২১. যখন অন্য কিছুতে কাজ হয় না, এটা চেষ্টা করুন

একবিংশ পরিচ্ছেদ
যখন অন্য কিছুতে কাজ হয় না, এটা চেষ্টা করুন

চার্লস শোয়াবের কারখানার একজন ম্যানেজার ছিল, তাঁর কর্মচারিরা ঠিকমত কাজ করত না।

শোয়াব তাই জানতে চাইলেন : ‘এটা কি রকম ব্যাপার যে আপনার মত পাকা লোকও কারখানার উৎপাদন ঠিক মত করাতে পারছেন না?

‘তা জানি না’ লোকটি জবাব দিল, ‘আমি সকলকে চাপ দিচ্ছি, নানাভাবে চেষ্টা করছি, ভয়ও দেখিয়েছি, চাকরি খতম করতে চেয়েছি। কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়নি। ওরা উৎপাদন করছে না।’

তখন দিনের কাজ শেষ হয়ে রাতের শিফট শুরু হতে চলেছে।

‘আমাকে এক টুকরো চকখড়ি দিন তো।’ শোয়াব বললেন। তারপর কাছাকাছি থাকা কর্মীটির দিকে তাকিয়ে বললেন, আজকের শিফটে কত উৎপাদন করেছ?

‘ছয়।’

আর কোন কথা না বলে শোয়ব মেঝের বুকে বড় করে একটা ‘ছয়’ সংখ্যা লিখে চলে গেলেন।

রাত্রে শিফট শুরু হলে কর্মীরা ‘ছয়’ সংখ্যাটা দেখে এর মানে জানতে চাইল।

‘বড় কর্তা এসেছিলেন, দিনের শিফটের কর্মীটি জানাল। তিনি জানতে চান আমরা কত উৎপাদন করেছি এবং তিনি চকখড়ি দিয়ে ওটা লেখেন।‘

পরদিন সকালে শোয়াব এসে দেখলেন রাতের শিফটের কর্মীরা ৬ সংখ্যাটা মুছে বড় করে একটা ‘৭’ লিখে গেছে।

পরের দিন, দিনের শিফটের কর্মীরা কাজ করতে এসে বড় আকারে লেখা ‘৭’ কথাটা লক্ষ্য করলো। ওঃ তাহলে রাতের শিফট মনে করে তারা দিনের শিফটের চেয়ে ভালো? বেশ ওরা রাতের শিফটকে কিছু শিক্ষা দিতে তৈরি হল। তারা যাওয়ার সময় মেঝের বড় অক্ষরে ‘১০’ সংখ্যাটি লিখে যায়। ঘটনা গড়িয়ে চললো।

যে মিলটি এতদিন উৎপাদন হ্রাসের সমস্যায় ভুগছিল, তাতে এখন থেকে অন্য মিলের তুলনায় উৎপাদন ঢের বেশি হতে লাগল।

এক্ষেত্রে কৌশলটি কী?

চার্লস্ শোয়বের নিজের কথাতেই শুনুন।

‘কাজ করাতে হলে প্রথমে প্রয়োজন কিছু প্রতিযোগিতার মনোভাব আনা। টাকা আয় বা আদায় করার কথা বলছি না, বরং অন্যকে হারানোর মনোভাব। অন্যকে হারানোর ইচ্ছা! একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা! মানুষ প্রতিযোগিতা ভালোবাসে।

প্রতিযোগিতার মনোভাব না থাকলে থিয়োডোর রুজভেল্ট কখনই আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন না। কিউবা থেকে ফিরে আসার পর তিনি সবেমাত্র নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্ণর হন। বিরোধীরা দেখতে পেলেন রুজভেল্ট ওই রাজ্যের একজন আইনসম্মত অধিবাসী নন। রুজভেল্ট ভয় পেয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে চাইলেন। এবার টমাস কলিয়ার কাজে নামলেন। তিনি আচমকা থিয়োডোর রুজভেল্টকে চিৎকার করে বললেন সান জুয়ান পাহাড়ের বীর কি কোন কাপুরুষ?

রুজভেল্ট লড়াই করতে মনস্থ করলেন-এরপরের ঘটনা তো ইতিহাস। এই চ্যালেঞ্জ তার জীবনকেই শুধু বদলে দেয়নি বরং এতে জাতির জীবনেও একটা ছাপ পড়েছিল।

চার্লস্ শোয়াব প্রতিযোগিতার দারুণ ক্ষমতার কথা জানতেন। এই রকমই আবার জানতেন অলস্মিথও।

অলস্মিথ যখন নিউ ইয়র্কের গভর্ণর ছিলেন তখন তাকে কঠিন কাজে নামতে হয়। পশ্চিম ডেভিন আইল্যাণ্ডের সবচেয়ে জঘন্য জেলখানা সিংসিং-এ জঘন্য সমস্ত কাণ্ড কারখানা চলেছিল। অত্যন্ত কুৎসিত কাজের গুজবও ছড়াচ্ছিল। স্মিথের দরকার ছিল সিংসিংকে শাসনে রাখার জন্য একজন কড়া প্রকৃতির মানুষ। কিন্তু কে সেই লোক। তিনি নিউ হ্যাঁম্পটনের লুইস ই. লজকে ডেকে পাঠালেন।

‘সিংসিং কারাগারের দায়িত্ব নিতে কেমন লাগবে?’ লজকে প্রশ্ন করলেন বেশ ঠাট্টার আমেজেই স্মিথ। ‘ওখানে একজন অভিজ্ঞ মানুষ দরকার।‘

লজ বেশ অতলে তলিয়ে গেলেন। সিংসিংয়ের বিপদের কথা তার জানা ছিল। কাজটা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, রাজনীতির নানা মতও তাতে থাকবে। ওয়ার্ডেনরা সেখানে টিকতে পারেনি। তারা এসেছে আর গেছে। শেষজন টেকে মাত্র তিন সপ্তাহ, তার ভবিষ্যত রয়েছে। এ ঝুঁকি নেওয়া যায়?

এর পর স্মিথ ওই ইতস্তত ভাব দেখে হেসে বললেন, আপনার যেতে ভয় লাগছে। এর জন্যে আপনাকে দোষ দিচ্ছি না। জায়গাটা কঠিন ঠাঁই। বেশ শক্ত মানুষই ওখানে চাই।

হুঁ স্মিথ তাহলে একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছেন, তাই না? লজ তাই কোন শক্ত মানুষের কাজটাই নিয়ে দেখবেন ভাবলেন।

অতএব তিনি সেখানে গেলেন আর টিকেও গেলেন। তিনি হয়ে গেলেন জীবিত কারারক্ষীদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান পুরুষ। তাঁর লেখা বই ‘সিংসিং কারাগারে কুড়ি বছর লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে। বেতারে তিনি ভাষণ দেন, তার কারাগারের অভিজ্ঞতা নিয়ে বহু চলচ্চিত্র অনুপ্রাণিত হয়েছে। তাছাড়া অপরাধীদের সংশোধনে তার সংস্কারগুলি কারা সংস্কারে প্রেরণা জুগিয়েছে।

ফায়ার স্টোন নামের বিখ্যাত রবার প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হার্ভে এম. ফায়ারষ্টোন একবার বলেন, শুধু মাইনে দিয়ে বিখ্যাত আর ভালো মানুষদের ধরে রাখা যায় না। আমার মনে হয় একটা খেলোয়াড়ী বৃত্তিই আসল…।

এটাই প্রত্যেক সফল মানুষ ভালোবাসেন : খেলা। আত্মপ্রকাশের সুযোগ। নিজের ক্ষমতা প্রকাশ করে বিজয়ী হওয়া। নানারকম খেলার এটাই মূল কথা : প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়া, বিজয়ী হওয়ার আকাঙক্ষা। আত্ম গুরুত্বের এটাই পথ।

অতএব আপনি যদি শক্তিশালী মানুষদের জয় করতে চান তাদের স্বমতে আনতে চান ১২নং নিয়ম হলো :

‘একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিন।‘

অল্পকথায় অপরকে স্বমতে আনার বারোটি পথ :

১: তর্কে জেতার সব সেরা উপায় হলো তর্কে যোগ না দেওয়া।

২: অপরের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান। কখনও অপরের ভুল ধরবেন না।

৩ : আপনার ভুল হলে আন্তরিকতার সঙ্গে তার স্বীকার করুন।

৪ : বন্ধুত্বপূর্ণ পথে শুরু করুন।

৫: অপরকে হ্যাঁ বলতে দিন।

৬: অন্যকেই বেশি কথা বলতে দিন।

৭: অপরকে ভাবতে দিন মতলবটি তারই।

৮ : আন্তরিকতার সঙ্গে অপরের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখুন।

৯ : অন্যের ধারণার প্রতি আন্তরিক হোন।

১০: অপরের মহত্বের প্রতি আবেদন রাখুন।

১ : আপনার ভাবনায় নাটকীয়তা আনুন।

১২: চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *