১২. সিলভার অ্যান্ড ওপ্যালস

১২. সিলভার অ্যান্ড ওপ্যালস

ডাম্বলডোর এখন কোথায়, এখন তিনি কি করছেন? গত কয়েক সপ্তাহে হ্যারি হেডমাস্টার স্যারকে মাত্র দুবার দেখেছে। খাবার-দাবার সময় তিনি কদাচিৎ আসেন, আসেনই না বলা যায়, মনে হয় হারমিওনের কথাটাই ঠিক যে তিনি বেশ কিছুদিন টানা স্কুলের বাইরে থাকবেন। উনি কি ভুলে গেছেন হ্যারিকে নতুন লেসন দেবার কথা? ডাম্বলডোর বলেছিলেন, মূলত তার লেসন, হবে প্রফেসি বিষয়ে। হ্যারি বালিশে হেলান দিয়ে আরাম বোধ করেছে। নিজেকে অনেকটা শ্রান্ত অনুভব করছে।

অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম ট্রিপ হগসমিডে যাবার সময় এসে গেল। হ্যারির চিন্তা হলো স্কুলের ভেতরে ও বাইরে যে রকম কড়া নিরাপত্তার ধুম চলছে। তাতে কি আদপেই ট্রিপ সম্ভব হবে কিনা। কিন্তু জানতে পারলো পরিকল্পনা মাফিক হগসমিডে যেতে দেয়া হবে। ক্যাসেলের বাইরে কয়েক ঘণ্টার জন্য গেলে মন চাঙ্গা হয়, এতে সন্দেহ নেই।

হগসমিডে রওয়ানা হওয়ার দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলো হ্যারি। মনের মধ্যে ঝড়ের উন্মাদনা। নাস্তা খেতে যাবার আগে অ্যাডভান্সড পোশান মেকিং পড়ে সময় কাটালো। সাধারণত বিছানায় শুয়ে শুয়ে পাঠ্য পুস্তক পড়ার অভ্যাস নেই। রনের কথাই ঠিক, একমাত্র হারমিওন ছাড়া আর যে কারো জন্য কাজটি অশোভন। হারমিওন যেমন ইচ্ছে তেমনভাবে পড়াশোনা করে। কোনো বিশেষ পদ্ধতি ও মানে না। হ্যারি অবশ্য মনে করে হাফ-ব্লাড প্রিন্সের কপি অ্যাডভান্সড পোশান মেকিং পাঠ্য পুস্তকের পর্যায়ে পড়ে না। ও যতই বইটা এবং তার ভেতরে হাতে লেখা নোটগুলো পড়ে ততোই অভিভূত হয়ে যায়। বইটার পূর্ণাঙ্গ ও শর্টকাট মেথডের জন্য ও পেয়েছে স্লাগহর্নের কাছ থেকে পুরস্কার এবং ওর সুনাম বেড়েই চলেছে। তাছাড়া মার্জিনে প্রিন্সের উদ্ভব জিনস এবং হেকস। বইয়ের পাতায় আন্ডার লাইন, মন্তব্য পড়ে বইয়ের মালিক প্রিন্স শুধু মর্মার্থ করেনি, অনেক নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে।

হ্যারি ইতোমধ্যে প্রিন্সের নিজস্ব আবিষ্কার কয়েকটি স্পেল ব্যবহার করে দেখেছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও কাজের। ক্র্যাবের ওপর একবার ব্যবহারও করেছে। একটা হেকস করলে দ্রুত গতিতে লম্বা হয়ে যায় (ক্র্যাবের ওপর প্রয়োগ করে ফল পেয়েছে)। একটা জিন্কসে জিব মুখের ওপর তালুতে আটকে যায় এবং সম্ভবত সবচাইতে শক্তিশালী ও দরকারি মাফলিআতো। ওটা কানে শোনার পথ বন্ধ করে দেয়। সেই স্পেল করলে ক্লাশে এক ঘেয়ে লেকচারের সময় নিজেরা কথাবার্তা বললে অন্য কেউ শুনতে পাবে না। একমাত্র হারমিওন ছাড়া প্রিন্সের বানানো চার্মস সকলকেই কিছু না কিছু ভাবে আনন্দ দেয়, মজা পায়। হারমিওন শুরু থেকেই প্রিন্সের উদ্ভাবনের বিরুদ্ধে। আর সে সম্বন্ধে কোনো আলোচনা হলে সেখান থেকে উঠে যায়। বিশেষ করে যখন হ্যারি মাফলিআতো প্রয়োগ করে।

বিছানায় বসে হ্যারি বইটা উল্টো করে রাখলো। সেই পাতাতে একটা কোর্সের ইন্সট্রাকশন বাঁকা-ট্যারা করে লেখা। সেটি পড়ে তার মর্মোদ্ধার করতে পারছে না হ্যারি। দারুণ খটমট। শেষ পর্যন্ত বইয়ের পাতাটা মুড়ে রেখে দিলো।

লেখা আছে–লেভিকরপাস।

ঠাণ্ডা হাওয়া জানালার ফাঁক দিয়ে হু হু করে ঘরে আসা সত্ত্বেও নেভিল নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে। হ্যারি বইতে হাতে লেখা N-vblর দিকে তাকালো। মানেটা নন-ভার্বাল। হ্যারির মনে খটকা, সত্যই কি বিশেষ স্পেলটা উদ্ধার করতে পারবে? ওর জ্ঞান তখনও নন-ভার্বাল সম্পর্কে খুবই সীমিত। ওই রকম একটা শব্দ স্নেইপ ডিফেন্স এগেন্সট ডার্ক আট ক্লাশ নেবার সময় প্রায়ই বলেন। ওদিকে সন্দেহ নেই যে স্নেইপ প্রিন্সের ধারে কাছে আসতে পারবে না।

আপন মনে হ্যারি ওর জাদুদণ্ড তুলে কোনরকম ভাবনা-চিন্তা না করেই বললো, লেভিকরপাস।

সে শুনতে পেল–আআআআআরঘ!

তারপরই ঘরে আলো ঝকমক করে উঠলো, চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘর ভরে উঠলো। হঠাৎ ঝলমলে আলোর সঙ্গে চেঁচামেচি, অনেকের কথা ইত্যাদিতে সকলের আচমকা ঘুম ভেঙ্গে গেলো, বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে উঠলো। রন একটু বেশি আঁতকে উঠে চিৎকার করে উঠলো। হ্যারি কি করবে ভেবে না পেয়ে বইটা ছুঁড়ে ফেললো; কিন্তু বইটা মেঝেতে না পড়ে হাওয়াতে ভাসতে লাগলো। রনের মাথা মিমুখী, পা দুটি উপরে, হাওয়াতে দুলতে লাগলো, কোনো এক অদৃশ্য হুক ওকে বিদ্ধ করে পায়ের গোড়ালি তুলে ধরেছে।

ক্ষমা করো, আমি সত্যি সত্যি দুঃখিত, হ্যারি বললো। ডিন আর সিমাস হাসিতে ফেটে পড়লো। নেভিল খাট থেকে মেঝেতে পড়ে গিয়েছিলো, কোনোও রকমে ধরে ধরে ওঠে দাঁড়ালো। অদৃশ্য থেকে আওয়াজ–ঝুলে থাকো, আমি তোমাকে নামাচ্ছি।

হ্যারি উড়ন্ত বইটা খপ করে ধরে ফটাফট পাতা ওল্টাতে লাগলো, যদি কোনো কাউন্টার জিন্কস থাকে। হ্যারি বললো-লিবারেকরপাস! সে সর্বশক্তি প্রয়োগ করলো।

আবার ঘরে আলোর ঝলক, সঙ্গে সঙ্গে ঘরের সব কিছু যেমন অবস্থায় ছিলো তেমনই হয়ে গেল। রন ঝুলন্ত অবস্থা থেকে ওর বিছানায় ঝপাৎ করে পড়ে গেল।

রনের দিকে তাকিয়ে হ্যারি ক্ষীণ স্বরে বললো, সত্যি সত্যি দুঃখিত। তখনও ডিন এবং সিমাসের অট্টহাসি থামেনি।

রন চাপা গলায় বললো, কাল আমি তোমায় দেখে নেবো।

তারপর সকলে যে যার পোশাক পরে নিলো, সোয়েটার, পুলওভার মিসেস উইসলির হাতে বোনা গরম জামা। ক্লোক, মাফলার, দস্তানা কিছুই বাদ গেল না। ওদের হগসমিডে যেতে হবে। ততক্ষণে রনের রাগ কমেছে। এখন সে উপলব্ধি করলো হ্যারির নতুন সব স্পেলস খুবই আনন্দদায়ক এবং মজাদার।

ওরা ব্রেকফাস্ট খেতে গেল। মনপ্রাণ পড়ে রয়েছে হগসমিডের দিকে। রন সুযোগ পেয়েই হারমিওনকে ওই বিষয়টা বললো। খেতে খেতে হারমিওন হ্যারিকে বললো, তোমার স্পেলগুলো, হঠাৎ করে ওই বইটা থেকে পেয়েছ না কি?

কথাটা শুনে হ্যারি ভুরু কুঁচকালো। তুমি সব সময় দেখি যেটা নয় সেটা নিয়ে অযথা মাথা ঘামাও, কেন বলতো? তাই? তাই তো মনে হয়। কিন্তু হয়ও যদি তাতে ক্ষতিটা কি?

তো তুমি ঠিক করে নিয়েছে একজন অচেনা মানুষের কিছু হাতের লেখার পাঠ উদ্ধার করে দেখতে চাও কি করতে পারো, তাই না?

হাতে লেখা হলে ক্ষতি কি? হ্যারি বললো সব প্রশ্নের জবাব উহ্য রেখে।

কারণ তুমি যা যা করছে তার কোনটাই সম্ভবত মিনিস্ট্রি অনুমোদন দেয়নি, হারমিওন বললো। আরো একটা কথা–হ্যারি ও রন হারমিওনের মুখের দিকে তাকালো। কারণ আমার মতে প্রিন্স এক ফন্দিবাজ, চতুর লোক।

হ্যারি ও রন দুজনেই চিৎকার করে হারমিওনকে থামিয়ে দিলো।

রন বোতল থেকে কেচাপ সসেজে কেচাপ ঢালতে ঢালতে হারমিওনকে বললো, শুধুই মজা করার জন্য, আর কিছু নয়।

মজা মানে একজনকে ইঁদুরের মতো ল্যাজ ধরে দোলাবে? তোমাকে তো তাই করেছে। হারমিওন বললো। ওই রকম করার সময় এবং শক্তি কাদের আছে জানো?

কারা আবার ফ্রেড আর জর্জ, রন বললো। তারাও তো ওই রকম করে।

শুনেছি আমার বাবাও, হ্যারি বললো।

কি করতেন? রন, হারমিওন সমস্বরে বললো।

আমার বাবাও এই স্পেল করতেন। লুপিন আমাকে বলেছেন, হ্যারি বললো।

প্রথম কথাটি সত্য হলেও লুপিন বলেছেন কথাটা সত্য নয়। হ্যারি দেখেছে, স্নেইপকে বাবা এই কার্স প্রয়োগ করছেন। পেনসিভের মাধ্যমে যা দেখেছে সকল কথা বললেও এ-কথাটা সে এখন পর্যন্ত হারমিওন বা রনকে বলেনি। এখন ওর মাথায় এক দারুণ সম্ভাবনা ঘুরে বেড়াতে লাগলো, তাহলে হাফ-ব্লাড প্রিন্স কী?

হতে পারে তোমার বাবা ওইসব স্পেল ব্যবহার করেছিলেন, হারমিওন বললো। কিন্তু তিনি তো একা একা সেগুলো করেননি। আমরা আগেও দেখেছি, মনে হয় তুমি ভুলে গেছে। বাতাসে ভর করে মানুষ দুলছে, তন্দ্রাচ্ছন্ন মানুষ।

হ্যারি হারমিওনের দিকে একদৃষ্টে তাকালো। ওর কিডিচ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার সময় ডেথইটারদের আচরণের কথা মনে হলো, তখন তারা এরকম কার্স করে ঘুমন্ত মানুষকে ভাসিয়েছিলো। সেই সময় রন ওকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলো।

তুমি কিডিচ ওয়ার্ল্ডকাপের সময় ডেথ-ইটারদের কথা বলছো, ওটা আলাদা ব্যাপার, রন জোর করে বললো। ওরা অপপ্রয়োগ করেছিল, যাকগে এটা পরিষ্কার যে তুমি একেবারেই প্রিন্সকে পছন্দ করো না। হাত দিয়ে সসেজ তুললো খাবার জন্য আর বললো প্রিন্স পোশানে তোমার চেয়ে ভালো, তাই।

বিষয়টি একেবারেই তা নয়, হারমিওন বললো। গাল দুটো ওর লাল হয়ে গেল। আমার বক্তব্য খুব পরিষ্কার। তুমি যখন জানোনা স্পেলগুলো কেন ব্যবহার করা হয়, তখন এটা ব্যবহার করা ঠিক নয়। আমি বাজি রেখে বলতে পারি–প্রিন্স টিন্স বলে কেউ নেই, ওই নামে বন্ধুরা বা পরিচিতরা হয়তো ডেকে থাকতে পারে। বা অদ্ভুত ডাকনাম। আমার কাছে লোকটাকে একটুও ভালো বলে মনে হয় না।

আমি জানি না কেন তোমার মনে এই ধারণা হলো, হ্যারি রাগত স্বরে বললো। যদি ও ছোটখাটো ডেথ-ইটার হতো তাহলে ও কখনই বুক ফুলিয়ে জাহির করতো না, হাফরাড তাই কী করতো?

কথাটা বলার পর হ্যারির মনে হলো ওর বাবা ছিলেন পিওর ব্লাড (বংশপরম্পরায় জাদুকর)। যাকগে ওসব কথা ও মন থেকে মুছে ফেলতে চায়। একদম ওসব নিয়ে মনকে ত্যক্ত করতে চায় না। পরে সময় মতো ভাবা যাবে।

সব ডেথ-ইটাররা পিওর ব্লাডের নয়, খুব কমই এখন পিওর ব্লাডের জাদুকর আছে, হারমিওন একলোখার মতো বললো। আমার মনে হয় তাদের বেশির ভাগই হাফ-ব্লাড, ভান করে পিওর-ব্লাড-এর। ওরা মাগল পরিবারের হলেই ঘেন্না করে। তারা তোমাকে আর রনকে সেই দলভুক্ত করতে চায়।

হাজার চেষ্টা করলেও আমাকে ডেথ-ইটার বানাতে পারবে না, রন তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললো। পেট থেকে কাঁটা চামচ দিয়ে সসেজের টুকরো তুলে হারমিওনকে লক্ষ্য করে এরনি ম্যাকমিলানের মাথায় ছুড়লো। আমার সমস্ত পরিবারের লোকেরা রাড ট্রেটরস। ডেথ ইটারদের কাছে সেটা মাগলদের মতোই খারাপ।

আমাকে দলে পেলে ওরা খুশি হবে! হ্যারি ব্যাঙ্গ করে বললো। আমরা সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হয়ে থাকতে পারি যদি ওরা আমাকে ওদের দলে টানতে চেষ্টা করে।

কথাটা শুনে রন হেসে উঠলো। হারমিওন ইচ্ছার বিরুদ্ধে হেসে ফেললো। হঠাৎ জিনি আসলে ওদের কথা বাধা পেল।

এই যে হ্যারি, তোমার চিঠি। জিনি হ্যারির হাতে একটা পাকানো পার্চমেন্ট দিলো। পার্চমেন্টে হ্যারির নাম লেখা। খুবই পরিচিত হাতের বাঁকা বাঁকা অক্ষরে লেখা।

ধন্যবাদ জিনি। চিঠিটা ডাম্বলডোর পাঠিয়েছেন। খুব সম্ভব পরের লেসনের ব্যাপারে! হ্যারি পার্চমেন্টের মুখটা খুলে চোখ বোলাতে বোলাতে হারমিওন ও রনকে বললো। সোমবার সন্ধ্যায়! ও হঠাৎ খুব খুশিতে উপচে পড়ে। শরীর-মনের গ্লানি কমে যায়।

তাহলে আমাদের এক সঙ্গে হাসমিডে যাওয়ার কি হবে? জিনি বললো।

তাহলে আমি ডিনের সঙ্গে যাচ্ছি। ওখানেই তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে। কথাটা বলে জিনি ওদের দিকে হাত নাড়িয়ে ঘর ছেড়ে চলে গেল। ফিলচ ওক গাছের দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছেলেমেয়েদের হগসমিডে যাবার অনুমতি আছে কিনা চেক করছিলো।

ফিলচ একবার নয়, প্রত্যেককে তিন তিন বার চেক করতে লাগল। প্রত্যেকেরই সিক্রেসি সেন্সর ছিল যদিও।

আমরা যদি ডার্ক স্টাফ আউট করি তাতে কি আসে যায়? রন বললো, তাহলে যেসব ইন নিয়ে আসবো সেগুলোও তো চেক করতে হবে।

কথাটা বললেও রন ভয়ে ভয়ে সেন্সর পার হলো। বাইরে তখন কনকনে ঠান্ডাহওয়া বইছে। সেই সঙ্গে শিলাবৃষ্টি। তাই হগসমিডে যাওয়াটা খুব একটা আনন্দের হলো না। গরম জামা-কাপড়ে না ঢাকা শরীরের অংশ ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে যাচ্ছে।

যাহোক ওরা যখন হাসমিডের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছলো তখন নজরে পড়লো জোঙ্কোস জোক শপের হোর্ডিং। হ্যারি ধরেই নিলো এবারের ট্রিপটা মোটেই মজাদার হবে না। রন মোটা দস্তানা পরা হাত দিয়ে হালিডিউকস দেখালো। দোকানের দরজাটা খোলাই ছিল, হ্যারি ও হারমিওন ভিড়ের সঙ্গে মিশে গেল।

ভেতরে বেশ গরম। রন খুশি হয়ে বললো, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। গরম হাওয়া বইছে, টফির গন্ধ। ভাবছি বিকেল পর্যন্ত এখানেই থেকে যাব।

হ্যারি আমার দুষ্টু ছেলে, হ্যারির পেছনে অতি পরিচিত স্বর। সব মাটি হয়ে গেলো, হ্যারি ফিস ফিস করে রন ও হারমিওনকে বললো।

প্রফেসর স্লাগহর্ন! মাথায় বিরাট ফারের টুপি, ওভারকোট, তারই সঙ্গে ম্যাচ করা ফারের কলার। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগভর্তি ক্রিস্টালাইজড আনারস। বলতে গেলে দোকানের এক-চতুর্থাংশ দখল করে রয়েছে তার বিরাট শরীর আর আনারস ভর্তি ব্যাগ।

হ্যারি, তুমি আমার তিন তিনটে নৈশ ভোজ মিস্ করেছে। স্লাগহর্ন ওর বুকে আঙ্গুলের খোচা দিয়ে বললেন। এসব চলবে না মাই বয়। ডিনারের সময় আমি তোমাকে চাই-ই চাই। মিস গ্রেঞ্জার নিশ্চয়ই তুমি আমার দেয়া ডিনার পছন্দ করবে, তাই নয় কি?

হারমিওন উপায় নেই ভেবে বললো, হ্যাঁ, সত্যি দারুণ।

তো তুমি অবশ্যই হ্যারির সঙ্গে আসবে। স্লাগহর্ন এমনভাবে বললেন যে হারমিওনের হ্যাঁ কথাই মুখ থেকে বেরিয়ে এলো।

তো তুমি হ্যারির সঙ্গে আস মিস গ্রেঞ্জার।

আমার যাওয়া সম্ভব হবে না প্রফেসর। কিডিচ অনুশীলন আছে। হ্যারি বললো। উপায় নাই মাঠে তাকে যেতেই হবে।

ব্যবস্থাটা পাকা করেছেন স্লাগহর্ন ডাফলেট বিরন এডারল্ড ইনভাইটেশন কার্ড পাঠিয়ে।

অবশ্যই। আমি অবশ্যই আশা করছি এতত পরিশ্রম করার পর প্রথম ম্যাচ জেতার জন্য। তবে সামান্য রিক্রিয়েশন সবাইকে থামাতে পারে না। তাহলে সোমবার রাত্রিতে আসছো তো? অবশ্য এই রকম আবহাওয়াতে মনে হয় তোমার প্র্যাকটিস সম্ভব হবে না।

ক্ষমা করবেন প্রফেসর সোমবার সন্ধ্যায় আমার প্রফেসর ডাম্বলডোরের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে।

আবার ভাগ্যবঞ্চিত হলাম, স্লাগহর্ন নাটকীয়ভাবে বললেন। ঠিক আছে, এমনিভাবে তো তুমি সব সময়ে আমাকে এড়িয়ে চলতে পারবে না; হ্যারি!

প্রফেসর স্লাগহর্ন রাজকীয় ভঙ্গিতে দোকান ছেড়ে চলে গেলেন। রনের দিকে একবারও তাকালেন না।

আমার মনে হয় এর পরের বার তুমি হাজার অজুহাত দিয়ে ডিনার এড়াতে পারবে না হ্যারি, হারমিওন বললো। ওনার ঘরে ডিনার খাওয়া খুব একটা বোরিং ব্যাপার নয়। মাঝে মাঝে সেখানে বেশ আনন্দ হয়। কথা বলতে বলতে হারমিওন রনের মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেল। রনের মুখটা থমথমে। ওই দেখো, ওখানে ডিলাক্স সুগার কুইল বিক্রি করছে, এবার বোধহয় দোকান বন্ধ করে দেবে।

ভালই হয়েছে, হারমিওন প্রসঙ্গ বদলের চেষ্টা করলো। হ্যারি বড় বড় সুগার কুইল কেনার জন্য খুব উৎসাহ দেখালো। সাধারণত ও ওগুলো কেনে না। কিন্তু রন তখনো মনমরা হয়ে আছে। হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললো, চলো কেনা যাক।

হারমিওন বললো, আমাদের পরবর্তী টার্গেট?

চলো আমরা থ্রি ব্রুমস্টিকসে যাই, হ্যারি বললো। ওখানে গরম হাওয়া পাওয়া যাবে।

ওরা তিনজনেই কনকনে ঠান্ডা হাওয়াতে মুখটা বাঁচানোর জন্য মুখের ওপর স্কার্ফ চাপা দিল। একটু হাঁটার পর মিষ্টির দোকান। ঠান্ডা হাওয়া শরীরের উন্মুক্ত স্থানে ধারালো অঁচের মতো বিঁধছে। হানিডিউকসের গরম আর বাইরের বরফের মতো ঠান্ডায় ওরা ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগলো। রাস্তায় খুব একটা ভিড় নেই। কেউই রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে না। ওদের সামনে দেখলো দুজন লোক পথ চলছে। একজন রোগা প্যাকপ্যাকে আর লম্বা। বৃষ্টিতে ভেজা চশমায় দেখে লোকটাকে হ্যারি চিনতে পারলো। বারম্যান, ও হগসমিডে কাজ করে, দ্যা হগসহেডে। হ্যারি-রন-হারমিওন ওর কাছাকাছি গেলে বারম্যান ওর রোবসটা ফিতে দিয়ে খুব জোরে বেঁধে নিলো। তারপর আরো জোর কদমে হাঁটতে লাগলো। বেঁটে লোকটার হাতে কিছু আছে। সেটি নিয়ে ও বারম্যানের পিছু পিছু ছুটলো। প্রায় এক ফিট যখন দূরত্ব তখন হ্যারি ওকে চিনতে পারলো।

মাভানগাস!

বেঁটে খাটো পা-বিশিষ্ট মাঊনগাস ফ্লেচার ওর নাম শোনার পরই হাত থেকে সবকিছু পড়ে গেলো। এ সবই জাংক শপের জানালা থেকে কেনা।

হ্যারিকে দেখে মানগাস বললেন, হ্যালো হ্যারি?

রাস্তায় স্যুটকেস থেকে পড়ে যাওয়া পুরনো সব জিনিসপত্র মানগাস কুড়োতে লাগলেন।

আপনি এগুলো বিক্রির জন্য এনেছেন? হ্যারি প্রশ্ন করলো।

হ্যারি রাস্তা থেকে হেঁট হয়ে পুরনো জিনিসগুলো এক এক করে তুলে মাভানগাসের হাতে দিতে লাগলো। তুলতে তুলতে একটা রুপার জিনিস হাতে নিলো।

আরে এটাতো চেনা চেনা।

মাভানগাস হ্যারির হাত থেকে রুপার মতো জিনিসটা ছিনিয়ে নিয়ে ওর ব্যাগের মধ্যে রেখে দিয়ে বললেন, বেশ, পরে তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে, আউচ!

হ্যারি ততক্ষণে মানগাসকে একটা দেয়ালের সঙ্গে গলা চেপে ধরে অন্য হাতে ম্যাজিক ওয়াটা টেনে বার করলো।

হ্যারি, হারমিওন বাধা দেবার জন্য বেশ জোরে বললো।

হ্যারি মানগাসকে অসম্ভব ক্ৰব্ধ হয়ে বললো, আপনি এটা সিরিয়াসের বাড়ি থেকে নিয়েছেন? হ্যারির মুখের সামনে মাভানগাস। ওর মুখ থেকে তামাক আর অ্যালকোহলের গন্ধ ভক ভক করে বেরুচ্ছে। এতে ব্ল্যাক পরিবারের নামাঙ্কিত করা আছে।

মাভানগাস আমতা আমতা করে বললেন, আমি না কি নিয়েছি? হ্যারি রুক্ষস্বরে বললো, কি করেছেন জানেন না, সিরিয়াস যেদিন মারা যান সেদিন রাতে তার বাড়িতে গিয়ে তন্ন তন্ন করে সব জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়েছেন।

আমি.. না…। আমাকে ওই ক্রেস্টটা দিন!

হ্যারি মান্ডানগাসের গলাটা চেপে ধরলো। ওর টুটিটা যেন ও ছিঁড়ে ফেলবে। হঠাৎ ব্যা… শব্দ হলো। হ্যারির হাতটা মান্ডানগাসের হাত থেকে সরে এলো। মাভানগাস হাঁফাতে হাঁফাতে ক্ষিপ্রগতিতে অদৃশ্য হলেন।

হ্যারি ওর গলায় যতো জোর আছে তা দিয়ে চিৎকার করে মান্ডানগাস কোথায় পালালেন দেখার জন্য চেষ্টা করল। এধার ওধার দেখতে দেখতে বললো, ফিরে আসুন, আপনি চোর, চুরি করেছেন।

এখন কিছু বলে লাভ নেই হ্যারি, হাওয়া থেকে উড়ে এসে টোংকস বললল।

ওর চুলগুলো জলে ভিজে মাথায় চুপসে গেছে।

শোনো, মান্ডানগাস এতক্ষণে লন্ডনে পৌঁছে গেছেন। অযথা চেঁচিয়ে কোনো লাভ নেই।

সিরিয়াসের বাড়ি থেকে জিনিসপত্র চুরি করেছে। চুরি করেছে… ওটা।

 টোংকস বললো, জানি সব জানি। চুরির খবরটা শুনে টোংকস খুব সংযত হয়ে বললো। যাও এই ঠান্ডায় তোমরা খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকো না।

টোংকস প্রখর দৃষ্টিতে দেখলো ওরা তিনজনে থ্রি ব্রুমস্টিকের ভেতরে গেলো। হ্যারি ভেতরে ঢুকেই উত্তেজিত হয়ে বললো, ও সিরিয়াসের জিনিসপত্র সব ঠিক সময়মতো সরিয়েছে!

আমি জানি হ্যারি, কিন্তু তুমি দোকানে সোরগোল করো না। সকলে তোমার দিকে তাকাচ্ছে, হারমিওন ফিসফিস করে বললো। যাও ওই খালি চেয়ারে বসো, আমি তোমার জন্য ড্রিংকস নিয়ে আসছি।

হারমিওন এসে দেখলো হ্যারি তখনো রাগে ফুঁসছে ৷ ও টেবিলের ওপর তিন বোতল বাটার বিয়ার রাখলো।

হ্যারি বললো, মানগাসকে আমাদের অর্ডার ধরে শাস্তি দিতে পারে না? ওর চুরি করা বন্ধ করতে পারে না? ওকে হেড কোয়ার্টারে রাখা ঠিক হবে না। ওর চুরি করা বন্ধ করতেই হবে।

হারমিওন ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে চাপা গলায় বললো স-অ! তারপর চারদিকে তাকিয়ে দেখলো কেউ ওদের দেখছে কি না। খুব কাছেই কিছু মায়াবী জাদুকর বসে রয়েছে। ওদের দৃষ্টি হ্যারির ওপর। দৃষ্টিতে দারুণ কিছু জানার উৎসাহ। খুব কাছেই জাবিনি একটা পিলারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হ্যারিকে দেখছে। সে বললো, হ্যারি আমিও খুব শঙ্কিত। আমি জানি সিরিয়াসের যা কিছু আছে সবই তোমার, সেইগুলো ও মেরে দিয়ে বিক্রি করছে।

হ্যারি বাটার বিয়ারে মুখ দিলো। সামান্য ক্ষণের জন্য ভুলে গেল, ও গ্রিমন্ডপ্লেসের মালিক।

হ্যারি বললো, হ্যাঁ জানি ভালো করেই জানি। এ জন্যেই ও আমাকে দেখে খুশি হয়নি বরং ভড়কে গিয়েছিলো, বিষয়টি ডাম্বলডোরকে বলতে হবে। মানগাস একমাত্র ডাম্বলডোরকে ভয় পায়।

খুব ভালো কথা, হ্যারি একটু শান্ত হয়েছে দেখে হারমিওন স্বস্তি পেল এবং বনের দিকে তাকিয়ে বললো, রন তুমি কি দেখছো বল তো?

কিছু না, রন বারের দিক থেকে ঝট করে মুখ ফিরিয়ে নিলো। কিন্তু হ্যারি খুব ভালো করেই জীনে রন অপূর্ব দেহশ্রী ও সুন্দরী বারমেইড ম্যাডাম রসমেরতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে, বহুদিন থেকে ওর ওপর দুর্বলতা রনের।

যাক, ফায়ার হুইশকি ছাড়া অন্য কিছুর কথা ভাবছি না, হারমিওন তৃষ্ণার্ত হয়ে বললো।

রন মাঝে মাঝে সুযোগ পেলেই রসমেরতার দিকে তাকাচ্ছে। হ্যারি সিরিয়াসের কথা ভাবছিলো, রুপার গবলেটস সিরিয়াস তেমন পছন্দ করতেন না

তা হ্যারি জানে। হারমিওনের চোখ মাঝে মাঝে পড়ে যাচ্ছে বারগার্ল আর রনের মুখের দিকে।

হ্যারি গ্লাসের শেষ বিন্দু পান করার সঙ্গে সঙ্গে হারমিওন চেয়ার ছেড়ে উঠে বললো, এবার হোগার্টসে ফিরলে কেমন হয়, কি বলো? ওরা রাজি হলো।

যতো সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে তত ঠান্ডা বাড়ছে। তাই ওরা হাতে দস্তানা পরলো, গরম সোয়েটারে বোম লাগিয়ে রোবস ভালো করে বেঁধে, মাফলার দিয়ে মুখ গলা ঢেকে বাইরে এলো। চোখে পড়লো হাইস্ট্রিট দিয়ে কেটি বেল তার এক বন্ধুর সঙ্গে ফিরে যাচ্ছে। ঠান্ডা নরম কাদামাখা রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে হ্যারির জিনির কথা মনে পড়লো। ওকে ডিনের সঙ্গে মাদাম পাচ্ছিফুটসের চায়ের দোকানে বসে থাকতে দেখেছিলো। সুইরলিং স্ট্রিটে এসে কোন মতে হাঁটতে হাঁটতে ওরা হোগার্টসে চললো।

খানিকটা হাঁটার পর হ্যারির কানে ভেসে এলো কেটি বেল আর ওর বন্ধুর কথাবার্তা। আস্তে আস্তে বললেও ঝড়ো বাতাস ওর কানে পৌঁছে দিতে লাগলো ওদের আলাপ-আলোচনা। বেশ পরিষ্কার শুনতে পেলো ওদের আলাপ। হ্যারি ওদের আবছা আবছা চেহারার দিকে বাঁকা চোখে তাকালো। ওরা কোনো একটি বিষয় নিয়ে তর্ক করছিলো। কেটি ওর বন্ধুর হাত ধরে হাঁটছিলো।

লিনে সে সম্বন্ধে তোমার কোনো কিছু বলার নেই কেটি বললো।

বড় রাস্তার শেষ প্রান্তে ওরা একটি গলিপথ ধরলো। তখনো প্রবলভাবে তুষারপাত, ঠাণ্ডা ঝড়ো হাওয়া সুঁচের মতো গায়ে বিধছে। হ্যারির চশমার কাঁচ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। ও দস্তানা পরা হাত উঠিয়ে চশমার কাঁচ সাফ করতেই চোখে পড়লো, লিন্নে হাত বাড়িয়ে কেটির হাত থেকে একটা প্যাকেট কেড়ে নিতে চাইছে। কেটি ধরতে না দিয়ে সামান্য পিছু হটতেই হাত থেকে প্যাকেটটা ভেজা রাস্তায় কাদামাখা জলে পড়ে গেল।

সঙ্গে সঙ্গে কেটি শূন্যে উঠে গেল। হাত দুটো ডানার মতো দুধারে মেলে ধরলো। যেন আরো ওপরে উঠে উড়তে চায়। দেখতে দেখতে হ্যারির মনে হলো ব্যাপারটা সাধারণ নয়, অতিপ্রাকৃত-ভূতুড়ে। তীব্র ঝড়ো হাওয়াতে ওর চুলগুলো উড়ছে, চোখ দুটো বন্ধ, মুখটা সম্পূর্ণ ফাঁকা ভাবলেশহীন। হ্যারি, রন, হারমিওন আর লিনে দাঁড়িয়ে থেকে কেটিকে দেখতে লাগল।

তারপর জমি থেকে ছফিট উঁচুতে হাওয়াতে দাঁড়িয়ে কেটি হঠাৎ অসম্ভব এক তীব্র আর্তনাদ করে উঠলো। ওর দুচোখ খুলে গেল কিন্তু ও চোখের সামনে যা কিছু দেখছে, অথবা যা কিছু অনুভব করছে, সব কিছুই যেন নিদারুণভাবে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে চলেছে। ও তীক্ষ্ণ আর্তনাদ করে চললল। লিনেও ঠিক ওরই মতো

আর্তনাদ শুরু করলো, ও কেটির গোড়ালি ধরে টানলো, ওকে মাটিতে নামাবার চেষ্টা করতে লাগলো। হ্যারি ও রন ওকে সাহায্য করার জন্য ছুটে গেল। ধরতে পারলো কিন্তু ও এতো বেশি পাক খাচ্ছে যে ওকে ধরা অসম্ভব মনে হলো। অনেক চেষ্টা করে ওরা কেটিকে টেনে নামিয়ে জোর করে শুইয়ে দিলো। কিন্তু কেটি এমনভাবে তাকালো যেনো ওদের কাউকে সে চেনে না। হ্যারি চারদিকে তাকালো, সব শুনশান।

যে যেমন আছ তেমনি থাকো! ও খুব জোরে জোরে বললো, ঝড়ো গুম গুম শব্দের হাওয়াতে। আমি তোমাদের সাহায্যের জন্য যাচ্ছি। কেটি তখনো রন, হারমিওনের ওপর উপুড় হয়ে পড়ে কাত্রাচ্ছে।

ও দ্রুত স্কুলের দিকে ছুটতে লাগল। কেটি কেন এমন অস্বাভাবিক কাজ করছে বুঝতে পারলো না। যে গলিটা ধরে স্কুলের দিকে ছুটছিলো সেটা একটু বেঁকে গেছে। বাঁক নিতেই মনে হলো একটা প্রকাণ্ড বড় ভালুকের গায়ে ধাক্কা খেয়েছে। সেই ধাক্কায় সে ঝোঁপের ধারে পড়ে গেল। উঠে দাঁড়িয়ে দেখলো যার সাথে ধাক্কা খেয়েছে সেটা ভালুক নয়, হ্যাগ্রিড।

হ্যাগ্রিড! ও হাঁফাতে হাঁফাতে ঝোঁপের ধার থেকে উঠে এসে বললো।

হ্যারি তুমি! হ্যাগ্রিড বললো। এই মাত্র গ্রপের সঙ্গে দেখা করে বাড়ি ফিরছি, ও এখন ভালই আছে।

অভিশাপ দিয়েছে বা অন্য কিছু করেছে সেখানে হ্যাগ্রিড? হ্যারি বললো।

কি, কি বললে? হ্যাগ্রিড তীব্র হাওয়া থেকে উড়ে আসা হ্যারির কথা মুখ নামিয়ে শুনে বললো।

হ্যারি আবার বললো, কেউ সেখানে অভিশাপ দিয়েছে। অভিশাপ, কে অভিশাপ দিয়েছে? রন, হারমিওন কে? না, ওদের কেউ নয়। কেটি, কেটি বেল, ওই দিকে।

সেখানে কেটিবেল যন্ত্রণায় ছটফট করছে। রন, হারমিওন আর ওর বন্ধু ওকে ধরে রাখতে পারছে না। হ্যারি হ্যাগ্রিডকে নিয়ে সেখানে ছুটলো। হ্যারি দেখলো তখনো কেটি ছটফট করছে আর ওরা তিনজনে ওকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে।

সরে যাও তোমরা! হ্যাগ্রিড খুব জোরে বললেন। লিনে ওকে তুমি ধরে থাকো! লিনে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো, জানি না ওর কি হয়েছে।

হ্যাগ্রিড নিচু হয়ে কেটিকে কোলে তুলে নিয়ে স্কুলের দিকে ছুটলেন। সেকেন্ডের মধ্যে ওর কাতরতা বন্ধ হয়ে গেল। শব্দ শুধু শীতের ঝড়ো হাওয়ার।

হারমিওন কেটির বন্ধুর কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো।

তুমি লিনে, তাই না? মেয়েটি ঘাড় নাড়লো। দুর্ঘটনাটা কি হঠাৎ হলো, অথবা…?

প্যাকেটটা ছিঁড়ে যাবার পর, লিনে ব্রাউন কাঁদতে কাঁদতে পেপারে মোড়া অল্প একটা খোলা প্যাকেটের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললো। ওর ভেতর থেকে সবুজ কিছু জিনিস চক্ করছে। রন প্যাকেটটা তুলতে গেলে ওর হাতটা টেনে নিয়ে হ্যারি বাধা দিলো।

ওতে হাত দেবে না।

হ্যারি খোলা স্থান থেকে দেখলো প্যাকেটে কারুকার্য করা সাদা উজ্জ্বল পাথর খচিত একটা নেকলেস।

আমি তো ওটা আগে কোথাও দেখেছি, হ্যারি বললো, নেকলেসটার দিকে তাকিয়ে। বোরগিন অ্যান্ড বার্কসে ডিসপ্লে করা ছিলো বেশ কিছুদিন আগে। লেবেলটায় লেখা, এটা কার্স করা আছে। কেটি নিশ্চই এতে হাত লাগিয়েছিল। কথাটা বলে ও লিনের দিকে তাকালো। তখনো ও থর থর করে কাঁপছে। কেটি এটা পেল কোথা থেকে?

সেটা নিয়েই তো আমাদের তর্ক হচ্ছিলো, ও বাথরুমে গিয়েছিলো থ্রি ব্রুমস্টিকে। ওখানে একজন মহিলা তাকে প্যাকেটটা দিয়ে বলছে, হোগার্টসে একজনকে পৌঁছে দিতে, যখন সে কথাগুলো আমাকে জানালো তখন তাকে অদ্ভুত দেখাচ্ছিল। মনে হয় ওকে ইমপেরিয়াস করা হয়েছিল, আমি ঠিক তখন বুঝতে পারিনি।

লিনে আবার ফোঁপাতে লাগলো হ্যারি ওর পিঠে হাত দিয়ে সান্ত্বনা দিতে লাগলো।

মহিলাটি বলেনি কে ওকে দিতে বলেছিলো, লিনে?

আমি ওকে বলেছিলাম, তোমার ওটা নেয়া উচিত হয়নি, কিন্তু সে আমার কথা শুনতে চায়নি, তারপর আমি জোর করে প্যাকেটটি ছিনিয়ে নেয়ার সময় প্যাকেটটা হাত থেকে পড়ে যায়।

হারমিওন বললো, চলো আমরা স্কুলে যাই। ওখানে গিয়ে জানতে পারবো আসল ব্যাপারটা। হারমিওন তখনো লিনেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাঁটছিলো।

হ্যারি কোন কিছু তোয়াক্কা না করে গলা থেকে মাফলারটা খুলে প্যাকেটটা জড়িয়ে তুলে নিলো। এটা ম্যাডাম পমফ্রেকে দেখাতে হবে।

সারা রাস্তা হ্যারি একটা কথাও বলেনি। স্কুলের মাঠে পৌঁছে ও বললো, ম্যালফয় অবশ্যই ব্যাপারটা জানে। চার বছর আগে ওটা বোরগিনের দোকানে ছিলো। আমি ওকে সেদিন নেকলেসটা দেখতে দেখেছিলাম আড়াল থেকে। ওর বাবা ছিল ওর সাথে, নিশ্চয়ই তোমাদের সেদিনের ঘটনাটা মনে আছে, সে সময়ই মনে হয় সে ওটা কিনেছিল।

আমি, আমি ঠিক দেখিনি হ্যারি, রন চেপে চেপে বললো। হাজার হাজার লোক তো বোরগিন অ্যান্ড বার্কসে যায়, তাছাড়া ওই মেয়েটি তো বলেছে, মেয়েদের বাথরুমে কেটি ওটা পেয়েছে।

ও বলেছিলো ওটা হাতে নিয়ে বাথরুম থেকে ফিরেছিলো। একবারও তো বলেনি ওটা বাথরুম থেকে পেয়েছে।

রন চাপা গলায় বললো, ম্যাকগোনাগল!

হ্যারি দেখলো পাথরের সিঁড়ি দিয়ে ম্যাকগোনাগল নিচে নামছেন। খুব সম্ভব ওদের সঙ্গে কথা বলতে আসছেন। হ্যাগ্রিড বললেন, তোমরা চারজনেই তো জানো কেটির ব্যাপারটা। তোমরা আমার ঘরে এসো তো, আমি বিস্তারিত শুনতে চাই, পটার তোমার হাতে ওটা কি?

হ্যারি বললো, এটা সেই জিনিস, যা ও ছুঁয়েছিল।

গুড লর্ড, ম্যাকগোনাগল নেকলেসের প্যাকেটটা হ্যারির হাত থেকে নিয়ে বললেন।

না ফিলচ, ওরা এখন আমার সাথে আছে। হ্যারি পেছনে ফিরে দেখলো ফিলচ হন্তদন্ত হয়ে আসছেন। সিক্রেসি সেনসর উঁচু করে ধরে রেখেছেন। ম্যাডাম ম্যাকগোনাগল প্যাকেটটা ফিলচকে দিয়ে বললেন, শোনো এই প্যাকেটটা এখন তুমি প্রফেসর স্নেইপকে দেবে। আর ওনাকে নেকলেসটা ছুতে মানা করবে। যেভাবে আছে সেভাবে নিয়ে যাও।

ওরা বরফ শীতল ম্যাকগোনাগলের ঘরে ঢুকলো। বাইরে বরফ পড়ছে, ঠান্ডা হাওয়ার দাপটে জানালার কাঁচগুলো মনে হয় যেন ভেঙ্গে পড়বে।

ওরা ম্যাকগোনাগলের সামনাসামনি বসলো। লিনে তখনও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে।

হ্যাঁ, এবার আসল ঘটনাটা বলো আমাকে। লিনে তেমনিভাবেই ফোঁপাতে ফেঁপাতে যা ঘটেছিল প্রফেসর ম্যাকগোনাগলকে বললো।

ম্যাকগোনাগল সব শোনার পর গম্ভীর হয়ে বললেন, লিনেকে নিয়ে তোমরা হাসপাতালে যাও। যা আমাকে বললে সব মাদাম পমফ্রেকে খুলে বলবে, বুঝলে? মাদাম পমফ্রে খুব সম্ভব অ্যান্টিশক চিকিৎসা করবেন।

লিনে চলে গেলে ম্যাকগোনাগল, হ্যারি রন হারমিওনের সাথে কথা বলবেন।

কেটি নেকলেসটা ছোঁবার পর হলোটা কী?

ছোঁবার পর ও হঠাৎ শূন্যে ভাসতে লাগলো। রন বা হারমিওন কিছু বলবার আগেই বললো হ্যারি। তারপর আতঙ্কে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো, এবং জ্ঞান হারালো। প্রফেসর আমি কি প্রফেসর ডাম্বলডোরের সঙ্গে দেখা করতে পারি?

পারবে; কিন্তু প্রফেসর ডাম্বলডোর তো সোমবার ফিরবেন, সামান্য আশ্চর্য হয়ে গিয়ে প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন।

নেই? হ্যারি হতাশ হয়ে বললো।

হ্যাঁ, তিনি নেই! প্রফেসর ম্যাকগোনাগল খসখসে গলায় বললেন। এই সাংঘাতিক বিষয়ে যা বলার আমি নিশ্চিত যে আমাকে বলতে পার।

প্রফেসর, আমার মনে হয় ডেকো ম্যালফয় কেটিকে নেকলেসটা দিয়েছে।

হ্যারির দুপাশে দুজন বসেছিলো। হ্যারিকে ম্যালয়ের নাম বলতে শুনে রন ঘন ঘন নাক মুছতে লাগলো। আর হারমিওন একটু দূরে বসে পা ঘষতে লাগলো।

খুবই সাংঘাতিক অভিযোগ পটার, ম্যাকগোনাগল বললেন।

মনে হলো যেন খুশি হননি কথাটা শুনে। সামান্য সময় নীরব থেকে বললেন, তোমার কাছে কোনো প্রমাণ আছে?

না, হ্যারি বললো। কিন্তু…। হ্যারি ম্যালয়কে অনুসরণ করার পর যা যা ঘটেছিল সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে বললো।

কথাগুলো শোনার পর ম্যাকগোনাগল কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেলেন।

কী বললে, ম্যালফয় একটা কিছু বোরগিনের কাছে মেরামতের জন্য নিয়ে গিয়েছিলো?

তা নয় প্রফেসর। ও বোরগিনকে জিজ্ঞেস করেছিলো, কেমন করে মেরামত করা যায়। ওর কাছে সারতে দেবার জিনিসটা ছিলো না। সেটা আসল ব্যাপার নয়, বিষয়টি হচ্ছে ও সেখান থেকে কিছু কিনেছিলো।

তুমি ম্যালফয়কে ওই একই রকম প্যাকেট নিয়ে ফিরতে দেখেছিলে? না প্রফেসর, ওটা সে বোরগিনের কাছে রাখতে বলেছিলো।

হারমিওন বললো, কিন্তু হ্যারি বোরগিন ওটা ওকে ফেরত নিয়ে যেতে বলেছিলো। ম্যালফয় বলেছিলো, না।

নেয়নি কারণ ও নেকলেসটা স্পর্শ করতে চায়নি, হ্যারি বললো।

ও বলেছিলো, রাস্তায় ওটা আমি হাতে করে নিয়ে যেতে পারবো না, হারমিওন বললো। রন বললো, ও হ্যাঁ ও পরে একা এসে নিয়ে গিয়েছিলো হয়তো।

হারমিওন অসন্তোষের সুরে বললো, রন তুমি অযথা জলঘোলা করছো। ও ইচ্ছে করলে প্যাকেটটা ক্লোকের ভেতরের পকেটে করে রেখে নিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু তা নেয়নি। এমন একটা জিনিস ও নিয়ে যেতে চায়নি সেটা ওজনে বেশি ও নিয়ে যাবার সময় সকলের চোখে পড়বে বলে। তোমার হয়তো মনে আছে আমি বোরগিনকে নেকলেসের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম, মনে আছে তো? ম্যালফয় ওর জন্য কি রেখে দিতে বলেছে তা দেখার জন্য আমি যখন ভেতরে গিয়েছিলাম তখন আমি নেকলেসটা ওর দোকানে দেখেছিলাম। বোরগিন আমাকে দামও বলেছিলো। ও কিন্তু আমাকে বলেনি, ওটা বিক্রি হয়ে গেছে বা অন্যরকম কিছু।

বোরগিন তোমার উদ্দেশ্য বুঝতে বেশি সময় নেয়নি, মাত্র পাঁচ সেকেন্ডে! যাহোক ও তোমাকে কিছু জানাতে চায়নি।

ম্যাকগোনাগল বললেন, অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু পটার শুধু তোমার কথার ভিত্তিতে আমরা তো কিছু করতে পারি না, প্রমাণ, প্রমাণ চাই। আমরা বুঝতে পারলাম ও দোকানে গিয়েছিলো নেকলেসটা সম্ভবত কিনতে। এই রকম একশটা মানুষও কিনতে যেতে পারে।

এই কথাটাই তো বলতে চাই, রন বললো। যাহোক এই বছর এখানে আমরা কড়া রকমের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের নলেজের বাইরে নেকলেসটা এখানে চলে এসেছে আমি বিশ্বাস করি না।

কিন্তু…

হ্যাঁ, আরো একটা কথা ম্যাকগোনাগল বললেন (আর কিছু বলতে চান না এমন মুখোভাব) মিস্টার ম্যালফয় আজ হগসমিডে উপস্থিত ছিলো না।

হ্যারি নিজের বক্তব্য পরিষ্কার করতে চাইলো। আপনি কেমন করে জানলেন প্রফেসর?

কারণ ও আমার সঙ্গে ডিটেনশনে ছিলো। ও ট্রান্সফিগারেশনের হোমওয়ার্ক শেষ করতে পারেনি, পরপর দুবার। তোমার সন্দেহের জন্য অশেষ ধন্যবাদ, পটার, উনি বললেন। কিন্তু এখন আমাকে হসপিটাল উইং-এ গিয়ে দেখে আসতে হবে কেটিকে, তোমাদের সকলকেই গুড-ডে।

কথাটা বলে ম্যাকগোনাগল তার অফিসঘরের দরজা খুললেন, ওদের আর কিছু বলার সুযোগ রইলো না।

হ্যারি প্রথম থেকে রন ও হারমিওনের ওপর ক্ষুব্ধ ম্যাকগোনাগলের পক্ষ নেয়ার জন্য। আবার ও ঘটনাটার সূত্রপাত করলো ঘরের বাইরে এসে।

তাহলে তুমি বললে, কেটিকে নেকলেসটা পৌঁছে দিতে বলেছিলো? কমনরুমে যেতে যেতে রন বললো।

একমাত্র ঈশ্বর জানেন, হারমিওন বললো। সে যেই হোক না কেন, অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছে। প্যাকেটটা খুললে নেকলেসটায় হাত লাগতোই।

অনেকেরই হতে পারতো, হ্যারি বললো। যেমন ডাম্বলডোর, ডেথ ইটাররা তার হাত থেকে নিষ্কৃতি পেলে খুশি হতো। উনি তাদের টপ টার্গেট! অথবা স্লাগহর্ন। ভোল্ডেমর্ট তাকে পেতে অনেক চেষ্টা করেছেন, উনি ডাম্বলডোরের পক্ষ নেওয়ায় ভোল্ডেমর্ট নিশ্চয়ই খুশি হবেন না। অথবা…।

অথবা তুমি, হারমিওন বললো, ওকে খুবই উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে।

কেটির ঠিক পেছনে আমি দাঁড়িয়েছিলাম, হয়তো ওটা আমাকে দিতে চেয়েছিল। থ্রি ব্রুমস্টিক থেকে বেরিয়ে বরাবরই তো ওর পেছনে ছিলাম। হোগার্টসের বাইরে ওটা দেয়া সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ ছিল, কারণ ফিলচের বাইরে যাওয়া, বা ভেতরে আসার সময় প্রত্যেককেই সার্চ করার কথা। তবে একটা কথা আমার মাথায় ঢুকছে না ম্যালফয় কেন ওকে সেটা ক্যাসেলের ভেতর নিয়ে যেতে বলেছিলো?

তাছাড়া, ম্যালফয় তো হগসমিডে ছিল না! হারমিওন বললো, কথাটা বলে হতাশ হয়ে মেঝেতে পা ঠুকলো।

সোজা কথা, ও একজন সাহায্যকারী চেয়েছিলো, হ্যারি বললো।

ক্র্যাবে বা গোয়েল অথবা এমন একজন ডেথ ইটারকে ব্যবহার করতে থাকতে পারে যে ওই দুজনের চেয়ে ভালভাবে কাজটি করতে পারে।

বন ও হারমিওন হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললো, ওর সঙ্গে তর্ক করা নিরর্থক। ফ্যাট লেডির কাছে গিয়ে হারমিওন বললো, ডিলি-আউট।

পোর্ট্রেট সরে গেলো। ওরা কমনরুমে ঢুকলো। কমনরুমে লোকজনের খুব ভিড়। ভেজা পোশাক-আশাকের গন্ধ। দেখে মনে হয় আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে অনেকেই হগসমিড় থেকে একটু তাড়াতাড়ি ফিরেছে। কেটির ব্যাপার হয়তো ওরা জানে না, ওরা সকলে নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।

রন একটা প্রথম বর্ষের ছেলেকে আর্মচেয়ার থেকে হটিয়ে দিয়ে সেটা ফায়ারপ্লেসের কাছে টেনে এনে বসতে বসতে বললো, আক্রমণটা মোটেই তেমন যুৎসই হয়নি। এটুকু বলা যায় নিচ্ছিদ্র পরিকল্পনা ছিল না।

আরে ম্যালফয় কবে থেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ হলো? হ্যারি বললো। হারমিওন ও রন কেউই ওর প্রশ্নের জবাব দিলো না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *