০৪. নাম্বার টুয়েলভ, গ্রিম্মল্ড প্লেস

০৪. নাম্বার টুয়েলভ, গ্রিম্মল্ড প্লেস

হ্যারি প্রশ্ন করলো–অর্ডার অব দি… কী?

–এখানে নয় হ্যারি! মুডি চাপাগলায় বললেন–বাড়ির ভেতরে না গিয়ে কোনও কথাবার্তা নয়।

কথাটা বলেই মুডি পার্চমেন্টের টুকরোটা একরকম হ্যারির হাত থেকে নিয়ে ম্যাজিক ওয়ান্ড দিয়ে আগুন তৈরি করে জ্বালিয়ে দিলেন। চামড়ার কাগজটা একটু একটু করে পুড়ে ছাই হয়ে গেলে, হ্যারি অন্ধকারাচ্ছন্ন বাড়িগুলোর দিকে তাকাল। ওরা এগার নম্বর বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে, ও বাঁদিকে তাকিয়ে দশ নম্বর বাড়ি দেখতে পেল, ডানধারে তের নম্বর।

কিন্তু বার নম্বর?

লুপিন শান্তভাবে বললেন–এই মাত্র তুমি যেটা মনে রেখেছ সেই সম্বন্ধে ভাব। বার নম্বর বাড়ি মনে করার সাথে সাথে কোথা থেকে বার নম্বর লেখা একটা ভগ্নপ্রায় দরজা এগার ও তের নম্বর বাড়ির মাঝে এসে গেল, তারপরই দেখল নোংরা দেওয়াল আর ঝুলকালি মাখা জানালা লাগান একটা বাড়ি। একটা অতিরিক্ত বাড়ি দুধারের দুটি বাড়িকে ঠেলেঠুলে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। হ্যারি হাঁ করে বাড়িটার দিকে তাকাল। এগার নম্বর বাড়িতে গাউ গাউ শব্দ করে স্টিরিও বেজে চলেছে। সম্ভবত মাগলসরা বাড়ির ভেতর থেকে বাজিয়ে যাচ্ছে, শব্দের ধার ধারছে না।

–চল চল হ্যারি, মুডি ওকে ঠেলতে ঠেলতে বাস্তবে অথবা সত্যে পরিণত হওয়া দরজার সামনে গেল। দরজাটার ওপর কাল রঙ যেমন তেমন করে লাগান, ফাটাফাটা দাগ। দরজার হাতলটা অদ্ভুত ধরনের–যেন একটা পেঁচান পেঁচান সাপ।

দরজায় না আছে চাবির গর্ত, লেটার বক্সও নেই।

লুপিন ওর ম্যাজিক ওয়ান্ডটা দিয়ে দরজায় খুব আস্তে টোকা দিল। হ্যারি শুনতে পেল শুধু তালা খোলার আর লোহার শেকলের ধন খন ঝন ঝন আওয়াজ। তারপরই কড় কড় শব্দ করে বন্ধ দরজাটা খুলে গেল। লুপিন কানে কানে বললেন তাড়াতাড়ি ভেতরে ঢোকো। বেশি এগিয়ে যাবে না কোনও জিনিসে হাত লাগাবে না।

হ্যারি দরজার গোড়ায় পা দিয়ে প্রায় অন্ধকার সামনের হলঘরটার দিকে তাকাল। নাকে ভ্যাপসা চামসে গন্ধ ধ্বক করে এসে লাগল। স্যাঁত-সাতে, ধুলো, পচা গন্ধ সব মিলিয়ে বাড়িটা একটা বহু বহু বছরের পরিত্যক্ত বাড়ি বলে মনে হল। ও পেছনে ফিরে যাদের সঙ্গে এসেছে তাদের দিকে তাকাল। দেখল টংকস আর লুপিন ওর ভারি ট্রাঙ্ক, হেডউইগের খাচা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মুডি রাস্তার আলোর বাগুলো ফিরিয়ে দিতে ব্যস্ত। একটা একটা করে সেগুলো উড়ে যাচ্ছে দেখতে পেল হ্যারি। মুহূর্তের মধ্যে রাস্তাটা আলোয় আলোকময় হয়ে গেল। কমলালেবু রং-এর আলো। মুডি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে সদর দরজাটা বন্ধ করে দিতেই গাঢ় অন্ধকার হয়ে গেল হলটা।

–এখানে এসে দাঁড়াও।

মুডি হ্যারির মাথায় ম্যাজিক ওয়ান্ড দিয়ে হালকাভাবে ঘা দিতেই মনে হল একটা গরম প্রবাহ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। হ্যারি বুঝতে পারল জাদুবলে সুরক্ষিত অবস্থা থেকে মুক্ত হচ্ছে ও।

মুডি ফিস ফিস করে বললেন–আলোর ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তোমরা সবাই চুপ করে যেখানে আছ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাক।

হ্যারির কাছে পিঠে দাঁড়িয়ে থাকা জাদুকরদের ফিস্ ফিস্ হিসহিস শব্দ যেন এক অমঙ্গলের পূর্বাভাস বলে মনে হতে লাগল। ও যেন মৃত এক ব্যক্তির ঘরে। ঢুকেছে–তার আত্মা হলেতে নিচুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হ্যারি খুব হালকা হিসহিস শব্দ শুনল, তারপরই চারদিকে দেওয়ালে পুরনো কাঁচের গ্যাসের আলো জ্বলে উঠল। প্রাণ ফিরে এল অন্ধকার গুহার জগতে! নিপ্রভ আলোতে দেখল দেওয়ালে ছেঁড়া ছেঁড়া ওয়াল পেপার সঁটা, ছিঁড়ে সুতো বেরিয়ে যাওয়া লম্বা লম্বা কার্পেট পাতা। বিষণ্ণ হলওয়ের ছাদে ঝুলছে মাকড়সার জালে ঢাকা ঝাড়ু লণ্ঠন। দেওয়ালে টাঙ্গানো পুরনো পুরনো মানুষের প্রতিকৃতি। সেগুলো ধূলো–ময়লা লেগে ঝাঁপসা হয়ে গেছে। টেবিলের ওপরে রাখা বাতির ঝাড়ু বাতিদান, আর ঝাড়ুবাতিগুলো কুঁকড়ে শুয়ে থাকা সাপের মত। শুনতে পেলো কে যেন দ্রুত পায়ে ওর দিকে আসছে।

দ্রুত পায়ের শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখল রনের মা। মিসেস উইসলি হলের শেষ দিক থেকে একটা দরজা খুলে ওর দিকে আসছেন। ওদের কাছে এসে হ্যারি আর অন্যদের স্বাগত জানালেন সহাস্যে। হ্যারি দেখল আগের থেকে বেশ রোগা হয়ে গেছেন মিসেস উইসলি।

–ও হ্যারি তুমি এসে গেছ? তোমাকে দেখে খুব ভাল লাগছে, হ্যারিকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললেন মিসেস উইসলি। তারপর ওকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে বললেন; তুমি দেখছি খুবই রোগা হয়ে গেছ। তোমায় এখন ভাল খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। ডিনার খাবার সময় হয়ে গেছে।

তারপর মিসেস উইসলি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জাদুকর জাদুকরীদের বললেন উনি এই মাত্র এসেছেন, মিটিং শুরু হয়ে গেছে।

জাদুকর–জাদুকরীরা গুঞ্জন করে উঠল। ওদের দারুণ উত্তেজনা, আগ্রহ। হ্যারিকে ডিঙিয়ে মিসেস উইসলি যে দরজা দিয়ে হলে ঢুকেছিলেন সেই দিকে ছুটে যেতে লাগলেন। হ্যারিও লুপিনের পেছন পেছন যাচ্ছিল মিসেস উইসলি ওকে বাঁধা দিলেন।

–না হ্যারি মিটিং শুধু কমিটির সদস্যদের। রন আর হারমিওন ওপরে আছে তুমি তাদের সঙ্গে গল্পটল্প কর। মিটিং শেষ হলেই আমরা ডিনার খেতে বসব। হলের মধ্যে খুব আস্তে আস্তে কথা বলবে; মিসেস উইসলি নম্র আদেশের সুরে বললো।

–কেন?

–আমি কোনও কিছু এখন ব্যাখ্যা করতে চাই না।

কী চান না?

পরে তোমাকে সব বুঝিয়ে বলব। এখন আমার একটু তাড়া আছে, মিটিং ছেড়ে চলে এসেছি তো, কোথায় তুমি থাকবে, শোবে, তোমায় দেখিয়ে দিচ্ছি। মিসেস উইসলি ঠোঁটে আঙ্গুল ঠেকিয়ে পা টিপে টিপে হ্যারিকে নিয়ে একজোড়া পোকায় কাটা পর্দার সামনে দাঁড়ালেন। হ্যারির পর্দাটা দেখে মনে হল তার পিছনে আর একটা দরজা আছে। হ্যারি তারপর খুব বড় একটা ছাতা রাখার স্ট্যান্ড দেখতে পেল। পায়াগুলো দেখে মনে হয় একটা দানবের পা কেটে বসানো হয়েছে। সেখান থেকে একটা অন্ধকার সিঁড়ি ওপরে উঠে গেছে। সিঁড়ির পাশে দেয়ালের খাঁজে খাজে রাখা হয়েছে ছোট ছোট মানুষের মাথার খুলি, শুষ্ক কাটা ভুতুরে মুণ্ডু ও প্রত্যেকটি মুণ্ডুর নাকগুলো বেশ বড় বড়, শুয়রের নাকের মত। যেদিকে তাকায় সেদিকে দেখতে পায় অদ্ভুত অদ্ভুত সব ছাঁচের জিনিসপত্র।

হ্যারি দেখতে দেখতে হকচকিয়ে গেল। এই রহস্যময় বাড়িতে জাদুকররা কি করছে?এখানে রহস্যময় বাড়িতে কেন তারা আস্তানা গেড়েছে।

–মিসেস উইসলি বললেন–কেন চুপ করে থাকতে হবে?

রন আর হারমিনিওন তোমকে সব বলবে। আমার একটু তাড়া আছে, এখন তোমার সঙ্গে কথা বলার সময় নেই। মিসেস উইসলি ওকে ফিস ফিস করে বিক্ষিপ্তভাবে বললেন। ওরা দ্বিতীয় ল্যান্ডিং-এ পৌঁছলে বললেন।

–তোমার ডান দিকে দরজা। মিটিং শেষ হলেই তোমাকে ডাকব। কথাটা বলে মিসেস উইসলি হন্তদন্ত হয়ে নিচে নেমে গেলেন।

হ্যারি অপরিচ্ছন্ন ল্যান্ডিংটা পেরিয়ে বেডরুমের দরজার নবটা ঘোরাল। দেখতে ওটা সাপের মাথার মত। দরজাটা ও নব ঘুরিয়ে খুলল।

ও আধা আলো অন্ধকারে অনুজ্জ্বল ঘরটার দিকে তাকাল। বিরাট লম্বা চওড়া ঘর। ঘরে দুটো শোবার খাট।

ও শুনতে পেল কিচির মিচির শব্দ তারপরই তীক্ষ্ম চিৎকার। ওর দৃষ্টি রুদ্ধ হয়ে গেল একগাদা চুলের আড়ালে। দেখল হারমিওন আনন্দের আতিশয্যে ওকে দুহাতে জড়িয়ে বুকে মুখ রেখেছে। ওর ধাক্কায় আর একটু হলে ও পড়ে যেত। রন একধারে ওর ছোট পেঁচা পিগউইজিয়নকে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে বসেছে।

–হ্যারি, ওই দেখ রন ওদিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তুমি যে আসছ আমরা খবর পাইনি। কেমন আছ? তোমার শরীর ভাল আছে তো? তুমি কী আমাদের ওপর চটে আছ? বাজি রেখে বলতে পারি নিশ্চয়ই আছ। আমরা জানি তোমার লেখা চিঠিগুলো উদ্বিগ্নের–তাহলেও আমরা তোমাকে কিছু জানাতে পারিনি। ডাম্বলডোর আমাদের তোমাকে কিছু জানাতে মানা করেছেন। সত্যি আমাদের তোমাকে অনেক কিছু জানানোর–বলার আছে। তোমাকেও বলতে হবে ডেথ ইটার, ডিমেন্টরদের ব্যাপারে! যখন আমরা শুনলাম মন্ত্রণালয়ে তোমার শুনানি হবে, তারপর থেকে আমরা সত্যি নার্ভাস হয়ে গেছি। আমি জানি ওরা তোমাকে বহিষ্কার করতে পারবে না, কোনও কারণেই পারবে না। জীবন বাঁচানোর জন্য ম্যাজিক ব্যবহার করা কম বয়সের জাদুকরদের নিয়মের বাইরে কিছু করার আইন আছে আমরা জানি। –ডিক্রি ফর দ্য রেস্ট্রিকসন অফ আন্ডারএজ সোরেসেরি ফর দ্য ইউজ অফ ম্যাজিক।

–ওকে একটু বিশ্রাম করতে দাও হারমিওন, রন ঘরের দরজা বন্ধ করতে করতে বললো।

হ্যারি দেখল রন আগের চেয়ে বেশ লম্বা হয়েছে। তবে একটু যেন রোগা হয়ে গেছে।

হারমিওন তখনও আনন্দে অধীর হয়ে আছে। আরও কিছু বলতে যাবার আগে একটা হুঁশ শব্দ শুনতে পেল। কিছু একটা সাদামত ঘরের অন্ধকার আলমারি থেকে উড়ে এসে হ্যারির কাঁধে পড়ল।

হেডউইগ!

সাদা প্যাঁচাটা ওর ঠোঁট দিয়ে হ্যারির কান আদর করে কামড় দিতে থাকে। হ্যারি ওর গায়ের পালক চুলকে দিতে লাগল।

রন বললো, তোমার প্যাঁচা চিঠি নিয়ে আসার পর থেকে ঠোঁট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আমার গায়ে ঘা করে দিয়েছে।এই দেখ কি করেছে?

হ্যারি দেখল রন একটুও মিথ্যা বলেনি। ওর ডান হাতের মধ্য আঙ্গুলে গভীর কাটা দাগ, তবে প্রায় শুকিয়ে এসেছে।

সত্যি তো। হ্যারি সমবেদনার সুরে বললো। আমি সত্যি সত্যি চিঠির জবাবের অপেক্ষা করেছিলাম।

আমরা তোমাকে জবাব দিতে চেয়েছিলাম, রন বললো, হারমিওনও চেয়েছিল। বলছিল চিঠির জবাব না পেলে তুমি রেগে যাবে, কিন্তু কি করি বল ডাম্বলডোর আমাদের…।

–হারমিওন আমাকে সেকথা আগেই বলেছে, ব্যরি বললো।

দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে কাছে পেয়েও হ্যারির মনের সব আনন্দ-উদ্দীপনা হঠাৎ উধাও হয়ে গেল। পেটের মধ্যে ঠাণ্ডামত কিছু একটা গুড় গুড় করে উঠল।

প্রায় এক মাস বন্ধুদের পাবার আকুল আকাঙক্ষার পরও ওর মনে হল ওকে একলা রেখে ওরা দুজনে ঘর থেকে চলে যাক। চতুর্দিকে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। হ্যারি বন্ধুদের দিকে না তাকিয়ে হেডউইগকে আদর করতে লাগল।

হারমিওন রুদ্ধশ্বাসে বললো, ডাম্বলডোর ভেবেছিলেন চিঠির জবাব না দেয়াই সবচেয়ে ভাল।

–ঠিক আছে; হ্যারি ভুরু তুলে বললো, তোমাদের দুজনের মধ্যে কাউকে গরমের ছুটিতে ডিমেন্টরসরা আক্রমণ করেছিল? হ্যারি হারমিওনের হাত দেখল হেডউইগের ঠোঁট দিয়ে ঠোকরানোর ক্ষত।

–না, তা হয়ত করেনি, এই জন্যই তো তিনি অর্ডার অব দ্য ফনিক্স থেকে অনুচর পাঠিয়েছিলেন তোমাকে রক্ষা করার জন্য।

কথাটা শুনে হ্যারির মনে হলো সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় সিঁড়ির একটা স্টেপ মিস করে পড়ে গিয়ে পেটে অসম্ভব কঁকি লেগেছে।

–দুঃখের বিষয় ওরা কাজে আসেনি। অবশ্যই পাঠিয়েছিলেন, হ্যারি বললো, তবে আমাকেই আত্মরক্ষা করতে হয়েছিল।

–ডাম্বলডোর খুব রেগে গিয়েছিলেন, হারমিওন বললো–ভয়ার্ত স্বরে। মুন্ডানগাস কর্তব্য না করে অন্য কোথায় চলে যাওয়াতে তিনি অসম্ভব রেগে গিয়েছিলেন। ও চলে যাওয়াতে আমি খুশি হয়েছিলাম। ও না গেলে আমি ম্যাজিক ওয়ান্ড ব্যবহার করতে পারতাম না। আর ডাম্বলডোর আমাকে পুরো গরমের ছুটিতে প্রাইভেট ড্রাইভে আটকে রাখতেন।

–তুমি কি ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে চিন্তা করোনি? হারমিওন আস্তে আস্তে বললো।

হ্যারি মিথ্যে বললো–একটুও না। কথাটা বলে হ্যারি ঘরের একধারে দাঁড়াল। ওর কাঁধে হেডউইগ আরামে বসে রইল। ঘরের ভেতর কেমন যেন আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলার ভাব। হ্যারির মনে হতে লাগল কে যেন ওর সব কথা দেয়ালের আড়াল থেকে শুনছে, ফিস ফিস করছে।

হ্যারি জিজ্ঞেস করল–ডাম্বলডোর আমাকে কেন কিছুই জানাননি, সব কিছু গোপন করে রেখেছেন? তুমি কি তাকে একবারও জিজ্ঞেস করেছ?

হ্যারি কথা বলে ওদের দিকে তাকালো। ওরাও তাকালো, কিন্তু হ্যারির রাগ কমলো না।

–হ্যাঁ করেছিলাম তোমাকে এখানের সব ব্যাপার জানাতেও চেয়েছিলাম। কিন্তু উনি এত ব্যস্ত যে দুএকদিন তাকে দেখতে পেয়েছিলাম। উনি বলেছিলেন তোমাকে বিশেষ দরকারি কথাছাড়া কিছু না লিখতে। এমন কী বলেছিলেন পেঁচা যেন কিছু খবর নিয়ে না যায়।

–এখনও আমাকে জানাতে পারেন অবশ্য যদি জানাতে চান।

হারমিওন আমাকে বললো–বললাম তো জানাতে চাননি।

–উনি হয়ত আমাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন না। হ্যারি রন আর হারমিওনের দিকে তাকিয়ে ওদের মুখের ভাব লক্ষ্য করলো।

রন উত্তেজিত হয়ে বললো–এমন কথা বলা ঠিক নয়।

–অথবা ভাবেন, আমি অতি দূর্বল ছেলে মানুষ। নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা নেই।

–না, অবশ্যই তা মনে করেন না। হারমিওন উদ্বেগের সঙ্গে বললো।

–ডার্সলেদের বাড়িতে আমাকে থাকতে হয়েছে, আর তোমরা দুজনে এখান থেকে সব কিছু জানছ, উপভোগ করছ? হ্যারি বললো–ও বেশ জোরে জোরে প্রতিটি শব্দ বললো–তোমরা দুজনে এখানের সব কিছু জানার অধিকার পেলে কেমন করে?

তোমার ভুল ধারণা। তা আমরা পাইনি, রন বাধা দিয়ে বললো। মা আমাদের অর্ডার অব দ্য ফনিক্সের মিটিং-এর ধারে কাছে ঘেঁষতে দেন না। মা বলেন, আমরা খুব ছোট।

এটি জানার আগেই হ্যারি উচ্চস্বরে বলতে লাগল;

বাঃ বাঃ চমৎকার বলেছ। তাহলে তোমরা মিটিং-এ ছিলে না বা যোগ দিচ্ছ না। দারুণ ব্যাপার! তাহলেও তোমরা এখানে রয়েছ! তাই, রয়েছ না? তোমরা দুজনেই এখানে রয়েছ। আর আমি ডার্সলেদের বাড়িতে একমাস ধরে পচে মরেছি। ডাম্বলডোর জানেন তোমরা যা করেছ তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি আমি করেছি। কে ফিলসফার স্টোন রক্ষা করেছিল বলতে পার? কে রিভিলকে ভাগিয়েছিল? বলো, ডিমেন্টসদের হাত থেকে কে তোমাদের দুজনকে বাঁচিয়ে ছিল?

অতীতের সুখ-দুঃখের অনেক ঘটনা, অনেক কথা ওর মনে আসতে লাগলো। সেগুলো উজাড় করে দিল ওর বন্ধুদের। খবর না দেয়ার হতাশা, ওকে বাদ দিয়ে দুইজনের দিব্যি থাকা ওকে অত্যন্ত ব্যথা দিয়েছে এটাই বলতে চাইল। ওর হতাশা, খবর না পাওয়া, ওদের একত্রে থাকা সবকিছু একত্র করে ওর মর্ম বেদনা সীমার বাঁধন হারিয়ে ফেলে।

ওদের তর্ক-বিতর্ক শুনতে হেডউইগের বোধহয় ভাল লাগে না তাই হ্যারির কাঁধ থেকে উড়ে আলমারির ওপরে বসল। পিগউইজসনও আরও বেগে ওদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল।

কে ড্রাগন ও অর্ধমানব–অর্ধমানবী ঠেকিয়েছিল, আরও অনেক জঘন্য অপরাধমূলক জিনিস। কে দেখেছিল ভোল্ডেমর্টকে ফিরে আসতে? কে তার হাত থেকে পালাতে পেরেছিল? সে আমি!

রন ওর সামনে হাঁ করে দাঁড়িয়েছিল, হতবুদ্ধি হয়ে মুখের কথা ও যেন হারিয়ে ফেলেছে, হারমিওন প্রায় কেঁদে ফেলেছে।

কিন্তু এখানে কি হচ্ছে আমি কেন জানতে পারবো না? কেনই বা আমাকে জানানোর কথা মনে করছেন না–কি সব ঘটছে?

হারমিওন বলতে গেল, হ্যারি আমরা তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম।

তোমরা পেঁচা মারফত আমাকে কিছু জানাতে পারতে না? ডাম্বলডোর তোমাদের প্রতিজ্ঞা করিয়ে মানা করে দিয়েছেন।

যা তিনি তাই করেছিলেন

চার সপ্তাহ আমি প্রাইভেট ড্রাইভে বন্দি হয়েছিলাম। কুড়াদান থেকে কাগজ তুলে নিয়ে কি ঘটছে তা জানবার চেষ্টা করেছি।

আমরা চেষ্টা করেছিলাম

আমি মনে করি এখানে তোমরা মজা করে দিন কাটিয়েছ–তাই না? সবাই একসঙ্গে মজা করে।

না সতোর সঙ্গে বলছি- হ্যারি সত্যই আমরা দুঃখিত; হারমিওন বললো। ওর দুচোখ জলে ভরে গেছে। তুমি যথাযথ কথা বলেছ হ্যারি। আমি তোমার জায়গায় হলে এমনই মনে করতাম!

হ্যারি হারমিওনের মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল। তখনও উত্তেজনায় ও বড় বড় নিশ্বাস ফেলে চলেছে। তারপরই মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ঘরে পায়চারি করতে লাগল। হেডউইগ আলমারির ওপর থেকে বিষণ্ণভাবে ডেকে উঠল। অনেকটা যেন বিদ্ধপের সুরে। সকলেই চুপ করে রইল। শব্দ শুধু হ্যারির কাঠের মেঝেতে চলার খট খট শব্দ।

হ্যারি তারপর রনের হারমিওনের দিকে সোজা তাকিয়ে বললো–যাকগে, এই জায়গাটাতে কি হয়?

–অর্ডার অফ দ্য ফেনিক্সের সদর দপ্তর; রন বললো একটুও সময় না নিয়ে

–তোমরা কি কেউ আমাকে বলবে, অর্ডার দ্য ফেনিক্স কি?

–একটি গোপন সংঘ বলতে পার; হারমিওন বললো। ডাম্বলডোর এই সংঘের প্রতিষ্ঠাতা–অধিকর্তা। তোমার হয়ে যারা লড়াই করেছিল ইউ-নো-হুর বিরুদ্ধে তাদের সংঘ।

–কারা এর মধ্যে আছে? হ্যারি জিজ্ঞেস করল পকেটে হাত খুঁজে।

–বেশ কিছু লোক।

এদের মধ্যে কুড়িজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি, রন বললো। আমার মনে হয় আরও বেশ কিছু লোক হবে। হ্যারি ওদের দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকালো। তাহলে?

রন বললো–তাহলে কি?

হ্যারি উত্তেজিত হয়ে বললো–ভোল্ডেমর্ট! ওর গলার স্বর শুনে রন হারমিওন দুজনেই চুপসে গেলো। কি সব ঘটছে? ও কী চায়? এখন ও কোথায়? আমরা ওকে কাবু করতে কি করছি?

–আগেই তো তোমাকে বলেছি, সংঘের মিটিং-এ আমাদের প্রবেশ নিষেধ; হারমিওন থতমত খেয়ে বললো–আমরা বিষদ কিছু জানি না, তবে মোটামুটি একটা ধারণা আছে। কথাটা বলে হ্যারির দিকে তাকাল।

–ফ্রেড আর জর্জ গোপন কথা শোনার একটা কান তৈরি করেছে। (এক্সটেনডেবল ইয়র্স) রন বললো, ওটা খুবই কাজের।

–এক্সটেনডেবল মানে?

–কান, যন্ত্রচালিত কান। আপাতত ওটা ব্যবহার বন্ধ করেছি, কারণ ওটা দেখতে পেয়ে অসম্ভব রেগে গেছেন। কিন্তু মা ওটা ফেলে দেবার আগে জর্জ আর ফ্রেড লুকিয়ে রেখেছিল। আমরা ওটা বেশ ভাল করেই ব্যবহার করেছি। আমরা জানি অর্ডারের নির্দেশ পরিচিত ডেথ ইটারদের কাজকর্মে নজর রাখা হচ্ছে।

 –সবই আমাদের বাদ দিয়ে তা তোমাদের মিটিং-এ প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলে বসে বসে কি করছ শুনি? এদিকে বলছ খুব ব্যস্ত আছি।

–অনেক কাজ। পুরো বাড়িটা রোগ সংক্রমণ থেকে মুক্ত করা। বছরের পর বছর বাড়িটা খালি পড়েছিল, নোংরা আবর্জনা জমছিল। আমরা দুজনে মিলে পরিষ্কার করেছি সব শোবার ঘর, বারান্দা, হল–কিচেন পর্যন্ত। আগামীকাল ড্রইং রুমটা করতে হবে। হারমিওন একটানা ফিরিস্তি দিল।

রনের দুই জমজ দাদা ফ্রেড আর জর্জ দুটো ভীষণ রকমের শব্দ করে হঠাৎ ঘরে ঢুকল। ওদের শব্দ শুনে পিগউইজন ভীষণ ভয় পেয়ে উড়ে গিয়ে আলমারির উপরে হেডউইগের পাশে বসল।

–এই তোমরা ওই রকম আওয়াজ করবে না! হারমিওন দুই যমজ ভাইকে ভয়ে ভয়ে বললো।

রনের দুই ভাই রনের মতই লাল চুলের। গোট্টা গোট্টা হলেও রনের চেয়ে লম্বায় ছোট।

–হ্যালো হ্যারি, জর্জ হাসতে হাসতে বললো–আমারা তোমার মধুর গলার আওয়াজ শুনেছি।

ফ্রেডও হাসতে হাসতে বললো–তোমার রাগ অযথা ফলাবে না এত চেঁচিয়ে বলছ যে, পঞ্চাশ মাইল দূরের লোকেরাও তোমার কথা শুনতে পাচ্ছে।

–তোমরা দুজনে অ্যাপারেসন টেস্ট পাস করেছ, তারপর? হ্যারি মেজাজ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল।

–উইথ ডিস্টিংসন, ফ্রেড বললো। ওর হাতে লম্বা একটা লাল রঙের তার।

রন বললো–ওটা নিয়ে সিঁড়িতে পৌঁছতে তোমার তিরিশ সেকেন্ড বেশি লাগবে।

–আরে টাইম হচ্ছে গ্যালিয়ন্স, আমার ছোট ভাইটি ফ্রেড বললো–হ্যারি তুমি আমাদের কাজে বাধা দিচ্ছ। হ্যারি ওকে সেই তারটা সিঁড়ির ল্যান্ডিং পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে দেখল।

–আমরা নিচের ঘরে কি কথাবার্তা হচ্ছে শুনব।

রন সেই কানের দিকে তাকিয়ে ফ্রেডকে বললো, সাবধানে কাজ করবে! মা যেন আবার দেখতে পান।

–ঝুঁকি তো নিতেই হবে। নিচে জবরদস্ত মিটিং চলছে; তার খবর নিতে হবে? ফ্রেড বললো।

এমন সময় দরজাটা খুলে লম্বা লম্বা লাল চুলওয়ালা জিনি ঘরে ঢুকল। জিনি রনের ছোট বোন–ও হ্যালো হ্যারি, দূর থেকে তোমার গলা শুনেছি। তারপর ফ্রেডের দিকে তাকিয়ে বললো–ওটা দিয়ে কিছু হবে না, কিচেনের দরজায় অকেজো করার ইমপারটাবেবল জাদু সিন্ট করা হয়েছে।

জর্জ বললো–তুমি জানলে কেমন করে? হতাশ হয়ে যায় ওর মুখ।

জিনি বললো–টংকসের কাছে খবর পেয়েছি। তোমরা দরজাতে ওটা লাগিয়ে দেখো না। যদি শুনতে না পাও তাহলে দরজাতে ইমপাবটাবড় করা হয়েছে। আমি সিঁড়ির ওপর থেকে ডাংগবম্বস ফ্লিকিং করছি, সেটাও ডিস্টার্ব করছে। তোমার ওই এক্সটেন্ডেবল ইয়ার্স দিয়ে কাজ হবে না।

ফ্রেড বিরাট এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল।

জর্জ বললো–বুড়ো স্নোইপ কেন এখানে এসেছে বুঝলাম না।

হ্যারি সঙ্গে সঙ্গে বললো–আরে স্নেইপ! ও এখানে আছেন?

জর্জ বললো–হ্যাঁ। খুব ধিরে ধিরে খোলা দরজাটা বন্ধ করে খাটের ওপর বসল। ফ্রেড আর জিনিও অন্য একটা খাটে বসল। খুব একটা রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সবচেয়ে গোপনীয়।

–অপদার্থ, ফ্রেড হাই তুলে বললো।

হারমিওন মুখ বেঁকিয়ে বললো–উনি এখন আমাদের দলে।

রন নাকদিয়ে জোরে শব্দ করে বললো, তাতে অপদার্থ যে নয় প্রমাণিত হয়। যখনই আমাদের দেখে ও সন্দেহের চোখে তাকায়।

জিনি বললো–বিলও ওকে দুচোখে দেখতে পারে না। এমনভাবে বললো, যাতে অপদার্থ বা অপদার্থ নয় প্রশ্নটা মিটে গেল।

হ্যারির রাগ তখনও কমেনি; কিন্তু খবরাখবর পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ওর চিৎকার চেঁচামেচির ইচ্ছেকে দমন করে রাখল। ও হ্যারি–জর্জের সামনাসামনি এসে পড়ল।

–বিল এখানে এসেছে? হ্যারি জিজ্ঞেস করল।

আমি ভেবেছিলাম ও এখন ইজিপ্টে কাজ করছে?

ফ্রেড় বললো–ছোটখাট একটা কাজের জন্য দরখাস্ত করেছে। কাজটা এমন মাঝে মাঝে বাড়িতে এসে অর্ডারের কাজ করতে পারবে।

–ও বলে, সব কিছুই ওর হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। যা বলে সবই বোকার মতো হেসে বলে। ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে।

–কী যা তা বলছ?

জর্জ বললো–বুড়ো সেই ফ্লেউর ভেলাকউরকে মনে আছে? ও গ্রিনগটসে একটা কাজ পেয়েছে ইংরেজি বলা ভাল করে শেখার জন্য।

–বিল ওকে বাড়িতে এনে খুব তালিম দিচ্ছে; ফ্রেড চাপা হাসিতে বললো।

জর্জ বললো–চার্লিও অর্ডারে এসে গেছে, কিন্তু ওতো এখনও রুমানিয়াতে এসে আছে। ডাম্বলডোর চান যতদূর সম্ভব বিদেশী জাদুকর আমাদের এখানে আসুক। তো চার্লিও ছুটিছাটার দিনে এখানে-ওখানে যোগাযোগ করে চলেছে।

হ্যারি বললো–পার্সিও তো করতে পারে? তাজা খবর পেয়েছে ওদের মেজো ভাই ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্টারন্যাশনাল ম্যাজিক্যাল কো-অপারেশনের জাদ মন্ত্রণালয়ে কাজ করছে।

হ্যারির কথা শুনে উইসলি ভাইরা আর হারমিওন এর ওর দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।

রন, হ্যারিকে চাপা উত্তেজিত স্বরে বললো–তুমি যাই করো না কেন, ভুলেও মাম আর ড্যাডির কাছে ওর নাম উল্লেখ করবে না।

–কেন করবো না?

পার্সির নাম শুনলে ড্যাড হাতে যা থাকে ছুঁড়ে ভেঙে ফেলে, আর মা কাঁদতে শুরু করে; ফ্রেড বললো।

জিনি দুঃখ দুঃখ কণ্ঠে বললো–সত্যি আমার খুব খারাপ লাগে।

জর্জ মুখটা বিকৃত করে বললো–ও আমাদের কাছে না থাকাতে ভালই হয়েছে।

হ্যারি বললো–আসল ব্যাপার কী বলতো?

ফ্রেড বললো–পার্সি ড্যাডের সঙ্গে তর্ক বিতর্ক করেছিল। আমি কখনও ড্যাডিকে ওই রকমভাবে রাগতে দেখিনি, কথা কাটাকাটি করতে শুনিনি। মায়ের তো চেঁচামেচি করা স্বভাব।

রন বললো–টার্ম শেষ হবার প্রথম সপ্তাহে আমরা আবার আসবো, আমরা তখন অর্ডারে যোগ দিতে পারব। পার্সি বাড়ি ফিরে বলেছে, ও নাকি প্রমোশন পেয়েছে।

হ্যারি বললো–ধ্যাৎ আমাকে তোমরা বাচ্চা ছেলে পেয়েছ? হ্যারি খুব ভাল করেই জানে পার্সি খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তাহলেও পার্সি ওর জাদু মন্ত্রণালয়ে প্রথম চাকরিতে তেমন কিছু করতে পারেনি। পার্সি ধরতেই পারেনি ওর ওপর ওয়ালা লর্ড ভোল্ডেমর্টের কথায় চলে (অবশ্য মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করেনি অভিযোগের ব্যাপারটা, ওরা সকলে ধরে নিয়েছিল মি. ক্রাউচের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।

–কথাটা শুনে আমরা সবাই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম; জর্জ বললো–কারণ পার্সির সঙ্গে ক্রাউচের তেমন বনিবনা হচ্ছিল না। তদন্ত টদন্ত অবশ্য হয়েছিল। কমিটি বললো–পার্সির বুঝতে পারা উচিত ছিল ক্রাউচ ওর সামনে একটি বড় প্রস্তর খণ্ড আর ওর ব্যাপারটা ওপর ওয়ালাকে জানানো দরকার ছিল। তোমরা তো পার্সিকে জানো ক্রাউচ পার্সিকে ইনচার্জ বানিয়েছিল, তাই কোনও অভিযোগ করতে ইচ্ছুক নয়।

–তাহলে কেন ওকে প্রমোশন দিয়েছিলো?

–ওটাই তো আমাদের কাছে আশ্চর্যের ব্যাপার, রন বললো। ও চাইছে সকলে সহজভাবে কথাবার্তা বলুক। হ্যারি চেঁচান বন্ধ করেছে। আমাদের কাছে আশ্চর্যের ব্যাপার! পার্সি চলে গেল।

অতীত ও বর্তমানের ঘটনা নিয়ে ওদের তর্কাতর্কি কথাবার্তা চলতে লাগল।

–পার্সি খুব ভাল মনেই বাড়ি ফিরে এলো। বাবাকে বললো–ফাজের অফিসে একটা অফার পেয়েছে। হোগার্টস ছেড়ে আসার এক বছরের মধ্যে ওইরকম অফার। জুনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট মল্লীর। ও আশা করেছিলো ড্যাড শুনে খুশি হবেন, বাবা কিন্তু খুশি হলেন না। হ্যারি বললো; কেন?

–ওয়েল, হতেও পারে আবার নাও হতে পারে–আমার মনে হয় ফাজ জোরদারভাবে খুঁটিয়ে দেখছেন মিনিস্ট্রিতে কারও ডাম্বলডোরের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কিনা, জর্জ বললো।

–ডাম্বলডোরের ইদানীং মিনিস্ট্রিতে তেমন নেই জানো, ফ্রেড বললো সকলেই ইউ-নো-হু ফিরে এসেছে বলে ধূয়ো তুলে গোলমালের সৃষ্টি করছেন।

–ড্যাডি বলেছেন, ফাজ পরিষ্কারভাবে সকলকে বলেছেন, কেউ যদি ডাম্বলডোরের সঙ্গে একসুরে কথা বলে তাহলে ইচ্ছে করলে কাজ ছেড়ে দিতে পারে, জর্জ বললো।

–আসলে গোলমালটা হচ্ছে ফাজের ড্যাডের প্রতি সন্দেহ, উনি জানেন ড্যাডের সঙ্গে ডাম্বলডোরের খুবই বন্ধুত্ব আছে, সব সময় ভাবেন ড্যাডের মাগলপ্রীতি খুব একটা ভালো নয়।

–কিন্তু এর সঙ্গে পার্সির কি সম্বন্ধ? হ্যারি বিভ্রান্ত হয়ে বললো।

–বলছি। ড্যাড মনে করেন, ফাজ তার অফিসে পার্সিকে রাখার একমাত্র উদ্দেশ্য আমাদের পরিবারের সব খবর জানার, অনেকটা গোয়েন্দাগিরি বলতে পারো, ডাম্বলডোরের ওপরও।

হ্যারি হালকাভাবে একটা ছোট শিস দিলো।–বাজি, পার্সি হয়তো তাই চায়। এন মুচকে হাসলো।

–একেবারে পাগলের মতো উল্টোপাল্টা কথা বলতে লাগলো পার্সি।

ও বললো অনেক অনেক আজেবাজে কথা। বললো, যবে থেকে ও মিনিস্ট্রিতে জয়েন করেছে, তবে থেকে ড্যাডের নানা অবিবেচকের মতো কাজকর্মের কথা শুনতে হচ্ছে, ড্যাডের কোনও উচ্চ আকাক্ষা নেই, তাই আমাদের অর্থ কম ও পরিদ্রের মত থাকতে হচ্ছে।

–কি বললে? হ্যারির কথায় অবিশ্বাসের সুর! জিনি রেগে যাওয়া বেড়ালের মত গোঁ গোঁ করে উঠলো।

–আরও অনেক উঁচু-নিচু কথা। বাবা একট মূর্খ তাই ডাম্বলডোরের পিছু পিছু খোরেন। ডাম্বলডোর বিরাট এক সমস্যার সৃষ্টি করতে চলেছেন, ড্যাড সেই পথের পথিক হতে চলেছেন। পার্সি জানে কোথায় ও কার কাছে আনুগত্য স্বীকার করতে হবে, সেটা হচ্ছে মিনিস্ট্রি। তাই ড্যাড ও মাম যদি মিনিস্ট্রির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা মনন্থ করেন তাহলে ও বাড়ির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করবে। সেই রাতেই পার্সি লন্ডনে চলে গেল। লন্ডনে মা গেলেন পার্সিকে বোঝাতে। কিন্তু পার্সি মার মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দিল; রন বললো।

কিন্তু যে ঘটনাই ঘটুক না কেন, পার্সির ব্যাপারটা নিয়ে খুব সম্ভব না বুঝে কিছু একটা করা হয়েছিল; কিন্তু একটা কথা পার্সি ভাল করেই জানত ভোল্ডেমর্ট ফিরে এসেছে, হ্যারি আস্তে আস্তে বললো। ওতো বোকাছেলে নয়। ও খুব ভাল করেই জানত বা জানে তোমার মা-বাবা প্রমাণ ছাড়া কোন কিছুরই ঝুঁকি নেবেন না।

–তা ঠিক বলেছ। হ্যারির দিকে চোরা চাহুনি দিয়ে রন বললো–তোমার নামও ওই কাণ্ডে টেনে আনা হয়েছিল। পার্সি বলেছিল একমাত্র এভিডেন্স তোমার কথা এবং আমি জানি না ওর পক্ষে কথাগুলো চিন্তা করে বলা ঠিক হয়েছিল কিনা।

হারমিওন তীক্ষ্মভাবে বললো–পার্সি ডেইলি ফেটের ওপর দারুণ আস্থা রাখে। সকলেই হারমিওনের কথায় সায় দেয়।

হ্যারি সকলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল–তোমরা কি সব বলছ? সকলেই ওর দিকে সতর্কভাবে তাকাল। হারমিওন ভীত কণ্ঠে বললো–তোমরা ঠিকমত ডেইলি প্রফেট পাও না?

হ্যারি বললো–হ্যাঁ আমি পাই।

হারমিওন আরও বেশি যেন ব্যাগ্র হয়ে বললো–তোমরা কী কাগজটা ভাল ভাবে পড়?

হ্যারি পড়ে না, তাই চাপা দেবার জন্য বললো–লাইনের পর লাইন নয়। ওরা যদি ভোল্টেমর্টের সম্বন্ধে কিছু লেখে তাহলে সেটা প্রধান শিরোণাম হবে, তাই না?

ভোল্টেমর্টের নাম শুনে ঘরের সবাই চুপ করে গেল। হারমিওন তড়িঘড়ি বললো–সবকিছু জানতে গেলে তোমাদের আগাগোড়া পড়তে হবে বৈ কি। কিন্তু ওরা তো ভোল্টেমর্টের খবরটা বেশ কয়েকবার দিয়েছে।

–তাহলে তো আমি দেখতাম।

–শুধু প্রথম পাতাটা পড়লে তুমি দেখতে পাবে না; হারমিওন মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললো। আমি কিন্তু বড় প্রতিবেদনের কথা বলছি না। সেগুলো তো তোমার চোখে পড়বেই, না পড়তে চাইলেও পড়বে।

–মানে, তুমি কি বলতে চাইছ?

–সত্যি কথা বলতে; ব্যাপারটা। জঘন্য হারমিওন শান্তভাবে অথচ জোরের সঙ্গে বললো–ওরা রিটার লেখা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে।

–কিম্ভ বিটাতে ওদের আর লিখছে না, লিখছে?

–না, ও ওর কথাও রেখেছে। এর মানে এই নয় ওর কোনও অন্য চয়েস নেই; হারমিওন খুশি মনে বললো: কিন্তু ওরা এখন যা করবার চেষ্টা চালাচ্ছে তার ভিত্তি স্থাপন রিটাই করেছে।

–সেটা আবার কী, বুঝলাম না; হ্যারি অধৈর্য হয়ে বললো।

–ওকে তুমি ভাল করেই জান ও লিখেছিল যে তুমি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, তোমার কপালের কাটা দাগে সব সময় তোমায় যন্ত্রণা দেয়?

–ও হ্যাঁ, হ্যারি বললো। ও রিটা স্কিটার্সের ওকে নিয়ে লেখার কথা ভুলতে পারে না।

–ওরা অনবরত তোমাকে নিয়ে লিখে চলেছে, যেন তুমি প্রতারিত হয়েছ, ভুলপথে চলেছ। সকলের দৃষ্টি তোমার ওপর পড়ে তা ও চাইছে। তুমি বিয়োগান্ত নাটকের নায়ক, ওইরকম একটা কিছু, হারমিওন খুব তাড়াতাড়ি বললো। যেন হ্যারির কাছে কম দুঃখজনক লাগে। ওরা তোমার সম্বন্ধে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করে। কোনও মুখরোচক খবর থাকলেই লেখে, হ্যারিপটারের উপযোগী ঘটনা। তারপর কারও দুর্ঘটনা হলে লেখে, আশা করা যাক হ্যারি পটারের মত যেন কপালে কাটা দাগ না হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা যেন রোজ ওর হয়ে প্রার্থনা করি।

–আমি চাই না কেউ আমার জন্য প্রার্থনা করে; হ্যারি রেগে গিয়ে বলে।

–খুব ভাল করেই জানি; হারমিওন ভয়ে ভয়ে বললো। আমি জানি হ্যারি; কিমা তুমি তো জানো না ওরা কি করছে? ওরা তোমাকে এড়াতে চাইছে। এর মূলে এয়েছে ফাজ, বাজি ধরে বলতে পারি। ওরা কি চায় জান? ওরা রাস্তার জাদুকরদের দিয়ে বলায় তুমি একটি বোকা ছেলে, তুমি একজন জোকার। তুমি নাকি ফেমাস হবার জন্য মাথামুণ্ডুহীন গল্প ফাঁদো, সেগুলো চালিয়ে যেতে চাও।

–আমি কারও কাছে কিছু বলিনি, কিছু চাইওনি। ভোল্ডেমর্ট আমার মা বাবাকে হত্যা করেছে! হ্যারি রাগে থুথু ফেলতে ফেলতে বললো–আমি নাম করেছি, কারণ সকলে জেনেছে ও আমার মা-বাবাকে হত্যা করেছে। কিন্তু আমাকে হত্যা করতে পারেনি। তার জন্য কে বিখ্যাত হতে চায়? ওরা ভাবে না আমি কখনই বিখ্যাত হতে চাইনি, কোন দিন চাইবও না।

জিনি সমবেদনার কণ্ঠে বললো–আমরা জানি হ্যারি। হারমিওন বললো–এটা সত্যি, ডিমেন্টররা তোমাকে আক্রমণ করেছিল তার একটি কথাও লেখেনি নিশ্চয়ই কেউ তাদের এ বিষয়ে চুপ থাকতে বলেছিল। ওরা রিপোর্টও করেনি তুমি ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রাটুট অফ সিক্রেসি ভঙ্গ করেছ। আমরা ভেবেছিলাম ওরা করবে, আরও কিছু আছে। আমাদের মনে হয় ওরা অপেক্ষা করছে তোমার বহিষ্কারের দিনটির, তারপর ওরা সরব হবে। মানে, যদি তুমি বহিষ্কার হও সেই দিনটার জন্য ওরা অপেক্ষা করছে, হারমিওন জোর দিয়ে বললো–তুমি একদম ভাববে না, ওরা যদি তাদের আইনে চলে, তাহলেও তোমার বিরুদ্ধে কোনও আইনগত সঙ্গত অভিযোগ আনতে পারবে না।

ওরা সকলেই শুনানির কথা ভাবলেও হ্যারি একবারও সে কথা ভাবে না। ও প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাইল, কিন্তু বাইরে কারও পায়ের শব্দ শুনে চুপ করে রইল।

ফ্রেড এক্সটেন্ডেবল ইয়ারের তারে টান দিল। টানার সঙ্গে সঙ্গে আবার প্রচণ্ড শব্দ হতেই ও আর জর্জ অদৃশ্য হয়ে গেল। দুএক সেকেন্ড পর মিসেস উইসলি শোবার ঘরের দরজার গোড়ায় দাঁড়ালেন।

–মিটিং খতম হয়েছে, এখন তোমরা সবাই নিচে এসে ডিনার খেতে চল। সকলেই তোমাকে দেখার জন্য মরে যাচ্ছে হ্যারি। আচ্ছা বলতো কে ডাংবম্বগুলো রান্না ঘরের দরজার গোড়ায় রেখেছে?

জিনি বললো–ক্রুকশাংকস, ওইসব নিয়ে ও খেলতে ভালবাসে।

–তাই, মিসেস উইসলি বললেন–আমিতো ভেবেছিলাম ক্লেচারের কাণ্ড। ও ওই অদ্ভুত অদ্ভুত আজেবাজে জিনিস নিয়ে খেলে। শোন কিচেনে যাবার সময় হলেতে একদম জোরে জোরে কেউ কথা বলবে না। জিনি তোমার হাত দেখছি খুব অপরিষ্কার, নোংরা ঘাটছিলে কেন? অনুগ্রহ করে ডিনার খাবার আগে হাত দুটি ভাল করে ধুয়ে নেবে।

জিনি সবাইকে ভেংচি কেটে মায়ের পিছু পিছু চলল। রন, হ্যারি, হারমিওন ঘরে রয়ে গেছে। দুজনেই হ্যারির মুখের দিকে আশঙ্কায় তাকিয়ে রইল। কে জানে, আবার হয়ত চেঁচাবে, না কিছু বলবে?

–শোনো, ও বিড়বিড় করল, রন মাথা নাড়ল আর হারমিওন শান্তভাবে বললো–জানি তুমি রাগ করবে হ্যারি। আমরা কিন্তু সত্যি তোমাকে কোনও দোষ দিচ্ছি না, কিন্তু তুমি বুঝতে চেষ্টা কর, বিশ্বাস কর আমরা কিন্তু ডাম্বলডোরকে যুক্তি দিয়ে রাজি করাতে চেষ্টা করেছিলাম।

–জানি, হ্যারি বললো।

হেডমাস্টার স্যারকে কোনও আলোচনার মধ্যে টেনে আনতে চায় না হ্যারি। ডাম্বলডোরের কথা ভাবলেই হ্যারির শরীরের ভেতরটা আবার জ্বলে ওঠে।

–ক্রেচার লোকটা কে? হ্যারি জিজ্ঞেস করল।

রন বললো–আমাদেরই একজন গৃহ-ডাইনী এখানে থাকে। পাগলের মতো বিড়বিড় করে, ওর মত কারও সঙ্গে মেশে না।

হারমিওন রনের দিকে তাকিয়ে ভুরু কোঁচকাল।

–ও বিড়বিড় করে না, পাগল নয়, অস্বাভাবিক নয়।

–ওর জীবনের আকাঙ্ক্ষা ছিল ওর মাথাটা কেটে ওর মায়ের মত যেন একটা প্লেকে রেখে দেওয়া হয়; রন রেগেমেগে বললো–তাকে কী স্বাভাবিক বলা যায় হারমিওন?

–ঠিক। ঠিক আছে, ও যদি একটু অদ্ভুত প্রকৃতির হয় সেটাতো ওর দোষ নয়।

রন হ্যারির দিকে তাকাল। বললো–হারমিওন এখনও স্পেউ ধরে বসে আছে।

–স্পেউ নয়! হারমিওন রেগে গিয়ে বললো–ওটার নাম সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অফ এলফিশ ওয়েল ফেয়ার। আমার কথা নয়, ডাম্বলডোর বলেন, আমরা যেন ক্রেচারের সদয় হই।

–হা হা যা বলেছ; রন বললো–চলো চলো ক্ষিধেতে আমার পেট জ্বলে যাচ্ছে।

ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির ল্যান্ডিং-এ দাঁড়াল; কিন্তু সিঁড়িতে পা দেবার আগেই

–দাঁড়াও, রন, হ্যারি আর হারমিওন হাত দিয়ে আটকে দিল। ওরা এখনও হলে, রয়েছেন, কিছু কথা হয়ত আমরা শুনতে পাব।

ওরা তিনজনে ওপর থেকে খুব সাবধানে নিচে তাকিয়ে রইল। অস্পষ্ট হলওয়েতে হ্যারি দেখল অনেক জাদুকর–জাদুকরী ভিড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাদের মধ্যে যারা পাহারা দিয়ে হ্যারিকে নিয়ে এসেছিল তারাও রয়েছেন, ওরা নিজেদের মধ্যে উত্তেজিত হয়ে কথা বলছে। ওদের মাঝখানে তেলতেলে চুল, লম্বা নাকওয়ালা হোগার্টস-এর একজন মাস্টার মশাই, প্রফেসর স্নেইপ রয়েছেন (হ্যারি তাকে খুবই অপছন্দ করে।) হ্যারি ভাল করে দেখার জন্য রেলিং ধরে আরও ঝুঁকে পড়ল। স্নেইপ অর্ডার অফ ফনিক্সে কেন এসেছেন জানার খুব কৌতূহল হল হ্যারির।

হ্যারি দেখল ফ্রেড আর জর্জ ওপরের ল্যান্ডিং থেকে ওদের বানান এক্সটেন্ডেবল ইয়ার্সের লাল তার সাবধানে ঝুলিয়ে রেখেছে যাতে কারও দৃষ্টি না পড়ে, কিছুক্ষণ পরই ওরা সকলেই সদর দরজা দিয়ে বাইরে চলে গেল।

হ্যারির কানে এল ফ্রেডের গলা–চুলোয় যাক! দেখল ও তারটা টেনে নিচ্ছে।

ওরা সদর দরজাটা খোলা আর বন্ধ করার শব্দ শুনতে পেল। রন, হ্যারিকে বললো, স্নেইপ এখানে কখনও খাওয়া-দাওয়া করুন না। ঈশ্বরকে অশেষ ধন্যবাদ! bল যাওয়া যাক।

হারমিওন আবার হ্যারিকে ফিস ফিস করে মনে করিয়ে দিল, হলে কিন্তু জোরে জোরে কথা বলবে না।

দেওয়ালের তাকে সাজিয়ে রাখা মুণ্ডু দেখতে দেখতে যাবার সময় ওরা সদর দরাজার মুখে লুপিন, মিসেস উইসলি আর টংকসকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেল। গাদাগাদা তালা আর বন্টু মেরে জাদুবলে ওরা দরজা বন্ধ করছেন।

সিঁড়ির ধাপে ওরা এলে মিসেস উইসলি বললেন–হ্যারি ডিয়ার, তুমি পা টিপে টিপে ওই দরজাটা দিয়ে কিচেনের ভেতরে যাও।

ক্র্যাশ।

মিসেস উইসলি অসম্ভব রেগে গিয়ে পিছনে তাকিয়ে বললেন, টংকস

–বিশেষ দুঃখিত টংকস বললো।

–ওই বিশ্রী ছাতাঝোলার স্ট্যান্ডটা ভেঙে পড়েছে। এই নিয়ে দুবার ভাঙল, হড়কে পড়লাম–ওর বাকি কথাগুলো শোনা গেল না বীভৎস কানফাটানো তীব্র তীক্ষ্ম–শরীরের রক্ত হিম করে দেবার মত সেই শব্দ! হ্যারির ক্ষণিকের জন্য মনে হল ও সেই পোকায় কাটা ফাটা, বড় পর্দাটা নেই সেখানে একটা খোলা জানালা রয়েছে। সেই জানালা দিয়ে দেখতে পেল এক বুড়ি মাথায় তার কাল টুপি, ও এমন ভীষণভাবে আর্তনাদ করছে কেউ যেন ওকে দৈহিক যন্ত্রণা দিচ্ছে। তারপর ও বুঝতে পারল সেসব কিছু নয়। এটা একটা ছবি। এত জীবন্ত সেই ছবি দেখে সত্যি মনে হয়েছিল হ্যারির। ওইরকম এক অপ্রীতিকর নিরস নিরানন্দ ছবি জীবনে ও প্রথম দেখল।

বৃদ্ধার গায়ের সব চামড়া কুঁচকে গেছে, চোখ বন বন করে ঘুরছে, মুখ দিয়ে লালা গড়িয়ে পড়ছে আর্তনাদের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে। ওর পাশে রাখা ছবিগুলো জীবন্ত হয়ে উঠল, তারাও আর্তনাদ করতে লাগল। দারুণ ভয়ে হ্যারি দুহাতে কান চেপে চোখ বন্ধ করে রইল।

লুপিন আর উইসলি হ্যারির কাছে এসে পর্দাটা টেনে দিল।

কিন্তু সেই বৃদ্ধার আর্তনাদ পরদা ভেদ করে কানে আসতে লাগল হ্যারির। আর্তনাদ করতে করতে ওরা যেন দুহাতে ওদের মুখ ছিন্নভিন্ন করে দেবে।

অপবিত্র গেঁজলা ওঠা নোংরা–ধূলো কাদা হাফ-ব্রিডস আমার বাবার এই বাড়িটা কলুষিত করেছে–তুমি আরও কত কলুষিত করবে?

ভাঙা টুকরোগুলো মেঝের একপাশে সরাতে সরাতে টংকস বার বার ক্ষমা চাইতে থাকে। মিসেস উইসলি পরদাটা পুরোপুরি টেনে দিতে পারলেন না। হাল ছেড়ে দিয়ে হলেতে পায়চারি করতে করতে সমস্ত ছবিগুলো ম্যাজিক ওয়ান্ড দিয়ে ঝাঁপসা করে দিতে লাগলেন। ঠিক সেই সময়ে লম্বা চুলওয়ালা একজন দরজাটা শব্দ করে খুলে হ্যারির সামনে এসে দাঁড়াল। ও মিসেস উইসলির ছেড়ে দেওয়া পরদাটা টেনে ধরে চিৎকার করে বলে উঠল–চোপ, কুৎসিত বুড়ি, চুপ কর চুপ কর বলছি।

বৃদ্ধার কর্কশ তীক্ষ্ণ ধ্বনি পরমুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে গেল।

–তুমি–তুমি!

লোকটাকে দেখে বিকটভাবে বললো। বৃদ্ধার চোখদুটো যেন ঠিকরে পড়তে থাকে।

বিশ্বাসঘাতক, নোংরা ঘৃণ্য, আমার রক্তের কলঙ্ক!

–লম্বা চুলওয়ালা লোকটা একটু নিজেকে সামলে নিয়ে ধমকের স্বরে বললো তুমি চুপ করবে কিনা বল? ও আর লুপিন অনেক টানা-হেঁচড়া করে পর্দাটা আবার বন্ধ করলো।

বৃদ্ধ মহিলার চিৎকার বন্ধ হলো। সেখানে এক নিরবতা নেমে এলো।

হাঁফাতে হাঁফাতে, মাথার লম্বা চুলগুলো আঙ্গুল দিয়ে আঁচড়াতে আঁচড়াতে হ্যারির ধর্মপিতা সিরিয়স হ্যারির দিকে তাকালেন।

–হ্যালো হ্যারি; সিরিয়স বিরস বদনে বললেন–তাহলে তোমারা আমার মাকে দেখলে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *