০৩. উইল অ্যান্ড ওয়োন্ট

০৩. উইল অ্যান্ড ওয়োন্ট

হ্যারি ভীষণ জোরে নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছিলো। শোবার ঘরের খাটের পাশে শার্শি দেয়া জানালায়, একদিকের গাল চেপে অন্ধকার রাস্তা দেখতে দেখতে, ক্লান্ত হয়ে প্রায় ঘণ্টা চারেক ঘুমিয়ে ছিলো ও। কাঁচের শার্শি ছিলো অসম্ভব ঠাণ্ডা। ওর চোখের চশমা তির্যকভাবে রয়েছে আর মুখটা বিরাট হা-করা খোলা। ওর শ্বাস ফেলার বাষ্প, বাইরের কুয়াশা কাঁচের ওপর পড়ছে, তারই সাথে রাস্তার কমলা রঙের আলো কাঁচের ওপর পড়ে–কৃত্রিম এক আলোর আভায় ওর মুখ উদ্ভাসিত। ওর উসখো খুসকো কালো চুল, সব মিলিয়ে কেমন যেন ভূতুড়ে ভূতুড়ে দেখাচ্ছে।

ওর ঘরটা মোটেই পরিষ্কার নয়। ঘরের মেঝেতে নানা টুকিটাকি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, বই খাতা পড়ে রয়েছে। তাছাড়া পেচার পালক, আপেলের বিচি, চকোলেটের র‍্যাপার, যাদুর বই, কুচকানো আলখেল্লা, খবরের কাগজ ওর বিছানার ওপর ছত্রকার হয়ে রয়েছে। ডেস্কের ওপর রাখা টেবিল ল্যাম্পটা জ্বলছে। তারই নিচে একটা খবরের কাগজ। কাগজের হেডলাইনটা টেবিল ল্যাম্পের আলোতে আরো যেন দৃশ্যমান!

হ্যারি পটারকে কি বেছে নেয়া হয়েছে?

চারদিকে গুজব যে, সাম্প্রতিক সময়ে যেসব রহস্যপূর্ণ ঘটনা ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ে ঘটছে, অনেকে সন্দেহ করছেন যে, সে সকল ঘটনার পেছনে ইউ নো-হুঁ যার নাম অবশ্যই নেয়া যায় না তাঁর হাত রয়েছে। তার নাকি আবার আবির্ভাব ঘটেছে।
এই বিষয়ে কোনো কথা বলার আমাদের অধিকার নেই, আমাকে এ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন করবেন না, বলেছেন একজন অবলিভেটর। তিনি তার নাম জানাতে চাননি এবং তিনি সম্প্রতি ম্যাজিক মন্ত্রণালয় থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।
তৎসত্ত্বেও মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের উৎস থেকে স্বীকার করা হয়েছে যে ফেবলড হল অফ প্রফেসিতে গোলমাল হয়েছিলো।
অবশ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাদুকর, মন্ত্রণালয়ের ভেতর ওই রকম কোনো অবস্থানের অস্তিত্ব সম্বন্ধে একেবারেই অস্বীকার করেছেন। তাহলেও জাদুকর সম্প্রদায়ের অনেকেই বিশ্বাস করেন, যে সমস্ত ডেথইটার অনধিকার প্রবেশ ও চৌর্যবৃত্তির অপরাধে আজকাবান জেলে বর্তমানে বন্দি আছে, তারা সেই প্রফেসি চুরি করার চেষ্টা করেছিলো। সেই প্রফেসির প্রকৃতি সম্বন্ধে কারও কোন জ্ঞান নেই। তাহলেও অনেকে অনুমান করছেন, হ্যারিপটার এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এবং সেই রাত্রে মন্ত্রণালয়ে ছিলো। সে একমাত্র লোক যে কিলিংকার্স থেকে বেঁচে গেছে। কেউ কেউ এমনও বলেছেন, যে পটার এমন একটি ছেলে যার নাম প্রফেসি বলেছে, একমাত্র হ্যারি পটারই হি-হু যার নাম মুখে আনা যাবে না তার হাত থেকে সকলকে বাঁচাতে সমর্থ হবে।
যদি সত্যি সত্যিই প্রফেসি থাকে, বর্তমানে তার অবস্থান কারও জানা নেই, যদিও (পৃষ্ঠা দুই, কলাম পাঁচ দেখুন বাকি অংশ)

অপর পত্রিকাটিতে আর একটি সংবাদ রয়েছে। তার হেডলাইন এরকম :

স্ক্রিমগৌর ফাজের জায়গায় কার্যভার গ্রহণ করলেন

সকল সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ক্রিমগৌরের ছবি ছেপেছে। বড় আকারের সাদা কালো ছবি। মাথায় তার সিংহের কেশরের মতো মোটা ঘন চুল। কঠিন চোখ মুখ। ছবিটা স্থির নেই কাগজের পৃষ্ঠায়। ঘরের সিলিং-এ তরঙ্গায়িত হয়ে চলেছে মাঝে মাঝে। খবরটি হলো

রূফাস স্ক্রিমগৌর, ডিপার্টমেন্ট অফ ম্যাজিক্যাল ল এনফোর্সমেন্টের অউরর বিভাগের প্রধান, কর্নেলিয়স ফাজের পরিবর্তে ম্যাজিক মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। জাদুকর সম্প্রদায় তার এই নিযুক্তিকে উৎসাহ ও আনন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। তবে গুজব শোনা যাচ্ছে নবনিযুক্ত মন্ত্রী, পুনঃপ্রতিষ্ঠিত ওয়াইজেনগেমটের চীফ ওয়ারলকের দায়িত্বভার গ্রহণের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তার সঙ্গে আলবাস ডাম্বলডোরের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।
স্ক্রিমগৌরের মুখপাত্র জানিয়েছেন যে তিনি উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হবার ও কার্যভার গ্রহণ করার সাথে সাথে, কাল বিলম্ব না করে ডাম্বলডোরের সঙ্গে দেখা করেছেন, কিন্তু তাদের মধ্যে কি ধরনের আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানাননি। আলবাস ডাম্বলডোর, খুবই সুপরিচিত (পৃষ্ঠা ৩, কলাম ২ দেখুন)

ওই সংবাদপত্রের বাঁ-ধারের একটি সংবাদ এমনভাবে পরিবেশিত হয়েছে যা পাঠকদের দৃষ্টি এড়াতে পারে না। শিরোনামটি এই রকম, “হোগার্টস স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন ম্যাজিক মন্ত্রণালয়”।

হোগার্টস স্কুল অফ উইচক্র্যাফট অ্যান্ড উইজার্ডির যেসব ছাত্রছাত্রী এই শরতে হোগার্টে ফিরে যাচ্ছে তাদের নিরাপত্তার জন্য যথোচিত কড়া ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, জানিয়েছেন ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের নতুন ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী রুফাস স্ক্রিমগৌর। তিনি এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র আমাদের জানিয়েছেন যে সঙ্গত কারণে নতুন নিরাপত্তা প্রদানের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে স্পেল অ্যান্ড চার্মস প্রয়োগ হলে তার নিয়ন্ত্রণ, কাউন্টার কার্সের সুশৃঙ্খলভাবে প্রয়োগ, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের রক্ষার্থে কতিপয় কর্তব্যনিষ্ঠ অউরর নিয়োগ।
মন্ত্রণালয়ের দৃঢ় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনায় ছাত্রছাত্রীরা সকলেই খুব আশ্বস্ত হয়েছে, জানিয়েছেন অগস্তা লংবটম। আরো বলেছেন, আমার নাতি নেভিল হ্যারি পটারের অন্যতম পরম বন্ধু। গত জুন ওরা এক সাথে, দুজনে রক্ত চোষাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।

কিন্তু ওই সংবাদ বা স্টোরির বাকি অংশ পড়া যাচ্ছে না। পত্রিকাটির ওপর বিরাট একটা খাচা রাখার জন্য সংবাদের বাকি অংশ সংবাদের বাকি অংশ ঢাকা পড়ে গেছে। সেই খাঁচায় রয়েছে সুন্দর একটা বরফের মত একটি সাদা পেঁচা। তার পান্না রঙের দুই চোখ ঘরের ভেতরটা কর্তৃত্বপূর্ণভাবে দেখে চলেছে, মাঝে মাঝে মাথা তুলে মুখ উঁচু করে তার নাক ডাকা প্রভুর দিকে তাকাচ্ছে। মাঝে মাঝে ও কাঁ কাঁ করে ডাক দিচ্ছে; কিন্তু শুনবে কে? ওর প্রভুতো পরম নিশ্চিন্তে নাক ডাকিয়ে কাঁচের শার্শিতে গাল ঠেকিয়ে ঘুমোচ্ছ।

ঘরের ঠিক মাঝখানে রয়েছে বিরাট একটা ট্রাংক। তার ডানাটা খোলা। দেখে মনে হয় তার মধ্যে রয়েছে অনেক জামা-কাপড়। কিন্তু বলতে গেলে ট্রাংকটা প্রায় শূন্য, সামান্য কিছু জিনিসপত্র রয়েছে, যেমন কিছু পুরনো অন্তর্বাস, চকোলেট, কালির খালি দোয়াত আর কয়েকটা ভাঙ্গা ভাঙ্গা কুইলস (পালকের কলম)। সেই ট্রাংকের পাশেই পড়ে রয়েছে একটা লিফলেট। লিফলেটে ছাপা রয়েছে।

ম্যাজিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রচারিত
ডার্কফোর্সের (রক্ত চোষা) আক্রমণ থেকে আপনাদের ঘরবাড়ি পরিবার ইত্যাদি রক্ষার উপায়

পরিলক্ষিত হচ্ছে ইদানীং ডেথইটার্স নামক এক দল জাদুকর, মানুষজনকে ক্রমাগত ভীতি প্রদর্শন করে চলেছে। নিম্নলিখিত কয়েকটি অতি সাধারণ নীতি মেনে চললে আপনি ও আপনার পরিবার এবং ঘরবাড়ি তাদের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
 ১. আপনি কখনই আপনার বাড়ি খালি রেখে যাবেন না।
 ২. সন্ধের পর অন্ধকার হয়ে গেলে বিশেষভাবে সজাগ থাকবেন। কাজেকর্মে যেখানেই যান না কেন সন্ধের আগেই বাড়িতে ফিরতে সচেষ্ট থাকবেন।
৩. আপনার বাসস্থানের আশপাশের সিকিউরিটি অ্যারেঞ্জমেন্টস মনোযোগের সঙ্গে পুননিরীক্ষণ করবেন। দেখবেন আপনার পরিবারের প্রতিটি সদস্য যেন আপকালীন বিপদের মোকাবিলা করা সম্বন্ধে সজাগ থাকেন, যথা শিল্ড অ্যান্ড ডিসলুশানমেন্ট চার্মস (কি করতে হবে) ও পরিবারের নাবালক সদস্যদের জন্য দেই পার্শস্ত অপছায়া।
৪. মুখোশধারী রক্তচোষাদের শনাক্ত করা ও তাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনার পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পলজুস পোশান ব্যবহার করবেন (২ পৃষ্ঠা দেখুন)।
৫. যদি আপনি বুঝতে পারেন আপনার পরিবারের কোনো সদস্য সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-পড়শীর কেউ অদ্ভুত আচরণ করছে তাহলে তৎক্ষণাৎ ম্যাজিকেল ল এনফোর্সমেন্ট স্কোয়াডে যোগাযোগ করবেন। তারা হয়তো ইমপেরিয়াস কার্সে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে (৪ পৃষ্ঠা দেখুন)। ৬. যদি কোনো ডার্ক মার্কদের আপনার বাসস্থানের অথবা অন্য কোনো বাড়ির আশপাশে দেখতে পান, সেখানে যাবেন না, তৎক্ষণাৎ অরর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
৭. ইনফেরির (মৃতদেহ জাদু করে অপরাধের কাজ করানো, পিশাচ মৃতদেহ) উপস্থিতির আভাষ পেলে (পৃষ্ঠা ১০ দেখুন) বা ওইরকম কোনো পিশাচ দেখা গেলে তৎক্ষণাৎ মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট করবেন।

হ্যারি আধ ঘুমের মধ্যে ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ করে, জানালার কাঁচ থেকে গলাটা ইঞ্চিখানেক সরে গেল, চশমাটা আরো নিচে ঝুলে পড়লো। তাতেও ওর ঘুম ভাঙলো না। বহুদিন আগে একটা এলার্ম কুক হ্যারি সারিয়ে রেখেছিলো। ঘড়িটা টিক টিক শব্দ করে চলছিলো, হঠাৎ তার এলার্ম তীব্রভাবে বেজে উঠলো। তখনও এগারোটা বাজতে এক মিনিট বাকি। তাছাড়া হ্যারির হাতে ধরা ছিলো একটা পার্চমেন্ট। পার্চমেন্টে তির্যক অক্ষরে হাতে লেখা একটি ছোট চিঠি। চিঠিটা তিনদিন আগে এসোছিলো। ও সেটা বেশ কয়েকবার পড়েছে। চিঠিটা এসেছিলো ভালভাবে পাকানো পার্চমেন্টে। সেটা খোলা অবস্থায় ওর হাত থেকে পড়ে গেল।

প্রিয় হ্যারি,
যদি তোমার কোনো অসুবিধে না থাকে তাহলে আগামী শুক্রবার রাত্রি ১১টার সময় ৪নং প্রাইভেট ড্রাইভে আমি তোমার কাছে যাব। সেখান থেকে তোমাকে দ্য ব্যায়োতে নিয়ে যাবো। স্কুলের ছুটির শেষ কটা দিন উইসলি ফ্যামিলি তোমাকে সেখানে থাকার নিমন্ত্রণ করেছেন।
তুমি যদি রাজি থাকো, আমি একটা ব্যাপারে তোমার সাহায্য পেলে খুবই খুশি হবো; ব্যারো তে যাবার পথে সে বিষয়ে বলবো। দেখা হলে বিস্তারিত কথা হবে।
যে পেঁচাটা এই চিঠিটা নিয়ে তোমার কাছে যাচ্ছে তারই কাছে তোমার জবাব দিও। আশা করছি শুক্রবার তোমার সঙ্গে দেখা হবে।
তোমার একান্ত
আলবাস ডাম্বলডোর

হ্যারি ডাম্বলডোরের চিঠিটা এক আধবার নয়, বার বার পড়ে পড়ে তার মুখস্থই হয়ে গেছে। সাতটা বাজার পর থেকেই ও প্রতিটি মিনিট ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। বেডরুমের জানালার ধারে বসলে প্রাইভেট ড্রাইভের সামনের রাস্তার দুপ্রান্তের সব কিছু দেখা যায়। হ্যারি জানে ডাম্বলডোরের চিঠিটা আর পড়ার দরকার নেই। ও ইয়েস লিখে ওর জবাব পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন ও অধীর আগ্রহে চার নম্বর প্রাইভেট ড্রাইভে ডাম্বলডোরের আগমনের আশায় বসে রয়েছে। মাঝে মাঝে ভাবছে হয়তো কাজের চাপে আমার কথাটা ভুলে গেছেন। ডার্সলেদের হাত থেকে অন্তত পনেরটা দিন মুক্তি পাবে সেই আনন্দে ও জিনিসপত্র গোছাতেও ভুলে গেছে। তার মনে এখন ভয় হচ্ছে আবার, ডাম্বলডোর যদি ওর জবাব না পেয়ে থাকে। আরো ভাবছে যদি উনি আসার সময় কেউ তাকে পথে আটকে দেয়, এমনও হতে পারে যে হ্যারিকে ফাঁদে ফেলার মতলবে অন্য কেউ চিঠিটা পাঠিয়েছে। হয়তো শেষকালে যাওয়া হবে না, তাই জিনিসপত্র গোছায়নি। তবে সে হেডউইগকে খাচার মধ্যে পুরে রেখেছে।

ঘড়ির মিনিটের কাঁটাটা ১২টায় ছুঁতেই রাস্তার সব আলো দপ করে নিভে গেলো।

 হ্যারি ধড়মড় করে উঠে দাঁড়ালো। রাস্তার আলো নিভে যেন এলার্ম ক্লকের ঘণ্টির কাজ করলো। ও চশমাটা ঠিক করে নিলো। জানালায় মুখ ঠেকিয়ে রাস্তার দিকে তাকালো। দেখতে পেলো একজন লম্বা মানুষ ঢলঢলে আলখেল্লা পরে বাগানের পথ দিয়ে ওদের বাড়ির দিকে আসছে।

হ্যারি যেন আচমকা ইলেকট্রিকের ঝটকা খেয়েছে এমনি ভাবে জানালা থেকে সরে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তারপর ছড়ানো ছেটানো মেঝেতে পড়ে থাকা ওর জিনিসপত্র ট্রাংকের ভেতর ভরতে শুরু করলো। সবই ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেললো ট্রাংকে অগোছালোভাবে। যখন ও একসেট রোবস, দুটো স্পেল বুক, এক প্যাকেট ক্রিস্পস ভরছে ট্রাংকের ভেতর ঠিক সেই সময় ডোরবেল বেজে উঠলো।

 তারপর কানে এলো আঙ্কলের বিরক্তিমাখা কণ্ঠস্বর, কোন হতভাগা এতো রাতে বেল বাজালো?

হ্যারির এক হাতে ওর পেতলের টেলিস্কোপ, অন্যহাতে একজোড়া ট্রেনারস। ও ডার্সলেদের একদম বলতে ভুলে গেছে যে এই সময় ডাম্বলডোর আসতে পারেন।

ও হড়বড় করে ট্রাংকের তালাটা বন্ধ করে সামান্য ভয় মিশ্রিতভাবে হাসলো। এক দৌড়ে তার ঘরের দরজা খুলতেই কানে এলো গুরুগম্ভীর গলা, শুভ সন্ধ্যা, আপনি নিশ্চয়ই মিস্টার ডার্সলে। আশাকরি, হ্যারি আপনাকে বলেছে আমি আসতে পারি ওকে নিয়ে যেতে?

হ্যারি সিঁড়ি দিয়ে এক রকম লাফাতে লাফাতে নিচে যাবার আগে থমকে দাঁড়ালো। ও ভাবলো, যথাসম্ভব আঙ্কলের নাগালের বাইরে থাকা ভাল। ও ঘরের বাইরে এসে থমকে দাঁড়িয়ে দেখলো ডাম্বলডোর দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন। তার মাথায় রূপালি চুল, দাড়ি কোমর পর্যন্ত ছাড়িয়ে প্রায় মাটিতে স্পর্শ করছে, পরণে কালো লম্বা আলখেল্লা। দুই উজ্জ্বল, চশমার ভেতর দিয়ে তার আলো ঠিকরে পড়ছে। নাক বেশ লম্বা, আর সামান্য সেঁদা। অন্তত সেই লম্বা নাক দুবার ভেঙ্গেছে, মাথায় পয়েন্টেড টুপি। ডার্সলের গোঁফ অনেকটা ডাম্বলডোরের মতো, তবে সাদা নয় কালো, গায়ে তামাটে বর্ণের ড্রেসিং গাউন। উনি এমনভাবে আগম্ভকের দিকে তাকিয়ে আছেন, যেন নিজের ছোট ছোট চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না।

আপনার চোখের দৃষ্টি ও মুখের ভাব দেখে মনে হচ্ছে আপনার বাড়িতে আমি যে আসবো এ সম্বন্ধে হ্যারি আপনাদের কিছুই জানায়নি, ডাম্বলডোর শান্ত সুন্দর কণ্ঠে ভার্ননকে বললেন। যাকগে, তারপরও ভাবতে পারি, আপনি আমাকে আপনার বাড়িতে অতি উষ্ণতার সঙ্গে নিমন্ত্রণ করেছেন। মনে হয়, এই দুঃসময়ে আপনার বাড়ির দরজার সামনে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকাই ভালো।

কথাটা বলে ডাম্বলডোর ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজাটা নিজেই বন্ধ করে দিলেন।

আঙ্কল ভার্ননের মুখের দিকে লম্বা নাকের পার্শ্ববর্তী দুই চোখের অন্তর্ভেদী দৃষ্টি হেনে বললেন, আপনার বাড়িতে এসেছিলাম একবার, তা অনেক বছর হয়ে গেল। মনে হয়, আপনার কৌতুহল খুবই বেড়ে চলেছে।

ভার্নন ডার্সলে একটি কথাও বললেন না। হ্যারির কোনো সন্দেহ নেই, আঙ্কল দ্রুত কথা বলার শক্তি ফিরে পাবেন। তার কপালে শিরাগুলো ফুলে উঠেছে। ডাম্বলডোর সম্ভবত আঙ্কলের শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলার ক্ষমতা সাময়িকভাবে লুপ্ত করেছেন। হয়তো ডাম্বলডোরের জাদুকরী চেহারা, আবার হয়তো এমনও হতে পারে, যিনি সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাকে তর্জন-গর্জন করা আঙ্কলের ক্ষমতার বাইরে।

আহ, শুভ সন্ধ্যা হ্যারি, ডাম্বলডোর অর্ধচন্দ্রের মত চশমার কাঁচের ভিতর দিয়ে আঙ্কল ভার্ননকে পাশ কাটিয়ে হ্যারিকে খুবই আনন্দের সাথে বললেন। সুন্দর, অতি চমৎকার।

চমৎকার শব্দটা শুনে আঙ্কল ভার্ননের সম্ভবত মনপুত হলো না। কেউ হ্যারিকে দেখে আনন্দে আটখানা হয়ে চমৎকার শব্দটা ব্যবহার করেন, তা মোটেই পছন্দ নয় তার।

আমি কারও ওপর রুঢ় হতে পছন্দ করি না ভার্নন বলতে শুরু করলেন; কিন্তু তার কথা বলার প্রতিটি ভঙ্গিতে রূঢ় ব্যবহারের প্রকাশ ঘটলো।

তবু দুঃখ ও দুর্ঘটনায় রূঢ়তা মাঝেমধ্যে প্রবল হয়ে ওঠে, ডাম্বলডোর গম্ভীরভাবে কথাগুলো বললেন। সবচেয়ে উত্তম হলো কোনো কথা না বলা। আরে! ওখানে পেটুনিয়া দাঁড়িয়ে রয়েছে মনে হয়?

রান্নাঘরের দরজা খুলে হ্যারির আন্টি পেটুনিয়া দাঁড়ালেন। পেটুনিয়ার পরনে হাউজ কোটের ওপর নাইট গাউন, হাতে রবারের দস্তানা। মা সবেমাত্র কিচেনের কাজ শেষ করেছেন। ও ডাম্বলডোরকে দেখে চমকে উঠলো।

আঙ্কল ভার্নন পেটুনিয়াকে ডাম্বলডোরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন না। ডাম্বলডোর নিজেই উপযাজক হয়ে পেটুনিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন, আলবাস ডাম্বলডোর! চিঠিপত্রে অবশ্য আপনার সঙ্গে আমার পরিচয় আছে।

হ্যারি ভাবলো আন্টি পেটুনিয়াকে মনে করে দেয়া ঠিক হবে না যে ডাম্বলডোর একবার আন্টিকে খুব কড়া একটা চিঠি লিখেছিলেন। আন্টি সেই চিঠি পেয়ে চুপ করেছিলেন, জবাব দেননি। ওই ছেলেটি নিশ্চয়ই আপনার পুত্র ডাডলি?

ডাডলি সেই সময় বসবার ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে উঁকি মারছিলো। ও কিম্ভুতকিমাকার পাজামা পরেছিলো, মাথার এলোমেলো লালচুল আচড়ায়নি। ভয়ে ভীত হয়ে ডাম্বলডোরের মুখের দিকে তাকালো। ডাম্বলডোর ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। ভাবলেন ওদের মধ্যে কেউ যদি তার সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু ওরা তিনজনেই চুপ করে রইলো। ডাম্বলডোর হাসলেন।

আমি কী ধরে নিতে পারি, তুমি আমাদের তোমার বসবার ঘরে বসার জন্য ইনভাইট করছো? ডাম্বলডোর বোকা বোকা মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ডাডলিকে স্মিত মুখে জিজ্ঞেস করলেন। ডাম্বলডোর বসার ঘরে ঢোকার সময় ডালে জড়সড় হয়ে পথ করে দিলো। হ্যারির হাতে তখন পেতলের টেলিস্কোপ আর ট্রেনারস। বাকি কয়েকটা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে ডাম্বলডোর যেখানে যাচ্ছেন সেদিকে পা বাড়ালো। ডাম্বলডোর ঘরে ঢুকে ফায়ারপ্লেসের কাছে একটা আর্ম চেয়ার টেনে নিয়ে বসলেন। কোনোরকম আগ্রহ না নিয়ে ঘরের চারদিকে চোখ বোলালেন।

হ্যারি উদ্বেগ মাখানো মুখে ডাম্বলডোরকে বললো, আমরা… আমরা এখন যাবো না স্যার?

ও হ্যাঁ, যেতে তো হবেই, তার আগে কয়েকটা জরুরি বিষয়ে আমাদের আলোচনা করার দরকার আছে, ডাম্বলডোর বললেন। তবে সকলের সামনে বলাটা ঠিক হবে না। তোমার আঙ্কল আর আন্টিকে আর একটু বিরক্ত করব।

নিশ্চয়ই! নিশ্চয়ই!

ঘরের মধ্যে প্রথমে ভার্নন ঢুকলেন। পিছু পিছু আন্টি পেটুনিয়া আর ডাডলি ঢুকলো।

অবশ্যই বলছি, ডাম্বলডোর নিরাসক্ত কণ্ঠে বললেন। হ্যাঁ নিশ্চয়ই।

হ্যারি দেখতেই পেলো না ডাম্বলডোর কোন ফাঁকে জাদুদণ্ডটা পকেট থেকে তাক করে ক্লিক করেছেন। দেখলো ঘরের সোফাটা দেওয়ালের এক কোণে চলে গেল, আর তার ওপর ভার্নন, পেটুনিয়া আর ডাডলি হুমড়ি খেয়ে পড়লো। তারপরই আর একবার ক্লিক করতেই ওদের তিনজনকে নিয়ে সোফাটা তার নির্দিষ্ট স্থানে চলে এলো।

ডাম্বলডোর ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তাহলে আমরা কথাবার্তা শুরু করতে পারি। মনে হয় আরাম করে আমরা সবাই বসেছি।

ডাম্বলডোর তার রোবের পকেটে যাদুদণ্ডটা রেখে দেবার সময়ে হ্যারি দেখলো, ডাম্বলডোরের হাতা পুড়ে কালো হয়ে চামড়াটা কুঁচকে গেছে। আরো মনে হলো সেখানের মাংসও যেনো পুড়ে গেছে।

হ্যারি উদ্বিগ্ন হয়ে বললো, আপনার হাতে কী হয়েছে স্যার? পরে… পরে কথা হবে হ্যারি, ডাম্বলডোর বললেন। বসো তুমি।

হ্যারি ঘরের যে আর্ম চেয়ারটা খালি ছিলো সেটায় বসলো। ডার্সলেদের মুখের দিকে তাকাবার কণা মাত্র ইচ্ছে নেই। ওরা সকলেই গম্ভীর মুখে সোফাতে পাশাপাশি বসে আছে, নীরবে অপেক্ষা করছে, ডাম্বলডোর কি বলবেন শোনার জন্য।

ডাম্বলডোর ভার্ননকে বললেন, আমি ধরে নিয়েছিলাম আপনারা আমাকে কিছু খেতে টেতে দেবেন। তবে সব দেখে টেখে মনে হচ্ছে ওইরকম আশা করাটা একেবারে বোকামির চূড়ান্ত হবে।

তারপর জাদুদণ্ড বার করে ক্লিক করতেই, পাঁচটা গ্লাস আর একটা ধুলি ধূসরিত বোতল, শূন্য থেকে উড়ে এসে টেবিলে পড়লো। বোতলটা পাঁচটা গ্লাসে। মধু রঙের তরল পদার্থ কানায় কানায় ভরে দিলো, তারপর একটা একটা করে গ্লাস প্রত্যেকের সামনে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে এলো।

মাদাম নোজমেরটার মধু থেকে বানানো সবচেয়ে সুন্দর ওয়াইন। রঙটাও অতি সুন্দর। ডাম্বলডোরের সামনে যে ওয়াইন ভর্তি গ্লাসটা ছিল সেটা সে হ্যারির দিকে তাকিয়ে উঁচু করে তুলে ধরলেন। হ্যারি ওর সামনের গ্লাসটা তুলে এক চুমুক দিলো। হ্যারি এর আগে ওই রকম জিনিস কখনো খায়নি। মনের আনন্দে খেতে লাগলো। ডার্সলেরা বোকার মতো পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। সামনে রাখা ওয়াইন ভর্তি গ্লাসগুলো মুখে ঠেকাবে না এই রকম ভান করে ওরা বসে রইলো।

হ্যারি দারুণ মজা পেয়েছে আঙ্কল-আন্টির অবস্থা দেখে। আড়চোখে ডাম্বলডোরও বেশ মজা উপভোগ করছেন।

ওয়েল হ্যারি, ডাম্বলডোর বললেন হ্যারির মুখের দিকে তাকিয়ে, একটা গোলমেলে ব্যাপার হয়েছে, আমার মনে হয় তুমি ব্যাপারটা সমাধান করতে পারবে। আমাদের জন্য আমাদের হয়ে, মানে আমি আমাদের অর্ডার অফ ফিনিক্সের সমস্যার কথা বলছি। তার আগে বলছি গত সপ্তাহে সিরিয়সের উইল খুঁজে পাওয়া গেছে, উইল করে সিরিয়স সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি তোমাকে দিয়ে গেছে।

সোফায় গোমড়া মুখে বসে থাকা ভার্নন হ্যারির দিকে তাকালেন। হ্যারি কিন্তু একবারও ভার্ননের দিকে তাকালো না, শুধুমাত্র বললো ও তাই, খুব ভালো।

খুব স্পষ্ট উইল, ডাম্বলডোর বলে চললেন। তোমার তো গ্রিংসটসে নিজস্ব একাউন্টে মোটামুটি ভাল স্বর্ণমুদ্রা জমা আছে, তারই সঙ্গে সিরিয়সের সম্পত্তি পেয়ে গেলে। তবে উত্তরাধিকারের প্রশ্নে সামান্য ফ্যাকড়া আছে।

ওর গডফাদার মারা গেছে? আঙ্কল ভার্নন সোফায় বসা অবস্থায় বেশ জোর দিয়ে বললেন। ডাম্বলডোর আর হ্যারি ভার্ননের মুখের দিকে তাকালেন। দেখলেন গ্লাস ভর্তি ওয়াইনের গ্লাসটা জার্নানের প্রায় ঘন ঘন ধাক্কা মারছে। ভার্নন হাত দিয়ে গ্লাসটা সরাবার চেষ্টা করতে লাগলেন। কী বললেন, ওর গডফাদার সিরিয়স মারা গেছে?

হ্যাঁ, ডাম্বলডোর বললেন। সিরিয়সের মৃত্যু সংবাদ হ্যারি কেন ডার্সলেদের জানায়নি সে সম্বন্ধে ওকে একটি প্রশ্ন করলেন না। আমাদের সমস্যা, ডাম্বলডোর বললেন হ্যারিকে, এমনভাবে বললেন যে তাদের কথার মাঝে কোনো কথা হয়নি। সিরিয়স তোমাকে তার থিমন্ড প্লেসটাও (সিরিয়সের পৈত্রিক বাসস্থান) দিয়ে গেছেন।

কী বললেন তার বাড়িটাও দিয়ে গেছে? আঙ্কল ভার্নন চোখ ছোট ছোট করে হ্যাংলার মতো বললেন। কেউ তার কথায় কান দিলো না।

আপনি বাড়িটাকে আপনার হেড-কোয়ার্টার হিসেবে এখনো চালিয়ে যেতে পারেন, হ্যারি বললো। আমার ওই বাড়িটার একেবারেই দরকার নেই, আপনি নিতে পারেন, সত্যিই বলছি, আমার আসলেই ওটার দরকার নেই। হ্যারি জীবনে আর বার নম্বর গ্রিম প্যালেসে পদার্পণ করতে চায় না, যদি তেমন কোনো সম্ভাবনা থাকেও। ওর মনে হলো সিরিয়সের স্মৃতি ওকে আমৃত্যুকাল ধাওয়া করবে, যদি ও সিরিয়সের স্মৃতি বিজড়িত ওই বাড়িতে থাকে। কারণ সিরিয়স গ্রিনল্ড প্লেসে বরাবরই থাকতেন, সেখানটা ছেড়ে অন্য কোথাও থাকতে চাইতেন না।

খুবই আনন্দের, বদান্যতার কথা, ডাম্বলডোর বললেন, আমরা ইতোমধ্যে বাড়িটা খালি করে দিয়েছি।

কেন?

আঙ্কল ভার্ননের বিড়বিড় করা কথা উপেক্ষা করে ডাম্বলডোর বললেন, ব্ল্যাকদের ফ্যামিলি ট্রাডিশন অনুযায়ী ব্ল্যাক পরিবারের লোকেরাই উত্তরাধিকার হবে, সরাসরি ব্ল্যাক ফ্যামিলির। ওই পরিবারের সর্বশেষ ছিলেন সিরিয়স, তার ছোট ভাই রেগেলাস আগেই মারা গেছেন এবং তাঁর কোনো সন্তানাদি ছিলো না। ওর উইলে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে যে তার মৃত্যুর পর তুমি বাড়িটার মালিক হবে। তারপরও কথা যে, খুব সম্ভব সেটা জাদুমন্ত্র করে রাখা যাতে পিওরব্লাড ছাড়া কেউ সেটা পেতে না পারে।

হ্যারির স্মৃতিপটে সিরিয়সের বাড়ির দেয়ালে টাঙ্গানো মায়ের ছবিটা ভেসে এলো–সর্বদা কাঁদছেন, বিকট ভাবে চেঁচাচ্ছেন। আমার মনে হয় সেই রকম কিছু, হ্যারি বললো।

চুপ, ভোল্ডেমর্ট বললেন। যদি সেই রকম কোনো মন্ত্র করা থাকে তাহলে ওই বাড়ির মালিক হবে সিরিয় ব্ল্যাকের জীবিত আত্মীয়দের মধ্যে একজন, মানে ওর চাচাতো (খুড়তুতো) বোন বেল্লাট্রিক্স লেসট্রেনজে।

হ্যারি জানে না হঠাৎ কেন ও চেয়ার থেকে তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো, ওর কোল থেকে টেলিস্কোপ আর ট্রেনারস ছিটকে মেঝেতে পড়লো, বেল্লাট্রিক্স লেসট্রেনজে! যে সিরিয়াসের হত্যাকারী, সে বাড়ির মালিক হবে।

না, কখনোই না, হ্যারি বললো। ঠিক আছে, অবশ্যই আমরা চাই সে ওই বাড়ির মালিক না হোক। ডাম্বলডোর শান্তস্বরে বললেন। ব্যাপারটা একটু জটিল হতে পারে। আমরা জানি না মন্ত্রকরা আছে কি না। আমরা ধরে নেবো উইলটা সিরিয়স করেছেন, কে মালিক হবে তিনি লিখে গেছেন। মনে হয় বেল্লাট্রিক্স যে কোনো মুহূর্তে এসে দাবি করতে পারে। তাই

এখন আর আলোচনা না করে কাজে নেমে পড়তে হবে।

কিন্তু আপনি কেমন করে নিশ্চিত হবেন যে ওই বাড়ির মালিক আমি হবো?

সৌভাগ্যবশত! ডাম্বলডোর বললেন। সামান্য একটা পরীক্ষা করা যায়।

ডাম্বলডোর শূন্য গ্লাসটা ছোট একটা টেবিলের ওপর রাখলেন তারপর আর কিছু করার আগে আঙ্কল ভার্নন চিৎকার করে বললেন, অনুগ্রহ করে আমাদের সামনে ওইসব আজেবাজে আলোচনা বন্ধ রাখবেন?

হঠাৎ শূন্য গ্লাসগুলো ডার্সেলেদের মাথার খুলির ওপর ঠাস ঠাস করে বাড়ি মারা শুরু করলো, গ্লাসের ভেতরের ওয়াইন, ঘরময় ছত্রকার হয়ে গেল। গ্লাসের ওয়াইন ওরা স্পর্শ করেনি।

ওহহ আমি খুব দুঃখিত, ডাম্বলডোর অতি ভদ্রভাবে বললেন। তারপর আবার জাদুদণ্ডটা তুললেন। তিনটে গ্লাস হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমার মনে হয় ওয়াইনগুলো আপনারা খেলে ভদ্রজনোচিত কাজ হতো।

আঙ্কল ভার্ননের ভীত মুখ দেখে মনে হলো আরো কিছু কাণ্ড কারখানার আশঙ্কা করছেন। কিন্তু তিন জনেই চুপ করে বসে রইলেন। আঙ্কল ভার্নন কুতকুতে চোখে ডাম্বলডোরের সহাস্য মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

শোনো, ডাম্বলডোর হ্যারির দিকে তাকালেন, বলতে লাগলেন এমনভাবে যেন আঙ্কল ভার্নন একটি কথাও বলেননি, যদি সত্যই বাড়িটার উত্তরাধিকার হয়ে থাকো তাহলে তুমি আরো কিছুর উত্তরাধিকারী হয়েছে।

তারপর ডাম্বলডোর আবার জাদুদণ্ডটা ক্লিক করলেন (সব নিয়ে পাঁচবার করলেন), খুব জোরে চিড়চিড়ে তীক্ষ্ণ শব্দ হতেই ঘরে একজন হাউজ-এলফের (গৃহডাইনির) আবির্ভাব হলো। তার নাক শুয়রের মতো, বাদুড়ের মতো লম্বা লম্বা কান, আর দারুণ রক্তবর্ণ চোখ। সে ভার্ননের ময়লা কাপড়ে ঢাকা দেয়া লোমওয়ালা কার্পেটে কুঁজো হয়ে বসলো। আন্টি পেটুনিয়া ভয়ে আঁতকে উঠলেন ভয়ার্ত চেহারার গৃহডাইনিকে দেখে। ওর মতো জঘন্য নোংরা প্রাণী ইতিপূর্বে ওদের ঘরে ঢোকেনি; ডাডলি ওর মোটা মোটা পা দুটো মেঝে থেকে সোফার ওপর তুলে এমন ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসলো যেন যেকোন মুহূর্তে ওই গৃহডাইনিটা ওকে আক্রমণ করতে পারে। ভার্নন চীৎকার করে বললেন, এসব কী হচ্ছে শুনি?

ক্রেচার, ডাম্বলডোর বললেন।

ক্রেচার করবে না, করবে না, কিছুতেই করবে না! ক্রেচার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো। কান টানা, চুলটানা, দুহাতে গলাটিপে ধরা চললো কান্নার সাথে সাথে। ওর কান্নার শব্দ ভার্ননের উচ্চ কণ্ঠকেও ম্লান করে দিলো। ক্রেচার কেঁদে কেঁদে বললো, আমি বোট্রিক্সের কাজ করবো, আমি ব্ল্যাকদের কিছুতেই হ্যারির কাছে কাজ করবো না।

ডাম্বলডোর ক্রেচারের উচ্চকণ্ঠের কথা শুনে বললেন, বুঝতেই পারছো হ্যারি, ক্রেচার তোমার কাছে কাজ করতে নারাজ। ও হাবেভাবে তাই জানাচ্ছে, বলছেও।

হ্যারি ক্রেচারের কথাবার্তা শুনে, অঙ্গভঙ্গি ও হাত-পা ছোঁড়া দেখে বললো, আমার কিছু যায় আসেনা। না করতে চায় তো করবে না। আমার ওকে দরকার নেই।

না না অন্য কারও কাছে ক্রেচার কাজ করবে না। তুমি তাহলে কি ওকে বেল্লাট্রিক্স লেসট্রেনজের কাছে দিতে চাও? মনে রেখো ও অর্ডার অফ ফিনিক্স-এর হেডকোয়ার্টারে তিন বছর কাজ করেছে? হ্যারিকে এবার জিজ্ঞেস করলেন ডাম্বলডোর।

করবো না, করবো না, করবো না।

হ্যারি ডাম্বলডোরের মুখের দিকে তাকালো। হ্যারি ভালো করেই জানে ক্রেচারকে কোনোভাবেই বেল্লাট্রিক্সের কাজ করতে দেয়া যাবে না, কিন্তু গৃহডাইনিটাকে নিজের কাছে রাখার আইডিয়া, তার দায় দায়িত্ব নেয়া হ্যারির অসম্ভব মনে হলো। তাছাড়া ও সিরিয়সের সাথে বিট্রে করেছে এটাই বড় কথা।

ওকে আদেশ করো, ডাম্বলডোর বললেন। ও যদি এখন তোমার অধীনে থাকে তাহলে ওকে তোমার আদেশ মানতেই হবে। তা যদি না মানে তাহলে ওকে বোট্রিক্সের হাত থেকে সরাবার কথা ভাবতে হবে।

না না… কখনই না! ক্রেচারের গলার স্বর বেড়েই চলেছে। তারই সঙ্গে বিলাপ। হ্যারি, তখন কোনো উপায় না দেখে ওকে থামাবার জন্য গর্জে উঠলো, শাট আপ!

মনে হলো মুহূর্তের মধ্যে ও শ্বাসরুদ্ধ হয়ে শেষ হয়ে যাবে। নিজের গলা টিপতে লাগলো, চিৎকার করতে লাগলো, ওর চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কয়েক সেকেন্ড পরে কার্পেটের ওপর শুয়ে পড়ে হাত-পা ছুঁড়তে লাগলো। পেটুনিয়া ওই দৃশ্য দেখে ফোঁপাতে শুরু করলো। ওদিকে ক্রেচার চুপ হয়ে গেলেও ও হাত-পা ছোঁড়া বন্ধ করলো না।

যাকগে খুবই সহজে জানা গেল, ডাম্বলডোর হাসতে হাসতে বললেন। মনে হয় সিরিয়স জানতেন ব্যাপারটা কি দাঁড়াবে, ও কি করবে। তুমি হচ্ছে এখন। আইনত ১২নং গ্রিমল্ডপ্লেসের মালিক এবং ক্রেচারের মালিক।

হঠাৎ ক্রেচার পটারের পায়ের উপর আছড়ে পড়লো। হ্যারি আবার বললো, একে… একে কী আমার কাছে রাখতে হবে স্যার?

না রাখার ইচ্ছে হলে রাখবে না, ডাম্বলডোর বললেন। যাকগে আমার একটা সাজেশন আছে, ওকে তুমি হোগার্টসে পাঠিয়ে দিতে পারো। ওখানে ও অন্যান্য হাউজ এলফদের সঙ্গে কিচেনে কাজ করবে। অন্যান্য হাউজ এলফরা ওর ওপর নজর রাখতে পারবে।

ঠিক আছে, হ্যারি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। শোনো ক্রেচার, আমার ইচ্ছে

তুমি হোগার্টসে গিয়ে সেখানের কিচেনে কাজ করো। সেখানে আরো অনেক হাউজ এলফ কাজ করে।

ক্রেচার তখন চিৎপটাং হয়ে দুহাত আকাশের দিকে তুলে শুয়েছিলো। ক্রেচার হ্যারির কথাটা শুনে পাশ ফিরে হ্যারির দিকে বিশ্রীভাবে তাকিয়ে খুব জোরে ক্র্যাক শব্দ করে উধাও হয়ে গেল।

গুড, ডাম্বলডোর বললেন। ওখানে বাকবিক, হিপোগ্রিফটা আছে। সিরিয়স মারা যাবার পর হ্যাগ্রিড তাদের দেখাশোনা করছে। বাকবিক এখন তোমার, অন্য কোনো ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত।

না না ও হ্যাগ্রিডের কাছে থাকতে পারে। আমার মনে হয় অ্যারেঞ্জমেন্টটা বাকবিকের কাছে মনঃপুত হবে। হ্যারি বললো।

তা যা বলেছো, হ্যাগ্রিডও খুশি হবে। ডাম্বলডোর হাসলেন। বাকবিককে আবার দেখে আনন্দে আটখানা হবে। ভাবছিলাম ওর সুরক্ষার জন্য আপাতত ওকে উইদার উইংগস বানিয়ে দেবো। মিনিস্ট্রি আমার মনে হয় অনুমান করতে পারবে নী ওই হচ্ছে হিপোফি যাকে ওরা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলো। যাকগে, হ্যারি তোমার জিনিসপত্র ট্রাঙ্কে ঠিক মতো গুছিয়ে নিয়েছো তো?

না, স্যার, এবারে গুছিয়ে নিচ্ছি। হ্যারি ওর টেলিস্কোপ আর ট্রেনারসটা নিয়ে একরকম দৌড়তে দৌড়তে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

দশ মিনিটের মধ্যে ও সব জিনিসপত্র ট্রাঙ্কে ভরে নিলো। বিছানার তলা থেকে অদৃশ্য হবার ক্লোক, রঙ বদলাবার জারটার মুখটার ছিপি ভালো করে এটে ট্রাঙ্কের ভেতরে ঠেসে রেখে, ট্রাঙ্কের ঢাকনাটা বন্ধ করে, এক হাতে হেডউইগের খাচা আর অন্য হাতে কলড্রনটা ধরে এক তলায় নেমে এলো।

হলঘরে গিয়ে ও ডাম্বলডোরকে দেখতে পেলো না। তাহলে আবার ওকে লিভিং রুমে যেতে হবে!

ঘয়ে ঢুকে দেখলো সকলেই চুপচাপ এবং চোখে মুখে অস্থিরতা। ডাম্বলডোর গুন গুন করে গান গাইছেন। দেখে মনে হয় খুবই শান্ত ও নির্বিকার। কিন্তু ঘরের আবহাওয়াটা বরফের মতো শীতল। ও ডার্সলেদের মুখের দিকে না তাকিয়ে বললো, প্রফেসর আমি প্রস্তুত।

গুড, ডাম্বলডোর বললেন। ও একটা কথা তো আপনাদের বলা হয়নি, ডার্সলেদের দিকে তাকালেন ডাম্বলডোর। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন আগামী বছরে হ্যারি সাবালক হবে।

না তো, পেটুনিয়া এই প্রথম কথা বললো। ডাম্বলডোর আসা পর্যন্ত পেটুনিয়া একটা কথাও বলেনি। চুপচাপ সব কথা শুনছিলো।

ওহো তাহলে তো, আমি দুঃখিত! ডাম্বলডোর খুবই ভাবে বললেন।

না না আপনি ঠিক বলছেন না। হ্যারি, ডাডলির চেয়ে এক মাসের ছোটো। ডাডলি তো আসছে বছর আঠারোতে পা দেবে না।

তাই? কিন্তু আমাদের জাদু দুনিয়াতে সতের বছর হলেই সাবালক হয়।

আঙ্কল ভার্নন হাসলেন। হাসিটা অযৌক্তিক সন্দেহ নেই। কিন্তু ডাম্বলডোর ভার্ননের হাসিকে পাত্তা দিলেন না।

আপনারা বোধহয় জানেন, লর্ড ভোল্ডেমর্ট নামে এক জাদুকর আবার দেশে ফিরে এসেছে। বলতে পারেন জাদুকর সম্প্রদায় এখন প্রায় যুদ্ধের মুখোমুখি। পনের বছর আগে আমি যখন হ্যারিকে আপনাদের দরজার গোড়ায় জীবন বাঁচানোর জন্য রেখে গিয়েছিলাম, নিশ্চয়ই মনে আছে আপনাদের, সে সময় ওর বাবা-মার হত্যার বিষয় লিখেছিলাম। ভোল্ডেমর্ট ওর বাবা-মাকে যেমন হত্যা করেছিলো তেমনি সকল সময়ই সে চেষ্টা করে চলেছে হ্যারিকে হত্যা করার। হ্যারিকে আপনাদের কাছে রাখার আমার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো নিজেদের পরিবারের একজন মনে করে ওকে ভোল্টেমর্টের হাত থেকে বাঁচানো। এখন ভোল্ডেমর্ট আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে ফিরেছে, হ্যারির পক্ষে সেটা আরো বেশি বিপদের।

ডাম্বলডোর কথাগুলো খুবই পরিষ্কার ও শান্তকণ্ঠে বললেন। চোখে মুখে তার কোনো রাগের ছাপ নেই, শান্ত এবং গম্ভীর। হ্যারির শরীরের ভেতরটা ঠান্ডাতে শিরশির করে উঠলো ডাম্বলডোরের কথা শুনে। আড় চোখে দেখলো আঙ্কল, আন্টি ও ডাডলি ভয়ে কুঁকড়ে আছে, আসন্ন বিপদের হাত থেকে বাঁচার জন্য ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মুখ দেখে মনে হলো আঙ্কল আন্টি ভয় পাচ্ছেন, কেউ যেন এসে ওদের কোল থেকে ডাডলিকে হত্যার জন্য ছিনিয়ে নিয়ে যাবে।

আমাদের, ডাডারস তো কোন দোষ করেনি? আঙ্কল ভার্নন উত্তেজিত হয়ে বললেন। ডাম্বলডোর নীরব হয়ে থাকার জন্য একটা আঙ্গুল তুলে ভার্ননের দিকে তাকালেনে। আঙ্কল ভার্নন সেদিকে তাকিয়ে বোবা বনে গেলেন।

পনের বছর আগে আমি এমন একটি নিরাপত্তার জাদু দিয়ে ওকে সুরক্ষিত করে রেখেছি, যাতে হ্যারি আপনাদের বাড়িটা নিজের মনে করতে পারে। যাহোক, আমি জানি হ্যারিকে কখনো পুত্রের স্নেহ দেননি। ওর জীবন এখানে ছিল কষ্টকর ও খুবই বেদনার, খুবই অনাহুত অতি জঘন্য ব্যবহার করেছেন, তাহলেও অনিচ্ছার সঙ্গে একটি ঘরে তো ওকে থাকতে দিয়েছেন, তা সে ঘরটি যেমনই হোক না কেন। হ্যারি সতের বছরে পা দিলেই আমার প্রদত্ত ম্যাজিক আর চালু থাকবে না, যখন থেকে ও যৌবনে পদার্পণ করবে। আমার এই কথাগুলোর একমাত্র উদ্দেশ্য: আপনারা আরো একবার ওকে আপনাদের বাড়িতে থাকতে দেবেন, মানে সতের বছরে পা দেবার আগে। তার মানে আমার দেয়া জাদু নিরাপত্তা সেই সময় পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

কথাগুলো শুনে ডার্সলে পরিবারের সকলেই নির্বাক হয়ে রইলেন। ভুরু কুঁচকে ভাবতে শুরু করলেন, কবে, কোন সময়ে তিনি কোন ব্যাপারে ওর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন আঙ্কল ভারনন কথা বলতে পারছেন না, যেন গলায় কিছু আটকিয়ে বাকরুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। আন্টি পেটুনিয়ার মুখের রঙ পাল্টে গেল।

ডাম্বলডোর তার লম্বা আলখেল্লা টেনে সোজা করে সবশেষে বললেন, তাহলে হ্যারি এবার তো আমাদের যেতে হবে। তারপর ডার্সলেদের বললেন, আবার দেখা হবে। কিন্তু তাদের মুখ দেখে মনে হলো দেখা হবার পরিস্থিতি আর যেন না আসে। কথা বলেই হ্যাটটা তুলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

হ্যারি ডার্সলেদের হাত তুলে বললো, চলি, ডাম্বলডোরের পিছু পিছু চললো হ্যারি। ডাম্বলডোর যেতে যেতে হ্যারির পাশের ট্রাঙ্কের দিকে তাকালেন। ট্রাঙ্কের উপর হ্যারি হেডউইগকে খাঁচার মধ্যে বন্দি করে চলেছে।

ডাম্বলডোর জাদুদণ্ড বার করে বললেন, এখন আমাদের এইসব বোঝা সাথে নেবার অসুবিধা আছে, ব্যারোতে এগুলো আগে পাঠিয়ে দেয়া যাক। তবে তুমি অদৃশ্য হবার ক্লোকটা বের করে সঙ্গে রাখো।

হ্যারির ট্রাঙ্ক থেকে অদৃশ্য হবার ক্লোকটা বের করতে সামান্য অসুবিধা হলো। ডাম্বলডোর যাতে ট্রাঙ্কের ভেতরের দিকটা না দেখতে পান তার জন্য যতদূর সম্ভব হাত চাপা দিয়ে রাখলো। জ্যাকেটের পকেটে সেটা রাখলো। ডাম্বলডোর হাত তুলে জাদুদণ্ডটা দোলাতেই হ্যারির ট্রাঙ্ক, খাচা আর হেডউইগ অদৃশ্য হয়ে গেল। ডাম্বলডোর আবার তার জাদুদণ্ডটা তুলে দোলাতেই সদর দরজাটা খুলতেই ওরা দেখলো ঘন কুয়াশায় ঢাকা অন্ধকার।

এখন হ্যারি, এই রাতের অন্ধকারেই আমাদের যেতে হবে। সামনে আসবে অপ্রত্যাশিত ঘটনা, দুঃসাহসিক অভিযান আমাদের।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *