১৫. দ্য হোগার্টস হাই ইনকুইজিটর

১৫. দ্য হোগার্টস হাই ইনকুইজিটর

ওরা হারমিওনের ডেইলি ফেটের কপির জন্য ভোর বেলায় অধীর আগ্রহে বসেছিলো। পার্সি ওর চিঠিতে আগেই জানিয়ে দিয়েছে। যাই হোক প্যাচা এসে হারমিওনের টেবিলে দুধের জগের পাশে কাগজটা ফেলে দিল। হারমিওন হাঁফাতে হাঁফাতে পত্রিকাটি খুলতেই প্রথম পাতায় চোখে পড়লো বড় করে হেডলাইনের তলায় ডলোরেস আমব্রিজের একটি ফটোগ্রাফ। ডলোরেসের মুখে হাসি, যেন ওদের ব্যাঙ্গ করছেন কৌতুক ভরা দুই চোখে। ছবির তলায় লেখা।

মন্ত্রণালয় শিক্ষা, প্রণালী সংশোধন করতে আগ্রহী
ডলোরেস আমব্রিজকে নিযুক্ত করা হয়েছে
উচ্চ ক্ষমতাপ্রাপ্ত তদন্তকারী হিসেবে

হ্যারি গম্ভীর স্বরে বললো, আমব্রিজ–ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্তকারী? কথা বলার সময় ওর আঙ্গুল থেকে অধভুক্ত টোস্টটা পড়ে গেলো। এর মানে? কী বলতে চায় ওরা।

হারমিওন ডেইলি ফেটের সংবাদ বেশ জোরে জোরে পড়তে লাগলো—

 গতকাল রাতে ম্যাজিক মন্ত্রণালয় একটি বিশেষ অধিকারে হোগার্টস স্কুল অফ উইচক্র্যাপ অ্যান্ড উইজার্ডরি পরিচালনার জন্য নতুন এক আইন চালু করলেন।
বিগত কিছু সময়ে হোগওয়ার্টসে যে ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটছে, সে সম্বন্ধে মন্ত্রী মহোদয়ের জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট পার্সি উইসলি মন্তব্য করছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা স্কুলের পঠন-পাঠন মিস্টেন্ট ও দৈনন্দিন ঘটনাবলীর ব্যাপারে খুবই উদবিগ্ন। তারা মনে করেন স্কুল যেভাবে চলছে তা আদতেই সমর্থনযোগ্য নয়।
বিগত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রী কর্নেলিয়স ফাজ উইজার্ডিং স্কুলের উৎকর্ষ সাধনের জন্য এই প্রথম নতুন আইন প্রয়োগ করলেন তা নয়। সম্প্রতি ৩০ আগস্ট, এডুকেশনাল ডিক্রি নং বাইশ চালু করা হয়েছে। যে কোনও কারণে যদি বর্তমানে নিযুক্ত হেড মাস্টার মশাই কোনও শিক্ষক নিযুক্তি করতে অসমর্থ হন তাহলে মন্ত্রণালয় অবশ্যই শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে শিক্ষক নিযুক্ত করবেন।
এই কারণেই ডলোরেস আমব্রিজকে হোগওয়ার্টসে একজন শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। গতরাতে মি. উইসলি এই কথা বলেছেন। যেহেতু ডাম্বলডোর তেমন কোনও যোগ্য শিক্ষক পাননি, সেই কারণে মন্ত্রী মহোদয় আমব্রিজকে পাঠিয়েছিলেন, এবং অবশ্যই তিনি যথাযথভাবে তার কর্মদক্ষতা প্রমাণ করেছেন।

হ্যারি খুব জোরে জোরে বললো–তিনি কি করেছেন?

হারমিওন হাত তুলে বললো–দাঁড়াও এখনও পড়া শেষ হয়নি।

ডার্ক আর্টের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার পদ্ধতি, তার প্রথম সম্পূর্ণভাবে যুগান্তকারী কৃতকার্যতা। তাছাড়া মন্ত্রীকে তার হোগওয়ার্টসের নানা প্রকৃত ঘটনাবলীর প্রয়োজনীয় সংবাদাদির প্রদান করা তো আছেই।
এডুকেশনাল ডিক্রি নং তেইশ ধারা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন এবং এই আইনে হোগার্টসে একজন উচ্চ পদস্থ তদন্তকারীকে কাজকর্ম দেখার জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
হোগার্টসের ক্রমাগত নিম্নমান রোধ করার জন্য এই ব্যবস্থা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ সন্দেহ নেই বলেছেন, উইসলি। এই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কারীর ক্ষমতা থাকবে স্কুলের বিভিন্ন সহকর্মী শিক্ষকদের শিক্ষাদানের মান তদন্ত করা। প্রফেসর আমব্রিজকে তার শিক্ষাদানের অতিরিক্ত এই কার্যভার দেওয়া হয়েছে। আমরা অত্যান্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে তিনি সানন্দে এইসব দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
হোগার্টস স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পিতা-মাতা, অভিভাবকরা এই নতুন পদক্ষেপ খুবই আগ্রহের সঙ্গে আমাদের সমর্থন করেছেন।
লুসিয়াস ম্যালফয়, ৪১, গতকাল তার উইল্টশায়ের ম্যানসন থেকে বলেছেন–আমি এখন অতি স্বাচ্ছন্দ বোধ করছি। আমি জানি ডাম্বলডোরের কার্যকলাপের ওপর নিরপেক্ষ ও বিষয়মুখী মান নির্ণয় হতে চলেছে। ডাম্বলডোরের বিগত কয়েক বছরের অপরিকল্পিত ও উদ্ভট সিদ্ধান্তের জন্য শুধু আমাদের ছেলে-মেয়েরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আমরা অত্যন্ত খুশি হয়েছি যে, মন্ত্রণালয় সমগ্র ব্যাপারটার ওপর চোখ রেখেছেন।
উদ্ভট ও খামখেয়ালি নির্ণয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিতর্কিত শিক্ষক নিয়োগ। আগে এই পত্রিকায় ওয়েরউলফ রেমাস লুপিনের, অর্ধদানব হ্যাগ্রিডের ও প্রতারক অবসরপ্রাপ্ত তদন্তকারী অরোর ম্যাড-আই মুডিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিলো।
গুজব যে, এলবাস ডাম্বলডোর, একদা সুপ্রিম মাগওয়াম্প (বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তি) অফ দ্যা ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেন অফ উইজার্ডস অ্যান্ড চীফ ওয়ারলক অফ দ্য ওয়াইজেনগেমট প্রকৃত সম্মানজনক হোগার্টসের ম্যাজিক স্কুল সুচারুরূপে দেখাশোনা ও নিয়মিত কাজকর্ম চালাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের ভেতরকার কোনও এক ব্যক্তি গত রাতে বলেছেন, এই তদন্ত কারী নিয়োগ এর কারণ এমন এক ব্যক্তি হোগার্টস স্কুলের হেডমাস্টার হবেন যার হাতে আমরা ছেলে–মেয়েদের পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারি। এই নিয়োগ তারই প্রথম পদক্ষেপ।
মনে রাখতে হবে হোগার্টস একটি স্কুল, কর্নেলিয়স ফাজের ঘাঁটি বা উপনিবেশ নয়, বলেছেন মাদাম মার্চব্যাংকস। আলবাস ডাম্বলডোরকে হেয় করার আর একটি বিরক্তিকর প্রয়াস।
 এই নিয়োগের প্রতিবাদে ওয়াইজেনগেমটের প্রবীণ সদস্য মাদাম মার্চব্যাংকস ও তাইবেরিয়স অগডেন পদত্যাগ করেছেন।
মাদাম মার্চব্যাংকস বলেছেন, হোগার্টস একটি স্কুল, কর্নেলিয়স ফাজের দপ্তর নয়। আলবাস ডাম্বলডোরকে হেয় করার একটি বিরক্তিকর প্রয়াস।
(গবলিন গ্রুপের নাশকতামূলক কাজের বিরুদ্ধে মাদাম মার্চব্যাংকসের অভিযোগের পূর্ণ বিবরণ সতের পাতায়)।

হারমিওন কাগজ পড়া শেষ করে রন আর হ্যারির মুখের পানে তাকালো। ওরা টেবিলের অন্যদিকে বসেছিল।

–ফাজ আমাদের ঘাড়ের ওপর আমব্রিজকে চাপিয়ে দিয়েছেন। দেখতে হবে কেমন করে তাকে মোকাবিলা করা যায়, কেমন করে করতে হবে আমাদের জানা আছে। ফাজ ডিক্রি অনুসারে অন্য শিক্ষকদের ওপর ছড়ি ঘোরাবেন তা চলবে না! অতি অন্যায়, অবিচার ও স্বেচ্ছাচারিতা, হারমিওন ক্ষিপ্ত হয়ে বললো।

–আমি সব জানি, হ্যারি বললো। তারপর ও টেবিলের ওপোর রাখা ডান হাতটা দেখলো। হাতে ও বড় বড় করে লিখেছে আমব্রিজ।

রনের মুখে মৃদু-মন্দ হাসির রেখা।

–কী ব্যাপার? হ্যারি আর হারমিওন ওর মুখের পানে তাকিয়ে একই সঙ্গে বললো।

রন উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো, ম্যাকগোনাগলকে প্রশ্ন করা হচ্ছে আমি দেখতে চাই না। অ্যামব্রিজ তাকে ঠিক চেনে না।

–নাও নাও দেরি করবে না, হারমিওন সহসা লাফিয়ে উঠে বললো, কে জানে এখন হয়তো বিনসের ক্লাশ তদন্ত করছেন, আমাদের দেরি করা উচিত হবে না।

কিন্তু দেখল আমব্রিজ ওদের হিস্ট্রি অফ ম্যাজিক লেসনের ক্লাস ইনসপেকটিং করছেন না। দারুণ বোরিং ক্লাশ! ওরা ডবল পোসান সংগ্রহ করতে এসে শুনলো, উনি স্নেইপের অন্ধকার ঘরে গেছেন। হ্যারি ওখানে গিয়ে ওর মুনস্টোন প্রবন্ধ প্রফেসরের হাত থেকে পেলো। খাতার উপরের অংশে বড় বড় করে উনি কাল অক্ষরে লিখেছেন ডি।

স্নেইপ হেসে হেসে বললেন–তুমি যদি পাচার কাজকর্মের ব্যাপারে এটা সাবমিট করতে তাহলে তোমাকে এই গ্রেডটা দিতাম। এখন বুঝতে পারবে পরীক্ষার সময় কোনটে দরকার।

তারপর স্নেইপ ক্লাসের সকলকে বললেন, তোমাদের হোমওয়ার্কের স্ট্যান্ডার্ড খুবই খারাপ। তোমাদের পরীক্ষার খাতায় এই রকম লিখলে অবশ্যই ফেল করতে। যাই হোক, এই সপ্তাহে আমি ভেনমের প্রতিষেধক সম্বন্ধে পড়ব, পরিশ্রম করবে আশাকরি। তানাহলে যাদের ডি দেয়া হয়েছে তাদের আটক করা হবে শাস্তি হিসেবে।

ম্যালফয় স্বাভাবিকভাবে ব্যাঙ্গ করে উঠলো, আরে হ্যারি ডি গ্রেড পেয়েছে রে। হাঃ হাঃ হাঃ। স্নেইপও হাসলেন।

হ্যারি আড়চোখে হারমিওনকে দেখে খাতাটা ব্যাগে রেখে দিল।

ওরা ক্লাশ থেকে ফিরে গ্রিফিন্ডারদের জন্য রাখা টেবিলে বসলো।

-হারমিওন তুমি তো জানতে চাইলে না আমার গ্রেড, রন বললো।

–ইচ্ছে থাকলে বলতে পারো।

রন বললো–আমি পি পেয়েছি, খুশি তো?

জর্জ ইউ.পি.ডি গ্রেড পাওয়া নিয়ে অনেক তর্কাতর্কি ও আলোচনার পর, খেতে বসে হ্যারিকে বললো–শোনো আজ ভাল ছেলে হয়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখে আমব্রিজের সঙ্গে কথাবার্তা বলবে। কিডি প্র্যাকটিসে না গেলে অ্যাঞ্জেলিনা তোমার ঘেঁচু করবে।

ডার্ক আর্টের প্রতিরোধ সম্বন্ধে ক্লাশ করতে হ্যারিকে প্রফেসর আমব্রিজের কাছে যেতে অপেক্ষা করতে হলো না। ও ড্রিম ডায়রিটা নিয়ে ডিডিয়েসন রুমের এক কোণে বসে পাতা ওল্টাচ্ছিলো তখন রন ওর পাজরে খোঁচা দিলে ও চমকে উঠে দেখলো প্রফেসর আমব্রিজ ট্র্যাপোর দিয়ে ঘরে ঢুকেছেন। তৎক্ষণাৎ ক্লাশের ছাত্র ছাত্রীদের কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গেল। প্রফেসর ট্রিলনী হাতে কটি ড্রিমওরাকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন, হঠাৎ ঘর নিঃস্তব্ধ হয়ে যাওয়াতে কিছু বুঝতে না পেরে এধার ওধার তাকালেন তিনি।

প্রফেসর আমব্রিজ সহাস্য মুখে ট্রিলনীকে দেখে বললেন–শুভ সন্ধ্যা আপনি আশাকরি আমার নোট পেয়েছেন? আমি ইন্সপেকশনের সময় ও তারিখ সেই নোটে লিখেছি।

প্রফেসর ট্রিলনী সামান্য মাথানত করে অভিভাদন জানিয়ে প্রফেসর আমব্রিজের দিক থেকে পেছন ফিরে বিরক্তি মাখা মুখে বইয়ের কপিগুলো দিতে শুরু করলেন। প্রফেসর আমব্রিজ হাসতে হাসতে হাতের কাছে একটা হাতলওয়ালা চেয়ার টেনে আনলেন। প্রফেসর ট্রিলনীর সিটের থেকে সামান্য কএক ইঞ্চি দূরে বসলেন। তারপর ফুল আঁকা হাতব্যাগ থেকে ক্লিপবোর্ড বার করে ক্লাশ শুরু হবার অপেক্ষায় শূন্যে তাকিয়ে রইলেন।

প্রফেসর ট্রিলনী গায়ের শালটা সামান্য কম্পিত হাতে টেনেটুনে গায়ে দিয়ে মোটা কাঁচের চশমা দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে তাকালেন।

–আজকে আমরা প্রফেটিক ড্রিমস সম্বন্ধে আলোচনা করব, ট্রিলনী তার অস্পষ্ট কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন। এইরকমই তার বলার ভঙ্গি হলেও সেদিন যেন একটু বেশি ধরা ধরা গলা মনে হলো। শোন তোমরা সকলে দুজনে মিলে একটা দল গড়ো। আর যারা দৈববাণী করেন তাদের কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি যে স্বপ্ন দেখেছো সেটা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে এসো।

কথাটা বলে চেয়ারে বসতে যাবেন কিন্তু বসলেন না প্রফেসর আমব্রিজকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে। তাকালেন পার্বতী আর লেভেন্ডরের দিকে, ওরা দুজনে তখন তাদের দেখা সম্প্রতি স্বপ্ন নিয়ে গভীর আলোচনায় মত্ত।

হ্যারি দ্য ড্রিম ওরেকেলের কপি বার করে আমব্রিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে তার ক্লিপবোর্ডে রাখা কাগজে গম্ভীর মুখে কিছু লিখছেন। তারপর কয়েক মিনিট পর প্রফেসর আমব্রিজ চেয়ার থেকে উঠে ক্লাশ রুমে পায়চারি করতে করতে, মাঝে মাঝে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে গিয়ে মাথা হেট করে কিছু প্রশ্ন করতে আর কথাবার্তা বলতে লাগলেন।

হ্যারি মাথা নিচু করে ওর বইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।

–এই তাড়াতাড়ি একটা স্বপ্নের কথা ভাব, বুড়ো ব্যাঙটা আমাদের দিকে তাকাচ্ছে, হ্যারি রনকে ফিস ফিস করে বললো।

–গতবার আমি বলেছিলাম এবার তোমার পালা, রন একগুঁয়ের মতো বললো।

–ওহো আমার কিছু মনে পড়ছে না, গত কয়েকদিন আমি কোনও স্বপ্নটপ্ন দেখিনি, যাকগে গুল মারি। বলি, আমরা স্বপ্ন দেখেছি স্নেইপকে আমাদের বিরাট কলড্রনের জলে চুবোচ্ছি। দারুণ হবে।

রন ওর ড্রিম ওরাকেল খুলতে খুলতে মুখে খল খল শব্দ করলো।

–ঠিক আছে, এখন আমাদের স্বপ্ন দেখার বয়স, তারিখ, শব্দের সংখ্যা লিখতে হবে। তাছাড়া চুবোনো, কলড্রন অথবা স্নেইপ সম্বন্ধে লিখতে হবে? মানে বিষয় বস্তু।

–যা হোক একটা কিছু লিখলেই হলো, তাতে কিছু যায় আসে না, হ্যারি কথাটা বলে আড়চোখে পিছনে তাকিয়ে দেখলো প্রফেসর আমব্রিজ, ট্রিলনীর পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। নেভিলকে হয়তো তার স্বপ্ন সম্বন্ধে কিছু প্রশ্ন করেছেন, আর তার ব্যাখ্যাটা গম্ভীর মুখে নোট করছেন।

–সত্যি বল, কিছু দেখেছো কী? রন বললো।

ওর কান তখন প্রফেসর আমব্রিজ আর ট্রিলনীর কথা-বার্তায়। গতরাতের কথা আমার মনে নেই, যা হোক লিখলেই হবে। আমব্রিজ আর ট্রিলনী ওদের থেকে তফাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নোট করছিলেন। প্রফেসর ট্রিলনীর মুখ দেখে মনে হয় খুবই অসুবিধের মধ্যে পড়েছেন।

–আমব্রিজ ট্রিলনীর দিকে তীক্ষ্মভাবে তাকিয়ে বললেন, হ্যাঁ, ঠিক করে বলুনতো কতোদিন থেকে আপনি এই পোস্টে রয়েছেন?

প্রফেসর ট্রিলনী বিদ্বেষের দৃষ্টিতে আমব্রিজের দিকে তাকালেন। দুহাত বুকে জড়ো করে কাঁধ ঝাঁকালেন। মনে হয় ইনসপেকশনের অপমান থেকে নিজেকে বাঁচানো বা সঠিক আঘাত দেবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। সামান্য সময় নীরব থাকার পর হয়তো মনে করলেন প্রফেসর আমব্রিজের প্রশ্নটা খুব একটা অশোভন নয় যে জবাব না দিলেও চলবে। তাই থেমে থেমে বললেন, তা প্রায় ষোল বছর!

প্রফেসর আমব্রিজ তার ক্লিপবোর্ডে রাখা কাগজে কিছু নোট করতে করতে বললেন–তা বেশ অনেক বছর। তো আপনাকে কী প্রফেসর ডাম্বলডোর নিযুক্ত করেছিলেন?

ট্রিলনী সংক্ষেপে বললেন–হ্যাঁ।

–আপনি তো সেলিব্রেটেড সায়র ক্যাসেনড্রা ট্রিলনীর নাতনীর কন্যা (গ্রেট গ্রেট-গ্র্যান্ড ডটার)।

–অবশ্যই, প্রফেসর ট্রিলনী দৃঢ়তার সঙ্গে জবাব দিলো। আমব্রিজ নোট করলেন।

–কিন্তু, যদি ভুল বলি তাহলে আমায় ক্ষমা করবেন, ভুল শুধরে দেবেন। ক্যাসেনড্রা পরিবারে আপনি হচ্ছেন প্রথম, যিনি, দ্বিতীয় জেনারেশনের, মানে সেকেন্ড সাইট?

–এইরকম হামেশাই হয়, বলতে পারেন তৃতীয় জেনারেশন। প্রফেসর ট্রিলনী বললেন।

আমব্রিজের ব্যাঙের মত মুখের হাসি আরও একটু বিস্তৃত হলো।

–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই, নোট করতে করতে আমব্রিজ বললেন। কথাটা শান্ত ভাবেই বললেন। মুখ দেখে মনে হয় আরও কিছু খুঁটিনাটি জানতে চান। মুখের সেই হাসি অন্তর্হিত হয়নি, ভালো, ভালো, আপনি কি আমার সম্বন্ধে কিছু ভবিষ্যৎ বাণী বলতে পারেন? মানে প্রিডিক্ট করতে পারেন ম্যাডাম?

ট্রিলনী যেন আমব্রিজের কথাটা ধরতে পারেননি। ঠিক কি বলতে চাইছেন বুঝতে পারছেন না এমনভাবে তাকালেন। বললেন, ঠিক বুঝলাম না। কথাটা বলতে বলতে গায়ের শালের একটা কোণা চেপে ধরে ভাল করে গলায় জড়ালেন।

–আমার সম্বন্ধে কিছু প্রিডিকসন করুন না, প্রফেসর আমব্রিজ পরিষ্কার কণ্ঠে বললেন।

শুধু হ্যারি আর রন নয়, ক্লাশের সবাই বই আড়াল করে তাকালো ট্রিলনীর দিকে। দেখলো ট্রিলনী দৃঢ়ভাবে দাঁড়ালেন, মাথা সোজা করলেন, হাতের চুড়িগুলো ঝনঝনিয়ে উঠলো।

–আপনি বোধকরি জানেন, মানুষের অন্তরে যে চোখ থাকে সেটা কারও নির্দেশে দেখে না, কথাটা ট্রিলনী চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন।

–তা যা বলেছেন, কথাটা খুবই নরমভাবে বলে আমব্রিজ আবার নোট করলেন। নোট করার সময় ক্লিপবোর্ডটা শক্ত করে ধরে রাখলেন।

প্রফেসর ট্রিলনী আমব্রিজের বোর্ডের দিকে তাকিয়ে নাটকীয়ভাবে বললেন, আমার মনে হয় আপনার আসন্ন বিপদ অপেক্ষা করছে।

দুজনেই নীরব। প্রফেসর আমব্রিজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ট্রিলনীকে দেখতে লাগলেন।

ওরা সবাই দেখলো প্রফেসর আমব্রিজ গেটশিটে আবার কিছু লিখলেন। বললেন, হবে হয়তো হলে উপায় কী, ঠিক আগের মতই মিঠে সুরে বললেন।

রন হ্যারি জানে বৃদ্ধা ট্রিলনী একটি ধোঁকাবাজ। ভবিষ্যৎবাণী টানি সম্পূর্ণ ভাঁওতা। কিন্তু তা সত্ত্বেও ট্রিলনীর অসহায় মুখের ভাব দেখে ওদের মনে অনুকম্পা হলো। আমব্রিজের উপর চটে গেলো।

ট্রিলনীর হাতের সরু সরু একটা আঙ্গুল হ্যারির নাকের কাছে এনে বললেন, দেখি, তুমি তোমার স্বপ্নের শুরু কেমন করে করেছে।

হ্যারি ড্রিমডায়রির দিকে তাকালো। ট্রিলনী খুব উঁচু গলায় হ্যারির স্বপ্ন সম্বন্ধে পড়তে শুরু করতেই ক্লাশের ছেলে–মেয়েরা সচকিত হয়ে ট্রিলনীর দিকে তাকালো (কেউ কেউ লুকিয়ে লুকিয়ে পরিজ ইত্যাদি খাচ্ছিলো থেমে গেলো। মনে হলো, যেন হ্যারি অসম্ভব কিছু একটা লিখেছে, সেটা ওর আসন্ন মৃত্যুও হতে পারে)।

আমব্রিজ ক্লাসে যতক্ষণ ছিলেন তার ক্লিপবোর্ডের শিটে লিখে যাচ্ছিলেন। ঘণ্টা বাজতেই ঘর ছেড়ে চলে যাবার সময় ছাত্র-ছাত্রীদের তার ঘরে সমবেত হতে বললেন। ওখানে ডাকআর্টসের প্রতিরোধের ক্লাশ মাত্র দশ মিনিট পর শুরু হবে।

ওরা ঘরে ঢুকে দেখলো প্রফেসর আমব্রিজ হাসি মুখে গুণ গুণ করে গান গাইছেন। হ্যারি, অ্যারিথমেসির ক্লাশ থেকে ফেরার আগেই যা যা ঘটেছে তা রন আর হারমিওনকে বলেছে। হারমিওন ওদের ডিফেনসিভ ম্যাজিক্যাল থিওরি সম্বন্ধে কিছু প্রশ্ন করার আগেই আমব্রিজ ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে তাকিয়ে বললেন, চুপ, সবাই চুপ করো ক্লাশ শুরু করছি। মুহূর্তের মধ্যে সবাই নীরব হয়ে গেলো।

–সবাই ম্যাজিক দণ্ড ব্যাগে রেখে দাও।

ছাত্রছাত্রীরা ব্যাগে রেখে দিলো (কেউ কেউ ব্যাগ থেকে বার করেছিলো)। আগেই চ্যাপ্টার ওয়ান শেষ করেছি… আজ উনিশপাতায় দেখ চ্যাপ্টার দুই। কমন ডিফেন্সিভ থিয়োরিজ অ্যান্ড দেয়ার ভেরিয়েসন (প্রতিরোধ থিয়োরি ও তার নির্ণয়) সমন্ধে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। মুখে তার আত্মপ্রত্যায়ের হাসি।

আমব্রিজ তার চেয়ারে বসলেন।

ছাত্র-ছাত্রীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এক থেকে উনিশ পাতা খুললো। হ্যারি মনে মনে ভাবলো বইটাতে আরও বেশি চ্যাপ্টার থাকলে যেন ভাল হতো, তাহলে সারা বছর বইটা পড়তো। সূচিপত্র দেখছে, ঠিক সেই সময় দেখলো হারমিওন হাত তুলেছে।

আমব্রিজ হারমিওনকে দেখেও যেন দেখেনি এমন এক ভাব করে ক্লাশের ঘরে পায়চারি করতে করতে হঠাৎ হারমিওনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে বললেন, এখন আমরা কি শুরু করবো মিস গ্রেঞ্জার?

–হাঃ তাহলে চ্যাপ্টার তিন শুরু করো।

–তাও শেষ করেছি, আমি সম্পূর্ণ বইটা শেষ করেছি প্রফেসর।

প্রফেসর সামান্য হাসলেন; কিন্তু তৎক্ষণাৎ গম্ভীর হয়ে গেলেন।

–তাহলে তো তুমি অবশ্যই বলতে পারবে চ্যাপ্টার পনেরতে স্লিংখার্দ কাউন্টার–জিঙ্কস সম্বন্ধে কি বলেছেন।

–বলেছেন, কাউন্টার জিঙ্কস ভুল অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, হারমিওন বললো। উনি বলেছেন, কাউন্টার জিঙ্কস হচ্ছে নামমাত্র। লোকেরা নিজেদের সুবিধের জন্য ওটা ব্যবহার করে।

কথাটা শুনে আমব্রিজ একটা ভুরু উঁচু করলেন। তার মুখ দেখে মনে হলো হারমিওনের ফটাফট জবাবে মনে মনে খুশি। যদিও সেটা তার স্বভাব বিরুদ্ধ।

–কিন্তু আমি তার সঙ্গে একমত নই, হারমিওন বললো।

কথাটা শুনে প্রফেসর আমব্রিজ ভুরুটা আরও ওপোরে তুললেন। মুখ দেখে মনে হয় একটুও সন্তুষ্ট নয়!

–আচ্ছা তুমি তাহলে একমত নও?

–হ্যাঁ প্রফেসর, আমি একমত নই। তারপর একটু থেমে চাঁছাছোলা গলায় ও বললো, মি. ব্লিংখার্দ মোটেই জিংকস পছন্দ করেন না, করেন কী? আমার মনে হয় প্রতিরোধ ব্যর্থ হলে শব্দটার ব্যবহার হয়তো কারও কারও প্রয়োজনীয় হতে পারে।

–ঠিক আছে, ঠিক আছে মিস গ্রেঞ্জার, ওটা তার মত, তোমার নয়। আলোচনাটা ক্লাশরুমে আবদ্ধ থাক মিস গ্রেঞ্জার।

হারমিওন বললো, কিন্তু প্রফেসর…।

–অনেক বলেছো মিস গ্রেঞ্জার। সকলেই লক্ষ্য করলো প্রফেসর আমব্রিজ একটু যেন মিইয়ে গেছেন। মিস গ্রেঞ্জার আমি গ্রিফিন্ডর হাউজের পাঁচ পয়েন্ট কেটে দিলাম।

ক্লাশের মধ্যে গুণ-গুনানী শোনা গেলো।

হ্যারি বললো, কেন স্যার?

হারমিওন ফিসফিস করে বললো, হ্যারি তুমি নিজেকে এর মধ্যে জড়াবে না।

–অহেতুক তোমরা আমার ক্লাশে বাধা সৃষ্টি আর গোলমাল করছে। প্রফেসর আমব্রিজ ধীরে ধীরে বললেন, আমি জাদু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মতো তাদের অনুমোদিত মেথড অনুযায়ী চলছি। সেই নির্দেশে ছাত্রছাত্রীদের মতামত ইত্যাদি যা তারা বোঝে না বা সামান্য বোঝে তা মোটেই কম্য নয়। তোমাদের আগের শিক্ষক হয়তো তোমাদের কথা বলার লাইসেন্স দিয়েছিলেন; কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ হয়তো প্রফেসর কুইরেল।

–ঠিক বলেছেন, কুইরেল একজন মহান শিক্ষক ছিলেন, হ্যারি খুব জোরে জোরে বললো, তার মধ্যে সামান্য একটা পিছিয়ে আসা স্বভাব ছিলো। লর্ড ভোল্ডেমর্ট সর্বদা তাকে পেছন থেকে প্রতিরোধ করতেন।

কথাটা হ্যারি বলার পর ক্লাশরুম নীরব হয়ে গেল। এতো নীরব নিস্তব্ধ যে একটা উঁচ পড়লে তার শব্দ শোনা যায়।

আমব্রিজ বিরক্তি মাখা মুখে বললেন–আমার মনে হয় মি. পটার দ্বিতীয়বার তোমার সাতদিন ডিটেনসনের একান্তই প্রয়োজন।

***

হ্যারির হাতের কাটা ঘাটা প্রায় শুকিয়ে এসেছিল, পরেরদিন সকালে আবার সেই কাটা জায়গা থেকে রক্তপাত শুরু হলো। সন্ধ্যাবেলা ডিটেনসনের সময় ও কোনও অভিযোগ করেনি, ও আমব্রিজকে কোনও রকম সুযোগ দিতে চায় না। আবার তাকে সেই একই কথা বার বার লিখে যেতে হলো, আমি কখনই মিথ্যে বলবো না। লেখার সময় সেই কাটা দাগ থেকে টপটপ করে রক্ত পড়লেও ও চুপ করে রইলো। প্রতিটি অক্ষর তাজা রক্তে লাল হয়ে যেতে লাগলো।

জর্জ আগেই বলে দিয়েছিলো, কিডিচ মাঠে তুমি প্র্যাকটিস ম্যাচে না গেলে অ্যাঞ্জেলিনা ক্ষেপে যাবে। অক্ষরে অক্ষরে জর্জের কথা ফলে গেলো।

ব্রেকফাস্ট টেবিলে অ্যাঞ্জেলিনা হ্যারিকে ধরলো। সেদিন ছিল মঙ্গলবার ও এতো জোরে চেঁচাচ্ছিল যে, শুনে প্রফেসর ম্যাকগোলাগল স্টাফ টেবিল থেকে ছুটে এলেন।

–মিস জনসন, আশ্চর্য! গ্রেট হলে দাঁড়িয়ে তোমাকে চেঁচাবার সাহস কে জোগালো? পাঁচ পয়েন্ট গ্রিফির থেকে কাটা গেলো।

–কিন্তু প্রফেসর, ওকে প্রফেসর আমব্রিজ সাতদিন ডিটেনসনের পানিশমেন্ট দিয়েছেন।

–কী ব্যাপার পটার? প্রফেসর ম্যাকগোনাগল হ্যারিকে জিজ্ঞেস করলেন।

–প্রফেসর আমব্রিজ! হ্যারি বিড়বিড় করে বললো। চোখ ওর অন্যদিকে।

–উত্তরটা তুমি কাকে দিচ্ছ হ্যারিপটার? আমাকে দিলে আমার দিকে তাকিয়ে বলবে। কথাটা খুব আস্তে আস্তে বললেন, যাতে র‍্যাভেনক্লয়ের ছাত্র-ছাত্রী শুনতে না পায়। সতর্ক করে দেয়া সত্ত্বেও আবার তুমি আমব্রিজের ক্লাসে মাথা গরম করেছো?

মাথা নিচু করে হ্যারি বললো, হ্যাঁ ম্যাডাম।

–পটার এবার তুমি নিজেকে সংযত না করলে, সত্যি তুমি ভীষণ বিপদে পড়বে! আরও পাঁচ পয়েন্ট গ্রিফিন্ডরদের কাটা গেলে।

ওই অন্যায়ভাবে নম্বর কাটার বিরুদ্ধচারণ করে হ্যারি বললো, কিন্তু কেন প্রফেসর? আমি তো কোনও দোষ করিনি। আমাকে তো আমব্রিজ শাস্তি দিচ্ছেন, তার ওপর আপনিও পয়েন্ট কাটলেন?

–কারণ ঘরে কয়েদ থেকেও তোমার কোনও শিক্ষা হয়নি। আর যেন তোমার সম্বন্ধে কোনও নালিশ না শুনি। ম্যাকগোনাগল বললেন, হ্যাঁ, মিস জনসন তোমার বকবকানি, চেঁচামেচি গ্রেটহলে না করে কিডিচ খেলার মাঠে করবে। যদি আবার করো তাহলে কিডিচ টিমের ক্যাপ্টেনসি তোমাকে খোয়াতে হবে।

–আশ্চর্য! কথায় কথায় আমাদের নম্বর কেটে দিচ্ছেন। বলো অন্যায় নয়? আমি তো রাতে হাতের ব্যাথায় ছটফট করি তার ওপর অন্যায়ভাবে আমাকে শাস্তি দিচ্ছেন, হ্যারি রেগে গিয়ে বললো।

রন বললো, আসল ব্যাপার হচ্ছে ওর এখন মাথা ঠিক নেই। হারমিওন ডেইলি প্রফেটের পাতা ওল্টাচ্ছিলো। রনের কথাগুলো শুনে চুপ করে রইলো।

তারপর হারমিওন শান্ত সুরে বললো, আসলে তিনি পয়েন্ট কাটেননি। তোমাকে আমব্রিজের সঙ্গে তর্কাতর্কি করতে নিষেধ করেছেন।

ডেইলি ফেটের প্রথম পৃষ্ঠায় ফাজের ছবি ছেপেছে। ছবিটা দেখে মনে হয় রেগে মেগে কোনও ভাষণ দিচ্ছেন।

হ্যারি চার্মসের ক্লাশে হারমিওনের সঙ্গে কোনোও কথা বললো না। কিন্তু সে আর কতক্ষণ? ট্রান্সমিগারেসনের ক্লাশে ঢোকার সময় ভুলেই গেলো ওর হারমিওনের ওপোর রাগের ব্যাপারটা। প্রফেসর আমব্রিজ ক্লিপবোর্ড হাতে নিয়ে ক্লাশরুমে অনাবশ্যক মুখটা গোমড়া করে বসেছিলেন। তাকে দেখে ব্যারির শুধু মেজাজ বিগড়ে গেলো না, একটু আগের সুন্দর ব্রেকফাস্টের কথা মাথা থেকে উবে গেল।

–অতি চমৎকার, রন ওর নির্দিষ্ট সিটে বসতে বসতে বললো–দাঁড়াও, আমব্রিজকে সিধে করা যায় কিনা দেখছি।

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল ক্লাশরুমে ঢুকলেন। আমব্রিজ যে এককোণে ক্লিপবোর্ড নিয়ে বসে রয়েছেন তা দেখেও দেখলেন না।

–ঠিক আছে, ম্যাকগোনাগল ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে তাকালেন। ছেলে-মেয়েরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ করলো, মি. ফিন্নিগ্যান, এখানে এসে তোমার হোমওয়ার্কের খাতাটা রেখে যাও। মিস ব্রাউন এই ইঁদুর ভর্তি বাক্সটা ধরো, আহ অযথা ন্যাকামী করবে না। ইঁদুর ছানা তোমাকে কামড়াবে না, সকলের হাতে একটা করে ইঁদুর ছানা দাও।

–হেম হেম, প্রফেসর আমব্রিজ খুক খুক করে কাশলেন। প্রফেসর ম্যাকগোনাগলও ওকে দেখলেন। সিমাস, হ্যারির খাতাটা হ্যারির হাতে দিলে হ্যারি ওর মুখের দিকে না তাকিয়ে দেখলো–ও এ গ্রেড পেয়েছে।

–ঠিক আছে এবার তোমরা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোন।

–ডিন টমাস, তুমি আবার যদি ইঁদুরটা নিয়ে দুষ্টুমী করো তাহলে ডিটেনসন করতে বাধ্য হবো। হ্যাঁ, তোমরা প্রায় সকলেই শামুক অদৃশ্য করতে পেরেছো? বাকিরা না পারলেও পারবে।

আজ আমরা…।

–হেম হেম, প্রফেসর আমব্রিজ কাশলেন খুক খুক করে।

–হা, কি বলছেন? প্রফেসর ম্যাকগোলাগল দুটো ভুরু এমনভাবে কোঁচকালেন দেখে মনে হলো একটি কালো সরল রেখা।

–প্রফেসর ম্যাকগোনাগল আপনি কী আমার নোটটা পাননি? তাতে আমি আপনার সঙ্গে আলোচনার তারিখ, সময় জানিয়েছিলাম। বিশেষ করে আজকের ইন্সপেকসনের।

–অবশ্যই পেয়েছি, না পারার কোনও কারণ নেই। কথাটা বলেই ম্যাকগোনাগল আমব্রিজের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধু নয় অত্যান্ত দৃঢ়ভাবে বললেন, কিন্তু আমি কী আপনাকে প্রশ্ন করতে পারি এই সময়ে আপনি আমার ক্লাশে কেন এসেছেন? ক্লাশের ছেলে-মেয়েরা ম্যাগকোনাগলের কথা শুনে হকচকিয়ে তাকিয়ে রইলো। হ্যাঁ, তোমাদের আমি কি বলছিলাম? ও হ্যাঁ, আজ আমরা একটি অতি দুরূহ জিনিস প্র্যাকটিস করবো ইঁদুরদের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া। এখন অদৃশ্য হওয়ার স্পেল।

–হেম হেম, আমব্রিজ কাশলেন খুক খুক করে।

–আমি সত্যি অবাক হচ্ছি প্রফেসর। অতি কঠোর স্বরে আমব্রিজের দিকে তাকিয়ে ম্যাকগোনাগল বললেন এমনিভাবে যদি আমার ক্লাশে এসে বসেন ও বার বার বাধা সৃষ্টি করেন তাহলে কি করে আশা করতে পারেন আমার শিক্ষা দেবার পদ্ধতির আইডিয়া পাবেন? আমি সাধারণত: আমার কথা বলার সময় অন্য কেউ কথা বললে তা আমি বরদাস্ত করি না।

আমব্রিজ এমনভাবে ম্যাকগোনাগলের দিকে হতবাক হয়ে তাকালেন যেন সকলের সামনে ম্যাকগোনাগল ওর গালে কষে একটি চড় মেরেছেন। কোনও কথা না বলে আমব্রিজ ফাইলের পাতাগুলো অনাবশ্যকভাবে নাড়াচাড়া করতে লাগলেন।

ম্যাকগোনাগল কোনওরকম ক্রুক্ষেপ না করে আবার ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে কিছু বলার জন্য তাকালেন।

–বলছিলাম অদৃশ্য করে দেয়ার স্পেল, অনেক সময় যাকে অদৃশ্য করছি তার। বহুবিধ জটিল অবস্থার ওপর নির্ভর করে। শামুক অতি নিরীহ কিন্তু তোমাদের হাতের ইঁদুর সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। এবার তোমরা মন দিয়ে দেখো আমি কি করছি। হ্যারি রনকে বললো, আশ্চর্য! একদিক থেকে আমাকে আমব্রিজের সঙ্গে তর্ক করতে মানা করছেন, অন্যদিকে নিজেই…।

আমব্রিজ সকলকে ঠেলেঠুলে হাতে ক্লিপবোর্ড নিয়ে ম্যাকগোনাগলের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, আপনি হোগওয়ার্টস স্কুলে কত বছর শিক্ষকতা করছেন?

ম্যাকগোনাগল তার ব্যাগটা ফটাস করে বন্ধ করে নিস্পৃহ কণ্ঠে বললেন, সামনের ডিসেম্বর এলে ঊনচল্লিশ বছর হবে।

আমব্রিজ ফাইলে নোট করলেন।

–ধন্যবাদ পরে আমার ইন্সপেকসনের ফলাফল পেয়ে যাবেন আপনি।

ম্যাকগোনাগল বললেন, অপেক্ষায় থাকবো। হ্যারি, রন, হারমিওন তোমরা তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করো।

ক্লাশের কাজ শেষ করে ওরা তিনজনে কেয়ার অফ ম্যাজিক্যাল ক্রিচারের জন্য অরণ্যের দিকে চললো। যেতে যেতে দেখলো আমব্রিজ প্ল্যাঙ্ককে কিছু প্রশ্ন করছেন।

গ্রাবলি প্যাঙ্ক হাতের বলটা বাউন্স করতে করতে বললেন, আমি একজন সাবস্টিটিউট শিক্ষক। হ্যাগ্রিডের অনুপস্থিতিতে ছেলে-মেয়েদের পড়াচ্ছি।

হ্যারি একটু পাস ফিরে দেখল ত্রি-মূর্তি দাঁড়িয়ে রয়েছে। হ্যাগ্রিড সম্বন্ধে আমব্রিজকে কিছু বলবে সে সম্বন্ধে হ্যারি নিশ্চিত।

–আচ্ছা বলতে পারেন হ্যাগ্রিডের লীভ এক্সটেড করার কারণ কী? প্যাঙ্ককে প্রশ্ন করলেন।

–হ্যারি দেখল ম্যালফয় কান খাড়া করে আমব্রিজ আর প্ল্যাঙ্কের কথোপোকথন শুনছে।

–আমি ঠিক আপনারই মত অজ্ঞ। কারণ জানি না। কিছুদিন আগে আউল মারফত একটা চিঠি পেয়েছি, লিখেছেন, প্রফেসর ডাম্বলডোর। জানতে চেয়েছেন আমি অস্থায়ীভাবে এই স্কুলে শিক্ষকতা করতে আগ্রহী কিনা। আমি চিঠিটা পাবার পর জানালাম, অবশ্যই। এছাড়া আর কিছু জানানোর নেই। আমি কি এবার কাজ শুরু করতে পারি প্রফেসর আমব্রিজ?

প্রফেসর আমব্রিজ প্লাঙ্ককে বললেন, হ্যাঁ পারেন। ফাইলে কিছু লিখতে ভুললেন আমব্রিজ।

ডিন টমাসের সঙ্গে কথাবার্তার পর আমব্রিজ আবার প্লাঙ্ককে নিয়ে বসলেন।

–আচ্ছা হোগওয়ার্টস স্কুল আপনার কেমন লাগছে? আপনি কী স্কুল ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে যথেষ্ট কাজের উৎসাহ পাচ্ছেন?

–অবশ্যই, অবশ্যই। ডাম্বলডোর অতি সজ্জন মানুষ, প্রফেসর গ্রাবলিপ্লাঙ্ক উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, দারুণ সুন্দরভাবে সবকিছু চলছে, আমি সব ব্যাপারে খুবই আনন্দিত।

কথাটা শুনে মনে হলো আমব্রিজ খুব একটা খুশি হলেন না। নোট লিখতে লিখতে বললেন, ধরুন হ্যাগ্রিড আর জয়েন করলেন না, তাহলে তার কাজটা সম্পূর্ণ করতে পারবেন?

গ্রাবলিপ্ল্যাঙ্ক বললেন, একটুও না। উনি প্রায় কোর্স শেষ করে ফেলেছেন সেগুলো আউল পর্যন্ত আসবে। ইউনিকর্নস আর নিফলারস প্রায় শেষ করেছেন। আমার মনে হয় পরলকস আর নিজলস শেষ করতে পারবো, সব ঠিকঠাক চলছে।

অদূরে গোয়েলের দিকে তাকিয়ে আমব্রিজ বললেন, শুনেছি তোমাদের ক্লাশে কিছু আঘাত টাঘাত লেগেছে…।

গোয়েল কথাটা শুনে বোকার মত দাঁত বার করে হাসলো। ম্যালফয় এগিয়ে এসে বললো, আমার স্যার, আমাকে একটা হিপোগ্রাফ–ওর মত লম্বা সরু সরু করে হাত কেটেছে।

আমব্রিজ লিখতে লিখতে বললেন–হিপোগ্রাফ?

হ্যারি বললো, হ্যাঁ স্যার করবেই তো। প্রফেসর হ্যাগ্রিড ওকে যেমনভাবে ট্রিট করতে বলেছিলেন তাও করেননি।

–আর একটি ডিটেনসন, আমব্রিজ হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললেন, ধন্যবাদ প্রফেসর প্ল্যাঙ্ক দশদিনের মধ্যে ইনসপেকসন রিপোর্ট পেয়ে যাবেন।

প্রফেসর প্ল্যাঙ্ক বললেন, শুনে আনন্দিত হলাম।

প্রফেসর আমব্রিজ লনের উপর দিয়ে ক্যাসেলে যাবার জন্য চললেন।

আমব্রিজের ডিটেনসন শেষ করে হ্যারির গভীর রাত হয়ে গেলো। ওর কেটে যাওয়া হাত থেকে তখন গল গল করে রক্ত বেরোচ্ছে। ও রক্ত বন্ধ করার জন্য রুমাল দিয়ে ক্ষতটা বাধলো। কমনরুমে ঢোকার আগে ভেবেছিল রন, হারমিওন ওদের ঘরে চলে গেছে, কিন্তু তার বদলে ওদের বসে থাকতে দেখে খুশি হলো। হারমিওন কোন সময়ে কখনই ওকে সমালোচনা করে না। বুঝতে পারলো হ্যারির মনের কষ্ট আর হাতের যন্ত্রণা।

–এখানে বসে ওই গামলা ভর্তি ওষুধের জলে হাত ডোবাও তাহলে আরাম। হবে। এটা স্ট্রেইন্ড অ্যান্ড পিকিল্ড মার্টলেপের সলিউসন।

হ্যারি হারমিওনের কথামতো ওর হাতটা হলুদ বর্ণের জলে ডোবাতেই ব্যথা বেদনা অনেকটা কমে গেলো। কশ্যাঙ্ক কাছেই গুটিগুটি হয়ে শুয়েছিল, হ্যারিকে দেখে লাফাতে লাফাতে ওর কোলে চেপে বসলো। বাঁ হাতে ওর কানের তলা চুলকে দিতে দিতে হ্যারি বললো, কেমন আছ?

রন বললো, আমার মনে হয় তোমার একটা কমপ্লেন করা দরকার। ইচ্ছে করে আমব্রিজ তোমার প্রতি অন্যায়-অবিচার করে চলেছেন। মহিলাকে শিক্ষা দেয়া দরকার।

–না, কোনও প্রয়োজন নেই, হ্যারি সরাসরি বললো।

–ম্যাগগোনাগল জানলে রাগ করবেন?

হ্যারি বললো, সন্দেহ নেই করতে পারেন। তুমি তো জানো মিনিস্ট্রি আইনের বলে ওকে অনেক ক্ষমতা দিয়েছে। কমপ্লেন টমপ্লেন এই সময়ে করলে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিতে পারেন। চুপ থাকাই ভালো।

রন কিছু বলতে গিয়েও হ্যারির কথাটা শুনে চুপ করে গেলো। আমব্রিজ অনেক ক্ষমতা পেয়েছেন, আপাতত হার স্বীকার করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

–মহিলা দারুণ বীভৎস! এই কথাটা আমি আসবার আগে রনকে বলছিলাম। হারমিওন সংক্ষেপে বললো–ওকে কি করে ঠাণ্ডা করা যাবে পরে ভাবতে হবে।

রন বললো, বিষ দিলে কেমন হয়?

–ভয়ঙ্কর বিরক্তিকর শিক্ষক, ভাবছি আর আমরা ওর কাছ থেকে ডিফেন্স সম্বন্ধে কিছু শিখবো না। হারমিওন বললো, আমি কয়েকদিন ধরে সিরিয়াসলি এই কথাটা ভাবছি, শুধু সময়ের অপেক্ষা। যা করবো নিজেরাই করবো।

হ্যারি বললো, আমরা করবো? তখনও ওর হাত গামলার জলে ডোবানো।

হারমিওন বললো, ডার্ক আর্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আমাদের নিজেদের শিখতে হবে।

রন বললো, আরে ওইসব উদ্ভট চিন্তা মাথায় এনো না। আমাদের সময় কোথায়? হোমওয়ার্ক করতে করতে নাস্তানাবুদ। অনেক ইমপর্টেন্ট হোমওয়ার্ক বাকি আছে।

হারমিওন বললো, আমার মনে হয় এটা হোমওয়ার্কের চাইতে অনেক বেশি ইমপর্টেন্ট!

হ্যারি-রন ওর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

–আমি মনে করি না, পৃথিবীতে আমার হোমওয়ার্ক এর চাইতে অন্য কিছু ইমপর্টেন্ট হতে পারে, রন বললো।

–বোকার মতো কথা বলবে না হারমিওন। হ্যারি লক্ষ্য করলো হারমিওনের চোখ মুখ হঠাৎ খুব ঝলমল করে উঠলো। যেমন ওর স্পিউ শুনলে হয়।

–আমাদের একটা বছর নষ্ট হবার সম্ভাবনা আছে।

রন বললো, আমরা তিনজনে কি করতে পারি। আমার মনে হয় লাইব্রেরিতে বসে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা কেমন করে হটানো যায় সে সম্বন্ধে পড়াশোনা করা উচিত।

–না, আমাদের বই পড়ে শেখার দিন চলে গেছে, হারমিওন বললো।

–আমাদের একজন দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন যিনি আমাদের শেখাবেন কেমন করে জাদুমন্ত্র (স্পেল) ব্যবহার করতে হয়, ভুল হলে তিনি শুধরে দেবেন।

হ্যারি বললো, তোমরা কি লুপিন সম্বন্ধে বলছো?

–না না না লুপিনের কথা বলছিনে, হারমিওন বললো, উনি এখন ডাম্বলডোরের অফিস অর্ডার নিয়ে খুব ব্যস্ত। হগসমিডে যদি আসেন তাহলে কথা বলতে পারি। মনে হয় সম্ভাবনা কম।

হ্যারি ভুরু কুঁচকে বললো–তাহলে কে?

হারমিওন খুব বড় দেখে একটা নিঃশ্বাস ফেললো।

পরে বললো হ্যারি, আমরা তোমার কথা ভাবছি।

সবাই চুপ করে রইলো। রাতের ঠাণ্ডা হাওয়া ঘরের কাঁচের পাল্লাতে ধাক্কা দিচ্ছে তারই খট খট শব্দ শুধু শোনা যায়।

হ্যারি বললো, আমার সমন্ধে? কি সব বলছো?

~ আমরা বলছি তোমার কথা। তুমি আমাদের ডার্ক আর্টের বিরুদ্ধে মন্ত্র প্রয়োগ শেখাবে।

হ্যারি হারমিওনের মুখের দিকে তাকালো। তারপর রনের দিকে। অনেকটা হারমিওন যখন ভাবাবেগে স্পিড সম্বন্ধে ওদের কাছে বলে। যাইহোক রন চুপ করে রইল।

রন কিছু যেন ভাবছিলো, তারপর হঠাৎ বললো, দারুণ বলেছে।

–দারুণ কি বলেছে? হ্যারি একটু আশ্চর্য হয়ে বললো।

–তুমি, রন বললো, তুমি আমাদের শেখাবে।

–কিন্তু…। হ্যারি হাসলো। বুঝতে পেরেছে যে ওরা দুজনে ওকে লেগ পুলিং করছে।

–কিন্তু, আমিতো টিচার নই, কিছুই জানি না, না না আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আমি পারবো না। তোমাদের মতলবটা কি বলতো?

–তুমি এই বছরে ডার্ক আর্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে দ্য বেস্ট হয়েছে সেটা আমরা ভুলিনি, হারমিওন বললো।

–আমি। হ্যারি বললো। হো হো করে হেসে উঠলো হ্যারি। খুব ভাল করেই জানো আমি নই, তুমি সবটেস্টে আমায় হারিয়ে দিয়েছ।

–ঠিক বলছো না, আমি হারিয়ে দিইনি, হারমিওন ধীর স্থিরভাবে বললো, তুমি থার্ড ইয়ারে আমার চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছিলে। সেই সময়ে আমরা একই সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছিলাম, একজন টিচারও ছিলেন, তিনি সাবজেক্টটা ভালোভাবেই জানতেন। আমি শুধু টেস্টের রেজাল্ট বলছি না হ্যারি, মনে করবার চেষ্টা করো তুমি কি করেছিলে?

–তুমি কী বলতে চাও শুনি?

–কি চাই ভাল করেই জান, আমি চাই আমাদের মতো স্টুপিডকে কেউ শেখাবে, রন হারমিওনকে বললো। বলার পর হ্যারির দিকে তাকালো।

–ব্যাপারটা ভাল করে ভাবা যাক, মুখের ভাব অনেকটা গোয়েলের মত করলো, হু ফাস্ট ইয়ার। তুমি ফিলোসফার স্টোন রক্ষা করেছিলে, ইউ-নো-হুর কবল থেকে।

–হ্যারি বললো, ওটা ভাগ্যের ব্যাপার ছিলো, কোনও দক্ষতা টক্ষতা নয়।

–রন বাধা দিয়ে বললো, সেকেন্ড ইয়ারে, তুমি ব্যাসিলিস্ককে মেরে ফেলেছিলে আর রিভিলকে ধ্বংস করেছিলে।

–হ্যাঁ কিন্তু ফকেস যদি না আসতো?

–রন খুব জোরে বললো, তৃতীয় বছরে একশটা ডিমেনটর্সের সঙ্গে তুমি একাই লড়েছে।

–তুমি ভাল করেই জানো ওটা অপ্রত্যাশিত ব্যাপার যদি টাইম টার্নার না থাকতো…।

–রন অসম্ভব জোরে বললো, গত বছরে তুমি ইউ-নো-হুর সঙ্গে আবার লড়াই করেছিলে।

–হ্যারি বেশ রাগ করে বললো, আমার কথা শুনবে! (রন, হারমিওন দুজনেই বোকার মত মুখ করে হাসছে) বেশ, তোমরা বলছে শুনতে মন্দ লাগছে না, তবে সবগুলোই ভাগ্য বলতে হবে। ঘটে গেছে, আমি কোনও ছক কষিনি, চেষ্টা করেছি মাত্র। তাছাড়া তোমাদের সাহায্য ছাড়া নয়।

রন আর হারমিওনকে তখনও বোকাবোকা মুখ করে হাসতে দেখে হ্যারি আরও রেগে গেলো। কেন যে এতো রেগেছে বুঝতে পারে না।

–বোকার মত আমার দিকে তাকিয়ে হাসবে না বলে দিলাম। তোমরা সবাই ভাল করেই জানো যা কিছু হয়েছে সবই তোমাদের সাহায্যে। আমার একার কোনো কৃতিত্ব ছিলো না। ডার্ক আর্ট ও তার প্রতিরোধ আমি ভাল করেই জানি। জানাটা বড় কথা নয়, সাহায্য বড় কথা। যথা সময়ে সাহায্য অথবা ভাগ্য। তোমরা হাসি থামাবে!

যে গামলায় ও হাত ডুবিয়ে রেখেছিল সেটা মাটিতে পড়ে ভেঙে গেলো ও নিজেই জানে না কখন ও দাঁড়িয়েছে। ক্রুকশ্যাংক লাফিয়ে পালিয়ে গেলো। ওর আচমকা রুদ্রমূর্তি দেখে রন আর হারমিওনের মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো।

–তোমরা সব ব্যাপারটা ঠিক জানো না, তোমরা দুজনেই না, কারণ তাকে তোমাদের ফেস করতে হয়নি, করেছো? তোমাদের ধারণা কতগুলো স্পেল মুখস্ত করে ওর দিকে ছুঁড়ে মেরে পরাস্ত করা যায়? তোমরা তোমাদের সম্বন্ধে ছাড়া অন্যকিছু ভাবো না। ভাবতে পারো, তোমরা নিশ্চিত মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর এক মুহূর্ত পরে তোমাকে হত্যা করা হবে, টর্চার করে জর্জরিত করা হবে, অথবা চোখের সামনে তোমাদের প্রিয়জন, বন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার কথা? আমাদের ক্লাশে কি করে ওইসব মোকাবিলা করতে হবে শেখানো হয়েছে? ক্লাশে কোনও শিক্ষক আমাদের শেখায়নি। তোমরা কী জানো ভোল্ডেমর্ট আমার বাবা মাকে হত্যা করেছে, আমারও মৃত্যু চায়?

–আমরা সত্যি তা চাই না বন্ধু, রন বললো। মুখে ওর বেদনার ছাপ, ডিগরিকে হারিয়ে আমরাও কী দুঃখ পাইনি?

হারমিওন চুপ করে হ্যারির কথা শুনছিলো। ও জানে হ্যারি রাগলে, উত্তেজিত হলে এমনি তার প্রকাশ করে।

–ও ভীরু ভীরু মুখে বললো–তুমি কী বুঝতে পারছো না হ্যারি, এই কারণেই আমরা তোমাকে চাই। আমরা জানতে চাই ভোল্ডেমর্টকে ফেস করতে হলে কেমনভাবে আমাদের সুরক্ষিত হতে হবে।

এই প্রথম হারমিওনকে অসহায়ের মতো দেখলো, ভোল্টেমর্টের নাম মুখে আনলো। হ্যারি চুপ করে গেলো। কিন্তু হাঁফাতে লাগলো তারপর চেয়ারে বসে পড়লো। ওর হাতের ক্ষতটা দব দব করতে লাগলো।

ওর মনে হলো, রাগের মাথায় মার্টলেপের গামলাটা ভেঙে ফেলে ঠিক করেনি।

হারমিওন শান্তভাবে বললো, প্লিজ? হ্যারিও ওইরকম হঠাৎ রেগে যা মুখে আসে তাই বলাতে খুব লজ্জিত বোধ করতে লাগলো। ও সম্মতি জানালো ঘাড় নেড়ে। কিন্তু জানে না, বুঝতে পারলো না ওদের অনুরোধ মেনে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো।

হারমিওন উঠে দাঁড়ালো।

–আমি এখন শুতে চললাম। শুভ রাত্রি।

রনও উঠে দাঁড়ালো।

–চলল, হ্যারিকে বললো। –

-এক মিনিট, হ্যারি বললো।

জাদুদণ্ডটা তুলে মেঝেতে পড়ে থাকা ভগ্ন গামলাটা ছুঁইয়ে বললো, রিপ্যারো সঙ্গে সঙ্গে ওটা নতুন হয়ে গেলো। কিন্তু তাতে তো আর মার্টল্যাপ নির্যাস নেই!

এতো ক্লান্ত যে ও ঘরে ফিরতে চাইলো না। চেয়ারে বসে ঘুমোতে চাইলো। কিন্তু কোনও রকমে টলতে টলতে রনের পিছু পিছু চললো। রাতে ঘুম হলো না, বারে বারে ও একই স্বপ্ন দেখলো, লম্বা করিডর আর তালা দেয়া দরোজাগুলো। সকাল বেলা বিছানা ছেড়ে ওঠার পর ওর কাটাদাগটা খুব চুলকোতে লাগলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *