১৪. পার্সি অ্যান্ড প্যাডফুট

১৪. পার্সি অ্যান্ড প্যাডফুট

ডরমেটরিতে সবার আগে হ্যারির ঘুম ভাঙ্গল। ও চুপ করে শুয়ে পোস্টারের ফাঁক দিয়ে সূর্যের কিরণে ছোট ছোট ধূলিকণা ভাসতে দেখল। সেদিন ছিল শনিবার। জাদুবিদ্যা অনুশীলনের আঁকাবাঁকা ইতিহাসের মত নতুন টার্মের প্রথম সপ্তাহটা হ্যারিকে টেনে চলল দিশাহীনভাবে।

তাহলে দিন শুরু হল। হ্যারি ঝটপট বিছানা ছেড়ে উঠে নাইট ড্রেস ছেড়ে কাঁচা জামা-প্যান্ট পরে নিল। অদূর থেকে মৃদু মৃদু পাখির ডাক ভেসে আসছে, অনেকটা ওর গ্রিফিন্ডের ঘুমন্ত বন্ধুদের নিশ্বাস ফেলার শব্দের মতো। ও স্কুল ব্যাগটা খুব সন্তর্পণে খুলে পার্চমেন্ট আর পালকের কলমটা নিয়ে কমনরুমের দিকে চলল।

প্রায় নিভন্ত ফায়ার প্লেসের কাছে ওর প্রিয় পুরনো দিনের আর্ম চেয়ারটা টেনে এনে, আরাম করে বসে ঘরটা দেখতে দেখতে পার্চমেন্টগুলো খুলল। গত রাতের ছেঁড়া পার্চমেন্টের টুকরো, পুরনো গবস্টোন, ছোট ছোট জার, শিশি বোতল, বিস্কুট-চকোলেটের মোড়ক আর কোথাও পড়ে নেই। সেগুলো হারমিওনের বানান টুপির মতো অদৃশ্য হয়ে গেছে। ও ভাবতে চেষ্টা করল এখনও পর্যন্ত কত খর্বকায় গৃহ পরিচারকরা তাদের নিজেদের ইচ্ছে (এলফরা) বা অনিচ্ছায় সেই টুপি পরে কাজ ছেড়ে চলে গেছে। হ্যারি দোয়াতের ছিপি খুলে কলমটা কালি ভর্তি দোয়াতে চোবাল। তারপর হলুদ পার্চমেন্টের প্রায় এক ইঞ্চি ওপরে কলমটা ধরে রাখল। ভাবতে থাকে কেমন করে শুরু করবে। এক মিনিট, দুমিনিট কেটে গেল, কলমটা যেমনভাবে ধরেছিল তেমনি রইল, একটা অক্ষরও লিখতে পারে নি। সবকিছু যেন ওর কাছে তালগোল পাকিয়ে গেছে, কিছুই মনে করতে পারছে না। নিজের অসহায়তা দেখে আন্দাজ করতে পারল কেন গরমের ছুটিতে রন-হারমিওন ওকে চিঠি লিখতে পারে নি। ভাবার চেয়ে লেখা কঠিন ও বুঝতে পারল। কিছুতেই ওর মাথায় আসছে না গত সপ্তাহের বিভিন্ন ঘটনা সিরিয়সকে কিভাবে লিখবে। অনেক প্রশ্ন, অনেক জটিল প্রশ্ন যা করতে চায়। চিঠি লেখা হলে তো চিঠির মাঝপথে মেনে নেয়ার প্রশ্ন আসে?

ও নির্বাক-নিশ্চল হয়ে বসে রইল। ফায়ার প্লেসের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে শেষ পর্যন্ত একটা কিছু লেখার জন্য হাত সজাগ হয়ে উঠল। আবার ও পাখির পালকের কলমটা সামনে রাখা কালির দোয়াতে চুবিয়ে নিয়ে লিখতে শুরু করল।

প্রিয় স্নাফলস্ আশা করি আপনি ভাল আছেন, ওখান থেকে ফিরে স্কুলের প্রথম সপ্তাহটা বড় বিশ্রীভাবে কেটেছে। আজ শনিবার ছুটির দিন তাই মনে খুব আনন্দ।

আমাদের স্কুলে নতুন এক টিচার ডার্ক আর্টের প্রতিরোধ শেখাবার জন্য এসেছেন। নাম প্রফেসর আমব্রিজ। তিনি মাদাম মায়ের মতই অতি স্নেহপরায়ণ ও ভাল! আপনাকে লিখছি তার প্রধান কারণ এই যে গত গরমকালের ছুটিতে যা ঘটেছিল তা গত রাতে আবার ঘটেছে, যখন আমি আমব্রিজের ঘরে আটক হয়েছিলাম।

আমরা আমাদের সবার প্রিয় বড় বন্ধুকে সর্বদাই হারাচ্ছি, আমরা আশা করছি তিনি শিঘ্রই ফিরে আসবেন।

খুব তাড়াতাড়ি আমার চিঠির উত্তর দেবেন। শুভেচ্ছাসহ হ্যারি

চিঠিটা লেখার পর হ্যারি সেটা বেশ কয়েকবার পড়ল। চিঠিতে এমন কিছু সংকেত বা ইঙ্গিত দেয়নি যাতে কিছু বোঝা যাবে–যদি অন্য কেউ সেটা পড়ে। চিঠিটা পড়ে হ্যারির মনোভাব বুঝতে সিরিয়সের একটুও অসুবিধা হবে না, হ্যাগ্রিড সম্বন্ধে কিছু আভাস দিতে পারবেন। হ্যাগ্রিড হোগার্টসে নেই তাই ওর নাম করে কিছু লিখল না।

চিঠিটা আকারে ছোট হলেও হ্যারির লিখতে অনেক সময় লাগল। সূর্য তখন আকাশে বেশ ওপরে উঠে গেছে।

চিঠির মুখটা ভাল করে সেঁটে পাঠাবার জন্য প্যাচাঁদের বাসস্থান আউলারির দিকে যাবার জন্য দাঁড়াল। ওপরের ডরমেটরিতে ছাত্রছাত্রীদের পদশব্দ শুনতে পেল। ওরা কমনরুমে আসার আগেই ঘর থেকে বেরিয়ে করিডর ধরে আউলারির দিকে চলল।

যেতে যেতে করিডরে দেখা হল হেডলেস নিকের সঙ্গে। নিক, পিভসকে নিয়ে বেশ মজার মজার কথা বললো। আউলারিতে যেতে হলে করিডরের শেষে ডানদিকে যেতে হবে। ও ডানে না গিয়ে বাঁদিকে ঘুরল। দূরত্ব একটু বেশি হলেও বিপদ-আপদের ভয় নেই। আউলারিতে গিয়ে হেডউইগের পায়ে চিঠিটা বেঁধে সিরিয়সকে পাঠিয়ে ওকে অন্য কাজকর্ম সেরে কিডিচ খেলার মাঠে যেতে হবে।

পথে কেয়ারটেকারের স্ত্রী মিসেস নরিসের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। মিসেস নরিস তার বাদামি রং-এর প্রিয় বেড়াল নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছেন। মিসেস নরিস একবার ল্যাম্পপোস্টের বাতির মত হলুদবর্ণ চোখে হ্যারির দিকে তাকিয়ে উইলফ্রেড দ্যা উইস্টফুলের মূর্তির আড়ালে চলে গেলেন। হ্যারি নীল আকাশের নিচে একটার পর একটা জানালা পার হয়ে আউলারিতে পৌঁছল। হ্যারি আউলারির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে মিসেস লরিসের বিরক্তিকর দৃষ্টির কথা ভাবল। মিসেস নরিসের বিশ্রী স্বভাব অকারণে তার স্বামীর কাছে ছাত্রছাত্রীদের নামে নালিশ করা। সকাল সকাল হ্যারির প্যাচাঁদের আড্ডায় যাওয়ার (ঘুরপথে) জন্য হয়ত কিছু ভেবেছেন। হ্যারি মনে মনে বলল, ভাবুক–আমি তো কোন অন্যায় করিনি।

সূর্য তখন আকাশের অনেকটা উঠে এসেছে। হ্যারি আউলারিতে ঢুকল। কাঁচের জানালায় রোদ পড়ে চোখ ধাধিয়ে দিচ্ছে। প্যাচাঁদের গোলঘরে রূপালি সূর্যের কিরণ কুশাকারে পরস্পরকে ভেদ করে যাচ্ছে। ভোরের আলোতে প্রায় একশর মতো প্যাচা ঘরের চালে আড়াআড়ি করে রাখা কাঠের তৈরি বাসার ভেতর ছটফট করছে। খড় ফেলা মেঝের উপর দিয়ে হেঁটে হেডইউগের বাসার সামনে ও দাঁড়াল। ঘোট ঘোট হাড় আর খড় ফেলা মেঝেটা ওর পায়ের চাপের মড়মড় শব্দ শুনে হেডউইগ পিটপিট করে তাকালো।

–বা! তুমি এখানে দিব্যি আরামে রয়েছ। হেডউইগের বাসা ঘরের সিলিং এর নিচে। এদিকে এসো, তোমাকে একটা চিঠি নিয়ে যেতে হবে, হ্যারি বললো।

হেডউইগ খুব আস্তে ডাক দিয়ে ওর সাদা দুটো ডানা মেলে হ্যারির কাঁধের উপর বসল।

–ঠিক আছে, এই চিঠিটা তোমাকে সিরিয়সের জন্য নিয়ে যেতে হবে। ও কেন মৃদু ফিস ফিস করছে হ্যারি জানে না। ওর পায়ে চিঠিটা বাঁধতে বাঁধতে বললো, এটা সিরিয়সকে দেবে, বুঝলে আর কাউকে না, বুঝতে পেরেছ? হেডউইগ হুস শব্দ করে নীল আকাশে উড়ে গেল। হ্যারি মুখ উঁচু করে হেডউইগের দিকে তাকিয়ে রইল। ছোট এক কালো বিন্দুতে পরিণত হয়ে ওর দৃষ্টির বাইরে চলে গেল। তারপর ও হ্যাগ্রিডের কুটিরের দিকে তাকাল।

হ্যাগ্রিডের ঘোট কুটিরটি খুব কাছে। যেখানে হ্যারি দাঁড়িয়ে সেখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। খুব সম্ভব সেখানে হ্যাগ্রিড নেই, তাই চিমনি থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে না। ওর ঘরের সব জানালায় পর্দা ফেলা।

নিষিষ্ট বাগানের বড় বড় গাছগুলো হাওয়াতে দুলছে, ওর মুখে তাজা হাওয়া এসে লাগছে। কিডিচ মাঠের চিন্তা এখন মাথায় নেই।

হঠাৎ ওর চোখে পড়লো একটা প্রকাণ্ড, দুডানাওয়ালা ঘোড়া। অনেকটা, হোগার্টসে আসার সময় যেমন সব অদ্ভুত সরীসৃপের মতো ঘোড়া দেখেছিল তেমনই। চকচকে চামড়ার মতো কালো দুটো ডানা, টেরোডাকটাইল। (প্রাগৈতিহাসিক হিংস্র সরীসৃপের মতো, তারা উড়তে পারে) ঘোড়াটা দৈত্যাকার পাখির মতো গাছের ওপর বসল। তারপর গাছগুলোকে ঘিরে বিকট শব্দ করে উড়তে উড়তে গাছের জঙ্গলে বিলীন হয়ে গেল। সমস্ত দৃশ্যটা ক্ষণিক সামনে এসে দৃষ্টির বাইরে চলে গেল। হ্যারি ঠিক যেন বুঝতে পারল না ও সত্যি কিছু দেখেছে কি না। ওই ক্ষণিক ভয়ঙ্কর দৃশ্যের চাপে ওর বুকের ভেতরটা ধড়াস ধড়াস করতে থাকে, থামতে চায় না।

কে যেন আউলারির দরজাটা খুলল। শুনতে পেল কাঁচ কাঁচ শব্দ। হ্যারির সম্বিৎ ফিরে এল। পিছনে তাকিয়ে দেখল হাতে একটা চিঠি আর প্যাকেট নিয়ে চো চ্যাং দাঁড়িয়ে রয়েছে।

হঠাৎ চ্যাংকে দেখে হ্যারি অশান্ত মন কিছুটা শান্ত হল। বললো, সুপ্রভাত।

–তোমাকেও, চো বললো, ভাবতেই পারিনি এত সকালে তোমাকে এখানে দেখতে পাব। আমার মায়ের জন্মদিনের জন্য এটা পাঠাচ্ছি।

চো হাত তুলে প্যাকেটটা হ্যারিকে দেখাল।

–বা! সুন্দর, হ্যারি বললো। ওর মাথার ভেতরটা তখনও ভারি পাথর হয়ে আছে। তখনও সেই বীভৎস টেরোডাকটাইল হিংস্র সরীসৃপের মতো চেহারা ওর মনের মধ্যে রয়ে গেছে।

–আজকের দিনটা খুব সুন্দর! ওর মনের ভেতরটা সুন্দর আবহাওয়া সত্ত্বেও পরিস্থিতিতে কুঁকড়ে রয়েছে যেন।

–খুব ভাল, চো বললো, একটা চলনসই প্যাঁচার খোঁজ করছি। কিডিচ খেলার উপযুক্ত দিন তাই না? আমি সপ্তাহখানেক ওখানে যেতে পারিনি।

চো ছোট মতো একটা প্যাচা বেছে নিয়ে কোলে তুলে ওর গায়ে হাত বোলাতেই একটা পা বাড়িয়ে দিল প্যাচাটা। উদ্দেশ্য, আমি ওড়ার জন্য তো সদাই প্রস্তুত।

চো বললো, হাই! গ্রিফিন্ডর নতুন কোনও কীপার পেয়েছে কিনা শুনেছ? হ্যারি বললো, হ্যাঁ পেয়েছে। আমার বন্ধু রনকে। তুমি তো তাকে চেন?

চো বললো, ও সেই টর্নেডো বিদ্বেষী? কোনও রাখঢাক নেই ওর কথায়। যাবে?

হ্যারি বললো, কেন নয়। অবশ্য আমি আটক থাকার জন্য সিলেকসন দেখতে পাইনি।

চো প্যাচার পায়ে পার্সেলটা বাঁধতে বাঁধতে মুখ তুলে চাপা গলায় বললো, সেই পাজি আমব্রিজ তোমাকে সত্যি কথা বলার জন্য সাতদিন আটক করে রেখেছিল। সেড্রিক কেমন করে মারা গেল। সকলেই সেই ঘটনা শুনেছে। সত্যি তুমি অত্যন্ত সাহসী তাই মহিলার মুখের ওপর বলতে পেরেছ।

চোর কথায় হ্যারির মনে হলো ও দারুণ ফুলে গেছে, শরীরটা হালকা হয়ে গেছে, হাওয়াতে উড়ে যাবে। কে ওই বিদঘুঁটে উড়ন্ত ঘোড়াকে তোয়াক্কা করে? চো ওকে বলেছে সত্যিকারের সাহসী ছেলে। হঠাৎ মনে হল চোকে ওর অবর্ণনীয় যন্ত্রণাকাতর কাটা হাতটা দেখায়। প্যাচার পায়ে ওর মায়ের কাছে পাঠানোর জন্য পার্সেলটা বাঁধতে সাহায্য করে। ওইরকম এক উত্তেজক অবস্থায় ও কি বলবে, কি করবে ভেবে পায় না। ঠিক সেই সময় আউলারির দরজাটা আবার খোলার শব্দ শুনতে পেল।

হ্যারি দেখল কেয়ারটেকার ফিলচকে।

ওকে দেখে আউলারির ছোটবড় সব প্যাচাঁদের ঘুম ভেঙ্গে গেল, ওরা সবাই ডানা ঝটপট করতে লাগল।

ফিলচ হ্যারিকে বললো, আমার কাছে একটা খবর আছে, তুমি নাকি ডাংগবোম্বস সরবরাহের বিরাট একটা অর্ডারের চেষ্টা করছ?

হ্যারি হাত গুটিয়ে কেয়ারটেকারের মুখের দিকে তাকালো। –কে বলছে আপনাকে যে আমি ডাংগবোম্বস সরবরাহের অর্ডার পেয়েছি?

চো দুজনের কথা শুনে ভুরু কোঁচকালো। ওর হাতের লক্ষী প্যাঁচাটা এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে ডাকতে শুরু করে। চো সেদিকে চোখ দিলো না।

–বুঝলে সব খবর আমার মুঠোর মধ্যে থাকে, যারা দেবার তারা দেয়। ফিল হিসহিস শব্দ করে বললো, দেখি কী পাঠাচ্ছে?

হ্যারি বললো–দেয়া যাবে না ওটা চলে গেছে।

রাগে ফিলচের মুখ লাল হয়ে গেল। বললো, চলে গেছে? কথাটা বলে দু চোখ দিয়ে যেন হ্যারির জামা-প্যান্ট সার্চ করে।

–তোমার পকেটে তো থাকতেও পারে? –তার কারণ? চো রেগেমেগে বললো, আমি ওকে পাঠাতে দেখেছি। ফিলচ চোর ওপর যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে–তুমি পাঠাতে দেখেছ?

–ঠিক বলেছেন, আমি দেখেছি, চো ক্রুব্ধ দৃষ্টিতে বললো। এক সেকেন্ড নীরব থেকে ফিলচু দুজনের দিকে তাকাল। তারপর অ্যাবাউট টার্ন হয়ে দরজার দিকে এগিয়ে থেমে গিয়ে হ্যারিকে দেখতে লাগলো দরজার হ্যান্ডেলটা চেপে ধরে।

–আহারে! কি ভালই হত আমি যদি বাতাসে উড়ে আসা এক টুকরো ডাংগবোম পেতাম। হ্যারি আউলারি থেকে নিচে তাকালো।

দেখলো, মিসেস নরিস প্যাঁচাদের গুনছে।

চো লক্ষ্মীপ্যাচার পায়ে ভাল করে পার্সেলটা বেঁধে বললো, ফিলচ যা বললো সত্যি?

–মোটেই না।

–ও বললো কেন, চো লক্ষ্মীপ্যাচাটা জানালা দিয়ে উড়িয়ে দিল। হ্যারি ঠিক চোর মতো উদ্বিগ্ন হল।

যেতে যেতে চো বললো, আমি অন্য রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। আবার দেখা হবে।

–আচ্ছা, দেখা হবে।

চো-চ্যাংর প্রশংসা হ্যারির কানে বারবার বাজতে থাকে। সত্যি তুমি সাহসী, তা নাহলে মহিলার সামনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সত্যি কথা বলবে কেন? কিন্তু সেড্রিককে চোও বাঁচাতে পারেনি।

সেড্রিককে চো পছন্দ করত সে কথা হ্যারি জানে। সেসব কথা এখন ভেবে লাভ নেই। গ্রেট হলে ঢুকে হ্যারি দেখল রন আর হারমিওন গ্রিফিন্ডারদের টেবিলে বসে রয়েছে। সুপ্রভাত। হ্যারি ওদের কাছে গিয়ে বললো।

রন, হ্যারির মুখের দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য হয়ে বললো–কী ব্যাপার আজ বড় খুশি খুশি দেখাচ্ছে।

–কিডিচের কথা পরে হবে। হ্যারি একটা প্লেটে গাদাখানেক বেকন–ডিম নিয়ে বললো।

রন বললো, খেলার মাঠে একটু আগে আগে যেতে পারবে?

–অবশ্যই, হ্যারি বললো।

হারমিওন ওদের দিকে সোজা তাকিয়ে বললো–মনে থাকে যেন তোমাদের অনেক হোমওয়ার্ক করতে হবে।

ওদের কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গেল। মর্নিং পোস্ট আসতে শুরু করেছে। একটা প্যাঁচা চিনির পাত্রের পাশে ডেইলি প্রফেটটা নিয়ে বসল।

ওর পা থেকে চামড়ার ব্যাগটা খুলে নিল হারমিওন। প্যাঁচা উড়ে গেলে হারমিওন প্রথম পাতাটায় চোখ রাখল।

রন বললো–কোনও চাঞ্চল্যকর খবর আছে?

হ্যারি জানে রন হোমওয়ার্ক না করতে পারলে বাঁচে। গল্পস্বল্প করে সময় কাটাতে চায়।  

–না, তেমন কিছু নেই। এইসব গান বাজনা, বিয়েশাদীর খবর, ওয়েভসিস্টারের বিয়ে।

হারমিওন মুখের সামনে কাগজটা খুলে নিজেকে আড়াল করে রাখল। হ্যারি প্লেটে আরও খাবার ভরে নিল। রন জানালার বাইরে তাকিয়ে রইল।

হারমিওন হঠাৎ বেশ জোরে জোরে বললো–দাঁড়াও দাঁড়াও… ওহ্ না সিরিয়স!

হ্যারি বললো–কী হয়েছে? কাগজটা এমনভাবে টান দিল যে অর্ধেকটা হারমিওনের হাতে, বাকিটা হ্যারির হাতে।

হারমিওন হাতের কাগজটা চাপা গলায় পড়ল–ম্যাজিক মন্ত্রণালয় বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেয়েছে, সিরিয়স ব্ল্যাক একজন গণহত্যাকারী। ব্ল্যাক বর্তমানে লন্ডনে আত্মগোপন করে আছে।

হ্যারি অতি আস্তে অথচ রেগে বললো–লুসিয়াস ম্যালফয়, আমি বাজি ধরে বলতে পারি ও স্টেশনের প্লাটফরমে সিরিয়সকে দেখেছিল।

–কী বললে? কই কথাটা তুমি তো আমাদের বলনি।

হারমিওন ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে শব্দ করল, শু…। জাদুকর সম্প্রদায়কে সতর্কিত করা হচ্ছে যে সিরিয়স ব্ল্যাক অতি সাংঘাতিক খুনি, কম করে তেরটা খুন করেছে। আজকাবান জেল ভেঙ্গে সে এখন পলাতক।

–রাবিশ, হারমিওন বললো। বাকি অর্ধেক কাগজটা টেবিলে রেখে বললো, ওয়েল, এখন ও আর বাড়ি থেকে বেরোতে পারবে না। ডাম্বলডোরও মানা করেছিলেন।

হ্যারি ওর হাতের ডেইলি প্রফেটের অংশটা দেখতে দেখতে বললো, পাতাভর্তি দেখছি বিজ্ঞাপন। ম্যাডাম মালকিন রোবস ফর অল অকেসান্স। এটা দেখ।

রন বললো, আমার যা যা জামাকাপড় দরকার সবই আমার ট্রাঙ্কে আছে।

হ্যারি বললো, এখানে কি লিখেছে দেখ।

হারমিওন ও রন ঝুঁকে পড়ল হ্যারির হাতে ছেঁড়া ডেইলি ফেটের দিকে। ছোট খবর। খুব বেশি তো এক ইঞ্চি লম্বা, একেবারে কলমের দক্ষিণে শেষে ছাপা

মন্ত্রণালয়ে বিনা অধিকারে প্রবেশ
গত ৩১ আগস্ট স্টারগিসপডমোর (৩৮) দুনম্বর লাবুরনাম গার্ভেনস, ক্ল্যাপহেম, ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের ওয়াইজেনগেমটের সামনে অনধিকার প্রবেশ ও ডাকাতির উদ্দেশ্যে ধরা পড়েছিল। মন্ত্রণালয়ের ওয়াচউইজার্ড এরিকমার্ক তাকে, একটি টপ সিকিউরিটি দরজা দিয়ে প্রায় রাত একটার সময়ে মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করতে দেখতে পায়। ধৃত পড়মোর তার আত্মপক্ষ সমর্থনে একটি কথাও বলেনি; তাই দুটি অপরাধের ভিত্তিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ছয় মাস কারাদণ্ড ভোগ করার জন্য আজকাবানে পাঠানো হয়েছে।

স্টারগিস পড়মোর? রন খুব আস্তে আস্তে বললো–সেই পাজি লোকটা, যার মাথা দেখলে মনে হয় কেউ গুঁড়িয়ে দিয়েছে, তাই না? ও একজন…

–শ্যু! চুপ রন, হারমিওন রনকে থামিয়ে দিয়ে ভয়ঙ্কর আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকাল।

হ্যারি ফিসফিস করে বললো, ছমাস আজকাবানে? শুধু একটা দরজা দিয়ে যাবার জন্য।

হারমিওন বললো,–বোকার মত কথা বলবে না। রাত্রি একটার সময় ও ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ে কিসের জন্য গিয়েছিল!

রন বললো, ওতো অর্ডারের হয়ে কাজ করে।

হ্যারি বললো–এক মিনিট, তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে স্টারগিসের আমাদের বিদায় জানাতে আসার কথা ছিল?

হারমিওন ও রন ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।

হারমিওন বললো–হা হা মনে আছে। ওর গার্ড হয়ে আমাদের সঙ্গে স্টেশনে যাবার কথা ছিল। ও না আসাতে মুডি অসম্ভব রেগে গিয়েছিল। তাহলে? তাহলে নিশ্চয়ই ওদের হয়ে কোনও কাজ করতে যায়নি। আবার এমনও হতে পারে।

রন বললো, সব বাজে কথা! ওরা ওকে ফাঁসিয়েছে। শোন, হারমিওনের শাসনদৃষ্টির দিকে তাকিয়ে নাটকীয়ভাবে গলার সুর নামিয়ে বললো, মিনিস্ট্রি মনে করে ও ডাম্বলডোরের লোক। কারসাজি করে স্টারগিসকে মিনিস্ট্রিতে আসতে না বললে আদতেও বিনা অনুমতিতে দরজা পার হওয়ার সম্ভাবনা নেই! একটা জঘন্য প্ল্যান!

কিডিচ পিচের দিকে এগোতে এগোতে, হ্যারি ডানদিকে নিষিদ্ধ বনের বিরাট বিরাট গাছগুলোর দিকে তাকালো। ঝড়ো হাওয়াতে গাছের পাতাগুলো মনে হয় যেন উড়ে যাবে। আকাশ পরিষ্কার, কোথাও এক বিন্দু মেঘ নেই। আউলারি টাওয়ারের কাছে শুধু প্যাচারা ঘুরপাক খাচ্ছে। ওর চিন্তার অনেক কিছু আছে। সেই উড়ন্ত ঘোড়া তো ওর কোনও ক্ষতি করেনি তাই ওর সম্বন্ধে চিন্তা মাথায় নেই।

ওরা দুজনে প্র্যাকটিস শুরু করল। ঘণ্টা দুই ধরে প্র্যাকটিস করার পর ক্যাসেলে ফিরে এল লাঞ্চ খাবার জন্য।

রন আর হ্যারিকে কমনরুমে দেখতে না পেয়ে হারমিওনের মধ্যে একটা কথাই বারবার ঠেলা দিচ্ছিল। দুজনেই অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন। কিন্তু কিডিচ মাঠে অনুশীলনের জন্য গিয়েছিল জেনে নিজের ভুল বুঝতে পারল। ওরা দুই বন্ধু লাঞ্চ শেষ করে মাঠের টেন্টে গিয়ে দেখল, টিমের সকলেই পৌঁছে গেছে ট্রেনিং সেসনের জন্যে, আসেনি শুধু অ্যাঞ্জেলিনা।

–কেমন লাগছে রন? জর্জ চোখ পিটপিট করে বললো। লাঞ্চ শেষ করে মাঠে ফেরার সময় ও সারা পথ চুপ করেছিল। জর্জের প্রশ্নের জবাবে ছোট করে বললো, চলছে।

ফ্রেড ওর খেলার জার্সিতে মাথা ঢোকাতে ঢোকাতে একটু দুষ্টুমি ভরা মুচকি হাসিতে বললো, নতুন প্রিফেক্ট ও কতো বড় প্লেয়ার আমাদের আজ দেখাবে।

নিজের টিমের জার্সি প্রথমবার পরতে পরতে রন রেগে গিয়ে বললো, শাট আপ। জার্সিটা অলিভার উডের জন্য বানানো হয়েছিল তাই রনের গায়ে ঠিকমত ফিট হল না। কাঁধের কাছে হাত দুটো ঝুলে রইল।

অ্যাঞ্জেলিনা ক্যাপ্টেনের অফিস থেকে মাঠে এসে গেছে। টিমের সকলের দিকে তাকিয়ে খুশি হয়ে বললো, সবকিছু ঠিক আছে তো?

অ্যাঞ্জেলিনা টিমের ক্যাপ্টেন। অ্যালেসিয়া, ফ্রেড তোমরা বলটা নিয়ে এস। দুএকজন আমদের দেখছে, দেখুক ওদের দিকে তাকিও না, পাত্তা দিও না। সব ঠিক আছে।

অ্যাঞ্জেলিনা দুটি লোকের কথা সাধারণভাবে বললেও হ্যারি ভাবে অনাহুত লোক দুটোকে ফের ওরা মাঠে নামলো। মাঠ-সূর্যের আলোতে ঝলমল করছে। স্নিদারিন সাপোর্টাররা আনন্দ, উৎসাহ দেবার জন্য হৈচৈ করে উঠল। অর্ধেক স্টেডিয়াম ওদের সাপোর্টার দখল করে বসে আছে। সমস্ত মাঠ মুখরিত হয়ে উঠল ওদের উচ্ছ্বাসে।

রন ওর ঝাড়ুর ওপর বসে মাঠ থেকে সোঁ করে ওপরে উঠল। ওর পেছনে হ্যারি। হ্যারি বললো, কারুর কথায় কান দেবে না। রনের পাশে ও ভাসতে লাগল। ভাসতে ভাসতে বললো, দেখতে কারা হাসাহাসি, ব্যাঙ্গ করছে।

ম্যালফয় ভেঙ্গিয়ে ভেঙ্গিয়ে ও টেনে টেনে বললো, ওদের মতো আজেবাজে প্লেয়ারদের মাথায় কে ছাতা ধরবে? ক্রেব, গোয়েল আর প্যান্সি হাসিতে ফেটে পড়ল ম্যালফয়ের কথা শুনে।

অ্যাঞ্জেলিনা উড়তে উড়তে হ্যারির পাশে এসে বললো, এইরকমই তোমার কাছে সকলে চায়। তুমি খেলে যাও… কারও কথায় কান দেবে না। ঠিক মতো বল পাস দাও। অ্যাঞ্জেলিনা চড়কিবাজির মতো ওর টিমের চারপাশে ঘুরতে থাকে। মুখের ওপর খোলা চুল এসে পড়েছে, চুলগুলো পেছনে হটিয়ে দিতেই প্যান্সি পারকিনসন বললো, আরে দ্যাখ দ্যাখ ওদের ক্যাপ্টেন সারা মাঠে উকুন ছড়াচ্ছে।

রন ঠিক মতো খেলতে পারছে না। একবার গোলের কাছে বল ধরতে গিয়ে পড়ে গেল। ফ্রেড আর জর্জ দেখে হাসল। কিন্তু স্রিদারিনের ক্যাপ্টেন ম্যালফয় হো হো করে হেসে উঠল রনকে পড়ে যেতে দেখে।

–রন বল ধরে রেখ না পাস করে দাও, অ্যাঞ্জেলিনা বললো। অ্যাঞ্জেলিনা স্বাভাবিকভাবে খেলছে, ও দলের প্রত্যেকের পাশে গিয়ে উৎসাহ দিয়ে চলেছে।

রন কোয়াফিলটা অ্যালিসার দিকে ছুঁড়ে দিল ও সেটা ধরে হ্যারিকে দিয়ে দিল। হ্যারি দিল জর্জকে।

ঠিক সেই সময় ম্যালফয় বলে উঠলো, আরে হ্যারি তোমার কাটা দাগ কেমন আছে? নিশ্চয়ই ব্যথাতে শুয়ে পড়বে না? নিশ্চয়ই ব্যথা করছে? গত সপ্তাহে তো তুমি হাসপাতালে ছিলে, তার রেকর্ড আছে–ঠিক না?

যেমন খেলা হয় তেমনই চলল। স্লিদারিন কখনও আধিপত্য বিস্তার করে গ্রিফিন্ডর প্রতিরোধ করে, আবার গ্রিফিন্ডর এগোলে স্লিদারিন।

জর্জ বললো, বন ঠিকমতো খেলতে পারছে না।

হ্যারি বললো, নতুন মাঠে নেমেছে, একটু ভুলচুক করবেই।

হ্যারি সোনা রং-এর বলটা নিয়ে পাগলের মতো উড়ছে। কেউ ওকে ধরতে পারছে না। চিয়ার্স, চিয়ার্স ওর কানে আসে। শরৎকালের গরম হাওয়ার ঝাঁপটা ওর মুখেলাগে। স্নিদারিং দলের ব্যাঙ্গ, চিৎকার কোনওকিছুই ওর কানে আসে না।

হঠাৎ হুইসেল বেজে উঠল। অ্যাঞ্জেলিনা চেঁচিয়ে উঠল–থাম–থাম–থাম, রন তুমি তোমার সিভিল পোস্ট কভার করছ না।

হ্যারি রনের দিকে তাকাল। রন খুব একটা ভাল খেলতে পারছে না। তবে আজ ওর প্রথম প্র্যাকটিস সেশন, প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের দিকে ঠিকমত নজর দিতে পারছে না।

–ওহ, আমি দুঃখিত।

–তুমি চেজাবদের দিকে ঠিকমত না লক্ষ করে অন্যদিকে তাকাচ্ছ। অ্যাঞ্জেলিনা বললো, তুমি এক জায়গায় স্থির হয়ে থাক, হুপ আটকাবার সময় নড়াচড়া করবে, ভ্যাবলার মত এধার ওধার তাকাবে না। এ জন্যই তো তুমি তিন তিনটে গোলের জন্য দায়ী।

–সত্যি দুঃখিত, রন মুখ কাঁচু মাচু করে বললো। ওর তাকানো অনেকটা লাল মুখে নীল উজ্জ্বল আকাশের দিকে বাতিঘরের আলোক সংকেতের মত।

কেটির নাকে বল লেগে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছিল। অ্যাঞ্জেলিনা কেটিকে বললো, কেটি তুমি বোকার মত দাঁড়িয়ে না থেকে নাকের রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করতে পারছো না?

কেটি কাদ কাঁদ হয়ে বললো–থামছে না যে, কথাটা বলে জামার হাতাটা দিয়ে নাকে চেপে ধরল।

হ্যারি আড় চোখে দেখল ফ্রেড বেগুনি রঙ-এর একটা কিছু পকেট থেকে বার করে কেটির দিকে এগিয়ে দিল। ওর মুখে বেশ উদবিগ্রের ছাপ!

–থাকগে আবার চেষ্টা করা যাক, অ্যাঞ্জেলিনা বললো, ও শ্রিদারিনের দিকে তাকাচ্ছে না। ওরা সবাই একযোগে গেয়ে চলেছে গ্রিফিররা হেরে গেছে, হেরে গেছে। কিন্তু অ্যাঞ্জেলিনা ওদের কথায় কান না দিয়ে ঝাড়ুর ওপর স্থির হয়ে বসে রইল।

প্রায় তিন মিনিট ওরা শূন্যে ঝাড়ুর ওপর বসে ওড়ার পর অ্যাঞ্জেলিনা তীব্রভাবে হুইসিল দিল। হ্যারি সেই সময়ে স্লিদারিনের গোলপোস্টের দিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। হুইসিল শুনে খেলা থেমে গেলে হ্যারি বিরক্ত হল।

ও অ্যালিসাকে জিজ্ঞেস করলো–কী হলো? অ্যালিসিয়া ওর খুব কাছেই ভাসছিল।

–কেটি? ও বললো।

হ্যারি দেখল অ্যাঞ্জেলিনা, ফ্রেড, জর্জ খুব দ্রুত কেটির দিকে ভেসে যাচ্ছে। ওদের দেখে হ্যারি আর অ্যালিসাও কেটির দিকে চলল।

কেটির অবস্থা দেখে অ্যাঞ্জেলিনা খেলা বন্ধ করে দিয়েছে কোনও সন্দেহ নেই। কেটির সারা শরীর রক্তে মাখামাখি আর মুখ ভয়ে ফ্যাকাসে।

অ্যাঞ্জেলিনা বললো–ওকে এখন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

–আমরা ওকে নিয়ে যাচ্ছি, ফ্রেড বললো, মনে হয় ও ভুল করে ব্লাড বিলস্টার প্যাড গিলে ফেলেছে।

অ্যাঞ্জেলিনা ফ্রেডের মন্তব্যে কর্ণপাত না করে বললো–এখন বিটার আর চেজারের খেলার দরকার নেই। ফ্রেড আর জর্জ তখন কেটিকে ধরে ধরে ক্যাসেলের দিকে নিয়ে চলেছে। যাকগে তোমরাও সব ড্রেস বদলে নাও, অ্যাঞ্জেলিনা বললো।

স্নিদারিনের ছেলেরা সেই একই সুরে গান গাইতে গাইতে ড্রেস বদলাবার ঘরে চলল।

হ্যারি আর রনকে প্রোট্রেট বোল দিয়ে কমনরুমে যেতে দেখে হারমিওন কোনও রকম তাপ-উত্তাপ না দেখিয়ে বললো, প্র্যাকটিস কেমন হল?

–এই হল একরকম ফ্রেড বললো।

হ্যারি বাধা দিয়ে নিস্তেজভাবে বললো–জগা খিচুরি, হারমিওনের পাশের চেয়ারে ধপাস করে বসল। হারমিওন কথাটা শুনে হাসল।

–আরে এই প্রথম খেলছো তো, হবে হবে পরে আরও ভাল হবে, একলাফে হবে না। ও যেন হ্যারিকে সান্ত্বনা দিল।

রন বললো–কে তোমাকে বললো, জগাখিচুরি শুনি? যত্তোসব বাজে কথা।

–কে আবার বলবে, হারমিওন অবাক হয়ে তাকালো, এই বলছিলাম।

–তুমি ভেবেছিলে আমি খেলতে জানি না? এক্কেবারে যা তা?

–মোটেই তা বলিনি। তোমার কথা শুনে বলেছি।

রন রেগে মেগে সিঁড়ির দিকে যেতে যেতে বললো–ধ্যাৎ বাজে কথা বলার সময় নেই, আমার অনেক হোম ওয়ার্ক বাকি আছে।

ও একগাদা ছেলের সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

হারমিওন হ্যারির মুখের দিকে তাকাল।

–সত্যি ও খেলতে পারে নি?

–না তো, হ্যারি বললো।

কথাটা শুনে হারমিওনের মুখের জমাট ভাব অনেকটা কমে গেল।

–আমার মনে হয় ও ভাল খেলতে পারতো, হ্যারি বিড় বিড় করে বললো, প্রথম ট্রেনিং সেশন তো! পরে হয়তো ভালই খেলবে, তোমারও তো প্রথম প্রথম এরকম হয়েছিল।

অবশ্যই সেই রাতে হ্যারি, রন দুজনের হোমওয়ার্কে মন বসলো না। হ্যারি জানে রনের মন পড়ে রয়েছে কিডিচ খেলার দিকে।

ওর মাথায় তখনও বাজছে স্লিদারিনদের গান–গ্রিফিন্ডাররা হেরে গেছে, দুয়ো হেরে গেছে।

ওরা দুজন পুরো রোববারের ছুটির দিন কমন রুমে বইয়ে মুখ গুঁজে বসে রইল। অন্য সব ছেলে–মেয়েরা রৌদ্রোজ্জ্বল মাঠে হৈ হৈ করতে লাগল এমনভাবে যেন সেইদিন শেষ ঝলমলে রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।

সন্ধ্যার দিকে হ্যারির মনে হল মাথাটা এতো ভারি যে ওঠাতে পারছে না। কে যেন ওর ব্রেনেও হাতুড়ি পিটে চলেছে ক্রমাগত।

হ্যারি রনকে বললো–বুঝলে, আমাদের এ সপ্তাহে আরও অনেক অনেক হোমওয়ার্ক করতে হবে।

হ্যারি রনের হাতে প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের দেয়া ইনএনিমেটাস কনজিওর্স স্পেল সম্বন্ধে বিরাট প্রবন্ধটা দেখছিল। দেখতে ঠিক সুবিধে হয়নি এমনই মুখের ভাব করে ওটা রেখে দিল। প্রফেসর মিনিস্টাসের তেমনই এক বিরাট আকারের অতি কঠিন প্রবন্ধ শুরু করল।

–ঠিক আছে, রন ওর লাল চোখ ঘষতে ঘষতে দুএকটা পার্চমেন্ট জ্বলন্ত আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললো, এই! হারমিওন কি লিখেছে দেখলে কেমন হয়?

হ্যারি অদূরে কোলের ওপর বেড়াল নিয়ে বসে থাকা হারমিওনের দিকে তাকাল। ও তখন জিনির সামনে বসে এলফদের জন্য পশমের মোজা বুনছিল।

–না, রন বললো, তুমি ভাল করেই জান ও আমাদের দেখাবে না।

ওরা কাজ করে চলল। ওদিকে বেলা গড়িয়ে সূর্য ডোবার মুখে। জানালাটা অন্ধকার হয়ে গেল। কমনরুম থেকে ছাত্রছাত্রীরা যে যার ঘরে চলে যেতে শুরু করল। প্রায় সাড়ে এগারোটার সময় হারমিওন বিরাট এক হাই তুলে ওদের দিকে তাকাল।

–তোমাদের কাজ শেষ করে ফেলেছো?

–না, রন বললো।

রনের পেছনে দাঁড়িয়ে ওর অ্যাস্ট্রোনমি প্রবন্ধের দিকে আঙ্গুল বাড়িয়ে হারমিওন বললো, জুপিটারের ক্যালিস্টো না গ্যানিমেড সবচেয়ে বড় চাঁদ? এটাই ভলক্যানো সৃষ্টি করে।

ভুল লাইনটা কেটে দিয়ে রন নিস্পৃহ কণ্ঠে বললো–অশেষ ধন্যবাদ।

–দুঃখিত ভুলটা দেখিয়ে দেওয়াতে, হারমিওন বললো।

 –বুজেছি। বলতে হবে না, তুমি এসেছো আমার ভুল ধরতে।

–রন।

–শোনো হারমিওন তোমার উপদেশ শোনার আমার সময় নেই, বুঝেছ। আমার এখন অনেক কাজ বাকি, রন বললো।

–না, শোনো। ওই দেখো…!

ওরা দেখল হারমিওন জানালার দিকে আঙ্গুল বাড়িয়েছে। জানালার কোলে দেখল সাদা রঙ-এর সুন্দর একটা প্যাঁচা বসে রয়েছে। প্যাঁচাটা রনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে।

–আরে হারমেস না? হারমিওন উৎসাহের সুরে বললো।

রন হাতের কলম ছুঁড়ে ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে বললো, ব্লিমসে (আশ্চর্য হয়ে কিছু বলা)! পার্সি মনে হয় ওকে পাঠিয়েছে। আমাকে আবার ও কি লিখেছে?

রন বন্ধ জানালাটা ঈষৎ খুলতেই পেঁচাটা ফুরুৎ করে ঘরের মধ্যে উড়ে এসে রনের লেখা প্রবন্ধের ওপর বসল। একটা পায়ে বাঁধা রয়েছে চিঠি! রনের আঁকা চাঁদের ফালির ওপর পা রাখতেই চাঁদ বিকৃত হয়ে গেল। চিঠির খামের ওপর রন লেখা ঠিকানা রোনাল্ড উইসলি, গ্রিফিন্ডর হাউজ, হোগওয়ার্টস দেখতে দেখতে বললো, হাতের লেখা দেখছি পার্সির।

হারমিওন উৎসুকতার সঙ্গে বললো–খোলো, দেখ কী লিখেছে। হ্যারি সম্মতি জানালো ঘাড় নেড়ে।

রন চিঠিটা পড়তে শুরু করল। পড়া শেষ হলে চিঠিটা হ্যারি আর হারমিওনের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললো–পড়।

ওরা দুজনে পড়তে লাগল

প্রিয় রন,
আমি বিশ্বস্ত সূত্রে মিনিস্ট্রি অফ ম্যাজিক ও তোমার নবাগত টিচার প্রফেসর আমব্রিজের কাছে শুনলাম যে তুমি হোগওয়ার্টস স্কুলের প্রিফেক্ট হয়েছ।
আমি খবরটা শুনে খুবই আশ্চর্য হয়ে গেলাম। খুবই স্বাভাবিক। যাই হোক তুমি প্রথমেই আমার আন্তরিক অভিনন্দন গ্রহণ কর। আমি অবশ্যই স্বীকার করতে দ্বিধা করি না যে, আমি সর্বদাই ভেবেছি ও ভয় পেয়েছি যে, তুমি ফ্রেড ও জর্জের মতো একই পথের পথিক হবে ও আমার পথে চলবে না। অতএব, অবশ্যই তুমি আমার মনের আনন্দ উপলব্ধি করতে পারছো! এবার থেকে তুমি যা মন চায় তাই করবে না, বরং দায়িত্ব সহকারে সব কাজকর্ম করবে।
কিন্তু রন, তোমাকে আমার শুভেচ্ছা ও আন্তরিক ভালোবাসা ছাড়া আমি তোমাকে কিছু উপদেশ দিতে চাই। দিনের বদলে রাতে লিখছি, ও রাতের ডাকে পাঠাচ্ছি। আশা করছি তুমি অন্যের দৃষ্টির আড়ালে একান্তে শান্তমনে আমার চিঠিটা খুব মন দিয়ে পড়বে। ও কারও উদ্ভট প্রশ্নের জবাব দেবে না।
মন্ত্রীর ছোট একটি লেখা পড়ে যখন জানতে পারলাম তুমি প্রিফেক্ট হয়েছ তখন থেকে আমার মনে বার বার একটি প্রশ্ন উদয় হয়েছে যে তুমি আজও ওই হ্যারি পটারের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছ। ওই ছেলেটার সঙ্গে মেলামেশা করলে তোমার বিপদ আছে, বিপদে পড়বে ও ব্যাজটি হারাবে। আমার কথা হয়ত তোমার মনমতো হচ্ছে না, তুমি ভাবছ পটার খুব ভাল ছেলে ও প্রফেসর ডাম্বলডোর, তোমার স্কুলের প্রধান–তার খুব কাছের লোক। তবে আমি একটা কথা তোমাকে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে ডাম্বলডোরের তোমাদের স্কুলের প্রতি আধিপত্য শেষ হতে চলেছে। আশাকরি আশ্চর্য হবে না, লোকেরা তোমার সম্বন্ধে ভিন্ন মত পোষণ করে মনে হয় তারা ভুল করছে না। দুঃখিত ওই ব্যাপারে আমি আর কিছু বলতে চাই না, তবে তুমি যদি আগামীকালের ডেইলি প্রফেট পড় তাহলে বাতাস কোনদিকে বইছে বুঝতে পারবে ও তোমার অবস্থানটাও পরিষ্কারভাবে ধরতে পারবে।
পরিহাস নয় রন! তুমি কী চাও পটারের সঙ্গে একই বুরুশে মুখে রঙ ফলাবে, তাহলে ধরেনিও তোমার ভবিষ্যৎ অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে, আমি স্কুল ছাড়ার পরের কথা বলছি। আশাকরি তুমি জান, বাবা ওকে সঙ্গে করে কোর্টে নিয়ে গিয়েছিলেন ওয়াজেনগেমট আদালতে, পটারের বিরুদ্ধে ওই গ্রীষ্মকালে শৃঙ্খলা ভঙ্গের শুনানি হয়েছিল এবং সেখান থেকে খুব একটা ভালভাবে উতরে আসতে পারেনি। টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে ছাড়া পেয়েছিল, আমি কেন, অনেকেরই ওর অপরাধ সম্বন্ধে দৃঢ় মনোভাব আছে।
এমনও হতে পারে তুমি পটারের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতে ভয় পাও। আমি যতটুকু জানি ও সুস্থ মাথার নয় এবং হঠাৎ ক্ষেপে গিয়ে ক্ষতি করতে পারে। আমি যা বললাম যদি সে সম্বন্ধে তোমার সন্দেহ থাকে অথবা পটারের অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করে তোমার বিরক্তি লাগে তাহলে আমি তোমাকে ডোলোরেস আমব্রিজের সঙ্গে কথা বলতে বলছি। সত্যিই এক চমৎকার মহিলা আমব্রিজ। আমি জানি প্রয়োজন হলে তিনি তোমাকে উপদেশ দেবেন, বিপদে সাহায্য করবেন।
আমি তোমাকে এই ব্যাপারে আরও একটি উপদেশ দিতে চাই। আমি তোমাকে আগে লিখেছি ডাম্বলডোরের হোগার্টসে রাজতু অতি শিগগির শেষ হতে চলেছে। অতএব রন, তোমার তার ওপর আনুগত্য না রাখাই ভাল। তোমার আনুগত্য থাকবে স্কুল আর মন্ত্রণালয়ের ওপর। আমি শুনে দুঃখিত যে, প্রফেসর আমব্রিজ স্টাফদের কাছ থেকে কাজ করতে গিয়ে সর্বদাই বাধা পাচ্ছেন এবং খুবই সামান্য সহযোগিতা পাচ্ছেন। মন্ত্রণালয় যেসব পরিবর্তন চাইছে তা চালু করতে পারছেন না হোগার্টসে, তবে আগামী সপ্তাহ থেকে তাকে আর কেউ বাধা দিতে পারবে না। আবার বলছি আগামীকালের ডেইলি প্রফেট পড়বে। আমি তোমাকে এইটুকু বলতে চাই, যেসব ছাত্রছাত্রীরা প্রফেসর আমব্রিজের কথা মত চলবে ও তাকে অকুণ্ঠভাবে সহযোগিতা করবে তারা, দুএক বছরের মধ্যেই হেডবয় হয়ে যেতে পারে বা তার সম্ভাবনা আছে।
গত গ্রীষ্মের ছুটিতে আমি তোমাকে খুব একটা সঙ্গদান করতে পারিনি তার জন্য অতি দুঃখিত। বাবা-মাকে সমালোচনা করতে সত্যই অন্তরে ব্যথা লাগে। আমার মনে হয় অনেক সঙ্গত কারণে আর আমার তাদের সঙ্গে এক বাড়িতে বাস করা সম্ভবপর নয়। ততোদিন তাদের সঙ্গে আমার এক বাড়িতে বাস করা সম্ভবপর নয়, যতদিন তারা ওই ভয়ঙ্কর ডাম্বলডোর আর তার চেলা চামুন্ডাদের নিয়ে তার জয়গান করে যাবেন। তুমি যদি কোনো সময়ে মাকে চিঠি লেখ তাহলে মাকে জানাতে পারো জনৈক স্টারগিস পড়মোর, ডাম্বলডোরের এক বিশ্বস্ত বন্ধু, মন্ত্রণালয়ে বিনা অনুমতিতে প্রবেশের অপরাধে কিছুদিন আগে আজকাবানে গেছে। তাহলে বুঝতে পারবেন, কয়েকটি ক্রিমিনালদের সঙ্গে অকারণে আঁতাত করে সর্বনাশের পথে পা বাড়াচ্ছেন। আমি সেইসব লোকদের খপ্পর থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। আমি আশা করছি মন্ত্রণালয় আমার প্রতি সদয় হবে। আমি আরও মনে করি রন, তুমি পারিবারিক বন্ধনের জন্য আমাদের বাবা-মায়ের মতো ভুলপথে অন্ধ হয়ে চলবে না, তাদের বিপদে-আপদে ও কাজকর্মে সমর্থন করবে না। আমি সর্বাত্তকরণে বিশ্বাস করি ও আশা করছি, একদিন তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারবেন এবং আমি তখন বিনা দ্বিধায় ক্ষমা চেয়ে নেবো।
আমি যা যা লিখলাম তা তুমি অতি মনোযোগ সহকারে ভাববে, বিশেষ করে ওই হ্যারি পটার সম্বন্ধে। আবার তোমাকে প্রিফেট হওয়ার জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা জানালাম।
তোমার ভাই
পার্সি

হ্যারি চিঠিটা গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ার পর রনের মুখের পানে তাকাল–খুব ভাল।

কথাটা এমন এক ভঙ্গিতে বললো যেন সমগ্র চিঠিটায় ছড়িয়ে রয়েছে দারুণ জোক! আহা! খুব ভাল কথা লিখেছে পার্সি চাইলে তুমি আমার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতে পার। এইটুকু বলতে পারি–আমি হিংস্র হবো না।

–চিঠিটা রেখে দাও, রন ওর একটা হাত বাড়িয়ে পার্সির চিঠিটা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেললো। তারপর ঘরের যেখানে আগুন জ্বলছে সেখানে ফেলে দিতেই দাউ দাউ করে পুড়ে ছাই হয়ে গেল।

–আর দেরি নয়, ভোর হবার আগে প্রবন্ধটা শেষ করতে হবে; রন হ্যারিকে তাড়া দিল। প্রফেসর সিনস্ট্রার প্রবন্ধটা টেনে হ্যারির সামনে রাখল।

হারমিওন রনের দিকে অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল।

হঠাৎ বললো, ওগুলো আমাকে দাও।

–কোনগুলো? রন বললো।

–লেখাগুলো পড়ে সংশোধন করে দেব, হারমিওন বললো।

রন বললো–সত্যি বলছ, সত্যি তুমি আমাদের বাঁচালে হারমিওন। কি করি ভেবে পাচ্ছিনে?

–কি আর করবে, প্রতিজ্ঞা কর ভবিষ্যতে এই রকম রাত জেগে হোমওয়ার্ক করবে না; কথাটা বলে হারমিওন ওর লেখাগুলো তুলে নিল। মুখে দুষ্টুমী হাসি।

হ্যারি ওর প্রবন্ধটা হারমিওনের হাতে গুঁজে দিয়ে একগাল হেসে বললো, অজস্র ধন্যবাদ। কথাটা বলেই, আর্ম চেয়ারে ধপাস করে বসে চোখ রগড়াতে লাগল।

গভীর রাত, কমরুমে শুধু তিনজন আর হারমিওনের প্রিয় বেড়াল কুকশ্যাংক। ঘর নিঃস্তব্ধ, শুধু শব্দ শোনা যায় হারমিওনের হাতের কুইলের খাতার পাতায় সংশোধন ও লেখার খচ খচ শব্দ। ওর সামনে ছড়িয়ে রয়েছে লাইব্রেরি থেকে আনা রেফারেন্স বই। হ্যারির ক্ষিধেতে পেট জ্বলছে তার সঙ্গে ওর ক্লান্তির কোনও সংযুক্তি নেই। ও চেয়ারে বসে আগুনে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া পার্সির চিঠির দিকে তাকিয়ে রইল।

ও জানে হোগওয়ার্টসে অর্ধেকেরও বেশি লোক ওকে এড়িয়ে চলে, ওকে অদ্ভুত এক ছেলে মনে করে, পাগলভাবে। আরও জানে ডেইলি প্রফেট নিত্য ওর বিরুদ্ধে নানা আজগুবি কথা লেখে। সেসব থাক, পার্সির লেখা চিঠি ওকে সত্যি আরও বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। পার্সি, ওর ছোট ভাই ওর প্রিয় বন্ধু রনকে ওর সঙ্গে মিশতে নিষেধ করেছে। প্রফেসর আমব্রিজকেও বিভ্রান্ত করেছে সব মিলিয়ে এক বিচিত্র শুধু নয় খারাপ অবস্থার সৃষ্টি করতে চেয়েছে। পার্সি ওর কাছে নতুন এক মানুষ নয়। পার্সি ওর পরিবারের একজন। ওদের বাড়িতে ও থেকেছে, অনেক গল্প-গুজব করেছে, বিশ্বকাপ কিডিচ খেলা দেখতে যাবার সময় একই তাঁবুতে থেকেছে। শুধু তাই নয় প্রি-উইজার্ড টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় টাস্কে ওকে ফুল মার্কস দিয়েছে, তা সত্ত্বেও পার্সি ওকে কেমন করে ভাবলো অপ্রকৃতিস্থ, হিংস্র!

দুঃখ-বেদনাতে ওর সিরিয়সের ভালবাসা, স্নেহের কথা মনে হল। ওর মনের এই অবস্থায় আরও মনে হল একমাত্র সিরিয়স ওকে কাছে টেনে চোখের জল মুছিয়ে দিতে পারে। মা নেই, বাবা নেই, আপনজন কেউ নেই যে তাকে কাছে টেনে নেবে। একমাত্র সিরিয়স ওর মনের অবস্থা বুঝবেন–কিন্তু তারও তো একই অবস্থা! জাদুর পৃথিবীতে বলতে গেলে সকলেই ভাবে সিরিয়স অতি এক ভয়ঙ্কর। হিংস্র মানুষ শুধু নয়, খুনি, ভোল্টেমর্টের অনুগামী। এই চরম মানসিকতায় ও জীবনের চৌদ্দটা বছর কাটাচ্ছে।

হ্যারি অর্ধনিমীলিত চোখে আগুনের দিকে তাকাল। আগুনের মধ্যে কিছু একটা দেখল যা সত্য হতে পারে না। হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিমেষে অদৃশ্য হয়ে গেল। হয়ত ও সিরিয়সের কথা ভাবছে বলেই আগুনের মধ্যে ওর মুখটা ক্ষণিক ভেসে উঠেছিল।

হারমিওন রনের প্রবন্ধটা কাটাকুটি করে, কিছু পরিবর্তন করে বললো–নাও এবার ঠিক করে কপি কর। শেষে লিখে দাও আমি তোমার হয়ে লিখেছি।

–হারমিওন বিশ্বাস কর তোমার মত এমন সুন্দর মানুষ খুব কমই আছে, অন্ত ত আমার চোখে পড়েনি। রন কাঁপা কাঁপা ভঙ্গুর কণ্ঠে বললো–আমি তোমার সঙ্গে যদি কখনও অজান্তে রূঢ় ব্যবহার করে থাকি তাহলে ক্ষমা করে দিও।

–বেশ বেশ ঠিক আছে। এখন তুমি নর্মাল হয়েছ, হারমিওন হেসে বললো। হ্যারি তোমার প্রবন্ধ, শেষ অংশটুকু ছাড়া ঠিকই আছে। মনে হয় তুমি প্রফেসর সিনিস্ট্রারের কথাগুলো ঠিকমত শোন। কথাটা ইউরোপা (কভার্ড উইথ আইস)। ইঁদুর নয়, বুঝেছ হ্যারি পটার?

হ্যারি তখন চেয়ারটা আগুনের কাছে টেনে নিয়ে গিয়ে চেয়ারে দুপা তুলে হাঁটুতে মুখ গুঁজে আগুনের শিখার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

–অ্যাই হ্যারি? রন বললো, আগুনের দিকে তাকিয়ে আছ কেন?

–কারণ, এইমাত্র আমি আগুনের মধ্যে সিরিয়সের মুখটা দেখলাম, হ্যারি বললো।

হ্যারি কথাটা খুব শান্ত স্বরে বললো। গত বছর ও আগুনের মধ্যে সিরিয়সের মুখ শুধু দেখেনি ওর সঙ্গে কথাও বলেছিল। এবার ঠিকমত দেখেছে কি দেখেনি বলতে পারছে না, একবার ভেসে উঠে অদৃশ্য হয়ে গেছে।

হারমিওন বললো, কী বললে সিরিয়সের মুখ? সেবার তো তোমার সঙ্গে টুর্নামেন্টের বিষয় কিছু বলেছিলেন, কিন্তু হঠাৎ এবার সিরিয়স?

হারমিওন, রন দুজনেই আগুনের মধ্যে সিরিয়সের মুখ দেখতে পেলো। রনের হাত থেকে কুইলটা মেঝেতে পড়ে গেল। অগ্নিশিখার মাঝে সিরিয়সের মাথা, ওর মাথার বড় বড় চুলগুলো ওর বিষণ্ণ মুখে এসে পড়েছে।

–আমার মনে হয় সকলের সঙ্গে তোমরাও তোমাদের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ো। আমি তোমাদের একনাগারে লক্ষ্য করে চলেছি।

–ঘণ্টার পর ঘণ্টা? হ্যারি মৃদু হেসে বললো।

–সামান্য কয়েক সেকেন্ড, কোস্ট ক্লিয়ার কিনা চেক করছি।

হারমিওন উৎসুকতার সঙ্গে বললো–কী দেখলেন?

–একটি ছোট মেয়ে, দেখে মনে হয় প্রথম বর্ষের ছাত্রী। হয়তো আগে আমাকে কখনও ক্ষণিক দেখেছিল যাকগে তা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। কথাগুলো সিরিয়স হড়বড় করে বললেন। হারমিওন অবাক হয়ে একটা হাত মুখে চেপে তাকিয়ে রইলো। ও আমার দিকে তাকাতেই আমি চলে গেলাম। আমার মনে হয় মেয়েটি আমাকে একটা অদ্ভুত আকারের কাঠের টুকরো অথবা ওইরকম একটা কিছু ভেবেছিলো।

–কিন্তু সিরিয়স, মনে হয় ভাবনার কিছু আছে।

–তোমার কথা অনেকটা মল্লির মতো। সিরিয়স বললেন, হ্যারি চিঠির জবাবের এটা একমাত্র পথ, যা আমি দিতে পারি, অবশ্য কোনও কোর্ড ব্যবহার না করে, কারণ কোড ডিকোড করা যায়।

হ্যারির চিঠির কথা বলতেই হারমিওন, রন দুজনেই একই সঙ্গে হ্যারির দিকে তাকাল।

–তুমি তো সিরিয়সকে চিঠি লেখার কথা আমাদের কিছু বলোনি? হারমিওনের কথায় দোষারোপের সুর!

–ভুলে গিয়েছিলাম, হ্যারি সত্যি কথাই বললো–আউলারিতে চিঠি ফেলার সময় চোকে দেখে তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। মুখের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থেকো না হারমিওন, কারও সাধ্য নেই সেই চিঠি পড়ে গোপন তথ্য জানাতে পারে, ঠিক বলেছি সিরিয়স?

–না, খুবই ভাল, সিরিয়স হাসতে হাসতে বললেন, যাকগে এখন আমাদের কথাবার্তা শেষ করাই ভাল, হয়ত মাঝে কেউ বাধা দিতে পারে, তোমার কপালের কাটাদাগ!

–মানে? রন আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল; কিন্তু হারমিওন বাধা দিতে থেমে গেল।

–পরে আপনাকে সব বলবো, হ্যাঁ, সিরিয়স বলুন।

–হ্যাঁ, যখন তোমার ওই কপালের কাটাদাগে ব্যথা অনুভব করবে তখন সেটা তুচ্ছ মনে করবে না। গত বছরে কাটা দাগে ব্যথা, চুলকানি হয়েছিল না?

–হ্যাঁ, ডাম্বলডোর বলেছেন, ভোল্ডেমর্ট যখন শক্তিশালী হয় তখন ওটা চুলকোয়। হ্যারি, রন আর হারমিওনের দিকে না তাকিয়ে বললো–হতে পারে সেই রাতের ঘটনার পর ও আমার উপর রেগে আছে, প্রতিশোধ নিতে চাইছে।

–এখন ও ফিরে এসেছে। বার বার তোমার ব্যথা হবে, সিরিয়স বললেন।

–তাহলে বলছেন আমব্রিজ আমাকে যখন ডিটেনসন করে গায়ে হাত দিয়েছিলেন তখন আমার কিছু করার নেই? আপনি কি মনে করেন? হ্যারি প্রশ্ন। করল।

ঠিক বলতে পারছিনে, সিরিয়স বললো–আমি তাকে অনেকদিন থেকে জানি, আমি নিশ্চিত উনি একজন ডেথইটার নয়।

–হতেও পারেন, হ্যারি গম্ভীর স্বরে বললো। হারমিওন ও রন ওর কথায় সায় দিলো।

–হা, পৃথিবীতে ভাল মানুষ যেমন আছে তেমন ডেথ ইটারও আছে। সিরিয়স বললেন–আমি জানি উনি খুব সহজ মানুষ নয়, তাহলে রেমাস ওর সম্বন্ধে যা বলবে তা সে শুনবে।

–লুপিন ওর সম্বন্ধে জানেন? হ্যারি বললো। সঙ্গে সঙ্গে প্রথম দিনে ক্লাশ নেবার সময় ওর আমব্রিজের হাফ-বিড সম্বন্ধে মারাত্মক উক্তি মনে পড়ে গেল।

–না, সিরিয়স বললেন–দু বছর আগে এন্টি-ওয়ার উলফ (নিজেকে সাময়িকভাবে নেকড়ে বাঘে রূপান্তরিত করার শক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি) সম্বন্ধে একটা আইন করার ব্যাপারে কিছু খসড়া বানিয়েছিলেন, তাই ওর কিছু কাজ পাওয়া শক্ত ব্যাপার হয়েছিল।

হ্যারির মনে পড়ে গেল লুপিনের ইদানিং জবুথবু চেহারা আর আমব্রিজের প্রতি তার বিতৃষ্ণার কথা।

হারমিওন রেগে বললো–ওয়ারউলফদের ওপর ওর রাগ কেন?

হয়তো তাদের ভয় পায়, সিরিয়স বললেন–উনি অর্ধ মানুষ পছন্দ করেন না। মার পিপলদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কাজকর্ম করেছেন। অযথা সময় নষ্ট। ক্রেচারের মত নিরীহ লোকের পেছনে লেগেছিল।

রন হাসলো; মনে হলো হারমিওন বিভ্রান্ত।

ও বললো–সিরিয়স, আমার মনে হয় আপনি চেষ্টা করলে ক্রেচার আপনার কথা শুনবে, হাজার হলেও আপনি তার পরিবারের একজন জীবিত লোক। তাছাড়া প্রফেসর ডাম্বলডোর বলেছেন…।

–ও, অ্যামব্রিজ তোমাকে সব হাফ–ব্রিডদের খতম করতে শিক্ষা দিচ্ছেন।

–আমরা কারও ব্যাপারে নাক গলাই না। উনি আমাদের ম্যাজিক শেখান না, হ্যারি বললো।

রন সঙ্গে সঙ্গে বললো, আমাদের বোকা বোকা বই পড়তে বলেন, পড়ি।

–হা ভাল কথা, সিরিয়স বললেন, তবে মিনিষ্ট্রি থেকে খবর পেয়েছি ফাজ তোমাদের কমব্যাটের ট্রেনিং দিতে চান না।

–ট্রেন্ড ইন কমব্যাট! হ্যারি একটু আশ্চর্য হয়ে কথাটা বললো–উনি কি মনে করেন এখানে আমরা জাদুকরদের নিয়ে সৈন্যদল বানাচ্ছি?

ঠিকই ধরেছে। তিনি তাই মনে করছেন, সিরিয়স বললেন। অথবা ডাম্বলডোর যা করছেন তাতে ভয় পাচ্ছেন। নিজের সৈন্যদল তৈরি করার অধিকার ম্যাজিক মন্ত্রণালয় করে নেবেন।

–হো হো এমন অদ্ভুত কথা একমাত্র লুনালাভগুডের মুখে মানায়, রন বললো।

হারমিওন গম্ভীর হয়ে বললো–মোদ্দা কথা ফাজ ভয় পাচ্ছেন তাই ডার্ক আর্টের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শিক্ষা দিতে চান না। সেই ট্রেনিং পেলে আমরা হয়তো মিনিস্ট্রির বিরুদ্ধে স্পেল ব্যবহার করতে পারি তাই না? হারমিওন অসম্ভব রেগে গেছে মুখ চোখ দেখে ওদের মনে হল।

–ঠিকই ধরছো, সিরিয়স বললেন–ফাজ মনে করছে ডাম্বলডোর ক্ষমতার জন্য যা ইচ্ছে তা করতে পারেন। দিনের পর দিন ডাম্বলডোরের বিরুদ্ধে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে চলেছেন। মনে হয় তলে তলে ডাম্বলডোরকে গ্রেফতারের পথ খুঁজছেন। ছুতো তো অনেক আছে।

হ্যারির মনে পড়ে গেলো পার্সির চিঠির কথা।

–আপনি কি জানেন আগামীকাল ডেইলি ফেটের ইস্যুতে ডাম্বলডোর সংক্রান্ত কিছু স্টোরি থাকতে পারে? রনের দাদা এমনই একটা ইঙ্গিত দিয়েছে তার চিঠিতে।

–আমি জানি না, সিরিয়স বললেন, সারা সপ্তাহে আমাদের অর্ডারে কারও সঙ্গে মোলাকাত খুব কম হয়। সিরিয়সের গলায় বিরক্তির সুর। ওখানে শুধু আমি আর ক্রেচার থাকি।

–আপনি তাহলে হ্যাগ্রিডের কোনও খবর পাননি?

–আহা! ওর তো ফেরা উচিত, ও কোথায় কেমন আছে কেউ বলতে পারছে। কথাটা বলে সিরিয়স ওদের উদবিগ্ন মুখের দিকে তাকালেন। ওদের মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে সিরিয়স বললেন, কিন্তু ডাম্বলডোরতো একটুও ভাবিত নয়, আমার ধারণা হ্যাগ্রিড ভালই আছে।

হারমিওন বললো–তাহলেও তো ওর এখন ফেরা উচিত।

-ম্যাডাম ম্যাকসিম ওর সঙ্গে ছিলেন। আমরা তার সঙ্গে সংযোগ করেছিলাম। তিনি বললেন, মাঝ পথেই তারা আলাদা হয়ে গেছে, কিন্তু এমন কোনও সংবাদ নেই যে তিনি অসুস্থ।

হ্যারি, রন, হারমিওন সিরিয়সের কথা যেন বিশ্বাস করে না।

–শোনো, তোমরা হ্যাগ্রিড সম্বন্ধে অহেতুক বেশি প্রশ্ন করবে না। ডাম্বলডোর সেটা চান না। হ্যাগ্রিড শক্ত সমর্থ লোক। ও ভালই আছে। থাকগে, আবার কবে তোমাদের হগসমিডে উইক এন্ড হবে? ভাবছি আবার কুকুরের বেশে তোমাদের সঙ্গে ওখানে যাবো কি যাবো না?

–না! হারমিওন বললো–সিরিয়স আপনি কি ডেইলি প্রফেট পড়েননি?

–ও হো হা! ওরা তো সব সময় আমার সম্বন্ধে গেম করে চলেছে। ওরা কিন্তু আজ পর্যন্ত একটারও ক্ল পায়নি।

–হয়তো তাই, তবে এইবার বোধহয় পেয়েছে, হ্যারি বললো, ম্যালফয় এখানে আসার সময় ট্রেনে আপনার সম্বন্ধে এমন একটা ইঙ্গিত করেছিলো যাতে মনে হয় কিছু জানে। ওর বাবা তখন প্লাটফরমে দাঁড়িয়ে ছিল। সিরিয়স, আপনি অবশ্যই লুসিয়াস ম্যালফয়কে জানেন, এখানে আছেন জানতে পারলে, মানে আপনাকে চিনতে পারলে…।

–ঠিক আছে, ঠিক আছে, তোমার কথা ধরতে পেরেছি, সিরিয়স বললেন। কথার সুরে ওদের মনে হলো সিরিয়স খুব দুঃখিত হয়েছেন। একটা আইডিয়া, ভাবছি সেটা করলে আমরা একসঙ্গে হতে পারি।

হ্যারি বললো–আমরা চাই না আবার আপনাকে আজকাবানে দধরে নিয়ে যায়।

হ্যারি আগুনের মধ্যে লক্ষ্য করলো সিরিয়সের চোখের তলাটা কুচকে গেলো, দেখে মনে হলো যেন বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। বড় বিষণ্ণ মুখ। হঠাৎ হাসি হাসি ভাব উধাও হয়ে গেল।

–ভেবেছিলাম তুমি তোমার বাবা জেমসের মত সাহসী, উদ্দাম হবে। সিরিয়সের কথার মধ্যে বেদনার ছাপ। তুমি তা নও। জেমসের কাছে বিপদ ছিল খেলা।

–শুনুন,

–না, এবার আমাকে যেতে হবে। আমি ক্রেচারের পদ শব্দ শুনতে পাচ্ছি খুব সম্ভব সিঁড়িতে, সিরিয়স বললেন। হ্যারি পরিস্কার বুঝতে পারলো সিরিয়স চলে যাবার জন্য অসত্য বলছেন। তোমাদের সঙ্গে আবার কবে দেখা হবে আমি লিখে জানাবো, আগুনের মধ্যে অসুবিধে বা ভয় পাবে না তো? আমি সব সময় বিপদ-শঙ্কার মোকাবিলা করতে ভালবাসি।

সামান্য একটা শব্দ হলো। আগুনের মধ্যে সিরিয়সকে ওরা আর দেখতে পেলো না। আগুনে শুধু বহ্নিশিখা। ওরা তিনজন সেইদিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সিরিয়সকে ওরা বড় আপন মনে করে, ভালবাসে। সুখ-দুঃখের সাথী সিরিয়স। ওদের মন দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *