০৭. দ্য মিনিস্ট্রি অব ম্যাজিক

০৭. দ্য মিনিস্ট্রি অব ম্যাজিক

হ্যারির পরদিন সকাল সাড়ে পাঁচটার সময় হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল, মনে হলো কেউ যেন ওর কানের কাছে মুখ এনে তীব্র স্বরে কিছু বললো। কয়েক সেকেন্ড ও কাঠ হয়ে শুয়ে রইল। শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগ, তার শুনানি ও শাস্তির সম্ভাবনা ওর মাথায় ঘুরতে লাগল। মানসিক যন্ত্রণা যেন বেড়েই চলল। বিছানায় শুয়ে থাকা অসহ্য মনে হল। ও বিছানা ছেড়ে উঠে চশমা পরল। মিসেস উইসলি জীনস, টি শার্ট ওর বিছানার পায়ের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। হ্যারি তাড়াতাড়ি সেগুলো পরে নিল। দেওয়ালে টাঙ্গান ছবিগুলো যেন ওকে দেখে জ্রিপ করে উঠল।

রন মুখটা খুলে আঁকাবাঁকা হয়ে শুয়ে ঘুমে অচেতন। হ্যারি ঘর থেকে বেরিয়ে দরজা বন্ধ করল। রনের ঘুম ভাঙলো না। কে জানে আর হয়তো রনের সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকবে না! হোগার্টস স্কুল থেকে বহিষ্কারের পর স্কুলে ওর সঙ্গে পড়াশুনা করতে পারবে না।

হ্যারি ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে কিচেনের দিকে এগোল। নামার সময় ক্রেচারের পিতৃপুরুষদের মাথাগুলোর দিকে তাকাতেই হল।

ও কিচেনে ঢোকার আগে ভেবেছিল সেখানে কেউ থাকবে না; কিন্তু বাইরে থেকে কথাবার্তা কানে এল। দরজা ঠেলে ভেতরে গিয়ে দেখল মি. উইসলি, মিসেস উইসলি, টংকস, লুপিন, সিরিয়স বসে রয়েছেন। ওরা যেন ওর আসার প্রতীক্ষা করছিলেন। মিসেস উইসলি ছাড়া সকলেই বাইরে যাবার জন্য জামা-কাপড় পরেছেন। মিসেস উইসলি পরেছেন বেগুনি রঙের ড্রেসিং গাউন। হ্যারিকে দেখে বলতে গেলে লাফিয়ে উঠলেন মিসেস উইসলি।

–ব্রেকফাস্ট, মিসেস উইসলি জাদুদণ্ড হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি উনুনের কাছে গিয়ে বললেন।

–ম… ম মর্নিং হ্যারি; হাই তুলে টংকস বললো। ও খুব ভাল করে চুল বেঁধেছে। বললো–কেমন ঘুম হলো?

–খুব ভাল।

–আ–আ আমি প্রায় সারারাত ঘুমতে পারিনি। হাই তুলে বললো–এখানে। এসে বস হ্যারি।

মিসেস উইসলি বললেন–কি খাবে হ্যারি পরিজ, ম্যাকিন্স? কিপারস? বেকন ডিম? টোস্ট? লুপিস্টংক? তারপর হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললেন–হ্যাঁ তুমি স্ট্রিমগৌর সম্বন্ধে কি বলছিলে টংকস?

বলছিলাম, আমাদের একটু সতর্ক থাকা দরকার। সেদিন আমাকে আর কিংগশ্লেকে অদ্ভুত সব প্রশ্ন করছিলেন। হ্যারি চুপ করে রইলো। টংকস বললো ডাম্বলডোরকে বলব আমি কাল নাইট ডিউটি করতে পারব না, ভীষণ ক্লান্ত আমি। আবার ও বড় দেখে একটা হাই তুলল। মি. উইসলি জাদুকরের পোশাক পরে তৈরি। টংকস আর হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললেন–কেমন মনে হচ্ছে?

টংকস বললো–অ্যামেলিয়া বোনস ভাল, পক্ষপাতিত্ব করেন না। তোমার বক্তব্য শুনবেন।

হ্যারি ঘাড় নাড়লো। তখনও কিছু বলার মত ওর অবস্থা নয়। কোনও কথা বলবে না যা ঘটেছিল ঠিকঠাক বলবে।

সিরিয়স বললেন–মাথাগরম করবে না হ্যারি। শান্তভাবে যা ঘটেছিল তাই বলবে।

হ্যারি চুপ করে রইল।

লুপিন খুব ধীরস্থিরভাবে বললো–আইন তোমার দিকে, জীবন-মৃত্যুর কারণ হলে নাবালক জাদুকররাও জাদু ব্যবহার করতে পারে।

হ্যারির ঘাড়ের ভেতরটা হঠাৎ শিরশির করে উঠল। কে যেন অলক্ষ্যে ওর ভেতর মোহমুক্ত জাদু ছড়িয়ে দিল। ঘুম হয়েছিল–হঠাৎ ধাতস্থ হয়ে দেখল মিসেস উইসলি ওর অবিন্যস্ত চুলগুলো ভিজে চিরুণী দিয়ে আঁচড়াবার সময় মাঝে মাঝে মাথাতে চিরুনিটা দিয়ে চাপ দিচ্ছে।

–চুলগুলো ভাল করে আঁচড়াতে পার না? মিসেস উইসলি আঁচড়াতে আঁচড়াতে বললেন।

হ্যারি শুধু মাথা নাড়ল।

মি. উইসলি ঘড়িতে সময় দেখে হ্যারির দিকে তাকালেন।

–আমার মনে হয় এবার আমাদের উঠতে হবে। একটু আগে গেলে মন্দ হবে। ওখানে গিয়ে অপেক্ষা করা এখানে বসে থাকার চেয়ে ভাল হবে।

–ঠিক আছে; হ্যারি টোস্টটা সরিয়ে রেখে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়াল।

টংকস বললো–সব ঠিক হয়ে যাবে ঘাবড়াবে না।

 –গুডলাক হ্যারি, লুপিন ওকে সাহস দিল।

–যদি তোমার বিরুদ্ধে কোন ডিসিসন হয় তাহলে আমি অ্যামেলিয়ার সঙ্গে কথা বলব; সিরিয়স বললেন।

হ্যারি মৃদু হাসল। মিসেস উইসলি ওকে স্নেহভরে জড়িয়ে ধরলেন–আশাকরি সবকিছু আমাদের দিকে যাবে।

–ঠিক আছে; হ্যারি বললো–পরে দেখা হবে।

হ্যারি, মি. উইসলির সঙ্গে বেসমেন্ট থেকে ওপর তলার হলে পৌঁছল।

–দরজা খুলে ওরা যখন রাস্তায় দাঁড়াল তখনও ভোরের আলো ফুটে ওঠেনি, বেশ ঠাণ্ডা।

স্কোয়ারের দিকে যেতে যেতে হ্যারি মি. উইসলিকে বললো–কাজে যাবার সময় আপনি কি হেঁটে যান?

–না, সাধারণত আমি জাদুর সাহায্যে যাই। তুমি তো এখন তা করতে পারবে। চল আমরা হেঁটেই যাই। অফিসে তোমাকে হেঁটে আসতে দেখলে বুঝতে পারবে তুমি নিয়ম মেনে চল। তাদের ভাল ধারণা হবে।

মি. উইসলির সঙ্গে হাঁটতে লাগল হ্যারি। উইসলি পকেটের মধ্যে হাত ঢোকালো। হ্যারি বুঝতে পারল জাদুদণ্ডটা উইসলি চেপে ধরে রয়েছেন। রাস্তাটা একেবারে জনমানবহীন বললেই চলে। আন্ডারগ্রাউন্ড রেলওয়ে স্টেশনে এসে দেখল সকালের যাত্রীরা ভিড় করে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে। মাগলরা ওর ধার ঘেষে ওদের দৈনন্দিন কাজে চলেছে। মি. উইসলি অনবরত ওকে সাহস দিতে লাগল।

–সত্যি অবিশ্বাসের ব্যাপার; মি. উইসলি ফিস ফিস করে বললেন। স্বয়ং চালিত টিকিট কেনার মেশিনটা দেখিয়ে বললেন–আমাদের দেশে তৈরি।

–মেশিনটা কাজ করছে না। হ্যারি আউট অফ অর্ডার দেখিয়ে বললো।

–তাহলেও, মেশিনটার দিকে আদরের দৃষ্টিতে তাকিয়ে মি. উইসলি বললেন।

মাগল অর্থ সম্বন্ধে মি. উইসলির তেমন জ্ঞান না থাকার জন্য হ্যারি টিকিট কিনল। পাঁচ মিনিট পরে ট্রেন আসতেই ওরা ট্রেনে উঠে পড়ল। ট্রেন চলল, লন্ডনের দিকে। কোন স্টেশনে এসেছে বা আসছে তা জানার জন্য মি. উইসলি অস্থিরচিত্তে আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যাপ দেখে চললেন।

–আর মাত্র তিনটে স্টপ, আমরা দুটো স্টপ ছেড়ে এসেছি। লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে ওরা একটা স্টেশনে নেমে পড়ল। সারা স্টেশন লোকে লোকারণ্য। সকলেরই বেশভূষা টিপটপ, হাতে ব্রিফকেস। মুখে হন্তদন্ত ভাব। অ্যাসক্যালেটারে চেপে ওরা স্টেশনে নেমে টিকিট দুটো মেশিনে দিতেই গেটের চাকা সরে গেল। ওরা ভূগর্ভ থেকে রাস্তায় দাঁড়ালো।

চারদিক দেখতে দেখতে মি. উইসলি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন–আমরা কোথায় নামলাম? হ্যারির মনে হল মি. উইসলি বার বার স্টেশন চেক করা সত্ত্বেও ওরা ভুল স্টেশনে নেমেছে।

চওড়া রাস্তার দুধারে বড় বড় বাড়ি, রাস্তা গমগম করছে যানবাহনে, শত শত লোক ব্যস্ত সমস্ত হয়ে চলছে।

–কোথায় এলাম? ওই রাস্তা ধরে হাঁটতে হবে হ্যারি। উইসলি হ্যারিকে নিয়ে একটা সাইড লেন ধরলেন।

–আমি খুব দুঃখিত হ্যারি। সচরাচর তো ট্রেনে চাপি না তাই। মাগলদের দৃষ্টিকোণ থেকে একটু অন্যরকম। তাছাড়া এই রাস্তা দিয়ে কদাচিৎ হেঁটেছি।

ওরা হাঁটতে হাঁটতে একটা সরু রাস্তায় দাঁড়াল। রাস্তার ধারের বাড়িগুলো ছোট ছোট ঝকঝকে তকতকে নয়। কেমন যেন দৈন্য দৈন্য ভাব, অফিসগুলোও ছোট মনে হয়। হ্যারি মনে মনে ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের একটা সুন্দর ঝকঝকে তকতকে বাড়িতে অবস্থিত এমন একটা ছবি এঁকেছিল।

উইসলি খুশিতে ভরে গিয়ে বললেন–হ্যাঁ এইতো এসে গেছি, একটা পুরনো লাল রং-এর টেলিফোন বুথ দেখিয়ে বললেন। বুথটার কাঁচ ভাঙা, একটা জোড়াতালি দেওয়া দেওয়ালেতে গাঁথা।

–এসো হ্যারি।

উইসলি টেলিফোন বক্সের দরজাটা খুললেন।

উইসলি দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। বুথের ভেতরটা এত ছোট যে একজনের বেশি ভাল করে দাঁড়াতে পারা যায় না। হ্যারি দেখল একটা টেলিফোন কোনও রকমে ঝুলে রয়েছে। পরিষ্কার বোঝা যায় কেউ ইচ্ছে করে ওটার ওই রকম অবস্থা করছে।

–উইসলি টেলিফোনের রিসিভারটা নেবার জন্য হাত বাড়ালেন।

হ্যারি বললো–মিস্টার উইসলি, আমার মনে হয় ওটা কাজ করছে না।

–না না ঠিক আছে; উইসলি রিসিভারটা হাতে ধরে ডায়েল করার জন্য ঝুঁকে পড়েন। উইসলি নম্বর ঘোরাতে লাগলেন। … টু ফোর ফোর … টু।

ডায়ল করা শেষ হলে কানে এল একটি মেয়ের মিষ্টি মধুর স্বর স্বাগতম, ম্যাজিক মন্ত্রণালয়। অনুগ্রহ করে আপনার নাম ও কাজের বিষয় বলুন।

মি. উইসলি রিসিভারটা ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন। ভেবে পাচ্ছে না কি বলবে। কানের কাছে মাউথপিসটা এনে বললেন–আরথার উইসলি, মিসিউজ অফ মাগল আর্টেফ্যাক্টস অফিস। হ্যারিপটারের সঙ্গে এসেছি।ওকে শুনানির জন্য ডেকে পাঠান হয়েছে।

–ধন্যবাদ। দয়া করে ব্যাজটা নিয়ে বুকের সামনে আটকে রাখুন, সেই মধুর কণ্ঠে মেয়েটি অপর প্রান্ত থেকে বললো।

হ্যারি যেখানে পয়সা ফেলে ডায়েল করতে হয় সেই চৌকো জায়গাতে ক্লিক করতেই একটা চৌকো রূপোর ব্যাজ বেরিয়ে এল। ব্যাজে লেখা হ্যারি পটার নিয়ম ভলের শুনানি।

–দর্শন প্রার্থীদের অনুরোধ করা হচ্ছে তারা যেন অফিসের ভেতর যাওয়ার আগে রিসেপসনে সিকুরিটি ডেস্কের সামনে ম্যাজিক ওয়াল্ড জমা দেন ও দেহ তল্লাসির জন্য প্রস্তুত হন। অ্যাট্রিয়মের শেষ প্রান্তে সিকিউরিটি অফিস অবস্থিত।

তারপরই টেলিফোন বুথের মেঝেটা কাঁপতে শুরু করল। ওরা একটু একটু করে ভূগর্ভে নামতে শুরু করল। বুথের কাঁচ দিয়ে হ্যারি দেখল আশপাশের বাড়িগুলো যেন উপরের দিকে উঠছে। তার পরই শুধু শুনতে পেল গুম গুম শব্দ টেলিফোনের বাক্স থেকে। প্রায় এক মিনিট পর, যদিও হ্যারির কাছে আরও বেশি সময় মনে হল, পায়ের তলায় চিংক শব্দ করে একটা সোনালী আলো জ্বলে উঠল। কেউ যেন ওকে তুলে ধরে ধপাস করে ফেলে দিতেই একরকম মুখ থুবড়ে পড়ল। ব্যাথায় ওর দু চোখ জলে ভরে গেল।

–জাদু মন্ত্রণালয় আপনাদের একটি সুন্দর দিন কামনা করছে

টেলিফোন বুথের দরজাটা খুলে যেতেই উইসলি বাইরে দাঁড়ালেন, তারই পেছনে হ্যারি। হ্যারি হাঁ করে এধার ওধার তাকাল।

ওরা অতি সুন্দর করে সাজানো গোছানো একটা লম্বা হলের সামনে দাঁড়াল। হলের মেঝেটা এত চকচকে পালিশ করা মনে হয় যেন কাঁচের।

পিকক ব্লু রঙের ছাদের সিলিং। যেখানে নানা রকম সোনালী রঙের সিম্বল। সিম্বলগুলো ঘুরছে আর বিরাট একটা নোটিশ বোর্ডের মত পরিবর্তিত হচ্ছে। হলের দু ধারের দেওয়াল কাল চকচকে পালিশ করা কাঠের। মাঝে মাঝে রয়েছে ফায়ার প্লেস। কয়েক সেকেন্ড পর পর বা ধারের এক একটা ফায়ার প্লেস থেকে নরমভাবে হুশ শব্দ করে ডাইনি অথবা জাদুকররা বেরিয়ে আসছে। তারপর ডানধারে প্রত্যেকটি ফায়ার প্লেসের সামনে ছোট সারিতে কিউ করে দাঁড়াচ্ছে, অপেক্ষা করছে চলে যাবার।

হলের নিচের দিকে অর্ধেকটা যাবার পর একটা গোলাকৃতি ফোয়ারা রয়েছে। ফোয়ারার চারপাশে অনেক সোনার মূর্তি। সবকটি মূর্তি প্রায় মানুষের আকারের চেয়ে দীর্ঘ। ওদের কেন্দ্রস্থলে আরও বেশি দীর্ঘ এক জাদুকরের মূর্তি। ওর হাতে রয়েছে একটা জাদুদণ্ড, সোজা আকাশের দিকে তোলা। জাদুকর মূর্তির সামনে রয়েছে একটি সুন্দরী ডাইনি মূর্তি, সেনটর, অর্ধেক মানুষ অর্ধেক ঘোড়া। একটা বেঁটে ভূত আর একটা গৃহডাইনি। শেষের তিনজন ডাইনি আর জাদুকর মুখ তাদের অবাক হয়ে দেখছে। ওদের হাতের জাদুদণ্ডের শেষ প্রান্ত থেকেও জল বেরিয়ে আসছে।

হ্যারি দেখল অনেক ডাইনী আর জাদুকররা হল দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ওরা ভাবলেশহীন। উইসলি বললেন-ওই দিকে চল হ্যারি।

ওরা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মচারীদের পাশ দিয়ে চলল। তারা যে যার নিজের কাজ করছে। ডেইলি প্রফেট কাগজ পড়ছে। ফোয়ারার জলে দুটো চকচকে বাক্স দেখতে পেল। তার ওপর লেখা রয়েছে:

দানপাত্র। জাদুকর ভাইদের জন্য যা দান করবেন তা সেন্টমাংগোজ হাসপাতালে দেয়া হবে, তাদের চিকিৎসা ও আঘাতের জন্য।

আমি এখনও হোগার্টস থেকে বিতাড়িত হইনি, আমি দশ গ্যালিয়নস দিতে পারি–হ্যারি বেপরোয়াভাবে ভাবল।

–এদিকে এসো হ্যারি, উইসলি বললেন।

এক জায়গায় লেখা রয়েছে সিকুরিটি চেক। একজন খোচা খোচা দাড়িওয়ালা জাদুকর ময়ূরকণ্ঠী রঙ-এর আলখেল্লা পরে সেখানে বসে রয়েছে। ওদের দেখে হাতের ডেইলি প্রফেটটা ডেস্কে রেখে তাকাল।

হ্যারিকে দেখিয়ে উইসলি বললেন–আমি একে নিয়ে এসেছি।

–এখানে দাঁড়ান। সিকুরিটি অফিসার গম্ভীর স্বরে বললো। হ্যারি দাঁড়াতেই জাদুকর সোনার একটা রড, অনেকটা গাড়ির এরিয়ালের মত তুলে ধরল। তারপর সেটা হ্যারির পা থেকে মাথা পর্যন্ত বুলিয়ে কর্কশ স্বরে হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললো, জাদুদণ্ড।

হ্যারি দণ্ডটা দেখাল। জাদুকর ওটা নিয়ে একটা ডিশওয়ালা পেতলের স্কেলের ওপর রাখল। সঙ্গে সঙ্গে দণ্ডটা কাঁপতে লাগল। একটা সরু মোটা কাগজ দূরন্ত গতিতে সেই স্কেলের ফাটল থেকে বেরিয়ে এল। জাদুকর সেটা ছিঁড়ে নিয়ে তাতে যা লেখা আছে তা পড়ল।

এগার ইঞ্চি ফনিক্স–ফেদার আঁশ চার বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। সত্য?

হ্যারি থতমত খেয়ে বললো–হ্যাঁ।

সিকিউরিটি জাদুকর কাগজের টুকরোটা একটা পেতলে গেঁথে রেখে বললো এটা তুমি ফেরত যাবার সময় পাবে।

–ধন্যবাদ।

–এগিয়ে যাও। জাদুকর বললো।

জাদুকর হ্যারির কপালের কাটা দাগ আর ব্যাজের দিকে তাকিয়ে রইল। মি. উইসলি বললেন–ধন্যবাদ এরিক।

তারপর মি. উইসলি হ্যারির কাঁধে হাত রেখে গাদাগাদা জাদুকরী আর জাদুকররা যেখানে কাজ করছে তাদের পাশ কাটিয়ে সোনার গ্রিলের সামনে পঁড়ালেন।

ভিড় এড়িয়ে হ্যারি উইসলির পিছু পিছু সোনার গ্রিল পেরিয়ে অপেক্ষাকৃত একটা ছোট হলের মধ্যে দাঁড়াল। দেখল–সেখানে সোনার গারদ দেওয়া কম করে কুড়িটা লিস্ট রয়েছে। হ্যারি আর উইসলি একটা লিস্টের সামনে দাঁড়াল। ওদের আগে সামান্য কজন দাঁড়িয়েছিল। কাছেই একজন বড় বড় দাড়িওয়ালা দাঁড়িয়ে হাতে তার বড় কার্ড বোর্ডের বাক্স। বাক্সের ভেতর থেকে ক্রমাগত খড়খড় শব্দ বেরিয়ে আসছে, হ্যারি শুনতে পেল।

সেই দাড়িওয়ালা জাদুকর উইসলিকে দেখে মাথা নামিয়ে বললো–ভাল আছেন আর্থার?

উইসলি বাক্সটার দিকে তাকিয়ে বললেন–তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন বব?

জাদুকর রাশভারী গলায় বললো–আমরা ঠিক বুঝতে পারছিনে মি. আর্থার। আগে ভেবেছিলাম এটা পাঁকের মধ্যে আটকে যাওয়া চিকেন, যতক্ষণ নিঃশ্বাসের সঙ্গে আগুন ঠিকরে বেরুচ্ছিল। প্রথমে আমার মনে হয়েছিল এটা পালন করতে দেওয়া মারাত্মক আইন ভঙ্গের নিদর্শন।

ঘট ঘট শব্দ করে একটা শূন্য লিফট দাঁড়াতেই সকলে তার ভেতরে ঢুকে গেল। হ্যারিও উইসলির সঙ্গে সকলের সঙ্গে গাদাগাদি করে দাঁড়াল। সোনার রঙের। গেটটা বন্ধ হয়ে গেল। হ্যারি দেখল জাদুকর আর জাদুকরীরা ওর দিকে কৌতূহলী হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। কারও দৃষ্টিতে যাতে ধরা না পড়ে তার জন্য হ্যারি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। কপালের কাটাদাগ ঢাকার জন্য মাথার চুল কপালে নামিয়ে আনল। লিফটের গ্রিল বন্ধ হয়ে গেল ঘট ঘট শব্দ করে। তারপর ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে লাগল। চেনের ঝন ঝন শব্দের মাঝে আবার টেলিফোন বক্সের সেই মেয়েলী মিষ্টি স্বর শুনতে পেল:

লেভেল সাত, জাদু খেলা ও স্পোর্টসের বিভাগ–ব্রিটিশ ও আইরিশ কিডিচ লীগের সদর দপ্তর, অফিসিয়াল গবস্টোনস্ ক্লাব এবং লুডিক্রোয়াস পেটেন্টস অফিস

লিফটের দরোজা খুলে গেল। হ্যারি অত্যন্ত অগোছালো একটা করিডোর দেখতে পেল। সেখানে দেখল কিডিচ টিমের অনেক পোস্টার দেয়ালে ছোট ছোট পেরেক দিয়ে সাঁটা রয়েছে। লিফটের মধ্যে এক জাদুকর একগাদা ঝাড়ু বগলদাবা করে দাঁড়িয়েছিল। লিফট থামতেই সবাইকে ঠেলে সরিয়ে করিডোর দিয়ে চলে গেল। যারা নামবার তারা নেমে গেলে লিফট ওপরে উঠে গেল।

আবার হ্যারি শুনতে পেল মেয়েটির ঘোষণা

–লেভেল ছয়, ম্যাজিক্যাল ট্রান্সপোর্টেসন, ইনকরপোরেটিং ফ্ল–নেটওয়ার্ক অথরিটি, ব্রুম রেগুলেটরি কন্ট্রোল, পোটকী অফিস এবং অ্যাপারেশন টেস্ট সেন্টার।

ঘোষণা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে লিফটের দরজা খুলে গেল। চার পাঁচ জন। জাদুকরী আর জাদুকর নেমে গেলে কয়েকটা কাগজের এরোপ্লেন লিফটের মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ করে ঢুকল। ওগুলো হ্যারির মাথার ওপরে আলগাভাবে ঝুলে রইল। প্লেনের রঙ হালকা বেগুনি। জাদু মন্ত্রণালয় ডানার কোনায় স্ট্যাম্প করা।

মি. উইসলি বললেন–ওগুলো ইন্টার ডিপার্টমেন্টাল মেমোস। আমরা পেঁচা ব্যবহার করি, কিন্তু ওগুলো বড় বিরক্তিকর, সারা ঘর, ডেস্ক নোংরা করে।

–লেভেল পাঁচ, ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্টারন্যাশনাল ম্যাজিক্যাল কো-অপারেশন, ইনকরপোরেটিং দ্যা ইন্টারন্যাশনাল ম্যাজিক্যাল ট্রেডিং স্ট্যান্ডার্ড বডি, দ্যা ইন্টারন্যাশনাল ম্যাক্যিাল অফিস অল অ্যান্ড দ্যা ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অফ উইজার্ডস, ব্রিটিশ মিটস দরজা খুললে মেমোর মধ্যে থেকে দুটো। আরও কিছু জাদুকরী আর জাদুকর লিফট থেকে নেমে গেল। আরও মেমো ভেতরে ঢুকলো। মাথার ওপরের আলো আবার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।

–লেবেল চার, ডিপার্টমেন্ট অফ রেগুলেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অফ ম্যাজিক্যাল ক্রিয়েচার্স, ইনকরপোরেটিং বিস্ট, বিইং অ্যান্ড স্পিরিট ডিভিশন, গবলিন লিয়াজো অফিস অ্যান্ড পেস্ট অ্যাডভাইসরি বুরো।

-একসকিউজ, পাঁচটা অগ্নি বর্ষণকারী চিকেন সঙ্গে নিয়ে এক জাদুকর লিফট থেকে নেমে গেল। দরজা বন্ধ হয়ে গেল লিফটের।

–লেবেল তিন, ডিপার্টমেন্ট অফ ম্যাজিক্যাল অ্যাকসিডেন্টস অ্যান্ড ক্যাটাট্রফিস, ইনকুডিং দ্য অ্যাকসিডেন্টাল ম্যাজিক রিভার্সল স্কোয়ার্ড, অবলিডেটর হেড কোয়াটার্স অ্যান্ড মাগল–ওয়ার্দি এক্সকিউজ কমিটি।

একমাত্র উইসলি আর হ্যারি আর এক জাদুকরী বিরাট লম্বা এক টুকরো পার্চমেন্ট কাগজে কিছু লেখা ছিল সেটা পড়ছিল, তারা তিনজন ছাড়া সকলেই নেমে গেল।

–লেবেল দুই, ডিপার্টমেন্ট অব ম্যাজিক্যাল ল এনফোর্সমেন্ট, ইনকুন্ডিং দ্য ইমপ্রপার উইসলি অফ ম্যাজিক অফিস, অরর হেড কোয়ার্টার্স অ্যান্ড ওয়াইজেনগেমট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিসেস

–এইখানে আমাদের নামতে হবে, উইসলি বললেন। হ্যারি উইসলির পেছনে পেছনে হাঁটতে লাগল।

করিডোরের দুপাশে লাইন করে দরজা–ওই ধারে আমার অফিস, উইসলি বললেন।

হ্যরি বললো–মি. উইসলি আমরা কি এখনও আন্ডার গ্রাউন্ডে রয়েছি?

–হ্যাঁ, তাই; উইসলি বললেন–ওই জানালাগুলো দেখছ ওগুলো জাদুমুক্ত জানালা। ম্যাজিক্যাল মেইনটেনেন্স জানায়, প্রতিদিন আমাদের আবহাওয়া কেমন হবে। গতবারে দুবার ঘূর্ণী ঝড় হয়েছিল। এই দিকে এসো হ্যারি।

ওক গাছের দুটো ভারি ভারি দরজা পার হয়ে ওরা একটা খোলা জায়গায় এসে দাঁড়াল। দারুণ বিশৃঙ্খল জায়গাটা। দুধারে দুটো কাঠের পার্টিশান করা ঘর। ঘরের ভেতর থেকে লোকেদের কথাবার্তা হইচই–হাসি শুনতে পেল। ঘর থেকে মেমো আসছে যাচ্ছে ছোট ছোট রকেটের মত। পার্টিশান করা ঘরের দরজার পাশে এক ভারসাম্যহীন বোর্ড ঝুলছে অরোর হেড কোয়ার্টারস।

হ্যারি ঘরের ভেতরটা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখল। অরোররা দুটো ঘরের দেওয়াল ঢেকে রেখেছে অনেক সব জাদুকরদের ছবি দিয়ে, যাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া তাদের পরিবারের সদস্যদেরও ছবি রয়েছে, তাছাড়া ওর প্রিয় কিডিচ টিমের পোস্টারও রয়েছে। ডেইলি ফেটের কাটিংও বাদ যায়নি। একজন বিলের চেয়েও বড় পনিটেল করা জাদুকর ডেস্কে পা তুলে বসে আছে। একজন কেরানিকেও রিপোর্ট ডিটেকসন দিচ্ছে। অদূরে একটা চোখে পট্টি বাধা একজন জাদুকরী ওপাশের ঘরে বসে কিংগজ্ঞে শেকেলবোল্টের সঙ্গে পার্টিশানের আড়াল থেকে কথা বলছে।

ওরা উইসলির ঘরে ঢুকলে কিংগশ্নে বললেন–সুপ্রভাত উইসলি। তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই, দু এক সেকেন্ড সময় হবে?

উইসলি বললেন–এক সেকেন্ড হলে অবশ্যই। আমার একটু জরুরি কাজ আছে। ওরা এমনভাবে কথা বললো যেন তারা ভালভাবে পরিচিত নয়। হ্যারি কিংগশ্লেকে হ্যালো বলতেই কিংগশ্নে উঠে দাঁড়ালেন। ওরা কিংগন্ত্রের সঙ্গে সারি সারি কিউবিকিলের শেষটার সামনে এসে দাঁড়াল।

হ্যারি চতুর্দিকে সিরিয়সের ছবি দেখে থতমত খেয়ে গেল। খবরের কাগজের কাটিংস, পুরনো ফটো–ওর বাবার বিয়েতে তোলা ফটো, সব দেওয়ালে সাঁটা। তারই মাঝে সামান্য জায়গা অধিকার করে আছে ছোট একটা পৃথিবীর মানচিত্র। মানচিত্রটা লাল পিন দিয়ে আটকানো। পিনগুলো আলো লেগে ঝকমকে হিরের মত জ্বলজ্বল করছে।

–এখানে, কিংগস্লে উইসলিকে একটু যেন রুঢ় স্বরে বলে তার হাতে একটা কাগজ গুঁজে দিল আমি যতটা সম্ভব মাগলদের উড়ন্ত যান, গত বার মাসে যত দেখা গেছে, তার খবর চাই। আমরা খবর পেয়েছি ব্ল্যাক এখনও তার পুরনো মোটর সাইকেল ইউজ করছে।

কিংগস্লে হ্যারিকে চোখ পিটপিট করে খুব আস্তে আস্তে বললেন–ওকে ম্যাগাজিনটা দাও, খবর পড়ে ভাল লাগবে। কথাটা বলে স্বাভাবিক স্বরে বললেন বেশি সময় নিও না উইসলি রিপোর্ট পেতে দেরি হলে আমাদের তদন্ত একমাসের মত পিছিয়ে যাবে।

–তুমি যদি আমার রিপোর্ট ঠিকমত পড়তে তাহলে ফায়ার লেগস না বলে ফায়ার আর্মস বলতে; মি. উইসলি ঠাণ্ডা মেজাজে বললো–তাছাড়া আমার মনে হয় মোটর সাইকেল সংক্রান্ত খবরের জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে। আমরা এখন অতি ব্যাস্ত আছি। তারপর রহস্য করে বললেন–তুমি যদি সাতটার আগে এখান থেকে যাও তো মল্লীর বানান মিটবল খেতে পারবে।

উইসলির কিংগরে ঘর থেকে বেরিয়ে হ্যারিকে সঙ্গে নিয়ে ভারি আর এক সেট আগের মত ভারি ওক কাঠের দরজা পেরিয়ে এক জায়গায় পৌঁছলেন। জায়গাটার করিডোর অগোছালো, অপরিষ্কার, তারপর করিডোরের শেষ প্রান্তে একটা ঘরের সামনে দাঁড়ালেন। ঘরের দরজায় পেতলের প্লেটে লেখা মিস ইউ অফ মাগল আর্টেফ্যাক্টস।

অফিস ঘরটা উইসলির। ছোট ঘর, গাদাগাদি করে অফিসের কাগজপত্র, ডেস্ক, চেয়ার রাখা। পা ফেলার জায়গা নেই।

মি. উইসলি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন–হ্যারি চল চল, আমাদের পাঁচ মিনিট আগে পৌঁছানো দরকার ছিল।

উইসলি, হ্যারি একরকম দৌড়াতে দৌড়াতে চলল।

একটু আগে হ্যারির সঙ্গে উইসলি পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, দুর্বল দেহের এক বৃদ্ধ জাদুকরের। ও উইসলির ঘরে হাঁফাতে হাঁফাতে বলে গেছে (হ্যারিকে না দেখে) –আর্থার আমি এই দশ মিনিট আগে তোমার বাড়িতে (পেঁচা দিয়ে) একটা খবর পাঠিয়েছি, নিশ্চয়ই খবরটা পাওনি?

উইসলি বললেন–বাথরুম ওভার ফ্লো সম্বন্ধে?

–আরে না না ওসব কিছু নয়, পটারের শুনানি সম্বন্ধে। সময়টা বদলেছে। আটটার সময়, দশ নম্বর পুরনো আদালতের ঘরে।

–কে জানে সময় বদলেছে কেন? হ্যারি উইসলির সঙ্গে যেতে যেতে রুদ্ধশ্বাসে বললেন। পার্সিকে যেতে দেখলেন।

অরোর কিউবিকলের পাশ দিয়ে যাবার সময় অনেকে ওদের কৌতূহলী দৃষ্টিতে দেখে। হ্যারির মনে হল ও যেন পারকিনসের ডেস্কে ওর অনেক কিছু ফেলে এসেছে।

উইসলি বললেন–সময় কেন বদলেছে তাতো বুঝতে পারবো না। আগেভাগে যদি না আসতাম খুব অসুবিধে হতো। হ্যারিকে নিয়ে উইসলি হন্তদন্ত হয়ে একটা লিফটের গেটের সামনে গিয়ে ডাউন বোতামটা টিপলেন।

–চলো দেরি নয়। লিফটে ঢুকে উইসলি বার বার নয় নম্বর বোম টিপতে থাকে। ভীষণ রেগে বললেন–বহু বছর ধরে ওই কোর্টরুমটা ব্যবহার হয়নি। বুঝতে পারছি না কেন ওখানে ব্যবস্থা করল যদি না… যাকগে।

একটা কুমড়োর মত জাদুকরী লিফটে ঢুকতেই উইসলি চুপ করে গেলেন।

আবার হ্যারি সেই মেয়েটির মিষ্টি গলা শুনতে পেল, অ্যাট্রিয়াম লিফটের সোনার গ্রিল খুলে গেল। হ্যারি দূরে দেখতে পেল ফোয়ারাতে সোনার মূর্তি। মোটা ডাইনি নেমে গেলে কুঁচকনো কুঁচকোনো গায়ের চামড়ার এক জাদুকর লিফটে ঢুকল। মুখটা ওর খুবই বিষণ্ণ।

–সুপ্রভাত, আর্থার জাদুকর কেমন যেন ঘুম ঘুম স্বরে বললো –আজকালতো তোমাকে এখানে বড় একটা দেখতে পাই না। উইসলি হ্যারির দিকে উৎকণ্ঠার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন–খুব দরকারি কাজ আছে বোড়।

বোড হ্যারিকে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে বললেন–তাই! হা হা তাতে থাকতেই পারে।

হ্যারির বোডের দিকে তাকানোর ইচ্ছা না থাকলেও ওর অবিচল দৃষ্টি কেমন যেন অস্বস্তিকর মনে হতে লাগল।

–ডিপার্টমেন্ট অফ মিস্টিরিজ, একটা মেয়ের মিষ্টি কন্ঠস্বর। 

লিফটের দরজা খুলতেই উইসলি হ্যারিকে বললেন–তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি হ্যারি।

ওরা একটা করিডরে দাঁড়াল। অন্যান্য করিডোরের চেয়ে সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন মনে হল হ্যারির। দেওয়ালে কিছু সাঁটা নেই, জানালা নেই, লম্বা করিডরে কোনও দরজা নেই। হ্যারি এগিয়ে যাচ্ছিল, উইসলি ওর হাত চেপে ধরে বললো–ওদিকে না। ওকে টানতে টানতে বাঁদিকে ঘুরে একটা সিঁড়ির মুখে দাঁড়ালেন।

–নামতে হবে। উইসলি হাঁফাতে হাফাতে বললো। তারপর লাফিয়ে লাফিয়ে নিচে নামতে লাগলেন। বললেন–এদিকে কোনও লিফট নেই। কে জানে এখানে কেন ডেকে পাঠালো।

ওরা আবার একটা করিডরে পৌঁছলো। করিডরটা হোগার্টসের স্নেইপের ডানজিয়নের মত দেখতে। সারা দেওয়াল এবড়ো থেবড়ো পাথরের, মাঝে মাঝে ব্যাকেটে টর্চ লাগান। যে দরজাটা দিয়ে ওরা ভেতরে ঢুকল সেটা একটুও সাধারণ মনে হল না। বিরাট কাঠের, তাতে মাঝে মাঝে লোহার বল্টু পোঁতা।

–কোর্ট রুম… দশ… হা কাছাকাছি এসে গেছি, ও হ্যাঁ এই তো।

ওরা কাল রঙ দেওয়া একটা লোহার দরজার সামনে দাঁড়াল। দরজার পাল্লাতে প্রকাণ্ড একটা লোহার তালা ঝুলছে।

–এস, ঘরের ভেতরে চটপট চলে যাও।

–আপনি যাবেন না?

–না না! আমার প্রবেশ নিষেধ। গুড লাক!

হ্যারির শুধু বুকের ভেতরটা ধুক ধুক করছে তা নয়, গলাটাও শুকিয়ে গেছে। বার বার ও সেঁক গিলতে লাগল। ও লোহার দরজার হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে কোর্ট রুমে ঢুকল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *