৩৬. দ্য পার্টিং অব দ্য ওয়েজ

৩৬. দ্য পার্টিং অব দ্য ওয়েজ

ডাম্বলডোর উঠে দাঁড়ালেন। তিনি তীব্র ঘৃণায় বার্টি ক্রাউচের দিকে তাকালেন। তারপর তিনি তার জাদুদণ্ড তুলতেই দরে মুখ থেকে মোটা দড়ি বেরিয়ে এসে বার্টি ক্রাউচকে শক্ত করে বেঁধে ফেলল।

বাঁধা হয়ে গেলে ম্যাকগোলাগলের দিকে তাকিয়ে বললেন, মিনারভা তুমি একটু একে পাহারা দাও, আমি হ্যারিকে ওপরে রেখে আসছি।

হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন। বার্টিকে দেখে ওর মনে হল কিছু একটা কদৰ্য্য জিনিস দেখেছেন। তিনি জাদুদণ্ড বের করে বার্টি ক্রাউচের দিকে বাড়াতেই তার হাতটি শক্ত হয়ে গেল।

সিভেরস, ডাম্বলডোর স্নেইপের দিকে তাকিয়ে বললেন, দয়া করে ম্যাডাম পমফ্রেকে এখানে আসতে বলবেন। আমি অ্যালেস্টর মুডিকে হাসপাতালে পাঠাতে চাই। মাঠেও একবার কর্নেলিয়স ফাজের খোঁজে যেতে হবে, ওকে এখানে একবার আসার কথা বলতে হবে। ক্রাউচকে তিনি নিজ মুখে কিছু প্রশ্ন করতে পারেন। আমি আধঘণ্টার মতো হাসপাতালে আছি, দরকার হলে, ওখানে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

স্নেইপ কোনও কথা না বলে শুধুমাত্র মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে ঘর ছেড়ে চলে গেলেন।

হ্যারি? ডাম্বলডোর বললেন।

হ্যারি দাঁড়াল। ওর পায়ের ব্যথা ক্রাউচের কথা শোনার সময় বলতে গেলে ভুলেই গেছিল। এখন আবার ব্যথাটা বেড়ে গেল। পা টনটন করতে লাগল। শরীরের কাঁপুনিও থামেনি বুঝতে পারলো। ডাম্বলডোর বুঝতে পারলেন ওকে না ধরলে ও ঠিকমত হাঁটতে পারবে না। ওর একটা হাত ধরে করিডলর ধরে এগোতে লাগলেন।

হ্যারি, প্রথমে তোমাকে আমার অফিসে যেতে হবে। মনে হয় সিরিয়স ওখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।

হ্যারি ঠিক বুঝতে পারছে না ওর কি হয়েছে। হাত–পা টলছে, পায়ে ব্যথা। কোন কথা ভাল করে মগজে ঢকুছে না। যাকগে সব ঠিক হয়ে যাবে। ও ট্রাই উইজার্ড কাপের তৃতীয় টাস্কের শুরু থেকে যা যা ঘটেছে সব ও মন থেকে সরিয়ে ফেলতে চায়। তাহলেও ম্যাড–আই–মুডির ট্রাঙ্কের মধ্যে বন্দি হয়ে থাকা, ওয়ার্মটেলের জবুথবু হয়ে মাটিতে পড়ে থাকা, গরম আগুনের মতো কলড্রন থেকে ভোল্ডেমর্টের উত্থান, সেডরিক… সেডরিকের মৃত্যু… ওর বাবা-মার কাছে ওর মৃতদেহে দিয়ে দেবার কাতর অনুরোধ… ছবির মতো ভেসে আসছে ওর মনে।

–প্রফেসর, হ্যারি আমতা আমতা করে বলল।–মি. ও মিসেস ডিগরি এখন কোথায় আছেন?

ডাম্বলডোর বললেন,–ওরা এখন প্রফেসর উটের কাছে। এই প্রথম হ্যারির প্রফেসরের গলার স্বর স্বাভাবিক নয় বলে মনে হল, অথচ ক্রাউচকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় খুবই স্বাভাবিকভাবে–কখনও সামান্য জোরে, কখনও শান্তকণ্ঠে বলেছিলেন। স্প্রাউট ওদের পরিবারের একজন খুবই আপনজন।

কথা বলতে বলতে ওরা তখন পাথরের গারগয়লের কাছে পৌঁছেছে। ডাম্বলডোর ভেতরে যাবার জন্য পাসওয়ার্ড বললেন। দরজাটা খুলতেই ওরা চলন্ত পেঁচানো সিঁড়ি দিয়ে উঠে ওম কাঠের দরজার গোড়ায় দাঁড়ালেন। ডাম্বলডোর ধাক্কা দিয়ে দরজা খুললেন।

সিরিয়স ঘরের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। আজকাবান থেকে পালাবার সময় তার মুখ যেরকম শুকনো আর ফ্যাকাসে ছিল সেইরকমই মুখ। বলতে গেলে এক ঝটকায় ঘরে ঢুকে বললেন,–হ্যারি তোমার কিছু হয়নি তো?… যা ঘটেছে, এইরকমই কিছু বারবার আমার আশংকা হয়েছিল। বল কী হয়েছিল?

ডাম্বলডোর তাকে নিজেই সকল কথা খুলে বলা শুরু করলেন, বার্টি ক্রাউচ যা যা বলেছে। হ্যারি খুব মনোযোগ দিয়ে ডাম্বলডোরের বৃত্তান্ত শুনলো না। বলার সময় ডাম্বলডোর একটিও কমা ফুলস্টপ বাদ দিলেন না। হ্যারির কোন কথাবার্তা ভাল লাগছে না, সে ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত চুপ বসে থাকতে চায়।

হ্যারির কোলে পাখির ডানা ঝাপটাতে কিছু পালক উড়ে এসে পড়ল। ফনিক্স পাখি ফকেস, তার ডানার পালক হালকা।

ফকেস ওর কোলের ওপর এসে বসল। চিত্রবিচিত্র ডানাওয়ালা পাখি হালকা নরম তুলতুলে। ও ফনিক্সের রক্তিম আর সোনালী ডানার পালকে মৃদুমন্দ চাপড় দিতে বলল, চু চু ফকেস।

ডাম্বলডোর হ্যারিকে ওর টেবিলের সামনে বসিয়ে বললেন, হ্যারি পোর্ট–কী ছোঁবার পর যা ঘটেছে আমাকে বল!

সিরিয়স বললেন, মনে হয় হ্যারি খুবই ক্লান্ত। কথা শোনার বিষয়টা আগামীকাল পর্যন্ত মুলতুবি রাখলে হয় না ডাম্বলডোর? তারপর হ্যারির কাঁধে হাত রেখে বললেন, ওকে একটু বিশ্রাম… একটু ঘুমোতে দিন। ডাম্বলডোর হাত তুলে বললেন।

 হ্যারিও চায় এখনি সবকিছু বলতে। যেন সকল বিষাক্ত পদার্থ না নির্গত করলে স্বস্তি পাচ্ছে না।

ডাম্বলডোর স্নেহার্ত কণ্ঠে ধীরে ধীরে বললেন, আমি তোমাকে এই মুহূর্তে সাহায্য করতে পারলে খুশি হতাম। তোমাকে মন্ত্রবলে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে পারতাম। অপেক্ষা করতাম সে মুহূর্তের যখন তুমি আজকের পূর্ণ ঘটনা চিন্তা করে বলতে পারতে। আমি তা করতে পারি। কিন্তু আমি ভাল করেই জানি সাময়িক ব্যথার উপশম তোমাকে পরে আরও ব্ৰিত করবে। তুমি সত্যিই অসীম সাহস দেখিয়েছ। এইরকমই তোমার কাছ থেকে সর্বদা আশা করি। আমি তাই তোমাকে আবার তোমার সাহস দেখাতে বলছি। তুমি আদ্যোপান্ত ঘটনাটা বল।

হ্যারির কোলে বসা ফকেস নড়েচড়ে বসল। ও সামান্য ঝটকায় উড়ে গেল। হ্যারির মনে হল ওর ঠোঁট থেকে সামান্য কিছু তরল পদার্থ ওর পেটে পড়ল, তাতেই ওর শীত কেটে গেল, শক্তি পেল দেহে।

ও লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করল।… বলার সময় গত রাতের খুঁটিনাটি ঘটনা ওর চোখের সামনে ফুটে উঠতে লাগল। ও দেখতে পেল ভোল্ডেমর্ট যে উজ্জ্বল পোসানটা খেয়েছেন তার পুনঃআবির্ভাব। ডেথইটারদের কবরস্থানে চলাফেরা করা… ঘাসের ওপর কাপের পাশে পড়ে থাকা সেডরিকের মৃতদেহ।

সিরিয়স, হ্যারির পিঠে হাত রেখে বসেছিলেন। মাঝে মধ্যে কিছু বলবার চেষ্টা করছিলেন; কিন্তু ডাম্বলডোর হাত তুলে থামিয়ে দিলেন। হ্যারিও ভাবল মাঝখানে না থামিয়ে ওরই বলে যাওয়া ঠিক হবে। ভাল। যা বলা সে শুরু করেছে তা শেষ করা দরকার। মনে হল বলে ফেলে যেন শরীরের ভেতর থেকে বিষাক্ত কিছু বের করে দিচ্ছে। শেষ করার পর শরীর মন ঝরঝরে হয়ে গেল।

হ্যারি বলল, ওয়ার্মটেল ছুরি দিয়ে হাত কেটে রক্ত বের করেছে। সিরিয়স অসম্ভব চমকে উঠলেন, ডাম্বলডোর ঝট করে লাফিয়ে উঠলেন। বললেন, দেখি হাতটা। হ্যারি কাটা দাগ দুটি দেখাল। ছেঁড়া যায়গা দিয়ে দেখানো ওর হাতের রোবসের হাতার নিচে কাটা দাগ!

হ্যারি ডাম্বলডোরকে বলল, ভোল্ডেমর্ট আমাকে বলেছিলেন, অন্যের রক্তের বদলে আমার রক্ত মেশালে ও আরও শক্তিশালী হবে না।–আরও বলেছিলেন, আমার সুরক্ষা যা আমার মা আমাকে দিয়ে গেছেন… তার সেটার দরকার। ঠিকই বলেছিলেন, তিনি তো পরে আমার গালে হাত ছুতে পেরেছিলেন।

ডাম্বলডোরের দিকে তাকাতে হ্যারির মনে হল ক্ষণিকের জন্য তার চোখেমুখে গৌরবের ঝিলিক। পরমুহূর্তে হ্যারির বুঝতে পারা কঠিন হলো না সেটা ওর কল্পনা। ডাম্বলডোর ওর ডেস্কের সামনে চেয়ারে বসলে হ্যারি লক্ষ্য করল তিনি খুবই চিন্তি ত, যেন আগের চেয়ে আরও বৃদ্ধ হয়ে গেছেন।

–খুব ভাল। ভোল্ডেমর্ট ওর বাধা অপসারিত করেছে… যাকগে হ্যারি তারপর! হ্যারি এক এক করে প্রতিটি ঘটনা বলল। কলড্রন থেকে ভোল্ডেমর্টের আবির্ভাব, ওয়ার্মটেল আর ডেথইটারদের সঙ্গে কথাবার্তা দড়ি দিয়ে তাকে শক্ত করে কবরের শ্বেতপাথরের ওপর বেঁধে রাখা থেকে জাদুদণ্ড ফেরত দিয়ে দ্বন্দ্বযুদ্ধ পর্যন্ত…।

কথাগুলো বলতে বলতে যখন, ওর আর ভোল্টেমর্টের জাদুদণ্ডের মুখ থেকে সোনার আলো বিচ্ছুরিত হয়ে সংযুক্ত হয়েছিল ঘটনা পর্যন্ত আসার পর, মনে হল ও আর স্পষ্টভাবে কিছু স্মরণ করতে পারছে না… কিন্তু ভোল্টেমর্টের জাদুদণ্ড থেকে যা যা বেরিয়ে এসেছিল সেগুলো এক এক করে বন্যার জলের মতো মনে পড়ে গেল। ও যেন দেখতে পেল সেডরিকের আবির্ভাব, বৃদ্ধ মানুষটি, বার্থা জোরকিনস… ওর মা… ওর বাবাকেও।

এবার সিরিয়স কথা বললেন। হ্যারি খুশি হলো।

দণ্ড দুটি সংযুক্ত হয়েছিল? হ্যারির কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়ে ডাম্বলডোরের দিকে তাকিয়ে বললেন, কিন্তু।–কিন্তু কেন?

হ্যারি আবার ডাম্বলডোরের দিকে তাকালো।

ডাম্বলডোর বিড়বিড় করে বললেন, প্রিওরি ইনক্যানটেটেম!

সিরিয়স তীক্ষ্মস্বরে বললেন, জাদুমন্ত্রের বিপরীত প্রতিক্রিয়া?

ঠিকই ধরেছেন, ডাম্বলডোর বললেন, হ্যারি ও ভোল্ডেমর্টের জাদুদণ্ড একই পদার্থের। একই ফনিক্স পাখির ল্যাজের পালক দুজনের দণ্ডে আছে। ওই ফনিক্স, আসলে ওই সোনার বর্ণের চিত্রবিচিত্র ডানাওয়ালা যে পাখিটা হ্যারির হাঁটুর ওপর বসে রয়েছে তারই।

হ্যারি খুব আশ্চর্য হয়ে বলল, আমার দণ্ডের পালক তাহলে ফকেসের?

ঠিক ধরছো? ডাম্বলডোর বললেন। তুমি জাদুদণ্ডটা চার বছর আগে সি অল্লিভেন্ডারের দোকান থেকে কেনার পরই তিনি আমাকে লিখেছিলেন।

–তো, যখন একটি দণ্ড তার ভাইয়ের সঙ্গে মিলিত হয় তখন কি হয়? সিরিয়স জিজ্ঞেস করে।

ডাম্বলডোর বললেন, একজনের বিরুদ্ধে অন্যজন কাজ করে না। অবশ্য জোরজার করলে… খুব অদ্ভুত কিছু হয়।

-একটি দণ্ড অন্য দণ্ডটিকে তার মন্ত্র প্রয়োগ উগড়ে ফেলতে বাধ্য করে একের অন্যকে।

ডাম্বলডোর হ্যারির দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালে হ্যারি মাথা নাড়ল।

তার মানে, ডাম্বলডোর বললেন, সেডরিকের মতো একটা মূর্তি নিশ্চয়ই পুনরায় আবির্ভাব হয়েছে।

হ্যারি সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল।

 সিরিয়স ধারাল গলায় বললেন, ডিগরি জীবন ফিরে পেয়েছিল?

–কোনও মন্ত্র মৃতদের পুনরায় জীবন দিতে পারে না, ডাম্বলডোর গম্ভীরভাবে বললেন।–যেটা হয়েছে একরকম বিপরীত প্রতিধ্বনির মত একটা বিষয়। মনে হয় জীবন্ত সেডরিকের একটি ছায়া জাদুদণ্ড থেকে বেরিয়ে এসেছিল… আমি ঠিক বলেছি, হ্যারি?

হ্যারি হঠাৎ কাঁপতে কাঁপতে বলল, ও আমার সঙ্গে কথা বলেছিল… সেডরিক, বা ভূত সেডরিক, বা সে যাই হোক আমার সঙ্গে কথা বলেছিল।

একটা প্রতিধ্বনি, ডাম্বলডোর বললেন, সেডরিকের দেহের অবয়ব রক্ষা করেছিল–আমার ধারণা ওইরকম আরও কিছু ছায়ামূর্তির আবির্ভাব হয়েছিল… তারা ভোল্টেমর্টের জাদুদণ্ডের ইদানিংকালের শিকার।

একজন বৃদ্ধ, হ্যারি বলল। তখনও ওর ঠোঁট কাঁপছে।–বার্থা জোরকিনস, আর…।

তোমার মা-বাবা, ডাম্বলডোর বললেন।

হ্যাঁ, হ্যারি বলল।

সিরিয়স এত জোরে হ্যারির কাঁধ চেপে ধরেছিলেন তাতে ওর কাঁধটা টনটন করছিল।

ওর জাদুদণ্ডের শেষ হত্যা…, ডাম্বলডোর বললেন, রিভার্স অর্ডারে। তুমি যদি সংযোগটা বলবৎ রাখতে তাহলে আরও দেখা দিত। যাকগে খুব ভাল হ্যারি… ওইসব ছায়া, প্রতিধ্বনি… তারা কি করল?

হ্যারি যা যা ঘটেছিল গড়গড় করে বলে গেল; মানুষের আকারগুলো কেমন করে দণ্ডের ঘোট ছিদ্র দিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল, সোনার জাল, ভোল্টেমর্টের তাদের দেখে ভয় পাওয়া, ওর বাবার ছায়া, ওকে কি করতে হবে বলেছিল…. সেডরিকের শেষ অনুরোধ।

বলতে বলতে হ্যারি থেমে গেল… আর এগোতে পারলো না। ও সিরিয়সের দিকে তাকিয়ে দেখল সিরিয়স গালে হাত দিয়ে বসে রয়েছেন।

হ্যারি হঠাৎ মনে হল ফকেস ওর হাঁটুর ওপর থেকে নেমেছে, ফনিক্স মেঝেতে ঝটপট করছে। ওর মাথাটা হ্যারির ব্যথা পায়ের ওপর রাখা। ওর চোখ দিয়ে মুক্তার মত অশ্রু পড়ছে।… ব্যথা আর নেই, কাটা দাগ নেই… পা ঠিক হয়ে গেছে।

আমি আবার বলছি, ফনিক্স মেঝে থেকে উড়ে গিয়ে দরজার পাশে হাতলের ওপর বসলে ডাম্বলডোর বললেন–তুমি আজ রাতে অবশ্যই তুলনাহীন সাহস দেখিয়েছ, হ্যারি এটাই তোমার কাছে আশা করেছিলাম, যারা শক্তিশালী ভোল্ডেমর্টের সঙ্গে লড়াই করে মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরই মতো তুমি সাহস দেখিয়েছ। তুমি তোমার কাঁধে বড় জাদুকরের মতো বোঝা নিয়েছ, তাদের কোনও অংশে তুমি ক্ষুদ্র নও, তোমার কাছে আমাদের আশা–ভরসা অনেক। তুমি ডরমেটরিতে রাতের বেলা একা যাবে আমি চাই না। আমার সঙ্গে হাসপাতালে চল। ওর দরকার ঘুমের জন্য পোসান আর বিশ্রাম–শান্তি… সিরিয়স আপনি কি ওর সঙ্গে থাকতে চান?

সিরিয়স রাজি, আবার কাল কুকুর হয়ে ডাম্বলডোর আর হ্যারির সিঁড়ি দিয়ে নেমে হসপিটালে চললেন।

ওরা হাসপাতালে ম্যাডাম পমফ্রের ঘরে গিয়ে দেখল মিসেস উইসলি, হারমিওন, রন, বিল… ম্যাডাম পমফ্রেকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সকলেরই মুখ উদ্বিগ্ন। ওরা হ্যারি কোথায় ছিল, ওর কী হয়েছে জানতে চায়। কাল কুকুরটি নিয়ে ডাম্বলডোরের সঙ্গে হ্যারি ঘরে ঢুকলে ওরা হ্যারির দিকে একরকম দৌড়ে গেল। মিসেস উইসলি বেশ উঁচু গলায় বলে উঠলেন–হ্যারি? ও হ্যারি।

মিসেস উইসলি হ্যারিকে জড়িয়ে ধরবার আগেই ডাম্বলডোর ওদের মাঝখানে দাঁড়ালেন।

ডাম্বলডোর মিসেস উইসলির একটা হাত ধরে বললেন–মল্লি, হ্যারি এখন সুস্থ হয়ে উঠছে। ওর এখন ঘুম, বিশ্রাম… মানসিক শান্তি দরকার… ও চাইলে তোমরা সকলে থাকতে পার ওর কাছে।

তোমরা কিন্তু ওকে কোনও প্রশ্ন করবে না, মনে হয় আজ সন্ধ্যার আগে ও ঠিক সুস্থ হবে না।

বিল, রন, হারমিওনের দিকে ফিরে মিসেস উইসলি বললেন–প্রফেসর কি বললেন শুনেছ তো? তোমরা এখন ওকে বিশ্রাম করতে দাও।

ম্যাডাম পমফ্রে বড় কাল কুকুরটার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললেন–হেডমাস্টার আপনাকে একটা কথা বলব…?

পমফ্রে জানেন না কুকুর, কুকুর নয়টি সিরিয়স।

ডাম্বলডোর হেসে বললেন–না না ও থাকুক। ও কোনও গোলমাল করবে না। খুবই ওয়েল ট্রেনড…। হ্যারি তুমি শুয়ে পড়লে আমি যাব।

হ্যারিরও একই কথা বারবার বলতে মন চাইছিল না, তাই সকলকে ওকে কোনও প্রশ্ন না করতে বলার জন্য অসম্ভব কৃতজ্ঞতায় মন ভরে উঠল। অবশ্য ও চাইছে না ওরা চলে যাক।

ফাজের সঙ্গে কথাবার্তা বলার পর আমি আবার আসব, তোমাকে কাল সকাল পর্যন্ত এখানে থাকতে হতে পারে। স্কুলকেও ব্যাপারটা জানাতে হবে। ডাম্বলডোর সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চলে গেলেন।

হ্যারিকে ম্যাডাম পমফ্রে একটা বেডে নিয়ে যাবার সময় ও দেখল আসল মুডি অন্য একটা বেডে নিক্ষুপ হয়ে শুয়ে রয়েছেন। বিছানার একপাশে টেবিলের ওপর পরে রয়েছে ম্যাজিক্যাল চোখ আর কাঠের পা।

ম্যাডাম পমফ্রে পরদা টানতে টানতে বললেন, মুডি ভাল আছেন, চিন্তার কোনও কারণ নেই।

ম্যাডাম পমফ্রে সকলের সঙ্গে দুচারটে কথা বলার পর হ্যারিকে হসপিটালের জামা পরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। একটু পরে হাতে একটা ছোট বোতল, গবলেট আর পেপাসান নিয়ে ফিরে এলেন।

হ্যারি পোসানটা খেয়ে নাও… একটু পরে স্বপ্নবিহীন ঘুম এসে যাবে।

পোসান খাবার পর হ্যারি ঘুমিয়ে পড়ল।

***

ঘুম ভাঙার পরও হ্যারির মনে হল আর একটু ঘুমুলে যেন ভাল হতো। তখনও চোখ দুটো ভারি ভারি, মাথা তুলতে পারছে না। এধার–ওধার তাকিয়ে মনে হল মাঝরাত। বাকি রাতটুকু ঘুমোবার জন্য চোখ বন্ধ করতেই শুনতে পেল কারা যেন ফিসফিস করে কথা বলছে।

–ঘুম না ভাঙলে ওরাই ওকে তুলে দেবে ঠিক সময়ে।

–বাইরে কারা গোলমাল করছে, আবার কিছু গণ্ডগোল হল নাতো?

হ্যারি চোখ খুলল, ঝাপসা চোখে দেখল মিসেস উইসলি, আর বিল। বিল ওর পাশে বসে আর মিসেস উইসলি দাঁড়িয়ে। ঘরের বাইরে কারা যেন তর্ক করছে।

মিসেস উইসলি বললেন, মি. ফাজ এর গলা, ও হ্যাঁ অপরটি আর মিনার্ভা ম্যাকগোনাগল… কিন্তু কি নিয়ে এত তর্কাতর্কি?

হ্যারিরও কানে এল হাসপাতালের নিয়মের বাইরে লোকেদের হট্টগোল… জোরে জোরে কথা বলছে আর করিডোরে শব্দ করে হাঁটছে।

কর্মলেনিয়স ফাজ বললেন, ব্যাপারটা সত্যিই দুঃখজনক মিনার্ভা।

 সমস্ত ক্যাসেলের ছেলে–মেয়েকে এখানে আসতে দেওয়া উচিত হয়নি, ম্যাকগোনাগল বললেন–ডাম্বলডোর জানতে পারলে…

দরজা খোলার শব্দ হতে হ্যারি চশমাটা পরে তাকাল। দেখল অনেক মুখ দরজার গোড়া থেকে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। বিল পর্দাটা টেনে দিল। হ্যারি উঠে বসল।

ফাজ, ম্যাকগোনাগল আর স্নেইপ ওয়ার্ডে ঢুকলেন।

ফাজ মিসেস উইসলিকে সরাসরি প্রশ্ন করলেন–ডাম্বলডোর এখনও আসেননি? গলায় ঝাঁঝ ও বিরক্তির সুর।

ফাজের উদ্ধত গলা শুনে মিসেস উইসলি রেগে গিয়ে বললেন–মিনিস্টার এটা হাসপাতাল, আপনি কি একটু আস্তে কথা বলতে পারেন না?

ঠিক সেই সময় হন্তদন্ত হয়ে ডাম্বলডোর ঘরে ঢুকলেন।

ডাম্বলডোর সকলের দিকে তাকিয়ে বললেন-এত শব্দ কেন, ব্যাপার কী? আপনারা এত জোরে জোরে কথা বলছেন কেন?

মিনার্ভা, আপনাকে তো আমি বার্টি ক্রাউচের কাছে পাহারার জন্য থাকতে বলেছিলাম।

খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার।

ম্যাকগোনাগল খিটখিটিয়ে বললেন, পাহারার কোনও প্রয়োজন নেই প্রফেসর ডাম্বলডোর! মাননীয় মন্ত্রী সেটার ব্যবস্থা করেছেন।

হ্যারি আগে কখনও মিনার্ভা ম্যাকগোনাগলকে এতো উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে শোনেনি। রাগে ফুঁসছেন, গাল লাল, হাত মুঠো করে রয়েছেন।

স্নেইপ বললেন–ফাজকে বলেছিলাম, আজকের রাতের ঘটনার ব্যাপারে আমরা ডেথইটারকে ধরেছি, তখন উনি ভয় পেয়ে গিয়ে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কথা বললেন। একজন ডিমেন্টরকে ডেকে ওকে ক্যাসেলে নিয়ে যেতে বললেন। এমনিক যেখানে বার্টি ক্রাউচ আছে সেখানেও ডিমন্টরকে সাথে রাখলেন, আমি মি. ফাজকে বারবার বলেছি, ক্যাসেলের মধ্যে ডিমেন্টরকে ঢুকতে দেবেন না। কিন্তু উনি…।

প্রিয় ম্যাডাম!, ফাজ গর্জন করে উঠলেন, হ্যারি এর আগে তাকে এত বেশি রাগতে দেখেনি। ম্যাজিক মন্ত্রী হিসেবে এটা আমার সিদ্ধান্ত–বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সময়, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য কেউ আমার সঙ্গে থাকবে কি না। এ বিষয়ে অন্য কেউ আমাকে নির্দেশ করতে পারে না।

এখন ম্যাকগোনাগলের গলার স্বর ছাপিয়ে গেল ফাজের গলা।

যে মুহূর্তে এ জিনিসটা ঘরে ঢুকলো… ফাজের দিকে আঙ্গুল তুলে কাঁপতে কাঁপতে বললেন–ক্রাউচের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।

হ্যারি খুব ভাল করেই জানে মি, ফাজের ডিমেন্টর নিয়ে ক্যাসেলে আসা ঠিক হয়নি। মিসেস ম্যাকগোনাগলের আর কিছু বলার দরকার নেই। ডিমেন্টর ক্রাউচের ঘরে এসে যা করবার তাই করেছে। মৃত্যু চুম্বন দিয়ে ডিমেন্টর কাউচের প্রাণ দেহ থেকে টেনে এনেছে। পরিস্থিতি মৃত্যুর চেয়েও বিপজ্জনক।

ওর মৃত্যুতে আমাদের এমনকি হয়েছে, ফাজ রাগে ফেটে পড়ে বললেন। আমার মনে হয় ও অনেকের মৃত্যুর জন্য দায়ি ছিল।

ডাম্বলডোর ফাজের দিকে তাকিয়ে বললেন–কর্নেলিয়স এখন তো ও কোনও স্বীকারোক্তি দিতে পারবে না। কথাটা বলে এমনভাবে কাজের দিকে তাকিয়ে রইলেন যেন জীবনে ওকে এই প্রথম দেখছেন। ওতো এখন বলতে পারবে না কেন নিরীহ মানুষদের ও হত্যা করেছিল।

ফাজ ফেটে পড়ে বললেন–কেন ও তাদের হত্যা করতে যাবে?… ওটা কোনও রহস্য নয়। ও একটা ছন্নছাড়া পাগল, মিনার্ভা আর সেভেরাস আমাকে বলেছে। ওভাবে যা কিছু করছে সবই ইউ–নো–হুর আদেশে।

ডাম্বলডোর বললেন–কর্নেলিয়স, লর্ড ডোভেমট ওকে নিয়মিত নির্দেশ দিত। ওইসব চুনোখুঁটিদের মৃত্যু ভোল্টেমর্টের পুনরায় শক্তিশালী হয়ে ওঠার প্ল্যানের একটি অংশ মাত্র। সেই প্ল্যান সার্থক হতে চলেছে। তোন্ডেমর্ট আবার ওর দেহ ফিরে পেয়েছে।

ফাজ এমনভাবে তাকাল যেন কেউ অতর্কিতে ওর মুখে একটা ভারি জিনিস প্রচণ্ডভাবে ছুঁড়ে মেরেছে। বিস্ফোরিত চোখে ডাম্বলডোরের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। বিশ্বাস করতে যেন তার মন চাইছে না-এমনই এক ভাব!

ফাজ তোতলাতে তোতলাতে ডাম্বলডোরের মুখের দিকে বললেন–কি বললেন, ইউ–নো–হুঁ ফিরে এসেছে? অসম্ভব ডাম্বলডোর।

ডাম্বলডোর ধীরে ধীরে বললেন–ব্যাপারটা মোটেই অবাস্তব নয়–সেভেরাস আর মিনার্ভা জানে। তাছাড়া আমরা বার্টি ক্রাউচের স্বীকারোক্তি শুনেছি। ভেরিটাসেরমের প্রভাবে ও আমাদের বলেছে, কেমন করে ওকে আজকাবান থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়েছিল; ভোল্ডেমর্ট বার্থা জোরকিনসের কাছ থেকে সেই খবর পেয়ে ওর বাবার কাছে গিয়ে তার আঁওতা থেকে মুক্ত করে, হ্যারিকে ধরবার জন্য ওকে ব্যবহার করেছিল। সেই পরিকল্পনা সার্থক হয়েছে ফাজ, ক্রাউচ ভোল্ডেমর্টকে ফেরার সাহায্য করেছে। হ্যারি ফাজের মুখের হাসি দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলো। ফাজ বললেন, ডাম্বলডোর শুনুন, আপনি কখনই ওর কথাগুলো বেদবাক্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন না। ছো, ইউ–নো–হু আবার ফিরে এসেছে? আপনি ওই পাগলটার কথা বিশ্বাস করছেন ডাম্বলডোর? ও ইউ—নো–হুর নির্দেশমত কাজ করেছে?

জানেন? হ্যারি ট্রাইউইজার্ড কাপ স্পর্শ করবার সঙ্গে সঙ্গে ওকে সরাসরি ভোল্ডেমর্টের কাছে অজ্ঞান করে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, ডাম্বলডোর দৃঢ়তার সঙ্গে কথাগুলো বললেন। হ্যারি স্বচক্ষে ভোল্ডেমর্টের পুনঃর্জন্ম দেখেছে। পরে, আপনি আমার অফিসে এলে আপনাকে সব বলবো।

তারপর ডাম্বলডোর হ্যারির মুখের দিকে তাকিয়ে ফাজকে বললেন–আজ কিন্তু আমি হ্যারিকে কাউকে কোনও প্রশ্ন করতে অনুমতি দেব না।

ফাজের অবিশ্বাসের ছাপ মুখে লেগে রইল।

হ্যারি যা বলেছে আপনি তা অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করেন প্রফেসর ডাম্বলডোর!

কথাটা শুনে অদূরে শুয়ে থাকা সিরিয়সের রাগে গায়ের লোমগুলো খাড়া হয়ে গেল। দাঁত কিড়মিড় করে উঠল। কুব্ধ দৃষ্টিতে কাজের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

–না বিশ্বাস করার তো কোনও হেতু নেই মি, ফাজ। আমি কাউচের স্বীকারোক্তি আর হ্যারির কথাও শুনেছি। কোনও অমিল নেই। ওরা যা বলেছে, একই। গত গ্রীষ্মে বার্থা জোরকিনসের নিখোঁজের পরই ঘটনার সূত্রপাত।

ফাজ হ্যারির দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার বললেন–তাহলে আপনি পাগলের প্রলাপকে সত্য বলে মনে করেন? একজন পাগল খুনি, অন্যজন বালক।

ফাজ আবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে হ্যারির দিকে তাকালেন।

হ্যারি শান্তভাবে বলল, আপনি বোধহয় রিটা স্কীটারের লেখা পড়ছেন।

হ্যারির গলা শুনে হারমিওন, রন, মিসেস উইসলি, বিল একরকম লাফিয়ে উঠল। ওরা ভেবেছিল হ্যারি ঘুমচ্ছে।

–হা, যদি বলি? ডাম্বলডোরের দিকে তাকিয়ে ফাজ বললেন–আমি যদি বের করতে পারি যে ছেলেটি সম্বন্ধে আপনি নির্বিকারভাবে অনেক কিছু গোপন করে যাচ্ছেন?

–আমার মনে হয় আপনি হ্যারির কপালে কাটা দাগের ব্যথা আর জ্বলা চুলকানির কথা বলছেন। ডাম্বলডোর সংযত হয়ে বললেন।

তাহলে আপনি স্বীকার করেন ওর মাথায় যন্ত্রণা হয়? তাহলে? ফাজ হড়বড় করে বললেন–মাথাব্যাথা? নিশা স্বপ্ন? …হয়ত অলীক কিছুর ওপর বিশ্বাস? কর্নেলিয়স আমার কথা শুনুন, ডাম্বলডোর ফাজের দিকে এক পা এগিয়ে বললেন ডাম্বলডোর ক্রাউচকে স্টানড করার পর যে অব্যক্ত শক্তি প্রবাহিত করেছিলেন… হ্যারির মনে হল ডাম্বলডোর সেইরকম কিছু করলেন। বললেন, শুনুন, হ্যারি, আপনার আমার মতই সুস্থ মস্তিষ্কের ছেলে। ওর মাথার ওই কাটা দাগ ওর মস্তি ককে কোনরকম জড়বুদ্ধি করেনি। আমার বিশ্বাস ওর ব্যথাটা বাড়ে যখন লর্ড ভোল্ডেমর্ট ওর কাছে আসে অথবা কোনও রকম খুন ইত্যাদির পরিকল্পনা করে।

ফাজ আধপা পিছিয়ে যান। কিন্তু ওকে একটুও একগুঁয়ে কম জেদি মনে হয় না।–আমাকে ক্ষমা করবেন ডাম্বলডোর-এর আগে আমি শুনেছি ওইরকম জাদুর দাগ, বিপদ সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

হ্যারি বলল–আমি ভোল্ডেমর্টকে ফিরে আসতে দেখেছি। কথাটা বলে হ্যারি বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করলো। মিসেস উইসলি ওকে চেপে ধরে বেডে শুইয়ে দিলেন।–আমি ডেথইটারদের দেখেছি। আমি তাদের নামও বলতে পারি… লুসিয়াস ম্যালফয়।

স্নেইপ কথাটা শুনে নড়ে বসলেন। হ্যারি ওর দিকে তাকাতেই স্নেইপ ফাজের দিকে দৃষ্টি ফেরালেন।

ফাজ বললেন–ম্যালফয়ের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। মনে হয় ফাজ একটু যেন অস্বস্তিতে পড়লেন। বহু পুরাতন পরিবার ভাল কাজের জন্য তারা অনেক অর্থ দান করেন।

হ্যারি বলল–ম্যাকমেয়ার!

সেও অভিযোগ মুক্ত। এখন তো ও মন্ত্রণালয়ে কাজ করে!

অ্যাভেরি–নট–ক্র্যাব–গোয়েলে।

তুমি যাদের নাম করছ, তারা তের বছর আগে ডেথইটারের অভিযোগ থেকে মুক্ত, ফাজ রাগ করে বললেন–তুমি তাদের তের বছর আগের বিচারের নথিপত্র দেখতে পার। দুঃখিত ডাম্বলডোর এই বাচ্চা ছেলেটি গত বছরও এমন বিভ্রান্তি মূলক গল্পের সৃষ্টি করেছিল।

আপনি মূর্খ! প্রফেসর ম্যাকগোনাগল চিৎকার করে উঠলেন। সেডরিক ডিগরি। মি. ক্রাউচ… ওদের মৃত্যু কোনও পাগলের এলোপাতাড়ি কাজ নয়।

ফাজ জোর গলায় বললেন, আমি তো কোনও তথ্য দেখি না। মুখটা তার রাগে বেগুনি হয়ে যায়। আমার স্থির বিশ্বাস আপনারা কিছু একটা গোলমাল পাকাতে ইচ্ছক। আমরা গত তের বছর ডেথইটারদের খতম করার কাজ করে আসছি।

এতদিন ফাজ সম্বন্ধে হ্যারির মনে সুন্দর একটি ছবি ছিল–শান্ত প্রকৃতির, দ্র, মিষ্টভাষী, সেই সব ধারণা যেন বদলে গেল। ওর মনে হলো সামনে যেন এক ক্রোধী জাদুকর দাঁড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর শান্তির জন্য যাবতীয় প্রয়াস যেন মানতে প্রস্তুত নয়। বিশ্বাস করেন না লর্ড ভোল্ডেমর্ট আবার ফিরে এসেছেন।

ডাম্বলডোর আবার বললেন, হ্যাঁ ভোল্ডেমর্ট ফিরে এসেছে। আমার মনে হয় এই সত্য কথাটা আপনি মেনে নিয়ে যা কিছু করার প্রয়োজনীয় তাই করন। এখনও সময় আছে। একটা কিছু ভেবে–চিন্তে করলে আমরা পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারি। আমার প্রথম ও অত্যন্ত দরকারী পদক্ষেপ হচ্ছে আজকাবানে ডেমেন্টরদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করা।

ফাজ আবার জোরে জোরে বললেন, হায় ঈশ্বর! আমি যদি ডেমন্টরদের ওখান থেকে সরাবার প্রস্তাব দেই তাহলে ওরাই অফিস থেকে আমাকে লাথি মেরে ভাগিয়ে দেবে। ডিমেন্টরদের জন্যই আমরা রাত্রে ভাল করে ঘুমতে পারি, নিরাপদে চলাফেরা করতে পারি। তাছাড়া আজকাবান কারাগারে ওরা রক্ষির কাজ করে। 

– তাহলে কর্নেললিয়ম আপনার বক্তব্য… খুব ভালভাবেই জানেন যে, লর্ড ভোল্টেমরের যারা অনুগামী, তাদের ভোল্ডেমর্ট একবার ডাকলেই তার কাছে এক মুহূর্তে ছুটে যাবে। ফাজ, আমার আপনার চাইতে ভোর্টে তার কাজের জন্য ওদের অনেক সুখ-সুবিধায় রাখে। সে তার তের বছর আগেকার অবস্থায় ফিরে আসার জন্য সমস্ত বুদ্ধি ও কলাকৌশল করছ। ডেমেন্টররা ওর সমর্থক- পুরনো দিনের অনেকেও… তারা সবাই ওর সঙ্গে জোট পাকাচ্ছে। 

ফাজ একবার কিছু বলতে চাইলেন, কিন্তু বলছেন না, প্রচণ্ড রাগ ব্যক্ত করার কথা খুঁজে পাচ্ছেন না। 

– দ্বিতীয় কাজ- আপনি সময় নষ্ট করবেন না। এখনই করতে হবে। দানবদের কাছে লোক পাঠান… ডেকে পাঠান। 

– দানবদের কাছে দূত পাঠাতে হবে? আপনি এসব কি বলছেন ডাম্বলডোর? কিসব পাগলের মতো বলছেন। 

– যদি আমার পরামর্শ না শোনেন তাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে, ভোল্ডেমর্ট ওদের ডেকে পাঠিয়ে আগে যেমন বলেছিল তেমনই বলবে, তোমরা আমার সহায় হও, আমি তোমাদের সবরকম সুখ-সুবিধা ও স্বাধীনতা দেব।’ 

– আপনি… আপনি মানে ভেবেচিন্তে কথা বলছেন না…ডাম্বলডোর j… জাদুকর সম্প্রদায় যদি জানতে পারে ওরা যাদের ঘেন্না করে, আমি সেই দানবদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি… তাহলে আমার কর্মজীবনের এখানেই ইতি হবে। 

ডাম্বলডোর ফাজের বেশ রেগে গেলেন… বললেন, আপনি ক্ষমতা চলে যাবার ভয়ে অন্ধ হয়ে আছেন কর্নেলিয়স, আপনি অতিমাত্রায় নিজেকে অপরিহার্য মনে করেন- রক্তের শুদ্ধতা সম্বন্ধে গৌরববোধ করেন! কার কোথায় কোন পরিবারে জন্ম সেটা বড় কথা নয়, তাদের সেগুলোর বাইরেও আরও অনেক কিছু থাকতে পারে সেই সত্যটা মেনে নিতে পারেন না। এই তো কিছুক্ষণ আগে আপনার ডেমেন্ট, ‘শুদ্ধ রক্ত’ এক পরিবারের শেষ সদস্যকে খতম করেছে… শুনুন ফাজ, আবার বলছি, অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না। যদি ওইসব অত্যাচারীদের সমূলে বিনাশ করতে পারেন তাহলে ম্যাজিক মন্ত্রণালয় আপনাকে অতি মূল্যবান ও সুযোগ্য মানুষ হিসেবে মনে রাখবে। আমাদের এই পৃথিবীকে তিল তিল করে ঢেলে সাজাচ্ছি… সেটা ভোল্ডেমর্টকে বিনাশ করতে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেবেন না। 

ফাজ বিড়বিড় করে বললেন, উম্মাদ… অস্থির মস্তিষ্ক! 

তারপর সবাই নির্বাক। 

ম্যাডাম পমফ্রে হ্যারির বেডের পায়ের কাছে বসে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। মিসেস উইসলি হ্যারির মাথার কাছে হ্যারিকে উঠতে দেবেন না। বিল, রন, হারমিওন ফাজের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। 

ডাম্বলডোর বললেন, কর্নেলিয়স, আপনি যে পথটা বেছে নিয়েছেন সেটা অভ্রান্ত মনে করলে সেই পথে চলুন, আমি আমার পথে চলি। এখন থেকে তাহলে আমাদের যে যার নিজের ভাবনাচিন্তা নিয়ে চলাই ঠিক হবে। আমি যা সত্য মনে করি সেটা সকলের মঙ্গলের জন্য মনে করি। 

ডাম্বলডোর কোনওরকম বাদ বিসম্বাদ, তর্কাতর্কির মধ্যে আর যেতে চান না এটাই তার ফুটে উঠল। আজ থেকে আপনার পথ আর আমার পথ আলাদা।’ 

কথাটা শুনে ফাজ আঙ্গুল তুলে ডাম্বলডোরকে বললেন, হ্যা, তাহলে শুনুন আমি আপনার কাজকর্মে কোনদিনই হস্তক্ষেপ করিনি। আপনার প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে, আমি সবসময়ে আপনার কোন কোন সিদ্ধান্তে একমত না হলেও চুপ করে থেকেছি। তবে অনেকেই মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে আপনার ওয়ের উলঙ্গ (নিজেকে সাময়িকভাবে নেকড়ে বাঘে রূপান্তরিত করা) ভাড়া করা, হ্যাগ্রিডকে বহাল করা… যেমন ইচ্ছে তেমনভাবে ছাত্রছাত্রীদের পড়ান ঠিক মনে করেন না। কিন্তু যদি আপনি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজকর্ম করেন…। 

ডাম্বলডোর পরিষ্কার কণ্ঠে ফাজকে বললেন, এমনিই একজনের আবির্ভাব হয়েছে যার বিরুদ্ধে আমি কাজ করছি… তিনি তথাকথিত লর্ড ভোল্ডেমর্ট। আপনারা যদি তার বিরুদ্ধে হন, তাহলে কর্নেলিয়স আপনার আর আমার বিরোধ কোথায়? 

শেষে ফাজ বললেন, এবার তার গলা নরম, ও ফিরে আসতে পারে না। ডাম্বলডোর, ওর পক্ষে সম্ভব নয়। 

স্নেইপ রোবের আস্তিনটা গুটোতে গুটোতে লম্বা লম্বা পা ফেলে ডাম্বলডোরকে ছাড়িয়ে গিয়ে ফাজকে খোলা হাতটা দেখাতেই সভয়ে পিছিয়ে গেলেন। 

স্নেইপ কর্কশ গলায় বললেন, এটা দেখছেন… ডার্ক মার্ক! এটা আগের মত স্পষ্ট নয়, যেমন ছিল এক ঘণ্টা আগেও, না… মানে যখন এটা পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছিলো… কিন্তু এখন এটা ভাল করেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন। ডাকলৰ্ড প্রতিটি ডেথইটারের হাতে এই উল্কিটা করে দিয়েছেন। পরস্পর-পরস্পরকে চেনার একটা চিহ্ন এবং আমাদের ডেকে পাঠাবার একটি উপায়। যখন তিনি কোনও ডেথইটারের এই মার্কে হাতকে ছায়ান আমাদের তৎক্ষণাৎ ডিসঅ্যাপারেট (উধাও) এবং অ্যাপারেট (আবির্ভাব) হয়ে তার পাশে দাঁড়াতে হয়। প্রতি বছরই এই মার্কটা স্পষ্ট হতে থাকে। কারকারফের হাতেও ছিলো। ও কেন আজ রাতে পালিয়ে গেলো বলুন তো? আমরা দুজনেই মার্কে’ জ্বালা অনুভব করেছিলাম। আমরা দু’জনেই বুঝেছিলাম ডার্কলর্ড ফিরে এসেছেন। ডার্কলর্ড প্রতিহিংসা নিতে পারেন এমন ভয় পেয়েছিলো কারকারফ। ও তার অনেক সহচর ডেথইটারদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে… এখন তারা ভোল্ডেমর্টের হাতের মুঠোতে। 

ফাজ স্নেইপের কথাটা শুনে, তার কাছ থেকে দূরে সরে গেলেন। স্নেইপের কথা বিশ্বাস করতে পারছেন বলে মুখ দেখে মনে হয় না। স্নেইপের হাতে বিশ্রী পোড়া দাগটার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর ডাম্বলডোরের দিকে তাকিয়ে ফিস ফিস করে বললেন, আমি ঠিক বুঝতে পারছিনে আপনি বা আপনার স্টাফরা ডাম্বলডোরকে কেমন করে খেলাচ্ছেন…. কিন্তু আমার কানে অনেক খবর এসেছে। আমি অধিক কিছু বলতে চাই না এ সম্বন্ধে। ডাম্বলডোর কাল আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবো… মানে, এই স্কুলের কাজকর্ম সম্বন্ধে কথা বলতে। আমার এখন মিনিস্ট্রিতে যেতে হবে। 

ঘর ছেড়ে যেতে যেতে ফাজ থেমে গেলেন… হ্যারির দিকে তাকিয়ে ওর বেডের কাছে গেলেন।

তোমার ট্রাইউইজার্ড কাপ জেতার জন্য পুরস্কার পাওনা আছে হ্যারি। কথাটা বলে ফাজ পকেট থেকে সোনাভর্তি একটা ব্যাগ বের করে হ্যারির বেডের পাশের ছোট টেবিলের রেখে বললেন, – এতে এক হাজার গ্যালিওনস আছে… একটা পুরস্কার বিতরণী সভার প্রয়োজন ছিল; কিন্তু তোমার শরীরের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তা…। 

কথাটা বলে মাথার বৌলার হাট’ চাপিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। যাবার সময় সশব্দে দরজাটা বন্ধ করলেন। ফাজ চলে গেলে ডাম্বলডোর ঘরের ছেলেমেয়েদের দিতে তাকালেন। 

ডাম্বলডোর বললেন, কিছু কাজ বাকি আছে মল্লি… আমি কী তোমার আর আর্থারের ওপর নির্ভর করতে পারি? 

মিসেস উইসলি বললেন, অবশ্যই উনি জানেন ফাজ কি রকম মানুষ। মাগলদের আর্থার ভালবাসেন বলেই তাদের জন্য মিনিস্ট্রিতে এতোবছর ধরে রয়ে গেছেন। ফাজ মনে করে আর্থারের জাদুকর হিসেবে তার নিজের কোনও গর্ববোধ নেই। তাহলে তুমি একটা খবর ওকে দিতে পারবে? ডাম্বলডোর বললেন, মিনিস্ট্রিতে কর্নেলিয়াসের মতো নিচু মনের মানুষ ছাড়া আরও অনেক মানুষ আছেন… আর্থার অনেক ব্যাপারে ওয়াকিবহাল আছে ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যাপারটা যত শীঘ্র সকলকে জানাক। 

বিল বলল,- আমি বাবার কাছে যদি… এখনই যাব। 

– তাহলে খুব ভাল হয়, ডাম্বলডোর বললেন। বাবাকে সব ব্যাপারটা গুছিয়ে বলবে, আমি শিগগিরি ওর সঙ্গে সামনাসামনি সব বলতে চাই।… তাছাড়া ওকে সতর্ক থাকতে হবে। ফাজ যেন আবার না মনে করে আমি মিনিস্ট্রির কাজে নাক গলাচ্ছি। 

বিল বলল, ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দিন।

ডাম্বলডোর হ্যারিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে, যাবার জন্য এগোলে। 

– মিনার্ভা, ডাম্বলডোর ম্যানাগোনাগলের দিকে তাকিয়ে বললেন,- অফিসে হ্যাগ্রিডের সঙ্গে কথা বলতে হবে…। মাদাম ম্যাক্সিম চাইলে তার সঙ্গে কিছু কথা বলতে পারি। 

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল শুধু মাথা নেড়ে একটিও কথা না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। 

ম্যাকগোনাগল চলে গেলে ডাম্বলডোর পমফ্রেকে বললেন, পপি, তুমি একবার মুডির অফিসে যেতে পারবে, ওখানে যেখানে উইঙ্কি নামে এক হাউজ এলফ আছে। বেচারীর শুনেছি শরীর খুব খারাপ, মানসিক সমস্যাতে ভুগছে। তুমি ওকে নিয়ে এসে চিকিৎসা করে আবার কিচেনে ছেড়ে দিয়ে আসবে। ডব্বি আমাদের হয়ে উইঙ্কির দেখভাল করবে। 

নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই খুব ভাল কথা, ম্যাডাম পমফ্রে একটু হকচকিয়ে চলে গেলেন। 

ওর পদশব্দ মিলিয়ে গেলে ডাম্বলডোর বললেন,- সিরিয়স এখন আপনি রূপান্তরিত হতে পারেন। ডাম্বলডোরের কথা শোনার পর বিরাট কাল ককুরটা মানুষের রূপ নিল। 

মিসেস উইসলি একটু ভয় পেয়ে বিছানা থেকে দেখলেন কাল কুকুরটা মানুষে রূপান্তরিত হল। 

সিরিয় ব্ল্যাক আপনি…? ওর দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে মিসেস উইসলি বললেন। 

রন মা’কে আশ্বস্ত করে বলল,- অসুবিধে নেই, তুমি জোরে কথা বলো না। 

স্নেইপ অবশ্য ভয়ে আঁতকে উঠলেন না। তবে ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে না পেরে রাগ আর ভয়মিশ্রিত মুখে সিরিয়সের দিকে তাকিয়ে রইলেন। সিরিয়াসও মুখ ব্যাজার করে স্নেইপের দিকে তাকালেন। হ্যারি আশা করেছিল ডাম্বলডোর নতুন একটা মিরাকল করবেন। কিন্তু দেখল স্নেইপ আর সিরিয়স পরস্পরের দিকে অবন্ধুসুলভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন। 

ডাম্বলডোর বললেন, এখন আমাদের খুব খারাপ সময় চলছে। নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে এক হওয়া বিশেষ দরকার। আপনারা পুরনো বিবাদ ভুলে যান। এক হলে ভোন্ডেমট আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা আমাদের অনৈক্যের দুর্বলতার সুযোগ নেবে। সময় কিন্তু খুব কম। 

সিরিয়স ও স্নেইপ দু’জনে কাছে এগিয়ে এসে করমর্দন করলেও আগের মতই পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। 

ডাম্বলডোর বললেন, এখন আপনাদের একত্রে কাজ করতে হবে। ফাজের হাবভাব অপ্রত্যাশিত নয়। সবকিছু বদলে যাবে সিরিয়স। আমি চাই আপনি এখন আর এখানে থাকবেন না। আপনাকে রেমাস লুপিন, আরাবেল্লা ফিগ, মুন্ডনগাস ফ্রেচার… পুরনো বন্ধুবান্ধবদের সতর্ক করে দিতে হবে। সুপিনের ওখানে গিয়ে চুপচাপ থাকুন… আমি ওখানে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। 

হ্যারি বলল, কিন্তু। 

মনে হয় ও চাইছে সিরিয়স ওর কাছে থাকুন। এত শীঘ তাকে বিদায় দিতে ওর মন চাইছে না। 

সিরিয়স হ্যারির মুখ দেখে ওর মনের কথা বুঝতে পারলেন। বললেন, ভেব না, তোমার সঙ্গেও শিগগির দেখা হবে… কিন্তু যা দরকার তা তো আমাকে করতে হবে… বুঝতে পেরেছো? নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছো? 

হা হা নিশ্চয়ই, হ্যারি বলল, হ্যা বুঝতে পেরেছি। 

সিরিয়স তারপর আবার কাল কুকুরে রূপান্তরিত হয়ে, দরজার কাছে গিয়ে থাবা দিয়ে নব ঘুরিয়ে দরজা খুলে চলে গেলেন। 

– সেভেরাস, ডাম্বলডোর স্নেইপকে বললেন।- আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমাদের কি করতে হবে? দেরি করবেন না। আপনি আশা করি প্রস্তুত আছেন। 

স্নেইপ বললেন, অবশ্যই। 

ডাম্বলডোরকে একটু বিষ দেখালো। ঠাণ্ডা কাল চোখ দুটো ক্ষণিক ঝলসে উঠল। মুখে একটা অনিশ্চয়তার ছাপ রয়ে গেল। সিরিয়সের পর স্নেইপ ঘর ছেড়ে চলে যাবার আগে বললেন, গুডলাক! 

কয়েক মিনিট নীরব থাকার পর ডাম্বলডোর নীরবতা ভাঙ্গলেন। 

আমাকে এখন নিচে যেতে হবে, সেডরিকের বাবা-মার সঙ্গে দেখা করা প্রয়োজন। হ্যারি বাকি পোসানটা খেয়ে নাও। আচ্ছা, পরে তোমাদের সবার সঙ্গে কথা হবে। 

হ্যারি মুখ খুঁজলো ওর বালিশে। হারমিওন, রন, উইসলি হ্যারির দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ ওরা কোনও কথা বললো না। সকলেই শংকিত। 

নীরবতা ভাঙ্গলেন মিসেস উইসলি। বললেন, হ্যারি বাকি পোসানটা খেয়ে নাও। গবলেটের দিকে হাত বাড়াতে গিয়ে সোনাভর্তি ব্যাগে হতে লেগে ঠনঠন শব্দ হল। – তোমার এখন সবকিছু ভাল আরাম করে ঘুমনো দরকার হ্যারি। হ্যারিকে উফুল্ল করার জন্য বললেন, এই সোনা দিয়ে কি কি কিনবে ভেবে নাও। 

হ্যারি বলল, আমার সোনা চাই না… আপনি নিতে পারেন… যার ইচ্ছে সে নিতে পারে। এটা সেডরিকের প্রাপ্য। 

ও কিছুতেই চোখের সামনে ওকে নির্মমভাবে হত্যা মেনে নিতে পারছে না।

মিসেস উইসলি সান্ত্বনা দিয়ে ধীরে ধীরে বললেন, যা কিছু ঘটেছে তার জন্য তুমি তো দায়ী নও, হ্যারি। 

হারি বলল, আমি বলেছিলাম কাপটা আমরা দুজনেই নেবো। 

মিসেস উইসলি হ্যারিকে জড়িয়ে ধরে হ্যারির কাছে গবলেটটা ধরলেন। হ্যারির স্মৃতিতে মায়ের আদর নেই। মনে হলো মা ওকে সস্নেহে জড়িয়ে ধরে ওষুধ খাওয়াচেছন। ওর দু’চোখ জলে ভরে গেল। ওর মা-বাবার স্নেহার্ত মুখ, সেডরিকের মুখ এক এক করে ওর চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো। 

হঠাৎ খুব জোরে একটা কিছু বন্ধ করার শব্দ হতেই হ্যারি মিসেস উইসলিকে ছেড়ে দিল। দেখল, হারমিওন খোলা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ও কিছু শক্ত করে ধরে রয়েছে। 

দুঃখিত, ও বলল। 

তোমার পোসান হ্যারি, মিসেস উইসলি বললেন। বাঁ-হাতের চেটোতে চোখ মুছলেন।  হ্যারি গবলেট দুহাতে ধরে ঢক ঢক করে সোনটা খেয়ে নিল। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ওষুধের ক্রিয়া শুরু হতে আরম্ভ করল। হরির স্বপ্নবিহীন স্রোতের মতো ঘুম আবার ওকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। ও বালিশে মাথা রাখল… মাথায় আর কোনও চিন্তা নেই। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *