০৮. স্নেইপ ভিক্টোরিয়স

০৮. স্নেইপ ভিক্টোরিয়স

হাঁটা-চলাতো দূরের কথা হ্যারি অদৃশ্য অবস্থায় কামরার মেঝেতে পড়ে রইলো। ওর নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে ওকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। করিডর দিয়ে যাতায়াতের পদশব্দ শুনতে পাচ্ছে… তাদের কথাও। ওর মনে হলো লন্ডনে ট্রেনটা ফেরত যাবার সময় নিশ্চয়ই কেউ কামরা চেক করতে আসবে তখন ওকে না দেখতে পেলেও তার পা ওর গায়ে লাগবে… এটাই ওর সবচেয়ে বড়ো আশা।

ও শুয়ে শুয়ে ভাবলো–পৃথিবীতে যদি কাউকে ও সবচেয়ে বেশি ঘেন্না করে। সে হলো ম্যালফয়। রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে ওর হা করা খোলা মুখের ভেতর চলে যাচ্ছে তাও রোধ করার ক্ষমতা নেই। কি অদ্ভুত পরিস্থিতি! একটু পরে ও আর মানুষের কথা, পদশব্দ শুনতে পেলো না। সকলেই বাইরে গভীর অন্ধকার প্লটফরমে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

হ্যারি ভাবলো, রন আর হারমিওন স্টেশনে ওকে দেখতে না পেয়ে চলে যাবে হোগার্টসে। তারপর গ্রেট হলে গিয়ে গ্রিফিন্ডর টেবিলে ওকে দেখতে না পেয়ে অপেক্ষা করবে এবং বার বার দেখে যাবে গ্রেট হল আর টেবিল। যখন ওরা নিশ্চিত হবে ও নেই তখন হ্যারি লন্ডনের অর্ধেক রাস্তায় চলে যাবে।

অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে হ্যারি কথা বলার চেষ্টা করলো, কিন্তু মুখ থেকে একটি শব্দও বেরোলো না। তারপর ওর মনে পড়লো কিছু জাদুকর আছেন, যেমন ডাম্বলডোর কথা কইতে না পারলেও স্পেল কার্যকরী করতে পারেন, তখন ও ওর জাদুদণ্ডটা ধরতে চেষ্টা করলো। কিন্তু জাদুদণ্ডটা ওর হাত থেকে ছিটকে অদূরে পড়ে রয়েছে। ও মনে মনে বলতে লাগলো

অ্যাকিও ওয়ান্ড! কিন্তু যে অবস্থায় দণ্ডটি ছিলো সেই অবস্থাতেই রইলো।

ও ভাবলো ট্রেন চলার সময় বিরাট লেকের ধারে বড় বড় গাছের মর্মরধ্বনী শুনতে পাবে, হয়তো বহু দূর থেকে একটা পেঁচার তীব্র ডাক… কিন্তু নীরব–নিথর। কিন্তু ট্রেন ছাড়বার আগে কেউ তো এসে কামরা সার্চ করলো না। অথবা শুনতে পেলো না কোনো আতঙ্কিত স্বর, হ্যারি পটার কোথায় গেলো!

ওর চতুর্দিক হতাশা এসে ওকে ঘিরে ফেললো–ও চোখ বুজে কল্পনা করলো, থেস্টালে টানাতে গাড়ি করে অনেক ছাত্রছাত্রী হোগার্টসে যাচ্ছে, অন্ধকারকে ভেদ করে সকলে হাসছে, গান গাইছে, কথা বলছে। রন আর হারমিওন কথা বলে চলেছে ক্যারেজে বসে। ম্যালফয় ও বন্ধুদের সঙ্গে আলাদা একটা ক্যারেজে চেপে আনন্দ-হাসিতে ফেটে পড়ছে। বলছে হ্যারিকে শাস্তি দেওয়ার কাহিনী।

ট্রেনটা হঠাৎ দুলে উঠলো। হ্যারি চিৎপটাং হয়ে শুয়ে ছিলো। ট্রেনটা দোলার সঙ্গে সঙ্গে ওকে পাশ ফিরিয়ে দিলো। সিলিং-এর বদলে ও নিজেকে দেখতে পেলো ধূলি-ধূসরিত বেঞ্চির তলায়। মেঝেটা কাঁপতে শুরু করলো… ইঞ্জিনের বাঁশি বেজে উঠলো। এক্সপ্রেস ট্রেন একটু পর হোগার্টস স্টেশন ছেড়ে কিংক্রস স্টেশনে ফিরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশ্চর্য একজনও কামরাতে ঢুকলো বা নিয়মমাফিক চেক করতেও আসলো না।

তারপর ওর মনে হলো গা থেকে অদৃশ্য হবার ক্লোকটা সরে গেলো। কে যেনো কানের কাছে বললো, হ্যারি… তুমি!

তারপরই উজ্জ্বল লাল আলোতে কামরাটা উদভাসিত হলো, হ্যারির শরীর শিথিল হয়ে গেলো। একটু একটু শরীরে ক্ষমতা ফিরে আসতে শুরু করলে ও ভালোভাবে বসতে পারলো। হাতের পেছন দিয়ে নাক ফেটে যে রক্ত পড়ছিলো তা মুছে মাথা তুলে দেখলো টোংকসের হাতে ওর অদৃশ্য হবার ক্লোকটা।

ট্রেনের কামরার কাঁচগুলো ইঞ্জিনের বাষ্প এসে ঝাপসা করে দিলো, মন্থর গতিতে ট্রেন চলতে শুরু করলো। দেরি করো না হ্যারি, দাঁড়াও… ট্রেন থেকে আমাদের লাফ দিতে হবে… গতি বাড়লে নামা সম্ভব হবে না।

এসো প্লাটফরমে লাফিয়ে পড়ি।

টোংকস করিডর ধরে দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুলে ফেললো। হ্যারিও দাঁড়িয়েছে টোংকসের পিছনে। ট্রেন তখন বেশ দ্রুত চলছে। ঝুঁকি নিয়েই ওরা চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়লো। ধুলো ঝেড়ে উঠে তাকিয়ে দেখলো হোগার্টস এক্সপ্রেস ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে ছুটছে… তারপর আর দেখা গেলো না।

বাইরের ঠাণ্ডা হাওয়াতে হ্যারি ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগলো। নাকও ব্যথা করছে তার। টোংকস হ্যারির অদৃশ্য হওয়ার ক্লোকটা ফেরত দিয়ে বললো! এমন কাণ্ড কে করেছে?

ড্রেকো ম্যালফয়, তিক্ত স্বরে হ্যারি বললো। আমাকে বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ।

ঠিক আছে…, গম্ভীর মুখে টোংকস বললো। অন্ধকার পাটফরম… টোংকসকে একইরকম লাগছে। ব্যারোতে যেমন দেখেছিলো তেমনই। তুমি যদি চুপ করে দাঁড়াও তো আমি তোমার নাক ঠিক করে দিতে পারি।

হ্যারির ইচ্ছে হোগার্টসে পৌঁছে মাদাম প্রমফ্রের কাছে গিয়ে হিলিং স্পেল দিয়ে সারিয়ে নেবে। মাদাম পামফ্রের ওপর দারুণ বিশ্বাস ওর।

এপিসকে টংকস বললো।

হ্যারির নাকটা খুব গরম হয়ে গেলো, তারপরই ঠাণ্ডা। ও একটা হাত তুলে আলতোভাবে নাকে লাগালো… তেমন ব্যথা আছে বলে মনে হলো না। তাহলে টোংকস ক্ষতটা ঠিক করে দিয়েছে।

তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!

তুমি তোমার ক্লোকটা পিঠে ঝুলিয়ে নিতে পারো, আমরা হেঁটেই স্কুলে যেতে পারি। মুখে টোংকসের হাসি নেই। হ্যারি ক্লোকটা পিঠে ঝোলাতেই, টোংকস হাত তুলে দোলালো। হাত দোলাবার সাথে সাথে দুধ সাদা রঙের একটা চারপেয়ে জম্ভ সামনে এসে দাঁড়ালো আর অন্ধকারের মধ্যে বিদ্যুতের গতিতে ছুটে চলে গেলো।

তুমি কি পেট্রোনাস ব্যবহার করলে, হ্যারি জিজ্ঞেস করলো, ও ডাম্বলডোরকে এইরকমভাবে সংবাদ পাঠাতে দেখেছে।

হ্যাঁ আমি ক্যাসেলে খবর পাঠালাম যে তোমাকে খুঁজে পাওয়া গেছে, না পাওয়া পর্যন্ত সকলেই চিন্তা করতো, আর দেরি করা ঠিক হবে না।

যে রাস্তাটা স্কুলের দিকে গেছে সেই রাস্তা ধরে ওরা চললো। তুমি আমার খোঁজ পেলে কেমন করে?

আমি দেখলাম তুমি ট্রেন থেকে নামোনি, আর আমি জানতাম তোমার কাছে অদৃশ্য হয়ে যাবার ক্লোক আছে। ভাবলাম কোনো কারণবশত তুমি লুকিয়ে আছে। যখন দেখলাম ওই কম্পার্টমেন্টের জানালার রাইডগুলো ফেলা রয়েছে তখন ভাবলাম ট্রেনের ভেতরে গিয়ে চেক করা উচিত।

হ্যারি বললো, তুমি এখানে কেন এসেছে?

আমি এখন হগসহেডে ডিউটি করছি, অর্ডার আছে স্কুলকে অতিরিক্ত প্রোটেকশন দেবার, টোংকস বললো।

তুমি একা, না এই কাজে আর কেউ আছে? আমি, প্রাউডফুট, সেভেজ আর ডলিশ এখানে আছি ভলিশ, যে গত বছরে ডাম্বলডোরকে এ্যাটাক করেছিল। ঠিক বলেছো।

ওরা অন্ধকার সরু রাস্তাটা ধরে চললো। রাস্তাটা ক্যারেজ চলার জন্য নতুন করে করা হয়েছে। হ্যারি আড়চোখে ঝোলানো ক্লোকের ফাঁক দিয়ে টোংকসকে দেখলো। হ্যারির মনে আছে গত বছরে টোংকসের সঙ্গে অনেক ঠাট্টা-তামাশা করেছিলো (মাঝে মাঝে টোংকস রেগে যেতো), ঠাট্টা করলে ও হাসতে, জোকস করতো। এখন মনে হচ্ছে সে একজন বয়স্ক, বেশ গম্ভীর ও কাজের উপযোগী। তাহলে মিনিস্ট্রিতে যেসব কাণ্ডকারখানা হয়েছিলো তারই ফল? ওর মনে পড়ে গেলো কথায় কথায় হারমিওন বলেছিল মাঝে মাঝে সিরিয়সের মৃত্যুর জন্য ওকে সান্তনা দিতে। ওকে বোঝাতে সিরিয়সের মৃত্যু ওর জন্য হয়নি, কিন্তু হ্যারি তা করতে পারেনি। সিরিয়সের মৃত্যুর জন্য ও কোন ক্রমে দায়ি নয় (ওর থেকেও কম); কিন্তু সেদিন ওর সঙ্গে সিরিয়সের প্রসঙ্গ তুলতে ভালো লাগলো না। মনে হলো না তোলাই ভালো। ওরা দুজনে নীরবে শীতের রাতে গভীর অন্ধকারের মধ্য দিয়ে ক্যাসেলে চললো। টোংকসের লম্বা ক্লোক পথের ওপোর পড়ে ফিস ফিস শব্দ করতে লাগলো চলার সময়।

হ্যারি বরাবরই ক্যারেজে চেপে ক্যাসেলে যায়। হগসমিড স্টেশন থেকে হোগার্টস কতোটা দূর তাই ও জানে না। বেশ খানিকটা হাঁটার পর ও অবশেষে গেটের দুপাশে বড়ো বড়ো দুটো পিলার দেখতে পেলো। দুটি পিলারের মাথাতে ডানাওয়ালা বরাহ। ওর খুব শীত লাগছে তারই সঙ্গে প্রচণ্ড ক্ষিধে। ও যতো শিগগির পারে ভাবলেশহীন টোংকসের হাত থেকে ছাড়া পেতে চাইলো। গেটের কাছে গিয়ে গেট খুলতে গিয়ে দেখলো বিরাট গেট শেকল দিয়ে বাঁধা।

এলোহোমরা

হ্যারি আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে বললো, জাদুদণ্ড তালার কাছে এগিয়ে দিয়ে। কিন্তু গেটের তালা খুললো না।

ওটা খুলবে না হ্যারি… ডাম্বলডোর গেটটা জাদুমন্ত্র দিয়ে বন্ধ করে রেখেছেন। হ্যারি চারদিকে তাকালো।

আমি তাহলে পাঁচিলে উঠতে পারি, হ্যারি টোংকসকে ভেতরে যাওয়ার উপায় বাতলালো।

না পারবো না, টোংকস সোজাসুজি বললো। সব জায়গা অ্যান্টি ইট্রডার জিঙ্কস (বাইরের কেউ যাতে না আসতে পারে তার জন্য) করা আছে। এই বছরে সিকিউরিটি সম্বন্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হ্যারি ভেতরে ঢোকার ব্যাপারে টোংকসের কোনো সাহায্য না পেয়ে খুব বিরক্ত হলো… তাহলে তো দেখেছি সারারাত বাইরে পড়ে পড়ে ঘুমোতে হবে।

ওই দেখো তোমার জন্য কেউ গেট খুলতে আসছে, টোংকস বললো। দেখো।

হ্যারি দেখলো ক্যাসেলের মুখ থেকে একজন হাতে লণ্ঠন নিয়ে দোলাতে দোলাতে গেটের দিকে আসছে। হ্যারি চনমন করে উঠলো। গেটকীপার হিসেবে ফিলচের সম্বন্ধে বিরূপ সমালোচনা অমূলক মনে হলো। লণ্ঠন হাতে নিয়ে লোকটা দশফিট দূরত্বের মধ্যে আসতেই হ্যারি অদৃশ্য ক্লোক সরিয়ে ফেললো যাতে ওকে দেখতে পায়। দেখলো, লোকটি আর কেউ নয় ও সবচেয়ে বেশি যাকে অপছন্দ করে… বাঁকা নেকো তেল চকচকে বড় বড় কালো চুলওয়ালা সেভেরাস স্নেইপ

বা! বা! বা! তুমি এসে গেছে, প্রফেসর স্নেইপ কথাটা বলে হাতের জাদুদণ্ডটা তালাতে ঠেকাতেই তালা খুলে গেল, শেকলটা সরে গেলো, কটকট শব্দ করে গেট খুলে গেলো। আবার বললেন, আহা! পটার তুমি এসে গেছো, তুমি ভেবেছো স্কুল। রোবস না পরলে তোমাকে চেনা যাবে না?

আমি ট্রেনেতে বদলাবার সুযোগ পাইনি, আমি…। স্নেইপ ওকে থামিয়ে দিলেন। বাইরে দাঁড়িয়ে রইলে কেন… নিম্ ফাডোরা… পটার আমার কাছে সুরক্ষিত থাকবে… তুমি ভেবো না। স্নেইপ টোংকসকে বললেন।

আমি ভাবছি হ্যাগ্রিড আমার পাঠানো সংবাদ পেয়েছেন কি না? টোংকস ভুরু কুঁচকে বললো।

হ্যাগ্রিড টার্ম ফিস্টে অনেক রাত পর্যন্ত ছিলেন তাই হয়তো তোমার পাঠানো সংবাদ পাননি। পটার এসেছে খবর পেয়েই আমি এলাম। স্নেইপ একটু সরে গিয়ে পটারকে ভেতরে আসার জায়গা করে দিলেন। আমি তোমার নতুন পেট্রোনাস দেখতে খুবই উৎসুক।

কথাটা বলে স্নেইপ আবার শেকল দিয়ে গেটটা বাঁধতে বাঁধতে টোংকসের মুখের সামনে গেটটা সশব্দে বন্ধ করে ওকে ব্যঙ্গ করে বললেন, মনে হয় তোমার পুরনো কাজটা ভালোই ছিল। নতুন কাজটা মনে হয় দুর্বল।

স্নেইপ লণ্ঠনটা হ্যারির মুখের সামনে তুললে সেই আলোতে হ্যারি দেখলো টোংকস রাগে ফেটে পড়ছে।

টোংকস আলো থেকে অন্ধকারে সরে দাঁড়ালো।

হ্যারি স্নেইপের সঙ্গে ভেতরে যেতে যেতে পিছন ফিরে টোংকসকে বললো, শুভ রাত্রি… সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ।

দেখা হবে হ্যারি।

স্নেইপ মিনিট খানেক কোনো কথা না বলে হ্যারির সঙ্গে চললেন। হ্যারির স্নেইপের ওপর ঘৃণা উত্তরোত্তর বেড়েই চলল। এতো বেশি যে তার উত্তাপে স্নেইপ পুড়ে ছাড়খার হয়ে যেতে পারে। প্রথম থেকেই হ্যারির স্নেইপের ওপোর বিরাগ। সিরিয়সের প্রতি তার জঘন্য ব্যবহার ও বিরোধিতার জন্য হ্যারি কখনোই ওকে ক্ষমা করতে পারবে না।

ডাম্বলডোর ওকে অনেক কথা বলেছেন, সেই কথাগুলো গরমের ছুটিতে ব্যারোতে থেকে অনেক ভাবার সময় পেয়েছেস্নেইপ মিনিস্ট্রিতে গোলমালের সময় সিরিয়সকে যদি বিদ্রূপ করে না বলতেন, অর্ডার অফ ফিনিক্সের সকলে যখন ভোল্টেমর্টের সঙ্গে লড়াই করছে তখন আপনি লুকিয়ে বসে আছেন, ওই বলাটাই সিরিয়সের মৃত্যুর প্রধান কারণ। কথাটা শোনার পর তিনি মিনিস্ট্রিতে ছুটে গিয়েছিলেন।

হ্যারি বিষয়টি কিভাবে ভুলতে পারে। ও জানে যে লোকটি এখন হাতে লণ্ঠন নিয়ে অন্ধকারে ওর সাথে যাচ্ছে সিরিয়সের মৃত্যু তার মনে কোনো দাগ কাটেনি, একটুও দুঃখ পায়নি। এই রকম একজন মানুষকে ও কেমন করে ক্ষমা করতে পারে?

দেরি করে পৌঁছানোর জন্য পঞ্চাশ পয়েন্ট গ্রিফিন্ডরদের থেকে কাটা গেল। স্নেইপ বললেন, হ্যাঁ মনে হচ্ছে আরো কুড়ি পয়েন্ট তোমার মাগল প্রীতির জন্য। আমার মনে হয় না যে, টার্ম শুরু হবার আগেই কোন হাউজ আজ পর্যন্ত নেগেটিভ পয়েন্ট লাভ করেছে। আমরা তো এখনও পুডিং খেতে শুরু করিনি। সত্যি পটার, তুমি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে।

হ্যারির শরীরের রক্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠলো। স্নেইপের কাছ থেকে এসব না শুনে বরং লন্ডনে ফিরে যাওয়াই ভাল ছিল।

তুমি নিশ্চয়ই নানাভাবে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেছিলে, তাই না? স্নেইপ বলে চললেন, ফ্লাইংকার নেই, যাবে কেমন করে? সে যাই হোক, তুমি বোধহয় ভাবছিলে ফিস্ট চলাকালীন ঝড়ের বেগে গ্রেট হলে ঢুকলে বেশ নাটকীয়তা হবে তাই না?

অনেক ক্রুদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও হ্যারি নিজেকে সংযত করে রাখল। মনে হচ্ছিল আর বেশি সময় চুপ করে থাকলে ওর সমস্ত শরীর ফেটে চৌচির হয়ে যাবে। হ্যারি জানে, স্নেইপ ওকে নানাভাবে ব্ৰিত করবে, কথার সূঁচ ফোঁটাতে লণ্ঠন হাতে নিয়ে গেট খুলতে এসেছেন। সহানুভূতি বা ছাত্র হিসেবে স্নেহ করার জন্য নয়। স্নেইপের কথাতো এখন কেউ শুনতে পাবে না।

হাঁটতে হাঁটতে ওরা শেষ পর্যন্ত ক্যাসেলের সিঁড়ির কাছে পৌঁছলো, ওক গাছের কাঠ দিয়ে বানানো বিরাট দরজাটা খুলে যেতেই হ্যারির চোখে পড়লো নিস্তেজ এনট্রেন্স হল। গ্রেট হলের দরজাটা খোলা–সেখান থেকে ভেসে আসছে অনেক কথাবার্তা, হাসি, প্লেট আর গেলাসের টুংটাং শব্দ! হ্যারি ক্ষণিকের জন্য দরজার মুখে দাঁড়িয়ে ভাবলো অদৃশ্য হবার ক্লোকটা পরে ভেতরে ঢুকে লম্বা গ্রিফিল্ডর টেবিলে (এনট্রেন্স হলের সব শেষে রয়েছে) সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে বসে পড়লে কেমন হয়!

ক্লোক পরার আগেই স্নেইপ ওর মনের কথাটা বুঝতে পেরে বললেন, না না অদৃশ্য হয়ো না। তুমি সোজা সকলের সামনে দিয়ে হেঁটে যাও, সবাই যেন তোমায় দেখতে পায় তাই তো তুমি চাইছে আমার স্থির বিশ্বাস।

হ্যারি স্নেইপের হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য খোলা দরজা দিয়ে সোজা ভেতরে ঢুকে গেল। ও দেখলো বরাবরের মতো হলের মাঝখানে চারটে হাউজের জন্য চারটে লম্বা টেবিল, স্টাফ টেবিলটা একটু ওপরে পাতা রয়েছে। সমস্ত হলটা আলোর মালায়, ফুলে, উড়ন্ত মোমবাতি (যাতে টেবিলের ওপর রাখা কাঁচের প্লেটগুলো চকচক করে) দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রথমেই প্রচণ্ড আলোয় ওর চোখ ধাঁধিয়ে গেল। ও খুব জোরে জোরে হেঁটে হাফলপাফের টেবিল পার হয়ে নিজের হাউজের টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো। হলের সকলেই ওর দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। কেউ কেউ ওকে ভালো করে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে পড়লো। হ্যারির চোখ পড়লো রন, হারমিওনের ওপর। ও কারও দিকে না তাকিয়ে ওদের দুজনের মাঝের একটা চেয়ারে বসে পড়ল।

ব্লিমে (ঈশ্বর আমাকে অন্ধকরে দাও), তুমি কোথায়?

তোমার মুখে আঘাতের চিহ্ন কেন? শুধু রন নয় আরো অনেকের একই প্রশ্ন। তারই সঙ্গে মৃদু মৃদু হাসি।

হ্যারি একটা চামচ নিয়ে নিজের মুখের তেড়াবাকা প্রতিবিম্ব দেখতে দেখতে বললো কেন কি হয়েছে?

তোমার সারা মুখে রক্ত লেগে রয়েছে! হারমিওন বললো। এদিকে এসো। ও হাতের জাদুদণ্ডটা হ্যারির মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে বললো টারজিও শুকনো রক্তগুলো উধাও হয়ে গেলো।

ধন্যবাদ! হ্যারি বললো। ওর মনে হলো মুখটা সাফ হয়ে গেছে। আমার নাকটা কি ফুলোফুলো দেখাচ্ছে?

স্বাভাবিক, হারমিওন বললো। কেন তোমার নাকে কি হয়েছিলো? যাকগে তুমি কোথায় ছিলে? আমরা তো ভয় পেয়ে গেছি।

পরে সব বলা যাবে, হ্যারি কাঠখোট্টাভাবে বললো। কারণ ও লক্ষ্য করল জিনি, নেভিল, ডিন আর সিমাস ওর কথা শুনছে, এমনকি হেডলেস নিক গ্রিফিন্ডরের ভূত কোথা থেকে উড়ে এসে টেবিল জুড়ে বসেছে।

কিন্তু– হারমিওন বললো

এখন নয় হারমিওন, গভীর অর্থপূর্ণ গলায় হ্যারি বললো। ওরা হয়তো ভাবছে হ্যারি খুব সম্ভব সাহসের সঙ্গে কিছু ডেথইটার, অথবা এক ডিমেন্টরের সঙ্গে লড়াই করে ফিরেছে, তাই এত শোনার আগ্রহ। তাহলেও অচিরেই ম্যালফয় ঘটনাটা সকলকে বাড়িয়ে চড়িয়ে বলবে কোনো সন্দেহ নেই, তাহলেও অনেক গ্রিফিন্ডরের কানে ম্যালফয়ের কথা নাও যেতে পারে।

হ্যারি রনের প্লেটের একধারে রাখা কয়েকটা চিকেনের ঠ্যাঙ, আর এক মুঠো চিপস তুলতে গেল। কিন্তু হাত দেবার আগেই সেগুলো উধাও হয়ে গিয়ে তার বদলে সেখানে পুডিং এলো।

হারমিওন বললো, তোমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন নয়। সর্টিং খেতে পেলে না। রন হাত বাড়িয়ে একটা বড়ো দেখে চকোলেট গেটু প্রায় ডাইভ দিয়ে তুলে নিল।

হ্যারি একখণ্ড ট্রেকল টার্ট তুলে নিয়ে বললো, টুপি ইন্টারেস্টিং কিছু বলেছে?

সেই একঘেয়ে কথা, সত্যি… ওই শক্রদের আক্রমণ প্রতিহত করতে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, তুমি এসব জানো, ডাম্বলডোর ভোল্ডেমর্ট সম্বন্ধে কিছুই বলেননি?

খুব একটা কিছু বলেননি, তবে মেইন স্পিচ উনি ফিস্টের শেষে বলবেন, তাই না? এইবার শুরু হবে মনে হয়।

স্নেইপ বলছিলেন, হ্যাগ্রিড ফিস্টে দেরি করে আসবেন। তুমি স্নেইপকে দেখেছো? কি করে এলে? রন বললো মুখ ভর্তি খাবার ওর। ওর সঙ্গেই তো এলাম, হ্যারি প্রসঙ্গটা বাদ দিতে চাইলো।

দেরি নয়, হ্যাগ্রিড কয়েক মিনিট দেরি করে এসেছেন। হ্যারি ওদিকে তাকাও হ্যাগ্রিড তোমায় হাত নাড়ছেন।

হ্যারি স্টাফ টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো, হ্যাগ্রিড ওর দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছেন। হ্যাগ্রিডের পাশে বসেছেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল। তিনি এতো খাটো যে তার মাথাটা হ্যাগ্রিডের কনুইয়ের কাছে ঠেকেছে। ম্যাকগোনাগল ওদের হাউজের হেড। মুখ দেখে মনে হয় উনি হ্যারিকে দেখে হ্যাগ্রিডের হাতনাড়া একদম পছন্দ করছেন না। হ্যারি হ্যাগ্রিডের অন্যধারে ডিভিনেসান টিচার প্রফেসর ট্রিলনীকে দেখে একটু আশ্চর্য হয়ে গেল। উনি কদাচিৎ তার ঘর (টাউয়ার রুম) ছেড়ে আসেন, তাছাড়া তাকে আগে কখনো স্টার্ট অফ টার্ম ফিস্ট-এ (নতুন সেশনের শুরুতে যে ফিস্ট হয়) যোগ দিতে দেখেনি। তাকে যেমন সব সময় কিম্ভুত কিমাকার দেখায় তেমনিভাবে অদ্ভুতভাবে বসে রয়েছেন। চুমকি লাগানো শাল গায়ে, তাতে আলো পড়ে ঝকমক করছে, বিরাট বড়ো মোটা কাঁচের চশমার আড়ালে চোখ দুটো পেল্লায় দেখাচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই তাকে ভণ্ড বললেও গত টার্মের শুরুতে হ্যারি জেনেছে তার ভবিষ্যদ্বাণীর কারণেই যে ভোল্ডেমর্ট হ্যারির বাবা-মাকে হত্যা ও হ্যারিকে আক্রমণ করেছিলো। এরপর থেকে ট্রিলনীকে একেবারেই ওর অপছন্দ। তবে শুভ ব্যাপার এই নতুন টার্মমে ওকে আর ডিভিনেসন ক্লাসে যেতে হবে না। ট্রিলনী বেকনের মতো দুই চোখের দৃষ্টি হ্যারির ওপর পড়তেই ও শ্রিদারিন টেবিলের দিকে তাকালো। দেখলো ম্যালফয় ওর নাক নিয়ে ঠাট্টা তামাসা করছে… হাসছে, বন্ধুরাও হাততালি দিচ্ছে। ম্যালয়ের রসিকতা হ্যারির শরীরের ভেতর আগুন জ্বালিয়ে দিলো। জ্বালা করতে লাগলো সমস্ত শরীরটায়। তবে ও ম্যালফয়কে ছেড়ে দেবে না। অতর্কিতে আক্রমণের সুযোগ আর ওকে দেবে না।

হারমিওন বললো, তাহলে স্লাগহর্ন কি চান, কিছু বুঝলে?

মিনিস্ট্রির মধ্যে আসলে কি হয়েছিল জানতে চেয়েছিলেন, হ্যারি বললো। হারমিওন সশব্দে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো, সারা পথ আমাদের প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে মাথা খারাপ করে দিয়েছে, তাই না রন?

সত্যি। রন বললো। সকলেই জানতে চেয়েছে সত্যি কি তুমি চুজেন ওয়ান?

বুঝলে ভুতেরাও আজকাল এই আলোচনা করছে। হেডলেস নিক মাঝখান থেকে বলে উঠলো এবং মাথাটা হাত দিয়ে হ্যারির দিকে ঘোরালো। আমি পটার সম্বন্ধে অনেক কিছু জানি। বলতে পারো সকলেই জানে পটার আমার বন্ধু। আমি ভূত সম্প্রদায়কে জানিয়েছি যে, আমি তোমার কাছ থেকে কোনো খবর জানার জন্য বিরক্ত করবো না। তাছাড়া হ্যারি পটার খুব ভালোভাবেই জানে, আমি ওর খুব বিশ্বস্ত… আমাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করে। এই কথাটা আমি ওদের সাফ বলে দিয়েছি। আমি প্রাণ দেবো, তবু ওর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবো না।

রন বললো, কথাটার কোনো মানে হয় না। প্রাণ আবার দেবে কি…? আগেই মরে গেছে।

আবার তুমি ভোঁতা কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়তে চলেছে! হেডলেস নিক বললো, ঝগড়াটে গলায়, তারপর গ্রিফিন্ডর টেবিলের শেষ প্রান্তে ভাসতে ভাসতে চলে গেলো। ডাম্বলডোর ঠিক সেই সময়ে স্টাফ টেবিলের সামনে থেকে উঠে দাঁড়ালেন। হলের মধ্যের হট্টগোল নিমেষে স্তব্ধ হয়ে গেলো।

ডাম্বলডোর যেন আলিঙ্গন করছেন সেইভাবে দুহাত দুধারে প্রসারিত করে হাসতে হাসতে বললেন, শুভ সন্ধ্যায় সকলকে আমার শুভ কামনা। হাত তেমনি প্রসারিত রইলো সকলকে আলিঙ্গনের জন্য।

হ্যারি ওনার হাতে কি হয়েছে? হারমিওন ফিসফিস করে বললো।

হারমিওন ছাড়া হলের সকলেই দেখছে ডাম্বলডোরের ডানহাতের অনেকটা পুড়ে কালো হয়ে গেছে, যেনো সেই অংশে প্রাণ নেই। ডার্সলেদের প্রাইভেট ড্রাইভের বাড়িতে সেদিন রাতে হ্যারিকে নিতে আসার সময় হাতটা এমনই ছিল। হলের ভিতর ফিসফিসানি চললো। তারা কেন নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। ডাম্বলডোর বুঝতে পারলেন। বিষয়টা তার ডান হাতে পোড়া দাগ! ডাম্বলডোর সুন্দর করে হেসে সোনালি–গোলাপী জামার হাতাটা টেনে দিলেন ক্ষত স্থানের ওপর।

সামান্য ব্যাপার চিন্তার কোনো কারণ নেই। ডাম্বলডোর সাধারণভাবে বললেন। এখন,.. আমাদের স্কুলের নবাগত ছাত্রছাত্রীদের আমি প্রীতি জানাচ্ছি, আমাদের পুরাতন ছাত্রছাত্রীরা যারা এখানে উপস্থিত তাদেরও আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। আর একটি বছর ম্যাজিক্যাল এডুকেশন তোমাদের জন্য উক্ত।

হ্যারি হারমিওনের কানে কানে বললো, গরমের ছুটির আগে যখন আমাকে আঙ্কল ভার্ননের বাড়ি থেকে আনতে গিয়েছিলেন তখনও পোড়া দাগটা দেখেছিলাম, ভেবেছিলাম এতোদিনে হয়তো সেরে গেছে, ম্যাডাম পমফ্রে কি চিকিৎসা করেননি, করা উচিত ছিল।

মনে হচ্ছে ঘাটা শুকিয়ে আসছে হয়তো বা প্রাণ নেই, হারমিওন শিউরে উঠে বললো–শুনেছি কিছু কিছু ক্ষত থাকে যেগুলো তুমি সারাতে পারবে না। পুরনো

অভিশপ্ত কিছু বিষময় ক্ষত যার কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি।

ডাম্বলডোর বলে চলেছেন,

মিস্টার ফিলচ আমাদের কেয়ার টেকার, আমাকে বলতে বলেছেন আমাদের এখানে কোনোরকম জোক আইটেমস, উইসলি উইজার্ড হুইজিস থেকে কিনে আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

যারা তাদের হাউজের হয়ে কিডিচ টিমে খেলতে ইচ্ছুক তারা তাদের নাম হেড অফ হাউজের কাছে দেয়। আমরা এই বছর একজন তরুণ কিডিচ ধারাভাষ্যকারের খোঁজে আছি, যারা হতে ইচ্ছুক তারাও যেনো তাদের নাম তাদের হেড অফ হাউজের কাছে পাঠায়।

এই বছরে আমাদের শিক্ষকদের দলে একজন নতুন শিক্ষককে পেয়েছি, প্রফেসর স্লাগহর্ন। আমরা সকলেই তাকে স্বাগত জানাই।

প্রফেসর স্লাগহর্ন চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন। মোমবাতির আলোয় তার টাক মাথা চক চক করে উঠল ওয়েস্ট কোটের অন্তরাল থেকে তার বিরাট বপু টেবিলে ঠেকলো। উনি আমাদের স্কুলে আগেও ছিলেন, আমার সহকর্মী। উনি তার অতীতের পোশান মাস্টার হিসেবে এবারেও শিক্ষকতা করবেন।

পোশান? পোশান?

শব্দটা সারা হলে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলে মনে হলো ওরা শব্দটা বোধহয় ঠিক মতো শোনেনি।

রন আর হারমিওন একযোগে বললো, হ্যারির দিকে তাকিয়ে। কিন্তু তুমি বলেছিলে

 প্রফেসর স্নেইপ! দয়া করে… ডাম্বলডোর এমন এক উচ্চকণ্ঠে বললেন যাতে হলের সমবেত গুঞ্জন ছাপিয়ে যায়। প্রফেসর স্নেইপ কালোজাদুর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার টিচার হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করবেন।

না! হ্যারি এতো উচ্চকণ্ঠে কথাটা উচ্চারণ করলো যে হলের সবাই ওর দিকে তাকালো। হ্যারিকে তার জন্য একটুও বিচলিত মনে হলো না, ও ক্রোধদীপ্ত দৃষ্টিতে স্টাফ টেবিলের দিকে তাকিয়ে রইলো। আশ্চর্য স্নেইপকে কি করে ডিফেন্স এগেন্সট ডার্ক আর্টের টিচার করতে চাইছেন প্রফেসর ডাম্বলডোর, বিশেষ করে এই সময়ে। সকলেই কী জানেন না প্রফেসর ডাম্বলডোরের ওই কাজের জন্য স্নেইপের ওপর আস্থা নেই?

কিন্তু, হ্যারি তুমি তো বলেছিলে স্লাগহর্ন আমাদের ডিফেন্স এগেন্সট ডার্ক আর্টস শেখাবেন… হঠাৎ পরিবর্তন হলো কেন? সকলেই কী এত বছর ধরে জানে স্নেইপ ডাম্বলডোরের বিশ্বাসের পাত্র নয়? হারমিওন ফিস ফিস করে বললো।

আমার মনে হয় বলেছিলেন, হ্যারি বললো। কিন্তু মনের এমন অবস্থা ঠিক কি বলেছিলেন হ্যারির মনে পড়ছে না।

স্নেইপ, ডাম্বলডোরের পাশে বসেছিলেন। তার নাম ঘোষণার পর সৌজন্যের সময় মৃদু হেসে শুধুমাত্র একটা হাত তুললেন। হ্যারি যে লোকটাকে সবচাইতে বেশি ঘেন্না করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো জয়ের হাসিতে তার মুখটা উদ্ভাসিত।

তবে এর মধ্যে একটি ভাল বিষয় যে স্নেইপ এই বছরের শেষে চলে যাবেন। রন বললো, তার অর্থ কি হ্যারি?

তোমরা জানো না ওই কাজটার ওপোর জিঙ্কস দেওয়া আছে… কেউ ওই পোস্টে এক বছরের বেশি টিকতে পারে না। কুইরেল কর্মরত অবস্থায় মারা গেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভাবছি চুপচাপ থাকবো আর একটি মৃত্যুর অপেক্ষায়।

হ্যারি…? তুমি কি সব আজেবাজে বকছো, হারমিওন রাগ করে বললো।

রন বললো, এমনও তো হতে পারে–বছরের শেষে স্নেইপ পোশানের টিচার হতে পারেন। বুড়ো স্লাগহর্ন হয়তো এক বছরের বেশি কাজ করতে চাইবেন না। মুডিও করেননি।

ডাম্বলডোর গলা খাকাড়ি দিলেন। শুধু হারমিওন, হ্যারি বা রন নয় হলে যারা তখন ছিল, স্নেইপ শেষ পর্যন্ত যে তার অভিষ্ট সিদ্ধ করতে পেরেছে তা দেখে সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলাবলি করতে লাগলো। ডাম্বলডোর তারপর শিক্ষকদের নিয়োগ সম্বন্ধে আর কোনো কথা বললেন না, কিন্তু চুপ করে রইলেন হলের সম্পূর্ণ নীরবতার জন্য।

আপনারা সকলেই জানেন, লর্ড ভোল্ডেমর্ট এবং তার অনুগামীরা এখন সবাই নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করছে। নীরবতা আরো যেন বেশি ঘনিভূত হলো ডাম্বলডোরের উক্তির পর। হ্যারি আড়চোখে ম্যালফয়ের দিকে তাকালো। ম্যালয়ের দৃষ্টি ডাম্বলডোরের দিকে নয়, অন্যদিকে। সে একটা কাঁটাচামচ জাদুদণ্ডের মুখে রেখে যোরাচ্ছে! এমন এক মুখের ভাব যে হেডমাস্টারের কথা ওর কাছে মূল্যহীন।

আমি জোর দিয়ে বললেও তোমাদের বোঝাতে পারবো না বর্তমান অবস্থা কি সাংঘাতিক অবস্থায় পৌঁছেছে; আমাদের হোগার্টসে থাকার সময় আমাদের সকলকেই দেখতে হবে যে আমরা সুরক্ষিত কিনা। এই বছর গরমকাল থেকে আমরা ক্যাসেলকে জাদুর দ্বারা সুরক্ষিত করেছি–নতুন নতুন শক্তিশালী জাদু প্রয়োগে আমরা মোটামুটি সুরক্ষিত–তাহলেও আমাদের ছাত্র অথবা স্টাফ মেম্বাররা যেনো সর্বদা প্রস্তুত থাকেন। আমি তাই তোমাদের অনুরোধ করছি তোমাদের শিক্ষকরা যদি কোন রকম সিকিউরিটি রেসট্রিকসন করেন তাহলে সেগুলি নিজেদের স্বার্থে মেনে চলতে হবে। বিরক্তিকর হোক না কেন তোমরা কখনো রাতে ঘরের বাইরে বেরোবে না। যদি ক্যাসেলের ভেতরে বা বাইরে কোন রকম অসাধারণ কিছু দেখ তাহলে নজরে আনবে। আমি বিশ্বাস করি আপন স্বার্থে তোমরা সব নিয়ম মেনে চলবে, নিজের এবং আশপাশের মানুষদের নিরাপত্তার জন্য।

ডাম্বলডোর ভাষণ শেষ করে ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে হাসলেন।

এখন রাত হয়েছে, সকলের উচিত যে যার উষ্ণ বিছানায় শুয়ে পড়ার সময় আগামীকালের লেসনের ওপর দৃষ্টি দেওয়া। গুড নাইট! পিপ পিপ!

 ছাত্রছাত্রীরা তাদের ডরমেটরিতে যাওয়া শুরু করলো, গ্রেট হলের চেয়ার টেবিল যথাস্থানে রাখার ব্যবস্থা করতে লাগল কর্মীরা। হ্যারির সকলের সঙ্গে গ্রেট হল ছেড়ে যাওয়া, অথবা ম্যালয়ের গ্রিফিন্ডরদের শুনিয়ে ট্রেনের ঘটনা শোনার কোন ইচ্ছে ছিলো না।

হারমিওন তার প্রিফেক্ট ডিউটি করতে ব্যস্ত রইলো, কিন্তু রন হ্যারির সঙ্গে রইলো।

সত্যি করে বলতে তোমার নাকে কি হয়েছিলো? সবাই হল ছেড়ে চলে যাবার পর হ্যারিকে জিজ্ঞেস করলো।

হলে শুধুমাত্র ওরা দুজন। হ্যারি ওকে যা যা ঘটেছিল সব বললো। বন্ধুর প্রতি ভালবাসার কারণে রন সব শোনার পর হাসলো না।

রন গম্ভীর হয়ে বললো, তাই দেখলাম নাকে হাত দিয়ে ম্যালফয় কিছু বলছে আর হাসছে।

হ্যারি তিক্ত স্বরে বললো, এটা বড় কথা নয়, তোমাকে তো সব বলেছি ও ওখানে আমাকে ধরার আগে ও কি করছিলো ও কি বিষয় আলাপ করছিলো…।

হ্যারি ধারণা করেছিলো ও ম্যালফয়ের দম্ভের কথা শুনে হতবাক হবে। কিন্তু বোকার মতো চুপ করে রইলো।

এই বিষয়ে একটুও ভাববে না সে নিজেকে জাহির ও অন্যদের ভয় দেখানোর জন্য ওসব বলেছে হ্যারি। ইউ-নো-হু ওকে দিয়ে কি কাজ করাবেন?

তুমি কেমন করে ভাবতে পার ভোল্ডেমর্ট হোগার্টসে তার কোন লোক থাকুক তা তিনি চান না? এটা এই প্রথম ঘটনা নয়।

আমি মনে করি তুমি নামটা উচ্চারণ করবে না, হ্যারি, পেছন থেকে কে যেনো কথাটা বললো–তার কথায় ভৎর্সনার সুর। হ্যারি পিছনে তাকালো–দেখলো হ্যাগ্রিড মাথা নাড়ছেন।

ডাম্বলডোরও তো নামটা বলেন, হ্যারি একগুয়ের মতো বললো।

 হা খাঁটি কথা! আরে তিনি তো ডাম্বলডোর… তাই না? হ্যাগ্রিড বললেন, রহস্যপূর্ণ স্বরে। তো এইবার হ্যারি বলতো দেখি ফিস্টে দেরি করে আসার কারণ? আমি তো খুব চিন্তিত ছিলাম।

ট্রেনে আটকা পড়ে গিয়েছিলাম, হ্যারি বললো। তা আপনি কেন দেরি করে এলেন?

আমি? আমি গ্রুপের সঙ্গে ছিলাম, হ্যাগ্রিড খুব খুশি মনে বললেন। পথ হারিয়ে ফেলেছিল। ও এখন পর্বতে নতুন একটা আস্তানা জুটিয়েছে। অবশ্য ডাম্বলডোর ঠিক করে দিয়েছেন–এটি সুন্দর বিরাট গুহা। জঙ্গরে মধ্যে যেভাবে ছিল তার চেয়ে

এখন অনেক ভালো আছে। আমরা মাঝে মধ্যে অনেক কথাবার্তা বলি।

সত্যি? হ্যারি বললো। রনের দৃষ্টির আড়াল করলো নিজেকে হ্যারি। গতবারে হ্যাগ্রিডের হাফ ব্রাদার… দারুণ কাণ্ডকারখানা করেছিল। গাছ গোড়া সুদ্ধ উপড়ে ফেলেছিলো। সেই ভাই মাত্র পাঁচটা কথা বলতে পারতো তার মধ্যে দুটো তো ঠিক মতো উচ্চারণ করতে পারতো না।

ও এখন অনেক কিছু শিখেছে। হ্যাগ্রিড গর্বের সঙ্গে বললো। তুমি শুনে অবাক হবে হ্যারি, আমি গ্রুপকে আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট হবার জন্য ট্রেনিং দেওয়ার কথা ভাবছি।

রন খুব জোরে নাক দিয়ে শব্দ করলো, তারপর দারুণ শব্দ করে হাঁচি দিলো। কথা বলতে বলতে ওরা তখন ওক গাছের কাঠের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।

গ্রিড বললো, কাল তোমার সঙ্গে দেখা হবে লাঞ্চের পরে। সকালবেলা পারতো একবার এসে বাককে হ্যালো করে যেও মানে উইদার উইংগসের কথা বলছি।

হ্যাগ্রিড হাত তুলে ফেয়ারওয়েল জানিয়ে গাঢ় অন্ধকারে ওর বাড়ির দিকে চলে গেলেন।

হ্যারি রনের দিকে তাকালো। দেখলো রনের মুখটা তারই মতো বিষণ্ণ। ওরই মতো হতাশার সাগরে ডুবে যাচ্ছে…।

তুমি আজকাল ম্যাজিক্যাল ক্রিচারদের যত্নট করছো? মাথা নাড়লোরন।

তুমি করছো? হ্যারি রনের মতো মাথা নাড়লো। আর হারমিওন? রন বললো। সে কি নিচ্ছে? হ্যারি একইরকমভাবে মাথা নাড়লো।

হ্যাগ্রিড যখন জানতে পারবেন তার তিন প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী তার সাবজেক্ট ছেড়ে দিয়েছে? হ্যারি মনে করলো কথাটা মাথায় না আনাই যেনো ভালো ছিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *