০৭. দ্য স্লাগ ক্লাব

০৭. দ্য স্লাগ ক্লাব

হ্যারি পুরো সপ্তাহটার ছুটির দিনে নকটার্ন এ্যালিতে ম্যালয়ের অদ্ভুত আচরণের কারণ উদঘাটন করার চেষ্টা করতে লাগল। ম্যালফয়ের দোকান থেকে বেরোবার সময় তার মুখের হাসি হ্যারির আরো বেশি বিরক্তির কারণ হয়ে উঠলো। হাসিটা সফলতার। শুভ খবরের। ওদিকে হারমিওন ও রনকে ম্যালয়ের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন বলে মনে হলো না। হ্যারি দুএকদিন ম্যালয়ের বোরজিনের দোকানে যাওয়ার ব্যাপারে ওদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলো; কিন্তু ওদের কোনো উৎসাহ নেই দেখে চুপ করে যায়।

হ্যাঁ, আমি বলছি না যে আমার সন্দেহ হয়নি, যথেষ্ট সন্দেহ হয়েছিলো বলেই তো দোকানে গিয়েছিলাম, হারমিওন বললো। হারমিওন ফ্রেড আর জর্জের ঘরে জানালার ধারে একটা কাবার্ডের ওপর পা দুটো তুলে বসেছিলো। মাঝে মাঝে বিরক্ত মাখানো মুখে অ্যাডভান্স রিউনের অনুবাদের নতুন কপিটা দেখছিলো।

হতে পারে ওর হাতটা ভেঙে গেছে, রন ওর ঝাড়ুটার শেষ প্রান্ত সোজা করবার চেষ্টা করতে করতে অস্পষ্টভাবে বললো। ওর কুঁচকে যাওয়া হাতটা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো?

কিন্তু যখন ও বললো, ওটা সাবধানে রাখতে ভুলবে না, তার মানে কি? হ্যারি বার বার একই প্রশ্ন করতে লাগলো। কথাটা শুনে আমার মনে হয়েছে, ম্যালফয় যে জিনিসটা কিনতে চেয়েছে–দুটো আছে, একটা ভাঙা, অন্যটা ভাঙা নয়।

তোমার মনে আছে? রন ঝাডুর ধূলো ঝাড়ুতে ঝাড়ুতে মুখ না তুলে বললো।

হ্যাঁ, মনে আছে, হ্যারি বললো। কথাটা শুনে রন বা হারমিওন চুপ করে রইলো। ম্যালয়ের বাবা এখন আজকাবানে। তোমাদের কি মনে হয় না ম্যালফয় কোনো প্রতিশোধ নিতে চাইছে?

রন মুখটা তুলে পিটপিট করে তাকালো। ম্যালফয় বদলা নেবে? ও এখন কি করতে পারে?

সেটাই তো আমার মূল প্রশ্ন, সমাধান করতে পারছিনে, হ্যারি হতাশ হয়ে বললো। কিন্তু ও একটা কিছু করতে চায়, আমাদের উচিত ও কি করতে চাইছে সেটা জানা। তোমরা তো জানো ওর বাবা একজন ডেথইটার… আর…।

হারমিওন যে খোলা জানালার ধারে বসেছিলো হ্যারি সেইদিকে মুখ হা করে তাকালো। হঠাৎ তার মনে চমকে ওঠা এক ভাবের সৃষ্টি হলো। ও চনমন করে উঠলো। হারমিওন সেটা লক্ষ্য করে বললো, হ্যারি, হ্যারি কি ব্যাপার বলতো?

রন হকচকিয়ে বললো, তোমার কাটা দাগ চুলকোচ্ছে?

ম্যালফয় একজন ডেথইটার, হ্যারি খুব ঢিমে তালে বললো। ও ওর বাবার শূন্যস্থানে ডেথইটার হয়েছে।

নীরবতা ভঙ্গ করে রন হাসতে হাসতে ফেটে পড়লো।

ম্যালফয়? ওর বয়সতো মাত্র সোল, হ্যারি! তোমার কি মনে হয় ইউ-নো-হু ওকে ডেথইটারদের দলে নেবেন?

মনে হয় সম্ভাবনা কম, হ্যারি, হারমিওন সুচিন্তিত কণ্ঠে বললো। হঠাৎ তোমার এ কথাটা মনে হলো কেন?

মনে আছে যখন মাদাম মালকিন তার দোকানে… ম্যালফয়কে স্পর্শ করার আগেই ও কিরকম চিৎকার করেছিল। মাদাম মালকিন ওর রোবসের হাতাটা সামান্য গোটাতে গিয়েছিলেন মাত্র। ওর বাঁ হাত। ওই হাতে অবশ্যই ডার্কমার্কের ছাপ দেওয়া হয়েছে।

রন ও হারমিওন হ্যারির কথা শুনে পরস্পরের মুখের দিকে তাকালো। বেশ… রনের কথার মধ্যে অবিশ্বাসের ছাপ।

হ্যারি, আমার মনে হয় ও তখন সেখান থেকে চলে আসতে চেয়েছিলো, হারমিওন বললো।

ও বোরজিনকে একটা জিনিস দেখিয়েছিল। জিনিসটা যে কি আমরা দেখতে পাইনি, হ্যারি ম্যালয়ের বিরুদ্ধে যা বলছিলো সেটা যুক্তিগ্রাহ্য করার জন্য জোর দিয়ে বললো। এমন একটা জিনিস যাতে বোরজিন ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। আমি জানি, ডার্কমার্ক দেখিয়েছিলো, তোমরা তো বোরজিনের মুখটাও দেখেছিলে! ওর ধমকানিতে ভয় পেয়েছিলো।

রন, হারমিওন আবার পরস্পরের মুখের দিকে তাকালো। আমি খুব একটা ভালো করে দেখিনি, হারমিওন বললো।

ইয়াহ, আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিনে ইউ-নো-হু ম্যালফয়কে তার দলে নেবেন।

হ্যারি ওদের ওপর রেগে গেল; কিন্তু ওর ধারণা যে ভ্রান্ত নয় সে সম্বন্ধে ও একটুও সরলো না। একরকম রেগেমেগে পুরনো কিডিচের জার্সি নিয়ে ও বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।

মিসেস উইসলি বেশ কয়েকদিন ধরে ওদের বলে চলেছেন ওরা যেনো ওদের ময়লা পোশাক-আশাক ভালো করে ধুয়ে নেয় এক্ষুণি। যাওয়ার আগের দিন যেন কোনো তাড়াহুড়ো না লাগে। তাছাড়া দরকারি জিনিসপত্রও যেন গুছিয়ে নেয়।

সিঁড়ির ল্যান্ডিং-এ হ্যারির জিনির সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো। জিনির হাতে লন্ড্রি থেকে কাচিয়ে আনা জামা-কাপড়।

ও হ্যারিকে বললো, আমি কিন্তু এখন কিচেনে যাবে না। একই সঙ্গে হ্যারিকে বিপদসংকেত দিলো তুমিও যেওনা, কম-বুদ্ধিরা সেখানে।

হ্যারি হেসে বললো, ভয় নেই ওখানে আমি যাচ্ছিনে।

কিন্তু কিচেনে যেতেই হলো হ্যারিকে। গিয়ে দেখলো খাবার টেবিলে মুখোমুখি বসে, ফ্লেউর আর বিল তাদের আসন্ন বিয়ে নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা, কথাবার্তা বলছে আর একদিকে মিসেস উইসলি একগাদা ছাড়ানো সম্পাউটের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন মুখে নিদারুণ বিরক্তির প্রলেপ নিয়ে। দেখলেই বোঝা যায় যেকোনও মুহূর্তে ফেটে পড়বেন রাগের চোটে।

বিল আর আমি ঠিক করেছি আমাদের বিয়েতে দুজন মাত্র ব্রাইডসমেড (কনের প্রধান সহকারী রূপে) থাকবে, জিনি আর গেবরিয়েলে দুজনেই খুবই মিষ্টি মেয়ে, দারুণ মানাবে। ভাবছি তার ড্রেসিং হবে হাল্কা সোনালী গোলাপী রঙের।

জিনির চুলের সঙ্গে দারুণ বিশ্রি দেখাবে (সবই বিকৃত ইংরেজি উচ্চারণে বললো)।

মিসেস উইসলি হ্যারিকে দেখে যেনো হালে পানি পেলেন। ফ্লেউরের একঘেয়ে কথায় মাথা ধরে গিয়েছিলো। আহা! হ্যারি তুমি এসেছো খুব ভালো হয়েছে। আমি কাল তোমাদের হোগার্টসে নিরাপদে যাওয়ার ব্যবস্থার বিষয়ে আলোচনা করবো ভেবেছিলাম। আমাদের এবারও মিনিস্ট্রি গাড়ি দেবে, স্টেশনে অররও থাকবে।

 টোংকস কি স্টেশনে যাবে? হাতের কিডিচের জিনিসপত্র টেবিলের ওপর রেখে জিজ্ঞেস করল।

না, আমি খুব নিশ্চিত নই। আর্থার বলেছে তাকে অন্য কোন জায়গায় বদলি করা হয়েছে।

ফ্লেউর ওর ধাঁধা লাগানো প্রতিবিম্ব ওর হাতের একটা চামচের উল্টোপিঠে দেখতে দেখতে খুশি হয়ে ওর বিকৃত ইংরেজি উচ্চারণে বললো, ও যেখানে খুশি থাক। ওকে স্টেশনে থাকতে বললে খুব ভুল হবে।

ধন্যবাদ! মিসেস উইসলি ফ্লেউরকে বললেন। হ্যাঁ হ্যারি তুমি কিন্তু আজ রাতেই তোমার ট্রাঙ্ক গুছিয়ে রাখবে যদি সম্ভব হয়। আমি কিন্তু যাবার সময় একটুও তাড়াহুড়ো, এটা নেই, ওটা নেই, ভুলে গেছি–এসব একদম পছন্দ করি না।

তাহলেও পরদিন সকালে ওদের ব্যারো ছেড়ে কিংক্রস স্টেশনে যাওয়ার ব্যাপারটা অন্যবারের চাইতে সুন্দরভাবে হলো।

মিনিস্ট্রির গাড়ি ব্যারোর সামনে এসে দাঁড়ালো। সকলেই তখন তাদের মাল বোঝাই ট্রাঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করছে। হারমিওনের বেড়াল কশ্যাংকস নিরাপদে বাস্কেটের মধ্যে বসে রয়েছে, হেডউইগও। বনের পেঁচা পিগউইজিয়ন আর জিনির প্রিয় পিগমি-পাফ, আর্নয়ন্ড খাচার মধ্যে।

ফ্লেউর হ্যারিকে খুব জোরে চুম্বন করে বললো, হ্যারি শুভযাত্রা–বিদায়, রন প্রায় দৌড়ে দৌড়ে আসার সময় জিনির ইচ্ছাকৃত পা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো–পড়লোতো ফ্লেউরের পায়ের কাছে একগাদা ধূলো উড়িয়ে। রন অগ্নিশর্মা হয়ে কারও সঙ্গে কথা না বলে গাড়িতে বসলো। কাউকে গুডবাইও করলো না।

কিংক্রস স্টেশনে সদাহাস্যমুখী হ্যাগ্রিডকে দেখা গেলো না। তার বদলে দুজন গম্ভীরমুখো দাড়িওয়ালা গাঢ় রঙের মাগল স্যুট পরা অরর এসেছে। গাড়ি থামতেই ওরা সামনে এসে দাঁড়ালো। সকলকে ঘিরে রেখে গম্ভীর মুখে স্টেশনের দিকে চললো।

মিসেস উইসলি ছেলে-মেয়েদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা দেখে মহাখুশি। তাড়া দিয়ে বললেন, কুইক, কুইক… হ্যারি তুমি সবার আগে চলো।

মিসেস উইসলি একজন অররকে ইশারা করতেই ও হ্যারির কনুইটা ধরে ওকে নয় ও দশের প্লাটফরমের শক্ত বাধার দিকে তার ট্রলি ঠেলে নিয়ে যেতেই হ্যারি বললো, হাতটা ছাড়ুন আমি হাঁটতে পারি, ধন্যবাদ। টান মেরে হ্যারি হাতটা ছাড়িয়ে নিল। তারপর এক সেকেন্ড পরে দেখলো পৌনে দশ, প্লাটফরমে দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রাটফরমে টকটকে লাল রঙের হোগার্টস এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন থেকে কালো থোয়া নির্গত হচ্ছে। একটু পর হারমিওন, রন, জিনি এসে পৌঁছল। হ্যারি অররকে কোনরকম তোয়াক্কা না করে কোন কামরা মোটামুটি খালি আছে খোঁজ করতে লাগল। ওর পেছনে পেছনে হারমিওন ও রনকে আসতে বললো।

তা হবে কেন, হ্যারি, আমি আর রন প্রিফেক্ট আমাদের প্রথমে তো প্রিফেক্ট কমপার্টমেন্টে যেতে হবে। তারপর ট্রেনের করিডরে হেঁটে সকল কিছু ঠিকমত আছে কি না দেখতে হবে।

হ্যারি বললো, তাইতো একদম ভুলে গেছি।

মিসেস উইসলি খুব নার্ভাস। ওদের ধ্বইকে পাটফরমে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখে হাত ঘড়িতে সময় দেখে বললেন, মাত্র কয়েক মিনিট সময় আছে। ট্রেন ছাড়ার আগে নিজেদের কামরায় চলে যাও। রন মন দিয়ে পড়াশুনা করবে। বছরটা তোমাদের খুব আনন্দে কাটুক।

হ্যারি হঠাৎ বলে উঠল, মি. উইসলি আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে পারি?

ও হ্যাঁ অবশ্যই, আর্থার উইসলি একটু আশ্চর্য হলেও তিনি হ্যারিকে নিয়ে সামান্য তফাতে দাঁড়ালেন।

হ্যারি অনেক ভাবনা-চিন্তার পর এই সিদ্ধান্তে এসেছে, মিস্টার আর্থার এখন মিনিস্ট্রিতে দায়িত্বশীল পদে আছেন ওনাকে ব্যাপারটা জানালে হয়তো কাজ হতে পারে। তাছাড়া মি. উইসলি খুব ঠাণ্ডা মানুষ… কথাটা শুনে রাগ করবেন না।

ও আড়চোখে দেখলো মিসেস উইসলি আর দুই হুঁকোমুখো অরর ওর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে।

আমরা সেদিন যখন ডায়াগন এ্যালিতে গিয়েছিলাম, হ্যারি বললো, কিন্তু তার আগেই মিস্টার আর্থার হয়তো ও কি বলতে চায় বুঝতে পেরে ওর দিকে তাকিয়ে রইলেন।

আমাকে কি তোমার কাছ থেকে এ কথা জানতে হবে ফ্রেড–জর্জের ভেতরের রুমে না যেয়ে তোমরা তিন বন্ধুতে কোথায় গিয়েছিলে?

আপনি কেমন করে জানলেন? হ্যারি, তুমি এমন একজন মানুষের সঙ্গে কথা বলছ যিনি ফ্রেড-জর্জের বাবা। ও না, হা… আমরা সেখানে ছিলাম না। খুব ভালো, তাহলে কি বলতে চাও শুনি। আমরা অদৃশ্য হবার ক্লোক গায়ে দিয়ে ড্রেকো ম্যালফয়ের পিছু নিয়েছিলাম। কোনো বিশেষ কারণ ছিলো? না অন্য কোনো কারণে?

কারণ? আমাদের ধারণা হয়েছিল ম্যালফয় কিছু অন্যায় কাজ করতে যাচ্ছে, হ্যারি বললো। মিস্টার উইসলি যে ওর দিকে সহাস্যে, কৌতূহলী হয়ে চেয়ে আছেন সেদিকে হ্যারির কোনো খেয়াল নেই। ম্যালফয় ওর মার চোখে ধূলো দিয়ে কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে জানার জন্য।

অবশ্যই তোমরা গিয়েছিলে আমি জানি; কিন্তু কি হয়েছিল তার কিছু জানতে পারলে ভালো হতো।

ও বোরজিন অ্যান্ড বার্কসে গিয়েছিল, হ্যারি বললো। সেখানে গিয়ে বোরজিনকে বিরক্ত করছিল, বলেছিল একটা কিছু মেরামত করে দিতে। আরো বলেছিল ওর জন্য একটা জিনিস রেখে দিতে। ওর কথা শুনে মনে হচ্ছিল দুটো একই রকমের জিনিস… একটা মেরামত হবে ও একটা সে কিনবে।

হ্যারি একটানা কথাগুলো বলে খুব বড় দেখে একটা নিঃশ্বাস নিল।

তাছাড়া আরো একটা ব্যাপার। মাদাম মালকিন ওর বাঁ হাত স্পর্শ করতেই ম্যালফয় যেন এক মাইল লাফিয়ে উঠল, আমরা তিনজনেই দেখেছি। আমার সন্দেহ ওর হাতে ডার্কমার্কের ছাপ আছে, আরো মনে হয় ওর বাবার স্থানে সে ডেথইটার হয়েছে।

মি. উইসলি অবাক হয়ে হ্যারির মুখের দিকে তাকালেন। তারপর কয়েক সেকেন্ড পরে বললেন, হ্যারি, আমার মনে হয় না যে ইউ-নো-হু একটা যোল বছরের ছেলেকে ডেথইটার করে তার দলে নেবেন।

সকলেই কি জানে ইউ-নো-হু কি চায়, কি করছে, কি করছে না? ওর ধারণাটা বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না বলে হ্যারি একটু ক্রুদ্ধ হলো। মি. উইসলি, আমি অতি দুঃখের সঙ্গে বলছি… ব্যাপারটা তদন্ত করা দরকার? যদি ম্যালফয় কিছু মেরামত করতে চায় আর সেটা এমন কিছু নাহলে বোরজিনকে শাসাতে হবে কেন, মনে হয় ভয়ঙ্কর কিছু করতে চায়।

হ্যারি সত্যি কথা বলতে কি আমার মনে হয় সেরকম কিছু নয়। মি, আর্থার কথাগুলো ধীরে ধীরে বললেন। তুমি বোধহয় জানো বা শুনে থাকবে লুসিয়াস ম্যালফয়কে গ্রেফতার করার আগে আমরা ওর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিলাম। যেসব ক্ষতিকর জিনিসপত্র ওর বাড়িতে ছিল সবইতো আমরা নিয়ে এসেছি।

আমার মনে হয় আপনি কিছু জিনিস নিতে পারেননি, হ্যারি একগুঁয়ের মতো বললো।

মি. উইসলি বললেন, হতে পারে, তা হয়তো হতে পারে! মি. উইসলির মুখ দেখে আর কথা শুনে হ্যারির মনে হলো ওকে শান্ত করার জন্য কথাটা বললেন।

হ্যারি শুনতে পেল ট্রেন ছাড়ার তীব্র বাঁশির শব্দ। দেখলো ট্রেনে প্রায় সকলেই উঠে পড়েছে, দরজা বন্ধ হচ্ছে।

তাড়াতাড়ি উঠে পড়ো, মি. উইসলি হ্যারিকে তাড়া দিলেন, ওদিকে মিসেস উইসলি খুব জোরে জোরে বললেন, হ্যারি, হ্যারি তাড়াতাড়ি উঠে পড়ো!

সে দৌড়ালো, মিস্টার ও মিসেস উইসলি ওর ট্রাঙ্কটা ধরে ট্রেনে তুলে দিলেন।

তো হ্যারি ডিয়ার ক্রিসমাসে আসছো তো? আমাদের সঙ্গে ডাম্বলডোরের কথাবার্তা হয়ে গেছে। শিগগিরই দেখা হবে। মিসেস উইসলি দরজার জানালার কাঁচের ওধার থেকে বললেন। হ্যারি দরজাটা বন্ধ করে দেবার সাথে সাথে ট্রেন ধীরে ধীরে চলতে শুরু করলো। তোমরা সবাই ভালো থাকবে, শরীরের যত্ন নেবে, ভালো থেকো…।

ট্রেন একটু একটু করে গতি বাড়ালো। মিসেস উইসলি ট্রেনের চলার সাথে তাল রেখে দৌড়াচ্ছেন।

ভালো হয়ে থাকবে কিন্তু। সাবধানে থাকবে।

ট্রেনটা বাঁক নিয়ে মিসেস উইসলির দৃষ্টির অন্তরালে না যাওয়া পর্যন্ত হ্যারি হাত নাড়াতে লাগলেন। তারপর হ্যারি গেল দেখতে রন ও হারমিওন কোথায় রয়েছে। ওরা প্রিফেক্ট কামরায় পাশাপাশি বসেছে। জিনিকে দেখল করিডরে দাঁড়িয়ে বান্ধবীদের সঙ্গে কথা বলছে। ওদের পাশ দিয়ে নিজের ট্রাঙ্কটা টানতে টানতে হ্যারি একটা কামরার দিকে চললো।

ট্রেনের যাত্রিরা হ্যারির দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকায়। অনেকেই কামরার জানালার কাঁচে মুখ চেপে ওকে দেখতে লাগলো।

ট্রেনের দোলা আর ঝাঁকুনির মধ্যে বোকার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। ডেইলি প্রফেট ওর সম্বন্ধে লিখেছে দ্য চোজেন ওয়ান। হ্যারি হাজার দৃষ্টির মাঝে বিরাট স্পট লাইটের উজ্জ্বল আলোতে একটুও আনন্দের অনুভূতি পায়, বরং এখান থেকে সরে যেতে পারলে বাঁচে। ও পেছনে ফিরে জিনির কাঁধে মৃদু চাপ দিয়ে বললো, একটা কামরা খুঁজে দেবে?

পারবো না হ্যারি, ডিনের সঙ্গে দেখা করতে হবে, জিনি হাসতে হাসতে বললো। পরে দেখা হবে হ্যারি।

ঠিক আছে, হ্যারি বললো। জিনি ওর লাল চুল দুলিয়ে চলে যাবার সময় ও অদ্ভুত এক বিরক্তি অনুভব করলো। গ্রীষ্মকালে ও ব্যারোতে জিনির উপস্থিতিতে এত অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলো যে একেবারেই বিষয়টি ভুলে গিয়েছিলো। স্কুলে জিনি শুধু ওর সঙ্গেই নয় রন ও হারমিওনের সঙ্গেও ঘোরাফেরা করে না। তারপর ও অর্ধনমিলিত চোখে ভাসাভাসাভাবে চারদিকে তাকালো, মনে হলো ও যেনো অনেক সম্মোহক জাদুতে ভরা কিশোরীদের মাঝে পরিবেষ্টিত হয়ে রয়েছে। ও অস্থিরভাবে ট্রেনের দোলায় দুলতে দুলতে ভাবতে লাগল–ডাম্বলডোর ওকে বারবার বলেছেন, তোমায় বাঁচতে হবে, ভোল্ডেমর্টকে রুখতে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই, হা! তোমাকে অবশ্যই ওকে হত্যা করার প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রফেসির জন্য নয়। কারণ তুমি, তুমি নিজে। তুমি চুপ করে থাকবে না যতদিন না পৃথিবী থেকে পাপ বিদায় নিচ্ছে। ভবিষ্যদ্বাণী থাক বা না থাক হ্যারিকে নিজের প্রয়োজনেই পাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে, পাপকে নির্মূল করে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মাথা উঁচু করে ফিরতে হবে, তাকে দায়িত্ব নিতেই হবে, কারণ ম্যাজিক দুনিয়াতে তার ভাষায় ও হচ্ছে দ্য বয় হু লিভড।

পাপের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যই ও বেঁচে থাকবে। তাহলেই তো দ্য বয় হু লিভডের সার্থকতা–হ্যারি ডাম্বলডোরের কাছে শুনেছে শিশু অবস্থাতে ভোল্ডেমর্ট ওকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। সেই হত্যা প্রচেষ্টায় আক্রমণের চিহ্ন হিসেবে ওর কপালে রয়েছে একটি বিদ্যুতের রেখার মতো দাগ। যখনই ভোল্ডেমর্ট হ্যারির প্রতি মনোযোগ দেয়, তখনই সেই দাগে জ্বালা করে, চুলকোয়!

হাই হ্যারি! পিছনে এক অতি পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে হ্যারি বাস্তব জগতে ফিরে এলো।

পেছনে তাকিয়ে নেভিলকে দেখে হ্যারি স্বস্তি পেলো। মাথার ব্যথাটা কমছে। গোলমুখো নেভিল ওর দিকে হন্তদন্ত হয়ে আসছে ট্রেনের ঝাঁকুনি উপেক্ষা করে। নেভিলের পেছনে একটি মেয়ে, লম্বা লম্বা চুল বড়ো বড় স্বপ্নালু দুই চোখ তার!

লুনা, হাই কেমন আছো তুমি?

খুব ভালো, তুমি ভালো আছো হ্যারি? লুনা বললল। ওর হাতে একটা পত্রিকা, বড়ো বড়ো অক্ষরে ছাপা পত্রিকার মধ্যে রয়েছে এক জোড়া বিশেষ চশমা স্পেকট্রেসপেকস বিনামূল্যে!

ওহো তোমার হাতে দ্য কুইবলার এখনও চলছে, তোমার বাবা চালাচ্ছেন? হ্যারি প্রশ্ন করলো। হ্যারির কুইবলারের ওপর দূর্বলতা আছে। গত বছরে ওর এক্সকুসিভ সাক্ষাৎকার ছেপেছিল।

লুনা কাগজটা বুকে চেপে ধরে খুশিতে উপচে পড়ে বললো, সাকুলেশন অনেক বেড়ে গেছে।

চলো কোথাও বসা যাক, হ্যারি বললো। চলন্ত ট্রেনে ওরা দুলতে দুলতে একদল ছেলের দৃষ্টির প্রাচিরের পাশ দিয়ে প্রায় একটা খালি কামরা পেয়ে সেখানে বসলো।

ওরা আমাদের দিকেও তাকাচ্ছিলো, যেহেতু তোমার সাথে আমরা আছি, নেভিল বললো।

না, তুমি তো মিনিস্ট্রিতে ছিলে তাই, হ্যারি বললো ওর ট্রাঙ্কটা লাগেজ র‍্যাকে তুলতে তুলতে। তুমি তো ডেইলি প্রফেট পড়ো, নিশ্চয়ই আমাদের ছোটখাটো অ্যাডভেঞ্চার সম্বন্ধে কিছু পড়েছো?

ভেবেছিলাম গ্র্যান্ডমা ওইসব খবর পড়লে… মানে পাবলিসিটির জন্য ক্ষেপে যাবেন, নেভিল বললো। কিন্তু সত্যি খুশি হয়েছেন… বলেছেন, তুমি তোমার বাবার মতো জাদুকর হয়েছ আমি দেখে যেতে চাই। এই দেখো এই নতুন দণ্ডটা কিনে দিয়েছেন।

হ্যারিকে ও জাদুদণ্ডটা দেখালো। চেরি আর ইউনিকনের চুল লাগানো। মনে হয় এটাই অলিভেন্ডারের শেষ বিক্রি, পরদিন ও নিখোঁজ হয়ে গেল। এই ট্রেভর এদিকে এসো। ওর ব্যাঙটা ছাড়া পাবার জন্য চেষ্টা করেছিল।

হ্যারি, আমরা কী ডিএ মিটিং এ বছর করবো? লুনা কুইলারের পাতা থেকে ফ্রি দেওয়া সাইকেডেলিক স্পেক্টাকলস ছিঁড়তে ছিঁড়তে প্রশ্ন করল।

এখন আর দরকার নেই, আমব্রিজের হাত থেকে আমরা ছাড়া পেয়েছি তাই? হ্যারি বললো বসতে বসতে। নেভিল হেলান দিয়ে বার্থে বসলো। কথাটা শুনে খুব হতাশ হয়েছে মনে হলো।

আমার ডিএ (ডিফেনস এগেন্সট ডার্ক আর্টস) খুব ভালো লেগেছিল তোমার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছিলাম।

আমারও মিটিং খুব ভালো লাগতো, লুনা বললো। অনেক বন্ধু-বান্ধব হতো।

লুনা মাঝে মাঝে অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে। শুনে হ্যারি বিরক্ত হয়, ওকে হতবুদ্ধি মনে হয়। ও কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই সময় কামরার বাইরে হৈ চৈ শোনা গেল। চতুর্থ বর্ষের কিছু ছাত্রী বাইরে থেকে হাসছে, ফিসফাস করছে।

একজন বললো, তুমি ওকে জিজ্ঞেস করো?

না, তুমি করো! আচ্ছা আমি করছি।

ওদের মধ্যে একটি মেয়ে, বেশ সাহসী মনে হলো ওর মুখ দেখে, বড় বড় টানা টানা চোখ, দেখার মত থুতনি, কালো লম্বা চুল, কাঁচের দরজা ঠেলে হ্যারির কামরায় ঢুকলো। হাই হ্যারি, আমি রোমিল্ডা, রোমিন্ডা ভানে, বেশ স্পষ্ট করে জোর দিয়ে বললো। তুমি এসো না আমাদের কামরায়? এদের সঙ্গে তোমাকে বসতে হবে না, নেভিলকে দেখিয়ে বললো। নেভিল তখন ওর ব্যাঙ খুঁজতে ব্যস্ত। লুনা বিনামূল্যের স্পেকট্রেসপেকস চোখে লাগিয়েছে। ওকে অস্থির চিত্তের বহু রংয়ের পেঁচার মতো দেখাচ্ছে।

হ্যারি বললো, ওরা আমার বন্ধু।

ওহো তাই? মেয়েটি আশ্চর্য হয়ে বললো। ঠিক আছে… ঠিক আছে। দরজাটা বন্ধ করে ও চলে গেল।

লুনা বললো, সকলেই শান্ত বন্ধু চায়। লুনা তার স্বভাবসিদ্ধ অপ্রীতিকর সত্যটি বললো।

কেন তুমি কি শান্ত প্রকৃতির বন্ধু নও? হ্যারি বললো। ওদের মধ্যে কেউতো সেদিন মিনিস্ট্রিতে ছিল না, আমার হয়ে লড়াইও করেনি।

লুনা হ্যারির কথায় আনন্দিত হয়ে বললো, শুনে ভাল লাগলো। এরপর সে কুইবলার পড়া শুরু করলো।

 নেভিল ব্যাঙটাকে আদর করতে করতে বললো, আমার গ্রান্ডমা বলেন, মিনিস্ট্রির সকলের মেরুদণ্ড এক করলেও তোমাদের হ্যারি পটারের মেরুদণ্ডের সমকক্ষ হবে না। তোমার মতো নাতি পেলে অনেক অনেক কিছু তিনি দেবেন।

হ্যারি ওই প্রসঙ্গ এড়াতে আউল প্রসঙ্গে এলো। নেভিল সোচ্চারে ওর গ্রেডের কথা বললো, ওকে ট্রান্সফিগারেসন নিউট নিতে দেবে কি না সন্দেহ প্রকাশ করলো। একটা অ্যাকসেপ্টেবল পেয়েছে মাত্র।

হ্যারি ওর কথায় কান দিল না।

নেভিলের শৈশবও হ্যারিরই মতো, ভোল্ডেমর্ট ধ্বংস করেছে। কিন্তু নেভিল এসব একটুও জানে না। জানে না যে ও হ্যারির পরিণতির কতো কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। প্রফেসি, শুধু হ্যারির ওপর নয় নেভিলের ওপরও প্রযোজ্য! ওদের দুজনের মধ্যে একজনের ওপর। কিন্তু ভোল্ডেমর্ট চায় হ্যারির মৃত্যু একমাত্র তারই মনোগত কারণে! ভোল্ডেমর্ট বেছে নিয়েছে হ্যারিকে, মনে করে হ্যারিকে হত্যা করলে ও বাঁচবে।

ভোল্ডেমর্ট যদি হ্যারির বদলে নেভিলকে বেছে নিতো তাহলে এখন হ্যারির বদলে নেভিলের ওই কপালে বিদ্যুতের মত কাটা দাগ অবস্থান করতো। শুধু তাই নয়, প্রফেসির বোঝা নিয়েও চলতে হতো। অথবা কি হতে পারতো? নেভিলের মা কি ওর ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিতো? যেমন হ্যারির জন্য লিলি প্রাণ দিয়েছে? নিশ্চয়ই দিতো… তাহলে কি নেভিলের মার ভোল্ডেমর্ট আর তার ছেলের মাঝখানে দাঁড়াতে না পারলে কোনো চোজেন ওয়ান থাকতো না? নেভিল যেখানে বসে রয়েছে সেখানে যদি দাগবিহীন হ্যারির অবস্থান হোত তাহলে রনের মায়ের বদলে তার নিজের মা স্টেশনে এসে চুম্বন করে বিদায় জানাতো!

হ্যারি তুমি ঠিক আছে তো? তোমাকে কেমন কেমন দেখাচ্ছে; নেভিল হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললো।

দুঃখিত… আমি…। হ্যারি চমকে উঠে বললো।

মনে হচ্ছে তুমি সমুদ্রতলে ডুবে ছিলে? লুনা ওর চকড়া-বকড়া কাগজের চশমা দিয়ে হ্যারির মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলেশহীন কণ্ঠে বললো।

আমি? কি বললে?

সমুদ্রের তলদেশের গুল্ম। অদৃশ্য থাকে। ওরা তোমার কানের ভেতর দিয়ে মাথায় ঢোকে এবং দৃষ্টিশক্তিকে ঝাপসা করে দেয়। আমি জুম জুম শব্দ শুনলাম। লুনা শূন্যে দুহাত তুলে কিছু অদৃশ্য জিনিস ধরতে চাইল।

হ্যারি, নেভিল দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে কিডিচ খেলার গল্প করতে শুরু করে দিল।

ওদের ট্রেন গন্তব্যস্থলের দিকে তীব্র গতিতে ছুটে চলেছে। বাইরের আবহাওয়া খুব ভ্যাপসা গরমকালে যেমনটি হয়। মাঝে মাঝে কুয়াশার রেখা দেখা যাচ্ছে সীমান্তে। মাঠঘাট সবই সূর্যকিরণে ঝকমক করছে।

অবশেষে রন আর হারমিওন ওদের কমপার্টমেন্টের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো।

আরে লাঞ্চের ট্রলি আসেই না… এদিকে আমার ক্ষিধেতে পেটে আগুন জ্বলছে, রন হ্যারির পাশে বসে পেটে হাত বোলাতে বোলাতে বললো। হাই নেভিল, হাই লুনা আন্দাজ করতো কি বলতে চাই?

কথাটা বলে হ্যারির দিকে মুখ ফেরালো। ম্যালফয় প্রিফেক্টের ডিউটি করছে, শ্রিদারিনদের কাছে বসে রয়েছে। এখানে আসতে আসতে ওকে দেখলাম।

হ্যারি একটু কাৎ হয়ে বসেছিল, রনের কথা শুনে সোজা হয়ে বসলো। ব্যাপারটা জানার জন্য উৎসুক হয়ে উঠল। একজন প্রিফেক্ট হয়ে এমন অলসভাবে বসে থাকবার পাত্ৰতো ও নয়। গত কয়েক বছরে ম্যালফয় প্রিফেক্ট হয়ে যেসব কাণ্ডকারখানা করেছিল, হ্যারির তা খোলার কথা নয়।

তোমাকে দেখে ও কিরকম ভাব দেখালো?

আগের মতই রন তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বললো। কিন্তু ব্যাপারটা বুঝলাম না। ফাস্ট ইয়ারের ছাত্রদের পেছনেও লাগছে না।

কে জানে, হ্যারি বললো। কিন্তু হ্যারির মনের মধ্যে ঘুরতে লাগল ফাস্ট ইয়ারের ছেলেদের পেছনে লাগার চাইতেও নিশ্চয়ই আরো কিছু বদ মতলব ভাজছে।

হতে পারে ও তদন্তের স্কোয়াডের কথা ভাবছে, হারমিওন বললো। ও একজন প্রিফেক্ট, ডায়গন এ্যালির ঘটনাগুলো মনে করে হয়তো নিজেকে দুর্বল ভাবছে।

আমার কিন্তু সেসব মনে হয় না, হ্যারি বললো। আমার মনে হয় ও।

হ্যারি ওর কথাটা শেষ করার আগেই ওদের কমপার্টমেন্ট বাইরে থেকে কেউ খুললো। ওরা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল একটি থার্ডইয়ারের মেয়ে রুদ্ধনিঃশ্বাসে ঢুকলো।

ও তোতলাতে তোতলাতে বললো, আমাকে এই চিঠিটা নেভিল লংবটম আর হ্যারি পটারকে দিতে বলা হয়েছে।

হ্যারির দিকে চোখ পড়তেই মেয়েটির লাল গাল দুটো আরো লালচে হয়ে গেল। ওর হাতে বেগুনি রিবনে বাধা দুটো পাকানো পার্চমেন্ট!

হঠাৎ দুটি চিঠি! নেভিল–হ্যারি ব্যাপারটা ঠিক উপলব্ধি করতে পারলো না। ওরা মেয়েটির হাত থেকে ওদের নাম লেখা পাকানো পার্চমেন্ট দুটো নিল। মেয়েটি প্রায় হোঁচট খেতে খেতে কম্পার্টমেন্টের বাইরে চলে গেল।

রন মুখ ঝুঁকিয়ে বললো, ওটা কী? হ্যারি পার্চমেন্টটা খুলতে খুলতে বললো, নিমন্ত্রণ পত্র।

হ্যারি,
আমি অতিশয় আনন্দিত হবে যদি তুমি আমার কমপার্টমেন্ট সিতে এসে আমার সঙ্গে লাঞ্চ খাও।
তোমার বিশ্বস্ত, প্রফেসর এইচ.ই.এফ স্লাগহর্ন

নেভিল ওর নামে লেখা নিমন্ত্রণপত্রটা পড়ে হ্যারিকে জিজ্ঞেস করল, প্রফেসর স্লাগহর্ন কে?

আমাদের নতুন টিচার, হ্যারি বললো, আমার মনে হয় আমাদের যাওয়া উচিত, তাই না?

কিন্তু আমাকে কেন ডাকলেন? নেভিল ভীত হয়ে বললো। ওর মুখের ভাব এমন যে ডিটেনসনের জন্য টিচার ওকে অর্ডার পাঠিয়েছেন।

আমার কোনো আইডিয়া নেই হ্যারি বললো, কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ সত্য নয়, যদিও নিশ্চিত জানে না, তবে যা অনুমান করছে, সেটা সত্য হতে পারে।

হঠাৎ যেন ওর মাথায় বুদ্ধি খেললো; ও বললো, চলো আমরা অদৃশ্য ক্লোক পরে যাই। যাওয়ার সময় ম্যালফয়কে ভালো করে দেখবো। কী করছে সে।

ক্লোক গায়ে চড়িয়ে প্রফেসর স্লাগহর্নের কমপার্টমেন্টে যাবার সময় ম্যালফয়কে দেখার তেমন সুযোগ হলো না। করিডরে লাঞ্চের ট্রলির জন্য অসম্ভব ভিড়। হ্যারি বাধ্য হয়ে ক্লোকটা ব্যাগের মধ্যে রেখে দিল। করিডরে ভিড় বেড়েই চলছে, হাঁটা দুস্কর। করিডরে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেমেয়েরা সকলেই ওকে দেখছে, নিজেদের মধ্যে ওকে দেখিয়ে কিছু কথাবার্তা বলছে। সেখানে চো চ্যাংও দাঁড়িয়েছিল, ওকে দেখে নিজের কমপার্টমেন্টে চলে গেল। হ্যারি কমপার্টমেন্টের খোলা জানালা দিয়ে দেখলো চো চ্যাং ওর বান্ধবী মারিয়েটার সঙ্গে গল্প করছে। মারিয়েটা বরাবরই বেশি মেকআপ করে। মুখে অনেকগুলো প্রলেপ দিয়েও গালের লাল লাল বড়ো বড়ো ব্রনগুলোকে চাপা দিতে পারেনি। হ্যারি ওদের দিকে তাকিয়ে বোকার মতো হেসে এগিয়ে গেল।

ওরা ভেবেছিল প্রফেসর স্লাগহর্ন শুধুমাত্র ওদের দুজনকে লাঞ্চ খেতে ডেকেছেন। কিন্তু ঘরে ঢুকে দেখল আরো জনাচারেক বসে রয়েছে।

স্লাগহর্ন ওদের দেখে এগিয়ে এসে স্বাগত জানালেন। বললেন, হ্যারি মাই বয় তুমি এসে গেছে!

ভেলভেটে মোড়া ওর নাদুস নুদুস ভূড়িটা কম্পার্টমেন্টের অনেকাংশ জুড়ে দখল করে থাকে হ্যারির কাছে লাফিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময়! ওর ওয়েস্ট কোটের সোনালী বোতাম, রূপালী বিরাট পাকা গোঁফের ওপর সূর্যের আলো পড়ে চমকাতে লাগল।

আবার বললেন, বাঃ বাঃ সত্যি তোমাদের দেখে খুব আনন্দিত। আহা! তুমি তাহলে নেভিল লংবটম?

কথাটা শুনে শ্রদ্ধার সঙ্গে মাথানত করল নেভিল। হ্যারির মুখ দেখে মনে হলো নেভিল খুব ঘাবড়ে গেছে স্লাগহর্নের বিরাট বপু ও খাটো চেহারা দেখে।

ওরা দুজনে দুটো খালি চেয়ার দেখে সামনা-সামনি বসল। চেয়ার দুটো দরজার কাছেই রাখা ছিল।

হ্যারি কামরার অন্যান্য অতিথিদের দিকে তাকাল। একধারে বসে রয়েছে ব্লেইসে জাবিনি। একই ক্লাসে পড়ে, তবে ও স্নিদারিন হাউজের। জাবিনি এমনভাব দেখল যেন হ্যারি ও নেভিলকে চেনে না। এ ছাড়া আরো দুজন এক কোণে বসে রয়েছে।

স্লাগহর্ন পরিচয় করিয়ে দিলেন ওদের সঙ্গে। এর নাম করম্যাক ম্যাকলেগেন, মনে হয় তোমাদের সঙ্গে ওর পরিচয় আছে? আছে কি?

করম্যাক হাত তুলে অভিবাদন জানাল ওদের। এর নাম মারকাস বেলবি… তোমাদের সঙ্গে ওর পরিচয় আছে কি নেই…? বেলবি একটু নার্ভাস প্রকৃতির… অদ্ভুতভাবে হাসলো।

এই চার্মিং ইয়ং মেয়েটি আমাকে বলেছে ও তোমাদের চেনে, স্লাগহর্ন জিনিকে হাত দিয়ে দেখালেন। জিনি ওদের দিকে তাকিয়ে হাসলো। ও স্লাগহর্নের ঠিক

পেছনে বসেছিল। ওর হাসি স্লাগহর্ন লক্ষ্য করেনি।

ম্যাকলেগেন আর বেলটা সপ্তম বর্ষের ছাত্র, ওদের সঙ্গে হ্যারির পরিচয় না থাকারই কথা।

এখন তোমাদের সঙ্গে সকলের পরিচয় করিয়ে দিলাম। তোমরা ন্যাপকিন নাও, আমি আমার লাঞ্চ নিয়ে এসেছি, ট্রলির খাবার এই বৃদ্ধের পেটে সইবে না,

কি বলো বেলবি?

কথাটা শুনে বেলবি হাসল।

আমি এই মাত্র ইয়ং মারকাসকে বলছিলাম যে ওর আঙ্কল ডেমোক্লেসকে পড়াবার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল, স্লাগহর্ন নেভিল আর হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললেন। ওদের দিকে এক বাস্কেট রোল ঠেলে দিলেন। আউটস্ট্যান্ডিং জাদুকর, সত্যিই আউটস্ট্যান্ডিং এবং ওর অর্ডার অফ মার্লিন প্রাপ্তি যথাযোগ্য ছিল। মারকাস ইদানিং কি তোমার আঙ্কলের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হয়?

সবেমাত্র বেলবি বিরাট এক টুকরো ফিজা মুখে পুরেছে। স্লাগহর্নের প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য ওটা ঘোঁৎ করে গিলে ফেললো বেলবি। সবটা পেটে না গিয়ে গলায় আটকে রইল খানিকটা। দম বন্ধ হবার অবস্থা ওর! কাসতে লাগল।

অ্যালাপ নিও, বেলবির দিকে তাকিয়ে ধীর স্থিরভাবে বললেন, হাতের জাদুদণ্ডটা ওর দিকে এগিয়ে দিলেন। তৎক্ষণাৎ ওর কাশি কমে গেল।

না… খুব বেশি জানতাম না, বেলবির তখনও কাসি সম্পূর্ণ থামেনি, চোখে কাসির জন্য জল।

আমি জানি তিনি খুবই ব্যস্ত মানুষ। স্লাগহর্ন বললেন বেলবির দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে। আমি অনুমান করতে পারি ওর উলফসবেন পোশান আবিষ্কার করতে তাকে কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে।

আমিও মনে করি… বেলবি বললো, স্লাগহর্নের কথা শেষ হয়েছে কিনা ও বুঝতে পারল না। ওর সঙ্গে আমার বাবার বনিবনা ছিল না… তাই ওই বিষয়ে কিছু জানি না।

ওর কথাটা শেষ হবার আগেই স্লাগহর্ন করম্যাকের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার আঙ্কল টাইবেরিয়াসের সঙ্গে তোমায় অনেক দেখেছি। নগটেলস বা নরফোকে, তোমাদের শিকার করার অনেক অপূর্ব ছবি দেখেছি।

হ্যাঁ ওগুলো খুব মজার ব্যাপার ছিল, ম্যাকলেগেন বললো।

আমাদের সঙ্গে ছিলেন বারটি হিগস আর রূফাস স্ক্রিমগৌর, অবশ্য তিনি মন্ত্রী হবার আগে।

আহ তাহলে তুমি ওদের চেনো? স্লাগহর্ন হাসতে লাগলেন। ওদের দিকে ছোট ট্রেতে মটরশুটি এগিয়ে দিয়ে বললেন, এখন বলো…।

হ্যারি এই রকমই একটা কিছু সন্দেহ করেছে। স্লাগহর্ন যাদের ডেকেছেন তারা হয় নিজেরা খ্যাতিমান, বা খ্যাতিমান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারো কিছু হয়। অবশ্য জিনি বাদে।

ম্যাকলেগেনের পরে জাবিনির সঙ্গে কথা বললেন। ওর মা খুবই সুন্দরী ডাইনি ছিলেন, হ্যারি কথাবার্তায় বুঝতে পারল, ওর মা সাত সাতটা বিয়ে করেছিলেন। প্রতিটি বিয়ের পর তার স্বামী সন্দেহজনক ভাবে মারা গেছেন, আর রেখে গেছেন প্রচুর সোনা-দানা। এরপর নেভিলের পালা। নেভিলের বাবা-মা খুবই নামকরা অরর ছিলেন, বেল্লাট্রিকসের ও আরো কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ ডেথইটারদের নির্যাতনে পাগল হয়ে গেছেন। নেভিলের সঙ্গে কথাবার্তা শেষ হলে হ্যারি ধরে নিয়েছে

স্লাগহর্ন নেভিল সম্বন্ধে কিছু বলবেন না, তবে অপেক্ষা করছিলো ওর বাবা-মা সম্বন্ধে আর কি বলেন! না, আর নতুন কিছু বললেন না, এবার হ্যারির দিকে তাকালেন।

স্লাগহর্ন বললেন, এখন তুমি বলো কোথা থেকে শুরু করা যায় হ্যারি? আমার ধারণা গত গ্রীষ্মে তোমার সঙ্গে আমার যখন দেখা হয়েছিল তখন তো তোমার বিষয়ে তেমন কোন আলাপ হয়নি।

স্লাগহর্ন স্থির দৃষ্টিতে হ্যারির দিকে তাকালেন এমনভাবে যে ফিজেন্ট পাখির মাংসের তৈরি খাবারের মাঝখানের অংশ দেখছেন। বললেন, দ্য চোজেন ওয়ান… তোমাকে এখন সকলে ওই নামে ডাকে তাই না! হ্যারি কোন উত্তর করল না, ম্যাকলেগেন এবং জাবিনি তখন ওর দিকে একটু ভাল করে তাকালো।

অবশ্যই, স্লাগহর্ন বললেন হ্যারিকে খুব কাছ থেকে দেখতে দেখতে, অনেক বছর ধরে কথাটা চারদিকে আছে, কখন থেকে সেটা, ও হ্যাঁ সেই বীভৎস রাত্রির পর লিলি–জেমস–হ্যাঁ তুমি বেঁচে থাকলে, কেন বাঁচলে কেননা তোমার সাধারণ মানুষের চাইতে অনেক বেশি শক্তি আছে বলে সকলের ধারণা।

জাবিনি সেই সময় গলা খাকাড়ি দিল। সকলেই বুঝতে পারল জাবিনি কথাটা শুনে খুব মজা পেয়েছে। ঠিক সেই সময় স্লাগহর্নের পেছন থেকে প্রতিবাদের শব্দ শোনা গেল।

হ্যাঁ, জাবিনি, কারণ তুমি নিজেকে খুব প্রতিভাশালী মনে করো।

ওহ ডিয়ার! স্লাগহর্ন বললেন জিনির দিকে তাকিয়ে। জিনি তখনও স্লাগহর্নের বিরাট বপুওয়ালা শরীরের পেছন থেকে জাবিনির দিকে তাকিয়েছিল। কি বলছিলাম স্লাগহর্ন বললেন, তোমার একটু বুঝে সুঝে কথা বলা উচিত, ব্লেইসে! আর এই মেয়েটি কিন্তু খুব ছোট মাপের নয়। অত্যন্ত গুণি মেয়ে, আমি দেখেছি কত ভাল ব্যাট বলে হেক্স খেলে সে। আমি ওকে অবজ্ঞা করি না।

জাবিনি অবজ্ঞার দৃষ্টিতে তাকালো।

যাই হোক, হ্যারির দিকে ফিরে স্লাগহর্ন বললেন, এই গ্রীষ্মে এত গুজব চারদিকে যে লোকেরা জানে না কোনটা বিশ্বাস করবে, প্রফেট যে ভুল তথ্য দেয় এটা সুবিদিত, মিথ্যা কথাও লেখে সময় সময়ে–তবে যে সমস্ত সাক্ষ্য সাবুদ উল্লেখ করেছে সংবাদটিতে তাতে তেমন সন্দেহ করা যায় না–মিনিস্ট্রিতে বেশ কিছু গোলমালের সৃষ্টি হয়েছিল এবং সেই সময়ে তুমি সেখানে উপস্থিত ছিলে।

হ্যারির অবশ্য মিথ্যে কথা বলা ছাড়া অন্য কিছু বলার পথ ছিল না। তবুও ও চুপ করে রইলো, কোনো কথা বললো না। স্লাগহর্ন সোজা ওর দিকে তাকালেন।

এতো বিনয়ী, এতো বিনয়ী… কোনো আশ্চর্যের ব্যাপার নেই ডাম্বলডোরের পছন্দের তুমি সেই সময়ে সেখানে ছিলে, তারপর? বাকি ঘটনা এতো রোমাঞ্চকর, উত্তেজনাপূর্ণ… বোঝা-জানা কঠিন কি বিশ্বাস করবো–ধরো, ওই উপকথার মতো প্রফেসি…।

আমরা কোনো প্রফেসির কথা শুনিনি, নেভিল বললো, ওর মুখটা লাল হয়ে গেলো।

সম্পূর্ণ সত্য, জিনি বললো নেভিলকে সমর্থন করে। নেভিল ও আমি দুজনেই ছিলাম, ওই রকমই চুজেন ওয়ানের মত কোন শব্দ বলেনি।

স্লাগহর্ন খুবই উৎসাহের সঙ্গে বললেন, তোমরা সে সময় সেখানে ছিলে বলছো। নেভিল ও জিনির দিকে তাকালেন। ওরা দুজনেই স্লাগহর্নের স্মিত হাসির সামনে শান্তভাবে বসে রইলো। হ্যাঁ, একথা সত্য প্রফেট প্রায়ই বাড়িয়ে চড়িয়ে লেখে, আমার বেশ মনে আছে গয়েনগ আমাকে বলেছিলেন, গয়েক জেমস, হোলিহেড হার্পলেসের ক্যাপ্টেনের কথা বলছি।

স্লাগহর্ন অতীতের কিছু মনে করার চেষ্টা করতে লাগলেন… হ্যারি কিন্তু বুঝতে পারলো স্লাগহর্ন যা বলতে চান তা শেষ করেননি শুধু নয়, নেভিল আর জিনির কথা ঠিক নয় সেটাও ভাবছেন।

বিকেলটা বেশ ভালোভাবেই জমে উঠলো। সকলেই সাস্লাগহর্নের সুগাবে আরো কিছুক্ষণ থাকতে চায় বলে মনে হলো। হ্যারির অবশ্য ইচ্ছে ছিলো না; কিন্তু অভদ্রতা করে কিভাবে সে একা চলে যাবে। স্লাগহর্নের মতো খ্যাতিসম্পন্ন। জাদুকরের সঙ্গে থেকে অনেক কিছু শেখা-জানা থেকে কেউ বঞ্চিত হতে চাইলো না।

শেষ পর্যন্ত ওদের আরেকটি রৌদ্রতপ্ত দিন শেষ করে সন্ধ্যাপূর্বের মিঠে আলোতে যাত্রা শেষ হলো। স্লাগহর্ন জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন, সন্ধ্যালোকে চোখ পিটপিট করতে লাগলেন।

অবাক কাণ্ড।

সন্ধে হয়ে এসেছে দেখছি! লক্ষ্যই করিনি কামরায় বাতি জ্বেলে দেয়া হয়েছে! তোমরা যে যার কামরায় গিয়ে পোশাক-টোশাক বদলে নাও, রোবস ছাড়ো। ম্যাকলেগেন তুমি কিন্তু দেখা করবে আমার সাথে, আর তখন নগটেইলসের ওপর বইটা নিয়ে আসবে; হ্যারি, ব্লেইস তোমরাও সময় করে আসবে, তুমিও মিস জিনি… এখন তোমরা যেতে পারো।

যে যার কামরায় যাবার সময় অন্ধকার করিডরে জাবিনির সঙ্গে হ্যারির দেখা হলো। জাবিনি হ্যারির দিকে ভ্র-কুচকে তাকালো। হ্যারিও সেরকম করে প্রত্যুত্তর দেয়। ওরা তিনজনে আপন আপন কামরায় চললো। জাবিনি আগে আগে ওরা তার পেছনে।

নেভিল বললো, বাচলাম বাবা; অদ্ভুত মানুষ… তাই না?

হ্যাঁ যা বলেছে, হ্যারি বললো। চোখ কিন্তু ওর জাবিনির দিকে। জিনি উনি তোমায় কখন ডেকে পাঠালেন?

আমাকে, ডিফেন্স এগেন্সট ডার্কআর্টসের সেই বোকা বোকা ছেলেটা জ্যাকেরিয়া স্মিথের সঙ্গে কথা বলতে দেখেছিলেন… আরে হাফপাফের সেই ছেলেটা! সে ছেলেটা তখন আমাকে বার বার জিজ্ঞেস করেছিলো মিনিস্ট্রিতে কি হয়েছিল। বিশ্বাস করো, প্রশ্নবানে আমার মাথা ধরিয়ে দিয়েছিলো, মনে হচ্ছিল ওর মাথাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিই, আমি তাকে হেক্সড করি ঠিক সেই সময়ে স্লাগহর্ন এলেন, আমি ভাবলাম বোধহয় উনি হয়তো আমাকে ডিটেন্ড করবেন… কিন্তু তিনি মনে করেছেন হেক্সডটা খুব ভাল হয়েছিল তা-ই তিনি আমাকে লাঞ্চে আসার নেমন্তন্ন করলেন। দারুণ ব্যাপার হলো বটে!

তাহলে ভাল, অনেকে আবার ভিন্ন কারণে নেমতন্ন পায়, কারও মা খুব ফেমাস… হ্যারি বললো জাবিনিকে শুনিয়ে। অথবা কারও নাম করা কাকা, মামা থাকলে পাত্তা পাওয়া যায়।

বলতে বলতে ও থেমে গেলো। একটা আইডিয়া হঠাৎ ওর মাথায় এসেছে, বেপরোয়া হলেও অপূর্ব আইডিয়া… এক মিনিট পরেই তো জাবিনি ওর সিকসথ ইয়ারের কামরায় ঢুকবে, ম্যালফয়ও নিশ্চিত সেখানে থাকবে। ও ফিরে যেয়ে যে কথাই বলুক ভাববে ওর স্নিদারিন বন্ধুরা শুধু শুনছে… যদি হ্যারি সেই কামরায় অদৃশ্য হয়ে ঢোকে তাহলে কেমন হবে? পথ তো আর বেশি বাকি নেই–হগসমিড স্টেশনে পৌঁছতে আর আধঘণ্টাও লাগবে না। অদৃশ্য হবার রোবসটা পরে ও ওদের কামরায় ঢুকলে, হ্যারি যে ঢুকেছে জানতেই পারবে না।

হ্যারি ক্লোকটা গায়ে চাপাতে চাপাতে নেভিল আর জিনিকে বললো, পরে তোমাদের সঙ্গে কথা হবে..।

কিন্তু তুমি কোথায় চললে? নেভিল জানতে চাইলো।

পরে! হ্যারি ফিস ফিস করে বললো। পা টিপে টিপে জাবিনিকে পেছনে ফেলে ম্যালয়ের কামরার সামনে দাঁড়ালো। ট্রেনের খটাখট খটাখট শব্দে জাবিনি হ্যারির পায়ের মৃদুশব্দ শুনতে পেলো না। সমস্ত করিডরটা জনশূন্য। ছেলেমেয়েরা পোশাক পরিবর্তন করার জন্য যার যার কামরায় চলে গেছে। জাবিনি কামরার দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকতে যাবে কিন্তু পারলো না। জাবিনির পেছন পেছনে হ্যারি দ্রুত ভেতরে যেতে পারেনি। হ্যারি ভেতরে ঢোকার কারণে সে দরজা বন্ধ করতে পারছে না।

ধ্যাৎ দরজা বন্ধ হচ্ছে না কেন? জাবিনি চাইডিং ডোরটা জোর দিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করতে লাগলো; কিন্তু হ্যারি পা বাড়িয়ে আটকে রাখার জন্য পারলো না। হ্যারি ভেতরে ঢুকে পাটা সরিয়ে নিতেই জাবিনি হুড়মুড় করে কামরার মধ্যে গ্রেগরি গোয়েলের কোলের ওপর পড়ে গেলো। হ্যারি একটি সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে জাবিনির সিটের ওপোরের লাগেজ র‍্যাকে বসে পড়লো। ভাগ্য ভালো সে সুযোগ পেলো যুৎসই বসার। জাবিনি আর গোয়েলে তখন তর্কাতর্কি করছে। কামরার সকলের চোখ তখন জাবিনি আর গোয়েলের বাকযুদ্ধে নিবদ্ধ। হ্যারি র‍্যাকে ওঠবার সময় একটুও খেয়াল করেনি রোবস থেকে পা দুটো বেরিয়ে আছে। ও তাড়াতাড়ি অদৃশ্য রোবস টেনে পা ঢাকা দিলো। ঢাকা দেবার সময় ওর মনে হলো হয়ত ওর পা দুটো ম্যালফয় দেখে ফেলেছে। না সেরকম কিছু নয়। জাবিনি দরজাটা শব্দ করে বন্ধ করে দিয়ে নিজের সিটে বসলো।

ম্যালফয় প্যানসি পার্কিনসনের কোলে মাথা দিয়ে পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। হ্যারি র‍্যাক থেকে দেখলো প্যানসি ম্যালফয়ের মাথার চুলে বিলি কাটছে।

ট্রেন দ্রুতগতিতে চলছে, প্যানসি ম্যালফয়ের কপালে হাত বোলাচ্ছে… ঠিক সেই সময়ে ম্যালফয় কথা বললো।

তো জাবিনি স্লাগহর্ন কি চাইছেন কিছু আন্দাজ করতে পারলে? যাদের কিছু পরিচয় আছে উনি তাদের সাথে সম্পর্ক গড়তে চান। তবে খুব একটা লোক হয়নি। গোয়েল তখনও ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে হ্যারি দেখলো।

জাবিনি যেসব কথা বললো তা ম্যালয়ের মনপুত হলো না। তোমাকে ছাড়া আর কাকে কাকে ডেকেছিলেন? ম্যালফয় জানতে চাইলো। গ্রিফিন্ডারের ম্যাকলেগেন, জাবিনি বললো।

তাতে ডাকবেই। ওর আঙ্কল মিনিস্ট্রিতে বড় চাকরি করে তো। ম্যালফয় বললো।

র্যাভেনকুতে একজন বেলবি… তাকে…। ওটাতো শুধু বক বক করে, প্যানসি বললো।

আর ডেকেছিলেন লংবটম, পটার আর উইসলিদের মেয়েটা জিনিকে। জাবিনি শেষ করলো।

ম্যালফয় তড়াক করে লাফিয়ে উঠল। প্যানসির হাতটা সজোরে পার্টিসানে লাগলো।

কি বললে, লংবটমকে ডেকেছিলেন? হ্যাঁ আমার তো তাই মনে হয়, জাবিনি ভিন্নভাবে কথাটা বললো।

স্লাগহর্ন কি পেল লংবটমের কাছে, ম্যালয়ফ অবাক হয়ে বললো। জাবিনি ম্যালয়ের উত্তেজিত প্রশ্ন শুনে কাঁধ ঝাঁকালো।

পটার, দামী পটার, স্বাভাবিক–অবশ্যই চুজেন ওয়ানকে দেখতে চেয়েছিলেন, ম্যালফয় ব্যাঙ্গ করে বললো, কিন্তু ওই উইসলি মেয়ের!

অনেক ছেলেরাই ওকে পছন্দ করে, প্যানসি বলে ম্যালফয়ের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করার জন্য ওর মুখের দিকে আড়চোখে তাকালো। তুমিও তো বলো মেয়েটা দেখতে সুন্দর, বলো না? ব্লেইস, এবং আমরা সকলে জানি তুমি ওকে খুশি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে!

আমি ওর মতো একটা নোংরা ব্লড ট্রেটরকে স্পর্শ করতে চাই না, তা সে যতোই সুন্দরী হোক না কেন, জাবিনি তিক্ত স্বরে বললো। প্যানসি ওর কথা শুনে মনে হয় খুশি হলো। ম্যালফয় আবার প্যানসির কোলে মাথা রাখলো যেন প্যানসি ওর চুলে বিলি কাটতে পারে।

ওয়েল, স্লাগহর্নের রুচি দেখে আমার লজ্জা করছে। মনে হয় অথর্ব হয়ে গেছেন। লজ্জা করে, আমার বাবা সব সময়ে বলতেন ওর আমলে স্লাগহর্ন খুব ভালো জাদুকর ও টিচার ছিলেন। বাবা ওর প্রিয়ও ছিলেন। খুব সম্ভব সুস্লাগহর্ন জানে

একই ট্রেনে আমরা হোগার্টস চলেছি। অথবা…।

আমি ওনার নিমন্ত্রণের তোয়াক্কা করি না, জাবিনি বললো। যখন আমি গেলাম, আমাকে নটের বাবার কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন, শুনেছি তারা খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, কিন্তু যখন শুনলেন যে মিনিস্ট্রি তাকে গ্রেফতার করেছে তখন তার মুখের চেহারা পাল্টে গেলো। নটকে তিনি নিমন্ত্রণ করেননি? আমার মনে হয় স্লাগহর্ন ডেথইটার সম্বন্ধে ইন্টারেস্টেড নন।

ম্যালফয়কে খুব ক্রুদ্ধ দেখালেও, তবু মুখে হাসি বজায় রাখলো। কে ওর ইন্টারেস্ট সম্বন্ধে তোয়াক্কা করে শুনি? ও কে? সামান্য এক বোকা টিচার, ম্যালফয় হাই তুলে পা ছড়িয়ে বললো। আমার আগামী বছর হোগার্টসে থাকার ইচ্ছে নেই। একটা মোটা বুড়ো আমাকে ডাকলো বা না ডাকলো তাতে কি যায় আসে?

কী বলছো, আসছে বছর তুমি হোগার্টসে থাকবে না? প্যানসি রেগে গিয়ে ম্যালফয়ের কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিলো।

তোমাদের বলিনি, ম্যালফয় ভূতের মতো মুখ করে বললো। আমি আগামী বছর কোনো বড় কাজও তো করতে পারি।

লাগেজ র‍্যাকে অদৃশ্য হয়ে বসে হ্যারির বুকের ভেতরটা দপ দপ করতে লাগলো। এই ব্যাপারে এখন রন আর হারমিওন কি বলবে? ক্র্যাবে আর গোয়েলে ম্যালয়ের মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। ওদের মুখ দেখে মনে হয় আগামী বছর ওদের অন্য কোনো জায়গায় যাবার পরিকল্পনা নেই। তা সে হোগার্টস থেকে বড়ো হোক বা ছোট হোক। জাবিনি এতক্ষণ পর্যন্ত বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। প্যানসি আবার ম্যালফয়ের চুলে মৃদু মৃদু টান দিতে শুরু করলো। মুখটা খুবই গম্ভীর। তুমি ঠাট্টা করছে।

ম্যালফয় কাঁধ ঝাঁকালো।

মা চান আমি পড়াশুনো চালিয়ে যাই; কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি আজকাল এটা খুব প্রয়োজনীয় নয়, আমার মনে হয় এ বিষয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন আছে। ডার্কলর্ড ক্ষমতায় আসলে তোমরা কি মনে করো, কে কটা পেঁচা পেলো তা নিয়ে মাথা ঘামাবেন? না ঘামাবেন না, উনি চাইবেন আমরা তার হয়ে কলোটা কাজ করবো, তার প্রতি আমাদের আস্থা-শ্রদ্ধা-ভক্তির স্তর কতখানি।

তোমার কি মনে হয় তুমি লর্ডের জন্য কিছু করতে পারবে? জাবিনি প্রশ্ন করল, তীক্ষ্ণ স্বরে। তোমার বয়সতো মাত্র ষোল এখনও তো নিজেকে তেমনভাবে তৈরি করতে পারোনি। যোগ্যতা কতটুকু?

আমি এইমাত্র কি বললাম? আমার লেখাপড়ার যোগ্যতা কতখানি সে বিচার নয়, আসলে কোন কাজটা আমাকে দিয়ে করাতে চাইছেন সেই কাজ করার আমার যথেষ্ট যোগ্যতা আছে কি নেই সেটাই তিনি বিচার করবেন, ম্যালফয় ধীর শান্তভাবে বললো।

ক্রাবে আর গোয়েলে জল বেরোবার নালার মতো মুখ হাঁ করে ম্যালয়ের কথা শুনছিল। প্যানসি বড়ো বড়ো চোখ করে ম্যালফয়ের মুখের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে রইল যেন এর আগে কখনো কাউকে এতো আতঙ্ককর কথা বলতে শোনেনি।

ওই তো হোগার্টস দেখতে পাচ্ছি ম্যালফয় বললো। সকলের মধ্যে তার কথার প্রতিক্রিয়ার গভীরতা উপলব্ধি করে সে। ও জানালার কালো কাঁচের দিকে তাকিয়ে বললো, রেডি হয়ে স্কুলের ড্রেস পরে নাও।

হ্যারি এতে মনোযোগ দিয়ে ম্যালফয়েল ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা শুনছিলো যে, গোয়েলে কখন এসে ওর মালপত্র বোঝাই ট্রাঙ্কটা টেনে নামালো, বুঝতে পারেনি। নামাবার সময় ওর মাথায় লাগলো ট্রাঙ্কের একটা ধার। ও মৃদু উ শব্দ করতেই ম্যালফয় লাগেজ র‍্যাকের দিকে মুখ তুলে ভুরু কোঁচকালো।

হ্যারি অবশ্য ম্যালফয়কে ভয় পায় না, ওকে তোয়াক্কা করে না, কিন্তু এতগুলো স্লিদারিনের কাছে ও অদৃশ্য হবার রোবস পরে ওদের কথা শুনেছে সেটা প্রকাশ পেলে কী বিশ্রি ব্যাপার হবে ভেবে সাবধান হলো। কিছু ঘটতে পারে এইরকম আশঙ্কায় ও ধীরে ধীরে পকেট থেকে ম্যাজিক ওয়ান্ডটা বার করে প্রস্তুত হয়ে রইলো, তবে অদৃশ্য হবার রোবসটা গায়ে ভালো করে জড়িয়ে।

যাক… ও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। ম্যালফয় নিশ্চয়ই শব্দটা অন্য কোথাও থেকে এসেছে ভেবে নিজের ট্রাঙ্কটা র‍্যাক থেকে নামিয়ে তালা খুলে রোবসটা খুলে নতুন ট্রাভেলিং রোবসটা পরে নিলো।

হ্যারি করিডরের দিকে তাকিয়ে দেখলে খুব ভিড়, সকলেই বাকসো–প্যাটরা নিয়ে নামার জন্য প্রস্তুত। রন-হারমিওন নিশ্চয়ই ওর ট্রাঙ্ক প্লাটফরমে নামিয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করবে। হ্যারি ম্যালফয়দের কামরা একেবারে খালি হয়ে যাওয়া পর্যন্ত র‍্যাকে বসে রইলো। ও দেখলো গোয়েলে গায়ের জোরে সেকেন্ড ইয়ার ছাত্রদের ধাক্কা দিয়ে প্লটফরমে নামলো। ওর পেছনে পেছনে জাবিনি আর ক্র্যাবে নেমে পড়লো।

প্যানসি দরজার বাইরে গিয়ে ম্যালফয়ের হাত ধরার জন্য হাতটা বাড়িয়ে দিল। ম্যালফয় ওর হাতটা সরিয়ে দিয়ে বললো, তুমি যাও…একটা জিনিস পরীক্ষা করতে হবে। প্যানসি জানে না ম্যালফয় কি পরীক্ষা করতে যাচ্ছে।

প্যানসি ওর কথায় ব্যথিত হলো। কামরায় শুধু রইলো হ্যারি আর ম্যালফয়। ম্যালফয় দরজাটা বন্ধ করে জানালার ব্লাইন্ডগুলো নামিয়ে দিলো যাতে বাইরে থেকে কিছু দেখতে না পাওয়া যায়।

হ্যারি লাগেজ র‍্যাক থেকে নিচে তাকালো। উত্তেজনায় ওর বুকের ভেতরটা ধড়াস ধড়াস করছে। বুঝতে পারলো না ম্যালফয়, প্যানসির কাছে কি লুকোতে চাইছে? তাহলে কী সেই গুপ্ত রহস্যপূর্ণ জিনিসটা যা ও মেরামত করার জন্য বোরগানের কাছে গিয়েছিলো?

পপট্ৰিফিসাস টোটালাস!

হ্যারিকে কোনোরকম ওয়ার্নিং না দিয়ে ম্যালফয় ওর দিকে জাদুদণ্ডটা তাক করলো। হ্যারি তৎক্ষণাৎ অনড় অবচেতন হয়ে গেল। ধীরে ধীরে হ্যারি লাগেজ র‍্যাক থেকে কামরার মেঝেতে ম্যালয়ের পায়ের কাছে পড়ে মেঝেতে শব্দ করে কেঁপে উঠলো। ওর অদৃশ্য হবার ক্লোকটা খুলে গেছে ও আর অদৃশ্য নেই। হ্যারির হাত পা নড়াবার শক্তি নেই, হাঁটু দুটো মোড়া গুটিসুটি হয়ে ম্যালয়ের পায়ের তলায় পড়ে রয়েছে।

হ্যারি ম্যালয়ের দিকে তাকাতেই ম্যালফয় হাসলো।

আমি এই রকমই কিছু ভেবেছিলাম, হ্যারি উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো। গোয়েলে র‍্যাক থেকে ট্রাঙ্ক নামাবার সময় আমি তোমার গলার শব্দ শুনেছিলাম। জাবিনি যখন ঘরে ঢুকেছিল তখনও আমি একটা সাদা মতো কিছু দেখেছিলাম। তাহলে তুমিই দরজা আটকে দাঁড়িয়েছিলে, জাবিনিকে দরজা লাগাতে বাধা দিয়েছিলে?

ও হ্যারির জবাবের প্রতিক্ষা করল সামান্য সময়।

পটার আমি কি বলছি শুনতে পাওনি? কথাটা বলে হ্যারির মুখে সজোরে লাথি মারলো, হ্যারির নাক ফেটে মেঝেতে রক্ত গড়াতে লাগলো।

এটা আমার বাবার পক্ষ থেকে দিলাম, ম্যালফয় বললো। এখন দেখা যাবে, হ্যারির অদৃশ্য হবার ক্লোকটা ওর দেহের তলা থেকে টেনে বের করে ওর গায়ে ফেলে ঢেকে দিয়ে বললো, মনে হয় ট্রেনটা লন্ডনে ফিরে যাবার পর তোমার খোঁজ পাওয়া যাবে। এখন চারদিকে তাকিয়ে থাকো…।

ঘর থেকে পাটফরমে নামার সময় ম্যালফয় হ্যারির হাতের আঙ্গুল পা দিয়ে চেপে চলে গেলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *