২৯. কেরিয়ারস এডভাইস

২৯. কেরিয়ারস এডভাইস

হারমিওন জিজ্ঞেস করলো, আজকাল আর অকলমেনসির ক্লাসে যেতে দেখছি না, কী ব্যাপার? ওর মুখে বিস্ময়ের ছাপ।

–তোমাকে তো বলেছি, স্নেইপ বলেছেন, আমার প্রাথমিক শিক্ষা হয়ে গেছে। এখন আমি নিজেই চালিয়ে যেতে পারবো।

–ওহ, তাহলে তো এখন অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছ না।

হ্যারি, হারমিওনের দিকে না তাকিয়ে বললো–বেশ দেখছি।

হারমিওন বললো, আমার মনে হয় তোমাকে মাঝ পথে ছেড়ে না দিয়ে আরও বেশি ভালো করে শেখানো দরকার ছিলো। হ্যারি, আমার কিন্তু মনে হয় স্নেইপের কাছে গিয়ে যা কথাটা, সেটা তাকে বলবে, বুঝেছো?

–না, হ্যারি জোর দিয়ে বললো, কোনো দরকার নেই সব ঠিক আছে, বুঝেছো?

ইস্টারের ছুটি প্রথমদিনে হারমিওন তার স্বভাব অনুযায়ী সমস্ত দিনটা, হ্যারি আর রনের ও তার নিজের রিভিসান টাইমটেবিল নিয়েও ব্যাস্ত হয়ে রইলো। হ্যারি, রন জানে ওকে বাধা দিয়ে কোনো লাভ নেই, যা ভাল বুঝবে তাই করবে, কারও কথা শুনবে না। তাছাড়া কাজটা ওদের পক্ষে ভালো।

শেষ পরীক্ষার আরও মাত্র ছ সপ্তাহ আছে জেনে রন বেশ ভয় পেয়ে গেলো। ফাঁকি দিলে আর চলবে না।

হারমিওন, রনের মুখ দেখে বললো–আরে ভয় পাবার কি আছে! কথাটা বলে ও জাদুদণ্ড হাতে নিয়ে রনের টাইম টেবিলে সেটা ছোঁয়াতেই বিভিন্ন সাবজেক্টে বিভিন্ন আলো জ্বলে উঠলো।

–কোনটা আছে কোনটা নেই জানি না… অনেক কাজ, খতিয়ে দেখিনি, রন বললো।

–রন পড়ে গেছ, এই নাও তোমার টাইম টেবিল। যেমন নির্দেশ আছে। তেমনিভাবে চালিয়ে যাও,… দেখবে ভালই রেজাল্ট করবে।

রন কথাটা শুনে প্রথমে গুম মেরে গেলো, তারপরেই খুশিতে মুখটা ভরে গেলো।

–তাহলে সপ্তাহে একদিন ছাড়া পাচ্ছি।

–সেটা তোমার কিডিচ প্র্যাকটিসের জন্য হারমিওন বললো।

–কী হবে খেলে? রন উৎসাহ না দেখিয়ে বললো।

হারমিওন হ্যারির দিকে তাকিয়ে দেখলো ও কমনরুমের বিপরীতে দেয়ালের দিকে ভাসা ভাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। ওর কোলে আরাম করে ক্লকশ্যাংক শুয়ে রযেছে। মাঝে মাঝে পা বাড়িয়ে হ্যারির কান চুলকোবার চেষ্টা করছে।

–হ্যারি তুমি চুপচাপ, হলোটা কী?

–কেন, কী আবার হবে, হ্যারি সঙ্গে সঙ্গে বললো, কিছুই হয়নি।

কথাটা বলে ও ডিফেন্সিভ ম্যাজিক্রাল থিয়োরি বইটার ইনডেক্স দেখছে, এমন এক ভার করে বইটা খুলে সামনে রেখে বসে রইলো। কশ্যাংক পাত্তা না পেয়ে একলাফে হারমিওনের চেয়ারে এসে বসলো।

–আজ আমার সঙ্গে চোর দেখা হয়েছে, দেখে মনে হলো খুব মনমরা। আবার তোমার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে নাকি? হারমিওন বললো।

–ধ্যাৎ ঝগড়া হবে কেন, কি নিয়ে হবে? হ্যারি একটা ছুতো খোঁজে যেনো।

–কি নিয়ে?

–ওর গুপ্তচর বান্ধবী মেরিয়েটা সম্বন্ধে বলেছি, হ্যারি বললো।

টাইম টেবিল দেখতে দেখতে রন বললো–ঠিক বলেছো, যতো নষ্টের মূল।

রন যা মনে আসে মেরিয়েটা সম্বন্ধে বলতে লাগলো। হ্যারির শুনে ভালই লাগলো। ও রাগ রাগ মুখে বললো হ্যাঁ ঠিক আছে, তার বেশি কিছু বলতে চাইলো না। ওর মনের ভেতর তখন চলেছে পেনসিভের দৃশ্য।

ওর মনে হলো সেই সব স্মৃতি, ওর মনের ভেতরটা যেন কুড়ে কুড়ে খেয়ে চলেছে। ওর মনে বদ্ধমূল ধারণা, ওর বাবা-মা পৃথিবীর মধ্যে সেরা মানুষ ছিলেন। ওর বাবার প্রতি স্নেইপের কুৎসা (যা শুনেছে) এক কণাও বিশ্বাস বা সন্দেহ করে না। যদি না হ্যাগ্রিড বা সিরিয়স বলতেন, তোমার বাবার মতো মানুষ কম দেখেছি, এক কথায় দারুণ মানুষ ছিলেন। (হ্যারির মনের ভেতর কে যেনো বলে উঠলো সিরিয়স বলবে না? অনেকটা যে, ওর মতোই বদমেজাজী লোক ছিলেন) হ্যাঁ, ও ম্যাকগোনাগালকে বলতে শুনেছে, ওর বাবা আর সিরিয়স স্কুলের মধ্যে দারুণ গোলমাল পাকাতেন। উইসলি অনেকটা যমজদের মতে, সর্বদা দুষ্টুমি। হ্যারি ভাবতে পারে না ফ্রেন্ড জর্জ কাউকে শূন্যে মাথা নিচু আর পা ওপোরে করে ঝুলিয়ে রাখতে পারে, যদি না তাদের ওরা খুব বেশি অপছন্দ করে। তবে ম্যালফয় বা ওর পরম বন্ধুরা অবশ্যই তার যোগ্য।

যদি লিলি, জেমসকে স্নেইপের নিগ্রহ বন্ধ না করতে বলতো তাহলে হ্যারি বোধকরি সবচেয়ে বেশি খুশি হতো। বলেছিলো–ওতো তোমার কোনও ক্ষতি করেনি। হ্যারির মনে আছে গ্রিমন্ড প্লেসে লুজিন বলেছিলেন, ডাম্বলডোর ওকে প্রিফেক্ট এই আশাতে বানিয়েছিলেন যাতে ও সিরিয়স আর জেমসের ওপোর কিছুটা খবরদারি করতে পারে। কিন্তু পেনসিভেও তার বিপরীত চিত্র দেখেছে।

হ্যারির মনে হয় ওর মায়ের মতো সভ্য ভদ্র মানুষ কম ছিলেন। জেমসকে স্নেইপের নির্যাতন বন্ধ করতে বলার সময় মায়ের মুখটা কিছুতেই ভুলতে পারছে না। এক এক বার মনে হয় মা জেমসকে একটুও পছন্দ করতেন না। তাই যদি না করতেন তো তাদের বিবাহ হয়েছিলো কেমন করে।

জীবনের পাঁচটা বছর ওর মনে আছে। কেউ যদি ওকে দেখে বলতো, তুমি অনেকটা জেমসের মতো তাহলে ওর অনেক আনন্দ হতো। এখন যেন আর তেমন মনে হয় না, অনেক সীমিত হয়ে গেছে। ওর কাছে মা এক মহিয়সী মহিলা।

ইস্টার ছুটি শেষ হলো সঙ্গে করে নিয়ে গেলো ঠাণ্ডা, সুন্দর দিনগুলো। ছুটি শেষ হবার সঙ্গে শুরু হলো মৃদুমণ্ড ঠাণ্ডা হাওয়া, মাঝে মাঝে গরম হাওয়া। কিন্তু হ্যারি ওর পঞ্চম বার্ষিক আর সপ্তম বার্ষিকের মাঝে আটকা পড়েছে। প্রকৃতির আনন্দ বাইরে বেরিয়ে উপভোগ করার সময় পায় না। গাদাগাদা পড়া, হোমওয়ার্ক আর লাইব্রেরিতে যাওয়া। হ্যারি ভান করে ওর ব্যাড মুড আর অন্যকিছু কারণ; গ্রিফিন্ডরের বন্ধুরা শুধু বই–খাতা পত্র নিয়ে মুখ খুঁজে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ওর বাহানা কে শুনবে?

–হ্যারি, আমি তোমাকে ডাকছি, শুনতে পাচ্ছো না?

–হাঃ কে? দেখলো ওর টেবিলের একধারে জিনি এসে বসেছে। ও একাই বসেছিলো। হারমিওন গেছে গ্রিফিন্ডর টাওয়ারে এনসিয়েন্ট রুইনস রিভাইজ করতে। রন গেছে কিডিচ অনুশীলন করতে। সেদিন ছিল রোববার।

–ও তুমি? কথাটা বলে হ্যারি বইটা সামনে টেনে আনে। কিডিচ খেলতে না গিয়ে লাইব্রেরিতে?

–খেলা, অনুশীলন খতম। রন জ্যাক সুপারকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে।

–কেন?

–ঠিক বলতে পারি না। মনে হয় ওর নিজের ব্যাট সজোরে পায়ে লেগেছে। কথাটা বলে জিনি গভীরভাবে নিঃশ্বাস ফেললো।

–যাকগে একটা নতুন প্যাকেজ এসেছে, মনে হয় আমব্রিজের সেন্সর করার ব্যাপারে নতুন এক অবদান। কথাটা বলে জিনি টেবিলের একটা ব্রাউন পেপারে মোড়া বাক্স রাখলো। বাক্সটার মোড়ক দেখে মনে হয় কেউ সাবধানে খুলে আবার আগের মতো মুড়ে রেখেছে। মোড়কের গায়ে লাল কালিতে লেখা ইন্সপেকটেড অ্যান্ড পাসড় বাই দি হোগওয়ার্টস হাই ইনকুইজিটর (হোগওয়ার্টের উচ্চ তদন্ত কারীর দ্বারা পরীক্ষিত।

–এটা মায়ের পাঠানো ইস্টার এগ, জিনি বললো, এর মধ্যে একটা ভোমার আছে।

জিনি হ্যারির হাতে দিলো চকোলেট এগ তার গায়ে ছোট ছোট আইসড স্নিচ। তারই সঙ্গে রয়েছে এক ব্যাগ ভর্তি ফিজিং হুইজবীজ! হ্যারি সেই প্যাকেটের দিকে তাকাতেই মনে হলো ওর গলার ভেতর বেশ বড়ো একটা লাম্প (মাংসপিণ্ড) হয়েছে।

হ্যারির মুখের ভাব দেখে জিনি শান্তভাবে বললো, হ্যারি কী হয়েছে? শরীর ঠিক আছে?

গলার ভেতরের মাংসপিণ্ডটা (লাম্প) খুব যন্ত্রণাদায়ক হলেও হ্যারি চাপা দেওয়ার জন্য বললো–নাতো ভালই আছি। ও বুঝতে পারলো না ইস্টার এগের দিকে তাকাতেই এমন বিশ্রী লাগছে কেন।

–মনে হয় আজকাল তুমি বড়ো বেশি ভাবছো, চো চ্যাংগের ঝগড়া মিটিয়ে নেওয়া ভালো।

হ্যারি সংক্ষিপ্তভাবে বললো, না না চোয়ের ব্যাপার নয়।

–তাহলে? জিনি হ্যারির দিকে খুঁটিয়ে তাকিয়ে বললো।

–আ… আমি…। ও চারদিকে তাকিয়ে দেখলো, পাছে কেউ যদি ওর কথা শোনে। দেখলো মাদাম পিনসে একগাদা বইয়ের ওপেপার স্ট্যাম্প মারছেন ক্ষিপ্ত চেহারার হান্না অ্যাবটকে দেবার জন্যে।

হ্যারি বিড়বিড় করে বললো, আমি ভাবছি, সিরিয়সের সঙ্গে কথা বললে কেমন হয়। কিন্তু আমি জানি সেটা সম্ভব নয়।

জিনি চোখ না সরিয়ে একইভাবে হ্যারিকে দেখতে লাগলো।

হ্যারি কেকের প্যাকেটটা খুলে বেশ বড়ো এক টুকরো ভেঙে নিয়ে মুখে পুরলো।

জিনি এক টুকরো ডিম মুখে দিয়ে বললো, যদি তুমি একান্তই সিরিয়সের সঙ্গে কথা বলতে চাও, তাহলে আমাদের একটা রাস্তা বার করতে হবে।

–যা বলেছো, হ্যারি বললো, আমব্রিজের সবকিছু চোখ এড়িয়ে? সর্বত্র উনি পুলিসিং করছেন। আমাদের জিনিসপত্র খুলছেন, চিঠি পড়ছেন, এবং ফায়ার প্লেসে নজর রাখছেন।

–যেভাবে ফ্রেড জর্জ কাজ করেছে সেটা মাথায় রেখে অনায়াসে তুমি ওদের সাহায্য নিতে পারো। যদি তোমার সাহস থাকে।

হ্যারি জিনির মুখের দিকে তাকালো। সম্ভবত ওটা চকোলেটের প্রতিক্রিয়া। লুপিন সব সময় বলেন ডিমন্টেটরদের সঙ্গে মোকাবিলা করবার পর কিছু খাওয়া দাওয়া দরকার। অথবা ও সিরিয়সের কথাটা ভেতরের তাগিদ থেকে বলে ফেলেছে। সে যা হোক জিনির কথায় কিছু আশার সঞ্চার হলো।

তুমি কি মনে করছে তা কি তুমি জানো?

আরে ওসব ফালতু চিন্তা মাথায় আনবে না। জিনি কথাটা বলেই একরকম লাফিয়ে উঠে বললো, ইস্ একদম ভুলে গেছি।

হ্যারি দেখলো ম্যাডাম পিনসে ওদের দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন।

লাইব্রেরিতে চকোলেট! ম্যাডাম ফিনসে আঁতকে উঠে বললেন–যাও যাও লাইব্রেরির বাইরে যাও। বাইরে যাও বলছি।

ওরা দুজনে বই-খাতা-পত্র কালির বোতল ব্যাগে পুরে ঘর ছেড়ে পালালো।

***

আগামী পরীক্ষা যে কতো দরকারি ও মূল্যবান তা ছাত্রছাত্রীদের জানাবার জন্য রোজই গ্রিফিন্ডরের টেবিলের উপর গাদাগাদি প্যামফ্রেট, লিফলেট আর বিভিন্ন উইজার্ভিং ক্যারিয়র সম্বন্ধে নানা তথ্য পড়ে থাকতে লাগলো। ছুটির শেষে পরীক্ষা তাই ছাত্রছাত্রীরা খুবই তৎপর হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে নোটিশ বোর্ডে আরও একটি নতুন সূচনা

কেরিয়ারস অ্যাডভাইস
সমগ্র পঞ্চম বার্ষিক ছাত্র-ছাত্রীদের অবগত করা হচ্ছে যে আগামী গ্রীষ্ম অবকাশের (সামার টার্মের) প্রথম সপ্তাহে তাদের ভবিষ্যত কেরিয়ার সম্বন্ধে একটি স্বল্পকালীন আলোচনা চক্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিজ নিজ হাউজ প্রধানদের সঙ্গে সেই আলোচনা চক্রে যোগদানের জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। প্রতিটি আলোচনার বিষয়, ছাত্রছাত্রীদের নাম ও সময় নিম্নে লিপিবদ্ধ করা হলো।

হ্যারি দেখল লিস্টে ওর নামের পাশে লেখা রয়েছে–প্রফেসর ম্যাকগোনাগল, সোমবার, সময় আড়াইটে। তার মানে সেদিন আর ডিভিএসন ক্লাস করার সুযোগ নেই। ও এবং অন্যান্য পঞ্চম বার্ষিকের ছাত্রছাত্রীরা স্টার ছুটির উইক এন্ডে, বলতে গেলে অনেকটা সময় বিভিন্ন কেরিয়র সম্বন্ধে ওরা আলোচনা করেছে। কে কোন সম্বন্ধে পড়াশুনা করবে তাও তারা মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছে।

ছুটি শেষ হবার আগের দিন সন্ধ্যা বেলায় ওর টেবিলে সেন্ট মাংগোস হাসপাতালে হিলার সম্বন্ধে পড়াশুনা করার ইস্তাহার দেখে বলেছে–হিলার টিলার আমি চাই না। ফর্মে লিখেছে নিউট-এ কম করে তোমাকে ই পেতে হবে। পোসান, হার্বোলজি, ট্রান্সফিগারেন, চার্মস এবং ডিফেন্স এগেনস্ট ডার্ক আর্ট! আরও কি কি চায়? ঈশ্বর রক্ষা করুন।

হারমিওন অন্যমনস্কের মতো বললো, ওটা খুব দায়িত্বপূর্ণ কাজ তাই না? ও একটা উজ্জ্বল গোলাপী আর কমলা রঙের লিফলেট পড়ছিলো। লিফলেটের শিরোনাম

চিন্তা করো তুমি কি রিলেশন সম্বন্ধীয় কাজ করতে চাও? মাগলদের সঙ্গে সম্পর্ক করতে গেলে তোমার তেমন কোয়ালিফিকেসনের কোনও প্রয়োজন নেই। মাগল সম্বন্ধে পড়াশুনোর জন্য শুধুমাত্র একটি মাত্র প্যাচার প্রয়োজন। আরও প্রয়োজন, তোমার উৎসাহ, ধৈৰ্য্য এবং কৌতুকবোধের স্পষ্ট চেতনা।

আরও অনেক রকমের প্যামপ্লেট–উইজাডিংব্যাঙ্ক, ট্রাভেল, অ্যাডভেঞ্চার! সেই কেরিয়ার সংক্রান্ত আলোচনার সময় ওর কানের কাছে কে যেন বললো, হেঃ। ও দেখলো ফ্রেড আর জর্জ আলোচনায় অংশ নিতে এসেছে। ফ্রেড বললো–জিনি তোমার সঙ্গে আমাদের বিষয়ে কিছু বলেছে। তুমি নাকি সিরিয়সের সঙ্গে কথা বলতে চাও, ফ্রেড পা ছড়িয়ে বসে বললো।

হারমিওন, মেক অ্যা ব্যাংগ অ্যাট দ্য ডিপার্টমেন্ট অফ ম্যাজিক্যাল অ্যাকসিডেন্ট অ্যান্ড ক্যাটাট্রফি বইটা তুলতে তুলতে থেমে গিয়ে বললো, কী বলছো?

–হ্যাঁ বলতে চাই; হ্যারি বললো, মনে হচ্ছে কিছু কথা বলা দরকার।

হারমিওন বললো–কি যাতা বকছো। চারদিকে আমব্রিজের চরেরা গল্প করছে, প্যাঁচা নিয়ে বার্তা পাঠাবার জন্যে বসে রয়েছে।

জর্জ হাসতে হাসতে বললো–খুব একটা অসুবিধে হবে না। একটা পথ খুঁজে বার করতে হবে। দেখতেই পারছো ইস্টার হলিডে ঠিক এনজয় করতে পারলাম না, বোকারমত বসে রয়েছি।

ফ্রেড বললো, চুপ করে বসে থাকা চলে না। কাল থেকে কিছু একটা করার কথা ভাবতে হবে। দেরি করে লাভ নেই, হ্যারিকে তো সিরিয়সের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

হারমিওন বললো, তোমরা যদি গোলমাল করো তাহলে হ্যারি কেমন করে কোথায় সিরিয়সের সঙ্গে কথা বলবে?

হ্যারি বললো, আমব্রিজের অফিসে।

ওই কথাটা ও পনের দিন ধরে ভেবে চলেছে। কিছুদিন আগে কথা প্রসঙ্গে আমব্রিজ বলেছিলেন, একমাত্র তার ঘরের ফায়ার প্লেসে কোনও নজর রাখা হচ্ছে না।

হারমিওন চোখ কপালে তুলে বললো, আরে তুমি পাগল হলে নাকি?

রন তখন কাল্টিভেটেড ফাংগাস ট্রেডের ইস্তেহার পড়ছিলো। কথাটা কানে আসতে একবার ওদের দিকে তাকালো।

হ্যারি কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো–আমার তো তা মনে হয় না।

–ঠিক আছে, কিন্তু প্রথম কথা তার ঘরে যাবে কেমন করে?

উত্তর আগেই হ্যারি তৈরি করে রেখেছিলো। বললো, সিরিয়াসের ছুরি।

–অনুগ্রহ করে খুলে বলবে?

হ্যারি বললো, গত বড়দিনে সিরিয়স আমাকে একটা ছুরি উপহার দিয়েছিলেন সেটা দিয়ে যেকোনও তালা খোলা যায়।

ঘরের দরজাটা জাদুমন্ত্র করে বন্ধ করে রাখলেও তার অ্যালোহোমারা কাজ করবে না; হ্যারি বললো, আমার মনে হয় নিশ্চয়ই তিনি করেছেন।

হারমিওন বললো, সেক্ষেত্রে…? রন বলতে পারবে?

রন বললো, তা আমি জানি না। রন একটু বেকায়দায় পড়ে গেলো। বললো হ্যারি যদি চায়, তাই করুকগে।

–পাক্কা বন্ধুর মতো কথা বলেছে রন, ফ্রেড রনের পিঠ চাপড়ে বললো। ঠিক আছে কাল ক্লাস শেষ হবার পর করবো। তখন সকলে করিডোরে থাকবে, চুপচাপ কাজ হবে। হ্যারি ইস্টউইংগে আমব্রিজের অফিসের দক্ষিণে থাকবে। আমাদের কাজ শেষ হবে কুড়ি মিনিটের মধ্যে। কথাটা বলে ফ্রেড, জর্জের দিকে তাকালো।

–খুবই সোজা, জর্জ বললো।

–পথটা কেমন, রন জিজ্ঞেস করলো।

–দেখবে, সময় হলেই দেখবে ভাই, ফ্রেড বললো। ওরা দুজনেই উঠে দাঁড়ালো। আগামীকাল ভোর পাঁচটার সময় গ্রেগরি দ্য স্মরমিজের করিডোরে হাঁটলেই দেখতে পাবে।

***

মিনিস্ট্রি অব ম্যাজিকে শুনানির সময় ভোরবেলা যে রকম শংকিত ভাবনা চিন্তা নিয়ে তিক্ত মনে উঠেছিলো, পরেরদিন অতি ভোরে সেইরকম মনোভাব নিয়ে হ্যারির ঘুম ভাঙলো। আমব্রিজের ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে তার ফায়ার প্লেসে সিরিয়সকে ডেকে কথা বলা মনের মধ্যে দারুণ ভয়, উত্তেজনা ওকে কাবু করে দিলো। তাছাড়া সেদিন আবার স্নেইপের ক্লাশে অকলামেন্সির জন্য যেতে হবে। ঘর থেকে তাড়িয়ে দেবার পর এই প্রথম।

বেশ খানিক সময় বিছানায় টান টান শুয়ে থাকার পর, সারাদিনের কাজকর্মের কথা ভেবে ও নেভিলের মাথার কাছে গিয়ে জানালার ধারে দাঁড়ালো। এক চমৎকার সকালে ও বাইরে তাকিয়ে রইলো। আকাশটা পরিষ্কার, সামান্য কুয়াশাবৃত, আর আবছা নীলা। ও জানালার নিচে সারি সারি বড়ো বড়ো বিচ গাছের দিকে তাকালো, মনে পড়ে গেলো অতীতের একদিন ওর বাবা জেমস তার সতীর্থ স্নেইপকে দারুণ যন্ত্রণা-পীড়ণ করেছিলেন। জানালা দিয়ে হ্যাগ্রিডকে দুএকবার দরজার গোড়ায় দেখতে পেলো। তারপর অনেকটা সময় তার কেবিনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার পরও হ্যাগ্রিডকে আর দেখতে পেলো না। ও পেনসিভে যা দেখেছে সেগুলো সত্য কি মিথ্যা সিরিয়স বলতে পারেন, আবার নাও বলতে পারেন। তাহলেও স্বকর্ণে সিরিয়সের মুখ থেকে সব শুনতে চায়। সিরিয়সকে সেখানে উপস্থিত থাকতে দেখেছে। একমাত্র সিরিয়স বলতে পারবে ওর বাবার ব্যবহারের বৃত্তান্ত।

হঠাৎ হ্যাগ্রিডের কেবিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিষিদ্ধ অরণ্যের দিকে চোখ পড়ে গেলো। সূর্যালোকে দেখলো হ্যাগ্রিড অরণ্যের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছেন, হাঁটার সময় সামান্য খোঁড়াচ্ছেন। হ্যাগ্রিড পা টেনে কেবিনের দরজার সামনে গিয়ে দরজা খুলে ভেতরে চলে গেলেন। আর তাকে দেখতে পেলো না। তবে চিমনিতে ধোয়া দেখে মনে হলো হ্যাগ্রিড সম্ভবত খুব বেশি আহত হননি।

হ্যারি জানালার ধার থেকে চলে এসে বাইরে যাবার জন্য পোশাক বদলালো। হ্যারি জানে ফ্রেড আর জর্জের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা খুব একটা সহজ নয়। দিনটা কেমনভাবে যাবে ও আন্দাজ করতে পারলো। ওকে সকাল পাঁচটায় উঠে আমব্রিজের ঘরের সামনে যাওয়া, বার বার হারমিওনের বাধা দেবার কথা মনে হতে লাগলো। হ্যারি প্রথম দেখেছিলো প্রফেসর বিনসের হিস্ট্রি অফ ম্যাজিকের ক্লাসে হারমিওনকে অন্যমনস্ক থাকতে।

হারমিওন ওকে সাবধান করে দিয়ে বলেছিলো–যদি তোমাকে স্নাফেলের সঙ্গে কথা বলার সময় তার ঘরে ধরে ফেলেন, তাহলে তোমাকে স্কুল থেকে শুধু তাড়িয়ে দেবেন না, তোমাকে ভেরিটাসিরাম খেতে বাধ্য করে অনেক গোপন তথ্য জেনে নেবার চেষ্টা করবেন। অতএব নিরস্ত থাকো, আমার কথা শোনো।

রন বলেছিলো, হারমিওন, তুমি হ্যারির সঙ্গে বকবকানি বন্ধ করে বিনসের কাজ করবে? অথবা আমাকে আমার নোট নিতে দেবে?

–নিতে পারো পরিবর্তনের জন্য, তাহলে তো মরে যাবে না।

স্নেইপের ক্লাসরুমে যেতে যেতে রন, হ্যারি ও হারমিওনের সঙ্গে একটা কথাও বললো না।

স্নেইপ এমন ভাব দেখালেন যেন হ্যারিকে তিনি দেখতে পাননি। হ্যারি অবশ্য জানে স্নেইপ মাঝেমধ্যে এরকম করেন। অনেকটা আঙ্কল ভার্ননের মতো দেখেও দেখার ভান! ক্লাস শেষ হবার সময় ও যখন ঘরে একা তখন সব উপাদান মিলিয়ে মিশিয়ে ইনভিগরেয়সন ড্রট খুব সহজে বানালো। তারপর সেই পোসান ফ্লাস্কে ঢেলে, ছিপি বন্ধ করে স্নেইপের ডেস্কের কাছে নিয়ে গেলো। আশা ওইটে দেখে স্নেইপ হয়তো ই গ্রেড মুছে দেবেন।

রেখে দেবার পর পেছনে ফিরতেই ও হুটহাট শব্দ শুনতে পেলো। ও দেখলো ম্যালফয় আর ওর দুই বন্ধু!

ম্যালফয় ওকে দেখে অনাবশ্যক জোরে জোরে হেসে উঠলো। ওর হাসি শুনে হ্যারির পোসানের স্যাম্পেল হাত থেকে মাটিতে পড়ে গেলো। স্নেইপ খুব খুশি হয়ে ওকে দেখতে লাগলেন।

–হায় হায় পটার তাহলে আর একটা গোল্লা পেলে।

হ্যারি ক্ষুব্ধ চিত্তে আর একটা পোসান বানিয়ে স্নেইপকে দেবার জন্য কলড্রন হাতে নিতেই শুনতে পেলো হারমিওনের গলা–আমি খুব দুঃখিত হ্যারি। আমি ভেবেছিলাম তুমি ঠিকঠাক করবে। যাকগে আমি চললাম।

ঘণ্টা পড়ে গেলো। হ্যারি হারমিওনকে কোনও উপযুক্ত জবাব দিতে পারলো। ও পেছনে না তাকিয়ে স্নেইপের অন্ধকার ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গেলো। লাঞ্চে যাতে হারমিওনের সঙ্গে কথা না বলতে হয় তাই সিমাস আর নেভিলের মাঝখানে ও বসলো। হারমিওন তাহলে ওকে ফ্রেডের কথামতো আমব্রিজের অফিসে যাওয়াতে ঘ্যান ঘ্যান করে বাধা দিতে পারবে না।

ডিভিয়েসন ক্লাসে ও এতই বিরক্তিকর মেজাজে ছিলো যে সন্ধ্যা বেলা প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের অফিসে কেরিয়র এপয়েন্টমেন্ট একেবারে ভুলে গেছে। মনে করিয়ে দিলো রন। ও রনের কথা শুনে দৌড়াতে দৌড়াতে ম্যাকগোনাগলের ঘরে পৌঁছলো। এক মিনিট দেরিতে পৌঁছেছে।

দরজাটা বন্ধ করতে করতে হ্যারি বললো, দুঃখিত প্রফেসর আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো। আমি ভুলে গিয়েছিলাম ম্যাডাম।

ম্যাকগোনাগল বললেন, যাকগে পটার।

ম্যাকগোনাগল যখন কথাটা বললেন পটার অন্য একজনের ঘরে উপস্থিতি টের পেলো তার নাক টানার শব্দে। ও সেইদিকে তাকালো।

দেখলো প্রফেসর আমব্রিজ হাতে একটা ক্লিপবোর্ড নিয়ে বসে আছেন। মুখে অতি পরিচিত অমায়িক হাসি।

–বসে পটার, ম্যাকগোনাগলে বললেন। হ্যারি লক্ষ্য করলো ডেস্কে ছড়ানো ইস্তাহারগুলো, দেখার সময় তার হাতটা সামান্য কেঁপে উঠলো।

হ্যারি, আমব্রিজের দিকে পিছন ফিরে বসলো। এমন ভান করলো যেন আমব্রিজের লেখার সময় কুইলের খসখসানি শুনতে না হয়।

–ওয়েল পটার, আজকে আমরা আলোচনা করবো তোমার ভবিষ্যত কেরিয়র সম্বন্ধে। সিক্সথ আর সেভেন্থ ইয়ারে পড়ার সময় কোন সাবজেক্ট তুমি নেবে আর সেটা উপযুক্ত হবে কিনা। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন।

–তুমি হোগওয়ার্টস ছাড়ার পর কি করবে কিছু ভেবেছো?

–না! হ্যারি মিন মিন করে বললো। কানে এলো আমব্রিজের ফাইলে কিছু নোট করার জন্য কলমের খসখস শব্দ।

–হ্যাঁ বলো পটার, আমি যা জিজ্ঞেস করছি। ম্যাকগোনাগল বললেন।

হ্যারি জড়িত–অস্পষ্ট কণ্ঠে বললো, ভাবছিলাম, অউরর হলে কেমন হবে।

–তাহলে তো তোমাকে টপগ্রেড পেতে হবে হ্যারি, ম্যাকগোনাগল বললেন। তারপর একটা লিফলেট বার করে দেখতে দেখতে বললেন–ওরা কম করে পাঁচটা নিউট চায়। তার চেয়ে কোনও কম নয়। তাছাড়া তোমাকে ওদের অফিসে খুব শক্ত চরিত্র ও পারদর্শিতার পরীক্ষা দিতে হবে। পটার ওটা খুবই শক্ত ব্যাপার। ওরা সব সময়ে টপ ছাত্র চায়। গত তিন বছরে, আসলে তারা সেই রকম টপ ছাত্র ছাড়া কাউকে নেয়নি।

ঠিক সেই সময় প্রফেসর আমব্রিজ তার উপস্থিতি হ্যারিকে জানানোর জন্য খুক খ করে কাসলেন। ভাবটা এমন ম্যাকগোনাগল কতটা সুষ্ঠুভাবে ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তা দেখানোর!

ম্যাকগোনাগল, আমব্রিজের উপস্থিতি ও গলা খাকাড়ি ভ্রুক্ষেপ না করে বললেন, তো তুমি নিশ্চয়ই জানতে চাও তাহলে আর কোন সাবজেক্ট তোমার পক্ষে উপযুক্ত হবে।

–হ্যাঁ, হ্যারি বললো। ডার্ক আর্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ?

–হা হা ঠিকই। সেটাই আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন।

কথাটা শোনার পর আমব্রজ আর একবার শব্দ করে খুক খুক করে কাসলেন।

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল ক্ষণিক চোখ বন্ধ করলেন, তারপর চোখ খুলে স্বাভাবিকভাবে তাকালেন।

–ট্রান্সফিগারেশনের জন্য উপদেশ দিচ্ছি কারণ অউররদের ট্রান্সফিগারেশন অথবা আট্রান্সফিগারেসন, যেমন চেহারা বদলানো, যেমন মানুষ কুকুরের রূপ নেওয়া ইত্যাদি হরদম তাদের কাজের জন্য প্রয়োজন হয়। তোমাকে এই কথাটা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিতে চাই পটার, আমি এমন কোনও ছাত্রকে আমার নিউট ক্লাসে পড়াতে চাই না যদি তারা আশা অতিরিক্ত (একসেসিভ এক্সপেক্টেসন) অবস্থায় না পৌঁছাতে পারে। অথবা সাধারণ উইজার্ডিং স্তরের ওপোরে না থাকে তবে আমি তোমাকে এইটুকু বলতে পারি তুমি এখন একসেপ্টেবল স্তরে মোটামুটি অবস্থান করছে। অতএব সেই সুযোগ পেতে হলে তোমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তারপর তোমাকে চার্মস (মন্ত্রমুগ্ধ) করতে হবে এবং পোসানও খুব দরকার। হ্যাঁ, পটার পোসান! কথাটুকু বলে ম্যাকগোনাগোল ঠোঁটের ফাঁকে হাসলেন, পোসান আর প্রতিরোধ (আন্টিভেট) বিষয়ে পড়াশুনো আউরর হবার জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। তুমি তো জানো প্রফেসর স্নেইপ কোনোমতেই যে ছাত্রছাত্রীরা তার আউল ক্লাসে আউটস্ট্যান্ডিঙ না পায় তাদের নিতে চান না। অতএব…

প্রফেসর আমব্রিজ বেশ জোরে জোরে কাসলেন।

–আপনাকে কি কাসির ওষুধ দিতে পারি ডলোরেস? ম্যাকগোনাগল বললেন। আমব্রিজের দিকে এবারেও তাকালেন না।

–না না ধন্যবাদ, আমব্রিজ বললেন। হাসলেন, ওই হাসিটা হ্যারি একদম সহ্য করতে পারে না। আমি ভাবছিলাম তোমাদের কথাবার্তার মধ্যে আমি কি যৎসামান্য কিছু বলতে পারি সিনার্ভা?

ম্যাকগোনাগল দাঁতচেপে হেসে বললেন–আমি ভাবছি, মি. পটারের কী অউরর হবার মতো মানসিকতা আছে।

মাঝে তার কথার মধ্যে কোন বাধা পড়েনি–সেই আগে যা বলেছিলেন সেই সূত্রধরে বললেন–আমি তোমাকে এইটুকু উপদেশ দিতে চাই তুমি যদি অউরর হতে চাও তাহলে তোমার ট্রান্সফিগারেসন আর পোসান ভালো করে শেখা দরকার। প্রফেসর ফ্লিটউইক দেখছি, গত দুবছর ধরে তোমাকে অ্যাকসেপটেবল (মোটামুটি) আর একসেভ এক্সপেক্টেসন (যা আশা করেছিলেন তার বেশি) গ্রেড দিয়েছেন। তো তোমার চার্ম ওয়ার্ক মনে হয় সন্তোষজনক। ডিফেন্স এগেনস্ট ডার্ক আর্টের (ডার্ক আর্টের প্রতিরোধ) মার্কস তো তোমার ভালই দেখছি। প্রফেসর লুপিন, বিশেষ করে তোমাকে ভেবেছেন। ডোলারেস, আপনার কি কাসির সিরাপ প্রয়োজন নেই?

–না না দরকার নেই মিনার্ভা, দারুণভাবে কাসতে কাসতে আমব্রিজ বললেন, আমি ভাবছিলাম তুমি হয়তো হ্যারির সাম্প্রতিক ডার্ক আর্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের মার্ক লক্ষ্য করোনি। আমিতো ওটা একটা স্লিপে তোমার টেবিলের ওপোর রেখেছিলাম।

–ও এইটে? প্রফেসর ম্যাকগোনাগল ছোট্ট একটা গোলাপি পার্চমেন্ট হ্যারির ফাইলে দেখতে দেখতে বললেন। দেখে র্ভুরু কুঁচকে স্লিপটা যথাস্থানে রেখে দিলেন। কোনও মন্তব্য করলেন না। হ্যাঁ কি বলছিলাম পটার? ও হ্যাঁ প্রফেসর লুপিন লিখেছেন তুমি ওই সাবজেক্টে সুস্পষ্ট তৎপরতা দেখিয়েছো। বলতে বাধা নেই অউরর সম্বন্ধে।

প্রপেসর আমব্রিজ হতবাক! গলার স্বর অন্যরকম, কাসতেও ভুলে গেছেন তুমি কী আমার নোটটার সঠিক মানে বুঝতে পারোনি মিনার্ভা?

–অবশ্যই পেরেছি, ম্যাকগোনাগল এমনভাবে দাঁত চেপে বললেন যে কথাটা খুবই অস্পষ্ট শোনালো।

–যদি সঠিক বুঝে থাকো, তাহলে কেন বৃথা তুমি পটারকে মিথ্যে আশ্বাস দিচ্ছে মিনার্ভা?

মিথ্যে আশ্বাস? প্রফেসর ম্যাকগোনাগল আমব্রিজের কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। তখনও প্রফেসর আমব্রিজের দিকে মুখ ফেরালেন না।

–আমি তো দেখছি পটার ডার্কআর্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের টেস্টে সব কটাতেই অনেক উচ্চ মার্ক পেয়েছে।

–তোমার কথার প্রতিবাদ করতে সত্যিই আমার দুঃখ হচ্ছে মিনার্ভা, তুমি যদি আমার নোটটি ভালোভাবে পড়ে তাহলে জানবে হ্যারি আমার ক্লাসে অতি লজ্জাজনক রেজাল্ট করেছে।

–আমার হয়তো উচিত ছিলো আমার কথা সোজা করে বলা, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন। এই প্রথম আমব্রিজের দিকে সোজা তাকালেন ম্যাকগোনাগল। আমি দেখছি একজন দক্ষ শিক্ষক ওকে ওই সাবজেক্টে অনেক বেশি নম্বর দিয়েছেন।

 আমব্রিজের মুখের হাসি সহসা মিলিয়ে গেলো। ফাইলে খুব তাড়াতাড়ি কিছু লিখতে লাগলেন। ফোলা ফোলা চোখ দুটো ঘুরতে লাগলো। ডান থেকে বায়ে বা থেকে ডানে। ম্যাকগোনাগল হ্যারির দিকে তাকালেন।

–তোমার কিছু প্রশ্ন করার আছে?

–হ্যাঁ, হ্যারি বললো–আপনি যদি অনেক নিউটস পান তাহলে মিনিস্ট্রি কি জাতীয় এপটিটিউড করতে পারে?

–নানাবিধ চাপের বিরুদ্ধে তোমার প্রতিক্রিয়া ও বুঝবার সক্ষমতা ইত্যাদি তাছাড়া তোমার একাগ্রতা, একান্তভাবে নিজেকে নিয়োগ করাতো আছেই। কমকরে তিন বছরের ট্রেনিং কর্মে দক্ষতা, বিশেষ করে নানা আক্রমণের প্রতিরোধ শিক্ষা। স্কুলের চাইতে আরও অনেক বেশি পড়াশুনো করতে হয়।

আমব্রিজ বললেন, তাছাড়া যারা দরখাস্ত করে মিনিস্ট্রি তাদের সম্বন্ধে নানা খোঁজ-খবরও নেয়। যেমন কোনো অপরাধমূলক কাজ করেছে, বা লিপ্ত আছে কিনা। মানে তাদের ক্রিমিনাল রেকর্ডস।

ম্যাকগোনাগল বললেন, সবদিক বিবেচনা করে বলতে চাই তুমি যদি রাজি হও তাহলে চান্স আছে।

–তাহলে আপনি কি বলতে চান ডাম্বলডোরের এখানে ফিরে আসার যেমন সম্ভাবনা আছে, তেমনি পটারেরও সম্ভাবনা আছে?

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন–অবশ্যই, দারুণ সম্ভাবনা।

আমব্রিজ হঠাৎ যেনো ক্ষেপে উঠে বললেন, পটারের ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে সেটা জানো মিনার্ভা?

ম্যাকগোনাগল আরও উচ্চস্বরে বললেন সেই অভিযোগ থেকে ও মুক্ত, সে কথা নিশ্চয়ই আপনি জানেন।

আমব্রিজ দাঁড়ালেন। বিশ্রি মুখ করে কাঁপতে লাগলেন। মহিলার উচ্চতা এতো কম যে দাঁড়ানো বা বসে থাকাতে ফারাক কম মনে হয়। ফোলা ফোলা মুখটা খুবই বীভৎস দেখালো। বললেন–অউরর হবার পটারের কোনো যোগ্যতা নেই।

প্রফেসর ম্যাকগোনাগলও দাঁড়ালেন। প্রভাব বিস্তারকারী মহিলা সন্দেহ নেই। আমব্রিজকে তার প্রভাবের কাছে অতি তুচ্ছ মনে হলো পটারের। বললেন–পটার তুমি নিশ্চিত থাকো। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাবো যাতে তুমি অউর হতে পারো। আমি তোমাকে রাতে কোচ করবো, আমি দেখাবো অউরর হতে গেলে যা যা প্রয়োজনীয় তা তুমি অর্জন করতে পারো।

আমব্রিজ হুংকার দিয়ে বললেন, করতে পারো, তবে এইটুকু জেনো, ম্যাজিক মিনিস্ট্রি কখনোও কোনোদিনও পটারকে অউরর নিযুক্ত করবে না।

–আমার মনে হয় পটার যখন পাস করে, ট্রেনিং নিয়ে বেরোবে তখন ম্যাজিক মিনিস্ট্রিতে নতুন কোনো মিনিস্টার হবেন। ও তখন কাজ পাবে কি পাবে না তিনি বিবেচনা করবেন, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল খুব উচ্চস্বরে বললেন।

আমব্রিজ হাতের একটা, মোটা আঙ্গুল ম্যাকগোনাগলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, আহা কি সুন্দর কথা বলেছে। হা হা হা নিশ্চয়ই, অবশ্যই! তাই তুমি চাও মিনার্ভা। কর্নেলিয়স ফাজের জায়গায় ডাম্বলডোর অভিষিক্ত হোন, আর ভাবছ আমার জায়গায় তুমি আসবে। সিনিয়র আন্ডার সেক্রেটারি টুদ্য মিনিস্টার, আর ভবিষ্যত হেডমিসট্রেস।

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল সংযত হয়ে বললেন, আপনি অন্যায়ভাবে রাগে ক্ষেপে উঠেছেন সন্দেহ নেই। ও হ্যাঁ পটার, তোমার সঙ্গে আমার আলোচনা শেষ হয়েছে, এবার তুমি যেতে পারো।

কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে হ্যারি ওর ব্যাগ পিঠে চাপিয়ে কোনো দিকে না তাকিয়ে একরকম দৌড়াতে দৌড়াতে ম্যাকগোনাগলের ঘর থেকে চম্পট দিলো। বাইরে থেকে শুনতে পেলো প্রফেসর আমব্রিজ আর ম্যাকগোনাগল সরবে তর্কাতর্কি করে চলেছেন।

সেই দিন বিকেলে ডার্ক আর্টের বিরুদ্ধে যখন আমব্রিজ ক্লাস নিতে এলেন তখনও তিনি রাগে ফোঁস ফোঁস করছেন।

নন রিটালিয়েসন অ্যান্ড নেগোসিয়েসনের পরিচ্ছেদ ৩৪-এর পাতা খুলে হারমিওন হ্যারিকে ফিসফিস করে বললো–প্ল্যান করে যা করতে বলেছো সব ঠিকঠাক তো? আমব্রিজ কিন্তু আজ অসম্ভব চটে আছেন মনে রেখো।

যতোবারই হ্যারি সামনে তাকায়, দেখে আমব্রিজ ওর দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন। ও যতটা সম্ভব সামনে না তাকিয়ে ডিফেনসিভ ম্যাজিক্যাল থিওরি বইটার পাতায় মুখ গুঁজে রইলো।

ও যদি আমব্রিজের ঘরে ঢুকে ধরা পড়ে যায়, সেই কথা শুনে প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের মুখটা কেমন হয়ে যাবে ও যেনো ভাবতে পারে না। মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে তো উনি হ্যারির দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন। তারপর ভাবলো গ্রিফিন্ডর টাওয়ারে ফিরে গিয়ে গরমের ছুটির কোনো এক সময়ে সিরিয়সের সঙ্গে দেখা হলে, পেনসিভে যা দেখেছে সে সম্বন্ধে কথাবার্তা বলার যথেষ্ট সময় পাবে। তবে পিছু হটে যাবে এ কথাটা ভাবতে ওর মন খারাপ হয়ে যায়। তার ওপোর রয়েছে, ফ্রেড আর জর্জের সঙ্গে আমব্রিজের ঘরে যাওয়ার সম্মতি। যে ছুরিটা নিয়ে ঘরের তালা খুলে ঢুকবে সেটাও স্কুল ব্যাগে ওর বাবার অদৃশ্য হবার ক্লোকে জড়ানো রয়েছে।

মনে দারুণ দোটানা। তালা ভাঙতে গিয়ে যদি ধরা পড়ে যায়! হারমিওন ওর চিন্তায় বাধা দিয়ে বললো–মনে রেখো ডাম্বলডোর তোমাকে স্কুলে রাখার জন্য নিজেকে বলি দিয়েছেন। আমব্রিজ যাতে ওদের কথা শুনতে না পান তার জন্য ও খুবই সতর্ক হয়ে গেল। বই থেকে মুখ না তুলে ফিস ফিস করে কথা বলে চলেছে, ধরা পড়ে যাবার পর তোমাকে যদি স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেয় তাহলে ডাম্বলডোরের ত্যাগ বৃথা যাবে মনে রেখো।

 কুড়ি বছর আগে একদিন গ্রীষ্মকালে ওর বাবা-মা আরও অনেকে যা করেছেন সেই স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে। তারপর ওর মনে পড়ে গেলো গ্রিফিন্ডর কমনরুমে ফায়ার প্লেসের আগুনের মধ্যে সিরিয়সের আবির্ভাব আর কথাবার্তা।

বলেছিলেন, তুমি তোমার বাবার মতো সাহসী নও। জেমস কোনো কিছু করতে ভয় পেতো না, ওর কাছে আনন্দের ছিলো বিপদের মুখে এগিয়ে যাওয়া।

কিন্তু হ্যারি কি ওর বাবার মতো হতে চায়?

ক্লাস শেষের ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে হারমিওন হ্যারির হাত ধরে অনুনয় করে বললো, হ্যারি আমি অনুরোধ করছি, অমন কাজ তুমি করবে না, প্লিজ করবে না।

হ্যারি কোনো জবাব দিলো না, কিন্তু কি করবে না করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।

হারমিওন মুখ খুললেও রন হা–না বলে সায় বা বিরোধীতা করলো না। ও শুধু বললো–ওকে ভাবতে সময় দাও হারমিওন।

হ্যারি দারুণ উদ্বেগ নিয়ে ক্লাসরুম থেকে বেরোলো। ওর বুকের ভেতরটা ভীষণ টিপ টিপ করে চলেছে। অনেক সাহস সঞ্চয় করে থামাতে পারছে না। করিডোর ধরে অর্ধেকটা পথ শেষ করেছে ঠিক সেই সময় শুনতে পেলো ভীষণ শব্দ। শব্দটা আসছে সামান্য দূর থেকে। তারপরই শুনতে পেলো ভয়ার্ত আর্তনাদ, চিৎকার। ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন ক্লাসরুম থেকে প্রাণ ভয়ে চেঁচাতে চেঁচাতে বেরিয়ে আসছে। হ্যারি দাঁড়িয়ে পড়ে ছাদের সিলিংয়ের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালো।

আমব্রিজ তার ছোট দুটি পায়ে ভর করে যত জোরে পারেন দৌড়াতে দৌড়াতে তার ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। ম্যাজিক ওয়ান্ডটা বার করে বিপরীত দিকে প্রাণ বাঁচানোর জন্য ছুটলেন। অনেকটা নাউ অর নেভারের মতো।

হারমিওন কাঁদ কাঁদ কণ্ঠে বললো, হ্যারি একপাও নড়বে না যেখানে আছে সেখানেই থাকো।

কিন্তু হ্যারিতো অনেক আগেই মনস্থির করে ফেলেছে। দাঁড়িয়ে থেকে কোনো লাভ নেই। ও ভিড় ঠেলে এঁকে বেঁকে সামনের দিকে ছুটলো। শব্দটা কোথা থেকে আসছে সঠিকভাবে জানতে। পূর্ব উইংগ থেকে শব্দ আসছে!

হ্যারি আমব্রিজের অফিসের করিডোরে পৌঁছে দেখলো জনমানব শূন্য। হ্যারি এক মুহূর্ত দেরি না করে ব্যাগ থেকে অদৃশ্য হবার ক্লোকটা পরে নিলো, সিরিয়সের দেওয়া ছুরিটা বের করে নিয়ে ক্লোকের পকেটে রাখলো। তারপর করিডোর ধরে ধীরে ধীরে আমব্রিজের ঘরের সামনে দাঁড়ালো।

ও হাতের ছুরি ফলাকাটা তালার গর্তে ঢুকিয়ে ওপোর–নিচ করতেই ক্লিক শব্দ করে দরজার তালা খুলে গেলো। ও ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজাটা ফটাফট বন্ধ করে দিয়ে চারদিকে তাকালো। ঘরের সবকিছুই স্থির শুধু দেওয়ালে বীভৎস বেড়ালছানাগুলো বাজেয়াপ্ত করা ঝাডুগুলোর ওপোরে লাফালাফি করে চলেছে।

হ্যারি ওর গায়ের ফ্লোকটা চটপট খুলে ফায়ার প্লেসের সামনে দাঁড়ালো। যা ও দেখতে চাইছিলো এক সেকেন্ডের মধ্যে দেখতে পেলো–ছোট্ট একটা চকচকে বাক্স। বাক্সের মধ্যে রয়েছে ফুঁ পাউডার।

ও শূন্য ফায়ার প্লেসের পাশে হাঁটু গেড়ে বসলো, ওর তখন হাত কাঁপছে। এর আগে ও কখনোও ফুঁ পাউডার ব্যবহার করেনি তবে জানে কেমন করে ব্যবহার করতে হয়। ও কৌটো থেকে এক চিমটে পাউডার নিয়ে শুকনো কাঠের ওপোর ছড়িয়ে দিলে কাঠগুলো দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো, সবুজ তার বিহ্নশিখা!

হ্যারি জোরে জোরে পরিস্কার কণ্ঠে বললো, বার নম্বর গ্রিমন্ড প্লেস! জীবনে এই প্রথম ও দারুণ কৌতূহল উদ্দীপক কণ্ঠে কথাটা বললো।

সারা শরীর ওর চনমন করে উঠল এক অব্যক্ত উত্তেজনায়। ও কাঁপতে লাগলো সিরিয়সের প্রতীক্ষায়। এর আগে ও ফুঁ পাউডারের সাহায্যে যাত্রা করেছে। দেশের মধ্যে যতো উইজার্ডিং ফায়ার প্লেস (নেটওয়ার্ক) ছড়িয়ে আছে, সেখানে সশরীরে লাড়ুর মতো ঘুরতে ঘুরতে চলে গেছে। এখন ও দৃঢ়ভাবে আমব্রিজের ঘরের ঠাণ্ডা মেঝেতে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, শুধু ওর মাথাটা সবুজ বহ্নিশিখার মধ্যে বন বন করে ঘুরতে লাগলো।

যেমনই হঠাৎ আগুন জ্বলে উঠেছিল তেমনই ঘূর্ণন বন্ধ হয়ে গেলো। মনে হলো ও যেনো অতি উত্তপ্ত একটা মাফলার মাথায় জড়িয়ে রেখেছে। ও ধীরে ধীরে তাকালো। অদূরে কিচেন ফায়ার প্লেসের কাছে দেখতে পেলো একটা কাঠের টেবিলে বসে একজন খুব আগ্রহের সঙ্গে একটু করে পার্চমেন্ট পড়ছে।

-সিরিয়স?

কিন্তু সেই লোকটি সিরিয়স নয়, লুপিন।

–হ্যারি? ও চিন্তিত মুখে বললো–কি হয়েছে, সব ঠিক আছে তো?

–হ্যাঁ সব ঠিক আছে। আমি সিরিয়সের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।

–বসো আমি ওকে ডেকে পাঠাচ্ছি, লুপিন বললেন, গলার স্বরে কেমন যেনো অস্থিরতা; সিরিয়স ওপোরের ঘরে ক্রেচারকে খুঁজতে গেছে। মনে হয় আবার সিঁড়ির তলায় লুকিয়ে রয়েছে।

কথাটা বলে কিচেন থেকে লুপিন চলে গিয়ে একটু পরই সিরিয়সকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে ঢুকলেন।

সিরিয়স ওর কালো লম্বা চুলগুলো মুখ থেকে সরিয়ে বললেন–কী হয়েছে হ্যারি? তিজনেই ফায়ার প্লেসের কাছে মুখোমুখি বসলো।

–তুমি ঠিক আছ তো? আমাদের কাছ থেকে কী সাহায্যের দরকার আছে? লুপিন বললেন।

–না সেরকম কিছু নয়, আমি আমার বাবা সম্বন্ধে কিছু জানতে চাইছিলাম।

ওরা পরস্পরের দিকে তাকালেন, খুব যেনো আশ্চর্য হয়ে গেছেন হ্যারির প্রশ্নে। কিন্তু হ্যারির কিছু ভাবার বা লজ্জিত হবার কিছু নেই।

ওর হাঁটু দুটো জ্বালা করতে লাগলো। জর্জ ওকে কুড়ি মিনিট সময় দিয়েছে, তার মধ্যে পাঁচ মিনিট কেটে গেছে। ও তাই আর দেরি না করে পেনসিভে দেখা কাহিনী বলে গেলো গড় গড় করে লুপিন আর সিরিয়সকে।

ওর কথা শেষ হবার পর লুপিন, সিরিয়স দুজনেই চুপ করে রইলেন। কারও মুখে কোনও কথা নেই। তারপর লুপিন ধীরস্থির ভাবে বললেন, তুমি স্নেইপের পেনসিভে যা দেখেছো তা নিয়ে তোমার বাবা সম্বন্ধে কোনও বিচার করতে যাওয়া ঠিক হবে না। মনে রেখো হ্যারি, তখন তোমার বাবার বয়স মাত্র পনেরো।

হ্যারি গরম হয়ে বললো–আমারও এখন বয়স পনেরো।

সিরিয়স বললেন, শোনো হ্যারি, তোমার বাবাকে স্নেইপ খুব হিংসে করতো। তাদের মধ্যে আদতেই কোনও বন্ধুত্ব ছিলো না। তোমার বাবা ভালো কিডিচ প্লেয়ার ছিলো তা স্নেইপ সহ্য করতে পারত না। ডার্ক আর্টকে তোমার বাবা অত্যান্ত ঘৃণা করতো।

–কিন্তু বাবার স্নেইপকে বিনা কারণে আক্রমণ করা ঠিক হয়নি।

–একটু আধটু মজা করতো। তোমার বাবা আর সিরিয়স খুব বন্ধু ছিলো তা নয়, স্কুলে দুজনেই সেরা ছাত্র ছিলো সবদিক থেকে।

সিরিয়স বললেন, সব সময় গোমড়া মুখ করে বসে না থেকে মাঝে মাঝে হাসি-ঠাট্টা করা দোষের নয় হ্যারি।

লুপিন হাসলেন।

–সব সময় স্নেইপের চুল এলোমেলো করে দিতেন। লুপিন, সিরিয়স হো হো করে হেসে উঠলেন।

–হ্যাঁ হ্যাঁ তা একটু করতে, সিরিয়স হেসে বললেন, সেসব কথা ভুলেও গেছি ছাই।

লুপিন বললেন, সে সময় কি ও স্নিচ (ছোট ছোট রঙ্গীন প্রজাপতি) নিয়ে খেলা করতে?

–হ্যাঁ দেখেছি।

লুপিন বললেন, ভালো মানুষ ও খোলামনের ছিলো জেমস। তবে খুব একটা চালাক ছিলো না, সাহসী ছিলো।

সিরিয়স বললেন, শুধু জেমস কেন? আমরা সবাই বোকা।

তারপর লুপিনের দিকে তাকিয়ে বললেন, কিন্তু সে যাই হোক তোমার বাবার লিলির ওপোর খুব দুর্বলতা ছিলো।

–বাবাকে তো মা পছন্দ করতেন না, তো বিয়ে করলেন কেন?

সিরিয়স বললেন–না তো। কে বললো তোমাকে?

লুপিন বললেন; সেভেন্থ ইয়ারে পড়ার সময় থেকেই দুজনে এক সঙ্গে উঠাবসা করতো।

দুচারটে কথা বলার পর সিরিয়স বললেন–শোনো হ্যারি তোমার বাবা অতি ভদ্র ভালোমানুষ ছিলো তা নয়; আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলো। বহু ছেলে–মেয়ে পনেরো বছর বয়সে তো চালাক হয় না। তারই মধ্যে ও বড় হয়েছে।

হ্যারি একটু সময় চুপ থেকে বললো, আপনাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে স্নেইপের ওপোর মায়া দেখানো ঠিক নয়।

লুপিন বললেন, এতক্ষণে বাদে বললে। যাকগে তোমার ওইসব অতীতের জিনিস দেখার কথা শুনে স্নেইপের কি রকম প্রতিক্রিয়া হয়েছিলো তাই বলো।

-বলেছিলেন, আমাকে আর অকলামেন্সি শেখাবেন না। খুব হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন মনে হয়।

–কী বললে? সিরিয়স খুব জোরে বললেন। এতো জোরে যে ফায়ার প্লেসে কাঠের ছাই উড়তে লাগলো।

–ঠিক বলছো হ্যারি? তোমাকে শেখানো বন্ধ করে দিয়েছে স্নেইপ? লুপিন সঙ্গে সঙ্গে বললেন।

–হ্যাঁ, তাই বলেছেন। স্নেইপ, হ্যারিকে শেখানো বন্ধ করে দিয়েছেন শুনে যে প্রতিক্রিয়া লুপিনের মুখে চোখে দেখালো তা দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলো হ্যারি। ঠিক আছে, আমার তাতে কিছু যাবে আসবে না।

সিরিয়স দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, আমি তোমাদের ওখানে গিয়ে একদিন স্নেইপের সঙ্গে কথা বলবো।

লুপিন, সিরিয়সকে বসিয়ে দিয়ে কঠিনভাবে বললেন, স্নেইপকে যদি কিছু বলার দরকার হয় তো আমি বলবো। হ্যাঁ হ্যারি, তুমি স্নেইপকে পরিষ্কারভাবে বলবে কোনও কারণেই ও তোমার লেসন বন্ধ করতে পারে না, কারণ ডাম্বলডোর আদেশ দিয়েছেন, তার আদেশ মানতে বাধ্য স্নেইপ।

হ্যারি শুল্ক মুখে বললো, ওকথা বললে আমাকে হয়তো মেরে ফেলবেন। পেনসিভ থেকে আমরা যখন বেরিয়ে এসেছিলাম তখন আপনারা তার মূর্তি দেখেননি।

লুপিন স্বপ্নের ঘোরে বললেন, তোমার কাছে এখন অকলামেন্সি শেখা ছাড়া কোনো কিছুই বড়ো নয় হ্যারি; আমার কথা বুঝতে পেরেছো?

–ঠিক আছে, ঠিক আছে, হ্যারি বললো। বেশ আমি অবশ্যই বলবো; কিন্তু কোনো কাজ হবে বলে তো মনে হয় না।

ঘরের বাইরে কারও পদশব্দ শুনতে পেলো।

–সিঁড়ি দিয়ে কী ক্রেচার আসছে?

 –না, সিরিয়স বললেন; মনে হয় অন্য কেউ।

হ্যারির বুকের ধুকধুকানি যেনো বন্ধ হয়ে আসছে।

ও গ্রিমন্ড প্লেসের আগুন থেকে মাথা পিছনে টেনে নিয়ে বললো, আমি এখন চলি।

কয়েক মুহূর্তের জন্য মনে হলো কাঁধেতে ওর মুণ্ডুটা বন বন করে ঘুরছে। তারপরই দেখলো আমব্রিজের ফায়ার প্লেসের সামনে ও হাঁটু গেড়ে বসে আছে। ফ্রনেট ওয়ার্কে গ্রিমন্ড প্রেস থেকে আবারও হোগওয়ার্টসে ফিরে এসেছে। ও একদৃষ্টে সবুজ অগ্নিশিখার দিকে তাকিয়ে রইলো। অগ্নিশিখা ধীরে ধীরে নির্বাপিত হলো।

–তাড়াতাড়ি, তাড়াতাড়ি! হ্যারি ফাঁস ফাঁসে গলার শব্দ শুনতে পেলো অফিস ঘরের দরজার ডান দিক থেকে। ওহ দরজাটা খুলে রেখে গেছেন দেখছি।

হ্যারি ঝড়ের বেগে অদৃশ্য হবার আলখেল্লাটা গায়ে চড়ালো। দেখলো ফিলচ বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঘর খোলা দেখে ওর মুখ দেখে হ্যারির মনে হলো খুব খুশি হয়েছে ফিলচ। আপন মনে কথা বলতে বলতে ঘরে ঢুকে ও আমব্রিজের ডেস্কের পাল্লা খুলে কাগজপত্র ঘাটতে লাগলো।

–কষাঘাতের অনুমোদন, কষাঘাতের অনুমোদন–আমি তাহলে তো এখন করতে পারি। বহু বছর পর ওরা আসছে। কথাটা বলে ও ছোট একটা পার্চমেন্ট নিয়ে বুকে চেপে খোলা দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো।

ফিলচ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে হ্যারি স্কুল ব্যাগটা তুলে নিয়ে ভালো করে ক্লোকটা গায়ে টেনে টুনে দিলো যাতে কোনও ফাঁক না থাকে। তারপর ফিলচের পিছু পিছু করিডোর দিয়ে চললো।

হ্যারি খানিকটা পথ এগিয়ে আলখেল্লাটা খুলে ব্যাগে ভরে নিলো।

সেখানে দাঁড়িয়ে শুনতে পেলো এন্ট্রেন্স হলের মুখে কিছু ছেলে-মেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বলতে গেলে সমস্ত স্কুলের ছাত্রছাত্রী এনট্রেন্স হলের ভেতরে বাইরে ভয়ে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অনেকটা ট্রিলনীর স্কুল থেকে চলে যেতে বলার সময় ওই রকম অবস্থা হ্যারি দেখেছিলো।

দেখলো প্রায় সকলেই মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে খুব সম্ভব স্টিংকস্যাপ (দুর্গন্ধ যাতে নাকে না আসে)। প্রফেসর, ছাত্র-ছাত্রী ভূতেরাও, তাদের মধ্যে বিশেষ করে আমব্রিজের তদন্তকারী স্কোয়াড়রাও। জর্জ আর ফ্রেড ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পিভস ওপোর থেকে লাফাচ্ছে ঝাপাচ্ছে। এদের মুখ দেখে মনে হলো ওরা ধরা পড়ে গেছে।

–আমব্রিজ ওদের দিকে তাকিয়ে হুংকার দিলেন। তোমরা মনে করেছে স্কুল করিডোরকে জলাভূমি করে দিয়ে দারুণ মজা লুটবে তাই না?

ফ্রেড বললো–দারুণ মজা। আমব্রিজের মুখের দিকে নির্ভিকভাবে তাকালো।

ফিলচ কনুই দিয়ে ভিড় ঠেলতে ঠেলতে আমব্রিজের পাশে দাঁড়ালো। খুশিতে ও ছটফট করছে।

হ্যারি ফিলচকে যে পার্চমেন্টের টুকরো ডেস্ক থেকে নিতে দেখেছিলো সেটা দেখাতে দেখাতে বললো, আমি ফর্মটা পেয়েছি, বেতও ঠিকঠাক আছে, কাজটা আমি করি হেডমিস্ট্রেস?

–ঠিক আছে আরগম, আমব্রিজ ফ্রেড আর জর্জের শেকল বাঁধা শরীরের দিকে তাকালেন।

–এখন তোমরা দুজনে দারুণ মজা পাওয়ার আনন্দ উপভোগ করো। আমার স্কুলে কেউ অন্যায় করলে পার পাবে না, শাস্তি পেতেই হবে।

–কী বললেন, অন্যায়? আমরাতো কোনও অন্যায় করিনি, ফ্রেড বলল আমব্রিজ ওদের দিকে তাকালেন।

ফ্রেড বললো, জর্জ আমাদের তো স্কুলের পড়াশুনা খতম হয়ে গেছে।

জর্জ বললো–তাইতো ভাবছিলাম।

 –তাহলে আমরা কতটুকু শিখলাম সকলকে জানাতে হয়, কি বলো? জর্জ বললো, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

আমব্রিজ আর কোন কথা বলার আগেই ফ্রেড-জর্জ ওদের জাদুদণ্ড উঁচু করলো।

একিও ব্রুমস!

হ্যারি অদূরে মারাত্মক রকমের কড় কড় শব্দ শুনতে পেলো।

সকলে দেখতে পেলো দুটি ঝাড়ু হাওয়াতে ভেসে ভেসে আসছে। তার মধ্যে একটা ঝাড়ু, যে লোহার শেকল দিয়ে আমব্রিজ ওদের বেঁধে রেখেছিলেন সেই শেকল প্রবলভাবে আঘাত করলো।

আমব্রিজ দেখলেন ফ্রেড আর জর্জ মুক্ত। লোহার শেকল, পেগ পাথরের মেঝেতে ওদের পায়ের কাছে ছত্রকার হয়ে পড়ে রয়েছে।

ফ্রেড আর জর্জ ভেসে আসা ঝাড়ুতে উঠে বসলো।

ফ্রেড আমব্রিজকে বললো, আমাদের আর আপনার মুখ দেখতে হবে না। আমরা চললাম স্যর!

ফ্রেড ওর ঝাড়ুতে বসতেই ঝাড়ু ওকে উড়িয়ে নিয়ে চললো।

জর্জ ওর নিজের ঝাড়ুতে বসে বললো–আমিও চললাম।

ওরা দুজনে ঝাড়ুর ওপোর বসে স্কুল বিল্ডিং ছেড়ে আকাশে উড়ে গেলো। জনতা ওদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।

ফ্রেড আকাশ থেকে বললো, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি পোর্টেবল জলপাত্র চাওতো দেরি করবে না, তিরানব্বই নম্বর ডায়গন অ্যালেতে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। এটাই আমাদের নতুন ঠিকানা।

জর্জ আমব্রিজের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে হাসতে হাসতে বললো–ওই বুড়িটাকে যারা অগ্রাহ্য করবে তারা বিশেষ ছাড় পাবে প্রোডাক্টস কেনার সময়।

আমব্রিজ তার নবগঠিত স্কোয়াডকে বললেন, ধরো ধরো ওদের ধরো।

আর ধরো! ওরা দুই উইসলি ভাইদের একটু কাছে আসলেই প্রবল পদাঘাত খেয়ে মাটিতে ছিটকে লোহার শেকলের কাছে পড়ে গেলো আকাশ থেকে।

–পিভস, ওদের আমাদের পক্ষ থেকে নরকে নিয়ে যাও।

পিভসকে আগে কখনোও স্কুলের ছাত্রদের আদেশ রক্ষা করতে হ্যারি দেখেনি। ও ওর বড় টুপিটা খুলে দোলাতে দোলাতে আকাশে উড়ন্ত জর্জ ও ফ্রেডকে স্যালুট করলো। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা হর্ষধ্বনি করে উঠলো ফ্রেড ও জর্জের দিকে তাকিয়ে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *