১৮. ডাম্বলডোরস আর্মি

১৮. ডাম্বলডোরস আর্মি

আমব্রিজ নিয়মিত তোমার চিঠি পড়ে চলেছেন হ্যারি, ব্যাখ্যা করে বলার কোনও কারণ নেই।

–তুমি কি মনে কর আমব্রিজ হেডউইগকে আক্রমণ করেছেন? হ্যারি বাঁধন ছাড়া উষ্মার সঙ্গে বললো।

নিঃসন্দেহে আমি মনে করি হারমিওন হতাশার সুরে বললো, ওই দেখো তোমার ব্যাঙ পালাবার চেষ্টা করছে।

হ্যারি ওর ম্যাজিক ওয়ান্ড তুলে লাফিয়ে লাফিয়ে যাওয়া ব্যাঙের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, অ্যাকিও। বলার সঙ্গে সঙ্গে ওর ব্যাঙ ওর হাতে এসে বসলো।

চার্মস এক মন্ত্র সেটা প্রয়োগ করলে কেউ ব্যক্তিগত কথা শোনার চেষ্টা করলেও পারে না। ইদানীং বড়োই কানাঘুষো, আড়িপাতার ধূম চলেছে হোগার্টসে। হ্যারি-রন-হারমিওন সিরিয়সের কথা, নিজেদের আইডিয়া, ডার্ক, আর্ট থেকে প্রতিরোধ, আমব্রিজের স্বেচ্ছাচারিতার কথা, ঘরে বসে বসে আলোচনা করছে। ঘরের সব জানালা দরজা বন্ধ। বাইরে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি পড়ে চলেছে। বৃষ্টির ছাটে মনে হয় জানালার কাঁচ ভেঙে পড়বে। তারই সঙ্গে নানা শব্দ। ওরা আগুনের মধ্য থেকে আমব্রিজের সিরিয়সকে প্রায় ধরে ফেলার কথাও আলোচনা করছিলো।

হারমিওন বললো, ফিলচ খুব সুবিধের লোক মনে হয় না। ও তোমার নামে ডাংগবোম ব্যবহারের ব্যাপারে অভিযোগ করছিলো। তোমার চিঠি কেউ যদি পড়েও থাকে তাহলে পরিষ্কার করে জানা যায় তুমি নির্দোষ। তো তোমার বিপদের কোনও সম্ভাবনা আদতেই নেই।

–চিঠি পড়লে। কোনও কিছু জানতে পারবে না তা উনি ফিলচকে যতোই টিপস দিন না কেন।

–ভাবছি আমব্রিজ যদি স্নাফলকে (সিরিয়স) ধরে ফেলতেন।

–ধরতে পারলে আজ সকালেই আজকাবানে চালান করে দিতেন।

হ্যারির সবুজ ব্যঙ অনবরত পালাবার চেষ্টা করছে দেখে হারমিওন জাদুদণ্ড তুলে বললো, সাইলেনসিও। হ্যারির ব্যঙ শান্ত হয়ে গেলো।

–আমার মনে হয় পেঁচা পাঠিয়ে সিরিয়সকে সাবধান করে দেবার প্রয়োজন নেই।

রন বললো, মনে হয় না বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিরিয়স আবার এখানে আসার ঝুঁকি নেবে। সিরিয়স খুব একটা মর্থ নয়।

রনের দাঁড় কাক ঘরে ঢুকে ক্রমাগত ক্যা ক্যা করছিলো। রনের সাইলেনসিওতেও চুপ করছে না। হারমিওন রেগেমেগে রনের হাত থেকে দণ্ডটা নিয়ে বললো–তুমি মোটেই ব্যবহার করতে জানো না।

হারমিওন সাইলেনসিও বলে কাককে থামিয়ে দিল। দাঁড় কাক ক্রমাগত চোখ পিট পিট করতে লাগলো; কিন্তু গলায় আর স্বর নেই। হারমিওনের সাইলেনসিও শুনে আর ডাকতে পারছে না।

–বাহ বাহ সুন্দর মিস গ্রেঞ্জার! প্রফেসর ফ্লিটউইকের কথা শুনতেই ওরা চমকে উঠলো। এখন মি. উইসলি আবার তুমি চেষ্টা করে দেখি।

রন আর হ্যারিকে প্রফেসর ফ্লিটউইক সাইলেসসিং চার্ম হোমওয়ার্ক দিয়েছেন। বাইরে ঝমঝম বৃষ্টির জন্য ওদের ঘরের মধ্যে থাকার অনুমতি দিয়েছেন। ওদের একটা ক্লাশরুমে প্রথমে কাজ করতে দিয়েছিলেন; কিন্তু ঘরে অসম্ভব গোলমাল, ভিড় তার ওপর পিভসের দুষ্টুমি। সে ঘরে লাফালাফি করছে, কাগজ ফেলে দিচ্ছে, কালির দোয়াত উল্টাচ্ছে এবং কুইল কেড়ে নিচ্ছে।

অ্যাঞ্জেলিনা এসে ভীষণ আনন্দে অধীর হয়ে ওদের বললো, জানো আমি কিডিচ খেলার অনুমতি পেয়ে গেছি।

 রন হ্যারি একসঙ্গে বলে উঠলো, দারুণ খবর দিলে।

–তাতো বটেই, অ্যাঞ্জেলিনা বললো, আমি ম্যাকগোনাগলের কাছে। বলেছিলাম। মনে হয় উনি ডাম্বলডোরকে কিছু বলেছিলেন। সে যাই হোক আমব্রিজ আমাকে পার্মিশন দিয়েছেন। তাহলে আজ সন্ধে সাতটার সময় তোমরা মাঠে আসবে, বুঝলে। আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়েছে সেটা মেকআপ করতে হবে। ও ঝড়ের মতো ক্লাশরুম থেকে বেরিয়ে যাবার সময় কারও কারও সঙ্গে ধাক্কা খেলো। পিভসের হাত থেকে রক্ষা পেলো, পিভস ওর মাথায় প্রায় কালি ঢেলে দিয়েছিলো।

রন বললো, মনে হয় বৃষ্টিটা এবার থামবে। হারমিওন তুমি গুম মেরে বসে আছ কেন?

হারমিওনও জানালার দিকে তাকিয়েছিলো। আসলে তার দৃষ্টি বৃষ্টির দিকে নয়, ভাসা ভাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে অন্য কিছু ভাবছিলো।

–ভাবছিলাম।

–কী, সিরি…, স্নাফল সম্বন্ধে?

–না, তা ঠিক নয়, হারমিওন খুব আস্তে আস্তে বললো, ভাবছি আমরা ঠিক পথে চলেছি তাই না? মাঝে মাঝে আবার মনে হচ্ছে, হয়তো না।

–কী বললে? হ্যারি রন দুজনেই বললো।

–হারমিওন তোমায় আগেই বলেছি, সবই তোমার আইডিয়া, হ্যারি বললো।

–আমি জানি, হারমিওন আঙ্গুল মটকাতে মটকাতে বললো। কিন্তু সাফলের সঙ্গে কথা বলার পর।

–কিন্তু তিনি তো আমাদের পক্ষে, হ্যারি বললো।

–হা, সেইরকমভাবে জানালার দিকে তাকিয়ে হারমিওন বললো। তবু মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে আমাদের আইডিয়াটা বোধহয় ঠিক নয়।

কে জানে, হ্যারি বললো, কিন্তু উনি তো সবসময় আমাদের ভালো পরামর্শ দেন। তুমি ভেবো না গ্রিম প্যালেসে কুপের পর তিনি বল্গাহীন হয়ে গেছেন। তাছাড়া তুমি কী মনে করো না তিনি আমাদের ওপর ভরসা করছেন?

হ্যারি বললো, আমাদের ওপর ভরসা? মানে তুমি কী বলতে চাইছো?

–আমার মনে হয় মিনিস্ট্রির একজন লোকের নাকের ওপর সিক্রেট আর্মি গঠন করতে চান। মনে হয় খুবই বিভ্রান্ত। আমাদের ব্যবহার করতে চাইছেন রন ভ্যাবাচাকা খেয়ে তাকালো।

–সিরিয়স ঠিক পথে চলেছেন, ও বললো। তুমি দেখি আমার মায়ের মতো কথা বলছো।

হারমিওন ঠোঁট কামড়ালো, কিছু বললো না।

 পরবর্তী ক্লাসের ঘণ্টা বাজলো।

***

সন্ধ্যা সাতটার সময়েও বৃষ্টি থামলো না। চারদিক জলে থৈ থৈ। ওরা ভিজে জবুথবু হয়ে জলকাদা পেরিয়ে কিডিচ মাঠে পৌঁছলো।

সাময়িক বৃষ্টি থামলেও আকাশ লাল হয়ে আছে। যেকোনও সময়ে আবার ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। ওরা দেখলো ফ্রেড আর জর্জ ফিসফাস করে কিছু বলছে। স্কিডিং স্ন্যাকবক্স ব্যবহার করে কেটে পড়ার চেষ্টা করছে, বলে মনে হলো রন ও হ্যারির।

গ্রিফিন্ডর টিমের সবাই কিডিচের মাঠে যাবার জন্য অ্যাঞ্জেলিনার কথা শুনতে পেলো।

ক্যাপটেনের অফিস থেকে অ্যাঞ্জেলিনা বললো–হ্যাঁ, তোমরা সবাই ভাল করে শোনো। আমি জানি আজকের আবহাওয়া খুব ভাল নয় বিশেষ করে আমাদের খেলার জন্যে। কিন্তু তাহলেও আমরা স্লিদারিনদের বিরুদ্ধে খেলবো। তাহলে তোমরা ভেবে নাও কেমন করে মোকাবিলা করবে। হ্যারি, তুমি তোমার চশমাতে বৃষ্টির জল আর ফেনা হটানোর কী ব্যবস্থা করেছো? হাফলপাফের সঙ্গে খেলার সময় এই অবস্থা হয়েছিলো। ঝড়-বৃষ্টি! মনে আছে?

হ্যারি ওর জাদুদণ্ডটা চশমার কাঁচে ঠেকিয়ে বললো, ইমপেরিয়স!

অ্যাঞ্জেলিনা বললো–আমার মনে হয় তোমাদের সকলেরই ওটা ট্রাই করা উচিত। যদি আমরা মুখ থেকে বৃষ্টির জল সরাতে পারি তাহলে পরিষ্কার দেখতে পাবো। সকলেই একসঙ্গে বললো, ইমপেরিয়স! ঠিক আছে আমরা মাঠে চলি, আঞ্জেলিনা বললো।

খেলোয়াড়রা যে যার রোবের পকেটে তাদের দন্ড রেখে হাতে ঝাড়ু নিয়ে অ্যাঞ্জেলিনার পিছু পিছু চললো।

ওরা জলকাদা ভর্তি মাঠের মাঝখানে দাঁড়ালো। তখনও বৃষ্টির জন্য সবকিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না (ইমপেরিয়স চার্মস ব্যবহার করার পরেও)। আলো কমে আসছে, চতুর্দিক প্রায় অন্ধকার!

–ঠিক আছে, হুইসিল দিলাম, অ্যাঞ্জেলিনা খুব জোরে বললো।

হ্যারি বলে কি দিলো। চতুর্দিকে জলকাদা ছড়িয়ে পড়লো। ঝাড়ুর ওপর বসে শোঁ শোঁ করে ওপরে উঠে গেলো। হাওয়ার প্রচণ্ড বেগ ওর গতিপথ ব্যাহত করতে লাগলো। ওর কোনও আইডিয়া নেই কেমন করে এই দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতে স্নিচ দেখতে পাবে এবং ছিনিয়ে নেবে বুঝতে পারছে না। হ্যারি কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তখন ও অসুবিধা এড়াবার জন্য সুথগ্রিপ রোল ব্যবহার করলো। যেকোন কারণেই হোক অ্যাঞ্জেলিনার চোখে পড়লো না। বৃষ্টিতে সব ঝাঁপসা, ওর অবস্থা অন্য সবাইর মতো। হু হু করে বাতাস হ্যারিকে উড়িয়ে নিয়ে চললো। হ্যারির মনে হল ও অতল সমুদ্রে পড়েছে। একটু পর ও বিরাট লেকটার জলের ওপর বৃষ্টি পড়ার শব্দ শুনতে পেলো।

হেরে যাবার আগ পর্যন্ত অ্যাঞ্জেলিনা ওর টিমের খেলোয়াড়দের প্রাণপনে খেলে যেতে বললো। খেলার শেষে ওর দলের সকলে মুখ বেজার করে ক্লাবঘরে এলে অ্যাঞ্জেলিনা বললো, আমাদের আজকের প্র্যাকটিস ম্যাচ ব্যর্থ হয়নি।

 হ্যারি তোয়ালে দিয়ে গা-হাত পা মুছতে মুছতে চোখ দুটো টিপে ধরল। খুব টন টন করছে, কপালের কাটা দাগটাও ব্যথা করছে, চুলকোচ্ছে। মনে হলো আগের চেয়ে যেন অনেক বেশি।

দলের ছেলেমেয়েরা হ্যারির অস্বস্তিপূর্ণ মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, তোমার কী হয়েছে হ্যারি?

হ্যারি মুখের ওপর থেকে তোয়ালেটা সরালো। চেঞ্জিং রুমটা ঝাঁপসা দেখাচ্ছে চশমা পরেনি বলে। তাহলেও বুঝতে পারলো সকলেই ওর দিকে জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকিয়ে রয়েছে।

ও বললো–না, কিছু না। আমার চোখে আঙুল ঢুকে গিয়েছিলো আর কিছু না।

হ্যারি রনের দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাইরে যেতে বললো। ওরা দুজনে এক ধাপে দাঁড়ালো। দলের ছেলেরা তখন জামা-প্যান্ট ইত্যাদি বদলাতে ব্যস্ত।

–ব্যাপার কী? অ্যাঞ্জেলিনা চলে গেলে রন জানতে চাইলো। আবার কাটা দাগে ব্যথা করছে?

হ্যারি ঘাড় নেড়ে বললো, হ্যাঁ।

রন জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। বৃষ্টি সবকিছু ঝাঁপসা করে দিয়েছে। মনে হয় ও (ভোল্ডেমর্ট) আমাদের ধারেকাছে নেই, আসতে পারে না। তাই না?

–না, হ্যারি খুব আস্তে বললো। তারপর একটা বেঞ্চের ওপর বসে পড়ে বললো ও হয়তো অনেক মাইল দূরে। মনে হয় খুব রাগে ফেটে পড়ছে, তাই ব্যথা বেদনা করছে।

হ্যারি হয়তো কথাগুলো বলতে চায়নি, কোন এক অপরিচিত মানুষ কথাটা বলেছে। তাহলেও হ্যারি জানে কথাটা সত্যি। ও জানে না কেমন করে ও জেনেছে। ভোল্ডেমর্টের কাছে কোনও কিছুই গোপন রাখার উপায় নেই। জলে-স্থলে যেখানেই থাকুন দুর্দমনীয় তার শক্তি।

রন বললো, তুমি কী তাকে দেখেছো? ও যেন ভয় পেয়েছে ভোল্টেমর্টের নাম শুনে। তার অবয়ব বা অন্যকিছু?

 হ্যারি নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। ওর মন ভোল্টেমর্টের থেকে সরিয়ে আনতে চায়, তাহলেই হয়তো ব্যথার উপশম হবে।

অত্যন্ত কদাকার শ্যাওলার মতো তার দেহের আকৃতি, কানের কাছে যেন লক্ষ লক্ষ প্রাণীর হুংকার।

ও বললো–ভোল্ডেমর্ট কিছু একটা চায়, সেই চাওয়াটা তড়িৎ গতিতে হচ্ছে।

ওর আবার মনে হয় কথাগুলো ও বলতে চায়নি ওর মুখ দিয়ে অন্য কেউ বললো। কিন্তু সেই কথাগুলো তো মিথ্যে নয়।

রন বললো–কিন্তু তুমি কেমন করে জানলে?

হ্যারি মাথা নেড়ে দুহাতে চোখ ঢাকলো, তালু দিয়ে দুচোখে চাপ দিলো। চাপ দেবার পর বন্ধ চোখে ছোট ছোট তারকা দেখতে পেলো। ওর মনে হলোরন ওর পাশে বসেছে, ওর দিকে অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।

–ব্যাথাটা কী তোমার গতবারের মতো তীব্র? রন ধরা ধরা গলায় প্রশ্ন করলো–আমব্রিজের অফিস ঘরে এমন হয়েছিলো? ইউ-নো-হু কী সত্য সত্যই কূপিত?

হ্যারি মাথা নাড়লো।

 –তাহলে কেমন ব্যথা?

হ্যারির মনে হলো ও আমব্রিজের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ওর কপালেও হাতের কাটা দাগে যন্ত্রণা, পেটের মধ্যে হঠাৎ পুরনো ব্যথার স্পর্শানুভূতি। আনন্দের অনুভূতি কিন্তু বুঝতে পারছে না। কেন এইসব দেখা, এবং অনুভব করা? এমন চঞ্চলতা-বিক্ষিপ্ত মনোভাব আগে ওর কখনও হয়নি।

হ্যারি আবার জোর করে নিজেকে নিজের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে চাইলো। গতবারে এমন হয়েছিলো তার কারণ ছিলো, মনে আনন্দ-সুখ। আনন্দদায়ক কিছু একটা ঘটবে, হোগার্টসে আসার আগের দিন মনের অবস্থা এমন হয়েছিলো না? আবার তৎক্ষণাৎ মনে পড়ে গেলো গ্রিমন্ডপ্লেসে রনের ঘরের কথা। অদ্ভুত এক যন্ত্রণা হয়েছিলো–যেন ব্যথার চোটে পাগল হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছিলো।

ও ধীরে ধীরে রনের দিকে তাকালো। রন ওর দিকে বারে বারে তাকাচ্ছিলো, একটানা নয়।

রন বললো, শোনো, তুমি আজ ট্রিলনীর ক্লাসে যেও না। রনের কথার মধ্যে একটু আতঙ্ক পীড়িত ছাপ!

–আমি তো ভবিষ্যদ্বাণী করছি না, হ্যারি বললো।

রনের ভয় তারই সঙ্গে মনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করার ছাপ। না না তুমি বেশ ভালো করেই জানো কি রকতে চাও? হ্যারি, তুমি তো ইউ-নো-হুর মনের কথা বুঝতে পার।

–না। হ্যারি, অস্বীকার করলো–সবকিছু ওর মুডের ওপর নির্ভর করে বলে আমার ধারণা। আমি যেন ওর অবস্থা কিছু বুঝতে পারি। ডাম্বলডোর বলেছিলেন, গতবছরে এইরকম কিছু হয়েছিলো। বলেছিলেন, ভোল্ডেমর্ট আমার সন্নিকটে যখন আসে অথবা আমাকে ঘৃণা করে তখন আমার মনের অবস্থার পরিবর্তন হয়। ওয়েল, এখন আমি অনুভব করতে পারি কখন ও কি করতে চায়।

ওরা সামান্য সময় চুপ করে রইলো। স্কুল বাড়ি এবং অন্যসব বাড়িতে বাতাস আর বৃষ্টি চাবুকের মতো আঘাত করে চলেছে।

–এইরকম মনের অবস্থা তোমার কাউকে জানানো দরকার, রন বললো।

 –গতবারে আমি সিরিয়সকে বলেছি।

–বেশ, তাহলে এবারও তাকে বলো।

–না, আমি বলতে পারবো না, হ্যারি গম্ভীর মুখে বললো, আমব্রিজ আমার প্যাঁচ ওয়াচ করছেন। ফায়ার প্লেসের কথা তোমার মনে নেই?

–তাহলে, তাহলে তুমি আবার ডাম্বলডোরকে বলো।

–তুমি বোধহয় আমার কথা ভালো করে শোননি? এইমাত্র তোমাকে বলেছি, ডাম্বলডোর সব ব্যাপারে ওয়াকিবহাল আছেন। হ্যারি হঠাৎ দাঁড়িয়ে ক্লোকটা আর পিনটা (পেগ) রনের মুখের সামনে দোলাতে দোলাতে বললো, বারবার তাকে একই কথা বলার কোন মানে হয় না।

রন নিজের ক্লোকটা খুলতে তুলতে হ্যারিকে চিন্তিত মুখে দেখতে লাগলো।

–ডাম্বলডোর হয়তো আবার জানতে চান, রন বললো।

হ্যারি কাঁধ নাচালো।

–আরে চলো, আমাদের সাইলেনসিং চার্মস প্র্যাকটিস করতে হবে।

অন্ধকার কর্দমাক্ত মাঠের মধ্য দিয়ে ওরা নিজেদের টাওয়ারের দিকে চললো। কাদাজল ভরা মাঠে চলার সময় বারবার হোঁচট খেতে লাগলো। দুজনেরই মুখে কোনও কথা নেই। হ্যারি ভোল্টেমর্টের অভিসন্ধির কথা ভাবতে লাগলো। আশ্চর্য! ভোল্ডেমর্ট যা চাইছেন সেটা ঘটতে এতো সময় নিচ্ছে কেন?

ভোল্টেমর্টের মাথায় অন্য পরিকল্পনা আছে, সেই পরিকল্পনা তিনি খুব ধীরস্থিরভাবে চালু করতে পারেন। যা চাইছেন গোপনভাবে ব্যবহার করতে পারেন সেই অস্ত্র। এমন এক অস্ত্র যা এখনও ব্যবহার করেননি।

হ্যারি ওই কথাগুলো অনেক সপ্তাহ ভাবেনি, হোগার্টসের পড়াশুনা, কাজকর্ম নিয়ে খুবই ব্যস্ত ছিলো। আমব্রিজের সঙ্গে অঘোষিত লড়াই, মন্ত্রণালয়েল অবিচার, অন্যায় হস্তক্ষেপ, এখন সেইগুলো ওকে আক্রমণ করতে শুরু করেছে। ও ভেবে আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছে যে ভোল্ডেমর্টের উন্মা কিছুটা বোধগম্য হবে যদি ও সেই অব্যবহৃত অস্ত্রে হাত না রাখে, তা যে অস্ত্রই হোক না কেন। অর্ডার তো ওকে সেটা কেড়ে নিতে বা রুখতে বাধা দেয়নি। কোথায় সেটা আছে? এখন কার হাতে সেটা রয়েছে?

পোর্ট্রেট হোলের কাছে এসে রন পাসওয়ার্ড বললো, মিমবুলাস মিমব্লেটোনিয়া। হ্যারি রনের গলা শুনে বাস্তব জগতে ফিরে এলো ঠিক সময়ে। একই সঙ্গে পোর্ট্রেট হোল দিয়ে ওরা কমনরুমে ঢুকলো।

 ক্রুকশ্যাংক একটা চেয়ারে বসে রয়েছে। টেবিলে নানা রং-এর উল ছড়ানো, উলের কাটাতে অসমাপ্ত এলফেদের মোজা। হারমিওন নেই। খুব সম্ভব ও তাড়াতাড়ি ঘুমোতে চলে গেছে।

হারমিওন কমনরুমে না থাকাতে হ্যারি মনে মনে খুশি হলো। ও কপালের কাটা দাগের ব্যথা নিয়ে কারও সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতে চায় না। ও সম্ভবত ডাম্বলডোরের কাছে যেতে বলবে। রন অনেকটা সময় হ্যারির দিকে তাকিয়ে রইলো। হ্যারি ওকে ভ্রুক্ষেপ না করে চার্মস বই বার করে অসমাপ্ত প্রবন্ধটা শেষ করতে বসলো। ও কিন্তু রনের সঙ্গে কোনও কথা বলবে না বলেই লেখার ভান করছিলো। রন বললো, ও শুতে যাচ্ছে। হ্যারি কিন্তু তখনও কিছুই লেখেনি।

রন চলে গেলো, হ্যারি কমনরুমে বসে বই পড়তে লাগলো। একই পরিচ্ছেদ বারবার–স্কার্তি ঘাসের ব্যবহার, লোভেজ আর স্লিজিওন।

এই চারাগুলো মস্তিষ্কে উদ্দীপনা বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত মূল্যবান এবং সেই কারণে ভ্রান্তি ও হতবুদ্ধি করার ওষুধের জন্য ব্যবহৃত হয়, যখন জাদুকররা তাদের মাথা গরম করে ও হঠকারিতার জন্য চঞ্চল হয়ে ওঠে। হারমিওন ও সিরিয়সের গ্রিম প্যালেসে ওইরকম অবস্থা হয়েছিলো। ডেইলি প্রফেট হয়তো ভাবতে পারে ওর মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়েছে। ওদের সঙ্গে তারা এই ভুতুড়ে সংযোগটা কিসের তা ডাম্বলডোর কখনই সন্তোষজনকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন নি।

–যখন জাদুকররা কামনা করে…

–তাহলে হ্যারির চোখে ঘুম আসে কি করে

 –মাথা গরম করে চলে

আগুনের সামনে আর্ম চেয়ার টেনে বসা অনেক আরামদায়ক। উম্মাদের মতো বৃষ্টি পড়ে চলেছে, তার ছাটে জানালার কাঁচের পাল্লাগুলো খট খট করছে। কশ্যাংক নাক ডাকছে। আগুনের শিখা মাঝে মাঝে কড়কড় শব্দ করে চলেছে।

হ্যারির হাত থেকে বইটা মেঝেতে পড়ে ধপ করে শব্দ করে উঠলো। ওর মাথাটা অলসভাবে পাশে ঘুরে গেলো।

ও আবার একটা জানালাবিহীন করিডোরে হেঁটে চলেছে। নিস্তব্ধতার মধ্যে ওর পদশব্দ ধ্বনিত হচ্ছে। ক্যাসেলের শেষ প্রান্তের দরজাটা দারুন ভয়াবহ মনে হলো, উত্তেজনায় ওর হৃদপিন্ড দপদপ করতে লাগলো। ও কী বন্ধ দরজাটা খুলতে পারবে… ভেতরে যেতে পারবে…?

ও একটা হাত প্রসারিত করলো। দরজা থেকে ওর হাতের আঙ্গুলের শেষ প্রান্ত মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরে…।

হ্যারি পটার স্যার!

ও ধড়মড়িয়ে উঠে পড়লো। কমনরুমের সব মোমবাতিগুলো জ্বলতে জ্বলতে শেষ হয়ে গেছে। মনে হলো কে যেন অন্ধকারের মধ্যে কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে, ছায়ামূর্তিটা নড়ছে।

হ্যারি চেয়ারে সোজা হয়ে বসে বললো, কে তুমি? ঘরের ফায়ারপ্লেসের আগুন টিপটিপ করে জ্বলছে, সব প্রায় অন্ধকার।

–ডব্বি, আপনার প্যাচা স্যার, খনখনে গলায় কেউ বললো। সেই গলার সুরের দিকে তাকিয়ে হ্যারি বললো, তুমি ডব্বি?

.

হারমিওন যে টেবিলটার ওপর ও অর্ধডজন সোজা আর হ্যাট রেখে ওর ডরমেটরিতে ঘুমোতে চলে গেছে তারই পাশে হাউস এলফ ডব্বিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো হ্যারি। ডব্বি ওর মাথায় তিন চারটে হ্যাট চাপিয়েছে, তাই সামান্য লম্বা দেখাচ্ছে ওকে।

টুপির ওপর হেডউইগ বসে ছিল। দেখে মনে হলো হেডউইগ ঠিক হয়ে গেছে।

ও হ্যারি পটার এর প্যাচাকে নিজের হাতে নিয়ে এসেছে ওর মুখে বিশ্বজয়ের হাসি। প্রফেসর গ্রাবলি-প্ল্যাঙ্ক বললেন, প্যাচার অসুখ সেরে গেছে স্যার। কথাটা বলে ডব্বি মাথা নত করতেই ওর পেনসিল সদৃশ লম্বা নাক বলতে গেলে হ্যারির চেয়ারের হাতলে ঠেকে বেঁকে গেলো। হেডউইগ ছটপট করতে করতে হ্যারির চেয়ারের একটা হাতলে বসলো।

–অশেষ ধন্যবাদ তোমায় ডব্বি!, হেডউইগের গলা চুলকোতে চুলকোতে হ্যারি ডব্বিকে বললো। ও হেডউইথের গলা চুলকে, আদার করে স্বপ্নে দেখা সেই অন্ধকার গলি আর বন্ধ দরজার কথা ভুলবার চেষ্টা করতে লাগলো। বড় পরিষ্কার স্বপ্ন। ও ডব্বির দিকে তাকিয়ে দেখলো ডব্বি অনেকগুলো মালা গলায় দিয়েছে আর অগণিত মোজা পরেছে। তাই ওকে অসম্ভব ফুলো ফুলো মোটা দেখাচ্ছে।

–ওহো তুমি দেখি এলফদের জন্য রেখে যাওয়া হারমিওনের সব গরম জামা, মাফলার, টুপি, মোজা পরে বসে আছে।

–না না স্যার, উইস্কির জন্য কিছু নিয়েছে! ডব্বি হেসে গদগদ হয়ে বললো।

–ও হ্যাঁ, তা তোমার উইস্কি কেমন আছে ডব্বি? হ্যারি জিজ্ঞেস করলো।

ডব্বির খাড়াখাড়া কান দুটো সামান্য ঝুলে পড়লে, ও দুঃখ ভরাক্রান্ত গলায় বললো, উইস্কি এখনও অনেক মদ খাচ্ছে। বলার সময় ওর টেনিস বলের মত সবুজ চোখ দুটো সিক্ত হয়ে উঠলো।

–ও এখনও জামা-কাপড় ঠিক করে পরে না, হ্যারিপটার। অন্য এলফরা বলেছে, ওদের হ্যাট মোজা লুকিয়ে রাখা হয়েছে, ওরা আর গ্রিফিন্ডর টাওয়ার সাফ করবে না। স্যার ওদের অপমান করা হয়েছে, তাই স্যার ডব্বি একাই সব কাজ করে তার জন্য ডব্বির কোনও দুঃখ নেই, কিছু মনে করে না স্যার। ও হ্যারিপটারের কাছে আসতে চেয়েছিলো সে আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়েছে! কথাটা বলে ডব্বি আবার গভীরভাবে মাথা নোয়ালো–কিন্তু স্যার ডব্বির মনে হচ্ছে হ্যারিপটার খুব আনন্দে নেই (ডব্বি এসে হ্যারিপটারকে ঘুমের মধ্যে বিড় বিড় করতে শুনেছে)। হ্যারিপটার কী খারাপ কোনোও স্বপ্ন দেখছিলো?

–না না সেরকম খারাপ কিছু নয়, ব্যারি হাই তুলে চোখ রগড়াতে রগড়াতে বললো, ওর চেয়েও অনেক বিশ্রী ভয়ঙ্কর স্বপ্নও দেখেছি।

ডব্বি ওর বড় বড় গোলাকার দুচোখে হ্যারির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ওর লম্বা কান দুটো আরও পৎ পৎ করতে লাগলো–ডব্বি কী হ্যারিপটারের কোনও সাহায্যে আসতে পারে? হ্যারিপটার ডব্বির জন্য অনেক করেছেন, তাকে মুক্ত করেছেন। ডব্বি এখন খুব আনন্দে আছে, হ্যারিপটার।

হ্যারি হাসলো।

–তুমি আমাকে কোনও সাহায্য করতে পারবে না ডব্বি। তোমার এই অফারের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

কথাটা বলে হ্যারি হেঁট হয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা পোসান বিষয়ক বইটা তুলে নিলো। আগামীকালের মধ্যে ওকে প্রবন্ধটা শেষ করতে হবে। ও বইটা বন্ধ করতেই আগুনের যে শিখা ফায়ার প্লেসে জ্বলছিলো তারই সামান্য আলো পড়ে ওর হাতের কাটাদাগটি চকচক করে উঠলো। আমব্রিজের ডিটেনশনের সময় এই রকম হয়েছিলো কাটা দাগে আলো পড়ে।

হ্যারি খুব ধীরে ধীরে বললো–এক মিনিট দাঁড়াও, আমার মনে হচ্ছে তুমি আমাকে সাহায্য করতে পারবে।

ডব্বির সারা দেহ খুশির হাওয়াতে কাঁপতে লাগলো।

–বলুন, হ্যারিপটার স্যার।

–আমি এমন একটা জায়গা চাই যেখানে চল্লিশজন গোপনে ডার্কআর্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রাকটিস করতে পারে। স্কুলের কোনও টিচার সেই জায়গাটা কোথায় তা যেনো জানতে না পারে বিশেষ করে প্রফেসর আমব্রিজ। হ্যারি হাতের মুঠোতে শক্ত করে বইটা চেপে ধরলো।

হ্যারি ভেবেছিলো ওর কথা শুনে ডব্বির মুখের হাসি মিলিয়ে যাবে, কানের লতি দুটো আরও ঝুলে পড়বে, বলবে, হ্যারিপটার স্যার, অসম্ভব অথবা এড়িয়ে যাবার জন্য বলবে, খুঁজে দেখবে। কিন্তু হ্যারির সব নেগেটিভ চিন্তা ধূলিসাৎ করে ডব্বি হাত জোড় করে অশ্রুসিক্ত চোখে, গভীর কণ্ঠে বললো, ডব্বি সেই রকম একটা গোপন জায়গা জানে স্যার! ডব্বি হোগার্টসে আসার আগে এলফদের বলতে শুনেছে, আমরা বলি যাওয়া-আসার ঘর (কাম অ্যান্ড গো রুম) বা দরকারের জন্য ঘর (রুম অফ রিকোআরমেন্ট)

হ্যারি কৌতূহলী হয়ে বললো–মানে?

–কারণ, খুব কম লোকে জানে। ডব্বির কথার মধ্যে কোনও পরিহাস নেই। যখন প্রয়োজন হয় সেটা থাকে, প্রয়োজন না থাকলে থাকে না। কিন্তু যখন থাকে তখন যে থাকবে তার দরকার মতো সাজানো গোছানো হয়। ডব্বি সেই ঘরটায় থেকেছে স্যার, এলফ খুব চাপা গলায় লাজুকতার সঙ্গে বললো, (যেন সেখান থেকে ঘোরতর অপরাধ করেছে। ওই আমাদের উইস্কি যখন প্রচুর মদ খেয়ে বেসামাল হয় তখন ডব্বি তাকে সেই ঘরে লুকিয়ে রাখে। বেশি বাটার বিয়র খাওয়ার একমাত্র প্রতিষেধক সেখানে খুঁজে পেয়েছে, ছোট বেড আছে যা ওর জন্য যথেষ্ট।

–ডব্বি জানে মি. ফিলচ ওখানে ঘরদোর সাফ করবার জিনিসপত্রও পেয়েছেন। আর…

–তা তোমার যদি বাথরুমের দরকার হয়? হ্যারি বললো। সহসা ওর মনে পড়ে গেলো গত ক্রিস্টমাসে ইয়ুল বলের সময় চেম্বারপট আছে।

–ডব্বি জানে আছে স্যার, ডব্বি বললো, দারুণ আশ্চর্যজনক মজার ঘর স্যার।

–সেই ঘরটা সম্বন্ধে কারা কারা জানে? হ্যারি চেয়ারে টান টান হয়ে বসে বললো।

–সামান্য কিছু লোক, স্যার। যখন লোকদের খুব প্রয়োজন হয় তখন, কিন্তু পরে প্রায়ই সেটাকে খুঁজে পায় না, কারণ তারা জানে না যে সেই ঘরটা প্রয়োজন হলে মানুষের ডাকের অপেক্ষায় থাকে।

–দারুণ বলেছো তো, হ্যারি বললো। কথা বলার সময় উত্তেজনায় ওর বুকের ভেতরটা ছটফট করে। খুব ভাল খবর দিয়েছে ডব্বি, কবে তুমি সেটা আমাকে দেখাতে পারবে?

–যেকোনো দিন হ্যারি পটার স্যার, ডব্বি খুব উৎফুল্ল হয়ে বললো। হ্যারির উৎসাহ দেখে ও অসম্ভব খুশি, যদি স্যার ইচ্ছে করেন তো আজই দেখতে পারেন।

হঠাৎ হ্যারির মনে হলো, ডব্বির সঙ্গে ঘরটা দেখে আসে। ও অদৃশ্য হবার আলখেল্লাটা ঘর থেকে আনতে যাবে ঠিক তখন অনেকটা হারমিওনের মতো গলার স্বর ওর কানে ভেসে এলো… রেকলেস… বহুবার ওর কানে কথাটা ভেসে এসেছে। যাই হোক খুব দেরি হয়ে গেছে, স্নেইপের প্রবন্ধ শেষ করতে হবে।

–আজ থাক ডব্বি, হ্যারি চেয়ারে আরাম করে বসে অনিচ্ছাসহকারে বললো ঘরের ব্যাপারটা খুবই প্রয়োজনীয়, আমি হেলাফেলা করে উড়িয়ে দিচ্ছি না। কোনও জিনিস ঠিকমতো গুছিয়ে পরিকল্পনা না করে করা ঠিক নয়। যাকগে তুমি আমাকে বল সেই ঘরটা ঠিক কোথায় আর সেটা কেমন করে আমরা আমাদের দরকারি কাজের জন্য পেতে পারি।

***

বৃষ্টি! বৃষ্টি! বৃষ্টি থামে না। মাঠ-ঘাট সব জলে ভেসে গেছে। বাইরে যেসব ক্লাস হবার কথা সেগুলো ঘরের ভেতর হচ্ছে। কেয়ার অফ ম্যাজিক্যাল ক্রিচারস ও ঘরের মধ্যে হচ্ছে। অ্যাঞ্জেলিনা বাধ্য হয়ে কিডিচ প্র্যাকটিস বাতিল করে দিয়েছে।

হারমিওনকে, হ্যারি বললো, ভাল কথা আজ রাত আটটার সময় এক জায়গায় আমাদের প্রথম মিটিং-এর ব্যবস্থা করেছি, ট্যাপেস্টরি অফ বার্নাবাসের বিপরীতে সাত তলায়। তুমি কেটি আর অ্যালিসাকে জানিয়ে দেবে?

কথাটা শুনে হারমিওন অবাক হয়ে গেলেও বললো, আচ্ছা জানিয়ে দেবো। হ্যারির খুব ক্ষিধে পেয়েছে–অর্ধভুক্ত সসেজ আর ম্যাশ খেতে লাগলো গোগ্রাসে। খাওয়ার শেষে পামকিন জুসের গেলাস তুলতে গিয়ে দেখলো হারমিওন ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে।

হ্যারি বললো, কী ব্যাপার?

–ডব্বির প্ল্যান সব সময় ঠিক নাও হতে পারে। গতবারে তোমার হাটের হাড়ির কথা মনে নেই?

–ওই ঘরটা কিন্তু ডব্বির আইডিয়া নয় বলতে পারো। ডাম্বলডোর জানেন, ইয়ুল বলের সময় আমাকে ঘরটা সম্বন্ধে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

হারমিওন শুনে আশ্বস্ত হলো।

–ডাম্বলডোর তোমাকে বলেছিলেন?

–এই কথায় কথায়, কাঁধ ঝাঁকিয়ে হ্যারি বললো।

 –তাহলে তো ঠিকই আছে, হারমিওন বললো।

ওর কথা শুনে মনে হলো ওর কোনও আপত্তি নেই।

তারপর হ্যারি, রন আর হারমিওনের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে যারা হাসমিডে সই করেছিলো তাদের খুঁজে বেড়িয়ে সন্ধেবেলা কোথায় সকলে একত্রিত হবে তার খবর দিলো। জিনি চো চ্যাংকে খবর দিয়েছে শুনে হ্যারি হতাশ হলো। ওর ইচ্ছে ছিলো ওকে ও নিজে খবর দেবে। যাই হোক ডিনারের শেষে জানতে পারলো সকলেই খবর পেয়ে গেছে।

সন্ধে সাড়ে সাতটার সময় হ্যারি, রন, হারমিওন, গ্রিফিন্ডরের কমনরুম থেকে বেরোলো। হ্যারির হাতে পুরনো একটা পার্চমেন্ট। এতে লেখা কেবলমাত্র ফিফথ। ইয়ারের ছেলে–মেয়েরা রাত নটা পর্যন্ত বাইরে থাকতে পারে। ওদের লুকিয়ে বেরোতে হলো। সামান্য নার্ভাস হয়ে সেই আটতলার দিকে ওরা চললো।

ওরা দেখতে লাগল সকলে এসেছে কিনা।

সিঁড়ির শেষ ধাপে পৌঁছে হ্যারি পার্চমেন্টটা খুলে বললো, ধরো, তারপর ওর ম্যাজিক ওয়ান্ড ছুঁইয়ে বললো, প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমরা কোনও অন্যায় কাজ করবো না।

হ্যারি হারমিওনকে পার্চমেন্টটা দিয়ে বললো–ধরো।

 জাদুদণ্ড ছোঁয়াতেই হোগার্টসের একটা মানচিত্র ধীরে ধীরে ফুটে উঠলো। তারপর ছোট ছোট বিন্দু। সেই চলমান বিন্দুর পাশে লেখা রয়েছে কিছু মানুষের নাম এবং তারা কোথায় রয়েছে।

হ্যারি মানচিত্রের কালো বিন্দু দেখে বললো, ফিল তাহলে তিনতলায় আছে। আর মিসেস বিনস পাঁচতলায়।

হারমিওন রুদ্ধশ্বাসে বললো–আমব্রিজ?

হ্যারি কালো বিন্দুর পাশে নাম দেখতে দেখতে বললো–অফিসে। থাকগে চলে যাওয়া যাক।

ডব্বি যে জায়গাটা বলেছিলো সেদিকে ওরা জোরে জোরে হাঁটতে লাগলো। ডবির কথা মতো দেখলো একটা লম্বা দেয়াল। ঠিক তার বিপরীতে একটা কারুকার্যকরা পরদা (ট্যাপেস্ট্রি)। বনোবাসের তৈলচিত্র…।

–ঠিক আছে। ডব্বি বলেছিলো, তিনবার দেওয়ালটা প্রদক্ষিণ করতে। মনের মধ্যে আমরা কি চাই তা গেঁথে রাখতে হবে। আমরা একটা জায়গা চাই যেখানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা শিখতে পারি সেখানে আমাদের কেউ খুঁজে পাবে না। হ্যারি মনে মনে বললো।

ওরা তাই করলো। দেওয়ালে দারুণ পালিশ করা একটা চকচকে দরজা দেখতে পেলো। রন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দরজাটার দিকে তাকিয়ে রইলো। হ্যারি দরজাটার পেতলের হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে খুলে দেখলো বিরাট একটা ঘর। ঘরে টর্চের আলো জ্বলছে। অনেকটা এক তলার অন্ধকার পাতাল ঘরের মতো। ঘরের দেওয়ালে কাঠের তৈরি বইয়ের তাক। চেয়ারের বদলে মেঝেতে সিল্কের বড় বড় লাল কুশন পাতা রয়েছে। ঘরের শেষ প্রান্তে নানা রকম যন্ত্রপাতিতে ভরা স্লিকেস্কোপ, সিক্রেসি সেন্সরস, আর একটা বিরাট চিড় খাওয়া ফোগ্লাস। ওইরকম যন্ত্রপাতি নকল মুডির অফিসে হ্যারি দেখেছিলো।

রন উল্লসিত হয়ে বললো–আমরা যখন স্টানিং শিখবো তখন যন্ত্রপাতিগুলো মনে হয় দরকার হতে পারে।

ওরা ঘরের যা যা দেখে, তাতেই উল্লসিত আর আশ্চর্য হয়ে যায়। ঘরে প্রয়োজনীয় যা কিছু রয়েছে সে বিষয়ে হ্যারির কোন সন্দেহ নেই। অপ্রয়োজনীয় জিনিস একটাও নেই।

সব দেখা সাঙ্গ হলে হারমিওন বললো, আমাদের এই সংগঠনের একজন দলপতি ঠিক করতে হবে।

চো কথাটা শুনে এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে বললো, হ্যারি।

হারমিওন বললো, ঠিক আছে, তবে দলপতি নির্বাচন ভোটের মাধ্যমে করতে হবে। যারা যারা হ্যারিকে দলপতি করতে চাও তারা হাত তোলো। সকলেই হাত তোলো। জ্যাকেরিয়া স্মিথও হাত তুললো, যদিও মনে হলো ও অনিচ্ছাকৃতভাবে হাত তুললো।

হ্যারি, হারমিওনের দিকে তাকালো এবং বললো, আমাকে নেতা নির্বাচনের জন্য সকলকে ধন্যবাদ। ওর মুখটা অসম্ভব জ্বালা করতে লাগলো।

–হ্যাঁ, তারপর হারমিওন?

–আমাদের সংগঠনের একটা নাম দরকার, হারমিওন মাথা উঁচু করে বললো, আমাদের দলের টিম স্পিরিট, একতা খুবই দরকার। কী নাম রাখা যায় বলো তোমরা।

অ্যাঞ্জেলিনা বললো, এন্টি আমব্রিজ লীগ।

ফ্রেড বললো, এমন একটা নাম যা শুনলে বুঝতে পারা যাবে না আমাদের কাজকর্ম।

চো বললো, ডিফেন্স এসোসিয়েশন? সংক্ষেপে ডি.এ তাহলে কেউ বুঝতে পারবে না। ডি.এ বলতে ডাম্বলডোরের আর্মিও বোঝাবে মন্ত্রণালয়ের এটাই ভয়, তাই না?

সকলেই মেনে নিলো এবং হাসতে লাগলো।

–বেশ তাহলে ডি-এর ব্যাপারে হাত ভোলো। হারমিওন সকলের মুখের দিকে হাঁটু গেড়ে কুশনে বসে হাত গুণতে গুণতে বললো, বাঃ সকলেই দেখছি ডি.এ নামের সঙ্গে একমত। বেশ মোসান পাসড়!

হারমিওন পার্চমেন্টে লেখা নাম ও দস্তখতের ওপোর বড় বড় অক্ষরে লিখলো:

ডাম্বলডোরস আর্মি

হ্যারি বললো, ঠিক আছে, তাহলে আজ থেকে আমরা অনুশীলন শুরু করি? আমি ভাবছিলাম প্রথমেই আমরা এক্সপেলি আর্মস শুরু করি। তোমরা আশাকরি ডিসআর্মিং চার্মস জানো। আমি জানি এটা বেসিক; কিন্তু তাহলেও আমি দেখেই এই চার্ম খুবই কার্যকরী।

–ওহ প্লিজ, জ্যাকেরিয়া স্মিথ দুহাত বুকের ওপোর জড়ো করে চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে বললো–আমার মনে হয় একসপেলি আর্মস ইউ–নো–হুঁর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা বিফল হবে। তাই না?

আমি ওর বিরুদ্ধে ওই চার্মস ব্যবহার করেছি, হ্যারি শান্তভাবে বললো। ওই চার্মস গত জুন মাসে আমার জীবন রক্ষা করেছে।

–তুমি যদি মনে করো ওই চার্মস শেখার তোমার প্রয়োজন নেই, তাহলে শিখো না; হ্যারি বললো। স্মিথ চুপ করে রইলো। অন্য ছেলে–মেয়েরাও।

–ঠিক আছে, হ্যারি বললো। সকলেই ওর দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য ওর গলাটা সামান্য শুকিয়ে গেলো।

–আমার মনে হয় আমাদের এখানে যারা এসেছে তারা দুজনে মিলে এক একটা দল গঠন করে প্র্যাকটিস শুরু করি।

ওর কথা শুনে সকলেই উঠে দাঁড়িয়ে দুজনে মিলে এক একটা দল করলো। দুর্ভাগ্যবসতঃ নেভিল পড়ে রইলো, ওর পার্টনার নেই।

হ্যারি বললো–বেশ, তুমি আমার সঙ্গে প্র্যাকটিস করতে পারো। এক দুই তিন বলা শেষ হলেই সমস্ত ঘরটা এক্সপেলি আর্মস শব্দে মুখরিত হলো। ওদের হাতের জাদুদণ্ড ঘরের মধ্যে চতুর্দিকে উড়তে লাগল। ভুল মন্ত্র তাকের বইতে আঘাত করতে লাগলো। হ্যারি নেভিলের চেয়ে বেশি সরগর। ওর জাদুদণ্ড হাত থেকে ছিটকে ঘরের সিলিং-এ গিয়ে লাগলো, ফুলঝুড়ির মতো আগুন বেরোতে বেরোতে বই-এর তাকে আঘাত করলো। হ্যারি সামনিং চার্মসে জাদুদণ্ড হাতে ফিরিয়ে আনলো। বেসিক শুরু করার কথা বলে–অবস্থা দেখে হ্যারি ভাবলো ঠিকই বলেছিলো। দারুণ হট্টগোল, অনেকেই তাদের অপোনেন্টসকে ডিসআমিং করতে পারছে না শুধু আত্মরক্ষার জন্য লাফালাফি করে চলেছে।

হ্যারিকে সামান্য অন্যমনস্ক দেখে নেভিল বললো, একত্সপেলি আর্মাস, ব্যাস তখনই হ্যারির হাত থেকে জাদুদণ্ড উড়তে শুরু করলো।

নেভিল খুশিতে উপচে পড়ে লাফাতে লাফাতে বললো, আমি পেরেছি। পেরেছি, এর আগে আমি কখনোও পারিনি এখন পেরেছি।

হ্যারি বললো, খুব ভাল। কিন্তু ওকে বললো না যে তোমার অপোনেন্ট আমার মতো জাদুদণ্ড হাল্কাভাবে ধরে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকবে না। শোনো নেভিল এবার তুমি রন, অথবা হারমিওনের সঙ্গে লড়বে? বেশিক্ষণ না কয়েক মিনিট, তাহলে আমি দেখতে পারি অন্যরা কেমন করছে?

হ্যারি ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলো জ্যাকেরিয়া স্মিথ অদ্ভুত কিছু কাণ্ডকারখানা করছে। যততবারই ও অ্যানথনি গোল্ড স্টেইনের দিকে ওর জাদুদণ্ড তুলছে ততোবারই ওর হাত থেকে দণ্ডটা উড়ে যাচ্ছে। অথচ অ্যানথনির মুখ থেকে একটিও কথা বেরোচ্ছে না। হ্যারির মিস্ট্রিটা জানতে বেশি ভাবতে হলো না। ফ্রেড আর জর্জ কএক ফিট দূরে দাঁড়িয়েছিল আর পালা করে স্মিথের জাদুদণ্ড উড়িয়ে দিচ্ছিল।

হ্যারি ধরতে পেরেছে বুঝতে পেরে জর্জ বোকাবোকা হেসে বললো, দুঃখিত হ্যারি, ওর কাণ্ড দেখে আমি চুপ থাকতে পারছিলাম না।

হ্যারি হাসলো, তারপর ঘুরে ঘুরে সকলের ভুল শুধরে দিতে লাগলো।

–এবার তোমরা থামো।

ভাবলো একটা হুইসিল হলে ভালো হতো। ভাববার সঙ্গে সঙ্গে দেখলো বইয়ের তাকে একটা হুইসিল রয়েছে। ও হুইসিলটা নিয়ে এসে খুব জোরে বাজাতেই সকলে থেমে গেলো।

হ্যারি বললো তোমরা সকলেই মোটামুটি ভালো করেছে তবে আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। তাদের ভুল শুধরে দিলে জ্যাকেরিয়া স্মিথ ওর দিকে তাকাতেই হ্যারি বললো, এসো আর একবার করি।

হ্যারি সারাঘরে ঘুরে বেড়াতে লাগলো দারুণ উৎসাহে। মাঝে মাঝে দুএকজনের সামনে দাঁড়িয়ে ওদের সাজেসান দিতে লাগলো। একটু একটু করে সকলেই মোটামুটি ভালোর দিকে পা বাড়ালো।

ও ইচ্ছে করে চোর দিকে গেলো না। সে সকলের কাছে যাচ্ছে অথচ ওর (চোর) কাছে যাচ্ছে না। খারাপ দেখায়, কতোটা সময় আর ওকে না দেখার ভান করা যায়।

–আরে না, চো বললো, হ্যারিকে কাছে আসতে দেখে। এক্সপেলিয়ারমিয়াস নয়, হবে একসপেলি মেলিয়াস! আমি অতি দুঃখিত মেরিয়েটা!

হঠাৎ ওর রোবের হাতায় আগুন লেগে যেতে ও নিজেই আগুন নিভিয়ে দিলো। এমনভাবে হ্যারির দিকে তাকালো যেন আগুন লাগার জন্য হ্যারি দায়ী।

চোও হ্যারিকে বিষণ্ণ মুখে বললো–আমি সব ঠিকঠাক করছিলাম। হঠাৎ আমার কাছে এসে সব গড় বড় করে দিলে হ্যারি।

হ্যারি মিথ্যে বললো–ঠিকইতো করছিলে; কিন্তু চো যখন ওর দুচোখ তুলে হ্যারির দিকে তাকালো হ্যারি বললো, না… হা… একটু যেন গোলমেলে হচ্ছিলো, তবে আমার বিশ্বাস তুমি ভালই করবে। আমি দূর থেকে তোমার পারফরমেন্স দেখছিলাম।

কথাটা শুনে চো হাসলো। খুব সম্ভব ওদের কথাবার্তা শুনে ওর বন্ধু মেরিয়েটার ভালো লাগলো না। গটগট করে অন্যদিকে চলে গেলো।

চো ফিসফিস করে বললো, ওর ব্যবহারে কিছু মনে করবে না, আসলে ও আমার পার্টনার হতে চায়নি, আমি ওকে জোর করে এনেছি। ওর মা-বাবা আমব্রিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু করতে মানা করে দিয়েছেন। তুমি তো জানো ওর মা মিনিস্ট্রিতে চাকরি করেন।

হ্যারি বললো–তোমার বাবা-মা?

মা-বাবা আমাকেও আমব্রিজের বিরুদ্ধে কিছু করতে মানা করেছেন। চো বললো বেশ গর্বিতভাবে। তাছাড়া সেড্রিক হত্যার পর আমি ইউ–নো–হুঁর বিরুদ্ধে যাবো না সেটাও চান না।

কথাগুলো বলতে বলতে ওর গলা ধরে গেলো, মুখ শুকিয়ে গেলো, দুজনেরই মুখে কথা নেই। টেরি বুটস-এর জাদুদণ্ড হ্যারির কান ঘেঁষে অ্যালিসিয়া স্পিনেটের নাকে এসে লাগলো।

হ্যারির পেছনে লুনালাভগুড দাঁড়িয়েছিলো। বললো–আমার বাবা-মা কোনও অ্যান্টি মিনিস্ট্রি কাজকর্ম হলে সমর্থন করেন। ওদিকে জাস্টিন ফিন ফ্লেচলের রোব হাওয়াতে উড়ে মাথায় জড়িয়ে গেছে, সেটা খোলার চেষ্টা করছে। আবার বলেন ফাজকে খুব বিশ্বাস করেন, যেমন ফাজ কত গবলিনকে মেরে ফেলেছেন। আবার তিনি ডিপার্টমেন্ট অফ মিস্ট্রিজকে মারাত্মক বিষ তৈরি করতে বলেন, যারা তাকে সমর্থন করে না তাদের সেই বিষ পাঠিয়ে দেন। তারপর তার উমগুবুলার শাসকিল্টার তো আছেই। হ্যারি চাপা গলায় বললো, ওর সঙ্গে কোনও আলাপ আলোচনা নয়। চো কিছু প্রশ্ন করতে যাচ্ছিলো তখন হ্যারি ওকে থামিয়ে দিলো। চো হাসলো।

ঘরের এক কোণা থেকে এসে হারমিওন হ্যারিকে বললো–হ্যারি, কটা বেজেছে সে খেয়াল আছে?

হ্যারি মুখ নামিয়ে ওর ঘড়ির দিকে তাকালো। সাড়ে দশটা? তার মানে আর দেরি করলে অসুবিধেতে পড়বে, ধরা পড়ে যাবে। ফিলচ মোটেই সুবিধের নয়। হ্যারি হুইসিল বাজাতেই সকলে থেকে গেলো, কারও মুখে আর একত্সপেলিআর্মস শোনা গেলো না।

হ্যারি বললো–বাঃ খুব ভাল। আজ অনেকটা সময় আমরা প্রাকটিস করেছি, এখন আমাদের এখান থেকে যেতে হবে।

–আগামী সপ্তাহে একই সময়ে একই জায়গায়।

অনেকেই সাতদিন অপেক্ষা করতে চায় না। অ্যাঞ্জেলিনার অসুবিধে কিডিচ প্র্যাকটিস!

হ্যারি বললো, ঠিক আছে আগামী বুধবারে একই সময়ে। সেদিন আমরা সকলের সঙ্গে বসে, সুবিধে–অসুবিধে দেখে ডেট শিট বানাব। কথাটা বলে ও মারাউডাস মানচিত্র দেখে সাততলায় কোন টিচার ঘুরছেন চেক করে, বন্ধুদের তাদের ঘরে যেতে বলে মানচিত্রের ছোট ছোট কালো ডটের ওপর তাকিয়ে দেখে নিলো ওরা তাদের ডরমেটরিতে ঠিকমতো পৌঁছালো কি না। বিভিন্ন হাউজের আলাদা আলাদা পথ।

ওরা সবাই চলে গেলে ঘরে রইলো শুধু হ্যারি, হারমিওন ও রন।

–কমনরুমে যাবার সময় ওরা দোষ-ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো। হ্যারির মন কিন্তু সেদিকে নয়। ওর একটা চোখ মানচিত্রের কালো বিন্দুতে। চোর কথা ভাবতেই ও একটু নার্ভাস হয়ে গেলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *