১৭. এডুকেসনাল ডিক্রি নাম্বার টুয়েন্টি-ফোর

১৭. এডুকেসনাল ডিক্রি নাম্বার টুয়েন্টি-ফোর

অন্যবার উইকএন্ডের রাতটুকু যেমন একঘেয়ে বিরক্তিকর মনে হতো, হ্যারির এবার তা মনে হলো না। রোববার ও আর রন ওদের হোমওয়ার্ক আবার নতুন করে দেখতে লাগলো। শরতকাল প্রায় শেষ হতে চলেছে। রোদের তেজ কমে আসছে একটু একটু করে। বাইরে বেরিয়ে যেটুকু উপভোগ করা যায়। কমনরুমে অলস হয়ে বসে না থেকে ওরা বই খাতা নিয়ে বাইরে গিয়ে লেকের ধারে বিরাট এক বিচ গাছের ছায়ায় বসে পড়াশুনা করতে লাগলো। হারমিওন কখনও কাজ ফেলে রাখে না। অনেক আগেই ওর হোমওয়ার্ক শেষ হয়েছে। উল ও কাটা এনে শান্ত আরামদায়ক পরিবেশে বসে বুনতে লাগলো ও। ওকে অনেক টুপি ও স্কার্ফ বানাতে হবে এলফদের জন্য।

হ্যারি জানে তারা আমব্রিজ ও মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধচারণ করছে। ও মনে মনে খুব আনন্দ আর গর্ববোধ করতে লাগলো। এখন ও বিদ্রোহীদের নেতা। ও মনে মনে ভাবে–শনিবার অনেকেই ওর কাছে আসবে। ও তাদের ডার্কার্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শেখাবে। যারা শিখবে তারা ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে। চো বলেছে আসবে। ট্রি-উইজার্ড টুর্নামেন্টের মত ওকে প্রশংসা করবে, লোকেরা ওকে আর রহস্যময়, অপার্থিব, ভুতুড়ে মনে করবে না। সোমবার সকালে ও খুবই উফুল্ল হয়ে রইলো।

ও আর রন ডরমেটরি থেকে নিচে নামতে নামতে অ্যাঞ্জেলিনার আইডিয়া স্লথ গ্রিপ রোল সম্বন্ধে ভাবছিলো। নতুন একটা কাজের প্রস্তুতি। কথাটা হয়েছে রাতে কিডিচ খেলার মাঠে। ওরা রৌদ্রজ্জ্বল কমন রুমে গিয়ে দেখলো কয়েকটি ছেলে মেয়ে একত্র হয়ে কিছু আলোচনা করছে, আরও দেখতে পেলো গ্রিফির-এর বোর্ডে বিরাট একটা নোটিশ লাগানো রয়েছে। নোটিশের কাগজটা এত বড় যে বাকি সব ছোট ছোট নোটিশ ঢেকে গেছে। নানা রকমের সব নোটিশ। নতুন নোটিশটা বড় বড় কালো অক্ষরে ছাপা। তার তলায় অফিসিয়াল সিল। সিলের মধ্যে একজনের বাঁকাচোরা দস্তখত।

হোগার্টসের উচ্চ ক্ষমতাপ্রাপ্ত তদন্তকারীর আদেশ

এতদ্বারা সমস্ত ছাত্র সংগঠন, সমিতি, খেলোয়াড়ী দল, সংঘ এবং
ক্লাবগুলোকে এখন থেকে বাতিল করা হইল।

সেই সব সংগঠন, সমিতি, দল, সংঘ ও ক্লাবগুলো তিন বা ততোধিক
ছাত্রদের নিয়মিত সমাবেশ দ্বারা সীমাবদ্ধ করা হইতেছে।

নতুন করিয়া ওইগুলো গঠনের অনুমতি
উচ্চ তদন্তকারীর নিকট প্রাপ্ত হইতে পারে
(প্রফেসর আমব্রিজ)।

উচ্চ তদন্তকারীর অনুমতি ব্যতিরেকে কোন ছাত্র সংগঠন, সমিতি, দল
অথবা ক্লাব গঠন করতে পারবে না।

কোন ছাত্র যদি কোন ছাত্র সংগঠন, সমিতি, দল অথবা ক্লাব উচ্চ
তদন্তকারীর বিনা অনুমতিতে গঠন করে তাহলে
তাহাকে স্কুল হইতে বহিষ্কার করা হইবে।

এই আদেশ এডুকেশনল ডিক্রির চব্বিশ নাম্বর ধারা
অনুসারে বলবৎ করা হইল। স্বা
ক্ষর ডলোরেস জেন আমব্রিজ, উচ্চ তদন্তকারী

হ্যারি ও রন, কিছু দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের মাথা ডিঙিয়ে নোটিশটা পড়লো।

একজন তার বন্ধুর কাছে জানতে চাইল এর মানে কর্তৃপক্ষ কি গবস্টোন ক্লাব বন্ধ করে দিতে চাইছে?

–আমার তো ধারণা তোমাদের গবস্টোন যেমন আছে তেমনই থাকবে, রন ব্যঙ্গ করে বললো–আমাদের তো মনে হয় না আমরা ভাগ্যবান। মনে করো হ্যারি? দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্ররা তাড়াতাড়ি চলে গেলো।

হ্যারি আবার নোটিশটা ভাল করে পড়লো। শনিবার থেকে মনের মধ্যে যে আনন্দ জমা হয়েছিলো তা মিলিয়ে গেলো। ভেতরটা ওর রাগে টগবগ করে ফুটতে লাগলো।

এটা মোটেই কাকতালীয় ব্যাপার নয়, ও মুষ্টিবদ্ধ করে বললো, ও নিশ্চয়ই জানে।

রন এক মুহূর্ত দেরি না করে বললো না ও জানে না। পাবে সেদিন অনেকে ছিলো। সকলকে তো আমরা চিনি না, জানি না। তাদের মধ্যে কেউ হয়তো আমাদের কথা শুনে দৌড়ে আমব্রিজের কানে তুলেছে। ও ভেবেছে খবরটা দিলে বাহবা পাবে।

–জ্যাকেরিয়া স্মিথ? রন সঙ্গে সঙ্গে বললো, নিজের হাতে নিজে ঘুষি মেরে বললো আমার তো মাইকেল কর্নারকে সন্দেহ হয়। ও কেমন যেন সন্দেহভাজন চোখে আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল।

–কে জানে, হারমিওন নোটিশটা দেখেছে কি না, হ্যারি ডরমেটরির মেয়েদের দলের দিকে তাকাতে তাকাতে বললো।

–চলো, ওকে খবরটা দেওয়া যাক।

ওরা স্পাইরেল সিঁড়ি ধরে নিচে নামতে লাগলো। ছ নং সিঁড়ির পা-দানীতে পা ফেলতেই বিকট এক শব্দে সিঁড়িটা কেঁপে কেঁপে উঠতেই রন সভয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকালো। আর একটু হলেই রন হ্যারির ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে যেতো।

হ্যারি রনকে টেনে ধরে হাসতে হাসতে বললো। দুটি মেয়ে পাথরের সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো।

মেয়েদের ডরমেটরিতে কারা যাচ্ছে রে, একজন বললো।

–আমি, রন বললো মেয়েটিকে। আশ্চর্য মেয়েরা আমাদের ডরমেটরিতে আসতে পারে, আর আমরা পারি না?

কথাটা রন হারমিওনকে বললো।

হারমিওন রনের কথা শুনে বললো, আইন, পুরনো দিনের আইন। অ্যা হিস্ট্রি ইন হোগার্টসে লেখা আছে ছেলেরা মেয়েদের চাইতে কম বিশ্বাসযোগ্য। যাকগে বলল, আমার কাছে যাচ্ছিলে কেন।

ওকে নোটিশ বোর্ডের দিকে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে বললো, এটা পড়েছে?

আমব্রিজের নোটিশটা আদ্যপ্রান্ত পড়ার পর হারমিওনের চোখ দুটো লাল হয়ে গেলো। মুখের ভাবও বদলে গেলো।

রন রেগেমেগে বললো, আমাদের মধ্যে কেউ আমব্রিজের কানে খবরটা নিশ্চয়ই পৌঁছে দিয়েছে।

হারমিওন চাপাস্বরে বললো, আমাদের মধ্যে কেউ না।

–তুমি দারুণ সাদাসিধে, রন বললো, তুমি সৎ ও বিশ্বাসযোগ্য বলে সকলকেই তাই ভাবো।

–না আমাদের মধ্যে কেউ তা করেনি। আমি সই করানোর পার্চমেন্টে জিংকস লাগিয়ে দিয়েছিলাম, হারমিওন হতাশ হয়ে বললো।

কেউ দৌড়ে গিয়ে আমব্রিজকে খবরটা দিলে ধরে ফেলতে পারি। খবরটা যদি কেউ দিয়ে থাকে তাহলে তার কপালে দুর্ভোগ আছে। সে বা তাদের পরে অনুতাপ করতে হবে, হারমিওন বললো।

রন কৌতূহলী হয়ে বললো, কী হবে তাদের?

–হারমিওন বললো, মুখে তাদের আঁচিলে ভর্তি হয়ে যাবে। নাও চলো ব্রেকফাস্ট খেয়ে নেওয়া যাক। দেখি অন্যসব ছেলেমেয়েদের প্রতিক্রিয়া কি। গ্রিফিন্ডার ছাড়া বাকি সব হাউজের নোটিশ বোর্ডে নিশ্চয়ই লাগিয়ে দিয়েছে?

গ্রেট হলে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ওরা জানতে পারলো সেই নোটিশ বা আদেশ একমাত্র গ্রিফিন্ডর টাওয়ারে নয় সব হাউজের টাওয়ারে দেওয়া হয়েছে। হ্যারি, রন আর হারমিওনকে হলে ঢুকতে দেখে নেভিল, ডিন, ফ্রেড, জর্জ আর জিনি সমস্বরে প্রশ্ন করলো, ওদের জেকে ধরলো।

–এই তোমরা নোটিশ বোর্ড দেখেছো?

–তোমরা ধরতে পেরেছে কার কাণ্ড?

 –এখন আমরা কি করবো?

ওদের প্রশ্ন হ্যারিকে। হ্যারি এধার-ওধার তাকিয়ে দেখে নিলো কাছে পিঠে কোনও টিচার আছেন কি না।

ও শান্তস্বরে বললো, একটা কিছু করতে হবে বৈকি।

হ্যারির পিঠে চাপড় মেরে জর্জ বললো, জানি তুমি এইরকম কথা বলবে।

-প্রিফেক্টদের সম্বন্ধেও একই কথা? ফ্রেড, রন আর হারমিওনের মুখের দিকে তাকালো। হারমিওন সাধারণভাবেই বললো, অবশ্যই।

গ্রেট হল ছেড়ে হিস্ট্রি অফ ম্যাজিক ক্লাশে যাবার আগে শনিবার হগসমিড়ে যারা যারা এসেছিলো, দস্তখত করেছিলো তাদের কাছ থেকে তেমন সাড়া বা প্রতিরোধের ছাপ দেখতে পেলো না। এমনকি চোকেও না। ও নির্বিকার চিত্তে গল্প করছে হ্যারি দেখলো। ওরা কী তাহলে আমব্রিজের অর্ডার পড়ে ভয় পেয়ে গেছে?

অ্যাঞ্জেলিনাকে আসতে দেখলো। ওর চোখ মুখ শুকনো।

–হ্যারি, রন, শোনো! আমাদের কিডিচ ক্লাব তাহলে বন্ধ হয়ে যাবে? আমাদেরও কী নতুন করে অনুমতি নিতে হবে? অ্যাঞ্জেলিনা দুঃখভরা কণ্ঠে বললো।

–কী বললে? হ্যারি উত্তপ্ত স্বরে বললো। রন বললো, তাইতো মনে হয়।

–শোনো, আমব্রিজের সঙ্গে তর্কাতর্কি করে লাভ নেই। প্লিজ তুমি মাথা গরম করবে না। ঝগড়াঝাটি করলে আমাদের কিডিচ ক্লাব উঠে যাবে। আর খেলতে পারবো না।

অ্যাঞ্জেলিনার কাঁদ কাঁদ দুচোখের দিকে তাকিয়ে হ্যারি বললো, ঠিক আছে, ঠিক আছে চিন্তা করবে না। আমি চুপ করে থাকব।

রন প্রফেসর বিনসের ক্লাশের দিকে যেতে যেতে বললো–আমি বাজি ধরতে পারি আমব্রিজ হিস্ট্রি অফ ম্যাজিকের ক্লাশে বসে আছেন। বিন্‌সের ক্লাশ উনি এখনও ইনসপেক্ট করেননি।

কিন্তু রন ভুল করেছে। ঘরে ঢুকে দেখলো প্রফেসর বিনস একাই বসে রয়েছেন, আমব্রিজ নেই। বসে বসে বিনস একঘেয়ে জায়েন্ট ওয়ার পড়ছেন।

হ্যারি ক্লাশে ঢুকে চুপ করে বসে রইলো। কানেই যাচ্ছে না বিনস কি বলে চলেছেন। হারমিওনের কুনুইয়ের গোত্তা খেয়েও হ্যারি আপন মনে পার্চমেন্টটা দেখে চলেছে। হঠাৎ হারমিওন বেশ জোরে গোত্তা দিলো।

–কী হয়েছে? হ্যারি রেগে মেগে বললো।

 –জানালার দিকে তাকাও।

হ্যারি জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলো হেডউইগ জানালার কোলে বসে রয়েছে। ওর এক পায়ে একটা চিঠি বাঁধা। হ্যারি সামান্য রেগে গেলো। ক্লাশ রুমে চিঠিটা না দিলে চলতো না? সকালে তো ব্রেকফাস্ট খাচ্ছিলো সেখানে দিতে পারতো! ওর ক্লাশের বন্ধুরা হেডউইগের দিকে আঙ্গুল দেখাতে লাগলো।

হ্যারি শুনতে পেলো, ল্যাভেন্ডর বললো, উঃ ভীষণ সুন্দর প্যাঁচাটা, ওকে আমার খুব ভাল লাগে।

হ্যারি প্রফেসর বিনসের দিকে তাকালো। প্রফেসর বিনস একনাগাড়ে নোটস পড়ে যাচ্ছেন। এমন তন্ময় হয়ে পড়ছেন যে ক্লাশের ছেলে–মেয়েরা যে তার নোট পড়ার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না, সেদিকে তার হুঁস নেই।

হ্যারি নিঃশব্দে ওর চেয়ার ছেড়ে উঠে মাথা নিচু করে (যাতে প্রফেসর বিনসের চোখে না পড়ে) জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর জানালার পাল্লাটা ধীরে ধীরে খুলে হেডউইগের দিকে তাকালো। ও আশা করেছিলো হেডউইগ যেমন চিঠি বাধা পাটা তুলে দেয় তেমনি দেবে, তারপর চিঠিটা নেবার পর আউলারিতে উড়ে যাবে। কিন্তু জানালাটার পাল্লা খোলার সঙ্গে সঙ্গে হেডউইগ খোঁড়াতে খোড়াতে ঘরে ঢুকে ব্যথা পেয়েছি এমনিভাবে ডেকে উঠলো। হ্যারি আড়চোখে প্র, বিনসকে দেখলো। হেডউইগের কাতর স্বর যদি শুনতে পেয়ে থাকেন তাহলেই সর্বনাশ! ও ভয়ে ভয়ে হেডউইগকে কাঁধে চাপিয়ে যেমনিভাবে জানালার ধারে মাথা নামিয়ে কুঁজো হয়ে এসেছিলো তেমনিভাবে সিটে গিয়ে বসলো। তারপর কাঁধ থেকে হেডউহগকে কোলে নামিয়ে রেখে পা থেকে চিঠিটা খুলে নিলো।

চিঠি নেবার সময় ওর চোখে পড়লো হেডউইগের গায়ের পালকগুলো এলোমেলো, কেউ যেন টানা হ্যাঁচড়া করেছে। শুধু তাই নয় ওর একটা ডানা মুচড়ে দিয়েছে।

–ওকে কেউ মেরেছে, হ্যারি চাপা গলায় রন আর হারমিওনকে বললো। হারমিওন, হ্যারির কথা শুনে ওর যে ডানাটা নাড়াতে পারছিলো না সেটায় হাত ছোঁয়াতেই ও সামান্য লাফিয়ে উঠলো। ডানা থেকে গাদাগাদা পালক খষে পড়লো। ও হ্যারির দিকে রাগ রাগ চোখে তাকালো।

–প্রফেসর বিনস, হ্যারি খুব উঁচু গলায় বললো, ক্লাশের সব ছেলেমেয়েরা ওর দিকে তাকালো, আমার শরীর খারাপ লাগছে।

প্রফেসর বিনস তার নোটের খাতার ওপোর থেকে মুখ তুলে হ্যারির দিকে তাকালেন–একটু যেন আশ্চর্য হয়েছেন! ক্লাশরুম ভর্তি ছাত্র-ছাত্রী দেখে স্বাভাবিকভাবে বললেন, শরীর ভাল নেই? প্রফেসর বিনস হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললেন।

–না স্যার, হ্যারি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো। হেডউইগকে প্রফেসর যেন দেখতে না পান, তাই হাত ঘুরিয়ে পিছনে রাখলো।

–স্যার, আমার মনে হয় আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে।

–কি বললে, হাসপাতালে যেতে হবে? হা হা তাড়াতাড়ি যাও, প্রফেসর বিনস হকচকিয়ে বললেন।

ও হেডউইগকে কাঁধে চাপিয়ে ক্লাশের করিডোর দিয়ে দ্রুত চললো। হেডউইগকে এমনভাবে সঙ্গে নিয়ে চললো যাতে অধ্যাপক বিনসের চোখে না পড়ে। হেডউইগের চিকিৎসার জন্য প্রথমে ও হ্যাগ্রিডের কাছে যেতে পারতো, কিন্তু হ্যাগ্রিড কোথায় আছেন, কি করছেন কিছুই জানেন না। তারপরই অবশ্য রয়েছেন প্রফেসর গ্রাবলী প্ল্যাঙ্ক। আশা করা যায় উনি হেডউইগকে ঠিক করে দেবেন।

প্রফেসর প্ল্যাঙ্কের কটেজের জানালা দিয়ে উঁকি মেরে তাকে দেখতে পেলো না হ্যারি। খুব সম্ভব উনি ক্লাশ নিচ্ছেন। এদিকে হেডউইগের ব্যাথা সম্ভবত বেড়ে চলেছে তাই মাঝে মাঝে করুণভাবে ডেকে চলেছে। ক্লাশে না থাকলে নিশ্চয়ই প্রফেসর প্ল্যাঙ্ক স্টাফরুমে আছেন। কাঁধে বসে থাকা হেডউইগের কান্নার বিরাম। নেই।

স্টাফ রুমের সামনে দাঁড়াতে দুটো পাথরের গারগয়েলে (বৃষ্টির জল পড়ার নল) রাখা মূর্তির একজন বললো, এখানে কেন? এখন তো তোমার ক্লাশে থাকার কথা, তাই না?

হ্যারি সংক্ষেপে দৃঢ়স্বরে বললো–খুব দরকার আছে।

–আর্জেন্ট? সত্যি নাকি?

অন্য গারগয়েল খুব উঁচু গলায় বললো–ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে এসেছ?

হ্যারির ওদের কথা শোনার সময় নেই। বন্ধ ঘরের দরজা নক করলো। দরজা খুলতেই দেখলো ওর সামনে প্রফেসর ম্যাকগোনাগল।

–তোমার তো আরেকটি কয়েদ বাকি আছে। ম্যাকগোনাগল ওকে দেখা মাত্র বলে উঠলেন। আলোতে ওর চশমার মোটা কাঁচ দুটো ঝলসে উঠলো।

–না প্রফেসর, হ্যারি একটুও সময় নষ্ট না করে বললো।

–তা ভালই। জানতে পারি ক্লাশে তুমি নেই কেন?

দ্বিতীয় গারগয়েল বললো–বলছে খুব নাকি জরুরি।

–আমি প্রফেসর প্ল্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। প্যাচাকে দেখিয়ে বললো, খুব আঘাত পেয়েছে।

–কি বললে আঘাতপ্রাপ্ত প্যাচা?

ঠিক সেই সময় প্রফেসর প্ল্যাঙ্ক ম্যাকগোনাগলের পেছনে এসে দাঁড়ালেন। মুখে পাইপ। হাতে এক কপি ডেইলি প্রফেট।

হ্যারি হেডউইগকে দেখিয়ে বললো–হ্যাঁ। ও চিঠির কাজ শেষ করার পর আমার কাছে এসেছে। দেখুন স্যার ওর একটা ডানার অবস্থা।

প্রফেসর গ্রাবলি প্ল্যাঙ্ক দাঁত দিয়ে মুখের পাইপটা শক্ত করে চেপে হেডউইগকে হ্যারির কাধ থেকে নেবার সময় প্রফেসর ম্যাকগোনাগল তাকিয়ে রইলেন।

মুখের পাইপটা সামান্য নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন–মনে হয় একে কেউ আক্রমণ করেছিলো। থ্রেস্টালরা প্যাচাঁদের দেখলেই আক্রমণ করে কিন্তু হ্যাগ্রিড তো হোগার্টসের থ্রেস্টালদের ঠিক ঠিক শিক্ষা দিয়েছেন, ওরা তো এখানে তা করবে না।

হ্যারির থ্রেস্টালদের সম্বন্ধে কোনও মাথা ব্যথা নেই। ও জানতে এসেছে হেডউইগ ঠিক হবে কি না। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে হ্যারিকে দেখে বললেন–বলতে পারো পটার কতটা পথ এই প্যাচাটা অতিক্রম করেছে?

–আমার মনে হয় লন্ডন থেকে।

ম্যাকগোনাগলের দুটো ভুরু সরল রেখাতে পরিণত হলো। বুঝতে পেরেছেন লন্ডন মানে বার নম্বর গ্রিমন্ড প্রেস!

প্রফেসর প্ল্যাঙ্ক তার রোবের পকেট থেকে একটা মোনাকল বার করে চোখে ঠুসে হেডউইগের ডানা পরীক্ষা করলেন। তারপর হ্যারিকে বললেন। ঠিক আছে আমার কাছে রেখে যাও পটার। তোমার প্যাঁচা কিছুদিন যেন দূর রাস্তা পাড়ি না দেয়। হ্যারি বললো, ধন্যবাদ প্রফেসর। ঠিক সেই সময় ব্রেকের ঘণ্টা বেজে উঠলো।

প্রফেসর প্ল্যাঙ্ক হেডউইগকে দেখে বললেন–কোনও অসুবিধে নেই।

–এক মিনিট উইলহেলমিনা! প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন–ওর পায়ে তখনও বাধা রয়েছে পটারের চিঠি!

হ্যারি হেডউইগকে নিয়ে এতো ব্যস্ত যে ওর পায়ে চিঠিটা খুলে নেওয়া হয়নি। হ্যারি বললো–ও হ্যাঁ স্যার।

প্রফেসর প্ল্যাঙ্ক হেডউইগের পা থেকে চিঠিটা খুলে হ্যারির হাতে দিয়ে হেডউইগকে নিয়ে স্টাফ রুমে চলে গেলেন। হেডউইগ হ্যারির দিকে তাকিয়ে রইলো। হ্যারির নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিলো, চলে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় ম্যাকগোনাগল ওকে ডাকলেন, পটার!

–আমায় ডাকছেন প্রফেসর?

ম্যাকগোনাগল করিডোরের দুপ্রান্তে তাকালেন, দেখলেন দুদিক থেকে দল বেঁধে ছাত্রছাত্রী আসছে যাচ্ছে।

ম্যাকগোনাগল খুব তাড়াতাড়ি ও শান্তভাবে বললেন, মনে রেখো পটার! (তার চোখ হাতের পাকানো পার্চমেন্টের ওপোর) হোগার্টসের খবরাখবর, আদান প্রদানের চ্যানেল সবসময় ওয়াচ করা হয়, সেটা তুমি জানো?

–জানি, হ্যারি বললো। সমুদ্রের ঢেউ-এর মত ছেলেমেয়েরা হ্যারির দিকে আসছে দেখে ম্যাকগোনাগল স্টাফ রুমে চলে গেলেন, হ্যারি ওদের সঙ্গে কোর্ট ইয়ার্ডে চললো। যেতে যেতে দেখলো রন আর হারমিন এক কোণে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দূর্দান্ত ঠাণ্ডা হাওয়াতে ওদের ক্লোকের কলার উল্টে গেছে। হ্যারি পার্চমেন্টে লেখা চিঠিটা খুললো। ছোট চিঠি, সামান্য চার-পাঁচটি অক্ষরে লেখা।

আজ, একই সময়, একই জায়গায়

হারমিওন ওকে দেখতে পেয়ে একরকম ছুটে এসে বললো–হেডউইগ ভালো আছে তো?

–ওকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলে? রন জিজ্ঞেস করলো।

–প্রফেসর প্ল্যাঙ্কের কাছে, হ্যারি বললো, হা শোনো।

ম্যাকগোনাগল কি বলেছেন শোনার পর ওরা দুজনেই একটুও শকড় হলো। পরস্পরের মুখের দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

–কী ব্যাপার বলতো, হ্যারি ওদের দিকে তাকিয়ে বললো।

–আমরা হেডউইগকে নিয়ে আলোচনা করছিলাম। কেউ ওকে এখানে আসার সময় ইন্টারসেপ্ট করেছিলো। এর আগে তো এত আঘাত পায়নি।

রন হ্যারির হাতে চিঠিটা দেখে বললো, কে লিখেছে হ্যারি?

 –স্লাফলস (সিরিয়স) লিখেছেন।

–একই সময়, একই জায়গায়। তার মানে সেই আগুনের মধ্যে বলার কী আছে, অবশ্যই কমনরুমে, হারমিওন বললো। ওর কথার মধ্যে অস্বস্তির ছাপ, ভাবছিলাম চিঠিটা অন্য কেউ পড়েনিতো।

হ্যারি ওদের আশ্বস্ত করার জন্য বললো, মনে তো হয় না। চিঠিটার মুখটা তো ভাল করেই সিল করা দেখছি, তাছাড়া চিঠিটা পড়ে কেউ মানে বুঝতে পারবে না।

হারমিওন স্কুল ব্যাগটা কাঁধে ঝোলাতে ঝোলাতে বললো, তা ঠিক বলেছো; কিন্তু ম্যাজিকের দ্বারা সবই সম্ভব। ফুল নেটওয়ার্ক।

কিন্তু আমরা তো ওকে এখানে না আসার খবর পাঠাতে পারি না, ইন্টারসেপ্ট হবেই হবে। পরবর্তী ক্লাশের ঘণ্টা বাজতেই ওরা ক্লাশ রুমে চললো। সিঁড়ির শেষ ধাপে পৌঁছতেই ড্রাকো ম্যালফয়ের গলা শুনতে পেলো। দেখল ও স্নেইপের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওর হাতে একটা পার্চমেন্ট। মনে হলো, সরকারি সিল দেওয়া। ও যেন সকলকে শোনাবার জন্য কথাগুলো স্বাভাবিক গলার স্বরে বলছে না, অন্যদের শোনাতে চাইছে।

–আমব্রিজ স্লিদারিনদের কিডিচ খেলার সোজা অনুমতি দিয়েছেন, আমি আজ সকালে অনুমতি আনতে গিয়েছিলাম। খুব একটা শক্ত ব্যাপার বলে মনে হলো না। তাছাড়া ম্যাডামতো আমার বাবাকে খুব ভাল করেই চেনেন তা তোমরা জানো। উনিতো হামেশাই মিনিস্ট্রিতে যাচ্ছেন আসছেন। দেখা যাক গ্রিফিন্ডররা অনুমতি পায় কি না। রন আর হ্যারিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে হারমিওন ম্যালফয়কে সতর্ক করে দিলো–যেখানে আছ সেখানেই থাকো।

ম্যালফয় আরও একটু উচ্চ স্বরে বললো, প্রশ্নটা হচ্ছে, কাদের কতোটা মিনিস্ট্রি মহলে ইনফ্লুয়েন্স আছে। ওদের তো নেই তাই অনুমতি পাবার আশাও ফোক্কা! বাবা বলছিলেন–আর্থার উইসলিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার এই এক অপূর্ব সুযোগ। আর পটারের ব্যাপার? বেশি কিছু নয়, শুধু সময়ের অপেক্ষা। ওকে সেন্ট মাংগোস পাঠানো হবে। যাদের মস্তিষ্ক ঘোলা, পাকিয়ে গেছে তাদের জন্য ওদের স্পেশাল বেড আছে।

কথাগুলো বলার সময় ম্যালফয় মুখটা অদ্ভুতভাবে বিকৃত করলো। ওর হাঁটা বড় হয়ে গেলো, চোখ দুটো গোল্লা গোল্লা হয়ে বন বন করে ঘুরতে লাগলো। কথাগুলো বলার সময় ক্র্যাবে আর গোয়েল হিঃ হিঃ করে হেসে উঠলো ম্যালয়ের রসিকতায়। প্যান্সি পার্কিনসন হাসতে হাসতে মাটিতে প্রায় গড়িয়ে পড়লো।

হঠাৎ কেউ যেন হ্যারির কাঁধে হাত রাখলো। হ্যারি পিছন ফিরে দেখলো নেভিল। নেভিল যে ম্যালফয়কে মারতে চলেছে ওর মুখ দেখেই হ্যারি বুঝতে পারলো। ওর বোরটা টেনে ধরে হ্যারি বললো, না, নেভিল না।

নেভিল হ্যারির হাত থেকে ছাড়া পাবার জন্য হাতে টান মারলো কিন্তু হ্যারির হাত ছেড়ে ম্যালফয়ের দিকে যেতে পারলো না।

–রন, তুমিও নেভিলকে আমার সঙ্গে ধরে রাখা। ওরা ওকে টানতে টানতে একদিকে নিয়ে গেলো। গোয়েল আর ক্রাবে তখন মারামারি করার জন্য প্রস্তুত।

নেভিল চিৎকার করে বললো, আমাকে ছাড়া আলতু-ফালতু কথা বলার জন্য ওদের উচিত শিক্ষা দেবো। মাংগোস দেখাচ্ছ! কে কাকে মাংগোস পাঠায় দেখছি।

নেভিলকে নিরস্ত করার পর নেভিল ওখান থেকে চলে গেলো।

 ডানজিওনের দরজা খুলে স্নেইপ ওদের দেখে বললেন–পটার, উইসলি, লংবটম তোমরা মারামারি করছো? দশ নম্বর তোমাদের কাটা গেলো। লংবটমকে ছেড়ে দাও পটার না ছাড়লে তোমাদের তিনজনকেই ডিটেনসন।

 হ্যারি জানে নেভিলকে একবার সেন্ট মাংগোসে পাঠানো হয়েছিল। সেই পাঠানোর খবরটা হ্যারি জানে। জানলেও ও কাউকে বলবে না তা ডাম্বলডোরের কাছে শপথ করেছিলো। নেভিলও জানে না হ্যারি সব জানে।

হ্যারি–রন–হারমিওন ক্লাশ রুমে ওদের জায়গায় বসলো। ঘরের একেবারে শেষ দিকে বসার পর পার্চমেন্ট, কুইল আর ফাংগি বার করলো। ক্লাশের সকলেই নেভিলের মারামারি করতে যাওয়ার গাল-গল্প ফিসফাস করে বলাবলি করছিলো। স্নেইপ (ডানজিওন) ওর অন্ধকার ঘরের দরজা বন্ধ করে দিতেই সবাই চুপ করে গোলো।

হ্যারি দেখলো ঘরের এক কোণে প্রফেসর আমব্রিজ বসে আছে, তার দুই হাঁটুর ওপর ক্লিপবোর্ড! প্রফেসর আমব্রিজ বসে রয়েছেন কথাটা জানানোর জন্য হ্যারি, রন আর হারমিওনকে খুব চাপা গলায় বললো। হ্যারি জানে, স্নেইপ আর আমব্রিজের সম্পর্ক আদা–কাঁচকলা, দুজনেই দুজনকে দেখতে পারেন না।

–আজ আমি তোমাদের স্ট্রেংথেনিং সলিউসন সম্বন্ধে বলবো। মনে হয় লাস্ট লেসনে যে অবস্থায় সলিউসনটা বানিয়ে রেখেছিলে সাত দিন পর সেটা শুকিয়ে গেছে, অবশ্য যদি তোমরা ঠিক মত বানিয়ে থাকো। কথাটা বলে সুইপ বোর্ডের ওপোর ম্যাজিক ওয়ান্ডটা ঘোরালেন এবং বললেন, শুরু করো।

প্রফেসর প্রায় আধ ঘণ্টা তার নোটের খাতায় নোট করতে লাগলেন।

হারমিওন হ্যারিকে ভুল ইনগ্রেডিয়েন্ট মেশাতে দেখে বললো, না প্রমিগ্রানেট জুস মেশাবে না। এতে কেয়ারলেস কেন তুমি? স্যালামেন্ডর ব্লাড মেশাও।

–ঠিক আছে, হ্যারি বোতলটা রেখে দিয়ে বললো। ও এক দৃষ্টে এককোণে। বসে থাকা আমব্রিজকে দেখতে লাগলো। আমব্রিজ ঠিক সেই সময় দাঁড়ালেন। হ্যাঁ, আমব্রিজ বললেন। তারপর স্নেইপের দিকে এগিয়ে গেলেন। স্নেইপ তখন মুখ নামিয়ে ডিন থমাসের কলড্রনের ভেতরটা দেখছেন।

–সুন্দর, খুব ভাল। তোমরা সবাই দেখছি বেশ এগিয়ে আছ, আমব্রিজ বললেন। আমার মনে হয়, তোমাদের স্ট্রেংথেনিং পলিউসনর জন্য পোসান বানাতে হবে? আমার মনে হয় মিনিস্ট্রি এই ব্যাপারটা সিলেবাসে রাখতে পছন্দ করবে না। উঠিয়ে দেবে।

স্নেইপ ধীরে সুস্থে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আমব্রিজের মুখের দিকে তাকালেন।

–হ্যাঁ বলুন, হোগার্টসে কত বছর শিক্ষকের কাজ করছেন? হাতের কুইল তখন ক্লিপবোর্ডের কাগজে লেখার জন্য প্রস্তুত।

–চৌদ্দ বছর হবে, স্নেইপ জবাব দিলেন। ওনার মুখের অবস্থা খুব একটা স্বাভাবিক নয়।

হ্যারি ওর পোসানে দুএক ফোঁটা স্যালামের মেশালে। তৎক্ষণাৎ হিম শব্দ করে আসমানী রং থেকে কমলা রং হয়ে গেলো।

–আমার স্থির বিশ্বাস আপনি ডার্কআর্টের বিরুদ্ধে ডিফেন্স সম্বন্ধে কিছু শেখাচ্ছেন। প্রফেসর আমব্রিজ, স্নেইপকে প্রশ্ন করলেন।

–হ্যাঁ তাই, স্নেইপ বললেন।

 –কিন্তু মনে হয় আপনি কৃতকার্য হতে পারেননি।

স্লেইপের ঠোঁট দুটো ঈষৎ বিকৃত হলো, অবশ্যই।

প্রফেসর আমব্রিজ নোট শিটে কিছু লিখলেন। তারপর বললেন, আশাকরি শুরু থেকেই আপনি ছাত্র-ছাত্রীদের ডার্কআর্টের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করা রেগুলারলি শিখিয়ে যাচ্ছেন?

–হ্যাঁ, স্নেইপ শান্তভাবে বসে পড়লেন। মুখ দেখে মনে হয় খুব রেগে গেছেন।

আমব্রিজ বললেন, ডাম্বলডোর আপনাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতে অস্বীকার করেছিলেন এ কথা জানেন। স্নেইপ ঝকি মেরে বললেন, আমার মনে হয় কথাটা তাকেই জিজ্ঞেস করা ভালো। প্রফেসর আমব্রিজ মিষ্টি হেসে বললেন, ও হ্যাঁ, তাই করবো।

–আমার মনে হয় তাকে প্রশ্ন করাটা হবে প্রাসঙ্গিক, স্নেইপ তার কালো দুই চোখের মণি ঘোরাতে ঘোরাতে বললেন।

–ওহ্ অবশ্যই, ঠিকই বলেছেন। প্রফেসর আমব্রিজ বললেন, মিনিস্ট্রি প্রতিটি শিক্ষকদের পরস্পরের প্রতি বন্ধুত্ব ও প্রীতি কামনা করছেন, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ডও জানতে চাইছেন। কথাটা বলে প্যানসি পার্কিনসনের কাছে গিয়ে স্নেইপ যা পড়াচ্ছেন তার প্রশ্ন করতে লাগলেন। স্নেইপ, হ্যারির দিকে তাকালেন। হ্যারি খুব তাড়াতাড়ি ওর বানানো পোসানের দিকে তাকালো, ওর বানানো পোসানটা জমাট বেঁধে গেছে, তার থেকে রবার পোড়ার গন্ধ বেরোচ্ছে।

স্নেইপ তার হাতের দণ্ড দিয়ে হ্যারির বানানো পোসান কলড্রন থেকে ফেলে দিয়ে বললেন, তুমি পোসান বানানোর সঠিক পদ্ধতিটা প্রবন্ধ আকারে লিখে আমার কাছে পাঠাবে, তাতে জানাবে কেন তুমি ভুল করেছিলে। প্রবন্ধটা আমাকে পরবর্তী ক্লাশে দেবে, বুঝতে পেরেছো?

–হ্যাঁ, হ্যারি একটু রেগে গিয়ে বললো। স্নেইপ আগেই ওকে একগাদা হোমওয়ার্ক দিয়েছেন, সন্ধেবেলা আবার কিডি প্র্যাকটিস আছে তার মানে আরও কয়েকটি দ্রিাহীন রজনী! সকালে মনের ভেতর খুব খুশি খুশি ভাব নিয়ে ঘুম ভেঙেছিলো, কিন্তু সারাদিনের ব্যাপার স্যাপারে মনে হলো দিনটা খুবই খারাপ, যতো শিগগির শেষ হয় ততোই যেনো ভাল।

লাঞ্চের পর কোর্টইয়ার্ডে দাঁড়িয়ে হ্যারি বললো, যা অবস্থা তাতে মনে হয় ডিভিয়েসন ক্লাশ কৌশলে এড়াতে হবে, আমাকে ভান করতে হবে যে আমি অসুস্থ। স্নেইপের প্রবন্ধ লিখতে হবে, তাহলে আমাকে মাঝরাত পর্যন্ত জাগতে হবে না।

হারমিওন বললো–না, তা তুমি করবে না।

–ট্রিলনীকে পছন্দ করো না বলে তুমি তো তার ক্লাশ করোনি, রন রেগে মেগে বললো।

–আমি তাকে অপছন্দ করি না, তাকে ঘৃণাও করি না। হারমিওন বললো, আমার ধারনা উনি যা বলেন তা সম্ভব নয়, হতে পারে না। নাম্বার ওয়ান, তিনি একজন ফ্রড মহিলা।

হ্যারি হিস্ট্রি অফ ম্যাজিকের ক্লাশ মিস করেছে, তাই ওর আজ আর কোনও ক্লাশ মিস করা উচিত হবে না।

প্রফেসর ট্রিলনীর মেজাজ দারুণ খারাপ। ক্লাশে ছাত্র-ছাত্রীদের অযথা বকাঝকা করছেন। শান্ত ট্রিলনী কেন এমন করছেন কেউ বুঝতে পারছে না।

রন খুব আস্তে আস্তে হ্যারিকে বললো, আমার মনে হয় আমব্রিজের রিপোর্ট পেয়েছেন।

প্রফেসর ট্রিলনী বললেন, ওরা কি ভেবেছে? আমি একজন সাবস্ট্যান্ডার্ড টিচার?

সকলেই দেখলো তার মোটা কাঁচের চশমার আড়ালে বড় বড় চোখ জলে ভিজে গেছে।

–প্রফেসর? পার্বতি পাতিল ধরা ধরা গলায় বললো। (ও আর ল্যাভেন্ডর প্রফেসর ট্রিলনীর খুব প্রিয়) প্রফেসর আজ কি কিছু হয়েছে, কিছু অন্যায়?

–অন্যায়! বিহ্বল কণ্ঠে ট্রিলনী গর্জে উঠলেন, কি ভেবেছে আমাকে? আমাকে হেয় করেছে, ছোটো করেছে। ভিত্তিহীন, অমূলক সব জিনিস, যা মনে এসেছে তাই লিখেছে। কথাগুলো বলতে বলতে ট্রিলনীর দুগাল বেয়ে চোখের জল পড়তে লাগলো।

–ষোল বছর ধরে আমি পড়াচ্ছি, কোনও অন্যায় কাজ করিনি, ফাঁকি দিইনি। আমাকে এইভাবে অপমান করবে ভাবতে পারি না।

পার্বতী বললো–আপনাকে কে হেয় করেছে, অপমান করেছে প্রফেসর?

–এস্টাব্লিশমেন্ট! প্রফেসর ট্রিলনী বললেন, আমি সব জানি। ভাগ্য! ভাগ্যই এই রকম। তারপর গলায় গর গর শব্দ শোনা গেলো; গায়ের শালের কোনা দিয়ে ভিজে গাল মুছে পকেট থেকে এমব্রয়ডারি করা ছোট রুমাল বার করে নাক ঝাড়লেন।

রন মুখ টিপে হাসছে দেখে ল্যাভেন্ডর বিরক্ত হয়ে ওর দিকে তাকালো।

–প্রফেসর, পার্বতী বললো, আপনার কি মনে হয় প্রফেসর আমব্রিজ…।

–অনুগ্রহ করে তোমরা ওই মহিলার নাম আমার সামনে উচ্চারণ করবে না, প্রফেসর ট্রিলনী জোরে জোরে বললেন। উঠে দাঁড়াবার সময় গলার পুঁথির মালায় ঝন ঝন শব্দ হলো, চোখের চশমা খুলে গেলো। যাকগে তোমরা তোমাদের কাজ করো।

তারপর ট্রিলনী যতক্ষণ ক্লাশে রইলেন ফোঁস ফোঁস করে কাদলেন, বারে বারে চোখ মুছতে ও নাক ঝাড়ুতে লাগলেন শব্দ করে।

দেখা যাক হাতে ক্ষমতা পেয়ে কতোটা এগোতে পারেন সকলকে অবনমিত করতে পারেন। দম্ভের ফল ভোগ করতেই হবে।

হ্যারি হারমিওনকে বললো, তোমার আর আমব্রিজের কাজকর্ম কথাবার্তায় বেশ মিল আছে। কথাগুলো ও আমব্রিজের ডিফেন্স এগেন্সট ডার্কআর্টসের ক্লাশে বললো।

ঠিক সেই সময় আমব্রিজ ক্লাশে ঢুকলেন। পরনে তার ভেলভেটের রোব আর চোখে-মুখে কটুতার ছাপ।

–গুড আফটারনুন।

ক্লাশের সব ছাত্রছাত্রী সমস্বরে বলে উঠলো–গুড আফটারনুন প্রফেসর আমব্রিজ।

–হাতের জাদুদণ্ড বার করো।

কিন্তু আমব্রিজের কথা শুনেও জাদুদণ্ড বার করার কোনও শব্দ শোনা গেলো। কেউ জাদুদণ্ড বার করার যেন প্রয়োজন মনে করলো না।

–অনুগ্রহ করে তোমরা ডিফেনসিভ ম্যাজিক্যাল থিয়োরির চৌত্রিশ পাতা খুলে, তৃতীয় পরিচ্ছেদ পড়ো। কেস অফ নন্ অফেনসিভ রেসপনসেস টু ম্যাজিক্যাল অ্যাটাক ওখানে…

হ্যারি, রন আর হারমিওন এক সঙ্গে বলে উঠলো–কথা বলার দরকার নেই।

***

সেই রাত্রে ডিনার খেয়ে ওদের কমনরুমে ঢোকার সময়, অ্যাঞ্জেলিনা হতাশার সুরে বললো–কিডিচ প্র্যাকটিস হবে না মনে হচ্ছে।

–কিন্তু অ্যাঞ্জেলিনা, আমি যতদূর সম্ভব রাগ চেপে রেখেছি। আমি তো তাকে কিছু বলিনি রন আত্মপক্ষ সমর্থন করে বললো।

–জানি, জানি সব জানি, অ্যাঞ্জেলিনা বললো। উনি বলেছেন, ভেবে দেখবেন, তার জন্য সময় চাই।

–ভেবে দেখবেন? কী ভেবে দেখবেন শুনি? রন ভীষণ রেগে গিয়ে বললো।

কিন্তু হ্যারির বুঝতে একটুও বাকি রইলো না কেন এবং কিসের জন্য গ্রিফিন্ডারদের কিডিচ প্র্যাকটিসে অনুমতি দিতে দেরি করছেন। অযথা তার অস্ত্রটা মাথার ওপোর ঝুলিয়ে রাখলেন।

–ওয়েল, হারমিওন বললো, এখন তোমরা প্রফেসর স্নেইপের প্রবন্ধ লেখার অগাধ সময় পাবে!

হ্যারি বললো, বলতে গেলে সেটা একরকম ভালই। রন হারমিওনকে হাত পা নেড়ে ক্রুদ্ধ স্বরে বললো–কিডিচ প্র্যাকটিস, পোসানও নয়।

হ্যারি চেয়ারে বসে পড়ে ওর পোসান সম্বন্ধে প্রবন্ধ, ব্যাগ থেকে বার করে পড়তে শুরু করলো। মন দেওয়া খুবই শক্ত। তবু মনের মধ্যে সিরিয়সের চিঠির কথা ঘুরছে। আগুনের মধ্যে আসবেন না জেনেও বারে বারে আগুনের দিকে তাকাতে লাগলো, প্রতি মিনিটে একবার। ঘরের মধ্যে শান্ত ভাব নেই ফ্রেড জর্জ ওদের জোক বকস নিয়ে উত্তেজিত হয়ে কথা বলে চলেছে।

গোলমালের মধ্যে হ্যারির স্ট্রেংথেনিং সলিউসন মেথডের বার বার খেই হারিয়ে যায়। ও হারমিওনকে বললো, প্লিজ ওদের ওইসব ফালতু ডেমনস্ট্রেসন থামাতে বলো, কাজ করতে পারছি না। হারমিওন বললো, ওইসব হাবিজাবি কাণ্ড করে ওরা রোজ ছাব্বিশ গ্যালিওনস কামায় জানো!

একটু পরে এক এক করে ছেলে–মেয়েরা কমন রুম ছেড়ে যে যার ডরমেটরিতে চলে গেলো। ফ্রেড জর্জ ওদের যা আয় হয়েছে তা গুণতে লাগলো। প্রায় মাঝরাতে ওরা চলে গেলে কমনরুমে শুধু রয়ে গেলো হারমিওন, রন আর হ্যারি। হ্যারি গোলমালের মধ্যে খুবই সামান্য কাজ করতে পেরেছে। ও রাতের মতো কাজ বন্ধ করে দেখলো রন একটা আর্ম চেয়ারে বসে ঢুলছে আর মাঝে মাঝে মুখে শব্দ করছে আর আগুনের দিকে তাকাচ্ছে।

–সিরিয়স, উত্তেজিত হয়ে হ্যারি বললো, কথাটা শুনে বই-খাতা সরিয়ে রেখে আগুনের দিকে তাকিয়ে দেখলো সিরিয়স! আগের মতোই এলোমেলো মাথায় বড় বড় চুল ক্লান্ত চেহারা।

–কেমন আছ তোমরা, সিরিয়স হাসতে হাসতে বললেন।

হ্যারি, রন, হারমিওন একই সঙ্গে বললো, খুব ভাল আছি।

ওরা তিনজনেই আগুনের সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো। কশ্যাংকও এসে ওদের পাশে বসলো। মুখে ওর দারুণ তাপ আসছে, তাও সিরিয়সের দিকে তাকিয়ে রইলো ও।

–কেমন চলছে সব? সিরিয়স বললেন।

–খুব একটা ভাল নয়, হ্যারি বললো, হারমিওন কুকশ্যাংকে কাছে টেনে নিয়ে বললো–মিনিস্ট্রি নতুন একটা ডিক্রি জারি করে আমাদের কিডিচ ক্লাব বন্ধ করে দিয়েছে।

–তোমাদের ডার্কআর্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের গ্রুপ? সিরিয়স বললেন।

সকলেই চুপচাপ।

–আপনি কেমন করে জানলেন, হ্যারি জানতে চাইলো।

–তোমরা খুব গোপনীয়ভাবে হসহিডে মিটিং প্লেস করেছিলে তাই না? সিরিয়সের আগের চাইতে হাসিটা আরও বেশি।

–থ্রি ব্রুমস্টিকের চেয়ে ভাল, হারমিওন বললো, ওখানে সব সময় লোকে জমজমাট থাকে।

–তার মানে তোমরা কাউকে কথাবার্তা শুনতে দিতে চাওনি, তাই না? সিরিয়স বললেন–হারমিওন, তোমাদের আরও অনেক কিছু শিখতে হবে।

হ্যারি বললো, আমাদের কথাবার্তা কে শুনেছে?

–অবশ্যই মুন্ডানগাস, সিরিয়স বললেন। ওর মুখে হাসি দেখে সকলে হকচকিয়ে গেলো। মুন্ডানগস কালো কাপড়ে মুখ ঢেকেছিল দেখনি?

–তাহলে সেই লোকটা মুন্ডানগাস? হ্যারি হতবুদ্ধি হয়ে বললো।

–ও হগসহিডে বসে কি করছিলো?

–সেটা তোমরা ভেবে বলো সিরিয়স বললেন, তোমাদের ওপর অবশ্যই চোখ রাখছিলো।

হ্যারি রেগে মেগে বললো–আশ্চর্য! ও এখন আমাকে ফলো করছে?

–হ্যাঁ তাইতো মনে হয়, সিরিয়স বললেন, করবে না? তুমি তো আইন ভঙ্গ করে নতুন সংগঠন করতে চলেছে, দল তৈরি করছো তাই।

কিন্তু সিরিয়সের মুখ দেখে বোঝা যায় না ও রেগে আছেন না উৎকণ্ঠিত। হ্যারির দিকে একটু যেন গর্বিত হয়ে তাকিয়ে রয়েছেন।

–ডাংগ আমাদের থেকে লুকিয়ে বসেছিলেন কেন? রন জিজ্ঞেস করলো। আমরা চিনতে পারলে খুশি হতাম।

–কুড়ি বছর আগে থেকে ওর হগসহিডে ঢোকা বারণ, সিরিয়স বললেন, আর ওখানের বারম্যানের মনে রাখার দারুণ ক্ষমতা। স্টারগিস অ্যারেস্ট হবার সময় আমরা মুডির অদৃশ্য হবার ক্লোক হারিয়ে ফেলেছিলাম, তাই ডাংগ ইদানিং উইচের বেশ পরে থাকে। যাকগে ও কথা, রন তোমার মায়ের পাঠানো একটা খবর দেবার। আছে।

–সত্যি? রন মায়ের সংবাদের প্রতীক্ষা করে আছে এমন এক ভাব করে বললো।

–তোমাকে কোনও অবস্থাতেই বে-আইনী ডার্কআর্টস গ্রুপের সঙ্গে জড়িত হতে মানা করেছেন। বলেছেন, স্কুল থেকে তোমাকে শুধু তাড়িয়ে দেবে না, তোমার বাবাও রুইন্ড হয়ে যাবেন। বলেছেন, ভবিষ্যতে ডার্ক আর্টের প্রতিরোধের ব্যাপারে তুমি শেখার অনেক সময় পাবে, এখন ওইসব নিয়ে মাথা ঘামাবে না। তিনি (সিরিয়স হ্যারি ও হারমিওনের দিকে তাকাল) হ্যারি ও হারমিওনকে একই উপদেশ দিয়েছেন যে ওই গ্রুপের ব্যাপারে কিছু না করতে। যদিও তিনি মনে করেন তাদের (হ্যারি, হারমিওন) ওপর তার কোনও আধিপত্য নেই, তারা স্বাধীন। তাহলেও তাদের ভালবাসেন, অন্তরের সঙ্গে শুভো চান। তোমাকে লিখে জানাতে চেয়েছিলেন; কিন্তু পাছে কেউ প্যাচাকে ইন্টারসেপ্ট করে সেই আশঙ্কায় আমাকে বলতে বলেছেন। তখন তুমি সত্য সত্যই বিপদে পড়বে। আজ তার ডিউটি আছে বলেই তোমাকে নিজ মুখে জানাতে পারলেন না।

রন কথাটা শুনেই বললো–ডিউটি আছে? কিসের ডিউটি?

–কিছু মনে করবে না, উনি তো এখন ডাম্বলডোরের নবগঠিত অর্ডারের একজন স্টাফ, তাই আমি তল্পিবাহক হয়ে ওর খবরটা তোমাকে দিলাম। তুমি কিন্তু তোমার মাকে জানাবে আমার মুখ থেকে খবরটা পেয়েছে। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় তোমার মার আমার ওপর আস্থা কম।

সকলেই নিরব হয়ে আগুনের দিকে তাকিয়ে রইলো।

–তো আপনি আমার মুখ থেকে শুনতে চান, আমি আমাদের গঠিত ওই সংগঠন থেকে মুক্ত থাকবো? রন বিড়বিড় করে সিরিয়সকে বললো।

–আমি বলছি? কখনই না। সিরিয়স আশ্চর্য হয়ে বললেন–আমার মতে আইডিয়াটা অতি সুন্দর।

হ্যারি হাঁফাতে হাঁফাতে বললো, সত্যি? সত্যি আপনি বিশ্বাস করেন সিরিয়স?

–হ্যাঁ, সত্যি সত্যিই করি, সিরিয়স বললেন। তুমি কী মনে করো তোমার বাবা বেঁচে থাকলে, আমরা দুজনে ওই আমব্রিজের মতো হ্যাংগলা বৃদ্ধার কাছ থেকে আদেশ পালন করতাম?

–কিন্তু গত টার্মে আপনিইতো সতর্ক থাকতে ও কোনও ঝুঁকি নিতে নিষেধ করেছিলেন।

–হ্যাঁ ঠিক বলেছে, গত বছরে হোগার্টসের ভেতর থেকে কেউ তোমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলো। এবার বাইরে থেকে শুধু তোমাকে নয়, আমাদের সবাইকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে চলেছে। তাই তোমার আত্মরক্ষা করার জন্য ওই আইডিয়া সত্যিই অতি প্রয়োজনীয়। তোমাদের শিখতে হবে এবং শেখাতে হবে।

–কিন্তু তার জন্য আমাদের স্কুল থেকে বহিষ্কার করলে? হারমিওন প্রশ্ন করলো।

হ্যারি বললো, হারমিওন এখন তুমি ভয় পাচ্ছো কেন? আইডিয়াটা তো তোমার মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়েছে।

–জানি, খুব ভাল করেই জানি। আমি ভাবছি ওই ব্যাপারে সিরিয়সের মতামত কি।

–আমার মতে ওদের ভয় পেয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার চাইতে স্কুল থেকে বহিষ্কার অনেক ভাল–এটাই আমার মত। সিরিয়স বললেন।

হিয়ার, হিয়ার, হ্যারি আর রন আনন্দে উপচে পড়ে বললো।

–সিরিয়স বললেন, তো, কেমন করে সংগঠনটা রূপায়িত করবে? কোথায় তোমরা মিলিত হবে?

–সেটাইতো সমস্যা এখন, বললো হ্যারি, জানি না কোথায় আমরা সবাই মিলিত হবে।

সিরিয়স বললেন, শিরেকিংগ শ্যাক কেমন হয়

–দারুণ, দারুণ আইডিয়া, রন লাফিয়ে উঠে বললো। এরই মধ্যে হারমিওন মুখ দিয়ে একটা শব্দ করতেই ওরা হারমিওনের দিকে তাকালো। আগুনের শিখার আড়ালে সিরিয়স মাথা দোলাতে লাগলেন।

–ওয়েল সিরিয়স, আপনারা যখন স্কুলে পড়তেন তখন তো মাত্র চারজন শিরেকিংগ শ্যাকে যেতেন। হারমিওন বললো, আপনারা চারজনই ম্যাজিকের সাহায্যে জম্ভর রূপ ধারণ করতে পারতেন। তাছাড়া একটা মাত্র অদৃশ্য হবার ক্লোকে গুতোগুতি করে অদৃশ্য হতে পারতেন। আমাদের সংখ্যা আঠাশ, আমরা কেউ অ্যানিমেগাস নই তাছাড়া আমাদের ইনভিজিবিলিটি মারকুইর অতোগুলো ক্লোক দরকার নেই।

–ঠিক বলেছে, সিরিয়স বললো। মুখ দেখে ওদের মনে হলো একটু হতাশ হয়েছেন। ঠিক আছে আমার মনে হয় কোথাও একটা জায়গা তোমরা পেয়ে যাবে। বড় আয়নাটার পেছনে একটা গোপন যাতায়াতের জায়গা ছিল, বেশ বড়। তোমরা ওখানে তো প্র্যাকটিস করতে পারো, অবশ্যই খুব গোপনে।

হ্যারি বললো, ফ্রেড আর রন বলেছে ওটা নাকি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওটা নাকি ভেঙে পড়েছিল, বা ওই রকম কিছু হবে। সিরিয়স ভুরু কুঁচকে বললো তাই। মনে পড়েছে আমার একটা জরুরি কাজ আছে, আমি এখন যাই।

সিরিয়সের মুখটা হঠাৎ খুব গম্ভীর দেখালো, টেনসন অ্যালার্মড। মুখটা সামান্য ঘুরিয়ে নিলেন, মনে হয় ফায়ার প্লেসের ইটের দেওয়ালের দিকে তাকালেন।

–সিরিয়স? হ্যারি হকচকিয়ে বললো।

কিন্তু হঠাৎ সিরিয়সকে আর দেখা গেলো না। হ্যারি সামান্য ক্ষণ আগুনের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর রন আর হারমিওনের দিকে তাকালো।

–হঠাৎ চলে গেলেন?

হারমিওন বেশ বড় দেখে একটা ভয়ার্ত নিঃশ্বাস ফেললো, আগুনের দিক থেকে দৃষ্টি না সরিয়ে দাঁড়ালো।

তিনজনই দেখলো অগ্নি শিখা থেকে ধীরে ধীরে একটা হাত বেরিয়ে আসছে, হাতের মুঠো দেখে মনে হয় কিছু ধরবার চেষ্টা করছে। বেশ শক্তপোক্ত ছোট ছোট আঙ্গুলের হাত, আঙ্গুলে রয়েছে পুরনো ফ্যাশনের আংটি।

হ্যারি আর ওরা দুজন দৌড়াল। ছেলেদের ডরমেটরির দরজার কাছে গিয়ে পিছন ফিরলো। দেখলো আমব্রিজের হাত সেই অগ্নিশিখাতে এমনভাবে কিছু ধরবার চেষ্টা করছে যেন সিরিয়সের লম্বা চুল ধরার প্রচেষ্টা, একটু আগেও ছিলেন সিরিয়স। তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ধরবেনই ধরবেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *