৩৭. সুখী হতে হলে এটা অবহেলা করবেন না

সপ্তত্রিংশ পরিচ্ছেদ
সুখী হতে হলে এটা অবহেলা করবেন না

ওয়াল্টার ড্যামরস বিয়ে করেন আমেরিকার শ্রেষ্ঠতম রাগী আর প্রেসিডেন্ট পদের একজন প্রার্থী জেমস জি. ব্লেইনের কন্যাকে। বহু বছর আগে বিয়ের পর থেকে স্কটল্যাণ্ডে অ্যান্ড্রু কার্নেগীর বাড়িতে ড্যামরস পরিবার দারুণ সুখে জীবন কাটান।

তাদের এই সুখের রহস্যটা কি?

মিসেস ড্যামরস বলেন, কোন জীবন সঙ্গী বেছে নেওয়ার সময় বিয়ের পরেই ভদ্রতাকে স্থান দিতে . চাই। স্ত্রীরা যদি স্বামীর প্রতি ভদ্রতা দেখায় তাহলে আর কিছু লাগে না।

ভালবাসাকে শেষ করতে কড়া কথা ব্যবহার হলো ক্যান্সারের মতো। লোকেরা এটা জানে বলেই আশ্চর্য ব্যাপার, আমরা আপন আত্মীয় স্বজনদের চেয়ে অচেনাদের কাছেই ভদ্রতা দেখাই। নিজের লোকদেরই আমরা অসম্মান করি বেশি।

ডরোথী ডিক্স বলেন : এটা আশ্চর্যজনকভাবেই সত্য যে যাদের আমারা সবচেয়ে বেশি খারাপ কথা বলি তারা সবাই আমাদের নিজের বাড়ির লোকজন।

হেনরি ক্লে রিমনারের মতে, ভদ্রতা হল হৃদয়ের এমন কোন গুণ যেটা ভাঙা সদরের বাইরে মনোলোভা ফুলের ওপরেই দৃষ্টি ফেলার সাহায্য করে।

ভদ্রতাবোধ বিবাহিত জীবনে অপরিহার্য বস্তু, যেমন কোন মোটরের পক্ষে তেল অতি প্রয়োজনীয়।

প্রাতরাশের টেবিলের সেই বিখ্যাত এক নায়ক অলিভার ওয়েলে হোমস বাড়িতে এই রকম এক নায়কই ছিলেন। অথচ তিনিই আবার কোন কারণে বিষাদগ্রস্ত বা হতাশায় আচ্ছন্ন হলে মনের ভাব মনেই চেপে রাখতেন, কখনই অন্যদের বিব্রত করতেন না।

কিন্তু এটা হল অলিভার ওয়েণ্ডেল হোমসের ব্যাপার। সাধারণ গড়পড়তা মানুষ কেমন ব্যবহার এক্ষেত্রে করে থাকেন? অফিসে কাজে গোলমাল হলে ওপরওয়ালার কাছে ধমকানি। শুরু হয় মাথার যন্ত্রণা, পাঁচটা পনেরোর গাড়ি হয়তো ধরা যায় না। বাড়ি ফেরার তর সয় না তাই–তারপর সব ঝাল পড়ে এবার বাড়ির সকলের উপর।

হল্যাণ্ডে নিয়ম আছে বাড়িতে ঢোকার আগে বাইরের সিঁড়িতে জুতো খুলে রাখা। ডাচদের কাছ থেকে আমাদের তাই ঢের শেখার আছে–আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ঝামেলা বাইরে রেখে ঢোকা।

উইলিয়াম জেমস একবার কোন প্রবন্ধে লেখেন : মানুষের মধ্যে অদ্ভুত একটা অজ্ঞতা আছ। এ দোষে আমরা প্রায় সবাই ভুগি।

প্রায়ই দেখা যায় অনেকেই বাইরের মানুষের সঙ্গে চেঁচিয়ে কথা বলে না। অথচ স্ত্রীর প্রতি ঠিক বিপরীতটাই ঘটে যায়। কিন্তু বিবাহিত জীবন তাদের জীবনে ব্যবসার চেয়ে ঢের বেশী প্রয়োজনীয়।

গড়পড়তা মানুষ, যাদের বিবাহিত জীবনে সুখ আছে তারা একাকী বাস করা জ্ঞানীগুণীর চেয়ে অনেক সুখী। বিখ্যাত রুশ ঔপন্যাসিক টুর্গেনিভ বলেছিলেন : ‘আমি আমার সব কৃতিত্ব আর সব বই দিয়ে দিতে রাজি আছি শুধু যদি কোন মেয়ে আমায় সস্নেহে প্রশ্ন করার থাকে ডিনারে আসতে দেরী হলো কেন।

তাহলে বিয়ের মধ্যে সুখের সুযোগ কতটা পাচ্ছেন? ডরোথি ডিক্সের মতে বিয়েতে পুরুষের সাফল্যের সম্ভাবনা ব্যবসার চেয়ে শতকরা সত্তর ভাগ বেশি। স্ত্রী পুরুষ বিয়ে করলে শতকরা সত্তর ভাগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা।

বিবাহিত জীবনে সাফল্যের মূলমন্ত্র হলো পরস্পরকে ভালভাবে জানার চেষ্টা করা আর পরস্পরকে সহায়তা করে চলা এবং ছোট ছোট ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়ার কথা ভুলে না যাওয়া। তাছাড়া বিবাহ সংক্রান্ত ভালো কিছু বইও পড়ে ফেলা।

অতএব বিবাহিত জীবনে সুখী হতে গেলে ৬নং নিয়ম হল :

‘ভদ্রতা দেখান।‘

.

বিবাহিত জীবনে সুখী হতে হলে

অল্প কথায়

১: ঘ্যানর ঘ্যানর করবেন না।

২: সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে অধিকার করতে চাইবেন না।

৩: সমালোচনা করবেন না।

৪ : আন্তরিক প্রশংসা করুন।

৫: ছোটখাটো ব্যাপারেও মনোযোগ দিন।

৬ : ভদ্রতা দেখান।

৭: বিবাহ সম্পর্কে ভালো বই পড়ুন।

.

স্বামী বা স্ত্রী নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজেরা দেওয়ার চেষ্টা করে দেখলে উপকৃত হবেন :

স্বামীদের জন্য

১। মাঝে মাঝে স্ত্রীর জন্যে আপনি একগুচ্ছ ফুল নিয়ে আসেন? সেটা তার জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী বা অন্য যে কোন উপলক্ষ্যেই হোক।

২। অন্যের সামনে কখনও স্ত্রীর সমলোচনা করেন না তো?

৩। বাড়ির খরচ ছাড়া তাকে ইচ্ছেমত খরচ করার জন্য টাকাকড়ি দেন কি?

৪। তার মানসিক কোন অবস্থায় সহানুভূতি দেখান তো?

৫। আপনার অবসর সময়ের অর্ধেকটা স্ত্রীর সঙ্গে কাটান কি?

৬। আপনার স্ত্রীর রান্নার সঙ্গে আপনার মা কিম্বা অন্য কারও তুলনা করেন কি?

৭। স্ত্রী বুদ্ধিবৃত্তি বই পড়া ইত্যাদিতে স্বাধীনতা দেন কি?

৮। ছোটখাটো ব্যাপারেও প্রশংসা করেন কি?

স্ত্রীদের জন্য

১। আপনার স্বামীর কাজে পূর্ণ স্বাধীনতা দেন কি?

২। আপনার গৃহকোণ আকর্ষণীয় করার জন্য চেষ্টা করেন কি?

৩। স্বামীর পছন্দসই আহার্য তৈরিতে চেষ্টা করেন কি?

৪। স্বামীর ব্যবসা বা কাজে সহায়তা করেন কি?

৫। আপনি অর্থকরী ব্যাপারে সহজভাবে মেনে নেন?

৬। আপনি কি আপনার শাশুড়ি ও স্বামীর অন্যান্য আত্মীয়দের সঙ্গে মানিয়ে চলেন?

৭। আপনি কি স্বামীর পছন্দই পোশাক পরায় অভ্যস্ত?

৮। দৈনন্দিন খবর ধারণা ইত্যাদি সম্বন্ধে আপনি কি ওয়াকিবহাল থেকে স্বামীকে আনন্দ দান করেন?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *