২৯. ভুল সংশোধন সহজ করুন

ঊনত্রিংশ পরিচ্ছেদ
ভুল সংশোধন সহজ করুন

অল্প কিছুদিন আগে আমার বছর চল্লিশের এক অবিবাহিত বন্ধু বিয়ে করবে স্থির করে। ওর প্রেমিকা ওকে নাচ শিখতে বলে। বন্ধু আমায় বলেছিল তার নাচ শেখার দরকার ছিল। কুড়ি বছর আগে সে যেমন নাচতো আর এখনও তার কোন পরিবর্তন দেখা যায় নি। সে লিখেছিল, প্রথম শিক্ষকই আমায় বোধহয় জানান নাচ শেখা আমার কিছুই হয় নি। সে বলে সবটাই ভুল। আমাকে সবই ভুলে নতুন করে শুরু করতে হবে। আমার সেটা করার ইচ্ছে ছিল না তাই তার কাছ থেকে চলে আসি।‘

‘পরের শিক্ষক হয়তো মিথ্যা বলতেন, তবে সেটা আমার পছন্দ ছিল। সে আমায় জানায় আমার কায়দাগুলো একটু পুরনো ধরনের হলেও আমি চেষ্টা করলে শিখতে পারব। প্রথম শিক্ষক আমায় হতাশ করে দেন। নতুন শিক্ষক ঠিক তার উলটোই করেন। সে আমার প্রশংসা করে আর ভুল ধরার চেষ্টা করেনি। তোমার স্বাভাবিক ছন্দ আছে। তুমি নাচিয়ে হয়েই জন্মেছে। অথচ আমি জানতাম আমি একদম চতুর্থ শ্রেণীর নাচিয়ে, তা সত্ত্বেও মনে মনে পোষণ করতে লাগলাম তিনি ঠিক কথাই বলছেন। আসলে তাকে এটা বলাবার জন্যেই টাকা দিচ্ছি। সেকথা কেন উল্লেখ করলাম?’

‘যাই হোক আমি এটা জানতাম তিনি আমার প্রশংসা না করলে আজ যা নাচতে পারি তাও পারতাম। তিনি বলেন আমি স্বাভাবিক নাচিয়ে। এটাই আমায় উৎসাহী করে তোলে। আমায় আশা জোগায়। তাতেই আমি উন্নতি করতে চাই।’

কোন শিশু, স্বামী বা কোন কর্মচারিকে বলুন কোন কাজে সে বোকা বা অপদার্থ, তার কোন দক্ষতা নেই! সে সব ভুল করছে, তাহলে তার উন্নতি করার সমস্ত ইচ্ছাই বিলুপ্ত হবে। কিন্তু উল্টো কৌশলটা কাজে লাগান, আন্তরিক প্রশংসা করুন, কাজটা করা সহজ বুঝিয়ে বলুন, লোকটিকে বুঝতে দিন সে কাজটা করতে পারে এ বিশ্বাস আপনার আছে। তাহলে দেখবেন সে সারারাত জেগেই তা করতে চাইবে।

ঠিক এই কৌশল লাওয়েল টমাস কাজে লাগিয়েছিলেন। বিশ্বাস করুন তিনি মানবিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একজন যাদুকর। তিনি আপনাকে তৈরি করতে পারেন, তিনি আপনার মধ্যে বিশ্বাস জাগাতে পারেন। আপনার সুপ্ত প্রতিভা তিনি জাগিয়ে তুলতে পারেন। যেমন ধরুন, আমি সম্প্রতি মিঃ আর মিসেস টমাসের সঙ্গে এক সপ্তাহ কাটাই। আর শনিবার রাতে চুল্লীর সামনে বসে আমায় একটা ব্রিজ খেলায় যোগ দিতে ডাকা হয়। ব্রিজ? না, না। আমি ব্রিজ খেলতে পারি না। খেলাটা চিরদিনই আমার কাছে রহস্যময় রয়ে গেছে। কিছুতেই তা পারব না।

‘কেন, কেন, এতে কোন কৌশল নেই।’ লাওয়েল বললেন। ‘ব্রিজে শুধু স্মরণ আর বিচারবুদ্ধি ছাড়া আর কিছুই লাগে না। তুমি তো একবার স্মৃতিশক্তির উপর একটা পরিচ্ছেদ লিখেছো। ব্রিজ তোমার কাজে লাগবে। তোমার লাইনে পড়ে এটা।’

আর আশ্চর্য ব্যাপার! কিছু বোঝার আগেই আমি ব্রিজ খেলার টেবিলে বসে গেলাম। তার কারণ হলো আমায় বলা হয় ব্রিজ খেলায় আমার স্বাভাবিক ক্ষমতা আছে। তাই ব্যাপারই আমার কাছে সহজ হয়ে গেল।

ব্রিজের কথা বলতে গিয়ে আমার এলি কালবার্টসনের কথা মনে পড়ছে। কালবার্টসনের নাম তো ঘরে ঘরে। যেখানেই ব্রিজ খেলা সেখানেই তাঁর নাম। তাঁর লেখা ব্রিজ সম্পর্কে বই অন্ততঃ বারোটা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে আর বিক্রয় হয়েছে লক্ষ লক্ষ কপি। অথচ তিনিই আমায় বলেন তিনি কোনকালেই ব্রিজ খেলাকে জীবিকা বলে গ্রহণ করতে পারতেন না যদি না একজন তরুণী তাঁকে জানাতে তার মধ্যে খেলার স্বাভাবিক ক্ষমতা আছে।

১৯২২ সালে তিনি আমেরিকায় এসে দর্শন আর সমাজবিদ্যা শেখানোর কাজ খুঁজে ব্যর্থ হন। তা

রপর তিনি কয়লা বিক্রির চেষ্টা করেন আর তাতেও ব্যর্থ হন।

তারপর চেষ্টা করেন কফি বিক্রি করতে আর তাতেও ব্যর্থ হন।

সে সময় তার মনে একেবারেই খেলেনি ব্রিজ খেলা শেখানোর ব্যবস্থা করতে। তিনি যে শুধু এক বাজে ব্রিজ খেলোয়াড় ছিলেন তাই নয়, তা ছাড়া বড় একগুঁয়ে ছিলেন। তিনি এত সব প্রশ্ন করতেন আর খেলার জন্য তর্ক করতেন যে, কেউ তাঁর সঙ্গে খেলতে চাইত না।

তারপরেই তিনি পরিচিতি হলেন এক সুন্দরী ব্রিজ খেলোয়াড়ের সঙ্গে তার নাম ডিলন। তিনি তাঁর সঙ্গে প্রেমে পড়ে তাকেই বিয়ে করলেন। ডিলন দেখলেন কালবার্টসন কত সতর্কভঙ্গীতে তাস বিশ্লেষণ করতে থাকেন। ডিলন তাই বললেন তিনি তাসের টেবিলে একজন দারুণ খেলোয়াড়। তার প্রশংসাতেই তিনি ব্রিজ খেলাকে তার জীবিকা হিসাবে গ্রহণ করেন। কথাটা কালবার্টসন স্বয়ং আমায় বলেছিলেন।

অতএব লোককে না চটিয়ে তাঁদের পরিবর্তিত করতে হলে ৮ নম্বর নিময় হল: প্রশংসা করুন আর উৎসাহ দিন। ত্রুটি সংশোধন করা যে কঠিন নয় এটা বুঝিয়ে দিন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *