৩৫. বিয়ন্ড দ্য ভেইল

৩৫. বিয়ন্ড দ্য ভেইল

হঠাৎ কালো কালো ছায়া দুদিক থেকে ওদের ঘিরে ধরলো। তাদের কালো বোরখার আড়ালে শুধু জ্বলন্ত চোখ দেখা যাচ্ছে। সংখ্যায় তারা বারোজন, তাদের হাতে দণ্ড ওদের বুকের দিকে উদ্যত। জিনি ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠলো।

লুসিয়াস ম্যালফয় হাতটা বাড়ালেন হ্যারির দিকে। কাটাকাটা গলায় বললেন, আমাকে ওটা দাও পটার।

হ্যারির সমস্ত দেহ মন অজানিত আশঙ্কায় কেঁপে কেঁপে উঠলো। ওরা ফাঁদে পড়ে গেছে। একের বিরুদ্ধে দুজন শত্রু! ম্যালফয় আবার বললেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ ওটা আমাকে দাও।

–বলুন সিরিয়সকে কোথায় আটকে রেখেছেন? হ্যারি বললো, ওর কথা শুনে কয়েকটা ডেথ ইটারস খন খুন করে হেসে উঠলো, সেই কালো ছায়া মূর্তির উল্লাসভরা একজন শিরশিরে নারী কন্ঠে বললো, ডার্কলর্ড অবশ্যই জানেন।

বাকি সবাই একই সঙ্গে বিশ্রীভাবে হেসে উঠলো।

–তার অজানা কিছু নেই। ভালো ছেলের মতো ভালোয় ভালোয় প্রফিসি (ভবিষ্যদ্বাণী বলার) আমাকে দাও পটার, ম্যালফয় হ্যারির দিকে হাত বাড়ালেন।

আমি জানতে চাই সিরিয়স কোথায়?

বাপাশে দাঁড়ানো মেয়েটি ভেঙ্গিয়ে ভেঙ্গিয়ে বললো, আমি জানতে চাই সিরিয়স কোথায়। বাকি সব ডেথইটারসরা ওদের হাতের দণ্ড হ্যারি আর তার বন্ধুদের বুকে আরও জোরে চাপ দিলো। দণ্ড থেকে তীব্র আলো ঠিকরে বেরিয়ে হ্যারি পটারের দুচোখ ধাধিয়ে দিলো।

মন থেকে ভয় ভাবনা সরিয়ে দিয়ে হ্যারি আবার বললো, তোমরা তাকে ধরে রেখছো, আমি জানি তিনি এখানে আছেন।

আবার সেই মেয়ে ডেথ ইটারের বিশ্রী ব্যাঙ্গাত্মক কথা–বাচ্চা ছেলের ঘুম ভেঙেছে গো, ওকে খেতে দাও গো খেতে দাও। হ্যারি বুঝতে পারলো রন শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে নেই।

হ্যারি বিড়বিড় করে বললো, চুপ কিছু করবে না, এখন না। যে মেয়েটা ভেঙিয়ে কথা বলছিলো অসভ্যের মতো হিহি করে হেসে উঠলো।

–শোনো গো শোনো বাচ্চা ছেলেটার কথা, অন্য বাচ্চাদের উপদেশ দিচ্ছে। গো!

ম্যালফয় বললেন, বেলট্রিকস পটারকে, তুমি ভেবেছো ও তা নয়। ওর বড় বড় কাজ করার প্রতি প্রচুর দুর্বলতা আছে, আমাদের ডার্কলর্ড খুব ভালো করেই জানেন। যাকগে পটার এবার ওই প্রফিসিটা আমাকে দাও।

হ্যারির বুকের ভেতরটা আশঙ্কাতে সামান্য ধুকধুক করছে, নিঃশ্বাস আটকে আসছে–তবু সেই ভাবনা কাটিয়ে দৃঢ় হবার চেষ্টা করে আবার বললো, আমি খুব ভালো করেই জানি সিরিয়স এখানে আছেন। আমি জানি আপনারা তাকে কয়েদ করে রেখেছেন।

আবার বেশিরভাগ ডেথইটারসরা হো : হো : করে হেসে উঠলো, বেল্লাট্রিক্সের হাসি ওদের ছাপিয়ে গেলো।

ম্যালফয় বললেন–তোমার এখন স্বপ্ন আর জীবন সম্বন্ধে বোঝার যথেষ্ট বয়স হয়েছে হ্যারি। তুমি যদি প্রফিসিটা না-দাও, তাহলে আমরা জাদুদণ্ড প্রয়োগ করতে বাধ্য হবো।

হ্যারি নিজের জাদুদণ্ডটা বুকের ওপোর তুলে বললো, বেশ তাই করুন। রন, হারমিওন, নেভিল, জিনি, লুনা ও হ্যারির মতো জাদুদণ্ড তুললো। হ্যারির মনে দারুণ এক চিন্তা হলো–সিরিয়স যদি সত্যি এখানে না থাকেন তাহলে ওর দোষে ওর প্রিয় বন্ধুরা অকালে প্রাণ হারাবে।

কিন্তু ডেথইটারসরা ওকে আক্রমণ করলো না। ম্যালফয় স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন, প্রফিসিটা দিয়ে দিলে কেউ তোমায় আঘাত করবে না হ্যারি।

কথাটা শুনে হ্যারির হাসির পালা। –ঠিক আছে, প্রফিসিটা দিলে আপনি আমাদের বাড়ি ফিরতে দেবেন তো?

কথাটা তখনও শেষ করতে পারেনি হ্যারি তার আগেই মেয়ে ডেথইটারস জাদুদণ্ডটা নিয়ে খ্যানখেনে গলায় বললো–অ্যাকিও প্রফি।

হ্যারি মেয়েটির কথা শেষ হবার আগেই কাউন্টার চার্জ করলো–প্রটিগো! কাঁচের গোলকটা ওর হাত থেকে প্রায় ছিটকে পড়েছিলো, ও ধরে ফেললো।

বিটি বিটি বেবি পটার। বোরখা থেকে ওর মুখটা বেরিয়ে এলো। ও চকচকে দাঁত বের করে হাসছে। খুব ভালো, তাহলে…।

লুসিয়ম ম্যালফয় গর্জন করে উঠলেন, কতোবার তোমাকে মানা করবো। তুমি যদি ওটা ভেঙে ফেলল। হ্যারির মনের ভেতর অনেক ভাবনা-চিন্তা ঝড়ের বেগে বইছে। ডেথ ইটারসদের অন্যতম সর্দার ওর কাছ থেকে ওর সম্পদ প্রফিসি ছিনিয়ে নেবার জন্য অনেক ভয় দেখিয়ে ছল চাতুরি করছেন। হ্যারির প্রফিসির ওপোর কোনও লোভ নেই। ও ধরা পড়ে গেছে, যেন তেন প্রকারণে ওকে ডেথইটারসদের কবল থেকে মুক্ত হতে হবে। ওর বোকা বোকা কাজের জন্য হয়তো বন্ধুদের চরম মূল্য দিতে হবে। সেই মেয়েটি বোরখা খুলে অন্য ডেসইটারসদের ছেড়ে সামনে এসে দাঁড়ালো। আজকাবানের নিষ্ঠুরতা বেল্লাট্রিক্স-এর মুখ ছেয়ে গেছে, কঠোর কঙ্কালসার মুখ। কিন্তু প্রেতাত্মা নয় এখনও জীবিত মানুষ।

বেল্লাট্রিক্স বললো, তোমার কী ঠিক পথে চলার জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন আছে? রাগে–উত্তেজনায় ওর বুক ওঠা-নামা করছে। ওই ছোট মেয়েটাকে আমরা টর্চার (নির্যাতন) করছি ও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে টর্চার দেখুক।

হ্যারি এক পা পিছিয়ে এলো প্রফিসিটা বুকে চেপে ধরে। হারমিওন রন জিনি হ্যারিকে ধরে রাখলো।

–শোনো, আমাদের কাউকে নির্যাতন বা আক্রমণ করার আগেই প্রফিসিটা ভেঙে চুরমার করে দেবো। হ্যারি, বেল্লাট্রিক্সকে শাসালো। আমার মনে হয় তোমার বস শূন্য হাতে ফিরে গেলে মোটেই খুশি হবেন না, বলো হবেন কী?

বেল্লাট্রিক্স এক ইঞ্চি না এগিয়ে পটারের দিকে তাকিয়ে জিব দিয়ে ঠোঁট চাটতে লাগলো। ওর বেড়ানো গাল আরও প্রকট হয়ে গেলো।

–কোন প্রফিসি নিয়ে আমরা কথাবার্তা বলছি? হ্যারি বললো

হ্যারি কথাবার্তা বলে সময় কাটাতে চায়। ও নেভিলের হাতটা ধরে বুঝতে পারলো ও কাঁপছে। ও বুঝতে পারছে কেমন করে ও মৃত্যুর মুখ থেকে পালাবে তাই ভাবছে।

–কী বললে, কী রকম প্রফিসি? বেল্লাট্রিকস বললো ওর মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেলো, হ্যারি পটার তুমি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছো?

একটার পর একটা ডেথ ইটারসদের দেখতে দেখতে হ্যারি বললো, না না ঠাট্টা করতে যাবো কেন? একটা ফাঁকা জায়গা খুঁজতে লাগলো পালাবার জন্য। ভোল্ডেমর্ট এটা চাইছেন নাকি?

কয়েকটি ডেথইটারস হিস হিস শব্দ করলো।

বেল্লাট্রিক্স রাগে ফেটে পড়ে বললো, আশ্চর্য, তুমি তার নাম মুখে আনতে সাহস করো?

হ্যারি শক্ত করে কাঁচের বলটা ধরে বললো, হা করি।

আরও একটি ম্যাজিক মন্ত্র দিয়ে ওকে নিশ্চল করতে চাইছে সন্দেহ নেই।

–না, আমার কোনও প্রবলেম নেই ভোল্ডেমর্টকে, ভোল্ডেমর্ট বলার।

বেল্লাট্রিক্স চিৎকার করে উঠলো, সাবধান হ্যারি পটার, তোমার এতো সাহস যে লর্ডের নাম মুখে আনো? তোমার নোংরা জিব দিয়ে তার নাম উচ্চারণ করছো? এতো সাহস তোমার হাফ-ব্লাড।

হ্যারি কোনও রকম ভ্রুক্ষেপ না করে বললো, তোমরা কী জানো তিনিও একজন হাফ ব্লাড? হারমিওন খুব আস্তে আস্তে বললো, ভোল্ডেমর্টের মা ছিলেন এক জাদুকরি আর তার বাবা মাগল। তোমাদের বলছেন কী পিওর ব্লাডে জন্ম তার?

স্টাপেফ।

না!

বেল্লাট্রিক্স লেস্ট্রেঞ্জের জাদুদণ্ড থেকে লাল আলো বিচ্ছুরিত হলো; কিন্তু ম্যালফয় সেটা ভেঙে চূর্ণ করে দিলেন। বেল্লাট্রিক্স, ম্যালফয়ের স্পেলে সজোরে ছিটকে পড়লো একটা সেলফের ওপোর, হ্যারির দিকে প্রায় এক ফুট দূরে। তাকে রাখা কিছু কাঁচের গোল বল ভেঙে মাটিতে পড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেলো।

দুজন সাদা ধবধবে অনেকটা ভুতুড়ে মূর্তি ধোয়ার মতো তাদের দেহ, সেই ভাঙা কাঁচের মধ্য থেকে বেরিয়ে এলো। তারা দুজনেই একই সঙ্গে কিছু কথা বললো। সব কথা পরিষ্কারভাবে বোঝা গেলো না। তবে সামান্য কিছু বোঝা গেলো ম্যালফল আর বেল্লাট্রিক্সের গরম গরম কথার মাঝে। উত্তরায়ণে (২১ জুন) নতুন কিছু আবির্ভাব হবে, ওদের মধ্যে সবচেয়ে বৃদ্ধ মানুষটি বললেন। শুভ্র তার দাড়ি, বয়সের ভারে কুজ।

আক্রমণ করবে না। আমাদের প্রফিসির প্রয়োজন আছে।

–আশ্চর্য! ওর এতো সাহস, এই কথা বলে, বেল্লাট্রিক্স দাঁত কিড়মিড় করতে করতে করতে বললো। কথাগুলো জড়ানো জড়ানো ওখানে দাঁড়াও নোংরা হাফ ব্লাড়।

–দাঁড়াও, কথা বন্ধ করো, যতক্ষণ না আমরা প্রফিসি হাতে পাই।

–তারপর আর কারও আবির্ভাব হবে না, দুজনের মধ্যে একটি মেয়ে বললো।

তারপরই যে দুটি বৃদ্ধা ভাঙা কাঁচের বল থেকে বেরিয়েছিল তারা হাওয়াতে মিলিয়ে গেলো। শুধু ঘরের মেঝেতে কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে রইলো। ওরা হ্যারিকে সম্ভবত কিছু অগ্রিম বার্তা পাঠালো। সমস্যা কেমন করে বার্তাটা অন্যদের কানে যাবে।

–আপনি তো আমাকে এই প্রফিসির বিশেষত্ব জানাননি, কথাটা বলে হ্যারি পেছনে তাকালো। মনে হলো কেউ যেনো আসবে।

ম্যালফয় বললেন, পটার আমাদের সঙ্গে চাতুরী করবে না। হ্যারি বললো, মোটেই করছি না। হারমিওন ওর পা দিয়ে হ্যারির পা টিপলো।

–ডাম্বলডোর কি তোমাকে কখনও বলেছেন কি কারণে তোমার কপালে ওই কাটা দাগ বয়ে বেড়াচ্ছো? কারণটা ডিপার্টমেন্ট অফ মিস্ট্রিজের একটা পাত্রে লুকিয়ে রাখা হয়েছে, ম্যালফয় মুখ ভঙ্গি করে বললেন।

–আমার সম্বন্ধে? হ্যারি বললো। ভুলে গেলো ওর পালিয়ে যাবার পরিকল্পনা। কী বললেন, আমার কপালের কাটা দাগ সম্বন্ধে?

–সেটা কী, হারমিওন ওর পেছন থেকে উৎসুক হয়ে বললো।

–তা হতে পারে। ম্যালয়ের গলা বিদ্বেষ পরায়ণ মেশানো উল্লাসের। কিছু ডেথইটারসরা আবার বিশ্রীভাবে হেসে উঠলো। তাদের হাস্য রোলের মাঝে হ্যারি, হারমিওনকে বললো, তাক থেকে কাঁচের বলগুলো তুমি ভেঙে দিতে পারবে?

–আশ্চর্য! ডাম্বলডোর তোমাকে আজ পর্যন্ত বলেননি? ম্যালফয় আবার বললেন। তুমি আগে কেননা আমাদের কাছে আসোনি পটার? ডার্কলর্ড জানতে চান কারণটা।

–এখন পারি?

–কেন, ম্যালয়ের মুখে হাসি ধরে না যেনো। একমাত্র, তুমি যার অধিকার আছে ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রফিসি সম্বন্ধে জানার। ডার্কল্যান্ড অন্যদের ওটা চুরি করতে বলে ব্যর্থ হয়েছেন।

–বলতে পারেন কেন আমার সম্বন্ধে প্রফিসি চুরি করতে চেয়েছিলেন?

–তোমাদের দুজনকেই পটার দুজনকেই। তুমি কী জানো না তোমার শিশু অবস্থায় কেন তোমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন তিনি?

হ্যারি ম্যালফয়ের কোটারগত দুই ধূসর বর্ণের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। দুটো চোখেই মৃদু দিপ্তী এই প্রফিসির জন্যই কী ওর বাবা-মাকে হত্যা করেছেন। এর জন্য কি ও আজও সেটা বহন করে চলেছে? ওর হাতের রেখায় কী ওইসব প্রশ্নের জবাব আছে? কেউ তাহলে আমার আর ভোর্টে সম্বন্ধে প্রফিসি করেছে? হ্যারি ধীর স্থিরভাবে ম্যালফয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে। ও আঙ্গুল দিয়ে গরম কাঁচের বলটা খুব জোরে চেপে ধরলো। বলটা স্নিচের চেয়ে সামান্য বড়, তখনও তাতে ধূলো ময়লা লাগানো, আমাকে এখানে আসতে বাধ্য করেছেন ওটা তাকে দেবার জন্য? নিজে কেন আসতে পারেননি। বেল্লাট্রিকস কথাটা শুনে আঁতকে উঠলো, নিজে নিয়ে যাবেন? কী বলতে চাইছো? পাগলের মতো বিশ্রীভাবে হেসে উঠলো, যখন সবাই মিনিস্ট্রি অফ ম্যাজিকে তার প্রত্যাবর্তনের মধুর বিরূপতায় বসে রয়েছে, ডার্কলর্ড ওখানে যাবেন? অউররদের কাছে নিজেকে পরিচিত করাবেন? তারা এই সময় অযথা নষ্ট করবে আমার ভাই।

–তাই তিনি তোমাকে তার জন্য এই নোংরা কাজটি করতে পাঠিয়েছেন। হ্যারি বললো। যেমন স্টারগিস ধরতে চেয়েছিলেন বোডেকে দিয়ে চুরি করার জন্য?

ম্যালফয় আস্তে আস্তে বললেন, সুন্দর, অতি সুন্দর পটার। কিন্তু ডাকলর্ড জানেন তুমি মোটেই মুখ নও।

এখন! হ্যারি জোর দিয়ে বললো।

পাঁচটি বিভিন্ন কণ্ঠ ওর পেছন থেকে উচ্চারিত হলো, রিডাকটো। পাঁচটি কার্স পাঁচদিকে ছুটলো, তাদের সামনে যে তাকগুলো রয়েছে তার ওপোরে রাখা সব কাঁচের বলগুলো ছিটকে মেঝেতে পড়ে খান খান হয়ে গেলো। মুক্তোর মতো সাদা সাদা মূর্তি শূন্যে ভাসতে লাগলো। টাওয়ারিং স্ট্রাকচারটা ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেলো। বহু বছরের সঞ্চিত কাঠ–কাটারা জিনিসপত্র প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের মতো ধ্বসে পড়তে লাগলো।

রান (দৌড় দাও), হ্যারি যত জোরে পারে বললো। সেই প্রচণ্ড ওলোটপালটের মধ্যে হ্যারি হারমিওনের আলখেল্লার একটা কোণা ধরে টানতে টানতে চললো। একজন ডেথইটার সেই প্রচণ্ড ধূলোর ঝড়ের মধ্যে ওদের চেপে ধরতে এলে হ্যারি কনুই দিয়ে ভীষণ জোরে ধাক্কা দিতেই পড়ে গেলো। ওর মুখোশ খুলে গেলো। ওরা সবাই আঘাত পেয়ে প্রচণ্ডভাবে চিৎকার করতে করতে দেয়ালের তাকের মতো মেঝেতে পরে গেলো।

হ্যারি সামনে একটা পরিষ্কার বেরুবার পথ দেখে পাঁচ বন্ধুদের সঙ্গে ঘর ছেড়ে পালাতে গেলে হঠাৎ একটি হাত ওর গতিরুদ্ধ করলো।

প্রচণ্ড জোরে একজন ওর কাধ চেপে ধরলো। সেই সময় শুনতে পেলো হারমিওনের গলা স্টুপিফাই। হাতটা তৎক্ষণাৎ ওকে ছেড়ে দিলো।

হ্যারি প্রফিসিটা হাত থেকে ছাড়েনি, ভালো করে মুঠোর মধ্যে চেপে রেখে, দরজা পর্যন্ত ওরা পৌঁছে গেলো। সল্লোপোরটাস হারমিওন উঁচু গলায় বলতেই খোলা দরজাটা ক্যাচ ক্যাচ শব্দে বন্ধ হয়ে গেলো।

হ্যারি ভেবেছিলো রন, লুনা, জিনি ওর আগে আগে বাইরে চলে এসে ওদের জন্য বাইরে অপেক্ষা করছে। কিন্তু ওদের কাছে পিঠে কাউকে দেখতে পেলো না।

হারমিওন ভয় পেয়ে বললো, ওরা নিশ্চয়ই ভুল রাস্তা ধরে গেছে। নেভিল ফিসফিস করে বললো–শুনতে পাচ্ছে কিছু?

যে ঘরের দরজাটা ওরা বন্ধ করেছে, তার ভেতর থেকে জোরে জোরে চিৎকার, পদশব্দ ওদের কানে এলো। শুনতে পেলো লুসিয়স ম্যালফয়ের হুংকার, ওকে ছাড়বে না। ও আঘাত পেলে ডার্ক লর্ড অফিসি পাবে না। ওর আঘাতের চেয়ে প্রফিসি অনেক মূল্যবান। জাগসন চলে এসো, আমাদের নতুন করে কিছু ভাবতে হবে। ভাগ ভাগ হয়ে ওকে খুঁজে পেতে হবে, ধরতে হবে; ভুলো না, যা বললাম। পটারকে অক্ষত রেখে প্রফিসি করায়াত্ত করবে। বাকিরা খতম হলে ভালো।

–বেল্লাট্রিক্স, রুডলফস তোমরা বাঁ দিকে যাও। ক্রাকে, রবাস্টন তোমরা ডান দিকে; জাগসন, রোডল ফস সোজা দরজার দিকে যাও মালসিবার, তুমি আমার সঙ্গে চলো।

হারমিওনের মাথা থেকে পা পর্যন্ত কাপছে। বললো, এখন তাহলে আমরা কোথায় যাবো!

–ওদের জন্য এখানে দাঁড়াবে না, দরজার কাছ থেকে আমরা পালাই, তারপরই শুনতে পেলো দরজার কাছে কিছু ভারি জিনিস ধাক্কা খাওয়ার শব্দ। হারমিওন দরজাটা চার্ম করে বন্ধ করেছে।

–তফাৎ যাও, কর্কশস্বরে কেউ বললো অ্যালো হোমোরা।

দরজাটা খুলতেই হ্যারি, হারমিওন, নেভিল ডেস্কের তলায় আত্মগোপন করলো। ওরা দুজন ডেথইটারসদের পা দেখতে পেলো দ্রুত পায়ে ওদের দিকে আসছে।

হ্যারি দেখতে পেলো ডেথ ইটারদের হাঁটু, ওরা প্রতিটি ডেস্কের তলা সার্চ করছে। হাতে তাদের দণ্ড। ওরা যে ডেস্কের তলায় রয়েছে তার কাছে আসতেই ও জোরে জোরে বললো, স্টুপিফাই।

হ্যারির জাদুদণ্ডের মুখ থেকে লাভার মতো লাল আলো বেরিয়ে সবচেয়ে কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ডেথইটারসকে আঘাত করলো। ও ছিটকে পড়লো একটা গ্র্যান্ড ফাদার ঘড়ির ওপোর, ঘড়িটা মেঝেতে পড়ে গেলো। দ্বিতীয় ডেথইটার হ্যারির কাছ থেকে সরে গিয়ে হারমিওনকে তাক করলো। ভালো করে সার্চ করার জন্য ও হামাগুড়ি দিচ্ছিলো।

আভাদা

হ্যারি ডেস্কের তলা থেকে বেরিয়ে সেই ডেথইটারের টুটি চিপে ধরে মেঝেতে ফেলে দিতেই নেভিল ছুটে এসে ওদের গায়ের ওপোর একটা ডেস্ক ফেলে দিলো। তারপর ও নিজের দণ্ডটা দুই ডেথইটারসদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো-এক্সপেলিআরমাস।

দুজনেই ছিটকে পড়লো প্রফিসি হলে ঢোকার মুখে। যন্ত্রণায় ওরা ছটফট করতে লাগলো।

হ্যারি একপাশে সরে দাঁড়াতেই নেভিল আবার তাক করে বললো স্টুপিফাই!

ওর দণ্ড থেকে লাল আলো বেরিয়ে এসে ডেথ ইটারসদের কাঁধের ওপোর দিকে হলের সেলফে লাগলো। সেলফে সাজানো ঘড়িগুলো লণ্ডভণ্ড হয়ে মাটিতে পড়লো, কয়েকটা শূন্যে উড়তে লাগলো, কাঁচের জিনিসগুলো ও খড় কুটোর মতো উড়তে লাগলো। তারপরই আবার সেগুলো তাকে যেমন ছিলো তেমনিভাবে সাজানো রইলো, তারপর আবার যেকে সেই…।

হ্যারির হাত থেকে মাটিতে পড়ে থাকা দণ্ডটা একজন ডেথইটারকে তুলে নিতেই হ্যারি অন্য একটা ডেস্কের নিচে বসলো, তারপাশেই দেখতে পেলো ঝলমল করছে একটা কাঁচের জার। ছোটাছুটি করার সময় ডেথ ইটারের মুখোশ সামান্য নিচে ঝুলে পড়তে ও কিছু দেখতে পেলো না। সেই মুখোশটা মুখ থেকে সরিয়ে হ্যারিকে দেখে দণ্ডটা তুলে বললো–স্টুপ। কার্সটা ও শেষ করতে পারলো না।

সঙ্গে সঙ্গে হারমিওন বললো–স্টুপিফাই!

দণ্ড থেকে লাল আলো ডেথইটারে বুকে সজোরে আঘাত করলো। ও জড় পদার্থের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। ওর একটা হাত ওঠান, মাটিতে পড়ে গেছে ওর জাদুদণ্ড। ও বেল জারের (কাঁচের পাত্রের) পাশে অচেতন হয়ে পড়ে গেলো। বেল জারটা ধাক্কাতে ভেঙে যেতেই ওর মাথাটা ভাঙা কাঁচের পাত্রের ভেতরে ঢুকে গেলো।

জারের মধ্যে ওর মাথাটা দেখে মনে হলো সাবানের বড় একটা বুদবুদ।

নেভিল বড় বড় চোখে কাঁচের জারের ভেতরে ডেথইটারের মুণ্ডুর দিকে তাকিয়ে রইলো।

ওরা তিনজনেই জাদুদণ্ড তুলে জারের মধ্যে ডেথইটারের মুণ্ডুটা দেখতে লাগলো। দেখলো ওর মাথাটা অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। মাথার কালো চুলগুলো ওর স্কালের মধ্যে ঢুকে একেবারে টাকলু হয়ে গেলো। গাল দুটো ফুলে উঠলো। সমস্ত মাথার ওপোরটা কালোপিচে চটচট করতে লাগলো।

ডেথইটার জার থেকে মাথাটা টেনে নেবার চেষ্টা করতে লাগলো। ওরা আশ্চর্য হয়ে দেখলো ডেথইটারের মুণ্ডুটা ছোটো হতে হতে একটা বাচ্চা ছেলের মতো মুণ্ডু হয়ে গেলো। তারপর একটু একটু করে ওর মুণ্ডুটা যেমন ছিলো তেমনই হয়ে গেলো। মাথা ভর্তি কালো চুল, ছোটো ছোটো দাড়ি।

ডেথ ইটার মাথাঝাড়া দিয়ে আবার উঠবার চেষ্টা করতেই ওর মুণ্ডুটা ঘোট ছেলের মতো হয়ে গেলো।

কাছে পিঠের একটা ঘর থেকে ওরা দুম দুম আওয়াজ আর কিছু ভেঙে পড়ার শব্দ শুনতে পেলো। তারপরই বিকট আর্তনাদ!

–রন? হ্যারি চিৎকার করে উঠলো। মুখ ফিরিয়ে নিলো জারের মধ্যে ডেথইটারের দানবীয় পরিবর্তনের দিক থেকে। জিনি? লুনা? হারমিওন আঁতকে উঠলো, হ্যারি, ওরা সব কোথায়?

ডেথইটার তখন ওর মুণ্ডুটা জার থেকে টেনে নিয়েছে। ওকে দারুণ বীভৎস দেখাচ্ছে। ওর বাচ্চা ছেলের মুণ্ডুটা অতি উচ্চস্বরে চেঁচাচ্ছে মোটা মোটা হাত দুটো ও এলোপাতাড়ি ঘোরাচ্ছে। হাতটা প্রায় হ্যারির গায়ে এসে লেগে গিয়েছিলো। এক চুলের জন্য ও বেঁচে গেলো। হ্যারি ওর জাদুদণ্ডটা তুলতে যাবে, সেই সময় হারমিওন ওর হাত চেপে ধরে বললো, তুমি একটা শিশুকে আঘাত করতে পারো না।

এই নিয়ে বাকযুদ্ধের সময় নেই। হ্যারির কানে এলো হল অফপ্রফিসি থেকে আরও পদ শব্দ। একটু একটু করে সেই শব্দ দ্রুত এগিয়ে আসছে। এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে, ওদের কাছে আসার প্রতিক্ষা করতে লাগলো দুজনেই।

হ্যারি সেই কুৎসিৎ বাচ্চার মতো মুণ্ডু ওয়ালা ডেথ ইটার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে হারমিওনকে বললো, চলো চলে এসো। ওরা খোলা দরজা দিয়ে অন্ধকার হলের দিকে এগোতে এগোতে দেখতে পেলো দুজন ডেথ ইটার হল থেকে ওদের দিকে টলতে টলতে আসছে। হ্যারি ঘরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে।

সোলল্লা–কার্সটা শেষ করবার আগেই, যে দুজন ডেথ ইটার বাইরে ওদের ধরতে গিয়েছিলো তারা ঘরে ঢুকে পড়লো।

দুজনেই রাজ্য জয়ের মতো উল্লাসে যেনো ফেটে পড়লো।

হমপেডিমেন্ট। ঘরের সব জিনিস লণ্ডভণ্ড। নেভিলে কোথায় ছিটকে পড়লো দেখতে পাওয়া গেলো না। হ্যারির মাথায় গাদাগাদা বই উল্টে পড়লো। পাথরে মাথা ঠুকে গেলো। হারমিওন একটা বইয়ের র‍্যাকে ধাক্কা খেলো। হ্যারির চোখের সামনে ছোট দুটো আলোর বিন্দু প্রায় ওকে দৃষ্টিহীন করে দিলো।

–পেয়েছি, ওকে আমরা পেয়েছি। হ্যারির কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ডেথ ইটাররা সাফল্যের আনন্দে ভীষণ জোরে হেসে উঠলো–ইন অ্যান অফিস অফ।

–সাইলেনসিও! হারমিওন বলার সঙ্গে সঙ্গে ওদের কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে গেলো। একজন ওরা মুখোশের আড়ালে হয়তো কিছু বলার চেষ্টা করল; কিম্ভ ওর কথা কেউ শুনতে পেলা না। পাশের ডেথইটারের পাশে ও ঢলে পড়লো।

–পেট্রিফিকাস টোটালাস! হ্যারি গর্জে উঠলো, দ্বিতীয় ডেথ ইটারের হাতেই জাদুদণ্ড রয়ে গেলো। ওর দুহাত, দুপা এক সঙ্গে জড়িয়ে গেলো। হুমড়ি খেয়ে হ্যারির পায়ের সামনে পড়ে গেলো।

–বাঃ বাঃ দারুণ!

কিন্তু যে ডেথইটারকে হারমিওন কাবু করেছিলো সে হঠাৎ নড়তে চড়তে লাগলো। ওর হাতের জাদুদণ্ড থেকে বেগুনি আলোর রশ্মি হারমিওনের বুকে এসে বিধলো। হারমিওন সশব্দে বলে উঠলো, উ! ও মেঝেতে পড়ে গেলো, হাত, পা, শরীর অচল হয়ে গেলো।

–হারমিওন!

হ্যারি হাঁটু গেড়ে প্রায় অচৈতন্য হারমিওনের পাশে বসলো। ডেস্কের তলা থেকে নেভিল হামাগুড়ি দিয়ে ওর কাছে চলে এলো। নেভিল একজন ডেথইটারের মাথার কাছে আসার জন্য ও প্রচণ্ড একটা লাথি নেভিলের মাথায় মারলো। নেভিলের অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলো, হাতের দণ্ডটা ছিটকে পড়ে দুটুকরো হয়ে গেলো।

হ্যারি পেছন ফিরে দেখলো ডেথইটার ওর মুখোশ খুলে ফেলেছে, হাতের জাদুদণ্ড ওর দিকে তাক করে রেখেছে। ডেথ ইটারের মুখটা দেখে মনে হলো কোথায় যেনো দেখেছে। ও হ্যাঁ লম্বা মুখ, ফ্যাকাশে চেহারা তো ডেইলিফেটের পাতায় দেখেছে। নামটাও মনে পড়ে গেলো–অ্যান্টোনিন ডলোহভ! ও তো প্রেসেটসকে হত্যা করেছে।

ডলোহভ দাঁত বার করে হাসলো। একটা হাত দিয়ে হ্যারির মুঠোতে ধরা প্রফিসিটা ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করলো। ও গেঙিয়ে গেঙিয়ে বললো, ওটা আমাকে দিয়ে দাও। যদি না দাও তাহলে তোমার ওই মেয়েটার মতো হাল হবে।

–আমি জানি এটা তোমার হাতে তুলে দিলে বাকি আমরা সবাই প্রাণে। বাঁচবো, হ্যারি বললো।

হ্যারির মাথায় অসম্ভব যন্ত্রণা, কোনো কিছু ভাববে তার শক্তি নেই। ও একটা হাত হারমিওনের কাঁধে রাখলো। তখনও সে কাধটা ঠাণ্ডা হয়ে যায়নি, তাহলেও ও হারমিওনের যন্ত্রণাকাতর মুখের দিকে তাকাতে পারছে না। হে মৃত্যু তুমি দয়া করে। আমার কাছ থেকে আমার প্রিয় বন্ধু হারমিওনকে কেড়ে নিও না.. ওর জীবন নিও না। আমার দোষেই ও অকালে প্রাণ হারালো।

প্রচণ্ড লাথি খেয়ে নেভিলের নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে, ঠিককরে কথা কইতে পারছে না। হ্যারি, হ্যারি কখনোই ওকে কাঁচের বলটা দেবে না।

ঠিক সেই সময় ছোট বাচ্চার মতো মাথাটা দোলাতে দোলাতে থপ থপ করে দরজার কাছে দাঁড়ালো। ওর ছোট মাথাটা দুলছে, হাতের মুঠো দুটো আঘাত করার জন্য প্রস্তুত সবকিছুই যেন হাতের বাইরে চলে গেছে। হ্যারি শেষ চেষ্টা করলো।

পেট্ৰিফিকাস টোটালাস ডলোহড বাধা দেবার আগেই হ্যারির স্পেল ওকে গিয়ে সোজা আঘাত করলো। ও হ্যারির প্রিয় কমরেডের পাশে ধপাস করে পড়ে গেলো। দুজনেই মৃত, কাঠের মতো তাদের দেহ, এক ইঞ্চি আর সরতে পারবে না।

–হারমিওন, হ্যারি সেই মুহূর্তে মাথাটায় ঝাঁকুনি দিয়ে বললো। কুৎসিৎ ছোট মাথাওয়ালা ডেথ ইটার দৃষ্টির বাইরে চলে গেলো।

হারমিওন, উঠে পড়ো।

নেভিলের নাক-মুখ থেকে তখনও গলগল করে রক্ত ওর গাল বেয়ে বুকে পড়ছে। নাকের হাড় ভেঙে গেছে। তাও পা টেনে টেনে হ্যারির পাশে বসে বললো ওকে কি করেছে সেই ডেথইটারসটা?

–আমি জানি না। নেভিল হারমিওনের কব্জিটা চেপে ধরলো।

–পালস আছে তো, আমি নিশ্চিত হয়ে বলছি। হ্যারির বিরাট এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

–হ্যাঁ, তাইতো মনে হচ্ছে, হ্যারি হারমিওনের কবজি ধরে বললো, বেঁচে আছে।

 হ্যারির কানে এলো আরও পদ শব্দ। শব্দগুলো যেন ওদের দিকে মন্থর গতিতে আসছে; কিন্তু সেই শব্দ কোনও নতুন ডেথ ইটারের নয়। যার মাথাটা বাচ্চার মতো ছোটো হয়ে গেছে, তারই ছটফটানির শব্দ পাশের ঘর থেকে।

হ্যারি বললো, নেভিল আমরা বোধহয় সার্কুলার ঘরের কাছে এসে গেছি। সেখান থেকে বাইরে যাবার ঠিক দরজাটা পেয়ে যাবো। আমাদের বেরোতেই হবে। ডেথ ইটারদের এখানে আসার আগে। মনে হয় তুমি হারমিওনকে দুহাতে তুলে করিডোর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবে, লিফটে চাপাতে পারবে। সেখানে কেউ না কেউ থাকবে, তাকে যা ঘটেছে সব বলবে।

–তারপর আমরা কী করবো? ও আবার হাত দিয়ে নাক মুছতে মুছতে হ্যারির দিকে ভুরু তুলে বললো।

–আমাকে তো রন, জিনি, লুনাদের খুঁজতে হবে, হ্যারি বললো। নেভিল দৃঢ়তার সঙ্গে বললো, তাহলে আমিও তোমার সঙ্গে যাবে। –তাহলে হারমিওন একলা পড়ে থাকবে? নেভিল বললো, ঠিক আছে, তাহলে ওকে আমাদের সঙ্গে নিয়ে চলো।

নেভিল কথাটা বলে হারমিওনের একটা হাত তুলে কাঁধের ওপোর রে হ্যারির দিকে তাকালো। প্রথমে ইতস্তত করে হ্যারি হারমিওনের অন্য হাতটা নিজের কাঁধের ওপোর রাখলো। তারপর হারমিওনের ম্যাজিক ওয়ান্ডটা নিজের আলখেল্লার পকেটে পুরে রাখলো।

নেভিল ওর ভাঙা ম্যাজিক ওয়ান্ডটা লাথি মেরে সরিয়ে দিয়ে, দরজার দিকে দুজনে হারমিওনকে ধরে ধরে নিয়ে চললো। প্রায় হারমিওন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চললো।

হ্যারি গলা বাড়িয়ে ঘরের ভেতর দেখলো বেবি হেডেড ডেথ ইটার তখনও সারা ঘর অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার জন্য ছুটাছুটি করে চলেছে। ঘরের সবকিছু ভেঙে তছনছ করে চলেছে। নেভিল বললো, ওর অবস্থা এখন খাস্তা। আমাদের দিকে তাকাবার ওর মনোবল নেই, ওর দিকে লক্ষ রেখে চলো।

ওরা অফিস ঘর থেকে বেরিয়ে অন্ধকার হলওয়েতে এসে দাঁড়ালো। একটা প্রাণীও সেখানে নেই। ওরা কয়েক পা এগোলো। হারমিওনকে নিয়ে নেভিলের হাঁটতে একটু অসুবিধে হচ্ছিলো। টাইম রুমের দরজার সামনে দাঁড়াতেই দরজা খুলে গেলো, আগের মতোই দেওয়ালটা ঘুরতে লাগলো। একটু আগে ও ঘাড়ে প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে খুব একটা সুস্থ ছিলো না। হারমিওনের ওজনের জন্য তাই হাঁটতে অসুবিধে হচ্ছিলো। তারপর দেয়ালটার ঘোরা বন্ধ হতেই ও দরজার দিকে তাকালো, দেখলো হারমিওনের জ্বলন্ত ক্রশটা আর নেই।

–কোন দিকে আমরা বেপরোয়া হয়ে যাবো?

কোন দরজা দিয়ে ওরা যাবে ঠিক করার আগেই ওদের ডানধারের একটা বন্ধ দরজা খুলে যেতেই তিনজন সেখানে গড়িয়ে ওদের সামনে পড়লো?

–রন! হ্যারি ওর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে দুর্বল কণ্ঠে বললো, জিনি তুমি ভালো আছো তো?

–হ্যারি, রন মুন হাসলো। হ্যারির আলখেল্লার সামনেটা ধরে ওর দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি, তুমি তাহলে আছে! হাঃ হাঃ হাঃ, সত্যি তোমাকে খুব অদ্ভুত লাগছে, হ্যারি, কেমন যেনো জগাখিচুড়ি হয়ে আছে!

হ্যারি দেখলো রনের মুখটা সাদা, ঠোঁটের এক কোণা থেকে কিছু একটা গড়িয়ে পড়ছে। ও হ্যারির আলখেল্লাটা ধরে বেঁকে দাঁড়িয়ে রইলো।

হ্যারিও ওর টানে ধনুকের মত সামান্য বেঁকে গেলো। –জিনি তোমার সব ঠিকঠাক তো?

জিনি মৃদু হেসে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে কোনও রকমে বসে রইলো পায়ের গোড়ালি দুটো চেপে।

লুনা যেনো বহুদূর থেকে বললো, আমার মনে হয় ওর গোড়ালির হাড় ভেঙে গেছে। লুনা একমাত্র যার কিছু হয়নি।

–ওদের চারজন লোক আমাদের পেছনে তাড়া করেছিলো, আমরা একটা অন্ধকার ঘরে ঢুকে পড়েছিলাম। ঘর ভর্তি শুধু প্ল্যানেটস, অদ্ভুত এক জায়গা। ওখানে গিয়ে মনে হচ্ছিল আমরা অন্ধকার অতল জলে ভেসে বেড়াচ্ছি।

রন বললো–জানো আমরা উরানসকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। হাঃ… আঃ… হাঃ…, হাসার সময় রনের ঠোঁটের কোণা থেকে কয়েকটা বুদবুদ বেরিয়ে ফেটে গেলো।

–যাই হোক, ওদের একজন জিনির পা জোরসে চেপে ধরেছিলো। আমি রিডাক্টর কার্স দিয়ে ওর মুখে পুটো মেরেছি দিয়েছি।

জিনির মুখ দেখে হ্যারির মনে হলো ওর পায়ে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে, ফেলছে। চোখ দুটো বন্ধ।

রনকে শুধু হাসতে দেখে হ্যারির মুখ শুকিয়ে গেলো। রন তো অনাবশ্যক হাঃ হাঃ করে হাসে না। ও তখনও হ্যারির আলখেল্লার প্রান্তটা ধরে রয়েছে।

–হ্যারি, রন বললো হ্যারির একটা কান ওর মুখের কাছে এনে। হাসতে হাসতে বললো–ওই মেয়েটাকে তুমি চেনো হ্যারি? ওর নাম লুনা। লুনা লাভগুড…

হা হা হা।

হ্যারি শক্ত হয়ে বললো–আমাদের এক্ষুনি এখান থেকে যেতে হবে। লুনা তুমি জিনিকে হাঁটতে সাহায্য করতে পারবে?

কানের পাশে জাদুদণ্ডটা গুঁজে লুনা বললো, কোনও অসুবিধে নেই।

ওরা একটু এগিয়ে অন্য একটি দরজার সামনে দাঁড়াতেই দরজাটা দড়াম করে খুলে গেলো। বেল্লাট্রিক্স লেস্টারেঞ্জের সঙ্গে তিনজন ডেথইটারস ওদের সামনে দাঁড়ালো।

–ওইতো, ওইতো ওরা এখানে, বেল্লাট্রিক্স আনন্দে লাফিয়ে উঠলো।

হ্যারি ঘরে ঢুকে রনের হাত ছেড়ে দিলো। নেভিল, হারমিওনকে ধরে আছে ওকে তো ছাড়তে পারে না। দরজাটা বন্ধ করে দিলো।

–ফোলোপোবটাস হ্যারি জোর গলায় বললো। ডেথইটারসরা বন্ধ দরজা ধাক্কা দিতে লাগলো। একজন বললো, ওহো আরও তো ওখানে যাবার দরজা আছে।

আমরা ওদের পেয়েছি, ওরা এখানে আছে।

হ্যারি ঘুরতে ঘুরতে আবার সেই ব্ৰেণরুমে এলো। দেয়ালের দিকে আরও দরজা আছে ওর মনে হলো। কানে এলো আরও অনেক ডেথইটারসদের পদধ্বনি। দৌড়ে দৌড়ে আসছে, তাই পদশব্দ একটু বেশি।

–লুনা নেভিল, আমাকে সাহায্য করো!

ওরা ঘরের চারধার ঘুরতে ঘুরতে, এক এক করে সব দরজা ভালো করে সিল করে দিলো। হ্যারি দরজার দিকে দৌড়ে দৌড়ে যাবার সময় একটা টেবিলের সঙ্গে জোরে ধাক্কা খেলো।

–কোলোপোরটাস!

ওরা সবাই মিলে জোরে জোরে দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলো দরজা খোলার জন্য। দরজাগুলো ভেঙে পড়ার মতো কট কট শব্দ হতে লাগলো। ঘরের ওপরে উঠলে লুনার কান্না শুনতে পেলো।

–কোলো… আ আ আ আর ঘ…

হ্যারি তাকিয়ে দেখলো লুনা শূন্যে উড়ছে আর পাঁচজন ডেথইটারস ঘরে ঢুকেছে। লুনা ঠিক সময়ে সেই দরজাটা বন্ধ করতে পারেনি। উড়তে উড়তে ও একটা ডেস্কের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে হারমিওনের মতো মাটিতে চিৎপটাং হয়ে পড়ে জ্ঞান হারালো।

বেল্লাট্রিক্স বললো, আগে পটারকে ধরো। ও দৌড়ে হ্যারির কাছে পৌঁছতে চেষ্টা করলো। কিন্তু হ্যারিকে ধরতে পারলো না। ওরা জানে হ্যারির হাতে যতক্ষণ প্রফিসি আছে ততোক্ষণ ও নিরাপদে থাকবে।

রনের তখনও আগের মতো অবস্থা, হাসতে হাসতে হ্যারির কাছে গিয়ে বললো, হায় হ্যারি। মাতালের মত টলতে টলতে হ্যারির কাছে দাঁড়ালো। দাঁত বার করে হাসতে হাসতে বললো–হে… হ্যারি এখানে ব্রেন আছে। হা হা হা ভূতুরে ব্যাপার নয় হ্যারি?

হ্যারি ধমকে উঠলো–নামো! নামো এখান থেকে। কিন্তু রন তার আগেই সেই জলভর্তি গর্তে ওর দণ্ড তাক করেছে।

–সত্যি, হ্যারি ওগুলো ব্রেনের টুকরো, দেখো। অ্যাকিত্ত ব্রেন।

হঠাৎ সবকিছু যেনো জমে বরফ হয়ে গেলো। হ্যারি, নেভিলে, জিনি আর প্রতিটি ডেথইটারসরা জলাধারের দিকে তাকালো। দেখলো, পুকুরের সবুজ জলে। ভাসমান ব্রেনের টুকরোগুলো ছোটো ছোটো মাছের মতো হয়ে বাতাসে ভাসতে ভাসতে রনের দিকে এলো। তারপর পাতলা পাতলা রিবনের মতো হয়ে ফুর ফুর করে উড়তে লাগলো।

–হা হা হা হ্যারি, ওদিকে দেখো, উড়ন্ত রিবন দেখতে দেখতে রন বললো। হ্যারি এসো এসো, এদিকে এসে ওগুলো ধরো। বাজি ফেলছি ওগুলো ফুল নয়, বিরন নয়, ছোট ছোট মাছ।

রন, না!

হ্যারি জানে না রন যদি উড়ন্ত জিনিসগুলো স্পর্শ করে তাহলে কি হবে? তবে শুভ কিছু হবে না, সে সম্বন্ধে সুনিশ্চিত। কিন্তু রন হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলেছে একটা উড়ন্ত ব্রেন হ্যারি বাধা দেবার আগেই।

রনের হাত লাগার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো রনের হাতে দড়ির মতো জড়িয়ে গেলো।

–বন, রন, তুমি কি করছো, থামো, থামো, রঙিন ফিতে বনে যাওয়া ব্রেনগুলো এবার ওর বুকে জড়াতে শুরু করলো। ও সেগুলো টেনে টেনে ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করলো। তারপর ব্রেনগুলো অক্টোপাসের মতো হয়ে গেলো।

ডিফেন্ডো! হ্যারি জোরে জোরে বলে উঠলো। কিন্তু রনকে আরও জড়িয়ে ধরতে লাগলো ফিতেগুলো। রন পড়ে যাবার পরও রনের সমস্ত শরীরে জড়াতে লাগলো।

জিনি, রনের অবস্থা দেখে আঁতকে উঠে বললো, হ্যারি, হ্যারি ও দম বন্ধ হয়ে মরে যাণে! হাঁটুর ব্যথার জন্য একচুলও নড়তে পারছে না। ঠিক সেই সময় একজন ডেথইটারের দণ্ড থেকে লাল আলো বিচ্ছুরিত হয়ে জিনির মুখে আঘাত করতেই ও জ্ঞান হারিয়ে একপাশে ঢলে পড়লো।

নেভিল বলে উঠলো স্টাবিফাই নেভিল, হারমিওনের জাদুদণ্ডটা নিয়ে চতুর্দিকে ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে আসা ডেথইটারসদের বলতে লাগলো, স্টাৰিফাই, স্টালিফাই!

কিন্তু কিছুই ও করে উঠতে পারলো না।

একজন ডেথইটার নেভিলের দিকে স্টানিং স্পেল ছুঁড়লো। স্পেল ওর গায়ে লাগলো না। হ্যারি আর নেভিল, ছজনের মধ্যে মাত্র দুজনে ডেথইটারসদের আক্রমণের পর আক্রমণ রুখতে লাগলো। স্রোতের মতো রূপালী তীর ওদের আক্রমণ করে যেতে লাগলো। সেগুলো ওদের দুজনের গায়ে না লেগে দেয়ালে বিদ্ধ হয়ে দেয়াল গর্ত হতে লাগলো। বেল্লাট্রিক্স মরিয়া হয়ে হ্যারিকে ধরবার চেষ্টা করতে লাগলো। হ্যারি শক্ত করে প্রফিসিটা মুঠোর মধ্যে ধরে দ্রুত ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়লো। ডেথইটারসদের পরাস্ত ওকে করতেই হবে।

প্রফিসি নষ্ট হয়ে যেতে পারে ওর হাত থেকে পড়ে, তাই ডেথইটারসরা ওকে বি-উইচ করতে চাইলো না।

হ্যারি একটা দরজা খোলা পেয়ে সেখান দিয়ে অন্য একটা ঘরে পা দিতেই ঘরের ফ্লোরটা অদৃশ্য হয়ে গেলো।

ও পাথরের সিঁড়ির প্রতিটি ধাপের ওপোর দিয়ে গড়িয়ে নিচে পড়তে লাগলো। শেষে সেই গর্তের শেষে পড়ে গেলা, যেখানে ডায়াসের ওপোর আর্চওয়েটা ছিলো। হ্যারি সেই গর্তে শুয়ে ওপোরের দিকে তাকিয়ে দেখলো চেনা অচেনা অনেক ডেথইটারসরা পিটের সিঁড়ি ধরে নিচে নেমে আসছে। ও ডায়াসের দিকে এগোতে লাগলো। কিছুতেই ও ধরা দেবে না, ও ডায়াসে উঠে পিছন দিকে চলে গেলো।

ডেথইটারসরা ওকে ধরতে না পেরে নিচ থেকে ওরই মতো হাঁফাতে লাগলো। একজনের আঘাত লেগে প্রচুর রক্ত পড়তে লাগলো। ডলোহব বন্ডি-বাইন্ড কার্স থেকে নিজেকে মুক্ত করে, সোজা হ্যারির মুখের দিকে ওর জাদুদণ্ডটা তুললো।

লুসিয়াস ম্যালফয় মুখ থেকে মুখোশ টেনে খুলে হ্যারিকে বললো, হ্যারি তোমার খেল খতম। ভালো চাইতে প্রফিসিটা আমাকে দিয়ে দাও। হ্যাঁ হ্যাঁ খুব ভালো ছেলের মতো।

হ্যারি বললো, হা হা, দেবো নিশ্চয়ই দেবো। তবে আপনার সাঙ্গোপাঙ্গদের এখান থেকে চলে যেতে বলুন।

বেশ কয়েকজন ডেথইটারস হেসে উঠলো।

লুসিয়াস ম্যালফয় বললেন, হ্যারি দর কষাকষির এখন সময় নেই। ম্যালফয়ের ফ্যাকাশে মুখটা আনন্দে যেনো ফেটে পড়ছে, দেখো এখন এখানে আমরা দশজন আর তুমি মাত্র একা। ডাম্বলডোর তার স্কুলে কী তোমায় গুণতে শেখায়নি?

ও একা নয়! ওপোর থেকে একজন খুব জোরে বললেন, কে বলছে ও একা? এখনও ওর ঈশ্বর সহায়।

হ্যারির বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠলো। নেভিল সিঁড়ির ধাপ ধরে নেমে আসছে ডেথ ইটারসদের দিকে, ওর কাঁপা কাঁপা হাতে ধরা রয়েছে হারমিওনের জাদুদণ্ড।

–নেভিল, নেভিল তুমি এদিকে এসো না, রনের কাছে যাও। হ্যারি ওর দিকে তাকিয়ে বললো।

–স্টাবিফাই নেভিল আবার চিৎকার করে বললো। ও জাদুদণ্ডটা তাক করলো প্রতিটি ডেথইটারের দিকে। স্টাবিফাই, স্টাবিফাই।

একজন লম্বাচওড়া ডেথইটার নেভিলের পেছন থেকে এসে ওকে ধরলো। নেভিলের গায়ে যতো শক্তি আছে তা দিয়ে হাত পা ছুঁড়তে লাগলো। ওর হাত দুটো পেছনে ঘুরিয়ে চেপে ধরে বিশ্রীভাবে হাসতে লাগলো সেই ডেথইটারসটা।

লুসিয়াস ম্যালফয় আঁ্যাক খ্যাক করে বললেন–আরে লংগবটম না? তুমি নিশ্চয়ই জানো তোমার গ্র্যান্ডমাদার আমাদের শুভ কাজের জন্যে নিজের পরিবারের অনেককে খুইয়েছেন? তাই তোমার আমাদের হাতে মৃত্যু তাকে খুব একটা ব্যথিত করবে না।

–লং বটম? বেলাট্রিক্সের সারা মুখে শয়তানী হাসি; তুমি নিশ্চয়ই জানো, কেন তোমার বাবা-মায়ের সঙ্গে আমার দেখা করার ভাগ্যে হয়েছিলো, দুষ্টু ছেলে!

–আমি সে কথা জানি! নেভিল হুংকার দিয়ে উঠলো। নেভিল ডেথইটারসদের হাত থেকে মুক্ত হবার জন্য ভীষণভাবে লড়তে লাগলো। বজ্র আঁটুনি শিথিল হতে লাগলো, পাগলের মতো ও বলে উঠলো–তোমরা কেউ একে স্টান করো!

বেল্লাট্রিক্স বাধা দিলো–না না না। প্রথমে হ্যারি তারপর নেভিলের দিকে তাকালো, লড়তে দাও, দেখি কতক্ষণ লড়ে। তারপরই তো ও বাবা-মায়ের মতো মুখ থুবড়ে পড়বে। অবশ্য পটার যদি আমাদের প্রফিসিটা না দেয়।

নেভিল বললো, খবরদার হ্যারি ওটা শয়তানদের দেবে না। বেল্লাট্রিক্স ওকে যে ডেথইটার ধরেছিলো, একই সঙ্গে তাকে আর হ্যারিকে নিজের কাছে টেনে আনলো। তারপর হাতের জাদুদণ্ড তুলে ধরতেই নেভিলে আবার বললো, হ্যারি দেবে না, দেবে না বলছি ওদের।

বেল্লাট্রিক্স অকম্পিত গলায় বললো, কুসিও।

নেভিল সঙ্গে সঙ্গে জোড়াপায়ে ডেথইটারের বুকে লাথি মারলো। সঙ্গে সঙ্গে ডেথইটার ওকে ছেড়ে দিতেই নেভিল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলো।  

বেলাট্রিক্স হেসে বললো, ছোটো খাটো দাওয়াই।

নেভিলের আর্তনাদ থেমে গেলো, তারপরই বেলাট্রিক্সের পায়ের কাছে পড়ে ফেঁপাতে ফোপাতে লাগলো। বেল্লাট্রিক্স হ্যারির দিকে তাকিয়ে আমার কথা শোনো–হয় তুমি প্রফিসি আমার হাতে দাও। তা না দিলে তোমার বন্ধুকে আমার পায়ের কাছে শুয়ে মরে যেতে দাও।

হ্যারির কাছে তখন আর কোনো পথ খোলা নেই বা ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রশ্ন নেই। প্রফিসিটা খুব সম্ভব ওর হাতের চাপে আরও উত্তপ্ত হয়ে গেছে। ও প্রফিসিটা এগিয়ে দিলো। ম্যালফয় প্রফিসিটা নেবার জন্য লাফিয়ে উঠলেন।

তারপরই অদ্ভুত এক ঘটনা। হ্যারি স্বপ্নেও ভাবেনি এমন ঘটনা ঘটবে।

ঘরের সবচেয়ে উঁচু থেকে দুটো দরজা শব্দ করে খুলে গেলো। ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন, সিরিয়স, লুপিন, মুডি, টোংকস আর কিংগসলে।

ম্যালফয় ফট করে ঘুরে দাঁড়িয়ে ওদের দিকে জাদুদণ্ডটা তাক করলেন। কিন্তু তার আগেই টোংকস ওকে স্টানিং স্পেল ছুঁড়েছেন।

সেই স্পেল কাজ করলো কি করলো না হ্যারির দেখার অবকাশ নেই।

হ্যারি ডাইভ দিয়ে ডায়াস থেকে নেমে পড়লো। অর্ডার অফ ফনিক্সের উচ্চ পর্যায়েল সদস্যদের দেখে ডেথইটারসরা হকচকিয়ে গেছে। ওরা সকলেই অবিশ্রান্ত বৃষ্টির মতো ডেথইটারসদের দিকে স্পেল ছুঁড়তে শুরু করলেন। ওরা সেই পিটের সিঁড়ির ধাপ থেকে একের পর এক পিটের তলায় পড়ে যেতে লাগলো। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে পড়ে থাকা ডেথইটারসদের দেহ আর মাঝে মাঝে তীব্র আলোর ঝলকে হ্যারি দেখলো নেভিল হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসছে। ও আবার একটা লাল আলো থেকে গোলা মেরে বেরিয়ে নেভিলের কাছে পড়লো।

–তুমি ভালো আছো নেভিল? ওদের মাথার ওপোর দিয়ে আরও এক ঝলক স্পেল উড়ে গেলো।

–হ্যাঁ, নেভিল অতি কষ্টে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো।

–রন কোথায়, কেমন আছে?

–মনে হয় ভালই আছে। শেষ দেখেছি ওকে সেই ছোট ছোট ব্রেনের সঙ্গে লড়াই করতে।

ওদের দুজনের মাঝে পাথরের ফ্লোর একটা স্পেল লেগে দারুণ শব্দ করে ফেটে গেলো। একটা বাক্সের (ক্র্যাটার) ওপোর মাত্র এক সেকেন্ড আগে নেভিলের হাত রাখা ছিলো। সেটা ভেঙে চৌচির হয়ে যেতেই তার ভেতর থেকে একটা মোটা হাত বেরিয়ে এলো। হাতটা হ্যারির গলা ধরে সোজা তুলে ধরলো।

ওর কানের কাছে কে যেনো মুখ এনে বললো, দাও দাও, আমার হাতে প্রফিসিটা দাও।

মোটা হাতের ডেথইটার এতো জোরে ওর গলাটিপে ধরে তুলে রেখেছে যে হ্যারি নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। ও আধবন্ধ চোখে দেখলো সিরিয়স, টোংকস, কিংগসলে, ডেথইটারস ও বেল্লাট্রিক্সের সঙ্গে ভয়ার্তভাবে লড়ে যাচ্ছেন। কারও কী চোখে পড়ছে না হ্যারি আর একটু পরে হয়তো দমবন্ধ হয়ে মরে যাবে? সেই মোটা হাতটা হ্যারির হাত থেকে প্রফিসিটা নেবার জন্য হ্যারির গলা আরও জোরে চেপে ধরলো।

আরঘ নেভিল কিন্তু হারমিওনের দণ্ডটা হাতে নিয়ে স্পেলটা স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতে পারলো না। তাই কোনও কাজ হতে না দেখে সোজা দণ্ডটা ডেথইটারের মুখোশে ঢাকা একটা চোখে প্যাট করে বিধিয়ে দিলো। ও যন্ত্রণায় কাতর হয়ে চোখে হাত দিতে গিয়ে হ্যারিকে ছেড়ে দিলো। হ্যারি চট করে ঘুরে দাঁড়িয়ে ডেথইটারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে নিতে বললো স্টুপিফাই!

হ্যারি ওর দিকে তাকালো, ও পিছন দিকে ঘুরে পড়তেই ওর মুখোশ খুলে গেলে হ্যারি দেখতে পেল সে ম্যাকনেয়র! ব্লাডবিককে হত্যা করতে নিযুক্ত করা হয়েছিলো। ও রক্তাক্ত চোখটা চেপে ধরলো এক হাতে।

হ্যারি নেভিলকে বললো–ধন্যবাদ নেভিল।

পাশেই সিরিয়স একজন ডেথকিলারের সঙ্গে মারাত্মকভাবে তখন লড়াই করে চলেছেন। হ্যারির পা একটা গোল মতো চাকার ওপোর পড়তেই ও পিছলে পড়ে গেলো। প্রথমে মনে হলো ওর হাত থেকে প্রফিসিটা পড়ে গেছে। পর মুহূর্তে দেখলো মুডি ম্যাজিক্যার আই দিয়ে সেটা খুঁজছেন।

সেই ফাঁকে ডলোভব রক্তাপুত হ্যারি আর নেভিলের ওপোর ঝাঁপিয়ে পড়লো। ওর লম্বা মুখটা বেঁকে গেলো শয়তানী হাসি আর আনন্দে।

ডলোভব হাত তুলে বললো, অ্যাকিও প্রফ।

সিরিয়স ছুটে এসে ডলোভবকে ধরে ছুঁড়ে ফেললেন। প্রফিসিটা উড়তে উড়তে হ্যারির আঙ্গুলে লাগতেই হ্যারি ওটাকে ভালো করে চেপে ধরলো।

ডলোভব আবার দণ্ড উঠালো। হ্যারি ওকে দণ্ড হাতে দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বললো, পেট্রিফিকাস টোটালাস।

ডলোভবের হাত-পা এক সঙ্গে জড়িয়ে গেল আর মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।

–চমৎকার, চমৎকার, সিরিয়স বললেন। ঠিক সেই সময় স্টানিং স্পেল ওর দিকে ছুটে আসতে দেখে সিরিয়স ওর ঘাড়টা ধরে মাথাটা নুইয়ে দিলেন। এখন তুমি এখান থেকে চলে যেতে পারো, সিরিয়স বললেন।

আবার ওরা মাথা নুইয়ে নিলো, তীব্র এক সবুজ আলো প্রবলভাবে সিরিয়সের মাথায় আঘাত করতেই সিরিয়স পড়ে গেলেন। যে ঘরে হ্যারি ছিলো সেখান থেকে দেখলো টোংকস পাথরের সিঁড়ি দিয়ে গড়াতে গড়াতে নিচে পড়ছেন। বেল্লাট্রিক্স লাফাতে লাফাতে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। তারপর ও দেখলো কিংগসলে মুখোশবিহীন গালে বসন্ত দাগ ওয়ালা রুউডের সঙ্গে লড়ছেন। আবার এক সবুজ আলোর রশি ওর মাথার ওপর দিয়ে চলে গেলে ও নেভিলের দিকে তাকালো।

–তুমি দাঁড়াতে পারবে?

–আমার কাঁধটা একটু ধরো, আমি উঠে দাঁড়াই।

নেভিল সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না, পা দুটো লট লট করছে। সেই সময়ে কে তখন বললো, পটার, পটার শেষবার বলছি প্রফিসিটা ভালো চাওতো আমার হাতে দাও।

হ্যারি তখন সেই গোল কাঁচের বলটা শক্ত করে এক হাতে ধরে আছে, অন্য হাতে নেভিলকে।

হ্যারি সোজা তাকিয়ে দেখলো লুসিয়াস ম্যালফয় হাত বাড়িয়ে রয়েছেন। দণ্ডটা ওর বুকে চেপে ধরেছেন।

–না না দেবো না, প্রাণ থাকতে দেবো না। নেভিলে তুমি এটা ধরো, হ্যারি প্রফিসিটা নেভিলের দিকে ছুঁড়ে দিলো। ম্যালফয় এক মুহূর্ত দেরি না করে। নেভিলের দিকে দণ্ড তাক করলেন। তখন হ্যারি পেয়ে গেছে নিজস্ব দণ্ড। ইমপেডিমেন্টা!

হ্যারি দেখলো ডায়াসের যে অংশে সিরিয়স আর বেল্লাট্রিক্স দ্বন্দ্ব যুদ্ধ করছেন সেখানে ম্যালফয় মুখ থুবড়ে পড়লেন। ম্যালফয় উঠে পড়ে আবার হ্যারি আর।

নেভিলের দিকে দণ্ড উঠালেন। লুপিন ঝাঁপ দিয়ে ওদের মাঝখানে দাঁড়ালেন।

বললেন, হ্যারি তুমি বাকিদের ধরো, কাবু করো যাও। হ্যারি নেভিলকে টানতে টানতে নিয়ে চললো।

আবার স্পেল এসে দুজনকে আঘাত করলো। দুজনই পড়ে গেলো। নেভিলে চটপট প্রফিসিটা পকেটে রেখেদিলো।

হ্যারি, নেভিলের আলখেল্লাটা চেপে ধরে বললো, দেরি নয় চলো আস্তে আস্তে। চেষ্টা করে হাঁটতে। টানবার সময় নেভিলের আলখেল্লাটা ছিঁড়ে যেতেই পকেট থেকে প্রফিসিটা মাটিতে পড়ে গেলো। অন্য কেউ সেটা ছোঁবার আগেই নেভিল পা দিয়ে সেটা ঠেলে দিতেই উড়তে উড়তে প্রায় দশ ফিট দূরে পাথরের একটা ধাপে লেগে ফেটে গেল। স্তম্ভিত হয়ে ওরা সেই ভগ্ন প্রফিসির দিকে তাকাতেই একজন মানুষের মূর্তি, অতি শুভ্র মুক্তোর মতো উজ্জ্বল তার গায়ের বর্ণ, বড়ো বড়ো তার দুই চোখ ভেসে উঠলো। ওরা ছাড়া আর কেউ তাকে দেখেনি। হ্যারি দেখলো সেই মানুষটির মুখ নড়ছে কিছু বলতে চাইছেন। চতুর্দিকে আর্তনাদ, কান্না, হুড়োহুড়ি সব মিলিয়ে অদ্ভুত এক কিম্ভুত শব্দ! সেই শব্দ ভেদ করে প্রফিসির কথা কারও কর্ণ কুহরে প্রবেশ করলো না। সেই মানুষটি কথা বন্ধ করে একটু একটু করে শূন্যে অবলুপ্ত হয়ে গেলেন।

নেভিল কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো, আমায় তুমি ক্ষমা করো হ্যারি। আমার হাত থেকে ওটা…। আমার কোনও দোষ নেই হ্যারি।

হ্যারি বললো, তাতে কিছু আসে যাবে না, তুমি এখন মনের জোরে দাঁড়াতে চেষ্টা করো। এখান থেকে আমরা অন্যত্র যাই।

নেভিল চোখ বড়ো বড়ো করে বললো, ডাম্বলডোর! নেভিল যেদিকে ডাম্বলডোরের নাম বললো, হ্যারি সেদিকে তাকালো। –কি বলছো, তুমি? ডাম্বলডোর?

হ্যারি দেখলো খোলা দরজার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ডাম্বলডোর। তারই সঙ্গে লাগোয়া সেই ব্রেনরুম। তার হাতের জাদুদণ্ড ওপোরে ওঠানো রয়েছে, মুখটা সাদা; কিন্তু অসম্ভব ক্রোধোনুক্ত। হ্যারির সমস্ত শরীরের প্রতিটি অনু-পরমানুতে, যেনো তড়িৎ প্রবাহ ফেলে গেল, তাহলে আমরা সবাই বেঁচে আছি!

ডাম্বলডোর অতি দ্রুত নেভিল আর হ্যারির কাছে এলেন। ওদের আর পালাবার আকাঙ্খা নেই। ডেথইটারসদের ডাম্বলডোরকে দেখে মুখ শুকিয়ে গেলো, ওরা বুঝতে পারলো যিনি এসেছেন তার কাছ থেকে তাদের পরিত্রাণ নেই। একজন ডেথইটার বাঁদরের মতো সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে পালাতে গেলে ডাম্বলডোরের স্পেল ওকে টেনে নামিয়ে দিলো। যেনো ওকে অদৃশ্য এক সুতো দিয়ে টেনে আনলেন তিনি।

তখনও লড়াই চলছিলো। ওদের ডাম্বলডোরের দিকে চোখ পড়েনি। হ্যারি দেখলো বেল্লাট্রিক্স ওর দণ্ড দিয়ে সিরিয়সের দিকে লাল রশ্মি ক্ষেপণ করার সঙ্গে সঙ্গে সিরিয়স মাথা নুইয়ে দিলেন পুকুরের জলের হাঁসের মতো। বেল্লাট্রিক্স বিশ্রীভাবে হেসে বললো, এসো এসো শুনেছি তুমি আমার চেয়ে ভালো স্পেল করতে পারো! কথাটা বলার পর বেল্লাট্রিক্স দমকে দমকে হেসে উঠলো শয়তানীর মতো। ওর হাসি সেই গুহার ঘরে বার বার প্রতিধ্বণিত হতে লাগল বিকটভাবে।

ওর দ্বিতীয় লাল স্পেল সিরিয়সের বুকে সোজা আঘাত করলো। তখনও তার মুখ থেকে হাসি সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়নি, কিন্তু তার চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে গেল সেই স্পেলের আঘাতে।

হ্যারি জানে নেভিলের আর কিছু করার ক্ষমতা নেই। ও আবার সিঁড়ির ওপোর লাফিয়ে পড়ে হাতের দণ্ডটা তুললো। ডাম্বলডোরও ডায়াসের দিকে এগিয়ে গেলেন।

মনে হলো সিরিয়সের সাদা দেহটা আঘাত খেয়ে বেঁকে গিয়েছে কিন্তু পরাজিত সৈনিকের মতো নয়। ডায়াসের চারধারে ঝোলানো পর্দায় পিঠ লাগিয়ে সিরিয়স পড়ে গেলেন।

হ্যারি ভয় মিশ্রিত আকুল নয়নে দেখলো ওর গডফাদারের শান্ত সুন্দর মুখটি একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে তারপর ধীরে ধীরে সেই অতীতের পর্দা ঢাকা আর্চওয়ের ভেতরে ঢুকে গেলেন, অদৃশ্য হয়ে গেলেন। আর্চওয়ের পর্দাটা তার সঙ্গে পৎপৎ করতে লাগলো। দেখে মনে হলো বিরাট এক ঝড় এসে পর্দাটা যেনো লণ্ডভণ্ড করে দিতে চাইছে।

হ্যারি ঠিক সেই সময়ে শুনতে পেলো বেল্লাট্রিক্স লেস্টর্যাঞ্জের পৈশচিক যুদ্ধ জয়ের হাসি। হ্যারি ভেবেছিলো ওর প্রিয় সিরিয়স পর্দা সরিয়ে আবার হাসি মুখে এসে দাঁড়াবেন যেকোনও মুহূর্তে। ও তারই প্রতিক্ষা করতে লাগলো।

কিন্তু আর সিরিয়স ফিরে এলেন না। হ্যারি উচ্চস্বরে আকুলভাবে ডাকলো, সিরিয়স… সিরিয়স!

ও তরতর করে ওপোরে উঠে এলো। পরিশ্রম আর উত্তেজনায় ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো। সিরিয়স আছেন, পর্দার পেছনে লুকিয়ে আছেন, হ্যারি ওকে আবার বাইরে নিয়ে আসবে, কেউ ওকে বাধা দিতে পারবে না।

ডায়াসের ওপোর উঠে পর্দার কাছে যেতেই লুপিন হ্যারিকে ধরে ফেললেন। –আর কিছু করার নেই হ্যারি, লুপিনের গলার স্বর দুঃখের।

–না না সিরিয়সকে ডেকে নিয়ে আসুন, ওকে বাঁচান। হ্যারি পাগলের মতো বলে উঠলো।

–অনেক দেরি হয়ে গেছে হ্যারি, সিরিয়স আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।

হ্যারি, লুপিনের কবল থেকে মুক্ত হবার জন্য সজোরে হাত-পা ছুঁড়তে লাগলো; কিন্তু লুপিন ওকে চেপে ধরে রইলেন।

হ্যারি আমাদের আর কিছু করার নেই। ও মারা গেছে, আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, লুপিন আবার একই কথা বললেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *