হয়ে থাকতে চায়নি। এমনও হতে পারে দুঃখ-দুর্দশা, ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে ও ম্যাজিকের শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলো। তাছাড়া তুমি ওদের কটেজেও দেখেছো মেরোপ একবারও তার জাদুদণ্ড তোলেনি বা প্রয়োগ করেনি। এমন কি তার জীবন বাঁচাতেও।

এমনকি তার ছেলের জন্যও বাঁচতে চাননি? কথাটা শুনে ডাম্বলডোর ভুরু কুঁচকালেন। তুমি কী লর্ড ভোল্টেমর্টের জন্য দুঃখ বোধ করছো?

মোটেই না, এক মুহূর্ত দেরি না করে হ্যারি বললো। কিন্তু তিনি তো চাইলে পারতেন, আমার মায়ের মতো কেউ তাকে হত্যা করেনি।

তোমার মায়েরও একটা সুযোগ ছিলো, ডাম্বলডোর শান্ত নরম সুরে বললেন। হ্যাঁ, মেরোপ তার ছেলের প্রয়োজনে বেঁচে থাকতে চায়নি, কিন্তু ওকে তুমি এভাবে বিচার করতে পার না হ্যারি, নানা অসুখ-বিসুখে ও দুশ্চিন্তায় সে ছিল দুর্বল এবং তোমার মায়ের মতো তার সাহস ছিল না! আর দেরি নয় এবার তুমি চেয়ার ছেড়ে ওঠো।

হ্যারি জানতে চাইলো–আমরা এবার কোথায় যাবো? প্রশ্নটা রেখেই হ্যারি ডাম্বলডোরের পাশে দাঁড়ালো।

এবার? এবার আমরা আমার মেমোরিতে প্রবেশ করবো। তুমি দেখবে গুরুত্বপূর্ণ সত্য সব ঘটনাবলী। তুমি আগে যাও, আমি পরে যাবো।

হ্যারি পেনসিভে মুখ নিচু করে মাথা ঠেকালো। ওর মুখ অসম্ভব শীতল হয়ে গেল, আবার ও গভীর অন্ধকারের মধ্যে ভেসে চললো। এক সেকেন্ড পরই ও ভূমি স্পর্শ করলো। চোখ খুলে দেখলো ও আর ডাম্বলডোর জনবহুল হৈচৈ পূর্ণ পুরনো ফ্যাশনের লন্ডনের একটা রাস্তাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

ওই দেখো আমি, ডাম্বলডোর উচ্ছ্বসিত হয়ে, একজন সুপুরুষ দীর্ঘকায় লোককে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললেন। একটা ঘোড়ায় টানা দুধের গাড়ির সামনে দিয়ে লোকটি রাস্তা পার হচ্ছিলো।

সেই যুবক ডাম্বলডোরের মাথায় লম্বা লম্বা চুল, দাড়ি নেই। রাস্তার একধারে গিয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটতে লাগলেন। তার সুন্দর চেহারা, পোশাক-আশাক, পরনে পামভেলভেট কোট। সবকিছুই মনোমুগ্ধকর, রাস্তার লোকেরা তার দিকে হা করে তাকিয়ে রয়েছে।

হ্যারি বললো, সুন্দর স্যুট পরেছেন স্যার।

ডাম্বলডোর হ্যারিকে সঙ্গে নিয়ে যুবক ডাম্বলডোরের পিছু পিছু চললেন। তারপর কতোগুলো লোহার গেট পার হয়ে একটা উঠোনে এসে দাঁড়ালেন। উঠোনটা বড় বড় রেলিং দিয়ে ঘেরা। যুবক ডাম্বলডোর উঠোন পেরিয়ে একা বাড়ির রাস্তার ধারে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে বাড়ির দরজায় নক করলেন। তারপরই নোংরা অপরিচ্ছন্ন এ্যাপ্রোন পরা একটি মেয়ে দরজা খুলে দিলো।

যুবক ডাম্বলডোর ওকে বললেন, শুভ বিকেল। আমরা মিসেস কোল-এর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। সম্ভবত উনি আপনাদের মেট্রন।

ডাম্বলডোরের রং বেরং-এর বেশভূষা দেখে মেয়েটি অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বললো, ও হ্যাঁ, এক মিনিট, মিসেস কোল!

হ্যারি শুনতে পেল বাড়ির ভেতর থেকে কেউ একজন সাড়া দিল।

মেয়েটি ডাম্বলডোরের দিকে তাকিয়ে বললো, আসুন, মিসেস কোল আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।

ডাম্বলডোর কালো-সাদা পাথরের টালিলাগানো হলওয়েতে প্রবেশ করলেন। হ্যারি দেখলো হলওয়েটা অনেক জিনিস-পত্রে ভর্তি থাকলেও অসম্ভব পরিষ্কার। হ্যারি ও বর্তমান ডাম্বলডোর, যুবক ডাম্বলডোরের পেছনে পেছনে চললো। সদর দরজাটা বন্ধ হবার আগেই একজন অস্থিচর্মসার নাকাল চেহারার মহিলা ওদের দিকে হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এলেন। মহিলার মুখটা খুবই তীক্ষ্ণ, দেখে মনে হয় খুবই উদ্বিগ্ন। কথা বলছিলেন পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য একটি এ্যাপোন পরা মেয়ের সঙ্গে। ডাম্বলডোরকে দেখে তার দিকে এগিয়ে এলেন।

ওপর তলায় মার্থারের কাছে আয়োডিন নিয়ে যাও। বিলি স্টাবস ওর পাঁচড়া চুলকোচ্ছে, এরিক ওয়ালিস-এর চিকেন পক্স থেকে জল গড়াচ্ছে, চাঁদর খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কথাগুলো সেই মহিলা কাউকে লক্ষ্য করে বললেন না। কথা বলতে বলতে ডাম্বলডোরের দিকে তার চোখ পড়লো। স্থির বিস্ফারিত চোখে দাঁড়ালেন, যেন একটা জিরায় তার সীমানায় ঢুকে পড়েছে সেই বিস্ময়ে ডাম্বলডোরের দিকে তাকালেন।

শুভ বিকেল, বলেই ডাম্বলডোর করমর্দনের জন্য হাত বাড়ালেন। মিসেস কোল হাঁ করে ডাম্বলডোরের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

আমার নাম অ্যালবাস ডাম্বলডোর। আমি আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্য একটা চিঠি পাঠিয়েছিলাম। আপনি সেই চিঠি পেয়ে অনুগ্রহ করে আমাকে আজকেই আপনার সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন।

মিসেস কোল চোখ পিটপিট করলেন। ডাম্বলডোরকে দেখে তাঁর মনে হয় দ্রলোক আজগুবি আগন্তুক নন। আমতা আমতা করে বললেন, ও হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি দয়া করে আমার চেম্বারে আসুন।

মিসেস কোল ডাম্বলডোরকে একটা ঘরে নিয়ে গেলেন। কাঠের পার্টিশন দিয়ে ঘরটা দুভাগে ভাগ করা। এক ভাগে বসার; অন্যভাগে অফিস। ঘরে যা কিছু রয়েছে সবই অতি পুরনো, নড়বড়ে আর নোংরা। এসবের কোনোটাই ঘরের মধ্যে রাখার উপযুক্ত নয়।

মহিলা ডাম্বলডোরকে ঝরঝরে, আধভাঙ্গা চেয়ারে বসতে বলে, নিজে তার ডেস্কের পেছনে একটা চেয়ারে বসতে বসতে হাসার ব্যর্থ প্রয়াস করে নার্ভাসলি ডাম্বলডোরের দিকে তাকালেন।

আমি আপনাকে চিঠিতে সবিস্তারে সব জানিয়েছি, তবু আরেকবার বলছি, আমি টম রিডিল এবং ওর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করতে এসেছি। আপনি কি তার পরিবারের একজন? মিসেস কোল জানতে চাইলেন।

না, আমি একজন শিক্ষক, ডাম্বলডোর বললেন। আমি টম রিডিলকে আমার স্কুলে ভর্তি করাতে চাই।

তো আপনার স্কুল কি ধরনের বলবেন? স্কুলের নাম হোগার্টস, ডাম্বলডোর বললেন। তা আপনি টম সম্পর্কে উৎসাহী কেন?

আমরা বুদ্ধিমান, মেধাবী ছাত্রদের স্কুলে ভর্তি করাই, প্রতিভাবান ছেলেদের খুঁজে বেড়াই।

আপনি বলতে চান ও বৃত্তি পাওয়া ছাত্র? ও কেমন করে বৃত্তি পাবে? কখনো স্কুলে যায়নি।

তা ঠিক; কিন্তু টম জন্মাবার পর থেকেই ওর নাম আমাদের স্কুলে নথিভুক্ত হয়ে আছে।

আশ্চর্য! কে ওর নাম নথিভুক্ত করালো? ওর বাবা-মা? কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই মিসেস কোল শুধু ইনটেলিজেন্ট নয়, প্রখর।

বুদ্ধিমতী মহিলা। ডাম্বলডোরেরও সেইরকম মনে হলো। ওদিকে হ্যারি দেখলো ডাম্বলডোর তার ভেলভেটের আলখেল্লার পকেটে হাত ঢুকিয়ে জাদুদণ্ড বার করছেন, একই সঙ্গে মিসেস কোল-এর ডেস্কটপ থেকে একটা সাদা কাগজ নিয়ে তার সামনে রাখলেন।

এখানে, ডাম্বলডোর সাদা কাগজটা মিসেস কোলকে দেখিয়ে হাত দোলাতে দোলাতে বললেন। আমার মনে হয় কাগজটা দেখে আপনি সব বুঝতে পারছেন।

কথাটা শুনে মিসেস কোল চোখে কিছুটা ঝাপসা দেখতে লাগলেন। তারপর ভালভাবে কাগজটা দেখলেন। গভীর মনোযোগ দিয়ে সেটা দেখতে লাগলেন। তবে বেশিক্ষণ নয়, কয়েক সেকেন্ড মাত্র।

সব ঠিক আছে, মিসেস কোল ডাম্বলডোরের দিকে কাগজটা এগিয়ে দিলেন। তারপরই চোখে পড়লো টেবিলের ওপর দুটি গ্লাস আর একটা জিনের বোতল। হঠাৎ কে ওগুলো রেখে গেল বুঝে উঠতে পারলেন না।

আমি কী আপনাকে এক গ্লাস জিন পান করতে অনুরোধ করতে পারি? মিসেস কোল খুবই নরম গলায় বললেন।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, ডাম্বলডোর উৎফুল্ল হয়ে বললেন।

জিন পান করতে করতে ডাম্বলডোর লক্ষ্য করলেন মদ্যপানের ব্যাপারে মিসেস কোল খুবই পটু। পানের সব রকম নিয়ম কানুন তার জানা। আরো দেখলেন জিন পান করার সময় পরিমিতভাবে গ্লাসে ঢেলে নিমেষে শেষ করে আবার গ্লাস ভর্তি করেন। মিসেস কোল ড্রিংকস শেষ হলে ঠোঁট চেটে হাসতে হাসতে বললেন ঠিক আছে।

ডাম্বলডোর এই প্রথম মিসেস কোলকে হাসতে দেখলেন। তখন কাজ গুছিয়ে নেবার জন্য অমায়িকভাবে বললেন, আমি ভাবছিলাম, মানে আপনি কী ওর ব্যাপারে আমাকে কিছু জানাতে পারেন কিনা। মানে ওর অতীত বিষয়ে। শুনেছি, আপনাদের এই অনাথ আশ্রমে ওর জন্ম!

ঠিকই শুনেছেন, বলেই মিসেস কোল শূন্য গ্লাসে জিন ভর্তি করলেন। আমার স্পষ্ট করে মনে আছে, তখন সবেমাত্র এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। কোনো এক নববর্ষের সন্ধ্যা, হাড় কাঁপানো শীত, বরফ পড়ছে, খুবই বাজে রাত ছিল সেদিন। মেয়েটি আমারই সমবয়সী হবে সেই সময়ে, কোনো রকমে পা টেনে চলতে চলতে আমাদের এখানে এসে পড়ে গেল। আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে ব্যাপারটা নতুন নয়। আমি যত্ন করে মেয়েটিকে ভেতরে নিয়ে গেলাম। ঘণ্টাখানেক পর টম জন্মালো। তার এক ঘণ্টা পর মেয়েটি মারা গেল।

কথাটা শেষ করেই মিসেস কোল আবার বোতল থেকে গ্লাসে জিন ঢাললেন। মৃত্যুর আগে মেয়েটি কি আপনাকে কিছু বলেছিল? ডাম্বলডোর জিজ্ঞেস করলেন।

তারপরে শুনুন কি হলো, মিসেস কোল জিন পান করে খুব চনমনে মেজাজের হয়ে যেন ডাম্বলডোরকে সব কিছু বলার জন্য প্রস্তুত।

আমার ভালো করেই মনে আছে, মেয়েটি বাচ্চাটার মুখ দেখে বলেছিল, অবিকল ওর বাবার মতো হয়েছে। আমার মনে হয় মেয়েটি সর্বান্তকরণে ঈশ্বরের কাছে তাই চেয়েছিল। মেয়েটি মোটামুটি সুশ্রী হলেও সুন্দরীর পর্যায়ে নয়। তারপর আমাকে অনুরোধ করেছিলো শিশুটির নাম যেন তার বাপের নামের সাথে মিল রেখে রাখা হয় টম। আর মারভোলো মেয়েটির বাপের নামের সাথে মিল রেখে। হ্যাঁ, বুঝতে পারছি নামটা আপনার অদ্ভুত লাগছে। আমরা ভেবেছিলাম মেয়েটি খুব সম্ভব কোনো সার্কাসের দলের। তা যাক, মেয়েটি বলেছিল ওর পদবী হবে রিডিল। তারপর আর একটি শব্দও বেচারীর গলা থেকে বেরোলো না।

যাহোক ওর নাম হলো টম মারভোলো রিডিল। রিডিল বাচ্চাটার মায়ের দেয়া পদবী। দুঃখের বিষয় আমরা তো জানি না ও কোন পরিবারের সন্তান। অতি দুঃখের বিষয় ও জন্মাবার পর টম বা মারভোলো নামের কেউ ওকে দাবি করতে বা দেখতে আসেনি। তারপর থেকেই এখন পর্যন্ত আমাদের এই অনাথ আশ্রমে থাকে।

গ্লাসের পর গ্লাস জিন গিলে মিসেস কোলের অবস্থা কাহিল! গাল লাল হয়ে গেছে, মুখের কথা থামছে না। পান করছেন আর বলছেন, হেলদি মেজারস অফ জিন।

অনেকটা সময় চুপ করে থেকে হঠাৎ বলে উঠলেন, সত্যি ছেলেটা অদ্ভুত। হ্যাঁ, আমারও তাই মনে হয়েছে, ডাম্বলডোর স্বভাবসিদ্ধ শান্ত সুরে বললেন।

সত্যি বাচ্চাটা অদ্ভুত, ও কখনো কখনো কাঁদতো। তারপর বয়স বাড়ার সাথে সাথে একটু ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে চললো, একেবারেই অস্বাভাবিক।

অস্বাভাবিক কিভাবে বুঝলেন, ডাম্বলডোর বললেন।

হ্যাঁ, অস্বাভাবিক, ওর কথাবার্তা, কাজকর্ম দেখে আমার মনে হয়। মিসেস কোল থেমে গেলেন এবং ডাম্বলডোরের দিকে তাকালেন। সেই দৃষ্টির মধ্যে অস্বাভাবিকতা ও কোনো কিছু তিনি চেপে যেতে চাচ্ছেন, ডাম্বলডোর তা বুঝতে। পারলেন।

হাতে জিনের গ্লাস নিয়ে মিসেস কোল বললেন, তাহলে এটা সুনিশ্চিত যে আপনার স্কুলে ছেলেটি ভর্তি হতে যাচ্ছে?

অবশ্যই, কোনো বাধা নেই। পরে মত বদলাবেন না তো? কোনো মতেই না, ডাম্বলডোর বললেন।

তাহলে আপনি ওকে নিয়ে যেতে পারেন।

ডাম্বলডোর মিসেস কোল-এর কথা বলার ভঙ্গি ও দৃষ্টি দেখে বুঝতে পারলেন, এতো আলোচনার পরেও যেন মিসেস কোল-এর মনে সন্দেহ আছেই।

হঠাৎ মিসেস কোল বললেন, টম কিন্তু সব ছেলেদের ভয় দেখায়। আপনি বলতে চান ও সকলকে উৎপীড়ন করে?

আমার মনে হয় তাই; কিন্তু ওকে ধরা শক্ত। অনেক আগের ঘটনা, একবার, প্রতিবছরের মত বাচ্চাদের গ্রামে নিয়ে গেছি। অ্যামি বেনসন ও ডেনিস বিশপ ছিলেন সঙ্গে। সেখানে এক গুহায় টম অদ্ভুত কিছু করছিল।

সে যদি এখানে আর ফিরে না আসে আমার মনে হয় না কেউ ব্যথিত হবে।

মিসেস কোল আবার সামান্য জিন গ্লাসে ঢেলে পান করলেন। জিনের নেশায় গাল দুটো আরো রক্তিম হয়ে উঠলো।

ওর দুষ্টামির শেষ নেই। শুধু ছেলেমেয়েদের নয়, এমন কি স্কুলের শিক্ষকদেরও ছাড়ে না।

ওটা বাচ্চা বয়সে হয়। বড় হলে শান্ত হয়ে যাবে। গরমকালের ছুটি হলেই এখানে আসবে, আমাদের ওখানে কিন্তু ছুটির সময় স্কুল ফাঁকা হয়ে যায়। ছাত্রছাত্রীরা যে যার বাড়ি চলে যায়।

এখানে অনেকে ওকে না দেখতে পেলেই বরং খুশি হবে। বলে মিসেস কোল চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন। হ্যারি লক্ষ্য করলো গ্লাসের পর গ্লাস জিন পান করেও মিসেস কোলের পা একটুও টলছে না।

আপনি ওকে একবার দেখবেন নিশ্চয়ই, মিসেস কোল বললেন। অবশ্যই দেখবো, ডাম্বলডোর চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালেন। মিসেস কোল যুবক ডাম্বলডোরকে নিয়ে পাথরের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলেন। উপরে উঠেই বাচ্চাদের বকতে লাগলেন শুধু নয় টিচারদেরও এটা করবে, ওটা করবে না বলে মৃদু ধমকালেন। অনাথ ছেলে-মেয়ে! হ্যারি ওদের দিকে তাকালো, সকলেই পরেছে ধূসর রঙের জামা। ওদের দেখলেই বোঝা যায় বেশ ভালোভাবে থাকে, আদর-যত্ন পায়। তাহলেও যেখানে ওরা বড় হচ্ছে সেটা বাচ্চাদের পক্ষে খুব একটা সুখকর বলে মনে হলো না। অনাথ আশ্রম হ্যারির কাছে একটি ভয়ানক কষ্টের জায়গা। সব আছে কিন্তু স্নেহ-ভালোবাসা নেই। এর মধ্যে ওরা বেড়ে উঠছে।

হ্যাঁ আমরা এসে গেছি, মিসেস কোল সিঁড়ির ল্যান্ডিং-এ দাঁড়িয়ে বললেন।

অনাথ আশ্রমের দোতলায় উঠে লম্বা করিডরের প্রথম দরজাটায় টোকা মেরে বললেন–টম, তোমার সঙ্গে একজন দেখা করতে এসেছেন। মি. ডাম্বেরটন, ওহ্ না না ডানডারবোর, তিনি তোমাকে বলতে এসেছেন…, থাক তিনিই তোমাকে তাঁর নাম বলবেন।

যুবক ও বৃদ্ধ এই দুই ডাম্বলডোরের সঙ্গে হ্যারি ঘরে ঢুকতেই মিসেস কোল দরজাটা বন্ধ করে চলে গেলেন। হ্যারি দেখলো ঘরটা খুবই ছোট, একটি ওয়ার্ডরোব আর ধূসর কম্বল পাতা একটি লোহার খাট। খাটে একটি ছেলে পা লম্বা করে বসে রয়েছে, ওর হাতে একটা বই।

টম রিডিলের চোখে-মুখে কোনো রকম শুষ্ক ও মলিনতার ছাপ নেই। মেরোপ মৃত্যুর সময় বলেছিলো, ওর ছেলে অনেকটা ওর বাবার মতো দেখতে। ওর বাবা খুব সুশ্রী-সুন্দর। এগার বছর বয়স, সেই তুলনায় অনেক লম্বা, কালো চুল এবং ফ্যাকাশে মুখ। ডাম্বলডোরের পাগল পাগল চেহারা দেখে টম ভুরু কুঁচকালো। সকলেই চুপচাপ।

হ্যালো টম, তুমি কেমন আছো? কথাটা বলার পর ডাম্বলডোর তার একটা হাত বাড়িয়ে ওর দিকে এগোলেন।

টম প্রথমে ডাম্বলডোরের প্রসারিত হাতটা মেলাতে ইতস্তত করলো; কিম্ভ মেলালো। বেশ ভালভাবেই করমর্দন করলো। ডাম্বলডোর একটা চেয়ার টমের লোহার খাটের পাশে টেনে এনে বসলেন। অনেকটা হাসপাতালে রোগী দেখতে আসার মতো।

আমি প্রফেসর ডাম্বলডোর।

প্রফেসর? টম পুনরাবৃত্তি করলো। প্রফেসর কী ডক্টরের মতো কিছু? তা আপনি এখানে কেন এসেছেন? মিসেস কোল কি আমাকে দেখানোর জন্য আপনাকে এনেছেন?

টম দরজার দিকে তাকালো। মিসেস কোল তখনই ঘর থেকে বাইরে চলে গেলেন।

না না, আমি ডাক্তার নই, ডাম্বলডোর হাসলেন। আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না। মিসেস কোল নিশ্চয়ই আমাকে ডাক্তার দেখাতে চান, সত্যি করে বলতো? টম রিডিল খুব জোর দিয়ে বললো।

কথাটা শুনে ডাম্বলডোর আগের মতোই মধুরভাবে হাসতে লাগলেন। কয়েক সেকেন্ড পর টম আর ডাম্বলডোরের দিকে তীক্ষ্ণভাবে তাকিয়ে থাকলো না। স্বাভাবিকভাবেই তাকালো।

কে তুমি?

হ্যাঁ, আমি তো তোমাকে বললাম, আমি প্রফেসর ডাম্বলডোর। হোগার্টস নামে একটা স্কুল আছে যেখানে আমি পড়াই। আমি তোমাকে আমাদের স্কুলে পড়তে নিয়ে যাবার জন্য এসেছি। অবশ্য তুমি যদি চাও। নতুন স্কুল, অনেক ছেলেমেয়ে পড়ে, তোমার ভাল লাগবে।

কথাটা শুনে টম রিডিলের প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই অদ্ভুত। রিডিল অসম্ভব বিরক্ত হলো। বিছানা থেকে লাফিয়ে ডাম্বলডোর থেকে দূরে সরে গেল। তুমি আমাকে বোকা বানাচ্ছো, ভেবেছো আমি কিছু বুঝি না? তুমি আমাকে পাগলাগারদে নিয়ে যেতে এসেছে। স্কুল-টিস্কুল নয়, তুমি পাগলাগারদ থেকে এসেছে। প্রফেসর না আরো কিছু। না, আমি ওখানে যাবো না, বুঝেছো? ওই বুড়ি বেড়ালটাকে পাগলা গারদে ভর্তি করে দাও। আমি অ্যামি বেনসন বা ডেনিস বিশপকে কিছুই করিনি। তুমি ওদের জিজ্ঞেস করতে পারো। সত্যি না কি মিথ্যে তারা তোমাকে বলে দেবে।

শোনো, আমি পাগলাগারদ থেকে আসিনি, ডাম্বলডোর ধীরে ধীরে বললেন। আমি একজন শিক্ষক, যদি তুমি চুপটি করে বসো আমি তোমাকে আমাদের স্কুল এবং হোগার্টসের গল্প শোনাবো। শোনার পর যদি তুমি আমাদের স্কুলে পড়তে না চাও তো তোমাকে কেউ কিছু বলবে না, বকবে না। জোর করে কেউ নিয়ে যাবে না।

টম বললো আগে শুনি আমি, তারপর যাই কি না যাই ভাবা যাবে।

হোগার্টস শুধু ভালো ছেলেদের স্কুল, যারা অনেক কিছু পারে, জানে, ডাম্বলডোর বললেন।

আমি পাগল নই!

আমি খুব ভালো করে জানি তুমি পাগল নও। ওটা পাগলদের স্কুল নয়, একটা জাদু বিদ্যার স্কুল, ডাম্বলডোর ওকে আশ্বস্ত করলেন।

তারপরে ঘরে কারো মুখে কোনো কথা নেই। টম রিডিল যেন জমে পাথর হয়ে গেছে, ওর চোখ দুটো দপ দপ করে জ্বলছে, সেই জ্বলন্ত চোখ কখনো ডাম্বলডোরের কাছে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে। যেন ডাম্বলডোর একটা না একটা চোখ ধরবার চেষ্টা করছেন।

ম্যাজিক? ও ফিস ফিস করে বললো।

ঠিকই বলেছো, ডাম্বলডোর বললেন।

ম্যাজিক, ম্যাজিক! তা আমি ওখানে কি করবো? যা যা তুমি করতে চাইবে। তুমি কী করতে চাও বলো?

রুদ্ধ নিঃশ্বাসে টম রিডিল বললো, সবকিছু! ওর সমস্ত শরীর উত্তেজনায় থর থর করে কাঁপতে লাগলো। আমি না ছুঁয়ে কোনো কিছু সরাতে পারবো? পশুদের কোনো প্রশিক্ষণ না দিয়ে তাদের চালনা করতে পারবো? যারা আমার ক্ষতি করতে চাইবে, তাদের আমি শায়েস্তা করতে পারবো? তাদের আঘাত করতে পারবো?

কথাগুলো বলার পর উত্তেজনায় রিডিলের পা থর থর করে কাঁপতে লাগলো। ও কোন রকমে ওর বিছানায় বসে পড়ে হাতের রেখার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, মাথা নত করলো, যেন ও প্রার্থনা করছে।

আমি জানি, আমি জানি। সকলের চেয়ে ভিন্ন আমি। ওর কাঁপা কাঁপা আঙ্গুলগুলো দেখতে দেখতে বললো, আমি জানি আমি বিশেষ এক মানুষ, সব সময় আমি বুঝতে পারি, অন্যদের চেয়ে আমি আলাদা।

বেশ, তুমি ঠিক কথা বলেছো, ডাম্বলডোর বললেন। ডাম্বলডোর আর হাসছেন, রিডিলের দিকে তাকিয়ে ওকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে চলেছেন। তুমি একজন জ দুকর!

কথাটা শুনে রিডিল ওর মুখ তুললো। ওর চোখ মুখ অব্যক্ত এক আনন্দে উপছে পড়ছে, কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক ওর সুন্দর মুখের সৌন্দর্য লুপ্ত হয়ে গেছে। ওর সুললিত কাটা কাটা দেহ, দৃঢ় হয়ে গেছে। ওর মুখের ভাব প্রায় বর্বরের মতো হয়ে গেছে।

তুমিও কী জাদুকর? হ্যাঁ, আমি তাই, ঠিক ধরেছো।

তাহলে প্রমাণ করো, রিডিল তৎক্ষণাৎ বললো। সেই একই সুরে, যেমন আগে বলেছিলো সত্যি করে বলো।

ডাম্বলডোর তার দুই ভুরু তুললেন। আমি যদি জাদু দেখাই তাহলে তুমি হোগার্টসে ভর্তি হবে? হ্যাঁ, হ্যাঁ নিশ্চয়ই আমি যাবো। তাহলে আমাকে তোমায় স্যার অথবা প্রফেসর বলে ডাকতে হবে।

কয়েক সেকেন্ডের জন্য রিডিলের মুখোভাব কঠিন হয়ে গেল। এ যেন একগুঁয়ে ধৃষ্টতাপূর্ণ রিডিল নয়, অজানা এক অতি ভদ্রস্বরে বললো, স্যার, আমি বলছি, অনুগ্রহ করে আপনি আমাকে ম্যাজিক দেখাতে পারবেন?

হ্যারি ভেবেছিলো ডাম্বলডোর রিডিলের অনুরোধ উপেক্ষা করবেন, বলবেন তুমি হোগার্টসে চলো তখন তোমাকে ম্যাজিক দেখানোর প্রচুর সময় পাওয়া যাবে। কিন্তু কি আশ্চর্য! ডাম্বলডোর তার জাদুদণ্ড জ্যাকেটের ভেতরের পকেট থেকে টেনে বের করে ভাঙ্গা ভাঙ্গা অগোছালো ওয়ারড্রোবের দিকে তাক করলেন। জাদুদণ্ডের এক প্রান্ত থেকে সামান্য অগ্নিশিখা বেরিয়ে এলো।

ওয়ারড্রোবটা দাউ দাউ করে জ্বলে গেলো।

রিডিল তাই দেখে ভয়ে আঁতকে উঠে বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। হ্যারি রিডিলের ভীতসন্ত্রস্ত হওয়ার দৃশ্য দেখে ওকে দোষ দিতে পারলো না। কে ভয় না। পাবে। রিডিল ডাম্বলডোরকে দুহাতে জড়িয়ে ধরতেই আগুন নিভে গেল, সেই ভাঙ্গা জীর্ণ ওয়ারড্রোব যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেল।

রিডিলের মুখের ভাব শান্ত হয়ে গেল। ডাম্বলডোরের হাতের জাদুদণ্ডের দিকে লোভীর মতো তাকিয়ে সে বললো,

এই রকম একটা জাদুদণ্ড কোথায় পেতে পারি?

সময় মতো অবশ্যই পাবে, ডাম্বলডোর বললেন। আমার মনে হয় তোমার ওয়ারড্রোবে এমন কিছু একটা আছে, যা বেরিয়ে আসতে চাইছে।

ঠিক সেই সময় তার ভেতর থেকে খুব আস্তে খটর খটর শব্দ শোনা যেতে লাগলো। জীবনে এই প্রথম রিডিলের মুখ ভয়ে শুকিয়ে গেলো।

ওর দরজাটা খোলো, ডাম্বলডোর বললেন।

প্রথমে রিডিল দোনোমনো করলো। তারপর ধীরে ধীরে ওয়ারড্রোবের কাছে গিয়ে দরজাটা খুললো। আলমারির ওপরের তাকে দেখলে অনেক হাতে বোনা

সুতির পোশাক, একটা ছোট কার্ড বোর্ডের বাক্স, সেগুলো থর থর করে কাঁপছে, মনে হয় যেন তার ভেতরে অনেকগুলো ইঁদুর ঢুকেছে, তারা বের হয়ে পালাবার চেষ্টা করছে।

ওগুলো বের করে দাও, ডাম্বলডোর বললেন।

রিডিল কাঁপা কাঁপা হাতে কার্ডবোর্ডের বাক্সটা নিচে নামালো। ওকে দেখে মনে হলো দারুণ ভয় পেয়েছে।

দেখো বাক্সের মধ্যে এমন একটা জিনিস আছে, যা তোমার জানা নেই, ডাম্বলডোর বললেন।

রিডিল ডাম্বলডোরের দিকে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকালো, বাক্সের জিনিসটা ওর বিছানায় রাখলো, রাখার সময় চোখ খুললো না। হ্যারি ভেবেছিল বাক্সের মধ্যে কিছু নতুন জিনিস দেখতে পাবে। কিন্তু দেখলো সবই পরিচিত। ছোটো ছোটো জিনিস, একটা খেলার yo-yo, একটা রূপোর আঙ্গুলের টুপি (সূঁচের আঘাত বাঁচাতে আঙ্গুলে দর্জিরা যা লাগায়) একটা রংচটা মাউথ-অর্গান। বাক্স থেকে বের হয়ে সেগুলো আর কাপছে না, কম্বলের ওপর স্থির হয়ে পড়ে রয়েছে।

তুমি জিনিসগুলোর আসল মালিকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ফেরত দেবে, ডাম্বলডোর রিডিলকে বললেন জাদুদণ্ডটা পকেটে রাখতে রাখতে। আমি কিন্তু ঠিক জানতে পারবো তুমি জিনিসগুলো ফেরত দিয়েছে কি না। একটা কথা মনে রাখবে, হোগার্টসে চুরি করা মস্ত অপরাধ। কোনোভাবেই তা চলবে না।

রিডিল ডাম্বলডোরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। খানিকক্ষণ পর বললো, হা স্যার।

ডাম্বলডোর বললেন, হোগার্টসে তোমাকে শুধু ম্যাজিক শেখানো হবে না, সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখারও শিক্ষা দেয়া হবে। তুমি যদি তোমার শক্তি ভুল ব্যবহার করো, আমাদের স্কুলে সে শিক্ষা দেয়া হয় না। একটা কথা মনে রাখবে, তুমি প্রথম বা শেষ ব্যক্তি হবে না যে ম্যাজিক প্রয়োগ করে পার পেয়ে যাবে। ধরা পড়বেই। এও জানবে, হোগার্টস স্কুলে ছাত্ররা অন্যায় করলে স্কুল থেকে বিতাড়িত হয় ও আইন অনুসারে ম্যাজিক মিনিস্ট্রি তাকে শাস্তি দেয়। যারা আইন ভঙ্গ করে তাদের কঠোর শাস্তি হয়। তাই যে সমস্ত ছেলেমেয়েরা হোগার্টসে জাদুবিদ্যা শিখে জাদুকর বা ডাইনী হবে তাদেরকে অবশ্যই আমাদের আইন মেনে চলতে হবে।

অবশ্যই স্যার, রিডিল আবার বললো।

রিডিলের মুখ দেখে বোঝা গেল না ও কি ভাবছে। ভাবলেশহীন মুখে ও চুরি করা জিনিসগুলো একটা একটা করে বাক্সে রেখে দিয়ে ডাম্বলডোরকে স্পষ্টভাবে বললো, আমার কাছে তো অর্থ নেই।

তারও ব্যবস্থা আছে, ডাম্বলডোর পকেট থেকে একটা চামড়ার মানিব্যাগ বের করলেন। আমাদের একটা ফান্ড আছে, যারা বইপত্র বা রোবস কিনতে পারে না তাদের কেনার সাহায্যের জন্যে। তোমার কিছু স্পেল বুকসও কিনতে হবে। ইচ্ছে করলে সেকেন্ড হ্যান্ডও কিনতে পারো; কিন্তু…।

আপনি কোথা থেকে স্পেল বুকস কেনেন? রিডিল ডাম্বলডোরের কথার মাঝখানে ব্যাগ ভর্তি সোনার গ্যালিয়ন দেখতে দেখতে এবং কোনো রকম ধন্যবাদ দিয়ে বললো।

ডায়াগন অ্যালিতে, ডাম্বলডোর বললেন। আমার কাছেই তোমার বুক লিস্ট আর অন্যসব জিনিস কেনার লিস্টও আছে। আমি তোমায় সেগুলো পেতে সাহায্য করতে পারি।

আপনি আমার সঙ্গে যাবেন? রিডিল জিজ্ঞেস করলো। যদি চাও, নিশ্চই যাবো।

না, এই কাজে আপনাকে দরকার হবে না, রিডিল বললো। আমি নিজের কাজ নিজে করতে অভ্যস্ত। তাছাড়া আমি সব সময় লন্ডনে একা একা ঘোরাফেরা করি।

আমাকে স্যার শুধু বলবেন কেমন করে ডায়াগন অ্যালিতে যেতে হবে।

হ্যারি ভেবেছিল, ডাম্বলডোর রিডিলকে তার সঙ্গে যেতে বলবেন; কিন্তু আবারও আশ্চর্য হয়ে গেল, ডাম্বলডোর রিডিলের হাতে লিস্ট আর গ্যালিয়ন দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন কেমন করে অনাথ আশ্রম থেকে লিকি কলড্রেনে যেতে হবে। ওদিকটায় অনেক মাগলরা যোরাফেরা করে, ওরা জাদু বিশ্বাস করে না। দরকার হলে ওখানকার বারম্যান টমকে জিজ্ঞেস করবে। টম, টম তো তোমারও নাম অতএব ভুলে যাবে না।

রিডিল গায়ে মাছি বসলে যেমন বিরক্তিতে গা ঝাড়া দেয় তেমনিভাবে গা ঝাড়া দিলো।

তুমি টম নামটা পছন্দ করো না?

হাজার হাজার টম আছে, রিডিল বিড় বিড় করে বললো। তারপর অনেকটা সময় কিছু একটা ভেবে বললো, আচ্ছা আমার বাবা কি জাদুকর ছিলো? ওকেও শুনেছি সকলে টম রিডিল বলে ডাকতো।

ডাম্বলডোর নরম সুরে বললেন, আমি ঠিক জানি না।

আমার মা নিশ্চয়ই ম্যাজিক জানতেন না। জানলে মারা যেতেন না, রিডিল কথাটা যেন নিজের উদ্দেশ্যে বললো, ডাম্বলডোরকে নয়। তো স্যার, আমায় কবে জিনিসপত্র নিয়ে হোগার্টসে যেতে হবে?

ডাম্বলডোর বললেন, খামের মধ্যে যে আরেকটা পার্চমেন্ট আছে তাতে যাবার। ব্যাপারে সবকিছু লেখা আছে। তোমাকে ১ সেপ্টেম্বর কিংসক্রস স্টেশন থেকে যেতে হবে। খামের মধ্যে ট্রেনের টিকিটও আছে। রিডিল মাথা নাড়লো। ডাম্বলডোর হাত বাড়িয়ে ওর সঙ্গে করমর্দন করলেন। রিডিল ডাম্বলডোরের হাতটা ধরেই বললো, আমি সাপের সঙ্গে কথা বলতে পারি, একবার গ্রামে বেড়াতে গিয়ে সেটা জানতে পেরেছিলাম, সাপেরা যেখানে আমাকে দেখেছিল, আমার সঙ্গে ফিস ফিস করে কথা বলেছিল, জাদুকররা কি তাই পারে?

হ্যারি জানে সাপের সঙ্গে কথা সেও বলতে পারে, তাদের কথা বুঝতে পারে। কিন্তু ওর সেই অদ্ভুত ক্ষমতা ও কাউকে জানায়নি। নিজের কাছেই গোপন রেখেছে।

খুবই স্বাভাবিক, ডাম্বলডোর বললেন। তারপর ইতস্তত করে বললেন, তবে এমন কথা যে শুনিনি তা নয়।

বিদায় টম, আবার তোমার সঙ্গে হোগার্টসে দেখা হবে। আজ এই পর্যন্তই, বৃদ্ধ ডাম্বলডোর হ্যারিকে বললেন। পর মুহূর্তে হ্যারি পাখির পালকের মতো অন্ধকারের মধ্যে উড়তে লাগল।

বর্তমান অফিস ঘরে পৌঁছে ডাম্বলডোর হ্যারিকে বললেন, আমার পাশে বসো।

হ্যারি বসলো। ওর মনে তখন গেথে আছে একটু আগে যা দেখেছে সে বিষয়।

স্যার, আপনি যখন ওকে বললেন–তুমি জাদুকর, ও কিন্তু তৎক্ষণাৎ বিশ্বাস করলো। আমার কিন্তু সময় লেগেছিলো। হ্যাগ্রিড যখন আমাকে বলেছিলেন এই কথা–আমি যাদুকর, প্রথমে আমি তার কথা বিশ্বাস করিনি।

হা, রিডিল একটুও অবিশ্বাস করেনি। ওর কথায় বলা যায় সামথিং স্পেশাল, ডাম্বলডোর বললেন।

আমি কি জানতাম সেই সময়ে আমি সর্বকালের একজন ভয়ানক ডার্কউইজার্ডের সঙ্গে কথা বলে এসেছি। আমি তখন একটুও বুঝতে পারিনি ও এমন হয়ে উঠবে। আমি অবশ্যই ওকে দেখে বিভ্রান্ত হয়েছিলাম। যাহোক আমি হোগার্টসে ফিরে এলাম, ঠিক করলাম ওকে চোখে চোখে রাখবো। কেন জানি না ওর প্রতি আমার মায়া হয়েছিলো। ছেলেটি নিঃসঙ্গ, অনাথ। তার কেউ নেই, বন্ধু নেই বান্ধব নেই। কিন্তু এমন কথা কখনো ভাবিনি আমি তো অন্য অনাথ ছেলেদের জন্যও এরকম করতে পারতাম, যেমন ওকে করেছিলাম। ছোট জাদুকর হলেও ওর ক্ষমতা অসীম হয়ে উঠলো, সাধারণত অত উন্নতি কোন অল্প বয়সী জাদুকরের হয় না। সবচেয়ে বড় কথা ও দ্রুত জেনে ফেললো আর পাঁচ জনের চেয়ে সে পৃথক, ওর অনেক ক্ষমতা, এবং সেই ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি ওর মধ্যে আছে। তাই সচেতন হয়ে ও ম্যাজিক প্রয়োগ করতে লাগলো, এবং সেই ম্যাজিক সে অন্যদের ওপর ব্যবহার করতো মানুষদের ভয় পাওয়াতে, তাদের হাতের মুঠোর মধ্যে আনতে বা শাস্তি দিতে শুরু করলো। ও সকলের মধ্যে এ বিশ্বাস জন্মাতে সক্ষম হয় যে, যাকে খুশি তাকে আমি আঘাত করতে পারি।

হ্যারি বললো, তার ওপর ও ছিলো পার্সেলমাউথ।

অবশ্যই, এমন এক ক্ষমতা যা সকলের থাকে না। আমাকে ও ভাবিয়ে তুললো। যাকগে।

তারপর আকাশের কালো মেঘের দিকে তাকিয়ে বললেন, সত্যি, সময় আমাদের বোকা বানায়। তবে কিছু জিনিস আমরা ওখানে দেখে এসেছি তা নিয়ে তোমার সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। পরের সাক্ষাতে এই বিষয়ে গভীরভাবে আলাপ করবো।

তার মধ্যে প্রধান হলো টম নামের বিষয়ে রিডিলের প্রতিক্রিয়া, যখন আমি বলেছিলাম, লিকি কলড্রনে বারবয় টম নামে একটি ছেলে আছে যা তোমারও নাম!

রিডিল সেই কথা শুনে কি বলেছিল, ওর প্রতিক্রিয়া নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে। ও কখনো কারো সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে চায় না। সে একা একা অনন্য হয়ে থাকতে চেয়েছে। তুমি তো জানো ও নিজেই ওর নামও পাল্টে লর্ড ভোল্ডেমর্ট রেখেছিলো।

তাহলে তুমি অবশ্যই লক্ষ্য করেছো টম রিডিল কারো কাছে কোনদিন সাহায্য চায়নি বা নেয়নি। সে খুব আত্মনির্ভরশীল। ও যা কিছু করেছে সব একাই করেছে। এখনকার পরিণত বয়স্ক ভোল্ডেমর্টের চরিত্র এখন যা অতীতেও তাই ছিল। তুমি নিশ্চই জানো অনেক ডেথ ইটার দাবি করে এবং তারা বিশ্বাসও করে–যারা ওর বিশ্বস্ত অতি আপনজন তাদের কথা সে গ্রহণ করে। ভুল, একেবারেই ভুল ছাড়া কিছুই নয়। লর্ড ভোল্টেমর্টের কোনো বন্ধু নেই, আপনজন নেই, আমি জানি ভোল্ডেমর্টও কোনোদিন তা চায়নি। হ্যাঁ, যাবার আগে আরো একটা কথা শুনে যাও, আশা করি তোমার খুব বেশি ঘুম পায়নি। সেই ছোট টম রিডিল পছন্দ করতো ট্রফি সংগ্রহ করতে। সে তার বন্ধুদেরও অত্যাচার করতো, মারধর করতো, তাদের জিনিস কেড়ে নেয়াটা ছিল ওর কাছে ট্রফি জেতার মতো। সেগুলোই ওর বাক্সে পাওয়া গিয়েছিল। মনে রেখো, ওর ম্যাগপাই (টুকিটাকি জিনিস চুরি করার) মনোবৃত্তি, পরে বিশেষভাবে ওর জীবনে ভূমিকা রাখে।

ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার সময় হ্যারির চোখ গিয়ে পড়ল টেবিলের ওপর। গতবার সে এখানে মারভোলো গ্যনটের আংটি দেখেছিলো। সেটা আর টেবিলে নেই। ও দাঁড়িয়ে পড়লো।

হ্যারি, কিছু বলবে? ডাম্বলডোর প্রশ্ন করলেন।

আংটিটা নেই, আমি ভাবছিলাম হয়তো মাউথ অর্গানের মতে, বা অন্য কিছু। টম রিডিভলের মাউথ অর্গান হাতিয়ে নেওয়ার তুলনা করে হেসে হ্যারি বললো।

ডাম্বলডোর তার অর্ধচন্দ্র চশমার কাঁচের ভেতর দিয়ে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে হ্যারিকে দেখলেন। বললেন, খুবই বুদ্ধিমানের মতো প্রশ্ন করেছো হ্যারি। তবে কি জানো মাউথ অর্গান হচ্ছে মাউথ অর্গান, চিরকাল তাই থাকবে, বদলাবে না। যাও অনেক রাত হলো ঘুমাতে যাও।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *