০৪. একাজ করুন সবাই আপনাকে চাইবে

চতুর্থ পরিচ্ছেদ
একাজ করুন সবাই আপনাকে চাইবে

কী করে বন্ধু পেতে হয় জানার জন্য এ বই পড়ার দরকার আছে কি? পৃথিবীর সব সেরা বন্ধুত্ব অর্জন করা মানুষটির কৌশলটাই একবার পড়ে ফেলুন না কেন? সে কে জানেন না? হয়তো আগামীকালই তাকে দেখবেন রাস্তা দিয়ে আসছেন আর তার সঙ্গে আপনার দেখা হয়ে যাবে। আপনি তার দশ ফিটের মধ্যে আসতেই সে তার ল্যাজ নাড়তে চাইবে। আপনি তাকে থামিয়ে তার পিঠ চাপড়ে আদর করলেই সে প্রায়। লাফিয়ে উঠে জানিয়ে দেবে আপনাকে সে কতখানি পছন্দ করে। আপনিও বুঝতে পারবেন তার এই আনন্দ প্রকাশের মধ্যে কোন রকম উদ্দেশ্য একেবারেই নেই। সে আপনাকে কোন কিছু বিক্রি করতে চায় না বা আপনাকে বিয়ে করতেও চায় না।

কোনদিন কি একবার ভাবতে চেয়েছেন একমাত্র কুকুরকেই জীবন ধারণের জন্য কোন রকম কাজ করতে হয় না? মুরগীকে ডিম পাড়তে হয়, গরুকে দুধ দিতে হয়, কানারি পাখিকে গান গাইতে হয়। কিন্তু কুকুর বেঁচে থাকার জন্যে আপনাকে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই দেয় না।

আমার যখন পাঁচ বছর বয়স আমার বাবা পনের সেন্ট দিয়ে হলদে লোমওয়ালা একটা কুকুর ছানা এনে দিয়েছিরেন। এই কুকুরছানাটা আমার ছোট বেলার সারাক্ষণের আনন্দের সঙ্গী ছিল। প্রত্যেক দিন বিকেলে প্রায় সাড়ে চারটের সময় সে বাগানের সামনে তার সুন্দর চোখ মেলে আমার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকত। আর আমার গলার আওয়াজ শুনতে পেলেই প্রায় বন্দুকের গুলির মত ছিটকে বেরিয়ে এসে দারুণ আনন্দে আমাকে তার খুশীর ভাব জানিয়ে চিৎকার করে চলত।

কুকুরটির নাম ছিল টিপি। প্রায় পাঁচ বছর ধরে সে আমার সারাক্ষণের সঙ্গী ছিল। তারপর এক দুঃখময় রাত্তিরে–কোনদিন সে রাতের কথা ভুলবো না–সে আমার মাত্র দশ ফিটের মধ্যে বাজ পড়ে মারা যায়। টিপির মৃত্যু আমার ছোটবেলার জীবনে একটা চরম শোকাবহ ঘটনা।

মনস্তত্ত্ব সম্বন্ধে তুমি কোন বই পাঠ করো নি টিপি। এর দরকারও ছিল না। কোন ঐশ্বরীক ক্ষমতার মধ্য দিয়েই তুমি জানতে মানুষদের সম্পর্কে আগ্রহ দেখিয়ে দুমাসেই তুমি ঢের বেশি বন্ধু পেতে পারো অথচ দুবছরেও তোমার প্রতি মানুষের আগ্রহ জাগাতে চেষ্টা করে লাভ হবে না।

এ সত্ত্বেও কিন্তু আমি জানি কত লোকেই না অন্য সকলকে তাদের প্রতি আগ্রহান্বিত করার চেষ্টায় প্রাণপাত চেষ্টা করে চলে।

এটা অবশ্যই জানা কথা এতে কোন কাজ হয় না। মানুষ আপনার কিংবা আমার সম্বন্ধে মোটেই আগ্রহান্বিত নয়। তারা কেবল নিজেদের সম্পর্কেই শুধু আগ্রহান্বিত -সকাল, দুপুর, সন্ধ্যে সব সময়েই।

নিউইয়র্ক টেলিফোন কোম্পানী একবার বেশ ধারাবাহিক টেলিফোন কথাবার্তা শুনে হিসেব করার চেষ্টা চালায় সবচেয়ে কোন্ কথাটা বেশি ব্যবহার হয় জানার জন্য। ঠিকই আন্দাজ করেছেন আপনারা-কথাটা হলো ‘আমি’ ‘আমি’ ‘আমি’ …. হ্যাঁ, ‘আমি’ এই সর্বনামটাই ৫০০ টেলিফোনের কথাবার্তায় প্রায় ৩৯৯০ বার ব্যবহার হয়। ভাবুন শুধু ‘আমি’, ‘আমি’, ‘আমি’ ….

যে গ্রুপ’ ছবিতে আপনিও আছেন সেটা হাতে নিয়ে সবার আগে কাকে দেখার চেষ্টা করেন বলুন তো?

আপনি যদি ভেবে থাকেন লোকে আপনার প্রতি আগ্রহান্বিত তা হলে এই প্রশ্নটার জবাব দিন : ‘আপনার আজ রাতে যদি মৃত্যু হয় তাহলে কতজন লোক আপনার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আসবে?’

.

লোকে কেন আপনার সম্পর্কে আগ্রহী হবে, প্রথমে তার সম্পর্কে আপনি যদি আগ্রহী না হন? এবার একটা পেন্সিল হাতে নিয়ে আপনার উত্তরটা চটপট লিখে ফেলুন :

আমরা যদি কেবল লোককে আমাদের নিজেদের কথা বলে আগ্রহী করার চেষ্টা করি, তাহলে কখনই সত্যিকার কোন বন্ধু পাবো না। বন্ধু, সত্যিকার বন্ধু এভাবে পাওয়া যায় না।

নেপোলিয়ান এইভাবে চেষ্টা চালিয়েছিলেন। জোসেফাইনের সঙ্গে শেষ সাক্ষাঙ্কারে তিনি বলেছিলেন : ‘জোসেফাইন, মানুষ ভাগ্যবান হতে পারে আমি তাই হয়েছি, তবুও ঠিক এই মুহূর্তে, সারা দুনিয়া একমাত্র তুমিই একজন, যার উপর নির্ভর করতে পারি।’ ঐতিহাসিকদের সন্দেহ আছে নেপোলিয়ান জোসেফাইনের উপরেও আস্থা রাখতে পেরেছিলেন কি না।

ভিয়েনার বিখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদ অ্যালফ্রেড অ্যাডলার ‘হোয়াট লাইফ সুড মীন টু ইউ’ নামে একটা বই লিখেছিলেন। বইটাতে তিনি লিখেছেন : যে বিশেষ লোক অন্যদের সম্পর্কে আগ্রহী হতে চায় না সে দুনিয়ায় জীবন কাটাতে সবচেয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হয় আর অন্যকেও আঘাত দেয়। এই ধরণের মানুষ থেকেই সব রকম মানবিক ব্যর্থতা জন্ম নেয়।

মনস্তত্বের উপর আপনারা প্রচুর ভালো ভালো বক্তব্য পাঠ করতে পারেন কিন্তু এর চেয়ে চমৎকার কোন বক্তব্য খুঁজে পাবেন না। এক কথা বারবার বলতে চাই না তাহলেও অ্যাডলারের বক্তব্য এতই চমৎকার সারগর্ভ যে আবার বলার লোভ সামলাতে পারছি না :

‘যে বিশেষ লোক অন্যদের সম্পর্কে আগ্রহী হতে চায় না সে দুনিয়ায় জীবন কাটাতে সবচেয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হয় আর অন্যকেও আঘাত দেয়।‘

আমি একবার নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট গল্প লেখার ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলাম। এই ক্লাস চলার সময় ‘কোলিয়ার্স’ পত্রিকার সম্পাদক আমাদের কিছু বলেছিলেন। তিনি বলেন তার টেবিলে রোজ জমা পড়া ডজন ডজন ছোট গল্পের মধ্যে থেকে একটা মাত্র তুলে নিয়ে কিছু অংশ পড়লেই তিনি বুঝতে পারেন লেখক মানুষকে ভালবাসেন কিনা। তিনি বলেন : লেখক যদি মানুষকে ভালো না বাসেন তাহলে মানুষও তার গল্প ভালো বাসবে না। ওই অভিজ্ঞ সম্পাদক ছোট গল্প নিয়ে কথা বলার সময় দুবার থেমে মার্জনা চেয়ে বলেন, তিনি একটা উপদেশ দিতে চান। তাঁর কথায় সেটা হলো এই রকম : ‘আমি আপনাদের যা বলছি আপনাদের কেউ কেউ হয়তো তাই বলবেন। কিন্তু মনে রাখবেন আপনারা যদি সফল গল্প লেখক হতে চান তাহলে মানুষ সম্পর্কে আপনাদের আগ্রহ থাকতেই হবে।‘

কল্পিত কাহিনী লেখার ক্ষেত্রে এটা যদি সত্য হয় তাহলে মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে এটা তিন গুণ বেশি সত্যি।

আমি একবার হাওয়ার্ড থানের সঙ্গে তাঁর সাজঘরে একটা সন্ধ্যা কাটিয়েছিলাম, ব্রডওয়েতে তিনি যেবার শেষবারের মত প্রদর্শনীতে অংশ নেন। থান ছিলেন সে কালের বিখ্যাত একজন যাদুকর। তিনি একেবারে যাদুর কিংবদন্তী ছিলেন। চল্লিশ বছর ধরে বারবার তিনি সারা পৃথিবী ঘুরে মানুষকে তাঁর অলৌকিক যাদুর খেলা দেখিয়ে মুগ্ধ বিস্মিত করে তোলেন–মানুষ প্রায় বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে থাকতো। ষাট লক্ষেরও বেশি মানুষ তাঁর যাদু প্রদর্শন দেখার জন্য টিকিট কেটে প্রেক্ষাগৃহে ঢোকে আর তিনি প্রায় বিশ লক্ষ ডলার লাভ করেন।

আমি থানের কাছে তার সাফল্যের গোপন রহস্য কি জানতে চেয়েছিলাম। অবশ্য স্কুলে তাঁর লেখাপড়ার সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই–যেহেতু ছোট বেলায় তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে ছিলেন। নানা জীবিকাই তিনি তারপর নেন–প্রথমে হন মজুর। গাড়ির মধ্যে খড়ের গাদায় ঘুমিয়েও ছিলেন। দরজায় দরজায় ভিক্ষেও করেছিলেন বেঁচে থাকার জন্য। তাছাড়া রাস্তার সাইনবোর্ড আর বিজ্ঞাপন পড়েই তাঁর পড়াশোনায় হাতে খড়ি।

.

যাদুবিদ্যা সম্পর্কে কি তাঁর দারুণ কোন জ্ঞান ছিলো? না। তিনি নিজেই আমায় বলেছিলেন, যাদুর খেলা বা ভোজবাজী সম্বন্ধে ঢের ঢের বই আছে আর তিনি যা জানেন বহু লোকও তাই জানে। কিন্তু তার এমন দুটো জিনিস ছিল যা অন্য কারও ছিল না। প্রথমত পাদপ্রদীপের সামনে তাঁর ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করার ক্ষমতা ছিল। তিনি ছিলেন এক দক্ষ প্রদর্শক। মনুষ্যচরিত্র তাঁর ভালোই জানা ছিল। তিনি যাই করতেন, প্রতিটি অঙ্গভঙ্গী, কণ্ঠস্বরের বিকৃতি, সামান্য ভ্রূ তোলা–সব কিছুই খুব সতর্কতার সঙ্গে তিনি আগে থেকে অভ্যাস করে রাখতেন। তাঁর সমস্ত কাজই প্রায় সেকেণ্ডের মধ্যে করতেন তিনি, একেবারে চোখের পলকে। কিন্তু এটাই তাঁর সাফল্যের মূল আদৌ ছিল না। থান মানুষ সম্পর্কে প্রকৃতই আগ্রহী ছিলেন। তিনি আমায় বলেন যে বহু যাদুকরই দর্শকদের লক্ষ্য করে নিজেদের বলতে চায় : ‘হুম, আমার সামনে এক দল গবেট বসে রয়েছে ওদের ঠিক বোকা বানাবো।’ কিন্তু থার্স্টনের কৌশল ছিল ঠিক একেবারে আলাদা। তিনি আমায় বলেন–মঞ্চে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি নিজেকে বলতেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ যে এতো সব মানুষ আমার খেলা দেখতে এসেছেন। এঁরাই আমার জীবনটা ভালোভাবে কাটাতে সম্ভব করে তুলেছেন। আর সেই কারণেই আমি ওঁদের আমার সব সেরা যাদুবিদ্যাই যথা সম্ভব দেখাতে চেষ্টা করব।’ তিনি এটাও বলেছিলেন, পাদপ্রদীপের তলায় তিনি কখনই নিজেকে একথা না বলে দাঁড়াতেন না : আমি আমার দর্শকদের ভালোবাসি, আমি আমার দর্শকদের ভালোবাসি। হাস্যকর বলে ভাবছেন? আপনার যেমন ইচ্ছে অবশ্য ভাবতে পারেন। আমি শুধু কথাগুলো আপনাদের কোন মন্তব্য ছাড়াই শোনাচ্ছি–যে কথাগুলো আমি শুনেছি বিশ্বের একজন সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ যাদুকরের কাছ থেকে।

মাদার শূয়্যান-হিঙ্কও ঠিক এই কথাই আমাকে বলেন। খিদে এবং ভগ্ন হৃদয়ের জ্বালা আর শোকাবহ জীবন কাটানোর ব্যর্থতার সন্তানসহ একবার আত্মঘাতী হতে গিয়েছিলেন তিনি–অথচ এমন ঘটনা সত্ত্বেও তিনি সঙ্গীত জগতের সিঁড়িতে পা রেখে ধাপে ধাপে উঠে গিয়েছিলেন একেবারে তার চূড়ায়। শেষ পর্যন্ত তিনি হয়ে উঠেছিলেন লক্ষ লক্ষ শ্রোতার সবার প্রিয় একজন গায়িকা। আর তিনিও স্বীকার করেছিলেন যে তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি হল, তিনি মানুষ সম্পর্কে দারুণ আগ্রহী ছিলেন।

ঠিক এই রকমই ছিল থিয়োডোর রুজভেল্টের আশ্চর্যজনক জনপ্রিয়তার রহস্যের গোড়ার কথা। এমন কি তাঁর পরিচালকরাও তাকে ভালোবাসতো। তাঁর নিগ্রো পরিচালক জেমস ই. অ্যামোর্স তার সম্পর্কে ‘থিয়োডোর রুজভেল্ট হিরো টু হিজ ভ্যালে’ নামে একখানা বই লিখেছিল। ওই বইটার অ্যামোর্স একটা ঘটনার সুন্দর বিবরণ দিয়েছেন :

‘একবার আমার স্ত্রী প্রেসিডেন্টকে পাখি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিল। সে কোনদিন কোয়েল পাখি দেখেনি, তাই প্রেসিডেন্ট তাকে ভালো করে বুঝিয়ে দেন। বেশ কিছুদিন পরে আমাদের কটেজের টেলিফোন বেজে উঠলো (অ্যামোর্স আর তার স্ত্রী অয়েস্টার বে’র রুজভেল্ট এস্টেটে বাস করতো। আমার স্ত্রী টেলিফোনে সাড়া দিতেই স্বয়ং মিঃ রুজভেল্টের গলা শুনতে পেলো। প্রেসিডেন্ট জানালেন তিনি ফোন করেছেন এটাই জানাবার জন্য যে তার জানালার সামনে একটা কোয়েল পাখি বসে আছে তিনি ইচ্ছে করলেই দেখতে পাবেন। এই রকম ছোটখাটো ব্যাপারে আগ্রহ তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিশেষত্ব ছিল। যখনই তিনি আমাদের কটেজের পাশ দিয়ে যেতেন, আমরা তখন কাছাকাছি না থাকলেও তিনি ডাক ছাড়তেন, অ্যানি …জেমস্!’ যাওয়ার মুখে এটা ছিল তার বন্ধুত্বের ডাক।

এমন একজন মানুষকে কর্মচারীরা না ভালোবেসে থাকে কেমন করে? তাছাড়া তাকে ভালো না বাসার কোন কারণ ছিল না। রুজভেল্ট একবার হোয়াইট হাউসে আসেন। ঠিক সেই সময় প্রেসিডেন্ট ট্যাফট আর মিসেস ট্যাফট বাইরে ছিলেন। তিনি হোয়াইট হাউসের সমস্ত পরিচারকদেরই নাম ধরে ডাকলেন, এমন কি রান্নাঘরের পরিচারকাকেও। সাধারণ নিচের তলার মানুষদেরও যে তিনি কতটা ভালবাসতেন সেটা বোঝা যায় এটা থেকেই। এ বিষয়ে আর্টিবাট লিখেছেন : ‘তিনি রান্নাঘরের পরিচারিকা অ্যালিসকে দেখতে পেয়ে বললেন সে এখনও ভুট্টার রুটি বানায় কি না। অ্যালিস জানালো সে মাঝে মাঝে বানায় বটে চাকর-বাকরদের জন্য, তবে উপরতলার কেউ তা খায় না।‘

রুজভেল্ট উজ্জ্বল হয়ে বললেন : তাদের রুচিটাই বাজে। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা হলে বলব।

অ্যালিস প্লেটে করে তার জন্যে একটা রুটি নিয়ে এলে সেটা চিবোতে চিবোতে তিনি অফিসের দিকে চললেন। যাওয়ার সময় সমস্ত মালী আর মজুরদের শুভেচ্ছাও জানাতে চাইলেন …।

‘তিনি অতীতে যেভাবে সবাইকে ডাকতেন সেই ভাবেই তাদের ডাকলেন। তারা নিজেরা তখনও তাঁর কথা ফিসফিস করে আলোচনা করে। আইক হুভার সজল চোখে একবার বলেছিল : দু বছরে এটাই ছিল আমাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় দিন, আমাদের কেউই একশ ডলারের বদলেও এটা হাতচাড়া করতে চাইতাম না।‘

.

অন্যান্য মানুষের সমস্যা সম্পর্কে এত গভীর ভাবনাই ডঃ চার্লস্ এলিয়টকে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে সফল প্রেসিডেন্ট হবার মর্যাদা দিতে পেরেছে–আপনাদের হয়তো মনে আছে তিনিই গৃহযুদ্ধের শেষ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গোড়া অবধি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে চলেছিলেন।

তার কাজের ধারার একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। একদিন কলেজে প্রথম ভর্তি হওয়া নতুন ছাত্র এল, আর. জি. ক্র্যাণ্ডন প্রেসিডেন্টের অফিসে গিয়ে ছাত্রদের ঋণ ভাণ্ডার থেকে পঞ্চাশ ডলার ধার নিতে যায়। ঋণ মঞ্জুর হল। তার নিজের ভাষাতেই এবার সব শুনুন। এরপর আমি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চলে আসতে চাইছিলাম তখন প্রেসিডেন্ট এলিয়ট বললেন, দয়া করে একটু বোসো। তারপর দারুণ অবাক হলাম তিনি যেই বললেন : ‘আমি শুনলাম, তুমি নিজের ঘরে তোমার রান্না করে খাও। আমার মনে হয় কাজটা খুবই ভালো, তোমার পক্ষে, বিশেষ করে ভালো আর যথেষ্ট খাবার যদি পাও। আমি যখন কলেজে পড়তাম তাই করতাম। তুমি কখনও মাংসের রুটি বানিয়েছ? জিনিসটা বানাতে পারলে খুবই ভালো, একটুও নষ্ট হয় না। আমি কিভাবে বানাতাম এবার শোন। তিনি এরপর আমায় বুঝিয়ে দিলেন কি করে মাংস কেটে ধীরে ধীরে রান্না করতে হয় যাতে সবটা শুকিয়ে না গিয়ে বেশ শুকনো হয়, তারপর রুটির মধ্যে নিয়ে ঠাণ্ডা করে খেতে হয়।

আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি তাদের প্রতি আগ্রহী হলে আমিরিকার সবচেয়ে নামী লোকদের নজর, সময় আর সহযোগিতা লাভ করা সম্ভব হয়। একটা উদাহরণ রাখছি।

বেশ ক’বছর আগে আমি ব্রুকলীন ইনস্টিটিউট অব আর্টস্ অ্যাণ্ড সায়েন্সে গল্প লেখার পাঠক্রম পরিচালনা করেছিলাম। সেখানে আমরা ক্যাথলিন নরিন, ক্যালী হার্স, রিউপার্ট, হিউনেন ইত্যাদি নামী আর ব্যস্ত লেখকদের ব্রুকলীনে এনে তাদের অভিজ্ঞতার বিষয় জানাতে অনুরোধ করি। অতএব আমরা তাদের চিঠি লিখে বললাম আমরা লেখার প্রশংসা করি আর তাদের পরামর্শ পেতে আমরা খুবই আগ্রহী, আমরা আরও জানতে চাই তাদের সাফল্যের রহস্যই বা কি?

প্রতিটা চিঠিতে সই করেছিলো অন্ততঃ দেড়শ জন ছাত্রছাত্রী। আমরা লিখেছিলাম যে আমরা জানি তাঁরা অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ কোন বক্তৃতা তৈরি করা তাঁদের পক্ষে বেশ কঠিন। আর তাই আমরা সঙ্গে পাঠালাম কিছু প্রশ্ন। যেগুলোর উত্তর পেলে আমরা তাঁদের কাজের ধারা বুঝতে পারবো। তাঁদের এটা পছন্দ হলো। কার বা এমন চিঠি পছন্দ হয় না? অতএব তাঁরা তাঁদের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে ব্রুকলীনে এসে আমাদের সাহায্য করতে চাইলেন।

ঠিক একই রকম পদ্ধতিতে আমি জেসলি এম. শ. থিয়োডোর রুজভেল্টের অর্থ সেক্রেটারীকে, স্ট্যাফটের কেবিনেটের অ্যাটর্নী জেনারেল জর্জ ডব্লিউ উইকার্সহ্যামকে, ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টাকে, আরও বহু বিখ্যাত মানুষকেই আমন্ত্রণ জানিয়ে ছাত্রদের জনতার কাছে বক্তৃতার বিষয়ে বলাতে সক্ষম হই।

আমাদের সকলেই কসাই, রুটিওয়ালা বা সিংহাসনে বসা রাজা নাই হই, আমাদের যারা প্রশংসা করেন তাঁদের পছন্দ করি। জার্মানীর কাইজারের কথাটাই উদাহরণ হিসেবে ধরুন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে তিনিই বোধ হয় হড়ে পড়েন পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত আর বিতর্কিত একজন ব্যক্তি। এমন কি তার নিজের দেশবাসীও তাঁর বিরুদ্ধে চলে যায় আর তিনিও নিজের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে হল্যান্ডে পালিয়ে যান। তাঁর বিরুদ্ধে মানুষের ঘৃণা এমন জায়গায় পৌঁছায় যে তাঁকে হাতে পেলে লোকে বোধ হয় টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলতো বা আগুনে গালিয়ে ফেলতো। এই রকম ক্রোধের আর ঘৃণার মধ্যে একটি ছোট্ট ছেলে কাইজারকে একখানা চিঠি লিখে তাতে তার আন্তরিকতা আর প্রশংসা জানিয়েছিল। ছোট ছেলেটি লিখেছিল অন্যরা যা বলে বলুক সে সব সময়েই উইলহেলমকে তাঁর সম্রাট হিসেবে ভালোবেসে যাবে। কাইজার চিঠিটা পেয়ে একেবারে আন্তরিকভাবে গলে যান আর ছেলেটিকে নিমন্ত্রণ করে পাঠান, সে যেন এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে। ছেলেটি এসেছিল আর সঙ্গে তার মা-ও এসেছিল–আর কাইজার পরে তাকে বিয়ে করেন। ছোট ছেলেটিকে ‘বন্ধুলাভ ও প্রভাব বিস্তার’ গোছের কোন বই পড়তে হয়নি। ব্যাপারটা সে অন্তর থেকেই উপলব্ধি করেছিল।

আমরা যদি বন্ধুত্ব করতে চাই, তাহলে অন্যদের কাজ করতে প্রস্তুত থাকতে হবে–যে কাজ করতে হলে চাই সময়, মানসিকতা, নিঃস্বার্থতা আর চিন্তাধারা। ডিউক অব উইণ্ডসর যখন প্রিন্স অব ওয়েলস ছিলেন তখন দক্ষিণ আমেরিকা সফরে যাওয়ার আগে তিনি স্প্যানিশ ভাষা শিখতে আরম্ভ করেন যাতে সে দেশে গিয়ে তাদের ভাষাতেই কথা বলতে পারেন। দক্ষিণ আমেরিকার মানুষ এজন্য তাকে খুবই ভালবাসত।

.

অনেক বছর যাবৎ আমি এটা ঠিক করেছি আমার বন্ধু বান্ধবদের জন্মদিনের তারিখটা মনে রাখতে হবে। কিভাবে? যদিও জ্যোতিষশাস্ত্র সম্বন্ধে আমার কণামাত্রও বিশ্বাস নেই তাহলেও আমি তাদের জিজ্ঞাসা করি কারও জন্মদিনের তারিখের সঙ্গে সেই মানুষের চরিত্র আর ভাবভঙ্গীর কোন সম্পর্ক আছে কি না? তারপর আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, তার জন্মমাস আর তারিখ কি? সে যদি বলে ২৪ নভেম্বর, তাহলে আমি বার বার আউড়ে চলি–২৪ নভেম্বর, ২৪ নভেম্বর! তারপর সে পিছনে ফিরলেই একটা কাগজে তার নাম আর জন্মতারিখটা লিখে ফেলি। পরে সেটা জন্মদিনের একটা ডায়েরীতে লিখে রাখি। প্রত্যেক বছরের গোড়ায় ঐ সব জন্ম তারিখ আমার ক্যালেণ্ডারে পর পর লিখে রাখি; ফলে সবই আমার সহজেই। মনে থাকে। ঠিক তারিখটা হলেই তার কাছে আমার চিঠি বা টেলিগ্রাম পৌঁছে যায়। এর প্রতিক্রিয়া দারুণ হয়! কারণ পৃথিবীতে আমিই একমাত্র মানুষ যে তার জন্মদিনের ব্যাপারটা আমার মনে আছে।

আমরা যদি বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে চাই তাহলে মানুষকে অত্যন্ত সজীব ভঙ্গীতে আর উৎসাহ দিয়ে অভ্যর্থনা করি আসুন। কেউ টেলিফোন করলেই এমনভাবে ‘হ্যাল্লো’ বলুন যেন মনে হয় তার গলা পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন আপনি। দি নিউইয়র্ক টেলিফোন কোম্পানী তাদের অপারেটরদের শেখানোর জন্য নানা ব্যবস্থা করে থাকে। যাতে তারা কেউ ফোন করলেই এমনভাবে আপনার নম্বরটা বলুন যেন মনে হয় ‘সুপ্রভাত, আপনার সেবা করতে পেরে আনন্দিত’ এটাই বোঝায়। কাল টেলিফোন করার সময় কথাটা মনে রাখবেন।

কাজে কর্মে এই দার্শনিক তত্বটা কি কাজ দেবে? এর বেশ কিছু উদাহরণ আমি দিতে পারি তবে সময়ের অভাবে মাত্র দুটো দিচ্ছি।

নিউইয়র্ক শহরের একটা বড় ব্যাঙ্কের চার্লস এবং ওয়াল্টার্সের উপর দায়িত্ব পড়ে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য একটা গোপন রিপোর্ট তৈরি করার। তিনি জানতেন মাত্র একজন লোকই তাঁর যে সব বিষয় জরুরী দরকার তা জানে। মি. ওয়াল্টার্স তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন–ভদ্রলোক বিরাট এক প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট। মি. ওয়াল্টার্সকে তার ঘরে নিয়ে যাওয়া হলে এক তরুণী দরজার মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে প্রেসিডেন্টকে জানালো তার জন্য ওইদিন কোন ডাকটিকেট নেই।

আমার বার বছরের ছেলের জন্য ডাকটিকেট জোগাড় করছি, প্রেসিডেন্ট ওফাল্টার্সকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলেন।

মিঃ ওয়াল্টার্স এবার তাঁর কাজের কথায় এলে প্রশ্ন করা শুরু করলেন। প্রেসিডেন্ট কিন্তু বেশ ছাড়া ছাড়া ভাব দেখাতে চাইছিলেন, তিনি দুচারটে কথাই শুধু বললেন। কথা বলার উৎসাহ তাঁর ছিল না, কোনভাবেই তাঁকে দিয়ে বলানোও গেল না। সাক্ষাৎকার পর্ব ওখানেই শেষ হলো।

‘খোলাখুলি বলছি,’ মিঃ ওয়াল্টার্স ক্লাসে কাহিনী বলতে গিয়ে জানালেন, কি করা দরকার বুঝতে পারিনি। তারপরেই আমার মনে পড়ে গেল তার সেক্রেটারি কি বলেছিল–ডাকটিকেট, বার বছরের ছেলে … তখনই আমার মনে পড়ে গেল আমাদের বিদেশ দপ্তর ডাকটিকিট জমায়–সাত সমুদ্র পার হয়ে আসা বিভিন্ন মহাদেশের যত ডাকটিকেট।

‘পরদিন বিকেলে আমি আবার ভদ্রলোকের কাছে হাজির হলাম আর খবর পাঠালাম যে তার ছেলের জন্য কিছু ডাকটিকিট এনেছি। আমাকে খাতির করে ভিতরে ডাকা হয়েছিল কি? হ্যাঁ স্যার তাই হয়েছিল। তিনি আমার সঙ্গে এতো জোরে করমর্দন করেন যেন কংগ্রেসের জন্য নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন। আনন্দে উচ্ছল হয়ে পেটে পড়লেন ভদ্রলোক। আমার জর্জের এগুলো খুবই পছন্দ হবে’, ডাকটিকিটগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে তিনি বললেন এটা একবার দেখুন। সত্যিই দারুণ তাই না?

‘এরপর আমরা প্রায় আধঘন্টা ডাকটিকিট নিয়ে আলোচনা করে আর তাঁর ছেলের ছবি দেখে কাটালাম। তারপর তিনি একঘন্টা ধরে আমি যে খবর চাইছিলাম তাই দিতে লাগলেন। সব খবরই তাঁর কাছ থেকে এসে গেলো। আমাকে কোন রকম চেষ্টাই করতে হল না। তার যা যা জানা ছিল সবই তিনি জানালেন আমায়। তারপর তার অধীনস্থ কর্মচারিদের ডেকে পাঠিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক খবর দিলেন। নিজের সহকর্মীদের টেলিফোনেও করলেন। বলতে গেলে খবরের আর রিপোর্টের একটা বোঝা আমার উপর চাপিয়ে দিলেন। খবরের কাগজের লোক হিসেবে আমি একেবারে বাজিমাত করেছিলাম বলা যায়।’

আর একটা উদাহরন নিন :

ফিলাডেলফিয়ার সি. এম. ন্যাফল, জুনিয়ার প্রায় তিন বছর ধরে একটা মস্ত চেইনষ্টোরকে কয়লা বিক্রি করার চেষ্টা চালান। কিন্তু ওই চেইন-স্টোর কোম্পানী শহরের বাইরের এক সরবরাহকারীর কাছ থেকেই কয়লা কিনে তা আবার মিঃ ন্যাফলের অফিসের দরজার সামনে দিয়েই নিয়ে আসত। এরপর একদিন মিঃ ন্যাফলে আমার ক্লাসে এসে ওই চেইন-স্টোরের বিরুদ্ধে তাঁর গায়ের জ্বালা মিটিয়ে গাল দিলেন আর বললেন এরা হচ্ছে দেশের শত্রু ছাড়া কিছু না।

তিনি খালি অবাক হয়ে ভাবতে চাইতেন তিনি ওদের কেন কয়লা বিক্রি করতে পারলেন না।

আমি তাকে পরামর্শ দিলেন অন্য কৌশল কাজে লাগাতে। ছোট্ট করে বললে, যা ঘটেছিল সেটা এই রকম। আমরা এই বিতর্কসভার আয়োজন করলাম–বিতর্কের বিষয় ঠিক হলো : ‘চেইনস্টোর দেশের ভালো করার বদলে ক্ষতিই করে চলেছে।

.

ন্যাফলে আমার পরামর্শে অন্য দিকই নিলেন, তিনি চেইন স্টোরের হয়েই বক্তব্য রাখতে রাজি হলেন। তারপর সোজা হাজির হলেন যাদের মনে প্রাণে ঘৃণা করেন সেই চেনইস্টোরের একজন কর্মকর্তার কাছে। তাকে তিনি বললেন : আমি এখানে কয়লা বিক্রি করতে আসিনি আমি শুধু আপনার কাছে একটা সাহায্যের জন্য এসেছি। তিনি এরপর ওই বিতর্ক প্রতিযোগিতা কথাটা জানিয়ে বললেন; আমি আপনার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছি এই কারণেই যে, আমি জানি যে খবর চাই সেটা আপনারা ছাড়া কেউই দিতে পারবে না। প্রতিযোগিতাটা আমি যেমন ভাবেই হোক জিততে চাই, তাই যে সাহায্য দেবেন আপনি, তাতে কৃতজ্ঞ থাকবো।

এরপরের ঘটনা মি. ন্যাফলের নিজের কথাতে শুনুন :

‘আমি ভদ্রলোকের কাছে ঠিক এক মিনিট সময় দিতে অনুরোধ জানাই। এই শর্তেই তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাতে রাজি হন। আমার প্রয়োজনের ব্যাপারটা তাঁকে জানানোর পর আমাকে একটা চেয়ারে বসতে বলে তিনি আমার জন্য খরচ করেছিলেন ঠিক একঘন্টা সাতচল্লিশ মিনিট সময়। এরপর তিনি আর একজন কর্মকর্তাকে ডাকলেন, তিনি চেইনস্টোর নিয়ে একখানা বই লিখেছিলেন। তিনি যাবতীয় টেইনস্টোর সংস্থার কাছে চিঠি লিখে ওই বিষয়ে বিতর্ক সম্পর্কে একখানা বই আমাকে বানিয়ে দেন। তাঁর মত হল এই চেইন-স্টোর মানব সমাজের সেবা করে চলেছে। তিনি খুবই গর্বিত, সমাজের নানা স্তরের জন্য যা করে চলেছেন। কথা বলার ফাঁকে তাঁর মুখচোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল। আমি স্বীকার করছি তিনি নানা অজানা বিষয়ে আমার দৃষ্টি উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন–এসব আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। তিনি আমার মানসিক দৃষ্টিভঙ্গী সম্পূর্ণ পাল্টে দেন।

আমি যখন চলে আসছিলাম, তিনি আমার সঙ্গে দরজা পর্যন্ত এলেন,তারপর আমার কাঁধে হাত রেখে বিতর্কে আমার সৌভাগ্য কামনা করলেন। পরে একসময় আবার দেখা করে বিতর্কে কি রকম ফল হলো

আমায় জানাতে অনুরোধ করলেন। শেষ যে কথা তিনি আমায় বললেন তা হলো : বসন্ত কালের শেষে আর একবার আমার সঙ্গে দেখা করবেন। আপনার কাছ থেকে কিছু কয়লা কিনবো।’

আমার কাছে ব্যাপারটা একেবারে অলৌকিক। তিনি আমার কাছ থেকে কোন রকম প্রস্তাব ছাড়াই কয়লা কিনতে চাইছেন। আর তাঁর সমস্যা সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে মাত্র দু ঘন্টার মধ্যে আমি অনেকটা অগ্রসর হয়েছি যা আমি আমার কয়লার প্রতি আগ্রহী করতে দশ বছর চেষ্টা করেও করতে পারতাম কিনা সন্দেহ।

আপনি নতুন কিছু আবিষ্কার করেন নি, মিঃ ন্যাফলে, কারণ বহু বছর আগে যীশুর জন্মেরও একশ বছর আগে বিখ্যাত এক রোমান কবি পাবলিয়ান সাইরাস মন্তব্য করেছিলেন : আমরা অন্যের প্রতি তখনই আগ্রহী হই, অন্যেরা যখন আমাদের প্রতি আগ্রহী হয়।

অতএব আপনি যদি চান লোকে আপনাকে পছন্দ করুক, তাহলে তার সব সেরা নীতি হলো এই রকম :

‘অন্যের প্রতি সত্যিকার আগ্রহী হয়ে উঠুন।‘

আপনি যদি সত্যিকার ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে চান আর মানব সংসর্গ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করতেও আগ্রহী হন তাহলে ড. হেনরি লিঙ্কের ‘দি রিটার্ন টু রিলিজিয়ান’ বইখানা পড়ে দেখতে পারেন। বইয়ের নাম দেখে চমকে যাবেন না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *